লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
॥ এক ॥
একটি নির্জন জঙ্গলের ধারে নদীর পাড়ে একা বসে রয়েছে ইরফান। তার জীবনের একটাই ইচ্ছা বড় লেখক হওয়া। লেখালেখি করেই তার নাম, যশ, খ্যাতি সব হবে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ইরফান যখনই লিখতে বসে এই জঙ্গলে নদীর পাড়ে চলে আসে। নিরিবিলি স্থানে স্বচ্ছ মস্তিষ্কে চিন্তাশক্তি আরও প্রশস্থ হয়ে যায়। মনের মণিকোঠা থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে যে কল্পনাগুলি বেরিয়ে আসে ইরফান সেগুলি ডায়েরীর পাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখে।
অন্যদিনের মত আজও ইরফান ডায়েরীর পাতায় অবিরাম লিখে চলেছে। এমন সময় হঠাৎ লিখতে থাকা ডায়েরীর পাতাখানি ছিঁড়ে মুড়িয়ে দূরে ফেলে দেয়। কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। আবার সে উত্তেজিত হয়ে কলমটিকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
দূর থেকে ইরফানের বন্ধু সাজিদ সিগারেট টানতে টানতে হেঁটে আসছিল। ইরফানকে এভাবে খাতা কলম ছুঁড়তে দেখে দৌড়ে তার কাছে এল এবং বলল, “কি হল, কাগজ কলম এভাবে ছুঁড়ে ফেলছিস কেন? বুঝেছি তোর উপন্যাসের বাকি অংশগুলো মাথায় আসছে বলে কাগজ আর কলমের উপর রাগ ঝাড়ছিস তাই তো।”
ইরফান সাজিদের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে, “সবই যখন বুঝছিস তখন প্রশ্ন করছিস কেন?”
“ভাল করে সিরিয়াসলি ভাব ঠিক মাথায় এসে যাবে।” সাজিদ বলে।
ইরফান বলে, “না রে কোনমতেই বাকি অংশটুকু মাথায় আনতে পারছি না। সামনেই পুজো এসে গেল, ভেবেছিলাম শারদীয়া সংখ্যায় পুরো উপন্যাসটাই একসাথে বের করব, এখন ভেবে পাচ্ছি না কি করব।”
সাজিদ কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে চিন্তা করে বলে, “তুই এক কাজ কর তোর গল্পের যতটুকু অংশ লিখেছিস আমাকে শোনা, আমি ভেবে দেখি কিছু আইডিয়া দিতে পারি কিনা, আমিও তো এক আধটু লিখি।”
ইরফান সাজিদের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “ঠিক আছে তাহলে শোন । আমার গল্পের নায়িকা হল নুসরত একটি মেয়ে। সে রিহান নামের একটি ছেলেকে ভালবাসে।” কথাটি বলে ইরফান সাজিদকে গল্প বলতে থাকে। এক এক করে যতদুর লেখা হয়েছিল তার প্লট সাজিদকে শুনিয়ে দিল। ইরফান গল্প শেষ করে বলে, “এই হল আমার গল্প, বাকিটা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না বুঝলি।”
সাজিদ বলল, “বুঝেছি, তোর গল্পের ক্লাইমেক্সটা আমি ভেবে দেখছি। আমাকে মাত্র দুইদিন সময় দে দেখি কি করা যায়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“আচ্ছা আমি এখন চলি।” বলে সাজিদ সেখান থেকে চলে গেল। পলায়নরত সাজিদের পিছন দিকে ইরফান একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল।
পরের দিন ইরফান তাদের গ্রামের মেঠো রাস্তায় হেঁটে চলেছে। নিত্যদিনের সঙ্গী তার ব্যাগটিও ঘাড়ে রয়েছে। ইরফান যেখানে যায় সঙ্গে ব্যাগটিও নিয়ে যায়। সব সময় কিছু বইপত্র তাতে ভরা থাকে। সুযোগ পেলেই বের করে পড়তে শুরু করে।
রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ সে বুঝতে পারল কারা যেন রাস্তার ধারে বসে গল্প করছে। ইরফান এগিয়ে গিয়ে দেখে চমকে উঠল, দেখল এরা তো সেই দুইজন চরিত্র রিহান ও নুসরত যাদের নিয়ে সে তার উপন্যাসখানি লিখছে। এক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। ইরফান এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে কুল কিনারা করতে পারল না। এটা কি করে সম্ভব। মনের মাধুরীর সাথে কলমের কালি মিশিয়ে যে চরিত্র দুটিকে সে দিনের পর দিন পরিশ্রম করে উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছে এবং কল্পনার জগতেই তাকে সীমাবদ্ধ রেখেছে সে কি করে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমনও কি সম্ভব হয়? ইরফান ভেবে কুল কিনারা করতে না পেরে আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে গেল। রিহান ও নুসরত হাসতে হাসতে গল্পে মেতেই রইল।
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
এই ঘটনার দুইদিন পরেই আবার ইরফান আবার সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিল যেখানে রিহান ও নুসরত বসেছিল। ইরফান দেখল তারা আজ সেখানে নেই। সে একটু একটু করে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে যেস্থানে দুজনে বসেছিল সেখানে বসে পড়ল এবং ব্যাগ থেকে এক খানি বই বের করে পড়তে লাগল। ইরফান হঠাৎ পাশ থেকে নারী কণ্ঠ শুনতে পেল, “Excuse me.” ইরফান পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল রিহান ও নুসরত তার পাশেই বসে রয়েছে। ইরফান অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা?”
নুসরত ইরফানের হাতে আলতো করে হাত দিয়ে বলল, “বলছি আপনি তো সবই জানেন আমাদের বিয়েটা কিছুতেই হয়ে উঠছে না, যদি কিছু একটা ব্যাবস্থা করে দেন।”
ইরফান অবাক হয়ে বলল, “আমি? আমি কি করতে পারি?”
পাশেই রিহান বসেছিল। সে বলল, “আপনি ছাড়া আর কে আমাদের মিলন ঘটাতে পারে?”
ইরফান রিহানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “মানে?”
নুসরত আবার ইরফানের হাতে আলতো করে হাত রেখে বলল, “বাড়িতে গিয়ে উপন্যাসের ডায়েরীটা খুলুন সব উত্তর পেয়ে যাবেন।”
কথাটি বলে দুজনে উঠে চলে গেল । ইরফানের হাতের যে জায়গার নুসরত হাত দিয়েছিল সেখানে হাত বুলাতে বুলাতে পলায়নরত দুজনের পিছনের দিকে তাকিয়ে রইল।
॥ দুই ॥
ইরফান চিরঅভ্যাসমত জঙ্গলের ধারে নদীর পাড়ে ডায়েরী ও কলম নিয়ে বসে আছে উপন্যাসখানি লেখার জন্য। ইরফান কলমখানি নিয়ে লিখতে যাবে এমন সময় তার মনে পড়ে গেল নুসরতের হাতের কোমল ছোঁয়া । ইরফানের চোখে মুখে নুসরতের জন্য এক অদ্ভুত লালসা জেগে উঠল। সে ক্রুর ভাবে তাকিয়ে রইল ডায়েরীর দিকে। এরপর সে কলম উঠিয়ে লিখতে লাগল। সে উপন্যাসে গল্প পরিবর্তন করে লিখে দিল যে রিহান ট্রেনে করে হায়দ্রাবাদ চলে যাচ্ছে। ইরফান এইজন্যই উপন্যাসের প্লট পরিবর্তন করল যাতে সে নুসরতকে রিহানের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নুসরতকে কাছে পেতে পারে।
পরের দিন ইরফান আবার রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে। সেইখানে গিয়ে উপস্থিত হল যেখানে রিহান ও নুসরতের সাথে প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল। সে একবার বসার স্থানটির দিকে তাকিয়ে একবার চারিদিকে তাকিয়ে নিল। তারপর আস্তে আস্তে সেখানে গিয়ে বসে পড়ল। আবার সে ব্যাগ থেকে একটি বই বের করে পড়তে লাগল। হঠাৎ সে অনুভব করল কে যেন তার হাত স্পর্শ করেছে। পাশ দিকে তাকিয়ে দেখল নুসরত বসে রয়েছে। নুসরত বলল, “আমি আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম যে আপনি আমার এত বড় সর্বনাশ করলেন?”
