লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার কয়েকটির নাম নিচে দেওয়া হল,
১) কাযায়াস সাহাবা ওয়াত তাবিয়ীনঃ- এই গ্রন্থটি ইমাম বুখারী (রহঃ) সর্বপ্রথম রচনা করেন ২১২ হিজরী সনে। এই গ্রন্থটি তিনি ‘তারিখে কাবীর’ এর আগে রচনা করেন। এই কিতাবটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ কিতাব। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই কিতাবটি আজকাল কোথাও পাওয়া যায় না।
২) তারিখে কাবীরঃ- এই কিতাবটি হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) ১৮ বছর বয়সে রচনা করেন। এই কিতাব তিনি মসজিদে নববীতে হুযুর (সাঃ) এর রওযায়ে আকদাসের পাশে বসে পূর্ণিমার রাত্রে লিখেছেন। আল্লামা যাহাবী (রহঃ) ইমাম সাহেব (রহঃ) এর বক্তব্য নকল করে লিখেছেন, “আমি ‘কিতাবুত তারিখ’ সেই সময় হুযুরে আকরাম (সাঃ) এর কবর মুবারকের পাশে বসে পূর্ণিমার রাত্রে লিখেছি।” (সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৪০০)
হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর আমল যে হযরত নবী করীম (সাঃ) এর কবর মুবারকের পাশে বসে ‘তারিখে কাবীর’ রচনা করেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে তিনি নবী (সাঃ) এর কবর থেকে বরকত হাসিলের আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন।
হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই কিতাব দেখে ইমাম ইবনে ইসহাক বিন রাহবীয়া (রহঃ) আনন্দচিত্তে আমীর আব্দুল্লাহ বিন তাহির খুরাসানীর সম্মুখে পেশ করে বলেন, আমি কি তোমাদেরকে যাদু দেখাব? এই কিতাবের জন্যই ইবনে উকাইদাহ বলেছেন যে, যদি লোকেরা দশ হাজার হাদীসও লেখে তাহলে এই কিতাবের সমতুল্য হতে পারবে না। (তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৮)
হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ইতিহাসগ্রন্থটি আবু আহমদ মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান বিন ফারিস এবং আবুল হাসান মুহাম্মাদ বিন সহল আল ফাওসী এবং অন্যন্য মুহাদ্দিসরা বর্ণনা করেছেন।
৩) তারিখুস সাগীরঃ- ইতিহাসের ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই গ্রন্থটির মূল্য অপরিসীম। হাদীসশাস্ত্র রিজালশাস্ত্রের সাথে এমন সম্পর্ক যেমন আত্মার সাথে শরীরের সম্পর্ক। সেজন্য ইমাম বুখারী (রহঃ) এর সাথে এই কিতাবের এক খাস আকর্ষন ছিল। এই গ্রন্থটিকে ইমাম বুখারী (রহঃ) থেকে আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আল আসকির বর্ণনা করেছেন। (হাদীউস সারী, পৃষ্ঠা-৪৯২)
এই কিতাবে হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন প্রভৃতিদের জন্ম, মৃত্যুর ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি জেরাহ তা’দিলের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
৪) আল জামেউল কাবীরঃ- ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই কিতাবটির ব্যাপারে ইবনে তাহির বর্ণনা করেছেন। এই কিতাবটির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা জানা যায় না এবং এর নুসখার অবস্থাও জানা যায় না। কাশফুল জুনুন নামক কিতাবের রচয়িতা ইমাম সাহেব (রহঃ) এর ‘আল জামেউল কাবীর’ এর ব্যাপারে উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন।
