লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ তাহির
হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই যে সর্বশেষ নবী তাহার ধর্মই যে সর্বশেষ ধর্ম; এবং অতঃপর একমাত্র তাহার ধর্ম, অনুসরণেই যে জাতি সমূহের মুক্তি এবং কল্যাণ, পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণ। এবং বেদ বাইবেল প্রভৃতি ধর্ম-গ্রন্থই একথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়াছে, তজ্জন্য নির্দেশ দিয়াছে নিজ নিজ ভক্ত অনুসারীদিগকে; বর্তমান বইখানির আলোচ্য বিষয় ইহাই;
ধর্ম-বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু, এবং সত্যপ্রিয় পাঠক পাঠিকাদের সম্মুখে “বেদে বাইবেলে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম” বইখানি পেশ করিলাম; বইখানি ছোট কলেবরের হইলেও তাহাতে বর্ণিত বিষয় বস্তুর গুরুত্ব অনেক; আমার সীমিত যোগ্যতা এবং অন্তহীন অযোগ্যতা সত্বেও এই দুঃসাহস;
অন্যান্য প্রামান্য গ্রন্থ ছাড়াও; S. R. Bidhyarthi লিখিত “মুহাম্মদ ইন হিন্দু, স্ক্রীপচার” এবং খৃষ্টধর্মে সুপণ্ডিত পারদর্শী হিসাবে প্রবাদ পুরুষ মওলানা রহমাতুল্লাহ (কিরানা) লিখিত বিশ্ব প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “ইযহারুল হক” আমার এই নিবন্ধের প্রধান সহায়ক;
আমার আশা বইখানি সত্যপ্রিয় পাঠকদের জ্ঞান পিপাসা (পরিতৃপ্তিতে সাহায্য করিবে; মূদ্রণ সংক্রান্ত ভুল এবং আমার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটী-বিচ্যুতির জন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
বেদে বাইবেলে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম
ধর্ম পিপাসু সত্যানুসন্ধানী ও সুধীজনের পক্ষে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম সংক্রান্ত বেদ বাইবেলে বর্ণিত ভবিষ্যৎবাণী বিশেষ ভাবে প্রনিধান যোগ্য; এস্থলে তন্মধ্য হইতে কিছুমাত্র উদ্ধৃতি পেশ করিতেছি।
বেদ–
“মমদৌবর্তিতা দেবা দকারান্তে প্রকীর্তিতা
বৃষণাং ভক্ষয়েৎ সদা বেদা শাস্ত্রেচ স্মৃত।”
যে দেবের নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’ এবং শেষ অক্ষর ‘দ’ যিনি সতত বৃষ মাংস ভক্ষণ করেন, তিনিই বেদানুযায়ী ঋষি, তাঁহারই পথ অনুসরণ করিতে হইবে। (শ্যামবেদ)
“আল্লা রসুল মহম্মদরকং বরণ্য”
“আল্লাহর রসুল মুহাম্মদ পরম বরণীয়” (যজুর্বেদ)
“ইদং জনা উপশ্রুতে নরাশংস ভবিষ্যতে
যষ্ঠি সহস্ৰানবাতিচং কৌরম আরু শমেযু দঘহে।
হে লোক সকল! মনোযোগ সহিত শ্রবণ কর, প্রশংসিত (মাহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) লোকদিগের মধ্যে উথিত হইবে, আমরা পলাতককে ৬০০৯০ (তদানীন্তন আরববাসীর সংখ্যা) জন শত্রুর মধ্যে পাইলাম। (অথর্ব বেদ)।
পুরাণ-
এতস্মিনন্তরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমম্বিতঃ
মহামদ ইতি খ্যাতঃ শিষ্য শাখা সমম্বিত
নৃপশ্চৈব মহাদেবৎ মরুস্থল নিবাসিনম
গঙ্গা জলৈশ্চ সংস্নাপ্য পঞ্চগব্য সমম্বিতৈঃ
চন্দনাদিভিরভার্চ তুষ্টাব মনসা হরম
নমস্তে গিরিজানাথ মরুস্থল নিবাসনে
ত্রিপুরাসুর নাশায় বহু মায়া প্রবর্তিনে
ম্লেচ্ছ গুপ্তায় শুদ্ধায় সচ্চিদানন্দ রূপিণে
ত্বং মাং হি কিঙ্করং বিদ্ধি শরনার্থমুপাগতম।
(ভবিষ্য পুরাণ)
“ঠিক সেই সময় আরব দেশের মরুভূমি অঞ্চলে মুহাম্মদ নামধারী এক ব্যক্তি ম্লেচ্ছ (বিধর্মী) পুরোহিত পরিবেষ্টনের মধ্যে শিষ্য ও সহচর সহ আবির্ভূত হইবেন। অতঃপর তিনি (ভূজরাজ) হিন্দুধর্মের রীতি অনুসারে গঙ্গাজল পঞ্চগব্য ও চন্দনাদি অর্ঘ্য বস্তু দ্বারা তাহাকে পরিতুষ্ট করিয়া বলিবেন – হে মরুভূমির প্রভু মহাদেব! (দেবতা শ্রেষ্ঠ) হে মরুভূমিবাসী গিরিজানাথ! তোমাকে নমস্কার। তুমি জগতের সমস্ত পাপ মোচন করিবার বহু উপায় জান, তুমি প্রেমের ধৰ্ম্মপ্রবর্তক। তুমি ম্লেচ্ছগণ (অধৰ্ম্মচারী) কর্তৃক গুপ্ত ধনবৎ সযত্নে রক্ষিত। আমি তোমার শরণাগত। তোমাকে নমস্কার।” (ভবিষ্য পুরাণ)
মহাভারত-
“বৈদাবিভিন্নাঃ স্মৃতায়োবিভিন্ন
নসৌ মুনির্যস্ত মতং ন ভিন্নম
ধর্মস্যত্বত্বং নিহিতং গুহায়াং
মহাজনো যেন গতঃ স পন্থা”
অর্থাৎ
“বেদ আর স্মৃতি শাস্ত্র একমত নয়
স্বেচ্ছামত নানা মুনি নানা কথা কয়
কে জানে নিগূঢ় ধর্মতত্ব নিরুপণ
সেই পথ গ্রাহ্য যাহে যায় মহাজন
(কাশীরামের মহাভারত ৫১৭ পৃঃ কালীদাসী ৫০০ পৃ:)
