লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এ নিয়ে মুহাদ্দিসদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কোন মুহাদ্দিস বলেন তিনি শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন আবার কোন মুহাদ্দিস বলেন তিনি হাম্বলী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। মুহাদ্দিস আবু আসিম আব্বাদী (রহঃ), ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী (রহঃ), হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ), নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী প্রভৃতিরা বলেন যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) অর্থাৎ শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। পক্ষান্তরে হযরত ইবনে আবী ইয়ালা (রহঃ), আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এবং আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) প্রভৃতিরা বলেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর অর্থাৎ হাম্বলী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। দেখা যাক মুহাদ্দিসরা ইমাম বুখারী (রহঃ) মাযহাবের ব্যাপারে কি বলেছেন?
১) আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী (রহঃ) [মৃত্যু ৭৭১ হিজরী] হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মাযহাবের ব্যাপারে ‘তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়া’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আবু আসিম আব্বাদী ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বর্ণনা ‘তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়া’তে করেছেন। তিনি বলেছেন, ইমাম বুখারী আবু জাআফরানী, আবু সওর এবং কিরাবসী থেকে হাদীসের শ্রবণ করেছেন। (আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী বলেন) আমি বলছি যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম হুমাইদী (রহঃ) থেকে ফিকাহর জ্ঞান অর্জন করেন এবং তাঁরা ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর আসহাবদের মধ্যে ছিলেন।” (তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়াতুল কুবরা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২১৪)
২) হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) [মৃত্যু ১১৭৪ হিজরী] লিখেছেন, “ইমাম বুখারী (রহঃ) কেও ‘তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়া’দের মধ্যে গণ্য করা হয়। এবং যেসব ব্যাক্তি তাঁকে ‘তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়া’দের মধ্যে গণ্য করেছেন তাঁদের মধ্যে ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী (রহঃ) ও রয়েছেন। তাজুদ্দীন সুবকী বলেছেন, যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম হুমাইদী (রহঃ) থেকে ফিকাহর জ্ঞান অর্জন করেন এবং তিনি ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) থেকে অর্জন করেছেন। আমার শায়েখ হযরত আল্লামা সাহেব ইমাম বুখারী (রহঃ) কে শাফেয়ীদের মধ্যে গণ্য করা থেকে এস্তেদলাল করেছেন যে তাজুদ্দীন সুবকী (রহঃ) ইমাম বুখারী (রহঃ)কে‘তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়া’দের মধ্যে বর্ণনা করেছেন । এবং ইমাম নববী (রহঃ) এর কালাম তো এর আগেই বলা হয়েছে যা এর সমর্থন করে।” (আল ইনসাফ মাআ তরজমা ওয়াসসাফ, পৃষ্ঠা-৬৭)
হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) এর এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে তাঁর নিকট হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মুকাল্লিদ ছিলেন।
