লিখেছেনঃ ফাদলুর রাহমান মহম্মদ ইসলাম গনী
অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনা হইতে বর্তমানকাল পর্যন্ত ইসলামের পূনর্জাগরণ এবং রাজনৈতিক সচেতনতার ক্ষেত্রে আরব জগতে আল ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর অবদান সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য। হাসানুল বান্না (রহঃ) ছিলেন উহার প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৬ খৃ. মিসরের একটি ছােট্ট শহর মাহমূদিয়্যা-তে তাঁহার জন্ম। তাঁহার বাল্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইসলামী পরিবেশে হয়। কায়রাের এক শিক্ষা কেন্দ্র দারুল-উলুম হইতে তিনি ১৯২৭ খৃ. সমাপনী সনদ লাভ করেন। ইসলামী শিক্ষা তাসাওউফ এবং জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণা তাহার চরিত্র ও কর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষালাভের পর ১৯২৭ খৃ. তিনি ইসমাঈলিয়ার এক সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যােগদান করেন। ইসমাঈলিয়্যা ছিল ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র। হাসান বান্না পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের রাজনৈতিক এবং আর্থিক প্রতিপত্তি অর্জন এবং তাহাদের অত্যাচার ও নিপীড়ন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা এইখান হইতেই লাভ করেন।
আন্দোলনের ইতিহাস
মার্চ ১৯২৯ খৃ. হাসানুল বান্না ইসমাঈলিয়্যাতে জামইয়াতুল-ইওয়ান আল-মুসলিমন নামে এই আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে উহার প্রতিষ্ঠার ঘােষণা ১১ এপ্রিল, ১৯২৯ খৃ. করা হয়। ১৯৩৩ খৃ. হাসানুল বান্না কায়রােতে বদলী হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের শাখা বিভিন্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল এবং ইসমাঈলিয়্যা ছিল উহার কেন্দ্র।
কায়রােতে এই আন্দোলন সংগঠন ও বিস্তৃতির ক্ষেত্রে এক নব পর্যায়ে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে এই সংগঠন কেবল মিসরেই নহে, বরং অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করে। এই সময় আন্দোলন এতই শক্তিশালী হইয়া উঠে যে, ইহার পক্ষ হইতে বেশ কিছু সামাজিক সংস্কারের দাবী-দাওয়া সরকারের নিকট পেশ করা হয়।
১৯৩৬ খৃ. ফিলিস্তীন সমস্যা দেখা দিলে আল-ইখওয়ান সম্ভাব্য সকল উপায়ে আরবদের সহযােগিতা করে। এই আন্দোলন ছিল তীব্র বৃটিশ-বিরােধী এবং এই বিরােধিতা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আরব ও ফিলিস্তীন-এর স্বার্থের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের কারণে ইখওয়ানুল মুসলিমীন আরব বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৩৮ খৃ. পর্যন্ত এই আন্দোলনের ভিত্তি সূদৃঢ় হইয়া উঠে। ১৯৩৯ খৃ. দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রারম্ভ হইতেই ইখওয়ানুল মুসলিমীন রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, আর্থিক, সামাজিক এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করে। ফলে বহু বুদ্ধিজীবী এবং সমাজের নিম্নশ্রেণির সহিত সম্পর্কযুক্ত অনেক লােক ইহার সদস্য হন। বিশ্বযুদ্ধের সুময় (১৯৩৯-১৯৪৫ খৃ.) মিসরের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল তখন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলিমীন এর আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। যুদ্ধকালীন মন্ত্রী পরিষদের রদবদল ইংরেজ প্রভুদের ইঙ্গিতে এবং তাহাদের স্বার্থে হইতে থাকে। ফলে উক্ত মন্ত্রী পরিষদের সহিত আল-ইখওয়ান-এর সম্পর্ক খুবই খারাপ হইয়া পড়ে।
যুদ্ধ সমাপ্তির পর ইসমাঈল সিদকী-র মন্ত্রীত্বকালে (ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর ১৯৪৬) ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলিমীন এর বিক্ষোভ এবং তৎপরতা আরও তীব্রতর হয়। অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসহযােগিতার আহবান জানান হয়, ইহাতে ইংরেজগণ শর্তহীনভাবে মিসর ত্যাগে বাধ্য হয়। ইখওয়ানুল মুসলিমীন মিসর সরকারের নিকট এই মর্মে দাবি পেশ করে যে, ইংরেজদের সহিত সংলাপ পরিত্যাগ করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘােষণা করা হউক। ১৯৪৮ খৃ. সংঘটিত ফিলিস্তীন যুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলিমীন আরব লীগ-এর পতাকাতলে সমবেত হইয়া অসাধারণ সাহসিকতা প্রদর্শন করে। তাহাদের বহু সংখ্যক সদস্য যুদ্ধে শহীদ হন। ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর পুনরায় জিহাদ ঘােষণার দাবীর প্রেক্ষিতে মাহমুদ ফাহমী আল-নুক রাশী (ডিসেম্বর ১৯৪৬১৯৪৮ খৃ.) ফিলিস্তীন যুদ্ধ হইতে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযােগ লাভ করিয়া ইংরেজদের খুশী করিবার এবং নিজ ক্ষমতা টিকাইয়া রাখিবার উদ্দেশ্য ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ খৃ. ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর উপর বিধি-নিষেধ আরােপ করিয়া উহাকে বে-আইনী ঘােষণা করেন। বিশ দিন পর আন- নুশীকে হত্যা করা হয়, এই হত্যার জন্য আল-ইখওয়ানকে দায়ী করা হয় এবং প্রতিশােধ হিসাবে ১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৪৯ খৃ. হাসানুল বান্নাকে হত্যা করা হয়। এই সময় যে অবস্থা বিরাজ করিতেছিল উহার প্রেক্ষিতে এই হত্যার পশ্চাতে সরকারের ইঙ্গিত ছিল বলিয়া মনে হয়। সরকার এই আন্দোলনকে নস্যাত করিবার সকল চেষ্টা করেন। ১২ জানুয়ারী ১৯৫০ খৃ. না হাস পাশার সরকার ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর উপর হইতে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করিতে আরম্ভ করেন এবং ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৫১ খৃ. কেন্দ্রীয় অফিস ও প্রেসভবন সহ ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর কিছু সম্পত্তি প্রতাপর্ণ করা হয়। অতঃপর ইখওয়ানুল মুসলিমীন অক্টোবর, ১৯৫১ খৃস্টাব্দের স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ণভাবে অংশ নেন। এই সময় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইখওয়ানুল মুসলিমীন কিছুটা সতর্কতামূলক কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করে। তাহাদের লেখকগণ ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক রচনা করেন। ফলে এই যুগ তাঁহাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করিয়া আছে। তাঁহাদের মতাদর্শের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে এই যুগের প্রচার ছিল সুদূরপ্রসারী।
হাসানুল-বান্না নিহত হইবার পর হইতে ১৯৫০ খৃ. পর্যন্ত আন্দোলন পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব আহমাদ হাসান আল-বাকুরীর হাতে থাকে। অতঃপর ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর সাধারণ পরিষদ দাওয়া বিভাগের প্রধান সালিহ আল-আশমাবীর উপর আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে, যিনি সংগঠনের সহকারী মহা পরিচালক ছিলেন এবং হাসানুল বান্নার অবর্তমানে তাহার দায়িত্ব পালন করিতেন। অপ্রত্যাশিতভাবে সাধারণ পরিষদ বহির্ভূত জনৈক হাসান আল-হদায়বী ১৭ অক্টোবর, ১৯৫১ খৃ. মহাপরিচালক মনােনীত হন। হাসান আল-হদায়বী ১৯৪২ খৃ. আল-ইখওয়ান-এর সংস্পর্শে আসেন। এবং হাসানুল-বান্নার সহিত প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। আল-হদায়বী ১৯১৫ খৃ. আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করিয়া ১৯২৪. খৃ. পর্যন্ত আইন ব্যবসা করেন। এই বৎসরেই তিনি মিসরীয় আইন বিভাগের বিচারক নিযুক্ত হন এবং সাতাশ বৎসর যাবত এই পদে কাজ করেন এবং উচ্চ আদালতের (Supreme court) উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। তথাপি আল-হদায়বীর ব্যক্তিত্ব তেমন আকর্ষণীয় ছিল না, যাহা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠার বৈশিষ্ট্য ছিল। তাহার মনােনয়ন ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর মধ্যে মতবিরােধের সৃষ্টি করে এবং এই মতবিরােধের ফলে যদিও কোন প্রতিপক্ষ দলের সৃষ্টি হয় নাই, তবুও ইহার কিছু প্রতিক্রিয়া যে দেখা দেয় নাই, তাহা নহে।
বাদশাহ ফারুক প্রথম হইতে এই আন্দোলন এবং হাসানুল-বান্না সম্পর্কে ভীষণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন। তিনি ইংরেজদের ইঙ্গিতে ইখওয়ানুল মুসলিমীন বিপ্লবপ্রিয় সামরিক অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করিবার ইচ্ছা করেন, কিন্তু ইহা ফলপ্রসু হয় নাই। কেননা প্রারম্ভেই ইখওয়ানুল মুসলিমীন বিপ্লবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে এবং সামরিক অফিসারদের সহিত মিলিত হইয়া উভয়েই শত্রু বাদশাহ ফারূক-এর হাত হইতে মুক্তি লাভ করে। বাদশাহ ফারুকের অভিযােগ ছিল, তাহার বিতাড়নকারী প্রকৃতপক্ষে ইখওয়ানুল মুসলিমীন ছিল, তাহারই সামরিক অফিসারদিগকে তাঁহার বিরুদ্ধে ব্যবহার করিয়াছিল।
সামরিক অফিসারদের সহিত ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর যােগসূত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকেই (১৯৪০ খৃ.) প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। হাসানুল-বান্না তাঁহার এই দাওয়াত সামরিক অফিসারদের মধ্যে বিস্তারের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং বিভিন্ন উপায়ে ইহাতে সফলকাম হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আল-ইখওয়ান-এর প্রভাব সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৮ খৃ. ফিলিস্তীন যুদ্ধে আল-ইখওয়ান এবং সামরিক অফিসারগণ কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া, লড়াই করেন। আল-ইখওয়ান-এর বীরত্ব এবং আন্তরিকতা উক্ত অফিসারবৃন্দকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। স্বয়ং জামাল আবদুন-নাসি-এর উপর আল-ইখওয়ান-এর প্রতি সহানুভূতির অভিযােগ ছিল। ১৯৫২-৫৩ খৃস্টাব্দের সুয়েজ যুদ্ধে আল-ইখওয়ান-এর আর একবার বীরত্ব প্রদর্শনের সুযােগ আসে। এইভাবে উভয়ই একে অন্যের অধিক নিকটবর্তী হয়। ১৯৪৮ খৃ. সংগঠনকে অবৈধ ঘােষণা করিবার পরেও উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। কিন্তু উক্ত সম্পর্কের পাশাপাশি ইহাও সত্য যে, এমন সামরিক অফিসারের সংখ্যাও কম ছিল না যাহারা নিজেদের কর্মপদ্ধতি, আল-ইখওয়্যান হইতে মুক্ত রাখিয়া নির্ধারণ করিতে ইচ্ছুক ছিলেন। ইহা ছাড়া তাঁহাদের মধ্য হইতে কিছু লােক আল-ইখওয়ান-এর নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও পাশ্চাত্য ভাবধারার প্রভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ঝুঁকিয়া পড়িয়াছিলেন। ( ২৩ জুলাই, ১৯৫২ খৃস্টাব্দের বিপ্লব সাধিত হয়। বিপ্লবী পরিষদ যেহেতু আল ইখওয়ান-এর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, সুতরাং হাসানুল-বান্নার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারগণ তাঁহার স্মৃতির