“যুধিষ্ঠিরের বর্ণনায় স্পষ্টই বিঘোষিত রহিয়াছে যে, বেদ আর স্মৃতিশাস্ত্র একমত নয়। বেদ ও স্মৃতিশাস্ত্র যে কোন দিন একমত ছিল না এক্ষেত্রে যুধিষ্ঠিরের বক্তব্য তাহা নয়। বরং তিনি বলিতে চাহিয়াছেন যে – বেদ এবং স্মৃতিশাস্ত্র কোন কালে একমত হইয়া থাকিলেও বর্তমান বেদ এবং স্মৃতিশাস্ত্র একমত নয়। কেননা স্বেচ্ছামত নানা মুনি নানা কথা কয়। কলিযুগের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ কর্তৃক তাঁহাদের প্রয়োজন মত উহাতে বহু বাক্য প্রক্ষিপ্ত এবং উহা হইতে বিয়োজিত হওয়ায় উহার বহুলাংশ পরিবর্তিত হইয়াছে। (সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রণীত “হিন্দুর নব জাগরণ” দ্রষ্টব্য) সুতরাং ঐ সকল পরিবর্তিত শাস্ত্রের বিধান কখনও নিভুল হইতে পারে না।” অতএব এমতাবস্থায় একমাত্র মহাজন অবলম্বিত পন্থাই একমাত্র পথ।
কে তিনি এই মহাজন, ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির যাহার অনুসরণেই একমাত্র সত্য-সিদ্ধি বলিয়া নির্ভর করিতেছেন? ভবিষ্য পুরণের ভোজরাজের ভক্তি নিবেদন, এবং তাহাতে তাহার নাম, জন্মভূমি, অনুরূপভাবে শ্যামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ব বেদের স্পষ্ট বর্ণনার পর তিনি যে একমাত্র ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত আর কেহ নহেন, এ সত্য দিবালোকের মত স্পষ্ট হইয়া যায়। এমনকি বিষ্ণু পুরাণে তাঁহার পিতামাতার নাম পর্যন্ত বিষ্মেযু বিষ্ণুদাস বা আবদুল্লাহ, সুমত্যা বা আমেনা (নিরাপদস্থল) বলিয়া বর্ণিত রহিয়াছে।
(ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে যে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে তা জানতে ড. এম. এ. শ্রীবাস্তব এর লেখা “ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী” পড়ুন।
বাইবেলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
বাইবেল আলোচনা করিলে দেখা যায় হযরত আশয়া, হযরত আরমিয়া, হযরত দানিয়াল, হযরত হিযকীল, হযরত ঈসা (আঃ) প্রমুখ অধিকাংশ পয়গম্বরগণই অনাগত অনেক ঘটনাবলী সম্বন্ধে পূর্বাহ্ন ঘোষণা ও আগাম খবর দিয়াছেন; এমতাবস্থায় তাহারা যে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের আবির্ভাব ও নবুওৎ সম্পর্কে নীরব থাকিবেন, একথা স্বভাবতই বিশ্বাস করা যায়না। যে ঘটনা সারা বিশ্বের বুকে অবিস্মরণীয় এবং অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করিয়াছে, সমগ্র ধর্মজগতকে দারূণ ভাবে কঁপাইয়া তুলিয়াছে, তাহারা তাহার আগাম খবর, ইংগিত আভাস মাত্র দিবেন না, এমন হইতে পারেনা! হাঁ তবে একথা সত্য যে, সব আগাম খবর সব সময় স্পষ্ট ভাবে দেওয়া হয়না, সকলের পক্ষে সহজবোধ্য করিয়াও বলা হয়না; বরং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ এবং তাহাতে বর্ণিত বিভিন্ন বিষয় ও ঘটনার আগাম খবর পৰ্যালোচনা করিলে দেখা যায়, কখনও শুধু তাহার আভাস ইংগিতই দেওয়া হইয়াছে, কখনও অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট ভাবে বলা হইয়াছে যে, তাহা শুধুমাত্র বিশিষ্ট মহাজনেরাই বুঝিতে পারেন, কিন্তু সাধারণের নাগালের বাহিরে তাহা; এমনকি হযরত ইয়াইয়া, হযরত ঈসা, হযরত ইলয়া আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বর্ণিত পূর্বাহ্ন ঘোষণা ও আগাম খবর ও অস্পষ্ট রহিয়াছে, ফলে তাহাদের পরিচয় লাভে অনেক ব্যাঘাত ঘটিয়াছে, বেগ পাইতে হইয়াছে। বাইবেলের এতদসংক্রান্ত বর্ণনাই ইহার অকাট্য প্রমাণ।
বিশ্ববিশ্রুত ও জগৎ বরেণ্য মনীষী আল্লামা আবদুল হেকাম শিয়ালকোটী প্রেসিদ্ধ তফসীর বয়যাভী শরীফের টিকায় সত্যই লিখিয়াছেন যে, প্রত্যেক পয়গম্বরই আভাস ইংগিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে এমন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন যে, একমাত্র বিশিষ্ট আলিম পণ্ডিতগণই যাহা বুঝিতে পারেন; অবশ্যই ইহার পিছনে কোন নিগূঢ় রহস্য রহিয়াছে বুঝিতে হইবে। অলিম মহলের মত — আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ কোন আসমানী কিতাবই এমন নাই, যাহাতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের উল্লেখ না রহিয়াছে। তবে তাহা ইংগিত আভাস এবং সংকেত সহকারে। যদি তাহা সর্বসাধারণের পক্ষে বোধগম্য ও সহজবোধ্য হইত, তবে তাহা গোপন করার অপরাধে তাহাদের উলামাদিগকে ভৎসনা তিরস্কার ও ধিক্কার লাভ করিতে হইতনা। অধিকন্তু এক ভাবা হইতে অন্য ভাষায় ইহার ভাষান্তরণ ও এই দূর্বোধ্যতার, অস্পষ্টতার অন্যতম কারণ। হিব্রু থেকে গ্রীক, ইব্রাণী থেকে সুরয়ানী, অতঃপর সুরয়ানী হইতে আরবী ভাষায় অনুবাদ ও এই জটিলতা বাড়াইয়া দিয়াছে। আমি তওরাত এবং ইঞ্জিলের যে বাক্য এবং সারাসারি বর্ণনা করিয়াছি, একটুখানি গভীর মনোযোগ সহকারে বিচার করিলেই বুঝতে বাকী থাকিবেনা যে, তাহা হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের সত্যতা এবং তাহার নবুওতের প্রতিই আলোকপাত করিতেছে। অবশ্য যাহারা ইংগিত আভাস এবং সংকেত বুঝিতে পারেন, সেই সমস্ত আলিম উলামাই তাহা স্পষ্টভাবে নিঃসন্দেহে বুঝতে পারেন, সর্বসাধারণের পক্ষে তাহা অস্পষ্ট এবং অপ্রকাশ থাকা স্বাভাবিক।