৩) আহলে হাদীসদের বিখ্যাত আলেম নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী সাহেব আহনাফের আয়েম্মাদের বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম বুখারী (রহঃ) কে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মুকাল্লিদ বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “এবার আমরা কিছু শাফেয়ী মাযহাবের আয়েম্মাদের বর্ণনা করব যাতে আমার কিতাব দুইপক্ষের দিক থেকে পূর্ণ এবং দুই পক্ষের দিক থেকে জামে হয়ে উঠে। শাফেয়ী আয়েম্মাগণ দুই ধরণের। প্রথম যাঁরা ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর সাক্ষাত পেয়েছেন আর দ্বিতীয়ত যাঁরা ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। প্রথম ধরণের শাফেয়ী আয়েম্মাদের মধ্যে খালিদ আল খিলাল, আর দ্বিতীয়ত শাফেয়ী আয়েম্মাদের মধ্যে হলেন, মুহাম্মাদ বিন ইদরীস, আবু হাতীম রাযী, মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বুখারী।” (আবজাদুল উলুম, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১২৬, তবী মাকতাবা কুদুসিয়া, লাহোর)
এখানে নবাব সিদ্দিক হাসান খান সাহেবের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে তাঁর নিকট ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মুকাল্লিদ ছিলেন। নবাব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব অন্য জায়গায় লিখেছেন, “শায়েখ তাজুদ্দীন সুবকী ‘তাবক্বাতুস শাফেয়ীয়া’ এর মধ্যে বলেছেন যে, ইমাম বুখারী ইসলামের ইমাম, ঈমানদারদের অনুসারী এবং একত্ত্ববাদীদের শায়েখ ছিলেন। সাইয়েদুর রাসুল মুহাম্মাদ (সাঃ) হাদীসের ব্যাপারে তাঁর উপর আস্থা স্থাপন করা যেত। আল্লামা সুবকী বলেন, আবু আসিম ইমাম বুখারীকে আমাদের শাফেয়ী আসহাবদের মধ্যে গণ্য করেছেন।” (আল হিত্তাহ ফি যিকরে সিহাহ সিত্তাহ, পৃষ্ঠা-২৮)
নবাব সিদ্দিন হাসান খান ভূপালী সাহেবের লেখা দ্বারা বুঝা যায় তাঁর নিকট ইমাম বুখারী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের ছিলেন। কেননা তিনি আল্লামা সুবকী এবং আবু আসিম আব্বাদীর ইবারত উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন, প্রতিবাদ করেন নি।
৪) কাযী আবুল হুসাইন মুহাম্মাদ বিন আবী ইয়ালা হাম্বলী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ ‘তাবক্বাতুল হানাবিলা’এর মধ্যে হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। যাতে বুঝা যায় যে তাঁর নিকট ইমাম বুখারী (রহঃ) হাম্বলী মাযহাবের ছিলেন অর্থাৎ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর মুকাল্লিদ ছিলেন।
৫) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃত্যু ৭২৮ হিজরী] ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মাযহাবের ব্যাপারে লিখেছেন, “হাদীসের আয়েম্মাদের মধ্যে উদাহারণস্বরুপ, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী প্রভৃতিরাও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ইমাম ইসহাক বিন রাহওবীয়াদের অনুসারী (মুকাল্লিদ) ছিলেন এবং তাঁদের কাছ থেকেই তাঁরা ফিকাহ ও হাদীসের ইলম অর্জন করেন।” (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-২৩২)
সুতরাং আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর নিকট ইমাম বুখারী (রহঃ) হাম্বলী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন।
৬) আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) [মৃত্যু ৭৫১ হিজরী] ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মাযহাবের ব্যাপারে লিখেছেন, “অনুরুপ ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম আশরাম প্রভৃতিরাও রয়েছেন। এই তাবক্বাতটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) আসহাবদের এবং সেই মুকাল্লিদীনগণ অতি বেশী ইমাম আহমদের অনুসারী ছিলেন যাঁরা ইমাম আহমদের দিকে নিজেদের নিসবত করতেন।” (আআলামুল মুআক্কিয়্যিন, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২২৩)
সুতরাং আল্লামান ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ) বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে তাঁর নিকট ইমাম বুখারী (রহঃ) হাম্বলী মাযহাবের ছিলেন এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর মুকাল্লিদ ছিলেন।
এখানে ইমাম বুখারী (রহঃ) কে শাফেয়ী মাযহাবের বলা হোক আর হাম্বলী মাযহাবের হোক উভয় অবস্থায় তিনি মুকাল্লিদই প্রমাণিত হচ্ছেন।
ইমাম বুখারী (রহঃ) কি মুজতাহীদের মুতলাক ছিলেন?
