লিখেছেনঃ গাতরীফ শাহবায নদভী
চিন্তা করার বিষয় যে, বর্তমান যুগের বস্তুবাদিতা এবং এর ওপর অঢেল সম্পত্তির প্রাচুর্য যার সাহায্যে অর্জন করা যায় সবরকমের আরাম-আয়েশের উপকরণ। কিন্তু এক ব্যক্তি আরাম আয়েশের জীবন বিসর্জন দিয়ে দুঃখ ও কষ্টের জীবন বেছে নেয়। মাতৃভূমি ছেড়ে অজানা ভূখণ্ডকে ঠিকানা বানায়। সে জেনেবুঝে নরম নরম গদি, বালিশ এবং কত শত প্রকারের লােভনীয় সামগ্রী ঠোকর মেরে বর্জন করে ঠাণ্ডা-গরম আবহাওয়া, প্রস্তরময় ভূমি এবং বালুকাময় প্রান্তরে আস্তানা গাড়ে। যেখানে ঝলসানাে হাওয়া তাকে অভ্যর্থনা জানায় দিনরাত। কিন্তু এতেও ক্ষান্তি নেই। স্বজনদের বিশ্বাসভঙ্গ এবং বাইরের লােকদের অভিযােগের নিরন্তর মুখােমুখি? এটা কি অসাধারণ ব্যাপার নয়?
নিজেই নিজের কাছে এক আইন (A law un to himself), সন্ত্রাসের ব্যবসায়ী (Merchant of Terror), বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ওয়ানটেড (The most wanted) –এইসব এবং এই ধরনের আরাে অনেক খেতাব সহ উসামা বিন লাদেনের নাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সর্বত্র। যেকোনাে পত্র-পত্রিকায় চোখ বুলালেই নযরে পড়ে উসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে ঘৃণাভরা বিবৃতি, খবরাখবর ও বিশ্লেষণ। ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার ওয়ার্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে হানাদারীর জন্য আমেরিকা কোনােরকম সাক্ষ্যপ্রমাণ ব্যতিরেকেই উসামা বিন লাদেনকে অভিযুক্ত করতে শুরু করে দেয় প্রথম দিন থেকেই। এরপর এক ঢেউ বইতে থাকে যা আর থামার নাম থাকে না।
শায়েখ উসামা বিন লাদেন সৌদী আরবের জনৈক ব্যবসায়ী মুহাম্মদ বিন লাদেনের সপ্তম এবং অন্য একটি রেওয়ায়েত অনুযায়ী ১৮তম পুত্র। তার পরিবার সৌদী আরবের খুবই বিখ্যাত ও নামী ব্যবসায়ী ঘরানার। যারা এককথায়, বিন লাদেন অথবা বিন লাদেন গ্রুপ নামে পরিচিত। শায়েখের জন্ম রিয়াদে। ১৯৫৭ সালে। শৈশব কাটে মদীনার শিক্ষায়তনে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার সমাপ্তির পর তিনি গ্র্যাজুয়েশন করেন জেদ্দার কিং আবদুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই স্নাতক স্তরে তার বিষয় ছিল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও অর্থনীতি। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তার পিতার ইনতেকাল হয়। সেজন্য তাকে ব্যবসায়ের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু ব্যবসা তদারকির সাথে সাথে তিনি পড়াশুনাে অব্যাহত রাখেন। বিরতিহীনভাবে। ব্রিটেনে গিয়ে তিনি ইনজিনিয়ারিংয়ে (যা ছিল তার প্রিয় বিষয়) আবার স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কিন্তু এরপর তিনি আর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সমর্থ হননি। দেশে ফিরে আসেন। এর আগে চাচাতাে বােন শামের সঙ্গে তিনি বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। সেসময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। ব্রিটেন থেকে ফিরে এসে তিনি ব্যবসার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। পিতার কাছ থেকে ওয়ারিসসুত্রেই তিনি ২৫ কোটি ডলার পুঁজি পান। এই পুঁজি নিয়ে তিনি কায়েম করেন বিন লাদেন কোম্পানী। প্রসারিত করেন কনস্টাকসন বিজনেস। এই ব্যবসায়ে তিনি প্রভূত জমাত সাধন করেন তার অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রতিভা ও সুদক্ষ পরিকল্পনার মাধ্যমে।
