লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
বীরভূমের মন্দির স্থাপত্য এবং তার অলঙ্করণ বাঙলার মন্দির স্থাপত্য-শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। বাঙলার সমাজ বিবর্তনের ও বাঙালীর মনস্বিতার ও ভাবপ্রবণতার চিত্র এই মন্দির ভাস্কর্যের মধ্যে প্রতিফলিত। মধ্যযুগে রচিত বাঙলার মঙ্গলকাব্য এবং পদাবলী সাহিত্যের মধ্যে সমকালীন বাঙলার সমাজ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে অনেক তথ্য আহরণ করা যায়। কিন্তু পটভূমির প্রসারে, কল্পনার বিস্তারে এবং শিল্পসৃষ্টির দক্ষতায় বাংলার মন্দির শিল্পকে সমসাময়িক যুগের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দলিল বলে অভিহিত করা চলে। বাংলার মন্দির হিন্দু বাঙালীর জাতীয় তীর্থ। বাঙালীর অন্তর হৃদয়ের পরিচয় দিতে, তার স্পর্শশীলতার, তার আনন্দ-বেদনার এবং সর্বোপরি তার আধ্যাত্মিক অনুভূতির ইঙ্গিতে বাংলার দেবদেউলগুলি একান্তই ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ (কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বাংলার দেব দেউল’ শীর্ষক প্রবন্ধ, পৃঃ ৬৩-৬১১, অমৃত পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যা ৮ই পৌষ ১৩৭২, বঙ্গাব্দ ভ্রষ্টব্য)। বীরভূম জেলার মন্দির সম্বন্ধেও এই উক্তি সম্পূর্ণরূপে প্রযােজ্য।
কয়েকটি পাথর দ্বারা নির্মিত মন্দির ছাড়া বীরভূম জেলার অধিকাংশ মন্দিরই ইট দ্বারা নির্মিত। যে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এই সমস্ত মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় সেইসময় এইগুলির নির্মাণে আশানুরূপ অর্থ সাহায্য রাজকোষ থেকে পাওয়া যায়নি। সাধারণ জমির অধিকারী, পণ্ডিত, ব্যবসায়ীদের দ্বারা অধিকাংশ মন্দিরই প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য যে কয়েকটি সুউচ্চ ইট দ্বারা নির্মিত মন্দির এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলির নির্মাণকার্য উচ্চ শ্রেণীর রাজকর্মচারী বা উচ্চ জমিদার শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারাই সম্পন্ন হয়। দেওয়ান রামনাথ ভাদুড়ী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভাণ্ডীরবনের ভাণ্ডীশ্বর শিবমন্দির, ঢেকার রামজীবন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলেশ্বর শিবমন্দির বীরভূমের ইট দ্বারা নির্মিত সুউচ্চ সৌধরূপে গণ্য করা চলে। ডাবুক গ্রামের সুউচ্চ ডাবুকেশ্বর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা সাধক কৈলাসপতির দ্বারা সাধিত হলেও মন্দির প্রতিষ্ঠায় লক্ষাধিক মুদ্রা ব্যয়ের জনশ্রুতি আছে। সে অর্থ জনসাধারণ দান করলেও এটাই ধারণা করা হয় যে সুউচ্চ সৌধ নির্মাণ অর্থের প্রাচুর্য ছাড়া সম্ভব নয়। এছাড়াও ইট দ্বারা সুউচ্চ সৌধ নির্মাণে স্বাভাবিক কারণে অনেক অসুবিধা আছে এবং অনেক কৌশল অবলম্বনেরও প্রয়ােজন।
উত্তর ভারতের ‘নাগর রীতি’র অনুসরণে নির্মিত রেখ-দেউলের প্রস্তর দ্বারা নির্মিত নিদর্শন এ পর্যন্ত বীরভূম জেলায় মাত্র কয়েক স্থানে আছে। রাজনগর থানার কবিলাসপুরে, হালে আবিষ্কৃত সিউড়ী থানার মহুলায় এবং খয়রাশােল থানার পাঁচড়ায় এই শ্রেণীর মন্দির আছে। বীরভূম জেলার মন্দির স্থাপত্যশৈলীতে উপনােক্ত প্রস্তরনির্মিত ‘রেখদেউলের’ মধ্যে এক সম্পূর্ণ নূতন স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণরূপে ওড়িশা রীতির রেখ-দেউলের অনুকরণ খয়রাশােল থানার রসা ও পার্শুণ্ডীর পাথর দ্বারা মন্দির এবং দুবরাজপুর থানার বক্রেশ্বরের বিখ্যাত বক্রনাথ বা বক্রেশ্বর শিবমন্দিরে দেখা যায়। যদিও ‘ভবিষ্য পুরাণে’র ‘ব্রহ্মাণ্ড অধ্যায়ে’ বক্রেশ্বর তীর্থের মাহাত্ম বর্ণিত আছে, তথাপি বর্তমান মন্দির গাত্রে উৎকীর্ণ লিপিসমূহ হতে জানা যায় মন্দিরের বিভিন্ন অংশ ১৬৭৭, ১৬৮১ এবং ১৬৮৩ শকাব্দে অর্থাৎ খ্রীষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে নির্মিত হয়। রসা এবং সমসাময়িক কালের পার্শুণ্ডীর মন্দিরগুলি এর প্রায় এক শত বছর আগে নির্মিত হয়। রসার মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ প্রতিষ্ঠাফলক এবং পার্শুণ্ডী মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী এরই সাক্ষ্য দেয়। পাঁচড়া গ্রামের রেখ-দেউলের সাথে একটি বাংলা মণ্ডপ সংযুক্ত হয়ে মন্দিরটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
ভাণ্ডীরবনের সুউচ্চ ইট দ্বারা নির্মিত ভাণ্ডীশ্বর শিবমন্দিরে এই একই স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়। মন্দিরটির প্রবেশ দ্বারের উপর পত্রাকৃতি খিলান আছে। ডাবুক গ্রামের অত্যুচ্চ ডাবুকেশ্বর শিবমন্দিরটি একটি অত্যুচ্চ চালারীতির মন্দির; এটিকে সম্ভবতঃ বীরভূমের উচ্চতম মন্দির রূপে গণ্য করা যায়।
বীরভূম জেলার কুটিকৃতি চার-চালা রীতির মন্দিরের আধিক্য লক্ষণীয়। ঘুরিষা (শ্রীপুর), গণপুর, রামনগর, জুবুটিয়া, উচকরণ, ছিনপাই, বক্রেশ্বর, মল্লারপুর, খরবােনা, তেজহাটি, মেহগ্রাম প্রভৃতি গ্রামে এই শ্রেণীর মন্দির স্থাপত্য লক্ষ্য করা যায়। ঘুরিষার (শ্রীপুর) রঘুনাথজী মন্দিরটি বীরভূম জেলায় এ পর্যন্ত প্রাচীনতম মন্দিররূপে পরিগণিত এবং এখানের মন্দিরের গাঁয়ে উৎকীর্ণ ফলকগুলির শিল্প-শৈলীর মধ্যে সজীবতার ভাব লক্ষ করা যায়। লোহার ব্যবসাসুত্রে লােহা মহলের অন্তর্গত গণপুর গ্রাম এককালে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করে, তৎকালীন সমৃদ্ধি এই গ্রামের মন্দির সংস্থানগুলির মধ্যে প্রতিফলিত। এখানের এবং নিকটবর্তী মল্লারপুর গ্রামের মন্দিরের গায়ে ফুলপাথরের উপর উৎকীর্ণ ভাস্কর্যগুলি দর্শনীয়।
আট-চালা রীতির মন্দিরের মধ্যে সিউড়ীর সোনাতোড়পাড়ায় অবস্থিত রাধামাধবের মন্দিরের শিল্প-শৈলী অপূর্ব। এইখানে ফুলপাথরের ফলকের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃশ্য মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ দেখা যায়। গণপুর গ্রামের অন্য মন্দিরগুলি ছাড়া একটি জীর্ণ আট-চালা মন্দিরেও এই ফুলপাথরের কাজ লক্ষ্য করা যায়। তারাপুরের (তারাপীঠের) তারা দেবীর মন্দিরও এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং ঐ মন্দিরের প্রবেশ পথের উপর ফুলপাথরে বিভিন্ন দৃশ্যাবলী উৎকীর্ণ। নানুরের বাসলী মন্দির সংলগ্ন দুইটি আটচালা শিব মন্দির, দাসকলগ্রাম, বালিগুনী এবং লাভপুরের ‘ফুল্লরা পীঠ’ সংলগ্ন এক মন্দির ইত্যাদি এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
নবরত্ন মন্দিরের মধ্যে জয়দেব-কেন্দুলীর রাধাবিনােদ মন্দিরটির সম্মুখের খিলানের উপর সুন্দর কারুকার্য দেখা যায়। ব্রাহ্মণডিহির নবরত্ন মন্দির এখন জীর্ণ অবস্থায় আছে, মন্দিরের চতুর্দিকে মণ্ডপের অবস্থিতি এই মন্দিরের বিশেষত্ব। সম্প্রতি এই ধরণের এক মন্দিরের সন্ধান অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় চারকলগ্রামে (নানুর থানা) পেয়েছেন। ঘুরিষা গ্রামের নবরত্ন গােপালতলী মন্দিরের সামনে সমতল ছাদ বিশিষ্ট মণ্ডপের সংযােজন এবং মন্দিরের গাঁয়ে বিদেশী বেশ ভূষায় সজ্জিত বিদেশীয় নরনারীর উপস্থিতির বিশেষত্ব লক্ষণীয়।
