লিখেছেনঃ রহিম আজিজ
রোমান্স, রোমান্টিক, রোমান্টিকতা ইত্যাদি শব্দের অর্থের মধ্যে গুণগত অনেক সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও শিথিলভাবে এগুলো বহুমাত্রায় প্রায় একই রকম অর্থ প্রকাশ করে থাকে। বিশ্ব-সাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সহজেই পরিলক্ষিত হবে যে, রোমান্টিকতা বা রোমান্টিসিজম১ সাহিত্যের একট চিরকালীন ধারা বা শাশ্বত স্রোত যা কালে কালে দেশে দেশে বিভিন্ন শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভেতর থেকে তাদের সৃষ্টিকর্মে নানাভাবে প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ইংরেজী সাহিত্যে Romantic Movement২ হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে সে ধরনের Movement না হলেও তার প্রভাব পড়েছে অনেক কবির উপর এবং অনেকেই আবার স্বভাবজাত রোমান্টিক কবি।
রোমান্টিক কথাটির পাশাপাশি আবার ক্লাসিক কথাটি এসে দাঁড়ায়। শব্দ দুটি নিয়ে সাহিত্য-সমালোচনার জগতে এত তর্ক-বিতর্ক হয়েছে যে তাদের সঠিক সংজ্ঞা ও অর্থ নির্ণয় করা বেশ দুরূহ।৩ ‘খুবই সূক্ষ্ম প্রশ্ন-ক্লাসিক কি? সময় ও অবস্থাভেদে প্রশ্নটির উত্তর এক রকম নাও হতে পারে।… প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী ক্লাসিক হচ্ছেন অতীতের এমন লেখক যিনি প্রশংসায় ভাস্বর, অতি উৎকৃষ্ট এমন কোন রচনাশৈলীর প্রবর্তক যা যুগ যুগ ধরে অনুসৃত’।৪ লেখকদের ক্ষেত্রে Classicus শব্দটি ওলাস। জেলিয়াস (Aulus Gelius) প্রথম ব্যবহার করেছিলেন যা-দিয়ে বোঝানো হত ‘মহৎ লেখক বা বিশিষ্ট লেখক’।৫ ক্লাসিক শব্দটি সাধারণভাবে কালজয়ী লেখকের চিরায়ত বা চিরঞ্জীব লেখা সম্পর্কে প্রযোজ্য। ‘ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের সাহিত্যাদর্শ হল এরিস্টটল প্রবর্তিত সাহিত্যতত্ত্ব।… গ্রীক সাহিত্যকে ক্লাসিক্যাল সাহিত্য বলা হল, কারণ গ্রীক সাহিত্যের রূপ ও রীতি বিশুদ্ধ মানবিকতার আলোকে সমুজ্জ্বল এবং যার আবেদন বিশ্বজনীন। এর ফলে গ্রীক সাহিত্যের রীতির অনুকরণ করাই হলো ক্লাসিক্যাল রীতি, গ্রীক সাহিত্যের ক্লাসিক্যাল রীতির অনুকরণে লাতিন সাহিত্য রচিত হল। আবার লাতিন সাহিত্যের ক্লাসিক্যাল রীতির অনুকরণ করা হল ফরাসী সাহিত্যে। ফরাসী সাহিত্যের ক্লাসিক্যাল রীতির অনুকরণ হল ইংরেজী সাহিত্যে’।৬
বিভিন্ন পন্ডিত ভিন্নভাবে এরিস্টটলের তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করায় তাদের মধ্যে গড়ে উঠল নানা মতভেদ এবং সাহিত্য থেকে অন্য সাহিত্যে ক্লাসিক্যাল রীতির অনুকরণও যথাযথ হল না। ‘ফলে ক্লাসিক্যাল রীতি বলতে এক নতুন জাতের কৃত্রিম রীতির আবিষ্কার হল-এই কৃত্রিম রীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষিত হল-সাহিত্যের জগতে নতুন একটি দলের সৃষ্টি হল- তা হলো রোমান্টিক দল।’৭ অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজ কবিরা ফরাসী ও ল্যাটিন কবিদের অনুপ্রেরণায় ভাবানুভূতির আন্তরিকতাহীন বিদ্যাবুদ্ধিজাত ব্যঙ্গ কবিতাকে শ্রেষ্ঠ কবিতা বিবেচনা করায় সেই শতকের শেষের দিকে তাদের বিরুদ্ধে টমাস গ্রে, উইলিয়াম কলিন্স, উইলিয়াম ব্লেক, রবার্ট বার্ণস প্রমুখ বিদ্রোহের সূচনা করেন এবং ওয়ার্ডসওয়ার্থ-ও কোলরিজ Lyrical Ballad (১৭৭৮) প্রকাশের মাধ্যমে ‘Romantic Movement’ এর সূত্রপাত করেন।৮ যেকোন নতুন ভাবদৃষ্টি বা আন্দোলনের পেছনেই থাকে নানা কারণ; Romantic Movement এর পেছনেও তেমনি নানা বিষয় সক্রিয় ছিল।
(এক) রুশো Emile, The Social Contract, Neev Heloise ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে মানব জীবনের মর্যাদাবোধ, প্রকৃতির সাথে তার সম্পর্ক এবং ‘প্রেমের অভাবনীয় শক্তি’ সম্পর্কে জনমনকে সচেতন করে তোলেন।৯
(দুই) জার্মান দর্শন মানুষের ভাবজগতে যুগান্তর আনে। ক্যান্ট বস্তুজগতকে ‘কবির আত্মরসে রসায়িত অখন্ড সৌন্দর্যরূপে’১০ অনুভব করেন এবং রুশোর চেয়ে উতর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া জার্মান দর্শনের আরেক তত্ত্ব চিৎ (mind) ও জড়ের (Matter) অদ্বৈতবাদ রোমান্টিক ভাবকল্পনাকে আন্দোলিত করে।”১১
(তিন) ফরাসী বিপ্লবের (১৭৮৯-৯৯) সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী সারা পৃথিবীকে আন্দোলিত করে। ইংল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখছিল সেই গণতন্ত্রের প্রথম পরীক্ষায় সিদ্ধিলাভ করল আমেরিকাকে স্বাধীনতা দান করে। ফরাসি দেশের বিপ্লবের শিক্ষা সেই গণতন্ত্রকে আরো বেশি করে উজ্জ্বল করল।’১২ স্বাধীনতা, জাতীয়তাবোধ ইত্যাদি কবিদের। ভেতর জাগ্রত হওয়ায় এবং জাতির অতীত গৌরব ও মহিমাকে পুনরুদ্ধারের প্রেরণায় তারা অতীতকে নতুন করে সৃষ্টি করেন অর্থাৎ কবিদের ভেতর অতীতচারণা লক্ষ্য করা যায়। স্মরণীয় যে, অতীত চারণা রোমান্টিকতার একটি লক্ষণ।’১৩
(চার) সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান চেতনার অগ্রযাত্রায় যন্ত্র-সভ্যতার আবির্ভাবে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। শিল্প বিপ্লবের ফলে অর্থের অসম বণ্টনের কারণে মালিক শ্রেণীর ভেতর অপচয় এবং শ্রমিক শ্রেণীর ভেতর ক্ষুধা ও দারিদ্য পরিলক্ষিত হয়। এ্যাডাম স্মিথ ‘wealth of nation’ এ শ্রমিক শ্রেণীর ন্যায্য অধিকারের জন্য এবং টম পেইন ‘Rights of Man’ এ দাস প্রথা বিলোপের জন্য সোচ্চার উচ্চারণ করেন।১৪
