• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Wednesday, March 29, 2023
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
  • en English
    ar Arabicen Englishfr Frenchel Greekhi Hindiur Urdu
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
  • en English
    ar Arabicen Englishfr Frenchel Greekhi Hindiur Urdu
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

মায়া সভ্যতা : এক অদ্ভুত রহস্যময় সভ্যতার অজানা ইতিহাস

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 10, 2021
in বিশ্ব ইতিহাস
1
মায়া সভ্যতা : এক অদ্ভুত রহস্যময় সভ্যতার অজানা ইতিহাস

Image Source: roar.media

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে অদ্ভুত কিছু পান্ডুলিপি আর ফলক আবিষ্কৃত হয়। সেই পাণ্ডুলিপি কোনো অক্ষর-বর্ণের নয় বরং কিছু ছোট ছোট ছবি পাশাপাশি এঁকে যেন কিছু একটা লেখার চেষ্টা করা হয়েছে। নৃতত্ত্ববিদদের গবেষণা মতে এগুলি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, যেটাকে বিশেষজ্ঞরা নাম দিয়েছেন মায়ান সভ্যতা বা মায়া সভ্যতা।

তবে অবাক করা থিওরী হল যেখানে ৪০০০ বছর আগে পৃথিবীর বহু প্রান্তে মানুষ সভ্যও হতে শেখেনি, স্থায়ী কোনো বাসস্থান গড়ে তোলেনি সেই সময়ে মায়া সভ্যতার লোকেরা কী করে ২৫-৩০ তলার সমান উঁচু স্থাপনা তৈরি করেছিল তা ভেবে বিশেষজ্ঞারা অবাক বনে যান। তাদের জ্যোতির্বিদ্যা এবং ভাষা নিয়ে অগাধ জ্ঞান ছিল। সত্যিই অবাক করা বিষয় হল তারা কেমন করে সবার চাইতে উন্নত হয়ে গিয়েছিল?

বিশেষজ্ঞদের মতে মায়ারা ছিল মেসো আমেরিকা, বা বর্তমান মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে পরাক্রমশালী প্রাচীনতম জাতি। মায়ারা অন্যান্য জাতির মত বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল না, তারা ভৌগলিক একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মাঝেই ছিল। মায়ারা প্রধানত গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, এল সালভেদরের উত্তরাংশ, কেন্দ্রীয় মেক্সিকোর তাবাস্কো আর চিয়াপাস সহ আরো প্রায় এক হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসতি স্থাপন করেছিল। সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে থাকার কারণেই অন্য অনেক শক্তিশালী জাতি মায়াদের লোকালয়ে প্রবেশ করতে বা আক্রমণ করতে পারতো না।

মায়া দের ভৌগোলিক অবস্থান; Source: Wikimedia
মায়াদের ভৌগোলিক অবস্থান; Source: Wikimedia

মায়া সভ্যতার লোকেদের তৈরি করা পাণ্ডুলিপি থেকে জানা যায় যে, তারা ভাবের আদান-প্রদান করার জন্যে একটি ভাষার ব্যবহার করত। অদ্ভুত এবং মজাদার ছিল মায়াদের সেই ভাষার লিখিত রূপটি। তাদের কোনো বর্ণমালা ছিল না, তারা লেখার জন্যে ছবি বা চিহ্ন ব্যবহার করত। খানিকটা হায়ারোগ্লিফিক লেখা। তাদের লেখায় প্রায় ৮০০টির বেশি ছবি তারা ব্যবহার করেছিল। মায়ানদের এইসব লেখা থেকে তাদের সভ্যতা আর সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যায়। এছাড়াও মায়ারা গাছের বাকল দিয়ে তৈরি করা কাগজ দিয়ে বই বানাতো, সেগুলোকে বলা হয় কোডেক্স। মায়ান সভ্যতার মাত্র ৪টি কোডেক্স উদ্ধার করা হয়েছে অক্ষতভাবে।

মায়া সভ্যতার উৎপত্তির ইতিহাস খুব একটা জানা যায়না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের বহু শত বছর আগেই মায়া সভ্যতার লোকেরা নব্য প্রস্তর যুগের সভ্যতা আয়ত্ত করেছিলো। মায়া সভ্যতার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে মায়ারা কৃষিকাজ, মাটির পাত্র নির্মাণ প্রভৃতি আয়ত্ত করে ফেলেছিলো। মোটামুটি ৩১৭ খ্রীষ্টাব্দের পর থেকে মায়া সভ্যতার ইতিহাস জানা যায়। মায়া সভ্যতার ইতিহাসকে দুটো অংশে বিভক্ত করা হয়েছে: মায়া সভ্যতার প্রথম স্তর (৩১৭-৯৮৭ খ্রীঃ) এবং মায়া সভ্যতার শেষ স্তর (৯৮৭-১৬৯৭ খ্রীঃ)।

মায়ান কোডেক্স
মায়ান কোডেক্স; Image Source: Wikimedia

পণ্ডিতরা মায়া সভ্যতার যুগের শুরু নিয়ে অবিরত আলোচনা করে যাচ্ছেন। বেলিজের কিউল্লোতে মায়া বসবাসের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের কার্বন পরীক্ষা হতে পাওয়া তারিখ অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৬০০ বছর আগের। তারা বিস্ময়কর কাঠামো নির্মাণ করে। মায়ার বর্ষপঞ্জিকা তথাকথিত মেসআমেরিকানর দীর্ঘ গণনীয় বর্ষপঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ১১ই আগস্ট, ৩১১৪ খ্রিস্টাব্দের সমতুল্য।

প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মায়ারা চাষাবাদ করা শুরু করে এবং কৃষিজীবী গ্রামের উৎপত্তি ঘটে। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত গৃহীত প্রদর্শন যে, প্রায় ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম মায়া জনবসতি নিঃসন্দেহে প্রশান্ত উপকূলের সোকোনুস্কো অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সময়টি প্রাথমিক প্রাকধ্রুপদী নামে পরিচিত, একে আসনাশ্রিত সম্প্রদায় এবং মৃৎশিল্প প্রবর্তন ও পোড়ানো কাদামাটি মূর্তিসমূহ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ওল্মেক সভ্যতার শুরু হয়। তারা ছিল মায়াদের পূর্বপুরুষ। পণ্ডিতরা প্রারম্ভিক মায়া এবং প্রতিবেশী প্রাকধ্রুপদী মেসোআমেরিকা সভ্যতাসমূহ, যেমন, টাবাস্কো নিচুভূমি অঞ্চলের ওল্মেক সংস্কৃতি এবং চাপাস ও দক্ষিণের ওআজাচার যথাক্রমে মিক্স-জোক এবং জাপোটেক ভাষাভাষী মানুষের, ভৌত এবং সাংস্কৃতিক বিস্তারের সাথে একমত না। প্রাচীনতম উল্লেখযোগ্য শিলালিপি এবং ভবনের অনেকেই এই অধিক্রমণ অঞ্চলে উপস্থিত এবং এর প্রমাণ থেকে বুঝা যায়, যে এই মায়া সংস্কৃতি এবং গঠনাত্মক পরস্পরকে প্রভাবিত করেছিল। তাকালিক আবাজ, গুয়াতেমালার প্রশান্তীয় পাড়ে একমাত্র স্থান, যেখানে ওল্মেক বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিষ্কারভাবে মায়ার একটি প্রভাবিত স্থানকে বুঝায়। প্রায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হন্ডুরাসের কোপায়েন এবং চালচুয়াপা শহরের পতন হয় এবং এখানে তারা বসবাস করতে শুরু করে।

দক্ষিণ মায়া নিচুভূমিসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ভুক্ত স্থানসমূহের হচ্ছে: নাকবে, এল মিরাডোর, চিভাল, এবং সান বারটোলো। গুয়াতেমালার উচ্চভূমিতে, প্রায় ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বহিরাগত কামিয়ানালজুয়ু। বহু শতাব্দী ধরে এটি পেতেন এবং প্রশান্ত নিচুভূমিসমূহ জন্য জাদে এবং অবসিদিয়ান উৎসসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। প্রায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইযাপা, তাকালিক আবাজ, এবং চোকোলার গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্থানসমূহে কোকো প্রধান উৎপাদক ছিল। এছাড়াও মধ্য ও পরের প্রাকধ্রুপদী দিকে উত্তরাঞ্চলীয় মায়া নিচুভূমিসমূহের মাঝা আকারের মায়া সম্প্রদায়ের বিকাশ শুরু হয়। যদিও দক্ষিণাঞ্চলীয় নিচুভূমিসমূহের বৃহৎ কেন্দ্রের আকার, মাপকাঠি এবং প্রভাবের ইঙ্গিতও দেখা গিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকধ্রুপদী স্থান হল কোমচেন এবং ডজিবিলচাল্টুন। প্রায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এল মিরাডোর শহরে বিশাল বিশাল স্থাপত্যের নির্মাণকার্য শুরু হয়। একই সাথে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে জলসেচের সাহায্যে চাষাবাদ শুরু করে। এই সময় তারা টিকাল শহরে বসতি স্থাপন করে এবং পরে এটি মায়াদের বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়। ধ্রুপদী যুগে রাজধানীর পরেই এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। এই যুগের (প্রায় ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম লিখিত শিলালিপি মায়া হায়ারোগ্লিফর চিহ্নিত করা হয়েছিল। ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা একটি শিলাস্তম্ভের উপরে প্রথম মায়া জ্যোতিষ পঞ্জিকা তৈরি করে। ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে থেকে ২৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাক-কলম্বীয় মেসোআমেরিকান টিয়োটিহকান শহরের নির্মাণ কাজ চলে। এই শহরের দ্বারা সৃষ্ট মায়া সংস্কৃতি অন্যান্য মায়া সংস্কৃতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। প্রথমতম মায়া পিরামিড গঠিত হয়েছিল। ১০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি, মায়া শহরগুলোর একটি ব্যাপক পতন ও পরিত্যক্ত ঘটে যাকে প্রাকধ্রুপদী পতন বলা হয়। এটি প্রাকধ্রুপদী যুগের সমাপ্তির চিহ্নিত।

