• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Saturday, June 21, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ কি প্রাচীন ‘হামান-মরদখাই’র দ্বন্দ্বের আধুনিক রূপ?

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 19, 2025
in ইসলাম, ইসলামিক ইতিহাস, ইহুদী
0
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কি ২৫০০ বছরের পুরোনো ‘হামান-মরদখাই’র দ্বন্দ্বের আধুনিক রূপ?

AI Generated Image

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

গত ১২ জুন, বৃহস্পতিবার ভোররাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পৌঁছালেন জেরুজালেমের পবিত্রতম ও প্রাচীন ধর্মীয় স্থান ওয়েস্টার্ন ওয়ালের (পশ্চিম প্রাচীর) সামনে। মাথায় তাঁর কিপ্পা—ইহুদি পরম্পরার ছোট গোলাকার টুপি, যা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্যের প্রতীক। কাঁধে ছিল তালিত—সাদা বর্ণের বিশেষ স্কার্ফ, যা ধর্মীয় কর্তব্য পালন ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেওয়ালের গায়ে হাত রেখে কিছুক্ষণ তিনি চুপচাপ প্রার্থনায় নিমগ্ন ছিলেন। তারপর পকেট থেকে একটি ছোট কাগজ বের করে তা দেওয়ালের একটি ফাঁকে ঠেলে দেন—এই রীতি ইহুদি প্রার্থনার বিশেষ অংশ, যেখানে বিশ্বাস করা হয়, ঈশ্বর সেই গোপন বার্তাগুলো শোনেন।

এ দৃশ্যের ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর, টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু ঘন গলায় ঘোষণা দিলেন—“কয়েক মুহূর্ত আগে, ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করেছে।” অর্থাৎ, একই রাতে শুরু হলো ইসরায়েল এর আরেকটি সামরিক অভিযান, যার নামকরণও ধর্মীয় ঐতিহ্য ও প্রতীক দিয়ে গাঁথা।

পরদিন শুক্রবার, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সেই চিরকুটটির একটি ছবি প্রকাশ করে। ছবিতে দেখা যায়, হিব্রু ভাষায় হাতে লেখা একটি বাক্যাংশ: “הן עם כלביא יקום” — হেন আম কে-লাবি ইয়াকুম। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়: “এই জাতি সিংহের মতো জেগে উঠবে।” এর নিচে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিজ হাতে স্বাক্ষর। এই বাক্যটি নেওয়া হয়েছে ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব নাম্বার্স, অধ্যায় ২৩, আয়াত ২৪ থেকে। সম্পূর্ণ আয়াতটির ভাবানুবাদ দাঁড়ায়: “দেখো, এই জাতি সিংহের মতো জেগে উঠবে এবং এক তাগড়া সিংহের মতো নিজেকে তুলে ধরবে; যে শিকার ধরে তার রক্ত না পান করা পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না।”

ইসরায়েল - ইরান সংঘাত কি ২৫০০ বছরের পুরোনো ‘হামান-মরদখাই’র দ্বন্দ্বের আধুনিক রূপ?
চিত্রঃ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, AI Generated Image

এই আয়াত ও নেতানিয়াহুর প্রার্থনার মাঝখানে যে সামরিক অভিযানের ঘোষণা, সেটি নিছক কাকতালীয় নয়। ইসরায়েল প্রায়ই তার সামরিক অভিযানগুলোর নামকরণ করে ধর্মীয় টেক্সট, বিশেষত হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে নেওয়া ভাষা ও প্রতীকের মাধ্যমে। এর মধ্যে যেমন আছে ২০১২ সালের ‘অপারেশন পিলার অফ ডিফেন্স’, ২০১৪ সালের ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’, তেমনি আছে ২০২১ সালের ‘অপারেশন গার্ডিয়ান অফ দ্য ওয়ালস’। এই সব নামের মধ্যে স্পষ্টভাবে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়, যেন প্রতিটি যুদ্ধ শুধু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নয়, বরং ঈশ্বরপ্রদত্ত এক ঐশী কর্তব্য।

