লিখেছেনঃ ড. শ্যামাপ্রসাদ বসু
বর্তমান উত্তরপ্রদেশের ফয়জাবাদ জেলার অন্তর্গত সরযূর তীরে অবস্থিত অযােধ্যা নগরীকে অনেকে রামায়ণের বর্ণিত শ্রীরামচন্দ্রের রাজধানী বলে অনুমান করেন এবং কেউ কেউ বিশ্বাসও করেন। তাদের বিশ্বাস বা অনুমানের প্রধান ভিত্তি হল রামায়ণের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত আস্থা। অর্থাৎ রামায়ণ রচিত হয়েছে ত্রেতাযুগে—তার অর্থ হল খ্রিস্টপূর্ব ৩১০২ অব্দে যখন কলিযুগ শুরু হয়েছে তারও পূর্বে কোন এক সময়ে।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা। খনন কার্যের দ্বারা আবিষ্কৃত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলিই প্রাচীনত্বের পক্ষে সবচেয়ে বড় সাক্ষী বলে অদ্যাপি ঐতিহাসিকেরা স্বীকার করে এসেছেন। অর্থাৎ এককথায় পাথুরে প্রমান তার উপরে আর কেউ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মহাভারতের যুগে যদিও বা কিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় কিন্তু রামায়ণি যুগের কোন নিদর্শন অদ্যাবধি মেলেনি।
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন অধিকর্তা শ্রী আর সিং অযােধ্যার অন্ততঃ ১৭টি স্থানে অনুসন্ধান এবং খনমােচন ঘাট ও স্তম্ভ ঘাট নামে পরিচিত দুইটি স্থানে খনন কার্য চালিয়ে দেখেছেন বসতি চিহ্ন খ্রিস্টপূর্ব দুই শতক অপেক্ষা প্রাচীন নয়। একমাত্র মনি পর্বত ও সুগ্রীব পর্বত নামক দুই স্থানকে মৌর্য যুগের সমকালীন বলা যায়। মৌর্য যুগ ইতিহাসে শুরু হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে। ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন মহা অধিকর্তা শ্ৰীব্রজবাসি লাল অযােধ্যায় প্রায় ছ’মাস (তিন ঋতু) ধরে খনন কার্য চালান। যে ১৪টি স্থানে এই খনন কার্য চালানাে হয় তার থেকে অনুমান করা যায় যে অযােধ্যা কোন ভাবেই খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকের পূর্বে গড়ে ওঠেনি। এই খনন কার্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল রাম জন্মভূমি ঢিপি, হনুমানগড়ের পশ্চিমদিকের মুক্ত অঞ্চল এবং সীতা-কিরসসাই। “ইন্ডিয়ান আর্কিয়ােলজি” (১৯৭৬-৭৭) পত্রিকায় শ্রীলালের রিপাের্ট প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছিলেন রাম-জন্মভূমি এলাকায় প্রথম বসতি ছিল আনুমানিক খ্রিঃ পূঃ সপ্তম শতাব্দীতে।
কিন্তু প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার কাছে উক্ত সময়কালও খুব বেশি প্রাচীন বলে মনে হয়েছে। এর কারণ হল অযােধ্যার আদি বসতির কালসীমা কোনরূপ কঠিন পরীক্ষা পদ্ধতির সাহায্যে স্থিরিকৃত হয়নি। আদি বসতির অপেক্ষাকৃত নির্ভরযােগ্য সূক্ষ্ম কিন্তু উক্ত স্থানে প্রাপ্ত জৈন পােড়া মাটির মূর্তি থেকে পাওয়া গেছে। জৈন মূর্তিটিকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওটি মৌর্য যুগের অথবা খ্রিঃপূঃ চতুর্থ শতকের শেষ ভাগ বা খ্রিঃপূঃ তৃতীয় শতকের গােড়ার দিকের। খ্রিঃপূঃ ৩১০২ অব্দকে পুরাণের ভিত্তিতে সাধারণভাবে মনুর যুগ বলা হয়। ইতিহাসে ভারতের প্রথম সনাতনি রাজা হিসেবে মনুকে গণ্য করা হয়ে থাকে। রামকে গণ্য করা হয় সেই ইক্ষাকু বংশের ৬৫ প্রজন্ম পরের বংশধর অর্থাৎ রামের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ১৯৫০ অথবা ১৯৩০ অব্দ। (পুরাণের ভিত্তিতে হিসেবের জন্য, দ্রষ্টব্য, দি বৈদিক এজ, পৃ. ২৭৭, ভারতীয় বিদ্যা ভবন)।
