ইরান আর ইসরাইল, দুটি দেশই আরবিভাষী নয়। অথচ আরবী ভাষী দেশ গুলির উপর মাতব্বরি করে। এটাই হচ্ছে রুশ, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মান ইত্যাদি পাশ্চাত্যের দেশগুলির এখনও পর্যন্ত আরব দেশগুলির উপর বিজয় লাভের নমুণা। এখানে আরব ব্যারোমিটার নামক সমীক্ষায় এই দুটি দেশকেই আরবরা তাদের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করে। ২০১৯- এও এই ধরনের একটি সমীক্ষা হয়েছিল।
লেবানন, ফিলিস্তিন, মিশর, জর্ডান, সুদান, মরক্কো, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, ইরাক, তিউনিসিয়া, কুয়েত মোট ১২ টি দেশের মানুষ নিয়ে এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে নেই সৌদি আরব, আমিরাত, বাহারায়েন, ওমান, সিরিয়া ইত্যাদি দেশগুলি। শেষেক্তো দেশগুলির মধ্যে ওমান বাদে সিরিয়া সহ বাকি দেশগুলি নিশ্চিতভাবে ইরানকেই তাদের মহাবিপজ্জনক বলে মনে করে। সমীক্ষায় সিরিয়া যে নেই তাতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। সিরিয়ার সোয়া ২ কোটি মানুষের মধ্যে ১ কোটি মানুষই তুরস্ক, জর্ডান, লেবানন ইত্যাদি দেশগুলিতে শরণার্থী হিসেবে তাঁবুতে বাস করে। সৌজন্যে ইরান-রাশিয়া।
ইসরায়েলের আশেপাশের দেশগুলি লেবানন, জর্ডান, মিশর, ফিলিস্তিন এই দেশগুলি স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলকে তাদের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক মনে করে। তবে এই ৪ টি দেশেরই শাসককুল ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে চলে। সাধারণ জনতা কিন্তু প্রবলভাবে ইসরাইল-বিরোধী। সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। লেবানন, ফিলিস্তিন, মিশর, জর্ডন বিপজ্জনক সূচকে ইরানকে রেখেছে শতকরা হিসাবে ৭,৩,৬ এবং ১১য়। সেই জায়গায় ইসরাইলকে রেখেছে ৭৯, ৬৩, ৫৪ ও ৪২ %-এ। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে ইরান অপেক্ষা ইসরাইলকে প্রবলভাবে তাদের শত্রু বলে মনে করে। ২০১৯-এর সমীক্ষায় ছিল প্রায় একই রকম। তবে বিপজ্জনক সূচকে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে রাখা হয়েছিল। এই বছর এই দুটি দেশকে রাখাই হয়নি। যেহেতু গত বছরের সমীক্ষায় ইরান ও ইসরাইল প্রতিযোগিতা চালিয়েছিল কে আরবদের কাছে সব থেকে বেশি বিপজ্জনক। তাই এই বছরের সমীক্ষায় এই দুটি দেশকেই রাখা হয়েছে।
সুদান, মরক্কো, লিবিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া এই আরবদেশগুলো প্রকৃতপক্ষে ইরানকে তাদের জন্যে বিপজ্জনক বলেই মনে করে না, থ্রেট সূচকে অবস্থান ৪ থেকে ০%। এই দেশগুলির কাছে ইসরায়েল তুলনামূলকভাবে ইসরায়েল সংলগ্ন দেশগুলি অপেক্ষা কম বিপজ্জনক ৩৬% থেকে ১১%।
ইরান আরব দেশগুলির মধ্যে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে সরাসরি নাক গলায়। সিরিয়া ও লেবানন সম্পর্কে বলেছি। এবার বলবো ইরাক ও ইয়েমেন সম্পর্কে। ইরান প্রেমী কিংবা ইরানকে বিপজ্জনক মনে করে এমন সৌদি বিরোধীরা বিশেষ করে ইয়েমেনের ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে তুলোধোনা করে। বিমান আক্রমণ করে নাকি তাদের মেরে ফেলছে। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের পক্ষে বললেই মাদখালি, ওহাবী, তেল রাজাদের রিয়াল খোর, শিয়া বিরোধী এইসকল গালাগালি জোটে। কিন্তু সেখানকার ভুক্তভোগী আরবী ভাষী মানুষগুলি ইরানকে ইসরাইলের থেকেও বহু বেশি ঘৃণা করে। ইরাকে ৫৫ শতাংশের মতো মানুষ শিয়া, ইয়েমেনে ৩৫%-এর মত শিয়া থাকা সত্বেও মানুষগুলি ইসরাইল অপেক্ষা ইরানকে বেশি ঘৃণা করে। সূচক বলছে, ৩১% ইরাকের মানুষ ইরানকে ঘৃণা করে বা তাদের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক মনে করে (২০১৯-এও তাই ছিল)। ৩৩% ইয়েমেনের আরবিভাষী ইরানকে অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক মনে করে (২০১৯-এও ছিল ৩৩%)। সে জায়গায় বিপজ্জনক সূচকে ইসরাইল ইরাকে ২৪% (ইসরায়েল বিরোধিতা ২০১৯-এর তুলনায় ৩% বেড়েছে, ছিল ২১%) ও ইয়েমেনে ২১% (ইসরায়েল বিরোধিতা ৩% কমেছে, ছিল ২৪%)। খাড়ির আরব দেশগুলির কাছে ইরান কতটা বিপজ্জনক তা কুয়েতের সমীক্ষা দেখে বোঝা যায়। কুয়েতের ৪২% মানুষ ইরানকে ঘৃণা করে। ১৮% ইসরায়েলকে।
আমার প্রশ্ন, ইসরায়েলই আরবদের কাছে বিপজ্জনক ছিল, ইরান কি করে হল? কারা করল? ন্যাটো- (মার্কিন, ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ), রুশ বাহিনি মজুদ থাকা সত্ত্বেও ইরান আরবিভাষীদের কাছে বিপজ্জনক হল কি করে? কার দ্বারা?
আরব বিশ্ব ক্রমে ধর্মবিমুখ হতে যাচ্ছে?
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে এক ব্যাপক ও গভীর সমীক্ষা দ্বারা জানা যাচ্ছে আরবরা ক্রমান্বয়ে তাদের ধর্ম অস্বীকার করে যাচ্ছে। ধর্মহীনতা মানে সবসময় নাস্তিকতা নয়। ইসলাম ধর্ম পালনে শিথিলতাও বোঝায়।
সমীক্ষা থেকে জানা যায় আরব বাসীরা নারীর অধিকার,স্থানত্যাগ ও নিরাপত্তা, যৌনতা বিষয়ক বেশ কয়টি বিষয়ে কী ইচ্ছা পোষণ করে?
এ বিষয়ে মোট ৭ টি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। ‘আরব ব্যারোমিটার রিসার্চ নেটওয়ার্ক’র তরফ থেকে বিবিসি আরাবিক সমীক্ষা চালিয়েছিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনি আবাসন সহ ১০ টি দেশের ২৫০০০ ও বেশি ব্যক্তিকে ২০১৮-র বর্ষশেষ ২০১৯-এর বসন্ত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
২০১৩ থেকেই দেখা যাচ্ছে, উক্ত এলাকা জুড়ে ক্রমান্বয়ে ধর্মবিমুখতা ৮% থেকে বেড়ে ১৩% হয়েছে। ৩০ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের মধ্যে ধর্ম বিমুখতার হার বেশি। প্রায় ১৮%। তবে ইয়েমেন ব্যতিক্রম।
সমস্ত এলাকার মানুষজন নারী অধিকার রক্ষায় প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। ব্যতিক্রম আলজেরিয়া, ৫০% এর নিচের মানুষ মনে করে নারী অধিকার রক্ষায় দেশের সর্বেসর্বা একজন নারীকেই হতে হবে।
কিন্তু একান্ত ঘরোয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অধিকাংশই, বিশেষ করে মহিলারা চান তাঁদের স্বামীদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হোক। শুধুমাত্র মরক্কোতেই স্বামীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী মেনে নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে কয়েক শতাংশ কম মাত্র।
সমকামের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সমস্ত এলাকা জুড়ে অল্প থেকে অত্যল্প প্রতিক্রিয়া জানা গেছে। লেবানানের মত খোলামেলা সমাজেও ৬%-এর বেশি প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য হত্যা (Honour Killing) যেখানে আত্মীয়-স্বজন, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে, পরিবারের অসম্মান হোক এরকম ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে থাকে যাতে পরিবারের কোন অসম্মান না হয়।