এই প্রক্রিয়াকে বলা যেতে পারে এক প্রকার কৌশলগত ধর্মায়ন—যেখানে যুদ্ধ, প্রতিরক্ষা, অভিযান সবকিছুই এক পবিত্র গ্রন্থের ভাষা ধার করে চলে। এইভাবে যুদ্ধ ও ধর্ম একে অপরের ছায়া হয়ে দাঁড়ায়। নেতানিয়াহুর হাতে লেখা “হেন আম কে-লাবি ইয়াকুম” বাক্যটি শুধু একটি কবিতার লাইন নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের আত্মঘোষিত ধর্মীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ। সিংহ এখানে কেবল সাহস বা শক্তির প্রতীক নয়, বরং ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট বিজয়ী জাতির আত্মপরিচয়ের প্রকাশ।

এই পুরো ঘটনাক্রম—দেয়ালে প্রার্থনা, চিরকুটে বাইবেলিক ভবিষ্যদ্বাণী এবং এর ঠিক পরেই সামরিক অভিযান ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল একটি গভীর বার্তা দিতে চায়: তাদের যুদ্ধ শুধু প্রতিরক্ষা নয়, ঈশ্বরের সঙ্গে জড়িত এক চুক্তির নবায়ন। এমন ভাষা ও প্রতীকের মাধ্যমে শত্রুকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ‘অভিশপ্ত’ চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়। এই কাঠামোয় ইরানকে হামান ভাবা হয়, আর ইসরায়েল নিজেকে মরদখাইয়ের উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এই ধরনের ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা যুদ্ধের নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়—জাতির মধ্যে একধরনের আধ্যাত্মিক যুদ্ধচেতনা ছড়িয়ে দেয়। অথচ বাস্তবতা হলো, এই ধর্মীয় ভাষা ও প্রতীকের আড়ালে চলতে থাকে আধুনিক রাষ্ট্রের কৌশলগত আগ্রাসন, সামরিক আধিপত্য বিস্তার, এবং ভিন্ন জাতির ওপর দমন-পীড়ন। ‘সিংহের মতো জেগে উঠা’ হয়ত এক ধর্মীয় আবেগের প্রতীক, কিন্তু সেই সিংহ যখন সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে শিশু ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর, তখন তার গর্জন মানবতার কান্নায় হারিয়ে যায়।

নেতানিয়াহুর এই প্রার্থনা, বাইবেল থেকে উদ্ধৃত লাইন, এবং সামরিক ঘোষণার মেলবন্ধন তাই কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনার নয়, বরং এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় রাজনীতির অংশ, যেখানে যুদ্ধকে পবিত্রতার ছায়া দিয়ে বৈধতা দেওয়া হয়। অতীতের হামান যদি কোনো ষড়যন্ত্রকারী চরিত্র হন, আজকের দিনে তাঁকে প্রতিস্থাপন করা হয় রাজনৈতিক শত্রুদের মাধ্যমে। আর ইহুদি ধর্মের নায়ক মরদখাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে ইসরায়েল নিজেকে তুলে ধরে বিজয়ের প্রতীক হিসেবে।

এইভাবে, ২৫০০ বছর আগের ধর্মীয় আখ্যানের ছায়ায় গড়ে ওঠে এক আধুনিক যুদ্ধরাষ্ট্রের আত্মপরিচয়—যেখানে প্রার্থনার কাগজ হয় যুদ্ধঘোষণার পূর্বাভাস, আর বাইবেল হয় বোমাবর্ষণের অনুপ্রেরণা।

ধর্মীয় প্রতীক, শব্দ এবং ভাষ্য—এসব কেন রাষ্ট্রীয় ও সামরিক কৌশলে বারবার ব্যবহার করা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে শুধু ধর্ম নয়, রাষ্ট্রীয় মনস্তত্ত্ব, ইতিহাসচেতনা এবং জনমত গঠনের প্রক্রিয়াও বুঝে নিতে হয়। বিশেষত, ইসরায়েল রাষ্ট্র এই কৌশলের সবচেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিকল্পিত ব্যবহার করে আসছে। ধর্মীয় উৎস থেকে নেয়া প্রতীক, বয়ান ও বাণী সেখানে নিছক বিশ্বাসের বিষয় নয়—তা হয়ে উঠেছে যুদ্ধ, জাতিসত্তা এবং ভূখণ্ডগত অধিকার প্রতিষ্ঠার অস্ত্র।