(পাঁচ) বিজ্ঞান-চেতায় ধর্মযাজক ও পুরোহিতদের অন্তঃসারশূন্যতাকে উপলব্ধি করায় মানুষ সকল প্রকার কুসংস্কার ও ভন্ডামী পরিত্যাগের মাধ্যমে ধর্মের নব মূল্যায়ন করতে সক্ষম হল। নতুন জ্ঞানের আলোকে ‘চার্চের ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতাকে অস্বীকার করে মানুষ তার ব্যক্তিসত্তার জয় ঘোষণা করল’।১৫
রোমান্টিকতার স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমালোচকরা বিভিন্ন কথা বলেছেন। Watts Dunton একে ‘বিস্ময়রসের পুনর্জীবন’ (Renacence of Wonder), Victor Hugo একে ‘সাহিত্য উদার প্রাণতা’ এবং Brundetiere’ একে ‘সাহিত্যে আত্মমুক্তি’১৬ বলে অভিহিত করেছেন। Pater রোমান্টিকতাকে the addition of strangeness to beauty বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে-The essential clements of the romantic spirit are curiosity and the love of the beaucty.১৭
বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে অনেক ‘রোমান্স কাব্য’১৮ রচিত হয়েছিল। রোমান্স কাব্যের ও বৈষ্ণব পদাবলীর অনেক কবির ভেতরই রোমান্টিকতার লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূদনের ‘মেদনাদবধ কাব্যে’র ক্লাসিক স্থাপত্যের ভেতর ছিল রোমান্টিকতার ফোয়ারা। তাঁর সমকালে গীতিকবি বিহারীলালের ভেতর পাশ্চাত্যের রোমান্টিকতার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ইংরেজি রোমান্টিক আন্দোলন শুরু হবার প্রায় শতাব্দী পরে রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্যকালের পরিবেশে মাইকেল বা ঈশ্বর গুপ্ত বিরাজ করলেও বৈষ্ণব পদাবলী, বিহারীলাল এবং শেলী, কীটস, ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রমুখ রোমান্টিক মহাকবিরাই তাঁকে আকর্ষণ করেছিলেন। তার কারণ, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত রোমান্টিক মানসের অধিকারী।’১৯ কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাব্যে রোমান্টিকতার সকল বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পায়নি। বিশেষ করে শেলির অশান্ত চিত্তবিক্ষোভ, কীটসের বিশুদ্ধ সৌন্দর্যমুখিনতার আত্যন্তিক সংকীর্ণতা এবং কোলরিজের অতিপ্রাকৃতে অংশগ্রহণ রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কচিৎ লক্ষিত হয়।’২০
রোমান্টিকতার পরিপূর্ণ প্রকাশ নজরুলের কবিতাতেই যথাযথভাবে পাই। রোমান্টিকতার যে সব বৈশিষ্ট্য রবীন্দ্রনাথের ভেতর অনুপস্থিত ছিল, নজরুলের ভেতর সেগুলো ছিল সুস্পষ্ট। নজরুল তার রক্তে শেলী কীটসকে প্রবলভাবে অনুভব করেছেন—একথা তিনি নিজেই এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। শেলী কীটসের মত নজরুল উত্তুঙ্গ রোমান্টিক কবি ছিলেন বলেই নিজের ভেতর তাদেরকে অনুভব করেছেন।২১ নজরুল যে জন্মগতভাবেই প্রবল রোমান্টিক মানসের অধিকারী তা তাঁর জীবনের প্রায় সকল ঘটনাই প্রমাণ করে। তার রোমান্টিক মনোবৃত্তি জীবনে কোথাও তাকে বেশি দিন স্থির থাকতে দেয়নি। আজীবন ‘বাঁধনহারা’ নজরুল তাঁর রচিত ‘বাঁধনহারা’ উপন্যাসের নায়কের মতই রোমান্টিক। তাঁর ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসের আনসারের সাথে তাঁর চরিত্রের অনেক মিল রয়েছে-একদিকে বিপ্লবী, অন্যদিকে স্বপ্নাতুর-কল্পনাবিলাসী প্রেমিক। উপন্যাসের ক্ষেত্রেই যেখানে রোমান্টিকতার মাত্রা এত বেশি, কবিতায় তো আরো বেশি। শিশু-কিশোরদের উপযোগী কবিতাতে তার রোমান্টিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য বন্ধনমুক্তি বা শৃঙ্খলমুক্তির আকাক্ষা খুবই উজ্জ্বল। ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে’-জগৎকে দেখার আকাক্ষার মধ্যেই রয়েছে কবিআত্মার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার স্পৃহা বা সুদূরের আকাঙক্ষা। মানবাত্মার মুক্তির স্পৃহা মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ যতটা ছিল রবীন্দ্র-কাব্যে ততটা ছিল না। কিন্তু নজরুলের বিদ্রোহীর ভেতর মানবাত্মার যে জাগরণ ঘটেছে তার আকাক্ষা, গতি ও বেগ মাইকেলের রাবণের চেয়ে অনেক বেশি – ‘বল বীর। বল উন্নত মম শির/শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রীর।’ (বিদ্রোহী)। নজরুলের ভেতর এসেছিল আত্মজাগরণের প্রবল জোয়ার। যে জন্য বলেছেন-“আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাধ।”-নিজেকে যথার্থভাবে চিনতে পেরেছেন বলেই তিনি সমস্ত অসুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন। রোমান্টিক মনে থাকে এক সুন্দর পৃথিবীর আকাক্ষা। নজরুলের ভেতর এই আকাক্ষা ছিল অত্যন্ত প্রবল। তিনি চেয়েছেন শোষণ-বঞ্চনামুক্ত এক সুন্দর পৃথিবী। কিন্তু তিনি তা পাননি; পেয়েছেন জগৎ ও জীবনের চারপাশে পরাধীনতা, লাঞ্ছনা, উৎপীড়ন, শোষণ-এককথায় অসুন্দরকে। এই অসুন্দর থেকে পরিত্রাণের জন্য জীবনানন্দ নির্জনতার বোধিকে বেছে নিয়েছেন এবং কল্পনায় প্রকৃতির ভেতর এক সৌন্দর্যের ভুবন নির্মাণ করে আত্মতৃপ্তি খুঁজেছেন। কিন্তু নজরুল অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে অসুন্দর পৃথিবীকে ধ্বংস করে সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ করতে চেয়েছেন অর্থাৎ সুন্দরের প্রবল আকাভক্ষায় তিনি বিদ্রোহী হয়েছেন বলে তার এ বিদ্রোহ রোমান্টিক মানসপ্রবণতার বলিষ্ঠ প্রকাশ। প্রলয়ের আকাক্ষা তার ভেতর প্রবল-এ জন্য ছিল যে ‘প্রলয় নতুন সৃজন বেদন’। মূলতঃ সৌন্দর্যের ভুবন সৃষ্টির আকাক্ষাতেই তিনি বলেছেন-“আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান” (বিদ্রোহী)। Walt whitman যেমন বলেছেন-I pass death with the dying and birth with the new wash’d babe. (Song of myself)২২