বাইবেল বিশেষ করে ইউহান্না ইঞ্জিলের প্রথম, এবং সপ্তম অধ্যায়ের বিভিন্ন আয়াত পাঠে দেখা যায় যে—খৃষ্টান ইহুদী আহলে কিতাবগণ হযরত মসীহ, এবং হযরত ইয়া (আঃ) ছাড়াও আরও একজন নবীর অপেক্ষায় ছিল; এবং হযরত ঈসা (আঃ) ই শেষ নবী ছিলেন না। তাই তাহারা হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত ইয়া (আঃ) ব্যতীত একজন তৃতীয় এবং শেষ নবীর অপেক্ষায় ছিল; ইউহান্না ইঞ্জিলের প্রথম অধ্যায়ের উনিশ নম্বর আয়াতে আছে— ইহুদীরা জেরুজালিম থেকে কাহিন এবং লাভীকে হযরত ইয়াইয়ার কাছে এই জানিতে প্রেরণ করে যে–তিনি কে? তুমি কি মসীহ ? তিনি বলেন—আমি ত মসীহ নই, তাহারা জিজ্ঞাসা করে—তবে কি তুমি ইয়াহ? তিনি বলেন-না আমি ইয়াহও নই। তাহারা জিঞ্জাসা করে যে—তবে কি তুমি সেই নবী? তিনি বলেন, আমি সেই নবীও নই। ইহাতে স্পষ্ট প্রমাণ পায় যে, ইহুদিরা হযরত ইলয়াহ, হযরত ঈসা (আঃ) ব্যতীত ও অন্য একজন তৃতীয় নবী আসিবেন, বলিয়া বিশ্বাস করিত, তাহার অপেক্ষা করিত; এবং হযরত ইয়াইয়া ও হযরত ঈসা (আঃ) র সময়কাল পর্যন্ত তিনি যে আসেন নাই, একথা অকাট্য সত্য। অনুরূপ ভাবেই ইউহান্না ইঞ্জিলের সপ্তম অধ্যায়ের চল্লিশতম আয়াতে প্রকাশ – হযরত ঈসা (আঃ) এর কথা শুনিয়া শ্রোতৃ-সাধারণের মধ্য হইতে কেহ কেহ বলে—ইনিই সেই নবী সন্দেহ নাই; অন্যরা বলেন, ইনি সেই নবী নন; ইনি ত মসীহ; ইহাতেও প্রমাণ পায় যে একজন নবীর আগমণ সম্পর্কে তাহারা এমনই সুনিশ্চিত ছিল, তাঁহার আবির্ভাব খবর ভাহাদের মনে মস্তিষ্কে এতই স্পষ্ট এবং সন্দেহাতীত ছিল যে, তাহারা প্রতি ইংগিত মাত্রই যথেষ্ট মনে করিত, এবং তিনি যে হযরত মসীহ নন বরং হযরত ঈসা (আঃ) ব্যতীত অন্যকোন নবী, এ বিষয়েও তাহাদের সন্দেহ মাত্র ছিলনা।
অতএব এই দাবীই করা চলেনা যে—হযরত ঈসা (আঃ) ই শেষ নবী; খাতামুন্নবীইয়ান; এবং তাহার পরে কোন নবী আসিবেন না; অধিকন্তু, অন্যান্য খৃষ্টানগণ ত হযরত মসীহ ( আঃ) এর পরও তাহার হাওয়ারী এবং পূলুসকেও নবী বলিয়া দাবী করেন। (আমাল কিতাব ১১ অধ্যায় ২৭ আয়াত দ্রষ্টব্য)।
বাইবেল পড়িয়া দেখিলে দেখা যায় যে–হযরত ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব সম্পর্কে যেমন তাহার পূর্ববর্তী নবীগণ আগাম খবর দিয়াছেন, তেমনি শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের আসন্ন আবির্ভাব এবং নবুওত সম্পর্কেও পূর্বাহ্নেই ঘোষণা করিয়া গিয়াছেন, এবং বলাইবাহুল্য সেই সমস্ত ঘোষণা ও ভবিষ্যৎবাণীকে খৃষ্টান ইহুদীগণ চাপা দিবার, বিকৃত করিবার, সকল অপচেষ্টা সত্ত্বেও আজও তাহা ন্যায়দর্শী অভিজ্ঞ নিরপেক্ষ মহলের কাছে এমন ভাবে সুস্পষ্ট প্রতিভাত রহিয়াছে যে-ন্যায় এবং সত্যের খাতিরেই তাহা স্বীকার করিতে হইতেছে। এমন কি দেখা যায় যে—হযরত ঈসা (আ:) র সম্পর্কে যে সব ভবিষ্যৎবাণী রহিয়াছে, তাহার তুলনায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম সম্পর্কিত আগাম খবর ও ঘোষণা অধিকতর সুস্পষ্ট এবং পরিষ্কার। এস্থলে আমরা প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের নির্ভরযোগ্য কিতাব হইতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের আবির্ভাব এবং নবুওত সংক্রান্ত মাত্র কতিপয় ঘোষণা ও আগাম খবর উল্লেখ করিতেছি।
১। প্রথম খবর
“বাইবেলের ইস্তেসনা কিতাবের সপ্তদশ আয়াতে আছে খোদাওন্দ আমায় বলেন – তিনি যাহা কিছু বলেন, ঠিকই বলেন; আমি তাহাদের জন্য তাহাদের ভ্রাতৃবৃন্দ হইতে তোমারই মত একজন নবী প্রেরণ করিব; আমার বাণী তাহার মুখে ঢালিব, এবং তাহাকে যে হুকুম দিব, তাহাই তিনি তাহাদিগকে বলিবেন, এবং তিনি আমার নামে যে সমস্ত কথা তাহাদের বলিবেন, যাহারা তাহা শুনিবেনা, আমি তাহাদের হিসাব নিকাশ বুঝিয়া লইব, প্রতিশোধ নিব, কিন্তু আমি যাহা বলি নাই, কোন নবী যদি আমার নামে এমন কথা বলিবার দৌরাত্ম করে, অন্য মাবুদদের নামে কিছু বলিতে যায়, তবে সে অবশ্য অবশ্যই নিহত হইবে। আর তুমি যদি মনে কর যে, আল্লাহ যে কথা বলেন নাই, আমি তাহা কেমন করিয়া বুঝিতে পারিব? তাহা হইলে জানিয়া রাখো যে সেই নবী যদি আল্লাহর নামে কোন কথা বলে এবং তাহার কথামত তাহা সংঘটিত না হয়, না ফলে, তবে বুঝিবে যে সে কথা খোদার বর্ণনা নয়, বরং ঐ নবী তাহা নিজে বলিবার ধৃষ্টতা এবং দোরাত্ম্য করিয়াছে। তুমি কিন্তু তাহাকে ভয় করিবেনা।”