ধ্রুপদী

এই ধ্রুপদী যুগটি (প্রায় ২৫০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ) ছিল মায়াদের শ্রেষ্ঠতম যুগ। এই যুগে বড়-ধরনের নির্মাণ এবং নগরবাদ, বিস্ময়কর শিলালিপির লিপিবদ্ধ এবং উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিবৃত্তিক এবং শিল্পকর্মের উন্নয়ন, বিশেষ করে দক্ষিণ নিচুভূমি অঞ্চলসমূহের শিখরে পৌছায়। তারা কৃষিতে অত্যধিক বিকশিত হয়েছিল। অনেক স্বাধীন শহর-রাজ্যে এবং কিছু ছিল অন্যদের উপযোগী শহর-রাজ্যের মধ্যে শহর-কেন্দ্রিক সভ্যতা গঠিত হয়। ৪০০ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত নগররাষ্ট্র টিয়োটিহকান এই সময়ে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এরাই কার্যত মেক্সিকান উচ্চভূমিতে তাদের রাজধানী হয়ে উঠেছিল। ক্যারিকল, তিকাল, পালেকং, কোপান, জুনান্টিনেচ এবং কালাকমুল শহরসমূহ সুপরিচিত, কিন্তু স্বল্প পরিচিত শহরসমূহের মধ্যে রয়েছে লামানাই, ডস পিলাস, কাহাল পেচ, উয়াক্সাক্তুন, আলতুন হা, এবং বোনাম্পাক, প্রমুখ। উত্তরাঞ্চলীয় মায়া নিচুভূমিতে প্রারম্ভিক ধ্রুপদী উপনিবেশ বণ্টন দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল মত পরিষ্কারভাবে পরিচিত নয়, কিন্তু একটি সংখ্যা জনসংখ্যা কেন্দ্র, যেমন, অক্সকিন্টোক, চুনচুকমিল, এবং উক্সমালের প্রারম্ভিক পেশা অন্তর্ভুক্ত করে।

মায়া সভ্যতা
কারাকোলে “কাআনা”। এটি ৪২ মিটার (১৪০ ফুট) উচ্চতায় দাঁড়িয়েছে। Image Source: Wikimedia

এই সময়কালে মায়ার জনসংখ্যা ছিল মিলিয়ন। তারা একটি বিপুল সংখ্যক রাজত্ব এবং ছোট সাম্রাজ্যসমূহ, বিস্ময়কর প্রাসাদসমূহ এবং মন্দিরসমূহ তৈরি, অত্যন্ত উন্নত অনুষ্ঠানে নিযুক্ত, এবং একটি বিস্তৃত চিত্রলিপিতে লেখার পদ্ধতি বিকশিত করেছিল। তিকালের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কালাকমুল, যা পেতেন বেসিনের একটি শক্তিশালী শহর ছিল। দক্ষিণপূর্বে কোপান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। মায়া অঞ্চলের উত্তরে কোবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মায়া রাজধানী ছিল। ৫৬০ খ্রিস্টাব্দের সময়ে বিখ্যাত হন্ডুরান মায়া শহর তিকাল অন্যান্য মায়া নগররাষ্ট্রের দ্বার সৃষ্ট এক অক্ষজোটের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেয়। ৬০০ খ্রিস্টাব্দে টেওটিহুয়াকানের ক্ষমতা এই সময় থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, এবং এই শহর তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে থাকে। ফলে তাদের রাজধানী টিয়োটিহকানের বদলে অন্য শহরে গড়ে ওঠে। এই সমৃদ্ধ সভ্যতার সামাজিক ভিত্তিতে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সামাজিক নেটওয়ার্ক (বিশ্বের পদ্ধতি) মায়া অঞ্চল এবং বিস্তৃত মেসোআমেরিকান বিশ্ব জুড়ে প্রসারিত হয়। কেন্দ্রীয় নিচুভূমিতে ধ্রুপদী মায়া বিশ্ব ব্যবস্থার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাবশালী ‘মর্মবস্তু’ মায়া দল অবস্থিত ছিল, যখন দক্ষিণাঞ্চলীয় উচ্চভূমি এবং উত্তরাঞ্চলীয় নিচুভূমি অঞ্চলের তার অনুরূপ নির্ভরশীল বা ‘সীমান্তবর্তী’ প্রান্তে পাশে মায়া দল পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্ত বিশ্বের ব্যবস্থার মত, মায়া মূল কেন্দ্র সময়ের সাথে স্থানান্তরিত হয়, দক্ষিণাঞ্চলীয় উচ্চভূমিতে প্রাকধ্রুপদী সময় শুরু করে, ধ্রুপদী যুগে কেন্দ্রীয় নিচুভূমি হয়ে, পরিশেষে পোস্টধ্রুপদী যুগে উত্তরাঞ্চলীয় উপদ্বীপে পৌছায়। এই মায়া বিশ্ব ব্যবস্থা, অর্ধ-সীমান্তবর্তী (মধ্যস্থতার) মূল সাধারণত বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র আকারে গ্রহণ করে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যসমূহ হল তাদের ধর্মীয় কেন্দ্রে নির্মিত ধাপে ধাপে পিরামিড এবং তাদের শাসকদের সহগামী প্রাসাদসমূহ। কানকুয়েন প্রাসাদ মায়া এলাকায় সর্ববৃহৎ, কিন্তু এই স্থানে কোন পিরামিড নেই। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক অবশিষ্টাংশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত উত্কীর্ণ পাথর স্ল্যাব সাধারণত স্টালি বলা হয় (মায়া তাদেরকে তেতুন বা “গাছ পাথর” বলতো), যা তাদের বংশতালিকা, সামরিক জয়লাভ, এবং অন্যান্য নিষ্পাদনের বর্ণনাকারী চিত্রলিপির পাঠ্যর পাশাপাশি শাসকদের চিত্রিতও বর্ণনা করত।

মায়া সভ্যতা অন্যান্য মেসোআমেরিকান সংস্কৃতি, যেমন, কেন্দ্রীয় ও মেক্সিকোর উপসাগরীয়-উপকূলে টিয়োটিহকান, জাপোটেক, এবং অন্যান্য দলের সাথে দীর্ঘ দূরত্বের বাণিজ্য করতো। তারা মেসোআমেরিকান ছাড়াও আরও দূরবর্তী, যেমন, ক্যারিবিয়ার দ্বীপপুঞ্জের তাইনোস, অন্যান্য দলসমূহের সাথে বাণিজ্য ও পণ্য বিনিময় করতো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা পানামার চিচেন ইৎজার সেক্রিড সেনোটা থেকে স্বর্ণ খুজে পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কোকো, লবণ, সমুদ্রখোসা, পাথরবিশেষ, এবং কাচের মতো দেখতে একজাতীয় আগ্নেয়শিলা।

মায়া সভ্যতা
৮৩০ খ্রিস্টাব্দে কারাকোলে ১৩ আল্টার। Image Source: Wikimedia

৯০০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণের নিচুভূমিতে স্থিত নগররাষ্ট্রের অবলুপ্তি ঘটে এবং মায়ানরা এইসব অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে। তাদের এই উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল পরিত্যাগের কারণ আজ অবধি কোনও পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে এই সময় থেকেই যে ধ্রুপদী যুগের শেষের সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। [সূত্রঃ ইউকিপিডিয়া]

সম্ভবত বর্তমান গুয়াতেমালার অন্তর্গত পিটেন অঞ্চলের নিম্নভূমিতে ৩১৭ খ্রীষ্টাব্দের দিকে মায়া সভ্যতার প্রথম সূত্রপাত ঘটেছিল। মায়ারা যখন এই অঞ্চলে প্রথম আগমন করে তখন এই অঞ্চলে এত গভীর বনভূমি ছিলাে যে তারা কৃষকদের বারবার গাছ কেটে আর গাছ পুড়িয়ে বনভূমি পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করেছিল এবং কঠোর পরিশ্রম করে তারা জমি আবাদ করে এবং জমিকে কৃষিযোগ্য করে তোলে। মায়ারা শিম, ভুট্টা, টমাটো, লাউ, মিষ্টি আলু, কাসাভা প্রভৃতির চাষ করতো বলে জানা যায়।

মায়া সভ্যতার প্রথম স্তরে টিকল, কোপান, পালে প্রভৃতি শহরকে কেন্দ্র করে এই রহস্যময় মায়া সভ্যতা গোড়াপত্তন হয়েছিল। সেই সময়ে প্রধানত গুয়াতেমালাতেই মায়া সভ্যতার কেন্দ্রগুলো অবস্থিত ছিলো। পালে শহরটি অবশ্য মেক্সিকোতে ছিলো। আর কোপান শহরটি বর্তমান হরাস দেশে অবস্থিত ছিল। তবে তখন এ পাশাপাশি দেশগুলোকে একই অঞ্চলের অন্তর্গত বলে গণ্য করা হতো।

প্রথম পর্যায়ের মায়া সভ্যতায় সভ্যতা-সংস্কৃতির গভীর উৎকর্ষের প্রকাশ ঘটে, কিন্তু ৯৮৭ খ্রীষ্টাব্দের দিকে এ সভ্যতার পতন ঘটতে থাকে। আকস্মিকভাবে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা কোনো অজানা কারণে সবগুলো শহরকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। মায়াদের এই চলে যাওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একই জমিতে দীর্ঘকাল চাষবাস করার ফলে জমি ক্রমশ নিষ্ফলা হয়ে পড়েছিলো, তখন মায়ারা বাধ্য হয়ে  অনেক দূরে নতুন ও অনাবাদী জমিতে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। এরপর মায়া সভ্যতার কেন্দ্রভূমি আরও উত্তরের ইউকাতান উপদ্বীপে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। এভাবে গুয়াতেমালা অঞ্চলে গড়ে ওঠা মায়া সভ্যতার দশম শতাব্দীতে প্রথম পর্যায়ের অবসান ঘটে।

