লিখেছেনঃ আমিনুল ইসলাম
সপ্তম শতকে ভারতে প্রথমে আরব বণিকদের মাধ্যমে ইসলাম প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে আসেন শান্তি-ভ্রাতৃত্বের ধর্ম প্রচারকেরাও। এরপর অষ্টম শতকের প্রথম দিকে প্রথম সামরিক অভিযান (৭১২) হয় সিন্ধুপ্রদেশে, নেতৃত্ব দেন তরুণ মুহম্মদ বিন কাসিম (৭১২-১৫)। আরবীয়দের সিন্ধুবিজয় ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সৃষ্টি করতে পারেনি। ইসলামও সিন্ধুদেশের সীমা অতিক্রম করে তখন ভারতীয় সার্বিক জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি। সিন্ধু অভিযানের প্রায় আড়াই শতক পর দশম শতকের মধ্যভাগে আফগানিস্থানের সুলাইমান পার্বত্য অঞ্চলের গজনীতে চরিত্রবান ও কর্মঠ আলপ্তগীন (৯৬২-৯৭৬) এক স্বাধীন রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সামানিদ বংশের পঞ্চম সুলতান আবদুল মালেকের ক্রীতদাস। আলপ্তগীন দক্ষতার সঙ্গে ১৪ বছর রাজত্ব করে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর পুত্র আবু ইসহাক সিংহাসনে বসেন। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই তাঁর প্রয়াণ ঘটলে ৯৭৫ সালে পীরাই সিংহাসন লাভ করেন। সীমান্তবর্তী গজনী রাজ্যের ক্রমশ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শাহী রাজবংশের পরাক্রান্তশালী রাজা জয়পাল গজনী আক্রমণ করেন, কিন্তু তাঁর এই গজনী, আক্রমণের প্রয়াস সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।১ এরপর গজনীতে পীরাই-এর শাসন অপ্রিয় হয়ে উঠলে তিনি জনগণের দ্বারা সিংহাসন চ্যুত হন।২
৯ এপ্রিল ৯৭৭ সালে আলপ্তগীনের ক্রীতদাস ও জামাতা নাসিরউদ্দিন সবুক্তগীন (৯৭৭-৯১ গজনীর সিংহাসনে বসেন এবং তুর্কি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান ও উচ্চাকাঙক্ষী। অবশ্য তিনি সামানিদ বংশের সম্রাটদের অনুগত্য মৌখিকভাবে স্বীকার করে কার্যত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে রাজত্ব পরিচালনা করতে লাগলেন। সিংহাসনে বসার কিছুদিন পরেই গজনী রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। গজনী রাজ্যের সীমান্তের কিছু অঞ্চল তিনি অধিকার করার প্রস্তুতি শুরু করলেন। আসলে সবুক্তগীনের সময় থেকেই তুর্কিদের ভারত অভিযানের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। এই সূত্রেই উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাজা জয়পালের সঙ্গে সবুক্তগীনের দ্বন্দ্ব সংঘটিত হয়েছিল। রাজা জয়পাল কাশ্মীর থেকে মুলতান এবং সিরহিন্দ থেকে লামঘান (জালালাবাদ) পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত করেছিলেন। সবুক্তগীনের ভারত অভিযানের প্রথম বাধা ছিল এই জয়পাল। পূর্বে অবশ্য রাজ্য-সীমান্তে তুর্কি আধিপত্য দুর্বল করে দেওয়ার জন্য জয়পাল নিজেই গজনী আক্রমণ করেছিলেন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ গ্রহণ করেছিলেন সবুক্তগীন। তিনি ৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিরাট সামরিক বাহিনী নিয়ে জয়পালের রাজ্য আক্রমণ করেন। হস্তগত হয় প্রভূত ধন-সম্পদ। এরপর সবুক্তগীন ফিরে আসেন গজনীতে। পরাজিত হয়ে জয়পাল দশলক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও পঞ্চাশটি হাতি উপঢৌকনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্ধির প্রস্তাব করেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে জয়পাল সবুক্তগীনের দুই দূতকে বন্দী করলে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগে ৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সবুক্তগীন দ্বিতীয়বার জয়পালের রাজ্য আক্রমণ করেন। জয়পাল কালিঞ্জর, কনৌজ, আজমীর ও দিল্লির হিন্দু রাজাদের সংঘবদ্ধ করে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে সবুক্তগীন বিশাল হিন্দুবাহিনীকে পরাজিত করে হামদান ও পেশোয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চল গজনী রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। শুধু তাই নয়, জয়পাল বাধ্য হয়ে কাবুল এবং তার নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহও সবুক্তগীনকে ছেড়ে দেন। ফলে তুর্কিদের ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ সহজ হয়। ইতিপূর্বে আরবগণ মাকরান বা বেলুচিস্তান অঞ্চল দিয়ে সিন্ধু জয় করেন। কিন্তু তুর্কিগণই প্রথম খায়বার গিরিপথ দিয়ে ভারতে অভিযান করার একটি সুনির্দিষ্ট পথ আবিষ্কার করেন। এক্ষেত্রে সবুক্তগীনই ছিলেন নতুন পথপ্রদর্শক।
প্রজাহিতৈষী, সৎ ও প্রাজ্ঞ সুলতান হিসেবে সবুক্তগীন খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি গজনী রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করে ৯৯৭ সালে প্রয়াত হন। সবুক্তগীনের চার পুত্রের মধ্যে মাহমুদ ছিলেন জ্যেষ্ঠ ও যোগ্যতম। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে পিতা মাহমুদের পরিবর্তে ভ্রাতা ইসমাইলকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। মাহমুদ এই ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেননি। মাহমুদ ও ইসমাইলের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। যুদ্ধে ইসমাইল পরাজিত হন। ভ্রাতাকে মাহমুদ কারারুদ্ধ করে দূরবর্তী এক দুর্গে নির্বাসিত করেন।
(১)
সবুক্তগীনের মৃত্যুর (৯৯৭) পর মাত্র ২৬ বছর বয়সে মাহমুদ (৯৯৭-১০৩০) পিতার মনোনীত উত্তরাধিকারী স্বীয় ভ্রাতা ইসমাইলকে সরিয়ে; ৯৯৭ সালে গজনীর অধিপতি হন। মাহমুদ ৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা গজনীর জেলা শহর জাবুলিয়ানের জনৈক আমিরের কন্যা ছিলেন। শৈশবে অনেকে তাকে ‘মাহমুদ জাবুলি’ নামেও ডাকতেন। মাহমুদের বাল্যকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুসারে এটা নিশ্চিত, সবুক্তগীন পুত্রকে প্রশাসন ও যুদ্ধবিদ্যা সম্পর্কে যেমন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তেমনি রাজনীতি বিদ্যার কলাকৌশল সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মাহমুদ লামঘান যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। পিতা তাকে রাষ্ট্র পরিচালনায়ও দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে খোরাসানের গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর পরই খোরাসানের রাজনৈতিক কতৃর্ক নিয়ে সামানি শাসকের সঙ্গে মাহমুদের বিরোধ দেখা যায়। ৯৯৮ সালে সামানিদদের পরাজিত করে স্বীয় আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করেন মাহমুদ। অতঃপর তিনি ‘সুলতান’ উপাধি গ্রহণ করে তৎকালীন বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা কাদির বিল্লাহর (৯৯১-১০৩১) আনুগত্য স্বীকার করে পত্র প্রেরণ করেন। খলিফা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ইয়ামিন-উদ-দৌলা’ (সাম্রাজ্যের দক্ষিণ হস্ত) ও ‘আমিন-উল-মিল্লাত’ (ধর্মের রক্ষক) খেতাবে ভূষিত করেন।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন সেই যুগের শ্রেষ্ঠ বিজেতা। তাঁর উচ্চাকাঙক্ষামূলক পরিকল্পনাদি কার্যকরী করবার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। আর এর যোগান পাওয়ার জন্যই তাকে বার বার ভারতে অভিযান করতে হয়েছে। মাহমুদের কাছে ভারতের সম্পদের আকর্ষণ চুম্বকের কাছে লোহর আকর্ষণের মতো ছিল।৩ তাছাড়া ভারতীয় রাজাগণ সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে মাহমুদের আনুগত্য অস্বীকার করেন এবং তার ভারতীয় মিত্রবর্গের উপর অত্যাচার-উৎপীড়ন করেন। বিষয়টি আরও স্পষ্টায়িত করলে বলা যায় যে, রাজা জয়পালের সঙ্গে পিতার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মাহমুদের পররাষ্ট্রনীতিকে আগ্রাসী করে তোলে। জয়পালের মিত্রজোটকে শায়েস্তা করতে মাহমুদ ভারতবর্ষে সামরিক অভিযান প্রেরণ করতে বাধ্য হন। তাই মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে মাহমুদের ভারত আক্রমণ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ১০০০-১০২৭ সালের মধ্যে সুলতান মাহমুদ সতেরো বার ভারত অভিযান পরিচালনা করেন—
