লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ তাহির
পাদ্রী ফাণ্ডারের আপত্তিঃ প্রকাশ থাকে যে বাইবেলের ইস্তেসনা কিতাবের ১৮ অধ্যায়ের ১৫ আয়াতে আছে—তোমার খোদা তোমার জন্য তোমার মধ্য হইতে তথা তোমার ভাইদের মধ্য হইতে আমার মত এক নবী প্রেরণ করিবেন, তোমরা তাহার কথা শুনিবে।
পাদ্রী ফাণ্ডার এই আয়াতের বরাত দিয়া বলিতে চান যে—এই প্রতিশ্রুত নবী যে. বনী-ইস্রায়ীলের মধ্যেই হইবেন, এই আয়াতটিই ইহার প্রমাণ; কেননা ইহাতে “তোমারই মধ্য হইতে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত রহিয়াছে। অতএব এই নবী বনী ইসমায়ীলে হইতে পারেন না।
দ্বিতীয়তঃ ইউহান্না ইঞ্জিলের বর্ণনামতে এই ঘোষণা হযরত ঈসা ( আঃ) তাহার নিজের সম্পর্কেই ঘোষিত বলিয়া বলিয়াছেন—“তিনি আমার সম্পর্কেই লিখিয়াছেন।”
বলাবাহুল্য পাত্রী ফাণ্ডারের এই আপত্তি বাস্তবের ধোপে টিকেনা, কেননা প্রথমতঃ মদীনা শরীফে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম প্রথম প্রথম খয়বারেব ইহুদি, বনু কাইনুকা, বনু নযীর, বনু কুরাইযা প্রভৃতি বিভিন্ন ইহুদি সম্প্রদায় ও বনী-ইস্রায়ীল পরিবৃত ছিলেন, এমতাবস্থায় তোমারই মধ্য হইতে, তোমার ভাইদের মধ্য হইতে; কথাটি হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম সম্পর্কে প্রযোজ্য হইতে কোন বাধা নাই।
অধিকন্তু আলোচ্য আয়াতটির নম্বর পনরো এবং যে ১৭ নং আয়াত ঘোষণা সম্পর্কে আমরা আলোচনা করিতেছি; তাহাতে প্রতিশ্রুতি নবী সম্পর্কে, বিশদ বিবরণ রহিয়াছে যে একমাত্র হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই সেই প্রতিশ্রুত নবী বলিয়া আমরা দাবী করিতেছি। এমতাবস্থায় পাদ্রী ফাণ্ডার যদি গায়ের জোরে ১৫ নং আয়াত হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে বর্ণিত বলিয়া প্রমাণ করিতে যান, তবে তাহাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা; ১৭ নং আয়াত এবং তাহাতে বিশদ বর্ণিত আগাম খবর ও বশারত যথাপূর্ব তথা পর অকাট্য এবং অক্ষতই থাকিবে; এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ৬৪ সাল্লাম যে এই প্রতিশ্রুত নবী, রোজ কিয়ামত পর্যন্ত এ সত্য বজ্রনির্ঘোষে ঘোষণা করিয়া চলিবে।
ফাণ্ডার সাহেবের দ্বিতীয় আপত্তি ও উক্তি ও অসার হইয়া যায়, যখন দেখি যে ফাণ্ডার সাহেব ইউহান্না ইঞ্জিলের যে আয়াতটির বরাত দিয়া বলিতেছেন যে হযরত ঈসা (আঃ) এই ঘোষণা কে তাহার নিজের সম্পর্কেই ঘোষিত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন সেই আয়াতটিতেও এ সম্পর্কে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নাই। লক্ষ্য করিয়া দেখুন ইউহান্না ইঞ্জিলের উক্ত পূর্ণ আয়াতটি হইল—“যদি তোমরা মুসাকে সহ্য স্বীকার করিতে তবে আমাকে ও বিশ্বাস করিতে; কেননা তিনি আমার সম্পকে লিখিয়াছেন।”
প্রনিধান করুন—ইস্তেসনা বর্ণিত ১৭ নম্বর আয়াত এবং ঘোষণাটি হযরত মুসা (আঃ) হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কেই যে করিয়াছেন, আয়াতটিতে ইহার কোন প্রমাণ নাই। আয়াতটির দ্বারা বড় জোর ইহাই প্রমাণিত হইতে পারে যে হযরত মুসা (আঃ) হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে কোথাও কিছু বলিয়াছেন। অতএব তওরাতের কোথাও যদি হযরত মুসা (আঃ) একথা বলিয়া থাকেন, তবেই হইল। আলোচ্য ১৭ নম্বর আয়াত বর্ণিত বশারতের হাতে কিছু যায় আসেনা। আমরাত একথা বলিনা যে হযরত ঈসা (আঃ) র আবির্ভাব সম্পর্কে হযরত মুসা (আঃ) কোন “বশারত” দিয়া যান নাই, কিংবা তওরাতে তৎসম্পর্কে কোন আগাম খবর বা পূর্বাহ্ন ঘোষণাই নাই। কিংবা হযরত ঈসা (আঃ) ও একথা বলেন নাই যে, হযরত মুসা তাহার কোন কিতাবেই আমি ছাড়া অন্য কোন পয়গম্বরের প্রতি ইংগিত মাত্র করেন নাই।
পাদ্রী ফাণ্ডার সাহেবের যদি পরিতৃপ্তি না হয় তবে বলি ইউহান্না ইঞ্জিলের প্রথম অধ্যায়ের ৯ নম্বর আয়াত পড়িয়া দেখুন যে, কেমন ভাবে হযরত ঈসা (আঃ) ইস্তেসনার উল্লিখিত ১৫ নং আয়াতটি তৎসম্পর্কে বর্ণিত নয় বলিয়া নিজেই ঘোষণা করিতেছেন। ইউহান্না ইঞ্জিলে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত আছে যে ইহুদিরা যখন হযরত ঈসা (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমিই কি সেই প্রতিশ্রুত পয়গম্বর? ইস্তেসানা কিতাবের ১৮ নং অধ্যায়ের ১৫ নং আয়াতে হযরত মুসা যাহার কথা ঘোষণা করিয়াছেন? হযরত ঈসা তদুত্তরে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, না, অমি তিনি নই।
২। দ্বিতীয় খবর :
ইস্তেসনা কিতাবেরই ৩২ নং অধ্যায়ের ২১ নং আয়তে আছে, তাহারা বাতিল মাবুদদের ইবাদত ইত্যাদির দ্বারা আমার গয়রত এবং আমার রোষ উদ্দীপিত করিয়াছে। অতএব এমন সবদের দ্বারা আমিও তাহাদের গয়রত বা আত্মসম্মানে ঘা দিব, যাহারা কোন উম্মতই নয়, একটি অজ্ঞমূর্খ জাতির দ্বারা তাহাদের ও উৎপীড়িত করিব।