বর্তমান মেক্সিকোর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ইউকাতান উপদ্বীপে মায়া সভ্যতার দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ে নতুনভাবে তাদের পুনর্জন্ম ঘটে। ইউকাতান উপদ্বীপটি গুয়াতেমালা থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত ছিল। কিন্তু এখানে মায়া সভ্যতার কোন উন্নত প্রকাশ ঘটেনি।

দশম শতকে গুয়াতেমালা অঞ্চলের মায়া অধিবাসীরা ইউকাতান অঞ্চলে চলে যায়। তখন সেখানে মায়া সভ্যতার দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্মেষ ঘটে। এ পর্যায়ে ইউকাতান অঞ্চলে মায়াপান, উমাল, চিচেন ইটজা, প্রভৃতি নগরকে কেন্দ্র করে মায়া সভ্যতার বিকাশ ঘটে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৯৮৭ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৬৯৭ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ ৭১০ বছর মায়া সভ্যতা স্থায়ী হয়েছিল।

ইউকাতান অঞ্চলের মায়া নগরগুলোর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলেছিলাে। ফলে ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে পনেরাে শতক থেকে ইউকাতান অঞ্চলের মায়া সভ্যতায় অবক্ষয় ও পতনের লক্ষণ দেখা যায়। দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধের কারণে এবং মায়াদের অভ্যন্তরীণ কলহের পরিণতিতে মায়াপান শহরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল এই মায়াপান শহরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মায়া সভ্যতা ১৬৯৭ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল।

১৫১৯ খ্রীষ্টাব্দে কর্টেজের নেতৃত্বে স্পেনীয় সৈন্যরা যখন মেক্সিকোর আজটেক সাম্রাজ্যকে আক্রমণ করে তখন স্পেনীয়রা মায়াদের সাম্রাজ্য সম্পর্কে কোনো সন্ধান পায় নি। স্পেনীয়রা ১৫২১ খ্রীষ্টাব্দে আজটেকদের পরাজিত করে মেক্সিকোর অধিকার করে নেয়। এরপর যখন স্পেনীয়রা মধ্য মেক্সিকো থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে মায়াদের সাম্রাজ্যকে হানা দেয়। আবার অন্যদিকে পানামার অন্য একদল স্পেনীয় সৈন্যও মায়াদের রাজ্য আক্রমণ করতে অগ্রসর হয়। স্পেনীয়রা ১৫৫৯ খ্রীষ্টাব্দে মায়াদের রাজ্য প্রথম আক্রমণ করে। মায়াদের সাথে স্পেনীয়দের দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলেছিল। অনেক শহরাঞ্চলের মায়া সভ্যতার লোকেরা দুর্গম অরণ্যে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত স্পেনীয়রা ১৬৯৭ খ্রীষ্টাব্দে মায়াদের রাজ্য পুরোপুরি দখল করে নেয়। ফলে ১৬৯৭ খ্রীষ্টাব্দে মায়া সভ্যতা চিরকালের মতো ধ্বংস হয়ে যায়।

দক্ষিণাঞ্চলীয় নিচুভূমি অঞ্চলের মায়া কেন্দ্র ৮ম এবং ৯ম শতাব্দীতে পতন হয় এবং তারপর পরেই পরিত্যক্ত হয়। এই পতনটি স্মারক শিলালিপি এবং বড় ধরনের স্থাপত্য নির্মাণের একটি বিরতির মাধ্যমে ঘটে। এই পতনের সর্বজন গৃহীত তত্ত্বের ব্যাখ্যা তা দেয়। ৯২৫ খ্রিস্টাব্দের সময়ে বিখ্যাত মায়া নগররাষ্ট্র চিচেন ইৎজা খুবই প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। তারাই এই সময়ে মায়া সাম্রাজ্যের কার্যত রাজধানীতে রূপান্তরিত হয়ে আসে। পরবর্তী ২০০ বছর ধরে এটাই ছিল শ্রেষ্ঠতম মায়া শহর। এই সময়ে বিশ্ববিখ্যাত মায়ান পিরামিড চিচেন ইৎজাতে নির্মিত হয়।

মায়া পতনের পরিবেশদূষণহীন তত্ত্ব বেশ কয়েকটি উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, বিদেশী আক্রমণ, চাষি বিদ্রোহ, এবং বিশেষ বাণিজ্য পথের পতন। পরিবেশগত অনুমানের মধ্যে পরিবেশগত দুর্যোগ, মহামারী রোগ, এবং জলবায়ু পরিবর্তন রয়েছে। মায়া জনগোষ্ঠীরা কৃষি সম্ভাবনাময় অবসাদ ও অতিরিক্ত প্রাণী শিকারের মাধ্যমে পরিবেশের বহন ক্ষমতা অতিক্রম করে ছিল বলে প্রমাণ রয়েছে। কিছু পণ্ডিত সম্প্রতি অনুমান করছে যে ২০০ বছরের একটি তীব্র খরা মায়া সভ্যতার পতনের কারণ। খরা তত্ত্বটি ভৌত বিজ্ঞানীরা লেক তলদেশ, প্রাচীন পরাগরেণু এবং অন্যান্য তথ্য অধ্যয়নের গবেষণা থেকে সম্পাদিত করেছেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের থেকে উত্পত্তি তথ্য থেকে নয়। ২০১১ সাল থেকে নতুন গবেষণায়, উচ্চ-রেজল্যুশনের জলবায়ু মডেল এবং অতীতের প্রাকৃতিক দৃশ্য নতুন পুনর্গঠন ব্যবহারের মাধ্যমে বিবেচনা করা যায় যে, তাদের বনভূমিকে কেটে চাষাবাদের ভূমিতে রূপান্তরনের ফলে বাষ্পের হ্রাস পায় এবং পরে বৃষ্টিপাতের হ্রাস ও প্রাকৃতিক খরা বিবর্ধক ঘটে। ২০১২ সালে বিজ্ঞান প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মাঝারি বৃষ্টিপাতের হ্রাস, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের মাত্র ২৫ থেকে ৪০% পরিমাণ যা মায়া পতনের কারণ হতে পারে বলে চিহ্নিত করেছে। মায়ার প্রধান শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকার হ্রদ এবং গুহার তলানি উপর ভিত্তি করে, গবেষকরা অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সহ্মম হয়েছে। ৮০০ এবং ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত হালকা খরা দ্রুত খোলা পানির উপলব্ধতা যথেষ্ট কমিয়ে দেয়।

মায়ার পতন
৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে একজন মায়া শাসকের কাছে বন্দীর উপস্থাপনা। Image Source: Wikimedia

একটি স্টাল্যাগের খনিজ আইসোটোপ বিশ্লেষণের এই সিদ্ধান্ত উপর ভিত্তি করে একই পত্রিকায় আরও নথিপত্রে সমর্থন এবং প্রসাতিত করে। এটি আখ্যা দেন যে, ৪৪০ এবং ৬৬০ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ বৃষ্টিপাতের ফলে মায়াকে প্রথম দৃষ্টান্তস্বরূপ বিকাশের অনুমতি দেওয়া এবং পরবর্তীকালে হালকা খরা সময় ব্যাপক যুদ্ধবিগ্রহ ও মায়া সভ্যতার পতন নিয়ে আসে। ১০২০ এবং ১১০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে একটি দীর্ঘায়িত খরা হয় যা ছিল চরমভাবে প্রাণঘাতী। [সূত্রঃ ইউকিপিডিয়া]

মায়া সভ্যতার শিল্পকলা

মায়া সভ্যতার লোকেরা স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বিদ্যায় চরম উৎকর্ষতার পরিচয় দিয়েছে। মায়ারা প্রাসাদ, মন্দির,  পিরামিড প্রভৃতি নির্মাণ করতো এক একটা চত্বরকে ঘিরে। মায়াদের তৈরি করা পিরামিড মিশরের পিরামিডের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। মায়াদের নির্মাণ করা পিরামিডগুলো ছিল ধাপ-পিরামিড। প্রথমে তারা মাটি বা পাথর ফেলে ফেলে উঁচু চৌকোনা ঢিবি বা পাহাড় তৈরি করতো। তাতে চারপাশ দিয়ে ধাপ কেটে কেটে তারা ঢিবিটাকে ক্রমশ উপরের দিকে ছােট করে আনতো। পিরামিড তৈরি হয়ে গেলে মনে হতো তখন যে একটা মাথা কাটা পিরামিডের উপর তার চেয়ে ছোট আকৃতির আরেকটা মাথা কাটা পিরামিড স্থাপিত করে দেওয়া হয়েছে, এইভাবে ধাপে ধাপে পিরামিডগুলি একটির পর একটি স্থাপিত করত। এভাবে একটা ধাপ-পিরামিড নির্মাণ করা হতো যার উপরিভাগে থাকতো একটা চৌকোনা সমতল ভূমি। এ সমতল স্থানটার উপরে একটা মন্দির নির্মাণ করা হতো। পিরামিডের গায়ে একটা সিড়ি নির্মাণ করা হতাে মন্দিরে ওঠার জন্য। পুরো পিরামিডটিকে পাথরের ইটের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দিত। মায়াদের ধাপ পিরামিডের মাথায় থাকতো একটা মন্দির। এ ধাপ-পিরামিডগুলোর সাথে প্রাচীন ব্যবিলনিয়ার ডিগেগুরাট-মন্দিরের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রাচীন মিশরেও প্রথম দিকে এভাবে ধাপ-পিরামিড নির্মাণ করা হতো। প্রাচীন মিশরে শেষ পর্যায়ে জ্যামিতিক আকৃতির মসৃণ ও শীর্ষবিন্দুবিশিষ্ট পিরামিড নির্মাণ করা হতো। তবে মিশরে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ধাপ-পিরামিডের উপর অবশ্য মায়াদের মতো কোনো মন্দির নির্মাণ করা হতো না।

