বাঙালি জীবনের কথাকার আবদুল জব্বার (১৯৩৪-২০০৯)। দক্ষিণ ২৪ পরগণার নোদাখালির প্রত্যন্ত গ্রাম সাতগাছিয়া থেকে উঠে এসেছেন। কখনও দর্জির কাজ বা চাষের কাজ, কখনও চটকলে, কখনওবা রাজমিস্ত্রির কাজও করেছেন। কাজী আবদুল ওদুদের সাহচর্যেই তাঁর লেখালেখির স্বপ্ন ধীরে ধীরে সার্থক হতে শুরু করে। কাজী সাহেবের সান্নিধ্যে এসে প্রচুর বই পড়ার সুযোগ পান আবদুল জব্বার। পরিচয় ঘটে বিখ্যাত সব সাহিত্যিকদের সঙ্গে। প্রতিভা আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে পান আবদুল জববার। কৃতজ্ঞ আবদুল জববারের অকপট স্বীকারোক্তি: “আমার মাটির মূর্তিতে চোখ এঁকে দিয়েছেন আসলে কাজী আবদুল ওদুদই। এটা ধ্রুব সত্য, একশোভাগই সত্য।” প্রকৃতপক্ষে কাজী আবদুল ওদুদ সাহেব ছিলেন তাঁর সাহিত্যগুরু।
আবদুল ওদুদ সাহেবের সাথে পরিচয়ের আগেই আবদুল জব্বার সাহিত্য চর্চা শুরু করেছিলেন। আট বছর বয়সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ছেঁড়া খবরের কাগজের ওপর কবিতা লেখা শুরু। ১৯৪৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১০৬ লাইনের একটি কবিতা লিখে বাংলার শিক্ষকের প্রশংসা লাভ করেন। অনুপ্রাণিত হয়ে গল্প লেখাতেও হাতেখড়ি। ১৯৪৯ সালে প্রথাগতভাবে সাহিত্যের পথে যাত্রা শুরু। এ বছর মুরারীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রভাত রবি’ পত্রিকায় প্রথম গল্প ‘মা’ প্রকাশিত হয়। পরের বছর অনিল সিংহ সম্পাদিত ‘নতুন সাহিত্য’ পত্রিকায় বেরোয় দ্বিতীয় গল্প ‘ভুজঙ্গ’। আবদুল জব্বারের নিজের ভাষায়: “চাষের জন খাটতে খাটতে একদিন লেখার লাইনে চলে এলাম।” (পল্লীর পদাবলী)। ১৯৫৪ সালে ড. ধীরেন চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘মুখপত্র’ পত্রিকায় তৃতীয় গল্প ‘ভাঙন’ প্রকাশিত হয়। অল্প হলেও কবিতা, ছড়া এবং গানও লিখেছিলেন। অরুণকুমার দত্তের সুরে আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে তাঁর গান আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছে। সংসারের নানা কাজের মধ্যে নিজের অজ্ঞাতসারেই যেন চলেছিল সাহিত্যচর্চার প্রস্তুতি পর্ব। গ্রাম বাংলার মনোরম প্রকৃতি আর নানা পেশার মেহনতি মানুষদের তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতাই তাঁর সাহিত্যের প্রধান উপজীব্য হয়ে ওঠে। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আবদুল জব্বারের নিজের দাবি: “আল্লাহ আমাকে এত সামগ্রী দান করেছেন, ভরা পুকুর থেকে বাটি ডুবিয়ে পানি তুলে নিলে যেমন তার পরিমাণ বোঝা যায় না, আমার অভিজ্ঞতাও তেমনি। গ্রামবাংলার চলমান মানুষের জীবনযাত্রার কথা, গাছপালার নাম, তার গুণাগুণ আমি এত জানি যে আমি বলতে না পারলে বিশটা গ্রামের মানুষও বলতে পারবে না।”
এই প্রত্যয় থেকেই ‘দেশ’ এর পাতায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সাথে ‘হিজল’ নিয়ে বিতর্ক। তবে সাহিত্যিক হিসাবে মুস্তাফা সিরাজকে আবদুল ওদুদ বিশেষ মর্যাদা দিতেন। তাঁর সাহিত্য চেতনায় বিভূতিভূষণ, মানিক ও অবনীন্দ্রনাথ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। বিভূতিভূষণের বিস্ময়বিমূঢ় দৃষ্টিতে তিনি বাংলার প্রকৃতিকে দেখেছেন, মানিকের মতো বস্তুবাদী উপলব্ধি নিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন মেহনতি মানুষের জীবনসংগ্রাম, আর এ দুটির মিশেল দিয়ে অবনীন্দ্রনাথের কলমে যেন সেগুলির ছবি এঁকেছেন। লেখার জন্য কোনো চেয়ার-টেবিল ছিল না। চৌকিতে কিংবা মাটির ঘরের দাওয়ায় বসে লিখতেন।
