লিখেছেনঃ ড. শ্যামাপ্রসাদ বসু
‘মধ্যবিত্ত’ বা ‘মধ্যশ্রেণী’ শব্দটির সঙ্গে সাধারণভাবে পরিচয় ঘটে অষ্টাদশ শতকে। ক্রমবর্ধমান সমাজের সেই বিশেষ গােষ্ঠীকে যারা ‘অভিজাত’ নয় আবার সাধারণ মানুষ’ ও বলা যাবে না। উনিশ শতকে উপরােক্ত গােষ্ঠী নিজেদের মধ্যবিত্ত’ বলে অভিহিত করতেন। তবে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানীরা মধ্যবিত্ত দের কোনাে শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করেন। তারা মনে করেন এরা হল এক পদমর্যাদা সম্পন্ন গােষ্ঠী। যাদের অবস্থার নিরন্তর পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ গােষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের অবস্থান স্থির নিশ্চিত নয়। এর মধ্যে কেউ বেরিয়ে যেতে পারে আবার কেউ এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে যুক্ত হওয়াটা যত সহজ ব্যাপার, বেরিয়ে যাওয়াটা ততটাই কষ্টসাধ্য। মধ্যবিত্তরা সাধারণভাবে শহরবাসী।
কিন্তু মুঘল আমলে মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত এর অবস্থা আলােচনার সময়ে ‘মধ্যবিত্ত’ র সংজ্ঞা একটু ব্যাপক অর্থে ধরতে হবে। প্রচলিত অর্থে তখন শহর গড়ে ওঠেনি এবং আধুনিক ধারণা অনুযায়ী আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও অধ্যাপকও ছিল না। এমনকি সেচ ব্যবস্থা, ডাকব্যবস্থা, পূর্তবিভাগ এমনভাবে গড়ে ওঠেনি যে ওসব ক্ষেত্রে আজকের মত বহুসংখ্যক কর্মচারী নিয়মিত নিযুক্ত হত। সুতরাং মুঘল আমলে মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত বলতে আমরা বণিক সম্প্রদায় ও মুষ্টিমেয় সরকারি চাকুরে বুঝি—এদের মধ্যে কোনাে সহযােগিতা ছিল না, নিরন্তর শত্রুতা ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মুঘল আমলে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল সামন্ততান্ত্রিক কাঠামােকে ভিত্তি করে। এর শীর্ষে ছিলেন বাদশাহ বা সম্রাট। অর্থনৈতিক দিক থেকে সমগ্র নাগরিককে মােটামুটি তিনভাগে ভাগ করা যায়। অভিজাত শ্রেণী, মধ্যবিত্তশ্রেণী এবং দরিদ্ৰশ্রেণী। শেষােক্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল কৃষক, শ্রমিক ও শিল্পীরা।
মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত সরকারি চাকুরেদের সব সময়ে চেষ্টা থাকত কি ভাবে সম্রাটের সুনজরে পড়ে পদোন্নতি ঘটান যায়। কেন্দ্রে যে সমস্ত কর্মচারী কাজ করতেন তারা মােটামুটি অভিজাতদের মতই জীবনযাত্রা নির্বাহ করতেন। তবে খুব একটা জাঁকজমক দেখান থেকে তারা বিরত থাকতেন, কারণ মুঘল শাসনব্যবস্থায় অতিরিক্ত অর্থাগম অপরাধ হিসাবে গণ্য ছিল। তাই বেশীরভাগ অভিজাত ব্যক্তির সম্পত্তির উপর অধিকার পাবার কোন ব্যবস্থা মুঘল আমলে ছিল না। অবশ্য কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মধ্যে কেউ কেউ কৃচ্ছসাধনের দ্বারা প্রচুর অর্থ উত্তরাধিকারীদের জন্য সঞ্চয় করে যেতেন। এই গেল কেন্দ্রে বসবাসকারী কর্মচারীদের কথা। এ ছাড়া আরাে বহু কর্মচারী মুঘল শাসনব্যবস্থার অসংখ্য কর্মে লিপ্ত ছিলেন। তাদের আর্থিক অবস্থা