লিখেছেনঃ হাবীবুর রহমান
জন্ম ও প্রাথমিক জীবনঃ আব্দুল আলিম ১০ জানুয়ারী ১৯৮৮ সালে “রাঙামাটির দেশ” নামে পরিচিত বীরভূম জেলার শালনদীর তীরে অবস্থিত শালজোড় গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাঙালী কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবু তালেব এবং মাতা আনারজান বেগম। আব্দুল আলিম সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের একজন উল্লেখযোগ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, গবেষক ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদ।
লেখক ব্যাক্তিগতভাবে বিজ্ঞানের বিষয়ে স্নাতক হলেও ইতিহাসের প্রতি রয়েছে তাঁর বিশেষ আকর্ষণ, সেজন্য তিনি ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ও ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতেই বেশী ভালবাসেন। এছাড়াও উৎসাহ রয়েছে যে কোনও সৃজনশীল কাজে। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে যুক্ত। এছাড়াও ‘নবজাগরণ’ নামে তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে নিয়মিত ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শণ, ধর্ম, রাজনীতি, সিনেমা সহ দেশে বিদেশের বিভিন্ন অজানা তথ্য প্রকাশিত হয়।
লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই ২০১০ সালে ‘ইতিহাস বিকৃতির প্রয়াস…। যদিও বর্তমানে বইটি বাজেয়াপ্ত। তাঁর প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘সিরাজউদ্দৌল্লা’। প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।
আব্দুল আলিম এই প্রজন্মের তরুন প্রগতিশীল লেখকদের মধ্যে একজন উদীয়মান লেখক। ২০১৮ সালে তাঁর প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘সিরাজুদ্দৌল্লা’ প্রকাশিত হয় ‘দেশ প্রকাশণ’ থেকে। বইটি রীতিমত পাঠক মহলে সাড়া পড়ে।
গ্রন্থ পরিচয়ঃ
সিরাজুদ্দৌল্লাহঃ সিরাজুদ্দৌল্লাহ উপন্যাসটি হল একটি সম্পূর্ণরূপে ঐতিহাসিক উপন্যাস। ইতিহাসকে আশ্রয় করে লেখা নতুন ছন্দে বাংলা, বিহার ও উড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহর জীবনকে নতুনভাবে এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে। সব থেকে আকর্ষণীয় ব্যাপার হল আমরা জানি নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহর সাথে মারাত্মক বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন তাঁরই অন্যতম নানাজান মীর মুহাম্মাদ জাফর আলী খান ওরফে মীর জাফর। কিন্তু এই উপন্যাসে মীর জাফরকে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহর হিতাকাঙ্খী ও চরম বিশ্বস্ত হিসাবেই দেখানো হয়েছে। মীর জাফর যে নবাবের হিতাকাঙ্খী ও চরম বিশ্বস্ত ছিলেন তা শুধুমাত্র কল্পনা করে লেখা হয়নি বরং এ নিয়ে প্রচুর ঐতিহাসিক গ্রন্থও রয়েছে যা ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ কিভাবে মসনদে আরোহন করলেন, কিভাবে অন্যধর্মের সুন্দরী নারী রাজ কুনওয়ারের সাথে প্রথমে প্রেম হল তারপরে বিবাহ হয়ে নাম হল লুৎফুন্নিসা, কিভাবে তাঁর বিরুদ্ধে সমকালীন বিশ্বাসঘাতকেরা ষড়যন্ত্র করে মসনদ থেকে চিরকালের জন্য বঞ্চিত করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল, কিভাবে তাঁরই বিশ্বস্ত অনুচর মোহনলালের অনিন্দ্যসুন্দরী বোন মাধবী ওরফে আলেয়া তাঁর প্রেমে শেষ পর্যন্ত উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল এইসবই হল এই উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। নতুন তথ্যে সম্বলিত উপন্যাসটির গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। স্বভাবতই উপন্যাসটি চিন্তাশীল পাঠক পাঠিকার প্রাণ স্পর্শ করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
‘দেশ প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত ১৬০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটির গায়ের মূল্য ২২০ টাকা।
শাহজাদা আওরঙ্গজেবঃ ১৬০ পৃষ্ঠার বৃহৎ পরিসরের উপন্যাসটির প্রতিটি পৃষ্ঠায় উঠে এসেছে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ফেলে আসা অজানা ইতিহাস। ‘শাহজাদা আওরঙ্গজেব’ বাংলাভাষায় প্রথম উপন্যাস যেটি আওরঙ্গজেবকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। শুধু তাই নয় এর আগে যতগুলো ঐতিহাসিক উপন্যাসে সম্রাট আওরঙ্গজেবের চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেগুলিতে মূলত তাঁকে একজন হিন্দু বিদ্বেষী, প্রজাপীড়ক, ধর্মান্ধ গোঁড়া মুসলিম শাসক হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু ‘শাহজাদা আওরঙ্গজেব’ উপন্যাসে লেখক মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম সেই প্রচলিত ধারা থেকে ভিন্ন পথে হেঁটে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে একজন মহান শাসক হিসেবেই দেখিয়েছেন যেটা পাঠককে রোমাঞ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
