• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Wednesday, March 29, 2023
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
  • en English
    ar Arabicen Englishfr Frenchel Greekhi Hindiur Urdu
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
  • en English
    ar Arabicen Englishfr Frenchel Greekhi Hindiur Urdu
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

অভিজিৎ রায় : এক মুক্তমনা নাস্তিকের অপবাদ খণ্ডন

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
November 22, 2022
in নাস্তিকতা
0
অভিজিৎ রায় : এক মুক্তমনা নাস্তিকের অপবাদ খণ্ডন

চিত্রঃ অভিজিৎ রায়, Image Source: sylhettoday24

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

‘মুক্তমনা’ নামে নাস্তিকদের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। যাদের মূল উদ্দেশ্যই হল বিভিন্ন ধর্ম ও ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো। যাতে মানুষ ধর্ম থেকে বিমুখ হয় এবং নাস্তিক্যবাদীদের চক্রান্ত সফল হয়। আমি সেই ওয়েবসাইটে সার্চ করতে করতে মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের লেখা ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ নামে একটি প্রবন্ধ দেখতে পেলাম। তিনি তাঁর প্রবন্ধে বোঝাতে চেয়েছেন ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরীফে নাকি বিজ্ঞান বিরোধী কথা লেখা আছে। সেই মানসিকতায় লেখক ইসলামের বিরুদ্ধে যে বিষোদ্গারণ করেছেন তাতে একথা সহজেই অনুমেয় যে তিনি ইসলাম সম্পর্কে বিন্দু বিষর্গ পাঠ না করে শুধু বিদ্বেষের কারণেই ষড়রিপুড় তাড়নায় বাগাড়ম্বরই করেছেন।

অভিজিৎ রায় : এক মুক্তমনা নাস্তিকের অপবাদ খণ্ডন
চিত্রঃ অভিজিৎ রায়, Image Source: hindustantimes

অভিজিৎ রায় লিখেছেন,

“একটু চোখ কান খুলে যদি ধর্মগ্রন্থ গুলির ইতিহাসের দিকে তাকানো যায়, তাহলে বোঝা না যাওয়ার তো কথা নয় যে, সেই ধর্মগ্রন্থগুলি লেখা হয়েছে বহু বছর আগে যখন মানুষের বিজ্ঞানের উপর দখল এবং জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। এটা আশা করা খুব-ই বোকামি যে সেই সময়কার লেখা একটা বইয়ের মধ্যে বিগ ব্যাং এর কথা থাকবে, সুপার স্ট্রিং এর কথা থাকবে, আইনস্টাইনের রিলেটিভিটির কথা থাকবে। আধুনিক বিজ্ঞান নয়, ওই সমস্ত বইগুলিতে আসলে প্রাচীন সমাজ – ব্যাবস্থার চালচিত্রই ফুটে উঠেছে, তৎকালীন সমাজের মানুষের ধ্যান ধারণা, বিশ্বাস, আশা আকাঙ্খার কথাই শুধু প্রকাশ পেয়েছে; এর এক চুলও বাড়তি নয়। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। কোরাণ যখন লিখিত হয়েছিল, তখনো গ্যালিলিও ব্রুনো, কোপার্নিকাসের মতো মনীষিরা এই নরাধামে আসেননি। তখনকার মানুষদের আসলে জানবার কথা নয় যে তাদের পরিচিত বাসভূমি – পৃথিবী নামক এই গ্রহটি যে সূর্য নামক নক্ষত্রের চারিদিকে ক্রমাগত পাক খেয়ে চলেছে। কি করেই বা বুঝবে ?” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ২)

তৎকালীন যুগে মানুষের বিজ্ঞানের উপর দখল এবং জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত ছিল বলে কুরআনে বিজ্ঞান সম্মত আয়াত থাকতে পারে না এই মন্তব্য মেনে নেওয়া যায়না। কারণ কুরআন শরীফ পাঠ করলেই লক্ষ্য করা যায় যে সেখানে একটিও বিজ্ঞান বিরোধী আয়াত নেই।

আর অভিজিৎ রায় যে লিখেছেন,

“কোরান যখন লিখিত হয়েছিল, তখনো গ্যালিলিও ব্রুনো, কোপার্নিকাসের মতো মনীষিরা এই নরাধামে আসেননি। তখনকার মানুষদের আসলে জানবার কথা নয় যে তাদের পরিচিত বাসভূমি – পৃথিবী নামক এই গ্রহটি যে সূর্য নামক নক্ষত্রের চারিদিকে ক্রমাগত পাক খেয়ে চলেছে।”

তাহলে অভিজিৎ রায়ের বক্তব্যকে মেনে নিলে বলতে হবে যে গ্যালিলিও ব্রুনো, কোপার্নিকাসের মতো মনীষিরা পৃথিবীতে আসার আগে পৃথিবী নিশ্চয় স্থির ছিল তাঁরা আবিস্কারের পর পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে আরম্ভ করেছে। সুতরাং অভিজিৎ রায়ের এই মন্তব্য মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, পৃথিবী আগেও ঘুরত এখনও ঘুরছে। ভবিষ্যতেও কিয়ামত পর্যন্ত ঘুরবে। আর আল্লাহ যেহেতু গ্রহ, নক্ষত্র, আকাশ, গ্যালাক্সি আবিস্কার করেছেন তাই আল্লাহই ভাল জানেন মহাশূন্যে সবকিছু ঘুরছে কিনা। যাইহোক বেশি কথা আর বাড়াব না। পঠকগণ এই প্রবন্ধ পড়ুন অভিজিৎ রায়ের ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’এর প্রতিটি অভিযোগের উত্তর পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।

বিজ্ঞানীদের উপর ক্রোধ

মুক্তমনার লেখক অভিজিৎ রায় ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ প্রবন্ধে ফরাসি বিজ্ঞানী ডাঃ মরিস বুকাইলী, ডাঃ কিথ মূর ও তুরস্কের বিজ্ঞানী ডাঃ হারুন ইয়াহইয়ার বিরুদ্ধে বিষোদ্গারণ করতে গিয়ে লিখেছেন,

“এক ভদ্রলোকের কথা খুবই মনে পড়ছে। এক পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক। উনি সবসময়ই একটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্ব খুঁজতেন। এই ফ্যাশনটা ইদানিংকালে বাংলাদেশী শিক্ষিত মুসলমানদের ভিতরে প্রকট আকারে চোখে পড়েছে। বিশেষতঃ দুই বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলী এবং কেইথ মূরের ‘অবিস্মরণীয়’ অবদানের পর (ইদানিং সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে তুরস্কের হারুন ইয়াহিয়া নামের আরেক ছদ্ম – বিজ্ঞানী)। আজ তাঁরা ১৪০০ বছর আগের লেখা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ‘বিগ ব্যাং’ খুঁজে পান, মহাবিশ্বের প্রসারণ খুঁজে পান, মানব সৃষ্টির ক্রমবিকাশ খুঁজে পান, অনু – পরমাণু, ছায়াপথ, নক্ষত্ররাজি, শ্বেত বামন, কৃষ্ণগহ্বর, ভ্রূণতত্ত্ব, আপেক্ষিক তত্ত্ব, সুপার স্ট্রিং তত্ত্ব, সবই অবলীলায় পেয়ে যান।

আমি অবশেষে তাঁর একটি লেখার প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেই। বলি, ‘কি দরকার আছে এই হাজার বছর আগেকার কতকগুলি সুরার মধ্যে বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসন্ধান করার? বিগ ব্যাং সম্বন্ধে জানতে চাইলে অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের উপর গাদা গাদা বই বাজারে আছে; দেখুন না। ডিফারেনসিয়াল ইকুয়েশন সমাধানের জন্য তো আমাদের গণিতের বই দেখতে হবে, কোরান – হাদীস চষে ফেললে কি এর সমাধান মিলবে?” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ১)

নাস্তিক অভিজিৎ রায় ফরাসি বিজ্ঞানী ডাঃ মরিস বুকাইলী, ডাঃ কিথ মূর ও তুরস্কের বিজ্ঞানী ডাঃ হারুন ইয়াহইয়ার বিরুদ্ধে বিষোদগরণ করতে গিয়ে ভুল ভাল তথ্য পেশ করেছেন। অভিজিৎ রায় বলেছেন যে ফরাসি বিজ্ঞানী ডাঃ মরিস বুকাইলী প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ কুরআনের মধ্যে অধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্ব খুঁজতে গিয়েছিলেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ডাঃ মরিস বুকাইলী কুরআনের মধ্যে অধুনিক বিজ্ঞানের তথ্য খোঁজার জন্য কুরআন পড়েননি। তিনি কুরআনের ভুল ধরার জন্য পড়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে যেমন বৈজ্ঞানিক ভুল পাওয়া গেছে ঠিক সেই রকম কুরআনের মধ্যেও হয়তো পাওয়া যাবে। তিনি কুরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল ধরার জন্য তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করতে লাগলেন কিন্তু একটিও ভুল তিনি খুঁজে পেলেন না। এ সম্পর্কে ডাঃ মরিস বুকাইলীর নিজস্ব বক্তব্য শুনুন। তিনি লিখেছেন,

“কুরআনকে আমি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিচার করেছি। প্রথমে অনুবাদের সাহায্য নিয়েছি। তারপর আমি আরবী শিখেছি এবং বিজ্ঞানের সত্য আল কুরআনে বর্ণিত বক্তব্য পাশাপাশি রেখে একটা তালিকা প্রস্তুত করেছি এবং সংগৃহীত যাবতীয় প্রমাণ দলীলের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কুরআনে এমন একটা বক্তব্য নেই যা আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসত্য বা ভ্রান্তিপূর্ণ।” (দি বাইবেল দি কুরআন এ্যান্ড সায়েন্স/ড. মরিস বুকাইলি)

ড. মরিস বুকাইলী আরও বলেছেন,

“আমার প্রথম উদ্দেশ্যে ছিল কুরআনের প্রতোটি বক্তব্যকে বিচার-বিশ্লেষণ করা এবং সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গীতে কুরআনের অসারতা প্রমাণ করা। কিন্তু যতই কুরআন পড়া শুরু করলাম, দেখতে পেলাম, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় কি সঠিকভাবেই না কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে। একটা বিষয় আমার কাছে সব চাইতে বেশী অদ্ভুত মনে হচ্ছিল আজকার যুগের যে সব বৈজ্ঞানিক সত্য আমরা এত চিন্তা – ভাবনা, পরীক্ষা – নিরীক্ষা বা গবেষণা করে পাচ্ছি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর যুগে বসে কি করে সে সব বিষয় একজন মানুষ তা জানতে পারলো, প্রকাশ করতে পারলো? সে যুগে এসব বিষয়ে মানুষের তো ধারণাই থাকার কথা নয়!” (প্রাগুপ্ত)

ড. মরিস বুকাইলী আরও বলেছেন,

“মুহাম্মাদ (সাঃ) যিনি ছিলেন নিরক্ষর। সেই নিরক্ষর লোকটির দ্বারা কিভাবে সেই সময়কার আরবের এ রকম একটি সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্ম রচিত হতে পারে? শুধু কি তাই? সেই নিরক্ষর লোকটির পক্ষেই বা কিভাবে সম্ভব বিজ্ঞানের, প্রাকৃতিক রহস্যাবলীর এমনভাবে সত্য ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরা, যা সে সময়ের কোন লোকের চিন্তারও অগোচরে থাকার কথা, এবং সেই সব দুরুহ বিষয় সংক্রান্ত সত্য ও তথ্যের বর্ণনায় কোথায়ও একবিন্দু টি কিংবা বিচ্যুত খুঁজে পাওয়া দুস্কর।” (প্রাগুপ্ত)

ড. মরিস বুকাইলী আরও বলেছেন,

“সপ্ত শতাব্দীতে জীবিত কোন মানুষের পক্ষেই শত শত বছর পরে আবিস্কৃত বিজ্ঞানের এইসব প্রতিষ্ঠিত বিষয় ও সত্য, বিচিত্র জ্ঞান ও তথ্য বুঝতে পারা ও প্রকাশ করা আদৌ সম্ভব নয়।” (প্রাগুপ্ত)

ড. মরিস বুকাইলীর কুরআন সম্পর্কে এই বক্তব্য নাস্তিক্যবাদীদের বালুকা প্রাচীর দুমড়ে মুচড়ে এককার করে দেয়। ড. বুকাইলী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে যেসব বিজ্ঞানের তত্ত্ব আমরা এই শতাব্দীতে এসে আবিস্কার করেছি তা মহান আল্লাহ আজ থেকে চোদ্দশত বছর আগে মহানবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে বলে দিয়েছেন। আর হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যক্তি। তিনি পৃথিবীর কোন মানুষের কাছে পড়াশুনা করেন নি। তাহলে একজন নিরক্ষর ব্যক্তি কিভাবে বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য অবগত হয়ে কুরআনে অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারেন? ড. বুকাইলী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে কুরআন শরীফ কোন মানুষের রচনা নয়। এটা নিঃসন্দেহে মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অবতীর্ন ঐশী গ্রন্থ।

বিজ্ঞাপনের জন্য

ডাঃ মরিস বুকাইলী স্বয়ং বলছেন যে তিনি কুরআনের ভুল ধরার জন্য কুরআন পড়েছিলেন। সুতরাং নাস্তিক অভিজিৎ রায়ের বক্তব্য ধোপে টিকে না।

অভিজিৎ রায় স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন যে কুরআনে বিগ ব্যাং তত্ত্বের কথা নেই। এখন আমরা দেখব যে সত্যিই কুরআন শরীফে বিগ ব্যাং তত্ত্বের কথা আছে কিনা। কুরআন শরীফে বিগ ব্যাং তত্ত্ব খোঁজার আগে আমরা জেনে নেব যে বিগ ব্যাং তত্ত্ব কি?

বিগ ব্যাং থিওরী কি?

বিগ ব্যাং থিওরীর আবিস্কার করেছিলেন আমেরিকার জ্যাতির্বিদ এডউইন হাবল (Edwin Hubble)। তিনি ১৯২৯ সালে লক্ষ্য করেন যে বিশ্বজগতের গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে ক্রমশ দুরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি আবিস্কার করেন বিশ্বজগৎ সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে কোন এক সময় এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছে একটি পয়েন্ট থেকে (Single Point)।

এরপর বিজ্ঞানীরা এডউইন হাবলের আবিস্কারের উপর যখন গবেষণা করতে লাগলেন তখন বিজ্ঞানীরা আরও একটি জিনিস লক্ষ্য করলেন যে, বিশ্বজগৎ একক পয়েন্ট বা বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটির মধ্যে চরম ক্ষমতা সম্পন্ন মাধ্যকর্ষন শক্তি ছিল এবং তার ভর ছিল (Mass) শূন্য। আর এই ভরহীন পয়েন্টে এক প্রচন্ড বিস্ফোরণের ফলেই বস্তু ও সময়ের অস্তিত্বলাভ হয় এরপর এই বিশ্বজগতের সম্প্রসারন শুরু হয়। অর্থাৎ এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে শূন্য (Nothing) থেকে ।

এই বিগ ব্যাং থিওরী আবিস্কারের ফলে নাস্তিক্যবাদীদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায় এবং তাঁরা ছলে বলে কৌশলে বিজ্ঞানীদের এই আবিস্করকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেন। নাস্তিক ও বস্তুবাদী বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটন বলেন,

“বর্তমানে আমরা যে প্রকৃতি দেখছি, সেটি একসময় আকস্মিকভাবে অস্তিত্বলাভ করেছিল (অর্থাৎ বিগ ব্যাং থিওরী) আমার কাছে ফিলসফিক্যালি অগ্রহণযোগ্য।”

তাঁর কাছে বিগ ব্যাং থিওরী অগ্রহণযোগ্য হলেও সময় সেটা বলে দিয়েছে যে বিগ ব্যাং থিওরী একটি নির্ভূল বৈজ্ঞানিক সত্য। পরবর্তীকালে বিভিন্ন আবিস্কারের ফলে আজ প্রমাণিত সত্য যে বিগ ব্যাং থিওরী বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণ নির্ভূল সত্য। উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে যখন আরনো পেনজিয়াস (Arno Penzias) ও রবার্ট উইলসন (Robert Wilson) নামক দুইজন বিজ্ঞানী যখন মহাবিস্ফোরণের অর্থাৎ বিগ ব্যাং থিওরীর তেজস্ক্রিয় অবশেষ চিহ্নিত করেন এবং নব্বই-এর দশকে যখন বিজ্ঞানী কোবে (COBE / Cosmic Bacground Explorer) স্যাটালাইট দ্বারা যখন পর্যবেক্ষণ করেন তখন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে বিগ ব্যাং থিওরী আগের শতাব্দীর এক বিস্ময়কর ও চুড়ান্ত সত্য আবিস্কার।

এরপর শুরু হয় নাস্তিক্যবাদের আত্মহননের পালা। নাস্তিক্যবাদীদের যুক্তির জাল সব ছিন্ন হয়ে যায়। তাঁরা দিশেহারা হয়ে পাগলের মতো ঘুরতে থাকেন। এই প্রসঙ্গে ‘Atheistic Humanism’ এর লেখক ও ‘Anthony Flew’ এর দর্শনের নাস্তিক অধ্যাপক এন্থনি ফ্লিউ (Anthony Flew) স্বীকার করে বলেন,

“স্বীকারোক্তি আত্মার জন্য ভালো বলে কুখ্যাতি আছে। আমি স্বীকার করছি যে, সৃষ্টিত্ত্বসংক্রান্ত সমকালীন সর্বসম্মত মত নাস্তিকদের ভালোরকম বিব্রত করবে। কারণ, বিশ্বজগতের একটা শুরু ছিল – এ কথাটা St Thomas – এর মতে ফিলসফিক্যালি প্রমাণ করা সম্ভব না হলেও, দেখা যাচ্ছে, সৃষ্টতত্ত্ববিদরা এর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ঠিকই হাজির করেছেন।… (বিশ্বজগতের কোন শুরু বা শেষ নেই – এ ধারণাটা) যদিও আমি এখনো সঠিক বলেই বিশ্বাস করি, তথাপি বলতেই হচ্ছে যে বিগ ব্যাং তত্ত্বের উপস্থিতি ওই বিশ্বাসের উপর স্থির থাকা মোটেই সহজ ও স্বস্তিদায়ক ব্যাপার নয়।”

বস্তুবাদী পদার্থবিজ্ঞানী এইচ পি লিপসনও (H. P Lipson) অনিচ্ছা সত্যেও বিগ ব্যাং থিওরীকে বৈজ্ঞানিক সত্য বলে মেনে নিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন,

“আমি মনে করি ……আমাদের অবশ্যই ..স্বীকার করতে হবে যে, সৃষ্টির ধারণা এ ক্ষেত্রে একমাত্র ধারণা যা গ্রহণ করা যেতে পারে। এটা মেনে নেওয়া আমার মতো অন্য পদার্থবিদদের জন্যও কঠিন। কিন্তু গবেষণালব্ধ প্রমাণাদি যখন একে সমর্থন করে, তখন তা স্বীকার না করে উপাই বা কি?” (“A Physicist Looks at Evolution”, Physics Bulletin, Vol. 138, 1980, p. 241/H.P. Lipson)

মোদ্দাকথা বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং থিওরীর বর্তমানে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে বিশ্বজগৎ সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছে একটি পয়েন্ট থেকে। বিশ্বজগৎ একক পয়েন্ট বা বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটির মধ্যে চরম ক্ষমতা সম্পন্ন মাধ্যকর্ষন শক্তি ছিল এবং তার ভর ছিল শূন্য। আর এই ভরহীন পয়েন্টে এক প্রচন্ড বিস্ফোরণের ফলেই বস্তু ও সময়ের অস্তিত্বলাভ হয় এরপর এই বিশ্বজগতের সম্প্রসারন শুরু হয়। অর্থাৎ এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে শূন্য থেকে।

এখানে বিগ ব্যাং তত্ত্বের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে বিশ্ব জগৎ এক মহা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এবং এই বিশ্ব জগৎ ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এক সময় সংলগ্ন অবস্থায় ছিল পরে তা পৃথক হয়ে যায়।

কুরআনে বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রমাণ

বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানী ও বস্তুবাদী দার্শনিকরা যে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিশ্বজগৎ একসময় একটি পয়েন্টে সংলগ (যুক্ত) অবস্থায় ছিল। এবং পরে তা সম্প্রসারিত হয় এই চুড়ান্ত সত্য বিজ্ঞানীরা নব্বই – এর দশকে স্যাটালাইটের মাধ্যমে প্রমাণ করল। কিন্তু মহান আল্লাহ কুরআন শরীফে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে বিগ ব্যাং থিওরীর কথা বলেছেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

اَوَ لَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا١ؕ وَ جَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ١ؕ اَفَلَا يُؤْمِنُوْنَ۰۰۳۰

অর্থাৎ “খোদাদ্রোহীরা কি একথা জানে না যে, আকাশ ও পৃথিবী পরস্পর সংলগ্ন অবস্থায় ছিল, তারপর আমরা তাকে আলাদা আলাদা (পৃথক) করে দিয়েছি এবং আমরা পানি থেকে সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছি। তবুও তারা বিশ্বাস করবে না?” (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ৩০)

আল্লামা ইবনে কাসীর এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, প্রথমে আসমান ও জমীন পরস্পর মিলিতভাবে ছিল। একটি অপরটি হতে পৃথক ছিল না। আল্লাহ তাআ’লা পরে ওগুলিকে পৃথক পৃথক করে দিয়েছেন। জমীনকে নীচে ও আসমানকে উপরে রেখে উভয়ের মধ্যে বিরাট ব্যাবধান সৃষ্ট করতঃ অত্যান্ত কৌশলের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।…..

