ফিরোজ শাহ তুঘলক একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত শাসক। জন্মান ১৩০৯ খ্রিস্টাব্দে। পিতার নাম ছিল রজব মাতা ছিলেন দিপালপুরের হিন্দু রাজকন্যা। দিল্লি থেকে ভারতবর্ষকে শাসন করেছিলেন ১৩৫১ থেকে তেরোশো ১৩৮৮ পর্যন্ত।
রজব ছিলেন তুঘলক বংশীয় সিপাহসালার গাজী মালিকের কনিষ্ঠপুত্র।
মুহাম্মদ বিন তুঘলক এর মৃত্যুর পর তিনি ছিলেন তুঘলক বংশের তৃতীয় সুলতান। গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলক ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ১৩৫১ সালে মারা যান। তুর্কি দাস তাগির বিরুদ্ধে থাট্টায় যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ বিন তুঘলক মারা যান। মুহাম্মদ বিন তুঘলক নিঃসন্তান ছিলেন। মৃত্যুর পরপরই দরবারের আমির ওমরাহ ও বিশিষ্ট জনেরা মুহাম্মদ বিন তুঘলকের প্রিয় জ্ঞাতি ভাই ফিরোজ শাহকে সুলতান নিযুক্ত করেন। তাঁর আত্মজীবনী ‘ফুতুহাত ই ফিরোজশাহী’ থেকে অনেকটাই জানা যায়।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, জিয়াউদ্দিন বারাণী লিখিত ‘তারিখ ই ফিরোজশাহী’ বইটি ফিরোজ শাহর ষষ্ঠ বর্ষ রাজত্ব পর্যন্ত লিখিত হয়। তিনি থাট্টার যুদ্ধ, মহম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যু, মোগল বাহিনী এবং থাট্টার মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। সুলতানের মৃত্যুর পর, যদিও মোহাম্মদ বিন তুঘলক, ফিরোজ শাহ তুঘলককে পছন্দ করতেন তবুও ফিরোজ শাহ সিংহাসন গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। সুলতানের মৃত্যুর তিন দিন পরও এই অব্যবস্থার মধ্যে থাট্টায় মোঙ্গল ও দুর্বৃত্তপরায়ন অধিবাসীরা সুলতানি সেনাদলকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে রাজকীয় কোষাগারটিকেও আক্রমণ করে বসে, এমনকি সুলতানের সৈন্যদলের মধ্যেও বিশ্বাসঘাতকতা শুরু হয়। অগ্রবর্তী সৈন্যদল নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের ধনসম্পদ, পরিবার-পরিজন লুণ্ঠিত হয়ে যায়।
মোহাম্মদ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর ৪-৫ দিন পর ২৪ মহরম বিপদ বুঝে কোন রক্তপাত ছাড়াই সর্বসম্মতিক্রমে ফিরোজ তখত গ্রহণ করেন। এই বিষয়ে জিয়াউদ্দিন বারানী বলেছেন,
“শায়খ, আলেম, মালিক, আমির, বিশিষ্ট ও সাধারণ, সৈন্য ও বাজারি, ছোট ও বড়, মুসলমান ও হিন্দু, সওয়ার ও পেয়াদা এবং আবালবৃদ্ধবনিতা সকলে এক বাক্যে বলিল সৈন্যদল ও রাজধানী দিল্লিতে বাদশাহ হওয়ার ফিরোজ শাহের মত যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ নাই। যদি আজ তিনি তখতে না বসেন তবে মোঙ্গল সৈন্য ও থাট্টাবাসিরা একান্তই বেপরোয়া হয়ে উঠিবে এবং আমাদের মধ্যে একজনও বাঁচিয়া রাজধানী দিল্লিতে ফিরিয়ে যাইতে পারিব না”। (পৃষ্ঠা ৪১৭)
তখত গ্রহণের দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই নব্য সুলতান সৈন্যদলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন। তখতে বসিবার তৃতীয় দিনেই সুলতান কিছু সংখ্যক আমিরকে মোঙ্গলদের উদ্দেশ্যে পাঠালেন। তাঁরা অতি সহজেই কতিপয় হাজারী ও শতী মোঙ্গল আমিরকে বন্দি করপ সুলতানের সম্মুখে উপস্থিত করেন। এরপর মোঙ্গল ও দুর্বৃত্ত পরায়ণ থাট্টা বাসীরা পরাজিত হয়। মোঙ্গলরা পালিয়ে নিজেদের দেশে চলে গেল। সার্বিকভাবে বিদ্রোহ অবদমিত হয়। তিনি সিস্তান হয়ে দিল্লিতে ফেরার পথ ধরেন।