১. সুলতান মাহমুদের প্রথম সামরিক অভিযান পরিচালিত হয় ১০০০ সালে। এই অভিযানে তিনি লামঘান (জালালাবাদ) ও পেশোয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চল খাইবার গিরিপথে অবস্থিত ভারতের কিছু সীমান্তবর্তী দূর্গ ও শহর অধিকার করে নিজ সীমান্ত সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করেন।
২. সুলতান মাহমুদ দশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ১০০১ সালে পাঞ্জাবের শাসক জয়পালের বিরুদ্ধে পেশোয়ারে অভিযান পরিচালিত করেন। জয়পাল বার হাজার অশ্বারোহী, তিরিশ হাজার পদাতিক ও তিনশত হস্তী বাহিনী নিয়েও এই অভিযানে পরাস্ত হয়ে বন্দী হন। পরে জয়পাল মাহমুদকে আড়াই লক্ষ দিনার, ১৫০টি হাতি ও কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে এক চুক্তির মাধ্যমে পুত্র পরিবারপরিজনসহ মুক্তি পান। ফলে সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরবর্তী শহর উন্দ সুলতান মাহমুদের অধিকারে আসে। এই পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে জয়পাল আত্মহত্যা করলে পুত্র আনন্দপাল পাঞ্জাবের সিংহাসনে বসেন।
৩. ১০০১ থেকে ১০০৪ সাল পর্যন্ত সুলতান মাহমুদ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যস্ত থাকায় ভারতবর্ষে অভিযান করতে পারেননি। কিন্তু ১০০৪-০৫ সালে মাহমুদ ঝিলাম নদীর তীরবর্তী ভীরা রাজ্যের (ভাটিয়া) রাজা বিজয় রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার অপরাধে তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করেন। মাহমুদের বাহিনীর সঙ্গে বিজয় রায়ের সৈন্যদলের তিনদিন ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে। চতুর্থ দিনে যুদ্ধ ময়দান হতে বিজয় রায় পলায়ন করেন। মাহমুদের বাহিনী তার পশ্চাদধাবন করলে উপয়ান্তর না দেখে বিজয় রায় ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন। এই যুদ্ধে ভীরার দূর্গ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে ভীরা ও এর পাশের অঞ্চল সুলতান মাহমুদের পদানত হয়।
৪. চতুর্থ অভিযান মুলতানের মুসলিম শাসনকর্তা সেখ আব্দুল হামিদ লোদির পৌত্র আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে ১০০৬ সালে পরিচালিত হয়। গজনীর সুলতানের আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য দাউদ আনন্দপালের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন। এই খবর মাহমুদকে ক্ষুব্ধ করে। তিনি দাউদকে সমুচিত শাস্তি প্রদানের জন্য সসৈন্যে মুলতানের দিকে অগ্রসর হন। পথিমধ্যে আনন্দপাল মাহমুদকে সশস্ত্র বাধা দেন। আনন্দপাল মাহমুদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কাশ্মীরের দিকে পলায়ন করেন। এরপর মাহমুদ পাঞ্জাবের মধ্য দিয়ে মুলতান অবরোধ করেন। সাত দিন অবরুদ্ধ থাকার পর দাউদ বার্ষিক কুড়ি হাজার দিরহাম কর প্রদানে প্রতিশ্রুত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করেন। মাহমুদ তার অনুগত নও-মুসলিম নওয়াজ শাহের (পূর্ব নাম সুখপাল) হাতে মুলতানের শাসনভার অর্পণ করে মোঙ্গল নেতা ইলাক খানের অকস্মাৎ গজনী রাজ্য আক্রমণের সংবাদে দ্রুত স্বদেশে ফিরে যান। এই সুখপাল ছিলেন আনন্দপালেরই পুত্র। তিনি রাজনৈতিক কারণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
৫. সুখপাল বিপদমুক্ত ভেবে পরে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে মুলতানে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধৃষ্টতার জবাব দিতে বলখের যুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে সুলতান মাহমুদ সুখপাল বা নওয়াজ শাহের বিরুদ্ধে ১০০৭ সালে তার পঞ্চম অভিযান পরিচালনা করেন। সুখপাল পরাজিত হন। ক্ষতিপুরণ হিসেবে ৪ লক্ষ দিরহাম প্রদানে তাকে বাধ্য করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
৬. মাহমুদের ষষ্ঠ অভিযান পরিচালিত হয় ১০০৮ সালে আনন্দপালের বিরুদ্ধে। মাহমুদের বিরুদ্ধে আনন্দপাল উজ্জয়িনী, গোয়ালিয়র, কালিঞ্জর, কনৌজ, দিল্লি এবং আজমীরের রাজাদের একত্রিত করে একটি জোট গঠন করেন। এই জোটে যোগদান করে কাশ্মীরের খোক্কার উপজাতি গাষ্ঠীর তিরিশ হাজার দুর্ধর্ষ সাহসী বাহিনীও। দুরবর্তী প্রদেশ হতে মহিলারা তাদের স্বর্ণ বিক্রয় করে অর্থ দান করেন। এককথায় আনন্দপাল একটি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে ও জনসাধারণের সহানুভূতি আদায় করতে সক্ষম হন। উভয়পক্ষে উন্দ নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হয়। খোক্কার বাহিনী প্রবল বিক্রমে মাহমুদের বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলে। চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে জয়পালের হাতি ভীত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করতে থাকে। এহেন অবস্থায় আনন্দপালের সৈন্যগণ বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। এই সুযোগে সুলতান মাহমুদ মরিয়া হয়ে লড়াই চালিয়ে যান। আনন্দপালের সম্মিলিত বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
৭. সপ্তম অভিযান হল নগরকোট অভিযান। ১০০৯ সালে সুলতান মাহমুদ ভারতে অনুপ্রবেশ করে কাংড়া পাহাড়ের নগরকোট দূর্গ আক্রমণ ও অধিকার করেন। সেখানকার মন্দিরে ভূগর্ভস্থ সিন্দুক-ঘরে রক্ষিত ধনরত্নসব যুদ্ধে লুণ্ঠিত সম্পদ হিসেবে মাহমুদের হস্তগত হয়। ঐতিহাসিক ফিরিস্তার মতে, সাত লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা (দিনার), সাত শত মণ স্বর্ণ-রূপা নির্মিত তৈজসপত্র, দুই শত মণ খাঁটি সোনা, দুই হাজার মণ অপরিশোধিত রূপা ও কুড়ি মণ বিভিন্ন ধরনের মণিমুক্তা মাহমুদ করায়ত্ত করেন। যাইহোক, নগরকোট বিজয়ের ফলে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে অভিযানের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। পাঞ্জাবের রাজাদের নৈতিক দুর্বলতা প্রকটিত হয় এই যুদ্ধে।
৮. দুর্ধর্ষ ঘোর উপজাতিদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করে বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দিতে সুলতান মাহমুদ পুনরায় মুলতানের শাসক আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে ১০১০ সালে অভিযান শুরু করেন। এটি তার অষ্টম অভিযান। এই অভিযানে আবুল ফতেহ মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হন।
৯. আনন্দপালের পুত্র ত্রিলোচন পালের বিরুদ্ধে মাহমুদের নবম অভিযান পরিচালিত হয় ১০১৪ সালে। যদিও আনন্দপাল বারবার পরাজিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তার হারানো রাজ্য ফিরে পাওয়ার আশা ত্যাগ করেননি। মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনি লবণগিরি অঞ্চলে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। কিন্তু যুদ্ধের আগেই মারা যান আনন্দপাল। পিতার মৃত্যুর পর ত্রিলোচন পাল নন্দনায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। এখানে তিনি সুসংবদ্ধ করে তোলেন তার সৈন্যবাহিনীকে। শেষ পর্যন্ত মাহমুদের অতর্কিত আক্রমণে ত্রিলোচন পাল পরাজিত হন এবং কাশ্মীরে পালিয়ে যান। মাহমুদের অধিকারে আসে শাহী বংশের শেষ সুরক্ষিত দুর্গ নন্দনা। এরপর ত্রিলোচন পাল পিতৃরাজ্যের শিবলি পাহাড়ে নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেন। বুন্দেলখন্ডের চান্দেলরাজের সাথে তার একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। মাহমুদ তাদের দুজনের জোট ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য রামগঙ্গার নিকটে ত্রিলোচন পালকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে পাঞ্জাবকে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন এবং এ প্রদেশের শাসনভার একজন আমিরের হাতে ন্যস্ত করেন। পরে ১০২১ সালে ত্রিলোচন পাল জনৈক গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন। তার পুত্র ভীম পাল সিংহাসনে বসেন। ভীম পাল ১০২৬ সালে মারা গেলে হিন্দু শাহী বংশের পরিসমাপ্তি ঘটে।