আবদুল জব্বার ‘পয়গাম’ পত্রিকায় কাজ করেছেন চার বছর, পরে ‘চতুরঙ্গে’। ‘দেশ’ পত্রিকায়ও কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। জীবনের শেষ পর্বে সাপ্তাহিক ‘বর্তমান’ পত্রিকায়ও কাজ করেছেন। প্রায় ৬০টি বইয়ের লেখক আবদুল জব্বারের প্রথম প্রকাশিত বই ‘বুভুক্ষা’। আবদুল ওদুদ নিজের খরচে এই গল্পের বই ছেপেছিলেন। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘ইলিশমারীর চর’—সাড়া জাগানো নদীমাতৃক উপন্যাস, যা অদ্বৈত মল্লবর্মনের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ ও সমরেশ বসু ‘গঙ্গা’র সঙ্গে তুলনীয়। ১৯৬২-এ ‘জাগরণ’ পত্রিকার ঈদসংখ্যায় ইলিশমারীর চর’ প্রকাশিত হয়। পরে বইটি ইউনিভার্সাল বুক ডিপো থেকে প্রকাশিত হয়। কারণ আবদুল আজিজ তখনও ভাসমান। ‘কাফেলা’ পত্রিকা বা হরফ প্রকাশনীর আবির্ভাব ঘটেনি। অন্যদিকে মল্লিক ব্রাদার্স কেবল পাঠ্য বই বিক্রির দোকান। অতএব ইউনিভার্সাল বুক ডিপো—আরেক মল্লিকের দোকান। আবদুল আজিজেরও ‘সাহিত্য সঙ্গ’ ও ‘পদক্ষেপ’ নামক বই দুটি এখান থেকেই বেরিয়েছিল।
মাটির মানুষ আবদুল জব্বারের ‘ইলিশমারির চর’ উপন্যাসে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ইলিশ মাছ শিকারীদের জীবনযাপনের ছবি ধরা পড়েছে। দৈনন্দিনতার টানাপোড়েনে ক্লিষ্ট মানুষের জীবনকথাও যে মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনায় পরিকীর্ণ হয়, হতে পারে, ইলিশমারির চর’ তার একটি উদাহরণ। প্রকৃতপক্ষে আঞ্চলিকতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এ উপন্যাস। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার আঞ্চলিক উপভাষা, বাগবিধি, পরবাস প্রবচন অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন লেখক। প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র ইলিশমারীর চর’ উপন্যাস সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘ইলিশমারির চর’ ‘ফড়ের কাছে কেনা ফসল নয়, নিজের হাতে ফলানো’।
আবদুল জব্বার আরও বহু উপন্যাস লিখেছেন। যেমন- ‘অশান্ত ঝিলম’ (১৯৮৭), ‘শঙ্খবালা’, ‘মাটির কাছাকাছি’ (১৯৯৭), ‘ভরা কোটাল’(১৯৯৮), ঝিনুকের নৌকো’, ‘মাতালের হাট”, “বিদ্রোহী বাসিন্দা’, ‘রাতের জোয়ার (১৯৯৯), ‘সুন্দরী অরণ্য (১৯৯৯) ,’বদর বাউল’, ‘অমৃত সমান’ (২০০১), ‘চোরাবালি (২০০২), ‘পাহাড়ী ময়ূর’ (২০০৩), ‘ভাবসমাধি’ (২০০৪), ‘মোহিনী’ (২০০৬) ‘রাতপাখির ডাক’, ‘মরিয়মের কান্না’, ‘লালবানু’, ‘আলোর ঠিকানা’, ‘ভালোবাসা মধুময়’; ‘রূপবতী রাত’, ‘লাজবতী’ (২০০৮), ‘আপনজন’, ‘রূপের আগুন’, ‘কনকচূড়া’, ‘বেদেনী’, ‘নলখাগড়া’, ‘বাঘের খোঁজে’, ‘সাত সাগরের নাবিক’, ‘নীলাঞ্জনা’, “মানুষজন’, ‘শিশিরভেজা ধান’, ‘আলোর ঠিকানা’, ‘দহন’ প্রভৃতি।
আবদুল জব্বারকে বিখ্যাত করে ‘বাংলার চালচিত্র’। ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই থেকে ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে বেরোতে থাকে ‘বাংলার চালচিত্র’। ১৯৭৩ সালে আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্র থেকে ‘গ্রামের ওই কালো কালো মানুষগুলো’ ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত হয়। ছোটো-বড়ো বিভিন্ন পত্রিকায় বেরোতে থাকে তাঁর নতুন স্বাদের লেখাগুলো। তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষদেশে তাঁর অবস্থান। ‘বাংলার চালচিত্র’ পড়ে অভিভূত ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ‘দেশ’ সম্পাদক সাগরময় ঘোষকে ফোন করে আবদুল জববারের সাথে আলাপ করেন। তাকে চলমান গ্রামীণ অভিধান’ বলে অভিহিত করেন। পেটের দায়ে তাঁরই পরামর্শে এরপর ‘যুগান্তর’ ও ‘অমৃত’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করলেন। ‘অমৃত’-এ ‘মুখের মেলা’ বেরোতে লাগল। সেখানেই অংকে ভুল হয়ে গেল। সাহিত্য জগতের এই শুভংকরী বিদ্যেটা ‘গেঁয়ো মানুষ’ আবদুল জব্বারের জানা ছিল না। প্রায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে ১৯৭০ সালের ২৫ এপ্রিলের পর হঠাৎ ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘বাংলার চালচিত্র’ বন্ধ হয়ে গেল। আবদুল জব্বারকে সারাজীবন এই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে। এরপর যুগান্তর গোষ্ঠী সাহিত্য ও সংবাদ জগৎ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলে। প্রায় আড়াই বছর আবদুল জব্বার সেখানে লেখালেখি করেছেন। ‘বাংলার চালচিত্র’-এর কয়েকটি রচনা ইলাসট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়া’তে প্রকাশিত হয়। অনুবাদ করেন কে কে ঘোষ।
তেতাল্লিশটি ফিচার নিয়ে ১৯৭০ সালে ‘বাংলার চলচিত্র’ বই আকারে প্রকাশিত হয় মিত্র ও ঘোষ থেকে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে উৎসর্গীকৃত এই বইটির ভূমিকা লেখেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রচ্ছদ আঁকেন পূর্ণেন্দু পত্রী। এরপর ‘বর্তমান’ আত্মপ্রকাশ করলে বরুণ সেনগুপ্তের আহ্বানে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিকভাবে ‘গ্রামগঞ্জের পথে পথে’ লেখেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘নবকল্লোলে’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ‘বাংলার চালচিত্র উত্তরপর্ব’। প্রায় বছর তিনেক ধরে প্রকাশিত হওয়ার পর করুণা প্রকাশনী থেকে সেটি বই আকারে বেরোয়। উৎসর্গ করা হয় কবি জীবনানন্দ দাশকে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ‘বাংলার চালচিত্র দ্বিতীয় খণ্ড’ প্রকাশিত হয়। ‘গ্রামগঞ্জের পথে পথে’ বেরোয় মণ্ডল বুক হাউস থেকে। ১৯৯১ সালে তাঁর ‘সোদামাটি নোনাজল’ নিয়ে পরিচালক রাজা দাশগুপ্ত ১৩ পর্বের একটি টিভি সিরিয়াল করেন। ২০০১ সালে খুশওয়ান্ত সিং-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সর্বভারতীয় গল্প সংকলন ‘বেস্ট ইন্ডিয়ান শর্ট স্টোরিজ’। সংকলনে বাংলা ছোটগল্প হিসাবে একমাত্র আবদুল জব্বারের ‘এ টেল অব দ্য হিজড়া’ নির্বাচিত হয়। ভারতের ২২ জন যশস্বী লেখকের এই গল্প সংকলনটি দিল্লির বুকস টুডে’ প্রকাশন সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়। আবদুল জব্বারের শেষ বই ‘আল-বিদিশা’—আরব্য উপন্যাসের স্টাইলে লেখা ১২০০ পৃষ্ঠার এক অদ্ভুত কাহিনিমালা। বইটি এখনও অপ্রকাশিত। ‘মাটিতে জন্ম নিলাম’ নামে দু’খণ্ডে একটি আত্মজীবনী লিখতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু অসুস্থতার কারণে শেষ করতে পারেননি।
আবদুল জব্বার গল্পও লিখেছেন বিস্তর। তাঁর সাড়া জাগানো গল্প ‘বদলিওয়ালা’। চটকল শ্রমিকদের ডিউটি বদল নিয়ে লেখা অসাধারণ গল্প। বিষয়বস্তু বিবেচনা করে গল্পটি ‘পরিচয়’ পত্রিকায় পাঠানো হয়েছিল। সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে ননী ভৌমিক গল্পটি প্রশংসা করে চিঠি লিখেছিলেন: “আপনি যাদের কথা লিখেছেন, তাদের জীবন যে আপনার নখদর্পণে দু-লাইন পড়লেই বোঝা যায়।” কিন্তু এই প্রশংসার পরও সেটি ‘পরিচয়ে’ ছাপা হয়নি। কারণ এই গল্পে