লিখেছেনঃ প্রফেসর আবদুল করিম
বাংলা নামের উৎপত্তি: আবুল ফজল মোগল আমলের সুবা বাঙ্গালার সংজ্ঞা দিতে গিয়া বলেন যে, সুবা বাঙ্গালা পূর্ব পশ্চিমে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম হইতে তেলিয়াগড় পর্যন্ত ৪০০ ক্রোশ এবং উত্তর-দক্ষিণে, অর্থাৎ উত্তরে পর্বতমালা হইতে দক্ষিণে হুগলী জিলার মন্দারণ পর্যন্ত ২০০ ক্রোশ বিস্তৃত ছিল। তিনি আরও বলেন যে, সুবা বাঙ্গালা পূর্বে ও উত্তরে পর্বতবেষ্টিত এবং দক্ষিণে সমুদ্রবেষ্টিত ছিল।ইহার পশ্চিমে সুবা বিহার অবস্থিত ছিল। কামরূপ এবং আসামও সুবা বাঙ্গালার সীমান্তে অবস্থিত ছিল।১
উপরোক্ত সংজ্ঞা স্বাধীনতাপূর্ব২ বাংলাদেশ সম্পর্কেও প্রযোজ্য। মোগল আমল হইতে ইংরেজ আমল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পশ্চিমে তেলিয়াগড় হইতে পূর্বে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এবং উত্তরে পর্বতমালা হইতে দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।কিন্তু বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বাংলাদেশ বিজয়ের সময় বাঙ্গালা নামে একক শাসিত কোন দেশ ছিল না, বা বাঙ্গালা দ্বারা আবুল ফজল বর্ণিত বাংলাদেশকে বুঝাইত না।
ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ মুসলমানদের বাংলাদেশ বিজয়ের ইতিহাস লিখার সময় বাঙ্গালা নামের উল্লেখ করেন নাই।তিনি বরেন্দ্র, রাঢ় এবং বঙ্গ নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করেন।
মিনহাজের ভৌগোলিক জ্ঞানের অভাব ছিল বলা যায় না; বরং বরেন্দ্র, রাঢ় এবং বঙ্গের উল্লেখ করায় তাঁহার ভৌগোলিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি বলেন যে, গঙ্গা নদী লখনৌতি রাজ্যকে দুই ভাগে ভাগ করে-এক ভাগের নাম বরেন্দ্র অন্য ভাগের নাম রাঢ়৩।লক্ষ্মণ সেন তাঁহার সভাসদ এবং ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতদের নদীয়া ছাড়ার কথা উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন যে, তাঁহারা বঙ্গে ও সকনতে (সমতট?) আশ্রয় নেন।৪
ইহা সত্য যে, লক্ষ্মণ সেন নদীয়া হইতে পলাইয়া বঙ্গের(পূর্ব বাংলার) বিক্রমপুরে চলিয়া যান এবং তাঁহার সভাসদ বাহ্মণ পণ্ডিতেরাও যে যেদিকে পারেন, পূর্ব বাংলার দিকে পলাইয়া যান। মিনহাজের তবকাত-ই-নাসিরীতে আরও অনেক স্থানে লখনৌতি এবং বঙ্গকে পৃথক পৃথক ভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে এবং তিনি প্রত্যেক বারেই বঙ্গ দ্বারা পূর্ব বাংলাকে নির্দেশ করিয়াছেন।
মুসলমান ঐতিহাসিকদের মধ্যে মিনহাজের পরবর্তী ঐতিহাসিক জিয়া-উদ-দীন বরনী সর্বপ্রথম বাঙ্গালা শব্দের ব্যবহার করিয়াছেন।তিনি বাঙ্গালাকে ‘ইকলীম’, ‘আরছা।’ এবং ‘দিয়ার’ রূপে উল্লেখ করিয়াছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ‘ইকলীম লখনৌতি’ এবং ‘দিয়ার লখনৌতি’রও উল্লেখ করিয়াছেন।৫ ইহাতে বুঝা যায় যে, মিনহাজের মত জিয়া-উদ-দীন বরনীও বাঙ্গালা শব্দ দ্বারা পূর্ব বাংলাকে নির্দেশ করিয়াছেন।
পরবর্তী ঐতিহাসিক শামস-ই-সিরাজ আফীফ সুলতান শামস-উদ-দীন ইলিয়াস শাহকে “শাহ-ই-বাঙ্গালা” (বাংলার অধীশ্বর) রূপে উল্লেখ করিয়াছেন।৬ সুলতান শামস-উদ-দীন ইলিয়াস শাহ স্বাধীন ইলিয়াসশাহী বংশের প্রতিষ্ঠা করে। ইলিয়াস শাহ প্ৰথমে লখনৌতিতে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং পরে পূর্ব বাংলাসহ আবুল ফজল বর্ণিত প্ৰায় সারা বাংলাদেশের অধীশ্বর হন।
সুতরাং আফীফের ‘শাহ-ই-বাঙ্গালা’ এবং “শাহ-ই-বাঙ্গালীয়ান” দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি বাঙ্গালা শব্দ দ্বারা সারা বাংলাদেশকে বুঝাইয়াছেন।অতঃপর ঐতিহাসিকেরা বিনা দ্বিধায় বাংলার সুলতানদের এবং বাংলার বিখ্যাত সূফী-সাধকদের বাঙ্গালীরূপে আখ্যায়িত করিয়াছেন।৭
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রাক-মুসলমান আমলেও বঙ্গ বা বাঙ্গালা নামের প্রচলন ছিল, কিন্তু তখন বঙ্গ বা বাঙ্গালা নাম দ্বারা পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গকে বুঝাইত।পশ্চিম বঙ্গ রাঢ় নামে এবং উত্তর বঙ্গ প্রথমে পুণ্ড্রবর্ধন ও পরে বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল।বরেন্দ্রে অবস্থিত গৌড় শহরের মর্যাদা অত্যন্ত বেশী ছিল।হিন্দু আমলে যেমন কনৌজ এবং মুসলমান আমলে যেমন দিল্লী সাম্রাজ্যিক রাজধানী (Imperial Capital)-রূপে পরিগণিত ছিল, গৌড়ও বাংলাদেশের সাম্রাজ্যিক রাজধানীরূপে গণ্য হইত।
হিন্দু আমলে বাংলাদেশ যদিও অনেকগুলি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল, এই সকল স্বাধীন রাজ্যের রাজারা সুযোগ পাইলেই গৌড় অধিকার করার চেষ্টা করিত এবং গৌড় অধিকার করিয়া ‘গৌড়েশ্বর’ উপাধি গ্ৰহণ করিত।বাঙ্গালী হিন্দুরা মুসলমান আমলেও গৌড়ের মর্যাদা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করিত এবং হিন্দু কবিরা মুসলমান সুলতানদিগকেও গৌড়েশ্বরীরূপে পরিচয় দি। অথচ মুসলমান সুলতানেরা তাঁহাদের মুদ্রায় বা শিলালিপিতে গৌড়ের নাম উৎকীর্ণ করেন নাই; তাঁহারা লখনৌতি নামকেই সব সময় প্রাধান্য দিতেন।
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর সম্পাদিত “বাংলাদেশের ইতিহাস, দ্বিতীয় খণ্ড (মধ্যযুগ)” পুস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণের (কলিকাতা, মাঘ, ১৩৮০ বাংলা) ভূমিকায় পুস্তকের নামকরণের যৌক্তিকতা নিম্নরূপে বিশ্লেষণ করেনঃ
বর্তমান রাজনীতিক পরিস্থিতিতে এই গ্রন্থের নামকরণ সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। ১৯৪৫ সালে এই গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ইহাতে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ—উভয়েরই ইতিহাস বর্ণিত হইয়াছে। তখন হইতেই ইহার নাম “বাংলাদেশের ইতিহাস”। কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত এই নামের অর্থ তথা এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে কাহারও মনে কোন সন্দেহ বা কোন প্রশ্ন জাগিবার অবকাশ ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি পূর্ববঙ্গ পাকিস্তান হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণ করায় গােলযোগের সৃষ্টি হইয়াছে। কেহ কেহ আমাদিগকে বর্তমান গ্রন্থের নাম পরিবর্তন করিতে অনুরোধ করিয়াছেন। কিন্তু আমাদের বিবেচনায় নাম পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন নাই। এই প্রসঙ্গে স্মরণ করা আবশ্যক যে ইতিহাসের দিক হইতে পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণের কোন সমর্থন নাই।
‘বাংলা’র পূর্বরূপ ‘বাঙ্গালা’ নাম মুসলমানদের দেওয়া—নামটি বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম ‘বঙ্গাল’ শব্দের অপভ্রংশ, ইহা বঙ্গ শব্দের মুসলমান রূপ নহে। মুসলমানেরা প্রথম হইতেই সমগ্র বঙ্গদেশকে মুলুক বাঙ্গালা বলিত। চতুর্দশ শতাব্দী হইতেই ‘বাঙ্গালা” (Bengalah) শব্দটি গৌড় রাজ্য বা লখনৌতি রাজ্যের প্রতিশব্দরূপে বিভিন্ন সমসাময়িক মুসলিম গ্রন্থে (যেমন ‘’সিরাৎ-ই-ফিরোজশাহী”) ব্যবহৃত হইয়াছে। পরে হিন্দুরাও দেশের এই নাম ব্যবহার করেন।
পর্তুগীজরা যখন এদেশে আসেন তখন সমগ্র (পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ) বঙ্গদেশের এই ‘বাঙ্গালা’ নাম গ্রহণ করিয়া ইহাকে বলেন ‘Bengala’ পরে ইংরেজরা ইহার ঈষৎ পরিবর্তন করিয়া লেখেন Bengal। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে ইংরেজ আমলে যেই দেশ Bengal বলিয়া অভিহিত হইত, মুসলমান শাসনের প্রথম হইতেই সেই সমগ্র দেশের নাম ছিল বাঙ্গালা-বাংলা। সুতরাং বাংলাদেশ ইংরেজ আমলের Bengal প্রদেশের নাম-ইহার কোন এক অংশের নাম নয়।
বাংলাদেশের উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম সকল অংশের লোকেরাই চিরকাল বাঙ্গালী বলিয়াই নিজেদের পরিচয় দিয়াছে, আজও দেয়। ইহাও সেই প্রাচীন বঙ্গাল ও মুসলমানদের মুলুক ‘বাঙ্গালা’ নামই স্মরণ করাইয়া দেয়। আজ পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা বাঙ্গালী বলিয়া পরিচয় দিতে পারিবে না ইহাও যেমন অদ্ভূত, অসঙ্গত ও হাস্যকর, ‘বাংলাদেশ’ বলিলে কেবল পূর্ববঙ্গ বুঝাইবে ইহাও তদ্রুপ অদ্ভূত, অসঙ্গত ও হাস্যকর।
“দীর্ঘকাল ধরিয়া বাঙ্গালা, বাংলাদেশ, বাঙ্গালী শব্দগুলি সমগ্ৰ Bengal বা বাংলা অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার পর আজ হঠাৎ কেবলমাত্র পূর্ববঙ্গকে (যাহা আদিতে মুসলমানদের ‘বাঙ্গালা’ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না—‘বঙ্গ ওয়া বাঙ্গালাহ’, তার প্রমাণ), বাংলাদেশ বলিতে হইবে এরূপ ব্যবস্থা বা ঘোষণা করিবার অধিকার কোন গভর্নমেন্টের নাই। উপরে উল্লেখিত কারণগুলি ছাড়া আরও কয়েকটি কারণে ইহা অযৌক্তিক।
অবিভক্ত বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতির গঠনে যাহারা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী অধিবাসী তাঁহাদের পূর্বপুরুষদের অবদানও যথেষ্ট ছিল। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়া ‘বাংলাদেশ’ ও ইহার অধিবাসীদের বাদ দিয়া ‘বাঙ্গালী জাতি’ কল্পনা করা যায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য—লর্ড কার্জন যখন বাংলাকে দুই ভাগ করিয়াছিলেন, তখন পশ্চিম অংশেরই নাম রাখিয়াছিলেন Bengal অর্থাৎ ‘বাংলা’। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পূর্ববঙ্গ (East Bengal) বলিয়া অভিহিত হইত।
“বর্তমান পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রনায়কগণ ইতিহাস ও ভূগোলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হইয়া তাঁহাদের দেশের ‘বাংলাদেশ” নাম গ্ৰহণ করিয়াছে। ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইহার কোন প্রতিবাদ করেন নাই-ইহার কারণ সম্ভবত রাজনৈতিক।
সাধারণ লোকে কিন্তু ‘বাংলাদেশ’ নামের অর্থ পরিবর্তনকে সম্পূর্ণ গ্ৰহণ করিতে পারে নাই। তাহার প্রমাণ—এখনও পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা দৈনন্দিন কথাবার্তায় ও লেখায় পশ্চিমবঙ্গকে ‘বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করে ; ভারতের আন্তঃরাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পশ্চিমবঙ্গের দলগুলি ‘বাংলাদল’ নামে আখ্যায়িত হয় এবং পশ্চিমবঙ্গে হরতাল পালিত হইলে তাহাকে ‘বাংলা বন্ধ’ বলা হয়।