১০. সুলতান মাহমুদের যুদ্ধ অভিযানের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ঘটনা ছিল হিন্দুদের পবিত্র স্থান থানেশ্বর বিজয়, এটি দশম অভিযান। এই অভিযান পরিচালিত হয় ১০১৪ সালে। এই যুদ্ধে স্থানীয় হিন্দু রাজা বশ্যতা স্বীকার করেন এবং অসংখ্য ধন-সম্পদসহ থানেশ্বর দুর্গ সুলতান মাহমুদের হস্তগত হয়। অভিযানে শহরের প্রাচীন মন্দিরে রক্ষিত ব্রোঞ্জের বিখ্যাত চক্ৰস্বামী মৃর্তিও মাহমুদের করতলগত হয়।৭ ঘটনাটির সত্যতা সম্বন্ধে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
১১. কাশ্মীর অভিযান সুলতান মাহমুদের একাদশ অভিযান। তিনি ১০১৫-১০১৬ সালের মধ্যে দু’বার কাশ্মীর বিজয়ের প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লৌহকোট দুর্গের দুর্ভেদ্যতার জন্য দু’বারই অভিযান ব্যর্থ হয়।
১২. লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে ১০১৮ সালে ক্ষত্রিয় আধিপত্যের প্রাণকেন্দ্র কনৌজের বিরুদ্ধে সুলতান মাহমুদের গুরুত্বপূর্ণ দ্বাদশ অভিযান পরিচালিত হয়। পথে সকল বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি ২ ডিসেম্বর ঝিলাম নদী পার হলে বুলন্দ শহরের নৃপতি হরদত্ত বশ্যতা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অতঃপর সুলতান মাহমুদ মেহওয়ানের হিন্দু শাসনকর্তাকে পরাজিত করে মথুরার দিকে অগ্রসর হন। সমৃদ্ধিশালী এবং হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র মথুরা মুসলমানদের অধিকারে আসে। মাহমুদ বৃন্দাবনে আগমন করবার পূর্বেই তথাকার হিন্দু নগরপাল পলায়ন করে এবং এর ফলে সুলতান মথুরা এবং বৃন্দাবনে দেদার ধনসম্পদ লাভ করেন। বীরবিক্রমে সৈন্য পরিচালনা করে সুলতান ১০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কনৌজের ফটকের সম্মুখে উপস্থিত হন। হর্ষবর্ধনের রাজধানী কনৌজ সুসমৃদ্ধ ছিল এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাতটি দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল। সুলতানের আবির্ভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত প্রতিহার রাজা রাজ্যপাল বিনা শর্তে বশ্যতা স্বীকার করেন। একদিনেই তিনি সাতটি দুর্গ দখল করে বিপুল ধনরত্ন সংগ্রহ করেন। কনৌজ বিজয় সুলতান মাহমুদের শৌর্য-বীর্যের একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত এবং এর ফলে তিনি গঙ্গার পরপারে মুসলিম অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হন। ধনসম্পত্তি অর্জনের দিক থেকে এই অভিযানের স্থান সোমনাথ বিজয়ের পরেই। কনৌজ অভিযানে সুলতান তিরিশ লক্ষ দিরহাম, পঞ্চান্ন হাজার দাস এবং ৩৫০টি হস্তী লাভ করেন।
১৩. প্রতিহার রাজ রাজ্যপাল সুলতান মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করাতে ভারতের রাজপুত রাজাদের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কালিঞ্জরের চান্দেলরাজ গোণ্ড ক্ষুব্ধ হলেন। গোয়ালিয়রের রাজার সঙ্গে গোণ্ডার এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির পর তাদের মিলিত বাহিনি রাজ্যপালকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে রাজ্যপাল নিহত হন। নৈতিক দিক থেকে বিচার করে সুলতান মাহমুদ তার মিত্র হিন্দু রাজার মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য চান্দেলরাজকে ১০১৯-এ আক্রমণ করতে বাধ্য হন। চান্দেলরাজ গোণ্ডা যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে যান। মাহমুদ বিজয়ীর বেশে চান্দেলরাজের রাজধানীতে প্রবেশ করেন।
১৪. সুলতান মাহমুদ গোয়ালিয়রের বিরুদ্ধে ১০২১-২২ সালে তার চতুর্দশ অভিযান পরিচালনা করেন। রাজ্যপালের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে সুলতান মাহমুদ চান্দেলরাজের মিত্র গোয়ালিয়র রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। মুহম্মদ হাবিবের মতে, সুলতান মাহমুদ এই অভিযানে অসংখ্য ছুতার ও রাজমিস্ত্রী এবং কামার সঙ্গে নিয়ে যান; কারণ, তার উদ্দেশ্য ছিল পাঞ্জাবে একটি সুপরিকল্পিত প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপন করা। প্রথমে সীমান্ত অঞ্চলের সোয়ত বাজাউর এবং কাফিরিস্তানের বিদ্রোহী উপজাতিদের দমন করে তিনি গোয়ালিয়রের দিকে অগ্রসর হন। গোয়ালিয়রের হিন্দু রাজ্য সুলতানের আনুগত্য স্বীকার করলে সুলতান মাহমুদ গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৫. গোয়ালিয়রের রাজা সুলতান মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করার পর তিনি পুনরায় হিন্দু রাজা নন্দার বিরুদ্ধে সৈন্যসামন্ত নিয়ে কালিঞ্জর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন ১০২৩-এ। এই অভিযানকালে তিনি গোণ্ডর বিখ্যাত দূর্গ অবরােধ করেন। কালিঞ্জরের রাজা তখন বার্ষিক কর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
১৬. ভারতবর্ষের অভিযান সমূহের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত সৌরাষ্ট্রের সোমনাথ অভিযান। গুজরাটের কাথিওয়াড়ের সমুদ্র উপকূলে সোমনাথ মন্দির অবস্থিত। মন্দিরটি সমুদ্রের জলের উপর ভাসমান মনে হত। হিন্দুরা এখানে তীর্থ করতে আসত। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী ছিল অশ্লীল চিত্র দ্বারা শোভিত। মন্দিরের পরিচর্যার জন্য কয়েক হাজার ব্রাহ্মণ পুরোহিত নিয়োজিত ছিলেন। ৫০০ দেবদাসী ও ২০০ গায়িকা দেবতার তুষ্টির জন্য সর্বদা নৃত্যগীত করত। ভারতবর্ষের নৃপতিগণ অনেকেই তাদের কুমারী কন্যাদের এ মন্দিরে সেবিকার জন্য উৎসর্গ করত। তীর্থযাত্রীদের মস্তক মুন্ডনের জন্য ৩০০ নাপিত নিযুক্ত ছিল। সমুদ্র সৈকতের বিশাল এলাকায় পাথরের নির্মিত ৫৬টি অলংকৃত স্তম্ভের উপর মন্দিরটি স্থাপিত ছিল এবং ঝুলন্ত ঝাড়বাতিতে সংলগ্ন উজ্জ্বল রত্নের আভায় সমগ্র গৃহটি আলোকিত হত। বিগ্রহটি ১৫ফুট লম্বা ছিল এবং এর ৬ফুট মাটির নীচে ও ৯ ফুট মাটির উপরে ছিল। এ মন্দিরের খরচ নির্বাহের জন্য হিন্দু রাজন্যবর্গ দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দশ হাজার গ্রাম দান করেন। ঐতিহাসিক ফিরিস্তার মতে, ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুর পর আত্মা সোমনাথ দেবের নিকট গমন করে ও সোমনাথের ইচ্ছা অনুসারে প্রতিটি আত্মা দেহান্তর লাভ করে। সমুদ্রের জোয়ার ভাটা সম্বন্ধে হিন্দুরা মনে করত যে, ভগবান সোমনাথের উপাসনা করলে সমুদ্রে জোয়ার আসে। তারা মূল্যবান জিনিষপত্র এখানে এনে বাবা সোমনাথকে উৎসর্গ করা হত। এ মন্দিরে সোমনাথ দেব ছিলেন প্রধান বিগ্রহ এবং অপর বিগ্রহগুলো তার দ্বাররক্ষক ও দেহরক্ষী ছিলেন। এককথায় সোমনাথ মন্দিরকে ঘিরে ভারতীয় হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগ জড়িত ছিল।
১০২৫ সালে সুলতান মাহমুদ বিশাল বাহিনীসহ সোমনাথের উদ্দেশ্যে গজনী ত্যাগ করেন। মুলতান ও রাজপুতনার দুর্গম মরুপথ (জয়সলমীর ও অনহিলওয়াড়া) অতিক্রম করে ছিল তার যাত্রাপথ। কঠিন সে পথে কোনও সাহায্য বা আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না এতটুকু। তাই অনেক রকম ব্যবস্থা ও আয়োজন করে নিতে হয়েছিল অভিযানের পূর্বে। ভূদেব ছিলেন অনহিলওয়াড়ার চালুক্য বংশীয় রাজা। তিনি মাহমুদকে কোনও বাধাই দিলেন না। অনহিলওয়াড়ার কাছে মুন্ধীর নামক স্থানে প্রথম বাধা এল হিন্দুদের কাছ থেকে। সে বাধা বেশ প্রবল ও তাতে অংশ নিয়েছিল প্রায় কুড়ি হাজার সেনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পর্যদস্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। কিছুদিন পর মাহমুদ আজমীরে উপস্থিত হলেন এবং সেখান থেকে সোমনাথ মন্দিরের প্রাচীরগাত্রের সম্মুখে মাহমুদ তার বাহিনী সন্নিবেশিত করলেন।