তেল আবিবের উপকণ্ঠে অবস্থিত ইসরায়েল এর অন্যতম প্রধান একাডেমিক প্রতিষ্ঠান বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দালিয়া গাভরিয়েলি-নুরি ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইসরায়েল তার সামরিক অভিযানের অন্তত অর্ধেকের নামকরণ করেছে হিব্রু বাইবেলের বিভিন্ন শব্দ, স্থান বা চরিত্র থেকে। এ পর্যন্ত ইসরায়েল যতগুলো প্রধান সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তার অনেকগুলোতেই বাইবেল থেকে নাম তুলে আনা হয়েছে—যেন প্রতিটি সামরিক পদক্ষেপ ঈশ্বরপ্রদত্ত বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধতা লাভ করছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ায় চালানো ইসরায়েলি অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন অ্যারো অব বাশান’। ‘বাশান’ শব্দটি এসেছে ওল্ড টেস্টামেন্ট বা তোরাহের একটি বর্ণনা থেকে। সেখানে বাশান ছিল এক প্রাচীন রাজ্য—জর্ডান নদীর পূর্ব তীরের উর্বর ও পর্বতময় এলাকা, যা ইহুদি বর্ণনার মতে, মুসা নবীর নেতৃত্বে ইসরায়েলিরা বিজয় করেছিল। অর্থাৎ আধুনিক সামরিক অভিযানটি নামের মধ্য দিয়ে একটি প্রাচীন বিজয়ের স্মৃতি ও ধর্মীয় বৈধতা একত্রে বহন করছে।

গাজার বিরুদ্ধে পরিচালিত সাম্প্রতিক অভিযানে ইসরায়েল এই প্রবণতাকে আরও প্রকট করেছে। শুধু অভিযান নয়, ব্যবহৃত অস্ত্র, ড্রোন, প্রযুক্তি কিংবা সামরিক ঘাঁটির নামেও ইহুদি বাইবেল থেকে প্রতীক নেয়া হয়েছে। যেমন, ডেভিড’স স্লিং, আইরন ডোম, কিংবা জেরিকো মিসাইল—এসব কেবল প্রযুক্তির নাম নয়, বরং ইহুদি আখ্যানের নায়কদের প্রতীক, যাদের মাধ্যমে একদা ঈশ্বর শত্রুকে পরাজিত করেছিলেন।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এসব নামকরণ কেবল প্রতীকের খেলা নয়, বরং এর মাধ্যমে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চায়—এই ভূমি ঈশ্বর তাদের দিয়েছে, এবং বর্তমান যুদ্ধগুলো সেই ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত’ অধিকারেরই পুনর্দাবি।

এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে বিতর্কিত হয়ে ওঠে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বারবার ‘আমালেক’ শব্দের উল্লেখ। অন্তত তিনবার তিনি ইসরায়েলি সেনাদের উদ্দেশ্যে সরাসরি ‘আমালেক’ নাম ব্যবহার করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি এক ভাষণে বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দেন:

“স্মরণ করো, আমালেক তোমার সঙ্গে কী করেছিল।” এরপর তিনি বলেন, “আমরা মনে রাখি এবং যুদ্ধ করি।”

এই বাক্যটি এসেছে তোরাহের দ্বিতীয় বিবরণ (ডিউটারোনোমি), অধ্যায় ২৫, আয়াত ১৭ থেকে। কিন্তু আরও গভীরে গেলে দেখা যায়, নেতানিয়াহুর বক্তব্যের তাৎপর্য আরও ভয়াবহ। কারণ বাইবেলের আরেকটি অংশ, ১ শমূয়েল ১৫:৩-তে আমালেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে এমন ভাষায়—