৫) খলকে আফআলুল ইবাদঃ- সাহাবা এবং তাবেয়ীনগণ কুরআনের আয়াত এবং হাদীসের মধ্যে ভূলভাল পার্থক্যকে বাতিল সাব্যস্ত করতেন অনুরুপ পন্থা ইমাম সাহেব (রহঃ)ও এই কিতাবে বর্ণনা করেছেন। এটাই ইলমে কালামের নিয়ম।
এই কিতাবটিকে ইমাম সাহেব (রহঃ) থেকে ইউসুফ বিন রিহান এবং আল্লামা ফিরাবরী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। এই কিতাবে বাতিল ফিরকা জাহমিয়া এবং মাতালিয়ার প্রতিবাদ করা হয়েছে। এই কিতাবে কুরআনের আয়াতের সাথে হাদীস, সাহাবাদের আসার এবং তাবেয়ীনদের বক্তব্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
৬) আল মুসনাদুল কাবীরঃ এই কিতাবটিকে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ছাত্র মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ ফিরাবরী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ছাত্র ছিলেন। এই কিতাবটির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা জানা যায় না এবং এর নুসখার অবস্থাও জানা যায় না এবং রাবীদের ব্যাপারেও কিছু জানা যায় না।
৭) আল তাফসীরুল কাবীরঃ- এই কিতাবটিকেও ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ছাত্র মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ ফিরাবরী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ছাত্র ছিলেন। এই কিতাবটির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা জানা যায় না এবং এর নুসখার অবস্থাও জানা যায় না এবং রাবীদের ব্যাপারেও কিছু জানা যায় না।
৮) কিতাবু জুআফা আস সাগীরঃ- এই কিতাবে ইমাম বুখারী (রহঃ) যয়ীফ রাবীদের ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন। তিনি এই কিতাবে রাবীদের যয়ীফ হওয়ার কারণ এবং তাদের ছাত্রদের কথাও উল্লেখ করেছেন। এই কিতাবের নামকরণ ‘কিতাবু জুআফা আস সাগীর’ (ছোট যয়ীফ) থেকে বুঝা যায় যে তিনি ‘কিতাবু জুআফা আল কাবীর’ নামেও কোন কিতাব লিখেছিলেন বা লেখার মনস্থ করেছিলেন।
এই কিতাবটিকে হজরত বুখারী (রহঃ) থেকে ইমাম আবু বশীর মুহাম্মাদ বিন আহমদ বিন হাম্মাদ আদ দাওলাবী (রহঃ) আবু জাফর মুসিহ বিন সায়ীদ (রহঃ) এবং আদম বিন মুসা আল খাওরী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন।
৯) ইসলামী আস সাহাবিহীঃ- এই কিতাবটির ব্যাপারে আবুল কাসিম বিন মিনদাহ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি স্বয়ং এই কিতাবকে ইবনে ফারিস থেকে বর্ণনা করেছেন। আবুল কাসিম বাগবী তাঁর কিতাব ‘মুজামে সাহাবিহী’ কিতাবে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই কিতাবের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। ইসলামী আস সাহাবিহী যে বিষয়বস্তুর উপর লেখা সে ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর আগে কেউ লেখেন নি। অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামদের ব্যাপারে স্বতন্ত্র কোন গ্রন্থ ইমাম সাহেবের আগে কোন লেখক লিখে যান নি। এই মহৎ কাজের সূচনা ইমাম বুখারী (রহঃ) করেন।
হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর পরে আবুল কাসিম বিন মিনদাহ, ইবনে আব্দুল বার, ইবনে আল আসির, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) প্রভৃতি মুহাদ্দিসগণ সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনদের অবস্থার ব্যাপারে বিস্তারিত লেখালেখি করেন।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, “আমার জানা মতে সাহাবায়ে কেরামদের ব্যাপারে সর্বপ্রথম ইমাম বুখারী (রহঃ) লেখালেখি করেন। তিনিই সর্বপ্রথম এই ব্যাপারে কলম ধরেন। ইমাম বাগবী তাঁর থেকে নকল করেছেন। ইমাম বাগবী সাহাবাদের ছাড়াও যাঁরা সাহাবা নন তাঁদের ব্যাপারেও বর্ণনা করেছেন।”