রাজপুত নৃপতিগণ সংঘবদ্ধ হয়ে মাহমুদের গতিরোধ করলেন; কিন্তু মাহমুদের বাহিনীর অদম্য সাহস, তেজস্বিতা, যুদ্ধস্পৃহা ও কৌশলের নিকট রাজপুত বাহিনী পরাজিত হল। এখানে মাহমুদ সোলাঙ্কিরাজ ভীমদেবকে পরাজিত করেন। ১০২৬-র ৬ জানুয়ারি সোমনাথ মন্দিরের দূর্গ-প্রাচীর লংঘন করে সুলতান মাহমুদের সৈন্যদল মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। হস্তগত হয় দু’কোটি স্বর্ণমুদ্রা।৮
তবে তীর্থকেন্দ্রগুলি সম্পর্কে লেখা দ্বাদশ শতকের সংস্কৃত গ্রন্থগুলি সোমনাথকে তেমন স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করেনি।৯ আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, তৎকালীন স্থানীয় উপাদানে সুলতান মাহমুদ কর্তৃক উত্তর-পশ্চিম ভারতের মন্দিরগুলি ধ্বংসের বিবরণ প্রায় নেই বললেই চলে। সুতরাং আমরা পরবর্তীকালে মাহমুদকে যতই মন্দির ধ্বংসকারী ও নিপীড়ক বলে তুলে ধরি না কেন, সমকালীন সমাজে এই মন্দির ধ্বংসের ছাপ বেশি একটা পড়েনি। যদিও তুর্কি-ফারসি-আরবি বিবরণে সুলতান মাহমুদের সোমনাথ অভিযানকে বিশেষ কৃতিত্বের কাজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে ভারতীয় উপাদানে একে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। চালুক্য রাজবংশের ইতিহাসকার এ কে মজুমদার তাই প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু সূত্রে মাহমুদের সোমনাথ মন্দির আক্রমণের কোনো উল্লেখ না থাকার দিকে : ‘But it is well known, Hindu sources do not give any information regarding the raids of Sultan Mahmud, so that what follows is based solely on the testimony of Muslim authors.১০ অথচ সাম্প্রদায়িক ঐতিহাসিকেরা তাঁর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বর্ণনায় বহু কালি খরচ করেছেন।১১
সোমনাথ মন্দিরের বিগ্রহ ধ্বংসকে উপলক্ষ্য করে পরবর্তীকালের ঐতিহাসিকগণ একটি ঘটনা উল্লেখ করেন যা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর। কথিত আছে যে, প্রধান পুরোহিত মাহমুদকে অসংখ্য ধনরত্ন প্রদানের প্রতিদানে বিগ্রহটিকে অক্ষত অবস্থায় রাখবার জন্য অনুনয়-বিনয় করেন। কিন্তু মাহমুদ নাকি বলেন, তিনি বিগ্রহ বিক্রেতা অপেক্ষা ‘বিগ্রহ ধ্বংসকারী’রূপে পরিচিত হতে চান।১২ এ কথা বলে তরবারির আঘাতে লিঙ্গ-বিগ্রহটিকে ভেঙে ফেলেন। এর ফলে প্রস্তরের মধ্য হতে (পেট) অসংখ্য ধনরত্ন বের হয়ে আসে—এটি অন্ধকূপ হত্যার মতই অবিশ্বাস্য গল্প। গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সুলতান মাহমুদ ও তার মুর্তি ভাঙার গোটা কাহিনিটাই সাজানো।১৩ প্রথমত, মাহমুদ স্বহস্তে বিগ্রহ ভঙ্গ করেন এরূপ প্রমাণ পাওয়া যায় না। দূর্গ বিজিত হলে মাহমুদের সৈন্যবাহিনীও এর ধ্বংস সাধন করতে পারে। দ্বিতীয়ত, সুলতান-দরবারের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও প্রত্যক্ষদর্শী আলবেরুনী (৯৭৩-১০৪৮)১৪ বলেন যে, সোমনাথ-বিগ্রহের একটি খণ্ড গজনীর মসজিদের প্রবেশপথে রাখা হয়। কিন্তু এটি যে সোমনাথ মন্দির হতেই সংগ্রহ করা হয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তৃতীয়ত, সোমনাথের খ্যাতি সত্ত্বেও এটি ভারতবর্ষের সর্বপ্রাচীন মন্দির ছিল না। সুতরাং সোমনাথ বিগ্রহ ভাঙনে সুলতানের বিশেষ আগ্রহ থাকাটা অস্বাভাবিক। চতুর্থত, সোমনাথ-বিগ্রহটি ভাস্কর্য মূর্তি ছিল না, বরং ছিল একটি বৃহৎ অমসৃণ প্রস্তরলিঙ্গ। মুহম্মদ হাবিবের মতে, এটি ফঁপা প্রস্তরখণ্ড ছিল না, বরং এটি নিরেট আকৃতির প্রস্তরের লিঙ্গ ছিল অর্থাৎ এটি কোনো খোদিত মূর্তি ছিল না। সুতরাং এর ‘পেট’ অথবা অভ্যন্তর থেকে ধনরত্ন বের হয়ে আসার প্রশ্নই আসে না। পঞ্চমত, তের শতকের পারস্যের বিখ্যাত কবি সাদির মতে, বিগ্রহটি ছিল হাতির দাঁতের তৈরি।১৫
এভাবে সোমনাথ নিয়ে কালে কালে অতিরঞ্জন বেড়েছে এবং বেড়েছে মতপার্থক্যও। ফলে সোমনাথ বিগ্রহের আকার সম্বন্ধেও ঐক্যমত পৌছানোর সম্ভব হয়নি। কেউ বলেছেন বিগ্রহটি ‘লিঙ্গম’, আবার কেউ বলেছেন বিগ্রহটি ছিল ‘মানবাকৃতি’। মতভেদ রয়েছে মূর্তিটি নারী পুরুষ, এ নিয়েও। ‘মানবাকৃতি’ তথ্যটি থেকে আবার বহু অলীক কাহিনির জন্ম নিয়েছে। এই মূর্তির ভিতরে নাকি বিশ মণ ওজনের জহরত ছিল (তখন এক মণ বেশকিছু কিলোগ্রামের সমান ছিল)। অন্য এক বিবরণ অনুসারে, দুইশত মণ ওজনের একটি স্বর্ণের শিকল সোমনাথ মুর্তিটিকে যথাস্থানে সংরক্ষিত রেখেছিল। অপর এক বর্ণনায়, এটি ছিল একটি লোহার মূর্তি। উপরে স্থাপিত একটি চুম্বকের আকর্ষণে শূন্যে ত্রিশঙ্কু এই মূর্তিটির দর্শনে ভক্তবৃন্দের মনে এক ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধাভাব জাগিয়ে তুলত। শুধু তাই নয়, মন্দিরটিকে তিরিশ হাজার বছরের প্রাচীন বলেও জাহির করা হয়েছে। এভাবে নানা বিবরণের মধ্য দিয়ে সোমনাথ এক কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে।১৬ আর এমন বিচিত্রধর্মী আখ্যান হতে কোনোভাবেই কোনো সহজ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।
১৭. সোমনাথ বিজয়ের পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথে সুলতান মাহমুদের বাহিনী ভারতের জাঠদের দ্বারা উৎপীড়িত হন। তিনি গজনীতে ফিরে এসে জাঠদের শাস্তি বিধানের জন্য ১০২৭ সালে আবার ভারত অভিযান করেন। তার এই অভিযান বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। ১৪০০ নৌকার একটি নৌবহর তৈরি করে সুলতান মাহমুদ মুলতান হতে জাঠদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। প্রতিটি নৌকায় ২০জন করে তীরন্দাজ ছিল এবং অগ্নি নিক্ষেপণের জন্য সরঞ্জামও ছিল। অপরদিকে জাঠদের পক্ষে ছিল আট শত নৌকা এবং তাদের অধিকাংশ নিহত হয়। বিদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক জাঠগণ সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় এই অভিযানে। এটি সুলতান মাহমুদের সপ্তদশ ও সর্বশেষ অভিযান।
(২)
সুলতান মাহমুদ ১০০০-১০২৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বার ভারত অভিযান পরিচালনা করেন ও প্রত্যেক বারেই বিজয়ী হন। এই সাফল্যের রহস্য কি? তার সাফল্যের পেছনে নানাবিধ কারণ ছিল—
১. মাহমুদের অভিযানকালে উত্তর ভারত বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যবোধ ছিল না। অপরদিকে মাহমুদের বাহিনী ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই অল্পসংখ্যায় হয়েও তারা অধিক সংখ্যক হিন্দু সেনার উপর বিজয় লাভ করে।
২. মাহমুদের বাহিনীতে আফগান-তুর্কি-পারসিক-ভারতীয় প্রভৃতি গোষ্ঠীর সেনা থাকলেও তাদের মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলাবোধ ছিল এবং মাহমুদের সুযোগ্য নেতৃত্ব তাদেরকে অপরাজেয় করে তুলেছিল।
৩. সুলতান মাহমুদের অতুলনীয় সামরিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা, সেনাপতিত্ব তার বাহিনীর বিজয় লাভের সহায়ক হয়েছিল।
৪. সুলতান মাহমুদের প্রশিক্ষিত দ্রুতগামী অশ্বারোহী বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ ভারতীয়দের নিকট যথেষ্ট ভীতির সৃষ্টি করেছিল।
৫. মাহমুদের যুদ্ধরীতি ছিল সেযুগের তুলনায় অতি আধুনিক, আর হিন্দুগণ আধুনিক যুদ্ধ পদ্ধতি জানত না। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ জয় করার অভিজ্ঞতা মুসলিম বাহিনীর ছিল। কিন্তু হিন্দুদের সেরকম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না।
৬. প্রত্যেকটি সামরিক অভিযানে মাহমুদ প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করেছেন। এ সম্পদ দিয়ে তিনি সৈন্যদের সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন ও নতুন সৈন্য সংগ্রহের নিয়ামক হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
৭. নিজ দেশের অনুকূল পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় ভারতীয় হিন্দু সেনাগণ শত্রুপক্ষকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি। বলা যায় তাদের স্বদেশ প্রেমের যথেষ্ট অভাব ছিল।
