তাজমহল : স্থাপত্য কলা ও উদ্যান প্রীতিতে ভাস্বর মুঘলযুগ: ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পানিপথ যুদ্ধের পর ২০-শে এপ্রিল বাবর আগ্রায় এলে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা, উষ্ণ বাতাস ধুলোর আধিক্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এর আগে সিকন্দর লোদি (১৪৯৪-১৫১৭) সর্বপ্রথম দিল্লি থেকে রাজধানী আগ্রায় আনেন। সিকান্দরের পুত্র ইব্রাহিম লোদী (১৫১৭-২৬) কেই পরাজিত করে বাবর আগ্রা দখল করেছিলেন। বাবর তাঁর স্মৃতিচারণে বলেছেন, আগ্রায় পর্যাপ্ত খাল কিংবা ঝর্ণার মত প্রবাহিত পানি বা উদ্যান নেই। সমরখন্দে এইরূপ বা কৃত্রিম নির্মাণগুলির সঙ্গে বাবর অতি পরিচিত ছিলেন। সমরখন্দে বহু উদ্যান ছিল, যেমন–‘বাগ এ দিলখুশা‘, বাগ এ চিনার‘, ‘বাগ এ বেহেশত‘ ইত্যাদি। আর কাবুলে ‘বাগ এ ওয়াফা‘, ‘বাগ এ কাঁলা‘,’ বাগ এ বানাফশা‘, ‘ বাগ এ পাদশাহী‘ ‘ বাগ এ চিনার‘ ইত্যাদি বাগ বা উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর আত্মকথা অনুযায়ী এই পরম্পরা বজায় রেখেই আগ্রার যমুনা নদীর পূর্ব তীরে (বাম তীর)‘ বাগ এ গুল আফসান‘ (পুষ্পময় উদ্যান বর্তমানে যা রামবাগ নামে পরিচিত), ‘বাগ এ হস্ত বেহেস্ত‘ (অষ্টম স্বর্গের উদ্যান),’ বাগ এ জার আফসান‘ (স্বর্ণময় উদ্যান- বর্তমানে যা চৌবুর্জ নামে পরিচিত)। তিনি লিখেছেন,” সভাসদরাও বহু উদ্যান প্রতিষ্ঠিত করতে থাকায় হিন্দুস্থানের মানুষ যারা কখনোই সুষম ভূমি নির্বাচন বা সঠিক মৃত্তিকা প্রস্তুত করতে দেখেননি তারা জুন (যমুনা) নদীর তীরে যেখানে আমাদের হর্মরাজি দাঁড়িয়ে আছে সেই জায়গায় নাম দিয়েছিলেন কাবুল। যমুনা নদীর অপর তীরে আগ্রা দুর্গের বিপরীতে ‘বাগ এ হস্ত বেহেস্ত‘ স্থাপন করেছেন। মুঘলরা এই এলাকা পাকাপাকি অধিগৃহীত করার পর উদ্যান ছাড়াও ধর্মীয় প্রয়োজনেও কাজে লাগান। হুমায়ুন ওই এলাকায় একটি মসজিদ স্থাপন করেন যা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও গ্রহ- নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্য পূর্বপুরুষ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ উলুঘ বেগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন একটি মান মন্দির স্থাপন করেন– যা এখন ধ্বংস হয়ে অবলুপ্ত।
হুমায়ুন রাজধানী ফিরিয়ে নিয়ে যান দিল্লিতে এবং পুরানা কিলা ছিল তাঁর প্রধান দপ্তর। হুমায়ুন যে বিদ্যোৎসাহী ছিলেন তার প্রমাণ হলো দিল্লির শেরমন্ডল কুতুবখানায় (গ্রন্থাগার) অবস্থানকালে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। শায়িত হন নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.)-র মাজারের অদূরে, প্রধানত লাল পাথর এবং সাদা, হলুদ ও কালো পাথরের এক দৃশ্য মকবারায় যা হুমায়ুন মকবারা নামে খ্যাত। ১৫৬২ সালে তাঁর পত্নী এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই স্মৃতিসৌধটির স্থাপত্য পরবর্তী মুঘল স্থাপত্য গুলির এবং তাজমহলেরও মাতৃস্থানীয়া। এছাড়া নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.)-এর মাজার থেকে হুমায়ুন মকবারা যাওয়ার পথে রাস্তার ট্রাফিক আইল্যান্ডে নীল রংয়ের গম্বুজ যুক্ত একটি স্থাপত্য চোখে পড়ে যা অনেকটাই উজবেকি আদলে তৈরি।
এরপর হুমায়ুনপুত্র আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) পুনরায় তাঁর রাজধানী আগ্রামুখী করেন। প্রথমে তিনি নির্মাণ করেন লাল পাথরের ফতেপুর সিক্রি। ফতেপুরে রয়েছে একমাত্র শ্বেত মর্মর নির্মিত স্থাপত্য সেলিম চিশতী (রহ.)-এর মাজার। সিক্রিতে অবস্থিত যোধাবাইয়ের প্রাসাদ, দেওয়ান-ই-খাস, পাঁচ মহল, বীরবলের বাসস্থান, এবাদত খানা আকবরের রাজত্বের সাংস্কৃতিক ঐক্য, ধর্মীয় সহাবস্থান, দার্শনিক উচ্চমার্গের দিকটিকে প্রচারে প্রকাশ করে। তিনি আগ্রা দুর্গের সমস্ত মহলও লাল পাথর দ্বারা নির্মাণ করেছিলেন। আগ্রা দুর্গের আকবরী মহলটি অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতক নাগাদ মুঘলদের ধীরগতিতে পতনকালে সুরাজমল জাঠ কর্তৃক লুণ্ঠিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর আগ্রা দুর্গে লাল পাথরের জাহাঙ্গীরি মহল নির্মাণ করেন। এটিরও একটি অংশ ধ্বংস প্রাপ্ত।
জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহান (১৬২৮-১৬৫৮) রাজত্ব শুরু করেন মুঘল তথা ভারতের স্বর্ণযুগে। তাঁর রাজত্বকাল ও পরবর্তী ১০০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১ ও ২ নম্বর স্থানের জন্য ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত। তাই তার স্থাপত্য চিন্তায় ভারতীয় স্বাচ্ছল্যের ছাপ পড়েছিল। তিনি আগ্রা দুর্গের আকবর ও জাহাঙ্গীরের লাল পাথরের স্থাপত্যগুলিকে শ্বেতপাথরে পরিবর্তিত করেন এবং নিজেও কিছু সংযোজন করেন। তবে মুঘল স্থাপত্যের চূড়ান্ত নিদর্শন হল শ্বেত মর্মর নির্মিত সেই বিখ্যাত তাজমহল। এক্ষেত্রে দিল্লির হুমায়ুন মকবারাটিকে যেন শ্বেতপাথরে পরিবর্তিত করে নেওয়া হয়েছে। তাজে সংযোজিত হয়েছে শুধুমাত্র চারদিকে চারটি মিনার। শাহজাহান যমুনা নদীর দুই তীর তাঁর পত্নী মমতাজমহলের স্মৃতি রক্ষার্থে এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শনের জন্য নির্ধারিত করেন। আকবর যমুনার দুই তীরের বেশ কিছু অংশ তাঁর শ্যালক মানসিং কাছওয়াকে জাইগির হিসাবে দান করেন। তাই এলাকাটির নাম হয় কাচ্ছেপুরা। নথি থেকে প্রাপ্ত, মানসিংহের পৌত্র মির্জা রাজা জয় সিং-এর কাছ থেকে শাহজাহান এলাকাটিকে চারটি হাভেলির বিনিময়ে কিনে নেন। চৌক, দালান, প্রবেশদ্বার, পূর্ব দিকে মেহমানখানা ও পশ্চিমদিকে মসজিদ এবং তিন দিকে বিশাল উদ্যানসহ উত্তরে এক্কেবারে যমুনার তীর ঘেঁষে অনবদ্য শিল্পকর্ম তাজমহল স্থাপন করেন। এটি নির্মাণে ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল এবং ২২ বছর লেগেছিল। শ্বেত মর্মরের চাতালের নিচে এক কুঠরিতে সম্রাট ও তার বেগমের দেহ শায়িত আছে। চাতাল বরাবর রয়েছে প্রকৃত কবরের নকশা, নকল তুমি কবর।
বাবরের উদ্যানপ্রীতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে যমুনার বাম তীরে প্রধান মকবারাটির পশ্চাদপট হিসাবে শাহজাহান মাহতাব বাগ বা চাঁদ উদ্যানের পরিকল্পনা করেন। প্রথমেই নির্মাণ করেন অষ্টভুজ আকৃতির একটি জলাধার যার প্রতিটি আভ্যন্তরীণ দেওয়ালের মাপ ২৬.৭ মিটার (প্রায় ৮০ ফুট), প্রতিটি বাহুতে ছিল ১৬ টি সঠিক পরিমাপ যুক্ত খিলান, যা জলাধারের বাহুগুলিকে সৌন্দর্যময় করে। এর দক্ষিণ, পশ্চিম, উত্তর, পূর্ব সব দিকেই রয়েছে প্রশস্ত কারুকার্যময় সানসেট ও ছাদ যুক্ত প্যাভিলিয়ান। প্রতিটি প্রশস্ত দালান ও ঢাকা করিডোর দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকা লাল পাথরের তৈরি সূক্ষ্মাগ্র খিলান, কারুকার্যময় প্যানেল এবং বৃহৎ নির্মাণটির অন্তর্গত স্থাপত্য গুলি শাহজাহানের যুগকে মনে করায়। জলাধারের সঙ্গে যুক্ত ২৫ টি ফোয়ারা। ফোয়ারাগুলিতে পানি সরবরাহ করা হতো উঁচুতে অবস্থিত পোড়ামাটির জলাধার থেকে, বর্তমানে যা অবলুপ্ত। এর উত্তরে অবস্থিত লাল পাথরের একটি আয়তাকার জলাধার। মূল অষ্টভুজাকৃতি জলাধার থেকে পানি বের হয়ে আয়তাকার জলাধারে ঝর্ণার মত (আবসার) পানি ঝরত। এর পিছনে রয়েছে চিনা মাটির খোপের মতো কয়েকটি কুলুঙ্গি। কুলুঙ্গি গুলিতে রাতে মোমবাতি জ্বালানো হত, দুপুরে রাখা হতো ফুলের গুচ্ছ। এর উত্তরে রয়েছে চারবাগ নামে চার ভাগে বিভক্ত একটি উদ্যান। উদ্যানের ঠিক কেন্দ্রে রয়েছে একটি পুকুর। এর পাড় বাঁধানো, কোনগুলি মাপ অনুযায়ী বাঁকানো, দুই পাশে রয়েছে পাথর বাঁধানো পথ, যার অনেকটাই এখন অবলুপ্ত। অষ্টভুজাকৃতি জলাধার থেকে পানি বের হয়ে চতুষ্কোণ জলাধারে জমা হত। এরপর উদ্যানের ফোয়ারাযুক্ত অগভীর নহরগুলিতে প্রবাহিত হত। চারবাগের পূর্ব ও পশ্চিমে ছিল বারহাদারি (অর্ধগোলাকার খিলান যুক্ত উপরে গম্বুজ দিয়ে ঢাকা চারিদিক খোলা স্থান) এগুলির প্রায় সবকিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে নদীর ধারে দক্ষিণ-পূর্বের মিনারটি এখনো টিকে আছে। ৮-ই ডিসেম্বর ১৬৫২, দোর্দন্ডপ্রতাপ পিতা তখনও ভারত সম্রাট, আওরঙ্গজেব তখনও সম্রাট হননি, লিখছেন, “সাম্প্রতিক বন্যায় মহতাববাগ ডুবে গেছে, কিন্তু অষ্টভূজাকার জলাধার ও বাংলো (সম্ভবত মিনার কিম্বা বারহাদারি) ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি”। পরবর্তীকালে ইমারতগুলি ধসে পড়ায় এবং উদ্যানটি পানি-কাদায় চাপা পড়ায় লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। সম্ভবত আওরঙ্গজেব- এর ইহলোক ত্যাগের ৫০-১০০ বছর পর তাঁর দুর্বল উত্তরাধিকারীরা এদিকে নজর দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীকালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ স্থানটি খুঁজে বের করে খনন করে পুনর্গঠন ও সংরক্ষণ করে। বিভিন্ন মুঘল উদ্যান থেকে ৮ হাজার চারা এনে রোপন করা হয়। এরমধ্যে ইঁট নির্মিত স্থাপত্যগুলি বাদ দিয়ে অনেকটাই পুর্বতন অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। সম্রাট শাহজাহান মহতাববাগ নির্মাণ করেছিলেন তাজমহলের সঙ্গে সমতা রেখে একই নিয়ম মেনে। তাই সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়, এটি ১৬৩১-৩৫ নাগাদ প্রকৃত তাজমহলের অখন্ড অংশরূপে নির্মিত হয়েছিল। মহতাববাগ নামের সার্থকতা রয়েছে কারণ এখান থেকেই পূর্ণিমা রাতে তাজকে সবচেয়ে সুন্দর দেখায় এবং মাহতাব মানেই হচ্ছে চাঁদ।