রহমানের মুখ দিয়ে আবদুল জব্বার একেবারে অকপটে বসে দিয়েছেন: “গরিবদের পার্টি, তারা যখন রাজত্ব পাবে তারাও গরিব মানুষদের ওপর দিয়ে গাড়ি-ঘোড়া চালাবে।” এই সাংঘাতিক কথাটি তাদের পছন্দ হয়নি। সাংঘাতিক, কিন্তু ধ্রুবসত্য। আবদুল জব্বারের দূরদর্শিতার তারিফ করতে হয়। স্বয়ং যিনি সর্বহারা আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে স্বাভাবিকভাবেই তিনি এমন কথা ভাবতে পেরেছিলেন। তাঁর এই দুরদর্শিতার উৎস বোধহয় কাজী আবদুল ওদুদের সাহচর্য। উদার প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষ হলেও আবদুল ওদুদ ছিলেন কমিউনিজমের ঘোরতর বিরোধী। কমিউনিজমকে তিনি চরম সুবিধাবাদী মতবাদ এবং একটি রাজনৈতিক চাতুরি বলে মনে করতেন। আবদুল জব্বারের ওপর আবদুল ওদুদের এই চিন্তাধারার প্রভাব ইলিশমারীর চর’-এ আরও স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে। পরে আবদুল জব্বার ‘বদলিওয়ালা’ গল্পটি আবদুল ওদুদ সাহেবকে পড়ে শুনিয়েছিলেন। তিনি খুশি হয়ে দশ টাকা দক্ষিণা দিয়ে তাঁর প্রতিভাকে স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন জীবনে যদি কোনোদিন বড়ো লেখক হতে পার তাহলে সকলকে জানাবে। চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও আবদুল জব্বার সেই দশ টাকার নোটটি সযত্নে সংরক্ষণ করেছিলেন। এটিই তাঁর জীবনের প্রথম সম্মান দক্ষিণা। গল্পটি আবদুল ওদুদ সাহেবের ‘সংকল্প’ পত্রিকায় পরে প্রকাশিত হয়।
এরপর আবদুল জব্বার ‘আড়বাঁশি’, ‘ভাঙন’, ‘অমৃতস্নান’, ‘সমুদ্র ভৈরবী’, ‘বৃহন্নলা সংবাদ’, ‘কন্টিকারী’ প্রভৃতি গল্প লেখেন। ‘দেশ আমার মাটি আমার’ তাঁর নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প সংকলন। স্কেচধর্মী লেখায়ও আবদুল জব্বার ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘জনপদজীবন’, ‘মাটির কাছাকাছি’, ‘বাংলার জলছবি’, ‘বাংলার জীবন ও জীবিকা’, ‘মানুষের ঠিকানা’, ‘মুখের মেলা’, ‘পল্লীর পদাবলি’, ‘বাংলার নৈবেদ্য’, ‘গ্রামগঞ্জের পথে পথে’ প্রভৃতি বইতে তাঁর চিত্রাঙ্কনের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু দারিদ্র ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। চার সন্তানের পর পঞ্চম সন্তান জন্মের পরই মারা গেলে তিনি দিনলিপি’তে লিখেছিলেন, ‘বাঁচা গেছে, মানুষ করার খরচ বাঁচল।’ কত কঠিন অবস্থায় পড়লে তবে কোনো অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ এমন কথা লিখতে পারেন! স্বভাবতই মাটির সঙ্গে নিবিড় টান ছিল তাঁর তাই তাঁর বেশিরভাগ রচনায় মাটির গন্ধই পাওয়া যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগণার সমূহ জনপদকে তিনি যেভাবে তাঁর নানা লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তা বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ও বিশ্বস্ত দলিল।
শরৎস্মৃতি পুরস্কার, শৈলজানন্দ পুরস্কার, প্রতিমা মিত্র স্মৃতি পুরস্কার, কাফেলা সাহিত্য পুরস্কার, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, তারাশঙ্কর পুরস্কারের মতো কয়েকটি বেসরকারি পুরস্কার পেয়েছেন। কোনো বড়ো পুরস্কার ভাগ্যে জোটেনি। সরকারি পুরস্কার বলতে মামুলি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি পুরস্কার। কিন্তু পুরস্কার দিয়ে লেখকের মূল্যায়ন হয় না। তিনি নিজেই এক ইতিহাস। তাঁর সৃষ্টির মূল অনেক গভীরে, মানুষের হৃদয়ের জমিতে তা পল্লবিত।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।