৮. মাহমুদ তাঁর সাহসী, দুর্ধর্ষ ও উদ্যমী সেনাবাহিনীকে জেহাদী আদর্শে যুদ্ধমুখী করতে চেয়েছেন। ফলে সৈন্যগণ মরিয়া হয়ে উঠেছিল জয়ের জন্য। তাদের আগ্রাসনের কাছে ভারতীয় সৈন্যরা দাঁড়াতে পারেনি। সর্বোপরি মাহমুদের দুর্দমনীয় বাহিনী দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল সম্পূর্ণভাবে বাস্তববাদী। তারা ছিল ভীষণ উচ্চাকাঙ্খী।
(৩)
এই সমস্ত অভিযানে সুলতান মাহমুদ ভারতের বহু শহর ও মন্দির লুণ্ঠন করে অফুরন্ত মূল্যবান সম্পদ নিজ রাজ্য গজনীতে গেছেন। নিজের বৈভব বৃদ্ধি ও নিয়মিত সেনাবাহিনী প্রতিপালনের জন্য এবং তা দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতিও ঘটিয়েছেন চরমভাবে। সম্পদের লোভে সুলতান মাহমুদ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ইরানের অনেক শহরও কয়েকবার লুণ্ঠন করেন। অবশ্য ভারত হতে তিনি অনেক বেশি সম্পদ অর্জন করেছিলেন। তবে মনে রাখতে হবে যে, বিপুল ধন-সম্পদ আহরণের সুলভ সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে মুসলমান-হিন্দু শাসকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র তফাৎ নেই। মাহমুদের পূর্বে মন্দিরের ধন-সম্পদ অনেক হিন্দু রাজাকেও মন্দির লুণ্ঠন ও ধ্বংসে প্ররোচণা দান করেছে। ১৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে লিখিত পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্য’ এবং ৪০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে লিখিত পাণিনির ব্যাকরণ থেকে জানা যায় যে, মৌর্যরা তাদের অর্থভাণ্ডার পুরণের জন্য মূল্যবান ধাতব দেবদেবীর মূর্তি গলিয়ে ফেললে।১৭ কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’ (৭ম তরঙ্গ দেখুন) থেকে জানা যায়, একাদশ শতকে কাশ্মীরের হিন্দুরাজা হর্ষ (১০৮৯-১১০১) সম্পদের লোভে বহু হিন্দু মন্দির ও দেবায়তন ধ্বংস করে বিখ্যাত হয়ে আছেন। হর্ষ তার রাজভাণ্ডার পূর্ণ করার জন্য নিজের সাম্রাজ্যের চারটি মন্দির বাদে সব মন্দির লুণ্ঠন করেন। ভীম কেশবের মন্দির বিধ্বস্ত করা দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল। যখন এতেও রাজকোষ পূর্ণ হল না, হর্ষের আদেশে দেব-প্রতিমাও লুণ্ঠিত হতে লাগল। কি ভয়ংকর ভাবে সেসব লুণ্ঠন বা ধ্বংস করা হয়েছিল তার বর্ণনা পড়লে আমাদের চমকে উঠতে হয়। হর্ষের শাসনকালে ‘দেবোৎপাটননায়ক’ নামক একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এই নির্দিষ্ট কাজ দায়িত্ব সহকারে সম্পাদনের জন্য।১৮ খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ডি ডি কোশাম্বী তাঁর গ্রন্থে১৯ ‘রাজতরঙ্গিনী’কে উদ্ধৃত করে এসব লিখেছেন।
দ্বাদশ শতকে পারমার রাজারা গুজরাটে সম্পদের লোভে বহু জৈন মন্দির লুণ্ঠন করেন।২০ রমিলা থাপার মনে করেন যে, প্রতিটি মন্দির ধ্বংস বা বিলুপ্ত হলে জনপ্রিয়ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মুসলিম ধ্বংসকারীদের জন্য তা হয়েছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, রাজানুগত্যে বঞ্চিত হয়ে বহু মন্দির অবলুপ্ত হয়েছে। ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশে যে কোনো স্থাপত্য নির্মাণকার্যের স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার রক্ষণাবেক্ষণের উপর। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শুধু বহু মন্দির নয়, বহু মসজিদও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।২১ তিনি দেখিয়েছেন, উনিশ শতকে বিশাখাপত্তনমের সিংহচলন মন্দিরটি ধ্বংস হয় রাজানুগত্যে বঞ্চিত হয়ে ও প্রাকৃতিক কারণে। অথচ এই মন্দির ধ্বংসের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হয়।২২ এমন দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি রয়েছে।২৩ বস্তুত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের চেয়েও অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কারণ শাসকদের বেশি প্ররোচিত করত। বৈদিক আর্যরা সিন্ধু উপত্যকার উন্নত সভ্যতা ধ্বংস করেছিল নিজেদের ঔপনিবেশিক স্বার্থে। রাজশক্তির বা শাসকদের ধর্মবিশ্বাস যা-ই থাক না কেন, শত্রুর জাগতিক ও ভাবাদর্শগত স্নায়ুকেন্দ্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় চিন্তার পরিবর্তে বাস্তব পরিস্থিতির পর্যালোচনাই তাদের প্রণোদিত করত। সুতরাং যে সমস্ত ঐতিহাসিকেরা মাহমুদের কাজের মধ্যে অবিমিশ্র পরধর্ম বিদ্বেষই আবিষ্কার করেন তাদের ভাবনা উদ্দেশ্যমূলক।
(৪)
বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা কাদির বিল্লাহ (৯৯১-১০৩১) সুলতান মাহমুদকে ‘ইয়ামিন-উদ দৌলা’ (সাম্রাজ্যের দক্ষিণ হস্ত) ও ‘আমিনউল-মিল্লাত (ধর্মের রক্ষক) উপাধি প্রদান করেন। সেহেতু মাহমুদ স্বাধীন সুলতান হিসেবে এই উপমহাদেশে পৌত্তলিকতা এবং বর্ণবাদ প্রথা ধ্বংস করে ইসলাম প্রচারের নিমিত্ত যুদ্ধাভিযানে প্রবৃত্ত হন বলে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদ মনে করেন। তিনি বলেন, “বাগদাদের খলিফা কাদিরবিল্লাহ সুলতান মাহমুদের উপর পাক-ভারতে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব ভার ন্যস্ত করেন। এই দায়িত্ব পালনের জন্যই মাহমুদ বার বার পাক ভারতে অভিযান চালান। তিনি এই উপমহাদেশে ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেন। হিন্দুদের সুবিখ্যাত নগরকোট ও সোমনাথ মন্দির এবং আরও কয়েকটি অঞ্চল তাঁর হস্তে বিধ্বস্ত হয়। কতিপয় রাজাসহ পাক-ভারতের শত শত হিন্দুকে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন।”২৪ সমসাময়িক ঐতিহাসিক উৎবীর মতে, ভারতকে ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই মাহমুদ সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। ভি এ স্মিথ মাহমুদকে ইসলামের অন্যতম গৌরব বলে মনে করেন।২৫ তিনি বলেছেন, ভারতের মূর্তি পূজকদের বিরুদ্ধে ‘পবিত্র যুদ্ধ’ বলতে তিনি যা বুঝতেন, তা চালিয়ে যেতে ব্ৰত গ্রহণ করেছিলেন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বিচার করলে এই অভিমত অনেকে স্বীকার করেন না। পাক-ভারত অভিযানের পেছনে সুলতান মাহমুদের ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ-
১. শাসকদের পক্ষে ধর্ম প্রচার যে অপরিহার্য রাজকার্য, এ মনোভাবের পরিসমাপ্তি বহু পূর্বেই ঘটেছে, কারণ ইসলাম সম্প্রসারণ এবং ইসলাম প্রচারের প্রথম পর্যায় খলিফা দ্বিতীয় ওমর বা ওমর বিন আব্দুল আজিজ (৭১৭-২০) ও উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের (৭০৫-১৫) সময়ে শেষ হয়েছে।
২. আব্বাসীয় খিলাফতের দুর্বলতার সুযোগে সামানি বংশ এবং পরবর্তীকালে গজনী রাজবংশের অভ্যুত্থান ঘটে এবং এইগুলি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ছিল। ধর্মযুদ্ধ পরিচালনার পরিবেশ গজনী রাজ্যে ছিল না—এই কথা বলিষ্ঠভাবে উল্লেখ করেন মুহম্মদ হাবিব।২৬ আব্বাসীয় খলিফা কাদির বিল্লাহ মাহমুদকে সর্বপ্রথম মুসলিম সুলতানের মর্যাদা দান করেন এবং তাকে সামন্ত রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়ে থাকে। তিনি সার্বভৌম নৃপতি ছিলেন মা। ফলে ইসলাম প্রচারের স্বাধীন ক্ষমতাও তাঁর ছিল না। ধর্ম প্রচারের ক্ষমতা ছিল একমাত্র আব্বাসীয় খলিফাদের। মুহম্মদ হাবিবের ভাষায়: “সমালোচকদের নিকট অভিযানগুলির ধর্মবহির্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলি ভাস্বর হয়ে উঠবে, যদি তারা যুগধর্মের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। এগুলি ধর্মযুদ্ধ ছিল না, বরং গৌরব এবং স্বর্ণের জন্য ছিল পার্থিব যুদ্ধাভিযান। এর মধ্যে ধর্মীয় উদ্দেশ্য অনুধাবন করা একেবারেই অসম্ভব।”২৭ এর প্রমাণ পাওয়া যায় গজনী সৈন্যবাহিনীর গঠনে। গজনীর সেনাবাহিনী পবিত্র ধর্মযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত ছিল না—যারা ধর্মের জন্য বেঁচে থাকতে বা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল। মাহমুদের সেনাবাহিনী গঠিত ছিল বেতনভোগী যুদ্ধবিদ্যায় শিক্ষিত সৈন্যদের নিয়ে যারা হিন্দু-মুসলমানদের সঙ্গে সমানভাবে যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত ছিল।২৮