হজরত ইকরিমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হজরত ইবনু আব্বাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করা হয়, “পূর্বে রাত ছিল না দিন?” উত্তরে তিনি বললেন, “প্রথমে যমীন ও আসমান মিলিত ও সংযুক্ত ছিল। তাহলে এটাতো প্রকাশমান যে, তাতে অন্ধকার ছিল। আর অন্ধকারের নামই তো রাত। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পূর্বে রাতই ছিল।” (তফসীরে ইবনে কাসীর, চতুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠা-৩২৬)

এই মহাবিশ্ব যে সম্প্রসারিত হচ্ছে সে সম্পর্কে ফরাসি বিজ্ঞানী ড. মরিস বুকাইলি তাঁর ‘দি বাইবেল দি কুরআন এ্যান্ড সায়েন্স’ নামক গ্রন্থে যা লিখেছেন, “মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তা আধুনিক বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার। অধুনা এটি সুপ্রতিষ্ঠিত মতবাদ। তবে কিভাবে যে মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া চলছে, তা নিয়ে এখনো ইতস্তত কিছু মতভেদ রয়ে গেছে।

মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণের বিষয়টি সর্বজন পরিচিত আপেক্ষিক থিওরীতে প্রথম উল্লেখিত হয়। যেসব পদার্থবিজ্ঞানী ছায়াপথের আলোকরশ্মির বর্ণালীবিভা সম্পর্কে নানা পরীক্ষা-রিরীক্ষা ও গবেষণায় নিরত ছিলেন, পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরাও মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণের বিষয়টা সমর্থন করেছেন। কেননা, তাঁরা দেখতে পান যে, বিভিন্ন ছায়াপথের বর্ণালীবিভা ক্রমান্বয়ে লাল বর্ণের রূপ ধারণ করছে। এর থেকে তাঁরা এই ধারণায় পৌঁছান যে, একটা ছায়াপথ থেকে আরেকটা ছায়াপথ ক্রমশ দুরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের পরিমন্ডল ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। এখন কথা হচ্ছে, ছায়াপথসমুহ আমাদের নিকট থেকে যত দুরে সরে যাবে, মহাবিশ্বের পরিমন্ডলের পরিধি সম্ভবত বিস্তৃত লাভ করবে ততটাই। তবে, কি রকম গতিতে মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ-প্রক্রিয়া কাজ চলছে অর্থাৎ মহাশূন্যের ওইসব বস্তু কতটা দ্রুত আমাদের নিকট থেকে দুরে সরে যাচ্ছে, তা একটা প্রশ্ন বটে। মনে হয়, তাদের এই দুরে সরে যাওয়ার গতিটা আলোর গতির কোনো এক ভগ্নাংশ থেকে শুরু করে আরো দ্রুততর হওয়াটা মোটেই বিচিত্র নয়।

কোরআনের একটি আয়াতে যে বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে (সূরা ৫১, আয়াত ৪৭) তার সাথে অনায়াসেই আধুনিক বিজ্ঞান-সমর্থিত মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ-মতবাদের তুলনা করা চলে। উক্ত আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আকাশমন্ডলী, আমরা উহাকে সৃষ্টি করিয়াছি ক্ষমতার বলে। নিশ্চয়ই আমরা উহাকে সম্প্রসারিত করিয়াছি।

এখানে যাকে আকাশমন্ডলী বলা হয়েছে-তা আরবী ‘সামাআ’ শব্দের অনুবাদ। এর দ্বারা সন্দেহাতীত ভাবেই পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্য জগতের কথাই বোঝানো হয়েছে। আমরা উহাকে সম্প্রসারিত করিয়াছি’ এই বাক্যটি হচ্ছে বর্তমান কাল – বাচক ও বহুবচনসূচক আরবী শব্দ ‘মুসিউনা’র অনুবাদ। এর মূল ক্রিয়াবাচক শব্দ হচ্ছে – ‘আউসাআ’। এর অর্থ সম্প্রসারিত করা, আরো বেশী প্রশস্ত করা, বৃদ্ধি করা, বিস্তৃত করা।” (দি বাইবেল দি কুরআন এ্যান্ড সায়েন্স/ড. মরিস বুকাইলি)

সুতরাং জগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে দিয়েছেন তা মহান আল্লাহ পাক আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে বলে দিয়েছেন। বিজ্ঞান আজ বলছে ‘এই মহা বিশ্ব সম্প্রসারণশীল’ এই কথা আল্লাহ। আগেই বলে দিয়েছেন যখন মানুষ বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছুই জানত না। সুতরাং মহান আল্লাহ যে আছেন সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।

সুতরাং স্পষ্টভাবে কুরআন শরীফে বিগ ব্যাং থিওরীর কথা বলা হয়েছে। এর পরেও অভিজিত রায় কীভাবে অস্বীকার করবেন যে কুরআনে বিগ ব্যাং থিওরীর কথা লেখা নেই?

অভিজিৎ রায় লিখেছেন,

“এই আয়াতটি যদি মহা-বিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) এর প্রমাণ হয়, তবে কোথায় এখানে বিস্ফোরণের উল্লেখ? ‘বিগ ব্যাং’ শব্দটি নিজেই তাৎপর্যবাহী। এই আয়াতের কোথায় রয়েছে সেই ‘ব্যাং’ (বিস্ফোরণ) – এর ইঙ্গিত?” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৮)

একথা সত্য যে কুরআনে কোথায় বিস্ফোরণের উল্লেখ নেই। তবে অভিজিৎবাবু জগৎ সৃষ্টির সময় বিস্ফোরণ হয়নি তার কথাও তো কুরআনে উল্লেখ নেই? তবে মহাবিস্ফরণের পর যে বিশ্ব জগৎ সম্প্রসারণ হয়েছে তার কথা তো লেখা আছে? যদি মহাবিস্ফোরণ হয়েই থাকে তাহলেও তাকে কুরআন বিরোধী বলতে পারবেন না।

এর পরে অভিজিৎ রায় লিখেছেন,

“পদার্থবিজ্ঞানে ‘বিগ ব্যাং’ স্থান-কাল অদ্বিতীয়ত্বের (space-time singularity) সাথে জড়িত, পদার্থে সাথে নয়। বিগ ব্যাং এর প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছিল তখন পৃথিবীর অস্তিত্বই ছিল না, পৃথিবীর জন্ম হয়েছে বিগ ব্যাং এর কোটি কোটি বছর পরে। উপরের আয়াতটি ‘শুধু আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে থাকার’ (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে যার কোন অর্থই হয় না) কথাই বলেছে ‘উভয়কে পৃথক করে’ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকেও আবারও যার কোন অর্থ নেই) দেওয়ার কথা যা মূলতঃ ‘হ-য-ব-র-ল’ ছাড়া আর কিছুই নয়, বিগ ব্যাং তো পরের কথা।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৮)।

অভিজিৎ রায়ের কথা যদি সত্যি বলে মেনে নিই তাহলেও তো তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী ‘বিগ ব্যাং তত্ত্ব’ কুরআন বিরোধী হচ্ছে না। কেননা, ‘বিগ ব্যাং’ এর কোটি কোটি বছর পর যদি পৃথিবী সৃষ্টি হয় তাহলে ‘আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে থাকার’টিও সম্ভব। কেননা, যেসব জিনিস একসঙ্গে মিলিত আবস্থায় ছিল তাতে কি পৃথিবী সৃষ্টির মৌলিক উপাদান ছিল না? নাকি তিনি মনে করেন হঠাৎ করে আমাদের পৃথিবী কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে?

এর পরে অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফে কেন ‘বিগ ব্যাং তত্ত্ব রয়েছে তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“আসলে কোরাণে কেন আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে থাকার কথা আছে তা সহজেই অনুমেয়। আসলে সে সময় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক গোত্রের উপকথা এবং লোককথাতেই আকাশ আর পৃথিবী মিশে-থাকার আর হরেক রকম দেবদেবী দিয়ে পৃথক করার কথা বলা ছিল। যেমন মিশরের লোককথায় ‘গেব’ নামের এক দেবতা ছিলেন যনি মৃত্তিকার দেবতা। এই গেবকে তার মা এবং বোন (আসমানের দেবী) থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ফলেই আকাশ আর পৃথিবী একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আবার সুমেরীয় উপকথা গিলগামেশের কাহিনীতেও আসমানের দেবী ‘অ্যান’ কে মৃত্তিকার দেবতা ‘কী’ এর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কথা বলা আছে। এ সমস্ত উপকথা থেকে প্যাগান রেফারেন্সগুলো বাদ দিদে যা রইবে, কোরাণেরই কাহিনী।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৮)

শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে অভিজিৎ রায় পাগলের মতো হয়ে গেছেন। মনের জ্বালা মিটানোর জন্য অন্য পথ ধরেছেন। যখন দেখলেন যে কুরআন শরীফে বিগ ব্যাং তত্ত্বের কথা রয়েছে সেটিকে তিনি খন্ডন করতে না পেরে পাঁয়তারা পরিবর্তন করে বলে ফেললেন, যে আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে থাকার কথাটি আসলে মধ্যপ্রাচ্যের উপকথা এবং লোককথা থেকেই ধার করা। আর এসব কাহিনির মূল নায়ক নাকি দেবদেবীরা ছিলেন। আবার সুমেরীয় উপকথা গিলগামেশের কাহিনীতেও আসমানের দেবী ‘অ্যান’ কে মৃত্তিকার দেবতা ‘কী’ এর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কথা বলা আছে। এইসব কাহিনি থেকে নাকি হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) চুরি করে কুরাআন শরীফের মধ্যে ঢুটিয়ে দিয়েছেন। কি আশ্চর্য তাঁর গবেষণা?

ইসলামে তো দেব দেবীর কোন স্থান নেই তাহলে দেবদেবীর উপকথা চুরি করে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কোরাণে ঢুকালেন কি করে? আর যে দেবদেবীর উপকথা আপনি শুনালেন সেটা তো স্পষ্ট বিজ্ঞান বিরোধী কথা। বিজ্ঞান তো বলে না “গেব নামের এক দেবতা ছিলেন যনি মৃত্তিকার দেবতা। এই গেবকে তার মা এবং বোন (আসমানের দেবী) থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ফলেই আকাশ আর পৃথিবী একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।” আর বিজ্ঞান এও বলে না, “আসমানের দেবী ‘অ্যান’ কে মৃত্তিকার দেবতা জ্ঞকীঞ্চ এর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কথা বলা আছে।”

বিজ্ঞান শুধু বলে মহাবিশ্বে এক বিরাট বিস্ফোরণের পরে এই বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং তারপর তা সম্প্রসারিত হয়েছে এবং আজও হচ্ছে এবং বিজ্ঞান বলে, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এক সময় সংলগ্ন অবস্থায় ছিল পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই কথা কুরআন শরীফেও আছে। তাহলে অভিজিৎ রায়ের কথা যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে বলতে হবে, হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বিজ্ঞানবিরোধী কথাগুলো বাদ দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য কথাটুকু তুলে কুরআনে জুড়ে দিলেন আর প্যাগান রেফারেন্সগুলো অর্থাৎ দেবদেবীর কথাগুলো বাদ দিয়ে দিলেন? তাই তো? অভিজিৎ রায়ের এই উদ্ভট দাবির সপক্ষে কোন প্রমাণ নেই।

দেওবন্দ আন্দোলন
দেওবন্দ আন্দোলন, বিজ্ঞাপনের জন্য

কিছুদিনে আগেও খ্রিস্টানরা বলত যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বাইবেল থেকে চুরি করে কুরআন লিখেছেন। অথচ বাইবেলে প্রচুর বিজ্ঞান বিরোধী কথা লেখা আছে। যেমন বাইবেল বলছে পৃথিবী স্থির। বাইবেলের মতে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। তখন বিজ্ঞানী ডাঃ মরিস বুকাইলী প্রশ্ন খ্রিস্টানদেরকে করেছিলেন যে, হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বাইবেল থেকে চুরি করার সময় বিজ্ঞানবিরোধী কথাগুলো বাদ দিয়ে কুরআন লিখেছিলেন? এবং এমন সব নতুন তথ্য কুরআনে জুড়ে দিলেন যা বাইবেলে নেই অথচ আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য? খ্রিস্টানরা ডাঃ মরিস বুকাইলীর কথা উত্তর দিতে পারেনি ।

অবিজিৎ রায়ের প্রসঙ্গে আমিও প্রশ্ন করছি, আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য কথাটুকু তুলে কুরআনে জুড়ে দিলেন আর প্যাগান রেফারেন্সগুলো অর্থাৎ দেবদেবীর কথাগুলো বাদ দিয়ে দিলেন? তাই তো? এর উত্তর কি আছে?

এখন আমরা দেখব কুরআনে ভ্রণত্ত্বের কথা আছে কিনা। এখন আমরা দেখব কুরআনে ভ্রণত্ত্বের কথা আছে কিনা। নাস্তিক অভিজিৎ রায় স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন যে কুরআনে ভ্রণত্ত্বের কথা লেখা নেই। তাহলে আমরা দেখি অভিজিৎ রায়ের কথা কতদুর সত্য।

কুরআনে ভ্ৰণবিদ্যা

কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের রিয়াদের কিছু লোক কুরআনে ভ্ৰণতত্ত্বের ব্যাপারে যেসব আয়াত আছে সেসব আয়াত এক জায়গায় জমা করেন এবং এর উপর গবেষণা করার জন্য টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলিম ভ্ৰণতত্ত্ববিদ উইলিয়াম কিথ মূরকে নির্বাচন করা হয়। এই উইলিয়াম কিথ মূর হলেন একজন ভ্রণ তত্ত্বের উপর গবেষক এবং এর উপর অনেক গ্রন্থ রচনাকারী বিজ্ঞানী। রিয়াদে কিথ মূরকে আমন্ত্রণ করে বলা হয়, “কুরআন আপনার বিষয় সম্বন্ধে যা বলেছে তা হল এই। এটা কি সত্যি? আপনি আমাদেরকে এ সম্পর্কে কি বলতে পারেন?”

ড. কিথ মূর যতদিন আরবে ছিলেন ততদিন আরবীয়রা তাঁকে কুরআনের সবরকম অনুবাদ দিয়ে সহযোগিতা করেন। গবেষণা করার পর ড. কিথ মূর এতটাই বিস্মিত হন যে, তিনি তাঁর লেখা পাঠ্যবইগুলিকে পরিবর্তন করেন। তিনি এর আগে “Before we are born” (আমাদের জন্মের আগে) নামে বই লিখেছিলেন তাও তিনি দ্বিতীয় সংস্করণে ‘ভ্ৰণতত্ত্বের ইতিহাস সংক্রান্ত অধ্যায়ে কুরআন পড়ে যা কিছু আবিস্কার করেন তা সংযোজন করেন যা আগের সংস্করণে ছিল না।

টেলিভিশনের সাক্ষাতকারে ড. কিথ মুর বলেন, মানুষের বৃদ্ধির কিছু কিছু ব্যাপারে (মাতৃগর্ভে) কুরআন যা বলছে মাত্র ত্রিশ বছর পূর্বেও তা জানা ছিল না। তিনি বলেন, বিশেষ করে এ ব্যাপারে কুরআন একটি স্তরে মানুষকে বর্ণনা করেছে, (ُلَّمَاۤ اَرَادُوْۤا اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ اُعِيْدُوْا فِيْهَا١ۗ وَ ذُوْقُوْا عَذَابَ الْحَرِيْقِؒ۰۰۲۲) “জোঁক সদৃশ্য জমাট বাঁধা রক্ত” হিসাবে। (সুরা আল হাজ্ব, আয়াত ২২) এইসব পড়ে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান এবং তিনি প্রাণীবিদ্যা বিভাগে গিয়ে একটি জোঁকের ছবি সংগ্রহ করে মানব ভ্রণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন কুরআন ভ্রণ সম্পর্কে যা কিছু তথ্য দিয়েছে তা সঠিক। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কখনোই চিন্তা করিনি।” তিনি এইসব তথ্য পরে নিজের ভ্ৰণতত্ত্ব সংক্রান্ত বইয়ের মধ্যে সংযোজন করেন।

ড. কিথ মূর এইসব গবেষণা করার পর ভ্ৰণতত্ত্বের উপর আর একটি স্বতন্ত্র বই লেখেন এবং যখন তিনি টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে এইসব তথ্য হাজির করেন, তখন তাও সমগ্র কানাডার পত্র পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয় এবং কিছু পত্রিকায় তা প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়। এই তথ্য প্রকাশের শিরোনাম ছিল, “পুরানো প্রার্থনার বইয়ে (অর্থাৎ কুরআন শরীফে) বিস্ময়কর বস্তুর সন্ধান।”

এই পত্রিকার রিপোর্টার ড. কিথ মূরকে প্রশ্ন করেছিলেন,

“আপনি কি এটা মনে করেন না যে, আরবরা পূর্ব থেকেই এসব ব্যাপারে অবশ্যই জেনে থাকবে, ভ্রূণের বর্ণনা, এর আকৃতি এবং কিভাবে এটা পরিবর্তিত হয় এবং বৃদ্ধি লাভ করে? তারা বৈজ্ঞানিক না হতে পারে, কিন্তু হতে পারে তারা পূর্বে নিজেদের উপর কোন অমার্জিত ভুল পন্থায় কাটা ছেঁড়া চালিয়েছিল, লোকদের কেটেকুটে এসব জিনিস দেখেছিল?” উত্তরে ড. কিথ মূর তৎক্ষনাৎ বুঝিয়ে দেন যে, সে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গেছে ভূণের সকল স্লাইড যা দেখানো হয়েছে এবং পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে তার সবই অনুবিক্ষন যন্ত্রের ভিতর তোলা ছবি। তিনি সেই রিপোর্টারকে আরও বলেন, “চৌদ্দশ বছর পূর্বে যদি কেউ ভূতত্ত্ব আবিস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তাতে কিছু যায় আসে না। তারা এটাকে দেখতে পারেনি।”

ভ্রূণের আকৃতির ব্যাপারে, আল কুরআনের বর্ণনা হচ্ছে, যখন তা থাকে খুবই ক্ষুদ্র যাকে খালি চোখে দেখা যায় না; সুতরাং তা দেখতে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেহেতু এরকম যন্ত্রপাতির অভিজ্ঞতা মাত্র দু’শ বছরের কিছু আগের, তাই কিথ মূর সেই রিপোর্টারকে বিদ্রুপ করে বলেন, “সম্ভবত চৌদ্দশত বছর পূর্বে গোপনে কারো অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল, সে এ ব্যাপারেই গবেষণা চালিয়েছিল এবং কোথাও সে কোন ভুল ভ্রান্তি করেনি। তারপর সে কোনভাবে মুহাম্মাদ (সাঃ) দেখায় এবং তাকে এ তথ্যটি তার বইয়ে জুড়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজি করায়। তারপর সে তার যন্ত্রটি ধংশ করে ফেলে এবং চিরকালের জন্য এটা গোপন রাখে। এটা কি তুমি বিশ্বাস করবে? আসলেই এমন কোন কথা তোমার বিশ্বাস করা উচিৎ নয়, যতক্ষন না তুমি কোন প্রমাণ পেশ করো। কারণ তোমার কথা খুবই হাস্যকর এবং একেবারেই অদ্ভুত।” নিরূপায় ও লা-জবাব হয়ে রিপোর্টার ড. কিথ মূরকে জিজ্ঞাসা করেন, “কুরআনের এই তত্ত্ব কিভাবে আপনি ব্যাখ্যা করবেন?” ড. কিথ মূর উত্তরে বলেন, “এ তত্ত্বের একমাত্র ঐশ্বরিক ভাবেই নাজিল (অবতীর্ন) হতে পারে। এসব মানুষের জানার সাধ্যের বাইরে।”

ভ্ৰণতত্ত্ববিদ ড. উইলিয়াম কিথ মূরের এই গবেষণা ও বক্তব্য বস্তুবাদী তথা নাস্তিক্যবাদীদের মুখে এক বিরাট থাপ্পড়। তিনি এটাই বলেছেন, আজকের বিজ্ঞান গবেষণার পর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আল্লাহ চৌদ্দশত বছর আগে কুরআনের মাধ্যমে বলে দিয়েছেন। সুতরাং এর দ্বারা আল্লাহ অস্তিত্বের প্রমাণ সহজেই বুঝে আসে এবং নাস্তিক্যবাদ যে সম্পূর্ণ বিজ্ঞানবিরোধী এবং ভ্রান্ত মতবাদ তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

তুরস্কের বিজ্ঞানী হারুন ইয়াহইয়ার প্রতি ক্রোধ

অভিজিৎ রায় তুরস্কের বিজ্ঞানী হারুন ইয়াহইয়াকে ছদ্ম বিজ্ঞানী বলে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন? কেন তাঁর এই ক্রোধ প্রকশ? কারণ, নাস্তিক্যবাদীদের পুরো অট্টালিকা চার্লস ডারউইনের ভ্রান্ত বিবর্তনবাদের উপর টিকে আছে। ডারউইনের মতবাদের পতন মানেই নাস্তিক্যবাদীদের পতন। তুরস্কের বিজ্ঞানী হারুন ইয়াহইয়া (জন্ম-তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়, ১৯৫৬ সালে) “অ্যাটলাস অব ক্রিয়েশন’ (Atlas of Creation) বা ‘সৃষ্টিতত্ত্বের অ্যাটলাস’ নামনে ৮০০ পৃষ্ঠার প্রামাণ্য দলীল দিয়ে চার্লস ডারউইনের ভ্রান্ত মতবাদকে খন্ডন করেন। তিনি শুধুমাত্র ৮০০ পাতার প্রামাণ্য দলীল লিখেই ক্ষান্ত হননি। বরং ইউরোপ ও আমেরিকার তামাম উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বৈজ্ঞানিক সংস্থায় এই গ্রন্থটিকে পাঠিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন যে তারা যেন এর জবাব দেন। সুতরাং এই থিওরীর (ডারউইনের মতবাদ) ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাহলে এর অট্টালিকা আর কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? অথচ এই থিওরীর উপরেই পাশ্চত্য পন্ডিত ও বিজ্ঞানীরা গর্বিত ছিলেন। বিগত ১৫০ বছর ধরে এই ভিত্তিহীন মিথ্যা থিওরী প্রচার করা হতে থাকে জোরেশোরে। কিন্তু হারুন ইয়াহইয়া এই মতবাদকে চুড়ান্তভাবে খণ্ডন করেন।

অভিজিৎ রায় : এক মুক্তমনা নাস্তিকের অপবাদ খণ্ডন
চিত্রঃ হারুন ইয়াহইয়া, Image Source: kompas

ডারউইনের মিথ্যা থিওরীকে মিথ্যা অভিহিত করার হাজারো মানুষ মওজুদ আছেন পাশ্চাত্য দুনিয়ায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আমেরিকার প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানপন্থীরা। এই মিথ্যা থিওরীর প্রচারের বিরুদ্ধে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই আসছেন তাঁরা। ইউরোপীয় দেশসমূহের বহুলোক এই মিথ্যা থিওরী গলধঃকরণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু এই প্রতিবাদী কণ্ঠকে এবার তুরস্করের আদনান উকতার আল মারুফ উরফ হারুন ইয়াহইয়া দান করেছেন অসাধারণ শক্তি। তিনি বহুল সংখ্যায় গ্রন্থ, ভিডিও, ডি.বি.ডি প্রস্তুত করে জ্ঞানবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের বহু বিষয়ে করেছেন ব্যাপক আলোকপাত। এইসব গ্রন্থের একটি হল ‘অ্যাটলাস অব ক্রিয়েশন’ (Atlas of Creation = সৃষ্টিতত্ত্বের অ্যাটলাস)।

এই গ্রন্থ বর্তমানে পৌঁছে গিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানী পার্লিয়ামেন্টের সদস্য, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রের টেবিলে টেবিলে। ১১ ত ১৭ ইঞ্চির বড় সাইজের ৮০০ পাতার এই বিশাল গ্রন্থ। ডারউইনের থিওরীকে এমন মজবুত দলীল ও যুক্তি প্রমাণে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে যে একে খন্ডন করা কারো পক্ষে সহজ নয়। বিবর্তনবাদকে পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছে হারুন ইয়াহইয়ার এই গ্রন্থ।

এই গ্রন্থ ফ্রান্সের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান মিউজিয়ামে এই বিষয়ে এক গভীর বিতর্কের ঝড় তুলেছে। কলেজ ডি ফ্রান্সের হিস্ট্রিক্যাল বাইলজির অধ্যাপক আরমন্ড দে রেকলস বলেন, এখন পর্যন্ত তো এর উপর দেশে আসলে এরকম বই দুর্লভ যাতে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্যের দর্শন বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তিনি একথা স্বীকার করেন যে খুবই মজবুত কেন্দ্রীয় পরিচালন ব্যানস্থা সত্ত্বেও এই ধরণের কোন বই ছাত্রদের হাতে পৌঁছে যাওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।..