মায়ারা সাধারণত কাঠ ও পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতেন। বিশেষজ্ঞদের মতে মায়ারা কোনাে রকম ধাতুর হাতিয়ার ব্যবহার করতাে না বলেই মায়াদের কোনাে শহরেই কোনাে রকম ধাতুর হাতিয়ারের সন্ধান পাওয়া যায় নি। মায়াদের রাজ্যে চুনাপাথর প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতাে। চুনাপাথর পুড়িয়ে মায়ারা চুন তৈরি করতাে; এ চুনের সাথে পাথরের কুচি মিশিয়ে এক ধরনের সুরকি বা মশলা তৈরি করতাে। পাথরের নুড়ির সাথে এ মশলা মিশিয়ে তা দিয়ে মায়ারা মজবুত দালান কোঠা তৈরি করতে। এসব দালান কোঠার দেওয়ালে তারা অবশ্য পাথরের ইটের আস্তরণ দিতে। মায়ারা দোতলা ও তিনতলা দালান তৈরি করতে পারতাে।

মায়া সভ্যতা
Image by Jon Toy from Pixabay

আব্দুল হালিম লিখেছেন, “মায়াদের ভাস্কর্য প্রধানত তাদের স্থাপত্যকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠছিলাে। মন্দির ও পিরামিডের গায়ে ও ধাপগুলােকে অলংকৃত করার জন্য নানা রকম মূর্তি ও ছবি খােদাই করা হতাে। মায়াদের পিরামিড, প্রাসাদ প্রভৃতির অলংকরণের জন্য মায়ারা দেবদেবীর মূর্তি বা দেবদেবীর সাথে সম্পর্কিত জীবজন্তু ও প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ ও খােদাই করতাে। ব্যাঙ, সাপ, জাগুয়ার এবং পাখি ছিলাে দেবদেবতার সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রাণী। চিচেন ইটজা প্রভৃতি নগরে এসকল প্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। মায়ারা সুন্দর ছবি আঁকতে পারতাে। তবে মায়াদের আঁকা কোনাে দেওয়াল চিত্রের সন্ধান পাওয়া যায় নি। তবে মায়ারা মূর্তি ও দেয়ালের গায়ে সুন্দরভাবে রঙের প্রলেপ দিতে পারতাে। মায়াদের বই বা পাণ্ডুলিপিতে অবশ্য ছবি থাকতাে।

মায়ারা চারকোণা পাথরের স্তম্ভ ও ফলকের উপরে নানা রকম বিবরণ ও সনতারিখ খােদাই করে রাখতাে। এসকল শিলালিপি ও পাথরের স্তম্ভ ৩ ফুট থেকে ২৭ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতাে।

মায়ারা সুন্দর ডিজাইনের কাপড় বুনতে পারতাে, জেড পাথরের মূর্তি তৈরি করতাে, মাটির চিত্রিত পাত্র তৈরি করতে এবং সােনা ও রূপার সুন্দর অলংকার তৈরি করতে পারতাে।” [মায়া, আজটেক ও ইনকো সভ্যতা, পৃষ্ঠা- ১৪/১৫]

মায়াদের রাষ্ট্র ও সমাজ

মায়াদের সভ্যতা গড়ে উঠেছিলাে অনেকগুলাে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নগর-রাষ্ট্রকে ভিত্তি করে। এক একটা নগর-রাষ্ট্রে ২৫,০০০ বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক লােক থাকতাে। মায়াদের সমাজে সামাজিক শ্রেণীবিভাগ বিদ্যমান ছিলাে। সবচেয়ে উঁচু শ্রেণীতে ছিলাে অভিজাত ও পুরােহিত শ্রেণীর স্থান। তাদের নীচে ছিলাে কৃষক, কারিগর ও ব্যবসায়ীদের স্থান। এদের নীচে ছিলাে দরিদ্র ও সম্পত্তিহীন স্বাধীন মানুষের স্থান। সমাজের সবচেয়ে নীচে ছিলাে দাস শ্রেণীর স্থান। মায়াদের রাজ্যের সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমের কাজ দাসদেরই করতে হতাে।

মায়াদের প্রত্যেক নগর-রাষ্ট্রে একজন করে শাসক বা রাজা থাকতেন। সামাজিক, ধর্মীয় ও যুদ্ধের ব্যাপারে রাজাই ছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। নগর-রাষ্ট্রের অধীনস্থ গ্রাম ও ছােট ছোেট নগরের জন্য গ্রাম-প্রধান বা নগর-প্রধান প্রভৃতিকে নিয়ােগ করতেন ঐ নগর-রাষ্ট্রের রাজা। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজা একটা পরামর্শ সভা বা উপদেষ্টা-পরিষদ গঠন করতেন। গ্রাম-প্রধানগণ, পুরােহিতগণ ও বিশিষ্ট পরামর্শদাতারা এ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হতেন। রাষ্ট্রের শাসন-কাজ পরিচালনার জন্য রাজা নানা পর্যায়ে শাসক ও প্রশাসক নিয়ােগ করতেন। রাজার আত্মীয়স্বজনদের মধ্য থেকেই এ সকল শাসক-প্রশাসকদের নির্বাচন করা হতাে। রাজা ও বিভিন্ন পর্যায়ের শাসক-প্রশাসকদের নিয়েই রাজ্যের অভিজাত শ্রেণী গঠিত হয়। রাজা মারা গেলে বা সিংহাসন ত্যাগ করলে তাঁর ছেলে রাজা হতেন। পুরােহিতদের মধ্যেও কাজের গুরুত্ব অনুসারে শ্রেণী বিভাগের প্রচলন ছিলাে। সমাজে পুরােহিতদের স্থান ছিলাে অভিজাত শ্রেণীর সমান স্তরে বা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে তাদেরও উপরে। [মায়া, আজটেক ও ইনকো সভ্যতা, পৃষ্ঠা- ১৫]

মায়া অর্থনীতি

কৃষিকাজ ছিলাে মায়া অর্থনীতির ভিত্তি। মায়ারা বন পুড়িয়ে আর গাছ কেটে বন পরিষ্কার করতাে, তারপর সে জমিতে চাষাবাদ করতাে। মায়ারা লাঙল বা এজাতীয় কোনাে চাষের যন্ত্র ব্যবহার করতাে না। তারা প্রধানত কাঠের শাবল দিয়ে মাটিতে গর্ত করে তাতে বীজ রােপণ করতাে। তবে মায়ারা পানি সেচের কৌশল জানতাে। মায়ারা ভুট্টা, লাউ, সিম, মিষ্টি আলু, টমাটো, কাসাভা, মরিচ, নানা রকম ফল প্রভৃতির চাষ করতাে। এবং মৌচাক থেকে মধু ও মােম সগ্রহ করতাে। মায়ারা টার্কি নামক এক জাতীয় মুগী পুষতাে ও তার মাংস খেতে।

মায়াদের সমাজে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিলাে। বড় বড় শহরগুলােতে নির্দিষ্ট দিন অন্তর হাট বা মেলা বসতো। ব্যবসায়ীরা হাঁটা পথেও মালপত্র নিয়ে আসতাে, জলপথেও আনতাে। নদীপথে যাওয়ার সময়ে বণিকরা বড় বড় নৌকায় মাল ভর্তি করে নিয়ে যেতাে। মায়া কারিগররা পাথরের অস্ত্র, কাঠ, হাড়, পাথরের জিনিসপত্র ও পালকের টুপি প্রভৃতি তৈরি করতাে। মায়ারা টাকা কড়ি বা ধাতুর মুদ্রা ব্যবহার করতাে না। তারা কোকো ফলের দানাকে মুদ্রা বা টাকা হিসাবে ব্যবহার করতাে।

মায়ারা ধাতুবিদ্যা আয়ত্ত করতে পারেনি। এর অর্থ হলাে তারা আকর গলিয়ে ধাতু নিষ্কাশণ করতে পারতাে না বা ধাতুকে গলিয়ে ছাঁচে ঢালাই করতে পারতাে না। তবে, আশ্চর্যের ব্যাপার হলাে, কোনােক্রমে তামা বা সােনা পেলে তারা তা দিয়ে গয়না বা ছােট ছােট ঘণ্টা তৈরি করতে পারতাে। এ রকম সােনা বা তামা পাওয়া যায় পাহাড় ও মৃত আগ্নেয়গিরির গায়ের ভিতরের সােনা বা তামার শিরা থেকে। মায়ারা এ রকম তামা বা সােনার টুকরােকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে নির্দিষ্ট আকৃতির গয়না বা ঘণ্টা প্রভৃতি তৈরি করতে পারতাে। মায়ারা অস্ত্র বা পাত্র প্রভৃতি তৈরি করতে পাথর কেটে। মায়াদের অঞ্চলে অবৃসিডিয়ান পাথর পাওয়া যেতাে। অবসিডিয়ান হচ্ছে এক ধরনের প্রাকৃতিক কাঁচ। এ পাথরটা যেমন শক্ত, তেমনি ধারালােও হতে পারে। অবসিডিয়ান দিয়ে মায়ারা অস্ত্র এবং নানা ধরনের পাত্র এবং বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করতাে। [সূত্রঃ মায়া, আজটেক ও ইনকো সভ্যতা, পৃষ্ঠা- ১৫]