কিন্তু দিল্লিতে বিন তুঘলকের অপর পছন্দসই ব্যক্তি সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আহমদ আয়াজ কিছু সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। রাজকোষ উজাড় করে স্বদলীয় লোকদের দান ধ্যানও করতে থাকে। সুলতান দিল্লি ফেরার পথে অকরে এই দুঃসংবাদ শোনেন। দিল্লি ফেরার পথে তাঁর মামাবাড়ী দেবপালপুর বা দিপালপুরে কয়েকদিন অবস্থান করেন। হাঁসি থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ৩০ ক্রোশ দূরে আহমদ আয়াজ এসে আত্মসমর্পণ করেন।
উত্তর পশ্চিম ভারত ও সিস্তানে শান্তি স্থাপন করার পর। দিল্লিতে ফেরার আগে কিছু আর্থিক ও ভূমি সংস্কার করেন। তিনি এলাকার প্রায় ধংসপ্রাপ্ত পুরনো আমির-ওমরাহদের খেলাত প্রদান ও পুরস্কৃত করলেন। যে সকল জায়গীর তাঁরা বংশানুক্রমে ব্যবহার করতেন সেগুলো পুনরায় নব্য বংশধরদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। নতুন নতুন জায়গীরও সৃষ্টি করলেন।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অবিমৃষ্যকারিতার ফলে রাজকোষ প্রায় শূন্য ছিল। আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ কমিয়ে দেন, কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান এবং উন্নয়নে হাত দেন। দিল্লি ফেরার পথে ওকার ও উছের সরকারের কাছে খাস হয়ে যাওয়া জায়গীরগুলি তাঁদের বংশধরদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন। জমাদিউল আখির মাসের শেষ দিকে দিল্লিতে পৌঁছান। আহমদ আয়াজ, নাথু সূদল, হাসান ও হুসসাম এবং আয়াজের দুই পুত্রকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আত্মীয়স্বজনদের উপরে কোনরকম অত্যাচার করা হয়নি। পূর্বসূরীদের চরম শাস্তি প্রদানের নিয়ম হয়ে যাওয়ার বিপরীত, এই ৬ জন ছাড়াও ফিরোজ শাহ তুঘলক তাঁর রাজত্বকালে মোট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন।
ফিরোজ শাহ তুঘলক প্রায়ই নির্ভর করতেন মালিক মকবুল এর উপর তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ফিরোজ শাহ তাঁকে ডাকতেন খানজাহান (প্রকৃত শাসক) বলে। ফিরোজশাহ যখন কোন অভিযানে বের হতেন তখন মালিকশাহ প্রকৃতই শাসকের মত আচরন করতেন।
রাজত্বের আগে যে সকল এলাকা সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তা তিনি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করে স্বাধীনতা হরণ করেননি। তারিখ ই ফিরোজশাহীতে বাংলা দখলের একটি বর্ণনা রয়েছে। দ্বিতীয়বার বাংলা দখলের প্রয়াসটির আগেই বারানির মৃত্যু হয়েছিল। আফিফের বর্ণনা থেকে বাংলা দখলের দ্বিতীয় প্রয়াসটি জানা যায়। বারানির বর্ণনামতে বাংলার শাসক হাজী ইলিয়াছ বা ইলিয়াস শাহ দিল্লির শাসন অস্বীকার করেন। হাজী ইলিয়াছ অরাজকতা ও গোলযোগের সৃষ্টি করেন।
ইলিয়াস শাহকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দিল্লি থেকে বার হয়ে যখন অযোধ্যায় পৌঁছালেন সেই সময় ইলিয়াস শাহ অবস্থান করছিলেন ত্রিহুতে। ইলিয়াস শাহ এরপর আরও পিছিয়ে গিয়ে লক্ষণাবতী ও পান্ডুয়াতে অবস্থান করলেন। ফিরোজ শাহ লক্ষণাবতী পান্ডুয়ার দিকে সৈন্য পরিচালনা করলে ইলিয়াস শাহ একডালা নামক এক সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান নিলেন। দুর্গটির একদিকে ছিল খরস্রোতা নদী অপরদিকে ঘন জঙ্গল।
ইলিয়াস শাহ এখানে প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে পারলেন। বর্ষা আসন্ন হাওয়ায় শুষ্ক খটখটে দেশের লোকের পক্ষে জলকাদার দেশে সৈন্য পরিচালনা করা যেমন অসম্ভব তেমনই উপরি পাওনা হলো মশার উপদ্রব। দুর্গ হিসাবে একডালা যে খুব একটা পাকাপোক্ত ছিল তা নয়। প্রস্তর নির্মিত ছিল না বরং তা ছিল কাদামাটি নির্মিত এবং প্রাকৃতিক ভাবে দুটি নদী দ্বারা সুরক্ষিত। যথারীতি ফিরোজ শাহ অবরোধ করলেন। দিন গড়িয়ে যায়। তবে বাংলার আসন্ন বর্ষার জন্য বেশী কালক্ষেপ করা সমীচীন হবে না মনে করে ফিরোজ শাহ একটি কৌশল নিলেন। যদিও এলাকাটি অসংখ্য সৈন্য হাতি ঘোড়া থাকার ফলে অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছিল।