ব্যবসায়িক ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি সীরাতে রাসুল, ইসলামী ইতিহাস এবং সমসাময়িক ইসলামী দুনীয়া (ইসলামী বিশ্বের বর্তমান হাল-হকীকত) সম্পর্কে আগ্রহ দেখাতেন এবং ওইসব বিষয় অধ্যয়ন করতেন। ইতিমধ্যে তার যােগাযােগ গড়ে ওঠে প্রখ্যাত আলেমে দীন ও জেহাদী চিন্তা ড. আবদুল্লাহ আযায়েমের সাথে। তার তরবিয়ত ও বৌদ্ধিক সংস্পর্শ সম্পূর্ণ বদলে দেয় ভলা বিন লাদেনকে। এবার তার অর্থ, দক্ষতা ও প্রতিভা একটি উদ্দেশ্যে ব্যয় করার শিক্ষা অর্জন করেন তিনি।
আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন ঘটে ১৯৭৯ সালে। শায়েখ আযায়েম ছিলেন একজন তৎপর ও উৎসাহী ব্যক্তিত্বের মালিক। ফিলিস্তীনে জেহাদী তৎপরতার অনুৎসাহী পরিণতি, আরবশসিকদের। নির্বিকার ভূমিকায় হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন, এর বিপজ্জনক অবস্থা এবং সঙ্গীন হাল প্রত্যক্ষ করে বহু সঙ্গীসাথী ও শাগিরদ সহ মাতৃভূমিকে আপাতঃ বিদায় জানিয়ে পেশােয়ারে এসে হাজির হন। তার নিরন্তর প্রয়াস ও দাওয়াতে বহু যুবক আরব মুজাহিদীন বিভিন্ন দেশ ও এলাকা থেকে তার সাথে যােগ দেন উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে। শায়েখ উসামাও তার সঙ্গীসাথী এবং নির্মাণ সাজ-সরঞ্জাম সহ ওখানে পৌছান। আফগান জেহাদে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধফ্রন্টে আফগান কমান্ডার ও মুজাহিদদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার সাথে সাথে তিনি পরিকল্পনা, ছক নির্মাণ ও প্লানিংয়ের বিশেষ পারদর্শিতাকে বাস্তবায়িত করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কার, মাের্চা ও ইমারত নির্মাণ করেন। বহু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফৌজী ট্রেনিং শিবির কায়েম করেন। কয়েকটি সড়ক নির্মাণ করেন। স্থানে স্থানে চিকিৎসা কেন্দ্র ও হাসপাতাল স্থাপন করেন। তার বিশেষ বিশেষ দু’একটি নির্মাণ কাজ।
- ১. পাকতীয়া প্রদেশে ৪০ কিমি. দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ। এই সড়ক বানানাের কাজ শেষ হয় মাত্র ১০ মাসে। এই সড়কের মাধ্যমে সংযােগ স্থাপিত হয় পাকতীয়া থেকে লােয়ারের মধ্যে। যেখানে রাশিয়া সার্বক্ষণিক চৌকী বানিয়ে রেখেছিল এবং মুজাহিদ কাফেলার ওপর হামলা করত নিরন্তর। মুজাহিদদের যাতায়াত ও তৎপরতার জন্য এই সড়ক ব্যাপক সহায় হয়।
- ২. তার আর একটি বিশাল পরিকল্পনা শেষ হয় এক বছরে। শ্বেত পাহাড়ের পাদদেশে অধ্যাপক আবদুর রব রাসূল সিয়াফের জেহাদী কেন্দ্রের কাছাকাছি কয়েক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের অভ্যন্তরে ১০০ আসন বিশিষ্ট হাসপাতালে, অসংখ্য স্টোর রুম (গুদাম) ও আবাসিক কামরা নির্মাণ করেন। ওইসব স্টোর রুমে হাতিয়ার, খাদ্য, উদী ও অন্যান্য সাজ-সরঞ্জাম রাখা হয়। কেন্দ্রীয় সুড়ঙ্গের উচ্চতা কমপক্ষে ২০০ ফুট। এর সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি শাখা সুড়ঙ্গ পর্বতগাত্রের অভ্যন্তরে দূর দূর পর্যন্ত প্রসারিত। এইসব সুড়ঙ্গের মধ্যে একইসঙ্গে চলতে পারে কয়েকটি গাড়ি।