হারুন ইয়াহইয়া একের পর এক বই লিখতে শুরু করেন। ডারউইনের বিবর্তনবাদকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করার লক্ষ্যে লিখিত এসব বই খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশ্ববিখ্যাত বহুল প্রচারিত ‘নিউ সাইন্টিটিস্ট’ এর ২২ এপ্রিল ২০০০ সালের সংখ্যানুযায়ী বস্তুবাদ ও ডারউইনবাদের বিরুদ্ধে তাঁকে বিশ্বনায়ক বানিয়ে দিয়েছে। এমনকি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সায়েন্স, নিউ সাইন্টিস্ট এবং এন. এস. সি. ই, রিপোর্টারের মতো বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এতদিন ধরে বিশ্বব্যাপী ডারউইনবাদকেই প্রচার প্রসার করে আসছে। অন্যদিকে হারুন ইয়াহইয়ার কৃতিত্ব এখানেই যে তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণার গভীরতার সুবাদেই এসব পত্র পত্রিকা তাঁর কথা শুনতে বাধ্য হয়।

‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ ম্যাগাজিনের ২০০৪ এর নভেম্বর সংখ্যা ইংরেজি ও জার্মান সংস্করণ হারুন ইয়াহইয়ার এই গবেষণাকে সৃষ্টিতত্ত্বের একটি প্রত্যক্ষ ও মজবুত দর্শন বলে অভিহিত করে। হারুন ইয়াহইয়ার গ্রন্থসমূহ অনুদিত হয়েছে। বিভিন্ন ইউরোপীয় ও পৃথিবীর বড় বড় ভাষায় – যেমন ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মানী ইতালীয়, রুশ, স্পেনীয়, পর্তুগীজ, আলবানীয়, বোসনীয়, পোলিস, আরবী, উর্দু, ইন্দোনেশীয়, কাজাখস্তানী, আযারী, মালয়, মালয়লম ইত্যাদি ভাষাতে। হারুন ইয়াহইয়া বাতিল মতবাদ এবং নাস্তিক ও আল্লাহ অস্বীকারকারীদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। (তথ্যসূত্র : ডারউইন – তত্ত্ব ভ্রান্ত : মানুষ বানর সন্তান নয়, আবু রিদা)

হারুন ইয়াহইয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

হারুন ইয়াহইয়ার প্রকৃত নাম আদনান উকতার। লেখক হিসাবে (কলমী নাম) তিনি তার নাম রাখেন হারুন ইয়াহইয়া। যা বনী ইসরাঈলের দুই নবী-হারুন ও ইয়াহইয়া-র নাম নিয়ে গঠিত। তিনি নাস্তিকতার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সংগ্রাম করেন। তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিতদের অন্যতম।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় তার জন্ম। ১৯৫৬ সালে। নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও সমাজ সংস্কারে তিনি নিজেকে ওয়াকফ করে রেখেছেন। বিশ্বের প্রভাবশালী ইসলামি মুয়াল্লীগের তিনি অন্যতম। ইসলামের তবলীগ, এর প্রচারপ্রসার ও হিফাযতের জন্য আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিশেষ করে বিজ্ঞানের গভীর গবেষণায় তিনি লিপ্ত।

তাঁর এই গবেষণামূলক কাজকর্মের সূত্রপাত ১৯৭৯ সালে যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমি অব ফাইন আর্টসের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় তাঁর মনে এই অনুভূতি জাগে যে, বস্তুবাদ মানুষকে নামিয়ে এনেছে জীবজন্তুর কাতারে। মানবসমাজের শিক্ষিত সম্প্রদায় আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী হয়ে উঠতে থাকে। আর এর ফলেই মানবচরিত্রে চরম অবনতি ঘটে।

হারুন ইয়াহইয়া জেহাদ শুরু করেন এর বিরুদ্ধেই। তিনি একের পর এক বই লিখতে শুরু করেন। ডারউইনের বিবর্তনবাদকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করার লক্ষ্যে লিখিত এসব বই খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশ্ববিখ্যাত বহুল প্রচারিত ‘নিউ সাইন্টিটিস্ট’-এর ২২ এপ্রিল ২০০০ সালের সংখ্যানুযায়ী বস্তুবাদ ও ডারউইনবাদের বিরুদ্ধে তাঁকে বিশ্বনায়ক বানিয়ে দিয়েছে। এমনকি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সায়েন্স, নিউ সাইন্টিস্ট এবং এন.এস.সি.ই রিপোর্টারের মতো বিশ্বখ্যাত পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এতদিন ধরে বিশ্বব্যাপী ডারউইনবাদকেই প্রচার-প্রসারিত করে আসছে। অন্যদিকে, হারুন ইয়াহইয়ার কৃতিত্ব এখানেই যে তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার গভীরতার সুবাদেই এসব পত্রপত্রিকা তার কথা শুনতে বাধ্য হয়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ২০০৪-এর নভেম্বর সংখ্যা ইংরেজি ও জার্মান সংস্করণ হারুন ইয়াহইয়ার এই গবেষণাকে সৃষ্টিতত্ত্বের একটি প্রত্যক্ষ ও মজবুত দর্শন বলে অভিহিত করে। হারুন ইয়াহইয়া তাঁর গ্রন্থসমূহে যিয়নবাদেরও গভীর সমালোচনা করেন। তিনি ইহুদী ধর্মের অযৌক্তিক দর্শন ও অবৈজ্ঞানিক দাবিদাওয়াকে খণ্ডন করেছেন তাঁর গ্রন্থসমূহে। তাঁর গ্রন্থসমূহ অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ইউরোপীয় ও পৃথিবীর বড় বড় ভাষায়— যেমন ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মানী, ইতালীয়, রুশ, স্পেনীয়, পর্তুগীজ, আলবানীয়, বোসনীয়, পোলিস, আরবী, উর্দু, ইন্দোনেশীয়, কাযাখস্তানী, আযারী, মালয়, মালয়লম ইত্যাদি ভাষাতে।

হারুন ইয়াহইয়ার তামাম গ্রন্থ লেখা হয়েছে কুরআন-হাদীসের আলোকে। কিন্তু এস লেখা তুলনামূলক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্তে ভরপুর। এসবে তিনি একেবারে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও গবেষণা পর্যন্ত তার দৃষ্টান্ত টানেন। এখানেই তাঁর কৃতিত্ব, এখানে তাঁর শক্তি। সেজন্যই বাতিল মতবাদ এবং নাস্তিক ও আল্লাহ-অস্বীকারকারীদের নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

সহজেই বোঝা যাচ্ছে অভিজিৎ রায়ের এতো ক্রোধ কেন বিজ্ঞানী হারুন ইয়াহইয়ার প্রতি। অভিজিৎ রায় যেহেতু নাস্তিক অথা নিরীশ্বরবাদী আর নাস্তিকতাবাদের পুরো প্রাচীর টিকে আছে ডারউইনবাদের উপর। পক্ষান্তরে বিজ্ঞানী হারুন ইয়াহইয়া ডারউইনবাকে ও নাস্তিকতাবাদের রহস্য উন্মোচন করে ছেড়ে দিয়েছেন তাই প্রমাদ গনেছেন নাস্তিক অভিজিৎ রায়। ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেননি অভিজিৎ রায়। ফলে ক্রোধ প্রকাশ করতে গিয়ে বিজ্ঞানী হারুন। ইয়াহইয়াকে ছদ্ম বিজ্ঞানী বলে মনের ঝাল মিটিয়েছেন।

পৃথিবী স্থির না গতিশীল?

নাস্তিক অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফের উপর অভিযোগ করে বলেছেন না কি কুরআনে বলা হয়েছে পৃথবী নাকি স্থির। পৃথিবী তার কক্ষপথে আবর্তন করছে না। অথচ এটা অভিজিৎ রায়ের কুরআনের উপর সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। বরং কুরআনে বলা হয়েছে মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে।

অভিজিৎ রায় লিখেছেন,

“সুর্য আর চাঁদের এই ভ্রমনের কথা শুধু সুরা লোকমানে নয়, রয়েছে সুরা ইয়াসীন (৩৬ : ৩৮), সুরা যুমার (২০ : ১৩০), সুরা রা’দ (১৩ : ২), সুরা আম্বিয়া (২১ : ৩১), সুরা বাকারা (২ : ২৫৮), সুরা কাফ (১৮ : ৮৬), সুরা ত্বোয়াহায় (২০ : ১৩০)। কিন্তু সারা কোরাণ তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও পৃথিবীর ঘুর্ণনের পক্ষে একটি আয়াতও মিলবে না। আল্লাহর দৃষ্টিতে পৃথিবী স্থির।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ২)

শুধু অভিজিৎ রায় নন নাস্তিক তসলিমা নাসরিনও অনুরূপ অভিযোগ এনেছেন কুরআনের বিরুদ্ধে। বোম্বে থেকে ফ্যাশান ম্যাগাজিন ‘Savvy’ তার নভেম্বর ১৯৯২ সংখ্যায় নাস্তিক লেখিকা তসলিমা নাসরিন এর স্বাক্ষরযুক্ত এক বিশাল আত্মজীবনী প্রকাশ করেছে। এতে কুরআন, ইসলাম, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যৌন স্বাধীনতা, নারী অধীকার প্রভৃতি বিষয়ে তসলিমা খোলাখুলি আলোচনা করেছেন। এতে তিনি কুরআন সম্পকে সম্পূণ মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে পাঠক সমাজকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস করেছেন। তিনি লিখেছেন,

“আমি বাল্যকালে যখন খেলা করতাম, তখন ঐ মা আমাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতো। কিন্তু আমি নামাজ বা কোরান পড়া পছন্দ করতাম না। আমি কোরান বিশ্বাস করিনা। আমি যখন কোরান পড়েছিলাম, তখন তাতে দেখেছি কোরানে বলা হয়েছে – ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ আমি আমার মাতৃদেবীকে বলেছিলাম, ‘আমি বিজ্ঞানের বই পড়ে জেনেছি যে সূর্যেরই চারদিকে পৃথিবী ঘুরছে। কাজেই আল্লাহ একজন মিথ্যাবাদী।’……… মূল বিষয় হচ্ছে যে, আমি চিন্তা করেষ করে বুঝেছি কোরানে সূর্যের ব্যাপারে যা লেখা আছে তা মিথ্যা এবং আমি কখনোই এ ব্যাপারে একমত হতে পারব না।” (সৌজন্যেঃ সাপ্তাহিক কলম, ২রা জানুযারী ১৯৯৩)

এখানে তসলিমা নাসরিন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি কুরআন শরীফ পড়ে দেখেছেন যে তাতে লেখা আছে, ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ অথচ এটা তসলিমা নাসরিনের সম্পূন মিথ্যা ভাষণ। কুরআন শরীফে ৩০ পারা ১১৪টি সুরা ৬৬৬৬ টা আয়াতের মধ্যে কোথাও একথা লেখা নেই যে ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ তসলিমা নাসরিণ এর এই মিথ্যা ভাষণ পড়েই বোঝা যায় যে তিনি কত বড় মিথ্যাবাদী। বরং কুরআনে একথাই লেখা আছে যে এই যে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে আবতন করছে।

অভিজিৎ রায় ও তসলিমা নাসরিন কুরআন শরীফের বিন্দু মাত্র পাঠ না করেই বাগাড়ম্বড়ই করেছেন এবং বাদানুবাদের মধ্য দিয়ে নিজের মূর্খতাকে বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। তসলিমার দাবি যে তিনি এই জন্যই নামাজ পড়েন না যে কুরআনে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। এবং আল্লাহ বলেছেন, ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।’ আর বিজ্ঞান বলছে, ‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।’ অর্থাৎ তসলিমাকে যদি কুরআন শরীফ খুলে দেখিয়ে দেওয়া হয় যে সেখানে লেখা আছে এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে তাহলে তিনি আল্লাহকে সত্যবাদী বলে মনে করবেন এবং তিনি নামাজ পড়া শুরু করবেন। তাই তো ?

তাহলে আমরা দেখি এই মহাবিশ্ব সম্বন্ধে কুরআন আমাদের কি বলছে। কুরআন শরীফের সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, “ওয়াহুয়াল্লাযী খালাক্বাল লাইলা ওয়ান্নাহা-রা ওয়াস শামসা ওয়াল ক্বামারা, কুল্লুন ফি ফালাকিইঁ ইয়াসবাহুন।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত – ৩৩)

অর্থাৎ আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন রাত এবং দিন, সূর্য এবং চন্দ্র। অন্তরিক্ষে যা আছে তা প্রত্যেকে নিজ নিজ পক্ষপথে আবর্তন করে।

নীচে মূল আরবী ‘তফসিয়ে বায়যাবী’ থেকে সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতের স্ক্রীন শর্টটা লক্ষ্য করুন,

কুরআন শরীফের অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, “লাস শামসু ইয়ামবাগী লাহা আন তুদরীকাল কামারা ওয়াললাইলী সাবিকুন নাহার, কুল্লুন ফি ফালাকিইঁ ইয়াসবাহুন।” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত – ৪০)

অর্থাৎ সূর্যের পক্ষে চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয়। দিবসকে অতিক্রম করা; এবং অন্তরিক্ষে যা আছে তা প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন (সন্তরণ) করে।

নীচে মূল আরবী ‘তফসিয়ে বায়যাবী’ থেকে সুরা ইয়াসিনের ৪০ নং আয়াতের স্ক্রীন শর্টটা লক্ষ্য করুনঃ

এখানে স্পষ্ট ভাষায় কুরআন শরীফে লেখা আছে যে এই মহাকাশে যা কিছু আছে তা সবই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে। এখানে ‘ইয়াসবাহা’ আরবী শব্দ ‘সাবাহা’ থেকে এসেছে যার অর্থ চলমান কিছুর গতি এবং আরবী ‘ফালাক্ব’ শব্দের অর্থ হল কক্ষপথ। এককথায় এখানে কুরআনে বলা হয়েছে যে মহাকাশে যা কিছু আছে তা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। পৃথিবী যেহেতু মহাকাশের মধ্যেই রয়েছে তাই পৃথিবীও নিজের কক্ষপথে আবর্তন করছে। সুতরাং বিজ্ঞানের সঙ্গে কুরআনের কোন সংঘর্ষ নেই ।

অভিজিৎ রায় পৃথিবী স্থির হওয়ার ব্যাপারে কুরআন শরীফ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, সুরা নমলে (২৭ : ৬১) পরিস্কার বলা আছে, – ‘কে দুনিয়াকে বাসস্থানের স্থান করেছেন আর তার মধ্যে নদীসমূহ সৃষ্টি করেছেন আর এটিকে (পৃথিবী) স্থির রাখবার জন্য পাহাড় পর্বত সৃজন করেছেন…’। একইভাবে সুরা রুম (৩০ : ২৫) ফাত্বির (৩৫ : ৪১), লূকমান (৩১ : ১০), বাক্বারা (২ : ২২), নাহল (১৬ : ১৫), পড়লেও একই ধারণা পাওয়া যায় যে কোরাণের দৃষ্টিতে পৃথিবী স্থির।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ২)

এবার দেখা যাক নাস্তিক অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফ থেকে যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাতে কি বলা হয়েছে।

সুরা রুম (৩০ : ২৫) – “ওয়ামিন আয়াতিহি আনতাক্বুসা সামাউ ওয়াল আরদ্বু বিআমরিহি সুম্মা ইজাদা আকুম দাওয়াতাম মিনাল আরদ্বি ইজা আনতুম তাখরুজ্জুনা।”

وَ مِنْ اٰيٰتِهٖۤ اَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَ الْاَرْضُ بِاَمْرِهٖ١ؕ ثُمَّ اِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً١ۖۗ مِّنَ الْاَرْضِ١ۖۗ اِذَاۤ اَنْتُمْ تَخْرُجُوْنَ۰۰۲۵

অর্থাৎ তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন – তাঁরই আদেশে নভোমন্ডল ও ভুমণ্ডলের স্থিতি। এরপর আল্লাহ যখন তোমাদের মাটি হতে উঠাবার জন্য আহ্বান করবেন, তখন তোমরা উঠে আসবে।

সুরা ফাত্বির (৩৫ : ৪১) – “ইন্নাল্লাহা ইউমসিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা আনু তাজুলান ওয়া লাইন যালাতা ইন্‌ আমসাকাহুমা মিন্ আহাদিস মিম্ বায় দিহি ইন্নাহু কানা হালিমান গাফুরা।”

اِنَّ اللّٰهَ يُمْسِكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ اَنْ تَزُوْلَا١ۚ۬ وَ لَىِٕنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَكَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْۢ بَعْدِهٖ١ؕ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا۰۰۴۱

অর্থাৎ আল্লাহ নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী স্থির রাখেন, যাতে টলে না যায়। যদি এগুলো কক্ষচ্যুত হয়ে যায় তবে তিনি ছাড়া কে এগুলোকে স্থির রাখবে। নিশ্চয় তিনি মহাসহনসীল, মহা ক্ষমাপরায়ন।

সুরা লুকমান (৩১ : ১০) – “খালাকাস সামাওয়াতি বিগাইরি আমাদিন তারাউনাহা ওয়া আলকা ফিল আরদ্বি রাওয়াসিয়া আন্ তামিদাবিকুম ওয়া বাসসা ফিহা মিন্ কুল্লি দা-ব্বাতিন ওয়া আন জাল্ না মিনাস সামায়ে মা আন্ ফামবাত্ না ফিহা মিন কুল্লি যাওয়াজিন্ কারিম।”

خَلَقَ السَّمٰوٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَ اَلْقٰى فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَ بَثَّ فِيْهَا مِنْ كُلِّ دَآبَّةٍ١ؕ وَ اَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَنْۢبَتْنَا فِيْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيْمٍ۰۰۱۰

অর্থাৎ তিনি খুঁটি ছাড়া আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন – যা তোমরা দেখছ আর তিনি পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যাতে তোমাদের নিয়ে চলে না যায় এবং এতে সর্ব প্রকার জীব জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাতে সর্বপ্রকার কল্যানকর উদ্ভিদ উদ্‌গত করি ।

সুরা বাক্বারা (২ : ২২) “আল্লাযী জাআলা লাকুমুল আরদ্বা ফিরাসাঁওয়াস সামাওয়া বিনাআঁওয়ানযালা মিনাস সামায়ি ফা আখরাজা বিহি মিনাস সামাওয়াতি রিজকাল্লাকুম ফালা তাজআলু লিল্লাহি আনদা ইদাওয়া আনতুম তাআলামুন।”

الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً١۪ وَّ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزْقًا لَّكُمْ١ۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ۰۰۲۲

অর্থাৎ যিনি তোমাদের জন্য ভূতলকে বিছানা ও আকাশকে ছাদরূপ রেখেছেন। আর তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটান এবং তার থেকে তিনি ফলরাশি তোমাদের উপজীবিকার জন্য উৎপাদন করেন। অতএব আল্লাহর সমতুল্য কাউকে কর না; বাস্তবিক তোমরা তা অবগত আছো।

নাহল (১৬ : ১৫) – “ওয়া আলুকা ফিল আরদ্বি রা ওয়াসিয়া আন্ তামিদাবিকুম ওয়া আনহা রাউ ওয়াসবুলাল লায়াল্লাকুম তাহতাদুন।”

وَ اَلْقٰى فِي الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَ اَنْهٰرًا وَّ سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَۙ۰۰۱۵

অর্থাৎ তিনি পৃথিবীকে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে তোমাদের নিয়ে আলোড়িত না হয়; আর তিনি স্থাপন করেছেন নদী ও পথ সমূহ যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।

কুরআন শরীফের উপরিউক্ত আয়াতগুলিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে পৃথিবী স্থির অর্থাৎ পৃথিবী যখন আল্লাহ সৃষ্টি করেন তখন প্রচন্ড জোরে কম্পন করছিল। আল্লাহ যখন পাহাড় সৃষ্টি করলেন তখন তা স্থির হয়ে গেল।

হাদীস শরীফে আছে, হজরত আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করলেন তখন তা থর থর করে (ভুমিকম্পের মতো) কাঁপতে লাগল। অতঃপর আল্লাহ পাহাড় পর্বত সৃষ্টি করলেন এবং তার উপর শলাকা স্বরূপ মারলেন। তখন পৃথিবী স্থির হয়ে গেল। (মিশকাত শরীফ)

হাদীসের অন্যস্থানে আছে, “লাম্মা খালাকাল্লাহুল আরদ্বা জাআলাত তামিদু ফা খালাকাল জিবালা ফাকালবিহা আলাইহা ফাসতাকাররাত ফায়াজেবাতিল মালায়িকাতু মিন শেদ্দাতিলজিবালে৷”

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহ জমিনকে সৃষ্টি করলেন তখন তাতে ভীষণভাবে কম্পন উপস্থিত হল, তাতে জীবজন্তু ও মানব দানবের অবস্থানের যোগ্যই থাকল না। সুতরাং আল্লাহ পাহাড় পর্বতগুলিকে সৃষ্টি করে জমিনের উপর বসিয়ে দিলেন আর অমনি জমিন থেমে গেল। শান্ত হয়ে স্বস্থানে স্থিতিশীল হয়ে গেল।

এখানে স্পষ্টভাবে হাদীসে বলা হয়েছে যে পৃথিবী যখন সৃষ্টি করা হয় তখন তা প্রচন্ড জোরে কাঁপছিল, যখন পৃথিবীর উপর পাহাড় সৃষ্টি করে বসিয়ে দেওয়া হল তখন পৃথিবী স্থির হয়ে গেল। এখানে ভুমিকম্পের কথা বলা হয়েছে। সেই ভুমিকম্প স্থির হয়ে যায়। তাহলে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে স্থির এটা কি করে প্রমাণ হয়?