অথচ বর্তমান অযােধ্যায় খনন কার্য চালিয়ে যে সব মুদ্রা পাওয়া গেছে তার মধ্যে প্রাচীনতম মুদ্রাগুলির সময়কাল হল খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের শেষদিকে অর্থাৎ পুষ্যমিত্র শুঙ্গের ষষ্ঠ প্রজন্মে বংশধর ধনদেব-এর আমল (“দি এজ অব ইমপিরিয়্যাল ইউনিটি”, পৃ. ১৫৯ এবং ১৭৩-১৭৪, ভারতীয় বিদ্যাভবন) সুতরাং বর্তমান অযােধ্যার সময়কালকে খ্রিস্টপূর্ব দু’হাজার অথবা চার হাজার বলার মত কোন পাথুরে প্রমাণ আজ পর্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিকদের হাতে আসেনি একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
অযােধ্যা সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচীন উল্লেখ অথর্ব বেদে পাওয়া যায়। যার রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে ৮০০ অব্দের মধ্যে। এতে যে অযােধ্যার কথা বলা হয়েছে তা হল এক দেবনগরী এবং এটি অষ্টবৃত্ত ও নবদ্বার সমন্বিত, এর চতুর্দিকে জ্যোতির্বলয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে রচিত বৌদ্দ পালি গ্রন্থ “সংযুক্তি নিকায়” (তৃতীয় খণ্ড পৃ. ৩৫৮ ও চতুর্থ খণ্ড পৃ. ১৬২ পাদটীকাসহ, নালন্দা সংস্করণ) উল্লেখিত অযােধ্যার অবস্থিতি গঙ্গার তীরে ফয়জাবাদ জেলার সরযুর তীরে নয়। রামশরণ শর্মা লিখেছেন, “গঙ্গা বলতে সাধারণভাবে সরযু সহ সব নদীকেই বােঝায় প্রাচীন পালি গ্রন্থে এ জাতীয় ধারণার কোন সমর্থন মেলে না।” ঐতিহাসিক শর্মার মতে পালিগ্রন্থ সমূহে সরভু বা সরযুর উল্লেখ অবশ্য আছে, কিন্তু এমন প্রসঙ্গে যার সঙ্গে অযােধ্যার কোনােরূপ সম্পর্ক নেই। ৩০০ খ্রিস্টাব্দের কিছু আগে অথবা পরে লেখা “বিষ্ণুস্মৃতি”র পঁচাশিতম অধ্যায়ে প্রায় ৫২টি তীর্থস্থানের তালিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে অযােধ্যার নাম নেই। এটা বিশেষভাবে উল্লেখ্য, “বিষ্ণুস্মৃতি”তেই প্রথম ভারতের প্রাচীন তীর্থস্থানগুলির নাম পাওয়া যায়। লক্ষ্যনীয় একাদশ শতকে গাহড়বাল রাজবংশের মন্ত্রী শ্রীভট্ট লক্ষীধর তার সমকালীন উত্তর ভারতের সমস্ত ব্রাহ্মণ্যতীর্থ পরিক্রমা করে রচনা করেছিলেন “তীর্থ বিবেচনা কান্ড।” কিন্তু তিনি সেখানে অযােধ্যার উল্লেখ করেন নি।
বরং বহুকাল থেকে অযােধ্যা ছিল জৈনদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান। জৈনরা বিশ্বাস করেন এখানে বহু জৈন তীর্থংকর বা ধর্ম প্রচারকরা জন্মগ্রহণ করেছেন। সপ্তম শতকে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং অযােধ্যাকে বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার কেন্দ্র হিসেবে লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি অযােধ্যায় একশত বৌদ্ধ বিহার ও দশটি দেব মন্দির (ব্রাহ্মণ্য এবং অন্যান্য) দেখেছিলেন। এরও পূর্বে পঞ্চম শতকে আরেক চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন “সাকেত” (অযােধ্যা অথবা তৎসংলগ্ন নগরী বলে অনেকে মনে করেন) এ বুদ্ধের “দণ্ডযষ্ঠি” বা দণ্ড ধারণের জন্য গাছের ডালের উল্লেখ করেছেন।
কৌতূহলের বিষয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে অযােধ্যায় একটি রামমন্দির ছিল বলে যাঁরা দাবি করেন সেই দাবির সমর্থনে কিন্তু কোন ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। নেই কোন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনও। অথচ ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে হাসিমপুর জেলা, বঁসি জেলা এবং নওদা জেলাতেও প্রচুর রাম, সীতা লক্ষ্মণের পােড়ামাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, বর্তমান অযােধ্যাকে রামের জন্মভূমি বলা হলেও সেখানে কোন রামের প্রাচীন মূর্তি অথবা রামের মন্দির দ্বাদশ শতক পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। (হানস, বাক্কার, অযােধ্যা, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৪৫ এবং পৃ. ১৪৩) তবে রামায়ণের অযােধ্যাকে স্মরণ করে তাইল্যাণ্ডে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে রাজা রাজাধিপতি এক অযােধ্যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