“কেন আমি আবার তোমার কি সর্বনাশ করলাম।” ইরফান বইয়ের পাতা উলটাটে উলটাতে বলল।
নুসরত বলল, “কেন আপনি আপনার উপন্যাসে রিহানকে হায়দ্রাবাদ পাঠিয়ে আমার থেকে আলাদা করে দেননি?”
ইরফান বলল, “তাতে কি হয়েছে? ওটা তো আমার উপন্যাস, আর আমি আমার উপন্যাস যে ভাবে ইচ্ছা লিখতে পারি।”
নুসরত বলল, “আপনি যেটাকে উপন্যাস বলছেন সেটা আমার জন্য সর্বনাশ। আর এই কথা আপনি ভাল ভাবেই জানেন।”
ইরফান এক দৃষ্টিতে নুসরতের দিকে চেয়ে বলল, “তোমার সর্বনাশ তো আমি এখনো কিছুই করিনি, উপন্যাসের আসল ক্লাইমেক্স তো এখনো বাকি আছে।”
নুসরত চমকে গিয়ে বলল, “কেন আর কি করবেন আপনি?”
“সময় হলে ঠিক বুঝতে পারবে। আজ সন্ধে বেলায় আমার বাড়ি চলে এসো। কিছু কথা আছে।” কথাটি বলে ইরফান সেখান থেকে উঠে চলে গেল। অবাক নয়নে নুসরত ইরফানের পিছন পানে চেয়ে রইল। সে কিছুই ভেবে পেল না কি করবে?
সন্ধে বেলায় নুসরত ইরফানের বাড়িতে উপস্থিত। ইরফান ও নুসরত সামনাসামনি বসে রয়েছে। ইরফান নুসরতকে বলে যে সে যেন রিহানকে ভুলে যায়। কথাটি শুনে নুসরত উত্তেজিত হয়ে বলে, “এটা কি করে সম্ভব? আমি কিভাবে রিহানকে ভুলে থাকতে পারি?”
ইরফান ধীর কণ্ঠে বলে, “থাকতে হবে কারণ আমি বলছি তাই?”
নুসরত বলে, “না আমি রিহানকে কোন মতেই ভুলে থাকতে পারব না।”
ইরফান চিৎকার করে উঠে। নিজেকে সামলে বলে, “তোমাকে ভুলে থাকতেই হবে, কারণ তুমি আমার। তোমাকে আমি সৃষ্টি করেছি। তাই তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার আছে, আর কারো নয়।”
নুসরত অবাক হয়ে বলে, “What you fuck it talking about? কি যা তা বলছেন?”
ইরফান উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, “দেখো আমাকে বাধ্য করো না ইয়ার।”
নুসরত ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে বলে বলে, “বাধ্য? কি করতে?”
ইরফান বলে, “রেপ করতে।”
শুনেই নুসরত সজোরে ইরফানের গালে এক থাপ্পড় মারল। ইরফান আর সহ্য না করে নুসরতের হাতখানি ধরে বলল, “চল শালি আজ তোর ক্লাস নিচ্ছি।” বলে নুসরতের হাতখানি শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল। নুসরত চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, “প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।” বলে নুসরত জোর করে হাতখানি ছাড়িয়ে একটি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে ইরফান দরজায় জোরে লাথি মারল, দরজাখানি খুলে গেল এবং নুসরত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ল। ইরফান আবার নুসরতের হাতে ধরে টেনে নিয়ে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে চেপে ধরল। এরপর ইরফান নুসরতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ‘দেখ নুসরত তোমাকে আমি সৃষ্টি করেছি, তাই তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার, আমি তোমাকে সম্ভোগ করব না হত্যা করব সেটা আমার ব্যাপার।”
নুসরত কাঁদতে কাঁদতে বলে, “প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।”
ইরফান নুসরতের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “সেটা হয়না সোনামনি, তোমাকে ছেড়ে দেবার জন্য তো বানায়নি। তোমাকে পাবার জন্য আমি আমার গল্পের প্লট পরিবর্তন করে দিয়েছি, কলমের কালির সাথে মনের মাধুরী মিশিয়ে তোমাকে আরও লাবন্যময়ী করে তুলেছি কি এই জন্যই যে তোমাকে অন্য কেউ ভোগ করবে?”