আমরাও “বাংলাদেশ” নামের মৌলিক অর্থকে উৎখাত করার বিরোধী। সেইজন্য বর্তমান গ্রন্থের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ নাম অপরিবর্তিত রাখা হইল। শুধু পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ নহে—ত্রিপুরা এবং বর্তমান বিহার এবং আসাম রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বাংলাভাষী অঞ্চলগুলিকেও আমরা ‘বাংলাদেশ’-এর অন্তর্গত বলিয়া গণ্য করিয়াছি এবং এই সমস্ত অঞ্চলেরই ইতিহাস এই গ্রন্থে আলোচিত হইয়াছে।”
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার একজন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ; তিনি দেশে বিদেশে সুপরিচিতি এবং সমাদৃত এবং বাংলার ইতিহাসে তাঁর গবেষণা প্রচুর ; তাঁর সম্পাদিত History of Bengal, Vol. I এখনও গবেষকদের আদর্শরূপে বিবেচিত এবং “বাংলাদেশের ইতিহাস” সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলার ইতিহাসের মধ্যযুগেও প্রচুর গবেষণা করেন। সুতরাং ইতিহাস ও ভূগোলের দোহাই দিয়া ‘বাংলাদেশ’-এর নামকরণ সম্পর্কে তাঁর বিরূপ মন্তব্য এবং বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রশ্ন উথাপন আমাদের উত্তরসূরিদের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করিতে পারে। তাই ডঃ মজুমদারের বক্তব্যের ঐতিহাসিকতা যাচাই করা প্রয়োজন।তাই ডঃ মজুমদারের ইতিহাস ও ভূগোলভিত্তিক যুক্তিগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) ইতিহাসের দিক হইতে পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণের কোন যৌক্তিকতা নাই।‘ “বৰ্তমান পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রনায়কগণ ইতিহাস ও ভূগোলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হইয়া তাঁহাদের দেশের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্ৰহণ করিয়াছেন।”
(খ) ‘বাংলার’ পূর্বরূপ বাঙ্গালা নাম মুসলমানদের দেওয়া—নামটি বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম ‘বঙ্গাল’ শব্দের অপভ্রংশ, ইহা ‘বঙ্গ’ শব্দের মুসলমান রূপ নহে।
(গ) পূর্ববঙ্গ আদিতে মুসলমানদের ‘বাঙ্গালা’ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, সুতরাং পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের অধিকার বাংলাদেশ সরকারের নাই।
যেহেতু তিনি দাবি করেন যে তাঁর বক্তব্য ইতিহাস ও ভূগোলভিত্তিক, সেহেতু ইতিহাস ও ভূগোল আলোচনা করিয়া ‘বঙ্গ’ এবং ‘বাঙ্গালীর’ অবস্থান কোথায় ছিল, বা ‘বঙ্গালা’ নামে কোন ভূভাগ আদৌ ছিল কিনা, তা প্রথমেই নির্ধারণ বরিতে হইবে।
বঙ্গঃ
ঋগবেদে ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ নাই। “ঐতরেয় আরণ্যক” গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ পাওয়া যায় যেখানে ‘বঙ্গ’ এবং ‘মাগধ’-এর কথা বলা হইয়াছে বলিয়া কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন। কিন্তু “ঐতরেয় আরণ্যক”-এর ভিত্তিতে ‘বঙ্গ’-এর প্রাচীনতা নির্ণয় করা সন্দেহাতীত নয়, কারণ ভাষ্যকারেরা এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছিতে পারেন নাই।৮
“বোধায়ন ধৰ্মসূত্রে” ‘বঙ্গ’-এর স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সূত্রে তৎকালীন ভূখণ্ড বা জনপদগুলিকে আর্যদের পবিত্রতার আলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়-সর্ব নিকৃষ্ট অংশে ‘বঙ্গ’ এবং ‘কলিঙ্গ’সহ কয়েকটি ভূখন্ডের নাম করা হইয়াছে। এই নিকৃষ্ট এলাকায় অস্থায়ীভাবে বাস করিলেও প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইত।৯ পুরাণে পূৰ্বাঞ্চলীয় দেশসমূহের তালিকায় ‘অঙ্গ’, ‘বিদেহ’, ‘পুণ্ড্র’ ইত্যাদির সঙ্গে ‘বঙ্গ’ যোগ করা হইয়াছে। ১০
রামায়ণে অযোধ্যার সঙ্গে মিত্ৰতা স্থাপনকারী দেশের তালিকায় ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ আছে; ইহাতে বুঝা যায়, ‘বঙ্গ’রা তখন আর অস্পৃশ্য বা বর্বর নয়।১১ মহাভারতেও ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ আছে। ভীমের দিগ্বিজয় অংশে বলা হইয়াছে যে ভীম পুণ্ড্র এবং কুশী নদীর তীরের রাজাকে পরাজিত করিয়া ‘বঙ্গ’-এর রাজাকে আক্রমণ করেন ; এর পরে ভীম তাম্রলিপ্তির রাজাকে পরাস্ত করিয়া কর্বট ও সুহ্ম এবং অন্য ম্লেচ্ছদের পরাজিত করেন। এই অঞ্চলসমূহ জয় করিয়া ভীম লোহিত্য (ব্ৰহ্মপুত্র)-এর দিকে যাত্রা করেন। সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারী ম্লেচ্ছদের নিকট হইতে তিনি কর আদায় করেন।১২
উপরোক্ত সূত্রগুলিতে ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ পাওয়া গেলেও, ইহার ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা করা যায় না। মহাভারতে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বা ভূভাগের নাম দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু এই বর্ণনায় contiguity বা ভৌগোলিক সান্নিধ্য রক্ষার প্রতি নজর দেওয়া হয় নাই। তবে ইহা বুঝা যায় যে ‘বঙ্গ’ একটি পূর্বাঞ্চলীয় দেশ বা জনপদ এবং ইহার অবস্থিতি ছিল ‘অঙ্গ’, ‘সুহ্ম’, ‘তাম্রলিপ্ত’, ‘মুদগরক”, ‘মগধ’ এবং পুণ্ড্র’-এর কাছাকাছি। মহাভারতে ভীমের দিগ্বিজয়ের সীমা দেওয়া হইয়াছে ‘লোতিহ্য’ বা ব্ৰহ্মপুত্র। সুতরাং ধরিয়া নেওয়া যায় যে এই জনপদগুলি ব্ৰহ্মপুত্র নদের পশ্চিমেই অবস্থিত ছিল।
কালিদাসের রঘুবংশে রঘুর দিগ্বিজয়ের কথা বলা হইয়াছে। রঘু ‘সুহ্ম’দের পরাস্ত করিয়া ‘বঙ্গ’দের পরাস্ত করেন এবং বলা হইয়াছে যে রঘু ‘গঙ্গা স্রোত হন্তরেষু’ অঞ্চলে বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেন। এখানে ‘বঙ্গ’দের ‘নৌ-সাধনোদ্যত’ রূপে অভিহিত করা হইয়াছে।১৩ ইহার পরবর্তী শ্লোকে কালিদাস রঘু কর্তৃক ‘কাপিশা’ নদী অতিক্রম করিয়া কলিঙ্গ দেশে যাত্রার কথা বলিয়াছে। ‘গঙ্গা স্রোত হন্তরেষু’-এর ব্যাখ্যা নিয়া মতভেদ থাকিলেও আধুনিক কালে সকলে স্বীকার করেন যে ইহার অর্থ গঙ্গা স্রোত-অন্তর্বর্তী ভূ-ভাগ।
গঙ্গার দুই প্রধান স্রোত-ভাগীরথী ও পদ্মা। টলেমী গঙ্গার পাঁচটি শাখার উল্লেখ করেন- সর্ব-পশ্চিম শাখা কামবাইসন এবং সর্ব-পূর্ব শাখা এন্টিবোল। হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী কালিদাসের পরবর্তী শ্লোকের দ্বারা বিভ্রান্ত হইয়া বলেন, “Kalidas, the traditional contemporary of Dinnaga (fifth century A.D.) places the Vangas amidst the streams of the Ganges (Gangasorta’ntara). The western boundary of this country possibly at times extended beyond the Hooghly to the river Kapisa or Kasai in the Midnapore district.”১৪
ডি.সি. সরকার রায়চৌধুরীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন এই শর্তে যে যদি কাপিশা নদী টলেমীর কামবাইসনের সঙ্গে এক ও অভিন্ন হয়, যাহা রায়চৌধুরী মনে করেন।১৫ কিন্তু কাপিশা টলেমীর কামবাইসনের সঙ্গে অভিন্ন ইহতে পারে না। এন. কে. ভট্টশালী প্রমাণ করেন যে, টলেমীর কামবাইসন গঙ্গার ভাগীরথী শাখার সঙ্গে অভিন্ন, কারণ প্রথমত ভাগীরথী শাখাই গঙ্গার প্রধান এবং সর্ব-পশ্চিম শাখা, এবং দ্বিতীয়ত কাপিশা নদী গঙ্গার শাখাই নয়, গঙ্গার সঙ্গে কপিশার কোন সম্পর্ক নাই।১৬
তাই আধুনিক পণ্ডিতেরা রায়চৌধুরীর বক্তব্য গ্ৰহণ করেন না। ডঃ আবদুল মোমিন চৌধুরী বলেন, “এখন যুক্তি প্রদর্শন করে প্রমাণ করা হয়েছে যে মূলত রঘুবংশের শ্লোকসমূহের ব্যাখ্যা এইভাবে করা সম্ভব যে ভাগীরথী থেকে কশাই নদী পর্যন্ত এলাকা সুহ্মের অন্তর্গত ছিল এবং কালিদাসের বিবরণে রঘু কর্তৃক প্রথমে ‘সুহ্ম’ জয়, ‘সুহ্ম’ থেকে বঙ্গ জয় এবং পরে সুহ্ম থেকেই কাপিশা অতিক্রম করে কলিঙ্গের দিকে গমনের কথা আছে।১৭
যাহা হউক, রঘুবংশের এই বিবরণের আলোকে বলা যায় যে গঙ্গার দুই স্রোতের মধ্যবর্তী ভূভাগই বঙ্গ, এই দুই স্রোত ভাগীরথী এবং পদ্মা হইতে পারে, আবার টলেমী বর্ণিত পাঁচটি স্রোতের যে-কোন দুইটিও হইতে পারে ; যেইভাবেই বিচার করা হউক না কেন, এই সূত্রে ‘বঙ্গ’ দ্বারা ভাগীরথীর পূর্ব অঞ্চল নির্দেশ করে।
মুসলমান আমলে ‘বঙ্গ’-এর পরিচয় আরও স্পষ্ট হইয়া উঠে। প্রথম মুসলমান ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ কয়েক স্থানে ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ করেন, যেমনঃ
(ক) মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর বিহার বিজয়ের পরবর্তী ঘটনাবলী বর্ণনা করিয়া মিনহাজ বলেন, “বিধর্মীদের হৃদয়ে লাখনৌতি এবং বিহার রাজ্যে এবং বঙ্গ ও কামরূদ রাজ্যে তিনি পূর্ণ আতঙ্কের ভাব সৃষ্টি করেন।১৮
(খ) বখতিয়ার খলজী কর্তৃক নদীয়া আক্রমণের অব্যবহিত পূর্বের ঘটনা বর্ণনা করিয়া মিনহাজ বলেন যে, “তুর্কী আক্রমণের আশঙ্কায় লক্ষ্মণ সেনের দরবারের অধিকাংশ ব্ৰাহ্মণ এবং সাহাগণ (বাণিক সম্প্রদায়) সকোনাত রাজ্য, বঙ্গ ও কামরূদ রাজ্যে গমন করলেন। রাজ্য পরিত্যাগ করে যাওয়া রায় লখমনিয়ার নিকট সঙ্গত মনে হল না।”১৯
(গ) লক্ষ্মণ সেনের পরাজয় এবং পলায়নের কথা বলিয়া মিনহাজ বলেন, “রায় লখমনিয়া সকোনাত ও বঙ্গ রাজ্যের দিকে পৌঁছে গেলেন… তাঁর বংশধরগণ এ সময় পর্যন্ত বঙ্গ রাজ্যে রাজত্ব করছেন।”২০
(ঘ) সুলতান গিয়াস-উদ-দীন ইওয়াজ খলজীর (১২১২-১২২৭ খ্ৰীঃ) রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে মিনহাজ বলেন, “লাখনৌতি রাজ্যের পার্শ্ববর্তী সমুদয় অঞ্চল, যথা জাজনগর, বঙ্গ রাজ্য, কামরূদ ও তিরহুত ও রাজ্যসমূহ তাঁকে কর প্রেরণ করত।”২১
(ঙ) দিল্লীর সুলতান ইলতুতমিশের ছেলে যুবরাজ নাসির-উদ-দীন মাহমুদ কর্তৃক লখনৌতি আক্রমণের বিষয় উল্লেখ করিয়া মিনহাজ বলেন, “এই বৎসর গিয়াস-উদ-দীন ইওয়াজ হুসায়েন খলজী সসৈন্যে লখনৌতি থেকে বঙ্গ ও কামরূদ অভিযানে গিয়েছিলেন এবং লখনৌতি নগর অরক্ষিত অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন।”২২
(চ) লখনৌতিস্থ দিল্লীর গভর্নর মালিক সাইফ-উদ-দীন আইবক য়ুগণ-তৎ সম্পর্কে মিনহাজ বলেন, “তিনি ঐ রাজ্যে অসীম বীরত্বের পরিচয় প্রদান করেন এবং ‘বঙ্গ’ থেকে অনেক হস্তী অধিকার করে মহান সুলতানের খেদমতে প্রেরণ করেন।”২৩
(ছ) তাজ-উদ-দীন আরসলান খান কর্তৃক লখনৌতি অধিকারের বর্ণনা দিয়া মিনহাজ বলেন, “(সে সময়ে) লাখনৌতির শাসনকর্তা (বলবন-ই-ইউজবকী) বঙ্গ রাজ্যে (অভিযানে) গিয়েছিলেন এবং লাখনৌতি নগর অরক্ষিত ছিল।”২৪
উপরোক্ত সূত্রগুলিতে মিনহাজ ‘বঙ্গ’কে ‘বিলাদ’, ‘মমালিক’ এবং ‘বেলায়েৎ’ রূপে উল্লেখ করেন, যাহার অর্থ করা হইয়াছে রাজ্য, অর্থাৎ বঙ্গ রাজ্য। প্রকৃতপক্ষে শব্দগুলি সমার্থক২৫ এবং মিনহাজও সেই কারণে ‘বঙ্গ’-এর সঙ্গে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ‘বিলাদ’, কিন্তু কোন কোন স্থানে ‘মমালিক’ এবং ‘বেলায়েৎ’ শব্দ যোগ করেছেন। তাহাছাড়া ‘বঙ্গ’ রাজ্য উল্লেখ করার সময় প্রায় ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ‘সকোনত’ বা ‘কামরূদ’-এর নামও উল্লেখ করা হইয়াছে। কামরূদ কামরূপের সঙ্গে অভিন্ন এবং সকোনতকে সমতট-এর সঙ্গে অভিন্ন মনে করা হয়।২৬