সম্বন্ধে এখনাে পর্যন্ত ইতিহাসের সাক্ষ্য বড় নীরব। শুধু তারই মধ্যে যেটুকু জানা যায়, তাতে স্পষ্ট বােঝা যায় যে এঁদের অবস্থা কোনক্রমেই স্বচ্ছল ছিল না। কোনাে কোনাে সম্রাটের রাজ্যকালে জিনিসপত্রের দাম অপেক্ষাকৃত সস্তা থাকলেও বেতনের স্বল্পতার জন্যে কর্মচারীদের তাতে বিশেষ উপকার হত না। উৎকোচ গ্রহণ সরকারী কর্মচারীদের একটা সাধারণ রীতিতে দাঁড়িয়ে গেছিল। শুল্ক ও রাজস্ববিভাগের কর্মচারীরা তাদের ক্ষমতাকে অসৎ কার্যের পক্ষে পূর্ণ ব্যবহার করত। শায়েস্তা খাঁর মত অর্থপিশাচ শাসনকর্তাকেও বাংলাদেশের এইসব কর্মচারীদের ঘুষ নেওয়ার বিরুদ্ধে ফতােয়া জারি করতে হয়েছিল। সৈন্যদের বেতন দেবার ভার ছিল যাদের উপর তারা সৈন্যদের অজ্ঞতার সুযােগ নিয়ে ইচ্ছেমত তাদের প্রাপ্য বেতন থেকে জরিমানা কেটে নিত। অবস্থা এমনই চরমে উঠেছিল যে সম্রাটকে লিখিতভাবে ঐসব কর্মচারীকে সতর্ক করে নিদের্শনামা জারি করতে হয়। অবশ্য কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থা ও ব্যয় বাহুল্যের দিকটা চিন্তা করলে এ ধরণের দুর্নীতির একটা হদিশ মেলে। দু একজন ছাড়া বেশিরভাগ প্রাদেশিক শাসনকর্তাই নিজ নিজ শাসনসীমার মধ্যে অত্যাবশ্যক সামগ্রীর একচেটিয়া ব্যবসা চালাতেন। ফলে জিনিসপত্রের দাম বেশীরভাগ সময়েই উর্ধ্বমুখী থাকত। সম্রাট বাধা দিতেন না—এমনকি শাজাহান নিজেই একচেটিয়া নীলের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কেবল বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত থেকে বােঝা যায় এই একচেটিয়া ব্যবসার পরিণতি কি ভয়াবহ। শায়েস্তা খাঁ বাংলাদেশে আসার আগে পূর্ববর্তী শাসকদের শাসনের প্রকৃত চিত্র উৎঘাটন করতে গিয়ে শিয়াবুদ্দিন তালিশ তার পুস্তকে লিখেছেন যে, বাংলাদেশের সমস্ত শাসকই খাদ্য ও বস্ত্রের উপর একচেটিয়া ব্যবসা কায়েমি করেছিলেন, জিনিসের দাম হু-হু করে চড়ত আর অসহায় জনসাধারণকে প্রাণ বাঁচানাের তাগিদে সেই দামেই কিনতে হত। তালিশ কিন্তু একচেটিয়া ব্যবসা প্রসঙ্গে শায়েস্তা খাঁর নজির দেখাননি। যদুনাথ সরকার তার বাংলার ইতিহাস (২য় খণ্ড) গ্রন্থে বিভিন্ন সমসাময়িক ব্যক্তির লিখিত বিবরণীর সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে শায়েস্তা খাও একচেটিয়া ব্যবসার নীতিকে সক্রিয়ভাবে প্রশ্রয় দিয়েছেন। ইংরেজ ব্যবসায়ী উইলিয়ম ক্ল্যাভেল ১৬৭৬ খ্রিঃ ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে হুগলী বন্দর থেকে লিখছেন যে, শায়েস্তা খাঁ হুগলীকে যেন ব্যক্তিগত জায়গীরে পরিণত করেছেন। তার কর্মচারীরা প্রায় সকল পণ্যেরই একচেটিয়া ব্যবসা করছে, এমন কি পশুর খাদ্য ঘাসও রেহাই পায়নি।