কিছু লোক বলে থাকেন যে ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহিদে মুতলাক ছিলেন। তাঁদের ধারণা হল, হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহীদে মুতলাক ছিলেন এবং তাঁকে এই জন্যই শাফেয়ী মাযহাবের বলা হত যে তাঁর ইজতেহাদ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর ইজতেহাদের মুতাবিক হয়ে যেত। কিন্তু তাহকীক দ্বারা বুঝা যায় তাঁদের এই ধারণা ভ্রান্ত। কেননা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) লিখেছেন, “ইমাম বুখারী (রহঃ) হাদীসের মধ্যে গরীব শব্দের ব্যাখ্যাকে সেই শাস্ত্রের বিদগ্ধ উলামাদের উদাহারণস্বরুপ, আবু উবাইদাহ, নসর বিন শামিল এবং ফারা প্রভৃতিদের থেকে নকল করেছেন। ফিকহী বিতর্কের ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ), আবু উবাইদ প্রভৃতিদের থেকে অর্জন করেছেন। আর অধিকাংশ মাসায়েলে তিনি কিরাবী এবং ইবনে কিলাব প্রভৃতিদের থেকে হাসিল করেছেন।” (ফতহুল বারী শারাহ সহিহুল বুখারী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫৩)
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর এই বক্তব্য থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে ইমাম বুখারী (রহঃ) ফিকহী মাসায়েলের ব্যাপারে হযরত ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এবং ইমাম আবু উবাইদাহ (রহঃ) প্রভৃতিদের থেকে গ্রহণ করতেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহীদের মুতলাক ছিলেন না। কেননা যিনি মুজতাহীদে মুতলাক হন তিনি ফিকহী মাসায়েলের ব্যাপারে নিজে ইজতেহাদ করে থাকেন। অন্যের ইজতেহাদের উপর নির্ভর করেন না এবং অন্যের ইজতেহাদ নকলও করেন না।
এখানে দ্বিতীয়তঃ কথা ভাববার বিষয় যে, যদি ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহীদে মুতলাক হতেন তাহলে তাঁর ব্যাপারে আলোচনা ‘তাবক্বাতে ফুকাহা’দের মধ্যে হত। কিন্তু ‘তাবক্বাতে ফুকাহা’দের মধ্যে তাঁর ব্যাপারে কোন আলোচনা নেই। ইমাম আবু ইসহাক সিরাজী শাফেয়ী (রহঃ) তাঁকে ‘তাবক্বাতে ফুকাহা’ এর মধ্যে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর কোন বর্ণনা নেই। তৃতীয়তঃ এই ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা যাক যে মুজতাহীদদের ইজতেহাদের কিছু উসুল থাকে। যার উপর ভিত্তি করে তাঁরা ইজতেহাত করে থাকেন। যদি ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহীদ ছিলেন তাহলে নিশ্চয় তাঁর ইজতেহাদের উসুল থাকত। কিন্তু তাঁর ইজতেহাদের উসুল পাওয়া যায় না। চতুর্থতঃ এটাও দেখা উচিৎ যে ইমাম বুখারী (রহঃ) যদি মুজতাহীদে মুতলাক হতেন তাহলে ফিকাহার গ্রন্থে যেখানে অন্য মণীষীরা আয়েম্মায়ে মুজতাহীদিনদের ফিকহী বক্তব্য উল্লেখ করেছেন সেখানে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ফিকহী বক্তব্য উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ফিকাহর গ্রন্থগুলিতে ইমাম সাহেবের ফিকহী বক্তব্য থেকে সম্পূর্ণ খালি, সেখানে তাঁর ফিকহী বক্তব্যের কোন উল্লেখ নেই। সুতরাং ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহীদে মুতলাক ছিলেন না।