নুসরত বলে, “কি যা তা বলছেন আপনি?”
ইরফান আর কিছু না বলে নুসরতকে জোর করে পালঙ্কের উপর ফেলে দিল এবং তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। নুসরত চিৎকার করতেই থাকল।
॥ তিন ॥
নুসরত অর্ধ নগ্ন অবস্থায় পালঙ্কের নিচে বসে রয়েছে এবং কান্না করছে। ইরফান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্যান্টের বেল্ট লাগাচ্ছে। এমন সময় রিহান দরজা খুলে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। নুসরত তাড়াতাড়ি উঠে দৌড়ে গিয়ে রিহানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। রিহান ঘরের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে চারিদিকে তাকাতে লাগল। ইরফান অবাক হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে রইল। সে থতমত হয়ে বলল, তুমি? তুমি এখানে কি করে? আমি তো তোমাকে হায়দ্রাবাদ পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এটা কি করে সম্ভব তোমরা তো আমার উপন্যাসের চরিত্র। আমি যেমন লিখেছি ঠিক তেমন হচ্ছে। আমি তো তোমাকে হায়দ্রাবাদ থেকে ফিরিয়ে আনিনি।
রিহান বলে, “আপনি কি ভেবেছিলেন আমাকে হায়দ্রাবাদ পাঠিয়ে নুসরতের সাথে যা ইচ্ছে তাই করবেন আর আমি কিচ্ছু বুঝতে পারব না। আর কেমন লোক আপনি, আপনি কিনা শেষ পর্যন্ত নিজের সৃষ্টি করা চরিত্রকে রেপ করলেন?”
ইরফান রিহানের কথার প্রতি কর্ণপাত না করে বল, “তুমি এলে কি করে?”
“আপনি কি ভেবেছেন আপনি আমায় হায়দ্রাবাদ থেকে না নিয়ে এলে আর কেউ আনতে পারবে না?”
“মানে?”
“মানেটা খুব সহজ, একবার ভেবে দেখুন আপনি আপনার উপন্যাস লেখার সময় কাকে আপনার গল্প শুনিয়েছিলেন? তিনিই আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন।”
রিহান কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল সে সাজিদকে গল্পটা শুনিয়েছিল। সাজিদের সেই কথাটি ইরফানের কানে ভেসে উঠল যা সাজিদ বলেছিল, “তুই এক কাজ কর তোর গল্পের যতটুকু লিখেছিস আমাকে শোনা, আমি ভেবে দেখি কিছু আইডিয়া দিতে পারি কিনা, আমিও তো এক আধটু লিখি।”
ইরফান অবাক হয়ে বলল, “সাজিদ?”
এমন সময় সাজিদ রুমের মধ্যে প্রবেশ করল। সে বলল, “হ্যাঁ আমি। আমিই রিহানকে হায়দ্রাবাদ থেকে ফিরিয়ে এনেছি।”
ইরফান অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু কেন?”