১০) কিতাবুল ইলালঃ- আবুল কাসিম বিন মিনদাহ এই কিতাবটির ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। তিনি এই কিতাবটি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ থেকে তিনি আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন আস শারকী থেকে তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। এই কিতাবটিও খুবই উচ্চমানের। সম্ভবত এই কিতাব যে বিষয়বস্তুর উপর লেখা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনিই সর্বপ্রথম লেখালেখি করেন।
১১) কিতাবুল ওয়াহদানঃ- এই কিতাব থেকে আবুল কাসিম বিন মিনদাহ অধিকাংশ উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। এই কিতাবে ইমাম বুখারী (রহঃ) সেইসব সাহাবাদের ব্যাপারে লিখেছেন যাঁরা কেবলমাত্র একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন । ইমাম নাসায়ী (রহঃ)ও ‘কিতাবুল ওয়াহদান’ লিখেছেন। ইমাম নাসায়ী (রহঃ) এর ‘কিতাবুল ওয়াহদান’ ভারতের আগ্রা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) ও ‘কিতাবুল ওয়াহদান’ নামে গ্রন্থ রচনা করেন, সেটাও ভারতের আগ্রা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল এই বিষয়ের উপর ইমাম বুখারী (রহঃ) এর আগে কেউ লেখেন নি। তিনি এই বিষয়ের উপর সর্বপ্রথম এই ব্যাপারে কলম ধরেন।
১২) কিতাবুল মাবসুতঃ- এই কিতাবের ব্যাপারে বর্ণনা ইমাম খালিলী (রহঃ) ‘আল ইরশাদ’ কিতাবে করেছেন এবং মুহিব বিন সালীম এই কিতাবকে ইমাম বুখারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘কিতাবুল মাবসুত’ কোন বিষয়বস্তুর উপর লেখা হয়েছে তার সন্ধান পাওয়া যায় তবে নামকরণ থেকে অনুমান করা যায় যে এই কিতাবটি তিনি ফিকহী মাসায়েলের উপর লিখেছিলেন যা তিনি হাদীস থেকে ইস্তেম্বাত করেছিলেন।
১৩) কিতাবুল আসরাবিহী।
১৪) কিতাবুল হাবিয়াঃ- এই কিতাবটির ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর পত্রবাহক মুহাম্মাদ বিন আবু হাতিম বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন, “ইমাম বুখারী (রহঃ) হাবিয়ার ব্যাপারে একটি কিতাব রচনা করেছেন। এই কিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তবে ওকী’ ইবনুল জারাহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের কিতাব থেকে এর কোন সম্পর্ক নেই। ওকী’ ইবনুল জারাহর কিতাবুল হাবিয়ার মধ্যে তিনটি মারফূ হাদীস ছিল এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের কিতাবে শুধু পাঁচটি । কিন্তু বুখারী (রহঃ) এর কিতাবে পাঁচশ (৫০০) হাদীস ছিল।” (সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৪১০)
এই কিতাবটিরও নুসখার ব্যাপারে কোন পাত্তা পাওয়া যায় না।
১৫) কিতাবুল কিনাঃ- এই কিতাবটির ব্যাপারে আবু মুহাম্মাদ হাতিম বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তাঁর গ্রন্থে এই কিতাব থেকে হাওয়ালাও দিয়েছেন। এই কিতাবটি কুনিয়াতের উপর লেখা হয়েছে। কুনিয়াতের উপর জ্ঞান থাকাটা মুহাদ্দিসদের জন্য জরুরী। এই বিষয়বস্তুতে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কুনিয়াত বর্ণনা করাটাই উদ্দেশ্য থাকে। এতে এক রাবীর সাথে অন্য রাবীর মিশ্রণ হয়ে যায় না । কুনিয়াত মিশ্রণ হয়ে গেলে বড় বড় মুহাদ্দিসও বিভ্রান্তিতে নিপতিত হন।