৪. সুলতান মাহমুদের সেনাবাহিনীতে অমুসলমান খোক্কার উপজাতি লোক ও হিন্দুদের যোগদান প্রমাণ করে যে, সুলতান কট্টরপন্থী ছিলেন না।
৫. সুলতান মাহমুদের সতেরো বার যুদ্ধাভিযানের মধ্যে কয়েকবার মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ পরিচালিত হয়। যেমন, তাঁর চতুর্থ অভিযান ১১০৬ সালে মুলতানের মুসলিম শাসক আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে এবং ১০১০ সালের অষ্টম অভিযানও আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে।
৬. মাহমুদ ভারতে কোনো স্থায়ী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি কেবল পাঞ্জাবকে তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
৭. ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে এমন কোনো নজির নেই সুলতান মাহমুদের আমলে।
৮. মাহমুদের শাসনামলে অমুসলিমদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল। বিজিত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে কোনোপ্রকার বাধা ছিল না। তার ধর্মনীতি যে সহিষ্ণুতার উপর গড়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে হেগ, এলফিনস্টোন প্রমুখ ঐতিহাসিক দ্বিমত পোষণ করেন না। বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য ছিল না।২৯ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং ধর্ম সম্বন্ধে বল প্রয়োগ চলে না। কয়েকজন হিন্দু রাজা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন সম্ভবত রাজনৈতিক কারণে। সুলতান মাহমুদ গজনী ফিরে গেলে তারা পুনরায় হিন্দুধর্মে দীক্ষিত হন। ঐতিহাসিক মুহম্মদ নাজিম বলেন: “Some Hindu Rajas are said to have embracced Islam, but they did so, most probably as a political shift to escape the fury of the conqueror and returned to their faith as soon as he had turned his back on them.’ আসলে পরাজয়ের আশঙ্কায় বা ইসলামের অধীনে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগের জন্য যদি হিন্দু রাজা অনুচরবর্গসহ ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে থাকেন, তবে তা স্বতন্ত্র ব্যাপার।
৯. ক্রুসেড ও জেহাদ দ্বাদশ শতাব্দীতে সংঘটিত হয় এবং এর জন্য সালাহউদ্দিন ‘গাজী’ উপাধি লাভ করেন—কিন্তু সুলতান মাহমুদকে ‘গাজী’ পদবী প্রদান করা হয়নি। এই মতগুলো বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু তথ্য আমরা পেতে পারি। প্রথমেই বলা যায়, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে প্রেরিত সামরিক অভিযানের প্রকৃতি কি ছিল? ধর্মীয় উদ্দেশ্যে প্রেরিত সামরিক অভিযানগুলো সমস্ত স্বার্থপরতা ও সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত থাকবে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে, ধর্মীয় আদর্শকে বিজয়ী করে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ধর্মযুদ্ধ পরিচালিত হয়। সুলতান মাহমুদের সামরিক অভিযানগুলোর ধারা বিশ্লেষণ করলে উপলব্ধ হবে যে, পবিত্র কোরআনের নির্দেশমতো এগুলো ধর্মযুদ্ধ নয়। তাছাড়া মাহমুদ ইসলাম প্রচারের স্বার্থে কোন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেননি। এমন কোন ঘটনা ঐতিহাসিকদের দ্বারা বর্ণিত হয়নি যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে হিন্দু সম্প্রদায়কে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন। ফলে ১০০০-১০২৭ সাল পর্যন্ত ইসলামিকরণের কোনও সার্থক প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় না। সুলতান মাহমুদ ভারতকে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করার চিন্তা করেননি, যদিও প্রত্যেক সামরিক অভিযানে তিনি বিজয়ী হন।
ধর্মপ্রাণ মাহমুদ অন্যের উপর কখনও জোর করে ধর্মের বোঝা চাপিয়ে দেননি। কেননা বিজেতা কর্তৃক অযথা হাঙ্গামা সৃষ্টি ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে মাহমুদের হিন্দু সৈন্যরাও মুসলমান সৈন্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতেন। যদি তা ধর্মীয় যুদ্ধ হত, তাহলে স্বধর্মীদের উপর অস্ত্র ধারণ তাঁদের পক্ষে সম্ভব হত না। ভারতে হিন্দু রাজন্যবর্গ ও মধ্য এশিয়ার মুসলমান রাজাদের মধ্যে মাহমুদের ব্যবহারের কোনো পার্থক্য ছিল না। পারস্যে বহু মুসলমানকে তিনি হত্যা করেছিলেন এবং মধ্য এশিয়ায় প্রায় সমস্ত অভিযান তাঁর স্বধর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। তাই মাহমুদের দৃষ্টি যে কেবল ভারতেই নিবদ্ধ ছিল একথা বলা যায় না।
কিছু লেখক অবশ্য মন্দির ধ্বংসের জন্য সুলতান মাহমুদকে অভিযুক্ত করে থাকেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, একমাত্র অভিযান বা যুদ্ধের সময়ই মন্দির ধ্বংস (মথুরা, থানেশ্বর, বৃন্দাবন, সোমনাথ) করা হয়েছিল। শান্তির সময় তিনি কখনও কোনো মন্দির ধ্বংস করেননি বা কোনো মন্দির তাঁর হস্তে অপবিত্র হয়নি।৩০ক পৌত্তলিকদের শাস্তি দেওয়ার কোনো বাসনা তার ছিল না। অবৈধ গুপ্তধনের সন্ধান না পেলে তিনি হয়তো কোনো মন্দিরের উপর আক্রমণ চালাতেন না। ওই মন্দিরগুলোতে ধর্মের নামে পুরোহিতদের দ্বারা সঞ্চিত স্বর্ণ-রৌপ্য ও অন্যান্য বহু মূল্যবান সম্পদ ছিল। আশ্বাসের ছলনায় ভুলিয়ে অসংখ্য সরল বিশ্বাসী জন সাধারণের কাছ থেকে মন্দিরের (এই) পুরোহিতেরা প্রচুর অর্থ রোজগার করছিল।৩১ তদানীন্তন সময়ে জলদস্যুরাও তাদের লুণ্ঠিত অর্থ সোমনাথ মন্দিরে গচ্ছিত রাখত। ফলে সমুদ্র তীরবর্তী ওই মন্দিরগুলোই মূলত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হত। এছাড়া হিন্দুদের এই ধর্মীয় স্থানগুলোতে প্রবেশ করা বড় দুঃসাধ্য ছিল বলে অনেক সময় স্থানীয় রাজাগণও নিরাপত্তার জন্য এই মন্দিরগুলোর মধ্যে প্রচুর ধনরত্ন সঞ্চয় করে রাখতেন। এভাবে সোমনাথ যখন মন্দিররূপী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তখন তা আর আক্রমণে কোনো বাধা থাকে না। এ বিষয়ে ড. ঈশ্বরী টোপা বলেন: “মাহমুদ ভারতের যে মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন, তাতে বিপুল ও বর্ণনাতীত ধনরত্নে পরিপূর্ণ ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি ছিল রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল।”৩২ সুতরাং দেবমূর্তি ভেঙ্গে ইসলাম প্রচার ও মন্দির অপবিত্র করার জন্য সুলতান মাহমুদ বারবার পাক-ভারত অভিযান করেছিলেন বলে সমালোচকগণ যে মত প্রকাশ করেছেন, ইতিহাসের বিচারে তা অসত্য। বিগ্রহে ধনরত্ন না থাকলে তা বিনষ্ট করবার কোনোই হেতু নেই এবং যদিও এর ক্ষতিসাধন করা হয় তাহলে মূর্তিপূজা উচ্ছেদের জন্য করা হয়নি, ধনরত্ন লাভের জন্যই করা হয়েছিল।
ভারতবর্ষে বহু অভিযানে সফলতা অর্জন করলেও সুলতান মাহমুদ হিন্দুদের কোনোভাবেই ইসলামে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা চালাননি। কেননা দেখা যায়, পরাজিত বহু ভারতীয় রাজা কেবল ধন ঐশ্বর্য দিয়েই নিজেরা রক্ষা পেয়েছেন। মাহমুদ তাদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা তো দূরের কথা, তাদের কোনোভাবেই হয়রানি পর্যন্ত করেননি। তিনি শুধুমাত্র ধনসম্পদ নিয়েই উৎফুল্ল চিত্তে নিজের দেশে ফিরে গিয়েছেন।
মুহম্মদ হাবিব বলেন, “গজনী সৈন্যবাহিনীর অভিযানকালে যে অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তা কোনো নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক গোপন করতে এবং নিজ ধর্ম সম্বন্ধে সচেতন কোনো মুসলমান তার যথার্থতা বিচার করতে ব্যর্থ হবে।” মুহম্মদ হাবিবের এহেন ভ্রান্তিমূলক ধারণার উৎস হচ্ছে সোমনাথ বিজয়ের পাঁচশো বছর পরে লিখিত ফিরিস্তার ইতিহাস৩৩ ও ‘তারিখ-ই-আলফি’ নামক গ্রন্থ৩৪। সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় মন্দির ধ্বংসের কাহিনি বর্ণিত হয়নি। যেমন ইবনুল আসির৩৫ সোমনাথের বিগ্রহ ধ্বংসের ঘটনা উল্লেখ করেননি।৩৬