মায়াদের ধর্ম

মায়ারা সূর্যের পূজারী ছিল। মায়াদের নির্মাণ করা পিরামিডের মাথায় মায়াদের যে মন্দির থাকতে সেখানে সব সময় একটা পাথরের বেদী থাকতো। এ বেদীর উপরে সূর্য দেবতার উদ্দেশে মানুষ বলি দেওয়া হতো। সূর্য ছাড়াও মায়ারা আরাে অনেক দেবতার পূজা করতাে। ধর্ম ছিলাে মায়াদের সমগ্র জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মায়াদের ধর্ম চেতনা তাদের সমগ্র সামাজিক ক্রিয়াকলাপকে নিয়ন্ত্রিত করতাে। মায়াদের রাষ্ট্রব্যবস্থাও পুরােহিততন্ত্র ও ধর্মতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতাে। মায়াদের সমাজে একমাত্র পুরােহিতরাই হায়ারােগ্লিফিক ধরনের অক্ষর লিখতে ও পড়তে পারতাে। তাই মন্দিরের বা প্রাসাদের দেওয়ালে ও সামনের অংশে এবং শিলালিপিতে খােদাই করে লেখার কাজটা পুরােহিতরাই করতাে। সমগ্র রাষ্ট্রীয় ভবন, পিরামিড, মানমন্দির প্রভৃতি নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ও অধিকার ছিলাে পুরােহিতদের হাতে। তাই মায়াদের সমগ্র জীবনধারার উপর পুরােহিতদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিলাে।।

মায়াদের রাজ্যে এক ধরনের বল খেলার প্রচলন ছিলাে। বল খেলা হতাে পাথর দিয়ে বাঁধানাে একটা চত্বরে। চত্বরের চারদিক উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা থাকত। বলটা তৈরী হতাে জমাট রবার দিয়ে; এর ব্যাস ছিলাে প্রায় ৬ ইঞ্চি। খেলােয়াড়রা হাত দিয়ে বল ধরতে পারতাে না, কেবল পশ্চাতদেশ দিয়ে বা কনুই দিয়ে বলটিকে আঘাত করা যেতাে। জমাট রবারের বল অবশ্য মাটিতে পড়লে সহজেই লাফিয়ে উঠতাে। তবে কখনও যদি বলটা নিষ্প্রাণ হয়ে মাটিতে পড়ে যেতাে বা পরে থাকতাে, তাহলে যাদের দোষে বলটা মরে যেতাে সে দলের খেলােয়াড়দেরও দেবতার উদ্দেশে বলি দেওয়া হতাে। খেলা ঠিকমত পরিচালিত হলেও অবশ্য এ উপলক্ষে এক বা একাধিক মানুষকে বলি দেওয়া হতাে।

এ বল খেলা ছিলাে মায়াদের সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দেওয়ালের উপরে নির্মিত প্রশস্ত আসনে বসে অভিজাত মায়ারা এ খেলা দেখতেন। সাধারণ নাগরিকরা নীচে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতেন। এ বল খেলা ক্রমশ মেক্সিকো অঞ্চলে ও পরবর্তীকালে আজটেকদের মধ্যে প্রচলিত হয়েছিলাে। কোনাে কোনাে স্থানে দেওয়ালের গায়ে পাথরের গােলাকার চক্র বসানাে থাকতাে, যার মধ্য দিয়ে বলটাকে ফেললে খেলায় জিত হতাে। [সূত্রঃ মায়া, আজটেক ও ইনকো সভ্যতা, পৃষ্ঠা- ১৬]

মায়াদের জ্ঞানবিজ্ঞান

মায়াদের ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য এবং কৃষিকাজের প্রয়ােজনে জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা এবং সময় নিরূপণের বিষয়ে তারা খুবই মনােযােগী ছিল। তারা চাঁদ, সূর্য ও নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করে জোতির্বিদ্যায় খুবই পারদর্শিতা অর্জন করেছিলাে। মায়ারা তাদের জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান প্রয়ােগ করে একটা বার্ষিক পঞ্জিকা বা ক্যালেণ্ডার আবিষ্কার করেছিলাে। মায়ারা দু রকম বছরের হিসাব রাখতাে। একটা ছিলাে পবিত্র বছর-এটা ছিলাে ২৬০ দিনের। আরেকটা ছিলাে সাধারণ হিসাবের বছর—এতে ৩৬০ দিনে বছর গণনা করা হতাে এবং তার সাথে ৫টা অপয়া দিন যােগ করা হতাে। অর্থাৎ সাধারণ হিসাবের বছর ছিলাে ৩৬৫ দিনে। তাই বলা চলে মায়াদের ৩৬৫ দিনের সৌর বছরের হিসাব প্রায় নিখুঁত ছিলাে। একটু হিসাব করলেই দেখা যাবে সাধারণ বছরের হিসেবে ৫২ বছরে যতদিন হয়, পবিত্র বছরের হিসেবে ৭৩ বছরে ততদিন হয় (কারণ, ৫২ X ৩৬৫ = ১৮৯৮০ দিন এবং ২৬০ X ৭৩ = ১৮৯৮০ দিন)। তাই মায়াদের গণনায় প্রতি ৫২ বছর অন্তর দুই ধরনের বছরের হিসাবে একই দিনে নববর্ষের শুরু হতাে। এ দিনটিকে মায়ারা বিশেষ মর্যাদার সাথে উদযাপন করতাে। মায়াদের গণনায় তাই ৫২ বছরের একটা কালচক্র ছিলাে।

মায়ারা লেখন পদ্ধতি এবং সংখ্যা লেখার পদ্ধতি জানতাে। মায়া সভ্যতার প্রথম পর্যায়ে তারা শুধু পাথরের ফলকে ও মাটির পাত্রে খােদাই করে লিখতাে।

মায়া সভ্যতার শেষ পর্যায়ে তারা হাতে লেখা বইয়ে তাদের কথা লিখে রাখতাে। মায়ারা চিত্রলিপি ও প্রতীকধর্মী লিপিতে লিখতাে। প্রাচীন মিশরীয়রা যেমন এক এক রকম ছবি দিয়ে এক এক রকম শব্দ বা কথা বােঝাতাে, মায়ারাও তেমনি এক একটি ছবি বা প্রতীক দিয়ে এক এক রকম শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বােঝাতো। অবশ্য মিশরীয়দের চিত্রলিপি আর মায়াদের চিত্রলিপি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। মায়াদের লেখা বা চিত্রলিপির অর্থ এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায় নি।

স্পেনীয়রা যখন মেক্সিকো এবং গুয়াতেমালা অঞ্চল অধিকার করে তখন মায়া অঞ্চলের নগরগুলােতে অজস্র হাতে লেখা বই ছিলাে। মায়া পুরােহিতরা এ সব বই লিখেছিলেন। স্পেনীয় পাদ্রীরা এ সব বইকে ‘শয়তানের কাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। মাত্র তিনটি বা চারটি বই কোনাে ক্রমে রক্ষা পেয়েছিলাে। এ বইগুলাে এখন ড্রেসডেন, প্যারিস এবং মাদ্রিদে আছে, কিন্তু এগুলাে কেউ এখন পড়তে পারেন না। প্রথম দিকে ইউকাতান অঞ্চলে কয়েকজন স্পেনীয় পাদ্রী কষ্ট করে মায়া ভাষায় লেখা বই পড়তে শিখেছিলেন। কিন্তু তারপর এ বিদ্যা লােপ পেয়ে গেছে। এখন আর মায়ারা বা ইউরােপীয়রা কেউই সে ভাষা পড়তে পারেন না। তবে স্পেনীয় অধিকারের প্রথম অবস্থায় অর্থাৎ মােল সতেরাে শতকে মায়া শিলালিপির কতগুলাে লেখা মায়া পুরােহিতদের সহায়তায় স্পেনীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিলাে। তা থেকে মায়াদের সভ্যতা ও ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেছে। তবে, মায়াদের ধর্ম, বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা-বিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ক সব বই-ই ধ্বংস হয়ে গেছে।

মায়ারা এক ধরনের সংখ্যা লেখার পদ্ধতি জানতাে। মায়ারা শূন্য সংখ্যার ব্যবহার জানতাে। স্থানীক অংক পাতন পদ্ধতির জ্ঞানও তাদের ছিলাে। অর্থাৎ আমরা যেমন ১১১ লিখলে ডানদিক থেকে প্রথম ১ দিয়ে ১, দ্বিতীয় ১ দিয়ে ১০ এবং তৃতীয় ১ দিয়ে ১০০ বুঝাই, মায়ারাও অনেকটা এ ধরনের সংখ্যা পাতন পদ্ধতি ব্যবহার করেতাে। তবে আমাদের অংক লেখার ভিত্তি যেমন ১০, মায়াদের সংখ্যা লেখার ভিত্তি ছিলাে ২০। আবার, আমরা যেমন ডান দিক থেকে শুরু করে বাঁ দিকে একক দশক বলে এগিয়ে যাই, মায়ারা তেমনি নীচে থেকে শুরু করে উপর দিকে এক, কড়ি এভাবে অংক লিখতাে। অনেকে মনে করেন যে মায়ারা শূন্য ও স্থানিক পদ্ধতিতে অংক লেখার পদ্ধতি নিজেরাই আবিষ্কার করেছিলাে। কিন্তু মায়াদের অনেক আগেই যে ব্যবিলনীয়রা শূন্য ও স্থানিক অংক পাতন পদ্ধতির আবিষ্কার করেছিলাে তার প্রমাণ রয়েছে। (ব্যবিলনীয়রা অবশ্য ৬০ ভিত্তিক অংক পাতন পদ্ধতি অনুসরণ করতাে।) এটা তাই অসম্ভব নয় যে ব্যবিলনীয় উৎস থেকেই মায়ারা শূন্য ও অংক লেখার পদ্ধতি শিখেছিলাে। তবে এ বিষয়ে পণ্ডিতরা এখনও কোনাে সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেন নি।