ভ্লাডিমির পুটিন, ট্রাম্প, তাইয়্যেব এরদোগান এই বিশ্বনেতাদের নেতৃত্বের বিষয়ে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সর্বশেষে এসেছে। তুলনামূলকভাবে এগারোটার মধ্যে সাতটি সমীক্ষার ক্ষেত্রে অর্ধেকেরও বেশি এরদোগান সমর্থন পেয়েছেন। লেবানন, লিবিয়া এবং মিশর পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে এরদোগানের থেকে এগিয়ে রেখেছে।
যে কোন দেশের ১০০ জনের বেশি লোক প্রশ্নের উত্তর জানি না বা বলতে পাররো না বললে তাকে ধর্তব্যর মধ্যে আনা হয়নি।
আরব দেশগুলির এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর নিরাপত্তাহীনতার একটি মূল কারণ। বলেছেন সমস্ত এলাকার জন্য ইজরায়েল প্রধান শত্রু, তারপরে তারপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তিন নম্বরে ইরান। আশ্চর্যজনকভাবে ইরান। ইজরয়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিতে দিতে আরব দেশগুলির হুমকি হয়ে গেল। রুমাল হয়ে গেল বেড়াল।
নিরাপত্তাহীনতার কারণে সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি পাঁচজনে একজন আরবিভাসি দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন।। সুদানের ক্ষেত্রে অর্ধেকের বেশি। আর্থিক কারণ সর্বোপরি দেশ ত্যাগের মূল কারণ। এর মধ্যে অনেকগুলো বিকল্পকে সামনে আনা হয়েছিল তার মধ্যে আর্থিক বিকল্পটি প্রাধান্য পেয়েছে।
দেশত্যাগ ইচ্ছুক এই মানুষগুলোর কাছে ইউরোপ অপেক্ষা উত্তর আমেরিকা বেশি আকর্ষণীয়।
By Becky Dale, Irene de la Torre Arenas, Clara Guibourg, and Tom de Castella.
BBC Arabic are covering this subject all this week. Follow #BBCARABICSURVEY on Twitter, Facebook and Instagram for more.
কর্মপদ্ধতি:
সমীক্ষা টি পরিচালিত হয়েছে আরো ব্যারোমিটার নামক প্রিন্স্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা মূলক সংগঠন। এঁরা ২০০৬ থেকে এধরনের সমীক্ষা করে আসছেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনি এলাকাসহ দশটি আরবদেশের ২৫৪০৭ জনকে একান্তে ডেকে প্রশ্ন গুলি করা হয়েছিল।
বিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিনি উপনিবেশগুলি সহ এটি একটি আরব বিশ্বের সমীক্ষা। এখানে ইজরায়েল বা ইরান এর কোন অবদান নেই। এলাকার প্রায় সমস্ত দেশকেই স্থান দেওয়া হয়েছিল যদিও বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ সমীক্ষার ক্ষেত্রে ভালো করে এবং পুরোপুরি সহায়তা দান করেনি। কুয়েত থেকে ফলাফল এত দেরিতে এসেছে যে বিবিসি আরবিক সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেনি। সমীক্ষায় সিরিয়া যে স্থান পাবে না সে তো স্বাভাবিক।
কিছু আইনি এবং সাংস্কৃতিক কারণের জন্য কয়েকটি দেশ কিছু প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছিল।
You can find out more details about the methodology on the Arab Barometer website.
ইরানেও কর্মবিমুখতা বাড়ছে। সেখানে ধর্ম না মানার হার ৩৬.৪%। ক্রমে আরও বাড়ছে।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।