এস্থলে নাদান বা অজ্ঞমূর্খ জাতি বলিতে আরবরাই উদ্দেশ্য; কেননা তাহারা যার পর নাই মূর্খ এবং অজ্ঞ ছিল, দুনয়া আখেরাত, পর্থিব এবং ধর্মীয় কোন প্রকার জ্ঞানই ছিলনা তাহাদের, মূর্তি পূজা এবং পৌতলিকতা ব্যতীত তাহারা কিছুই জানিতনা; ইহুদিদের চোখে তাহারা অত্যন্ত হীন এবং অবজ্ঞার পাত্র ছিল; দাসী (হযরত হাজিরা) বংশ বলিয়া ঘৃণিত ছিল। যদিও আদতে হযরত হাজিরা ছিলেন শাহজাদী এবং রাজকুমারী; হযরত সারা (রাঃ) র সেবাদাসী।
ফলতঃ এই ঘোষণা ও প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হইয়াছে; আল্লাহ তাআলা আরবদের মত অবহেলিত অজ্ঞমূর্খ সমাজে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে প্রেরণ করেন, তিনি তাহাদিগকে সিরাতে মুস্তাকীম ও সুপথ দেখান। পবিত্র কুরআনে যেমন বর্ণিত রহিয়াছে—
هو الذي بعث …………………………… ضلال مبين
এস্থলে জাহিল নাদান মুর্খ বলিতে ইউনানী বা গ্রীকদের উদ্দেশ্য করা চলিবেনা; কেননা ইতিহাস সাক্ষী, হযরত ঈসার (আঃ) আবির্ভাবের তিনশত বৎসর পূর্বেই সমগ্র জগতে তাহারা জ্ঞানে বিজ্ঞানে শীর্ষমৰ্য্যাদা লাভ করিয়াছিল, সাকরাত, বাকরাত, ফিসাগোর্স এরিষ্টটেল প্রমুখ বিজ্ঞানাচার্যরা গ্ৰীকেই জন্মিয়াছিলেন।
৩। তৃতীয় খবর
ইস্তেসনা কিতাবের ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত আরবী তর্জমায় ৩৩ নং অধ্যায়ে আছে খোদাওন্দ “সাইনা” হইতে আসিয়াছে, সয়ীর হইতে তাহাদের সম্মুখে প্রকাশ পাইয়াছে, ফারান পর্বত হইতে উদ্ভাসিত হইয়াছে, এবং সহস্র সহস্র কুদসী (পূন্যাত্মা) দের মধ্য হইতে আগমণ করিয়াছে, তাহার দক্ষিণ হস্তে তাহাদের জন্য আগ্নেয় শরীয়ত ছিল। “সাইনা” তুর পর্বতের অন্য নাম; “সাইনা” হইতে খোদার আগমনের অর্থ হযরত মূসা (আঃ) কে আল্লাহর তরফ থেকে “তওরাত” দান; সয়ীর হইতে প্রকাশ লাভ বা উদয় হওয়ার অর্থ হযরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর তরফ থেকে ইঞ্জিল প্রদান। “সয়ীর” আসলে সিরিয়ার একটি পর্বতের নাম, আজকাল ইহাকে: জবলুল খলীল বলা হইয়া থাকে। হযরত ঈসা (আঃ) ঐ পর্বতেই আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করিতেন। “সয়ীর” নামে আজ ও সেখানে একটি বস্তি রহিয়াছে।
ফারান পর্বত হইতে উদয় উদ্ভাসিত হওয়ার অর্থ আল্লাহর তরফ থেকে কুরআন নাযিল করা; কেননা “ফারান” মক্কারই একটি পর্বতের নাম। পয়দায়ীশ কিতাবের ২১ নং অধ্যায়ের ২০ নং আয়াত ও এই কথাই বলে। তাহাতে হযরত ইসমায়ীল (আঃ) এর বৃত্তান্ত উপলক্ষে বর্ণিত আছে—এবং খোদা ঐ ছেলেটির সাথে সাথে ছিলেন, সে বড় হয়, মাঠে থাকে; এবং তীরন্দাজ হয়, এবং ফারানের ময়দানে বাস করিতে থাকে, এবং তাহার মাতা তাহার জন্য মিশর হইতে বধু গ্রহণ করেন। অর্থাৎ মিশরীয় রমণীর সংগে তাহার বিবাহ দেন।
প্রকাশ থাকে যে বাইবেলের ইংরাজী অনুবাদে উল্লিখিত বশারত বা ঘোষণায় “সহস্র সহস্র” এর পরিবর্তে “দশ সহস্র” লিখিত রহিয়াছে।
যেহেতু এই ঘোষণায় “ফারান পর্বত” কথাটি স্পষ্টভাবে বর্ণিত রহিয়াছে, এবং ফারান পর্বত তথা মক্কাই ছিল ইসমায়ীল ও হাজিরার আবাসভূমি; হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের জন্মভূমি; এমতাবস্থায় এই ঘোষনাটি যে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম সম্পর্কে, এবং তিনিই এই প্রতিশ্রুত নবী তাহাতে সন্দেহ থাকেনা।
এই খবর বা ঘোষণাটির পূর্ণ বয়ানটি আরও একবার প্রণিধান করিয়া দেখুন; ইহাতে আরও বর্ণিত রহিয়াছে—খোদা সাইন থেকে আসিয়াছে; সায়ীর থেকে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে, ফারাণ পর্বত থেকে উদ্ভাসিত হইয়াছে; তাহার দক্ষিণহস্তে এক আগ্নেয় শরীয়ত তাহাদের জন্য রহিয়াছে; সে তাহার নিজের লোকদের খুবই ভালবাসে; তাহার সকল মুকদ্দস (পুণ্যবান) গণ তাহার হাতে, এবং তাহার পদস্পর্শে উপবিষ্ট এবং তাহার কথা মানিয়া চলিবে।
বলাবাহুল্য সাইনা, সায়ীর, এবং ফারান অঞ্চলের উল্লেখদ্বারা যথাক্রমে হযরত মুসা (আঃ) হযরত ঈসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নবুওত ও আবির্ভাব ঘোষণা করা হইয়াছে, তেমনি পরবর্তী চারিটি বাক্যে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নবুওতের চিত্রকে অধিকতর স্পষ্টভাবে অংকিত করা হইয়াছে। পবিত্র কুরআন অনুরূপভাবে সুরা ত্বীন মধ্যে তিনজন নবীর উক্ত তিনটি আবর্ভাবক্ষেত্রের ঘোষণা করতঃ বলিয়াছে–
و التين و الزيتون وطور سینین و هذا البلد الأمين –