তিনি অবরোধ তুলে নিয়ে কিছু দূরে একটি ফাঁকা জায়গাতে পুনরায় অবস্থান করলেন। কয়েকজন কালান্দার রটিয়ে দিলেন যে ফিরোজশাহ দিল্লি করে যাচ্ছেন। ইলিয়াস শাহ দুর্গ থেকে বার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রান্ত হলেন। ইলিয়াস শাহর বেশ কয়েকটি হাতি ঘোড়া আটক করা হল ও বহু সৈন্য মারা গেল। ইলিয়াস শাহ পুনরায় দুর্গে ফিরে গেলেন। পুনরায় অবরোধ শুরু হল। এদিকে বর্ষা নেমে যাওয়ায় যুদ্ধ অনির্ণিত রেখেই ফিরোজশাহ দিল্লি ফিরে গেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন লক্ষণাবতী ও পান্ডুয়ার লুণ্ঠিত সম্পদ এবং বেশ কিছু হাতি ঘোড়া।
তিনি পন্ডিত ব্যক্তিদের বহু সুবিধা দিয়েছিলেন এবং মান্যতাপ্রাপ্ত আলেম দ্বারা ঘোষিত অনৈসলামিক যে কোন আচরণ পরিত্যাগ করতেন। আলেমদের সমর্থন অর্জনের জন্যই তিনি এসব করতেন বলে কথিত। তিনি মুসলিম নারীদের অলি-আউলিয়াদের মাজারে যাওয়া নিষিদ্ধ করেন। আলেমদের চোখে প্রকৃত মুসলিম নয় এরকম বহু উপদলীয় মুসলিমদের প্রতি তিনি দুর্ব্যবহার করেন।
সৈন্য দলের মধ্যে যুদ্ধ লব্ধ অর্থের বন্টন শুরু করেন। সেনা আধিকারিকদের সরাসরি বেতন দিতেন না বরং শহরের যে রাজস্ব তা থেকেই দিতেন যার ফলে কিছু দুর্নীতি দেখা গিয়েছিল। সেনা আধিকারীকদের সঙ্গে তাদের ছেলেমেয়েরাও থাকতে পারত এবং প্রকৃত সেনা আধিকারিকের পরিবর্তে তাদেরও যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি ছিল।
বলা হয়ে থাকে তিনি বহু হিন্দু মন্দির ও হিন্দু সাহিত্য ধ্বংস করেছিলেন এবং তিনি ইসলামী সাহিত্য সংস্কৃত বা ফার্সিতে অনুবাদ করেছিলেন।
ফিরোজ শাহ তুঘলক প্রচুর পরিকাঠামো উন্নয়ন করেছিলেন। প্রচুর স্কুল-মাদ্রাসা, হাসপাতাল, খাল, জলাধার, সরাইখানা, বিশ্রাম স্থল ও রাস্তাঘাট তৈরি করেন। তিনি দিল্লীতে দারুশশিফা, শিফাখানা ও বিমারিস্তান নামে হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র খোলেন। বাণিজ্য সুবিধার জন্য ও আর্থিক সচ্ছলতার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য সরাইখানা ও বিশ্রাম স্থল খুলেছিলেন। তিনি পুরনো বহু ইমারত মেরামত ও নতুন ইমারত তৈরী করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম ভারতে ইমারত তৈরির পূর্বে নকশা তৈরি আবশ্যক করেন এবং সেই নকশা অনুযায়ী ইমারতগুলি তৈরি হত।
বারানির বর্ণনায় দিল্লিস্থিত মোট তিনটি অট্টালিকার কথা জানা যায়। প্রথমটি হচ্ছে জামে মসজিদ, দ্বিতীয়টি মাদ্রাসা, তৃতীয়টিকে তিনি বলেছেন বালাবন্দ। মসজিদ সম্বন্ধে বলেছেন, “একটি বৃহৎ, উচ্চ ও আশ্চর্য ধরনের অট্টালিকা; উচ্চ চূড়াগুলি যেন আকাশের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।.. বহু দূর দূরান্ত হইতে জুম্মার দিনে এই মসজিদে আসিয়া নামাজ আদায় করেন। জুম্মার দিনে মুসল্লিদের ভিড়ের ফলে মসজিদের উপর নিচে, আশেপাশে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। মুসুল্লিরা আশপাশের অলিগলিতে কাতার বাঁধিয়া দাঁড়ান”।
দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় (এখন অরুণ জেটলির নামে) তিনি এক অনন্য কীর্তি করে যান যা এখনও পর্যন্ত রয়েছে। ব্যবহার্য পানীয় জলের জন্য বৃহত্তম বাউলি। দিল্লিতে অবস্থিত একমাত্র বৃত্তাকার বাউলি। বাইরের দেওয়ালের ব্যাস ৩৩ মিটার এবং জলধারণ ক্ষমতা ৯ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত। বৃত্তাকার বাউলী দিল্লির বাইরে গুরগাঁওয়ে দেখা যায়। পুরনো গঠন যার ফলে কিছু কুসংস্কার ও জড়িত। ফেরোজ শাহ কোটলার দেওয়ালে, অলিতে-গলিতে স্থাপত্যের ফাঁক ফোকরে নাকি জ্বীনদের আবাস এবং তাদের কাছ থেকে যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়। মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও দুধ দিয়ে জ্বীনদের সন্তুষ্ট করা হয়। এই বিশ্বাসও আছে কাগজে লিখেও জিনদের কাছে আর্জি জানানো যায়।
ফিরোজ শাহ তুঘলক দ্বারা হরিয়ানার চাকধারীর টোপরা গ্রাম থেকে আনীত অশোক স্তম্ভের সামনে বাউলিটি রয়েছে। কোন এক সময় বাওলিটির উপরে একটি ছাদ ছিল পরে ধসে পড়ে যায়। ছাদ দেওয়ার কারণ ছিল এখানে কুঁয়ো ও জলাধার দুটি পৃথক না থাকায় পানির বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য। প্রকৃতপক্ষে বাওলিতে প্রবেশের পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি প্রবেশদ্বার ছিল। এখন পূর্বের প্রবেশদ্বারটি বন্ধ হয়ে গেছে। দুটি প্রবেশদ্বারেই গম্বুজ সহ ছত্রি ছিল। বাউলির কিনারা ঘেঁসে সিঁড়ির বেশ কয়েকটি ধাপ ক্রমশ জলের স্তর পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। পাইপ দ্বারা যমুনা নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল, এখনও আছে।
তিনি ‘দেওয়ান ই খয়রাত’ নামে একটি দপ্তর খোলেন যেখান থেকে গরিবদের সাহায্য দেওয়া হত। এই বিভাগটি দুইভাবে কাজ করত দরিদ্র অবিবাহিত নারীদের বিবাহের সাহায্য দেওয়া হত। দুঃস্থদের সাহায্য তো ছিলই। খরার সময় মহম্মদ বিন তুঘলক কৃষকদের ঋণ দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এসে ফিরোজ শাহ তুঘলক বেশিরভাগ ঋণ মুকুব করে দেন এবং ঋণ আদায়কারীদের ধীরে চলো নীতি নিতে বলেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সময় শাস্তি স্বরূপ যাদের চোখ হাত নষ্ট করে দেওয়া হত বা মৃত্যুদণ্ড দেন সেই ব্যক্তিকে বা মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের তিনি সাহায্য করেন।
‘দিওয়ান-ই-বন্দেগান’ নামে একটি দাসদের সুবিধার জন্য একটি দপ্তর খোলেন। তার সময়ে দাসের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ আশি হাজার। বিশাল সংখ্যক দাস প্রতিপালনে রাজকোষের উপর চাপ পড়ত। বলা হয়ে থাকে এই দাস সমস্যাই তুঘলক বংশের পতনের অন্যতম কারণ।
তিনি ইকতাদারী কাঠামো তৈরি করেন যা বংশপরম্পরায় পরিচালিত হত। এই প্রথার প্রচলনের ফলে একদল সুবিধাবাদী, প্রচন্ড ক্ষমতালোভী শ্রেণী তৈরি হয়েছিল।
তিনি ফিরোজাবাদ, ফাতেহাবাদ ,জৌনপুর ও হিসার এই চারটি নগরী স্থাপন করেন। এই বড় শহরগুলি ছাড়াও আরও ছোটখাট ২০০ টি শহর তিনি নির্মাণ করেছিলেন।
তিনিই প্রথম ব্রাহ্মণদের উপর জিজিয়া কর প্রয়োগ করেন। যদিও নারী ও শিশুদের জিজিয়া দিতে হতো না। একইসঙ্গে মুসলিমদের জন্য খারাজ ও যাকাত আবশ্যক করেন। খাম নামক অপর একটি করও চালু করেন। খারাজ হল ফসলের এক-দশমাংশ সরকারকে কর হিসাবে দিতে হবে। কোন না কোনরকমভাবে করব্যবস্থাটি লুটেরা ইংরেজ রাজত্বের আগে পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। যাকাত ছিল সম্পূর্ণভাবে মুসলিমদের উপর আরোপিত কর। যাকাতের পরিমাণ ছিল উদ্বৃত্ত সম্পদের আড়াই পার্সেন্ট। খাম নামক কর ব্যবস্থাটি আরোপিত হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ৪/৫ ভাগ বন্টিত হত সেনাদলের মধ্যে এবং ১/৫ ভাগ জমা হত সরকারি খাজাঞ্চিখানায়। এছাড়াও চুঙ্গি (Octroi) কর ও বিক্রয় (Sales) করের মত আধুনিক করব্যবস্থারও প্রচলন করেন। সেচ কর ও উদ্যান কর নামের আরও দুটি করও প্রচলিত ছিল। তিনি দিল্লি ও তার আশপাশে প্রায় ১২০০ টি উদ্যান রচিত করেন। উদ্যানগুলোতে এত বেশি ফল উৎপাদন হত যে ফল বিক্রি করে রাজকোষ স্ফীত হত। বাৎসরিক আয় ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার তাংখা।