আজকের বিজ্ঞানের যুগে সত্য প্রমাণ হয়েছে যে পাহাড় বেষ্ঠিত অঞ্চলে সাধারণত ভুমিকম্প হয়না। সামুদ্রিক দ্বীপগুলোতে বেশী ভুমিকম্প হয়। যেমন জাপান সামুদ্রিক অঞ্চলে থাকা জন্য সব থেকে বেশি ভুমিকম্প হয়। তাহলে এখানে তো কুরআন শরীফ যে বিজ্ঞানসম্মত সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। অভিজিৎ রায়ের ভুয়া যুক্তি এখানে ধোপে টিকে না।

অভিজিৎ রায় লিখেছেন, “একটি মাত্র আয়াত যদি দেখাতে পারেন যেখানে লেখা আছে “পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে’, অথবা নিদেন পক্ষে ‘পৃথিবী ঘুরছে’ – আমি তার সকল দাবী মেনে নেব। আরবীতে পৃথিবীকে বলে ‘আরদ’ আর ঘুর্ণন হচ্ছে ‘ফালাক’। একটিমাত্র আয়াত আমি দেখতে চাই যেখানে ‘আরদ’ এবং ‘ফালাক’ পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়েছে।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ২)

এটা ঠিক যে কুরআন শরীফে একথা বলা নেই যে ‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে’ তবে কুরআন শরীফে তো একথাও বলা নেই যে ‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে না’ বা ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে।’ অভিজিৎ রায় বলেছেন যে ‘যদি দেখিয়ে দেওয়া হয় পৃথিবী ঘুরছে’ তাহলে আপনি তার সকল দাবী মেনে নেবেন। আমি তো আগেই কুরআন শরীফের আয়াত থেকে প্রমাণ করেছি যে সেখানে লেখা আছে, “কুল্লুন ফি ফালাকিই ইয়াসবাহুন।” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৪০)।

অর্থাৎ সবকিছুই নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। অভিজিৎ রায় কি মনে করে পৃথিবী সব কিছুর মধ্যে পড়ে না? পৃথিবী কি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বাইরের গ্রহ? যখন আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে সবকিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে তাহলে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে আবর্তন করবে না কেন?

আর অভিজিৎ রায় বলেছেন ঘুর্ণনের আরবী হচ্ছে ‘ফালাক’। এটা আপনার সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ঘুর্ণনের আরবী হল, ‘সাবাহা’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘চলমান কিছুর গতি’ এবং আরবী ‘ফালাক্ব’ শব্দের অর্থ হল কক্ষপথ। তাহলে অভিজিৎ রায় আরবী শব্দের অর্থই যখন জানেন না আর আরবী শব্দের ভুল ভাল অর্থ করে মানুষকে যখন বিভ্রান্ত করেন তবে আপনার কুরআনের উপর অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে কি করে?

সুর্যাস্তের ব্যাপারে অভিযোগ

অভিজিৎ রায় লিখেছেন, “চিন্তাশীল পাঠকেরা কোরাণের সেই বিখ্যাত সুরাটিতে চোখ বুলালেই বুঝবেন যেখানে জুল কারণাইনের উল্লেখ আছে – ‘অবশেষে যখন সে সূর্যাস্তের দেশে পৌঁছালো, সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে ডুবতে দেখল এবং সেখানে দেখতে পেল এক জাতি। আমি বললাম, হে জুলকারণাইন, হয় এদের শাস্তি দাও, না হয় এদের সাথে ভাল ব্যাবহার কর’। (১৮:৮৬)

যারা কোরাণের মধ্যে অনবরত বিগ ব্যাং, এবং সুপার স্ট্রিং তত্ত্বের খোঁজ করেন, তারা কি একবারের জন্যও ভাবেন না আল্লাহ কেমন করে এত বড় ভুল করলেন! কিভাবে আল্লাহ ভাবলেন যে সূর্য সত্যই কোথাও না কোথাও অস্ত যায়? কোরাণ কি সত্যই ‘মহা বিজ্ঞাময়’ কিতাব নাকি ভ্ৰান্তি বিলাস?” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ২)

এখানে অভিজিৎ রায় বলেছেন যে ‘আল্লাহ ভেবেছেন সূর্য কোথাও না কোথাও অস্ত যায়।’ অথচ এটা আল্লাহর কথা নয়। এখানে নবী হজরত জুলকারনাইনের বাহ্যিকভাবে মনে হয়েছিল যে সূর্য পঙ্কিল জলাশয়ে ডুবে যাচ্ছে।

আল কুরআনে আল্লাহ যা বলেছেন তা হল,

حَتّٰۤى اِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِنْ دُوْنِهِمَا قَوْمًا١ۙ لَّا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ قَوْلًا۰۰۹۳ قَالُوْا يٰذَا الْقَرْنَيْنِ اِنَّ يَاْجُوْجَ وَ مَاْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِي الْاَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلٰۤى اَنْ تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَ بَيْنَهُمْ سَدًّا۰۰۹۴

অর্থাৎ চলতে চলতে যখন সে (যুলকারনাইন) সূর্যের অস্তাগমন স্থানে পৌঁছালো তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্তাগমন করতে দেখলো এবং সে তথায় এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলো, আমি বললাম, হে যুলকারনাইন তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার। (আল কুরআন, সুরা কাহফ, আয়াত ৮৬)

উক্ত সুরার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে ইবনে কাসীর’ এর মধ্যে লেখা আছে, “মোট কথা, যখন তিনি পশ্চিম দিকের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যান তখন এরূপ মনে হলো যে, যেন সূর্য প্রশান্ত মহাসাগরে অস্ত যাচ্ছে। কেউ যদি সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যকে অস্ত যেতে দেখে তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার এরূপই মনে হবে যে, ওটা যেন পানির মধ্যেই ডুবে যাচ্ছে।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর, চতুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৯১ ও ৯২)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘ফি যিলালিল কোরআন’ এর মধ্যে লেখা আছে, “এখানে অস্তমিত যাওয়ার স্থান বলতে সেই স্থানটিকে বুঝান হয়েছে যেখানে এসে একজন দর্শক দেখতে পায় সূর্য দিগন্ত রেখার ওপারে ডুবে যাচ্ছে। আর এ অস্তমিত হওয়ার স্থানটি বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন হয়ে থাকে কোন যায়গায় দর্শক দেখে সূর্য পাহাড়ের পিছনে ডুবে যাচ্ছে, কোন জায়গায় দেখে মহাসাগরের বুকে সূর্য আত্মগোপন করছে, আবার কোন জায়গায় দেখে সূর্য যেন তলিয়ে যাচ্ছে মরুভূমির বুকের মধ্যে, কারণ এসব মরুভূমির দিকে খোলা চোখে তাকালে তার কোন কুল কিনারা নজরে পড়ে না। আল কোরআনের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে যুলকারনায়ন পশ্চিম দিকে চলতে চলতে গেছেন পৌঁছে আটলান্টিক সমুদ্রের কিনারায় এমন এক স্থানে যেখান থেকে তার মনে হচ্ছিল স্থলভাগ যেন ওখানেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলেন অতলান্ত এই সাগরের বুকে সোনার বরণ ওই দিন ধীরে ধীরে ডুবে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।” (ফি যিলালিল কোরআন, প্রণেতা – সৈয়দ কুতুব শহীদ রহ.)।

সুতরাং আল্লাহ কখনোই বলেন নি যে সূর্য পঙ্কিল জলাশয়ে ডুবে যাচ্ছে। এটা হজরত জুলকারনাইনের মনে হয়েছিল। জুলকারনাইনের মনে হওয়াকে নাস্তিক অভিজিৎ রায় আল্লাহর উপর ফিট করে আল্লাহকে মিথ্যাবাদী ও কুরআন শরীফকে ভ্রান্তি – বিলাস বলে কটাক্ষ করেছেন। এটা তাঁর মুখতার চরম নিদর্শন।

সত্যিই কি আকাশ বলে কিছু নেই?

অভিজিৎ রায় লিখেছেন, “সুরা লুকমানে (৩১ : ১০) আল্লাহর মহিমার বর্ণনা আছে এইভাবে – ‘তিনিই খুঁটি ছাড়া আকাশকে ছাদ স্বরূপ ধরে রেখেছেন…..’

কিন্তু আজ এই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির যুগে আমরা জানি, আকাশ কখনই পৃথিবীর ছাদ নয়। সামগ্রিকভাবে আসলে আকাশ বলে তো কিছুই নেই। আকাশ হচ্ছে আমাদের দৃষ্টির প্রান্তসীমা।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৪)।

সত্যিই আকাশ বলে কিছু নেই? আকাশ বলে যদি কিছু না থাকে তাহলে তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পেশ করুন। কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে অভিজিৎ রায় দাবি করছেন যে আকাশ বলে কিছু নেই? বিজ্ঞানের দৃষ্টি তো কোটি কোটি আলোকবর্ষ দুরে অবস্থিত নক্ষত্র ও গ্যালাক্সির ভিতর কি আছে তার রহস্য এখানো ভেদ করতে পারে নি। তাহলে মিলিয়ন মিলিয়ন দুরে অবস্থিত আকাশের রহস্য ভেদ করে বলল কি করে যে আকাশ বলে কিছু নেই।

আসলে বিজ্ঞান মহাশূন্যের অনেক রহস্য এখনো ভেদ করতে পারেনি। সেজন্য বলেছে যে আকাশ বলে কিছু নেই। এই তো কিছু দিন আগে আপনাদের পূর্বসূরী গ্যালিলিও বলেছিলেন, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে, আর পৃথিবী স্থির। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন যে শুধু পৃথিবী স্থির নয়, এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে সব কিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সুর্য যা কিছু আছে সব কিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। সুতরাং গ্যালিলিওর আবিস্কার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঠিক সেই রকম আজকের বিজ্ঞান বলছে যে আকাশ বলে কিছু নেই কিন্তু আগামীতে আকাশ বলে কিছু একটা আছে বলবে না একথা কেউ হলফ করে বলতে পারবেন না? কেননা বিজ্ঞানের থিওরী হল আপেক্ষিক। বিজ্ঞানীরা আজকে একটা বলছে কালকে আরেকটা বলবে, পরশু আরেকটা বলবে। তবে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত থিওরীর সঙ্গে কুরআনের কোন সংঘর্ষ নেই।

পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ ছিল। কোন বিজ্ঞানীই সঠিকভাবে বলতে পারেন নি যে কিভাবে পৃথিবী ও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু নব্বই এর দশকে বিজ্ঞানীরা চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে এই বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটা কুরআন শরীফের সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে গেল। সুতরাং বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত থিওরীর সঙ্গে কুরআনের কোন সংঘর্ষ নেই। তাই আজকে বিজ্ঞান বলছে আকাশ বলে কিছু নেই আগামীতে আছে বলবে না এর গ্যারেন্টি কে দেবে?

বিজ্ঞানীদের ধারণা যে পৃথিবীর বয়স ৩৫০ কোটি বছর। কিছুদিন আগে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে উত্তর মহাসাগরে একটি জীবাশ্ম পাওয়া যায়। তার বয়স হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন ছয় শত কোটি বছর। তাই প্ৰশ্ন জাগে পৃথিবীর বয়স মাত্র ৩৫০ কোটি বছর অথচ তাহলে জীবাশ্মের বয়স ৬০০ কোটি বছর হল কি করে? তাহলে কি জীবটি পৃথিবী সৃষ্টির আগেই জন্ম হয়েছিল? এর জবাব কি দেবেন?

অপার্থিব জামান লিখেছেন, “বিজ্ঞান এখনও জানে না যে আমাদের এই মহাবিশ্ব বদ্ধ না কি খোলা ফ্ল্যাট।” আর এই অপার্থিব জামানের লেখার উদ্ধৃতি বেশ কয়েক জায়গায় দিয়েছেন অভিজিৎ রায়। এখানে অপার্থিব জামান লিখেই দিয়েছেন, “বিজ্ঞান এখনও জানে না মহাবিশ্ব বদ্ধ না কি খোলা ফ্ল্যাট?” যদি বদ্ধ হয় তাহলে প্রান্তসীমা হল আকাশ আর যদি বদ্ধ না হয় অর্থাৎ খোলা ফ্ল্যাট হয় তাহলে আকাশ বলে কিছু নেই। বিজ্ঞান আগে এটাই প্রমাণ করুক যে মহাবিশ্ব বদ্ধ কি খোলা ফ্ল্যাট? তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

পৃথিবী কি সমতল না গোলাকৃতি?

নাস্তিক অভিজিৎ রায় করআনের উপর অভিযোগ করে লিখেছেন, “কোরাণের দৃষ্টিতে পৃথিবী সমতল। নিম্নোক্ত সূরাগুলি তার প্রমাণ –

‘পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি (কার্পেটের মতো) এবং ওতে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি……. (হিজর ১৫ : ১৯)।

‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে (সমতল) শয্যা করেছেন এবং ওতে তোমাদের জন্য চলার পথ দিয়েছেন…’ (ত্বাহা ২০ ও ৫৩, যুখরুখ ৪৩ ও ১০)

‘আমি বিস্তৃত করেছি (কার্পেটের মত) পৃথিবীকে এবং ওতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি…’ (ক্বাফ ৫০ : ৭) ‘আমি ভূমিকে বিছিয়েছি, আর তা কত সুন্দর বিছিয়েছি…’ (ত্বর ৫২ : ৪৮)।

‘আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত…’ (নুহ ৭১ : ১৯) ইত্যাদি।

উপরের আয়াতগুলি থেকে বোঝা যায়, পদার্থবিদরা যেভাবে আজ গোলাকার পৃথিবীর ধারণা পোষণ করেন, কোরাণের পৃথিবী তার সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৫)

উপরে কোন আয়াতে তো আল্লাহ বলেন নি যে পৃথিবী গোলাকার নয়। আর অভিজিৎ রায় যে আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাতে কোথায় বলা হয়েছে যে পৃথিবী সমতল? তবে অভিজিৎ রায় কোরাণের আয়াতের বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে জালিয়াতির প্রশ্রয় নিয়েছেন নিজের দাবি প্রমাণের জন্য। যেমন সুরা হিজরের ১৯ নং আয়াতের অনুবাদে ও সুরা কাফের ৭ নং আয়াতের অনুবাদে ব্রেকেটের মধ্যে কার্পেটের মতো কথাটি লিখেছেন, অথচ আরবীতে সেখানে ‘কার্পেটের মতো’ কথাটি নেই এবং সুরা ত্বাহার ৫৩ নং আয়াত ও সুরা যুখরুখের ১০ নং আয়াতের অনুবাদে ব্রেকেটের মধ্যে ‘সমতল’ কথাটি লিখেছেন তাও মূল আরবীতে ‘সমতল’ কথাটি লেখা নেই। এখানে শয়তানি করে অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফকে ভুল সাব্যস্ত করার জন্য জালিয়াতির প্রশ্রয় নিয়েছেন।

এবার দেখা যাক কুরআনে পৃথিবীকে গোলাকার বলা হয়েছে। কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেন,

اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللّٰهَ يُوْلِجُ الَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَ يُوْلِجُ النَّهَارَ فِي الَّيْلِ

“আলাম তারা আল্লাহা ইয়ূলিজুল লাইলা ফিন্নাহারি ওয়া ইয়ুলিজুল নাহারা ফি লাইলি।”

অর্থাৎ তুমি কি দেখোনি, আল্লাহ রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে প্রবিষ্ট (অন্তর্ভুক্ত) করেন? (সুরা লুকমান : আয়াত – ২৯)।

এখানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ রাত ধীরে ধীরে এবং ধারাবাহিকভাবে দিনে পরিবর্তিত হয় এবং ঠিক তার বিপরীতবাবে দিনও (পরিবর্তিত হয়)। পৃথিবীর আকার গোলাকৃতি বলেই এই ধরণের ঘটনা সংঘটিত হওয়া সম্ভব। পৃথিবী যদি সমতল হত, তাহলে হঠাৎ রাত থেকে দিন এবং দিন থেকেরাতে (ধীরে ধীরে পরিবর্তন) লক্ষ্য করা যেত।

পৃথিবী যে গোলাকার তার প্রমাণ কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতে পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক বলেছেন,

خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بِالْحَقِّ١ۚ يُكَوِّرُ الَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَ يُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى الَّيْلِ

“খালাকাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা বিল হাক্কি ইউকাউবিরুল লাইলা আলান্ নাহারি কাউ বিরুন্ নাহারা আলাল লাইল।”

অর্থাৎ তিনি আকাশ ও ভুমি সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে, তিনি রাতকে দিন দ্বারা এবং দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন । (সুরা যুমার : আয়াত – ৫)

উপরের আয়াতে আরবী শব্দ ‘ইউকাব্বিরু’ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ আংশিক আবৃত করা বা কোনও কিছুকে আচ্ছাদিত করেও প্রসারিত হওয়া; অথবা কুন্ডলী করা বা গোলাকার কিছুতে জড়ানো। অর্থাৎ মাথার চারপাশে যেমন পাগড়ি জড়ানো থাকে। দিন ও রাতে এই চক্রাকারে আচ্ছাদন বা প্রসারণ কেবল তখনই ঘটে, যখন পৃথিবীর আকার গোল হয়।

তবে পৃথিবীর আকার বলের মতো পুরোপুরি গোল নয়, ঠিক ভুগোলকের আকার। অর্থাৎ মেরুর দুটি দিক খানিকটা চ্যাপটা। নীচের আয়াতে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে বলেছে –

وَ الْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحٰىهَاؕ۰۰۳۰

“ওয়াল আরদ্বা বা’দা যালিকা দহ্বাহা”

অর্থাৎ তারপর তিনি পৃথিবীকে পরে বিস্তৃত করেছেন । (সুরা নাযিয়াত : আয়াত – ৩০)

উপরে বর্ণিত আয়াতে ডিমের আরবী শব্দ বলা হয়েছে – ‘দহ্বাহা” মানে উটপাখির ডিম। একটি উটপাখির ডিমের আকৃতি পৃথিবীর আকৃতি অনুরূপ।

বিজ্ঞানী ডাঃ মরিস বুকাইলী লিখেছেন, “দিনরাত্রির পরিক্রমণের বেলায় বাস্তবে মহাশূন্যে কি ঘটে? সেই ঘটনাটি যে আসলে কি, একান্ত হালে মার্কিন নভোচারীবৃন্দ মহাশূন্যযান থেকে নিজেরা তা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তার চিত্রও তাঁরা তুলে রেখেছেন। এ সময়ে তাঁরা ছিলেন পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দুরে চাঁদের বক্ষে। সেখানে থেকে তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, পৃথিবীর যে অর্ধেক অংশটা সূর্যের দিকে ফেরানো, সূর্য কি রকম স্থায়ীভাবে পৃথিবীর সেই পৃষ্ঠভাগ আলোকোজ্জ্বল করে রাখছে (গ্রহণকালের সময়টা বাদ দিয়ে অবশ্য); এবং কিভাবে ভুমন্ডলের বাকি অর্ধভাগে বিরাজ করছে অন্ধকার। একদিকে পৃথিবী তার আপন মেরুদন্ডের উপর আবর্তিত হচ্ছে; অন্যদিকে সূর্যরশ্মি তুলনামূলকভাবে একই অবস্থান থেকে তার উপরে আলো বিতরণ করছে। এর ফলে, চব্বিশ ঘন্টায় পৃথিবী যখন আপন মেরুদন্ডের উপর আবর্তিত হচ্ছে, – তখনো ভূমন্ডলের যে অর্ধেক স্থান জুড়ে বিরাক করছে আলো অর্থাৎ দিন এবং বাকি যে অর্ধেক এলাকা অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকছে অর্থাৎ রাত্রি – দিনরাত্রির সেই উভয় এলাকা একই সময়ে একই আবর্তনে ঘুরপাক খাচ্ছে। ‘দিনরাত্রির এই যে অবিরত আবর্তন’, এই বিষয়টাই কোরআনে উপরোক্ত ‘কাওয়ারা’ শব্দের দ্বারা এরকম সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।

এভাবে শুধুমাত্র আধুনিক যুগে এসেই মানুষ কোরআনে বর্ণিত দিনরাত্রির। অবিরত আবর্তনের ধারণাটা সহজে বুঝে নিতে পারছে। কেননা, এখন আমরা সূর্যের (তুলনামূলকভাবে) স্থিরভাবে আলো বিতরণ ও পৃথিবীর অবিরত ঘূর্ণন সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে পারছ। গোলাকার ভূমন্ডলে কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় দিন-রাত্রির এই যে অবিরত আবর্তন এবং একটির অভ্যন্তরে আরেকটির অনুপ্রবেশ, সেই বিষয়টাই কোরআনে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন পৃথিবী যে গোলাকার – সেই ধারণাটা কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কালেও সত্যি হিসেবে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা মোটেই তা নয়; অর্থাৎ পৃথিবী যে গোলাকার সে রকম কোন ধারণা তখন চালু ছিল না।” (বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান, ডাঃ মরিস বুকাইলী, পৃষ্ঠা – ২২৩, ২২৪)

তাহলে দেখা যাচ্ছে কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে পৃথিবী যে গোলাকার তার প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কুরআনের কোন সংঘর্ষ নেই। অভিজিৎ রায় সংঘর্ষ বানাবার প্রচেষ্টা করেছেন এবং কুরআনের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র করেছেন কিন্তু তাঁর এই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।

শুক্র কীট কোথা থেকে নির্গত হয়?

অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফের ভূল ধরতে গিয়ে লিখেছেন,

“এ ধরণের ভুল আরো আছে। যেমন, বলা হয়েছে স্পার্ম নাকি তৈরি হয় মেরুদন্ড এবং পাঁজরের মধ্যবর্তী জায়গা থেকে (৮৬ : ৬-৭); মাতা মেরীকে বর্ণনা করা হয়েছে অ্যারনের (মুসার বড় ভাই) বোন হিসাবে (১৯ : ২৮); ইত্যাদি। এগুলো সবই হাস্যকর রকমের ভ্রান্ত তথ্য।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৬)

এখানে কুরআনে বলা হয়েছে যে স্পার্ম অর্থাৎ শুক্রকীট মেরুদন্ড ও পাঁজরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে নির্গত হয়। এটাকে অভিজিৎ রায় হাস্যকর ও ভ্রান্ত তথ্য বলে উপহাস করেছেন। তাহলে দেখা যাক সত্যই কি এটা ভ্রান্ত ও হাস্যকর তথ্য।

আগে আমরা দেখি কুরআন শরীফে কি লেখা আছে। কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেন,

فَلْيَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَؕ۰۰۵ خُلِقَ مِنْ مَّآءٍ دَافِقٍۙ۰۰۶ يَّخْرُجُ مِنْۢ بَيْنِ الصُّلْبِ وَ التَّرَآىِٕبِؕ۰۰۷ اِنَّهٗ عَلٰى رَجْعِهٖ لَقَادِرٌؕ۰۰۸

“ফাল ইয়ান্ যুরিল ইনসানু মিম্মা খুলিক। খুলিকা মিম্মা ইনদাফি ইয়াখরুজু মিম বাইনিস সুলবি উয়াত্তারাইব।”

অর্থাৎ মানুষ কি এতটুকুই লক্ষ্য করুক না তাকে কি জিনিস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে! সবেগে স্থলিত পানি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে – যা শিরদাঁড়া (মেরুদন্ড) ও পাঁজর থেকে নির্গত হয়। (সুরা ত্বারিক, আয়াত ৫-৭)।

ভ্রণ অবস্থায়, পুরুষ এবং স্ত্রী জনন অঙ্গ অর্থাৎ অন্ডকোষ এবং ডিম্বকোষ, মেরুদন্ড এবং একাদশ এবং দ্বাদশ পাঁজরের হাড়ের মধ্যে কিডনির কাছে, তাদের বিকাশ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলি নীচের দিকে নামতে থাকে; এই অবস্থায় শ্রোণিতে (পেলভিস) গিয়ে স্ত্রী জনন অঙ্গের বিকাশ বন্ধ হয়, যেখানে পুরুষ জনন অঙ্গ (অন্ডকোষ) গর্ভস্থ সন্তানের জন্মের আগে পর্যন্ত কুঁচিকা নালীর মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে অন্ডকোষের বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য নীচের দিকে নামতে থাকে। জনন অঙ্গের নীচের দিকে বৃদ্ধির পর, এমনকি বয়সকালেও এই অঙ্গগুলি তাদের স্নায়ু এবং রক্ত সরবরাহ করে ঔদরিক ধমনি থেকে, যা মেরুদন্ড এবং পাঁজরের আস্থির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। এমনকি লসিকা – নালী এবং শিরা উপশিরাগুলিও ওই মধ্যবর্তী অঞ্চলের অভিমুখী হয়। (তথ্যসুত্রঃ আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান, ডাঃ জাকির নায়েক)

তাহলে অভিজিৎ রায়ের কথা অনুযায়ী কুরআনে হাস্যকর ও ভ্ৰন্ত তথ্য কোথায়? কুরআনে যা বলা হয়েছে তা বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বরং কুরআনের এই তথ্য অস্বীকার করাই হাস্যকর এবং ভ্রান্ত।

অভিজিৎ রায় তো হজরত মরিয়মকে (মেরী) যে হারুনের (অ্যারন) বোন বলা হয়েছে সেটাও হস্যকর বলেছেন। আচ্ছা এটা কি করে হাস্যকর ও ভ্রন্ত হল?

কুরআন শরীফে কি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আছে?

অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফের পরস্পর বিরোধী মন্তব্য আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন,

“পরস্পর বিরোধী বাণীও আছে ঢের। কয়েকটি আয়াত পাওয়া যায়, এই মহাবিশ্ব তৈরি করতে আল্লাহ সময় নিয়েছেন ছয় দিন। (৭ : ৫৪, ১০ : ৩, ১১ : ৭, ৫০ : ৩৮, ৫৭ : ৪ ইত্যাদি), কিন্তু পরে ৪১ : ৯-১২ থেকে জানা যায়, তিনি পৃথিবী তৈরি করতে ২ দিন সময় নিয়েছিলেন, এর পর এর মধ্যে পাহাড় পর্বত বসাতে আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক ইমারত তৈরি করতে আরো চারদিন, অবশেষে সাত আসমান বানাতে সময় নিয়েছেন আরো দু-দিন। সব মিলিয়ে সময় লেগেছে মোট আট দিন। কাজেই কোরান অনুযায়ী আল্লাহ মহাবিশ্ব বানিয়েছেন কয় দিনে – ছয় দিনে নাকি আট দিনে?” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৬)

দেখা যাক কুরআনে সত্যই কি জগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য আছে? কুরআন শরীফের সুরা আরাফের ৫৪ নং আয়াতে, সুরা ইউনুসের ৩ নং আয়াতে, সুরা হুদের ৭ নং আয়াতে, সুরা কাফের ৩৮ নং আয়াতে এবং সুরা হাদীদের ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে। অপরদিকে সুরা হামীম এর ৯ এবং ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে পৃথিবীকে দুই দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাহলে কি কুরআনে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য হচ্ছে না। আমরা বলব না, কারণ তার পরেই আল্লাহ সুরা হামীম এর ১০ নং আয়াতে বলছেন যে চার দিনের মধ্যে পৃথিবীতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। তাহলে ২ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি ও ৪ দিনে খাবারের ব্যবস্থা মোট ৬ দিনই তো হচ্ছে? এখানে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য কোথায়? অযথা আপনি পরস্পর বিরোধী বানাবার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পরে আল্লাহ বলছেন যে দুই দিনে আল্লাহ আকাশ সৃষ্টি করেছেন। তাহলে মোট আট দিনে এই বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবী ৬ দিনে১ সৃষ্টি হয়েছে আর সারা বিশ্ব মোট আট দিনে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীকে আলাদা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আকাশ আলাদা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাহলে এখানে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য কোথায় পেলেন?

অভিজিৎ রায় আরও লিখেছেন,

“পরস্পর বিরোধিতার আরো কিছু নমুনা দেখি। সুরা ৭৯ : ২৭-৩০ অনুযায়ী আল্লাহ ‘হেভেন’ বানিয়েছিলেন আগে, তারপর বানিয়েছিলেন পৃথিবী, কিন্তু অন্য আয়াতে আল্লাহ বলছেন একেবারে উলটো কথা – অর্থাৎ, আগে পৃথিবী, পরে হেভেন (২ : ২৯, ৪১ : ৯-১২)” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৬)

এখন আমরা দেখব কুরআনে আসলে কি বলা হয়েছে?

সুরা ৭৯ : ২৭-৩০ অর্থাৎ সুরা নাযিয়াতের ২৭ ও ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

ءَاَنْتُمْ اَشَدُّ خَلْقًا اَمِ السَّمَآءُ١ؕ بَنٰىهَاٙ۰۰۲۷ رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوّٰىهَاۙ۰۰۲۸ وَ اَغْطَشَ لَيْلَهَا وَ اَخْرَجَ ضُحٰىهَا۪۰۰۲۹ وَ الْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِكَ دَحٰىهَاؕ۰۰۳۰

অর্থাৎ “তোমাদের সৃষ্টি করা কঠিন, না আকাশের যা তিনি নির্মাণ করেছেন। তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। আর তিনি রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং সূর্যালোক প্রকাশ করেছেন। আর পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন।”

অপরদিকে ২ : ২৯ অর্থাৎ সুরা বাকারার ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ اِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ۠ اِنِّيْ جَاعِلٌ فِي الْاَرْضِ خَلِيْفَةً١ؕ قَالُوْۤا اَتَجْعَلُ فِيْهَا مَنْ يُّفْسِدُ فِيْهَا وَ يَسْفِكُ الدِّمَآءَ١ۚ وَ نَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَ نُقَدِّسُ لَكَ١ؕ قَالَ اِنِّيْۤ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ۰۰۳۰

অর্থাৎ স“পৃথিবীতে যা কিছু আছে তিনি সবই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য। তারপর তিনি আকাশের প্রতি অভিষ্ট হলেন – তারপর তিনি সপ্ত আকাশ সাজালেন। আর তিনি সব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।”

অপরদিকে ৪১ : ৯-১২ অর্থাৎ সুরা হামীম এর ৯ থেকে ১২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

قُلْ اَىِٕنَّكُمْ لَتَكْفُرُوْنَ بِالَّذِيْ خَلَقَ الْاَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ وَ تَجْعَلُوْنَ لَهٗۤ اَنْدَادًا١ؕ ذٰلِكَ رَبُّ الْعٰلَمِيْنَۚ۰۰۹ وَ جَعَلَ فِيْهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَ بٰرَكَ فِيْهَا وَ قَدَّرَ فِيْهَاۤ اَقْوَاتَهَا فِيْۤ اَرْبَعَةِ اَيَّامٍ١ؕ سَوَآءً لِّلسَّآىِٕلِيْنَ۰۰۱۰ ثُمَّ اسْتَوٰۤى اِلَى السَّمَآءِ وَ هِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَ لِلْاَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا اَوْ كَرْهًا١ؕ قَالَتَاۤ اَتَيْنَا طَآىِٕعِيْنَ۰۰۱۱ فَقَضٰىهُنَّ سَبْعَ سَمٰوٰتٍ فِيْ يَوْمَيْنِ وَ اَوْحٰى فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ اَمْرَهَا١ؕ وَ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ١ۖۗ وَ حِفْظًا١ؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ۰۰۱۲

অর্থাৎ “তুমি বল, তোমরা কি তাকে অস্বীকরা করবেই যিনি দুদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও? তিনিই তো বিশ্ব জগতের পালনকর্তা। আর তিনি ভুপৃষ্টের উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আর পৃথিবীতে রেখেছেন কল্যান এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যাবস্থা করেছেন সকলের জন্য সমানভাবে, যারা এর অনুসন্ধান করে। এরপর তিনি আকাশের দিকে নমোনিবেশ করেন, যা ছিল ধুম – পুঞ্জ বিশেষ। অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আমার আদেশ পালন কর। তারা বলল, আমরা তো আনুগত্যের সাথে প্রস্তুত। অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুদিনে সপ্ত আকাশে পরিণত করলেন ও প্রত্যেক আকাশে তার কর্তব্য ব্যক্ত করলেন। আর নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করলেন। এটা পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী আল্লাহ কর্তৃক সুবিন্যস্ত।” (সুরা হামীম, আয়াত : ৯-১২)

এখানে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে যে কুরআন শরীফে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য আছে। কেননা, সুরা নাযিয়াতের ২৭ থেকে ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ আকাশকে সৃষ্টি করেছে তারপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। আর সুরা বাকারার ২৯ নং আয়াতে ও সুরা হামীমের ৯ থেকে ১২ নং আয়াতের মধ্যে আল্লাহ বলেছেন, আগে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন পরে ‘হেভেন’ অর্থাৎ আকাশ সৃষ্টি করেছেন। উক্ত আয়াতগুলির দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে কুরআনে কোন পরস্পরবিরোধী মন্তব্য নেই। কেননা প্রথমেই সুরা নাযিয়াতে আল্লাহ বলেছেন আগে আল্লাহ আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পরে তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এখানে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বলেছেন, সৃষ্টি করার কথা বলেন নি। অর্থাৎ আল্লাহ পৃথিবীকে আকাশ সৃষ্টির আগে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু বিস্তৃত করেছেন আকাশ সৃষ্টির পরে যেমন, তফসীরে আহসানুল বায়ানের মধ্যে লেখা আছে, “পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পূর্বে। কিন্তু তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর। এখানে সেই তত্ত্বই বর্ণিত হয়েছে। সমতল ও বিস্তৃত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, যমীন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্য সামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে যমীনে গেড়ে দিলেন যাতে যমীন না হিলে।” (তফসীরে আহসানুল বায়ান, পৃষ্ঠা – ১০৫৭)

তাহলে কুরআনের উক্ত আয়াতে পরস্পর বিরোধী কোথায়? কোথাও তো কুরআনে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য নেই।

অভিজিৎ রায় কুরআনের পরস্পরবিরোধী প্রমাণ করার জন্য আরও লিখেছেন, “কখনো বলা হয়েছে আল্লাহ সব কিছু ক্ষমা করে দেন (৪ : ১১০, ৩৯ : ১৫৩) কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে, তিনি সব কিছু ক্ষমা করেন না (৪ : ৪৮, ৪ : ১১৬, ৪ : ১৩৭, ৪ : ১৬৮)” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা, ৬-৭)।

এবার দেখা যাক কুরআন শরীফে আল্লাহ কি বলেছেন।

 ৪ : ১১০ অর্থাৎ সুরা নিসার ১১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ مَنْ يَّعْمَلْ سُوْٓءًا اَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهٗ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّٰهَ يَجِدِ اللّٰهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا۰۰۱۱۰

অর্থাৎ “কেউ কোন মন্দ কাজ করে বা নিজের প্রতি অত্যাচার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হলে, আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম করুনাময় পাবে।”

অভিজিৎ রায় ৩৯ ও ১৫৩ অর্থাৎ সুরা যুমারের ১৫৩ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছেন অথচ সুরা যুমারের ১৫৩টি আয়াতই নেই। সুরা যুমার ৭৫ টি আয়াতেই শেষ হয়ে গেছে তাহলে অভিজিৎবাবু ১৫৩ টি আয়াত পেলেন কোথা থেকে?

এবার দেখি অন্য আয়াতে কি এর বিপরীত কথা বলা হয়েছে। ৪ : ৪৮ অর্থাৎ সুরা নিসার ৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَ يَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ١ۚ وَ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدِ افْتَرٰۤى اِثْمًا عَظِيْمًا

অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর অংশীদার করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর অংশীদার করে সে মহা অপরাধ করে।”

৪ : ১১৬ অর্থাৎ সুরা নিসার ১১৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِنَّ اللّٰهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهٖ وَ يَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُ١ؕ وَ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِيْدًا۰۰۱۱۶

অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশীস্থাপন কারীকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করে সে নিশ্চয় সূদুর বিপথে বিভ্রান্ত।”

৪ : ১৩৭ অর্থাৎ সুরা নিসার ১৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللّٰهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَ لَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيْلًاؕ۰۰۱۳۷

অর্থাৎ “যারা বিশ্বাস করার পর অবিশ্বাস করে ও আবার বিশ্বাস করে, অতঃপর তাদের অবিশ্বাস প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তো কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কোন পথ দেখাবেন না।”

এখানে কোথায় পরস্পর বিরোধী মন্তব্য আছে? প্রথমে আল্লাহ বলেছেন যদি কোন ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে বসে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পরের আয়াতগুলিতে আল্লাহ বলেছেন যে যদি কেউ আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন অর্থাৎ শিরক করে তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। আল্লাহর তো স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন কোন পাপ আল্লাহ কোন পাপ ক্ষমা করেন আর কোন পাপ ক্ষমা করেন না। তাহলে এখানে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য কোথায়?

এটা সকলেই জানে ইসলামে সব পাপের ক্ষমা আছে কিন্তু বান্দা যদি শিরক করে বা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে আল্লাহ তা কোনদিন ক্ষমা করেন না। এখানে তো কোন পরস্পরবিরোধী মন্তব্য নেই।

অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফে পরস্পর বিরোধী কথা লেখা আছে বলতে গিয়ে লিখেছেন,

“সুরা ৩ : ৮৫ এবং ৫ : ৭২ অনুযায়ী ইসলাম ধর্মে যারা নিজেদের সমর্পন করেনি তারা সবাই দোজখে যাবে তা সে খ্রিস্টান, ইহুদী, প্যাগান যেই হোক না কেন, কিন্তু আবার ২ : ৬২ এবং ৫ : ৬৯ অনুযায়ী, ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের সবাই দোজখে যাবে না।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৭)

দেখা যাক কুরআন শরীফে কি বলা হয়েছে?

৩ : ৮৫ অর্থাৎ সুরা আল ইমরানের ৮৫ নং আয়াতের মধ্যে আল্লাহ বলেছেন,

وَ مَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ١ۚ وَ هُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ۰۰۸۵

অর্থাৎ “আর কেহ ইসলাম (শান্তি) ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসরণ করলে তা কখনও তাঁর নিকট গৃহীত হবে না, আর পরলোকে সে ক্ষতিগ্রস্থদের দলভুক্ত হবে।”

৫ : ৭২ অর্থাৎ সুরা মায়িদার ৭২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْۤا اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الْمَسِيْحُ ابْنُ مَرْيَمَ١ؕ وَ قَالَ الْمَسِيْحُ يٰبَنِيْۤ اِسْرَآءِيْلَ اعْبُدُوا اللّٰهَ رَبِّيْ وَ رَبَّكُمْ١ؕ اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ١ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ۰۰۷۲

অর্থাৎ “যারা বলে, মরিয়ম নন্দন (পুত্র) মসীহই (অর্থাৎ হজরত ইসা বা যীশু খ্রীষ্ট) আল্লাহ, নিশ্চয় তারা অবিশ্বাসী হয়েছে। আর মসীহ বলেছিল, হয়ে বনী ইসরাইলগণ, তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহরই আরাধনা কর। নিশ্চয় যে আল্লাহর অংশী স্থির করে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবৈধ করেছেন; আগুন তাদের বাসস্থান। আর অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”

অপরদিকে কুরআন ২ : ৬২ অর্থাৎ সুরা বাকারার ৬২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَ الَّذِيْنَ هَادُوْا وَ النَّصٰرٰى وَ الصّٰبِـِٕيْنَ مَنْ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ١۪ۚ وَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَ لَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ۰۰۶۲

অর্থাৎ “নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও যারা ইহুদী হয়ে গেছে এবং খ্রিস্টান ও সাবেয়ীনগণের মধ্যে যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস এনেছে ও সৎকার্য করেছে – তাদের জন্য কেবল তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার আছে, তাদের কোনও ভয় নেই ও তারা দুঃখিত হবে না।”

৫ : ৬৯ অর্থাৎ সুরা মায়িদার ৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَ الَّذِيْنَ هَادُوْا وَ الصّٰبِـُٔوْنَ وَ النَّصٰرٰى مَنْ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَ لَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ۰۰۶۹

অর্থাৎ “নিশ্চয় যারা বিশ্বাসী ইহুদী, সাবেয়ী ও খ্রিস্টান তাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস। করবে ও সৎ কাজ করবে তার কোন ভয় নেই। আর সে দুঃখিত হবে না।”

অপরদিকে সুরা বাকারার ৬২ নং আয়াতে এবং সুরা মায়িদার ৬৯ নং আয়াতে যে বলা হয়েছে বিশ্বাসী ইহুদী, সাবেয়ী ও খ্রিস্টানরা জান্নাতে যাবে সেটা হল যেসব ইহুদীরা হজরত মুসা (আঃ) কে নবী মান্য করে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস ও সৎ কাজ করবে এবং যেসব খ্রিস্টান হজরত ইসা (আঃ) বা যীশু খ্রীষ্টকে নবী মান্য করে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস ও সৎ কাজ করবে তারা জান্নাতে যাবে অর্থাৎ যেসব মানুষ হজরত মহানবী (সাঃ) এর আগমনের আগে তাদের নিজেদের নবীদের অনুসরন করে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস ও সৎ কাজ করবে তারা জান্নাতে যাবে। কিন্তু মহানবী (সাঃ) এর আগমনের পর সমস্ত নবীদের শরীয়াত মনসুখ হয়ে গেছে আর অন্যান্য নবীদের অনুসরণ করে সেই ধর্ম মানলে আর জান্নাতে যাওয়া যাবে না। এখানে কোথায় পরস্পর বিরোধী কথা বলা হয়েছে?

অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফে পরস্পরবিরোধী আয়াত আছে বলতে গিয়ে লিখেছেন,

“কখনো বলা হয়েছে মুহাম্মাদকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছেন এক হাজার জন ফেরেশতা (৮ : ৯-১০) কখনোবা বলেছেন এই সাহায্যকারী ফেরেশতাদের সংখ্যা আসলে তিন হাজার (৩ : ১২৪, ১২৬)” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৭)

তাহলে দেখা যাক কুরআন শরীফে কি বলা হয়েছে?

৮ : ৯-১০ অর্থাৎ সুরা আনফালের ৯ এবং ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ۠ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ اَنِّيْ مُمِدُّكُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ مُرْدِفِيْنَ۰۰۹ وَ مَا جَعَلَهُ اللّٰهُ اِلَّا بُشْرٰى وَ لِتَطْمَىِٕنَّ بِهٖ قُلُوْبُكُمْ١ۚ وَ مَا النَّصْرُ اِلَّا مِنْ عِنْدِ اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌؒ۰۰۱۰

অর্থাৎ “যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে কাতর প্রার্থনা করেছিল, তিনি তা কবুল করেছিলেন ও বলেছিলেন, আমি তোমাকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব, যারা একের পর এক আসবে। আল্লাহ এটা করেন শুধু সুসংবাদ দেবার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে যাতে তোমাদের হৃদয় শান্তি লাভ করে। আর সাহায্য তো কেবল আল্লাহর থেকেই আসে। আল্লাহ অবশ্যই মহাপরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়।”

অপরদিকে ৩ : ১২৪, ১২৬ অর্থাৎ সুরা আল ইমরানের ১২৪ থেকে ১২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍ١۪ وَّ غَرَّهُمْ فِيْ دِيْنِهِمْ مَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ۰۰۲۴ فَكَيْفَ اِذَا جَمَعْنٰهُمْ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيْهِ١۫ وَ وُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَ هُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ۰۰۲۵ قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَ تَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ١ٞ وَ تُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنْ تَشَآءُ١ؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُ١ؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ۰۰۲۶

অর্থাৎ “যখন তুমি বিশ্বাসীগণকে বলেছিলে; ইহা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে, তোমাদের সাহায্য করবেন। হ্যাঁ নিশ্চয়, যদি তোমরা ধৈৰ্য্য ধারণ কর ও সংযমী হও, এবং যদি তারা দ্রুত গতিতে তোমাদের উপর পতিত হয়, তবে তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন। এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য একে কেবল সুসংবাদ করেছেন; যাতে এর দ্বারাই তোমাদের অন্তর আশ্বস্ত হয়। আর পরাক্রান্ত বিজ্ঞানময় আল্লাহ ছাড়া আসেনি।”

উপরে সুরা আনফালের ৯ এবং ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন এবং সুরা আল ইমরানের ১২৪ থেকে ১২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন তিনি তিন হাজার ফেরেশতা ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন। এখানে কোন পরস্পরবিরোধী মন্তব্য নেই। কেননা উপরে সুরা আনফালে যে বলেছেন এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন সেটা ছিল বদরের যুদ্ধের ব্যাপারে আর সুরা আল ইমরানের ১২৪ থেকে ১২৬ নং আয়াতে বলেছেন তিন হাজার ফেরেশতা ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন সেটা ছিল উহুদের যুদ্ধের ব্যাপারে। তাহলে এখানে অভিজিৎ রায় পরস্পর বিরোধী মন্তব্য পেলেন কোথায়?

অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফে বর্ণিত পার্থিব ও আল্লাহর কাছে দিনের হিসাব বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“কখনো আল্লাহ বলেছেন, তার একটি দিন পার্থিব এক হাজার বছরের সমান (২২ : ৪৭, ৩২ : ১২৬)। কখনো আল্লাহ বলেছেন, তার দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান (৭০ : ৪)” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৭)

চলুন দেখি কুরআন শরীফে আসলে কি বলা হয়েছে। কুরআন শরীফে আল্লাহ ২২ : ৪৭ অর্থাৎ সুরা হজ্বের ৪৭ নং আয়াতে বলেছেন,

وَ يَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِ وَ لَنْ يُّخْلِفَ اللّٰهُ وَعْدَهٗ١ؕ وَ اِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَاَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ۰۰۴۷

“আর তারা তোমাকে শাস্তি তরান্বিত করতে বলে অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিজ্ঞা কখনো ভঙ্গ করেন না। তোমার পালনকর্তার একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।”

অপরদিকে ৩২ : ৫ অর্থাৎ সুরা সিজদাহের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَى الْاَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ۰۰۵

অর্থাৎ “তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন। এরপর একদিন সব কিছুই তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। যার পরিমান হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান।”

এর বিপরীতে আল্লাহ ৭০ : ৪ অর্থাৎ সুরা মা’আরিজের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

تَعْرُجُ الْمَلٰٓىِٕكَةُ وَ الرُّوْحُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗ خَمْسِيْنَ اَلْفَ سَنَةٍۚ۰۰۴

অর্থাৎ “এমন একদিনে ফেরেশতা এবং রুহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয়, যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।”

উপরে বর্ণিত সুরা সিজদাহর ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) লিখেছেন,

“আল্লাহ তিনিই যিনি সাতটি আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপ সংখ্যক যমীন। তাঁর হুকুম এগুলোর মাঝে অবতীর্ণ হয়।’ আল্লাহ তা’আলা তাদের আমল নিজ কাচারীর দিকে উঠিয়ে নেন যা দুনিয়ার উঠিয়ে নেন যা দুনিয়ার আকাশের উপরে রয়েছে। যমীন হতে প্রথম আসমান পাঁচশ বছরের পথের ব্যবধানে রয়েছে। ঐ পরিমাণই গুরুত্ব। এতো দুরের ব্যবধান সত্ত্বেও ফেরেশতারা চোখের পলকে নীচে আসেন ও উপরে যান। এজন্যই বলা হয়েছেঃ তোমাদের হিসাবে সহস্র বছরের সমান।” (তফসীরে ইবনে কাসীর, খন্ড ৫ পৃষ্ঠা ৭০৭, ৭০৮)

উপরে যে সুরা সিজদাহে বলা হয়েছে একদিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান সেটাই হল পার্থিব ও পরকালের সময়ের হিসাব আর যে সুরা সুরা সিজদাহর ৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে একদিন এক হাজার বছরের সময় সেটা হল, যে দুনিয়ার আকাশের উপর থেকে মানুষকে আসতে সময় লাগে এক হাজার বছর আর ফেরেশতাদের সময় লাগে চোখের পলক ফেলতে যে সময় লাগে তার সমান। সেইজ্যই এজন্যই বলা হয়েছেঃ তোমাদের হিসাবে সহস্র বছরের সমান। তাহলে এখানে অভিজিৎ রায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য কোথায় পেলেন?

এর পরে মানব সৃষ্টির ব্যাপারে অভিজিৎ রায় পরস্পর বিরোধী মন্তব্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“মানব সৃষ্টি নিয়েও আছে পরস্পর বিরোধী তথ্য। আল্লাহ কোরাণে কখনো বলেছেন তিনি মানুষ বানিয়েছেন পানি থেকে (২৫ : ৫৪, ২৪ : ৪৫), কখনো বা জমাট রক্ত বা ‘ক্লট’ থেকে (৯৬ : ১-২), কখনোবা কাদামাটি থেকে (১৫ : ২৬, ৩২ : ৭, ৩৮ : ৭১, ৫৫ : ১৪) আবার কখনোবা ‘ডাস্ট’ বা ধুলা থেকে (৩০ : ২০, ৩৫ : ১১) ইত্যাদি ।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৭)

এখন দেখা যাক কুরআন শরীফে কি বলা হয়েছে? কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ ২৫ : ৫৪ অর্থাৎ সুরা ফুরকানের ৫৪ নং আয়াতে বলেছেন,

وَ هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّ صِهْرًا١ؕ وَ كَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا۰۰۵۴

অর্থাৎ “আর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তারপর তিনি মানবজাতির মধ্যে রক্তগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আর তোমার পালনকর্তা মহাশক্তিমান।”

অপরদিকে ২৪ : ৪৫ অর্থাৎ সুরা নুরের ৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ اللّٰهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍ١ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖ١ۚ وَ مِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِ١ۚ وَ مِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍ١ؕ يَخْلُقُ اللّٰهُ مَا يَشَآءُ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ۰۰۴۵

অর্থাৎ “আর সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, ওদের কতক বুকে ভর দিয়ে চলে, কতক পায়ে চলে, কতক চারপায়ে চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ অবশ্যই সব কিছু করতে সক্ষম।”

অপরদিকে ৯৬ : ১-২ অর্থাৎ সুরা আলাকের ১ : ২ নং আয়াতে বলেছেন,

اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَۚ۰۰۱ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍۚ۰۰۲

“তুমি তোমার পালনকর্তার নামে পাঠ কর যনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।”

অপরদিকে ১৫ ও ২৬ অর্থাৎ হিজরের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَاٍ مَّسْنُوْنٍۚ۰۰۲۶

অর্থাৎ “আমি তো মানবকে গাঢ় কাদার শুষ্ক মাটি হতে সৃষ্টি করেছি।”

৩২ : ৭ অর্থাৎ সুরা সিজদাহর ৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

الَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَ بَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍۚ۰۰۷

অর্থাৎ “যিনি প্রত্যেক সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন এবং কাদামাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

অভিজিৎ রায় কুরআন শরীফে বর্ণিত পার্থিব ও আল্লাহর কাছে দিনের হিসাব বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“কখনো আল্লাহ বলেছেন, তার একটি দিন পার্থিব এক হাজার বছরের সমান (২২ : ৪৭, ৩২ : ১২৬)। কখনো আল্লাহ বলেছেন, তার দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান (৭০ : ৪)” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৭)।

চলুন দেখি কুরআন শরীফে আসলে কি বলা হয়েছে। কুরআন শরীফে আল্লাহ ২২ : ৪৭ অর্থাৎ সুরা হজ্বের ৪৭ নং আয়াতে বলেছেন,

وَ يَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِ وَ لَنْ يُّخْلِفَ اللّٰهُ وَعْدَهٗ١ؕ وَ اِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَاَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ۰۰۴۷

“আর তারা তোমাকে শাস্তি তরান্বিত করতে বলে অথচ আল্লাহ তাঁর প্রতিজ্ঞা কখনো ভঙ্গ করেন না। তোমার পালনকর্তার একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।”

অপরদিকে ৩২ : ৫ অর্থাৎ সুরা সিজদাহের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

الَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَ بَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍۚ۰۰۷

অর্থাৎ “তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন। এরপর একদিন সব কিছুই তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। যার পরিমান হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান।”

এর বিপরীতে আল্লাহ ৭০ : ৪ অর্থাৎ সুরা মা’আরিজের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

تَعْرُجُ الْمَلٰٓىِٕكَةُ وَ الرُّوْحُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗ خَمْسِيْنَ اَلْفَ سَنَةٍۚ۰۰۴

অর্থাৎ “এমন একদিনে ফেরেশতা এবং রুহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয়, যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।”

উপরে বর্ণিত সুরা সিজদাহর ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) লিখেছেন,

“আল্লাহ তিনিই যিনি সাতটি আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপ সংখ্যক যমীন। তাঁর হুকুম এগুলোর মাঝে অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের আমল নিজ কাচারীর দিকে উঠিয়ে নেন যা দুনিয়ার আকাশের উপরে রয়েছে। যমীন হতে প্রথম আসমান পাঁচশ বছরের পথের ব্যবধানে রয়েছে। ঐ পরিমাণই গুরুত্ব। এতো দুরের ব্যবধান সত্ত্বেও ফেরেশতারা চোখের পলকে নীচে আসেন ও উপরে যান। এজন্যই বলা হয়েছে? তোমাদের হিসাবে সহস্র বছরের সমান।” (তফসীরে ইবনে কাসীর, খন্ড – ৫ পৃষ্ঠা ৭০৭, ৭০৮)

উপরে যে সুরা সিজদাহে বলা হয়েছে একদিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান সেটাই হল পার্থিব ও পরকালের সময়ের হিসাব আর যে সুরা সুরা সিজদাহর ৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে একদিন এক হাজার বছরের সময় সেটা হল, যে দুনিয়ার আকাশের উপর থেকে মানুষকে আসতে সময় লাগে এক হাজার বছর আর ফেরেশতাদের সময় লাগে চোখের পলক ফেলতে যে সময় লাগে তার সমান। সেইজ্যই এজন্যই বলা হয়েছে ও তোমাদের হিসাবে সহস্র বছরের সমান।

তাহলে এখানে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য কোথায় পেলেন অভিজিৎ রায়?

এর পরে মানব সৃষ্টির ব্যাপারে অভিজিৎ রায় পরস্পর বিরোধী মন্তব্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,

“সৃষ্টি নিয়েও আছে পরস্পর বিরোধী – তথ্য। আল্লাহ কোরাণে কখনো বলেছেন তিনি মানুষ বানিয়েছেন পানি থেকে (২৫ : ৫৪, ২৪ ও ৪৫), কখনো বা জমাট রক্ত বা ‘ক্লট’ থেকে (৯৬ : ১-২), কখনো বা কাদামাটি থেকে (১৫ : ২৬, ৩২ : ৭, ৩৮ : ৭১, ৫৫ : ১৪) আবার কখনোবা ‘ডাস্ট’ বা ধুলা থেকে (৩০ : ২০, ৩৫ : ১১) ইত্যাদি।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ৭)

এখন দেখা যাক কুরআন শরীফে কি বলা হয়েছে? কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ ২৫ : ৫৪ অর্থাৎ সুরা ফুরকানের ৫৪ নং আয়াতে বলেছেন,

وَ هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّ صِهْرًا١ؕ وَ كَانَ رَبُّكَ قَدِيْرًا۰۰۵۴

অর্থাৎ “আর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, তারপর তিনি মানবজাতির মধ্যে রক্তগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আর তোমার পালনকর্তা মহাশক্তিমান।”

অপরদিকে ২৪ : ৪৫ অর্থাৎ সুরা নুরের ৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ اللّٰهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّنْ مَّآءٍ١ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى بَطْنِهٖ١ۚ وَ مِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰى رِجْلَيْنِ١ۚ وَ مِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰۤى اَرْبَعٍ١ؕ يَخْلُقُ اللّٰهُ مَا يَشَآءُ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ۰۰۴۵

অর্থাৎ “আর সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, ওদের কতক বুকে ভর দিয়ে চলে, কতক পায়ে চলে, কতক চারপায়ে চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ অবশ্যই সব কিছু করতে সক্ষম।”

অপরদিকে ৯৬ : ১-২ অর্থাৎ সুরা আলাকের ১ : ২ নং আয়াতে বলেছেন,

اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَۚ۰۰۱ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍۚ۰۰۲

অর্থাৎ “তুমি তোমার পালনকর্তার নামে পাঠ কর যনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।”

অপরদিকে ১৫ : ২৬ অর্থাৎ হিজরের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَاٍ مَّسْنُوْنٍۚ۰۰۲۶

অর্থাৎ “আমি তো মানবকে গাঢ় কাদার শুষ্ক মাটি হতে সৃষ্টি করেছি।”

৩২ : ৭ অর্থাৎ সুরা সিজদাহর ৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

الَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَ بَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍۚ۰۰۷

অর্থাৎ “যিনি প্রত্যেক সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন এবং কাদামাটি হতে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন।”

৩৮ : ৭১ অর্থাৎ সুরা স্বোয়াদের ৭১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

اِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ۠ اِنِّيْ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنْ طِيْنٍ۰۰۷۱

অর্থাৎ “যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন যে, আমি মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।”

৫৫ : ১৪ অর্থাৎ সুরা রহমানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ خَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍۚ۰۰۱۵ فَبِاَيِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ۰۰۱۶

অর্থাৎ “তিনি মানুষকে পোড়া মটির মতো শুষ্ক মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

অপরদিকে ৩০ : ২০ অর্থাৎ সুরা রুমের ২০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ مِنْ اٰيٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ۰۰۲۰

অর্থাৎ “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন – তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে আছ।”

৩৫ : ১১ অর্থাৎ সুরা ফাত্বিরের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ اللّٰهُ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا١ؕ وَ مَا تَحْمِلُ مِنْ اُنْثٰى وَ لَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلْمِهٖ١ؕ وَ مَا يُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّ لَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهٖۤ اِلَّا فِيْ كِتٰبٍ١ؕ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللّٰهِ يَسِيْرٌ۰۰۱۱

অর্থাৎ “আর আল্লাহ তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এরপর শুক্রবিন্দু হতে। তারপর তোমাদের জোড়া করেছেন। আর আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভধারণ করে বা সন্তান প্রসব করেনা এবং ফলকের লেখা ছাড়া কারো আয়ু বৃদ্ধি বা আয়ু হ্রাস হয় না। এটা আল্লাহরই জন্য সহজ।”

কুরআন শরীফের উপরে বর্ণিত সুরাগুলিতে বলা হয়েছে যে মানুষকে পানি থেকে, জমাট বাঁধা রক্ত থেকে ও মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলোকে অভিজিৎ রায় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য বলেছেন। এখন দেখা যাক সত্যটা কি?

মানুষকে যে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলা হয়েছে তা অধুনিক বিজ্ঞানও এই ব্যাপারে একমত। কেননা, সম্প্রতি বিজ্ঞানের অতি আধুনিক পর্যায়ে আমরা ‘সাইটোপ্লাজম’ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সাইটোপ্লাজম হল একটি কোষের মূল অংশ, যা ৮০ শতাংশ পানি দ্বারা গঠিত। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে যে, বেশীরভাগ দেহ ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত এবং প্রতিটি সজীব সত্তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য পানি একান্ত অপরিহার্য। সুতরাং মানব শরীর পানি দ্বারা গঠিত এটা বিজ্ঞানসম্মত।

মানব শরীর যে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে তৈরি হয়েছে এটাও বিজ্ঞান সম্মত। যা এর আগে উইলিয়াম কিথ মূরের বক্তব্য থেকে আমারা জেনেছি।

সুতরাং মানব শরীর যে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাও বিজ্ঞানের সঙ্গে কোন সংঘর্ষ নেই।

এরপর কুরআন শরীফে বলা হয়েছে যে মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাও বিজ্ঞানসম্মত। কেননা, মানুষের দেহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এতে রয়েছে। – ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, আয়রণ, কোবাল্ট নিকেল, গোল্ড সিলভার কপার ইত্যাদি। গ্যাসের মধ্যে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি। এসিডের মধ্যে সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ক্লোরিন, ব্রোমিন ইত্যাদি যা দৈনন্দিন ব্যবহৃত, উৎপাদিত, নিঃশেষিত ও রূপান্তরিত হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে মানব শরীর থেকে।

অপরদিকে মাটিও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তাতেও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, আয়রণ, কোবাল্ট নিকেল, গোল্ড সিলভার কপার ইত্যাদি। গ্যাসের মধ্যে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি। এসিডের মধ্যে সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ক্লোরিন, ব্রোমিন ইত্যাদি রয়েছে।

তাহলে আল্লাহর কথার মধ্যে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য কোথায়? যদি বলা হয়, কুরআন শরীফে মানুষকে পানি থেকে, জমাট বাঁধা রক্ত থেকে ও মাটি থেকে ও কাদা মটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাই এ সব কথা পরস্পরবিরোধী তাহলে আমি বলব, ইমারত গড়তে ইট, সিমেন্ট ও বালির দরকার পড়ে। তিনটি ভিভিন্ন মাটির সংমিশ্রন না হলে এতবড় কঠিন ও সুন্দর মনোরম ইমারত গড়া যায় না। কঠি ও শক্ত ইট তৈরি করতে হলে ঘনীভুত মাটির প্রয়োজন। ইট গাঁথবার জন্য আবার সিমেন্ট ও বালীর সংমিশ্রণে কর্দমাক্ত করতে হয়। তবেই একটি বৃহত্তর ও সুন্দর প্রাসাদ তৈরি করা যায়। অনুরূপভাবে একটি সুন্দর আকৃতির মানুষ তৈরি করতে পানি, জমাট বাঁধা রক্ত, ধুলা মাটি ও কাদা মাটির উপাদান নিতে হয়েছে এতে পরস্পর বিরোধী হয় কি করে?

কুরআনে কি বিবর্তনবাদের তত্ত্ব আছে?