প্রতি সম্মান নিবেদন করেন। প্রথম দিকে উভয়ের মধ্যে এমন সৌহার্দ্য ছিল যে, বিপ্লবী পরিষদকে আল-ইওয়ান এর হাতিয়ার বলিয়া মনে করা হইত। নুতন মিসরের নেতৃত্ব ও নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে ধীরে ধীরে উভয়ের মধ্যে বিরােধের পাহাড় গড়িয়া উঠে। আল-ইখওয়ান ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামী রূপরেখার উপর সরকার পরিচালনা করিতে চাহিতেন কিন্তু বিপ্লবী পরিষদের অনেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দিতেন। আল-ইখওয়ান-এর এই প্রস্তাব—শারীআতে যাহা নিষিদ্ধ তাহা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হউক অথবা বিকল্প প্রস্তাব আইন প্রণয়ন তাঁহাদের তত্ত্বাবধানে হউক—প্রত্যাখ্যাত হয়। আল ইখওয়ান সুয়েজ খাল সম্পর্কে ইংরেজ ও মিসরের সংলাপের ঘাের বিরােধী ছিল। তাঁহারা সুয়েজ খাল হইতে ইংরেজদের শর্তহীন প্রস্থানের দাবীদার ছিল এবং এই খালকে আন্তর্জাতিক নৌ-পথ হিসাবে স্বীকৃতি এবং উহা ইংরেজদের নিকট প্রত্যর্পণের ঘাের বিরােধী ছিল। ২৮ মার্চ, ১৯৫৪ খৃ. জামাল আবদুন-নাসির সামরিক সরকারের প্রধান হিসাবে ক্ষমতায় আসেন এবং ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ খৃ. (বহিরাগতদের) সুয়েজ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তিতে ইংরেজ ও মিসর সরকারের স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। এখন সরকার এবং আল-ইখওয়ান-এর বিবাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। ২৬ অক্টোবর ১৯৫৪ খৃ. এক ব্যক্তি জামাল আবদুন-নাসির-এর জীবন নাশের ব্যর্থ চেষ্টা করে। তাহাকে আল-ইখওয়ান-এর দলভুক্ত বলিয়া চিহ্নিত করা হয় এবং আন্দোলনকে বে-আইনী ঘােষণা করা হয়। ব্যাপক হারে ধরপাকড় করা হয়। ছয়জন ইখওয়ান সদস্যকে, যাঁহাদের মধ্যে কিছু উচ্চ পর্যায়ের চিন্তাশীল এবং শীর্ষস্থানীয় আলিম ব্যক্তি ছিলেন, ফাঁসি প্রদান করা হয়, তিন শত ব্যক্তিকে দীর্ঘ মেয়াদী সশ্রম কারাদণ্ডে, দণ্ডিত করা হয় এবং দশ হাজারের অধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রকারের সাজা দেওয়া হয়। ফলে বিপ্লবী সরকারের সহিত আল-ইখওয়ান-এর সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং অল্প বিধি নিষেধের পর হইতে ইহা গােপন আন্দোলনে পরিণত হয়। তবে ইহাও সত্য যে, বিপ্লবের পথ “আল-ইখওয়্যানই” সুগম করিয়াছিল।
গুরত্বপূর্ণ মতবাদসমূহ
ফরাসী আক্রমণের পরে মিসরের নৈতিক ও বস্তুবাদী চিন্তাধারা গঠনে পাশ্চাত্য আদর্শই সর্বাধিক কার্যকরী প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হইয়াছিল। পাশ্চাত্য প্রীতির মূল প্রেরণা মৌলিকভাবে “আল-ইখওয়্যান”-এর আদর্শের পরিপন্থী ছিল। পাশ্চাত্যপ্রীতির প্রথম উদ্দেশ্য হইল সামাজিক জীবনের সকল কর্মকাণ্ড হইতে দীনকে সমূলে উৎপাটন করা এবং নাস্তিকতা, জড়বাদ, বস্তুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অদৃশ্যে অস্বীকৃতি প্রভৃতি চিন্তাধারা ও আদর্শের প্রতি মুসলমানদের আকৃষ্ট করা। সুতরাং তাঁহাদের নিকট পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ও সামরিক হামলা অপেক্ষা এই আদর্শিক হামলা অধিক ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী ছিল যাহা মুসলিমদের মধ্যে হীনম্মন্যতার জন্ম দেয়, এবং আপন ধর্ম ও জাতির মূল আদর্শের প্রতি ঘৃণা পােষণ করিতে শিক্ষা দেয়। অবশ্য “আল-ইখওয়ান” প্রযুক্তিবিদ্যা এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি হইতে সর্বাধিক সুযোেগ গ্রহণের পক্ষপাতী ছিল। – পাশ্চাত্যের উল্লেখযােগ্য আদর্শ হইল “জাতীয়তাবাদ” আল-ইখওয়ান-এর নিকট জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে পশ্চিমা ধারণা—যাহার ভিত্তি হইল ভাষা, অঞ্চল, বংশ কিংবা সংস্কৃতি—উহা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক এবং অগ্রহণযােগ্য। উহার উন্নতি ইসলামের অবনতি। জাতীয়তাবাদের পশ্চিমা মত গ্রহণের ফলে এই দাঁড়াইয়াছে যে, ইসলামী ঐক্য বিনষ্ট হইয়াছে এবং খৃস্টান ও যাহূদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ মুসলমানদেরকে পদানত করিয়াছে। তাহাদের মতে জাতীয়তাবাদের আদর্শ গ্রহণ করিবার অর্থ হইল। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত শক্তিশালী করা। এই কারণেই তাঁহারা জাতীয়তাবাদকে “নব্য জাহিলিয়্যা” নামে অভিহিত করে।
‘আল-ইখওয়ান’-এর নিকট একমাত্র ইসলামই দীনী এবং পার্থিব ক্ষেত্রে মুসলমানদের ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে সঠিক পথনির্দেশ করিতে সমর্থ। তাঁহাদের নিকট ইসলাম কেবল আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নহে। বরং উহা একই সঙ্গে ঈমান ও ইবাদাত, দেশ ও জাতি, মাযহাব ও রাষ্ট্র আধ্যাত্মিকতা ও কর্মজীবন, কুরআন ও তরবারী সব কিছুকেই শামিল করে। ইসলাম এমন চিরস্থায়ী বিশ্বজনীন মত ও পথের সমষ্টির নাম, যাহা ভাষা এবং স্থানের বন্ধন হইতে মুক্ত এবং বংশ, বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সকলের জন্য গ্রহণযােগ্য। ইসলামের এই উদার ও ব্যাপক চিন্তাধারার ফলে তাঁহারা ধর্মকে রাজনীতি হইতে পৃথক করিবার ঘাের বিরােধী। এই পৃথকীকরণ নিঃসন্দেহে এক বিজাতীয় ধারণ যাহা খৃস্টান প্রচারক, প্রাচ্যবিদ, পাশ্চাত্য প্রভাবিত রাজনীতিবিদ এবং – পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করে। ইসলামকে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনা হইতে পৃথক রাখিবার অর্থ ‘আলইখওয়ান’-এর দৃষ্টিতে ইসলামকে শ্বাসরােধ করিয়া হত্যা করার শামিল।