‘পঞ্চরত্ন’ মন্দিরের সংখ্যাও বীরভূমে কিছু আছে। সুরুলের এবং ইলামবাজারের লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির এই সমস্ত মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ ভাস্কর্যের জন্য প্রসিদ্ধ।
দুবরাজপুরে ‘ত্রয়ােদশরত্ন’ মন্দিরের কয়েকটি নিদর্শন এখনো বিদ্যমান রয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে অজয় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলি সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠে। সুরুল, ইলামবাজার, সুপুর প্রভৃতি গ্রামে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ক্ষুদ্রাকার ইট দ্বারা নির্মিত ‘দেউল’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
অষ্টকোণাকৃতি ‘দেউল’ যথা সুপুর, ইলামবাজার প্রভৃতি স্থানের মন্দিরগুলি উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নির্মিত হয়। হেতমপুরের অষ্টকোণাকৃতি চন্দ্রনাথ শিবমন্দিরটির প্রতি অঙ্গে পাশ্চাত্য প্রভাব বিদ্যমান। স্থানীয় কুঠিয়ালদের প্রভাবে এবং পাশ্চাত্য ভাবধারার সংস্পর্শে আসার ফলে এই মন্দিরটির স্থাপত্যে এবং ভাস্কর্যে ইউরােপীয় প্রভাব পরিস্ফুট। সুরুলে অবস্থিত ইংরাজ কুঠিয়াল জন চীপ তাঁর সময়কালে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। হান্টারের বিবরণ থেকে জানা যায় যে চীপ সাহেব জনগণের অশেষ শ্রদ্ধা অর্জন করেন। সমকালীন মন্দিরগুলিতে এজন্য ইউরােপীয় সমাজ জীবনের চিত্র প্রতিফলিত হয়। ইলামবাজারের লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির-ভাস্কর্যের মধ্যে এই ইউরােপীয় স্থাপত্যের নিদর্শন দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
জোড়বাংলা রীতির মন্দিরের নিদর্শন বীরভূমে একটি মাত্র স্থানে দেখা যায়। বােলপুর থানার অন্তর্গত ইটাণ্ডায় এই রীতির মন্দির জীর্ণ অবস্থায় দণ্ডায়মান। মুরারই থানার মিত্রপুরে জোড়বাংলা রীতির মন্দিরের অবস্থিতি এখন কিংবদন্তীতে পর্যবসিত হয়েছে।
সমতল ছাদযুক্ত দালান মন্দিরও বীরভূমের মুলুক, পেরুয়া এবং গােপালপুরে দেখা যায়। গােপালপুরের মন্দিরগুলি আবার দ্বিতল এবং সর্বোপরি একবাংলা রীতির ক্ষুদ্রায়তন প্রদীপ গৃহ সন্নিবেশিত।
বীরভূম জেলার মন্দিরগুলির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত দেব-দেবীর মধ্যে দুই একটি ক্ষেত্র ছাড়া প্রায় সর্বত্রই সর্বংসহ চিহ্ন মাত্রে পর্যবসিত শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। অনাদিলিঙ্গ শিবের স্বয়ম্ভু রূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কাহিনীও কোন কোন গ্রামে শুনা যায়। কিন্তু মন্দিরের গায়ে অলঙ্করণে মন্দির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত দেব-দেবীর সাথে জড়িত আখ্যানগুলি যে প্রাধান্য পেয়েছে তা নয়। মন্দিরের গায়ে রামায়ণের কাহিনী এবং কৃষ্ণলীলার ঘটনাবলী ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ‘মঙ্গলকাব্যে’ বর্ণিত উপাখ্যানেরও কিছু কিছু চিত্র উৎকীর্ণ দেখা যায়। এই যুগে কৃত্তিবাস রামায়ণ রচনা করেন, জনমানসে রামায়ণ অসীম প্রভাব বিস্তার করে, শিল্পীমনও রামায়ণের কাহিনী শুনে ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে উঠে। রামায়ণের রাম-রাবণের যুদ্ধের দৃশ্যই মন্দিরের গায়ে মুখ্য স্থান অধিকার করে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার মর্মবাণী জনসমক্ষে ব্যক্ত হয়েছে। ইউরােপীয় প্রভাবের শিল্প ধারায় মণ্ডিত সিংহাসনে উপবিষ্ট রামসীতার সপারিষদ উপস্থিতি ক্রমশঃ রাম-রাবণের যুদ্ধের দৃশ্যের স্থান অধিকার করে। বীরভূমে শাক্ত দেব-দেবী পূজার আধিক্যের জনশ্রুতি প্রচলিত রইলেও মাত্র কয়েকটি স্থানে মন্দিরের