শাসক ও শোষক শ্রেণীর তৈরী ‘মানব বৈরী, মানবতা বৈরী’২৩ নিয়মের বেড়ীতে বন্দী মানুষের মুক্তির প্রত্যয় নিয়ে সব অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে নজরুল জোরালো কণ্ঠে বলেছেন- “আমি মানি নাকো আইন’। শেলীর Prometheus যেমন অমানুষিক নিয়ম-কানুনের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর-নজরুলের বিদ্রোহীও তেমনি। শেলীর Prometheus এর ভেতর অধীনতার সামান্যতম চিন্তাও ছিল না,
Submission, thou dost know I can not try. For what submission bul that fatal word. The death-seal of mankinds captivity. Like the sicilians hair-suspended sword. Which trembles o’er his crown, would be accept. Or could I yield? Which yet I will not yield, (Prometheus Unbound, Act 1)২৪
নজরুলের বিদ্রোহীর ভেতরও বশ্যতার কোন চিন্তা চেতনা ছিলনা। তার তেজোময় আত্মদীপ্ত কণ্ঠে স্বাধীনতার বলিষ্ঠ উচ্চারণ-’আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস/আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ’ (বিদ্রোহী)। মুক্তির প্লাবনে তার যৌবনের জোয়ার উপচে পড়েছে-’আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ’ (বিদ্রোহী)। মনে পড়ে whitman এর ‘I am satisfied, I see, dance, laugh sing.’২৫ মূলতঃ বিদ্রোহীর রোমান্টিক পুরুষ-কণ্ঠ নজরুল, রোমান্টিকতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
ধর্মের কুসংস্কার এবং ভন্ডামীকে নজরুলের রোমান্টিক মানস ও মানবতাবাদী চিন্তা-চেতনা সহ্য করতে পারেনি বিধায় অত্যাচারী ‘মোল্লা পুরুত’ শ্রেণীর প্রতি তার কণ্ঠে ঘৃণা ও আক্রোশ প্রকাশ পেয়েছে-’তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী/ মোল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী/ কোথা চেঙ্গিস, গজনী মামুদ, কোথায় কালা পাহাড়?/ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা দেওয়া দ্বার’ (মানুষ)। নজরুল বাংলা সাহিত্যের সৈনিক কবি; দেশের স্বাধীনতার জন্য ছিল তার প্রবল সংগ্রাম-স্পৃহা। দেশের মুক্তির জন্য সৈনিকের আত্মোৎসর্গকে কবি কামাল পাশা কবিতায় গৌরবের বিষয় বলে ঘোষণা করেছেন। ‘রণভেরী’, ‘খেয়াপারের তরণী’ ‘আনোয়ার’, ‘কোরবানী’, ‘মোহররম’ ইত্যাদি কবিতায় দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য কবিকণ্ঠের উদাত্ত আহ্বানে কবির রোমান্টিক মানসের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ছিল তাঁর কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে। ‘ভাঙার গান’ (১৯২২) কাব্যে। স্বাধীনতার জন্য কবি ‘বৃটিশ বিরোধিতাকে কবিতার প্রত্যক্ষ আবেগ হিসেবে’২৬ গ্রহণ করেছেন। দেশের স্বাধীনতা কামনায় ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কবির চিত্তবিক্ষোভ বিপ্লবের জোয়ার এনেছে। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট/ ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট/….. লাথি মার ভাঙ রে তালা/যত সব বন্দী শালায়/ আগুন জ্বালা/ আগুন জ্বালা..।’ মনে পড়ে শেলীর কবিতায় দেশবাসীর প্রতি জাগরণের উদাত্ত আহবানের কথা- ‘Awaken, awaken, awaken/The slave and the tyrant are twin-born foes;/Be the cold chains shaken/To the dust where your kindred repose, repose.’ (An ode)২৭
স্বাধীনতার জন্য, সুন্দরের জন্য নজরুলের বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর ‘অগ্নিবীণা’, ‘ভাঙার গান’ ছাড়াও ‘বিষের বাঁশী’ (১৯২৪), ‘সাম্যবাদী’ (১৯২৫), ‘সর্বহারা’, (১৯২৬), ‘ফণিমনসা’ (১৯২৭), ‘সন্ধ্যা’ (১৯২৯), ‘প্রলয় শিখা’ (১৯৩০) ‘চন্দ্রবিন্দু’ (১৯৩০) ইত্যাদি কাব্যে ধ্বনিত হয়েছে।২৮ ‘সর্বহারা কাব্যে’র ‘কৃষাণের গান’, ‘শ্রমিকের গান’, ‘ধীবরের গান’, ‘রাজা প্রজা’, ‘চোর ডাকাত’; ‘ফণিমনসা’ কাব্যের ‘শ্রমিক মজুর’, ‘জাগরুক সূর্য’ এবং ‘নতুন চাঁদ’ কাব্যের ‘ওঠরে চাষী’, ‘ঈদের চাঁদ’ ইত্যাদি কবিতায় সাধারণ মানুষের উপর নানা অত্যাচার-অবমাননা, বঞ্চনার জন্য কবির কণ্ঠে বিদ্রোহের সুর বেজেছে। কৃষক, শ্রমিক ধীবর সবাইকে কবি ডাক দিয়েছেন সমস্ত অন্যায় অত্যাচার তথা অসুন্দরের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে সুন্দরকে আনার জন্য-’আজ জাগরে কৃষাণ, সব গেছে কিসের বা আর ভয়/ এই ক্ষুধার জোরেই করব এবার সুধার জগৎ জয়। (কৃষকের গান) ‘ওরে ধ্বংস পথের যাত্রী দল/ধর হাতুড়ি তোল কাঁধে শাবল’ (শ্রমিকের গান) আমরা নীচে পড়ে রইব না আর/শোন রে ও ভাই জেলে/ এবার উঠব সব ঠেলে; (ধীবরের গান)। সমস্ত অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদের জন্য ইংল্যাণ্ডের রোমান্টিক কবি শেলীও কৃষক-তাঁতীদের ডাক দিয়েছেন,
Sow seed-but let no tyrand reap
Find wealth-let no imposter heap
Weave robleslet not the idle wear
Forge arms-in your defence to bear.
