লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডন্কে সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা বোঝা যায় সৃষ্টিজগতের মধ্যে সুক্ষ্ণ ভারসাম্যের উপর দৃষ্টিপাত করলে। নাস্তিক্যবাদীরা আগে মনে করেছিলেন দৈবক্রমে হঠাৎ কোন মাধ্যম ব্যাতিরেকেই এই জগৎ সৃষ্টি হয়েছিল। এর পিছনে কোন স্রষ্টার হাত নেই। তাঁরা মনে করেছিলেন সৃষ্টির পিছনে কোন পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু জ্যাতির্বিদ্যা নাস্তিক্যবাদীদের এই দাবীকে বাতিল করে দিয়েছে এবং বিংশ শতাব্দীতে এসে জ্যাতির্বিদরা একথা স্বীকার করেছেন যে, এই বিশ্বের একটা সুক্ষ্ণ পরিকল্পনা বিরাজ করছে এবং একটা সুক্ষ্ণ ভারসাম্য বিরাজ করছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, বিশ্ব জগতের বিভিন্ন ভৌত রাসায়নিক ও জীব। বৈজ্ঞানিক নিয়মসমূহ; মাধ্যকর্ষন শক্তি ও ইলেক্ট্রো – ম্যাগনেটিজম অনুর গঠনশৈলী ইত্যাদি সবকিছুই এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যেভাবে সৃষ্টি করার উপর মানবজীবনের অস্তিত্ব নির্ভর করে। অতি সুক্ষ্ণ পরিকল্পনা র মাধ্যমে সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। যেন এই বিশ্বজগৎ একটি পরিকল্পিত নক্সা। পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা এই নক্সার নাম দিয়েছেন, ‘এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপল’ (Anthropic Principle)। এক কথায় মানবজাতিকে সামনে রেখে অর্থাৎ মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করেই এই সব সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিগ ব্যাং থিওরীতে বলা হয়েছে, সমগ্র বিশ্বজগৎ একপ্রকার অতিঘন জমাট বাঁধা পদার্থ পুঞ্জের তীব্র বিস্ফোরণে গড়ে উঠেছে। এই বিস্ফোরণের ফলে উৎপাদিত তারকাপুঞ্জ বা অসংখ্য নক্ষত্র সমন্বিত নক্ষত্র মন্ডলগুলি সমগ্রমহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে ও একে অপরের থেকে প্রচন্ড গতিতে দুরে সরে যায়। এগুলি প্রায় প্রতি ঘন্টায় ৬০০ মিলিয়ান কিলোমিটারের বেগে ধাবিত হয়ে মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। এবং সেই থেকে এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ হতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখেছেন যে গতিতে এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ হচ্ছে তার এই গতি যদি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগও কমবেশী হত তাহলে এই মহাবিশ্ব কোনক্রমেই আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পারতো না। সুতরাং এই মহাবিশ্বকে অতি সুপরিকল্পিত ভাবেই মানুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, এই মহাবিশ্বে চার ধরণের প্রাকৃতিক শক্তি কাজ করছে । সেগুলির মধ্যে
- ১) মধ্যাকর্ষণ শক্তি,
- ২) দুর্বল পারমানবিক শক্তি,
- ৩) শক্তিশালী পারমানবিক শক্তি
- ৪) ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক শক্তি।
বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন যে এই চার শক্তি সুশৃঙ্খল জগতে অস্তিত্ব লাভের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক সেই মাত্রাই রয়েছে। এই চার ধরণের শক্তির মধ্যে কোন একটি শক্তি যদি কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ যদি কমবেশি হত তাহলে এই ব্রহ্মাণ্ডে মনুষ বা কোন প্রাণী বসবাস করতে পারতো না। সমস্ত জায়গায় শুধু হাইড্রোজেন গ্যাস ও বিচ্ছুরিত রশ্মি ছাড়া আর কিছু থাকতো না।
এছাড়াও এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড আরো অনেক সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ণ এমন বিষয় রয়েছে যা সামান্য হেরফের হলে এই ব্রম্ভান্ডে প্রাণীর বসবাসের কোন উপযোগী স্থান থাকতো না। যেমন সূর্য যেখানে রয়েছে যদি তা সামান্য উপরে উঠে যেত তাহলে সারা বিশ্ব হীম শীতল হয়ে যেত, কিংবা যদি সামান্য নিচে নেমে আসত তাহলে সারা পৃথিবী জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যেত। চাঁদ যে স্থানে রয়েছে যদি তা সামান্য উপরে উঠে যেত তাহলে সারা পৃথিবী মরুভূমি হয়ে যেত এবং যদি সামান্য নিচে মেনে যেত তাহলে সারা পৃথিবীতে সামুদ্রিক জলচ্ছাস হয়ে পৃথিবীতে শুধু সাগর ছাড়া স্থল বলে কিছু থাকতো না। জলের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ, সুর্য রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের গ্যাসের নিখুঁত আনুপাতিক হার, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র কিংবা যদি বাস্তুতন্ত্রে সামান্য হেরফের হত তাহলে মানুষ এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারত না।