বলাবাহুল্য এই আগাম খবরটি হযরত ইউশা (আঃ) সম্পর্কে বর্ণিত বলিয়া ইহুদি উলামারা বলিতে চান; পক্ষান্তরে প্রোটেস্ট্যান্ট খৃষ্টান পণ্ডিতগণ বলেন—না, বরং ইহা হযরত ঈসা (আঃ) র আবির্ভাব এবং নবুওৎ সম্পর্কেই আগাম ঘোষণা; অথচ প্রকৃতপক্ষে একমাত্র হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ব্যতীত অন্য কাহারও সম্পর্কে যে ইহা নয় বরং একমাত্র হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের আবির্ভাব এবং নবুওৎ সম্পর্কেই যে এই আগাম খবর এবং পূর্বাহ্ন ঘোষণা, একথা সন্দেহাতীত ভাবে সত্য। যদি বলেন—কেন ? তবে শুনুন……
(১) ইতিপূর্বে ইউহান্না ইঞ্জিল হইতে যেমন উদ্ধৃত করিয়াছি যে— হযরত ঈসা আলাইহি ও সাল্লামের সমসাময়িক ইহুদীগণ এই ঘোষণায় বর্ণিত পয়গম্বর হযরত ঈসা (আঃ) নন বরং অন্য কোন পয়গম্বর বলিয়া বিশ্বাস করিত, তাহারা হযরত ঈসার (আঃ) পরিবর্তে এই ঘোষণা অনুসারে অন্য একজন নবীর আবির্ভাবের অপেক্ষায়, ছিল; এমতাবস্থায় হযরত ইউশা হযরত ঈসা (আঃ) কেহই এই ঘোষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হইতে পারেন না; কেননা হযরত ইউশা অনেক পূর্বেই গত হইয়া গিয়াছেন এবং হযরত ঈসা (আঃ) বর্তমান, এতদসত্তেও এই ঘোষণা অনুসারে তৃতীয় নবীর অপেক্ষা, ইউশা-ঈশা (আঃ) সম্পর্কে এই আগাম খবর বলিয়া ইহুদি খৃষ্টানদের বক্তব্য ও ধারণার অসত্যতা প্রমাণ করিতেছে। যদি তাহাদের কথামত হযরত ইউশা কিংবা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কেই এই ঘোষণা হইতে, তবে তৃতীয় নবীর আগমণ আবির্ভাব ও নবুওতের অপেক্ষা তাহারা করিতনা।
(২) এই ঘোষণায় আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ) কে বলিতেছেন যে- “তোমারই মত নবী প্রেরণ করিব।” বলাবাহুল্য হযরত ইউশা, হযরত ঈসা (আঃ) নবী হইলেও উভয়ের কাহাকেও হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মত নবী বলা যায়না, তাহাদের কেহই হযরত মূসা (আঃ) র মত নবী নন; প্রথমতঃ এই জন্যে যে ইহাদের উভয়েই ইস্রায়ীলি বা বনী-ইস্রায়ীল বংশীয়; এবং “বনী ইস্রায়ীলের মধ্যে হযরত মূসার মত কোন নবীই হইতে পারেননা” বলিয়া বাইবেলের “সিফরে ইস্তেসনা” ৩৪ অধ্যায়ের ১০ম আয়াতে বর্ণিত রহিয়াছে।—“বনী ইস্রায়ীলের মধ্যে মূসার মত এমন কোন নবীর আবির্ভাব হয় নাই, আল্লাহ যাহার সংগে সরাসরি কথা বলিয়াছেন।” এতদসত্তেও যদি কেহ দাবী করে যে বনী-ইস্রায়ীলের মধ্যে হযরত মূসার (আঃ) মত অন্য কোন নবী প্রেরিত হইয়াছেন, তবে তদপেক্ষা মিথ্যাবাদী কেহ হইতে পারেননা।
দ্বিতীয়ত :— হযরত মূসা (আঃ) এবং ইউশা (আঃ) র মধ্যে কোন সাদৃশ্য সামঞ্জস্য নাই। হযরত মূসা (আঃ) একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ নবী, তিনি নুতন শরীয়তের প্রচারক, তাহার নিকট আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হইয়াছে, তন্মধ্যে আল্লাহর আদেশ নিষেধ ও নির্দেশাদি বর্ণিত রহিয়াছে; পক্ষান্তরে হযরত ইউশা আঃ) তেমন নন, বরঞ্চ তিনি হযরত মূসা (আঃ) রই অনুগত এবং তাঁহার শরীয়তের প্রচারক মাত্র।
হযরত ঈসা (আঃ) এর অবস্থাও অনুরূপ প্রায়; হযরত মূসা (আঃ) এর সঙ্গে তাহারও পুরাপুরি মিল নাই, সাদৃশ্য নাই; খৃষ্টানদের ধারণামত হযরত ঈসা (আঃ) স্বয়ং খোদা এবং ‘রব, পক্ষান্তরে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র;
(খ) অধিকন্তু খৃষ্টানদের আকীদামতে হযরত ঈসা আঃ) সৃষ্টি বা মখলুকের সুপারিশ করার ফলে অভিশপ্ত এবং মলউন (গিলতিদের নামে মহামান্য পুলুসের পত্রাবলীর তৃতীয় অধ্যায় দ্রষ্টব্য) পক্ষান্তরে হযরত মুসা (আঃ) কোন কারণেই অভিশপ্ত নন, মলউন নন।
(গ) অনুরূপভবেই খৃষ্টানদের আকীদামতে মৃত্যুর পরে হযরত ঈসা (আঃ) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়াছেন, পক্ষান্তরে হযরত মুসা (আঃ) কখনও জাহান্নামে যান নাই।
(ঘ) অনুরূপভাবেই খৃষ্টানদের আকীদামতে হযরত ঈসা (আঃ) শূলীবিদ্ধ হইয়াছেন, তাহার উম্মতের কাফফারা হইয়াছেন, পক্ষান্তরে হযরত মুসা (আঃ) কদাপি ফাঁসীও যান নাই, তাঁহার উম্মতের কাফফারা ও হন নাই।
(ঙ) হযরত মুসা (আঃ) এর শরীয়তে বিবিধ শাস্তি বিধান, পাক পরিচ্ছন্নতা, এবং পানাহার সংক্রান্ত নিষিদ্ধ বিষয়বস্তুর বর্ণনা রহিয়াছে, পক্ষান্তরে হযরত ঈসা (আঃ)-র শরীয়তে এসমস্ত কিছুরই উল্লেখ নাই; বর্তমান ইঞ্জিল সমূহই ইহার জ্বলন্ত সাক্ষী।