[song to the men of England]২৯
মূলতঃ ধর্মের নামে ভন্ডামী, দেশের পরাধীনতা, শাসক শ্রেণীর শোষণ তথা সমস্ত অন্যায় অবিচারের অবমাননার বিরুদ্ধে নজরুলের এই বিদ্রোহ তাঁর রোমান্টিক মানসজাত ফসল। তার বিদ্রোহে সুন্দরকে লাভের প্রবল আকাক্ষার বীজ নিহিত রয়েছে।
নজরুল ইসলামের প্রবল সংগ্রাম চৈতন্য যেমন উত্তুঙ্গ রোমান্টিকতার ফসল তেমনি তার প্রেমারতিও রোমান্টিকতার ফসল। একই উৎস ভূমির ফসল বলেই তার বিদ্রোহী একদিকে চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, প্রলয়ের নটরাজ, বেদুঈন, চেঙ্গিস অন্যদিকে বন্ধনহারা কুমারীর বেণী তন্বী-নয়নে বহ্নি, ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, চপল মেয়ের ভালবাসা ইত্যাদি। কবির রোমান্টিক প্রেমারতি এবং আত্মরতি প্রাধান্য পেয়েছে ‘দোলন চাঁপা’, ‘ছায়ানট’, ‘সিন্ধু-হিন্দোল’, ‘চোখের চাতক’, ‘চক্রবাক’, ‘বুলবুল’ ইত্যাদি কাব্যে। কবির স্বপ্ন সহচরী অনাগত প্রিয়ার বন্দনা ‘অনামিকা’ কবিতায় তীব্র জীবন-পিপাসা ও দেহকামনার সাথে উচ্চারিত হয়েছে- “তোমারে বন্দনা করি/ স্বপ্ন সহচরী /লো আমার অনাগত প্রিয়া/ আমার পাওয়ার বুকে না পাওয়ার তৃষ্ণা জাগানিয়া/তোমারে বন্দনা করি…..হে আমার মানস-রঙ্গিনী/ অনন্ত যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা সঙ্গিনী।’ এমন মনোদৈহিক প্রেমের তীব্র আকুলতা ইংরেজ রোমান্টিক কবি কীটসের কবিতাতেও লক্ষ্য করা যায়,
Pillowed upon my fair love’s ripening breast
To feel for ever its soft fall and swell.
Awakc for ever in a sweet unrest;
still, still to hcar her tender-taken breath
And so live ever-or else swoon to death.
(Bright star, would I were stead fast)৩০
নজরুলের অনেক কবিতায় প্রিয়ার রূপ মাধুর্যের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। যেমন-’মৃণাল হাত/নয়ন পাত/ গালের টোল/চিবুক দোল/সকল কাজ/করায় ভুল/ প্রিয়ার মোর/কোথায় তুল?’ (দোদুল-দুল)। ‘প্রিয়ার রূপ’ এবং ‘দোদুল দুল’ কবিতা দুটোতে রূপ বর্ণনার Sensuousness নয়, বরং sensuality রই পরিচয় পাওয়া যায়।’৩১ মূলতঃ নজরুল ইসলামের রোমান্টিক প্রেমানুভূতি, ‘দেহ’ এবং ‘আত্মা’ জাত। Whitman এর মত তিনিও বলতে পারতেন, ‘I am the poet of the body/And I am the poet of the soul.’ (song of inyslf)৩২
কবি মোহিতলাল বলেছেন, ‘আমি মদনের রচিনু দেউল দেহের দেহলী পরে/ পঞ্চশরের প্রিয় পাঁচ ফুল সাজাইনু থরে থরে।’ (স্মরগরল)। কবি মোহিতলালের প্রেম দেহকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ জৈবিক বৃত্তির পথ ধরে ফুটে উঠেছে কিন্তু নজরুল ইসলাম প্রেমকে শুধুমাত্র জৈবিক বৃত্তি না জেনে, তাকে বিস্ময়, বেদনা ও শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করায় প্রেমানুভূতিতে গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রেমের ক্ষেত্রে অতৃপ্তি বোধ, আর্তি আকুলতা, হৃদয় যন্ত্রণা ইত্যাদি এত ব্যাপ্তি ও গভীরতার সাথে প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলা কাব্যে আর কারো ভেতর এমনভাবে প্রকাশ পায়নি। মূলতঃ রোমান্টিক আর্তি আকুলতা প্রকাশের ক্ষেত্রে নজরুল অন্যান্য বাঙালী কবিদের অতিক্রম করেছেন। যেমন ‘পোড়া প্রাণ জানিল না কারে চাই/চীৎকারিয়া ফেরে তাই-কোথা যাই/কোথা গেলে ভালবাসাবাসি পাই’? (পূজারিণী)। রোমান্টিকতা থেকে জাত নার্সিসাস সুলভ আত্মমুগ্ধতাও তার কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রবল বেগে-’কস্তুরি হরিণ সম/আমারি নাভির গন্ধ খুঁজে ফেরে গন্ধ-অন্ধ-মন মৃগ সম/আপনারই ভালবাসা/ আপনি পিইয়া চাহে মিটাইতে আপনার আশা।’ (পূজারিণী)।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় প্রেমের ক্ষেত্রে মিলনের আনন্দ উচ্ছাসই বেশি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বিরহের অনুভূতির মধ্যে এক নতুন সম্পদের সন্ধান পেয়েছিলেন, বলেছিলেন-’চিত্ত ভরিয়া রবে ক্ষণিক মিলন চিরবিচ্ছেদ করি জয়’।৩৩ কিন্তু নজরুলের কবিতায় প্রেমের ক্ষেত্রে বিরহের ভাবটাই প্রধান এবং সেই বিরহের শূন্যতায় আর্তি অশ্রু-হাহাকারের আবেগ প্রচণ্ড রকমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ‘সিন্ধু’ কবিতায় কবি সাগরের ভেতর নিজের স্বরূপকে লক্ষ্য করে তাই বলেছেন, ‘তুমি শূন্য, আমি শূন্য, শূন্য চারিধার/ মধ্যে কাঁদে বারিধারা, সীমাহীন, রিক্ত হাহাকার’ (সিন্ধু)। প্রেমে বিরহের আধ্যিকের জন্য নজরুলের কবিতায় রোমান্টিক বেদনাবিলাস অতিমাত্রায় প্রকাশ পেয়েছে। ‘চৈতী হাওয়া’ কবিতায় কবি প্রিয়ার বিরহ বেদনা ব্যথিত; তিনি তাকে স্মরণ করেছেন – ‘হাসতে তুমি দুলিয়ে জল/গোলাপ হয়ে ফুটত গাল/থল কলমী আউরে যেত তপ্ত ও গাল ছুঁই/বকুল শাখা ব্যাকুলহত টলমলাত ভূঁই’। কবির সাথে তার প্রিয়ার পরিচয় হয়েছিল এক বসন্তে, এখন আরেক বসন্ত যায়, কিন্তু প্রিয়ার দেখা নেই। তাই ‘কণ্ঠে কাঁদে একটি স্বর/কোথায় তুমি বাধলে ঘর?’ (চৈতী হাওয়া), এই কবিতায় রোমান্টিক স্মৃতিচারণের ফলশ্রুতিতে বিরহের বিষন্ন সুর যেভাবে। বেজেছে—তা শেলীর কবিতাকে মনে করিয়ে দেয়
The world is dreary
And lam weary
lof wandering on without thee, Mary
Ajoy was ere whilc
in the voice and thy smile
And tis gone, when I should be gone too, Mary.