সুতরাং ‘বঙ্গ’ কোন ক্ষুদ্র এলাকা ছিল না, বরং সমতট এবং কামরূপের মতো একটি রাজ্য ছিল। আরও বুঝা যায় যে সমতট এবং কামরূপ-এর নিকটেই ‘বঙ্গ’ রাজ্য অবস্থিত ছিল।
মিনহাজ তাঁহার সমকালীন পূর্ব ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেন। প্রাচীন কালে যাহারা ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ করেছেন, তাঁহাদের ‘বঙ্গ’ বা পূর্ব ভারতের সঙ্গে সম্যক পরিচয় ছিল না, কিন্তু মিনহাজ নিজে লখনৌতি রাজ্যে আসেন এবং দুই বৎসরকাল বাস করেন। তৎকালীন লখনৌতির শাসনকর্তার অতিথি ছিলেন তিনি; শাসকবর্গ এবং শাসনযন্ত্রের সঙ্গে তাঁহার পরিচয় ছিল; লখনৌতির মুসলমান রাজ্যের পক্ষ হইয়া তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করেন এবং এক সময় লখনৌতির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাসকের বিরোধের (ইজ্জ-উদ-দীন তুঘরল তুঘান খান এবং তমর খান কিরান) মধ্যস্থতা করেন। তাহাছাড়া মিনহাজ তাঁহার লখনৌতি আসার পূর্বেকার মুসলিম শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে মুতামদ-উদ-দৌলা নামক বখতিয়ার খলজীর একজন সহকর্মীর নিকট হইতে তথ্য সংগ্রহ করেন। ঐতিহাসিক তথ্য জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভৌগোলিক তথ্যও সংগ্রহ করেন। সুতরাং সমসাময়িক ভৌগোলিক স্থানাদির অবস্থান নির্ণয়ে তাঁহার ভুল হওয়ার কথা নয় ; অন্ততপক্ষে ‘বঙ্গ’-এর অবস্থান নির্ণয়ে মিনহাজের ভুল ধরা পড়ে নাই।
উপরোক্ত (ক) সংখ্যক সূত্রে দেখা যায় যে মিনহাজ লখনৌতি ও বিহারকে একসঙ্গে প্রথমে এবং বঙ্গ ও কামরূপকে একসঙ্গে পরে উল্লেখ করেন। ইহাতে বুঝা যায় যে বিহার ও লখনৌতির অবস্থান কাছাকাছি এবং বঙ্গ ও কামরূপের অবস্থানও কাছাকাছি ছিল। আরও বুঝা যায় যে বঙ্গ ও কামরূপ লখনৌতির পূর্বদিকে অবস্থিত ছিল। লখনৌতি রাজ্যের অবস্থান নির্দেশ করিয়া মিনহাজ, বলেন, “গঙ্গা (নদীর) দুই পার্শ্বে অবস্থিত লখনৌতি রাজ্য দুই অংশে বিভক্ত। পশ্চিমাঞ্চলকে ‘রাল’ (রাঢ়) বলা হয়ে থাকে এবং সেদিকেই ‘লখনৌর’ নগর অবস্থিত। পূর্বাঞ্চলকে ‘বরিন্দ’ (বরেন্দ্র) বলা হয়ে থাকে এবং দেওকোট (দেবকোট) নগর সেদিকে অবস্থিত।”২৭
লখনৌতি নাম সেন আমলের লক্ষ্মণাবতীর ফার্সী বা মুসলমানী রূপ। মিনহাজ বলেন যে নদীয়া জয় করার পরে বখতিয়ার খলজী এই “নগর ধ্বংস করেন এবং লখনৌতি নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন।”২৮ ঐ সময় হইতে ‘বাংলা’য় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাজ্য লখনৌতি রাজ্য নামে পরিচিত হয় এবং এই নাম প্রায় দেড়শত বৎসর চলে।২৯
মিনহাজের বক্তব্য অতি পরিষ্কার, তিনি বলেন যে লখনৌতি রাজ্য গঙ্গা নদী দ্বারা দুইভাগে বিভক্ত ছিল, পশ্চিম অংশ রাঢ় নামে এবং পূর্ব অংশ বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল। আরও ব্যাখ্যা করিয়া তিনি বলেন যে যেই অংশে লখনৌর অবস্থিত সেই অংশের নাম রাঢ়৩০ এবং যেই অংশে দেওকোট (দেবকোট) অবস্থিত, সেই অংশের নাম বরেন্দ্র। লখনৌর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জিলার নগৌর এবং দেওকোট দিনাজপুর জিলায় অবস্থিত। সুতরাং রাঢ় এবং বরেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে মিনহাজের মনে কোন দ্বিধা ছিল না এবং এই দুইটি অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থিতি সঠিকভাবেই দেওয়া হইয়াছে।
মিনহাজের বিবরণের আলোকে ‘বঙ্গ’-এর সঠিক ভৌগোলিক অবস্থিতি নির্ণয় করা সহজ হয়। উপরোক্ত ‘গ’ সংখ্যক সূত্র এই বিষয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই সূত্রে বলা হইয়াছে যে, “রায় লখমনিয়া সকোনাত ও বঙ্গ রাজ্যের দিকে পৌঁছে গেলেন…তাঁর বংশধরগণ এ সময় পর্যন্ত বঙ্গ রাজ্যে রাজত্ব করছেন।”৩১ এই বিষয়ে কোন দ্বিমত নাই যে লক্ষ্মণ সেন নদীয়া হইতে পলায়ন করিয়া বিক্রমপুরে যান এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁহার দুই ছেলে কেশব সেন এবং বিশ্বরূপ সেন অন্ততপক্ষে ১২২৩ খ্ৰীষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। কিন্তু এই সময় রাজধানী বিক্রমপুরে ছিল কিনা সন্দেহ। বিজয় সেন এবং বল্লাল সেনের দুইটি তাম্রশাসন এবং লক্ষ্মণ সেনের প্রথম পাঁচটি তাম্রশাসন বিক্রমপুর হইতে জারী করা হয়, কিন্তু লক্ষ্মণ সেনের শেষ দুইটি অর্থাৎ মাধাইনগর ও ভাওয়াল তাম্রশাসন বিক্রমপুর হইতে জারি হয় নাই, বরং ধার্যগ্রাম হইতে জারি হয়; লক্ষ্মণ সেনের উত্তরাধিকারীদের তাম্রশাসন ফলগুগ্ৰাম থেকে জারি করা হয়।৩২ ধাৰ্যগ্রাম ও ফলগুগ্রাম-এর অবস্থিতি নির্ণয় সহজ নয়; তবে এন. কে. ভট্টশালী ধাৰ্যগ্রামকে লক্ষা নদীর তীরে ভাওয়াল পরগনায় বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন।৩৩
এই সময় কি বিক্রমপুর হইতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়, বা বিক্রমপুরে রাজধানী থাকিলেও ধাৰ্যগ্রাম ও ফলগুগ্রামে অস্থায়ীভাবে রাজশিবির স্থাপিত হয়, তাহা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। বিশ্বরূপ সেন এবং কেশব সেনের তাম্রলিপিতে বিক্রমপুর-ভাগ’কে ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে, বিশ্বরূপ সেনের সাহিত্য-পরিষৎ লিপিতে ‘বঙ্গ’-এর ‘নাব্য-ভাগ’-এর কথা বলা হইয়াছে। ‘বিক্রমপুর-ভাগ’কে মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর এবং ‘নাব্য-ভাগ’কে ফরিদপুর এবং বাকেরগঞ্জের সঙ্গে চিহ্নিত করা হয়।৩৪ ফলে আধুনিক পন্ডিতেরা মত প্ৰকাশ করেন যে ঢাকা-ফরিদপুর-বাকেরগঞ্জ এলাকা ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষদিকে উপকূলবর্তী সুন্দরবন এলাকায় ডুম্মনপাল একজন বৌদ্ধ নরপতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৯৬ খ্ৰীষ্টাব্দে তিনি খাড়ি অঞ্চলে মহারাজাধিরাজ উপাধি নিয়া তাম্রশাসন জারি করেন।৩৫ ডুম্মনপালের এই রাজ্য চব্বিশ পরগণা, খুলনা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়া গঠিত ছিল বলিয়া মনে হয়।৩৬ রণবঙ্কমল্ল হারিকেল দেবের ১২২০ খ্ৰীষ্টাব্দের ময়নামতি তাম্রশাসনে দেখা যায় যে অন্তত ১২০৪ খ্ৰীষ্টাব্দ থেকে মেঘনা নদীর পূর্বদিকে কুমিল্লা অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দামোদর দেবের চট্টগ্রাম তাম্রলিপি এবং অন্যান্য তাম্রলিপিতে দেখা যায় যে ১২৩০ খ্ৰীষ্টাব্দের পর হইতে বেশ কিছুদিন যাবত দেব বংশের স্বাধীন রাজ্য মেঘনা-পূর্ববর্তী অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অঞ্চল প্রাচীন কাল হইতে সমতট নামে পরিচিত ছিল।৩৭
‘শক্তি সঙ্গমতন্ত্রে’র “ষটপঞ্চাশদ্দেশ’ বিভাগে ‘রত্নারকম’ বা সাগর হইতে ব্ৰহ্মপুত্র পর্যন্ত ভূভাগকে ‘বঙ্গ’ রূপে বর্ণনা করা হইয়াছে।৩৮ এই বই সপ্তদশ শতকে লিখিত। এখানে ‘রত্নাকরম’ বা সাগর বলিতে বঙ্গোপসাগর বুঝায়, সুতরাং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর হইতে উত্তরে ব্ৰহ্মপুত্র পর্যন্ত ‘বঙ্গ’-এর সীমা।
উপরোক্ত সূত্রসমূহের আলোকে ‘বঙ্গ’-এর পরিচিতি নিয়ে কোন দ্বিধা থাকার কথা নয়। কালিদাসের রঘুবংশে গঙ্গার স্রোতের মধ্যবর্তী স্থান ‘বঙ্গ’; অতএব গঙ্গার পশ্চিম স্রোত ভাগীরথী এবং পূর্ব স্রোত পদ্মার মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ ‘বঙ্গ’। মিনহাজ-ই-সিরাজের সাক্ষ্যে মনে হয় রাঢ় এবং বরেন্দ্রর পূর্বেই ‘বঙ্গ’ এবং সেন রাজাদের তামলিপিতে দেখা যায় ঢাকা ফরিদপুর-বাকেরগঞ্জ এলাকা ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। শক্তি সঙ্গমতন্ত্রের আলোকে ‘বঙ্গ’-এর দক্ষিণ সীমা বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর সীমা ব্ৰহ্মপুত্র। ব্ৰহ্মপুত্র এবং আরও দক্ষিণে মেঘনা ‘বঙ্গ’-এর পূর্ব সীমাও ছিল, কারণ উপরে উল্লিখিত সূত্রগুলিতে মেঘনার পূর্ববর্তী ভূভাগ ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। উত্তর দিকে ‘বঙ্গ’-এর পশ্চিম-সীমা এবং বরেন্দ্রের পূর্বসীমা এক ও অভিন্ন ছিল। এই প্রেক্ষিতে করতোয়া নদী ‘বঙ্গ’-এর উত্তর দিকের পশ্চিম সীমানা। ‘বঙ্গ’-এর এই সীমারেখার মধ্যস্থ ভূভাগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর অধীনস্থ হয়, তাতে রাজনৈতিকভাবে বঙ্গ খণ্ডিত হইয়াছে, ভৌগোলিকভাবে নহে।।৩৯
সুতরাং পশ্চিমে ভাগীরথী ও করতোয়া নদী, পূর্বে ব্ৰহ্মপুত্র ও মেঘনা, উত্তরে ব্ৰহ্মপুত্র এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, এই বিত্তীর্ণ ভূখণ্ড নিয়া প্রাচীন ‘বঙ্গ’ রাজ্য।
বঙ্গালা
“বঙ্গ’-এর অবস্থান সম্পর্কে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে মোটামুটি মতৈক্য আছে, কিন্তু ‘বঙ্গালা’র ঐতিহাসিকতা ও ভৌগোলিক অবস্থান নিয়া মতৈক্য নাই, বরং মতানৈক্য ব্যাপক বলা যায়। ‘বঙ্গালা’ নামের প্রথম উল্লেখ পাই ইবন বতুতার ভ্রমণবৃত্তান্তে।৪০ দিল্লীর মুসলমান ঐতিহাসিকদের মধ্যে মিনহাজ-ই-সিরাজের পরবর্তী লেখক জিয়া-উদ-দীন বরনী। বরনীর ‘বঙ্গালা’র উল্লেখ অত্যন্ত তাৎপৰ্যপূর্ণ এবং সেইগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) “লখনৌতির শাসক ইলয়াস, যিনি ঐ রাজ্য জোরপূর্বক দখল করেন, এই সময়ে (দিল্লীর সুলতান ফীরুজ শাহ তুঘলকের সময়ে) পানিবেষ্টিত ‘বঙ্গালা’র পাইক এবং ধনুকদের একত্রিত করেন এবং বিনা কারণে ত্রিহুত জয়।‘’৪১
(খ) “বঙ্গালা’র বিখ্যাত পাইকরা, যাহারা অনেক দিন ধরিয়া ‘আবু বঙ্গাল’ (বঙ্গালদের পিতা) নামে পরিচিত এবং যাহারা নিজেদিগকে বীরপুরুষ বলিয়া দাবি করিত, তাহারা ভাঙখোর ইলিয়াসের নিকট প্রতিজ্ঞা করে যে তাহারা তাঁহার জন্য প্ৰাণপণ করিবে এবং পানি-বেষ্টিত ‘বঙ্গালা’র রায়দের সঙ্গে যোগ দিয়া ইলিয়াসের অশ্বারোহী বাহিনীর সামনে সাহসিকতার নিদর্শনস্বরূপ হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করে। যুদ্ধের সময় বিজয়ী বাহিনীর (দিল্লীর বাহিনীর) তীরন্দাজ ও সৈন্যদের সম্মুখীন হইলে তাহারা মুখে আঙ্গুল পুরিয়া জ্ঞান হারাইয়া ফেলে, তাহাদের তারবারি এবং তীরধনুক ফেলিয়া দেয় এবং মাটিতে কপাল ঘষিয়া শক্ৰদের তরবারির আঘাতে পতিত হয়।৪২
(গ) সুলতান গিয়াস-উদ-দীন বলবন বলেন, “আমি ইকলীম লখনৌতি ও বঙ্গালা আমার কনিষ্ঠ পুত্রকে (শাসনের জন্য) দিয়াছি এবং কয়েক বৎসর ধরিয়া ঐ রাজ্য শক্তি সঞ্চয় করিতেছে।”৪৩