মুসলমানরা নাকি কুরআন শরীফে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব খুঁজে বেড়ায় বলে অভিজিৎ রায় অভিযোগ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “কিছুদিন আগেও দেখতাম অনেকেই ডারউইনের বিবর্তন বাদের বিরুদ্ধে রীতিমত জ্বিহাদ শুরু করেছিলেন কোরাণের আয়াতকে উদ্ধৃত করে, আজকে যখন বিবর্তনতত্ত্বের স্বপক্ষের প্রমাণগুলো এতই জোরালো হয়ে উঠেছে যে, সেগুলোকে আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তাই শুরু হয়েছে বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে আয়াত খোঁজা। পেয়েও গেছেন কিছু কিছু। একটা ওয়েব সাইটে দেখলাম, ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে যে, কোরাণের ৪ : ১, ৭ : ১১, ১৫ : ২৮-২৯, ৭৬ : ১-২ প্রভৃতি আয়াতগুলো নাকি বিবর্তন তত্ত্বের ‘সরাসরি’ প্রমাণ। এ সমস্ত আয়াতে ‘সৃষ্টি’ বোঝাতে ‘খালাকা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘গ্রাজুয়াল চেঞ্জ’ – অতএব – ‘ইহা ইভলুশন’।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ১২)

এখন দেখা যাক যেসব আয়াতের উদ্ধৃতি অভিজিৎ রায় দিয়েছেন তাতে কি বলা হয়েছে ।

৪ : ১ অর্থাৎ সুরা নিসার ১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

ٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّ خَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ بَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَّ نِسَآءً١ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِيْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَ الْاَرْحَامَ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا

অর্থাৎ “হে মানবগণ! তোমরা নিজ প্রতিপালকের ভয় কর, তিনি তোমাদের একই পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন। এবং তাদের উভয় হতে বহু নরনারী বিস্তার করেছেন। আর সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত ঘণিষ্ঠতর হয়েছ। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী।”

৭ : ১১ অর্থাৎ সুরা আরাফের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ لَقَدْ خَلَقْنٰكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنٰكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ۠ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ١ۖۗ فَسَجَدُوْۤا اِلَّاۤ اِبْلِيْسَ١ؕ لَمْ يَكُنْ مِّنَ السّٰجِدِيْنَ۰۰۱۱

অর্থাৎ “আমিই তোমাদের সৃষ্টি করি, অতঃপর তোমাদের রূপদান করি। আর তারপর ফেরেশতাদের আদমের কাছে মাথা নত হতে বলি। ইবলিস ছাড়া সকলেই মাথা নত হল। যারা নত হল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হল না।”

১৫ : ২৮-২৯ অর্থাৎ সুরা হিজরের ২৮ : ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَ اِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ۠ اِنِّيْ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَاٍ مَّسْنُوْنٍ   ۰۰۲۸

অর্থাৎ “আর তোমার প্রতিপালক যখন ফেরেশতাদের বললেন, আমি ছাঁচা ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে মনুষ সৃষ্টি করব। অতপর যখন তাকে সুঠাম করব এবং তার মধ্যে আমার রুহ থেকে ফুঁক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেও।”

৭৬ : ১-২ অর্থাৎ সুরা দাহরের ১ : ২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

هَلْ اَتٰى عَلَى الْاِنْسَانِ حِيْنٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْـًٔا مَّذْكُوْرًا۰۰۱ اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ١ۖۗ نَّبْتَلِيْهِ فَجَعَلْنٰهُ سَمِيْعًۢا بَصِيْرًا۰۰۲

অর্থাৎ “জীবন লাভের পূর্বে এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন মানব সত্ত্বা উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি তো মানুষকে মিলিত শুক্রানু থেকে সৃষ্টি করেছি, তাকে পরীক্ষা করার জন্য; এ জন্য আমি তাকে শ্রবন ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন করেছি।”

অভিজিৎ রায় উপরে বর্ণিত কুরআন শরীফের আয়াতগুলি পড়ুন আর বলুন সেখানে কোথায় চার্লস ডারউইনের ভ্রান্ত মতবাদ অর্থাৎ ডারউইন কর্তৃক বর্ণিত ‘বিবর্তনবাদে’র কথা উল্লেখ আছে? ডারউইনের সাহেব তো বলেছেন মানুষের পূর্বপুরুষ বানর বা অন্য প্রজাতি ছিল। বংশানুক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষে পরিণত হয়েছে। আর উপরে কুরআনে বলা হয়েছে কিভাবে মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন। এখানে কোথাই বানর থেকে মানুষ হওয়ার তত্ত্ব? কোথাই এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার তত্ত্ব? গাঁজাখুরি মন্তব্যের একটা সীমা আছে?

চার্লস ডারউইনের ভ্রান্ত মতবাদ

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চালর্স ডারউইন তাঁর বিবর্তনবাদের মতবাদ পেশ করেন এবং তিনি দাবী করেন যে মানুষের পূর্ব পুরুষ ছিল বানর বা শিম্পাঞ্জী, বিবর্তননের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে মানুষে পরিনত হয়েছে। ডারউইন যে মতবাদ খাড়া করেছেন তার ভিত্তি হল সফরের পর্যবেক্ষণ। তিনি দাবি করেন, তাঁর সফরকালীন সময়ে বনজঙ্গল ও সমুদ্রে তিনি যেসব পর্যবেক্ষণ করেন সেসব থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে তিনি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিভিন্ন নতুন বিষয় লক্ষ্য করেন। তিনি বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, পৃথিবীর প্রতিটি জন্তু স্বাভাবিক ও প্রকৃতিগতভাবেই বিবর্তিত ও উন্নীত হয়েছে। বস্তু ও প্রাণী সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে তার প্রকৃতি আপনা আপনিই বদলে ফেলেছে। জলে স্থলে, সমুদ্র ও জঙ্গলে যেসব বড় বড় প্রাণী আজকাল দেখতে পাওয়া যায় সেসব আগে ছিল অন্যরকম। বুকে ভর করে চলা প্রাণী হাজার হাজার বছরে চতুস্পদ প্রাণীতে উন্নীত হয়। আবার চতুষ্পদ প্রাণী দ্বিপায়ী প্রাণীতে উন্নীত হয় এর বহু বছর পর । এর আগে জলজ প্রাণী স্থলে আসলে বিবর্তনের মাধ্যমে তার আকৃতি ও প্রকৃতি বদলে যায়। এটাই ছিল ডারউইনের মতবাদ।

কিন্তু ডারউইন যে মতবাদ খাড়া করেছিলেন তার পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছিল না। আন্দাজের উপর ভিত্তি করে তাঁর মতবাদ খাড়া করেছিলেন। তিনি বস্তুর প্রকৃতি, এর রাসায়নিক প্রক্রিয়া, সচল প্রানীর প্রক্রিয়া, এদের উপাদান সমুহের বিন্যাস, এদের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ইত্যাদী বিষয়ে গভীর পরীক্ষা নীরিক্ষা করেননি। কেবলমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে তাঁর মতবাদ খাড়া করেছিলেন। ফলে বিংশ শতাব্দীর সুচনালগ্নেই তাঁর ভ্রান্ত মতবাদ মুখ থুবড়ে পড়ে।

একসময় নাস্তিক্যবাদীরা যখন জগৎ সৃষ্টির রহস্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে ছিলেন এবং সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে কোন মনপুত থিওরী পেশ করতে পারছিলেন না তখন চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতবাদ তাঁদের প্রাণে নতুনভাবে চেতনার সঞ্চার হল। ফলে তাঁরা ডারউইনের এই মতবাদ আর দেরী না করে লুফে নিলেন। কিন্তু তাঁদের এই উৎফুল্লতা মোটেই শোভনীয় নয় কারণ চার্লস ডারউইন নিজে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। (দেখুন অরিজিন অফ স্পেসিস, চার্লস ডারউইন, পৃষ্ঠা-৪৫০)

ডারউইন তাঁর গবেষণা শুরু করেন সফরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। তাঁর জন্ম হয় ১৮০৯ সালে। তার এই ৭১ বছরের জীবনে মাত্র একবার লন্ডনের বাইরে যান। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর। তিনি দক্ষিণ আমেরিকা ও এর উপকুল অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপসমূহে ভ্রমণকালে তিনি মানুষের গঠন ও কাঠামোর সঙ্গে বনমানুষ, বানর ও দ্বীপপুঞ্জে এমনসব প্রাণী দেখেছিলেন যেসব তিনি এর আগে কখনোই দেখেননি। তিনি সফরকালীন সময়ে যা কিছু দেখেন, বলা হয় তাতে জীবনের বৈচিত্র সম্পর্কে তাঁর ধ্যান ধারণা বদলে দেয়।

মজার কথা হল, মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে তিনি আর কখনো সারা জীবনে আর সফরে যাননি। একবার সফর করেই তিনি বিশ্ব-বৈচিত্রে রহস্য বুঝে ফেললেন এবং এই বোঝার ফলে তাঁর বাড়ির একটি কুঠুরীতে সফরের পর্যবেক্ষনের উপর ভিত্তি করে তাঁর থিওরী প্রতিষ্ঠা করার জন্য সারা জীবন অতিবাহিত করেন। অথচ আল বিরুনী, ইবন বতুতা, ফা হিয়েন সারা পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেও এমন কোন প্রাণীর মধ্যে বৈচিত্র ও বনমানুষ ও মানুষের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে বের করে একটাকে অপরটির পূর্ব পুরুষ বলে দাবী করলেন না। পক্ষান্তরে ডারউইন সাহেব একটি চোর কুঠুরীতে বসে মানবসৃষ্টির রহস্য অনায়াসে বলে দিতে পারলেন। যদিও তৎকালীন যুগে বিজ্ঞান এতো উন্নত ছিল না যে একটি চোর-কুঠুরীতে বসে বসে হাজারো পর্দার অভ্যন্তরে নিরীক্ষণ করতে পারেন অর্থাৎ শতাব্দী-শতাব্দীর অগ্র পশ্চাতের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। একটা অপরিচিত মহাদেশের ছোট অংশ এবং তার আশেপাশের কিছু দ্বীপ ভ্রমণকারী একজন ব্যক্তি এ দাবি করেন যে, তিনি পৃথিবীর বৈচিত্র এবং বিশ্বভূখন্ডে বিরাজমান প্রাণীদের প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি সবকিছু জেনে গেছেন তাহলে তাকে চরমতম উন্মাদ বা পাগলই বলতে হবে। কিন্তু নাস্তিক্যবাদীরা যাঁরা ডারউইনের থেকেও বড় পাগল তাঁরা কোন বিরোধীতা না করেই এই থিওরীকে লুফে নিলেন।

সমালোচনা

ডারউইন এবং তাঁর অনুসারীরা যে পর্যবেক্ষণের কথা বলেন তা হল সবথেকে বড় ধোকা। এই ধোকাবাজীর মাধ্যমে সারা দুনিয়াকে তারা বোকা বানিয়ে রেখেছে বহুকাল ধরে। কেননা, এই বৈচিত্রময় পৃথিবীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রাণীর মৌলিতায় কখনো কোন পরিবর্তন আসেনি। ঝিঁঝিঁ পোকা হাজার বছর আগেও ঝিঁঝিঁ পোকা ছিল। টিকটিকির চেহরা হাজার বছর আগেও আজকের টিকটিকির মতোই ছিল। তাদের দেহের মধ্যে সামান্যতমও পরিবর্তন হয়নি। উদ্ভিদ-গাছ, প্রাণী, মানুষ হাজার হাজার, বরং লক্ষ লক্ষ বছরের অবসরেও তাদের মৌলিকতায় কোন পরিবর্তন হয়নি, যেমন ছিল ঠি তেমনই থেকে গেছে। কখনো এমন হয়নি যে একটি প্রাণী উন্নীত হয়ে অন্য প্রাণীতে পরিণত হয়েছে ।

জীবাশ্ম বিজ্ঞান ও ডারউইনের মতবাদ ও জীবাশ্ম আবিস্কার হওয়ার পর ডারউইনপন্থীরা আশা করেছিলেন যে এর মাধ্যমে তাঁদের মতবাদ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। কিন্তু জীবাশ্ম বিজ্ঞানের উপর গবেষণা করার পর উল্টো ডারউইনের মতবাদ আরও বেশী মৃত্যুমুখে পতিত হল। গবেষণার ফলাফল গেল ডারউইন মতবাদের বিরুদ্ধেই। দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি ব্যাঙকে ধরা যাক। ২৫০ মিলিয়ন বছর আগের পুরোন জীবাশ্ম প্রমাণ করেছে যে তখনকার ব্যাঙের আকৃতি এবং বর্তমান ব্যাঙের আকৃতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এখনকার ব্যাঙ ও তখনকার ব্যাঙের মধ্যে কোন ফারাক পরিলক্ষিত হয়নি।

১৫০ বছর অথবা তার আগে পৃথিবীর বিভিন্ন মৃত্তিকা গর্ভে প্রাপ্ত লক্ষ লক্ষ জীবাশ্ম প্রমাণ করে যে মাছ সব সময় মাছই ছিল। পোকা-মাকড় সবসময় পোকামাকড়ই ছিল। পাখি সর্বদাই পাখিই ছিল। বুকে ভর করে চলা প্রাণী বুকে ভর করে চলে আসছে অনন্ত কাল থেকেই। কিন্তু এমন একটি জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করতে সক্ষম হননি যে, সেই জীবাশ্ম দ্বারা প্রমাণ হয় বা সামান্য ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে প্রাণীর শরীরে কোনরকম মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে বুকে হাঁটা প্রাণী পাখিতে পরিণত হয়েছে বা কোন বানরে পরিণত হয়ে ক্রমে বনমানুষ থেকে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে।

সুতরাং চার্লস ডারউইনের চিন্তাধারা এক অদ্ভূত ও অমূলক চিন্তাধারা। যার পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তাঁর মতবাদ এতই নিকৃষ্ট পর্যায়ের যে শেষ পর্যন্ত তিনি মানুষের মতো সভ্য প্রাণীকে বানরের কাতারে সামিল করেছেন। ডারউইন সাহেব দেখেছেন যে মানুষকে দেখতে কিছুটা বানরের মতো তাই মানুষ বানরের পূর্বপুরুষ।

কি অদ্ভুত কল্পনা! কি অমূলক ও ভ্রান্ত তাঁর থিওরী! তিনি আমাদের পূর্বপুরুষকেও চিনতে পারলেন না। তিনি মানুষ ও জন্তু জানোয়ারের মধ্যে সামান্য পার্থক্যও নিরূপন করতে পারলেন না। মানুষের আকৃতির সঙ্গে বানরের আকৃতির সামান্য মিল থাকলেও কোনক্রমেই বলা যায় না যে বানর মানুষের পূর্বপুরুষ। মানুষের সাথে বানরের দৈহিক ও অস্থিমজ্জার সাদৃশ্যের জন্য একথা প্রমাণ হয় না যে তারা একটাই প্রজাতির প্রাণী। কেননা, অনেক প্রাণীই এমন আছে যাদের প্রকৃতভাবে স্বভাব, বুদ্ধি ও আকৃতি একই রকমের। যেমন, কড মাছ ও হেডক মাছ একই রকমের সামুদ্রিক মাছ, তারা একই রকমের মাছ খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং একই রকমের শরীরের অধিকারী।

তবুও কেউ বলে না যে তারা একটি অপরটার পূর্বপুরুষ । বাবুই পাখি ও চড়ুই পাখির আকৃতি একই রকমের। তাদের অস্থি মজ্জা কেটে পরীক্ষা করলে তাহলে কোন পার্থক্যই পাওয়া যাবে না। তাদের স্বভাব ও কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে পার্থক্য নিরূপন করা হয়। কোন বাবুই পাখির বাচ্চাকে যদি চড়ুই পাখির ঝাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে বাবুই পাখি কখনো চড়ুই পাখিকে অনুকরণ করে না । সৃষ্টির আদি কাল থেকেই তারা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত । তবুও কেউ বলে না যে। একটি অপরটির পূর্বপুরুষ।

এই বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে অনেক প্রাণী এমন আছে। যারা দেখতে একটি অপরটির মতো। যেমন, এলিগেটর ও কুমির দেখতে একই আকৃতির, পিবতা মাছ ও বোয়াল মাছ একই রকমের, শোল মাছ ও টাকি মাছ, কবুতর ও ঘুঘু পাখি, টিকটিকি ও গুইসাপ প্রভৃতি দেখতে একই রকমের। এদের সাদৃশ্যের মধ্যে কোন বিশেষ কোন ফারাক নেই। তাহলে ডারউইন পন্থীরা কি বলবেন যে বোয়াল মাছ পিবতা মাছের পূর্ব পুরুষ, এলিগেটর কুমিরের পুর্বপুরুষ, শোল মাছ টাকি মাছের পূর্ব পুরুষ, কবুতর ঘুঘু পাখির পুর্বপুরুষ, টিকটিকি গুইসাপের পূর্বপুরুষ?

এরকম ধরণের কথা কোন উন্মাদ-পাগলেরাও বলে না। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর পাগলের সর্দার চার্লস ডারউইন তা বলেছেন। আর নাস্তিক্যবাদীরা তা বিনাবাক্য প্রয়োগে একলাফে লুফে নিলেন। তাদের মনে এই প্রশ্নটুকুও জাগল না এলিগেটর ও কুমিরের মধ্যে, পাবতা মাছ ও বোয়াল মাছের মধ্যে, শোল মাছ ও টাকি মাছের মধ্যে, টিকটিকি ও গুইসাপের মধ্যে যতটুকু সাদৃশ্য আছে তার থেকে অনেক বেশী বৈসাদৃশ্য বানর ও মানুষের মধ্যে রয়েছে। বানর একধরণের কুশ্রী, কদাকার, খর্ব প্রকৃতির প্রাণী। তাই তাদের পূর্বপুরুষ আরও কুশ্রী ও কদাকার হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই এই কুশ্রী কদাকার প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে এতো উন্নত, সুন্দর, সুস্থ, লম্বাকৃতি মানুষে পরিণত হওয়া নিতান্তই অবৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদের বিরোধী।

মানুষের পূর্বপুরুষ যে বানর ছিল না তার প্রমাণ পাওয়া যায় উভয়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে। মানুষের বৃদ্ধাঙ্গুলি সচল ও সক্ষম। খাদ্যগ্রহণ থেকে শুরু করে দুনিয়ার যাবতীয় কঠি কাজ এই বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা সম্পন্ন হয়। পক্ষান্তরে বানরের বৃদ্ধাঙ্গুলি অচল এবং অকর্মন্য। বিজ্ঞানে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে অচল অকর্মন্য অথবা লয়প্রাপ্ত বস্তু থেকে সচল, সক্ষম এবং বর্ধিষ্ণু বস্তুতে পরিণত হতে পারে না। মানুষের আকৃতি লয় পেতে পেতে বানরের আকৃতিতে পরিনত হওয়া হয়তো সম্ভব হতে পারে কিন্তু কদাকার বানর হতে মানুষে পরিণত হতে পারে না।

জীববিজ্ঞানে ব্যাবহার অব্যাবহারের সুত্রে বলা হয়েছে যে, “যদি কোন অঙ্গ দীর্ঘদীন অব্যবহার করা হয় তাহলে তা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। অপরদিকে অঙ্গকে ব্যবহারের ফলে সুঠাম ও সবল হয়।” যদি এই সূত্রকে আমরা বিবর্তনবাদের উপর প্রয়োগ করি তাহলে চার্লস ডারউইনের মতবাদের বালুকাপ্রাসাদ ক্ষণিকের মধ্যে ধুলিস্যাত হয়ে যায়।

বানরের বৃদ্ধাঙ্গুলি অচল ও অক্ষম। পক্ষান্তরে মানুষের বৃদ্ধাঙ্গুলি সচল ও সক্ষম। তাহলে বানর কিভাবে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি দীর্ঘদিন নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যাবহার করে সক্ষম ও সবল করে ফেলল যার দ্বারা পরবর্তীকালে সে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষে পরিণত হয়ে গেল? ব্যবহার অব্যবহারের সূত্র যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয় তাহলে এর উত্তর বস্তুবাদী নাস্তিকদের দিতেই হবে। যারা ডুবন্ত মানুষের খড়কুটোর আশ্রয়ের মতো ডারউইনের মতবাদকে আঁকড়ে ধরে আছেন।

ব্যবহার অব্যবহারের সূত্র অনুযায়ী মানুষ দীর্ঘদীন নিজের আঙ্গুল অব্যবহারের জন্য অক্ষম হতে পারে কিন্তু যা একেবারেই অক্ষম যা কোনদিন ব্যাবহার করা হয়নি তা সক্ষম কোনদিনই হতে পারে না।

সুতরাং ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতবাদ একবিংশ শতাব্দীর একটি বস্তাপচা মতবাদ। যার সঙ্গে সত্যতার কোন সম্পর্ক নেই।

চার্লস ডারউইন যে কথা বলেছেন তা কোথায় কুরআন শরীফে? কুরআন শরীফে কোথাও বলা নেই যে অন্য প্রজাতি থেকে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে এ কথা অবশ্যই সত্য যে মানব জাতির মধ্যে বহু বিবর্তন এসেছে। পৃথিবীতে বহু পরিতর্বন এসেছে। বিবর্তন হয়েছে ঠিকই তবে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি বা বাঁদর থেকে মানুষে পরিণত হওয়ার পুরো গল্পটাই বানানো।

তবে বিবর্তনবাদের প্রথম প্রবক্তা কিন্তু চার্লস ডারউইন নন। মুসলিম বিজ্ঞানী আজ জাহিয। তিনিই প্রথম প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের উপর সর্বাপেক্ষা জোর দিয়েছিলেন। তবে তিনি চার্লস ডারউইনের মতো এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা বলেন নি।

ধর্মগ্রন্থের বিজ্ঞানময় আয়াত কি গোঁজামিল?