বস্তুত তাজমহলের শ্বেতমর্মর সূর্যের সাতটি রং-এর বেশ কয়েকটিকেই ঠিকরে বের করে দেয়। উদয়ের সময় তাজের রং হয় লাল ও নীলাভ্র মেশানো। এই সময় তাজের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি বিশেষ কোণ করে দাঁড়ালে তাজের ফুল, লতাপাতার নকশা থেকে ঝিকিমিকি আলো বের হয়। সারা দুপুর তাজমহল তার রং পাল্টাতেই থাকে কখনও হলদেটে রৌদ্রের রঙ, কখনও ধবধবে সাদা, সূর্যাস্তের সময় থাকে কমলা আভা। এই সময়ও তাজের দক্ষিণপশ্চিম গাত্রের নকশাগুলি থেকে ঝিকিমিকি তারার মতো আলো বের হতে দেখা যায়। তাজের বাইরের গাত্রে খোদিত রয়েছে ‘সুরা ইয়াসিন‘, ‘সুরা ফাতেহা‘; মূল তোরণদ্বারে রয়েছে ‘সূরা ত্বাহা‘, ‘সূরা মুলক‘ খোদিত আছে তাজের প্রধান কক্ষের অভ্যন্তরে। এসবই ক্যামেরাবন্দি করা যায়। তাজের শীর্ষদেশের একটি অমূল্য নির্মাণ ইংরেজরা তুলে নিয়ে যায়। প্রধাম গম্বুজের উপর কলস ও চাঁদ-তারার ঋজু গঠনটি হিন্দু-মুসলিম স্থাপত্য সংমিশ্রণে তৈরি, যেটি প্রকৃতপক্ষে পুরু সোনার পাত দিয়ে মোড়া ছিল। প্রায় ৩৬ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন আকারটি ১৮১৩ সালে ক্যাপ্টেন জোসেফ টেলার খুলে নিয়ে সাড়ে ৩০ ফুট তামার আকৃতি বসিয়ে দেন। পরে আরও দুবার পাল্টে নিয়ে পেতলের ৩২ ফুট কলস ও চাঁদ-তাবা স্থাপন করা হয়। কারণ, ততদিনে মুঘলদের সমৃদ্ধ ভারত দরিদ্র ভারতে পরিণত হয়েছে,সৌজন্য ইংরেজ। তাজের মূল ইমারতটির পূর্বে মেহমানখানা (যেখানে অতিথি আপ্যায়ন করা হত)। লাল পাথরের মেঝের উপর, তাজের নির্মাণকালে গম্বুজের শীর্ষদেশে হুবহু কাল কষ্ঠিপাথরের তৈরি কলস ও চাঁদ তারা বসানো হয়েছিল। তাজের মূল স্থাপত্যের পশ্চিমে রয়েছে এবাদতখানা মসজিদ, তার একপাশে রয়েছে মহিলাদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট নাতি উচ্চ শ্বেতপাথরের বেষ্টিত স্থান।
মুসলিমরা শস্যশ্যামল ভারতে এসেছিল ঊষর মরুভূমি বা মরুপ্রায় এলাকা থেকে। তাদের শুষ্ক, কঠিন জীবনে তারল্য ও নমনীয়তা আনার জন্য জলস্রোত ও উদ্যান তৈরিতে মন দেন। তাদের দেশের উন্নত সেচব্যবস্থা ভারতেও প্রচলিত করেন। তাই দেখা যায় হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনের মত মুসলিম শাসনেও দুর্ভিক্ষের স্বল্পতা। সুপ্রকাশ রায় মহাশয় ‘ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম‘ বইয়ে ইংরেজদের অবহেলার ফলে এই উন্নত সেচ ব্যবস্থা ধ্বংসের একটি খতিয়ান দিয়েছেন। তাজ চত্বরে ও মহতাববাগে এ এস আই লিখিত বোর্ড থেকে যেমন বহু অজানা তথ্য জানা যায়, তেমনই বিভিন্ন বইপত্র, গাইড ও সাধারণ মানুষের বক্তব্য থেকে বহু অজানা তথ্য জানা যায়। মুঘল সেচ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বাস্তুবিদ্যা ছিল বেশ আকর্ষণীয়। তাজমহলকে ভূমিকম্পরোধী করার জন্য তাজের ভিত্তিভূমির চার কোণে ও মধ্যবর্তীস্থানে আবলুস কাঠের বিশাল আটটি টুকরো বসানো হয়। আবলুস কাঠ আনা হত আফ্রিকা থেকে। এই কাঠ পানির সংস্পর্শে থাকলেও পচে নষ্ট হয় না বরং পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে। তাই এই কাঠের বিশেষ গুণকে কাজে লাগানো হয় ভিত্তিভূমিতে স্থাপন করে। যমুনার জলতলের সমতলে থাকায় বেশিরভাগ সময় আবলুস কাঠগুলি পানির সংস্পর্শে থাকে। কাষ্ঠখন্ডগুলি ফুলে-ফেঁপে স্পঞ্জের মতো স্থিতিস্থাপকতার গুন পেয়ে প্রবল ভূমিকম্পের সময়ও তাজের বিশাল আকৃতি সহ বিশাল ওজনকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। নির্মাণের সময় বলা হয় তাজের স্থায়িত্ব হাজার বছরের কাছাকাছি হতে পারে। শাহজাহান ও তাঁর স্থপতিরা যে সুচারু খেলা খেলেছেন এবং সেখানেই যে রকম বিশাল ভিত্তিভূমির ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায় তাদের থেকে অনুমান করা যায় উত্তরপাড়েও হয়ত আরও একটি তাজ গড়ার ইচ্ছা ছিল শাহজাহানের। লোকমুখে প্রচারিত শাহজাহান কাল তাজমহল গড়তে চেয়েছিলেন এবং নদীর এপার ওপার দুই তাজের সংযোগ রক্ষা করতে পরিকল্পনা ছিল সেতু গড়ার। তবে মাহাতাব বাগে সকল নির্মাণের ধ্বংসস্তূপ ও নদীর পাড় ঘেঁষে স্থানের স্বল্পতা দেখে অনুমান করা যায় সাদা তাজমহলের মত কালো তাজমহল আকারে বৃহৎ হত না। কাল তাজে শায়িত হতেন মমতাজ মহল এবং মূল তাজমহলে শাহজাহান– যা আর হয়ে ওঠেনি কাল তাজমহল নির্মিত না হওয়ায়।