কর ব্যবস্থা প্রচলনের আগে ফিরোজ শাহ তুঘলক খাজা হাসানউদ্দিনকে নিয়োগ করেন সমস্ত জমির একটি সমীক্ষা করতে। খাজা হাসান টানা ছয় বছর এই সমীক্ষা করেন। সমস্ত জমি সমীক্ষা করার পর খালসা বা সরকারি জমির কর হিসাবে ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ তাংখা বা রৌপ্য মুদ্রা ধার্য করেন। ফল হলো সরকার তার আয় বুঝে ব্যয় করতে পারত।
তাঁকে ভারতীয় সেচ ব্যবস্থার জনক বলা হয়। তিনি বেশ কয়েকটি সেচ খাল খনন করেন। সেগুলি হল যমুনা থেকে হিসার শহর পর্যন্ত ১৫০ মাইল, শতদ্রু থেকে গর্গর পর্যন্ত ১০০ মাইল, গর্গর থেকে ফিরোজাবাদ, মান্ধবী ও সিরমুর পাহাড় থেকে হরিয়ানার হাঁসি পর্যন্ত।
কুতুব মিনার চত্বরেও বহু কাজ করেন। ভূমিকম্পে কুতুবমিনার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি তা মেরামত করান। বর্তমান কুতুব মিনারের পাঁচ তলা পর্যন্ত গঠনটি তাঁরই কীর্তি।
দিল্লির হাউস খাস এলাকার অপর নাম হল হাউজ ই আলাই। সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী দিল্লির মানুষের জলের প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটি জলাধার খনন করেছিলেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক কালের নিয়মে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া জলাধারটিকে পুনরায় খনন করান। জলাধারটির দক্ষিণ ও পূর্ব কোণে বেশ কয়েকটি ইমারত নির্মান করেন এবং এলাকাটির নাম দেন হাউজ খাস। ইমারত গুলির উল্লেখযোগ্য একটি হলো ফিরোজ শাহ মকবারা। উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তে আরও একটি উল্লেখযোগ্য ইমারত হল মাদ্রাসা। সালে নির্মিত একটি বহুতল এবং হল ও কক্ষ শোভিত।
ফিরোজ শাহ ১৩৮৮-তে মারা গেলে আর কোন তুঘলক বংশীয় সেরকম উল্লেখনীয় ছিলেন না। নাসির উদ্দিন মাহমুদ ছিলেন শেষ তুঘলক। ১৪১২ নাগাদ মারা যান। দেশ বিজয় ও শাসনের ক্ষেত্রে ফিরোজ শাহ তুঘলক নিশ্চিতভাবে তাঁর পূর্বসূরিদের বিপরীত ছিলেন।
সুলতান চারটি বিশাল খাল খনন করার সাথে সাথে দশটি সাধারণ স্নানাগার, চারটি মসজিদ, ত্রিশটি প্রাসাদ, ২০০ টি সরাইখানা ১০০ টি মকবারা, ৩০ টি শহর, ১০০ টি সেতু নির্মাণ করেন। নির্মাণ কর্মে তাঁর এই স্বাভাবিক আকর্ষণ সম্বন্ধে তিনি নিজেই বলেছেন,
“আল্লাহ আমার মত ক্ষুদ্র এক দাসের উপর জনসাধারণের জন্য ইমারত তৈরীর আশীর্বাদ করেছেন। তাই আমি বহু মসজিদ ও মঠ নির্মাণ করেছি। ভক্ত ও পবিত্র মানুষেরা এখানে উপাসনা করবেন এবং নির্মাতাকেও মনে রাখবেন।”
বাস্তুকলার প্রতি ফিরোজ শাহ তুঘলকের উৎসাহ দেখে ভি এ স্মিথ বলেছেন,
“সাধারণত এশীয় রাজন্যবর্গের নিয়ম ছিল তাদের পূর্বসূরি দ্বারা নির্মিত ইমারতের প্রতি কোনো উৎসাহ দেখাতেন না। স্বাভাবিকভাবে অযত্নের ফলে ধ্বংস হওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হত। ফিরোজ শাহ বিশেস করে প্রাক্তন রাজা ও প্রাচীন মহান ব্যক্তিদের দ্বারা নির্মিত ইমারতগুলির মেরামত ও নতুন করে তৈরি করার দিকে নজর দিয়েছিলেন।”
9. Promotion of education and literature:
Firoz Tughlaq was a great patron of historians, poets and scholars. He himself was a man of learning and wrote his biography entitled ‘Fatuhat-i-Firozshah’. He established thirty educational institutions including three colleges. Teachers were liberally paid and stipends were granted to the students.
