মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপির অপর নাম চিত্রলিপি। হায়ারোগ্লিফিক লিপি প্রচলিত ছিল ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। লিপি ব্যঞ্জনবর্ণ সর্বস্ব ছিল, স্বরবর্ণ গুলি উহ্য থাকত।
মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি প্রথম পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করে গ্রিকরা। তারা মনে করত যেহেতু মন্দিরগুলিতে এই লিপি উৎকীর্ণ থাকতো তাই এই লিপির মাধ্যমে কোনও পবিত্র বাণী দেওয়া হয়। হায়ারোগ্লিফিক নামটিও গ্রিকদের দেওয়া এবং এসেছে পবিত্র থেকে।
যদিও গ্রীকরা পাঠোদ্ধার করে এর প্রকৃত বার্তা দিতে পারেনি তবুও তাদের তাদের দেওয়া নাম রয়ে গেছে। প্রথম পাঠোদ্ধার করেছেন নবম দশম শতকে আবু বক্কর আহমদ ইবনে আলী ইবনে আল উসায়বিয়া আল কালদানি। কালদানি শব্দটি এসেছে প্রাচীন সভ্যতা কালদু থেকে। ইরাকের সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের কালদু সভ্যতা এখনও ক্যালডিয়ান পূর্বদেশীয় ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে টিকে আছে। যদিও অধিকাংশই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে।
ইবন আল উসায়ইবিয়া জন্মেছিলেন নবম শতকে কুফা নগরীর কাছে। তিনি প্রাচীন কিবতি (Copt) ভাষার পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে তখনও মিশরীয় কপ্ট পাদ্রীদের মধ্যে প্রচলিত এই ভাষার মাতৃ স্বরূপ হায়ারোগ্লিফ লিপির পাঠোদ্ধার করেন। সপ্তদশ শতকে অ্যাথেনেসিয়াস কিশার ইবনে উসায়বিয়ার পাঠোদ্ধারের উপর নির্ভর করে নিজস্ব কয়েকটি পাঠোদ্ধার করতে পেরেছিলেন। এরপর ১৮০৬-এ ব্রিটিশ হায়ারোগ্লিফ বিশারদ জোসেফ ফন হ্যামার পারগসটল আরও কিছু পাঠোদ্ধার করে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত করেন। তাঁর লেখা বইটির নাম, ‘এনসিয়েন্ট আলফাবেটস এন্ড হায়ারোগ্লিফিক কারেক্টরস এক্সপ্ল্যাইনড; উইথ অ্যান একাউন্ট অফ ইজিপশিয়ান প্রিসটস, দেয়ার ক্লাসেস, ইনিসিয়েশনস, স্যাক্রিফাইসেস ইন অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ বাই আহমদ বিন আবুবাকার বিন উসায়বিয়া’। এর ঠিক ১৬ বছর পর, ১৮২৪-এ জাঁ বেকার শেপোঁলিয়ঁ সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিয়ে নেন যে তিনিই পুরোপুরি পাঠোদ্ধার করতে পেরেছেন। এন্টনি ইসাক সিলভেস্টার ডি স্যাসি ছিলেন প্রাচ্যবিদ, ভাষাবিদ, ভালো আরবি জানতেন। শেপোঁলিয়ঁর শিক্ষক ছিলেন। রচেস্টার লিপির পাঠোদ্ধারে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর ছাত্রের সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয়। শেপোঁলিয়ঁ পরবর্তীতে ইংরেজ মিশরবিদ টমাস ইয়ং-এর সঙ্গে কাজ শুরু করেন, তাঁর সঙ্গেও মতবিরোধ শুরু হয়। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. ওকাসা এল ড্যালি শেপোঁলিয়ঁ রচেস্টার লিপির পাঠোদ্ধার এর সময় ইবনে উসায়বিয়ার মধ্যযুগীয় আরবি পাঠোদ্ধারের সাহায্য নেন।
যাই হোক, মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ পাঠোদ্ধার প্রকল্পে গ্রিক, ফরাসি-ইংরেজ ডিলভেস্টার ডি স্যাসি, শেপোঁলিয়ঁ, টমাস ইয়ং সকলের নাম আমরা শুনেছি। কিন্তু মূল কৃতিত্ব যাঁর পাওয়ার কথা সেই ইবনে উসায়বিয়ার নাম জানতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।