এটা ঠিক যে, মধ্যযুগীয় যুগধর্মের ছাপ মাহমুদের ভারত অভিযানে পড়েছিল। ধন-সম্পদের প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ ছিল, কিন্তু তার সদ্ব্যব্যবহার করে তিনি গজনীকে মধ্যযুগের এক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করেন।৩৭ এ থেকে সুলতান মাহমুদের মানবিক গুণাবলীর পরিচয় পাওয়া যায়, যা থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি যে, মাহমুদ ভারত অভিযানে ধর্মকে কিভাবে ব্যবহার করেছিলেন। তাই একথা পরিষ্কারভাবে বলা যায়, ভারত অভিযানে ধর্মপ্রচার তাঁর লক্ষ্য ছিল না। গজনীর হিন্দুদের প্রতি তাঁর সহিষ্ণু ও উদার ধর্মনীতিই তার পরিচয়। বহন করে। গজনীর হিন্দুদের জিজিয়া কর দিতে হত না। এইসব দিক থেকে বিচার করলে তার ভারত অভিযানের প্রকৃতিতে ধর্মের বিষয়টা গৌণ হয়ে দাঁড়ায়।৩৮
সোমনাথ মন্দির ধর্মীয় কারণেই যদি আক্রান্ত হত তাহলে ১৭ বারের মধ্যে প্রথম বারেই তা হত, ১৬ বারে তা ঘটত না। আসলে ওটা ভরা মৌচাকের মত ধনভাণ্ডার হয়ে থাকত, আর মধুলোভীর দল তা খাওয়ার জন্য বারবার ফিরে আসত। বর্তমান যুগের মত সোমনাথ মন্দির শুধু দেবতা কেন্দ্রিক হলে আক্রমণের ব্যাপার থাকত না।।
সুলতান মাহমুদ ধর্মীয় উন্মাদনা থেকেই যে ভারতে অভিযান পরিচালনা করেছেন এ তত্ত্ব প্রথম প্রচার করেন ঐতিহাসিক উৎবী তাঁর ‘তারীখ-ই-ইয়ামিনী’ গ্রন্থে৩৯। উবী ছিলেন সুলতান মাহমুদের সভা-ঐতিহাসিক। তার মতে, ধর্মীয় প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুলতান মাহমুদ ভারত অভিযান করেছিলেন। উৎবী-র এই সরলীকৃত বক্তব্যের উপর নির্ভর করেছেন আধুনিক ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ। কিন্তু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে উত্তীর মন্তব্যের সরল অর্থ গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, ভারতবর্ষে অভিযান করার পর সুলতান মাহমুদ যে ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেছিলেন বা পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছিলেন তার কোনো সার্থক প্রমাণ নেই।
পূর্বেই বলা হয়েছে, সোমনাথ মন্দিরে বিগ্রহ ধ্বংসের যে অভিযোগ করা হয় তা বিতর্কিত। ডব্লিউ হেগের মতে, মন্দিরের অন্ধকার গর্ভগৃহ লিঙ্গ বিগ্রহ সংযুক্ত রত্নাদি হতে বিচ্ছুরিত আলোর আভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। অবশ্য হাসান নিজামির ‘তাজ-উল-মাসির’৪০ উল্লেখ করে যে, ছাদ হতে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি মূল্যবান রত্নাদিতে খচিত ছিল। পরবর্তীকালের লেখক ফিরিস্তার মতে, সুলতান মাহমুদ ফাঁপা প্রস্তর নির্মিত বিগ্রহটি বিনষ্ট করে এর অভ্যন্তরে রক্ষিত হীরা ও মণি-মাণিক্য হস্তগত করেন। মতান্তরে আলবেরুনী বলেন যে, লিঙ্গ দেবতাটি সম্পূর্ণরূপে নিরেট স্বর্ণের তৈরি ছিল।৪১ মুহম্মদ নাজিমের মতে, সুলতান মাহমুদ তার তরবারির এক আঘাতে বিগ্রহটি ধ্বংস করেন। যদিও তিনি বিগ্রহ ধ্বংস করেন তা হলেও একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, বিগ্রহে রক্ষিত রত্নাদি (ফিরিস্তা) অথবা এর গায়ে খচিত মণি-মাণিক্য (হেগ) সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই তিনি মূর্তি ধ্বংস করেন। স্বর্ণ ব্যতীত গজনভী মুদ্রা প্রস্তুত অসম্ভব বলেই সম্ভবত এটি করা হয়। মুহম্মদ হাবিব বলেন যে, সোনা এবং রূপার তৈরি বিগ্রহ গলাইয়া গজনভী মুদ্রায় রূপান্তরিত করা হতো।৪২
তথ্যসূত্রঃ
- ১. ডব্লিউ হেগ সম্পাদিত, কেমব্রিজ হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া, খণ্ড-৩, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ ইয়র্ক, ১৯২৮, পৃ. ১১।
- ২. এ কে এম আলিম, ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, মাওলা ব্রাদার্স, অষ্টম মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১১, পৃ. ১৮।
- ৩. মুহম্মদ হাবিব, সুলতান মাহমুদ অব গজনী, দিল্লি, ১৯৬৭, পৃ. ৮২।
- ৪. সুলতান মাহমুদ কতবার ভারত অভিযান করেন, এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। স্যার হেনরি ইলিয়টর্তার ‘হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া অ্যাজ টোল্ড বাই ইটস ওন হিস্টরিয়ান’ (খণ্ড-২, পৃ. ৪৩৪-৭৮) গ্রন্থে ১৭ বার ভারত অভিযানের কথা উল্লেখ করেছেন। আরও দেখুন-লেনপুল, মিডিয়াভ্যাল ইন্ডিয়া আন্ডার মহামেডান রুল ৭১২-১৭৬৪, লন্ডন, ১৯১৬, পৃ. ১৮-১৯, পাদটিকা দ্রষ্টব্য। ইংরেজ ঐতিহাসিক ভি এন মুর-এর মতে, মাহমুদ ভারত অভিযান করেছিলেন ১২ বার। (ভি এন মুর, সোমনাথ,কলকাতা, ১৯৪৮)।
- ৫. এ কে এম আবদুল আলিম, প্রাগুক্ত, পৃ. ২০।
- ৬. এস এ এ রিজভি, দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ওয়াজ ইন্ডিয়া, খণ্ড-২, অনুবাদ-অংশুপতি দাশগুপ্ত, অতীতের উজ্জ্বল ভারত, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, পুনর্মুদ্রণ, কলকাতা, ২০১৫, পৃ. ৬৯।
- ৭. মুহম্মদ হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২।
- ৮. মুহম্মদ নাজিম, লাইফ অ্যান্ড টাইমস্ অফ সুলতান মাহমুদ অফ গজনী, কেমব্রিজ, ১৯৩১; পুনর্মুদ্রণ, দিল্লি, ১৯৭১, পৃ. ২০৯-২৪। ডি এন ঝা, আর্লি ইন্ডিয়া : এ কনসাইজ হিস্টরি; বাংলা অনুবাদ-গৌরীশংকর দে, আদি ভারত : একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. ১৬৬।
- ১০. এ কে মজুমদার, চালুক্যস অফ গুজরাট, বম্বে, ১৯৫৬, পৃ. ৪৩।
- ১১. ডি এন ঝা, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৬।
- ১২. ঈশ্বরীপ্রসাদ, এ শর্ট হিস্টরি অফ মুসলিম রুল ইন ইন্ডিয়া, দ্য ইন্ডিয়ান প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, এলাহাবাদ, ১৯৬২, পৃ:৪৭।
- ১৩. ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার, হিস্টরি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, খণ্ড-১, লন্ডন, ১৮৯৯-১৯০০,পৃ. ৯৩।
- ১৪. আলবেরুনী ভারত ইতিহাসের দিকপাল ঐতিহাসিক। তাকে উপেক্ষা করা যায় না। তিনি সোমনাথ মন্দির আক্রমণ সম্বন্ধে যে সমস্ত বক্তব্যতার ‘ভারততত্ত্ব’ গ্রন্থে পেশ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়। বার বার আক্রমণও যুদ্ধ একটা অঞ্চলে প্রভাব ফেলতেই পারে। কিন্তু আলবেরুনীর ভাষাটা লক্ষ্য করুন—মাহমুদের আক্রমণে হিন্দুরা ধূলোর মতো চারিদিকে উড়ে গেলেন। আলবেরুনী সম্পর্কে রমিলা থাপার বলেছেন, তিনি মাহমুদকে পছন্দ করতেন না। ফলে ভারতের সমস্যার জন্য মাহমুদের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে তার দ্বিধা হয়নি। (রমিলা থাপার, সোমনাথ—দ্য মেনি ভয়েসেস অফ হিস্টরি, পেঙ্গুইন বুকস ইন্ডিয়া, নিউ দিল্লি, ২০০৮, পৃ. ২০৭-০৮)। মাহমুদের সভা-ঐতিহাসিক উতবীর সোমনাথ সংক্রান্ত বর্ণনায়ও যে বহু অবাস্তব অনৈতিহাসিক ও অবিশ্বাস্য কাহিনি স্থান পেয়েছে সে প্রসঙ্গেও রমিলা থাপার আমাদের হুশিয়ারী না দিয়ে পারেননি। (রমিলা থাপার, প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৭-০৮)। উতবী লিখেছেন, সোমনাথ মন্দির আক্রমণে হত্যা করা হয় ১৫০০০ ও বন্দি করা হয় ৫ লক্ষ হিন্দুকে। ১৮৭১-এ প্রথম লোক গণনাতে ভারতের লোকসংখ্যা ছিল ২৫.৪ কোটি। প্রায় ৯০০ বছরেরও আগে মাহমুদের সময়ে উপমহাদেশের লোকসংখ্যা যে এর চেয়েও অনেক কম ছিল তা না মেনে উপায় নেই। তার মধ্যে একটি যুদ্ধেইমারা গেলেন ১৫০০০ আর বন্দি হয়ে গেলেন ৫ লক্ষ-এ অবিশ্বাস্য। এই পরিসংখ্যান কিসের উপর ভিত্তিকরে বলেননি উতবী। তাছাড়া উতবী কোনো অভিযানেই মাহমুদের সঙ্গী ছিলেন না। ফলে প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা থেকে উতবী এসব লেখেননি। এগুলি কল্পকাহিনি মাত্র।
- ১৫. আর এইচ ডেভিস, লাইভস অফ ইন্ডিয়ান ইমেজেস, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ইউ এস এ, ১৯৯৭, পৃ. ১০০; ভারতীয় সংস্করণ, দিল্লি, ১৯৯৯।