ত্বীন যয়তুন সমৃদ্ধ এলাকা যে বয়তুল মুকাদ্দাস বা সিরিয়া এবং হযরত ঈসার (আঃ) আবির্ভাবস্থল একথা সর্বজন স্বীকৃত; ঐখান থেকেই সায়ীর পর্বতের শুরু; অনুরূপভাবে কুহেতুর বা সাইনার সহিত হযরত মুসার (আঃ) ঘনিষ্ট সম্পর্ক সর্বজন বিদিত; আর “বলদে আমীন” বা শান্তিনগরী বলিতে যে মক্কা নগরী এবং হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহির প্রতিই সুস্পষ্ট ইংগিত রহিয়াছে সন্দেহ নাই।
অনুরূপভাবে অবশিষ্ট চারিটি বাক্য ও অবিকলভাবে পবিত্র কুরআনের সুরা ফাতাহ মধ্যে বিবৃত রহিয়াছে। যথা
(১) “দশ হাযার পুণ্যাত্মাদের সংগে আসিয়াছে” ••••••••• محمد رسول الله و الذين تعه ইতিহাস সাক্ষী প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সাথে মক্কা বিজয়কালে দশ সহস্র সাহাবা ছিলেন।
(২) দক্ষিণহস্তে আগ্নেয় শরীয়ত: …………… اشداء على الكفار
কাফিরদের বিরুদ্ধে তাহারা খড়গহস্ত।
(৩) নিজের লোকদের খুবই ভালবাসে ……… رحماء بينهم নিজেদের মধ্যে একে অন্যের দরদি।
(৪) আসন্ন পয়গম্বরের সকল পুণ্যাত্মা (সাহাবা) তোমার মুঠোয়, তোমার পদস্পর্শে, তোমার কথা মানিবে তুমি তাহাদিগকে আল্লাহর সমীপে রুকু সজদায় অবনত, আল্লাহর ফল প্রসন্নতা প্রত্যাশী দেখিবে, তাহাদের মুখে ইবাদত বন্দেগীর ফলে আলোকপ্রভা রহিয়াছে; তওরাত মধ্যে তাহাদের এই অবস্থাই বর্ণিত রহিয়াছে।
যেহেতু আলোচ্য ঘোষণায় “ফারান” শব্দ স্পষ্টভাবে বর্ণিত রহিয়াছে এবং ইহাতে হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নবুওৎ প্রমাণিত হইয়া যায়, তাই খৃষ্টানগণ এবিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করিবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াছেন; কখনও বলিয়াছেন ফারান বয়তুল মুকাদ্দাসেরই অন্য নাম, (২) কখনও বলিয়াছেন—কাদস হইতে সাইনা পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলই ফারান; (৩) কখনও বলিয়াছেন কাদসের নামই ফারান, (৪) কখনও বলেন—সাইনা পর্বতের পশ্চিমে অবস্থিত সমতলভূমির নামই ফারান।
বলাবাহুল্য তাহাদের এইসমস্ত উক্তি সমূহের কোনটাই ভূগোল ইতিহাস সমর্থন করেনা;
(১) বয়তুল মুকাদ্দাসের অন্য নাম ফারান বলিয়া ভূগোল ইতিহাসে কোথাও উল্লেখ নাই, অধিকন্তু ফারান শব্দের আভিধানিক অর্থ সাহারা, মরুপ্রান্তর; বাইবেলের পয়দায়ীশ এবং নম্বর বা গণনা গ্রন্থেও ফারান অর্থ মরু প্রান্তর বা বিয়াবান বলিয়া উল্লেখ রহিয়াছে; এবং বয়তুল মুদ্দাসের মত সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা অঞ্চলকে কোন পাগল ও মরু সাহারা বলিয়া উল্লেখ করিতে পারেনা।
(২) ফারান যে তূর সাইনা প্রভৃতি হইতে স্বতন্ত্র এলাকা; ইহা যে সাইনা তুরের অন্তর্ভূক্ত নয়, ইহার প্রমাণ স্বয়ং বাইবেলেরই বিভিন্ন গ্রন্থে রহিয়াছে, ‘গননা’ বা নম্বর কিতাবে আছে—বনী-ইস্রায়ীলগণ সাইনা প্রান্তর ছাড়িয়া চলিয়া যায় এবং ঐ মেঘমালা ফারানে থামিয়া যায়; ইহাতে সাইনা প্রান্তর এবং ফারান প্রান্তর যে দুইটি স্বতন্ত্র এলাকা একথা অকাট্যভাবে প্রমাণ। পায়।
(৩) “কাদসের অন্য নাম ফারান” এই অপব্যাখ্যাটিও সম্পূর্ণ ভুল; কেননা এই দুই যে এক নয়, কাদস এবং ফারান যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, তাহার প্রমাণে পয়দায়ীশ কিতাবের এই বয়ানই যথেষ্ট যে—“এবং হাওয়ারীদিগকে সায়ীর পর্বতে মারিতে মারিতে মরু প্রান্তরে সংলগ্ন। ফারাণে লইয়া আসে, আবার তাহারা কাদসে ফিরিয়া যায়।”
(৪) সন্দেহ নাই সাইনা পর্বতের নিকটবর্তী একটি সাহারাকে। ভৌগলিকগণ ফারান নামে উল্লেখ করিয়াছেন; কিন্তু ইহাতে খৃষ্টানদের উল্লসিত হইবার কোন অবকাশ নাই; কেননা আলোচ্য ঘোষণায় কোন ফারানের কথা উল্লেখ রহিয়াছে, ইহাই হইল আসল প্রশ্ন; একথা স্বয়ং খৃষ্টানগণও স্বীকার করেন যে – যে ফারানের কথা এস্থলে উল্লেখ রহিয়াছে তাহাতে ঐ ফারানই উদ্দেশ্য যে ফারান সম্বন্ধে পয়দায়ীশ কিতাবে বর্ণিত আছে যে, সেখানে হযরত ইসমায়ীল এবং হযরত হাজিরা বসবাস করিয়াছিলেন। (অকসফোর্ড ইন সাইক্লোপেড; বাইবেল কমাক্লিউডেন্স ২১৭ পৃঃ) এবং বলাবাহুল্য হযরত হাজিরা এবং হযরত ইসমাইলের (আঃ) আবাসভূমি ও বাসস্থান যে হিজায ছিল এ বিষয়ে সকল নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন গ্রন্থাবলীই একমত; এই কারনেই ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে আরকুইটন প্রকাশিত সামিরী তওরাতের আরবী অনুবাদে ফারান অর্থে “হিজায”ই বলা হইয়াছে ; এবং ফারানের শব্দের পাশে বন্ধনীতে (হিযাজ) লিখিত রহিয়াছে।
৪। চতুর্থ ঘোষণা
আল্লাহ তাআলা হযরত ইসমায়ীল সম্পর্কে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে যে ওয়াদা করিয়াছিলেন, বাইবেলের পয়দায়ীশ কিতাবের ১৭ নং অধ্যায়ের ২০ নং আয়াতে তাহা ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত আরবী তরজমায় এই মর্মে রহিয়াছে—“এবং ইসমায়ীলের সম্পর্কেও আমি তােমার দুআ শুনিয়াছি; দেখ আমি তাহাকে বরকতাদির সাফল্য দান করিব, তাহাকে অনেক বর্ধিত করিব; তাহা হইতে বার জন সর্দার পয়দা হইবে; এবং আমি তাহাকে বিশাল জাতি করিব।”