(চ) হযরত মুসা (আঃ) তাঁহার সম্প্রদায়ে প্রভাবশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তিনি বিক্রম সহকারে তাঁহার উম্মতের প্রতি আদেশ নিষেধ জারী করিতেন; পক্ষান্তরে হযরত ঈসা (আঃ) এরূপ ব্যক্তিত্ব বিক্রমের অধিকারী ছিলেন না।
(৩) আলোচ্য ঘোষণায় “তাহাদের ভ্রাতৃবৃন্দ হইতে নবী প্রেরণ করিব” বলা হইয়াছে। সন্দেহ নাই তখন বনী ইস্রায়ীলের দ্বাদশটি গোত্র বা সম্প্রদায় ছিল; যদি অনাগত এবং আলোচ্য পয়গম্বরের আবির্ভাব বনী-ইস্রায়ীলের মধ্য হইতে হইত, তবে “তাহাদের ভ্রাতৃকূলে হইতে” না বলিয়া তাহাদের মধ্য হইতে প্রেরণ করিব, বলা হইত; অতএব । আলোচ্য অনাগত এবং আগাম বিঘঘাষিত পয়গম্বর আর যাই হউন বনী-ইস্রায়ীল বা ইস্রায়ীল বংশীয় যে নন এবং হইতে পারেন না, একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট; পক্ষান্তরে হযরত ইসমায়ীল (আঃ) সম্পর্কে হযরত হাজেরা (রাঃ) কে যে কথা দেওয়া হইয়াছিল তাহাতে স্পষ্ট বর্ণিত আছে যে- “এবং তিনি তাহার সকল ভাইদের সম্মুখে অধিষ্টিত থাকিবেন।” অনুরূপভাবেই হযরত ইসমায়ীল সম্পর্কেই বর্ণিত রহিয়াছে “তিনি তাহার সকল ভাইদের শেষে রহিয়াছেন।” (পয়দারীশ ১৬ অধ্যায়, ২৫ অধ্যায়)। জানা কথা, হযরত ইউশা এবং হযরত ঈসা (আঃ) উভয়েই ইস্রায়ীল বংশীয়, অতএব কিছুতেই তাহারা আলোচ্য পয়গম্বর ও আলোচ্য ঘোষণার উদ্দেশ্য হইতে পারেন না।
(৪) আলোচ্য খবর এবং ঘোষণায় “প্রেরণ করিব” বলা হইয়াছে; অথচ হযরত ইউশা তখন হযরত মুসার নিকটে উপস্থিত, বনী-ইস্রায়ীল ভুক্ত এবং তখনও নবী; এমতাবস্থায় “প্রেরণ করিব” কথা এবং আলোচ্য খবরের লক্ষ্য যে তিনি মোটেই নন, একথা বলাই বাহুল্য।
(৫) এই ঘোষণায় বর্ণিত রহিয়াছে—“আমার বণী তাহার মুখে ঢালিব” অন্য কথায় তাহার মুখেই আমি কথা বলিব; ইহাতে স্পষ্ট প্রকাশ যে—ঐ নবীর প্রতি কিতাব নাযিল হইবে, এবং তিনি উম্মী বা নিরক্ষর হইবেন এবং আল্লাহর কালাম রক্ষা করিবেন। বলাবাহুল্য হযরত ইউশার মধ্যে ইহার কিছুই ছিল না। তাহার উপর আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হয় নাই, এবং তিনি নিরক্ষর ও উম্মীও ছিলেন না, বরং লুকার ইঞ্জিলের বর্ণনা অনুসারে তিনি “ইয়াসয়া”র কিতাব পড়িয়াছিলেন এবং উম্মী ছিলেন না। ( “লুক” চতুর্থ অধ্যায়, ১৬/১৭ আয়াত)।
(৬) এই ঘোষণায় একটি বাক্য রহিয়াছে যে -যে কেহ সেই সমস্ত কথা শুনিবে না, যাহা আমার নাম নিয়া উক্ত নবী বলিবেন, আমি তাহার প্রতিশোধ নিব। বলাবাহুল্য ইহাতে উক্ত নবীর অনন্য সাধারণ মহত্ত্বই প্রকাশ পাইতেছে; অতএব এবিষয়েও অন্যান্য পয়গম্বরদের সংগে এই প্রতিশ্রুত নবীর ফারাক পার্থক্য থাকা অনিবার্য। অনুরূপভাবেই আখেরাতের আযাব কিংবা পার্থিব বিপদাপদ এবং এই পরিণতি কোন পয়গম্বর বিশেষের অবাধ্যতা অস্বীকৃতির ফলশ্রুতি নয়, বরং সকল পয়গম্বরেরই অবাধ্যতা অস্বীকৃতির ইহা অনিবাৰ্য পরিণাম।
মতাবস্থায় একমাত্র ধর্মীয় শাস্তব্যবস্থাই ইহার অর্থ হইতে পারে; অর্থাৎ যাহারা এই নবীর হুকুম আহকাম অমান্য করিবে, তাহাদের প্রতিশোধ এবং শাস্তি বিধানের জন্য তিনি আল্লাহর তরফ থেকে আদিষ্ট থাকিবেন। জানাকথা, এরূপ অবস্থায় হযরত ঈসা (আঃ) কিছুতেই এই প্রতিশ্রুত নবী হইতে পারেন না, কেননা তাহার শরীয়তে হুদুদ কিসাস, ফৌজদারী আইন এবং জেহাদ যুদ্ধের কোন বালাই ই নাই।
(৭) বাইবেলের আমাল কিতাবের তৃতীয় অধ্যয়ের উনবিংশ আয়াত ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত আরবী অনুবাদে আছে—অতএব তউবা কর এবং রুজু কর যাহাতে তোমাদের পাপের মার্জনা হইয়া যায়, এবং এমনভাবে আল্লাহর তরফ থেকে সুজলা সুফলা সুদিন আসে। এবং তিনি তোমাদের জন্য সেই মসীহকে প্রেরণ করেন, যে নিজে তোমাদের জন্য নিযুক্ত রহিয়াছেন; অর্থাৎ ইসু বা ঈসা মসীহকে প্রেরণ করেন, আল্লাহ তাআলা তাহার পাক পয়গম্বরদের জবানী বলিয়াছেন এবং যাহা শুরু হইতে হইয়া আসিতেছে যতদিন পর্যন্ত সেই সমস্ত বিষয়বস্তু ঠিক ঠাক বহাল না হইয়াছে ততদিন পর্যন্ত ঈশু মসীহকে আসমানে অবস্থান করিতে হইবে।
ইহাতে হযরত মূসা (আঃ) বনী-ইস্রায়ীলদের বলেন—আল্লাহ তাআলা তোমাদের ভ্রাতৃবৃন্দ হইতে আমারই মত একজন নবী তোমাদের জন্য পয়দা করিবেন; তিনি যাহা বলিবেন তোমরা তাহা অবশ্য অবশ্যই শুনিবে; এবং যে কেহ এই নবীর কথা শুনিবেনা, তাহাকে উম্মতদের মধ্য হইতে একেবারে নাস্তানাবুদ করিয়া দেওয়া হইবে। (১৯-২৩ আয়াত)