(To Marry Shelly)৩৪
‘গোপন প্রিয়া’ কবিতাতেও প্রিয়ার জন্য বিরহভাব ফুটে উঠেছে, প্রিয়ার বিরহে কবি মূহ্যমান নন, কেননা প্রিয়ার মূর্তি তাঁর কাব্যে ধরা পড়েছে, প্রিয়া হয়েছে তার কাব্য রচনার প্রেরণাদায়িনী। তাই কোনকিছুর আশা না করেই কবি তাকে ভালবেসে যাবেন, ‘শিল্পী আমি, আমি কবি/ তুমি আমার আঁকা ছবি/ আমার লেখা কাব্য তুমি, তুমি আমার রচা গান/ চাইব নাক; পরাণ ভরে করে যাব দান।’ তাঁর কবিতায় যে প্রেম পরিলক্ষিত হয়েছে তা অন্ধ, অবুঝ, দুর্বোধ্য এবং রহস্যময়। কবি বলেছেন- ‘বন্ধু হৃদয় এমনি অবুঝ কারো সে অধীন নয়/যারে চায় শুধু তাহারেই চায়-নাহি মানে লাজ ভয়’ (কর্ণফুলী)। রোমান্টিক মনে থাকে সুদূরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ; নজরুলের কবিতায় প্রেমের অনুষঙ্গে তা প্রকাশিত হয়েছে, ‘বন্ধু আমার! থেকে থেকে কোন সুদূরের নিজন পুরে ডাক দিয়ে যাও ব্যথার সুরে’। (দূরের বন্ধু)। নজরুল ইসলাম প্রেম বলতে অনেক ক্ষেত্রেই যা বুঝেছেন তা হচ্ছে-নিঃশেষে আত্মদান। তাঁর উপন্যাসগুলোতেও প্রেমের ক্ষেত্রে এই ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। মৃত্যুক্ষুধায়-প্রেমের জন্য রুবি ঘর ছেড়ে মৃত্যুর পথযাত্রী হয়েছে। নজরুল প্রিয়ার কাছে এ ধরনের প্রেমের প্রত্যাশাতেই বলেছেন, ‘কোথা মোর ভিখারিণী পূজারিণী কই/ যে বলিবে ভালবেসে সন্ন্যাসিনী আমি/ ওগো মোর স্বামী। রিক্তা আমি, আমি তব গরবিনী, বিজয়িনী নই’ (পূজারিণী)। প্রেমের ক্ষেত্রে চিরন্তন বা শাশ্বত সৌন্দর্যকে খুঁজেছেন বলেই ছলনাময়ী-দ্বিচারিণীকে তিনি ধিক্কার দিয়েছেন। তবে প্রিয়া দ্বিচারিণী হলেও তার পুরাতন প্রেমকে অস্বীকার করেননি; বরং সেই প্রেমের বিরহের ব্যথা-বিষ পান করে তিনি নীলকণ্ঠ হয়েছেন, ‘তব প্রেমে মৃত্যুঞ্জয়ী/ ব্যথা বিষে নীলকণ্ঠ কবি’। প্রবল রোমান্টিক মানসপ্রবণতার জন্যই তার প্রেম পিপাসা বিস্তৃত আকারে উচ্চারিত হয়েছে, ‘প্রেম এক; প্রেমিকা সে বহু বহু পাত্রে ঢেলে পিব সেই প্রেম/সেই শরাব লোহু।’ (অনামিকা)। বিদ্রোহী কবি হিসেবে নজরুল ইসলাম বেশি পরিচিতি পেলেও মূলতঃ তিনি প্রেম ও সৌন্দর্যের কবি। তিনি বিদ্রোহী হয়েছেন প্রেম ও সৌন্দর্যের জন্যই এবং নিজেকে বিজয়ী ভেবেছেন প্রেমের ভেতর-’আজ বিদ্রোহীর এই রক্তরথের চূড়ে/ বিজয়িনী। নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে/ যত তূণ আমার আজ তোমার মালায় পুরে/ আমি বিজয়ী আজ নয়নজলে ভেসে’ (বিজয়িনী)।
রোমান্টিক কবিরা প্রকৃতি প্রেমিক; জীবনের বহুবিধ ভাবনাকে তারা প্রকৃতি সংলগ্ন করে তোলেন। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, শেলী, কীটস, ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রমুখ প্রকৃতিকে আপন আপন ভাবনায় ব্যবহার করেছেন। নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার ‘বিদ্রোহী’ প্রকৃতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেছে, ‘আমি এলোকেশী ঝড় অকাল বৈশাখীর’। প্রকৃতি প্রেমিক নজরুল রোমান্টিক আর্তিতেই কাল বোশখীর ঝড়কে স্বাগত জানিয়েছেন, ‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর (প্রলয়োল্লাস)। কবির বিদ্রোহী সত্তা ভয়ঙ্কর কাল বৈশাখী ঝড়ের মত প্রবল বেগে এগিয়ে এসে অসুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরকে সৃষ্টি করবে, ‘ভেঙ্গে আবার গড়তে জানে সে চির সুন্দর’। (প্রলয়োল্লাস)।
রোমান্টিক কবিরা প্রেম-বিরহ-মিলন-এসবকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ও ভাবমূর্তিতে উপস্থাপন করেন। নজরুলের কবিতাতেও তা লক্ষ্য করা যায়। তিনি প্রেমের বিরহকে প্রকৃতির পটভূমিকায় উপস্থাপন করেছেন। ‘বরষা’, ‘বা০দল দিনে’, ‘মাতাল হাওয়া’, ‘বিধূরা পথিক প্রিয়া’-এসব কবিতায় কবি বর্ষার পটভূমিকায় বিরহকে তুলে ধরেছেন। ‘সিন্ধু’ কবিতায় সাগরের সাথে কবির একাত্মতা প্রকাশিত হয়েছে। প্রিয়া। চন্দ্রকে হারিয়ে সিন্ধু বিরহী; কবির কাছে সিন্ধু, চির বিরহ বেদনার প্রতীক তার বিদ্রোহও এই বিরহ বেদনা সঞ্জাত। নজরুল ইসলামও বিদ্রোহী এবং বিরহ যন্ত্রণাবিদ্ধ। বলে সিন্ধুর সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক, ‘এক জ্বালা এক ব্যথা নিয়া/তুমি কাঁদ, আমি কাঁদি, কাঁদে মোর প্রিয়া।’ কবি প্রেমের মান-অভিমান-রহস্য-এসবকেও প্রকৃতির ভাবমূর্তিতে তুলে ধরেছেন, ‘মানিনী কেঁপেছে মুখ নিশীথিনী কেশে? ঘুমায়েছে একাকিনী জ্যোছনা বিছানে?/ চাঁদের চাঁদনী বুঝি তাই এত টানে/ তোমার সাগর-প্রাণ জাগায়। জোয়ার?/ কী রহস্য আছে চাঁদে লুকানো তোমার?’ (সিন্ধু) কবি সিন্ধুর বিদ্রোহী ও বিরহী রূপের মধ্যে সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করে নমস্কার জানিয়েছেন- “হে মহান। হে চির বিরহী/ হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর, হে মোর বিদ্রোহী। সুন্দর আমার/ নমস্কর। বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতায় কবিপ্রিয়া প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার, ‘জাগিয়া একাকী জ্বালা করে আঁখি আসিত যখন জল/ তোমাদের পাতা মনে হত যেন সুশীতল করতল/ আমার প্রিয়ার/ তোমার শাখার পল্লব-মর্মর মনে হত যেন তারি কণ্ঠের আবেদন সকাতর।’ ‘কর্ণফুলী’ কবিতাতেও কবি নদীকে প্রকৃতির সাথে এক করে ফেলেছেন, ‘তুমি কি পদ্মা, হারানো গোমতী, ভুলে যাওয়া ভাগীরথী/ তুমি কি আমার বুকের তলার প্রেয়সী অশ্রুমতি?’
নজরুলের রোমান্টিক মানস আরো প্রকাশ পেয়েছে-বাসন্তী, ফাল্গনী, রাখীবন্ধন, চাঁদনীরাতে-ইত্যাদি কবিতার প্রকৃতি বর্ণনায়। কবি শহীদ সেনাদের মৃত্যুকেও প্রকৃতির ভাবমূর্তিতে তুলে ধরে রোমান্টিক আকুলতার পরিচয় দিয়েছেন, ‘আয় ভাই তোর বৌ এলো ঐ সন্ধ্যা মেয়ে রক্তচেলী পরে/ আঁধার শাড়ী পরবে এখন পশবে যে তোর গোরের বাসর ঘরে।’ (কামাল পাশা)। এখানে রক্তচেলী পরা সন্ধ্যা মেয়েকে শহীদের বৌ, আঁধারকে শাড়ি ও গোরকে বাসর ঘর রূপে কল্পনা করায়। কবির রোমান্টিকতার চরম উৎকর্ষ লক্ষ্য করা যায়।
রোমান্টিক কবিদের ভেতর অতীতচারণা লক্ষ্য করা যায়। অতীত ঐতিহ্য এবং মীথকে রোমান্টিক মানস প্রবণতায় নতুন করে তারা উপস্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক মানস পরিভ্রমণ করেছে ভারতীয় পুরাণের রাজ্যে। নজরুল ইসলামের রোমান্টিক মানস ভ্রমণ আরো বিস্তৃত। তিনি ভারতীয় গ্রীক, মুসলিম-ইত্যাদি পুরাণের রাজ্যে ভ্রমণ করেছেন। সৌন্দর্যের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল বলেই তিনি অসুন্দর, পুরাতন ও পঙ্কিলকে ভেঙে একটি সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ করতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি খুঁজেছেন ‘যৌবন দৃপ্ত বেগবান সাহসী পুরুষ’কে;৩৫ যে অসুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরকে নির্মাণ করতে সক্ষম। এই বেগবান পুরষকে কবি ভারতীয় পুরাণে শিবের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন বলে ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় নটরাজ শিবের চিত্র এনেছেন, ‘আসছে এবার অনাগত প্রলয়-’নেশার নৃত্য পাগল/ সিন্ধু পারের সিংহ দ্বারে ধমক হেনে ভাঙতে আগল।’ সিন্ধু পারের বিশাল পটভূমিতে এখানে শিব উপস্থাপিত। প্রলয়-নেশার নৃত্য ‘পাগল’ অর্থাৎ অসুন্দরকে ধ্বংস ও প্রলয়ের নেশায় উন্মত্ত শিব এগিয়ে এসে জীর্ণ পুরাতন সমাজকে ধ্বংস করে নির্মাণ করবে নতুন সমাজ। তাই এবার মহানিশার শেষে আসবে উষা অরুণ হেসে। করুণবেশে।’ অর্থাৎ ধ্বংসের পরে আসবে সৃষ্টি। নতুন আলোর উষা, এখানে নতুন সৃষ্টির প্রতিরূপক (Allegory)। প্রেম ও সৌন্দর্যের একটা প্রতিরূপক কবি নির্মাণ করেছেন-“দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু-চাদের কর/ আলোয় তার ভরবে এবার ঘর।’ এখানে “শিশু-চাঁদ” রোমান্টিক মনের নতুন সুন্দর সমাজের প্রতীক।৩৬
‘বিদ্রোহী’ কবিতাতেও কবি নটরাজ শিবের ধ্বংস ও সৃষ্টির মধ্যে রোমান্টিক আকুলতাকে চমক্কারভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি, মহা প্রলয়ের আমি নটরাজ। আবার বলেছেন-“আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন হারা ধারা গঙ্গোত্রীর” অর্থাৎ গঙ্গাধারাকে। পৃথিবীতে নামিয়ে আনার কথাও বলেছেন। কবির প্রত্যয়-“আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু বক্ষ হইতে যুগলকন্যা।” সৃষ্টির পালনকর্তা হিসেবে ভারতীয় পুরাণে বিষ্ণুর খ্যাতি আছে। বিষ্ণু যুগে যুগে সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করেছেন। ‘যুগলকন্যা’ হচ্ছে এখানে বিষ্ণুর দুই পত্নী লক্ষ্মী ও সরস্বতী বা বীণাপাণি।’ বিষ্ণুর কল্যাণরূপের মতো তার পত্নীদ্বয় মানুষের কল্যাণ ও শুভাশুভের প্রতিরূপক। লক্ষ্মী অর্থাৎ ধনদেবী এবং সরস্বতী অর্থাৎ বাগদেবী মানুষের শুভাশুভের বিধান কর্ত্রী। ‘বিশেষ করে বাগদেবী সরস্বতী মানুষের হৃদয়কে পবিত্র ও নির্মল করেন, সত্য ও সুন্দরের পালনকর্তীও তিনি।’৩৭ এই মিথ ব্যবহারে কবির সৌন্দর্য-আকাক্ষা তথা রোমান্টিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সৌন্দর্য কামনা বা রোমান্টিক ব্যাকুলতার প্রাবল্যের জন্য কবি মিথকে নতুনভাবে নির্মাণ করে তৃপ্তি খুঁজেছেন। কবি বলেছেন, ‘আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদচিহ্ন।’ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব-এই তিনজনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা জানার জন্য নিদ্রিত বিষ্ণুর বুকে ভৃগু গদাঘাত করেছিল। ভারতীয় পুরাণে ভগবান বিষ্ণু কল্যাণের দেবতা। কিন্তু নজরুল ইসলাম এখানে ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিরূপক হিসেবে ভাগবানকে কল্পনা করেছেন এবং বিদ্রোহী ভৃগু শুধু দেবতার শ্রেষ্ঠত্ব পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত নয়।৩৮ খেয়ালী বিধির বক্ষ বিদীর্ণ করার অভিপ্রায়ের মধ্যে তার সৌন্দর্যাকাভক্ষাই ব্যক্ত হয়েছে। মূলতঃ নজরুলের কবিতার চরণে যে মিথের ব্যবহার তা কবির রোমান্টিক মানসেরই বিস্তৃত বহিঃপ্রকাশ।
ইংরেজ রোমান্টিক কবিদের মধ্যে কতকগুলো আলাদা বৈশিষ্ট্য বা রোমান্টিক আদর্শ পরিলক্ষিত হয়েছিল। যেমন (১) বিষয়বস্তু, আঙ্গিক, রচনাশৈলীর ক্ষেত্রে গতানুগতিক প্রচলিত ধারা অনুসরণ করার পরিবর্তে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রবণতা। -ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের লিরিক্যাল ব্যালার্ডস এর দ্বিতীয় সংস্করণের (১৮০০) ভূমিকায় বলা হল যে, কবিতার বিষয় হবে ‘Common life’ এর, ভাষা হবে-’a selection of language really used by men,’ (২) লিরিকাল ব্যালাডস এর ভূমিকায় ওয়ার্ডসওয়ার্থ বার বার ভাল কবিতাকে বর্ণনা করেছেন-the spaontaneous overflow of powerful feeling’ বলে। এখানে জোর পড়ল স্বতঃস্ফূর্ততার ওপর, -কীটস লিখলেন If poetry comes not as naturally as the leaves to a tree, it had better not come at all’৩৯
নজরুলের কবিতাগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং কবির মানসপ্রবণতা বিশ্লেষণ করলে এইসব রোমান্টিক আদর্শ সহজেই লক্ষ্য করা যায়। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাতে নজরুলের বিদ্রোহ শুধু ভাবনায় নয়, ভাষা এবং ছন্দের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট। মাইকেল মধুসূদন বিদ্রোহ করেছিলেন অমিত্রাক্ষর ছন্দে কবিতা লিখে আর নজরুল ইসলাম বিদ্রোহ করলেন মুক্তক মাত্রাবৃত্তের ছন্দে কবিতা লিখে। কবিতায় শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নজরুল নতুনত্বের দাবীদার—’অগ্নিবীণা’ শব্দ ব্যবহার বাংলা কবিতার বহুদিনকার অলস শব্দ সুষমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ। শব্দকে নজরুল ইসলাম একটি প্রবল স্রোতধারার প্রবাহের মতো ব্যবহার করেছেন; যে ভঙ্গিকেইডিথ সিটওয়েল পর্বত শিখর থেকে নিম্নভূমিতে গড়িয়ে পড়ার ভঙ্গি বলে আখ্যাত করেছেন।’৪০ মূলতঃ ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যে ‘যে কবি-কণ্ঠস্বর শোনা গেল, রবীন্দ্রনাথের যুগে তা এক বিস্ময়কর কলধ্বনি। ধ্বনি বিন্যাসের নতুন প্রযত্বে, শব্দ ব্যবহারের একটি হিল্লোলিত তরঙ্গাঘাতে, বক্তব্যের একটি নিশ্চিন্ত উদ্দাম দ্বিধামুক্ত গতিতে বাঙলা কাব্যে ‘অগ্নিবীণা’ একটি অভিনব সংযোজন। ভক্তি ও নিবেদনের বিনয়াবর্তে যে বাংলা কবিতা এতদিন রবীন্দ্র-কাব্যের ধ্যান গভীরতায় স্থিত ছিল, নজরুল ইসলাম সে কবিতায় একটি অবলীল স্বাধীন স্ফূর্তি এবং অবাধ আবেগ সঞ্চার করলেন।৪১ রবীন্দ্র রোমান্টিকতার বাইরে নজরুল ইসলাম নতুন রোমান্টিকতার প্রাণপুরুষ। তাঁর কাব্যের রোমান্টিকতার বৈশিষ্ট্যগুলো একথাই প্রমাণ করে যে তিনি বাংলা কাব্যের সবচেয়ে বড় রোমান্টিক কবি।
এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় যে, রোমান্টিকতার জন্য তার কবিতাগুলো রুগ্ন বা দুর্বল হয়ে পড়েনি। বরং কবিতাগুলো সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান বিধায় ক্লাসিক স্থাপত্যের মতো ভাস্বর হয়ে আছে। নজরুল ইসলাম একই সঙ্গে রোমান্টিক এবং ক্লাসিক কবি। কেন না ‘ক্লাসিক হচ্ছেন সেই লেখক যিনি মানুষের আত্মাকে সমৃদ্ধ করেছেন, জ্ঞানের অনুভূতির ভান্ডারে নতুন সম্পদ সংযোজন করেছেন, মানবতাকে দিয়েছেন কোন দ্ব্যর্থহীন নৈতিক সত্যের নিশ্চিত সন্ধান কিংবা কোনো শাশ্বত আবেগের অনন্য উপলব্ধি, অনিবার্য করে তুলেছেন অগ্রগতির কোনো নতুন ধাপ; যিনি তাঁর চিন্তাধারাকে, অনুসন্ধানের ফলকে-আবিস্কৃত বিরল সত্যকে তুলে ধরেছেন ব্যাপ্ত উদারতায়, রুচির পরিশীলনে, যুক্তিবিচারের প্রশান্তিতে ও সৌন্দর্যের দীপ্তিতে; যিনি স্রষ্টার আসনে বসে অনন্য শৈলীতে কথা বলেছেন, অথচ বলেছেন মানুষের মনের কথাই’।৪২ নজরুল ইসলামের রোমান্টিক মানসের মধ্যে ক্লাসিকের এই বৈশিষ্ট্যগুলো যে বিদ্যমান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে ।
তথ্য নির্দেশ ও টীকা