(ঘ) বলবন বলেন, “ইকলীম লখনৌতি এবং আরসা ‘বঙ্গালা’কে পরাভূত করার জন্য আমি কি পরিমাণ রক্ত পান করিয়াছি (রক্তপাত ঘটাইয়াছি)।”৪৪
বরনীর উপরোক্ত উক্তিগুলিতে দুইটি বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
প্রথম, উপরোক্ত ‘ক’ এবং ‘খ’ সংখ্যক সূত্রে ‘বঙ্গালা’কে বলা হইয়াছে ‘আব-গিরিফতা’, ‘আব’ অর্থ পানি, ‘গিরিফতা’ ‘গিরিফতন’ হইতে, “আর-গিরিফতা’ অর্থ পানিতে ভিজা; যাহার উপর বেশী বৃষ্টিপাত হয়; পানিবেষ্টিত; বন্যাকবলিত; নদনদীবেষ্টিত। সুতরাং বরনী ‘বঙ্গালা’কে পানি-বেষ্টিত, নদনদীবেষ্টিত, বন্যাকবলিত এবং অধিক বৃষ্টিপাতের অঞ্চল রূপে চিত্রিত করিয়াছেন। এই অঞ্চল নিঃসন্দেহে ‘বঙ্গ’; রঘুবংশের ‘গঙ্গা-স্রোত-হন্তরেষু’ এবং তিরুমালাই-লিপির ‘বঙ্গাল দেশ যেখানে বৃষ্টি থামে না’ কথাগুলির প্রতিধ্বনি করে বরনীর ‘আব-গিরিফতা-বঙ্গালা’। বরনীর ‘আর-গিরিফতা-বঙ্গালা’ কথায় ‘বঙ্গ’-এর ভৌগোলিক অবস্থানের নিখুঁত পরিচয় পাওয়া যায়। সুতরাং প্রাচীন কালের ‘বঙ্গ’ এবং বরনীর ‘বঙ্গালা’ এক ও অভিন্ন।
‘গ’ সংখ্যক সূত্রে লখনৌতি এবং ‘বঙ্গালা’ উভয়কেই ইকলীম, কিন্তু ‘ঘ’ সংখ্যক সূত্রে লখনৌতিকে ইকলীম এবং ‘বঙ্গালা’কে ‘আরসা’ বলা হইয়াছে। ‘ইকলীম’ এবং ‘আরসা’ উভয়ই শাসনতান্ত্রিক বিভাগের নাম; সুলতানী আমলের মুদ্রা এবং শিলালিপিতে ইকলীম দ্বারা বড় এবং আরসা দ্বারা ছোট শাসনতান্ত্রিক বিভাগ নির্দেশ করে, এই সূত্রে আরসা ইকলীমের অংশবিশেষ। মোটামুটিভাবে ইকলীমকে বর্তমান কালের বিভাগ এবং আরসাকে বর্তমান কালের জিলার সঙ্গে তুলনা করা যায়। বর্তমানে ঢাকা বিভাগ এবং ঢাকা জিলার সঙ্গে যেই পার্থক্য বা যেই সম্পর্ক, ইকলীম ‘বঙ্গালা’ এবং আরসা ‘বাঙ্গালা’র মধ্যে সেই পার্থক্য এবং সেই সম্পর্ক।
বরনীর উল্লিখিত সময়ে, অর্থাৎ বলবনের সময়ে ‘বঙ্গালা’ দিল্লীর সুলতান কর্তৃক (বা মুসলমান কর্তৃক) বিজিত হয় নাই, তবে বিজিত হওয়ার পথে; বলবন মুঈজ্জ-উদ-দীন তুঘরলের বিদ্রোহ দমন করিয়া দিল্লী ফিরিয়া যাওয়ার সময় বুঘরা খানকে ‘বঙ্গালা’ জয়ের নির্দেশ দেন। বুঘরা খানের ছেলে রুকন-উদ-দীন কাইকাউসের সময় ‘বঙ্গ’-এর রাজস্ব দ্বারা মুদ্রা উৎকীর্ণ করা হয়, এবং আরও কয়েক বৎসর পরে শামস-উদ-দীন ফীরুজ শাহের সময় সোনারগাঁও টাকশালের নাম উৎকীর্ণ করিয়া মুদ্রা জারি করা হয়; অর্থাৎ এই সময়ে সোনারগাঁও জয় সম্পূর্ণ হয়।
তাই বরনীর ইকলীম ‘বঙ্গালা’ প্রাচীন বঙ্গ এবং আরসা ‘বাঙ্গালা’ প্রাচীন ‘বঙ্গ’-এর একাংশ, খুব সম্ভবত সোনারগাঁও। বলবন যখন ইকলীম লখনৌতি এবং আরসা ‘বঙ্গালা’র কথা বলেন, প্রথমটি দ্বারা লখনৌতির গবর্নর তুঘরলের বিদ্রোহ দমনের কথা বলেন এবং দ্বিতীয়টির দ্বারা সোনাগাঁও-এর কথা বলেন।
স্মরণ রাখা দরকার যে, বলবন নিজে তুঘরলকে ধাওয়া করার এক পর্যায়ে সোনারগাঁও-এ যান এবং সেখানে রাজা দনুজ রায়ের সাথে সমঝোতায় পৌঁছেন। দেখা যায় যে তের শতকের শেষ দিকে এবং নিশ্চিতভাবে চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ‘বঙ্গ’ ‘বঙ্গালা’য় রূপান্তরিত হয়। বরনী ১৩৫৭ খ্ৰীষ্টাব্দে তাঁর ‘তারিখ-ই- ফীরুজশাহী’ লেখা শেষ করেন।
দিল্লীর ঐতিহাসিকদের মধ্যে বরনীর পরবতী লেখক শামস-ই-সিরাজ আফীফ। আফীফের তারিখ-ই-ফীরুজশাহী রচনার তারিখ পাওয়া যায় না। তিনি ১৩৫০ খ্ৰীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ফীরুজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর কিছু পরে বাইখানি লিখেন।
ইতোমধ্যে ‘বাংলা’র ইতিহাসের আরও পরিবর্তন ঘটে ; শাসনতান্ত্রিক বিভাগের পরিবর্তন হয়। গিয়াসউদ-দীন তুঘলক ‘বাংলা’কে তিনটি শাসন বিভাগে ভাগ করেন—লখনৌতি, সাতগাঁও এবং সোনারগাঁও। এই তিনটি বিভাগ যথাক্রমে প্রাচীন বরেন্দ্র, রাঢ় এবং ‘বঙ্গ’-এ অবস্থিত।
১৩৩৮ খ্ৰীষ্টাব্দে সোনারগাঁও-এ ফখর-উদ-দীন মুবারক শাহ স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। তিনি এবং তাঁহার ছেলে ইখতিয়ার-উদ-দীন গাজী শাহ চৌদ্দ বৎসর রাজত্ব করেন। কিন্তু ১৩৫২ খ্ৰীষ্টাব্দে শামস-উদ-দীন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁও দখল করিয়া নেন৪৫ এবং সর্বপ্রথম তিনটি শাসন বিভাগ-লখনৌতি, সাতগাঁও এবং সোনারগাঁওকে একক রাষ্ট্রভুক্ত করিয়া এই সম্মিলিত রাজ্যের অধীশ্বর হন।
দিল্লীর সুলতান ফীরুজ শাহ তুঘলক ইলিয়াসকে আক্রমণ করিয়া ব্যর্থ হন, ইলিয়াসের শাসনক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকিয়া যায়। এই সময়ে শামসই-সিরাজ আফীফ ইলিয়াস শাহকে ‘শাহ-ই-বঙ্গালা’, ‘শাহ-ই-বঙ্গালীয়ান’ এবং ‘সুলতান-ই-বঙ্গালা’ রূপে অভিহিত করেন।৪৬ তখন হইতেই লখনৌতির সুলতান ‘বঙ্গালা’র সুলতানে, লখনৌতির মুসলিম রাজ্য ‘বঙ্গালা’র মুসলিম রাজ্যে পরিণত হয় এবং লখনৌতি রাজ্যের উল্লেখ বন্ধ হইয়া যায়।
ডঃ আহমদ হসন দানী বলেন,
“Shamsuddin Ilyas Shah was the first Sultan who by his sagacity and political acumen, founded the united kingdom of Bengal and earned for himself the name of Shah-i-Bangalah. It was from his time that the connotation of the word Bangalah changed, and it was thence forward applied to the whole country of Bengal.”৪৭
ইহার পর ‘বঙ্গালা’ নাম ১৯৪৭ খ্ৰীষ্টাব্দের বিভাগ-পূর্ব বাংলা, বা ইংরেজদের Bengal বা মোগলদের সুবা বঙ্গালা দ্বারা যেই ভূ-খণ্ড বুঝাইত, সেই ভূ-খণ্ডকে বুঝাইতে শুরু করে। বরনী এবং আফীফের সাক্ষ্যে পরিষ্কার হইয়া উঠে যে প্রাচীন ‘বঙ্গ’-এর পরবর্তী নাম ‘বঙ্গালা’। অতএব ‘বঙ্গ’ হইতে ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি।
শামস-উদ-দীন ইলিয়াস শাহের সময় হইতে ‘বঙ্গালা’ নাম পরিচিতি লাভ করে। বিদেশী সূত্রে এর অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়, কয়েকটি উদাহারণ নিম্নরূপঃ
ইরানী কবি হাফিজ কর্তৃক গিয়াস-উদ-দীন আজম শাহের নিকট প্রেরিত গযলে ‘বঙ্গালা মী রওদ’ বা ‘বঙ্গালা’য় যাইতেছে’ বলা হইয়াছে। পনর শতকের প্রথম দিকে লিখিত আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানীর চিঠিতে নূর কুতব আলমকে “বঙ্গালী” বলা হইয়াছে। চীনা বিবরণে পাং-কো-লা (বঙ্গালা) বলা হইয়াছে; মতলা-উস-সাদাইন-এ আহমদ শাহকে ‘বঙ্গালা’র সুলতান বলা হইয়াছে ;৪৮
আল-সখাভীর ‘আল-জউ আল-লামে’ গ্রন্থে আজম শাহকে ‘মনজালা’র (বঙ্গালা’র) সুলতান বলা হইয়াছেঃ ইবন হজর আসকলানী মক্কা ও মদীনা শরীফে প্রতিষ্ঠিত আজম শাহের মাদ্রাসা-কে ‘বঙ্গালী’ মাদ্রাসা রূপে অভিহিত করিয়াছেন। বাবর তাঁর আত্মজীবনীতে হোসেন শাহ ও নসরত শাহকে ‘বঙ্গালা’র সুলতান এবং তাঁহাদের “বঙ্গালী’ বলিয়াছেন। তিব্বতী ঐতিহাসিক লামা তারানাথ তাঁহার বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস-এ ‘বঙ্গালা’ নাম ব্যবহার করিয়াছেন ; তারানাথ ১৬১০ খ্ৰীষ্টাব্দে তাঁহার বই রচনা করেন। মোগল এবং মোগল যুগের আফগান ঐতিহাসিকেরা সকলে ‘বঙ্গালা’ বলিয়াছেন; টোডরমল্লের ভূমি-বন্দোবস্তে সুবা ‘বঙ্গালা’ এবং সুবা ‘বঙ্গালা’র অধীনস্থ সরকার, পরগনা, মহাল ইত্যাদির বিশদ বিবরণ আছে। আবুল ফজল শুধু যে সুবা ‘বঙ্গালা’র উল্লেখ করেন তাই নহে, তিনি সুবা ‘বঙ্গালা’র সীমাও বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “এ সুবা দ্বিতীয় ভৌগোলিক অঞ্চলে (ইকলীম) অবস্থিত। চাটগাঁও হইতে গড়হী (তেলিয়াগড়হী) পর্যন্ত ইহার দৈর্ঘ্য চারিশত ক্রোশ। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল হইতে দক্ষিণে সরকার মন্দারণ পর্যন্ত ইহার প্রস্থ দুইশত ক্রোশ।” আবুল ফজল আরও বলেন যে, উড়িষ্যা ‘বঙ্গালা’র সঙ্গে যুক্ত হইলে দৈর্ঘ্য ৪৩ ক্রোশ এবং প্রস্থ ২৩ ক্রোশ বৃদ্ধি পায়। তুজুক-ই- জাহাঙ্গীরীতেও ‘বঙ্গালা’র আয়তন একই রকম পাওয়া যায় এবং ১৭৮৮ খ্ৰীষ্টাব্দে লিখিত গোলাম হোসেন সলীমের “রিয়াজ-উস-সালাতীন”-এ সুবা ‘বঙ্গালা’র আয়তন আবুল ফজলের অনুসরণে একই রকম দেওয়া হয়। ষোল শতক হইতে ইউরোপীয়রা আসিতে শুরু করে ; তাহারা প্রথম দিকে Bengala, Bengall বলিলেও মোগল সুবা ‘বঙ্গালা’ ইংরেজদের অধিকারে যাওয়ার পরে Bengal নামেই পরিচিত হয়। সুতরাং Bengala বা Bengal, ‘বঙ্গালা’রই ইউরোপীয় বা ইংরেজী রূপ।
‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি কিভাবে হইল, এই প্রশ্ন প্রথমে জাগে মোগল ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মনে। তিনি বলেন,
“The original name of Bengal (Bangalah in the text) was Bang. Its former rulers raised mounds measuring ten yards in height and twenty in breadth throughout the province which were called el. From the suffix, this name Bengal (Bangalah) took its rise and currency”৪৯
‘রিয়াজ-উস-সালাতীন’-এ এই অভিমত পুনর্ব্যক্ত করা হইয়াছে। ৫০ লক্ষ্য করার বিষয় এই যে আবুল ফজল দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন যে ‘বঙ্গা’ই ‘বঙ্গালাহ’ নামে রূপান্তরিত হইয়াছে।
‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি কিভাবে হইল, এই প্রশ্ন প্রথমে জাগে মোগল ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মনে। তিনি বলেন,
“The original name of Bengal (Bangalah in the text) was Bang. Its former rulers raised mounds measuring ten yards in height and twenty in breadth throughout the province which were called el. From the suffix, this name Bengal (Bangalah) took its rise and currency”৪৯
‘রিয়াজ-উস-সালাতীন’-এ এই অভিমত পুনর্ব্যক্ত করা হইয়াছে। ৫০ লক্ষ্য করার বিষয় এই যে আবুল ফজল দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন যে ‘বঙ্গা’ই ‘বঙ্গালাহ’ নামে রূপান্তরিত হইয়াছে।
আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেহ কেহ ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করেন। History of Bengal, Vol. 1. সম্পাদনার সময় রমেশচন্দ্র মজুমদারের মনে এই প্রশ্ন জাগে। তিনি লক্ষ্য করেন যে প্রাচীন বা প্রাক-মুসলিম আমলে ‘বাংলার কোন একক বা সাধারণ নাম ছিল না, ‘বাংলা’র বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। তিনি বলেনঃ
“The geographical unity of Bengal, too, was not evidently fully realised in ancient times. No common name for the whole province was evolved, although the number of old regional names was gradually being reduced. Even upto the very end of the Hindu rule, Gauda and Vanga denoted not only two distinct geographical divisions but, to a certain extent, also two political entities.