যেহেতু হযরত ইসমায়ীলের সন্তান মধ্যে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত বিরাট জাতি সম্পন্ন কেহই নাই; অতএব এতদ্বারা যে স্বয়ং হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামকেই উদ্দেশ্য করা হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহের অবকাশ নাই।
ঠিক অনুরূপ ভাবেই আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমায়ীল (আঃ) পিতা-পুত্রের যৌথ প্রার্থনা উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন— ربنا و ابعث
ওগো আমাদের রব! তুমি তাহাদের (আমাদের বংশধর) মধ্যে তাহাদের মধ্য হইতে এমন একজন পয়গম্বর প্রেরণ কর—যে তাহা দিগের কাছে তোমার আয়াত তিলাওৎ করিবে, তাহাদিগকে কিতাব হিকমতের তালীম দিবে এবং তাহাদিগকে পাক-পরিচ্ছন্ন করিবে।
প্রকাশ থাকে যে-ইহুদিগের মধ্যে প্রচলিত এবং আরবী অক্ষরের মান হিসাবে এই ঘেষণা মধ্যে উল্লিখিত “বিশাল জাতি” শব্দের অক্ষরগুলির মান সমষ্টি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নাম মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) শব্দের নাম-সমষ্টি এক হইয়া যায়; অনুরূপ ভাবেই এই ঘোষণা মধ্যে তওরাতে ব্যবহৃত একটি শব্দ “রমাদমাদ” এর অক্ষরগুলির মান-সমষ্টি ও হুযুর সল্লাল্লাহু আলাহির নামের অক্ষরগুলির মান-সমষ্টি ও এক; “বিশাল জাতি” শব্দ ইহুদি ভাষায় “লুগভী গুযল”; এমতাবস্থায় তওরাতের “লুগভী গুযল” “রমাদমাদ” এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) প্রত্যেকেরই আক্ষরিক মান-সমষ্টি ৯২ বিরানববই হয়। অধিকন্তু বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিস কাযী আয়ায (রঃ) হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের পবিত্র নাম সমূহের মধ্যে “রমাদমাদ” ও একটি নাম রহিয়াছে বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। শিফা ৪৫৬ খৃঃ এই জন্যই মণীষীরা, নিরপেক্ষ পণ্ডিতগণ বলেন যে উক্ত ঘোষণা মধ্যেই হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নাম পর্যন্ত প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে। সুপ্রসিদ্ধ শাস্ত্রবিদ ও তফসীরকার আল্লামা কুরতবী তাহার কিতাবের ২য় খণ্ডের প্রথম পরিচ্ছেদে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছেন।
৫। পঞ্চম ঘোষণা
পয়দায়ীশ কিতাবের ৪৯ অধ্যায় ১০ নম্বর আয়াত ১৭২২ খৃষ্টাব্দে ১৮৩১ খৃষ্টাব্দে এবং ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত আরবী তরজমায় আছে যে পর্যন্ত না “শিলোয়া’র আগমন ঘটিয়াছে এবং জাতিপুঞ্জ তাহার অনুগত না হইয়াছে ততদিন পর্যন্ত ইহুদার রাজ্য যাইবেনা; এবং তাহার বংশধরদের শাসন দণ্ডও মুকুব হইবেনা।”
বলাবাহুল্য উল্লিখিত “শিলোয়া” নামের অনুবাদে আহলে কিতাব তথা খৃষ্টান ইহুদীদের মধ্যে দারুন মতভেদ রহিয়াছে; অনুবাদ যাই হউক না কেন আসলে ইহা যে একটি নাম এ বিষয়ে কিন্তু দ্বিমত থাকিতে পারেনা, দ্বিমত নাই।
তুরস্ক সম্রাট সুলতান বায়েজীদ খান মরহুমের আমলে আবদুস সালাম নামক এক’ ইহুদি আলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন; তিনি التراب الهادية নামক তাহার লিখিত একটি ছোট পুস্তিকায় লিখিয়াছেন যে—আলোচ্য আয়াতে ইহার প্রমাণ বিদ্যমান রহিয়াছে যে, হযরত মূসা এবং হযরত ঈসা আলাইহিমাস সালামের পর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম তশরীফ আনিবেন; কেননা হাকীম বলিতে হযরত মূসা (আঃ) ই উদ্দেশ্য, কেননা হযরত ইয়াকুবের পর হযরত মূসা (আঃ) পর্যন্ত অন্তবর্তীকালে শরীয়তধারী কোন নবীই আসেন নাই। অনুরূপ ভাবে “আইন বা কানুন দানকারী” বলিতে হযরত ঈসা (আঃ) ই উদ্দেশ্য; কেননা হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) মধ্যবর্তীকালে নতুন শরীয়ত ধারী কোন পয়গম্বরই আসেন নাই। এবং উভয়ের পরও হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত অন্য কেহই স্বতন্ত্র শরীয়ত নিয়া আসেন নাই। ইয়াকুব (আঃ) র উক্ত “শেষ যুগে” হইতে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই যে উদ্দেশ্য তাহাতে সন্দেহ থাকে না। কেননা হাকীম এবং শরীয়ত ধারীর হুকুমের অবসানের পরবর্তী যুগে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত এমন অন্য কেহ আসে নাই। অধিকন্তু উল্লিখিত “এবং সমগ্র জাতি তাহার অনুগত হইবে” উক্তিটিও ইহার স্পষ্ট প্রমাণ; কেননা সমগ্র জাতিসমূহ হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত আর কাহারও অনুগত হয় নাই। অন্য কাহারও পতাকাতলে সমবেত হয় নাই।
