লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
বোম্বে থেকে ফ্যাশান ম্যাগাজিন ‘Savvy’ তার নভেম্বর ১৯৯২ সংখ্যায় নাস্তিক লেখিকা তসলিমা নাসরিণ এর স্বাক্ষরযুক্ত এক বিশাল আত্মজীবনী প্রকাশ করেছে। এতে কুরআন, ইসলাম, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যৌন স্বাধীনতা, নারী অধীকার প্রভৃতি বিষয়ে তসলিমা খোলাখুলি আলোচনা করেছেন। এতে তিনি কুরআন সম্পকে সম্পূণ মিথ্যা তথ্য পরিবেশ্ন করে পাঠক সমাজকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস করেছেন।
তিনি লিখেছেন, “আমি বাল্যকালে যখন খেলা করতাম, তখন ঐ মা আমাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতো। কিন্তু আমি নামাজ বা কোরান পড়া পছন্দ করতাম না। আমি কোরান বিশ্বাস করিনা। আমি যখন কোরান পড়েছিলাম, তখন তাতে দেখেছি কোরানে বলা হয়েছে – ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ আমি আমার মাতৃদেবীকে বলেছিলাম, ‘আমি বিজ্ঞানের বই পড়ে জেনেছি যে সূর্যেরই চারদিকে পৃথিবী ঘুরছে। কাজেই আল্লাহ একজন মিথ্যাবাদী।’……… মূল বিষয় হচ্ছে যে, আমি চিন্তা করেষ করে বুঝেছি কোরানে সূর্যের ব্যাপারে যা লেখা আছে তা মিথ্যা এবং আমি কখনোই এ ব্যাপারে একমত হতে পারব না।” (সৌজন্যেঃ সাপ্তাহিক কলম, ২রা জানুযারী ১৯৯৩)
জবাবঃ এখানে তসলিমা নাসরিণ স্পস্টভাবে বলেছেন যে তিনি কুরআন শরীফ পড়ে দেখেছেন যে তাতে লেখা আছে, ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ অথচ এটা তসলিমা নাসরিনের সম্পূন মিথ্যা ভাষণ। কুরআন শরীফে ৩০ পারা ১১৪টি সুরা ৬৬৬৬ টা আয়াতের মধ্যে কোথাও একথা লেখা নেই যে ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ তসলিমা নাসরিণ এর এই মিথ্যা ভাষণ পড়েই বোঝা যায় যে তিনি কত বড় মিথ্যাবাদী। বরং কুরআনে একথাই লেখা আছে যে এই যে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে আবতন করছে।
তসলিমা নাসরিন কুরআন শরীফের বিন্দু মাত্র পাঠ না করেই বাগাড়ম্বড়ই করেছেন এবং বাদানুবাদের মধ্য দিয়ে নিজের মূর্খতাকে বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। তসলিমার দাবী যে তিনি এই জন্যই নামাজ পড়েন না যে কুরআনে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। এবং আল্লাহ বলেছেন, ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ আর বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। অথাৎ তসলিমাকে যদি কুরআন শরীফ খুলে দেখিয়ে দেওয়া হয় যে সেখানে লেখা আছে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে তাহলে তিনি আল্লাহকে সত্যবাদী বলে মনে করবেন এবং তিনি নামাজ পড়া শুরু করবেন। তাই তো ?
তাহলে আসুন আমরা দেখি এই মহাবিশ্ব সম্বন্ধে কুরআন আমাদের কি বলছে? কুরআন শরীফের সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, “হুয়াল্লাযী খালাকাল লাইলা ওয়ান্নাহারা ওয়াস শামসা ওয়াল ক্বামারা, কুল্লুন ফি ফালাকিই ইয়াসবাহুন।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৩)
অথাৎ আল্লাহ সৃস্টি করেছেন রাত এবং দিন, সূর্য এবং চন্দ্র। অন্তরিক্ষে যা আছে তা নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে।
কুরআন শরীফে অন্য যায়গায় মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, “লাস শামসু ইয়ামবাগী লাহা আন তুদরীকাল ক্ব্বামারা ওয়াল লাইলী সাবিকুন নাহার, কুল্লুন ফি ফালাকিই ইয়াসবাহুন।” (সুরা ইয়াসীন, আয়াত ৪০)
অথাৎ সূর্যের পক্ষে চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং অন্তরিক্ষে যা আছে তা প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন (সন্তরণ) করে।
এখানে স্পস্ট ভাষায় কুরআন শরীফে লেখা আছে যে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সবই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে। এখানে ‘ইয়াসবাহা’ আরবী শব্দ ‘সাবাহা’ থেকে এসেছে যার অরথ চলমান কিছুর গতি এবং আরবী ‘ফালাক’ শব্দের অরথ ‘কক্ষপথ’। এককথায় এখানে কুরআনে বলা হয়েছে এ যে মহাকাশে যা কিছু আছে তা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে আরর্তন করছে। সুতরাং বিজ্ঞানের সঙ্গে কুরআনের কোন সংঘষ নেই। অথচ তসলিমা নাসরিন মিথ্যা কথা বলে মানুষকে একথা বোঝাতে চেয়েছেন যে কুরআন শরীফে নাকি বলা হয়েছে, ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ অথচ এই কথা পুরো কুরআন শরীফ তন্ন তন্ন করে খুজলেও কোথাও পাওয়া যাবে না।
তসলিমা নাসরিণ ! এবার তো আপনাকে প্রমান করে দেওয়া হল যে কুরআন শরীফের সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াত থেকে ও সুরা ইয়াসীনের ৪০ নং আয়াত থেকে যে আল্লাহ বলেছেন, যে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সবই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। এই ব্যাপারে বিজ্ঞানের সঙ্গে কুরআন একমত। এইবার তো বুঝতে পারলেন যে আল্লাহ মিথ্যাবাদী নন। আল্লাহ সত্যবাদী এবং মিথ্যাবাদী আপনি নিজে।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।