“যাও, আমালেকদের ওপর আঘাত হানো এবং যা কিছু তাদের আছে সব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দাও; কাউকে ছেড়ে দেবে না—পুরুষ, নারী, শিশু, স্তন্যপানকারী নবজাতক, গরু, ভেড়া, উট এবং গাধা—সবকিছু মেরে ফেলো।”

এই ভাষা নিছক এক ধর্মগ্রন্থের নয়, বরং তা একটি জাতিগোষ্ঠী সম্পূর্ণ নির্মূল করার এক অরোধ্য ঘোষণা। নেতানিয়াহু যখন গাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রসঙ্গে ‘আমালেক’ শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন সেই প্রাচীন নির্মূলনীতির ছায়া পড়ে তার কথায়। একে অনেকেই গণহত্যার ধর্মীয় ন্যায্যতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

তাহলে আমালেক কারা ছিল?

ধর্মীয় ভাষ্য অনুযায়ী, আমালেক ছিল এক প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী যারা মুসা নবীর নেতৃত্বে মিসর থেকে নির্গত ইসরায়েলিদের মরুভূমির পথে আক্রমণ করেছিল। এই আক্রমণকে ইহুদি ধর্মে এক নিষ্ঠুর ও কাপুরুষোচিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে, ইহুদি ধর্মশাস্ত্রে আমালেক শুধু একটি ঐতিহাসিক জাতি নয়, বরং এক প্রতীক—চরম শত্রুতা, ঈশ্বরবিরোধিতা ও ইসরায়েলি জাতির অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

তোরাহ নির্দেশ দেয়, “তুমি আকাশের নিচ থেকে আমালেকের নাম নিশ্চিহ্ন করবে।” এই নির্দেশ ধর্মীয় আচার, তোরাহ পাঠ ও পুঁথিগত ভাষ্যেও বারবার উচ্চারিত হয়। আমালেক তাই শুধুই ইতিহাসের অংশ নয়, বরং এক চিরন্তন শত্রুর প্রতিচ্ছবি, যা বর্তমানেও যে কোনও ‘শত্রু জাতিকে’ প্রতিস্থাপন করে ব্যবহারযোগ্য।

ইসলামী সূত্রে আমালেকদের নাম সরাসরি কোরআনে না এলেও, ইবনে কাসির, কুরতুবি বা আল-জালালাইন-এর মতো বিশিষ্ট মুফাসসিরদের ব্যাখ্যায় আমালেকদের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে তারা প্রাচীন মিসরীয় বা হেজাজ অঞ্চলের এক অত্যাচারী জাতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অনেক মুসলিম ঐতিহাসিক মনে করেন, তারা আদ জাতির পরবর্তী উত্তরসূরি ও অত্যাচারী সম্প্রদায় ছিল, যাদের বিরুদ্ধে নবী-প্রেরিতারা সতর্ক করেছিলেন।

আজকের দিনে ইসরায়েল যে প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, এবং তার পেছনে যে ভাষা, প্রতীক ও ধর্মীয় বয়ান ব্যবহার করছে, তা নিছক ঐতিহাসিক বা কুসংস্কারপ্রসূত নয়। বরং, এটি এক সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় কৌশল, যেখানে ধর্ম—বিশেষত বাইবেলের ভাষ্য—ব্যবহার করা হয় যুদ্ধকে বৈধ, যৌক্তিক এবং ন্যায্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। ‘আমালেক’, ‘বাশান’, ‘সিংহ’, ‘দায়িত্ব’—এসব শব্দকে একত্রে এনে আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা হয় ঈশ্বরের নামে।

এইভাবে, ধর্ম এখানে শুধু বিশ্বাসের অবলম্বন নয়, বরং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব, জাতিসত্তার সঙ্গী এবং যুদ্ধনীতির যুক্তিগ্রাহ্য পর্দা হয়ে ওঠে। যখন নেতানিয়াহু ‘আমালেক’ শব্দ উচ্চারণ করেন, তিনি কেবল শত্রুকে অপমান করছেন না, বরং এক পুরোনো ধর্মীয় যুদ্ধের স্মৃতি জাগিয়ে তুলছেন, যাতে আজকের ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করার নৈতিক অনুমোদন পাওয়া যায়।