তাজ পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিষ্ময়। আরব, পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় ও ইসলামী স্থাপত্যের সমন্বয়ে চোখ জুড়ানো অসাধারণ শৈলী। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ও ল্যান্ডমার্ক। পত্নী মমতাজের প্রতি প্রেম ভালোবাসাকে অক্ষয় করে রাখতে শাহজাহানের এই অমর সৃষ্টি। যুগ যুগ ধরে তা আমাদের বিস্ময়ভান্ডারকে আবেগতাড়িত করে চলেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শাহজাহান শুধু দক্ষ সম্রাটই ছিলেন না, আপাদমস্তক একজন রোমান্টিক ও শৈল্পিক মনের মানুষ ছিলেন। তাঁর রোমান্টিকতার সঙ্গে মিশে ছিল আবেগ, আবেগে মিশে ছিল শৈল্পিক সত্তা আর মন। অথচ এই অবিস্মরণীয় বিস্ময় সৃষ্টি নিয়ে কত অপপ্রচারই না শোনা গিয়েছিল। যেমন- শাহজাহান নাকি শ্রমিকদের যথাযথ পারিশ্রমিক ও সম্মান দিতেন না, এমনকি যাতে তারা কখনও দ্বিতীয় তাজমহল তৈরি করতে না পারে সেজন্য তিনি নাকি অনেক শিল্পীর হাত কিংবা হাতের বুড়ো আঙুল কেটে দিয়েছিলেন। অথচ শাহজাহান তাঁর শ্রমিক-কর্মচারীদের যথেষ্ট পারিশ্রমিক ও সম্মান দিতেন বলে ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়।
সেই সময় মাসিক বেতন দেওয়া হোত ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত যা আজকের তুলনায় অনেক বেশি বলে সহজেই অনুমেয়। তাজমহল নির্মাণে সাধারণ শ্রমিক, মিস্ত্রি সহ উচ্চ শ্রেণীর কর্মী মিলিয়ে ১০ হাজার মানুষ যুক্ত ছিলেন। কর্মীদের থাকার জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা সহ তাজগঞ্জ নামে কলোনি তৈরি করেছিলেন। শাহজাহানের তহবিল এবং রাজন্যবর্গ-নবাবদের তহবিল থেকে যথাক্রমে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬৫ হাজার ১৮৫ এবং ৮৬ লক্ষ ৯ হাজার ৭৬০ টাকায় তাজমহল ছাড়াও অন্যান্য ইমারতগুলি নির্মিত হয়। নির্মাণ কার্যে যুক্ত ৩৭ প্রধান দক্ষ শিল্পী কারিগরদের নাম, পরিচয়, পেশা ও মাসিক পারিশ্রমিক উল্লেখ করা হল।
নাম দেশ পেশা বেতন
- ১) মোহাম্মদ ইশা আফিন্দি তুর্কি ড্রাফ্টসম্যান ১০০০
- ২) সাত্তার খান তুর্কি ক্যালিগ্রাফ ১০০০
- ৩) মোহাম্মদ শরিফ সমরখন্দ ডিজাইন ১০০০
- ৪) মোহাম্মদ হানিফ আগ্রা সুপারভাইজ ১০০০
- ৫) আমানত খান সিরাজ ঘগরা আর্ট ১০০০
- ৬) কাদির জামাল খান আরব আর্টিস্ট ৮০০
- ৭) চিরঞ্জিলাল দিল্লি আর্টিস্ট ৮০০
- ৮) বলদেব দাস মুলতান ডিজাইন ৬৯০
- ৯) মন্নু লাল লাহোর ইনলেয়ার ৬৮০
- ১০) যমুনা দাস দিল্লি ইনলেয়ার ৬০০
- ১১) আবদুল্লা দিল্লি মিস্ত্রি ৬৭০
- ১২) বাসারত আলী দিল্লি ইনলেয়ার ৬৩২
- ১৩) ভগবান দাস মুলতান ইনলেয়ার ৬৩০
- ১৪)মোহাম্মদ ইউসুফ খান দিল্লি ইনলেয়ার ৬০০
- ১৫) ছোটেলাল মুলতান ইনলেয়ার ৬০০
- ১৬) ঝুমুর লাল মুলতান ইনলেয়ার ৬০০
- ১৭) আব্দুল গফফার মুলতান ক্যালিগ্রাফার ৬০০
- ১৮) উযায়র খান ইরান কালিগ্রাফার ৬০০
- ১৯) আমির আলী মুলতান ফুলের নকশা ৬০০
- ২০) মোহাম্মদ সাজ্জাদ বালখ মিস্ত্রি ৫৫০
- ২১) ইসমাইল আফাউদি তুরস্ক গম্বুজ নির্মাণ ৫০০
- ২২) মহম্মদ খান বাগদাদ ক্যালিগ্রাফার ৫০০
- ২৩) মহম্মদ সাদিক দিল্লি মিস্ত্রি ৫০০
- ২৪) আরা মোহাম্মদ বুখারা খোদাই কর্মী ৫০০
- ২৫) আবু ইউসুফ দিল্লি ইনলেয়ার ৫০০
- ২৬) আবুতোরাব খান মুলতান মিস্ত্রি ৫০০
- ২৭) মাহাবুল্লা মুলতান মিস্ত্রি ৪৭৫
- ২৮) রওশন খান সিরিয়া ক্যালিগ্রাফার ৪০০
- ২৯) শিবাজী লাল মুলতান ইনলেয়ার ৩৪২
- ৩০) মনোহর দাস মুলতান ইনলেয়ার ২৯৫
- ৩১) কাসিম খান লাহোর টুল মেকার ২৭৫
- ৩২) মাধব রায় লাহোর ইনলেয়ার ২৫৩
- ৩৩) চিন্তামণি মুলতান ইনলেয়ার ২৯২
- ৩৪) বংশীধর মুলতান ইনলেয়ার ২৪৪
- ৩৫) হিরা মনি মুলতান ইনলেয়ার ২৩৪
- ৩৬) মনোহর সিং লাহোর ইনলেয়ার ২০০
- ৩৭) মোহনলাল কনৌজ ইনলেয়ার ২০০
আংশিক গৃহীত খাইরুল বাশার ২১.১১.১৩