লেখাপড়ার চর্চা নিয়ে যারা থাকতেন, অর্থাৎ শিক্ষক ও গ্রন্থকারেরা, তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অন্যদের চেয়ে কিছু ভাল ছিল না। কিছু হিন্দু ও মুসলমান শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে বৃত্তিলাভ করলেও সরকারি ঔদাসীন্যের ফলে অধিকাংশ পাঠশালা ও মক্তবের শিক্ষকদের দিন কায়ক্লেশে নির্বাহ হত। অনেকে মনে করেন এ সময়ে ইসলামী শিক্ষার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এই ধারনার সায় দেয় না। সমগ্র গুজরাট প্রদেশে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন, শিক্ষকের সংখ্যাও ছিল তিন, আর বৃত্তিভােগী ছাত্রের সংখ্যা ছিল পঁয়তাল্লিশ। অধিক অর্থের জন্য মসী ছেড়ে তাই অসি ধরার দৃষ্টান্ত বিরল নয়। গ্রন্থকারদের অবস্থা আরাে শােচনীয়। সাধারণত সম্রাটদের পৃষ্ঠপােষকতায় তাদের লেখাপড়ার চেষ্টা চলত। সে ক্ষেত্রে সত্য হলেও সম্রাটের অপ্রিয় এমন কোন কথা লেখা সম্ভব ছিল না, আবুল ফজলের মত নির্জলা প্রশংসা করাই ছিল রীতি। কারণ এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অতিরিক্ত প্রাপ্তিযােগের সম্ভাবনা। আবার কেউ কেউ ছিলেন যাদের বৈষয়িক উচ্চাশা সম্রাটের দ্বারা পূরণ হয়নি বলে নিজেদের বইতে সত্যমিথ্যা লিখে মনের ঝাল মিটিয়েছেন। ইবন বতুতা ও বাদায়ুনির চাকুরি ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই তাঁদের যথাক্রমে মুহম্মদ বিন তুঘলক ও আকবরের প্রতি ঘাের শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছিল। গ্রন্থকারদের অবস্থা হয়ে উঠেছিল অনেকটা “শ্যাম রাখি না কুল রাখি” গােছের। অর্থ পেতে হলে সত্যভ্রষ্ট হতে হয়, আবার সত্য রাখতে গেলে অনাহারে দিন কাটাতে হয়। বিহার প্রদেশের সাপুরমানের পরগনার জনৈক পুঁথিকার গােলাম সরফুদ্দীনের ভাই মসিউদ্দীন আর্থিক অভাব মােচনের জন্য বাংলা বিহারের দেওয়ান মুর্শিদকুলি খাঁর কাছে বার বার আবেদন পত্র পাঠিয়েছেন। আবেদন পত্রে তিনি দেওয়ানকে বারবার জানাচ্ছেন তার আর্থিক দুরবস্থা এমন চরমে পৌঁচেছে যে নিছক অর্থের অভাবে তিনি জীবিকার সন্ধানে বাইরে বেরুতে পারছেন না, যদি দেওয়ান দয়াপরবশ হয়ে কিছু সাহায্য না করেন তবে পরিবার নিয়ে তাঁকে পথে বসতে হবে। (পাটনা কলেজ সংরক্ষিত অপ্রকাশিত ফারসী পুঁথি “আসরাফুল মুসাওয়াদাৎ” থেকে সংগৃহীত)।
মুঘল আমলে যে সব কর্মচারী গুপ্তচর বিভাগে কাজ করত তাদের দায়িত্ব ছিল সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে আবার ওয়াকে নবীশ বলে একদল লােক থাকত, যারা প্রদেশের দৈনন্দিন খুঁটিনাটি গােপন সংবাদের উপর ভিত্তি করেই কেন্দ্রের সরকার প্রদেশগুলি সম্বন্ধে নিয়মনীতি নির্ধারণ করত। শাসন ব্যাপারে ওয়াকে নবীশরা এক অসাধারণ স্থান দখল করে থাকলেও তাদেরও আর্থিক অনটনে দিন কাটাতে হত। ফলে নিছক স্বার্থের লালসায় তারা অনেক সময়েই বাজে মনগড়া খবর পাঠিয়ে সত্য গােপন করত। এই রকম অনৃত ভাষনের শাস্তি ছিল ভয়াবহ। যশােবন্তের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর দেওয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট ওয়াকে নবীশের শিরচ্ছেদ ঘটেছিল। অনেক সময় এরা আবার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করত। আওরঙজেবের সময়ে দেখা যায় একজন সৈন্যধ্যক্ষ এই মর্মে অভিযােগ করেছে যে, তার উপর চাপ দিয়ে জনৈক ওয়াকে নবীশ প্রতি বছর এগারােশাে টাকা দাবী করেছে। অবশ্য সব ওয়াকে নবীশ মিথ্যে খবর দিত বা শ্রমকুণ্ঠ ছিল—একথা বলা অত্যন্ত ভুল হবে। অষ্টাদশ শতকের প্রথমভাগে বাংলাদেশে শাসনকর্তা আজিমউশশানের কুশাসনের খবর আওরঙজেব অবগত হন ওয়াকে নবীশের পাঠানাে সংবাদ মারফৎ।