ইসলামের আদর্শ সর্বকালের এবং সর্বজনীন। মানব সমাজ পরিবর্তনশীল হওয়ার দরুন আল-ইখওয়ান ইজতিহাদ, অনুশীলনের উপর বিশেষভাবে জোর দেন। ফিকহশাস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডারকে তাঁহারা সেই অব্যাহত প্রচেষ্টার সুফল বলিয়া অভিহিত করেন, যাহা প্রয়ােজনসমূহ ও সমস্যাবলীর প্রেক্ষিতে ইসলাম হইতে নির্দেশনা লাভের জন্য প্রণয়ন করা হইয়াছে। তাহারা এই ভাণ্ডারকে অত্যন্ত সম্মানজক এবং মূল্যবান। বলিয়া গণ্য করেন, তবে কুরআন ও সুন্নাতকে চূড়ান্ত দলীল হিসাবে গ্রহণ করিয়া থাকেন, কিন্তু কুরআন ও সুন্নাতের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আবশ্যক হইল যে, উহা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাহার সাহাবীগণের ব্যাখ্যা মুতাবিক হইবে।
আল-ইখওয়ান-এর দৃষ্টিতেও রাষ্ট্রনীতি ইসলামের পূর্ণ দেহের এমন এক অপরিহার্য অঙ্গ, যাহাকে উহার চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হইতে কোন অবস্থাতেই পৃথক করা যায় না। তাঁহারা রাষ্ট্রনীতিকে ইসলামের অন্যতম রুক্ন বলিয়া অভিহিত করেন এবং বলেন যে, উহা ইসলামের মৌলিক নীতি ও আকীদার মর্যাদা রাখে। তাহাদের নিকট ইসলামের রাজনৈতিক পদ্ধতি আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের আদর্শের উপর ভিত্তিশীল। এই হিসাবে মানুষের মর্যাদা আল্লাহর বান্দা এবং তাহার প্রতিনিধি। এইভাবে মানুষ কেবল এক সীমাবদ্ধ প্রতিনিধিত্বশীল ক্ষমতার অধিকারী। তাহাদের নিকট ইসলামের শাসন পদ্ধতি ঈশ্বরতন্ত্র (Theocracy), গণতন্ত্র, একনায়কত্ব এবং রাজতন্ত্র এই সকল হইতে, মৌলিকভাবে পৃথক, খলীফা নির্বাচন সরাসরি কিংবা পরামর্শ সভার মাধ্যমে উভয় পদ্ধতিতে হইতে পারে। খলীফার আনুগত্য করা কেবল তখনই অপরিহার্য যখন তিনি শারীআতের বিধিবিধান অনুসরণ এবং উহা প্রয়ােগ করিবেন। শারীআতের বিধি-বিধানের প্রকাশ্য বিরােধিতা করিলে আনুগত্যের বাধা-বাধকতা থাকে না।
আল-ইখওয়ানের নিকট পরামর্শ সভা হইল ইসলামী রাজনৈতিক পদ্ধতির ভিত্তি। পরামর্শ সভার সদস্যগণ অবশ্যই শারীআত বিষয়ে বিজ্ঞ, আল্লাহভীরু ও যােগ্যতার অধিকারী এবং যুগের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হইবেন। ইসলামী রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হইল শারীআতের বিধি-বিধান প্রয়ােগ করা। তাহাদের নিকট শারীআত, সেই সকল নীতি ও আদর্শের সমষ্টি, যাহা আল্লাহ্ কুরআনরূপে মানুষের হিদায়তের জন্য মুহাম্মাদ (সাঃ) -এর নিকট প্রেরণ করেন যিনি উহার ব্যাখ্যাবিশ্লেষণকারীও বটে। ইহা পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং ইহা মানব-জবীনকে এক অবিভাজ্য সত্তা গণ্য করিয়া প্রয়ােগ করা হয়। আল্লাহর অবতীর্ণ এই বিধান—ফৌজদারী বা দীওয়ানী কিংবা ব্যক্তিগত সকল বিষয়ে মানুষের নিকট :ইতে শর্তহীন আনুগত্যের দাবী করে। বিধান রচনার অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহরই আছে, এই ক্ষেত্রে এর মর্যাদা হইল উক্ত বিধান আনয়ণকারী, প্রয়ােগকারী এবং উহার ব্যাখ্যা প্রদানকারী হিসাবে। কিন্তু উহার অর্থ আল-ইখওয়ান-এর নিকট হই নহে যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মূলত আইন প্রণয়নের কোন অবকাশ নেই। তাহারা বলেন যে, শারীআত আমাদেরকে ব্যাপক নীতিমালা প্রদান করিয়াছে, সকল স্থান ও ক্ষেত্রের জন্য বিস্তারিত বিধান প্রদান করে নাই, বিশেষভাবে স্থান-কাল ভেদে প্রভাবিত হয় এখন সব ব্যাপারকে। ফলে মুসলিম জাতির জন্য আইন রচনার অধিকার এবং ইজতিহাদ চর্চার ক্ষেত্র খুবই প্রশস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই বিধি-নিষেধ অবশ্যই থাকিবে যে, উহা ইসলামের মৌলিক নীতিমালার সহিত সংঘর্ষশীল হইবে না এবং কুরআনের নির্দেশাবলীর সহিত সামঞ্জস্যশীল হইবে, শারীআতের বিধি-বিধানের ক্ষতিসাধনকারী সকল আইনকানুন বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
ইখওয়ানুল মুসলিমীন -এর নিকট অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্থিতিশীলতা বাতিরেক রাজনৈতিক মুক্তি অর্থহীন। তাঁহাদের বক্তব্য ছিল যে, খাদ্য সমস্যা হইল মৌলিক গুরুত্বের দাবীদার, কিন্তু তাঁহাদের নিকট মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সমস্যার সমাধান পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র কিংবা সমষ্টিবাদ নহে। এই সকল ব্যবস্থা তাহাদের দৃষ্টিতে ইসলামের মূল সুরের সহিত সংঘর্ষশীল এবং মুসলমানদের নিজস্ব সমস্যাবলীর সমাধানে অসমর্থ। কেবল সঠিক ইসলামী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই মুসলমানদের সমস্যাবলীর সমাধান করিতে পারে। তাহাদের নিকট অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামের উদ্দেশ্য হইল। সামাজিক কল্যাণ সাধন। উহা অর্জনের লক্ষ্যে ইসলাম একদিকে যেমন আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া থাকে যাহাতে এক সুষ্ঠু সমাজ গঠিত হইতে ও প্রতিষ্ঠিত থাকিতে পারে এবং সমাজের চরিত্র একটি নির্দষ্ট স্তরের নিম্নে পতিত না হইতে পারে, অপরদিকে তেমনি বক্তৃতা ও উপদেশ, প্রচার ও ঘােষণা এবং চরিত্র-গঠনমূলক শিক্ষাকে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে, যাহাতে মানুষ পশুর পর্যায় অতিক্রম করিয়া এক উন্নত নৈতিক চরিত্রের জীবনযাপনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হইতে পারে। আল-ইখওয়ান-এর নিকট ইসলাম ব্যক্তিগত মালিকানাকে বৈধ বুলিয়া স্বীকৃতি দিয়া থাকে কিন্তু কেবল এই পর্যন্ত, যাহাতে সামাজিক কল্যাণের সহিত উহার সংঘাত না হয়। আল-ইখওয়ানই হইল প্রথম দল, যাঁহারা মালিকানার সীমা নির্ধারণের দাবী জানান। তাহার ইহাও বলেন যে, ইসলাম জোর ও অন্যায়ের ভিত্তিতে জন্মগত অধিকার বিরােধী কৃত্রিম অথনৈতিক সমতার কথা বলে না। ইসলাম যেমন মানব। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বিলুপ্তি ঘটায় না তেমনই শ্রেণি-বৈষম্য ও ইহার ফলে সৃষ্ট শ্রেণি বিদ্বেষেব অবসান ঘটাইতে চাহে। ইহা উচ্চ এবং নিম্ন শ্রেণিসমূহের পার্থক্য যথাসম্ভব কমাইয়া এমন পারস্পরিক সম্পকের উৎসাহ প্রদান করিতে চাহে যাহার ভিত্তি হইবে সৌহার্দ্য এবং পারস্পরিক সহযােগিতার প্রেরণার উপর। সুতরাং ইসলাম (মন্দ উদ্দেশ্যে) সম্পদ সঞ্চয় ও সম্পদ ব্যক্তিগতকরণ এবং উহার প্রদর্শন অবৈধ বলিয়া থাকে। ইসলাম জাতীয় সম্পদে দরিদ্রদের নির্দিষ্ট অধিকার স্বীকার করে এবং শােষণের সকল পথ রুদ্ধ করত শােষণ ও সম্পদ কুক্ষিগত করিবার প্রধান পন্থা সুদকে দ্বার্থহীন ভাষায় চিরতরে অবৈধ করিয়া দিয়াছে। এই কারণেই আল-ইখওয়ান-এর বক্তব্য হইল, ব্যাংকসমূহের বর্তমান পদ্ধতিকে—যাহার মেরুদণ্ড হইল সুদ—বিলুপ্তি ঘটাইয়া লাভ-লােকসানের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। তাঁহাদের নিকট ইসলামী রাষ্ট্র সকল অধিবাসীর সামাজিক দায়িত্ব কোনরূপ পার্থক্য ছাড়াই গ্রহণ করিয়া থাকে, অর্থনৈতিক এবং প্রাকৃতিক উৎসসমূহের অনুসন্ধান অপরিহার্য বলিয়া গণ্য করিয়া থাকে। আল-ইখওয়ান শিল্পসমূহের বিস্তারের উপর জোর দেয়। তাহারা দাবী করেন যে, সকল কোম্পানিকে জাতীয়করণ করা হউক, এমন কি ন্যাশনাল ব্যাংককেও—যাহা বিজাতির শােষণের সবচেয়ে বড় উৎস।
আল-ইওয়ান-এর দৃষ্টিতে সামাজিক সংস্কার মৌলিক গুরুত্বের দাবী রাখে। ইসলামী সমাজ হইল উহার চূড়ান্ত লক্ষ্য। সামাজিক সংস্কারের জন্য অপরিহার্য হইল সকল মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের ঘােষণা প্রদান করিতে হইবে। নারী-পুরুষ উভয়ের উন্নতির পথ উন্মুক্ত করিতে হইবে এবং মানুষের সাধারণ অধিকারসমূহের ব্যাপারে তাহাদের পারস্পরিক সাম্য ও দায়িত্বের কথা প্রচার করিতে হইবে। প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনধারণ, মালিকানা, কর্ম, স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা এবং শিক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান। করিতে হইবে। তাহার যাবতীয় বৈধ চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমূহের সমন্বয় ঘটাইতে হইবে। অপরাধ রােধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইব। সেই সাথে সরকার স্বীয় নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সাবিক চেষ্টা চালাইবে। সামাজিক সংস্কার ও পুনর্গঠনকে ক্রম অনুসারে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হইয়াছে : (১) মুসলিম ব্যক্তি (২) মুসলিম বংশ (৩) মুসলিম সরকার। ইহাদের প্রতিটি স্তর পূর্ববর্তী স্তরের সংস্কার ও পুনর্গঠনের মুখাপেক্ষী এবং সকলের ভিত্তি হইল ব্যক্তি। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তির সংশােধন হইবে না ততক্ষণ কোন কিছুরই সংস্কার হইতে পারে না।
এই সংস্কারের শেষ লক্ষ্য হইল রাষ্ট্রের সংশােধন, যাহার পরই পূর্ণ ইসলামী ব্যবস্থা তাহার যাবতীয় কল্যাণসমূহ বিস্তার লাভ করিতে পারে।
বাস্তব পদক্ষেপ
আল-ইখওয়ান-এর উক্ত দৃষ্টিভঙ্গি তাহাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে দেশের রাজনৈতিক, আর্থিক, সামাজিক, তামান্দুনিক, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত ময়দানে অংশগ্রহণ এবং উহাকে উন্নত করিবার জন্য চেষ্টা করিতে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যথায় তৎকালে দেশের সকল দলের দৃষ্টি কেবল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। এই কাজের প্রকৃতি সংক্ষেপে নিম্নরূপ ছিল :
সমাজকল্যাণমূলক কাজ
কায়রােতে আল-ইখওয়ান এর কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যাহার কাজ ছিল গরীব এবং অভাবীদের সাহায্য প্রদান (স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহসহ), বেকারদের জন্য কাজের সংস্থানের প্রচেষ্টা, অভাবীদের স্বল্প পুঁজি ঋণ হিসাবে প্রদানের ব্যবস্থা, রােগীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যরক্ষার পদ্ধতিসমূহের প্রচার। ১৯৪৫ খৃ. ইহা একটি পৃথক বিভাগের মর্যাদা লাভ করে এবং উহার নাম জামাআত আকসামিল-বিব ওয়াল খিদমাতিল ইজতিমাইয়্যা লিল-ইখওয়ানিল-মুসলেমীন রাখা হয়। অর্থাৎ ইওয়ান-এর সমাজকল্যাণ বাের্ড। এই আন্দোলন প্রথমবার নিষিদ্ধ ঘােষিত হওয়ার পূর্বে সমাজ কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রেজিস্ট্রেশনাধীন এই সংস্থার পাঁচশত শাখা কাজ করিতেছিল। আল-ইখওয়ান-এর প্রধান কেন্দ্রের অধীনত্ব বিভাগগুলিও জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ গ্রহণ করিত। যেমন শ্রম বিভাগের কাজ ছিল কল-কারখানার অবস্থা পর্যবেক্ষণ, শ্রমিকদের সম্পর্কে প্রণীত আইন-কানুনের ব্যাখ্যা ও সমালােচনা, শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য প্রচেষ্টা চালান, পারস্পরিক সহযােগিতার পরিকল্পনাসমূহে সকলের অংশ গ্রহণের প্রতি উৎসাহ দান ইত্যাদি। এমনিভাবে কৃষি বিশেষজ্ঞ বিভাগের কাজ ছিল কৃষির আধুনিক পদ্ধতিসমূহের প্রচলন এবং কৃষিশিল্পের পরিকল্পনা তৈরি, যেমন পশুর বংশ বৃদ্ধি, উন্নতমানের বীজের ব্যবহার, দুধ হইতে, প্রস্তুত বিভিন্ন বস্তু, ইহা ছাড়া তরি-তরকারি প্রভৃতি সংরক্ষণ ইত্যাদি। পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ বিভাগ এইরূপ ব্যবহারিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তাবাবলী পেশ করিত, এইরূপ বিভাগসমূহ স্থাপন করিত, যেইগুলি সামাজিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সহযােগিতা করিত, পারস্পরিক সাহায্যের ভিত্তিতে প্রণীত সামাজিক নিরাপত্তামূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করিত এবং সমবায় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করিত।
