লিখেছেনঃ কাজী কাদের বক্স
আমি যখন মাতৃগর্ভে
মায়ের কতো আদর,
আমার জন্য..
মায়ের বোন, দাদা, বৌদি সবাই
করলো আদর মাকে,
আমার জন্য।
বাবার বোনেরা, বাবার বাবা, মা সবাই খুশি
আমি আসবো বলে।
ডাক্তার, নার্স, সি এইচ ভি, আশাকর্মী,
আই সি ডি এস দিদিমণি খুশিতে ভরপুর।
আমাকে আদর করবে বলে দাদু দিদা
কতো খেলনা কিনলো।
আমার জন্মের সময় মায়ের সঙ্গে
হাসপাতালে, বাড়ির অনেকেই এলো।
ইঞ্জেকশন দিতে সিস্টার এলো সাথে সাথে,
আমার টেবিলস্থ হবার মুহূর্তে ডাক্তার নার্স,
এনাস্থিস্ট, ও টি টেকনিশিয়ান সবাই সঙ্গে এলো।
আমার অন্নপ্রাশনে, আকীক্বাহ্, উপনয়নে
অনেকেই এলো।
খেলার মাঠে বন্ধু বান্ধবী,
পাড়া প্রতিবেশি সবাই এলো সাথে।
স্কুলে অনেক সহপাঠী এলো।
মাস্টার মহাশয়েরা এলেন আমার ক্লাসে।
আমার সাথে বিয়ে বাড়িতে…. বন্ধু বান্ধব
বাবা জামাইদা, বৌদি সবাই এলো।
বিয়ের পিঁড়েতে
বসানোর সময়ে এলো অনেকজন।
শুধু একটা জীবন সাথী আনবো বলে।
সেই জীবন সাথী জীবন ভর আমার সাথে সাথে
সব জায়গা গেলো।
বয়স হলো, ছেলে মেয়েরা এমন কি
বৌমা জামাই ও সঙ্গে গেলো।
এখানে ওখানে।
হাসপাতালে বেডের পাশে পাহারা দিতে
কভু স্ত্রী, কভু সন্তান সন্ততি।
আজ ঐ শরীর টা নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে
সহধর্মিণী আগলে রেখে চোখের জলে
ভেসে গেল।
পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজন চোখের জলে সারা হলো,
শ্রাবণধারায় ধুয়ে গেল সব ময়লা।
পাহাড়ে পর্বতে বনে জঙ্গলে, ধূসর মরু প্রান্তরে
যেখানেই গেছি, সঙ্গে কেউ না কেউ গেছে।
সবাই মিলে নিয়ে চললো আমাকে শ্মশানে,
গোরস্থানে।
অনেকেই এলো, চিতায় ক্রিমেটরে তোলা অবধি
গোরে শোয়ানো পর্যন্ত দুজন এলো।
একটু পরে ধোঁয়া শেষ,কিংবা বাঁশ পাটাতনে
মাটি চাপানো অবধি….।
আমি একা শুয়ে থাকলাম,
সাদা কাপড় প’রে
শুকনো – ভিজে মাটিতে।
আমার সঙ্গে আর কেউ থাকলোনা,
কতো বাসনা ছিলো, হয়তো কোনো বন্ধু
কিংবা স্ত্রী সন্তান, প্রিয়জন সঙ্গী হবে।
না,হয়েও ছিলো।
চিতার দাহপাত্র, আর কবরের গর্ত পর্যন্ত।
আর কেউ ফিরে ও দেখলো না।
তাদের কতো আদরের, সোহাগের,
সেদিনের জন্মানো সেই শিশুটি….
কারো কাছে কোনো অনুরোধ নেই,
বলেনা কিছুটি….
হয়তো শুধু ভাবে,
“আমার সাথে কেউই এলোনা”।
নিম্নলিখিত কবিতাগুলিও পড়ুন,
১) আমি চাই না ২) আমার মনের দেশে ৩) প্রাগৈতিহাসিক
৪) অতীত পরিক্রমা ৫) নগ্নকাল ৬) জিজ্ঞাসা