“আসা বা শাসনদণ্ড এবং মুদাবির বলিতে পার্থিব শাসন এবং পার্থিব শাসকই উদ্দেশ্য” বলিয়া প্রোটেষ্টান্ট খৃষ্টানদের উক্তি ও বাস্তব বিরোধী; কেননা ইহুদিদের মসীহ এবং খৃষ্টানদের ঈসা (আঃ) কেহই এই “শিলোয়া” হইতে পারেননা; প্রথমতঃ ইহুদার রাজত্ব বুখতে নাসার সম্রাটের আমলেই শেষ হইয়া গিয়াছে; অতঃপর প্রায় আড়াই হাজার বছর হইতে চলিল ইহুদীদের প্রতীক্ষিত মসীহর অভাস ও পাওয়া যায়নাই; দ্বিতীয়তঃ হযরত ঈসার (আঃ) আবির্ভাবের ছয় শত বৎসর পূর্বেই ইহুদা বংশের রাজত্বের চির অবসান ঘটিয়াছে, সেই অবসান হযরত ঈসা (আঃ) এর অপেক্ষায় বসিয়া থাকেনাই; যদি হযরত ঈসা (আঃ) ই উল্লিখিত “শিলোয়া” হইতেন, তবে এই অবসান পর্ব তাহার আগমন পর্যন্ত মুলতুবি, তাহাদের রাজত্ব অব্যাহত এবং বর্তমান থাকিত।
৬। ষষ্ঠ ঘোষণা :
বাইবেলের যবুর গ্রন্থের ৪৫ নম্বরে আছে
“আমার মনে এক নুতন বিষয় উত্তোলিত হইতেছে; যাহা আমি বাদশাহ সম্পর্কে লিপি বন্ধ করিয়াছি, আমার দক্ষ লেখকের লেখনী; আদম সন্তানদের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা সুন্দর, তোমার ওষ্ঠে আল্লাহর নাম রহিয়াছে, এই জন্যই আল্লাহ তোমাকে চিরদিনের জন্য মহান মুবারক করিয়াছেন। হে শক্তি শালী! তুমি তোমার তরবারী খানি যাহা তোমার প্রভাব প্রতিপত্তি এবং মহিমা, তোমার কোমরে বাঁধ; সততা সাধুতা এবং সহনশীলতায় সৌভাগ্য সোপানে আরোহন কর; তোমার দক্ষিণ হস্ত তোমাকে অসমসাহসিক কীর্তি মহিমা প্রদর্শন করিবে; তোমার তীর খুবই তীক্ষ্ণ, রাজাবাদশাদের বুকে তাহা বিদ্ধ হইবে, উম্মত সমূহ তোমার অনুগত হইবে; তোমার সিংহাসন অনন্ত কাল থাকিবে; তোমার রাজদণ্ড সত্যের দণ্ড; তুমি সত্য-প্রিয়, পাপ-বিদ্বেষী এবং এই জন্যই তোমার খোদা তোমাকে সন্তোষের তৈল দ্বারা তোমার সমশ্রেণী অপেক্ষা মদিত করিয়াছেন। তোমার প্রতিটি পোষাকে অগুরু খুশবো ছড়াইতেছে। হস্তিদন্ত নির্মিত প্রসাদ সমূহের মনোহর বাশী তোমাকে খুশী করিয়াছে, রাজকুমারীগণ তোমার পুরমহিষী; তোমার দক্ষিণ হাত স্বর্ণ মণ্ডিত রহিয়াছে ; হে দুহিতা শোন! মন প্রাণে কান দিয়া শোন! নিজের জাতি এবং নিজের বাপের বাড়ী ভুলিয়া যাও; বাদশাহ তোমার সৌন্দর্যপিপাসু হইবে; উপঢৌকন নিয়া আসিবে; জাতির বিত্তবানেরা তোমার খোশামোদ করিবে; রাজকুমারী রাজমহলে সৌন্দর্য ছড়াইতেছে; তাহার পরিধেয় স্বর্ণ খচিত; সে নকশা আঁকা লেবাস পরিহিত অবস্থায় রাজদরবারে পরিচিত হইবে, তাহার কুমারী সখীদিগকে যাহারা তাহার পিছনে পিছনে চলে, তোমার সম্মুখে উপস্থিত করা হইবে। তাহারা তাহাকে সানন্দে নিয়া আসিবে। রাজমহলে প্রবেশ করিবে, তোমার সন্তান তাহাদের পিতা পিতামহদের স্থলবর্তী হইবে; যাহাদেরকে তুমি সমগ্র বিশ্বে নেতা নিযুক্ত করিবে। আমি বংশানুক্রমে তোমার স্মৃতিকে প্রতিষ্ঠিত রাখিব, ফলে উম্মত চিরকাল তোমার অনুগৃহীত থাকিবে। (আয়াত নং ১-১৭)
সমস্ত আহলে কিতাবই এ বিষয়ে একমত যে হযরত দাউদ (আঃ) এমন একজন নবীর আগমন বার্তা ঘোষণা করিয়াছেন, যিনি তাহার পরে আবিভূত হইবেন। এবং ইহুদিদের মতে উল্লিখিত গুণসমূহে গুণী কোন পয়গম্বর আজ পর্যন্ত আগমন করেন নাই। এযাবত তাহার আবির্ভাব ঘটেনাই। প্রোটেস্ট্যান্ট খৃষ্টানগণ বলেন—হযরত ঈসা (আঃ) এই পয়গম্বর; আর অতীত বর্তমান সমগ্র মুসলমানের দাবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই এই প্রতিশ্রুত নবী, তিনি ব্যতীত কেহ এই পয়গম্বর হইতে পারেন না। কেননা যবুরে বর্ণিত উল্লিখিত গুণরাজী হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত অন্য কোন পয়গম্বরেই পাওয়া যায়না।
আমাদের ধারনা মতে যবুরে বর্ণিত গুণ এবং নিদর্শনগুলি এই
(১) তিনি অত্যধিক সুন্দর হইবেন।
২) সমগ্র মানবগুষ্ঠি হইতে শ্রেষ্ঠ হইবেন;
(৩) তাহার ওষ্টযুগল হইতে ন্যামত প্রবাহিত হইবে ।
(৪) তিনি বকত সম্পন্ন হইবেন।
(৫) তিনি তরবারী ধারণ করিবেন,
(৬) তিনি ক্ষমতাবান হইবেন।
(৭) তিনি সত্য “সদাকত” গম্ভীর, সংযত প্রকৃতি এবং সত্যের পতাকাধারী হইবেন।
(৮) তাহার হাতে বিস্ময়করভাবে হিদায়ত হইবে।
(৯) তাহার তীর তীধা হইবে।
(১০) জাতি-সমূহ তাহার অধীনস্থ হইবে।
(১১) তিনি পুণ্য-প্রিয় হইবেন, এবং পাপকে ঘৃণা করিবেন।
(১২) রাজকুমারী তাহার সেবিকা হইবে।
(১৩) উপহার উপঢৌকন তাহার সমীপে নিবেদিত হইবে।
(১৪) জাতির বিত্তবানেরা তাহার অনুগত হইবে।
(১৫) তাহার বংশধর তাহাদের বড়দের স্থলে পৃথিবীতে নেতৃত্ব করিবে।
(১৬) বংশ পরম্পরাগতভাবে তাহার সুনাম সুপ্রসিদ্ধ থাকিবে।
(১৭) জাতি-সমূহ চিরদিন তাহার তারীফ এবং উচ্চ প্রশংসা করিবে।
বলাবাহুল্য উল্লিখিত গুণরাজী হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের মধ্যেই পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান রহিয়াছে।