শরীরচর্চা
ব্যায়াম ও শরীর চর্চা আল-ইখওয়ান-এর অপরিহার্য কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংগঠনকে প্রথমবার নিষিদ্ধ ঘােষণার পূর্বে তাহাদের বড় বড় স্পাের্টস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত ছিল, যাহার ক্রীড়া প্রতিযােগিতা মিসরের বড় বড় শহরে অনুষ্ঠিত হইত। সারা দেশে আল-ইখওয়ান-এর নিরানব্বইটি ফুটবলের, বত্রিশটি বাস্কেটবলের, আটাশটি টেবিল টেনিসের, উনিশটি ভারােত্তলনের, ষােলটি মুষ্টি যুদ্ধের, নয়টি নৌকা চালনার এবং আটটি সাঁতারের টিম ছিল। নিষিদ্ধ ঘােষিত হওয়ার পর এই বিভাগে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়, তবুও ১৯৫২ খৃ. যে দুইটি গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয় উহাতে বহু সংখ্যক কর্মী অংশ গ্রহণ করে।
হাসানুল-বান্না ১৯৩৮ খৃ. মিসরীয় সরকারী স্কাউট সংগঠন হইতে পৃথক ফারীকুররিহলাত (ভ্রমণদল) নামে এক নতুন স্কাউট সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪১ খৃ. উহার বিশেষ কর্মসূচী প্রণয়ন করেন। ইহাকে ইওয়ান স্কাউট (জাওওয়ালা) নামে অভিহিত করিত। ইহার প্রশিক্ষণের দায়িত্ব তাহাদের উপর ন্যস্ত ছিল, যাহাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল। স্কাউট সংগঠনটি অত্যন্ত শ্রুত প্রসার লাভ করে। উহাদের সংখ্যা ১৯৪০ ২,০০০ এবং ১৯৪২ খৃ. ১৫,০০০-এ উন্নীত হয়। অতঃপর এই সংগঠন গ্রাম অঞ্চলে বিস্তার লাভ করিতে থাকে। ১৯৪৩ খৃ. উহার দ্বারা গ্রাম অঞ্চলে সামাজিক পরিকল্পনাসমূহ বাস্তাবয়িত করা হয়। ১৯৪৫ খৃ. এই সংখ্যা ৪৫,০০০ এবং ১৯৪৬ খৃস্টাব্দের শেষের দিকে, ৬০,০০০-এ উন্নীত হয়। ১৯৪৭ খৃস্টাব্দের প্রসিদ্ধ কলেরা রােগ প্রতিরােধে তাহারা বিরাট ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ইহার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৮ খৃ. সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হইলে এই সংগঠনেরও বিলুপ্তি ঘটে। সামরিক বিপ্লবের পর নূতন করিয়া ইহা সংগঠিত হয়, এবং ১৯৫৩ খৃ. উহার সংখ্যা ৭,০০০ হইয়াছিল।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অবদান
আল-ইখওয়ান আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের উপর অধিক জোর দিত। বংশ বিভাগের উপর আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ছিল। এই পদ্ধতির অধীন প্রত্যেক “ভাই” (আখ)-এর উপর উনচল্লিশটি অবশ্য পালনীয় কাজ সম্পাদন করা অপরিহার্য ছিল। কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ ইসলামী দাওয়াত বিষয়ের উপর ছােটবড় পুস্তক প্রকাশ করিত। কেন্দ্র হইতে তিরিশটির মত এবং, আল-ইখওয়ান-এর লিখিত অন্যান্য এক শত চৌদ্দটি পুস্তক প্রকাশ করা হয়। ইহাতে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থবিষয়ক, সাহিত্য এবং জীবনী প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের আলােচনা স্থান পাইয়াছে। বংশীয় শৃঙ্খলার জন্য পৃথক ইসলামী কার্যধারা প্রকাশ করা হয়, ইহা ছাড়া প্রশিক্ষণের জন্য সাপ্তাহিক সম্মিলিত পাঠ ও বক্তৃতার ব্যবস্থা ছিল। আল-আখাওয়াতুলমুসলিমাত অর্থাৎ মহিলা সদস্যদের পৃথক কর্মসূচী হইত এবং ‘শুক্রবারের স্কুল’ (মাদারিসুল জুময়া) নামে শিশুদের জন্য ছিল পৃথক কর্মসূচী। কেন্দ্রে পেশাদারদের বিভাগের অধীন উচ্চমানের শিক্ষাবিষয়ক বক্তৃতা হইত। বক্তাদের মধ্যে মিসরের শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণ থকিতেন। কেন্দ্রে একটি গ্রন্থাগার ছিল যাহাতে ইসলাম সংক্রান্ত সকল বিষয়ে লিখিত গ্রন্থসমূহ সংরক্ষিত ছিল। এই গ্রন্থাগারটি বিপ্লবের শিকার হয়।
আল-আখাওয়াতুল-মুসলিমাত
পাশ্চাত্য প্রভাবাধীন মিসরে নারীদের শিক্ষার সমর্থনে এবং পর্দা প্রথার বিরােধিতা এবং নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার পক্ষে ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং উক্ত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ১৯২৩ খৃস্টাব্দে জামাইয়্যাতুল ইত্তিহাদ আল-নিসাঈল মিসরী প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীকুলকে উক্ত প্রভাব হইতে মুক্ত করিবার এবং ইসলামী মর্যাদা প্রদানের উদ্দেশ্যে আল-ইখওয়ান গ্রন্থ প্রণয়ন ছাড়াও কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৩২ খৃস্টাব্দে ফিরাকুল আখাওয়াত আলমুসলিমাত নামক সংগঠনের অধীনে নারীদেরকে সংগঠিত করা হয়। ১৯৪৪ খৃস্টাব্দে উহার নতুন সংগঠন গঠিত হয়। ১৯৪৮ খৃস্টাব্দে উহার পঞ্চাশটি শাখা ছিল যাহাতে পাঁচ হাজার মহিলা অন্তর্ভুক্ত ছিল এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল নারীদের সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিকোণের পরিশুদ্ধি, তাহাদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান, নারী সংস্কার ও জাগরণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নারীদের হাতে ন্যস্ত করা এবং সামাজিক জীবনে তাহাদের কর্তব্য নির্ধারণ। শিশু-কন্যাদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পারিবারিক চিকিৎসার সুবিধার্থে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, প্রচারকার্যে নিয়ােজিত মহিলাদের জন্য। শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, ইহা ছাড়া হস্তশিল্পে কেন্দ্র এবং দুঃস্থ নারীদের জন্য সাহায্য কেন্দ্র খােলা হয়।
অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা
জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক মুক্তি আলইখওয়ান-এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। সুতরাং বিভিন্ন সময়ে সাতটি বৃহৎ কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করা হয়ঃ
- (১) ইসলামী মুআমিলাত কোম্পানী (১৯৩৯ খৃ.) যাহা ট্রান্সপাের্ট সার্ভিসেস এবং পিতলের একটি কারখান প্রতিষ্ঠা করে।
- (২) আরবী কূপ খননকারী কোম্পানী (১৯৪৭ খৃ.)
- (৩) আল-ইওয়ানুল-মুসলিমূন এর কাপড়ের কল : ১৯৪৮ খৃ.
- (৪) আল-ইখওয়ান ছাপাখানা,
- (৫) ট্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী,
- (৬) ট্রেডিং ইঞ্জিনিয়ারস কোম্পানী
- (৭) আরবী প্রচার কোম্পানী। ইহা ছাড়া আলইখওয়ান-এর লােকেরা যৌথ মালিকানায় অনেক কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।
চিকিৎসাক্ষেত্রে কর্মতৎপরতা
আল-ইখওয়ান-এর চিকিৎসা বিভাগ ডাক্তারদের একটি দলের সমন্বয়ে গঠিত, ১৫ নভেম্বর, ১৯৪৪ খৃ. প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৫ খৃ, এই বিদ্যাগের পরিচালনাধীন চিকিৎসালয়ে রােগীর সংখ্যা ছিল ২১,৮৭৭ এবং ১৯৪৭ খৃ. এই সংখ্যা ছিল ৫১, ৩০০, তানতাতে প্রতিষ্ঠিত তাহাদের চিকিৎসালয়ে এই সংখ্যা ৫,০০০ এবং ১৯৪৭ খৃ. ছিল ৮,০০০। এই বিভাগ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে, তন্মধ্যে স্থায়ী এবং ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসালয়ে এবং ঔষধালয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৮ খৃ. চিকিৎসা বিভাগের বাজেট ছিল তেইশ হাজার। প্রথমবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যহারের পর এই বিভাগের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়।
সাংবাদিকতা : বিভিন্ন সময়ে আল-ইখওয়ান-এর পক্ষ হইতে যে সকল দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হইত তাহা নিম্নরূপ :
মুখপত্র—দৈনিক পত্রিকা : আল-ইখওয়ানুল-মুসলেমুন।
সাপ্তাহিক পত্রিকা : আল-ইখওয়ানুল-মুসলেমুন, আশ-শিহাব, আল-কাশকূল, আত-তাআরুফ, আশশুআউন নাযীর, আল-মাবাহিস।
মাসিক পত্রিকা : আল-মানার, আশ-শিহাব। কেবল প্রচারপত্র, মুখপত্র নহে।
সাপ্তাহিক : আদ-দাওয়া, মানযিলুল-ওয়াহয়ি, মিম্বারুশ-শারক। মাসিক : আল-মুসলিমূন।
আল-ইখওয়ান মিসরের বাহিরে : হাসানুল-রান্না ১৯৩৭ খ্রীস্টাব্দে পূর্বে কোন কোন মুসলিম দেশে পত্র লিখিয়াছিলেন। কিন্তু সংগঠনের শাখা ১৯৩৭ খৃস্টাব্দের পরেই প্রতিষ্ঠা করা হয়। দামিশক-এ ১৯৩৭ খৃ. একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় যাহা আলইখওয়ান-এর সবচেয়ে শক্তিশালী শাখা ছিল। সিরিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে উক্ত শাখাসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু সম্মিলিতভাবে উহাকে শাবাব মুহাম্মাদ (মুহাম্মাদ) -এর (যুবদল) বলা হইত। এই সকল সংস্থার সম্মিলিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইতে থাকে। ১৯৪৪ খৃস্টাব্দে আলেপ্পাতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলন উহাদের একত্র করিয়া প্রখ্যাত আলিম ও বাগ্মী ডঃ মুসতাফা আস-সাবাঈ-কে উহার প্রধান পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। বিস্তারিত কর্মসূচী যারূদ (সিরিয়ার হিম্স এবং বালাবাক-এর মধ্যবর্তী স্থল)-এ ১৯৪৬ খৃস্টাব্দে প্রণয়ন করা হয়।
১৯৪৬ খৃ. জেরুজালেমে ইহার একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ফিলিসতীন-এর অন্যান্য শহরেও আন্দোলন বিস্তার লাভ করে। ১৯৪৬ খৃ. লেবানন, জর্ডান এবং ফিলিসতীন-এর এক সম্মিলিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ইয়াহূদীবাদের বিরুদ্ধে এবং আল-ইখওয়ান-এর সমর্থনে প্রস্তাবাবলী গৃহীত হয়। লেবাননে ১৯৪৬ খৃস্টাব্দেই একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়, যাহা ফিলিসতীন যুদ্ধকালে ব্যাপক কর্মতৎপরতা প্রদর্শন করে। ১৯৪১ খৃ. লেবানন আল-ইখওয়ান-এর কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সুদানে কাজের সূচনা হয় ১৯৪৬ খৃ. এবং বিভিন্ন স্থানে পঁচিশটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইরাকে এই আন্দোলন বাগদাদের শায়খ মুহাম্মাদ মাহমুদ আস-সাওওয়াফ-এর নেতৃত্বাধীন চলিতে থাকে। উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার কোন কোন অংশে, যেমন, ইরিত্রিয়া, মরক্কো প্রভৃতি স্থানে এই আন্দোলন বিস্তার লাভ করে। আল-ইখওয়ান-এর দাবী ছিল যে, তাহাদের শাখা ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং ইরানেও আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সকল স্থানে। এই দলের কোন সদস্য নাই, তবে আল-ইখওয়ান-এর শুভাকাঙ্খী আছে।
গ্রন্থপঞ্জী :
আল-ইখওয়ান-এর উল্লিখিত দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্রিকা ছাড়া,
- (১) হাসানুল বান্না, মুযাকারাতুদ দাওয়া ওয়াদ দাইয়া, কায়রাে ১৩৫৮ হি.