“The absence of a common designation for the country or the people as a whole seems to show that inspite of the political unity for a long period under the Palas, and for shorter periods, under other dynasties,a united Bengali nation,as we understand it, had not yet probab;y come into existence, and there was a broad demarcation between Eastern and Western Bengal, traces of which persist, even today.”৫১
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার নিজে ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করিয়াছেন। ষোল শতকের ইউরোপীয় লেখক, যেমন বারবোসা, ভারথেমা, বেঙ্গালা নামে একটি শহরের (City of Bengal) উল্লেখ করেন। গসতালদির মানচিত্রে (১৬৫১ খ্রীঃ), “The Travels of Cornelius de Bruyan”-এ সংযোজিত মানচিত্রে (১৭০১ খ্রীঃ), ব্লাভ (১৬৫০ খ্ৰীঃ) এবং সসেন-এর মানচিত্রে (১৬৫২ খ্ৰীঃ) বেঙ্গালা শহরকে চট্টগ্রাম এলাকায় চিহ্নিত করা হইয়াছে। এই বেঙ্গালা শহরের অস্তিত্ব এবং পরিচিতি নিয়া বিস্তর গবেষণা হইয়াছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন প্রশ্নেরই সমাধান হয় নাই। রেনেল প্রমুখ পরবর্তী ইউরোপীয় লেখক ‘বেঙ্গালা’ শহরের অস্তিত্ব খুঁজিয়া পান নাই। ১৬৮৯ খ্ৰীষ্টাব্দে ওভিংটন বলেন,
“A late French geographer (Baudraud) has put Bengala into his Catalogue of imaginary cities, and such as have no real existence in the world.”৫২
আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিষয়ে বিস্তর মতানৈক্য, কেহ বেঙ্গালা শহরকে সোনারগাও-এর সঙ্গে আবার কেহ চট্টগ্রামের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন; কেহ বলেন বেঙ্গালা শহরের অস্তিত্বই ছিল না, ‘বেঙ্গালা’র কোন একটি বড় শহরকে City of Bengala বলা হইয়াছে, ইহা কোন একটি বিশেষ বা নির্দষ্ট শহরের নাম নহে ; আবার কেহ বলেন, ‘বেঙ্গালা’ শহর সমুদ্রে বিলীন হইয়াছে। ঐতিহাসিকদের নিকট বেঙ্গালা শহরের পরিচিতি এমন একটি সমস্যা, যাহার সমাধান করা এখন আর বোধ হয় সম্ভব নয়।
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বেঙ্গালা শহরকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত দিয়াঙ্গ এর সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন। শুধু তাহা নহে, তিনি বলেন যে এই ‘বেঙ্গালা’ শহর হইতেই ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি হইয়াছে।৫৩ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে দিয়াঙ্গ একটি বিস্তীর্ণ এলাকা ; দিয়াঙ্গ পাহাড় এখনও কয়েক মাইল বিস্তৃত এবং এই পাহাড় ঘেঁষিয়া নদীর তীরে পর্তুগীজদের কুঠির এবং গীর্জা ছিল। সতর শতকের প্রথম দিকে সেবাষ্টিয়ান ম্যানরিক এই গীর্জায় বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন এবং এখান হইতেই তিনি পর্তুগীজদের পক্ষে ওকালতি করার জন্য আরাকানের রাজার নিকট যান। ম্যানরিকের বিবরণে দিয়াঙ্গ এবং চট্টগ্রামের অনেক উল্লেখ থাকিলেও একবারও বেঙ্গালা রূপে উল্লেখ পাই না।
‘বেঙ্গালা’ শহরের যাহারা উল্লেখ করিয়াছে তাহারা কেহ ষোল শতকের আগের লোক নয়, অথচ আমরা দেখিয়াছি যে চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি সময় হইতে মুসলমান ঐতিহাসিকেরা ‘বঙ্গ’কে ‘বঙ্গালা’ নামে অভিহিত করিয়াছেন। সুতরাং ডঃ মজুমদারের দেওয়া বেঙ্গালা শহরের পরিচিত সত্য হইলেও (অবশ্য সত্য বলিয়া মনে হয় না) বেঙ্গালা শহরের নাম হইতে ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি হইয়াছে বা বেঙ্গালা শহর প্রাচীন ‘বঙ্গালা’ দেশের সঙ্গে অভিন্ন, এই অভিমত নয়।
ডি. সি. সরকার বলেন,
As Bengala (like the modern name Bengal) is a foreign corruption of Vangala a celebrated historian (Dr. Majumdar) has suggested that this late medieval city of Bengal (which he locates near modern Chittagong) was the capital of the ancient Vangala-desa and gave its name to the kindom, or vice versa, and in either case, the old kingdom of Vangla must be located in the region round the city…the above theories appear to be unwarranted.”৫৪
History of Bengal, Vol, I-এ ডঃ হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী ‘বঙ্গালা’-এর পরিচিতি দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তথ্যের অভাবে বিষয়টি পাশ কাটাইয়া যান। তিনি ভাষার মারপ্যাঁচে বিষয়টির আলোচনা শেষ করেন, এবং মত প্রকাশ করেন যে ‘বঙ্গাল’ হইতে মোগল সুবা ‘বঙ্গালা’র নামকরণ হয়, ‘বঙ্গ’ হইতে নয়। তিনি ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আবুল ফজলের বক্তব্য উল্লেখ করেন এবং ইউরোপীয় লেখকদের বেঙ্গালা, শহরেরও উল্লেখ করেন, কিন্তু ‘বঙ্গালা’-এর ভৌগোলিক অবস্থিতি সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত দেন নাই।
ডঃ ডি. সি. সরকার ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি এবং ‘বঙ্গালা’ দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেন। তিনি একজন প্রাচীন শিলালিপি এবং তাম্রলিপি বিশেষজ্ঞ, তাই তিনি প্রাচীন তাম্রলিপি বিশ্লেষণ করিয়া নূতন আলোক দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাষ্ট্রকূট তৃতীয় গোবিন্দের নেসারীলিপিতে (৮০৫ খ্ৰীঃ) ধর্মপালকে ‘বঙ্গাল’-এর রাজা বলা হয়। ইহার ফলে কেহ কেহ মনে করেন যে পাল রাজারা মূলত বঙ্গল-এর রাজা ছিলেন এবং পরে গৌড় ও মগধ অধিকার করেন। এই প্রশ্নটি বিতর্কিত, কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক বিধায় আমরা এই প্রশ্নে কোন মন্তব্য করিব না।
সাগরতাল লিপিতে ধর্মপালকে ‘বঙ্গাল’-এর রাজা এবং অমোঘবর্ষের সনজনলিপিতে গৌড়ের রাজা বলা হইয়াছে। এগার শতকে রাজেন্দ্র চোলের তিরুমালাই লিপিতে গোবিন্দচন্দ্রকে ‘বঙ্গাল’-দেশ-এর রাজা বলা হইয়াছে, আবার চন্দ্রবংশের লিপিতে ঐ বংশের রাজা ত্ৰৈলোক্যচন্দ্রকে চন্দ্রদ্বীপের রাজা বলা হইয়াছে। সুতরাং চন্দ্র রাজারা এক সূত্রে ‘বঙ্গাল’-এর রাজা, অন্য সূত্রে চন্দ্ৰদ্বীপের রাজা। অতএব ডি. সি. সরকার বলেন,
“Candra-dvip and Vangala-desa thus appear to be more or less indentical. As Candra-divip is no other than the celebrated Bakla-Candra-dvip (i.e. parts of Buckergunge District and the adjoining region), the Buckergunge area was apparently included in Vangala-desa.”৫৫
আবার ‘বঙ্গ’-এর পরিচিতি সম্পর্কে ডি. সি. সরকার বলেন,
“The Raghuvamsa reference to the defeat of the Vanga people in the land watered by the lower streams of the Ganges and epigraphic reference to Vanga comprising the Vikrampur region of Dhaka and Faridpur and to the Navya region of Vanga very probably in the Faridpur and Buckergunge districts, leave hardly any doubt that Vanga certainly included at least parts of of present Dhaka, Faridpur and Buckergunge Districts.”৫৬
‘বঙ্গ’ ও ‘বঙ্গাল’-এর পরিচিতি সম্পর্কে ডি. সি. সরকারের এই উক্তি দুইটির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য খুঁজিয়া পাওয়া যায় না; বাকেরগঞ্জ ‘বঙ্গ’ এবং ‘বঙ্গাল’ উভয় জনপদেই অবস্থিত ছিল। ইতিপূর্বে ‘বঙ্গ’-এর আলোচনায় আমরা দেখিয়াছি যে বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেনের তাম্রলিপিতে বিক্রমপুর-ভাগ এবং নাব্য-ভাগ, অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ এলাকা নিয়া ‘বঙ্গ’ জনপদ গঠিত ছিল।
‘বঙ্গালা’-এর পরিচিতি সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত দিতে অপারগ হইয়া ডি. সি. সরকার ‘বঙ্গালা’কে সমুদ্রোপকূলে পাঠাইয়া দিয়াছেন। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারও একই কারণে ‘বঙ্গালা’কে ‘বেঙ্গালা শহর’-এ বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাঠাইয়া দেন।
অতি সম্প্রতি ঢাকার বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত এবং ডঃ আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রথম খণ্ডে সংযোজিত প্ৰথম মানচিত্রে সাগর উপকূলে একটি ক্ষুদ্র ভূখণ্ডকে ‘বঙ্গালা’ রূপে চিহ্নিত করা হইয়াছে। সম্পাদনা পরিষদ অবশ্যই ডি. সি. সরকারের দ্বারা প্রভাবিত হইয়াছেন, কারণ ঐ গ্রন্থে ডঃ . আবদুল মোমিন চৌধুরী রচিত ‘বাংলার ভৌগোলিক পরিচয়’ শীর্ষক অধ্যায়ে ইহার সমর্থন নাই। তিনি বলেন, ‘বঙ্গাল’-এর ব্যবহার মূলত দক্ষিণী লিপিতে। …তবে এই প্রসঙ্গে এ কথা বলা বোধ হয় খুব অযৌক্তিক হবে না যে বাংলার বাইরে-বিশেষ করিয়া দক্ষিণ ভারতে, ‘বঙ্গ’ ও ‘বঙ্গালা’ খুব একটা পৃথক চিন্তায় ব্যবহৃত হয় নাই। ‘বঙ্গ’ বলিয়া যে বিস্তৃর্ণ ভূভাগকে চিহ্নিত করা সম্ভব তাহাই ‘বঙ্গালা’ বলিয়া উল্লেখিত হইয়াছে, এই উল্লেখ যে খুব একটা বিশেষ অঞ্চল নির্দেশক ছিল এমন কথা জোর করিয়া বলা সম্ভব নয়।”৫৭
মুসলমান ঐতিহাসিকদের তথ্য বিশ্লেষণ না করিয়া ‘বঙ্গালা’র পরিচিতি দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ প্রাচীন লিপিতে একমাত্র নামোল্লেখ ছাড়া আর কোন বিবরণ নাই। পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকেরা ধরিয়া নেন যে, যেহেতু ‘বঙ্গালা’ নামটি সারা মুসলমান আমলে পরিচিতি লাভ করে, যেহেতু প্রাচীন লিপিতে ‘বঙ্গাল’ এবং ‘বঙ্গালদেশ’-এর উল্লেখ পাওয়া যায়, এবং ইংরেজদের ‘বঙ্গাল’ ‘বঙ্গালা’রই পরবর্তী রূপ সেইহেতু ‘বঙ্গাল’ নামক একটি ভূভাগ ‘বঙ্গ’-এর কোন অংশে অবস্থিত ছিল এবং সেই ‘বঙ্গাল’ ভূভাগেরই পরবর্তী রূপ ‘বঙ্গালা’, ‘বেঙ্গাল’ ইত্যাদি।
‘বঙ্গাল’ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আবুল ফজলের যেই ব্যাখ্যা ডঃ মজুমদার আমলই দেন নাই৫৮ সমুদ্রতটে দক্ষিণ বঙ্গের ছোট একটি এলাকা ‘বঙ্গালা’ রূপে চিহ্নিত করার জন্য ডি. সি. সরকার আবুল ফজলের সেই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “We have seen that the interesting mention of the earthen mounds, primarily meant for keeping off the encroachment of sea-water from the corn-fields, referes to a condition prevailing in the Buckergunge region of the coastal area of Bengal even today.”৫৯ কিন্তু বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি আলোচনা করিলে দেখা যায়, শুধু বাকেরগঞ্জ কেন, ঢাকা ফরিদপুরসহ বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এইরূপ বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আবুল ফজলের উক্তি গ্রহণযোগ্য হউক বা না হউক, ষোল শতকে আবুল ফজল একটি যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করিয়া ইতিহাস-সচেতনতার পরিচয় দেন।