Zia-ud-Din Barani wrote ‘Fatwah-i-Jahandari’ and Afif wrote his ‘Tarikh-i-Firuzshah’.
Maulana Jalal-ud-Din Rumi, the famous theologian also flourished in his court.
10. Judicial reforms:
Firoz Tughlaq was opposed to severe punishments. He ended punishments like cutting of the limbs, extracting the eyes, putting melted glass in the throat, burning alive etc. He established courts at all important places of his empire and appointed Qazis etc. to administer justice.
11. Reforms in the currency system:
The Sultan introduced several types of new coins and small coins and ensured that no false coins came into circulation.
Dark Side of Firoz Tughlaq‘s Reign:
1. Failure as a conqueror:
Firoz Tughlaq was not an able general. No significant conquests were made by him.
Main military events are given below:
(i) Bengal:
Firoz Tughlaq made two attempts to conquer Bengal but failed.
(ii) Orissa:
While returning from Bengal, he attacked Orissa. The ruler agreed to pay tribute to the Sultan.
(iii) Nagarkot (Kangra):
It took about six months to subjugate the Raja who acknowledged the Sultan’s suzerainty.
(iv) Sindh:
In the initial attacks by the Sultan himself, about three- fourth of his army was destroyed. Later the Sindh ruler accepted the suzerainty of the Sultan.
2. Army organization:
The Sultan introduced several reforms in the army which produced negative results.
(i) He did not maintain a standing army,
(ii) Military service was made hereditary,
(iii) The principle of merit was ignored,
(iv) The Sultan introduced the system of paying salary by grant of land.
This meant that a soldier had to go to his village for collecting his land revenue in lieu of salary.
3. Evils of Jagirdari system:
Firoz Tughlaq introduced the system of granting jagirs (lands) to his officials in place of cash payment. In due course, jagirdars became very powerful and created difficulties for the rulers
4. Nereauary nobles:
Firoz Tughlaq decreed that whenever a noble died, his son should be allowed to succeed to his position. This reduced the chances of competent persons being appointed at responsible posts.
5. Slave system:
It is said that Firoz Tughlaq had maintained about one lakh, eighty thousand slaves. It put great economic burden on the state. This slave system proved very harmful and became one of the contributory factors of the downfall of the Tughlaq empire.
6. Fanatically intolerant religious policy towards the Hindus:
Firoz encouraged the Hindus for conversion to Islam. In his autobiography, he wrote, “I encouraged my infidel subjects (Hindus) to embrace the religion of the Prophet (Islam religion), and I proclaimed that everyone who left his creed and became a Mussalman should be exempted from ‘jizya’. He further wrote, “I also ordered that the infidel books, the idols and the vessels used in their worship (Hindus) should all be publicly burnt.”
7. Habit of drinking:
Firoz was so addicted to drinking that whenever he set out on a military expedition, he would remain in a state of drunkenness for several days. This was followed by his nobles and forces as well.
An estimate of Firoz Tughlaq:
(a) Appreciation by historians:
“The welfare of the people”, says Dr. Ishwari Prasad, “was the watchword of his administration. Therefore, Firoz is considered by Barani as an ideal Muslim King.”
In the words of Havell Firozj’s reign “is a welcome breath in the long chain of tyranny, cruelty and debauchery which make up the gloomy annals of the Turkish dynasties.”
Afif, a contemporary of Firoz writes, “Their (peasants) homes were replete with grain, everyone had plenty of gold and silver. “No women was without ornaments”
About the previous penal code and the changes brought about by Firoz, S.R. Sharma states, “it was left to his less appreciated successor (Firoz) to mitigate its ferocity.”