রামায়ণের কাহিনীতে বলা হয়েছে বনবাসে যাওয়ার সময়ে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ অযােধ্যা ত্যাগ করে শৃঙ্ঘভেরাপুর (বর্তমান শৃঙ্গুর)-এ আসেন। তারপর গঙ্গা পার হয়ে চিত্রকূট পাহাড়ের কাছে ভরদ্বাজ আশ্রমে কিছু সময় বিশ্রামে অতিবাহিত করেন। এই চারটি অঞ্চলে খননকার্য চালিয়ে একটি সময়কালের সাদৃশ্য প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খুঁজে পেয়েছেন—তা হলাে এই অঞ্চলগুলি উত্তরের কৃষ্ণ মসৃণ তৈজস পাত্র সংস্কৃতির (খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-খ্রিঃপূঃ ১০০) বা Northern Black Polished Ware (NBPW) এর অন্তর্ভুক্ত। অযােধ্যায় এমন কোন মৃৎপাত্র পাওয়া যায়নি যা থেকে বলা যাবে এই অঞ্চল তারও পূর্বে চিত্রিত ধূসর তৈজস পাত্র সংস্কৃতির খ্রিঃ পূঃ ৮৫০-খ্রিঃ পূঃ ৪০০ বা Painted Grey Ware (PGW) অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অথচ রামায়ণের অযােধ্যার বর্ণনা গ্রহণ করলে অন্ততঃপক্ষে বলতে হবে এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তাম্ৰযুগে (খ্রিঃপূঃ ৪০০০) অথবা Copper Age-এ। তাহলে স্বীকার করতে হবে অযােধ্যার অবস্থিতি গাঙ্গেয় অঞ্চল ছাড়া নিশ্চয় অন্য কোথাও ছিল। কারণ বর্তমানের অযােধ্যা সহ গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত অন্য সমস্ত অঞ্চলগুলির উৎপত্তি তুলনামূলকভাবে খুবই সাম্প্রতিক অর্থাৎ খ্রিঃপূঃ সপ্তম শতকের পূর্বে নয়।
রামায়ণের অযােধ্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি সরযূ নদীর তীরে অবস্থিত। এখন এই পুরানো সরযূ নদীকে খুঁজে বার করতে পারলে সন্ধান পাওয়া যাবে প্রাচীন অযােধ্যার। অধ্যাপক রাজেশ কোচার—যিনি বর্তমানে নয়া দিল্লীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনােলজি এন্ড প্রিমেন্ট স্টাডিজ-এর ডাইরেক্টর এবং যিনি অধ্যাপক জয়ন্তবিষ্ণু নারলিকারের সঙ্গে যুগ্মভাবে জ্যোতির্বিদ্যার উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি বলেছেন এই প্রাচীন সরযূর সন্ধান পাওয়া যাবে যমুনা নদীর পশ্চিমে।
সম্প্রতি প্রকাশিত “দি বেদিক পিপল” (ওরিয়েন্ট লঙম্যান, ২০০০) এ অধ্যাপক। কোচার বলেছেন ঋগ্বেদ লিখিত হয়েছে প্রাক-লৌহ যুগে, যে সময়ে আর্যরা গঙ্গা-যমুনা বিধৌত দোয়াব অঞ্চলে প্রবেশ করেনি। ফলে গঙ্গার পূর্ব দিকের অঞ্চল সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল ছিলেন না। ঋগ্বেদে তিনটি নদী–গঙ্গা, গােমতী এবং সরযূর উল্লেখ আছে। তার মধ্যে গঙ্গা খুব গুরুত্বহীনভাবে শেষের দিকের স্তোত্রগুলিতে উল্লেখিত হয়েছে। অন্যদিকে ঋগ্বেদের গােমতী বর্তমান উত্তরপ্রদেশেব পূর্বে প্রবাহিত গােমতী নদী নয় এটি হল বালুচিস্তানে প্রবাহিত সিন্ধুর শাখা নদী গােমাল। আর গােমাল যদি গােমতী হয় তাহলে আজকের গােমতীকে ঋগ্বেদের গােমতী বলা যাবে না এবং ঋগ্বেদের আর্যদের কাছে তা অজ্ঞাত ছিল। এর ফলে সরযূর মত আরও পূর্বে প্রবাহিত নদী সম্পর্কে আর্যদের যে কোন জ্ঞান থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। অর্থাৎ গঙ্গা সমতলভূমিতে যে সরযূ নদী প্রবাহিত তা কোনভাবেই ঋগ্বেদের সরযূ হতে পারে না। তাহলে ঋগ্বেদের সরযূ কোথায় ছিল?