ভারতীয় স্থাপত্য ও শিল্পকলার উত্তরাধিকার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ভারত একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্য সম্পন্ন দেশ। বয়সে প্রাচীন মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার প্রাক বৈদিক ও পরবর্তী বৈদিক সভ্যতা, প্রাচীন ও মধ্যযুগ ধরে বিস্তৃত বৌদ্ধ-জৈন যুগ। মধ্যযুগের আরব-আফগান মুঘল এবং বর্তমান সভ্যতার মধ্যে পরম্পরাগত সাংস্কৃতিক, শৈল্পিক এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক সংযোগ দেখা যায়। প্রতিটি সভ্যতা কোনও- না- কোনওভাবে আমাদের জীবনযাপনে তাদের গভীর ছাপ ফেলেছে। তাই যে ব্যক্তি অস্বীকার করে সে নিজেই জানে না তার জীবনযাত্রা কোন অংশটি কোন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ধার করা, এমনকি বোঝাই দায় হয়ে যায় কে কাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে? প্রতিবার দিল্লি-আগ্রা ভ্রমণকালে ঐতিহাসিক সৌধগুলির দর্শনের সময় মনে বিচিত্র সব ধারণার উদয় হয়। কেল্লার, রাজপ্রাসাদের কিংবা রত্নখচিত সিংহাসনের কিছু না কিছু প্রয়োজন দেখা দিলেও মনকে সততই পীড়িত করে কোনও এক রাজা বাদশার অন্তিম শয়নের বা সমাধি সৌধ নির্মাণের পিছনে খরচ খরচের বহর দেখে, অন্তিম শয়নের স্থানগুলি সংশ্লিষ্ট শাসকের স্মৃতি রক্ষার্থে সমসাময়িক আর্থিক প্রাচুর্য বিচার করে সুন্দর করে গড়ে তোলা হলেও, নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত বিপুল সম্পদ আহরণের পন্থাটি ভেবে মনকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে (এবং এ যুগেও) সম্পদ আহরণের কয়েকটি বিশেষ পন্থা ছিল, কোনও একটি দেশ বিজয়ের পর লুন্ঠিত সম্পদ দ্বারা কিংবা দেশের উৎপাদিত সম্পদ থেকে, বাণিজ্য থেকে ও সাধারণ প্রজার কর থেকে। দেশ শাসন উপলক্ষ্যে শাসকের সুরক্ষার প্রয়োজনে প্রাসাদ সিংহাসন মেনে নেওয় গেলেও হুমায়ুন মকবারা, তাজমহলের মত সমাধি সৌধ নির্মাণের পিছনে যাই দর্শন থাকুক না কেন, খরচের দিকটি চিন্তা করে অনেকের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়না। প্রাসাদ, হর্ম্যরাজি, মকবরা নির্মাণের সম্পদ আহরণে সম্ভাব্য উৎস নিয়ে পুর্বেই আলোচনা করেছি। শাহজাহানের সময় রাজ্য বিস্তার সেভাবে হয়নি বরং আফগানিস্তান হাতছাড়া হয়ে যায়। ফল হল, রাজ্য বিস্তারের ফলে যে সম্পদ আহরিত হয় তা বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ শাহজাহানকে তাঁর শিল্পকলা প্রদর্শনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদের জন্য পুরোপুরিই আভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বাণিজ্য ও সাধারণের করের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। মানুষের দেয় করের ভিন্ন ব্যবহার বা অপচয়ের কুফল ফলেছিল, ২২ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তাজমহল নির্মানের ধাক্কা প্রবলভাবে রাজকোষের উপর পড়ে যা পরবর্তী শাসক আওরঙ্গজেব অনুভব করেছিলেন। মোদ্দাকথা, তাজমহল নির্মাণ তৎকালীন ভারতের কাছে মোটেই সুখকর হয়নি।
প্রাচীন স্থাপত্য যা উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান ভারতীয়রা পেয়েছেন তার কয়েকটি হল ইলোরার হিন্দু জৈন ও বৌদ্ধ গুহামন্দিরগুলি। অজন্তার বৌদ্ধ গুহামন্দির সমূহ, পুরী- ভুবনেশ্বরের মন্দির গুলি। মধ্যযুগের স্থাপত্যগুলির মধ্যে রয়েছে তাজমহল,আগ্রা দুর্গ, কুতুবমিনার, হুমায়ুনমকবরা, লালকেল্লা, আওরঙ্গাবাদের ছোটা তাজ বা বিবি কা মকবারা ইত্যাদি স্থাপত্যসমূহ নির্মাণে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় তৎকালীন প্রজাদের নাগরিক সুবিধা খর্ব করে তাদের করের টাকা ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রজাদের সুখ-সুবিধার কোনরকম মূল্য দেওয়া হয়নি। তবে বর্তমান যুগের প্রেক্ষিতে বিচার করলে এই সৌধগুলিই ভারতের দুর্বল অর্থনীতি সবল করতে অন্তত কিছুটা হলেও হাত বাড়িয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২০১০-১১ সরকার দ্বারা সুরক্ষিত (এ এস আই) মোট ১১৬ টি সৌধ থেকে ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা আয় করেছে। উক্ত সমীক্ষায় এই সৌধগুলির অবস্থান বিচার করে ৩ টি প্রধান পর্যটন এলাকা নির্ণয় করা হয়েছে। প্রধান এলাকাটি আগ্রা চক্র, দ্বিতীয় এলাকা দিল্লি চক্র, তৃতীয় এলাকা অজন্তা ইলোরা আওরঙ্গাবাদ চক্র। এর বাইরে চেন্নাই, পুরী-ভুবনেশ্বর, হায়দ্রাবাদ ও ব্যাঙ্গালোর চক্রও রয়েছে। নিম্নে সারণী আকারে চক্র বা সৌধগুলির আয় দেওয়া হল।
চক্র সৌধের নাম আয় (কোটি টাকা) অবস্থান
১) আগ্রা-ফতেপুর সিক্রি চক্র
তাজমহল ১৯.৮৯ প্রথম
আগ্রা লালকেল্লা ১৩.৪২ দ্বিতীয়
ফতেপুর সিক্রি ০.৫৭ ষষ্ঠ ২) দিল্লি চক্র
কুতুব মিনার ১০.০৫ তৃতীয়
হুমায়ুন মকবরা ৬.১৫ চতুর্থ
লাল কেল্লা ৫.০৯ পঞ্চম ৩) আওরঙ্গাবাদ, অজন্তা, ইলোরা চক্র।
ইলোরা ১.৯৯ সপ্তম
বিবি কা মকবরা ১.২০ অষ্টম
অজন্তা ১.০৮ নবম চেন্নাই চক্র,