- ১৬. গেজেটিয়ার অফ দ্য বম্বে প্রেসিডেন্সি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৫২৩; ইলিয়ট ও ডওসন সম্পাদিত, হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া অ্যাজ টোল্ড বাই ইটস ওন হিস্টরিয়ান, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২৪৮; আল ক্যাজবিনি, আসারুল বিলা, ইলিয়ট ও ডওসন সম্পাদিত, প্রাগুক্ত, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৯৭ ও ৯৭; রমিলা থাপার, সোমনাথ: একটি ইতিহাস—বহু আখ্যান; দেখুন-রমিলা থাপার, আখ্যানবলি এবং ইতিহাসের নির্মাণ, অনুবাদ-নুপুর দাশগুপ্ত, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০০৮,পৃ. ৪১। উইলসন সাহেব এমনও বলেছেন যে, সােমনাথ মন্দিরে আদৌ কোনো মূর্তি ছিল না। সুতরাং সুলতান মাহমুদ মূর্তি ভঙ্গ করবেন কিভাবে? সোমনাথ শিবলিঙ্গের নাম, সে লিঙ্গও ফাঁপা নয়, নিরেট। কাজেই এর অভ্যন্তরে কোনো ধনরত্ন থাকতে পারে না। ঐতিহাসিক স্ট্যানলি লেনপুলের অভিমতও এটাই। দেখুন-ইলিয়ট ও ডওসন, খণ্ড-২, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭৬।
- ১৭. মাশরণশ, কমিউনাল হিস্টরি অ্যান্ড রামাস অযোধ্যা, বাংলা অনুবাদ-অরবিন্দ হালদার, ভারতের সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস ও রামের অবোধ পত্রপুট। কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ. ২৩।
- ১৮. রামশরণ শৰ্মা, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩।
- ১৯. ডি ডি কোশাম্বী, অ্যান ইন্ট্রোডাকসন টু দ্য স্টাডি অফ ইন্ডিয়ান হিস্টরি, বাংলা অনুবাদ- গৌতম মিত্র, ভারত-ইতিহাস চর্চার ভূমিকা, তৃতীয় মদ্রণ, কেপি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ২০১৩, পৃ. ৩০৮।
- ২০. পি ভাটিয়া, দ্য পারমারস, দিল্লি, ১৯৭০,পৃ. ১৪১; হরবংশ মুখিয়া, মিডিয়াভ্যাল ইন্ডিয়ান হিস্টরি অ্যান্ড দ্য কমিউনাল অ্যাপ্রোচ : অন্তর্ভুক্ত-রমিলা থাপার হরবংশ মুখিয়া ও বিপানচন্দ্র সম্পাদিত, কমিউনালিজম অ্যান্ড দ্য রাইটিংস অফ ইন্ডিয়ান হিস্টরি, বাংলা অনুবাদ-তনিকা সরকার, সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত ইতিহাস রচনা, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, কলকাতা, ১৯৮৯, পৃ. ৪৭।
- ২১, রমিলা থাপার, কমিউনালিজম অ্যান্ড হিস্টরিক্যাল লিগ্যাসি : সাম ফ্যাক্টস; দেখুন-সোস্যাল সায়েন্টিস্ট, জুন-জুলাই, ১৯৯০, পৃ.১৩।
- ২২. রমিলা থাপার, কমিউনালিজম অ্যান্ড হিস্টরিক্যাল লিগ্যাসি : সাম ফ্যাক্টস, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯, নোট ২৩।
- ২৩. আর এম ইটন, টেম্পল ডি-সিক্রেশান ইন প্রি-মডার্ন ইন্ডিয়া, ফ্রন্টলাইন, ২২ ডিসেম্বর ২০০০ ও ০৫ জানুয়ারি ২০০১।
- ‘সোমনাথ, থানেশ্বর, মথুরা, কনৌজের মন্দিরের মতো সম্পদশালী মন্দিরগুলির ধ্বংসকারী গজনীর মামুদ বিপুল ধনরত্ন লুণ্ঠন করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, নীতির পরিবর্তন ঘটেছিল। মামুদ পূর্বতন সঞ্চয় আত্মসাৎ করার স্বাভাবিক পদ্ধতিটাই অনুসরণ করেছিলেন।’ (দেখুন-ডি ডি কোশাম্বী, প্রাগুক্ত, পৃ.৩১২)।
- ২৪. ঈশ্বরীপ্রসাদ,এ শর্ট হিস্টরি অফ মুসলিম রুল ইন ইন্ডিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৩-৪৪।
- ২৫. ভি এ স্মিথ, অক্সফোর্ড হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৫৮, পৃ. ২০৮।
- ২৬. মুহম্মদ হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭১।
- ২৭. মুহম্মদ হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮১।
- ঐতিহাসিক মুহম্মদ হাবিব এ প্রসঙ্গে আরও বলেন : “গজনবিদ সেনা কোনও পুণ্যবান ধর্মযোদ্ধার দল ছিল না যাদের বাঁচা-মরার প্রেরণা ছিল বিশ্বাস; এ ছিল বেতনভুক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞদের নিয়ে গঠিত তালিকাভুক্ত সেনার বাহিনী যারা হিন্দু মুসলমান উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়তে সমানভাবে অভ্যস্ত ছিল। দুটি মাত্র পরবর্তী অভিযানে স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দেয়, কিন্তু নিয়মিত সেনার তুলনায় তাদের অনুপাত ছিল নগণ্য। দ্রুত সুশৃঙ্খল গতিবিধির পক্ষে, মাহমুদ তাদের উপযুক্ত মনে করেননি। জয়গর্বে অন্ধ শক্তির সজ্জায়, সুলতান দৃষ্টিভক্তি ও মেজাজে অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক ছিলেন। তিনি কখনই হাতে কলমে প্রয়াসী হননি। এতগুলি প্রাণ ‘স্বর্গোদ্যানে হারিয়ে’ অথবা পয়গম্বরের বাণীতে উদ্বুদ্ধ করার পক্ষে উর্বরক্ষেত্র ভারতে নষ্ট করে প্রচারক ব্রতীর যে হৃদয় হয়ত কাঁদত তা থেকে মাহমুদ বঞ্চিত ছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল হীনতর, আরও সহজসাধ্য। ‘অবিশ্বাসী’র পার্থিব দেবমূর্তি কেড়ে নিয়ে সন্তুষ্ট মাহমুদ আর তাকে ধর্মান্তরে বাধ্য করেননি। তিনি ভারতকে যে অমুসলমান দেখেছিলেন, সেই অমুসলমাই রেখে এ দেশ থেকে বিদায় নেন।” (মুহম্মদ হাবিব, মাহমুদের চরিত্র ও কীর্তির মূল্য, অন্তর্ভুক্ত-ইরফান হাবিব সম্পাদিত, মধ্যকালীন ভারত, খণ্ড-৪, কে পি বাগচি অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ২০০৫, পৃ.১২)।
- ২৮. মুহম্মদ হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃ.৮১।
- ২৯. মুহম্মদ হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৭,৮২।
- ৩০. মুহম্মদ নাজিম, প্রাগুক্ত, কেমব্রিজ, ১৯৩১; পুনর্মুদ্রণ, দিল্লি, ১৯৭১; দেখুন-এ কে এম আলিম, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬।
- ৩০ক. ঐতিহাসিক এলফিনস্টোন লিখেছেন : It is nowhere asserted that He ever put a Hindu to death except in battle or in the storm of a fort’; দেখুন-মুহাম্মদ ইমান-উল-হক, ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশনী, ঢাকা, পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ, তৃতীয় মুদ্রণ, ২০১৪, পৃ. ৪০। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী টোপা ও তার পলিটিকস্ ইন প্রি-মুঘল টাইমস্ গ্রন্থে (১৯৭৬, পুনর্মুদ্রণ) এ বিষয়ে লিখেছেন : ‘The temples in fact brocken during the campaings for reasons other than religious, but in the time of peace Mahmud never demolished a single temple’.
- ৩১. মানবেন্দ্রনাথ রায়,দ্য হিস্টরিক্যাল রোল অফ ইসলাম, বাংলা অনুবাদ-অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হাই, রেনেসাঁস, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৬২।
- ৩২. ঈশ্বরী টোপা, পলিটিক্স ইন প্রি-মুঘল টাইমস, ১৯৭৬, পুনর্মুদ্রণ; দেখুন-এ কে এম আলিম, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬।
- ৩৩, আবুল কাসিম ফিরিস্তা : তারিখ-ই-ফিরিস্তা (হিস্টরি অফ দ্য মহামেডান আওয়ার ইন ইন্ডিয়া), জে ব্রিগস সম্পাদিত, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ, ১৯৬৫।
- ৩৪. মোল্লা আহমদ থাট্টাভি ও অন্যান্য : তারিখ-ই-আলফি, ইন্ডিয়া অফিস, পাণ্ডুলিপি ১১০-১১১।
- ৩৫. ইবনুল আসির, আল কামিল ফিত-তারিখ, থর্ণবার্গ সম্পাদিত, লিডেন।
- ৩৬. রামপ্রাণ গুপ্ত, পাঠান রাজবৃত্ত, কলকাতা, ১৯১৮, পৃ. ৪১, নোট ২।।
- ৩৭. এস এম জাফর, মিডিয়াভ্যাল ইন্ডিয়াআন্ডার মুসলিম কিংস, দ্বিতীয় খণ্ড, দ্য গজনাওয়াইডস, দিল্লি, ১৯৭২, পৃ. ১২২-২৩, ১৭৯।
- ৩৮. এসএম জাফর, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০০, ১৭৩।
- ৩৯. আবু নসর উৎবী, তারিখ-ই-ইয়ামিনী, আলি ও স্প্রেঙ্গার সম্পাদিত, আরবি পাঠ, দিল্লি, ১৮৪৭; জে রেনল্ডস অনূদিত, ইংরেজি পাঠ, লন্ডন, ১৮৫৮।
- ৪০. হাসান নিজামি:তাজ-উল-মাসির; দেখুন-ইলিয়ট ও ডওসন সম্পাদিত, খণ্ড-৩, লন্ডন, ১৮৬৭; পুনর্মুদ্রণ, নিউদিল্লি, ১৯৮১।
- ৪১. ঈশ্বরীপ্রসাদ, এ শর্ট হিস্টরি অফ মুসলিম রুল ইন ইন্ডিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭;পাদটীকা ৫।
- ৪২. মুহম্মদ হাবিব, প্রাগুক্ত, পৃ.৫৩।
দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন,
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (২য় পর্ব)