১৬) কিতাবুল ফাওয়ায়েদঃ- এই কিতাবটির ব্যাপারে ইমাম তিরমিযী (রহঃ) স্বীয় জামে তিরমিযী কিতাবের ‘কিতাবুল মানাক্বিব’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তিনি নং ৩৭৪২ হাদীসের বর্ণনা করতে গিয়ে এই কিতাবের উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) ইমাম তিরমিযীর হাওয়ালা দিয়ে ‘হাদীউস সারী’ কিতাবের ৪৯২ পৃষ্ঠায় এবং ইমাম ক্বাসতালানী (রহঃ) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর হাওয়ালা দিয়ে তাঁর উক্ত কিতাবের ব্যাপারে লিখেছেন।
তবে এটা জানা যায় না যে মুহাদ্দিস সম্রাট বুখারী (রহঃ) এই কিতাবের মধ্যে কিরকম ফাওয়াদের উল্লেখ করেছেন।
১৭) বিররুল ওয়ালীদাইনঃ- এই কিতাবটিকে মুহাম্মাদ বিন দাওলিয়া (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। নামকরণ থেকে কিতাবটির বিষয়বস্তু জানা যায় তবে এই কিতাবের অস্তিত্ত্বের ব্যাপারে কোন পাত্তা পাওয়া যায় না। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) ‘হাদীউস সারী’ কিতাবে তিনি এর ব্যাপারে বর্ণনা করতে গিয়ে এই কিতাবের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন।
১৮) কিতাবুর রিকাকঃ- এই কিতাবটির ব্যাপারে বর্ণনা ‘কাশফুল জুনুন’ নামক কিতাবের রচয়িতা তাঁর গ্রন্থের খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৭৮ এর মধ্যে করেছেন। কিন্তু তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) এর উক্ত কিতাবের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন কিছু লেখেন নি।
তিনি সহীহ বুখারী শরীফেও ‘কিতাবুর রিফাক’ নামে বাব লিখেছেন। কিন্তু ‘কাশফুল জুনুন’ কিতাব থেকে বুঝা যায় যে ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘কিতাবুর রিফাক’ নামে স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন। কিন্তু আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর লেখা থেকে উক্ত কিতাবের কোন বর্ণনা নেই।
১৯) আল জামেউস সাগীর ফিল হাদীসঃ- ‘কাশফুল জুনুন’ নামক কিতাবের লেখক লিখেছেন যে, ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর বক্তব্য অনুযায়ী এই কিতাব আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল আসকির ইমাম বুখারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) ইমাম বুখারী (রহঃ) এর জীবনীকার ও সহীহ বুখারী শরীফের ভাষ্যকার ছিলেন।
তবে ‘কাশফুল জুনুন’ নামক কিতাবে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর মুকাদ্দামা ফাতহুল বারীতে সেই কিতাবের হিসাবে লেখক ইমাম বুখারী (রহঃ) এর নাম উল্লেখ নেই। তবে তাঁর ‘তারিখুস সাগীর’ কিতাবের উল্লেখ থাকলেও ‘আল জামেউস সাগীর ফিল হাদীস’ এর নাম উল্লেখ নেই।
২০) জুজ কিরাত খলফল ইমামঃ– এটি নামাযে ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ার ব্যাপারে হজরত ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বিখ্যাত রচনা। এই কিতাবে তিনি ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ার ব্যাপারে হাদীস সংকলন করেন।