এই ধর্মীয় চিত্রকল্পের ভাষা তাই ভয়ংকর। কারণ তা যুদ্ধকে শুধু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নয়, বরং ঈশ্বরের আদেশ হিসেবে দেখায়। এতে জনমত নির্মাণ সহজ হয়, আন্তর্জাতিক সমালোচনার বিপরীতে ধর্মীয় আবেগ খাড়া করা যায়, এবং যুদ্ধকে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। ধর্মীয় শব্দ, প্রতীক ও ভাষ্য তাই শুধু আধ্যাত্মিকতার অংশ নয়, বরং এক আধুনিক, কৌশলী, রাষ্ট্রীয় মঞ্চনাট্যের মুখ্য ভাষা।

নেতানিয়াহুর চোখে আজকের আমালেক কে, এই প্রশ্ন শুধু একক কোনো রাজনৈতিক শত্রুকে বোঝায় না, বরং ইসরায়েলি রাষ্ট্রচিন্তা, ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও জাতিগত কর্তৃত্বের এক জটিল বয়ানের প্রতিফলন। ইহুদি ধর্মশাস্ত্র এবং ধর্মীয় রাজনীতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা এই ‘আমালেক তত্ত্ব’ আজ যে ভাবে বাস্তব রাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি ও মানবিক সংকটকে আরও জটিল এবং বিপজ্জনক করে তুলেছে।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থে ‘আমালেক’ একটি ঐতিহাসিক জাতিগোষ্ঠীর নাম। ইহুদি বিশ্বাস অনুযায়ী, মিসর থেকে নির্গমনকালে বনি ইসরায়েল যখন মরুভূমি অতিক্রম করছিল, তখন আমালেক জাতি তাদের আক্রমণ করেছিল। এই আক্রমণকে ইহুদি ধর্মীয় ইতিহাসে এক কাপুরুষোচিত, নিষ্ঠুর ও ঈশ্বরবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় তোরাহে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট আদেশ দেওয়া হয়—এই জাতিগোষ্ঠীর নাম পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে হবে। এই আদেশ এতটাই কঠোর যে সেখানে বলা হয়েছে—পুরুষ, নারী, শিশু, এমনকি স্তন্যপানকারী শিশু ও গৃহপালিত পশুও যেন রেহাই না পায়।

এই ভয়ংকর নির্দেশনা শুধু অতীতের ইতিহাসে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ধর্মীয় ব্যাখ্যাকারীরা বলেন, ‘আমালেক’ একটি চলমান ধারণা—যা প্রতিটি যুগে নতুন নতুন শত্রুর প্রতীক হয়ে ফিরে আসে। অর্থাৎ, আমালেক কেবল একটি বিলুপ্ত জাতি নয়, বরং একটি আদর্শ শত্রুর প্রতীক। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে আজকের দিনে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত যেসব গোষ্ঠী ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাদেরকে ‘আমালেক’ বলে চিহ্নিত করা হয়।

এই ব্যাখ্যার আলোকে দেখা যায়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনার সময় সেনাদের উদ্দেশে তোরাহের ২৫:১৭ আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন—“স্মরণ করো, আমালেক তোমার সঙ্গে কী করেছিল”, তখন সেটি নিছক ধর্মীয় অনুপ্রেরণার আহ্বান নয়। বরং, সেটি এক সরাসরি নির্দেশ: বর্তমান যুগে যাদের ‘আমালেক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিনাশ-নীতিতে অটল থাকতে হবে।

এখানে গাজা এবং সেখানে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক আমালেকদের মিলিয়ে দেওয়া হয়। নেতানিয়াহু একাধিকবার এই শব্দচয়ন করেছেন, যা অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন—গাজায় শিশু, নারী, বৃদ্ধ, অসামরিক মানুষ কাউকেই রেহাই না দিয়ে সামগ্রিক ধ্বংসের জন্য এক ধর্মীয় ন্যায্যতা খোঁজার প্রচেষ্টা।