তুর্ক-আফগান যুগে (এমনকি শাজাহানের আমল পর্যন্ত) হিন্দু কেরানীদের অবস্থা মােটামুটি ভালই ছিল। বিশেষ করে রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে আর জমিদারি পরিচালনায় হিন্দুদের উপর মুসলমান শাসকেরা যথেষ্ট আস্থা রাখতেন। বাংলাদেশের রাজস্ব বিভাগে যে সমস্ত কর্মচারী নিযুক্ত হত, তাদের মধ্যে নবীন ও প্রাচীন দু রকমের পদবী ছিল যেমন, নিয়ােগী, চৌধুরী ইত্যাদির পাশাপাশি নতুন পদবী প্রচলিত হল ‘ডিহিদার’ ‘শিকদার’ প্রভৃতি। নিয়ােগী, চৌধুরীদের মধ্যে অনেকেই বেশ দুপয়সা গুছিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আওরঙজেবের সময়ে রাষ্ট্র যখন হিন্দুবিরােধী নীতি গ্রহণ করল, তখন থেকে হিন্দুদের প্রভাব প্রতিপত্তি রাজস্ব বিভাগ থেকে কমে যেতে থাকল। ফৌজদার এবং সুবাদারের ন্যায় উচ্চপদ থেকে আরম্ভ করে রাজস্ববিভাগের নিম্নতম পদগুলি পর্যন্ত হিন্দু খেদা শুরু হল। এমনকি রাষ্ট্রের সমস্ত শাসনবিভাগ থেকে সমূলে হিন্দু উৎসাদনের হুকুমনামাও আওরঙ্গজেব জারি করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সে নীতি কার্যকরী করা সম্ভব হয়নি অসামরিক ক্ষেত্রে হিন্দু কর্মচারীদের উৎকর্ষের জন্য। অষ্টাদশ শতাব্দীতে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের লেখায় দারিদ্রের যে বিলাপের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তা প্রকৃতপক্ষে বাঙালীর ঘরের নিত্য খবর।
মুঘল আমলে অন্তর্দেশীয় ও বহির্বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছিল। চীন, জাপান, পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, সিংহল, বর্মা, পারস্য, নেপাল, মধ্য এশিয়া, আরব, পূর্ব আফ্রিকা ইত্যাদি দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। পর্তুগীজ, ওলন্দাজ ইংরেজ, ফরাসী প্রভৃতি ইউরােপীয় বণিকেরা ভারতের পণ্য ইউরােপের বাজারে নিয়ে যেত। ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির কতকগুলি কারণ এ সময়ে লক্ষ্য করা যায়।
প্ৰথমত রাষ্ট্রের কঠোর কেন্দ্রায়ত্ত শাসনব্যবস্থা। শের শাহের আমল থেকে যে কেন্দ্রায়ত্ত শাসন ব্যবস্থার পত্তন হল তা পরিপূর্ণতা লাভ করল আকবরের সময়ে। সৈন্যবাহিনী সরাসরি সম্রাটের তবে এল। আকবর প্রবর্তিত মনসবদারী ব্যবস্থা এবং বেতনভুক কর্মচারী নিয়ােগের ফলে ভূস্বামীদের উপর রাষ্ট্রের নির্ভরতা অনেক কমে গেল। কেন্দ্রায়ত্ত শাসনব্যবস্থাকে তাই ভূস্বামী ও অভিজাতশ্রেণী মােটেই হৃদয় থেকে গ্রহণ করতে পারেনি। মজঃফর খা তুরবদী যখন আকবর কর্তৃক বাংলাদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে কেন্দ্রিয়করণের নীতি আন্তরিকতার সাথে পালন করেছিলেন তখন তাকে বাংলা ও বিহারের বহু ভূস্বামীর প্রতিপক্ষতা সহ্য করতে হয়েছিল। অন্যদিকে অতি স্বাভাবিকভাবে বণিকেরা কেন্দ্রায়ত্ত শাসনব্যবস্থাকে আশীর্বাদ মনে করে বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছেন। রাষ্ট্রের অসম ব্যবস্থা সামন্তদের কাছে আদরণীয় হলেও ব্যবসায়ীদের কাছে অভিশাপ স্বরূপ। একই আইন, একই মুদ্রা, একই ওজন ও সর্বোপরি কঠোর শৃঙ্খলায় আবদ্ধ বৃহৎ যুক্তরাষ্ট্র বণিকের বাণিজ্যের অন্যতম নিরাপত্তা স্বরূপ। ওজনের তারতম্য বা শুল্ক আইনের প্রকার ভেদের জন্য অযথা আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রইল না ব্যবসায়ীর পক্ষে এর চেয়ে স্বস্তির খবর আর কি থাকতে পারে? দ্বিতীয়ত মুঘল সাম্রাজ্যের বৃহৎ আয়তন। বাবরের সময়ে যে সাম্রাজ্য কেবল দিল্লীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল কালক্রমে তাই সমগ্র ভারতবর্ষকে একমাত্র সুদূর দক্ষিণের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া গ্রাস করে ফেলল। ব্যবসায়ীদের পক্ষে একই সাম্রাজ্যের অধীন এক বৃহৎ রাষ্ট্রে ব্যবসা বাণিজ্য করা অত্যন্ত লাভজনক। কারণ একই রাষ্ট্রের মধ্যে থাকার ফলে বিভিন্ন প্রাদেশিক সীমানা অতিক্রম করার সময়ে পণ্যের বিভিন্ন শুল্ক আর অযথা হয়রানি থেকে সে নিষ্কৃতি পায়। তৃতীয়ত শেরশাহের আমল থেকে শুরু করে মুঘল যুগ পর্যন্ত নতুন নতুন পথ ঘাট নির্মাণ হতে লাগল। গ্রামের কৃষক বা অভিজাতরা বিশেষ মাথা ঘামায় না রাস্তাঘাট নিয়ে। বাংলাদেশের সঙ্গে রাস্তার দ্বারা বিহারের যােগস্থাপন, বাঙালী কৃষক বা সামন্তদের কাছে কোন উৎসাহের খবর নয়। কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত বণিকের কাছে এর চেয়ে আশাপ্রদ খবর আর কি থাকতে পারে? কারণ রাস্তাঘাট নির্মাণ হলে শুধু যে একই প্রদেশের মধ্যে বাণিজ্য করার সুবিধা হবে তাই নয় প্রদেশে প্রদেশে বাণিজ্য করার সুযােগও বহুগুণে উন্মুক্ত হবে। ইতিহাস থেকে আমরা জানি সমস্ত বড় বড় রাস্তাই মুখ্যত বাণিজ্যিক রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকবরের রাজপুতানা দখলের অন্যতম কারণ ছিল এমনই এক বাণিজ্যপথের উপর আধিপত্য বিস্তার। রাজপুতানার মধ্য দিয়ে উত্তর পশ্চিম ভারতের অপরাপর অংশের বাণিজ্যপথ ছিল। শেরশাহ বণিকদের সুবিধার্থে রাস্তার মাঝে মাঝে অনেক সরাইখানা তৈরি করে দিয়েছিলেন। মুঘল আমলে অন্তর্দেশীয় জলপথের প্রসারও যথেষ্ট ঘটে। কৃষিপ্রধান ভারতে সহজে ও সস্তায় একস্থান থেকে অন্যস্থানে পন্য নিয়ে যাবার প্রয়ােজনীয়তা খুবই ছিল। একে চতুর্থ কারণ বলা যায়। পঞ্চমতঃ অপরাধনিয়ন্ত্রণের জন্য শেরশাহের আমল থেকে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হল। পুরনাে হিন্দুরীতি অনুসারে স্থানীয় শান্তি রক্ষার ভার ন্যস্ত করা হল সেখানকার প্রধান ব্যক্তি বা মােড়লের হাতে। যখনই কোন চুরি বা ডাকাতিতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হত, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হত সেখানকার মুখ্য ব্যক্তিকে। ফলে শেরশাহের আমলে অপরাধী ও অপরাধের সংখ্যা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছিল। যুক্তিসংগত ভাবে অনুমান করা যায়। অপরাধ নিবারণের এই অভিনব পদ্ধতিতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা। কারণ একমাত্র তীর্থযাত্রা ছাড়া অকারণ ভ্রমণে কোন কৃষক বা সাধারণ লােক বেরােত না। আর অভিজাতেরা বাইরে যেতে হলে সঙ্গে যথেষ্ট সংখ্যক সশস্ত্র লােকলস্কর নিতেন।
