লিখেছেনঃ আহমদ শরীফ
বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মৌলবাদীরা সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এইরকম ছমকি প্রায় অজিই পেয়ে আসছেন বাংলাদেশের এক বুদ্ধিজীবি, চুয়াত্তর বছর বয়স্ক আহমদ শরীফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের এক নিরলস গবেষক আহমদ শরীফ রাজণীতির লোক না হলেও প্রবলভাবে এক রাজনৈতিক চরিত্র। আয়ুব খানের আমল থেকে হালের খালেদা জিয়ার আমল পর্যন্ত তিনি বরাবরই ক্ষমতাসীন সরকারের “ব্ল্যাকলিস্টে”। নির্ভীক এই লেখক-গবেষক তার বয়সের তোয়াক্কা না করে ক্লাবরই প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেন। মৌলবাদীদের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে সম্পাদনা করেন রাজাকাররা কোথায় আছে” গ্রন্থের। বাংলাদেশের ছাতক-দালাল নির্মূল কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপােষক আহমদ শরীফের ফাসির দাবিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা উত্তাল হয়। হর নিটিং মিছিল। ঢাকা বনধের ডাক দেয় মৌলবী জামাত্রা। গত নভেম্বরেই (১৯৯৩) আহমদ শরীফের বিরুদ্ধে ডাক দেওয়া আন্দোলনের থেকেও তীব্র, ব্যাপক। সম্প্রতি আহমদ শরীফ কলকাতায় এসেছিলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আনন্ত্রণে। প্রচারবিমুখ এবং সংবাদ মাধ্যম থেকে সবসময় দূরে থাকা বাংলাদেশের প্রথম সারিরা এই বুদ্ধিজীধিটি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন কিন্তু এবার কলকাতায় সাংবাদিকদের অনুরোধে নিজের মতামত জানালেন নানা প্রসঙ্গে—হার মধ্যে তসলিমা নাসরিন অন্যতম বিষ। তসলিম প্রসঙ্গে আহমদ শরীফ যা জানিয়েছেন। তার সারমর্মটি এইরকম…..
প্রশ্নঃ- তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়নটি কি-রকম?
আহমদ শরীফ—এইভাবে যদিও মূল্যায়ন করা চলে না কিন্তু মোটামুটিভাবে যা বলতে পারি তা হল—আমি তসলিমাকে পছন্দ করি তার যুক্তিপূর্ণ আচরণ, জেদ, সাহস এবং নির্ভীকতার জন্য। নারী স্বাধীনতা নিয়ে বলে প্রায় সবাই কিন্তু এগিয়ে আসে কমই। তসলিমার সাহস আছে। সে যা বলে সেটাই করে দেখাবার চেষ্টা করে সবসময়। বাংলাদেশে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে মৌলবাদীরা ওর বিরুদ্ধে যে সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে তাতে হয়ত অনেকেই পিছনে হাটে আসত। কিন্তু তসলিমার সাহস তাকে এগিয়ে দিয়েছে। লড়াই-এর মানসিকতা দিয়েছে! তসলিমার এই ভূমিকার প্রশংসা করি।
প্রশ্ন—এই ভূমিকার বাইরে লেখিকা হিসেবে তসলিমার যদি একটি নিরপেক্ষ বিচার করতে বলা হয় আপনাকে?
আহমদ শরীফ—আমি মনে করি যে তসলিমা লেখিকা হিসেবে অত্যন্ত কাচা। যে “লজ্জা” বইটি ওকে খ্যাতি দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে তাতে ভারসাম্যর ভীষণ অভাব। ঠিক যেন একটা ব্যালান্স রাখা সম্ভব হয়নি। সংখ্যালঘুরা বিশ্বের সব দেশেই কোণঠাসা হয়। এটা চিরকালীন ঘটনা। সংখ্যাগরিষ্ঠদের সংকীর্ণতা সবসময়ই তাদের পীড়িত করে। কিন্তু উদার মানসিকতাসম্পন্নরা সবসময়ই সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ায়। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক উদার মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু তসলিমার লেখায় এদের পরিচয় নেই।
প্রশ্ন—তসলিমার লেখার আর কোন্ দিকটি আপনাকে ভাবায় ?
আহমদ শরীফঃ তসলিমার যুক্তির বেশির ভাগই ফ্যালাসি! কুযুক্তি। এগুলো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
প্রশ্ন–আর কিছু?
আহমদ শরীফ—আপত্তি করার মত আরও অনেক কিছুই আছে। অকারণে তসলিমা যৌনবিষয়গুলিকে টেনে আনেন এবং যৌন লড়াইয়ের মুখরোচক বর্ণনা দেন। এগুলো সাধারণ পাঠককে বিভ্রান্ত করে, অথচ বই-এর কাটতি বাড়ায়।
প্রশ্ন–লেখিকা হিসেবে তসলিমার ভবিষ্যৎ ?
আহমদ শরীফ-তসলিমা লেখিকা হিসেবে বড় মারে কাজ করতে পারবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। এখনই তাই তার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা উচিত নয়। সময় এই প্রশ্নের জবাব দেবে
(সৌজন্যে ও সংবাদ প্রতিদিন, ১০ই মে ১৯৯৪)
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।