লিখেছেনঃ চৌধুরী আতিকুর রহমান
তৎকালীন সুপার পাওয়ার আলেকজান্ডার পারস্য জয় করেছিলেন ৬ মাসে। তারপর আফগানিস্থান । এরপর আলেকজান্ডারের লক্ষ্য ছিল ভারত বিজয়। এর জন্য ভারতবর্ষের পাঞ্জাব পর্যন্ত তিনি পৌঁছেছিলেন। সেখানে বীর অধিপতি পুরু আলেকজান্ডারের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শেষে পরাজিত হয়েও বীরত্বের পুরস্কার স্বরূপ আপন রাজ্য ফিরে পান। এরপর আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য জেদাজেদি শুরু করে। যোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তখনই পালায় যখন তার সামনে পরাজয়ের ভীতি দেখা যায়। যে বাহিনী পারস্য জয় করতে ছয় মাস নিয়েছিল তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার মূল কারণ হলো, আফগানিস্থান । কারণ, আফগানিস্থান এর প্রতিকূল জলবায়ু ও কঠোর মনোভাবাপন্ন মানুষের দেশ জয় করতে গিয়ে আলেকজান্ডারের বাহিনীকে তিন বছর ধরে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল। যার জন্য ২৬০০ অশ্বারোহী ও ১৯,৪০০ পদাতিকের নতুন একদল সেনাকে ডাকতে হয়। এরা আফগানিস্থানে প্রবেশ করতে পারলেও গেরিলা আক্রমণ তাদের জেরবার করে দেয়। মেসিডোনীয় সৈন্যরা ভারতে প্রবেশের আগেই আফগানিস্থান থেকেই তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল বলে মনে হয়। এরপর খাইবার পার হয়ে অম্ভীর সহায়তায় রাজা পুরুর ভয়াবহ হস্তি বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে তারা আরো মনোবল হারিয়ে ফেলে।
কিছুদিন পূর্বে কোরআন পোড়ানোর মতো দুর্ঘটনাটির তদন্ত করার জন্য যে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছিল তার এক সদস্য হলেন মোল্লা খালেকদাদ। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোরআন পোড়ানোর জন্য যেমন সমস্ত দেশজুড়ে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়েছে, তেমন আন্দোলন তো মার্কিন সেনা, রবার্ট বেল কর্তৃক ১৬ জন নিরীহ মানুষকে একপ্রকার দাঁড় করিয়ে খুন করার বিরুদ্ধে বলা হলো না কেন? মোল্লা খালেকদাদ প্রশ্নকর্তার মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কেমন করে পবিত্র কোরআন অবমাননার সঙ্গে নিরীহ মানুষগুলোর হত্যা সমান চোখে দেখলেন? আমাদের সমস্ত জীবন ও জীবন যাপন ধর্মকে কেন্দ্র করেই”। একই রকম প্রশ্ন করা হয়েছিল, আফগানিস্তানের উচ্চতম আলেমদের সংগঠন উলেমা ইংলিশ কাউন্সিলের আলেম সদস্য হাফেজ আব্দুল কাইয়ুমকে। তাঁর বক্তব্য “মুসলিমদের কাছে বিশেষ করে আফগান মুসলিমদের কাছে ধর্ম হচ্ছে নিরীহ মানুষদের হত্যা অপেক্ষা বহু বেশি প্রভাব বিস্তারকারী”। কোরআন পোড়ানোর পর প্রতিটি নাটো সেনা ছাউনির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হয় যা দু সপ্তাহ ধরে অবিরত গতিতে চলতে থাকে। অবশেষে ২৯ জনের প্রাণ যায়।