পাকিস্তানের সীমান্ত শহর পেশােয়ারেও তিনি নির্মাণ করেন একটি বিশাল গেস্ট হাউস। এখানে আরব স্বেচ্ছাসেবকরা এসে অবস্থান করতেন ও সেখান থেকেই যেতেন আফগানিস্তানে।
আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার অপসারণ এবং কমিউনিস্ট নাজীবুল্লাহ সরকারের পতনের পরে মুজাহিদীন গােষ্ঠীসমূহের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় নানান কারণে। এই আভ্যন্তরীণ টানাপােড়েনে নিরাশ হয়ে শায়েখ উসামা বিন লাদেন সৌদী আরবে ফিরে আসেন ১৯৯০ সালে। সেখানে তিনি । আরব মুজাহিদীনদের উন্নতি ও কল্যাণের প্রয়াস শুরু করেন। এই অবসরে উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়। শায়েখ উসামা বিন লাদেন সৌদী আরবকে তার জঙ্গী খিদমত এই শর্তে পেশ করেন যে এখানে আমেরিকাকে আহ্বান করা না হােক। কিন্তু সৌদী আরব এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তার প্রভুকে ডেকে নেয়। সৌদী সরকারের পলিসি ও হেজাজে আমেরিকার উপস্থিতির তিনি বিরােধিতা করতে থাকেন। খােলাখুলি। একারণে সৌদী সরকার তার সঙ্গীসাথী ও সমমনােভাবাপন্ন লােকদের গ্রেফতার করতে শুরু করেন। কিন্তু শায়েখ উসামা বিন লাদেনের হদীশ পায়নি পুলিশ। তিনি গোপনে চলে যান সূদানে। যেখানে জেনারেল উমার আবীশেরের ফৌজী নেতৃত্বে এবং হাসানুততরাবীর বৌদ্ধিক নেতৃত্বে ইসলামী পুণঃজাগরণের কাজ চলছিল।
সূদানেও তিনি কয়েকটি নির্মাণ কাজ করেন। নির্মাণ করেন কয়েকটি ওষুধের কারখানা ও লম্বা লম্বা রাস্তা। কিন্তু মিসর, সৌদী আরব ও আমেরিকায় তীব্র চাপে সুদান সরকার তার কাছে দেশ ছাড়ার আবেদন করতে বাধ্য হন। সৌদী সরকার তার পাসপাের্ট বাজেয়াপ্ত করে, নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয় এবং তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। বিন লাদেন গ্রুপও সৌদী সরকারের চাপে তার সঙ্গে সম্পর্কে ছিন্ন করে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুজাহিদদের জেহাদ বিভিন্ন স্তরে বিস্তৃত করার জন্য তিনি আলকায়েদাহ গ্রুপ কায়েম করেন। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে আলকায়েদাহ্ বুনীয়াদী লক্ষ্য সৌদী আরবে ইসলামী সরকার কায়েম, হেজাজ থেকে মার্কিন ফৌজ অপসারণ এবং ফিলিস্তীনের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ১৯৯৮ সাল থেকেই তাকে আমেরিকা গ্রেফতার অথবা হত্যার প্রয়াস করে আসছে। তার ঠিকানার অনুসন্ধান দেওয়া ও ধরে দেওয়ার জন্য আমেরিকা পাঁচ লক্ষ মিলিয়ন ডলার ঘােষণা করে। আর একারণেই তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে ১৯৯৯ সাল থেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত। ১১ সেপ্টেম্বর(২০০১) আমেরিকায় নাদারীর দায়ও তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় যথারীতি কোনােরকম সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই। বস্তুত: শায়েখ উসামা বিন লাদেন এ অভিযােগ অস্বীকার করেন কয়েকবার।
- উসামার ভাবনা ও মতামত