সে যাহা হউক, মুসলমান ঐতিহাসিকদের তথ্য আলোচনায় আমরা দেখিয়াছি যে ‘বঙ্গ’ এবং ‘বঙ্গালা’ একই ভূভাগ, ‘বঙ্গ’ ‘বঙ্গালা’ রূপ লাভ করে। সোনারগাঁও অঞ্চল আক্রমণের সময় হইতেই ‘বঙ্গালা’ নামটি মুসলমান ঐতিহাসিকদের লেখায় স্থান পায় এবং সোনারগাঁও অধিকারের পরেই ইলিয়াস শাহ্কে ‘শাহ-ই-‘বঙ্গালা’ রূপে অভিহিত করা হয় এবং ইহার পর হইতেই ‘বঙ্গালা’ নামটি সারা ‘বাংলা’র জন্য প্রযোজ্য হয়। ডি. সি. সরকার যেই অঞ্চলকে ‘বঙ্গালা’ রূপে পরিচয় দেন এবং উপরোক্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ডের প্রথম মানচিত্রে যেই স্থানে ‘বঙ্গালা’ চিহ্নিত হইয়াছে, সেই অঞ্চল মুসলমান অধিকারে আসে ইলিয়াস শাহের প্রায় একশত বৎসর পরে।
এখানে ‘বঙ্গালা’ নামাঙ্কিত আকবরের রাজত্বের ৩৯শ বৎসর ও তৎপরবর্তী সময়ের কিছু মুদ্রার উল্লেখ করা যায়। আকবরের সময় অবশ্যই ‘বঙ্গালা’ বা ‘বেঙ্গালা” নামক কোন শহরের অস্তিত্ব ছিল না, অন্ততপক্ষে, ঐ সময়ে কোন লেখক, দেশী বা বিদেশী, ‘বঙ্গালা’ নামক শহরের উল্লেখ করেন নাই। সেই কারণে মুদ্রাতত্ত্ববিদেরা মনে করেন যে যখন যেখানে আকবরের সময় সুবা বঙ্গালার রাজধানী বা প্ৰধান শাসনকেন্দ্র ছিল, সেইটিই ‘বঙ্গালা’। আকবরের রাজত্বের ৩৯শ বা তৎপরবর্তী বৎসরে আকবরনগর বা রাজমহল ছিল সুবা বঙ্গালার প্রধান শাসনকেন্দ্র, সুতরাং এই সময়ের মুদ্রার ‘বঙ্গালা’ রাজমহল। এই বিতর্কে না গিয়াও বলা যায় যে আকবরের মুদ্রার ‘বঙ্গালা’, আর যাহাই হউক, মজুমদার নির্দেশিত চট্টগ্রাম অঞ্চল বা সরকার নির্দেশিত বাকেরগঞ্জের সমুদ্রোপকূলের সঙ্গে চিহ্নিত হইতে পারে না, কারণ এই দুই অঞ্চলের কোনটিই আকবরের অধীনে ছিল না।
প্রশ্ন হয়, মুসলমানেরা ‘বঙ্গালা’ নাম পাইলেন কোথায়? এমন না যে সুলতান শামস-উদ-দীন ইলিয়াস শাহ সংবিধান জারি করিয়া দেশের নামকরণ করেন, যেমনটি বর্তমান যুগে করা হয়। ‘বঙ্গালা’ নামটি হয় বিবর্তনের মাধ্যমে, নিশ্চয়ই ‘বঙ্গালা’ নাম দেওয়ার কিছু ঐতিহাসিক কারণ ছিল। দক্ষিণ ভারতীয় লিপিতে ‘বঙ্গালা’, ‘বঙ্গাল দেশ’ পাওয়া যাইতেছে এবং এই ‘বঙ্গাল’ নামটা অন্ততপক্ষে নয় শতক (নেসারীলিপি) হইতে প্ৰচলিত হয়। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে প্রাচীন লিপির ‘বঙ্গাল’ বিবর্তিত হইয়া ‘বঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি হইয়াছে।
প্রাক-মোগল যুগে বিদেশী সূত্রে ‘বঙ্গালা’ নাম অনেক পাওয়া গেলেও ‘বাংলা’র অভ্যন্তরীণ কোন সূত্রে ‘বঙ্গালা’ নাম পাওয়া যায় না। সমসাময়িক কালে লিখিত ‘বাংলা’র কোন ইতিহাস বা অন্য কোন দলীল আবিষ্কৃত হয় নাই। অবশ্য এই কথা ঠিক যে দেশের অভ্যন্তরে, বিশেষত শাসকবর্গের কাছে ‘বঙ্গালা’ নাম চালু ছিল, নচেৎ একাধিক বিদেশী সূত্রে এই একই নাম পাওয়া যাইত না। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে বাংলা সাহিত্যেও ‘বঙ্গালা’ বা ‘বাঙ্গালা’ নামের ব্যবহার দেখা যায় না।
মোগল আমলে ‘বঙ্গালা’ নামের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, আকবরের আমলে ‘বঙ্গালা’ নাম অঙ্কিত মুদ্রা প্রচলিত হয়, আবুল ফজল ‘বঙ্গালা’ নামের তাৎপৰ্য ব্যাখ্যার প্রয়াস পান, প্রাদেশিক শাসনকর্তারা ‘বঙ্গালা’র সুবাদার রূপে অভিহিত হইতে থাকেন, মোগল এবং মোগল আমলের আফগান ঐতিহাসিকেরা ‘বঙ্গালা’ নামই ব্যবহার করেন, কিন্তু মোগল আমলেও বাংলা সাহিত্যে (অন্তত আঠার শতকের গোড়া পর্যন্ত) ‘বঙ্গালা’ নামের ব্যবহার দেখা যায় না। সুলতানী আমলে বাংলার সুলতানকে গৌড়েশ্বর বলা হইত এবং বাংলার বিভিন্ন অংশকে পূর্ব নামে, অর্থাৎ, বরেন্দ্র, রাঢ়, বঙ্গ ইত্যাদি রূপে উল্লেখ করা হয়।
কৃত্তিবাস ‘বঙ্গ’-এ প্রমাদের কথা বলেন, তাঁহার পূৰ্বপুরুষ নরসিংহ ওঝার গঙ্গাতীর আশ্ৰয় নেওয়ার কথা বলেন, গঙ্গা পার হইয়া বরেন্দ্রে গুরুগৃহে যাওয়ার কথা বলেন, গৌড়েশ্বরের দরবারে যাওয়ার কথা বলেন, কিন্তু কোথাও ‘বঙ্গালা’ নাম ব্যবহার করেন নাই, যদিও ‘বঙ্গালা’ নাম কৃত্তিবাসের সময়ের আগে হইতে প্রচলিত হয়।
বিজয়গুপ্ত মুল্লুক ফতোয়াবাদ-এ বাঙ্গরোড়া তকসীমের কথা বলেন, গৌড়েশ্বরের কথা বলেন, কিন্তু ‘বঙ্গালা’ উল্লেখ করেন নাই, যদিও লক্ষ্য করার বিষয় এই যে ডি. সি. সরকার বাঙ্গরোড়াকে তাঁহার চিহ্নিত ‘বঙ্গাল’ দেশের মধ্যে অবস্থিত বলিয়া মত প্রকাশ করেন।মুকুন্দরাম আকবর বাদশাহ, ডিহিদার মামুদ শরীফ এবং রাজস্ব কর্মকর্তাদের অত্যাচারের কথা বর্ণনা করেন, কিন্তু ‘বঙ্গালা’ কোথাও বলেন নাই।
মুসলমান কবিরা ‘বঙ্গ’, ‘বাঙ্গালী’ এবং ‘বাঙ্গালা’ ভাষার কথা বলেন, কিন্তু দেশ বুঝাইতে ‘বঙ্গ’ই ব্যবহার করেন, ‘বঙ্গালা’ বা ‘বাঙ্গালা” নয়।
সৈয়দ সুলতান “কর্মদোষে বঙ্গেত বাঙ্গালী উত্তৰ্পন”, অর্থাৎ ‘বঙ্গ’ ও ‘বাঙ্গালী’র কথা বলেন; নসরুল্লাহ খোন্দকার ‘গৌড়দেশে বাঙ্গু (বঙ্গ) নাম’ বলেন; আবদুল হাকিম ‘বঙ্গেতে’ জন্মিয়া যাহারা ‘বাঙ্গালা’ ভাষা ঘৃণা করে তাহাদের গালমন্দ করেন, কিন্তু আলাওল ‘মুল্লুক ফতোয়াবাদ গৌড়েতে প্রধান’ বলেন।
চৈতন্যচরিতকারগণ রাঢ়, উড্র দেশের কথা বারবার বলেন, কিন্তু ‘বঙ্গালা’ দেশের কথা বলেন নাই; তাঁহারা মাঝে মাঝে শ্ৰীহট্ট ও চট্টগ্রামের কথাও বলেন, কিন্তু ‘বঙ্গালা’র উল্লেখ করেন নাই। কৃষ্ণরাম রাঢ়, বঙ্গ, কলিঙ্গ এবং নেপাল দেখার কথা বলেন,৬০ কিন্তু ‘বঙ্গালা’ বলেন নাই।
আঠার শতকে বাংলা সাহিত্যে ‘বঙ্গালা’ বা ‘বঙ্গালা’ নামের ব্যবহার কিছু কিছু দেখা যায়, যেমন ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে আছে, “কাঙ্গাল হইনু সবে বাঙ্গালায় এসে। শির বেচে টাকা করি তাও যায় ভেসে।”৬১ নরসিংহ লিখেন, “বাঙ্গালায় বীরভূম বিখ্যাত অবনি।”৬২
ফলে দেখা যায় যে মধ্যযুগের বাঙ্গালী কবিদের মধ্যে ‘বঙ্গালা’ (বা বাঙ্গালা) নামের প্রতি আকর্ষণ ছিল না, শুধু আঠার শতকে আসিয়াই তাঁহাদের লেখায় ক্বচিৎ ‘বঙ্গালা’ নাম পাওয়া যায়। অবশ্য আঠার শতকে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হইয়াছে, গৌড় অনেক আগেই পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসস্তুপে পরিণত; রাজধানী তাণ্ডা, রাজমহল এবং ঢাকা ঘুরিয়া মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। মোগল শাসন পাকাপোক্ত হওয়ায়, মোগল রাজস্ব ব্যবস্থা গ্রামেগঞ্জে ছড়াইয়া পড়ায়, মোগল কর্মচারীদের মারফৎ ফরমান, সনদ, পরওয়ানা ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছিয়া যায়, সুবা ‘বঙ্গালা’র নামও চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে।
মোগল রাজ সরকারে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য ফার্সী ভাষা শিক্ষার প্রবণতা বাড়িয়া যায়; হিন্দুরাও অধিক সংখ্যায় ফার্সী শিখে। ইউরোপীয়দের, বিশেষ করিয়া ইংরেজদের বাণিজ্যিক তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে তাহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক এই দেশীয় লোক-যেমন উকিল, দালাল, পাইকার, দাদনদার, তাঁতী ইত্যাদি, বিদেশীদের দেওয়া বেঙ্গল নামের সঙ্গে পরিচিত হয়।
মুর্শিদকুলী খানের সময় হইতে, বিশেষ করিয়া মুর্শিদকুলী খানের পরে বাংলা কাৰ্যত স্বাধীন হইয়া যায়, হিন্দুরা উচ্চ রাজপদ, এমন কি রায়রায়ান পদও অধিকার করে। ইহাদের পোষ্য ও তস্য-পোষ্যদের কাছেও সুবা বঙ্গালার নাম প্রিয় হইয়া উঠে। সুতরাং সুবা ‘বঙ্গালা’র নাম শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ না থাকিয়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রচারিত হয়। ‘বঙ্গালা’ নাম অফিস আদালত এবং সর্বত্র প্রসার লাভ করে।
“বঙ্গালা” নামের প্রতি মধ্যযুগের বাঙ্গালী কবিদের আকর্ষণ না থাকায় কারণ বোধ হয় ‘বঙ্গালা’ নামের উৎসেই নিহিত। আগেই বলা হইয়াছে যে প্রাচীন দক্ষিণী তাম্রলিপিতে ‘বঙ্গালা’ এবং ‘বঙ্গাল দেশ’-এর উল্লেখ আছে।
আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে এই প্রসঙ্গে নিবেদন করিতে চাই যে প্রাচীন লিপির ‘বঙ্গাল” দ্বারা বঙ্গাল দেশ না বুঝাইয়া ‘বঙ্গ’-এর অধিবাসী ‘বঙ্গাল’ বুঝান হইয়াছে এবং ‘বঙ্গাল দেশ’ দ্বারা ‘বঙ্গাল’দের দেশ বুঝান হইয়াছে। ‘বঙ্গ-এর অধিবাসী ‘বঙ্গী’ রূপে পরিচিত না হইয়া ‘বঙ্গাল’ বা বাঙ্গাল রূপেই পরিচিতি লাভ করে।
‘মানিকচন্দ্র রাজার গান’-এ আছে, “ভাটি হৈতে আইল বাঙ্গাল লম্বা লম্বা দাড়ি।‘’৬৩ মুকুন্দরামও ভাল নাবিকরূপে ‘বাঙ্গাল’দের উল্লেখ করেন।৬৪ ‘বঙ্গ’-এর অধিবাসীদের বুঝাইবার জন্য ‘বঙ্গী’ উল্লেখ পাওয়া যায় না।
সুতরাং ‘বঙ্গ’-এর অধিবাসী ‘বঙ্গাল’ কিন্তু কোন কোন সময় বা কোন কোন এলাকায় ‘বঙ্গাল’ (বা ‘বাঙ্গাল’) অবজ্ঞার সুরে ব্যবহৃত হয়। নেসারীলিপি বা তিরুমালাইলিপিতে অবজ্ঞার সুর ছিল, কারণ উভয় লিপিতে ‘বঙ্গাল’ রাজার পরাজয়ের কথা বলা হইয়াছে। চর্যাগীতিতে ভুসুকুর পদে ‘বঙ্গল’, ‘বঙ্গালী’ অবজ্ঞার অর্থে ব্যবহৃত।
ডঃ আহমদ শরীফ বলেন, “তেমনি অবজ্ঞা বর্তমান গঙ্গার পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ের লোকের প্রতি। আজো চট্টগ্রামে বাঙাল বলতে ঐতিহ্য আভিজাত্য সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিহীন লোক ও পরিবার বুঝায়। অবশ্য বঙ্গ, বঙ্গাল ও বঙ্গালীর ব্যবহারও রয়েছে…।” ভুসুকুর বঙ্গাল, বঙ্গালী সম্পর্কে তিনি বলেন, “এর মধ্যে নিন্দা ছাড়া আর কিছুই নেই। এবং কোন বাঙ্গালী কবি এই সব পদ রচনা করতে পারেন না।৬৫
এই ঢাকা শহরেই পঞ্চাশের দশকে দেখিয়াছি, ঢাকার মূল অধিবাসীরা ঢাকার বাহির হইতে আগত সকলকে অবজ্ঞা করিয়া ‘বঙ্গাল’ বলিত।ইহার জবাবে বাহিরের লোকেরা ঢাকার লোকদের ‘ইংলিশম্যান’ বলিত।
১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হওয়ার প্রাক্কালে বাউণ্ডারী কমিশনের নিকট এ. কে. ফজলুল হক ভাগীরথী নদীকে সীমানা নির্ধারক করার স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করিয়া বলেন যে ভাগীরথীর পশ্চিম এবং পূর্ব অংশে সংস্কৃতিগত প্ৰভেদ রহিয়াছে; পশ্চিম অংশের লোকেরা পূর্ব অংশের লোককে ‘বাঙ্গাল’ এবং পূর্ব অংশের লোকেরা পশ্চিম অংশের লোককে ‘ঘটি’ বলিয়া ডাকে। মুকুন্দরামের ‘বঙ্গাল” উল্লেখ লক্ষ্য করে ডি. সি. সরকার বলেন যে মুকুন্দরাম পশ্চিমবঙ্গের লোক এবং তাঁহার অঞ্চলের লোকেরা পূর্ববঙ্গের যে কোন জিলার লোককে ‘বাঙ্গাল’ বলে।৬৬