১৮১৬, ১৮২৮, ১৮৪১, ১৮৪২ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত ফার্সী তরজমায় আছে—তোমরা তওবা কর; যাহাতে তোমাদের পাপের মার্জনা হয়, এবং আল্লাহর তরফ থেকে তোমাদের জন্য সুজলা সুফলা দিন আসে, এবং ঈসা মসীহকে তোমাদের জন্য আবার প্রেরণ করেন, কেননা তিনি ঈসা মসীহ (আঃ) কে সেইদিন পর্যন্ত আসমানে রক্ষা করিয়া চলিবেন, যে পর্যন্ত না তাহা প্রতিপন্ন হইয়াছে, যাহা আল্লাহ তাআলা পুন্যাত্মা পয়গম্বরদের মুখে প্রাচীনকাল হইতে ঘোষণা করিয়াছেন এবং মূসা যেমন বলিয়াছেন যে তোমাদের খোদা তোমাদের জন্য তোমাদেরই ভ্রাতৃকূল হইতে আমারই মত একজন নবী প্রেরণ করিবেন, তিনি তোমাদিগকে যাহা বলিবেন, তোমাদিগকে অবশ্যই তাহা মানিয়া চলিতে হইবে; এবং যে কেহ তাহা, পয়গম্বরের কথা শুনিবেনা সে জাতিছন্ন হইয়া যাইবে।
লক্ষ্য করিয়া দেখুন—কিরূপ পরিষ্কার ভাবে বলা হইয়াছে যে, এই প্রতিশ্রুত নবী হযরত ঈসা নন, বরং তিনি ঐ প্রতিশ্রুত নবীর আবির্ভাবের অপেক্ষায় আসমানে অবস্থান করিবেন; বিদ্বেষে চশমাখানি চক্ষু হইতে সরাইয়া আমাল কিতাবে বর্ণিত পিটার্সের এই বর্ণনাটি অনুধাবন করিলে যে কোন লোকের পক্ষে বুঝিতে থাকিবেনা যে, হযরত ঈসা (আঃ) ই এই প্রতিশ্রুত নবী বলিয়া প্রোটেস্টান্ট খৃষ্টানদের উক্তি একেবারে ভিত্তিহীন; হযরত ঈসা (আঃ) নহেন বরং অন্য কেহই যে এই প্রতিশ্রুত নবী, অতঃপর তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকেনা।
উল্লিখিত সাতটি প্রমাণই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করিতেছে যে, একমাত্র হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই এই প্রতি শ্রুত নবী; এবং তাহারই আসন্ন আবির্ভাব সম্পর্কে এই আগাম খবর ও পূর্ব ঘোষণা রহিয়াছে। কেননা, তিনি মসীহ নহেন, এবং বহু বিষয়েই তিনি হযরত মূসার (আঃ) মত; অনেক বিষয়েই উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য এবং মিল রহিয়াছে। যথা
(১) উভয়েই আল্লাহর বান্দা এবং রসুল;
(১) উভয়েই পিতামাতা হইতে জন্মিয়াছেন;
(৩) উভয়েই বিবাহিত এবং সন্তানের পিতা,
(৪) উভয়ের শরীয়তেই রাজনীতি রহিয়াছে,
(৫) উভয়ের শরীয়তেই জিহাদের হুকুম রহিয়াছে;
(৬) উভয়ের শরীয়তেই ইবাদতের জন্য পাক পরিছন্নতার হুকুম রহিয়াছে;
(৭) অপবিত্র ঋতুমতি নারীর পক্ষে উভয়ের শরীয়তেই গোসলের জরুরী হুকুম রহিয়াছে;
(৮) উভয়ের শরীয়তেই পেশাব পায়খানা হইতে কাপড় চোপড়ের পাক পবিত্রতার নির্দেশ রহিয়াছে;
(৯) উভয়ের শরীয়তেই জবাই ব্যতীত প্রাণী এবং দেব-দেবীর নামে কুরবানীকৃত পশু হারাম এবং নিষিদ্ধ ভক্ষণ রহিয়াছে,
(১০) উভয়ের শরীয়তেই দৈহিক ইবাদত এবং কায়িক পরিশ্রম সংক্রান্ত বিষয়াদি বর্ণিত রহিয়াছে;
১১) উভয়ের শরীয়তেই ব্যভিচারের শাস্তি রহিয়াছে;
(১২) হুদুদ কিসাস, এবং অন্যান্য শাস্তি ব্যবস্থা উভয়ের শরীয়তে রহিয়াছে;
(১৩) এই সমস্ত প্রবর্তনে উভয়েই সক্ষম ছিলেন;
(১৪) সুদ হারাম রহিয়াছে উভয়ের শরীয়তে;
(১৫) আল্লাহ ব্যতীত অঞ্চ কাহারও ইবাদতের ডাক উপেক্ষা অস্বীকার করিবার নির্দেশ উভয়ের প্রতি রহিয়াছে;
(১৬) উভয় শরীয়তেই নির্ভেজাল এবং নিরংকুশ তওহীদের নির্দেশ রহিয়াছে;
(১৭) উম্মতের প্রতি নির্দেশ যে, তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং রসুল ব্যতীত খোদা কিংবা খোদার পুত্র ইত্যাদি কিছুই বলিবে না।
(১৮) নিজের শয়ন শয্যায়ই ইন্তেকাল হওয়া;
(১৯) মুসা আলাইহিস সালামের মৃত তাঁহারও দাফন হওয়া;
(২০) নিজের উম্মতের কারণে অভিশপ্ত এবং মলউন না হওয়া।
মোট কথা উভয়ের শরীয়তে লক্ষ্য করিয়া দেখিলে ‘অনুরূপ আরও অনেক মিল সাদৃশ্য উভয়ের মধ্যে রহিয়াছে দেখা যাইবে। এই জন্যই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়া বলিয়াছেন যে – –
“আমি তোমাদের উপরে সাক্ষী স্বরূপ তেমনি একজন পয়গম্বরকে প্রেরণ করিয়াছি, ফিরাউনের কাছে যেমন একজন রসুল প্রেরণ করিয়াছিলাম। হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বনী ইসরায়ীলের ভ্রাতৃকূলেরই একজন; কেননা তিনি হযরত ইসমায়ীলের বংশধর, বংশগৌরব ও উজ্জ্বল রত্ম; তাঁহার উপের কিতাব নাযিল হইয়াছে, তিনি উম্মী এবং নিরক্ষর, আল্লাহ তাআলা তাহার মুখেই নিজের বাণী প্রচার করিয়াছেন। তিনি ওহী মুতাবিকই কথা বলিতেন; কুরআনের ঘোষণায়ই তিনি মূর্তিমান ওহী; নিজের মনে কোন কথা বলেন না। তাহাকে জিহাদের হুকুম দেওয়া হইয়াছে; তাহারই কারণে আল্লাহ তাআলা কুরাইশদের বড় বড় সর্দার পাণ্ডা এবং রোম পারস্য সম্রাটদের প্রতিশোধ নিয়াছেন, তিনি হযরত মসীহ বা ঈসা (আঃ) এর আসমান থেকে অবতরণের পূর্বে প্রেরিত হইয়াছেন; তাঁহার আবির্ভাব এবং নবুওত পর্যন্ত হযরত মসীহ (আঃ) আসমানে অবস্থান করিতে বাধ্য, যে পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় তাহার সঠিক স্বস্থানে প্রত্যাবর্তিত না হইয়াছে এবং শিরিক, ত্রিত্ববাদ ও পৌত্তলিকতার পূর্ণ অবসান না ঘটিয়াছে।
