লিখেছেনঃ আগা শাহিদ আলি
এক বিশেষ বিন্দুতে এসে আমি তােমার পদচ্ছাপ হারিয়ে ফেলি।
ওরা একটা করে বসতকে শ্মশান বানায় আর তার নাম দেয় শান্তি।
তুমি যখন চলে গেলে, ওরা ততদিনে পাথরগুলিকে কবর দিয়েছে।
প্রতিরােধহীনের কোনাে অস্ত্র থাকে না।
যখন পাহাড়ি ছাগলগুলাে পাথরে গা ঘষে, তখন
সেই ঢাল বেয়ে ঝরে যাওয়া সরােম চামড়া জমিয়ে রাখে কে?
ভাগ্যহীন সেই তাঁতি যার কাজে সেলাইয়ের দাগ সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য,
তাকেও কিনা স্যাকরার নিক্তিতে মাপতে হয় ছাগলের রােম?
একা একটা করে বসতকে শ্মশান বানায় আর তার নাম দেয় শান্তি।
আজকের রাতে স্বর্গের প্রবেশদ্বারের প্রহরীর দায়িত্বে থাকছে কে?
আমার স্মৃতি আবার তােমার ইতিহাসের অনুসারী।
সারারাত সৈন্যদের কনভয়গুলাে মরুভূমির পথে ক্যারাভানগুলাের মতাে চলাচল করে ।
তেলের ধোঁয়ায় আঁকা টিমটিমে আলাের হেডলাইটে সময় গলে যেতে থাকে।
সারা শীতকাল ধরে
থ্যাতলানাে মৌরী ফুলের ঘ্রাণ।
আমরা কি ওদের শুধােতে পারি না ।
তােমরা কি এই পৃথিবীটার সঙ্গে সব হিসেবনিকেশ চুকিয়ে বসে আছ?
হ্রদের জলে মন্দির আর মসজিদের হাতগুলাে একে অপরের
প্রতিবিম্বকে আঁকড়ে ধরে আছে।
তুমি কি জাফরানে ভিজিয়েছ ওদের? যে রং থেকে যাবে
পরবর্তী শতাব্দীগুলিতেও একইভাবে এই দেশে
ঠিক যেভাবে আমাকে সেলাই করে দিয়েছি তােমাদের ছায়ার সঙ্গে।
আমাদের এই দেশে আমরা দরজা হাতে ঝুলিয়ে বাইরে পা রাখি,
আমাদের ছেলেমেয়েরাও জানলা হাতে ঝুলিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায়,
তুমি নিজের পিছনে সেটাকে নিয়ে আলােকিত দরদালান দিয়ে হেঁটে যাও,
যদি সুইচটাকে একবার টেনে দেওয়া যায় তবে তুমি সমস্ত কিছু থেকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
এক বিশেষ বিন্দুতে আমি তােমার পদচ্ছাপ হারিয়ে ফেলি
আমাকে তােমার দরকার ছিল। তুমি আমাকে নিখুঁত করতে চেয়েছিলে।
তােমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমাকে মেজেঘষে শক্ৰন্দলের মধ্যে চালান করতে চেয়েছিলে।
তােমার ইতিহাস এখন আমার স্মৃতির অনুসারী।
তুমি যা কিছু হারিয়েছে তার সবটাই আমি। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পার না।
তুমি যা কিছু হারিয়েছে তার সবটাই আমি। তােমার প্রকৃত শত্রু।
তােমার স্মৃতি আমার স্মৃতির অনুসারী।
আমি স্বর্গের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছি নরকের নদী বেয়ে ।
এক সুক্ষ্ম প্রেত।
যা পাের্সেলিন ঢেউ ভাঙছে।
এখনাে রাত্রি আধার। বইঠা এক পদ্ম।
যত আমাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তত মৃদু মলয়
আমার প্রতি যেন দয়াপরবশ হয়ে ক্রমশই মৃদুতর হয়ে আসছে।
শুধু যদি তুমি কোনােভাবে আমার হতে তাহলে পৃথিবীতে
কী-বা না ঘটতে পারত?
তুমি যা কিছু হারিয়েছ তার সবটাই আমি।
তুমি কখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না।
আমার স্মৃতি তােমার ইতিহাস অনুসারী।
এখানে ক্ষমা করবার মতাে কিছু নেই। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না।
আমি আমার যন্ত্রণা আমার নিজের কাছ থেকেও লুকিয়ে রেখেছি।
আমি আমার যন্ত্রণা কেবল নিজের কাছেই উন্মুক্ত করেছি।
এখানে সবকিছুই ক্ষমার যােগ্য। তুমি আমাকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পার না।
শুধু যে কোনােভাবেই যদি তুমি আমার হতে,
এ’দুনিয়ায় কী বা অসম্ভব থাকত?
(প্যাট্রেসিয়া ও’নীল এর জন্য)
মূল বইটির প্রকাশকের টীকা : (কবিতার বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনার কথা মনে রেখে) এই কবিতাটি
এক অর্থে পণ্ডিতকে (কাশ্মীরি হিন্দু )পাঠানাে কাশ্মীরি মুসলমানের ব্যথাতুর এক প্রেমপত্র।
ভাষান্তর : উপগুপ্ত
মূল গ্রন্থ : দ্য কান্ট্রি উইদাউট পােস্ট অফি
হায় কাল বৈশাখ হায় মানব সভ্যতা