লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
গুলবদন বেগম ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর জন্মের সঠিক তারিখ জানা জায়নি। তাঁর জন্মের সময় পিতা সম্রাট বাবরের বয়েস ছিল উনিশ বছর। গুলবদন বেগম ছিলেন একজন মুঘল রাজকন্যা এবং মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের কন্যাদের মধ্যে একজন। গুলবদন বেগম সম্পর্কে এই গ্রন্থের মূল ফারসী পাণ্ডুলিপির সংকলক, সম্পাদক ও ইংরেজী অনুবাদক মিসেস এনিটা রেভারিজ বলেন,
“শাহজাদী গুলবদন বেগম বাদশাহ জহিরুদ্দিন মুহাম্মাদ বাবরের পুত্র কন্যা ছিলেন।”
গুলবদন বেগমের শৈশবকাল তাঁর পিতা বাবরের সাহচর্যে কাবুল এবং ভারতবর্ষে অতিবাহিত হয়। শৈশবে ও বিবাহিত জীবনে সম্রাট হুমায়ুনের সাহচর্যে অতিবাহিত হয়। এই সময় তিনি হুমায়ুনের উত্থান ও নির্বাসনের সকল স্বচক্ষে অবলোকন করেন। পরবর্তী জীবন ও বার্ধক্যকাল তিনি সম্রাট আকবরের তত্ত্বাবধানে অতিবাহিত করেন।
গুলবদন বেগম তাঁর ভাগ্নে সম্রাট আকবরের অনুরোধে ‘হুমায়ুননামা’ লিখতে শুরু করেন। ‘হুমায়ুননামা’ গ্রন্থটি তাঁর সৎভাই সম্রাট হুমায়ুনের জীবন অবলম্বনে রচিত। গুলবদন বেগম বাবর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেন, তবে তিনি হুমায়ুনের পরিবারের একটি বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং তাঁর সৎভাই কামরান মির্জার সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব সম্পর্কে বিরল উপাদানগুলি সরবরাহ করেন। তিনি দুঃখের অনুভূতি নিয়ে তাঁর ভাইদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন।
১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের যখন বাবরের মৃত্যুর হয় তখন গুলবদন বেগমের এর বয়স ছিল প্রায় আট বছর এবং তাঁর বড় সৎভাই হুমায়ুন তাঁকে লালন পালন করেছিলেন। তিনি ১৭ বছর বয়সে চুঘতাই বংশজাত খিজির খাজা খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খিজির খাজা ছিলেন তাঁর সম্পর্কে চাচাতো ভাই এবং তিনি মোগলস্তানের খান আহমদ আলকের পুত্র আইমান খাজা সুলতানের পুত্র।
গুলবদন বেগম জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেন কাবুলে। গুলবদনের ভাইবোনদের মধ্যে তাঁর বড় ভাই হিন্দাল মির্জা এবং অন্য দুই বোন, গুলরং বেগম এবং গুলচেহরা বেগম, তাঁর ছোট ভাই আলওয়ার মির্জা শৈশবেই মারা যান। তার ভাইবোনদের মধ্যে গুলবদন তাঁর ভাই হিন্দাল মির্জার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
গুলবদন বেগমের মা দিলদার বেগমের গর্ভে মোট পাঁচ সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে দুইজন পুত্র ও তিনজন কন্যাসন্তান। প্রথমা কন্যা গুলরং বেগমের জন্ম হয়েছিল ১৫১১ থেকে ১৫১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। প্রথমা কন্যার নাম ফুলের নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নামকরণ করা হয়েছিল গুলরং (ফুলের রং)। এরপর দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করেন গুলচেহারা চেহরা বেগম। গুলচেহারার পর পুত্র আবু নসর হিন্দাল ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর চার বছর পর্যন্ত দিলদার বেগমের আর কোন সন্তান হয়নি। পঞ্চম বছরে জন্মগ্রহণ করেন গুলবদন বেগম। তিনি দু’বছর নিজের মায়ের কাছেই থাকলেন। দু’বছর পর তার গর্ভে যখন আলওয়ার মির্জা জন্মগ্রহণ করেন তখন গুলবদন বৈমাত্রের মা বেগমকে মহম বেগমের কাছে ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু আলওয়ার ১৫২৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