[কোন হানাফী এই কিতাব পড়ে বিভ্রান্ত হবেন না। ইমাম বুখারী (রহঃ) যেহেতু শাফেয়ী মাযহাবের ছিলেন তাই তিনি নিজ মাযহাব মুতাবিক হাদীস সংকলন করেছেন । এই কিতাব পড়ার সাথে সাথে আল্লামা আমীন সফদর ওকাড়বী (রহঃ) এর ‘তাহকীক জুজ কিরাত খালফাল ইমাম’ অবশ্যই পড়ে নেবেন। তাহলে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হবেন না। হযরত আমীন সফদর ওকাড়বী (রহঃ) ‘জুজকিরাত খালফাল ইমাম’ এর প্রতিটি হাদীসের তাহকীক করে দিয়েছেন। কিতাবটি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।]
২১) জুজ রফয়ে ইয়াদাইনঃ- নামাযে রফয়ে ইয়াদাইনের করার ব্যাপারে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এটি একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ সংকলন। এই কিতাবে তিনি রফয়ে ইয়াদাইন করার সাথে সাথে যারা করে না তাদের উপর কঠিন অভিযোগ করেছেন।
এই কিতাবটি তাঁর থেকে মাহমুদ বিন ইসহাক খাজরায়ী বর্ণনা করেছেন। তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন । তিনি বুখারা শহরে ইমাম সাহেবের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করেন।
এই জুজ রফয়ে ইয়াদাইন কিতাবে ইমাম সাহেব (রহঃ) সহীহ হাদীসের সাথে সাথে যয়ীফ হাদীসও সংকলন করেছেন।
[এই কিতাবটি পড়েও কোন হানাফী এই কিতাব পড়ে বিভ্রান্ত হবেন না। ইমাম সাহেব (রহঃ) যেহেতু শাফেয়ী মাযহাবের ছিলেন তাই তিনি নিজ মাযহাব মুতাবিক হাদীস সংকলন করেছেন। এই কিতাব পড়ার সাথে সাথে আল্লামা আমীন সফদর ওকাড়বী (রহঃ) এর ‘তাহকীক জুজ রফয়ে ইয়াদাইন’ অবশ্যই পড়ে নেবেন। তাহলে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হবেন না। হযরত আমীন সফদর ওকাড়বী (রহঃ) ‘জুজ রফয়ে ইয়াদাইন’ এর প্রতিটি হাদীসের তাহকীক করে দিয়েছেন। এই কিতাবটিও দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।]
২২) আল আদাবুল মুফরাদঃ- এটি ইমাম সাহেব (রহঃ) এর এমন একটি কিতাব যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আদব, আখলাক শিক্ষা দেয়। আসলে এই কিতাবের উপর আমল করলে মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে যেতে পারে। আজকাল যেভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে মানুষ অপসংস্কৃতির অতল অন্ধকারে ডুবে গেছে, একজন মানুষ অন্যজন মানুষকে মানুষ বলে মনে করছে না, প্রবৃত্তির অনুসরন করে মানুষ আজ হিংস্র জন্তুতে পরিণত হয়ে গেছে, মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনের প্রতি কি কর্তব্যবোধ তা বিদায় হয়ে গেছে। তাদের জন্য ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই কিতাব পাঠ করা একান্ত জরুরী।
এই কিতাবটিকে ইমাম সাহেব (রহঃ) থেকে আহমদ বিন মুহাম্মাদ বিন আল জলীল আবরার বর্ণনা করেছেন।
২৩) আল তারিখে ওয়াসাতঃ- (এই কিতাবটি দুই খণ্ডে সৌদী আরব থেকে প্রকাশিত হয়েছে।) ইমাম বুখারী (রহঃ) থেকে এই কিতাবটিকে আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন আব্দুস সালাম খাফফাফ, আবু মুহাম্মাদ জঞ্জুবীয়া বর্ণনা করেছেন। এই কিতাবটির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা জানা যায় না এবং এর নুসখার অবস্থাও জানা যায় না। তবে এই কিতাবটি দুই খণ্ডে সৌদী আরব থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
২৪) কিতাবুত দোয়াঃ- এই কিতাবটি ইমাম বুখারী (রহঃ) দুয়ার ব্যাপারে লিখেছেন। এটি ইমাম বুখারী (রহঃ) এর দুয়ার ব্যাপারে স্বতন্ত্র কিতাব।