মায়াদের রাজ্যে ছাত্রদের বিদ্যাশিক্ষার জন্য বিদ্যালয় ছিলাে। তবে প্রধানত পুরােহিতদের জন্যই এ বিদ্যালয়গুলাে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলাে। এ সব বিদ্যালয়ে কি কি শেখানাে হতাে তা জানা যায় নি; তবে সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বিষয়ে যে বিশেষভাবে শিক্ষা প্রদান করা হতাে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। ধর্মীয় সংস্থার অন্তর্ভুক্ত মহিলাদের জন্য আলাদা মঠ ছিলাে। মায়াদের মধ্যে পরবর্তীকালের আজকেটদের মতাে যুদ্ধপ্রবণতা বা রণলিপ্সা ছিলাে না। মায়াদের প্রয়াস প্রধানত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের দিকেই নিয়ােজিত হয়েছিলাে। তবে মায়াদের কাছে যুদ্ধ একেবারে অজানা বিষয় ছিলাে না। মায়াদের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। তাই মায়াদের সমাজে যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও ছিলাে।

মায়াদের কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য

  1. মায়ারা ভাবত যে, মঙ্গোলিয়ানদের ন্যায় টানা চোখ, চওড়া কপাল এবং লম্বা ও বড় নাক সৌন্দর্যের প্রতীক। এর কোনওটাই না থাকলে সেই মায়া বিবাহের পক্ষে অযোগ্য বলে মনে হত। এইজন্য তারা অস্ত্রোপচার এবং সাজসজ্জা করে নাক বড় ও চোখ টানা করার ব্যবস্থা করত।
  2. মায়ারা বড় বড় টুপি [অনেকটা বৈষ্ণবদের কানঢাকা টুপির মতন] ও দামী দামী অলঙ্কার পড়া পছন্দ করত, বিশেষ করে যারা অভিজাত তারা। যত উচ্চদরের অভিজাত ততই বড় মাপের টুপি পরিধান করত।
  3. মায়ারা ইনকা বা অ্যাজটেকদের মতই লোহার ব্যবহার জানত না। এমনকি চাকার ব্যবহারও জানত না। তারা পাথরের তীক্ষ্ম অস্ত্র দিয়ে সব কাজ চালিয়ে নিত।
  4. মায়ারা যে ভলিবল গোছের খেলা খেলত; তা কেবল ধর্মীয় উৎসবের দিনেই খেলত। এই খেলায় যে দল হারত, তারা দেবতার প্রতি উৎসর্গিত হত অর্থাৎ নরবলির শিকার হত!
  5. মায়ারা অন্ততঃ ১১১ রকমের নৃত্যকলা জানত। এর মধ্যে প্রায় ১৫ রকমের নৃত্যকলা অদ্যাবধি প্রচলিত। এর মধ্যে বাঁদর নাচ, সাপ নাচ, স্ট্যাগ হরিণের নাচ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ==মায়া সভ্যতার দ্রষ্টব্যস্থল এবং নগররাষ্ট্র== মায়ারা মেক্সিকোর বিভিন্ন স্থান জুড়ে বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মাধ্যমে এক বিশাল সাম্রাজ্য নির্মাণ করেছিল। প্রত্যেক শহর ছিল এক একটা নগররাষ্ট্র। প্রত্যেক নগররাষ্ট্রের চারপাশে কয়েকটা ছোট শহর বা বড় গ্রাম ঘিরে থাকত। তাদের খাজনায় চলত এইসব মায়া নগররাষ্ট্র। মায়ারা অবশ্য অ্যাজটেকদের ন্যায় পরিকল্পিত ও সুগঠিত নগররাষ্ট্র তৈরি করতে পারে নি। তাদের প্রবণতা ছিল যে, প্রথমে একটা মন্দির বানাবে তারপর তার আশপাশে কয়েকটা বড় গ্রাম বানাবে এরপর কয়েকটা বড় গ্রামের ঠিক মাঝখানে একটা বড় শহর বানাবে। এইভাবেই মায়া নগররাষ্ট্র তৈরি হত বলে তা ছন্নছাড়া প্রকৃতির হত। প্রত্যেক নগররাষ্ট্রের একেবারে মাঝখানে সূর্য মন্দির বানানোটা ছিল খাঁটি মায়া রীতি। টাইকাল, কোপায়েন, টেওটিহুয়াকান এবং চিচেন ইটজায় সূর্য মন্দিরের অসাধারণ নমুনা দেখা গিয়েছে। সব সূর্য মন্দির ছিল পিরামিড এর ন্যায়।

প্রত্যেক মায়া নগররাষ্ট্রে একটা করে স্থানীয় রাজা বা আহাও থাকতেন। তিনি বসবাস করতেন এক বিরাট রাজপ্রাসাদে। তার সাথে বিরাট রাজ পরিবারও ঐ রাজপ্রাসাদে থাকত। প্রত্যেক রাজপ্রাসাদের উত্তর প্রান্তে থাকত একটা বাণিজ্য কুঠি, বড় রাস্তা এবং দক্ষিণ প্রান্তে থাকত পিরামিড এবং কৃষিজমি। মায়া সাম্রাজ্যের সেরা কৃষিজমির ধারেই রাজপ্রাসাদের অবস্থান থাকত যাতে সেরা খাদ্য সম্রাটের কাছে দ্রুত পৌঁছে যেত।

মায়া নগররাষ্ট্রের সম্পর্কে কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য

  1. বেশির ভাগ মায়া শহরে টুরিস্টরা নিয়মিত ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে চিচেন ইটজা আর টাইকাল সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই দুটোই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
  2. প্রতি বছর ১২ লাখ টুরিস্ট চিচেন ইটজায় আসেন। এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি টুরিস্টই ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসেন। টাইকালে বার্ষিক টুরিস্টদের সংখ্যা ৯ লাখের আশপাশে বলে জানা গেছে।
  3. পুরাতাত্ত্বিকরা সব মিলিয়ে ১৩ টি গ্রেট বল কোর্টের ঢঙে বানান খেলবার মাঠ খুঁজে পেয়েছেন চিচেন ইটজা নগররাষ্ট্রের কাছে।
  4. অন্যান্য মায়া শহরের মধ্যে প্রধান হল খোবা , উক্সমাল, মায়াপান, টুলুম , পালেংখুয়ে এবং কাবাহ।
  5. পালেংখুয়ে এককালে স্প্যানিশদের কাছে সিউডাড লা রোজা বা লোহিত নগরী নামে পরিচিত ছিল। কেননা এই শহরের সব অট্টালিকার বহিরঙ্গ ছিল লাল রঙে রঞ্জিত। এই কারণেই এমন নাম পেয়েছিল পালেংখে।
  6. টাইকাল নগররাষ্ট্রের প্রধান অনেক ক্ষেত্রে নারী হয়েছেন। বেশ কিছু রাজার নাম বেশ মজাদার যেমন; জাগুয়ারের থাবা, কুঞ্চিত মুন্ডু, রক্ষিত খুলি এবং জোড়া পাখি। এমন বিচিত্র নামকরণের কারণ অদ্যাবধি জানা যায় নি।

মায়া দেবতা

মায়ারা হিন্দুদের মতই বহু দেবতায় বিশ্বাস রাখত। তবে তার মধ্যে সামান্য কিছু দেবতা অন্যান্য দেবতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব, সম্মান ও মর্যাদা পেতেন মায়া জনসাধারণের কাছে। এরা যেমন শক্তিশালী ছিলেন তেমনই ছিলেন রাগী।

মায়া দেবতা
মায়ান দেবতারা ছিলেন খুবই রাগী; Image Source: Ancient Origins

ইটজাম্নাঃ মায়াদের কাছে সম্ভবতঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা ছিলেন এই ইটজাম্না। মায়াদের কাছে ইনিই ছিলেন সৃষ্টির দেবতা। অনেকটা ইনকাদের ভিরাকোচার মতই। মায়া পুরাণ অনুসারে তিনিই এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা। তিনিই নাকি দিন এবং রাত্রির সৃষ্টি করেছেন। মায়ারা বিশ্বাস করত যে তিনি স্বর্গের দেবতা। তারা এটাও বিশ্বাস কোর্ট যে, এই ইটজাম্নাই তাদে লিখতে ও দিনপঞ্জী তৈরি করতে শিখিয়েছেন। মায়ান ভাষায় ইটজাম্না শব্দের অর্থ টিকটিকির বাড়ি। চিচেন ইটজার পিরামিড এই দেবতার সম্মানে গঠিত হয়েছিল।

কুকুল্কানঃ হিন্দুধর্মে যেমন মা মনসা সর্পদেবী; সেরূপই মায়াদের কাছে সর্পদেবতা হলেন কুকুল্কান। মায়া ভাষায় এর অর্থ পালক দ্বারা আবৃত সাপ। তবে প্রাক ধ্রুপদী যুগে এই দেবতার মর্যাদা তুলনায় কম ছিল। তিনি শক্তিশালী হয়ে ওঠেন কেবল যখন মায়ারা ধ্রুপদী যুগে মেক্সিকো শাসন করতে থাকে। বিভিন্ন মায়া দেওয়ালচিত্রে, এবং ভাস্কর্যে কুকুল্কানের চেহারা অবিকল চৈনিক ড্রাগনের মতন। প্রায় সব মায়া মন্দিরেই এর নামে পিরামিড গড়া হয়েছে।

বোলোন টজাখাবঃ মায়াদের কাছে এই দেবতা অনেক ক্ষেত্রেই হুরাখান নামে পরিচিত। অনেকেই মনে করেন এর নাম থেকেই স্প্যানিশ বিকৃত উচ্চারণে তা হ্যারিকেনে পরিণত হয়েছে। কেননা ইনি ছিলেন একত্রে ঝড়ের, বজ্রপাতের এবং আগুনের দেবতা। তবে ইউকাটায়েন উপকূলে হ্যারিকেনের উৎপাত সবচেয়ে বেশি এবং এই দেবতার পুজাও তাই ঐ অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি করা হত। মায়া ভাষায় হুরাকান বা বোলোন ট জাখাব শব্দের অর্থ একপদবিশিষ্ট দেবতা। মায়া পুরাণ অনুসারে যখন এই দেবতা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন তখনই নাকি তিনি বন্যা পাঠিয়ে মানুষকে উচিত শিক্ষা দেন।