২.৯৭ কোটি, পুরী-ভুবনেশ্বর চক্র ২.৫৯ কোটি, ব্যাঙ্গালোর চক্র ২.৫৩ কোটি, হায়দরাবাদ চক্র ১.৯৮ কোটি, পুরানা কিলা ৩৭.৬৩ লাখ টাকা, যন্তর মন্তর ৩০.১৪ লাখ টাকা, সফদরজং মকবরা ১০.১৬ লাখ টাকা, তুঘলকাবাদ ২.৯২ লাখ ও ফিরোজ শাহ কোটলা ২.৯১ লাখ টাকা দর্শক আকর্ষণ করে আয় করেছে। পূর্ব ভারতের সৌধ গুলির মধ্যে একমাত্র পুরী- ভুবনেশ্বর স্থান পেয়েছে। তালিকা দেখে মনে হতেই পারে পশ্চিমবাংলা এক অবার্চিন ভুঁইফোড় রাজ্য; ঐতিহ্য বলে কিছুই নেই। অথচ বেশ কিছু বৌদ্ধ স্তুপ, গৌড়-পান্ডুয়ার সুলতানি আমলের সৌধ, বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা কাজ করা মন্দিরসমূহ ও মুর্শিদাবাদের সৌধগুলি বাঙালির সমৃদ্ধশালী অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে বিগত রাজ্য সরকারের পর্যটনসহ প্রতি ক্ষেত্রে অনীহা এই সৌধ গুলিকে ব্রাত্য করে রেখেছে।
তাজমহল বাঁচল, তাজমহল বাঁচালো ও বাঁচাচ্ছে
এ আবার কি রকম কথা ? যে নিজে বাঁচলো সে আবার অন্যকে বাঁচাবে কি করে ? সব হয়, ভারতের বুকে সবই সম্ভব.. এই বছরে (২০১৫) মার্চের ২৫ তারিখে জনৈক হরিশঙ্কর জৈন মহাশয় ও তাঁর ৫ জন সঙ্গি আর এস এস মনোভাবাপন্ন উকিল রাজেশ কুলশেখরের মাধ্যমে আগ্রা সিটি কোর্টে একটি মামলা করেন, যার ভাবার্থ হল তাজমহল প্রকৃতপক্ষে অগ্রেশ্বর মহাদেব নাগনাথেশ্বরের মন্দির, ওখানে কবর-টবর সব ভুয়ো। হিন্দু মন্দির তাই মুসলিমদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। আগ্রা সিটি কোর্ট পত্রপাঠ মামলাটিকে খারিজ করে দেয়। কিন্তু যাদের উত্থান ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’-র মত শ্লোগান দিয়ে তারা কি অত সহজে দমে যাবেন। তাই নব উদ্যমে এলাহাবাদ হাই কোর্টে মামলা করেন। https://m.economictimes.com/news/politics-and-nation/civil-court-dismisses-plea-claiming-taj-mahal-ownership-for-hindus/articleshow/46714565.cms
এই মামলাতেও হেরে যাওয়ার পর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষ্টি, কলা ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী মহেশ মিশ্র বলেন, তাজমহল হিন্দু মন্দির তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অতএব, তাজমহল বাঁচল! খতরা টাল গয়া।
এবার দেখি মরা হাতি লাখ টাকা প্রবচনটির একটি সফল প্রয়োগ। মুসলিমরা তো এখন মরা হাতিই, তবূও দাম লাখ টাকা। আরও ভালো ভাবে বলি মোগলদের এক বংশধর এখন হাওড়ায় চায়ের দোকান চালান। কিন্তু তিনি মরা হাতি হলেও তাঁর পূর্ব পুরুষের ইমারত লাখ লাখ টাকা রোজগার করছে। অবশ্য সুধিজন বলবেন কপালের জোরে চা ওয়ালাও তো প্রধান মন্ত্রী হন। মোগলদের তৈরী তাজমহল সহ অন্য নির্মাণ সম্বন্ধে মন্ত্রী মহাশয় ভালো কয়েকটি কথা বলেছেন। এক প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, ভারতে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা সব থেকে বেশি;
১) তাজমহল (২৩%- ৬.৪ লক্ষ জন পর্যটক,আয় ২৮৩৬৪ কোটি টাকা), তারপরে
২) আগ্রা দুর্গ (১২%-৩.৪৩ লক্ষ জন পর্যটক, আয় ১৪৮০০ কোটি টাকা),
তারপর
৩) কুতব মিনার (১০%-২.৭৬ লক্ষ পর্যটক, আয় ১২৩২০ কোটি টাকা)।
৪) ৪র্থ হচ্ছে দিল্লির হুমায়ুন মকবরা।
৫) ফতেপুর সিক্রি (৫ম), প্রথম দশটি বিদেশি পর্যটক প্রিয় স্তাপত্যর মধ্যে ফতেপুর সিক্রি-আগ্রা ক্লাস্টারের পাঁচটি পড়ে। আকবরের মকবরা (৮ম), ইতমদদৌল্লা (১০ম)।
২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ এই তিন বছরে বিদেশি পর্যটকরা খরচ করে গেছেন যথাক্রমে ৯৪,৪৮৭ কোটি টাকা, ১,০৭,৬৭১ কোটি টাকা ও ১,২৩,৩২০ কোটি টাকা। টাকা খরচ করে গেছেন মানে দিল্লি-আগ্রা সর্বত্র হোটেল মালিক, বাস, ট্যাক্সি, অটো মালিক, গাইড, টাঙ্গাওয়ালা সকলেই আয় করেছেন এবং সরকারের আয় হচ্ছে, চাপানো বিভিন্ন কর থেকে। অর্থাৎ তাজমহল (অন্য স্থাপত্য সহ) কোটির উপর ভারতীয়কে বাঁচালো বা বাঁচাচ্ছে।
প্রশ্ন, মামলা, কেস-কাছারি এসব হচ্ছে কেন? সরাসরি উগ্র হিন্দুত্বকে দোষ দেওযা যায়। কিন্তু এই হিন্দুরাই তো ১৮৯৩ পর্যন্ত কোন দাঙ্গা ছাড়াই মুসলিমদের সঙ্গে সহাবস্থান করে গিয়েছিল। আমি বলব ব্রিটিশদের তথ্য বিকৃতি থেকে ইতিহাস বিকৃতি যাকে তথ্য সন্ত্রাসও বলা যায় এ সবের কারণ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যটকপ্রিয় আগ্রা দুর্গ ভ্রমণকালে এইরকমই এক তথ্য সন্ত্রাস দেখেছিলাম, যা জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসাবে ধরা যেতে পারে।
ভারতবর্ষের পর্যটনঃ আমার দিল্লি-আগ্রা ভ্রমণ, ও ব্রিটিশের ভুল ইতিহাসের প্রতিবাদ