২৫) কিতাবুল আশরেবাহঃ- এই কিতাবটির ব্যাপারে ইমাম দারাকুত্বনী (রহঃ) স্বীয় কিতাব ‘আল মাওতালিফ ওয়া আল মুখতালিফ’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
২৬) কিতাবুল হেবা।
২৭) আসমাউস সাহাবাঃ এই কিতাবটি ইমাম সাহেব (রহঃ) সাহাবায়ে কেরামদের নামের উপর লিখেছেন।
২৮) এক লাখ হাদীসের সংকলনঃ
আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন (রহঃ) নিজ শারাহ গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই গ্রন্থের ব্যাপারে সন্ধান দিয়েছেন। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন (রহঃ) এর এই কথাকে সমর্থন করেছেন। আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন (রহঃ) লিখেছেন, “ইমাম আবু সায়ীদ ইসমাইল বিন আবুল কাসিম আল বুসখাযী স্বীয় কিতাব ‘কিতাবুজ জহর বিন বাসমালাহ’ এর মধ্যে ইমাম বুখারীর ব্যাপারে লিখেছেন যে, তিনি হাদীসের ব্যাপারে একটি কিতাব লিখেছেন যেখানে তিনি এক লাখ হাদীস সংকলন করেছেন।” ইবনুল মুলাক্কিন (রহঃ) এবং আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) এটাকে গায়ের মশহুর বলে অভিহিত করেছেন কিন্তু দুঃখের কথা হল এই কিতাব দুনিয়ার কোন কুতুব খানায় পাওয়া যায় না। এই কিতাবের রাবীর ব্যাপারে কোন সন্ধান পাওয়া যায় না এবং ইমাম আবু সায়ীদ ইসমাইল বিন আবুল কাসিম আল বুসখাযী ছাড়া কোন মুহাদ্দিস এই কিতাবের ব্যাপারে কোন কিছু বলেন নি। তাই ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত কিতাব লিখেছেন কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়। তবে আমাদের বক্তব্য হল, ইমাম বুখারী (রহঃ) যখন ৬ লাখ হাদীস থেকে চয়ন করে সহীহ বুখারী শরীফ লিখেছেন তখন এটাও অসম্ভব এবং আশ্চর্য্যের ব্যাপার নয় যে তিনি ১ লাখ হাদীসের কোন মজমুয়া সংকলন করে থাকবেন। হতে পারে ইমাম বুখারী তাঁর যুগে ১ লাখ হাদীসের সংকলন করেছেন কিন্তু সেটা কালের চক্রে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেমন, সলফ সালেহীনদের অসংখ্য গ্রন্থ কালের চক্রে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেগুলি আজ পৃথিবীতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ইমাম বুখারী (রহঃ) যেসব গ্রন্থ আমাদের কাছে আছে সেগুলি কম নয়।
ইমাম সাহেব (রহঃ) এর ছাত্র মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আল ফিরাবরী (রহঃ) ইমাম সাহেবের ‘আল মুসনাদুল কাবীর’ এবং ‘আত তাফসীরুল কাবীর’ নামের দুটি গ্রন্থের উল্লেখ করেছেন যেগুলিকে স্বয়ং ফিরাবরী (রহঃ) বলেছেন, এগুলির কোন সন্ধান পাওয়া যায় না। কালের চক্র সেগুলিকে বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। তাই ইমাম সাহেবের ১ লাখ হাদীসের সংকলনও বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেটা কোন আশ্চর্য্যের ব্যাপার নয়। আজ যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ), ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) এর মত জগৎবিখ্যাত মুহাদ্দিসদের তুলনাহীন কিতাবগুলি কোথাও পাওয়া যায় না। ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ক্ষেত্রেও এই ঘটনাই ঘটেছে।
২৯) আল জামেউস সহীহ আল মাসানিদ বা সহীহ বুখারী শরীফঃ- এই কিতাবটি ইমাম বুখারী (রহঃ) এর জীবনের শ্রেষ্ঠ সংকলন। এই কিতাবটির ব্যাপারে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।