সুতরাং এই বিশ্বজগতে সর্বত্র এক আশ্চর্য ধরণের সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ ভারসাম্য বিরাজ করছে। এই তত্ত্ব আবিস্কার করেছে বর্তমান নভোবিজ্ঞানীরা। জ্যাতির্বিজ্ঞানী পল ডেভিস (Paul Davies) তাঁর “দি কসমিক ব্ল প্রিন্ট’ (The Cosmic Blueprint) নামক গ্রন্থে বলেছেন,
“The impression of Design is overwhelming”
অর্থাৎ “বিশ্বজগতে একটি পরিকল্পতি ডিজাইনের প্রভাব অপরিসীম।”
নভোবিজ্ঞানী ডব্লিউ প্রেস (W. Press) লিখেছেন,
“বিশ্বজগতে একটি চমৎকার ডিজাইনের অস্তিত্ব লক্ষ্যণীয়। এ ডিজাইন (পৃথিবীতে) বুদ্ধিমান প্রাণী সৃষ্টির জন্য সম্পূর্ণ সহায়ক।” (Jaurnal Nature)
মজার কথা হচ্ছে যেসব বিজ্ঞানী সৃষ্টির পিছনে একটি সুক্ষ্ণ পরিকল্পনা রয়েছে একথা বলেছেন তাঁরা অধিকাংশই বস্তুবাদী ভাবধারার ব্যাক্তি ছিলেন। তাঁরা কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য গবেষনা করেন নাই। তাঁরা নিছক বিশ্বজগৎ সম্পর্কে গবেষনা করতে গিয়েই এইসব বিষয়বস্তু লক্ষ্য করেছেন। তাঁদের গবেষনার ফলাফলই প্রমাণ করে যে এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টির মহা পরিকল্পনা র পিছনে একজন পরিকল্পক থাকাটাই স্বাভাবিক।
মার্কিন জ্যাতির্বিজ্ঞানী জর্জ গ্রীনষ্টেইন (George Greenstein) বলেছেন,
“(জীবনের সঙ্গে পদার্থবিদ্যার সূত্র সমূহের সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারটি) কিভাবে ব্যাখ্যা করা চলে? … প্রাপ্ত সম্ভাব্য সকল তথ্যপ্রমাণ বিচার করলে তাৎক্ষণিক ভাবে মনে হয় যে, কিছু অতিপ্রাকৃতিক এজেন্সী বা সঠিকভাবে বললে, একটি এজেন্সী (বিশ্বজগৎ সৃষ্টির পিছনে) ক্রীয়াশীল আছে। এটা কি সম্ভব যে, ইচ্ছায় নয় বরং হঠাৎ করেই আমরা এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের সম্মুখীন হয়েছি যেগুলো একজন সর্বোচ্চ সত্ত্বার (Supreme Being) অস্তিত্ব প্রমাণ করে? আমাদের সুবিধার্থে এ বিশ্বজগৎ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন কি বতে আল্লাহই?” (The Symbiotic Universe)
এই কথায় কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমরা আসমান ও জমিন এবং উভয়ের মাঝখানের সবকিছু অকারণে সৃষ্টি করি নাই । অবিশ্বাসীরাই কেবল (অকারণে সৃষ্টির) ধারণা পোষণ করে।” (কুরআন, ৩৮: ২৭)
কুরআন যা চৌদ্দশত বছর আগে বলেছে তা বিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীর সত্তর এর দশকে এসে স্বীকার করেছেন স্বতস্ফূতভাবে।
আমেরিকার প্রজননবিদ্যা বিষেশজ্ঞ (Geneticist) রবার্ট গ্রিফিথস (Robert Griffiths) বলেছেন,
“বিতর্কের জন্য আমার যখন একজন নাস্তিকের প্রয়োজন পড়ে তখন আমি দর্শন বিভাগে যাই। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এ – ক্ষেতে আমাকে সাহায্য করেনা।” (Hugh Ross, The Creator and the Cosmos, Page-123)
সুতরাং রবার্ট গ্রিফিথসের মতো প্রজননবিদ মনে করেন পদার্থবিজ্ঞানে নাস্তিকতার কোন স্থান নেই।
কানাডার রয়েল সোসাইটির টোরি গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত জীব পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক অ্যালেন লিখেছেন,
“প্রাণীদের বসবাসের উপযোগী করে এ পৃথিবীকে এমনিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দিক থেকে এতে এমনি সমন্বয় সাধন করা হয়েছে যে, সেগুলো বিচার করলে কোন অবস্থাতেই বলা চলে না যে নিজ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে।” (The Evidence of GOD in Expanding Universe-edited by John Clover Monsma)
তাই আমরা বলব, নাস্তিক্যবাদ বা বস্তুবাদ সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও বিকৃত চিন্তাধারা যা বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষনায় স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা এখন নাস্তিক্যবাদকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলে ঘোষনা করতে আরম্ভ করেছেন। বিজ্ঞানীরা তো এখন প্রকাশ্যে বস্তুবাদের পতনের কথা বলতে শুরু করেছেন।
চার্লস ডারউইনের ভ্রান্ত মতবাদঃ বিবর্তনবাদ, যুক্তিবাদীদের যুক্তি খণ্ডন
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।