যষ্ঠতঃ জাহাঙ্গীরের নির্দেশনামা। সম্রাট জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরােহণের পর জলকর রহিত করে দিলেন আর হুকুম দিলেন, কোন অজুহাতেই বণিকের অনুমতি ছাড়া তার সামগ্রী রাস্তার উপর খুলে পরীক্ষা করা যাবে না। অবশ্য আগেই শেরশাহ মােটামুটিভাবে আভ্যন্তরীণ শুল্কব্যবস্থা কয়েকটা ক্ষেত্রে ব্যতীত তুলে দিয়েছিলেন। এক শহর থেকে অন্য শহরে পণ্য সামগ্রী নিয়ে যাবার জন্যে যে অতিরিক্ত করের ব্যবস্থা ছিল তাও রদ করে দিয়েছিলেন। সপ্তমতঃ ব্যবসায়ীদের পক্ষে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য খবর নির্দিষ্ট মানের ভিত্তিতে মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলন। শেরশাহের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আকবর মুদ্রার সমতার দিকে লক্ষ্য দিয়েছিলন। মুদ্রার মধ্যে রূপা আর তামার ব্যবহার ছিল সর্বাধিক, যদিও সােনার মুদ্রাও চালু ছিল। সবচেয়ে ছােট তামার মুদ্রা ও সবচেয়ে ছােট রূপেপার মুদ্রা যথাক্রমে “দামের” (সবচেয়ে বড় তাম্রমুদ্রা) এক অষ্টমাংশ এবং টাকার বিশভাগের এক ভাগ ছিল। এ ছাড়া কাজকর্মের জন্য কাগজী মুদ্রা (“জিটল” বা “দামের” পঁচিশ ভাগের এক ভাগ ও দৈনন্দিন খুচরাে ব্যাপারের জন্যে কড়ির প্রচলনও ছিল। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন সামগ্রী সাধারণত নিজের ভােগে ব্যয়িত হয়। সেখানে জিনিসপত্র বিনিময়ের মাধ্যমে আদান-প্রদান হয় এবং বাজার প্রাপ্য কর সামগ্রীর দ্বারা মেটান চলে। কিন্তু মুদ্রা ব্যবস্থার পাকাপাকি প্রচলনের পর কর ব্যবস্থা থেকে সাধারণ সরকারি ইতিহাসে মুদ্রা ব্যবস্থা দূরপ্রসারী পরিবর্তন সূচনা করল। শুধু কয়েকটি শহরকে কেন্দ্র করে বাজার সীমাবদ্ধ রইল না। বাজারের বিস্তৃতির মধ্যে সমগ্র জনসাধারণ ধরা দিল। জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয়ের সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনেরও যথেষ্ট বৃদ্ধি ঘটল।
উপরােক্ত কারণগুলি আলােচনার পর একটা কথা স্বভাবতই মনে হয় মুঘল যুগ বুঝি বাণিজ্য ও বণিকের পক্ষে স্বর্ণযুগ। একথা অনস্বীকার্য যে মুঘলযুগে বাণিজ্য পূর্বতন সুলতানী আমলের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি লাভ করেছিল। এবং সেই সাথে গড়ে উঠেছল নূতন বাণিজ্যিক কেন্দ্র। লাহাের, মুলতান, কাম্বে, আহম্মদাবাদ, সুরাট, সপ্তগ্রাম, পাটনা প্রভৃতি শহরগুলি ছিল অনেক বেশি। রাজকীয় নাগপাশ থেকে বাণিজ্য মুক্ত ছিল না। ধর্মান্ধতা, কর্মচারীদের অত্যাচার, সম্রাটের একচেটিয়া বাণিজ্য কতকগুলাে বিশেষ ব্যবসাকে কুক্ষিগত করার ফলে বণিকেরা শ্বাসরােধকারী আবহাওয়ায় দিন কাটাত। জাহাঙ্গীর জলকর রহিত করে দিলেও জায়গীরদার ও কর্মচারীরা জলকর গ্রহণ অব্যাহত রেখেছিল। বণিকদের বাক্সবন্দী সামগ্রী সব সময়ে খুলে হয়রানি করা হত। যারা বাধা দিত, নানারকম অসুবিধা সহ্য করতে হত