- (১) ‘Romanticism, genarally speaking, is the expression in terms of art of sharpened sensibilities, heightened imaginative feeling and although we are concerned only with its expression in literature. Romanticism is an imaginative point of view that has influenced many art foms and has left its mark also in philosophy and history. The loose popular meaning attached to the word indicates roughly its defects rather than its merits, for it is often used as synonymous for extravagances and sentimentality. ‘Arthur Compton-Rickett-A history of English Literatrue – Universal Book stall, New Delhi-Pep-1989, page 292
- (২) C.T. Onions (Edited) The shorter Oxford English Dictionary – Oxford University press London, 3rd Edition, 1970, page-1750
- (৩) ডঃ শীতল ঘোষ-ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাস-বর্ণালী, কলিকাতা দ্বিতীয় মুদ্রণ, নভেম্বর ১৯৮৯, পৃঃ২৭৭
- (৪) আবুল কাসেম ফজলুল হক (অনুঃ)- ক্লাসিক কি? (মূল-চার্লস-অগাস্টিন সত্বভ)- লোকায়ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক একাদশ বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, নভেম্বর ১৯৯২, ঢাকা, পৃঃ-৮
- (৫) প্রাক্ত-পৃঃ ৮-৯
- (৬) ডঃ শীতল ঘোষ-প্রতক্ত-পৃঃ ২৭৭।
- (৭) প্রাগুক্ত-পৃঃ ২৭৮।
- (৮) শ্ৰীশ চন্দ্র দাশ-সাহিত্য সন্দর্শন (ভূমিকা রুহুল আমিন উলে) বর্ণবিচিত্র, ঢাকা (প্রকাশকাল উল্লেখ নেই) পৃঃ ১৯৩।
- (৯) প্রাগুক্ত – পৃঃ ১৯৪
- (১০) ঐ।
- (১১) ঐ।
- (১২) ডঃ শীতল ঘোষ-প্রাগুক্ত – পৃঃ ২৮৮।
- (১৩) প্রাগুক্ত – পৃঃ ২৮৮।
- (১৪) প্রাগুক্ত – পৃঃ২৮৫-৮৬
- (১৫) প্রাগুক্ত – পৃঃ ২৮৭।
- (১৬) শ্ৰীশ চন্দ্র দাশ-প্রাগুক্ত – পৃঃ ১৯৫।
- (১৭) Arthur compton Rickett, Ibid, page-292.
- (১৮) রহিম আজিজ-বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসঃ রোমান্স প্রসঙ্গ-’শিল্পতরু’ (সম্পাদক আবিদ আজাদ), ঢাকা ৫ম বর্ষ ২য় সংখ্যা, এপ্রিল ১৯৯২, পৃঃ ৮১
- (১৯) দীপ্তি ত্রিপাঠী-আধুনিক বাংলা কাব্য পরিচয়-দেজ পাবলিশিং, কলিকাতা চতুর্থ সংস্করণ, মার্চ ১৯৮৮, পৃঃ-১৭
- (২০) প্রাগুক্ত – পৃঃ ১৯।
- (২১) মোবাশ্বের আলী-নজরুল প্রতিভা-মুক্তধারা, ঢাকা। তৃতীয় সংস্করণ, ফাল্গুন ১৩৯৫, পৃঃ ১০৫-১০৬।
- (২২) সৈয়দ আলী আহসান (অনুঃ ও সম্পাঃ) হুইটম্যানের নির্বাচিত কবিতা, বাঙলা একাডেমী, ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ-সেপ্টেম্বর ১৯৮৭, পৃঃ ৯৭।
- (২৩) শাহাবুদ্দীন আহমদ-নজরুলের চিন্তা-’শিল্পতরু’, (সম্পাদক আবিদ আজাদ) ঢাকা, নজরুল সংখ্যা ১৯৯০, পৃঃ-৩৫।
- (২৪) Thomas Hutchinson (Edited). The complete poetical works of Percy Bysshe Shelly-Oxford University press, London, rep, 1960, page-216-17.
- (২৫) সৈয়দ আলী আহসান, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৭।
- (২৬) মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান-বাঙলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত- (আধুনিক যুগ) বইঘর, চট্টগ্রাম, ৩য় সংস্করণ,১৯৬৮, পৃঃ ৪২২।
- (২৭) Thomas Hutchinson-Ibid, page-575.
- (২৮) মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান-প্রাগুক্ত – পৃঃ ৪২২
- (২৯) Thomas Hutchinson-Ibid, page-573.
- (৩০) Louis Untermeyer (by)-A Treasury of Great Poems’-New York, sixteenth printi, page-1175.
- (৩১) মোবাশ্বের আলী প্রাগুক্ত – পৃঃ ১১১।
- (৩২) সৈয়দ আলী আহসান-প্রাগুক্ত – পৃঃ ১০০।
- (৩৩) দীপ্তি ত্রিপাঠী-প্রাগুক্ত – পৃঃ ১২৪।
- (৩৫) Thoman Hutchinson-Ibid-page-582.
- (৩৫) মাহবুব সাদিক-মিথ-ঐতিহ্য চেতনা এবং নজরুলের কবিতা-’শিল্পতরু’ (সম্পাদক আবিদ আজাদ), ঢাকা, নজরুল সংখ্যা ১৯৯০, পৃঃ ৪৭।
- (৩৬) প্রাগুক্ত – পৃঃ ৫০
- (৩৭) প্রাগুক্ত – পৃঃ ৫৩
- (৩৮) প্রাগুক্ত – পৃঃ ৫৪
- (৩৯) কবীর চৌধুরী-সাহিত্য কোষ, শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১, পৃঃ ৫৩।
- (৪০) সৈয়দ আলী আহসান-আধুনিক বাংলা কবিতা ও শব্দের অনুষঙ্গে- আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, নভেম্বর, ১৯৭০, পৃঃ-১৪।
- (৪১) মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান- প্রাগুক্ত-পৃঃ ৪২১-২২
- (৪২) আবুল কাসেম ফজলুল হক, প্রাগুক্ত-পৃ১২।
- [সূত্রঃ নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা যোড়শ সংকলন]
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।