উপন্যাসটির সূচনা হয়েছে যখন মুঘল সম্রাট শাহজাহান ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘ তিরিশ বছর রাজত্ব করে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন এবং সম্রাটের চার পুত্র দারাশুকোহ, সুজা, মুরাদ ও আওরঙ্গজেবের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত শুরু হয়। নাটকীয়ভাবে সকল ভাইদের প্রতিদ্বন্দীতায় হারিয়ে সিংহাসনে আসীন হন আওরঙ্গজেব।
ইতিহাসের হাত ধরে উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে সম্রাট আওরঙ্গজেব কিভাবে শকুন্তলা নাম্নী একজন ব্রাহ্মণ তনয়াকে নিজ সেনাপতির হাত থেকে উদ্ধার করে সেই সেনাপতিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ব্রাহ্মণ তনয়ার সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন। বিশ্বনাথ মন্দিরে একজন নারীকে সেখানকার পুরোহিত ধর্ষণ করলে আওরঙ্গজেব সেই পুরোহিতের মৃত্যুদণ্ড দেন এবং মন্দিরটি ধ্বংস করে পুজোর বেদীমূল অন্যত্র স্থানান্তর করেন। এইসব মন ছুঁয়ে যাওয়া কিছু ঘটনাক্রম নাটকীয় ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ছত্রপতি শিবাজীর সাথে দ্বন্দ, শিবাজীর হাতে আফজল খানকে হত্যা, রাজপুতদের সাথে দ্বন্দের ইতিহাস প্রভৃতি নাটকীয়ভাবে উপন্যাসে উঠে এসেছে।
‘শাহজাদা আওরঙ্গজেব’ উপন্যাসের সবচেয়ে যে অধ্যায়টি রোমাঞ্চকর লেগেছে সেটি আওরঙ্গজেবের সাথে মহারানা রাজসিংসের সাথে যুদ্ধের অধ্যায়টি। এই অধ্যায়ে লেখক মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রকে সুন্দরভাবে কাউন্টার করেছেন। ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চঞ্চলকুমারী নামক চরিত্রের মাধ্যমে আওরঙ্গজেবের ছবিতে লাথি মেরে মুখ ভেঙে দিয়েছিলেন এবং বঙ্কিমের এই বিকৃত মানসিকতার জন্য বিভিন্ন মহলে চরমভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম তাঁর উপন্যাসে আওরঙ্গজেবের ছবিতে লাথি মারার প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ চঞ্চলকুমারীকে দিয়ে আওরঙ্গজেবের দরবারে ক্ষমা চাওয়া করিয়েছেন। যাঁরা ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসের বিতর্ক সম্পর্কে আবগত আছেন তাঁরা এই অধ্যায়টি বেশ ভালভাবেই উপভোগ করবেন বলে আমার মনে হয়।
উপন্যাসের শেষে আমরা দেখতে পাই যে রাজপুত রাজারা সারাজীবন সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে যুদ্ধ করে গেলেন তাদের মহারানীরা সম্রাটের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন এবং যে ছত্রপতি শিবাজীকে আওরঙ্গজেবের মুল প্রতিদ্বন্দি বলা হয় তাঁর পুত্র শাহুজী আওরঙ্গজেবের কবরে প্রতি বছর শ্রদ্ধা অর্পন করছেন।
সব দিক বিবেচনা করে বলা চলে ‘শাহজাদা আওরঙ্গজেব’ উপন্যাসটিতে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে সফলভাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
‘দেশ প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত ১৬০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটির গায়ের মূল্য ২২০ টাকা।
আকবর – এক ব্যতিক্রমী মুঘলঃ জহিরুদ্দিন মুহাম্মাদ বাবরের হাত ধরে মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয় প্রথম পানিপথের যুদ্ধের জয়লাভের মাধ্যমে। এই মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম শাসক ছিলেন হুমায়ুনের পুত্র সম্রাট জালালুদ্দিন মুহাম্মাদ আকবর। আকবরকে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ‘দ্য গ্রেট মুঘল’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কারণ তিনি ধর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট উদারনীতি অবলম্বন করেছিলেন। সেজন্য তিনি হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের সমন্বয়ে এক নতুন ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন যার নাম ছিল ‘দীন-ই-ইলাহী’। আবার অনেকে সম্রাট আকবরের বিভিন্ন নীতিকে চরম সমালোচনাও করেছেন। যাইহোক আকবরের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে এই গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে। নতুন তথ্যে সম্বলিত এই ইতিহাস গ্রন্থটির গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
লেখক এইভাবে আমাদের আরও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা উপহার দেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।