পরবর্তীকালে খৃষ্টানদের সংখ্যাধিক্য দেখিয়া কেহ যেন এ বিষয়ে ভুল ধারণা না করিয়া বসেন। কেননা আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বিশদ ভাবে দ্ব্যর্থহীন এবং জোরালো ভাষায় ঘোষণা করিয়াছেন যে—ইমাম মেহদির আবির্ভাব প্রাক্কালে খৃষ্টানদের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পাইবে; মনে হয় সময় আসন্ন প্রায়; ইমাম মেহদির আবির্ভাব এবং হযরত ঈসা (আঃ) র আকাশ থেকে অবতরণ, দাজ্জাল হত্যা, শূকর হত্যা, জিযিয়া কর প্রবর্তন প্রভৃতি সংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা বোখারী মুসলিম প্রভৃতি হদীস গ্রন্থে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত রহিয়াছে।
(৮) এই ঘোষণায় একথাও বিদ্যমান রহিয়াছে যে—যে নবী আল্লাহ যাহা বলেন নাই তাহা আল্লাহর বলিয়া বর্ণনা করিবে সে নিহত হইবে। অতএব যদি হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম সাচ্চা নবী না হইতেন, তিনি যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা বলিতেন তবে নিশ্চয়ই নিহত হইতেন। বরঞ্চ ইহার বিপরীত কুরআন আল্লহর তরফ থেকে তাঁহার নিরাপত্তা ঘোষণা করতঃ বলিতেছে
আল্লাহই তোমাকে লোকের হাত থেকে রক্ষা করিবেন। বলাবাহুল্য আল্লাহর ঘোষণা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হইয়াছে, কেহই তাহাকে নিহত করিতে সমর্থ হয় নাই।
পক্ষান্তরে খৃষ্টানদের আকীদা মত হযরত ঈসা (আঃ) নিহত এবং শূলিবিদ্ধ হইয়াছেন।
(৯) উক্ত ঘোষণায় আল্লাহতাআলা মিথ্যা নবীর পরিচয় দিয়া বলিয়াছেন যে—তাহার বর্ণিত খবরাদি এবং আসন্ন ঘটনা সংক্রান্ত তাহার আগাম খবর কখনও সত্যে পরিণত হইবেনা। অথচ হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত অনেক খবর এবং অনেক ঘটনার কথা আগাম ঘোষণা করিয়াছেন এবং বলাবাহুল্য তাহা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হইয়াছে। অতএব এতদনুসারেও তিনি মিথ্যা নন বরং নিঃসন্দেহে সত্যিকার নবী।
(১০) ইহুদী পণ্ডিতরা স্বীকার করিয়াছেন যে, তওরাত মধ্যে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সম্পর্কে পূর্বাহ্ন ঘোষণা বিদ্যমান রহিয়াছে। তবে তাহাদের কেহ কেহ ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন, আবার কেহ কেহ যথাপূর্ব কুফুরের মধ্যেই অবিচলিত থাকিয়াছে। যেমন ভাবে কাহিনদের সর্দার এবং ইউহান্না ইঞ্জিলের বর্ণনা মত নবী ‘কায়িফা’ হযরত ঈসা (আঃ কে সত্যিকার পয়গম্বর জানিয়াও তাঁহার প্রতি ঈমান আনে নাই, তাহাকে নবী বলিয়া স্বীকার করে নাই বরং তাহাকে কাফির এবং কাতল করিবার ফতোয়া দিয়াছিল।
(১) ইহুদিদের স্বীকৃত তিনটি ঘটনা-
(১) হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের নবুওতকালে মুখাইরিক নামে একজন বিশিষ্ট ইহুদি পণ্ডিত এবং সর্দার ছিল; তওরাতে বর্ণিত পরিচয় ও নিদর্শন দ্বারা সে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামকে বিলক্ষণ চিনিত, এবং সত্যিকার নবী বলিয়া জানিত; এতদসত্তেও নিজের ধর্মপ্রিয়তা হেতু সে ইসলাম গ্রহণে বিরত থাকে। ঘটনাক্রমে উহুদ যুদ্ধের দিন শনিবার ছিল; সে তখন ইহুদিদের বলে— ইহুদিগণ ! খোদার কসম, তোমরা জান যে—হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সাহায্য সহযোগিতা তোমাদের উপর ফরয; ইহুদিরা বলে—আজ ত শনিবারের দিন, বারের দিন, ইয়াউমুস সাবত; ইহাতে মুখাইরিক বলে—সাত বা শনিবার কিছুই নয়; এই বলিয়া সে অস্ত্রধারণ করতঃ হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সাহায্যে অগ্রসর হয়, এবং তাহার সম্প্রদায়কে নির্দেশ দেয় যে—আমি যদি মারা যাই, নিহত হই, তবে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই হইবেন আমার সমস্ত বিষয়সম্পত্তির অধিকার, আল্লাহর হুকুম মত তিনি যেমন ইচ্ছা তাহা ব্যয়-ব্যবহার করিবেন। বলাবাহুল্য অতঃপর মুখাইরিক লড়িতে লড়িতে মারা যায়; হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন মূখাইরিক ইহুদিদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি ছিল। তাহার ওসীয়ত বা উইল মত হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম তাহার সমস্ত বিষয়সম্পত্তি অধিকার করেন। মদীনায় অধিকাংশ দান-খয়রাত হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ঐ সম্পত্তি থেকেই করিতেন। (আলবেদায়া ৪র্থ খণ্ড ৩৬ পৃঃ)।