এই ‘অবজ্ঞার পাত্র ‘বঙ্গাল’ হইতেই যেহেতু ‘বঙ্গালা’ বা ‘বাঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি, সেহেতু ঐ নামের প্রতি মধ্যযুগের কবিদের আকর্ষণ থাকার কথা নয়। তাঁহারা গৌড়কে আকড়িয়া ধরেন, পরে গৌড় একেবারে ধ্বংস হইয়া গেলে তাঁহারা নিজ নিজ এলাকা যেমন, বঙ্গ, রাঢ় এবং পরে আরও ছোট ছোট অঞ্চল, দামুনা, বাঙ্গরোড়া, ভুরসুট, এমনকি মুসলমান আমলের নাম ফতোয়াবাদকেও উল্লেখ করিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই।
মুসলমানদের আগমনের সময় পূর্ব ভারতের এই অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল, বরেন্দ্র,রাঢ়, সমতট, কামরূপ ইত্যাদি।মুসলমান ঐতিহাসিকেরা এই নামগুলি গ্রহণ করেন, অবশ্য ফার্সী লেখায় ধ্বনিগত কিছু পরিবর্তন হয়, যেমন বরিন্দ, রাল, বং, সনকনত বা সকোনত এবং কামরূদ বা কামরু। প্রথম মুসলমান রাজ্য লখনৌতি নামে অনেক দিন পরিচিত ছিল, কিন্তু ‘বঙ্গ’ অধিকৃত হওয়ার পরে তাহারা দেখে যে ‘বঙ্গাল’ শব্দটি বহুল প্রচলিত এবং এই শব্দ দ্বারা ‘বঙ্গ’-এর জনগণকে বুঝায়।
প্ৰথম ‘বঙ্গালা’ উল্লেখ্যকারী মুসলমান ঐতিহাসিক বরনীর তারিখ-ই-ফীরুজশাহীতে পাই ‘আবু-বঙ্গাল’ বা বঙ্গালদের পিতা, এবং এখানে ‘বঙ্গাল’ দ্বারা ‘বঙ্গাল’ জাতির পরিচয় দেওয়া হয়। এই ‘বঙ্গাল’ হইতেই ‘বঙ্গালা’। বরনীও হয়তো অবজ্ঞার অর্থেই ‘বঙ্গাল’ ব্যবহার করেন, কারণ দিল্লীর সুলতানের প্রতিদ্বন্দী ‘বাংলা’র সুলতানকে তিনি সিয়াহ (কাল) এবং ভাঙখোর বলে গালমন্দ করেন এবং ‘বাংলা’কে বলগাকখানা (বিদ্রোহী অঞ্চল) রূপে চিত্রিত করেন।
ফার্সী ভাষায় ‘বঙ্গাল’ এবং ‘বঙ্গালা’ শব্দের পার্থক্য শুধু একটি হ অক্ষর। অন্তে হ অক্ষরটি কোন কোন সময় উচ্চাতি হয়, কিন্তু প্রায় সময় উচ্চারিত হয় না। উচ্চারিত হইলে তা জাহেরী (বা প্রকাশ্য), কিন্তু অনুচ্চারিত থাকিলে মখকী (বা অপ্ৰকাশ্য) রূপে পরিচিত। এই হ অক্ষরের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে; তন্মধ্যে একটি হইল এজাফত-এর জন্য বা বিশেষ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য তাহা ব্যবহৃত হয়।৬৭
এখানেও জিয়া-উদ-দীন বরনী এবং শামস-ই-সিরাজ আফীফ ‘বঙ্গাল’দের সঙ্গে সম্পর্ক নিরূপণের জন্য বা ‘বঙ্গাল’দের দেশ পরিচয় দেওয়ার জন্য (হ) অক্ষরটি যোগ করেন, যেমন ‘বঙ্গাল’ ‘বাঙ্গালাহ’, ‘হ অনুচ্চারিত থাকে, সুতরাং ‘বঙ্গালা’।৬৮ ফার্সী ভাষায় ‘বঙ্গালা’ শব্দের প্রথম অক্ষর ‘বে’-এর উপর জবর; বাঙ্গালা ভাষায় জবর-এর জন্য ‘আ’ ব্যবহার করা হয়, যেমন ‘রসূল’কে ‘রাসূল’; ‘রহমত’কে ‘রাহমত’; ‘হাজার’কে ‘হাজার’; খজনা’কে ‘খাজানা’ লিখা বা বলা হয়। সুতরাং ‘বঙ্গালা’ বঙ্গালা ভাষায় ‘বাঙ্গালায়’, রূপান্তরিত হইয়াছে।৬৯
এখন আমরা আমাদের আলোচনা শেষ করিতে পারি। আমরা দেখিয়াছি যে প্রাচীন ‘বঙ্গ’ রাজ্যের সীমানা উত্তরে ব্ৰহ্মপুত্র, পূর্বে ব্ৰহ্মপুত্র ও মেঘনা, পশ্চিমে ভাগীরথী ও করতােয়া এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই সম্পূর্ণ এলাকা (ভাগীরথীর পূর্ব তীরে কিছু অংশ বাদ দিয়া) বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার যে বলিয়াছেন, “ইতিহাসের দিক হইতে পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণের কোন যৌক্তিকতা নাই” বা “বর্তমান পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রনায়কগণ ইতিহাস ও ভূগোলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া আবেগের দ্বারা পরিচালিত হইয়া তাঁহাদের দেশের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহণ করিয়াছেন”, এই কথাগুলি ইতিহাস ও ভূগোলের আলোকে সত্য নয়।
দ্বিতীয়ত আমরা দেখিয়াছি যে ‘বঙ্গালা’ নাম ‘বঙ্গ’-এর অধিবাসী ‘বঙ্গাল’ বা বাঙ্গাল হইতে আসিয়াছে অথবা বলিতে পারি ‘বঙ্গাল দেশ’ (অর্থাৎ ‘বঙ্গাল’দের দেশ) কথাটির ফার্সী রূপ বঙ্গালা’। প্রাচীন কালে বা কোন কালে ‘বঙ্গালা’নামে আলাদা কোন দেশ বা ভূভাগ ছিল না। ডঃ মজুমদার বলিয়াছেন, “বাংলার পূৰ্বরূপ বাঙ্গালা নাম মুসলমানদের দেওয়া-নামটি বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম ‘বঙ্গাল’ শব্দের অপভ্রংশ, ইহা বঙ্গ শব্দের মুসলমান রূপ নহে।” এই বক্তব্যের মধ্যে,
(ক) “বাংলার পূর্বরূপ বাঙ্গালা নাম মুসলমানদের দেওয়া,” কথাটি সত্য।
(খ) “নামটি বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম ‘বঙ্গালা’ শব্দের অপভ্রংশ”, কথাটি সত্য নয়, কারণ ‘বঙ্গাল’ নামে বাংলার বা ‘বঙ্গ’-এর কোন ক্ষুদ্র অংশ ছিল না। আমরা দেখিয়াছি যে ডঃ মজুমদার কর্তৃক প্রদত্ত ‘সিটি অব বেঙ্গালা’র পরিচিতি গ্ৰহণযোগ্য নয়। “
(গ) ‘বাঙ্গালা’ ‘বঙ্গ’ শব্দের মুসলমান রূপ নহে কথাটি সত্য, কিন্তু প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতটি সত্য নয়, কারণ ‘বঙ্গ’ এলাকাই প্ৰথমে বঙ্গালা রূপ লাভ করে, যাহা পরে সারা ‘বাংলা’র জন্য প্রযোজ্য হয়।
তৃতীয়ত, ডঃ মজুমদার পূর্ববঙ্গের বাংলাদেশ নামকরণ করায় বাংলাদেশ সরকারের অধিকার এবং বিজ্ঞতার প্রশ্ন তুলিয়াছেন, কারণ তাঁহার ভাষায় পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশ “আদিতে মুসলমানদের বাঙ্গালা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না (‘বঙ্গ ওয়া বাঙ্গালাহ’ তাহার প্রমাণ)” এই প্রশ্নের উত্তর আগেই দেওয়া হইয়াছে। ডঃ মজুমদারের এই উক্তি তথ্যভিত্তিক নয়; যেই ‘বঙ্গ’, ‘বঙ্গ’-এর অধিবাসী ‘বঙ্গাল’ হইতে মুসলমানদের ‘বঙ্গালা’, ‘বাঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি, সেই ‘বঙ্গ’-এর প্রায় সম্পূর্ণ অংশই বর্তমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সুতরাং বাংলাদেশ নামকরণ মোটেই অযৌক্তিক নয়।
প্ৰসঙ্গত ‘বঙ্গ ওয়া বাঙ্গালাহ’ উক্তির জন্য ডঃ মজুমদার কোন সূত্র উল্লেখ করেন নাই, আমরা এই উক্তি মুসলমান ইতিহাসে খুঁজিয়া পাই নাই। এইরূপ উক্তি থাকিলেও (আছে বলিয়া মনে হয় না) কোন অবস্থাগত কারণে তাহা উক্ত হইয়াছে আমরা পরীক্ষা করিতে পারি নাই।
ডঃ মজুমদার আর কিছু মন্তব্য করিয়াছেন, যাহা আবেগের ব্যাপার। তিনি বলিয়াছেন, “অবিভক্ত বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতির গঠনে যাঁহারা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী অধিবাসী তাঁহাদের পূর্বপুরুষদের অবদানও যথেষ্ট ছিল।” এই বক্তব্যের সত্যতা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবে না।
এই সকল মহৎ ব্যক্তির প্রতি আমরা শ্ৰদ্ধাশীল। ডঃ মজুমদারের জন্মস্থান ফরিদপুরে, তাঁহার মতো আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী মনীষীর জন্মস্থান বর্তমান বাংলাদেশেই, তাঁহারা স্বেচ্ছা নির্বাসন না নিয়া জন্মস্থানে থাকিলে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হইত।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘকাল ধরিয়া বাঙ্গালা, বাংলাদেশ, বাঙ্গালী শব্দগুলি সমগ্ৰ Bengal বা বাংলা অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। সম্পূর্ণ সত্য কথা, তবে আমাদের এখানে প্রতিপাদ্য বিষয় আমাদের দেশের ‘বাংলাদেশ” নামকরণের যৌক্তিকতা লইয়া। ডঃ মজুমদার আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়া ‘বাংলাদেশ’ ও ইহার অধিবাসীদের বাদ দিয়া ‘বাঙ্গালী জাতি’ কল্পনা করা যায় না।” কথাটায় রাজনীতির সুর আছে, আমরা রাজনীতি আলোচনা করিতেছি না, কিন্তু স্মরণ করা বোধ হয় অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে বঙ্গদেশ ব্যবস্থাপক সভার হিন্দু সদস্যরা ১৯৪৭ সালে ‘বাংলা’ বিভাগের পক্ষে মত না দিলে বর্তমান রাজনৈতিক বিভাগের সৃষ্টি হইত না।
তথ্য নির্দেশঃ
- ১. আইন-ই-আকবরী, ভল্যুম ২, জেরেট কর্তৃক অনূদিত, পৃ. ১১৬।
- ২. ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগকে বুঝান হইয়াছে।
- ৩. মিনহাজ, পৃ. ৭৪ ৷
- ৪. মিনহাজ, পৃ. ৬৩-৬৪ ৷
- ৫. বরনী, তারীখ-ই-ফীরূজশাহী, পৃ. ৫৩, ৯৩, ৫৯৩ ৷
- ৬. আফীফ, তারীখ-ই-ফীরূজশাহী, পৃ. ১১৪-১১৮ ৷
- ৭. স্যার যুদনাথ সরকার কমেমোরেশন ভল্যুম, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, হোশিয়ারপুর, ১৯৫৮, পৃ. ৫৬।
- [উৎসঃ প্রফেসর আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ১৩-১৬]
- *আবদুল করিম (১ জুন, ১৯২৮- ২৪ জুলাই, ২০০৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৭৩ – ১৯৭৫।
- ৮. ড. এইচ. সি. রায় চৌধুরী বলেন “Some writers have traced the name of the Vangas, another early Bengal tribe, to the Aitareya Aranyaka. In the text occur the words ‘vayamsi vangavagadhas-cerapadha’. The expression vangavagadah has been emended to Vanga-Magadha, that is the people of Vanga and Magadha. The Aranyaka refers to them as folks who were guilty of transgression. Commentators, ancient and modern, differ as to the real meaning of the words used in the text. The possibility that the expressions in the Aranyaka signify old ethnic names is not excluded. But it is extremely hazardous to build any theory about the antiquity of the Vangas on such fragile foundations.” (History of Bengal, Vol. 1 ed. R. C. Majumdar, Dhaka, 1943, HBI রূপে উল্লেখিত, পৃ. ৭-৮)।
- ৯. HBI পৃ.৮ ।
- ১০. D. C. Sircar : Studies in the Geography of Ancient and Medieval India, Delhi, 2nd edition, 1971,(পরে Studies রূপে উল্লেখিত),পৃ. ৩৬-৩৮)।
- ১১. HBI পৃ.৮ ।
- ১২. ঐ পৃ.৮-৯ ।
- ১৩. Studies, পৃ.১৩২ টীকা ৭।
- ১৪. HBI, পৃ.১৫
- ১৫. Studies, পৃ.২১৭-১৮
- ১৬. Science and Culture, Vol. VII,পৃ. ২৩৩-৩৯।
- ১৭. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ২০ ৷
- ১৮. মিনহাজ-ই-সিরাজঃ তবাকাত-ই-নাসিরী, আ. ক. ম. যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত, ঢাকা, ১৯৮৩ (পরে মিনহাজ রূপে উল্লেখিত), পৃ. ২১।
- ১৯. ঐ, পৃ. ২৬।
- ২০. ঐ, পৃ. ২৮।
- ২১. ঐ, পৃ. ৬০-৬১।
- ২২. ঐ, পৃ. ৬৪।
- ২৩. ঐ, পৃ. ১৩৮।
- ২৪. ঐ, পৃ. ১৩৭।
- ২৫. Steingass-এর Persian-English Dictionary-তে শব্দগুলির অর্থ নিম্নরূপঃ
- বিলাদ-pl. of balad-cities, Countries, regions, habitations, territories, an inhabited country.
- মমালিক-pl. of mamlakat-kingdoms, provinces, states, regions, possessions, crownland.
- বিলায়েৎ- An inhabited country, dominion, district.