সাজিদ এক গাল হেসে কটাক্ষের স্বরে বলল, “তুমি শালা নুসরতের সাথে মজা মারবে আর আমি বসে বসে আঙ্গুল চুসব।”
ইরফান বলল, “তার মানে।”
“মানেটা এক্ষুনি বুঝতে পারবে, তুমি তোমার গল্পের প্লট পরিবর্তন করে রিহানকে হায়দ্রাবাদে পাঠিয়ে ভেবেছিলে একা নুসরতের সাথে মজা করবে, কিন্তু তোমার গল্পের এমন প্লট পরিবর্তন করেছি তাতে তুমি বেটা জেল খাটবে। তারপর নুসরত হবে একমাত্র আমার।” কথাগুলি সাজিদ বলে গেল।
ইরফান এতক্ষণে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল, “মানে তুমি নুসরতকে পাবার জন্য এতকিছু করেছ।”
সাজিদ বলে চলল, “হ্যাঁ, তুমি যদি নুসরতকে পাবার জন্য হায়দ্রাবাদ পাঠিয়ে দিতে পারো তাহলে আমিও নুসরতকে পাবার জন্য রিহানকে হায়দ্রাবাদ থেকে ফিরিয়ে এনেছি।”
ইরফান ভ্রু কুচকিয়ে বলল, “কিন্তু এতে তুমি নুসরতকে পাবে কি করে সে তো রিহানের কাছেই ফিরে যাবে।”
সাজিদ ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করে বলল, “তার ব্যাবস্থাও আমি এই উপন্যাসে লিখে রেখেছি, শুধু দেখতে থাকো কি হয়? আসল ক্ল্যাইমেক্স তো এখনো বাকি আছে।”
রিহান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দুইজনের কথোপথন শুনছিল। দুইজনের কথোপথন শুনে পুরো ব্যাপারটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে নুসরতেকে পাবার জন্যই তারা দুইজনে এতকিছু করেছে। সে আর সহ্য করতে না পেরে বলল, “তার মানে তোমরা দুজনে নুসরতকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবার জন্য এত কিছু করেছ?”
ইরফান রেগে গিয়ে বলল, “সবই যখন বুঝেছ তখন এত ফালতু কথা বলছ কেন?”
রিহান এবার রেগে গিয়ে খিস্তি দিয়ে বলল, “You Idiot.”
কথাটি বলে রিহান ইরফানের গলা টিপে ধরল । ইরফান তাড়াতাড়ি পকেট থেকে পিস্তল বের করে রিহানের বুকের দিকে তাক করে ধরল । রিহানও পিস্তলটিকে জোরে টিপে ধরল। দুজনে পিস্তল টানাটানি করতে লাগল । এদিকে নুসরত “ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও” বলে চিৎকার করতে থাকে। পিস্তল একবার রিহানের দিকে তাক হয় একবার ইরফানের দিকে তাক হয়। শেষ মেষ রিহানের দিকে তাক করে ইরফান একটি ফায়ার করল এবং রিহান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে নুসরত আঁতকে উঠে। ইরফান সাজিদের দিকে তাকিয়ে ক্রোধান্বিত হয়ে বলেঃ
ইরফান সাজিদের দিকে তাকিয়ে ক্রোধে লাল হয়ে বলে, “শালা তোর জন্যই আমার পুরো প্ল্যান চৌপট হয়েছে, তোকেও ছাড়ব না।”
কথাটি বলে সে সাজিদের দিকে লক্ষ্য করেও গুলি ছুঁড়তে গেল, দেখল ফাঁকা ফায়ার হচ্ছে। পিস্তলে আর কোন গুলি নেই। সাজিদ ক্রুর হাসি হেসে বলল, “বলেছি না আসল ক্ল্যাইমেক্স তো এখনো বাকি আছে। পিস্তলে তো আমি একটা গুলিই থাকবে বলে এই ডায়েরীতে লিখেছি তো ফালতু ফায়ার করলে কি হবে?”