ঋগ্বেদে যমুনা এবং সিন্ধুর মধ্যবর্তী অঞ্চলের সমস্ত নদীর বিবরণ দেওয়া আছে কিন্তু সরযূ নদীর কোন ভৌগলিক বিবরণ নেই। ঋগ্বেদের এই ভৌগলিক বিবরণের অসম্পূর্ণতা দূর করে দিয়েছে তারই সমসাময়িক পারসিক ধর্মগ্রন্থ “আবেস্তা”, “আবেস্তা”র ভাষার সঙ্গে বৈদিক ভাষার বিশেষ কোন তফাৎ নেই। “আবেস্তা”য় আমরা তিনটি নদীর উল্লেখ পাই, হারােয়ু (Haroyu), হারাতবতী এবং হপ্ত হিন্দু, অধ্যাপক কোচারের মতে এই তিনটি নদী হল যথাক্রমে রামায়ণের সরফু, সরস্বতী এবং সপ্তসিন্ধু যা প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানে প্রবাহিত। মনে রাখা প্রয়ােজন আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তান। তথা উত্তর পশ্চিম দিক দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন যদি সরযূ বা হারােয়ু আফগানিস্তানের নদী হয় তাহলে অযােধ্যাকে খুঁজতে হবে এখানে উত্তর ভারতে নয়।
রামায়ণের পাঠক মাত্রেই জানেন রামের পূর্বসূরীদের সঙ্গে ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশের একটা যােগসূত্র ছিল। ইক্ষাকু রাজা মান্ধাতা দ্রুহু (Druhyu)-র রাজা অংগারকে পরাস্ত করেছিলেন। অংগারের (Angara) নিকট বংশধর ছিলেন গান্ধার—যার নাম থেকে বর্তমান কাবুলের কিছু অঞ্চলের নাম হয়েছিল গান্ধার। কান্দাহারের মধ্য দিয়ে গান্ধার নামটি আজও বেঁচে আছে। যদি দ্রুহুদের অবস্থান উত্তর-পশ্চিম দিকে হয়ে থাকে তাহলে ইক্ষাকুদের অবস্থানও কাছে-পিঠে হবে। বিতস্তা (মিলাম) এবং সিন্দুর মধ্যবর্তী অঞ্চল কেকয়দের (Kekayas) দখলে ছিল। ওই সময়ে বিবাহ কার্য সম্পন্ন হত নিকটস্থ জনগােষ্ঠীর মধ্যে। এই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখলে, স্বীকার করতেই হবে। অযােধ্যার অবস্থান এদের থেকে খুব একটা দূরে ছিল না। স্মরণ করা যেতে পারে রামায়ণে বর্ণিত এক যজ্ঞ অনুষ্ঠানে কেকয় আমন্ত্রিত হন নি, মনে রাখা প্রয়ােজন। রামায়ণে বর্ণিত নদীগুলির ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে আফগানিস্তানে প্রবাহিত নদীগুলির অবস্থানেরই মিল খুঁজে পাওয়া যায়—উত্তর ভারতের নদীগুলির নয়।
লক্ষ্যণীয় “অযােধ্যাকাণ্ড” এ চিত্রকূট থেকে ভরত যখন রামের পাদুকা সম্বল করে অযােধ্যা ফিরে যাচ্ছেন তখন বাল্মীকি সেই যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে কোথাও সরযূ নদীর উল্লেখ করেন নি। আবার অযােধ্যা থেকে ভরত যখন চিত্রকূট পাহাড় অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিলেন তখনও বাল্মীকি সরযুর উল্লেখ করেন নি। এমন কি রামের বনগমনের সংবাদ পাওয়ার পর ভরত যখন মাতুলগৃহে কেকয়রাজপুর ত্যাগ করে অযােধ্যা অভিমুখে রওনা হলেন তখন বাল্মীকি ভারতে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বহু নদীর নামােল্লেখ করলেও সরযূর কোন নাম নেন নি।
তাহলে প্রশ্ন হবে উত্তর ভারতের বর্তমান অযােধ্যা কোন সময়ে তৈরি হয়েছিল ? এক কথায় এর উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিঃপূঃ ৭ম বা ৬ষ্ঠ শতকে গৌতম বুদ্ধ এবং জৈন গুরু মহাবীরের আমলে—যে সময়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল উত্তরে কৃষ্ণ মসৃন তৈজস পাত্রের সংস্কৃতি (Nothern Black Polished Ware)। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে অযােধ্যাও উপরােক্ত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকৃতপক্ষে খ্রিঃপূঃ ৭ম শতক থেকেই প্রাচীন পুঁথিপত্রে অযােধ্যার উল্লেখ খুব স্পষ্ট দেখা যায়। যার সঙ্গে রামায়ণের অযােধ্যার কোনাে সম্পর্ক নেই।