(১) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন – হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের অপেক্ষা বেশী সুন্দর আমি আর কাহাকেও দেখি নাই; মনে হইত যে তাহার চেহারা মুবারক হইতে যেন সূর্য উদয় হইতেছে। তাহার মৃদু হাসিতে ঘরের দেয়ালও যেন আলোকিত হইয়া যাইত। (তিরমিযী)
হযরত উম্মেমাবুদ (রাঃ) হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের কিছু গুণ বর্ণনা করিতে গিয়া বলেন—দূর হইতে তাহাকে সকল মানুষ অপেক্ষা জমীল মহিমময়, এবং নিকট হইতে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর দেখাইত।
(২) হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন –কিয়ামতের দিন আমি সমগ্র আদম সন্তানদের শিরোমণি হইব; ইহাতে কিন্তু আমি বড়াই করিনা। অর্থাৎ কথাটি আমি বড়াই কিংবা আত্মগরিমা করিয়া বলিতেছিনা বরং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহরূপেই প্রকাশ করিতেছি।
(৩) তিন নম্বর সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিনা; কেননা তাহার প্রাঞ্জল রত্নখচিত ভাষা সর্বজন বিদিত, সর্বজন স্বীকৃত। শত্রু-মিত্র সকলেই এবিষয়ে তাহার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে একমত। ভাষার প্রাঞ্জলতা, সাবলীলতা, শ্রুতিমধুর বালাগত বা অলংকার মহিমায় তিনি অদ্বিতীয় অসাধারণ সন্দেহ নাই।
(৪) আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করিয়াছেন—আল্লাহ এবং আল্লাহর ফিরিশতাগণ প্রিয় নবীর প্রতি রহমত বর্ষিত করেন। কোটি কোটি লোক পাঁচ ওক্তের নামাযে তাহার প্রতি দরুদ প্রেরণ করিতেছে।
(৫) হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন—আল্লাহ আমাকে তরবারী দিয়া প্রেরণ করিয়াছেন। (কনজুল আম্মাল)
(৬) বাহুবল দৈহিক শক্তিতেও তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন। প্রসিদ্ধ ঘটনা—“রুকানা” নামে একজন পাহলোয়ান আরব জগতে প্রসিদ্ধ ছিল, বরং সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে একদা এই আরব-রুস্তম একান্তে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সংগে সাক্ষাৎ করে। হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম তাহাকে বলেন-তুমি কি আল্লাহকে ভয় করনা, এবং আমার আমন্ত্রণ কি গ্রহণ করিবে না? রুকানা উত্তরে বলেন—আপনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হইতে পারিলে অবশ্যই আপনাকে মানিব; হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন—আমি যদি তোমাকে ধরাশায়ী করিতে পারি, তবে কি তুমি আমাকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিবে? রুকানা বলেন অবশ্যই; হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম তাহাকে ধরিয়া ধরাশায়ী করিয়া দেন, সে একেবারে অসহায় হইয়া পড়ে; সে তখন বলে মুহাম্মাদ ! আবার একবার ফেলিয়া দিন ত দেখি; তিনি দ্বিতীয়বারও তাহাকে মাটিতে ফেলিয়া দেন। তখন সে বলে-বড়ই বিস্ময়ের বিষয় দেখিতেছি। হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন- তুমি যদি চাও তবে এতদপেক্ষাও বিস্ময়কর বিষয় তোমাকে দেখাইতে পারি; তবে সর্ত এই যে—তুমি আল্লাহর ভয়ে আমাকে অনুসরণ করিবে। সে জিজ্ঞাসা করে– তাহা কি? হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন—আমি তোমার সম্মুখে ঐ গাছটিকে ডাকিয়া আনিতেছি। সত্যসত্যই তিনি অদূরে অবস্থিত ঐ বৃক্ষটিকে ডাকিলেন; বৃক্ষটি তাহার ডাকে তাহার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইয়া থাকে; তিনি আবার তাহাকে বলেন—-ফিরিয়া চলিয়া যা, সে নিজের জায়গায় ফিরিয়া যায়।
এ রুকানা এই মুজিয়া দেখিবার পর নিজ সম্প্রদায়ের নিকট ফিরিয়া যায় এবং সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিয়া বলে—বনু আব্দে মানাফ। মুহাম্মাদ এর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) মত যাদুকর আজ পর্যন্ত আমি দেখি নাই।
তাঁহার বীরত্ব এবং অসম সাহস সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর এবং হযরত আলী (রাঃ) র নিম্নোক্ত বর্ণনাই যথেষ্ট বলিয়া মনে করি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন—হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম অপেক্ষা বড় বাহাদূর এবং বীর পুরুষ আমি কাহাকেও দেখি নাই, তদপেক্ষা বেশী দাতা ও কাহাকে দেখি নাই।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন—তুমুল সংঘর্ষের সময় যখন যুদ্ধের আগুন দাউ দাউ করিত, তখন আমরা হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের আশ্রয়েই আমাদের নিরাপত্তা খুঁজিতাম, এরূপ সংগীন মূহুর্তে তিনিই শত্রুদের সর্বাপেক্ষা নিকট সম্মুখীন হইতেন। আমি আজও সেই দৃশ্য ভুলি নাই- বদর যুদ্ধে আমরা যখন তাহার আশ্রয় নেই, এবং তিনি আমাদের সকলের অপেক্ষা বেশী শত্রুপক্ষের নিকটতর সম্মুখীন ছিলেন; সেদিন তিনিই সকলের অপেক্ষা বেশী যুদ্ধ করিয়াছেন। (আল-খাসাইস)