চায়াখঃ হুরাখানের মতই তিনিও বজ্রপাতের দেবতা। সাথে তিনি বৃষ্টির দেবতা এমন ধারণা ছিল মায়া কৃষকদের মধ্যে। তাই কৃষকরা ভাল বৃষ্টির জন্য তার কাছেই প্রার্থনা করতেন। তিনি নাকি প্রথমে মেঘ তৈরি করেন, তারপর বজ্রপাত উৎপন্ন করেন; শেষে বৃষ্টি নামান। এই রকমই ছিল প্রচলিত মায়া বিশ্বাস।

ঐশ্বরিক সম্রাট

মায়া বিশ্বাস অনুসারে সম্রাট ছিলেন ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী। তিনি নাকি মানুষ ও দেবতার মধ্যে মধ্যস্থতা করেন, এরকমই মায়ারা ভাবত। এই কারণেই রাজার যে কোনও আদেশকেই তারা ঈশ্বরের আদেশ হিসাবে মান্য করত। এমনকি তারা এটাও ভাবত যে, রাজা হলেন ইটজাম্নার পুত্র। অর্থাৎ দেব পুত্র।

পুরোহিত

ধর্মের দিক দিয়ে দেখলে মায়া সাম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ হলেন এই পুরোহিত বা ংধপবৎফড়ঃব। এরা এমনকি মায়া আহাওয়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল। তারা চাইলে রাজাদেশ নাও মানতে পারত; কিন্তু তাদের আদেশ মানতে বাধ্য থাকত। এতটাই শক্তিশালী ছিল এই পুরোহিতকূল। তারা বিভিন্ন রকমের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করত যাতে দেবতারা মানুষের ওপরে ক্রুদ্ধ না হন। বিখ্যাত স্প্যানিশ বই দ্য বুক অফ জাগুয়ার প্রিস্ট থেকে জানা যায় যে, তাদের ওপরে কতরকমের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। নিচে সেইসব দায়িত্ব পালনের তালিকা দেওয়া হল।

  1. ঈশ্বরকে তুষ্ট রাখা।
  2. যথার্থ ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা।
  3. অলৌকিক বা ব্যাখ্যাতীত কার্যকলাপের অনুষ্ঠান করা।
  4. সূর্যগ্রহণের এবং চন্দ্রগ্রহণের তালিকা প্রস্তুত করা
  5. ভূমিকমপ, খরা, দুর্ভিক্ষ, প্লেগ এইসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় আটকানো।
  6. যাতে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হয় সে জন্য চায়াখ দেবতাকে তুষ্ট করা।

পুরোহিতকূল যদি কোনও কারণে এর কোনও একটা কাজ ঠিকমতন করতে না পারতেন; তবে চাকরিটা খোয়াতে হত। [সূত্রঃ ইউকিপিডিয়া]

মায়াদের ধর্ম নিয়ে বলতে গেলে আসলে শেষ হবে না, কারণ তাদের ধর্ম ছিল প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সভ্যতার একেক পর্যায়ে তাদের ধর্মীয় আচার-বিধি ছিল একেকরকম। তবে ধর্ম পালন করতে গিয়ে শেষ দিকে তারা হয়ে উঠেছিল ভয়ংকর নিষ্ঠুর। 

তাদের ধর্মবিশ্বাস বেশ খানিকটা গোপনীয় ও রহস্যময়। কেউ কেউ বলেন, মায়ানরা বিশ্বাস করতো ঈশ্বরই সকল প্রাণ ও শক্তির উৎস, কেবল ঈশ্বরই পারেন জাগতিক সকল বিষয়ের সঙ্গে পরজাগতিক যোগাযোগ ঘটাতে। তারা আরও বিশ্বাস করত, ঈশ্বর মিশে আছেন চন্দ্র, সূর্য আর বৃষ্টির সঙ্গে, মানুষের সকল প্রার্থনা শোনেন তিনি। তাদের ধারণা ছিল, ঈশ্বরের নৈকট্য পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল নিজ দেহের রক্ত। আর তাই তারা বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানে ঈশ্বরের নামে রক্ত বিসর্জন দিত। সবচাইতে গুরুত্ববাহী অনুষ্ঠানে রক্ত দিতেন মায়ানদের রাজা স্বয়ং! তবে এই আচারটি পালিত হত অত্যন্ত গোপনে, কেননা এর মধ্য দিয়ে তারা পেত ঈশ্বরের দর্শন।

মায়াদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিসর্জন;
মায়াদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিসর্জন; Source: knoWhys

তবে মতান্তরে, মায়ানরা বেশিরভাগই নাকি প্রকৃতির পূজারী ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে তারা উপাসনা করত। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্ম ছোট ছোট শস্যদানা থেকে- এই ছিল মানবজাতির উৎপত্তি নিয়ে তাদের বিশ্বাস!

এখন মায়াদের ধর্মবিশ্বাসের যে অংশটুকু নিয়ে বলা হবে, তা শুনে অনেকেরই গা শিউরে উঠবে। হ্যাঁ, মায়ান নরবলি! কেমন লাগছে?

নরবলি নিয়ে বলতে গেলে মায়া ধর্মের এক নতুন পর্বে এসে পড়তে হবে। কেননা যখন তারা ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্যে নরবলি দিচ্ছে, তখন কিন্তু তারা আর প্রকৃতির উপাসক নয়। তারা ততদিনে বহু দেবদেবীর পূজারি। আরও ভয়ের কথা হলো, এই নরবলিগুলো কিন্তু তারা নিজেদের মানুষ থেকে দিত না। ভিন্ন সমাজের কেউ যদি মায়া রাজ্যে প্রবেশ করত, তারা হতো নরবলির শিকার।

মায়া সভ্যতার অন্যতম নগরীর নাম চিচেন ইতজা। এই শহরকে বলা হত নরবলির শহর। এই শহরে ছিল দুটো প্রাকৃতিক কুয়া, দুই কুয়ার মাঝেই ছিল শহরটি। আর এই কুয়াকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল মায়ান সভ্যতা আর সংস্কৃতি। এই শহরে গড়ে উঠেছিল মায়াদের পিরামিড, ধর্মীয় মঠ, টেম্পল অফ দি ওয়ারিয়র্স, কারাকোল (গোল স্তম্ভ) ইত্যাদি। ধর্মীয় প্রধান আচার অনুষ্ঠান পালিত হতো এই শহরেই।

মায়ানদের দুই প্রধান অমর দেবতার একজন হলো ইতজামনা। তাদের মতে, ইতজামনা মহাপরাক্রমশালী আকাশচারী দেবতা। এই দেবতাকে খুশি করতে মায়ান যাজকরা পবিত্র পিরামিডের ওপর নরবলি দিত। তবে এই বলিদান আর উৎসর্গের জন্যে বিশেষ সময় বেছে নিত, আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি হতো মায়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। বলিদানের সময় খানিকটা অ্যাজটেক রীতি অনুযায়ী মায়ানরা বিশেষ আচার হিসেবে মানুষের বুক চিরে হৃৎপিণ্ড বের করে দেবতার সামনে উৎসর্গ করত। এছাড়া তারা মৃত মানুষের হাত, পা ও অন্যান্য অঙ্গ রেখে দিত নিজেদের কাছে।

দেবতার উদ্দেশ্যে মায়ানদের নরবলি
দেবতার উদ্দেশ্যে মায়ানদের নরবলি; Source: Youtube

আরেকজন প্রধান মায়া দেবতার নাম কুকুলকান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্পদেবী মনসার সঙ্গে এই দেবতার বেশ মিল রয়েছে। কুকুলকান হলো মায়ানদের সর্পদেবতা, তার বাবা হলেন সর্পদের রাজা। কুকুলকান মূলত ডানাওয়ালা এক সরীসৃপ, যাকে মায়ারা শ্রদ্ধাভরে পূজা করতো। এই পূজার জন্য নবম ও দশম শতকের মাঝামাঝিতে তারা তৈরি করেছিল ১০০ ফুট উচ্চতার একটি পিরামিডসদৃশ উপাসনালয়। চারদিকে ৯১টি করে সিঁড়ির ধাপ, আর একেবারে ওপরে উঠার জন্যে একটি ধাপ, সব মিলিয়ে ৩৬৫টি ধাপ ছিল এই উপাসনালয়ে।

কুকুলকানের উপাসনা (ইটজা) ছিল মায়ান রাষ্ট্রধর্ম। রাজনৈতিক ও কিছুটা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কুকুলকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয়েছিল মায়ারা, এতে করে তাদের সমাজ ব্যবস্থা ভারসাম্য পেয়েছিল অনেকটাই। কুকুলকানের এই পিরামিডটি তারা তৈরি করেছিল এক বিশেষ পদ্ধতিতে। সূর্য যখন বিষুবরেখা অতিক্রম করে, অর্থাৎ যখন পৃথিবীতে দিন আর রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়, তখন সূর্যের আলো পিরামিডের উপর পড়লে এমনভাবে ছায়ার সৃষ্টি হয় যে দেখে মনে হয় পিরামিড বেয়ে একটি সরীসৃপ নেমে আসছে।

কুকুলকানের মন্দির;
কুকুলকানের মন্দির; Source: accmagazine.com

এই দুই দেবতা ছাড়াও মায়াদের ছিল মৃত্যুর দেবতা ‘আহপুছ’, উর্বরতার দেবতা ‘চিয়াক’, মায়া সূর্য দেবতা ‘কিনিস আহাউ’, জীবন ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রক দেবতা ‘বি’, নরকের দেবতা ‘এল’ ইত্যাদি।