আগ্রার তাজমহল, আপামর ভারতবাসীর এমনকি বিশ্ববাসীর পর্যটনের একটি উল্লেখযোগ্য ঠিকানা। তাজমহল সত্যই সপ্তম আশ্চর্য। তাজমহলের সামনে দাঁড়ালে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। জীবনের প্রথম দৃশ্যে আমার মনে হয়েছিল নীল আকাশের বুকে একটি সাদা ধপধপে হাঁস উড়ে যাচ্ছে। এরপর কতবারই না তাজকে দেখেছি। দেখেছি ভোরের আলোতে, দেখেছি সন্ধ্যের লালিমায়, দেখেছি সূর্যের রঙ বদলের সাথে সাথে তাজমহলের রঙ বদল, তাজের গায়ে দামি পাথরের ঝিকিমিকি। দেখেছি খোদিত বিভিন্ন সুরার আয়াতগুলি, একেবারে প্রথম দিকে দেখেছি তাজমহলের গর্ভগৃহে বেসমেন্টে বাদশাহ-বেগমের প্রকৃত কবর। তাজমহলকে যমুনার পরপারে মহতাববাগ থেকেও দেখেছি। যেখানে কথিত কালো তাজের পরিত্যক্ত ভিত্তিও রয়েছে। আগ্রায় অপর যে প্রধান দ্রষ্টব্য তা হল আগ্রা দুর্গ। আগ্রা দুর্গের বিশাল আকার দেখে মোঘল ভারতের বৈভবকে মনে করিষে দেয়। এখানে সব কিছুই সুন্দর ও বিশালাকার। আগ্রা দুর্গেই মুঘলরা প্রথম শ্বেতপাথরের ব্যবহার করেছিল। আগ্রা দুর্গের ভিত্তি স্থাপন করেন ইব্রাহিম লোদি, পরে বাবর এখান থেকেই রাজ্য পরিচালনা করেন। হুমায়ুন রাজধানী নিয়ে যান দিল্লিতে। সেখান থেকে রাজধানী ফিরিয়ে আনেন আকবর, প্রথমে ফতেপুর সিক্রিতে পরে আগ্রায়। জাহাঙ্গির এখান থেকেই ভারত শাসন করেন। এরপর শাহজাহান রাজধানী নিয়ে যান দিল্লিতে। আগ্রা দুর্গের শ্বেতপাথরের কারুশিল্পমন্ডিত সুদৃশ্য জেনানা মহলের এক পাশে লাল ও বেগুনি রঙের মিশ্রণে কারুকার্যময় একটি বিশালাকায় দরজা রাখা আছে।
শেষবার ২০১০-এ স্বেচ্ছায় গাইড হওয়া রাজু সোনকার দরজাটা দেখিয়ে একটি ভুল ইতিহাস বলে যাচ্ছিল। এই দরজাটি সোমনাথ মন্দিরের দরজা, সুলতান মাহমুদ লুঠ করে কাবুল নিয়ে গিযেছিল। ইংরেজরা ফিরিয়ে আনে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ইতিমধ্যে নিকটেই রাখা শ্বেত পাথরের উপর খোদিত লেখাটি পড়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে লেখা আছে অন্য ইতিহাস। খোদিত ইতিহাস বলছে রাজু সোনকার যা বলছে ইংরেজ গভর্ণর ঠিক একই কথা বলে হিন্দু-মুসলিমের অটুট বন্ধনকে ভাঙতে চেষ্টা করেছিল। শ্বেতমর্মরে কালো অক্ষরে খোদিত লেখাটি বলছে, গজনির সুলতান মাহমুদ ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান, এই গেটটি প্রকৃতপক্ষে মাহমুদ গজনভির মকবরার গেট ছিল এবং সেখান থেকে ব্রিটিশ ১৮৪২-এ নিয়ে আসে। তৎকালীন গভর্ণর জেনারেল লর্ড এলেনবরো এক ঐতিহাসিক ঘোষণায় বললেন, এগুলি হল সোমনাথ মন্দিরের চন্দন কাঠের গেট যা মাহমুদ ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে লুঠ করে গজনি নিয়ে গিয়েছিলেন, এবং ব্রিটিশ ৮০০ বছর আগে হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া একটি অপমানের প্রতিশোধ নিল।
এই মিথ্যা দাবিটি করা হয়েছিল শুধুমাত্র ভারতীয় সংখ্যাগুরুদের নিকটে ভালো সাজার জন্যে। প্রক়ৃতপক্ষে, দরজাটি তৈরী হয়েছিল চন্দন কাঠের পরিবর্তে গজনির স্থানীয় দেবদারু গাছের কাঠ থেকে। দরজাটির কারুকার্যর সঙ্গে প্রাচীন গুজরাটি কলার কোন মিল নেই, এবং দরজাটির উপর দিকে আরবী অক্ষরে সুলতান মাহমুদের নাম লেখা আছে। যদিও অপর ইংরেজ জন মার্শাল সাহেব সমস্ত মিথ্যা উদ্ঘাটন করে দরজার সামনে এই খোদাইটি স্থাপন করেন, কিন্তু ইংরেজিতে লেখা খোদাইটি একমাত্র শিক্ষিত লোক পড়তে পারে বলে, রাজু সোনকারের মত লোকরা মিথ্যা ইতিহাস বলে পার পেয়ে যায় বা যাবে। এরপর সিকান্দ্রার আকবরের মকবরা ও আগ্রার আরও কয়েকটি স্থাপত্য দেখে দিল্লি পাড়ি দিই। .সেখানে এক দুরূহ কোণ থেকে কুতব মিনারের আগাপাশতলা সামগ্রিক ছবি তুলতে পারি। তারপর হুমায়ুন মকবরার ছবি নিই।
একটামূর্তি নাকি তাজমহলের থেকেও বেশি রোজগার করছে।
একটা মূর্তি (বল্লভভাই প্যাটেল মূর্তি):
গুজরাটের নর্মদা নদীর সাধু বেট নামক একটি দ্বীপে ৩১ শে অক্টোবর ২০১৮ উচ্চতায় ১৮৩ ফুট মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। অনেকেই বলেন, গুজ্জুদের দেশে, গুজ্জু কতৃক, প্রায় সহমতাবলম্বী গুজ্জু মূর্তি প্রতিষ্ঠা। মূর্তিটি এই ভেবে স্থাপন করা হয়েছিল যে আশপাশের জঙ্গলময় ভূমি, নর্মদা উপত্যকায় পর্যটন আরও বৃদ্ধি পাবে।
দাবি যাই হোক, ঠিক এক বছর পর গত নভেম্বর থেকে আই টি সেল আসরে নেমে পড়েছে। তাদের দাবি ভারতের প্রিয়তম পর্যটনস্থল, তাজমহলের জায়গায় বিজেপির স্বপ্ন মূর্তিটি স্থান করে নিয়েছে। আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উপার্জন করছে তাদের বক্তব্য হল, গত ৩ বছরে তাজমহল দেখেছে মাত্র ৭.৫ লাখ পর্যটক। সেই জায়গায় আই টি সেলের একান্ত প্রিয়, বল্লভ মূর্তিটি দেখে ফেলেছে ২৬ লাখ পর্যটক।