About the judicial system, V.A. Smith has said, “One reform the abolition of mutilation and torture, deserves unqualified commendation.”
About his love for buildings, Sir Woolseley Haigh has remarked, “He indulged in a passion for building which equalled if it did not surpass that of Roman emperor Augutus.”
সামরিক প্রতিভা কম থাকা সম্বন্ধে ভি এ স্মিথ বলেছেন,
“বাংলা দখলের কোন ফলাফল না পাওয়া গেলেও তবে রক্তপাত হয়েছিল। নতুন দেশ দখল হয়নি, পূর্বদেশের কোন পরিবর্তনও হয়নি। এটা সরাসরি বলা যায় ফিরোজশাহর সামরিক কোন দক্ষতা ছিল না। প্রথমদিকে পূর্বদেশে এবং পশ্চিম দেশে যে সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল এবং তিনি তার শাসনের বেশিরভাগ সময়ই যুদ্ধবিগ্রহে জড়াননি।”
স্মিথ সাহেব একটা ভালো কথা বলেছেন,
“ফিরোজের এই ধরনের যুদ্ধের প্রতি অনীহা তাঁর পূর্বসূরীদের যুদ্ধের মত ভয়ানক আচরণের বিপরীত ছিল তবে তিনি প্রশাসনে কিছুটা ঔষধের প্রলেপ দিতে পেরেছিলেন।”
ডা. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেছেন,
“সিন্ধু অভিযানের মত একটি অভিযানের ব্যর্থতা থেকেই বোঝা যায় তাঁর সামরিক প্রতিভার ঘাটতি ছিল।”
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিষয়টিতে তাঁকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। তিনি হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে উৎসাহিত করতেন। তাঁর বক্তব্য হল,
“আমি আমার অবিশ্বাসী প্রজাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম)- এর ধর্ম গ্রহণে উৎসাহিত করেছি। ঘোষনা করেছি যে সকল হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের জিজিয়া কর দিতে হবে না।”
তিনি আরও বলেছেন,
“আমি ঘোষণা করেছি অবিশ্বাসীদের বই মূর্তি ও পাত্র সকল যা তাদের প্রার্থনায় ব্যবহৃত হয় তা পুড়িয়ে ফেলতে।”
এই সম্বন্ধে এস আর শর্মা বলেছেন,
“খুব দুঃখের বিষয় যে তাঁর মত সুলতানের নাম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়েছিল।”
রমেশ মজুমদার বলেছেন, “ফিরোজ ছিলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ ধর্মান্ধ।” বিপি সাক্সেনা বলেছেন,”,… তার রাজত্বের শেষ ১৫ বছর তিনি ছিলেন উপশম বিহীন ও অবক্ষয়িত ধর্মান্ধ”। জিয়াউদ্দিন বারানীর বর্ণনায় বর্তমান ঐতিহাসিকরা যেভাবে তাঁকে ধর্মান্ধ বলে চিহ্নিত করেন তা অনেকাংশেই অন্তর্হিত। তাঁর খাল খনন, ইমারত নির্মাণ, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ হিন্দু-মুসলিম সব প্রজাদের জন্যই সমানভাবে উপকারী ছিল। হিন্দুদের যেমন জিজিয়া কর দিতে হত মুসলিমরা দিত যাকাত। তিনি যদি হিন্দু সাহিত্য, মূর্তি ধ্বংস ও অবিশ্বাসীদের এতটাই ঘৃণা করতেন তো অবহেলিত পড়ে থাকা মিরাট ও আম্বালার অশোকস্তম্ভ দুটি সযতনে দিল্লি এনে সংরক্ষণ করতেন না। তিনি নাকি ভারতীয়দের লেখা উপেক্ষা করতেন। রোমিলা থাপার, মেডিয়াভেল ইন্ডিয়া (NCERT) বইয়ে লিখেছেন, অন্তত দুটি ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফিরোজ শাহ শাহ তুঘলক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভারতীয় বিজ্ঞান সংক্রান্ত কাজের ফারসি অনুবাদ করান। এর মধ্যে একটি হল সংস্কৃত থেকে অনুদিত জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই ‘দালাইল ই ফিরোজ শাহি’ এবং আরও দুটি বই। ‘তিব্ব ই ফিরোজশাহি’ হল আয়ুর্বেদ ও গ্রিক চিকিৎসাবিদ্যার সাথে আরব চিকিৎসাবিজ্ঞানের সংকলন।