(২) আহলে কিতাবরা হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সত্যতা স্বীকার করিয়াছেন, এ প্রসংগে আরও দুইটি ঘটনার উল্লেখ করিতেছি। ১। একদা হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ইহুদিদের ধর্ম-শিক্ষালয়ে উপস্থিত হন এবং বলেন—তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আলিমকে ডাক ত দেখি; তাহারা বলে—আবদুল্লাহ ইবনে সুরিয়াই আমাদের মধ্যে এরূপ ব্যক্তি। হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম তাহাকে নির্জনে ডাকিয়া এবং তাহার ধর্মের এবং তাহাদের প্রতি আল্লাহর অনন্ত রহমতের, মান্না, সালেওয়া, এবং বাদল ছায়ার শপথ দিয়া জিজ্ঞাসা করেন—তুমি কি বিশ্বাস কর যে, আমি আল্লাহর রসুল; সে বলে—নিশ্চয়ই, এবং শুধু আমিই নই, সমগ্র ইহুদিরাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে—আপনি আল্লাহর রসুল; আপনার নবুওত ধ্রুব সত্য। আপনার গুণরাজি এবং পরিচয় তওরাতে বর্ণিত রহিয়াছে। কিন্তু ইহুদিরা আপনাকে হিংসা “হাসদ” করিতেছে; হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেন—তবে তুমি কেন ইসলাম গ্রহণে বিরত রহিয়াছ? সে বলে—আমি আমার কওমের, সম্প্রদায়ের বিরোধিতা পছন্দ করিনা, এবং আমার বিশ্বাস যে ইহারা একদা আপনার ইত্তিবা অনুসরণ এবং ইসলাম গ্রহণ করিবে, অতঃপর আমিও মুসলমান হইয়া যাইব।
(৩) হযরত সোফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন—হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম যখন মদীনায় আগমন এবং “কুবা”য় অবস্থান করেন, তখন আমার পিতা হুয়াই ইবনে আখতার, এবং চাচা আবু ইয়াসির দীনদরিদ্র অবস্থায় সেখানে উপস্থিত হন, সূৰ্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে থাকেন; অতঃপর তাহারা খুবই বিমর্ষ, মনমরা এবং বিমর্ষ অবস্থায় ফিরিয়া আসেন। আমি তাহাদের মনোরঞ্জনের জন্য অনেক চেষ্টা করি, কিন্তু তাহারা এতই চিন্তা-বিভোর ছিলেন যে—আমার প্রতি দৃষ্টিপাত মাত্র করেন নাই। অতঃপর আমি শুনিতে পাই যে, আমার চাচা আমার পিতাকে বলিতেছেন- এই কি সেই ব্যক্তি; ইনিই কি তিনি, তওরাতে যাহার কথা ঘোষণা করা হইয়াছে? পিতা উত্তর দেন নিশ্চয়ই, সন্দেহ নাই। চাচা আবার জিজ্ঞাসা করেন— তুমি কি ইহা সত্যিই বিশ্বাস কর? পিতা বলেন হ্যাঁ। চাচা জিজ্ঞাসা করেন “তোমার মনে তাহার সম্পর্কে কি ইচ্ছা রহিয়াছে? পিতা বলেন—খোদার শপথ! যতদিন বঁচিয়া আছি, তাহার শত্রুতা বিরোধিতাই করিয়া যাইব।”
যদি বলেন—বনী-ইস্রায়ীলের ভ্রাতৃবৃন্দ বনী-ইস্রায়ীলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; কেননা ঈসুর সন্তানাদি এবং হযরত ইব্রাহীম আলাইহি ও সাল্লামের পত্নী “কাতুরা”র সন্তান ও বনী-ইস্রায়ীলের ভাই। অতএব এমতাবস্থায় হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামই যে একমাত্র এই প্রতিশ্রুতি নবী, একথা নিশ্চিত করিয়া কিরূপে বলা যাইবে?
বলাবাহুল্য এই প্রশ্নের কোন গুরুত্বই নাই; তওরাত, বাইবেল আলোচনা করিলে এরূপ প্রশ্নই উঠেনা। কেননা প্রথমতঃ ঈসু এবং কাতুরার সন্তানদের মধ্যে উভয়ের বংশে উল্লিখিত গুণসম্পন্ন কেহই প্রকাশ পান নাই; দ্বিতীয়তঃ ইসমায়ীলের পক্ষেই আল্লাহতাআলা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত হাজিরাকে এরূপ ওয়াদা প্রতিশ্রুতি দান করিয়াছিলেন। (পয়দারীশ কিতাব ১৬ অধ্যায়, আয়াত ১০-১৩)
তৃতীয়তঃ হযরত ইসহাকের প্রার্থনা অনুসারেই বনি ঈসুর কেহই এই প্রতিশ্রুত পয়গম্বর হইতে পারেন না, কেননা বাইবেলের মতে হযরত ইসহাক (আঃ) হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সন্তান সম্পর্কে বৃদ্ধি বৰ্কত, এবং নেতৃত্বের দুআ করিয়াছিলেন, কিন্তু ঈসুর বেলায় বলিয়াছিলেন যে—তিনি তাহার ভাইগণের খিদমত এবং সেবা। করিবেন। তাহাদের নেতৃত্ব করিবার জন্য কোন আশীর্বাদ এবং দুআ প্রার্থনা করেন নাই। (পয়দায়ীশ ২৭-২৭-২৯)
কিতাবুল আমালের ৭ম অধ্যায়ে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত আছে যেইনিই সেই মুসা, যিনি বনী-ইস্রায়ীলদের বলিয়াছিলেন যে— আল্লাহ তোমাদের ভাইদের মধ্য হইতে আমারই মত একজন নবী তোমাদের জন্য প্রেরণ করিবেন।
রচনাকালঃ ২৫-৯-১৯৮৮
পরের পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে বেদে-বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী (২য় পর্ব)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বেদে-বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী (৩য় পর্ব)
হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বেদে-বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী (৪র্থ পর্ব)