অভিজিৎ রায় তাঁর মুক্তমনার সদস্য নাস্তিক অপার্থিব জামানের ‘বিজ্ঞান খোঁজার’ প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন,

“প্রায়শই ধর্মবাদীরা ধর্মগ্রন্থের একটি নির্দিষ্ট আয়াত বা শ্লোকের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞান খুঁজে পান। এটি একটি হাস্যকর অপচেষ্টা। ওমনিভাবে খুঁজতে চাইলে যে কোন কিছুতেই বিজ্ঞানকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব। যে কোন রাম-শ্যাম-যদু-মধু আইস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিস্কারের অনেক আগে কোন কারণে বলে থাকতে পারেন-’সব কিছুই আসলে আপেক্ষিক’। কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিস্কারের পর সেই সমস্ত রাম-শ্যাম-যদু-মধুরা যদি দাবী করে বসে বলে-’হু! আমি তো আইস্টাইনের আগেই জানতাম আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা তবে তা শুধু হাস্যকর ই নয়, সে সমস্ত নিবেদিত প্রাণ বিজ্ঞানীরা তাদের শ্রমলব্ধ গবেষণার মাধ্যমে নিত্য নতুন আবিস্কারে পৃথিবী বাসীকে উপকৃত করে চলেছেন, তাদের প্রতি চরম অবমাননাকরও বটে। সবাই জানে আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিস্কারের জন্য আইনস্টাইনকে কখনই কোন ধর্মগ্রন্থের সাহায্য নিতে হয়নি, বরং আপক্ষিত তত্ত্ব পর পরই তা ধর্মবাদীরা নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে জুড়ে দেওয়ার জন্য নানা জায়গায় মিল খুঁজে পেতে শুরু করলেন। বলা বাহুল্য, আধুনিক বিজ্ঞান যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দানে এখনও অক্ষম, সেই সমস্ত জায়গায় ধর্মবাদীরাও কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। যেমন, বিজ্ঞান এখনও জানে না যে আমাদের এই মহাবিশ্ব বদ্ধ না কি খোলা ফ্ল্যাট। তাই ধর্মবাদীদেরও কেউ তাদের ঐশ্বী কিতাব থেকে আমাদের জন্য ভবিষ্যৎবাণী করে কোন ধরণের আলোকপাত করতে পারছেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানের কল্যানে কখনও যদি এর উত্তর বেরিয়ে আসে, তবে সাথে সাথে ধর্মবাদীরা বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের কতকগুলি অস্পষ্ট আয়াত বা শ্লোক হাজির করে এর অতিপ্রাকৃত দাবী করবেন। মূলত প্রতিটি ক্ষেত্রেই (গোঁজা) মিলগুলি পাওয়া যায় বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলি প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়। এ কি স্রেফ ঘটনার কাকতালীয় সমাপতন?” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ১১)।

প্রথমেই অপার্থিব জামান লিখেছেন, “প্রায়শই ধর্মবাদীরা ধর্মগ্রন্থের একটি নির্দিষ্ট আয়াত বা শ্লোকের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞান খুঁজে পান।” আমরা এখানে বলব, আমরা ধর্মবাদীরা আয়াতের মধ্যে বিজ্ঞান খুঁজে পাই না বরং আল কুরআনের আয়াত আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘আকাশমন্ডলী, আমরা উহাকে সৃষ্টি করিয়াছি ক্ষমতার বলে। নিশ্চয়ই আমরা উহাকে সম্প্রসারিত করিয়াছি।’ (সূরা ৫১, আয়াত ৪৭)

এই দুই আয়াতেই আয়াত আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উপরে আল্লাহ বলেছেন যে “বিশ্ব জগৎ সম্প্রসারণশীল’ আধুনিক বিজ্ঞানও তাই বলছে। আল্লাহ আরও বলেছেন, একসময় পৃথিবী ও আকাশ সবকিছু সংলগ্ন ছিল আধুনিক বিজ্ঞানও তাই বলছে।

এর পরে অপার্থিব জামান লিখেছেন, “ওমনিভাবে খুঁজতে চাইলে যে কোন কিছুতেই বিজ্ঞানকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব।” এর উত্তরে বলব, আচ্ছা অপার্থিব জামান বিজ্ঞান কি সীমাবদ্ধ জ্ঞান। সারা বিশ্বই তো বিজ্ঞানময়। তাহলে সবকিছুতে বিজ্ঞান খুঁজে পাওয়া যাবে না কেন? আমাদের নিকট মহান আল্লাহই হলেন সমস্ত বিজ্ঞানের উৎস। আর কুরআন শরীফ হল, মহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। তাহলে ধর্মে বিজ্ঞান খুঁজে পাওয়া যাবে না কেন?

এর পরে অপার্থিব জামান লিখেছেন, “যে কোন রাম-শ্যাম-যদু-মধু আইস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিস্কারের অনেক আগে কোন কারণে বলে থাকতে পারেন – ‘সব কিছুই আসলে আপেক্ষিক’। কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিস্কারের পর সেই সমস্ত রাম-শ্যাম-যদু-মধুরা যদি দাবী করে বসে বলে – ‘হু! আমি তো আইস্টাইনের আগেই জানতাম আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা’ তবে তা শুধ হাস্যকর ই নয়, সে সমস্ত নিবেদিত প্রাণ বিজ্ঞানীরা তাদের শ্রমলব্ধ গবেষণার মাধ্যমে নিত্য নতুন আবিস্কারে পৃথিবীবাসীকে উপকৃত করে চলেছেন, তাদের প্রতি চরম অবমাননাকরও বটে।”

আচ্ছা, তাহলে আইনস্টাইন যখন ‘আপেক্ষিত তত্ত্ব আবিস্কার করেন নি। তখন কি সব আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে কিছুই ছিল না? আইনস্টাইন তো এটাকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন। তাহলে অবমাননা হল কি করে?

এর পরে অপার্থিব জামান লিখেছেন, “আধুনিক বিজ্ঞান যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দানে এখনও অক্ষম, সেই সমস্ত জায়গায় ধর্মবাদীরাও কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। যেমন, বিজ্ঞান এখনও জানে না যে আমাদের এই মহাবিশ্ব বদ্ধ না কি খোলা ফ্ল্যাট। তাই ধর্মবাদীদেরও কেউ তাদের ঐশ্বী কিতাব থেকে আমাদের জন্য ভবিষ্যৎবাণী করে কোন ধরণের আলোকপাত করতে পারছেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানের কল্যানে কখনও যদি এর উত্তর বেরিয়ে আসে, তবে সাথে সাথে ধর্মবাদীরা বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের কতকগুলি অস্পষ্ট আয়াত বা শ্লোক হাজির করে এর অতিপ্রাকৃত দাবী করবেন।”

এটা অপার্থিব জামানের সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা যে, আধুনিক বিজ্ঞান যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দানে এখনও অক্ষম, সেই সমস্ত জায়গায় ধর্মবাদীরাও কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। কারণ, বিজ্ঞান এখনও বলছে আকাশ বলে কিছু নেই। আর আল্লাহ বলছেন, সাতটি আকাশ আছে। এর সপক্ষে আমরা জোরালো বক্তব্য রেখেছি। বিজ্ঞান এখনও জ্বিন শয়তানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি কিন্তু আমরা এর সপক্ষে বহু আগে থেকেই সরব। বিজ্ঞান জান্নাত ও জাহান্নামের কথা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে মেনে নেয় নি, কিন্তু আমারা ধর্মবাদীরা মানি।

অপার্থিব জামান যে বলেছেন, বিজ্ঞান এখনও জানে না যে আমাদের এই মহাবিশ্ব বদ্ধ না কি খোলা ফ্ল্যাট। তাই ধর্মবাদীদেরও কেউ তাদের ঐশী কিতাব থেকে আমাদের জন্য ভবিষ্যৎবাণী করে কোন ধরণের আলোকপাত করতে পারছেন না। কেন পারছে না? ইসলাম তো বলে এই বিশ্ব আকাশ দিয়ে ঘেরা অর্থাৎ বদ্ধ খোলা ফ্ল্যাট নয়। এই কথা আজ থেকে চোদ্দশত বছর আগে আমাদের নবীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ বলে দিয়েছেন। এতে ভবিষ্যৎবাণী করার কোনো প্রয়োজন নেই।

এর পরে অপার্থিব জামান লিখেছেন, “কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বিজ্ঞানের কল্যানে কখনও যদি এর উত্তর বেরিয়ে আসে, তবে সাথে সাথে ধর্মবাদীরা বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের কতকগুলি অস্পষ্ট আয়াত বা শ্লোক হাজির করে এর অতিপ্রাকৃত দাবী করবেন। মূলত প্রতিটি ক্ষেত্রেই (গোঁজা) মিলগুলি পাওয়া যায় বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলি প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়। এ কি স্রেফ ঘটনার কাকতালীয় সমাপতন?”

এই কথাও অপার্থিব জামানের সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, আমাদের কাছে আয়াত আছে বলেই হাজির করা হবে। না থাকলে পারতাম না। আর তিনি যে বলেছেন, যে মিল পাওয়া যায় তা কাকতালীয়, এটা তখনই সঠিক বলে প্রমাণিত হত যখন শুধুমাত্র বিজ্ঞানের একটি কথা কুরআনের সঙ্গে মিলে যেত। কুরআনের প্রতটি বিজ্ঞানময় আয়াতই ত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য। যেমন, বিগ ব্যাং তত্ত্ব, ভ্ৰণতত্ত্ব, উদ্ভিদেরও যে প্রাণ আছে, মহাকাশ সম্পর্কে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, চাঁদ সম্পর্কে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে এসব সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কুরআনের কোন বিরোধ নেই। তাহলে করআনের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের যে মিল তা কাকতালীয় হল কি করে?

অভিজিৎ রায় লিখেছেন,

“প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মগ্রন্থে ‘আধুনিক বিজ্ঞানের সন্ধানের পাওয়া যায়, বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়। কারণ বিজ্ঞানের দায় পড়েনি ধর্মগ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, বরং ধর্মগ্রন্থ। গুলোই জেনে গেছে, বিজ্ঞান ছাড়া, তারা টিকতে পারবে না।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ১১)

তাই যদি হয় তাহলে বিজ্ঞান তো যুগে যুগে নিজের থিওরী পরিবর্তন করেছে, কিন্তু ধর্মগ্রন্থের একটি আয়াতও পরিবর্তন করা হয়নি তবুও টিকে আছে স্বমহিমায়।

আর আপনি যে বলেছেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মগ্রন্থে ‘আধুনিক বিজ্ঞানের সন্ধানের পাওয়া যায়, বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়” এটা তো গাঁজাখুরী মন্তব্য। কেননা, গাছের প্রাণ আছে একথা হাদীসে আগেই আমাদের নবী বলে গেছেন তা স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কিছুদিন আগে প্রমাণ করলেন। তাহলে আপনার কথা সত্য প্রমাণ হল কি করে? আপনি বলেছেন, বিজ্ঞানের দায় পড়েনি ধর্মগ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, আমরাও বলব, আমাদেরও দায় পড়েনি বিজ্ঞানের গ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে। কারণ বিজ্ঞানের থিওরী পরিবর্তনশীল, আর আমাদের ধর্মগ্রন্থে কোন পরিবর্তন নেই। তবে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত থিওরীর ব্যাপারে আমরা মতবিরোধ করব না, কেননা বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত থিওরীর সাথে ধর্মগ্রন্থের কোন সংঘর্ষ নেই। তবে অভিজিৎবাবু আপনি মনে করতে পারেন যে বিজ্ঞানের দায় পড়েনি ধর্মগ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, কিন্তু বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা ধর্মগ্রন্থ। থেকেই সবক নিয়েছেন। কাতে পড়ে তাঁরা আল্লাহকেই আহ্বান করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইস্টাইন আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, এবং তিনি বলেছিলেন, “মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি খুবই সীমিত ও স্বল্প। মানুষ সৃষ্টি জগৎকেউ বুঝে শেষ করতে পারেনি, সে তার সীমিত জ্ঞানে মহান স্রষ্টাকে বুঝবে কি করে?” (৫০ জন উচ্চ শিক্ষিতা মহিলার ইসলাম গ্রহণ, পৃষ্ঠা-৯)

কিংবদন্তী বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনষ্টাইন বলেছেন, “যে অনন্ত উর্ধতন আত্মা আমাদের ভঙ্গুর এবং দুর্বল মনের নিকট নিজেকে অতি সামান্য মাত্রায় বিকশিত করেন, তাঁর প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং ভয় মিশ্রিত প্রশংসাই আমাদের ধর্ম।

একটা উচ্চতর বিচারশক্তি যা অবাধ্য বিশ্বে প্রকাশিত, তার অস্তিত্বে গভীর আবেগপূর্ণ বিশ্বাসই আল্লাহ সম্বন্ধে আমার ধারণা।”

অন্য যায়গায় তিনি বলেছেন, “তুমি আমাদিগকে তোমারই জন্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের আত্মা তাই যতক্ষণ না তোমাতে আশ্রয়লাভ করে ততক্ষণ অশান্ত থাকে।” (চল্লিশজন বিজ্ঞানীদের মতে আল্লাহর অস্তিত্ব)

কংবদন্তী বিজ্ঞানী আইজ্যক নিউটন বলেছেন, “একমাত্র চরম বুদ্ধিমান ও পরম ক্ষমতাশালী এক শক্তির নির্দেশেই সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র এবং ধুমকেতুর এক আশ্চর্য সুন্দর জগৎ সৃষ্টি হতে পারে। অন্ধের যেমন বর্ণ সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই, তেমনি সর্বজ্ঞানী আল্লাহ কিভাবে সকল বস্তু ধারণ করেন সে সম্বন্ধে কোন ধারণা করতে আমরা সম্পূর্ণ অক্ষম।” (চল্লিশজন বিজ্ঞানীদের মতে আল্লাহর অস্তিত্ব)

ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী রোমানেস তাঁর মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে স্বীকার করে বলেছেন, “মহাবিশ্বকে কোন ক্রমেই আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার না করে বোঝা যায় না।” (ঐ পুস্তক)

বিজ্ঞানী টেনিসন বলেছেন, “সর্বশক্তিমান আল্লাহ কি বৈচিত্রময় পরিকল্পনার অধিকারী ।” (ঐ পুস্তক)

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক রোমানেস তাঁর মৃত্যুর স্বল্পকাল আগে স্বীকার করে গেছেন, “মহাবিশ্বকে কোন ক্রমেই আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার না করে বোঝান যায় না।”

এইসব বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে অভিজিৎ রায় কি মন্তব্য করবেন?

এর পরে অভিজিৎ রায় লিখেছেন,

“বাংলাদেশে বেশ ক’বছর ধরেই চলছে এই নির্বুদ্ধিতার খেলা, মাতাল সাজার আর মাতাল বানানোর নিরন্তর প্রক্রিয়া। এখানে ‘জ্ঞানের কথা’, ‘লজ্জা’, ‘নারী’র মত প্রগতিশীল বই অবলীলায় নিষিদ্ধ করা হয় মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অজুহাতে, আরজ আলি মাতুব্বরের লেখা “সত্যের সন্ধান’ আর দেবী প্রসাদ চৌধুরীর ‘যে গল্পের শেষ নেই’ পড়ার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা ওহাবকে ‘জুতোর মালা’ পরিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়, তসলিমাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করার জন্য আহমদ শরীফ-আলি আসগর-কবীর চৌধুরীদের ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করা হয়, চাপাতির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে হয় মুক্তমনা অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে, আর অপরপক্ষে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বের হয় ‘Scientific Identification in Holy Quran এর মতো ছদ্ম বিজ্ঞানময় গ্রন্থ। ভক্তি রসের বান ডেকে অদৃষ্টবাদ আর অলৌকিকত্বরের রমরমা বাজার তৈরি করতে চলেছে বুকাইলী-মূর-দানিকেনদের বইয়ের ব্যাপক প্রচার আর প্রসার। বাংলাদেশের সারা বাজার এখন ‘আল কোরআন এক মহা বিজ্ঞান’, ‘মহাকাশ ও কোরাণের চ্যালেঞ্জ’, ‘বিজ্ঞান না কোরাণ’, ‘বিজ্ঞান ও আল কোরাণ’ জাতীয় ছদ্ম বৈজ্ঞানিক বই এ সয়লাব।” (বিজ্ঞানময় কিতাব, পৃষ্ঠা – ১৩)

উপরের লেখাটি পড়লেই বোঝা যায় লেখকের মন মানসিকতা কি রকম তিনি কতখানি মুক্তমনা? প্রথমেই অভিজিৎ রায় ‘জ্ঞানের কথা’, ‘লজ্জা’, ‘নারী’র মতো বইগুলিকে প্রগতিশীল বলে ঢাকঢোল পিটিয়েছেন। সব বইয়ের খবর আমি জানিনা তবে তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ উপন্যাসটির কথা আমি বলব যে সে বইটি মোটেই প্রগতিশীল নয় বরং বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাবার এক চক্ৰন্তে বইটি বিজেপীর ইশারায় তসলিমা নাসরিন লিখেছেন এবং বিজেপীর কাছ থেকে তিনি ৪৫ লক্ষ টাকা ঘুস নিয়েছেন। তহলে ঘুসখোর লেখক ও তার লেখনী অভিজিৎ রায়ের মতো নাস্তিকের কাছে প্রগতিশীল বই আর বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডাঃ মরিস বুকাইলী, উইলিয়াম কিথ মূর প্রভৃতিরা ছদ্ম বিজ্ঞানী? যদিও এইসব বিজ্ঞানীরা শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। আজ পর্যন্ত তাঁদেরকে কেউ খন্ডন করতে পারেনি।

অভিজিৎ রায়ের কি আশ্চর্য দ্বিচারিতা? অভিজিৎ রায় লিখেছেন, মুক্তিযোদ্ধা ওহাবকে ‘জুতোর মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয় এটা অবশ্যই বর্বরতা আর তসলিমা নাসরিন যা লিখেছেন সেটাও কি কম বর্বরতা?’

আর আহমদ শরীফ-আলি আসগর-কবীর চৌধুরীদের ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করা হয় তাতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠার কি কারণ আছে? তাঁরা মুরদাদ হয়েছিলেন বলেই ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করা হয়েছিল। ধর্মত্যাগীকে ইসলামে ‘মুরতাদ’ বলা হয়। আহমদ শরীফ, আলি আসগর, কবীর চৌধুরী প্রভৃতিরা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়েছিলেন বলেই তাদেরকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করা হয়েছিল।

আর আপনি ‘আল কোরআন এক মহা বিজ্ঞান’, ‘মহাকাশ ও কোরাণের চ্যালেঞ্জ’, ‘বিজ্ঞান না কোরাণ’, ‘বিজ্ঞান ও আল কোরাণ’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলিকে ছদ্ম বৈজ্ঞানিক বলছেন কোন যুক্তিতে? এইসব বইয়ের লেখক মুহাম্মাদ নুরুল ইসলামকে বিবিসি থেকে সেই সময়কার চারজন বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে তাঁর নামও তালিকাবদ্ধ করা হয়েছিল। এর পরেও কি আপনি তাঁকে ছদ্ম বিজ্ঞানী ও তাঁর বইকে ছদ্ম বৈজ্ঞানিক বই বলে কটাক্ষ করবেন?

  • [১. এখানে যে ৬ দিনের কথা বলা হয়েছে তা পার্থিব ৬ দিন নয়, পারলৌকিক ৬ দিন। কেননা, দুনিয়ার ৬ দিনের হিসেবে পৃথিবী সৃষ্টি করা বিজ্ঞান বিরোধী কথা। আল্লাহর একদিন মানে হল পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছর। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “এমন একদিনে ফেরেশতা এবং রুহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয়, যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।” তাই আল্লাহর কাছে ৬ দিন হলে মানুষের কাছে হবে ৩ লক্ষ বছর। অর্থাৎ আল্লাহ তিন লক্ষ বছর ধরে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। (৬x৫০০০০=৩০০০০০)।]

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

Post Views: 694
Tags: Avijit RoyMuktomonaঅভিজিৎ রায়চার্লস ডারইউনডাঃ মরিস বুকাইলীনাস্তিক্যবাদনাস্তিক্যবাদীমুক্তমনাহারুন ইয়াহইয়া
ADVERTISEMENT

Related Posts

নাস্তিকতাবাদের পতনঃ একটি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
নাস্তিকতা

নাস্তিকতাবাদের পতনঃ একটি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

লিখেছেনঃ হারুন ইয়াহিয়া ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ বলে একটি কথা আছে। আমরা বর্তমানে তেমনি একটি সন্ধিক্ষণে (turning point) বাস করছি। কেউ একে...

by অতিথি লেখক
January 5, 2022
তসলিমা নাসরিনের
নাস্তিকতা

তসলিমা নাসরিনের নারীবাদ ও লেখকস্বত্তাঃ একটি সামাজিক মূল্যায়ন

লিখেছেনঃ সােমক দাস (সাংবাদিক) একুশ বছর আগে এই দিনে স্বাধীনতা এসেছিল, এই দিনে শামীমা আক্তারও এসেছে সুরঞ্জন দত্তের ঘরে।...

by নবজাগরণ
May 15, 2021
তসলিমা নাসরিন
নাস্তিকতা

তসলিমার রচনা যৌন-অতৃপ্ত নারীর আত্মবিলাপ

লিখেছেনঃ আজিজুল হক যেকোন প্রাণীরই অস্তিত্বের সমস্যা মানেই ‘প্যাট’ (পেট) আর তার ঠিক নিচের অঙ্গের সমস্যা! ‘নিচের অঙ্গটিকে প্রজাতি-টিকিয়ে...

by নবজাগরণ
May 15, 2021
নাস্তিক
নাস্তিকতা

নাস্তিকদের জটিল প্রশ্ন মহান আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম এর আগে আমরা জেনেছি যে প্রত্যেক কার্যের পিছনে কোন না কোন কারণ বিদ্যমান থাকে। কারণ...

by নবজাগরণ
May 15, 2021

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ : মুঘল সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত এক নতুন ধর্ম

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (8)
  • অন্যান্য (11)
  • ই-গ্রন্থাগার (1)
  • ইসলাম (25)
  • ইসলামিক ইতিহাস (20)
  • কবিতা (36)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (20)
  • বিশ্ব ইতিহাস (23)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (184)
  • রাজনীতি (36)
  • সাহিত্য আলোচনা (57)
  • সিনেমা (14)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Checkout
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply
Open chat
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?