(বিভিন্ন মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে উসামা বিন লাদেন এসব কথা বলেন)।
“আমাদের সন্ত্রাসবাদী সম্বােধনকারীরা সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী। আমেরিকাকে আমরা সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী বলি। তারা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপােষক। নিরীহ ফিলিস্তীন মহিলা ও শিশুদের ইসরাঈলী বােমাবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাকরা কি সন্ত্রাসবাদ নয়? কিন্তু আমেরিকা এর সমর্থন করে।
আমার মতে রিয়াদ ও আল খবরে মার্কিন ফৌজের হত্যাকারীরা ইসলামী দুনীয়ার হিরাে। তারা ইসলামী দুনীয়ার মাথা গর্বে উড্ডীন করে।
সৌদী সরকার আমার নাগরিকত্ব, পাসপাের্ট ও সৌদী শনাক্ত কার্ড বাতিল করে দিয়েছে। সৌদী ও পাশ্চাত্য প্রচারমাধ্যম আমার ব্যক্তিত্ব বিকৃত করে তুলে ধরে। তাদের ধারণা ছিল পার্থিব আরাম-আয়েশের জন্য আমি আমার দীনের সওদা করব। কিন্তু সৌদী আরবের রাজপ্রাসাদের তুলনায় আফগানিস্তানের পর্বতমালায় একটি গাছের ছায়ার নিচে থাকা অপেক্ষাকৃত ভালাে।
আমি মৃত্যুকে কখনও ভয় করি না। একজন মুসলমান হিসাবে আমার ঈমান আছে যে মৃত্যুর পরে আমি জান্নাতে যাব।
একজন মুসলমান হিসাবে এটাও আমার ঈমান যে আমার মৃত্যু আল্লাহর হাতে। যদি গােটা দুনীয়া আমার বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয় এবং আমার মৃত্যুর জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমাকে হত্যা করার প্রয়াস করে তবুও আমি মৃত্যুর শিকার হব না।
আমাদের কেউ অন্য কারাে জন্য কাজ করে না। আমরা সকলেই সির্ফ এবং সির্ফ আল্লাহর। জন্যই কাজ করি এবং প্রতিদানের প্রত্যাশা করি তার কাছ থেকেই।
আমেরিকার জন্য আমি দুঃর্দিনের ভবিষ্যৎবাণী করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটবে। ভেঙে পড়বে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রে। তারা ফিরে যাবে আমাদের ভূখণ্ড থেকে এবং তাদের সন্তানদের আমেরিকা নিয়ে যাবে বাক্স ভরে।
আমি ভবিষ্যৎবাণী করছি যে সৌদী নেতৃত্ব, যারা ইহুদী ও খ্রীস্টানদের হাতে পবিত্র হারামাইনের সওদা করেছে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তারা আর উম্মাতে মুসলেমাহর অঙ্গ নয়।”
[শায়েখ উসামার সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃত]
এক নযরে তৎপরতা গ্রুপসঃ
- ১. জামায়াতুল জেহাদ, ড. আইমানুয়াওয়াহরী। এর পৃষ্ঠপােষক উসামাই করেন। কিন্তু ইংরাজী ভালাে জানা সত্ত্বেও কথাবার্তায় পারদর্শী নয়। যাওয়াহরী এ বিষয়ে দক্ষ হওয়ায় তার ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয় এবং এর মুখপত্র বানানাে হয়।
- ২. মিসরীয় সংগঠন যার নেতৃত্ব মিসরীয় আলেম ও খতীব অন্ধ শায়েখ আবদুর রহমানের ছেলে আবু আসিম করেন, (শায়েখ উমারকে বিশ্ব বাণিজ্যিক কেন্দ্রে ১৯৯৩ সালে বিস্ফোরণের অভিযােগে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখনও আমেরিকার জেলে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।)
- ৩. মিসরীয় সংগঠন যার নেতৃত্বে আছেন শওকী ইসলামী ইউলী। শওকী মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আনওয়ার সাদাতের হত্যায় অভিযুক্ত খালেদ ইসলামের ভাই।