তবে বিষয়টি কেবল নেতানিয়াহু ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করেন বলেই নয়—ইসরায়েলের বহু শীর্ষ ধর্মীয় নেতা বা রাবাইও একই তত্ত্ব প্রচার করে আসছেন। অনেক রাবাই স্পষ্টভাবে বলেছেন, আজকের দিনে মুসলিমরা, বিশেষত ফিলিস্তিনিরা এবং কখনো কখনো ইরানিরাও, সেই ‘আমালেক’-এর আধুনিক রূপ। এই মতানুসারে, ‘আমালেক’দের সঙ্গে আপসের কোনো সুযোগ নেই। কারণ তাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বর নিজেই ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরায়েলি ধর্মীয় চক্রে প্রচলিত এক প্রবাদ হলো—“যতক্ষণ না আমালেক নিশ্চিহ্ন হয়, ততক্ষণ ইহুদিরা বিশ্রাম নিতে পারে না।” এই বক্তব্যের ভিত্তি হল বাইবেলেই উদ্ধৃত সেই ভয়ংকর আয়াত—যেখানে বলা হয়েছে: “তুমি আকাশের নিচ থেকে আমালেকের নাম মুছে ফেলবে।” এই আয়াতকে নেতানিয়াহু ও তার সমর্থকরা আধুনিক ভূরাজনীতির শত্রু নিধনের বৈধতা হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এই ধর্মীয় বয়ানকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে রূপান্তর করার ফলে একটি ভয়াবহ পরিণতি তৈরি হয়—যেখানে সেনাবাহিনীর প্রতি বার্তা হয়: “এ লড়াই শুধুই ভূখণ্ড দখলের নয়, এটি এক ঈশ্বরপ্রদত্ত দায়িত্ব। শত্রুদের নিধন শুধু কৌশল নয়, এটি বিশ্বাসের অংশ।” এই বিশ্বাসের পেছনে যুদ্ধ চালানো যায়, বর্বরতা ঢেকে রাখা যায় এবং আন্তর্জাতিক আইনকে ধর্মীয় কর্তৃত্বের ছায়ায় তুচ্ছ করে তোলা যায়।

ইহুদি রাবাইদের একটি চরমপন্থী অংশের মতে, ‘আমালেক’ কেবল সামরিক শত্রু নয়, বরং ঈশ্বরের শত্রু। ফলে, তাদের সঙ্গে কোনো মিত্রতা, মানবিক আচরণ বা যুদ্ধবিরতির সুযোগ নেই। এই নীতি যে কতোটা ভয়ংকর হতে পারে, তা গাজার পরিস্থিতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়—যেখানে হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া শিশু, খাদ্য সংকটে কাতর মানুষ, ধ্বংসপ্রাপ্ত আবাসিক ভবন এবং একটি গোটা জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সংকটে পতিত হওয়ার ঘটনাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ‘ধর্মীয়’ ব্যাখ্যা হাজির করা হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়া এক ভয়াবহ উদাহরণ—কীভাবে একটি ধর্মীয় গ্রন্থের ইতিহাস, প্রতীক ও শব্দকে আধুনিক রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের ভাষায় রূপান্তরিত করা যায়। এবং কীভাবে একটি ঐতিহাসিক শত্রু কল্পনাকে আজকের দিনে ব্যবহার করে একটি গোটা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্মূলনীতির ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হয়—তা-ও আবার ঈশ্বরের নামে।

তাই নেতানিয়াহুর চোখে আজকের ‘আমালেক’ কেবল গাজার ফিলিস্তিনিরা নয়—প্রতিটি সেই গোষ্ঠী যারা ইহুদি রাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্যকে প্রশ্ন তোলে। আর এই ধর্মীয় কল্পনার দোহাই দিয়ে যখন রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয়, তখন যুদ্ধ আর রাজনীতি নয়, মানবতাই হয় আসল পরাজিত।