দাতব্য চিকিৎসালয় খোলেন। সেখানে তিনি ব্যক্তিগতভাবে রোগীদের সামনে উপস্থিত হতেন। তিনি নিজে ছিলেন ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর বিশেষজ্ঞ এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ রূপেও পরিচিত ছিলেন। এইসকল চিকিৎসায় তিনি তৎকালীন প্রচলিত রাসায়নিক জ্ঞান প্রয়োগ করতেন।
তিনি দিল্লির মাদ্রাসায় ধর্মচর্চার সাথে সাথে জীবন-যাপনের সকল বিষয়গুলিই চর্চিত হত। ফিরোজ তুঘলক প্রতিষ্ঠিত রাজকীয় গ্রন্থাগারটি (কিতাবখানা ই খাস) জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রচুর বই, অ্যাস্ট্রোল্যাব প্রভৃতি যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল যা পন্ডিত ব্যক্তিদের জ্ঞান অন্বেষণে সাহায্য করেছিল।
ফিরোজ শাহ দিল্লি ও তার আশপাশে বেশ কয়েকটি চতুষ্কোণ ও অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতির উদ্যান রচনা করেন। এরপর বাহাদুর নামক কোনও এক ব্যক্তির নামে একটি উদ্যান রচিত হয় যার মাঝে ছিল রঙিন টালি ও ফোয়ারা বসানো একটি জলাধার। সেখানে একটি প্রমোদগৃহও ছিল।
ফিরোজ শাহ তুঘলক ভারতে প্রথম প্রত্নতত্ত্ব ও জীবাশ্ম নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন। তিনি আম্বালা ও সারনাথ থেকে অনাদরে পড়ে থাকা দুটি অশোকস্তম্ভ যত্নের সঙ্গে তুলে নিয়ে আসেন যার একটি এখনও দিল্লিতে কুতুব মিনার চত্বরে শোভা পাচ্ছে, অপরটি রয়েছে হাউজ খাসে। তিনি অশোকস্তম্ভ দুটিকে প্রথমে তুলোর আস্তরণে মুড়ে দেন এবং তার উপর তৎকালীন দামি কাপড়ের আস্তরণ দেন। অত:পর গরুর গাড়িতে চড়িয়ে সাবধানে অক্ষত অবস্থায় দিল্লি নিয়ে আসেন। তাঁর প্রচেষ্টা তাঁকে ভারতে প্রত্নতত্ত্বের জনক হিসাবে পরিচিত করে। তিনি একটি সংগ্রহালয়ও খোলেন। হিমালয়ের শিবালিক অঞ্চল থেকে প্রচুর ট্রাইলোবাইটস নামক ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জীবাশ্ম (fossil) উদ্ধার ও সংগ্রহ করেন যা প্রাচীনকাল থেকে শালগ্রাম শিলা হিসাবে পূজিত হত। তিনিই প্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জীবাশ্ম সংগ্রহ করেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে ভারতে জীবাশ্মবিদ্যার দ্বার খুলে যায়।
জিয়াউদ্দিন বারনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ইতিহাস ও সুলতানি বংশ সম্পর্কে না লিখে জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক, যেমন-ধর্মীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বৌদ্ধিক বিকাশগুলি নিয়ে বেশি চর্চা করেছেন। তিনি রাজতন্ত্র অপেক্ষা গণতন্ত্রে বেশি বিশ্বাস রাখতেন। ‘ফতওয়া ই জাহান্দিরি’ নামক তাঁর অপর একটি বই ছিল।
ডক্টর ঈশ্বরী প্রসাদ বলেছেন,
“জনসাধারণের কল্যাণই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল। এই কারণেই বারানি ফিরোজশাহ সম্বন্ধে বলেছেন তিনি ছিলেন আদর্শ মুসলিম শাসক।”
হাভেলি বলেছেন,
“তুর্কি শাসকদের দীর্ঘকালীন অপশাসন, নিষ্ঠুরতা ও ব্যভিচারের মধ্যে ফিরোজশাহর শাসন ছিল শ্বাসবায়ুকে স্বাগত জানানোর মত।”
শামস আফিফ বলেছেন,
“কৃষকদের বাড়িতে প্রচুর শস্য জমা থাকত, প্রত্যেকের কাছের প্রচুর স্বর্ণ ও রৌপ্য ছিল, নারীদের গহনা ছাড়া চলত না।”
ফিরোজ শাহ তুঘলক দ্বারা বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে এস আর শর্মা বলেছেন,
“তাঁর অনুল্লেখনীয় উত্তরাধিকারীদের কাছে হিংস্রতা নিরসনে সাহায্য করেছিল।”
স্মিথ বলেছেন,
”(বিচার ব্যবস্থা) সংস্কার করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন ও নির্যাতন অবলুপ্ত করা অপ্রতিদ্বন্দ্বী রূপে স্বীকার্য।”
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।