দীর্ঘ ৪০০০ বছর আগে, যখনও পৃথিবীর অন্যান্য জাতি সবেমাত্র আগুন জ্বালিয়ে কাঁচা মাংস সেদ্ধ করে খেতে শিখেছিল, মায়ানরা তখন একের পর এক বানিয়ে চলেছিল পাথরের তৈরি সুউচ্চ সব স্থাপনা, জ্যোতির্বিদ্যা, ক্যালেন্ডার তৈরি থেকে শুরু করে খানিকটা সাহিত্যচর্চাও করত তারা। কেমন করে তারা এই উন্নতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল, তা এক রহস্যই বটে! মায়ানদের এসব দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা ছুটে যান মধ্যআমেরিকার এসব অঞ্চলে, অদ্ভুত সুন্দর মায়ান পুরাকীর্তি আর বাড়িঘর দেখে উপভোগ করবেন না এমন লোক পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। [সূত্রঃ রোর মিডিয়া]

মায়াদের ভবিষ্যদ্বাণী

মায়া ধর্মের অন্যতম অঙ্গ ছিল এই দিনপঞ্জী তৈরি করা এবং যত্ন করে রাখা। তাদের দিনপঞ্জী ছিল মোটামুটি নিখুঁত। তারা এমন দিনপঞ্জী তৈরি করেছিল যা ৫৪ কোটি বছরের অসাধারণ প্রায় ত্রুটিবিহীন হিসাব রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী ২০১২ এর ২১শে ডিসেম্বরে পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে এটা মায়া ভাষা পড়তে না পারার মাসুল। তাদের কোথাও পৃথিবী ধ্বংসের কথা বলে নি। তাদের মতে ২০১২ এর পর পৃথিবীতে নতুন যুগ শুরু হবে। সেটাকেই ধরে নেওয়া হয়েছিল দুনিয়া ধ্বংসের ভবিষ্যৎবাণী! তারা প্রত্যেক পৃথিবী হতে দ্রষ্টব্য তারার আবর্তন, আগত দিনক্ষণের হিসাব নিখুঁত ভাবেই করেছিল। [সূত্রঃ ইউকিপিডিয়া]

 মায়ানদের আবিষ্কার

  • পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতার মত মায়ানরাও ইতিহাসে শূন্যের ব্যবহার করেছিলেন।
  • ঐতিহাসিকদের মতে এরাই সর্বপ্রথম পৃথিবীর কাছে ক্যালেন্ডারের পরিচয় ঘটায়। মায়ানদের ছিল ৩ টি ক্যালেন্ডার। তাঁর মধ্যে একটি ছিল ‘হাব’ যেখানে বছরকে আধুনিক ক্যালেন্ডারের মতোই ৩৬৫ দিনে ভাগ করেছিলেন তারা। এখন যেমন আমাদের সপ্তাহের সাত দিনের সাতটা নাম রয়েছে, তেমনই মায়া সভ্যতায় বছরের প্রত্যেকটি দিনের আলাদা আলাদা নাম ছিল। অর্থাৎ, মোট ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি নাম।
  • মায়ানদের চিকিৎসাবিদ্যা অনেক আধুনিক ছিল। তারা শরীরের ক্ষত মানুষের চুল দিয়েই সেলাই করে ফেলত। দাঁতের গর্ত পূরণ করা, এমনকি নকল পা লাগানোতেও পারদর্শী ছিলেন তারা। ভাঙা হাড় জোড়া দেওয়া থেকে শুরু করে ‘পোকা’ ধরা দাঁতে চুন বা ধাতব ফিলিং করতে পারদর্শী ছিলেন প্রাচীন মায়া সভ্যতার চিকিৎসকরা।

মায়ানরা প্রকৃতি থেকে ব্যথানাশক জরি-বুটি সংগ্রহ করত। সেই সব গাছ-গাছড়া তারা পূজায় ব্যবহার করত ধর্মীয় রীতি অনুসারে, আবার ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার করত রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য, কিংবা সুস্থ করার জন্য।

 মায়ানদের অবিশ্বাস ঘটনা

  • জ্যোতির্বিজ্ঞান বেশ উন্নত ছিলেন প্রাচীন মায়া সভ্যতার অধিবাসীরা। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে পৃথিবীতে আতশ কাঁচ আবিষ্কার হয় এই সভ্যতাতেই। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর প্রথম ক্যালেন্ডারের ধারনার জন্ম হয় এই সভ্যতাতেই।
  • মায়ানরা স্টীম বাথ নিতে পছন্দ করত। তারা মনে করত স্নানের সময় ধোঁয়ার সাথে তাদের সব পাপ উড়ে যায়। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর মহিলাদের এই ‘রৌদ্র স্নান’ ছিল বাধ্যতামূলক। পাথরের টালি দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘর জল দিয়ে ভিজিয়ে-ভিজিয়ে তার ভেতরে ‘স্টিম বাথ’-এর ব্যবস্থা করা হত।
  • মায়ানরা বন্দীদের কিংবা দাসদের মেরে ফেলার আগে নীল রঙ করত আর খুব অত্যাচার করত। কখনো কখনো বন্দীদের চামড়া তুলে ফেলা হত আর মায়ানদের ধর্মযাজক সেই চামড়া পরে নাচ পরিবেশন করত।
  • শিশুর জন্মের কয়েক মাসের পর থেকেই তার কপালের উপর ভারী সমতল পাথর বা ধাতব বস্তু চেপে রাখা হত টানা কয়েক বছর। এই ফলে কপালের গড়ন পাল্টে চ্যাপ্টা, প্রায় সমতল আকার নিত। এই প্রথা চালু ছিল বিশেষত সম্ভ্রান্ত রাজ বংশের মধ্যেই। অন্যভাবে বলতে গেলে, অভিজাত মায়ান পরিবারে মায়েরা শিশুদের কপাল ঘষত যাতে চ্যাপ্টা কপাল হয়।
  • মায়া সভ্যতার প্রায় বেশির ভাগ মানুষের চোখ ট্যারা ছিল। প্রচলিত কিছু ধর্ম বিশ্বাসের কারণে একটি শিশুর জন্মের পর থেকেই তার চোখের খুব কাছে কোনও বস্তুকে নিয়মিত ধরে রাখা হত যত দিন না দু’চোখের মণি দুটি স্থায়িভাবে পাশাপাশি চলে আসে কিংবা দু’টি চোখ ট্যারা হয়ে যায়।
  • মায়া সভ্যতায় সদ্যোজাত শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রীতি অনুসরণ করা হত। বছরের যে দিনে শিশুর জন্ম হচ্ছে সেই দিনটির নাম অনুসারে শিশুর নামকরণ করা হত। জন্মের সময়ের ফারাক অনুযায়ী একই দিনে জন্মানো শিশুদের নামেরও কিছু ফারাক থাকতো। মায়া সভ্যতায় সদ্যোজাত শিশুর নামকরণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রীতি অনুসরণ করা হত।
  • উপাস্য দেবতা সূর্যকে সন্তুষ্ট রাখতে নরবলির প্রথা চালু ছিল এই সভ্যতায়। এই নরবলির জন্য যুদ্ধ করে বা রত্ন বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষ জোগাড় করন রাজ পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বলির আয়োজন করত তাঁরা।

 

তথ্যসূত্রঃ

১. মায়া, আজটেক ও ইনকো সভ্যতা – আব্দুল হালিম

২. ইউকিপিডিয়া

৩. রোর মিডিয়া

 

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

 

Post Views: 5,871
Tags: MayaMaya Civilizationপ্রাচীন মায়া সভ্যতামায়া সভ্যতামায়া সভ্যতা : এক অদ্ভুত রহস্যময় সভ্যতার অজানা ইতিহাস
ADVERTISEMENT

Related Posts

আফগান জিহাদ, তালেবানের উত্থান ও আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমণের যতকথা
বিশ্ব ইতিহাস

আফগান জিহাদ, তালেবানের উত্থান ও আমেরিকার আফগানিস্তানে আগ্রাসন

১৯৭৯ সালে ইরানে বিপ্লবের পর ইরান ও সৌদি আরবের স্নায়ুযুদ্ধ বা শীতল যুদ্ধ শুরু হয়। অন্যদিকে আমেরিকা ও সোভিয়েত...

by অতিথি লেখক
September 4, 2021
গুপ্তহত্যার মাধ্যমে মোসাদ যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের খুন করেছিল
বিশ্ব ইতিহাস

গুপ্তহত্যার মাধ্যমে যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের খুন করেছিল ইজরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজ পরামর্শক কৌটিল্য বলেছিলেন, “প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দাও, দরকার হলে গুপ্তহত্যা করেও।” কৌটিল্যের...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
May 19, 2021
মােসাদ
বিশ্ব ইতিহাস

মােসাদ : বিশ্বের সবচেয়ে বীভৎসতম ও ভয়ঙ্কর গােয়েন্দা সংস্থার ইতিকথা

একসময় অ্যাডলফ হিটলার বলেছেন, দুনীয়ায় যেকোনাে উল্লেখযােগ্য অপরাধকান্ডের পেছনে থাকে কোনাে কোনাে ইহুদীর হাত। হিটলার যখন একথা বলেন তখন...

by আবু রিদা
May 14, 2021
ক্রীতদাসদের সাথে মালিকের যৌন সম্পর্ক প্রচলিত ছিল প্রাচীন যুগে
বিশ্ব ইতিহাস

ক্রীতদাসদের সাথে মালিকের যৌন সম্পর্ক প্রচলিত ছিল প্রাচীন যুগে

লিখেছেনঃ আশরাফ উল ময়েজ আমেরিকার ক্রীতদাস প্রথার সাথে জড়িয়ে আছে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি, যা কখনােই সীমিত আকারে ছিল...

by অতিথি লেখক
May 10, 2021

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ : মুঘল সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত এক নতুন ধর্ম

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (8)
  • অন্যান্য (11)
  • ই-গ্রন্থাগার (1)
  • ইসলাম (25)
  • ইসলামিক ইতিহাস (20)
  • কবিতা (36)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (20)
  • বিশ্ব ইতিহাস (23)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (184)
  • রাজনীতি (36)
  • সাহিত্য আলোচনা (57)
  • সিনেমা (14)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Checkout
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-গ্রন্থাগার
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
wpDiscuz
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply
Open chat
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?