(৭) সততা এবং বিশ্বস্ততালি
নযর ইবনে হারিস কুরাইশদের বলিত—মুহাম্মাদ বাল্যকাল হইতেই তোমাদের মধ্যে প্রতিপালিত, এই সুদীর্ঘকাল তিনি তোমাদের কাছে জনপ্রিয়, সত্যবাদী বিশ্বস্ত, কথার পাকা, সাহায্য সহানুভূতিতে শীর্ষস্থানীয় বলিয়া পরিচিত, প্রশংসিত; আজ যখন তাহার চুলে পাক ধরিয়াছে, এবং তিনি তোমাদের জন্য যাহা কিছু নিয়া আসিয়াছেন, তখন তোমরা বলিতেছ—তিনি যাদুকর; “খোদার শপথ, তিনি যাদুকর মোটেই নহেন।” (আল হাসাইস)
রোমান সম্রাট হিরাক্লিস যখন কুরাইশ সর্দার আবু সুফয়ান-কে জিজ্ঞাসা করে যে—মুহাম্মাদ ের নবুওতের দাবী করিবার পূর্বে কখনও তাহাকে মিথ্যা বলিতে দেখিয়াছ? তিনি উত্তরে বলেন—“না।” (বোখারী)
(8) তাহার হাতে বিস্ময়কর ঘটনা ও হিদায়ত
বদর এবং হুনাইন যুদ্ধে এক মুষ্টি মাটি তিনি কাফিরদের মুখের দিকে ছুড়িয়া মারেন, দেখা যায় একটি কাফির ও এই মাটি থেকে (রেহাই পায় নাই, বরং সকলের চোখেই তাহা পতিত হয় এবং তাহারা পরাজিত হইয়া পলায়ন করে। মুসলমানেরা তাহাদের হত্যা এবং নিহত করেন। ইহাতে অন্ধচিত্তদের চোখ খুলে, চেতনা হয় এবং তাহারা হিদায়ত লাভ করে।
(৯) তীরন্দাজী –
হযরত ইসমায়ীল-বংশ দক্ষ তীরন্দাজরূপে সর্বজন বিদিত ও খ্যাত; স্বয়ং হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ও তীরন্দাজী খুব পছন্দ করিতেন। তিনি বলিয়াছেন –অচিরেই তোমরা রোমানদের উপর বিজয় লাভ করিবে, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করিবেন, অতএব তোমরা তীরন্দাযীতে কাহিলী করিবেনা।
অন্যত্র বলিয়াছেন—বনী-ইসমায়ীল ! তীরন্দাযী করিতে থাক, কেননা তোমাদের পিতাও তীরন্দাযী করিতেন।
(১০) জাতি সমূহের আনুগত্য
ইতিহাস স্বয়ং ইহার জ্বলন্ত সাক্ষী; হুযুর হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের জীবদ্দশায়ই দেশে বিদেশে দলে দলে লোক এবং বিভিন্ন জাতি ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করিয়াছে, এবং দুই বৎসর মধ্যেই তাহাদের সংখ্যা হাজার হাজার হইতে লক্ষ লক্ষে পৌছিয়াছে।
(১১) তিনি পুণ্য-প্রিয়
ইহা এমনই জ্বলজ্যান্ত এবং দিবালোকের মত সুস্পষ্ট সত্য যে, এবিষয়ে কোন তথ্য পরিবেশনের প্রয়োজনই নাই।
(১২) রাজকুমারীদের
বহুসংখ্যক রাজকুমারী এবং সর্দার দুহিতারা প্রথম যুগের মুসলমানদের অন্দরমহলে স্থান পাইয়াছেন, এ সত্য ও ইতিহাস-স্বীকৃত, এবং সর্বজন বিদিত। ইরাণ সম্রাট ইজদজুর্দ এর রাজকুমারী হযরত হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর পুর মহিষী এবং প্রিয় পত্নী ছিলেন।
(১৩ এবং ১৪) উপহার প্রাপ্তি, বিত্তবানদের আনুগত্য
ইহাও সর্বজনবিদিত সত্য; আবেসিনিয়ার রাজা নাজ্জাশী, বারাইনের রাজা মুনযির, আম্মানের অধিপতি তাহার অনুগত এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন, রোমান সম্রাট হিরাক্লিস তাঁহার খিদমতে উপহার প্রেরণ করেন; কিবতি রাজাও তিনটি দাসী, তিনটি দাস, একটি সুদর্শন খচ্চর এবং বহুমূল্য বস্ত্রাদি উপহার স্বরূপ প্রেরণ করেন।
(১৫) তাঁহার বংশধরদের আধিপত্য
ইতিহাস সাক্ষী, তাহারই বংশধর হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহুর বংশধরদের অনেকেই খলীফা এবং হিজায, ইমন, মিশর, আফ্রিকা, সিরিয়া, পারস্য, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে রাজা বাদশাহ হইয়াছেন; শেষ যুগে সর্বশেষ খলীফা ইমাম মেহেদী ও তাহারই বংশধর হইবেন। তাহারই যামানায় আল্লাহর দ্বীন ইসলাম ধর্ম অন্যান্য সকল দ্বীন ধর্মের উপর পূর্ণমাত্রায় প্রভাব বিস্তার করিবে।
(১৬ এবং ১৭) তাহার প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা
এই প্রসংগে এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে—আজ প্রায় দেড় হাযার বৎসর ধরে বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন জাতি এবং সম্প্রদায়ের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি লোক দৈনিক পাঁচবার আযান মধ্যে أشهد أن لا اله الا الله و أشهد أن محمدا رسول الله বলিতেছে, এবং কোটি কোটি বরং অগণিত নামাযী নামায মধ্যে তাহার প্রতি দরূদ প্রেরণ করিতেছে; এতদ্ব্যতীত ও যে কত কত মুসলমান রোজ হাজারর হাজারর বার তাহার প্রতি দরুদ পড়ে, এবং আযানের পর তাহার জন্য দুআ করে তাহার সীমা সংখ্যা বর্ণনা সাধ্যের বাইরে। লক্ষ লক্ষ হাফিয তাহার ফর্মান মুখস্থ করিতেছে, মুফসির, মুহাদ্দিসগণ কুরআন হদীসের তফসীর এবং বর্ণনা, ওয়ায় মহফিলে তাহার ওয়াযের প্রচার করিতেছেন, বড় বড় আলিম উলামা এবং রাজা সম্রাটগণ তাঁহার “রওযা মুবারক” বা সমাধি-পাশে হাযির হইতেছেন, “রওযামুবারকের ধূলা-বালি মুখে মাখিয়া ধন্য হইতেছেন, তাঁহার সুপারিশ শাফাআত কামনা করিতেছেন।