নুসরত সাজিদের হাতে রাখা ডায়েরীর দিকে তাকাতে থাকে। সে ভাবতে লাগল এই ডায়েরীর যত কাণ্ডের মূল। তাই যেমন করেই হোক ডায়েরীটা সাজিদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে। এমন সময় ইরফান পিস্তলটিকে সাজিদের দিকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারল। ফলে সাজিদ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। নুসরত আর দেরী না করে দৌড়ে সাজিদের কাছে গিয়ে ডায়রীটাকে তুলে ছুটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেল । ইরফান নুসরতের পিছু পিছু ছুটল। নুসরত ছুটতে থাকে এমন সময় একটি বাইক এসে নুসরতকে সজোরে ধাক্কা মারে ফলে সে লুটিয়ে রাস্তার উপর পড়ে যায় এবং ডায়েরীটা ছিটকে পড়ে যায় । ইরফান দৌড়ে এসে নুসরতের হাতের নাড়ি টিপে দেখে নুসরত মারা গেছে। ইরফান বলে, “শালী ফালতু বেমত মারা গেল।”
ইরফান নুসরতের হাত থেকে ডায়েরীটা নিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় নুসরতের লাশ নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে।
হাটতে হাটতে ইরফান রাস্তার ধারে সেই স্থানে গেল যেখানে প্রথম রিহান ও নুসরত বসেছিল। ইরফান ঠেস দিয়ে সেই স্থানে গিয়ে বসে পড়ল। সকাল বেলায় দেখা গেল ইরফান মৃত অবস্থায় সেখানেই পড়ে রয়েছে।
॥ চার ॥
নুসরতের বাড়ি। দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। নুসরত দরজা খুলল দেখল একজন পিয়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে। পিয়ন বলল, “দিদি আপনার চিঠি।”
এই বলে পিয়ন একখানি চিঠি নুসরতের হাতে ধরিয়ে চলে গেল। নুসরত চিঠিখানি নিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। চিঠির খাম খুলে চিঠিখানি পড়তে লাগল। পাশেই রিহান ডায়েরীতে কিছু যেন লিখছিল । সে বলল, “কার চিঠি এসেছে?”
নুসরত খাম বন্ধ করে বলল, “কলেজ স্ট্রীট থেকে প্রকাশকের চিঠি এসেছে, ঐ যে আমার উপন্যাসটা পাঠিয়েছিলাম না সেটা এই বছর কলকাতা বই মেলায় Best Seller এর পুরস্কার পেয়েছে, তাই প্রকাশক আমাকে ডেকেছে।”
“যাক তাহলে আমার উপন্যাসটা এবার শেষের দিকে। উপন্যাসের আসল ক্লাইমেক্স তো এখনো বাকি আছে।” রিহান এক গাল হেসে বলল।
নুসরত অবাক হয়ে বলল, “ক্লাইমেক্স?”
নুসরত ভাবতে লাগল ইরফানের সেই কথাগুলি যেখানে বলেছিল, “উপন্যাসের আসল ক্লাইমেক্স তো এখনো বাকি আছে।”
নুসরত আর কিছু না বলে রিহানের হাত থেকে ডায়েরীটা ছিনিয়ে দৌড়ে বাইরে পালিয়ে গেল। রিহান বলল, “নিয়ে যা শালী ক্লাইমেক্স তো এখানেই আছে।”
রিহান আর কিছু না বলে এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনতে লাগল। তিন গুণার সঙ্গে সঙ্গে একটা এক্সিডেন্ট এর আওয়াজ শোনা গেল এবং নুসরতের চিৎকারের আওয়াজও শোনা গেল। অর্থাৎ সে এক্সিডেন্টেই নুসরত মারা গেল।
পাঠকদের বলছি যারা আমার লেখা এই ছোটগল্পটি পাঠ করছেন। আপনারা এই গল্পটি পড়ে কি বুঝলেন। এখানে আসল লেখক বা গল্পকার কে? ইরফান, সাজিদ, নুসরত না রিহান? নিশ্চয় দন্দ্বে রয়েছেন যে মূল গল্পকার কে? আসলে এই গল্পের কোন চরিত্র মূল গল্পকার নয়। সবই চরিত্রই কাল্পনিক। আসলে কি জানেন কয়েকদিন থেকে হাতে কোন কাজ ছিল না তাই ভাবলাম একটা গল্প লিখে ফেলি। গল্প লেখার হাত আমার তেমন ভাল নয় তাই মাথামুণ্ডুহীন যা মস্তিষ্কে এল তাই লিখে ফেললাম। পাঠকদের বিরক্ত করার জন্য এবং মূল্যবান সময় অপচয় করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ধন্যবাদ।