- ২৬. আধুনিক পণ্ডিতেরা সকনতকে সমতটের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন, যেমন দেখুন মিনহাজ, পৃ. ২৬ টীকা ২। কিন্তু ডঃ কানুনগো বলেন, “The region to which Rai Lakhmaniya fled from Nadia is named in the T.N. as Bangwa s-k-n-at. Bang means East Bengal and the second place-name is a copyist’s error for Sil-hat i.e. Sylhet.” (History of Bengal, Vol. II, J. N. Sarkar, Dhaka, 1948), পৃ. ৮
- ২৭. মিনহাজ, পৃ. ২৯
- ২৮. ঐ, পৃ. ২৯।
- ২৯. সেন রাজাদের মধ্যে লক্ষ্মণ সেন গৌড়েশ্বর উপাধি গ্ৰহণ করেন। পরবর্তী সেন রাজাদের তাম্রলিপিতে বিজয় সেন এবং বল্লাল সেনকেও গৌড়েশ্বর উপাধি দেওয়া হইলেও তাঁহারা নিজেরা এই উপাধি নেন নাই। লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক গৌড় অধিকৃত হওয়ার পরে তাঁহার নামানুসারে গৌড়ের নাম লক্ষ্মণাবতী হয় এবং এই লক্ষ্মণাবতীই ফার্সী ইতিহাসে লখনৌতি রূপ লাভ করে। তুলনীয় মিনহাজ, পৃ. ২৯, টীকা ৩।
- ৩০. অবশ্য সম্পূর্ণ রাঢ় মুসলমানদের অধিকারে ছিল মনে করা ভুল হইবে। বখতিয়ার খলজীর লখনৌতি রাজ্য মোটামুটিভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল; বখতিয়ার খলজী রাঢ় অঞ্চলে তাঁহার অধিকার সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেন এবং মুহাম্মদ শীরান খলজীকে ঐ পদে নিযুক্ত করেন। গিয়াস-উদ-দীন ইওয়াজ খলজীর সময়ে রাঢ়ের অধিকাংশ এলাকা মুসলমানদের অধিকারে আসে। মিনহাজ যখন লখনৌতি আসিয়া ছিলেন (৬৪০-৬৪২ হিজরী/১২৪২-১২৪৪ খ্ৰীঃ), তখন রাঢ়ের দক্ষিণ সীমানায় উড়িষ্যার গঙ্গা বংশীয় রাজাদের সঙ্গে মুসলমানদের যুদ্ধ চলিতেছিল, তবে ঐ সময় রাঢ়ের অধিকাংশ এলাকা দখলে আসে।
- ৩১. মিনহাজ, পৃ. ২৮।
- ৩২. HBI, পৃ.২৫১
- ৩৩. Jouurnal of the Asiatic Society of Bengal, Calcutta, 1942, Vol. IV, No. 1,পৃ.২০ ।
- ৩৪. Studies, পৃ. ৯০, ১৩৩
- ৩৫. A. M. Chowdhury: Dynastic History of bengal, Dhaka, পৃ. ২৪৭।
- ৩৬. মিনহাজ, পৃ. ২৮, টীকা ৪।
- ৩৭. A. M. Chowdhury : Op. cit. পৃ.২৪৭-৪৮
- ৩৮. Studies, পৃ. ৯০।
- ৩৯.যাকারিয়া সাহেব বলেন, “করতোয়া ও ভাগীরথী নদীর পূর্বতীরবর্তী ভূবাগ, অর্থাৎ বর্তমান ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, অবিভক্ত নদীয়া জিলাসমূহ, টাঙ্গাইল সহ ময়মনসিংহ জিলার দক্ষিণাংশ, কুমিল্লা জিলার কিয়দংশ, পাবনা ও বগুড়া জিলার সামান্য অংশ নিয়ে খুব সম্ভব তাদনীন্তন বঙ্গা রাজ সীমাবদ্ধ ছিল।” (মিনহাজ, পৃ. ৬০-৬১, টীকা) ডঃ আবদুল মোমিন চৌধুরী বলেন, “ব্রহ্মপুত্র নদীর যে প্রবাহ ময়মনসিংহের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতো, সম্ভবতঃ এই প্রবাহ বঙ্গের উত্তর ও পূর্বসীমা নির্ধারণ করতো বলে বলা যায়। এই সূত্রে বঙ্গের সীমা দক্ষিণে সুন্দর বনাঞ্চলের পূর্বপ্রান্ত থেকে উত্তরে ময়মনসিংহ জেলার ব্ৰহ্মপুত্র প্রবাহ পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভখুব সম্ভবতঃ ব্ৰহ্মপুত্র বঙ্গের পূর্ব সীমাও নির্ধারণ করে এবং ব্ৰহ্মপুত্রের পূর্বে অবস্থিত ভূভাগ (মেঘনা অববাহিকা) বঙ্গের বাইরে ছিল বলেই মনে হয়।” (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ.২০)।ডি. সি. সরকার বলেন, “The country of Vanga is described as extending from sea as far as the Brahmaputra. The sea is no doubt the Bay of Bengal in the south, and the Brahmaputra, the northern boundary, seems to indicate that portion of the river which bifurcates from the Jamuna. Vanga therefore included the eastern part of Sundarbans in the south and half of the Mymensingh District in the north. The verse seems to exclude the region to the east of the Brahmaputra and Meghna and agrees with medieval epigraphic evidence which places the heart of Vanga in the Vikrampur-bhaga comprising the Munshiganj and Madaripur subdivisions…” (Studies, পৃ.৯০)। ইহারা সকলেই সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলকে “বঙ্গ’ হইতে বাদ দিয়াছেন। তাঁহারা বোধ হয় ডুম্মনপালের লিপি দ্বারা প্রভাবিত হইয়া মনে করেন যে, যেহেতু চব্বিশ পরগনা-খুলনা এলাকায় অর্থাৎ খাড়ি অঞ্চলে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষ দিকে ডুম্মনপাল স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন, সেহেতু ঐ এলাকা “’বঙ্গ’ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। মিনহাজ যখন ‘বঙ্গ’ রাজ্যের কথা বলেন, তখন অবশ্যই ডুম্মনপালের খাড়ি রাজ্য সেন রাজ্য হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। কিন্তু ডুম্মনপালের স্বাধীনতার ফলে সেন রাজ্য সঙ্কুচিত হয়, ‘বঙ্গ’ নামধাৱী ভৌগোলিক ভূভাগের কোন সঙ্কোচন হয় নাই।
- ৪০. HAR Gibb : Ibn Battuta: Travels in Asia and Africa, London, 1963, পৃ. ২৬৭
- ৪১. জিয়া-উদ-দীন বরনী, তারীখ-ই-ফীরূজশাহী, পৃ. ৫৮৬ ।
- ৪২. ঐ পৃ. ৫৯৩।
- ৪৩. ঐ পৃ. ৫৩।
- ৪৪. ঐ পৃ. ৯৩।
- ৪৫. N. K. Bhattasali : Coins and Chronology of the Early Independent Sultans of Bengal, পৃ. ২৮।
- ৪৬. আফীফঃ তারীখ-ই-ফীরূজশাহী, পৃ. ১১৪-১১৮।
- ৪৭. Sri Jadunath Sarkar Commomoration Volume, Hoshiarpur, India, Part II, পৃ.৫৬।
- ৪৮. অবশ্য মতলা-উস-সাদাইন-এ বাংলার সুলতানের কথা বলা হইয়াছে কিনা সেই বিষয়ে আধুনিক পণ্ডিতদের কেহ কেহ সন্দেহ পোষণ করেন।
- ৪৯. আইন-ই-আকবরী, ভল্যুম ২, জেরেট কর্তৃক অনূদিত, পৃ. ১২০। আবুল ফজলের ফার্সী লিখায় ‘বঙ্গালা’, ইংরেজ অনুবাদকের ভাষায় বেঙ্গল হইয়াছে।
- ৫০. রিয়াজ-উস-সালাতীন, আবদুস সালামের অনুবাদ, পৃ. ২০।
- [উৎসঃ প্রফেসর আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ২১-২৪]
- *আবদুল করিম (১ জুন, ১৯২৮- ২৪ জুলাই, ২০০৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৭৩ – ১৯৭৫।
- ৪৯. আইন-ই-আকবরী, ভল্যুম ২, জেরেট কর্তৃক অনূদিত, পৃ. ১২০। আবুল ফজলের ফার্সী লিখায় ‘বঙ্গালা’, ইংরেজ অনুবাদকের ভাষায় বেঙ্গল হইয়াছে।
- ৫০. রিয়াজ-উস-সালাতীন, আবদুস সালামের অনুবাদ, পৃ. ২০।
- ৫১. HBI, পৃ. ২১।
- ৫২. Bengal : Past and Present, Vol. XIII, পৃ.২৬২; Indian Historical Quarterly, Vol. XVI, পৃ. ২৩০, টীকা।
- ৫৩. Indian Historical Quarterly. Vol. XVI, পৃ. ২২৭-৩৫
- ৫৪. Studies, পৃ. ১৩১।
- ৫৭. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৭ পৃ. ২২।
- ৫৮. রমেশচন্দ্র মজুমদারঃ বাংলাদেশের ইতিহাস, ১ম খণ্ড, কলিকাতা, ১৯৪৭, পৃ. ২।
- ৫৯. Studies, পৃ. ১৪০
- [উৎসঃ প্রফেসর আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ২৪-২৮]
- *আবদুল করিম (১ জুন, ১৯২৮- ২৪ জুলাই, ২০০৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৭৩ – ১৯৭৫।
- ৬০. D. C. Sen : History of the Bengali Language and Literature, 2nd edition, Calcutta, 1954,পৃ.৩২৩।
- ৬১. ঐ পৃ. ৫৭০
- ৬২. সুকুমার সেনঃ বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, প্ৰথম খণ্ড, অপরার্ধ, কলিকাতা, ১৯৬৫, পৃ. ১৮৫। নরসিংহ ১৭১৪ খ্ৰীষ্টাব্দে তাঁহার ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্য রচনা শুরু করেন। সুকুমার সেনের পুস্তকে ছাপার তুলে ১৬১৪ খ্ৰীষ্টাব্দে লিখা হইয়াছে। (ঐ, পৃ. ১৮৮)।
- ৬৩. Quoted in Studies, পৃ.১৩৫, টীকা ১।
- ৬৪. ঐ
- ৬৫. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ৪৪০।
- ৬৬. Studies, পৃ. ১৩৩, টীকা ১।
- ৬৭. Steingass, F. : A Comprehensive Perstan-English Dictionary, Fourth edition, London, 1957, পৃ. ১৪৮৪, অক্ষর দ্রষ্টব্য।
- ৬৮. ডি. সি. সরকার অন্য যুক্তিতে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তিনি বলেন, “There has been some discussion on the derivation of the name Bengal. But the conclusions are not satisfactory. Since the emergency of modern Hindi from its Apabhramsa stage, the speakers of Hindi and other Languages have been calling the Bengali-speaking area by the name of Vangal (without the final a in the last consonant), which has been transliterated by the English in their script as Bengal. The Muslims first came to India when the final a in the last consonant of the Sanskritic words in North Indian dialects was pronounced. The earlier pronunciation of Vangal, as is well-known, was Vangala which was naturally transliterated by the Muslims in their script as Bangalah (Pronouncing Bangala). This Muslim pronunciation of the name is directly responsible for the name Bangala now applied by the Bengalis to their country.” (Studies, পৃ. ১৩৮-৩৯)। কিন্তু মুসলিম আমলের আগে ‘বঙ্গালা’ কোন সূত্রে পাওয়া যায় না, ‘বঙ্গাল’ই পাওয়া যায়, তাহা ছাড়া মুসলিম ঐতিহাসিকদের ‘হ’ অক্ষরের ব্যাখ্যা সরকারের, এই বক্তব্যে নাই। অবশ্য সরকার নিজেও বলেন যে এই যুক্তি সন্তোষজনক নয়।
- ৬৯. ডি.সি. সরকার বলেন, “The people of Bengal is known elsewhere in India as Vangali which the English transliterated as Bengali or Bangalee and which the Bengalis have made Bangali in their language…It is interesting to note in this connection that, according to a general ethnological principle, the specific name of a tribe often originates among neighbouring tribes and is eventually adopted by the tribe to which it is applied.” (Studies, পৃ.১৩৯)।
- ৭০. মিনহাজ, পৃ. ৬৬।
- ৭১. মিরজা নাথন, বাহরিস্তান-ই-গায়বী, এম, আই, বোরাহ কর্তৃক অনূদিত, ভল্যুম ১, আসাম, ১৯৩৬, পৃ. ২৪৯-২৫২।
- ৭২. আইন-ই-আকবরী, ভল্যুম ২, জেরেট কর্তৃক অনূদিত, পৃ. ১৩৩।
- ৭৩. এই মানচিত্র এবং এই অধ্যায়ের উল্লিখিত অন্যান্য মানচিত্রের জন্য দেখুন, জে. এ. এস. পি. ভল্যুম ৮, নং ২, ১৯৬৩, পৃ. ২৪-এর পরে।
- ৭৪. এন. কে. ভট্টশালী, কয়েনস এ্যাণ্ড ক্রনলজী অব দি আর্লি ইন্ডিপেণ্ডেণ্ট সুলতানস অব বেঙ্গল, পৃ. ১৩৬-এ উদ্ধৃত।
- ৭৫. ঐ পৃ. ১৫৪-এ উদ্ধৃত।
- ৭৬. আ. রহীম, সোশ্যাল এ্যাণ্ড কালচারাল হিস্টরী অব বেঙ্গল, ভল্যুম ১, পৃ. ১৮-এ উদ্ধৃত।
- ৭৭. ঐ
- ৭৮. সুখময় মুখোপাধ্যায়, ৩য় সংস্করণ, পৃ. ৩৫১।
- ৭৯. জে এন. দাসগুপ্ত, বেঙ্গল ইন দি সিক্সটিনিথ সেঞ্চুরী, পৃ. ১১৭ ও পরে।
- ৮০. ঐ।
- ৮১. আ. রহীম, সোশ্যাল এ্যাণ্ড কালচারাল হিস্টরি অব বেঙ্গল, ভল্যুম ২, পৃ. ২১।
- ৮২. আইন-ই-আকবরী, ভল্যুম ২, জেরেট কর্তৃক অনূদিত, পৃ. ১৩২।
- ৮৩. ঐ, পৃ. ১৩৫-১৩৬
- ৮৪. এইচ. এ. আর. গিব কর্তৃক অনূদিত ইবনে বতুতার সফরনামা, পৃ. ২৬৭।
- ৮৫. জওহর আফতাবচী, তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াত, মইনুল হক কর্তৃক অনূদিত, পৃ. ৩০।
- ৮৬. আকবরনামা, ভল্যুম ৩, ইংরেজী অনুবাদ, পৃ. ২৯৩।
- ৮৭. তারিখ-ই-ফীরূজশাহী, মূল ফার্সী, পৃ. ৮২৷
- [উৎসঃ প্রফেসর আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ.২৮-৩২]
- *আবদুল করিম (১ জুন, ১৯২৮- ২৪ জুলাই, ২০০৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৭৩ – ১৯৭৫।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।