- ৪. পাকিস্তানের হরকতুল মুজাহিদীন এবং দুটি গ্রুপ।
- ৫. পাকিস্তানের মরক ও দাওয়াতে ইরশাদ। এইমরকমের ফৌজী শাখা লশকর-ই-তাইয়েবা।
- ৬. সিপাহে সাহাবা, পাকিস্তান। বলা হয় এর একটি গ্রুপের সম্পর্ক শায়েখ উসামার সঙ্গে।
- ৭. হরকতুল জিহাদিল ইসলামী। শায়েখের বিশেষ সঙ্গীসাথী ও বিশ্বাসভাজনদের সমন্বয়ে গঠিত। এতে বেশীরভাগ সৌদী, ইয়ামানী মুজাহিদীন অন্তর্ভূক্ত। মিসর, সুদান ও ফিলিস্তীনেরও কিছু ব্যক্তি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
- ৮. উল্লেখিত সংগঠনসমূহ ছাড়াও তাজিকিস্তান, সিংকিয়াং ও ফিলিপাইনের কিছু গােরিলা মুজাহিদ গ্রুপও শায়েখের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বলা হয় এইসব গ্রুপের মদদ করে “আলকায়েদাহ্” সংগঠন।
বিশেষ প্রতিনিধি
- ১. শায়েখ তাসীর আবদুল্লাহ (আবু হাফসিল মিসরী) -এফ বি আই তাকে মুহাম্মদ আতীফ বলে অভিহিত করে। তার বিরুদ্ধে কেনীয়া ও তানযানীয়ার মার্কিন দূতাবাসে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযােগ। তাকে ধরার জন্যও পাঁচ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘােষণা করে আমেরিকা। শায়েখ তাসীর প্রথমে মিসরীয় পুলিসে ছিলেন। তিনি পেশােয়ারে আগমন করেন ১৯৮৩ সালে এবং আফগান জেহাদে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। উসামার থেকেও আগে শায়েখ তাসীর জেহাদে অংশগ্রহণ করতে আসেন। তিনি শায়েখ আবদুল্লাহ আযায়েম শহীদকে ইসলামাবাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে ইস্তফা দিয়ে আফগান জেহাদে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়ােগ করতে উৎসাহিত করেন।
- ২. ড. আইমানুয যাওয়াহরী – মিসরের আলজেহাদ গ্রুপের সঙ্গে আইমানের সম্পর্ক। তার দাদা আবদুল ওহাব আযায়েম ছিলেন পাকিস্তানে মিসরের দূত। তিনি প্রাচ্য দার্শনিক ড. আল্লামা ইকবালের কবিতাসমূহ আরবী কাব্যরূপ দান করেন। আইমান একজন ইনজিনিয়ার। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি সপরিবারে আফগানিস্তানে অবস্থানরত।
- ৩. অন্ধ মিসরীয় আলেম ও খতীব শায়েখ উমার আবদুর রহমান। (তিনি আমেরিকার জেলে বন্দী) তার দুই ছেলে মুহাম্মদ ও আবু আসিম। উভয়েই শায়েখ উসামার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
- ৪. আবু ইয়াসর রফায়ী আহমদ তাহা একজন মিসরীয়।
- ৫. খালিদ ইসলাম কূলীর ভাই শওকী ইসলাম বুলীও শায়েখের সঙ্গীসাথীদের অন্তর্ভূক্ত বলে উল্লেখ করা হয়।…
উসামার বিরুদ্ধে অভিযােগসমূহ
- ১. রিয়াদ ও আলকাবুল খবরে মার্কিন ফৌজী ঘাঁটিতে হামলা হয়। নিহত হয় ২৬ জন মার্কিন সেনা। এ অভিযােগ আরােপ করা হয় উসামা বিন লাদেনের ওপর।
- ২. ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ওয়ার্লর্ড ট্রেড সেন্টারে বিস্ফোরণ হয়। এর অভিযোেগ আরােপ করা হয় রামযী আহমদ ইউসুফের ওপর। রামযী ফেরার থাকেন বহুদিন। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানের মদদে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে শাস্তি দেওয়ার পরে এতে নতুন করে অভিযুক্ত করা হয় উসামা বিন লাদেনকে।