সমস্ত কথোপকথনের পর মার্কিনিদের হাঁ করে দেখা ছাড়া আর এই ধরনের লোকদের কাছ থেকে যত দ্রুত হোক সরে যাওয়া ভালো– এই ভাবনা ছাড়া আর কি-ইবা করার আছে। তাদের বস্তুবাদী চোখে আফগানিস্তানের আফিম, খনিজ ও দেশটির আকর্ষণীয় অবস্থান ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। তারা ভাবে না যে, ধর্ম পালন ও ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে যে মানসিক প্রস্তুতি দরকার তা এই জোব্বা পাগড়ী পরা জবরদস্ত মানুষগুলির মধ্যেই রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাম্রাজ্যবাদীদের খবরস্থান হলো আফগানিস্থান ।
আফগানিস্থান এমন একটি রাষ্ট্র যাকে বলা যায় এশিয়ার সংযোগস্থল। এই সংযোগস্থলটি আবহমানকাল ধরে সমৃদ্ধশালী, লোভাতুর কিংবা জ্ঞানপিপাসু বিশ্ব সর্বদা পূর্ব থেকে পশ্চিমে, পশ্চিম থেকে পূর্বে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছে। এই পথে আদিম মানব হেমিটিক প্রবেশ করেছিল, গড়ে তুলেছিল মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার মত সমৃদ্ধ জনপদ। এই পথেই আর্যরা প্রবেশ করেছিল, এরাও বিশ্বসভ্যতাকে প্রচুর দিয়েছে, দিয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদ সম্পৃক্ত হিন্দুধর্মকে। এই পথেই বৌদ্ধধর্ম মধ্য এশিয়ায় ও চীনে প্রবেশ করেছিল, হিউয়েন সাং ইত্যাদি চীনা পরিব্রাজকরা জ্ঞান অর্জনের জন্য উক্ত এলাকার বুক চিরে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এই পথেই। আলেকজান্ডার সেনা বাহিনী নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এই পথে। দেখা গেছে একাদশ শতকে সুলতান মাহমুদ যখন ভারতবর্ষে আক্রমন করেছিলেন তখনও কাবুলে ছিল হিন্দু শাহি রাজাদের রাজত্ব। সুলতান মাহমুদ ও মোহাম্মদ ঘোরি এই পথে ভারতে প্রবেশ করলেও আরব মুসলিমরা ভারতে প্রবেশ করেছিল সমুদ্রপথে। একইভাবে ইংরেজরা প্রবেশ করেছিল সমুদ্রপথে। ইংরেজরা পূর্বপ্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করলেও ক্রমশ পশ্চিমদিকে রাজ্য বিস্তার করতে করতে খাইবার গিরিপথে এসে সামান্য বিরতি দেয়। অতঃপর ক্রমাগত এগিয়ে আসা রুশ ভীতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আফগান রাজ্য দখলের পরিকল্পনা করে। আমরা জানি বিংশ শতকের শেষে এসে সোভিয়েত রাশিয়া পর্যদুস্ত হয়ে সোভিয়েত নামটিকেই ইতিহাস করে দিয়েছে। তখন অনেকেই বলেছিলেন পাশ্চাত্য ও আরব দেশগুলো অস্ত্র ও জনবল দিয়ে সাহায্য করেছিল বলেই আফগানরা সোভিয়েত দেশকে তাড়াতে পেরেছিল, মার্কিন-ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে আফগানরা পর্যদুস্ত হল বলে। এখন তাঁরাই বলছেন আফগানরাই পারে।
আফগানরাই পারে। তবে এই কাজগুলো করতে গিয়ে বারবার আফগানরা কঠিন মূল্য দিয়ে চলেছে। মূল্য দিতে হচ্ছে তাদের অমূল্য প্রাণ দিয়ে। একটি কথা জানার আছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আফগানরা আক্রান্ত হয়েছে আফগানরা আক্রমণ করেনি।
প্রতিটি যুদ্ধে তারা তাদের অমূল্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। প্রাণ যে কোন মানুষের কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়, এক্ষেত্রে আমি আফগানদের সম্পদ, সম্মান বা আত্মমর্যাদা বিসর্জনের কাহিনীটি না হয় নাই বললাম। আমরা এখন দেখব আফগানদের প্রাণ বিসর্জনের খতিয়ান। আফগানিস্থান আক্রমণের পর আফগানি মানুষের হত্যাকান্ড ২০১০-১১ বছরে ৮% বেড়েছিল। তাহলে সেই সংখ্যাটি কত?