পক্ষান্তরে প্রোটেস্ট্যান্ট খৃষ্টানগণ যতই দাবী করুন না কেন, হযরত ঈসা (আঃ) এর বেলায় এই সমস্ত প্রমাণ মোটেই টিকেনা, সাব্যস্ত হয়না। কেননা আশয়ার কিতাবে বর্ণিত ৫৩ নং অধ্যায়ের ঘোষণা ও হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কেই বলিয়া তাহাদের দাবী; এবং তাহাতে বর্ণিত আছে,
তাহার কোন আকার আকৃতি নাই, না আছে কোন রূপ সৌন্দর্য; লক্ষ্য করিলে কোন রূপ সৌন্দৰ্য্যই নজরে পড়েনা, তন্মধ্যে আকর্ষণীয় কিছুই নাই, সমাজে সে অধম, অবহেলিত, বিমর্ষচিত্ত; চিন্তান্বিত, লোক যেন তাহা হইতে আত্মগোপন করিয়া থাকে, তাহার অপমান করা হইয়াছে, আমি তাহার কোন কদরই করি নাই।
লক্ষ্য করিয়া দেখুন ইহাতে বর্ণিত গুণ সমূহ যবুরে বর্ণিত গুণ সমূহের কিরূপ স্পষ্ট বিপরীত; এমতাবস্থায় ঈসা (আঃ) কে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও যেমন বলা যায়না, তেমনি তিনি তরবারী ধারণ করিতেন একথাও কেহ বলিতে পারেনা। ধনপতি এবং বিত্তবানেরা তাহাকে মানেও নাই; এবং তাহার সমীপে কেহ হাদিয়া উপহারও পেশ করে নাই।
বরং ইহার বিপরীত খৃষ্টানদের আকীদা মতে লোকে হযরত ঈসার (আঃ) অপমান করিয়াছে; গ্রেপ্তার করিয়াছে, উপহাস বিদ্রুপ করিয়াছে, বেত মারিয়াছে, ফঁসীকাষ্ঠে ঝুলাইয়াছে; তাহার স্ত্রীও ছিলনা সন্তানও ছিলনা, তাহার হারেমে কোন রাজকুমারীও আসে নাই; তাহার বংশধর পূর্ব-পুরুষদের স্থলাভিষিক্ত এবং ক্ষমতার অধিকারীও হয় নাই।
৭। যবুর কিতাবের ১৪৯ অধ্যায়ে আছে
আল্লাহর তারীফ কর; আল্লাহর দরবারে নুতন গীত গাও, পুন্যাত্মাদের মহফিলে তাহার তারীফ প্রশংসা কর; ইস্রায়ীল তাহার স্রষ্টাতেই বিভোর, সাইহোনের বংশধর তাহার বাদশার কারণে খুশী; তাহারা নৃত্য সহকারে তাহার নামের প্রশংসা করিবে; তাহারা দফ সেতার বাজাইয়া তাহার প্রশংসাকীর্তন করেন; কেননা খোদা তাহার নিজের লোকের প্রতি প্রসন্ন; তিনি ধৈর্যশীলদের মুক্তি দানে সৌন্দর্যময় করিবেন, পুন্যাগণ তাহার প্রভাব প্রতিপত্তিতে গর্ববোধ করিবে, তাহারা শয্যা শয়নে আনন্দগীত গাহিবে, তাহাদের হাতেমুখে আল্লাহর “তামজীদ” মহিমা কীর্তন এবং হাতে দুধারী তরবারী থাকিবে, জাতি সমূহের প্রতিশোধ নিবে, উম্মতদিগকে শাস্তি প্রদান করিবে; তাহাদের রাজা এবং নৃপতিদিগকে শিকলবদ্ধ করিবে; তাহাদের দলপতিদের পায়ে লোহার বেড়ি পরাইবে; তাহাদের জন্য নির্ধারিত শাস্তি তাহাদিগকে দিবে; তাহার সকল পুন্যাত্মাগণেরই এই মৰ্যাদা রহিয়াছে। (আয়াত নং-১-৯)
লক্ষ্য করিবার মত যে, যবুরে প্রতিশ্রুত এই পয়গম্বরকে বাদশাহ নামে অভিহিত করা হইয়াছে, তাহার অনুগামীদিগকে মুকস বা পুন্যাত্মা বলা হইয়াছে, তসবীহ তমজীদ বা আল্লাহর মহিমা কীর্তনে গর্ববোধ, মুখে আল্লাহর প্রশংসাকীর্তন, হাতে দুধারী তরবারী, অন্যান্য জাতির প্রতিশোধ গ্রহণ, তাহাদের রাজা-বাদশাহদিগকে লৌহশৃংখলে বন্দী করণ ইত্যাদি এই প্রতিশ্রুত পয়গম্বরের গুণ এবং লক্ষণ নিদর্শন বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে।
ইহাতে বর্ণিত গুণ নিদর্শন হিসাবে একমাত্র হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই যে এই প্রতিশ্রুতি নবী, ভাহাতে সন্দেহ মাত্র থাকেনা।
উদয়ন হযরত সুলাইমান আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত অন্য কোন পয়গম্বরের সম্পর্কে ত এহেন সম্ভাবনার প্রশ্নই উঠেনা, আর একাধিক কারণে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও এই প্রতিশ্রুত নবী হইতে পারেন না; কেননা তাহার রাজত্ব তাহার পিতা, যবুর কিতাব যাহার উপর নাযিল হইয়াছে, খৃষ্টানদের মতে সেই হযরত দাউদ (আঃ) অপেক্ষাও উন্নত এবং প্রশস্থ ছিলনা। অধিকন্তু খৃষ্টানদের বিশ্বাসও আকীদা মতে তিনি শেষ জীবনে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হইয়া গিয়াছিলেন।
এ সময় অনুরূপ ভাবে হযরত ঈসা (আঃ) ও এই প্রতিশ্রুত নবী হইতে পারেন না, কেননা উল্লিখিত গুণ নিদর্শনের সংগে তাহার দূর সম্পর্কও নাই; বরং তিনি নিজেই গ্রেপ্তার হইয়াছেন, খৃষ্টানদের মতে নিহত ও হইয়াছেন, তাহার হাওয়ারী শিষ্যগণ শিকল বদ্ধ ও বন্দী হইয়াছেন; কাফির বাদশাহদের হাতে নিহত হইয়াছেন।
রচনাকালঃ ২৫-৯-১৯৮৮
পরের পর্বগুলি পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বেদে-বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী (১ম পর্ব)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বেদ- বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী (৩য় পর্ব)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বেদে-বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী (৪র্থ পর্ব)