গায়ে তন্ত্রে বর্ণিত দেব-দেবীর প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ। ঘুরিষার রঘুনাথজী মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ দেবী মূর্তিগুলি মূৰ্তিতদের বিচারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সপরিবারে দুর্গা-মহিষাসুরমর্দিনী বা চণ্ডীর প্রতিকৃতির ফলকের মাধ্যমে রূপায়ণ স্থানীয় ধর্মভাব এবং জনশ্রুতিকে ব্যক্ত করে। (David McCutchion afro ‘The Ramayana’ on the Temples of Bengal tynn ‘Eastern Railway Magazine, August 1967 সংখ্যায় প্রকাশিতব্য।)।
দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাও কোন কোন স্থানে রূপায়িত হয়ে সমকালীন সমাজের এক চিত্র আমাদের নিকট প্রতিভাত হয়। উৎসব, পূজাপার্বণ, যুদ্ধযাত্রা, শিকার ইত্যাদির দৃশ্যাবলীর মাধ্যমে মন্দির ফলকগুলি অলঙ্কৃত হয়ে সমাজের বিভিন্ন রূপ আমাদের নিকট উদঘাটিত হয়েছে। মন্দিরের ভিত্তিবেদীর উপরে নিবিষ্ট ফলকে সাধারণত এই সমস্ত দৃশ্যগুলি উৎকীর্ণ থাকত। মন্দির ফলকগুলির রূপায়ণ দেখে ধারণা জন্মে স্থানীয় জনসাধারণ বা দূর থেকে আসা তীর্থযাত্রী সকলেই মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ দৃশ্যাবলীর বিষয়বস্তুর সঙ্গে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। অধিকাংশ জনসাধারণ অশিক্ষিত বা নিরক্ষর হলেও গ্রামের দেবমন্দির বা চণ্ডীমণ্ডপে কথকতা বা রামায়ণ গানের মাধ্যমে তাঁরা রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণলীলা এবং অন্যান্য পৌরাণিক ঘটনা সম্বন্ধে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। উৎকীর্ণ দৃশ্যাবলীর কাহিনী হৃদয়ঙ্গমে কোন অসুবিধা ছিল না। ধর্মস্থানের সৌধাবলীর বিভিন্ন দৃশ্যাবলীর মাধ্যমে অলঙ্করণ আমাদের দেশে অতি প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত। বৌদ্ধস্কৃপের চার পাশে বেষ্টনীসমূহ অলঙ্করণের মাধ্যমে বুদ্ধদেবের জীবনকথা ব্যক্ত করার প্রচেষ্টা করা হতে এই রীতি বিদ্যমান। দীঘলপটের উপর চিত্রিত রামায়ণ, কৃষ্ণলীলা, মনসামঙ্গলের কাহিনী ইত্যাদি বর্ণনা এবং সেগুলি লােকসঙ্গীতের মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রচার বীরভূম অঞ্চলে আগে প্রচলিত ছিল। সেগুলির মাধ্যমে প্রচারও জনসাধারণকে মন্দির-ভাস্কর্য উপলব্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। পটুয়া শিল্প এবং সঙ্গীত এখন লুপ্ত প্রায়। বীরভূমের মন্দিরের ভাস্কর্যশিল্পের রস সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে হলে রামায়ণ, মহাভারত, পৌরাণিক কাহিনী এবং কৃষ্ণলীলা সম্বন্ধে রচিত সাহিত্যগুলি হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। পৌরাণিক এবং ধর্মগ্রন্থসমূহের আঞ্চলিক সংস্করণগুলি সম্বন্ধেও অবহিত হতে হবে নইলে ফলকগুলির খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু অজানা থেকে যাবে।
মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ দেব-দেবী এবং নর-নারীদের বেশভূষা, অঙ্গসজ্জা ইত্যাদি সমকালীন সাহিত্যে অঙ্গসজ্জা বর্ণনার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বিশেষ। গৃহবিন্যাসের উপকরণগুলিও এই ভাবে অলঙ্কৃত ফলকের মাধ্যমে মধ্যযুগের সাহিত্যকে সমর্থন করে। বীরভূমের মন্দির-স্থাপত্য সাহিত্য ও সংস্কৃতির মধ্যে এক সুসামঞ্জস্যের সৃষ্টি করে শিল্পীর শিল্পৈষণার যথেষ্ট প্রমাণ দ্বারা মধ্যযুগের শেষভাগের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক ধারাবাহিক চিত্র জনমানসে উদঘাটন করে।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।