২০০১-এ বিদেশি সেনার অধিকারের পর ২০০০ থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আফগান সাধারণ মানুষের হত্যাকান্ড প্রতিবছর বাড়ছে। বিগত ৬ বছরে সংখ্যাটি হল ১২৭৯৩ সপ্তাহান্তে (৫-১২ মার্চ ২০১২) এক মার্কিন সেনা একটি আফগান গ্রামে যে হত্যাকান্ড চালিয়েছে তা থেকে ন্যাটো অভিযান বিষয়ে এক মারাত্মক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর কি সত্যই কোনও প্রয়োজন ছিল? ধরেই নেওয়া যাক ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য আরও কয়েকগুণ বেশি হত্যার প্রয়োজন ছিল কি?
আফগানিস্থানে এবার কার পালা?
মার্কিন সরকার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া তাদের দেশের ছেলেগুলোর মৃত্যুহার কমিয়ে দেখানোর জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে নিযুক্ত করেছে যাদের কাজই হলো মার্কিন স্বার্থের নিরাপত্তা। এদের নাম ডাইনকর্প, ব্ল্যাক ওয়াটার ইত্যাদি। যদিও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য এদের মাঝে মাঝে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। তবে কিছুদিন পর অন্য এক নাম নিয়ে এরা নতুনভাবে কাজে নেমে পড়ে। যেমন–ব্ল্যাকওয়াটার হয়েছে এক্স-ই।
নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্ক হেরাল্ড অক্টোবর ৭, ২০০১ থেকে ৩-রা জুন ২০০৩ পর্যন্ত আফগানিস্থান এ সেনার হাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর একটা খতিয়ান দিয়েছেন। আফগানিস্তানে সরাসরি আক্রমণে মারা গেছে ৩১০০ থেকে ৩৬০০ জন মানুষ। এছাড়াও অপ্রত্যক্ষ মৃত্যু যেমন– যুদ্ধকালীন আঘাত থেকে, অবিস্ফোরিত বোমা থেকে, খাদ্য ও বাসস্থান হারানোর ফলে মৃত্যু হয়েছিল ৩২০০ থেকে ২০ হাজার জন মানুষের। অর্থাৎ দুইয়ে মিলে একটা চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে মোট আফগানির মৃত্যু হয়েছিল ৬৩০০ থেকে ২৩৬০০।
গতবছর ৩০২১ জন নিরীহ মানুষের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ২৩৩২ টির জন্যে দায়ী করা হয় তালিবানকে যা ২০১০- এর তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। UNAMA (United Nations Assistance Mission in Afganistan) নামক সংস্থাটি বলছে সরকারবিরোধীরা ৭৭% হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। একই সময়ে ন্যাটো বাহিনীর হাতে মারা গেছে ৪১০ জন, আহত ৩৩৫ জন। বোমা বিস্ফোরণ ও তাৎক্ষণিকভাবে প্রস্তুত বিস্ফোরক ব্যবহার করে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধাচারণ করা হয়।
২০১১-ই ইমপ্প্রোভাইড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED) দ্বারা হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সাধারণ মানুষ রয়েছে ৯৬৭ জন, আহত ১৫৮৬ জন। তালিবানরা আইইডি বা বোমা বিস্ফোরণের জন্য যেমন সামরিক নিশানা খোঁজে তেমনই সেই সকল ব্যক্তিকে খোঁজে যাদের সঙ্গে বর্তমান আফগান সরকারের সামান্যতম যোগাযোগ রয়েছে। তালিবান দ্বারা নিহত ব্যক্তিবর্গ সরাসরি কোনও সামরিক