গুলবদন বেগম ছিলেন স্বশিক্ষিত, সংস্কৃতিমনা একজন মহিলা। পড়াশোনা করতে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। উপরোন্ত তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি ছিল, যুদ্ধবিদ্যা সম্পর্কেও তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল।
গুলবদন বেগমের বয়স যখন দুই বছর তখন বাবর সিন্ধু অতিক্রম করে ভারত অভিযানে বের হন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাস্ত করে সুলতানী যুগের অবসান ঘটান এবং ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি মারা যাবার আগে ভারতবর্ষের মত বিশাল ভূখণ্ডের শাসনভার দিয়ে যান তাঁর জ্যোষ্ঠ পুত্র হুমায়ুনের হাতে। কিন্তু হুমায়ুন মানুষ হিসাবে ভালো হলেও পিতার মত যোগ্য শাসক ছিলেন না। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে পাঠান বংশের শের শাহ শূরী হুমায়ুনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে হুমায়ুন পরাজিত হয়ে তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী হামিদা বানু বেগম, একজন মহিলা পরিচারক এবং কিছু অনুগত সমর্থকদের নিয়ে প্রথমে লাহোরে এবং পরে কাবুলে পলায়ন করেন। তিনি পরবর্তী পনেরো বছর বর্তমান আফগানিস্তান ও পারস্যে নির্বাসনে ছিলেন। গুলবদন বেগম আবার কাবুলে বসবাস করতে শুরু করেন। শের শাহ মারা যাবার পর হুমায়ুন দিল্লী সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পর তিনি হারেমের অন্যান্য মুঘল মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে আগ্রায় ফিরে আসেন এবং পুনরায় শাসন শুরু করেছিলেন।
হুমায়ুনের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনভার এসে পড়ে জালালুদ্দিন মুহাম্মাদ আকবরের উপর। গুলবদন বেগম যখন বয়সের প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে যান তখন সম্রাট আকবর গুলবদন বেগমকে তাঁর পিতা হুমায়ুনের কাহিনি লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দেন। আকবর তাঁর ফুফু গুলবদন বেগমকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর গল্প বলার দক্ষতা জানতেন। মুঘল শাসকদের একটা ভালো গুণ ছিল যে তাঁরা নিজস্ব রাজত্বের সমস্ত খুঁটিনাটি নথিভুক্ত করার জন্য লেখকদের নির্বাচিত করতেন। স্বয়ং আকবরও তাঁর নিজস্ব ইতিহাস ‘আকবরনামা’ সুপরিচিত পারস্য পণ্ডিত আবুল ফজলকে দিয়ে লিখিয়েছেন। আকবর তাঁর ফুফুকে তাঁর ভাই হুমায়ুনের জীবন সম্পর্কে যা কিছু মনে পড়ে তা লিখতে বলেছিলেন। গুলবদন বেগম আকবরের এই আহ্বান গ্রহণ করেন এবং ‘আহওয়াল হুমায়ুন পাদশাহ জামাহ করদম গুলবদন বেগম বিনতে বাবুর পাদশাহ আম্মা আকবর পাদশাহ’ নামে একটি দলিল তৈরি করেন। এটি ‘হুমায়ুননামা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
গুলবদন বেগম শিশু বয়স থেকেই তাঁর পিতা বাবরের ভারত অভিযানের দৃশ্য অবলোকন করেছিলেন। হাজার হাজার সৈন্য সামন্তের সঙ্গে যাত্রার যে স্মৃতি তাঁর স্মৃতিপটে আঁকা হয়েছিল সেই স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে ‘হুমায়ুননামা’ সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এছাড়াও তিনি ‘হুমায়ুননামা’য় যা কিছু লিপিবদ্ধ করেছেন তার অনেক ঘটনাবলী শুনেছেন হুমায়ুনের অন্যতম স্ত্রী ও তাঁর প্রিয় ভাবী হামিদা বানু বেগমের নিকট থেকে। হামিদা বানুর সঙ্গে গুলবদন বেগমের আজীবন বন্ধুত্ব ছিল। এমনকি গুলবদন বেগমের মৃত্যুসয্যায়ও হামিদা বানু উপস্থিত ছিলেন।