- (২) আল-হালকা তুল উলা, দামিশক, হাসানুল বান্নার বক্তৃতামালা : ১৯৩৮ খৃ.
- (৩) ঐ লেখক নুহরুন-নুর, কায়রাে ১৯৩৬ খৃ.।
- (৪) ঐ লেখক, আল-মিনহাজ, কায়রাে ১৯৩৮ খৃ.।
- (৫) ঐ লেখক, ইলা আয়্যি শারইন নাদাউন-নাস কায়রো তা, বি।
- (৬) ঐ লেখক, হাল নাহনু কাওমুন আমালিয়ন কায়রো।
- (৭) ঐ লেখক, দাওয়াতুনা ফী তাওরীন জাদীদ, কায়রাে
- (৮) ঐ লেখক, আকীদাতুনা।
- (৯) ঐ লেখক, আল-মুতামারুল খামিস, কায়রাে (মিসর ১৯৫১ খৃ. উর্দু অনু আল-ইওয়ান মুসলিমুন তাহা তাসীন কর্তৃক করাচী (১৯৫২ খৃ.)।
- (১০) ঐ লেখক, মুশকিলাতু না ফী দাওইন নিজামিল ইসলামী বাগদাদ তা. বি.।
- (১১) ঐ লেখক, আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুন তাহা তাহতা রায়াতিল কুরআন বাগদাদ তাে তা. বি.।
- (১২) সায়িদ কুব, আল-আদলতুল ইজতি মাইয়া কিলইসলাম, কায়রাে ১৯৪১ খৃ.।
- (১৩) আবদুল কাদির আওদা আল-ইসলাম বায়না জাহলি আবনাইহ ওয়া আজযি উলামাইহ, বাগদাদ ১৯৫৭ খৃ.।
- (১৪) ঐ লেখক, আল-ইসলাম ওয়া আওদাউনাল কানুনিয়া কায়রাে ১৯৫১ খৃ.।
- (১৫) ঐ লেখক, আলমাল ওয়াল হুম ফিল ইসলাম, কায়রাে ১৯৫১ খৃ.।
- (১৬) মুহাম্মাদ আল গাযালী মিন হুনা নালাম কায়রাে ১৯৫৪ খৃ.।
- (১৭) ঐ লেখক, আকীদাতুল-মুসলিম, কায়রাে ১৯৫২ খৃ.।
- (১৮) ঐ লেখক, আল-ইসলাম ওয়াল-আওদাউল ইকতি সাদিয়্যা কায়রাে ১৯৫১ খৃ.।
- (১৯) ঐ লেখক, আল-ইসলামুল মুফরা আলায়হি বায়নাশ শুয়ুইয়ীন ওয়াররাসমালিয়ান, কায়রাে ১৯৫১ খৃ.।
- (২০) কানুনুন-নিজাম আল-আসাসী লি-হায়আত আল-ইখওয়ানিল মুসলিমীন, সংশােধিত ৮ ডিসেম্বর, ১৯৫৪ খৃ.।
- (২১) আবদুর রাহমান আল-বান্না ছাওরাতুদ-দাম, কায়রাে ১৯৫১।
- (২২) আল-বাহী আল-খাওলী, আলমিরআতু বায়নাল-বায়তি ওয়াল মুজতামা, কায়রাে তা. বি.।
- (২৩) কামিল আশশারীফ, আল-ইখওয়ালু-মুসলিমনু ফী হারবি ফিলিসতীন, কায়রাে ১৯৫১ খৃ.।
- (২৪) হাকাইকু ত-তারীখ, কিসসাতুল-ইখওয়ান কামিলাতন, কায়রাে তা.বি।
- (২৫) ফাত্তী আল-আসসাল, হাসানুল-বান্না কামা আরাফুতুহ কায়রাে।
- (২৬) আহম্মাদ আনওয়ার আল-জুব্দী কাইদুল-দাওয়া হায়াতু রাজুলিন ওয়া তারীখু মাদরাসা কায়রাে ১৯৪৫ খৃ.
- (২৭) আহমাদ আনাস আল-হাজ্জাজী, রাওহ ওয়া রায়হান, কায়রাে ১৯৪৫ খৃ.
- (২৮) আহমাদ মুহাম্মাদ হাসান আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুন ফিল-মীযান কায়রাে তা বি.
- (২৯) মুহাম্মাদ শাওকী যাকী, আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুন ওয়াল মুজতামাউল-মিসরী কায়রাে, ১৯৫৪ খৃ.
- (৩০) ইসহাক মুসা আল-হুসায়নী, আল-ইখওয়ানুল-মুসলিমুন, কুা হারাকাতুল হাদীছা ফিল ইসলাম বৈরূত ১৯৫৫ খৃ.
- (৩১) কামাল কীরা মাহকামাতুশশাব ৫খ, কায়রাে ১৯৫৪ খৃ.
- (৩২) ঐ লেখক, মুহাকামাতুছ-ছাওরা ৬খ, কায়রাে ১৯৫৪ খৃ.
- (৩৩) Francis Bertier, LIdeologie Politique des Freres Musulmans, Orient-৮খ. ১৯৫৮ খৃ.
- (৩৪) ফদলুর-রহমান ALLkhwan al Muslimun, A Survey of Idcas and Ideals, Buletin of the Institute of Islamic Studies-এ আলীগড় ১৯৫১ খৃ. পৃ. ৯২-১০২.
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।