অভিযানে যোগ না দিলেও গোয়েন্দা বিভাগ ও সরকারি দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত অথবা শুধুই সরকারের সমর্থক। যেহেতু এই সকল ব্যক্তি সাধারণ লোকের মধ্যে বসবাস করে– কোনও সেনাছাউনিতে নয়, তাই এদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য তালিবানরা ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু উক্ত সরকারি ব্যক্তি বা সমর্থক দুনিয়া থেকে গেলেও বহু নিরীহ মানুষ মারা যায়।
এইসব দেখে তালিবানরা লড়াই সম্পর্কে নীতি প্রণয়ন করেছে এবং লড়াইয়ের আচরণবিধি ঘোষণা করেছে ২০১১-র ৩০-শে এপ্রিল। শিরোনামটি ছিল,
‘গ্রীষ্মের প্রারম্ভে সামরিক গতিবিধি বা বদরযোদ্ধার সামরিক গতিবিধি’।
এই ঘোষণায় বলা হল,
‘বসন্তকালীন সামরিক গতিবিধির জন্য তালিবানরা শুধুমাত্র সামরিক চরিত্রের নিশানাগুলিতেই আক্রমণ করে। তার জন্য যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ এবং কঠোরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোনো সাধারণ মানুষের গায়ে কোনো রকম আঁচড় না পড়ে। এর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সামরিক পরিকল্পনাও করা হবে।’
২০১১-র আগস্ট মাসে ঈদের সময় আরও এক ঘোষণাপত্রে বলা হল,
‘তালিবানদের আচরণবিধি অনুযায়ী সাধারণ লোকের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করাই হল জিহাদের উদ্দেশ্য।’
আফগানিস্থান এর সাধারণ মানুষের বিপরীতে ২০১২-র জানুয়ারি পর্যন্ত মার্কিন- ন্যাটো বাহিনীর মোট মৃতর সংখ্যা ছিল ২৮৪৫ জন। বিরোধিতা ও সামরিক প্রাণ ক্ষয়ের হার ২০০৮ থেকে বেড়ে গিয়ে ২০১০- এ তুঙ্গে উঠে। দেখাই যাচ্ছে সাধারণ লোকের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সেনাদের ভবলীলাসাঙ্গের অনুপাতটি সমানুপাতে বেড়েছে। ২০০৯-এ সেনা মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫১২ জন ২০১০-এ তা বেড়ে হল ৭১১ জন। ২০০৯-এ আইইডি (IED) আক্রমণ হয় ৭২২৮ টি, ২০১০-এ ১৪৬৬১ টি। শুধুমাত্র ২০১০-এই আইডি আক্রমণে ৩৩৬৬ জন মার্কিন সেনা আহত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ সংক্রান্ত কলেজ কার্লাইল ব্যারাক একটা প্রতিবেদন তৈরি করে। বিষয় কেন মহাশক্তিধর দেশগুলি আফগানিস্থান দখলে রাখতে পারে না। হঠাৎ হঠাৎ করে বরফ ঢাকা পাহাড় বা শুকনো মরুভূমি এলাকা থেকে লাগাতার আক্রমণ চলতে থাকলে তার মোকাবিলা সম্ভব নয়। এই আক্রমণের পরই প্রতি আক্রমণ হলে তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে যায়। গ্রীকদের আফগানিস্থান জয় করতে এসে অগাধ জলে পড়ে যাওয়ার যে কারণ ইতিহাসে দেখানো হয়েছে তা এখনও আফগান মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমান যুগের প্রেক্ষিতে বিচার করলে বোঝায় যায় আফগান চরিত্রের কণামাত্র পরিবর্তন হয়নি, বিশেষ করে বৈদেশিক আক্রমণকারীদের ক্ষেত্রে। তারা বিজিত জাতি গুলিকে নিজেদের অঙ্গীভূত অঙ্গীভূত করে নিয়েছে বটে তবে সরাসরি বিদেশি শাসন মেনে নেয়নি।