তুর্কি ভাষা ছিল গুলবদন বেগমের পারিবারিক কথ্য ভাষা। বাবর তাঁর আত্মজীবী ‘বাবরনামা’ও লিখেছেন তুর্কি ভাষায়। কিন্তু গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুননামা’ লিখেছেন সহজ-সরল ফারসি ভাষায়। কিন্তু মূলগ্রন্থে ফারসি ও তুর্কি শব্দাবলির মিশ্রণ ছিল। এর মধ্যে তিনি সুপরিচিত লেখকদের দ্বারা ব্যবহৃত জটিল ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষা ত্যাগ করেছেন। তাঁর পিতা বাবর একই রচনা শৈলীতে তাঁর স্মৃতিচারণ থেকে ‘বাবরনামা’ লিপিবদ্ধ করেছেন। গুলবদন ভাষার অলঙ্করণ ছাড়াই মনে রাখার মতো একটি বাস্তব বিবরণ লিখেছেন। অনেক ইতিহাসবিদ এমন সন্দেহ করেন যে যে গুলবদন ‘হুমায়ুননামা’ ফারসি ভাষার পরিবর্তে তাঁর মাতৃভাষা তুর্কিতে লিখেছিলেন এবং আজ যে বইটি ফারসিতে পাওয়া যায় তা অনুবাদ। তবে এই মতের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়না। মোটকথা ‘হুমায়ুননামা’ শোড়শ শতকে মুঘল রাজপরিবারের একজন বিদুষী মহিলার লেখা একমাত্র জীবন্ত দলিল। হুমায়ুন কিভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও একজন শাসক হিসেবে অতিবাহিত করেছেন তারই ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর প্রিয় বৈমাত্রেয় বোন ও মুঘল রাজকন্যা গুলবদন বেগম। তিনি গ্রন্থটি লিপিবদ্ধ করেছেন অনেকটা স্মৃতিকথার আকারে। এই গ্রন্থে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকলেও মুঘল সম্রাট হুমায়ুন সম্পর্কে এটি একটি আকর গ্রন্থ।
আকবরের নির্দেশে পাণ্ডুলিপি লেখার দায়িত্ব পেয়ে গুলবদন বেগম এইভাবে লেখা শুরু করেন, “সম্রাট আকবরের অদম্য ইচ্ছা যে আমি যেন আমাদের বংশের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি (ফিরদৌস-মাকানি) মহান সম্রাট বাবর এবং তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তান, আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ভাই ও সম্রাট আকবরের পিতা সম্রাট হুমায়ুন (জান্নাত-আশয়নী) সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা যেন লিখে রাখি। সম্রাট বাবর যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন আমার বয়স ছিল কেবলমাত্র আট বছর। তবে একথা সত্য যে সেই সময়ের কথা এখন আমার আর মনেও নেই। তবুও সম্রাট আকবরের আদেশ অনুসারে আমার স্মৃতিপটে যেসব ঘটনাবলী সঞ্চিত আছে তার উপর ভিত্তি করেই আমার এই স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করতে শুরু করলাম।”
যাইহোক গুলবদন বেগম রচিত ‘হুমায়ুননামা’ থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের ইতিহাস ও সম্রাট হুমায়ুন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু লিপিবদ্ধ করেননি। সম্রাট হুমায়ুন সিঁড়ি থেকে নামার সময় পড়ে মারা যান। এছাড়াও হুমায়ুনের দ্বিতীয়বার ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য কীভাবে পুররুদ্ধার করলেন সে সম্পর্কেও কোন উল্লেখ নেই। হুমায়ুন তাঁর ভাই মির্জা কামরানের চোখ সেলাই করে দিয়েছেন তারপরেই ‘হুমায়ুননামা’র পাণ্ডুলিপিটা সমাপ্ত হতে দেখা যায়।
‘হুমায়ুননামা’ এমনভাবে সমাপ্ত হতে দেখে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন উক্ত পাণ্ডুলিপির শেষের দিকের অংশ হারিয়ে গেছে। যেহেতু আমরা জানি যে গুলবদন বেগম হুমায়ুনের মৃত্যুর অনেক পরে আকবর কর্তৃক হুমায়ুনের শাসনের গল্প লেখার নির্দেশ পেয়েছিলেন, তাই এটি বিশ্বাস করা যুক্তিসঙ্গত যে একমাত্র পাওয়া পাণ্ডুলিপিটি তার লেখার একটি অসম্পূর্ণ সংস্করণ। স্মৃতিকথাটি কয়েক শতাব্দী ধরে হারিয়ে গেছে এবং যা পাওয়া গেছে তা ভালভাবে সংরক্ষিত নয়, অনেক পৃষ্ঠা অনুপস্থিত সহ খারাপভাবে আবদ্ধ। শেষ অধ্যায় অনুপস্থিত সহ এটি অসম্পূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