তাদের। হয়রানি থেকে নিষ্কৃতি পাবার একমাত্র উপায় কর্মচারীদের ঘুষ দেওয়া। শাজাহানের দৃঢ় শাসনে দেশে শান্তি থাকলেও বাণিজ্যের খুব একটা প্রসার ঘটেনি। শুল্ক বিভাগের কর্মচারীদের অত্যাচার বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল। ১৬৮২ সালে বাংলাদেশে ইংরেজ কোম্পানীর প্রতিনিধি উইলিয়ম হেজেসের বিবরণী থেকে জানা যায় যে মুঘল কর্মচারীদের অসম্ভব ঘুষ নেবার নেশা। ব্যবসা বাণিজ্যকে প্রায় বন্ধ করে দেবার অবস্থায় এনে ফেলেছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি হুগলী বন্দরের শুল্ক কর্মচারী বালাদের নাম উল্লেখ করেছেন। আসফ খাঁ এবং মীরজুমলার মত প্রভাবশালী রাজকর্মচারীরা একচেটিয়া ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিলেন। যাঁদের কর্তব্য বণিকের স্বার্থরক্ষা করা, তাঁরাই যখন ব্যবসায় নামলেন তখন তার প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখা গেল অন্তর্দেশীয়। বাণিজ্যে। এ ছাড়া স্থলপথে চুরি ও ডাকাতি নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়াবার ফলে পণ্য সামগ্রী নিরাপদে আনা নেওয়া করা এক সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। দলবদ্ধ অবস্থায় ছাড়া যাতায়াত সম্ভব ছিল না বলে মালপত্র স্থানান্তরিত অনিয়ম ঘটত। ব্যবসায়ীদের রক্ষা করা দূরে থাকুক মুঘল কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে ‘হক’ বা বেআইনী অর্থ আদায় করত। কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতার জন্য দেখা যেত একই সামগ্রীকে দুবার থেকে তিনবার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় কর দিতে হচ্ছে (মুঘল শাসনব্যস্থা—ইং যদুনাথ সরকার)। এমনও দেখা গেছে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা পণ্য সংগ্রহ করছে দ্বিগুণেরও বেশি মূল্য দিয়ে। আওরঙজেবের ২০শে নভেম্বরের ফরমান বা নির্দেশনামা থেকে জানা যায় গুজরাটের রাজকর্মচারীরা তাদের নিজস্ব জমির উৎপন্ন দ্রব্য ব্যবসায়ীদের দ্বিগুণেরও বেশি দাম দিয়ে গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। মুতাসাদিস (কর সংগ্রাহক) শেঠ ও দেশাই অনেক পরগণায় শস্য উঠবার সঙ্গে সঙ্গে ভয় দেখিয়ে চাষীদের কাছ থেকে তা অল্প দামে সংগ্রহ করত। তার উপর পােকায় কাটা খারাপ শস্যও ভাল শস্যের দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করত। ফলে গুজরাটের শস্যের দাম খুব চড়া ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা, বিস্তৃত সাম্রাজ্য ও মুদ্রার প্রচলন ভারতীয় মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের সামনে যে স্বর্ণদিগন্ত উন্মােচিত করে দিয়েছিল, তা কার্যকালে স্বর্ণমরীচিকা হয়েই রয়ে গেল। আওরঙ্গজেবের অনুদার ও সংকীর্ণ নীতি সমগ্র সাম্রাজ্যকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলার উপক্রম করল। আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত সম্রাট দেশীয় বণিক বা বাণিজ্যের উন্নতির দিকে কোন দৃষ্টি দেন