- ৩. ১৯৯৩ সালে সিআইএ-র দু’জন এজেন্ট নিহত হয়। এতে অভিযুক্ত করা হয় একজন পাকিস্তানী আমিল কানসীকে। পরে আমিলকেও গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানী এজেন্সীর মাধ্যমে।
- ৪. ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের করাচীতে চার জন মার্কিনী নিহত হয়। এর অভিযােগও আরােপ করা হয় আমিল কানসীর সহানুভূতিশীল ও তার গােত্রের লােকদের ওপর। কিন্তু কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পরে এই দুটো ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয় উসামা বিন লাদেনকে।
- ৫. কেনীয়া ও তানযানীয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বােমা বিস্ফোরণ ঘটে। কিছু মার্কিনী সহ দূতাবাসের ২০০-রও বেশী লােক নিহত হয়। এর অভিযােগও আরােপ করা হয় উসামার বিরুদ্ধে।
- ৬. ইয়ামানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে Uss Cole -এর ওপর হামলা হয়। এতে নিহত হন দু’ডজন মার্কিন সেনা। এই ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয় শায়েখের গ্রুপকে।
- ৭. ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পেন্টাগন ও ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার আক্রান্ত হয়। এরজন্যও যথারীতি অভিয়ােগ আনা হয় উসামার বিরুদ্ধে।
অভিযােগসমূহের বাস্তবতা
- ১. শায়েখ উসামা বিন লাদেন এ অভিযােগ অস্বীকার করেন। কিন্তু এ মন্তব্য করেন যে এই ঘটনা। একথার ইঙ্গিত দেয় যে সৌদী জনতা তাদের সরকারের মার্কিন তােষণ পছন্দ করে না।
- ২. প্রথমে এ বিষয়ে কোনাে অভিযােগ ছিল না তার ওপর। রামযী এবং শায়েখ আবদুর রহমান প্রমুখকে এ ব্যাপারে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু পরে এ অভিযােগও তার ওপর আরােপিত হয়। এর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয় তার তরফ থেকে।
- ৩. এই ঘটনার পাঁচ বছর পরে কোনাে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই তার ওপর অভিযােগ আরােপ করে মার্কিন প্রচারমাধ্যম ও এজেন্সিসমূহ।
- ৪. এ অভিযােগও অস্বীকার করা হয় তার পক্ষ থেকে।
- ৫. এ অভিযোেগ উসামা বিন লাদেন উড়িয়ে দেন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ দাবি করেন। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করা যায়নি আজ পর্যন্ত।
- ৬. এ প্রসঙ্গেও অবস্থান একই। কোনাে প্রকৃত অভিযােগ পাওয়া যায়নি শায়েখ উসামার বিরুদ্ধে।
- ৭. ১১ সেপ্টেম্বরের (২০০১) ঘটনায়ও উসামা তার জড়িত থাকার অভিযােগ অস্বীকার করেন কয়েকবার। কিন্তু আমেরিকা কোনাে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাকে চান জীবন্ত অথবা মৃত অবস্থায়। এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই আমেরিকা তাকে পাওয়ার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে হামলার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। (শেষ পর্যন্ত তামাম জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমেরিকা আফগানিস্তানে পাশবিক হামলা শুরু করে ৭ অক্টোবর ২০০১ থেকে)
ভাষান্তর : আবু রিদা
মােসাদ : বিশ্বের সবচেয়ে বীভৎসতম ও ভয়ঙ্কর গােয়েন্দা সংস্থার ইতিকথা
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।