পাণ্ডুলিপির একটি বিকৃত কপি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রাখা আছে। মূলত একজন ইংরেজ, কর্নেল জি ডব্লিউ হ্যামিল্টনের দ্বারা পাওয়া যায়। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সালে তাঁর বিধবা স্ত্রী এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বিক্রি করেছিলেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর অস্তিত্ব খুব কমই জানা ছিল। অ্যানেট এস. বেভারিজ এটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন (বেভারিজ ভালোবেসে গুলবদন বেগমকে ‘প্রিন্সেস রোজবডি’ বলে ডাকতেন)।
ইতিহাসবিদ ড. রিউ এটিকে কর্নেল হ্যামিল্টনের (যিনি ১০০০টিরও বেশি পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছিলেন) সংগ্রহের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পাণ্ডুলিপি বলে অভিহিত করেছেন। বেভারিজের ইংরেজি অনুবাদের একটি পেপারব্যাক সংস্করণ ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
গুলবদন বেগম সালিমা সুলতান বেগমের সঙ্গে ৩০০০ মাইল দূরত্বের মক্কায় দুর্গম পর্বত এবং প্রতিকূল মরুভূমি অতিক্রম করে হজযাত্রা করেছিলেন। গুলবদন বেগম প্রায় চার বছর মক্কায় অবস্থান করেন এবং তাঁর প্রত্যাবর্তনের সময় এডেন শহরে একটি জাহাজডুবির কারণে তাকে কয়েক মাস ধরে আগ্রায় ফিরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হন। অবশেষে ৭ বছর পর তিনি ১৫৮২ সালে ফিরে আসেন।
আকবর তার ফুফুকে হজে নিরাপদে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং উপস্থিত বেশ কয়েকজন মহিলাকে সঙ্গে অভিজাত গোলাম হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর দলবলে প্রচুর উপহার ছিল যা গরীবদেরকে দান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁর মক্কায় আগমন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সিরিয়া ও এশিয়া মাইনর থেকে অনেক দূরের লোকেরা সেই দান গ্রহণের জন্য মক্কায় ছুটে আসে। গুলবদন বেগম একজন দানশীল মহিলা ছিলেন। গুলবদন একজন কবি ছিলেন, যিনি ফারসি ও তুর্কি উভয় ভাষায় সাবলীল ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় যে তাঁর সব কবিতাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ৮০ বছর বয়সে কয়েক দিনের জ্বরে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুসয্যায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতেই হামিদা বানু বেগম তাঁকে স্নেহের বহুদিন ধরে ব্যবহৃত নাম দিয়ে বলল, ‘জিউ!’ (উঠুন বা উঠে পড়ুন)। কোন সাড়া পাওয়া গেল না। কিছুক্কগণ পর গুলবদন বেগম তাঁর চোখ খুললেন এবং বললেন, “আমি চলে গেলাম। তোমরা জীবিত থাক।” এই কথা বলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গুলবদন বেগমের মৃত্যুতে হামিদা বানু উচ্চস্বরে কেঁদে উঠেন। স্বয়ং সম্রাট আকবরও উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। শোনা যায় তাঁর মৃত্যুর পর আকবর ক্রমাগত দুই বছর শোক পালন করেছিলেন। এর দুই বছর পর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরও মারা যান।
ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়, গুলবদন বেগমের পাণ্ডুলিপিটি অস্পষ্ট ছিল। অন্যান্য মুঘল লেখকদের সমসাময়িক সাহিত্যে এর খুব কমই উল্লেখ আছে, বিশেষ করে লেখক যারা আকবরের শাসনকাল বর্ণনা করেছেন। তবুও, গুলবদন বেগমের স্বল্প পরিচিত বিবরণটি ইতিহাসবিদদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ‘হুমায়ুননামা’ এমন একটি জালানা যার মাধ্যমে এখনও মুঘল হারেমের অভ্যন্তরে দৃষ্টিনিক্ষেপ করা যায়।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।