নি। সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযােগ নিয়ে বিদেশী বণিকেরা পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে ঘাঁটি গেড়ে বসল। দেশীয় বণিকদের স্বার্থ বিরােধী ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করার কোন চেষ্টাই সম্রাট করতে পারেন নি। সুরাট বন্দর অবরােধ করে যখন ওলন্দাজরা সেখানকার ব্যবসার সর্বনাশ করে ফেলবার উপক্রম করল তখন সম্রাট তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে উৎকোচের সাহায্যে তাদের তুষ্টি বিধানের চেষ্টা করেছিলেন। দেশীয় মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের গড়পড়তা আয় খুব একটা বিরাট কিছু ছিল না। পর্যটক ডেলাভেলি তার বিবরণীতে সুরাটের এক ধনী বণিকের কথা উল্লেখ করেছেন। যিনি এক সময় একটা বিরাট জলাধার নির্মাণ করেছিলেন কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে তারই কন্যার পরে একটা রুটি কিনবার সংস্থানও ছিল না।
মুঘল যুগে ইরান নিকট এবং দূর প্রাচ্য ও ইউরােপের সাথে ভারতের বহির্বানিজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রসার লক্ষ্য করে অনেকে মনে করেন এ সময়ে অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যও যথেষ্ট বৃদ্ধি লাভ করেছিল। যৌক্তিকতার ভিত্তির উপর এই অনুমান প্রতিষ্ঠিত হলেও একথা নিশ্চিতভাবে ভুল হবে যে এই অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের ফলে এদেশের বণিকেরা লাভবান হয়েছিলেন। বিদেশী পর্যটকদের বিবরণী তন্নতন্ন করে খুঁজলে হয়ত কিছু সংখ্যক ধনী বণিকের সন্ধান মিলতে পারে, কিন্তু তা নিতান্ত ব্যতিক্রম। দেশীয় বণিকদের সমৃদ্ধির পিছনে যে রাষ্ট্রিক সহযােগিতার প্রয়ােজন থাকে তা মুঘল আমলে ছিল না। আকবরের আমলেরও পূর্ব থেকে বাঙ্গলায় (প্রায় ১৫৩৭ সাল থেকে) পর্তুগীজরা বাণিজ্যের পণ্য নিয়ে আসতে আরম্ভ করেছিল এবং আকবরের সময়ে তাে বাঙ্গলার নদীবহনকারী বাণিজ্যকে তারা একচেটিয়াতে পরিণত করেছিল। পর্যটক রালফ ফিচ ১৫৮৮ সালে লক্ষ্য করেছিলেন সমগ্র হুগলী শহরটা পর্তুগীজদের অধীনে চলে গেছিল। আইন-ই-আকবরি থেকে জানা যায় যে ১৫৯৭ সালের মধ্যে সপ্তগ্রাম ও পর্তুগীজ শাসনভুক্ত হয়েছিল।
প্রতিযােগিতায় দেশীয় বণিকরা পিছু হটতে লাগল। জলদস্যুদের দাপটে সাধারণ মানুষ ও বণিকদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ম্যানুচির (Manucci) মতে পর্তুগীজরা অত্যাচারের দিক থেকে অন্যায়ের শেষ সীমায় পৌঁছেছিল। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিদেশে যে কার্পেটের ব্যবসা করতেন ১৬২১ সাল থেকে পর্তুগীজদের জোর জবরদস্তিতে তা বন্ধ হয়ে গেল।
শুধু পর্তুগীজ কেন—ইংরাজসহ বিভিন্ন ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি উপকূল বাণিজ্যে মুঘলদের প্রায় কোনাে তােয়াক্কা করেনি। বস্তুত সামন্ততান্ত্রিক মুঘল রাজত্বে কৃষক, শ্রমিকসহ মধ্যবিত্তদের স্বার্থরক্ষা শাসকবর্গের দায়িত্বের মধ্যে ছিল না। তাদের যা কিছু। দায়িত্ব তা কেবল অভিজাত ও ভূস্বামীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।