ওইসময়ে উপার্জন করেছে, তাজমহল গড় প্রতি বছর ২২.৩ কোটি টাকা। আর বল্লভ মুর্তি তাজমহলের উপার্জনকে ছাড়িয়ে আকাশ ছুঁতে চলেছে, কল্পনাতীত ৭১.৬ কোটি টাকা। শুধু তাজ নয় বিজেপির রাজত্বে মুঘলরাই হেরে গেল। আধুনিক ভারতের সম্পদগুলিকে বেচে দেওয়ার জন্যেই যে আড়ালটি শীর্ষে।
কিন্তু সর্দার সরোবর নর্মদা নিগম লিমিটেডের প্রেস রিলিজ বলছে, মূর্তি দেখতে পর্যটক এসেছিল, ২৭ লাখ। উপার্জন হয়েছে ৮১ কোটি। হিসাবমত টিকিট প্রতি ৩০০ টাকা দাম।
এবার দেখি সংসদে পর্যটন মন্ত্রক তাজ সম্পর্কে কি হিসাব দিয়েছে? ২০১৬-১৭-তে তাজমহল ভ্রমণ করেছে ৬১ লক্ষ পর্যটক, ২০১৭-১৮-তে ৬৫ লক্ষ, ২০১৮-১৯-এ ৬৯ লক্ষ। ভাববেন না আইটি সেল এর সাড়ে ৭ লাখ পর্যটক আর বাস্তবে তার দশগুণ পর্যটক সংখ্যা আইটি সেলকে লজ্জায় ফেলবে। তাদের নীতি, ‘লজ্জা ঘৃণা ভয় তিন থাকতে নয়‘।
এইবার আসি উপার্জনের হিসাবে, ২০১৬-১৭-তে ৫০ কোটি, ২০১৭-১৮-তে ৫৭ কোটি, ২০১৮-১৯-এ ৭৮ কোটি। তাহলে জন প্রতি টিকিটের দাম কত দাঁড়ায়? ৫০ টাকার মত। বল্লভ মূর্তির মত ১২০ টাকা হলে কত হত? দুটি ক্ষেত্রেই দেশি পর্যটকদের প্রবেশমূল্য দিয়েছি। বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশমূল্য বহু বেশি।
আই টি সেল শুধু যে মিথ্যা নিয়ে কারবার করে তা নয়। তারা ভারতীয় সংস্কৃতি বরবাদ করে, সমাজে বিভাজন আনে। আর এ সবই হল ভারতকে বেচে দেওয়ার একটা আড়াল।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3130173473769017&id=100003291868150
তাজমহলের নাম ভাঙিয়ে খেয়েও বলবে দাসত্ব, বিজাতীয়-যোগি উবাচ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাম্প্রতিক বাণী তাজমহলের পাশে নির্মীয়মান মুঘল মিউজিয়াম আর মুঘল নামে নামাঙ্কিত হবে না বরং নাম হবে ছত্রপতি শিবাজী মিউজিয়াম। ২০১৫ তে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব শিলান্যাস করেছিলেন। তাজমহলের পাশেই ৬ একর জমির উপর মিউজিয়ামটি হওয়ার কথা। অখিলেশ নাম দিয়েছিলেন মুঘল মিউজিয়াম।
যোগি বলেছেন, মুঘলরা আমাদের নায়ক হতে পারে না। তিনি বলেছেন যা কিছু দাসত্ব মনোবৃত্তির (মানে, নাম, সংস্কৃতি, ইমারত) তা একে একে মুছে ফেলা হবে। মূল বক্তব্য,”দেশের গর্ব জড়িয়ে এমন বিষয়কে প্রচার করা দরকার। ক্রীতদাস প্রকৃতির ইতিহাস নয়। মুঘলরা আমাদের হিরো হতে পারে না। জাতীয়তাবাদীী ভাবাদর্শকে উৎসাহিত করতে হবে। শিবাজী মহারাজ আমাদের হিরো”।
যোগির তিন বছরের শাসনে বেশ কিছু রাস্তা, ইমারত এমনকি আস্ত এক শহরের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। এলাহাবাদ নাম পাল্টে হয়ে গেল প্রয়াগরাজ। বাস্তবে বহু দিন, বহু বছর বা ‘শ পাঁচেক বছর ধরে যার অস্তিত্ব রয়েছে তার নাম পাল্টে গেলে যা নির্মীয়মান তার নাম পাল্টাতে আর কত কসরৎ করতে হয়? চুটকি মেরে হয়ে যায়। যদিও তাজমহলের পূর্বদ্বারের নিকটবর্তী মিউজিয়ামটিতে থাকবে মুঘল আমলের খাদ্য, জামা কাপড়, আসবাবপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, তাদের সংস্কৃতির পরিচয়, রীতিনীতি ইত্যাদির প্রদর্শনী। অথচ নাম হবে শিবাজীর নামে।
ভারতের সর্বাপেক্ষা পর্যটন প্রিয় ইমারত হল তাজমহল। এরপর আগ্রা দুর্গ, ফতেপুর সিক্রি, সিকান্দ্রা, দিল্লির হুমায়ুন মকবরা, লালকেল্লা ইত্যাদি। সবকটাই মুঘলদের তৈরি। প্রথম তিন-চারটি উত্তর প্রদেশে অবস্থিত। তার থেকে আয় হাত পেতে নিতে যোগীরাজের আপত্তি নেই। কিন্তু বক্তব্য রাখার সময় মুঘল রাজত্ব দাসত্ব হয়ে যায়, মুঘল বাদ দিয়ে জাতীয়তাবাদ হয়। যোগীর আয়ের উৎস মুঘলরা এইসব ইমারত তৈরী করত মানে তারা এই দেশটাকে নিজের দেশ বলে মনে করত। আর মুঘলদের জাতীয়তাবাদ থেকে বাদ দেওয়া মানে খন্ডিত জাতীয়তাবাদ।
তাজমহল তৈরি করেছিলেন, শাহজাহান আর ছত্রপতি শিবাজীর উত্থান আওরঙ্গজেবের সময়। তিনি তাজমহল থেকে আয় না নিয়ে মিউজিয়ামের নামকরণ করতে পারতেন। শিবাজীর নাম ব্যবহার করতে পারতেন, আওরঙ্গজেবের নির্মিত কোন প্রতিষ্ঠানের পাশে নির্মীয়মান কোন ইমারতের।
আসলে লড়াইটা গুজ্জু বনাম মারাঠি, বিজেপি বানাম শিবসেনার। যোগী সেই লড়াইয়ে মারাঠি শিবাজিকে তোল্লা দিয়ে লড়াইয়ের আরেকটি মাত্রা দিলেন। অচিরেই বোঝা যাবে তিনি গুজ্জু মহলে না মারাঠি মহলে? তবে তাজমহলের ক্ষেত্রে তাঁর সবটাই রাজনীতি।
লিখেছেনঃ চৌধুরী আতিকুর রহমান