হযরত ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর খাস ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন। তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) এর হাদীসের ব্যাপারে সহীহ হওয়া, যয়ীফ হওয়া, রাবীদের সিক্বাহ হওয়া ও যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে বক্তব্য নকল করেছেন। কিন্তু তিনি ফিকহী মাযহাব ও মাসলাকের ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বক্তব্য তিরমিযী শরীফে উল্লেখ করেন নি। যদিও তিনি অন্য আয়েম্মায়ে মুজতাহীদিন ছাড়াও ইমাম বুখারী (রহঃ) এর থেকে কম দরজার ফুকাহাদের বক্তব্য এবং মাযহাবের কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটা স্পষ্ট দলীল যে ইমাম বুখারী (রহঃ) মুজতাহীদে মুতলাক ছিলেন না।
তবে ইমাম বুখারী (রহঃ)কে মুজতাহীদ ফিল মাযহাব বা মুজতাহীদে মুনতাসীব বললে কোন অসুবিধা নেই। কেননা, এরকম মুজতাহীদ, মুজতাহীদ হওয়া সত্ব্যেও ইজদেহাদের উসুলে নিজের ইমামের মুকাল্লিদই থাকেন। যেমন ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ), ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) প্রভৃতিরা মুজতাহীদে মুনতাসীব হওয়া সত্ত্বেও হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর মুকাল্লিদ ছিলেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ব্যাপারে হযরত মাওলানা সরফরাজ খান সফদর (রহঃ) লিখেছেন, “যাইহোক আমার তাহকীকে (গবেষণায়) ইমাম বুখারী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। তিনি মুজতাহীদে মুতলাক ছিলেন না । তিনি শাফেয়ী ছিলেন এবং তাঁর ইজতেহাদ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ইজতেহাদের মুতাবিক হয়ে যেত না বরং তিনি দৃষ্টিভঙ্গীতে শাফেয়ী মাযহাবের ছিলেন এবং মুকাল্লিদ ছিলেন। এটা আহলে ইলমদের শানের পক্ষে সমীচীন।” (তায়েফায়ে মনসুরা, পৃষ্ঠা-১১১)
সুতরাং আকাবির উলামাদের লেখনী দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) মুকাল্লিদ ছিলেন এবং মাসায়েলে ইজতেহাদীয়াতে তিনি নিজের ইমামের মুকাল্লিদ ছিলেন। হযরত ইমাম বুখারী (রহঃ) থেকে তকলীদের বিপক্ষে একটি হরফও লিখেছেন বলে প্রমাণিত নেই। কোন স্থানেই তিনি আয়েম্মায়ে মুজতাহীদিনদের ফিকহী মাসায়েলের ক্ষেত্রে তকলীদকে খারাপ বলেন নি।
বুখারী শরীফের ভিত্তিই হল তাকলীদের উপর
যদি ইনসাফের দৃষ্টিতে দেখা যায় তাহলে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) যে বুখারী শরীফ রচনা করেছেন তার ভিত্তিই হল তাকলীদের উপর। এই জন্যই ইমাম বুখারী (রহঃ) হাদীস নিজের শায়েখের কথার উপর নির্ভর করেছেন, তাঁর শায়েখ আবার তাঁর শায়েখের উপর নির্ভর করেছেন এবং এই শায়েখ আবার তাঁর শায়েখের উপর নির্ভর করেছেন। এই নির্ভরতার ধারাবাহিকতা হুযুর (সাঃ) এর নিকট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কারো কথার উপর নির্ভর করে সেই কথার দলীল অনুসন্ধান না করাকেই তাকলীদ বলা হয়।
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর শায়েখের কাছে হাদীস শুনেছেন এবং তিনি সেই হাদীসের সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল অনুসন্ধান করেন নি। কোন দলীল ছাড়াই তিনি সেই হাদীসকে নবী (সাঃ) এর হাদীস বলে মেনে নিয়েছেন। এটা তাকলীদ নয় তো কি? কেউ এটা প্রমাণ করতে পারবেন না যে ইমাম বুখারী (রহঃ) নিজের শায়েখের কাছ থেকে সেই হাদীসকে রাসুলের হাদীস হওয়ার জন্য দলীল অনুসন্ধান করেছেন অথবা তাঁর শায়েখ তাঁর শায়েখের কাছে দলীল অনুসন্ধান করেছেন। বুঝা গেল বুখারী শরীফের সমস্ত হাদীস তাকলীদের উপরেই নির্ভরশীল।