সামানি বৌদ্ধ, বিশ্ব ত্রাস চেঙ্গিস খান বাহিনীকে ১২২১-এ আলাউদ্দিনের উদ্যমী পুত্র জালালউদ্দিন মঙ্গাবরণী খিভা থেকে পালিয়ে কাবুলের নিকট আফগান পাহাড়ি অঞ্চল জবল আস সিরাজের লোকদের সঙ্গে নিয়ে পরাজিত করেন। চেঙ্গিস যাঁকে শুধু বিশ্বত্রাসই নয় ঈশ্বরের অভিশাপ বলা হত তিনি বামিয়ান অঞ্চলকে অবরোধ করেন। ইতিমধ্যে পৌত্র মুতুজেনকে এক গেরিলা আক্রমণে আফগানরা মেরে ফেলে যা কিছুই নড়াচড়া করছে তাকেই মেরে ফেলে। ক্রোধান্বিত চেঙ্গিস হুকুম দেন যা কিছু নড়াচড়া করছে তাকেই মেরে ফেল।
এদিকে চেঙ্গিসের পুত্র জালালউদ্দিনকে পরাজিত করলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। জালালউদ্দিনের হাতেই চেঙ্গিসের প্রথম পরাজয় এবং প্রথম তাঁর রক্ত সম্বন্ধীয় এক আত্মীয়কে হারান। যার ফল তাৎক্ষণিকভাবে আফগানদের উপর অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপে আপতিত হলেও এবং প্রায় সমস্ত আফগানিস্থানকে শ্মশানভূমিতে পরিণত করলেও আফগানিস্তানও তাঁকে চরম শিক্ষা দিয়েছিল।
১৮৩৯-এ এ প্রথম ব্রিটিশ আফগান যুদ্ধে আফগানরা পরাজিত হলেও ইংরেজদের বসান সম্রাট শাহ সুজাকে তিন বছর পর মেরে ফেলে ব্রিটিশ ছোট ছোট ছোট বাহিনীকে গেরিলা আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করত। ১৮৪২-এ আফগানিস্থানে নিযুক্ত ব্রিটিশ ২০ হাজার সৈন্যের মধ্যে মাত্র একজন, ফৌজের ডাক্তার ব্রাউডন আফগানিস্থানে তাদের ভয়ঙ্কর পরিণতির বর্ণনা দিতে ফিরে এসেছিলেন। এরপর ১৮৭৮-এ দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধেও আফগানরা প্রাথমিক পরাজয়ের পর গান্দমার্ক চুক্তি করে। ব্রিটিশরা কাবুলের কাছে পুরনো শেরপুর এলাকায় আস্তানা গড়লেও প্রায় ৫০ হাজার সাদা পোশাকের আফগান ব্রিটিশবাহিনীকে আক্রমণ করে। যদিও ব্রিটিশ বাহিনী যেতে তবে পুরনো কথা মনে করে বেশিরভাগ ফৌজ ভারতে ফিরিয়ে নেয়। অবশেষে বারংবার আক্রমনে পর্যুদস্ত হয়ে সমস্ত ব্রিটিশ সেনা ফিরে আসে। আফ্রিদি উপজাতির মেয়েরা ধরা পড়া বিদেশি সৈন্যদের মুখে প্রসাব করে মৃত্যুদণ্ড দিত।
এরপর ১৯১৯-এ আর একবার যুদ্ধ হয় এবং এই যুদ্ধেও ব্রিটিশ বাহিনী সুবিধা করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে খাইবার পেরিয়ে আফগানরাই প্রথম আক্রমণ করেছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্রিটিশরাও অর্থনৈতিক ভারসাম্যে হেরে গিয়েছিল।
দেখা যাচ্ছে আলেকন্ডার যেসকল পদ্ধতির সামনে পড়ে আফগানিস্তান এ বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। সেই একই রকম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল চেঙ্গিস খান বাহিনীর বিরুদ্ধে।
পদ্ধতিগুলি হল হঠাৎ আক্রমণ, রসদ সরবরাহে বাধা, মহিলাদের সম্মান রক্ষার বিশেষ আফগান ভাবনা। এর স্বাদ ব্রিটিশরা ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে পেয়েছিল। সোভিয়েত রাশিয়াও একই ধরনের গেরিলা আক্রমণের সামনে পড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। এই বিপর্যয়ের ফল হল সোভিয়েত রাশিয়ার অবলুপ্তি।এবার কার পালা?
উত্তর দিতে হবে কি?