‘রাজাধিরাজের তোরাহ’—ইহুদি ভাষায় তোরাত হা’মেলেখ—শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; এটি এক বিশেষ ধরণের তাত্ত্বিক ও আদর্শিক অস্ত্র, যা বর্তমান ইসরায়েলি রাষ্ট্রব্যবস্থার ধর্মীয়-সামরিক নীতিকে ভিত্তি জুগিয়েছে। এই গ্রন্থটি ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় দুই কট্টরপন্থী রাবাই, ইৎসহাক শাপিরা এবং ইয়োসেফ এলিৎসুরের হাতে। হিব্রু ভাষায় রচিত এই বইটির ইংরেজি নামকরণ করা হয় King’s Torah, আর বাংলায় একে বলা চলে ‘রাজাধিরাজের বিধান’। এটি মূলত হালাখা বা ইহুদি শরিয়া আইনভিত্তিক একটি ব্যাখ্যামূলক দলিল, কিন্তু তার আবেদন ও প্রভাব একেবারেই আধুনিক রাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক কার্যক্রমের গায়ে গিয়ে লেগেছে।

বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশের পরই তা ইসরায়েলি সমাজে এক গভীর দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। এতে বিবরণ রয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে অ-ইহুদিদের হত্যা করা বৈধ হতে পারে। ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ইহুদি ধর্মগ্রন্থের নির্বাচিত উদ্ধৃতি, যার ভিত্তিতে লেখকেরা দাবি করেন, ‘যেসব অ–ইহুদি “নূহের সাতটি বিধান” মানে না, তাদের হত্যা করা শান্তিকালেও ধর্মীয়ভাবে বৈধ।’ শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধের সময় এমন অ–ইহুদিদেরও হত্যা করা যেতে পারে যারা নিজে হাতে কোনো ইহুদিকে হত্যা করেনি, এমনকি যুদ্ধকেও সরাসরি সমর্থন করেনি। যদি ধর্মীয় বিচারে মনে হয় যে, ভবিষ্যতে তারা হুমকি হয়ে উঠতে পারে, তাহলেও তাদের হত্যা ন্যায্য হয়ে যায়।

এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু ধর্মীয় চর্চার ক্ষেত্রেই সীমিত থাকেনি, বরং রাজনৈতিক ও সামরিক পরিসরে অনুবাদ পেয়েছে। তোরাত হা’মেলেখ–এর দ্বিতীয় খণ্ড, যা ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রকাশিত হয়, তাতে রাষ্ট্রশক্তির কর্তৃত্ব, নাগরিকের আনুগত্য এবং সরকার কর্তৃক যুদ্ধের নির্দেশকে ধর্মীয় আদেশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এর ফলে তৈরি হয় এমন এক নৈতিক কাঠামো, যেখানে সরকারের আদেশ মানে ঈশ্বরের আদেশ, এবং শত্রু নিধন মানে ধর্মীয় কর্তব্য।

ইসরায়েল এর প্রগতিশীল মহল বইটিকে বর্ণবাদী ও মানবাধিকারবিরোধী আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে। ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টও বইটির লেখকদের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বলেন—‘তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি যে বর্ণবাদী, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’ কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই বই প্রকাশিত হওয়ার পর তৎকালীন সরকার কিংবা নেতানিয়াহু প্রশাসন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। বরং একে ঘিরে নানা প্রভাবশালী রাবাইদের প্রকাশ্য সমর্থন মিলেছে—যেমন ডোভ লিয়র এবং ইয়াকব ইউসেফ, যিনি সরাসরি নেতানিয়াহুর দলের নীতিনির্ধারণী পরিষদের সদস্য ছিলেন।

এই বই ও তার বর্ণবাদী ব্যাখ্যাগুলি কেবল ধর্মীয় পাঠ নয়, বরং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বহু সদস্যের কাছে এক নৈতিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়। সে কারণেই গাজায় শিশু, নারী বা বৃদ্ধদের হত্যার পরেও অনেক সেনা অনুতপ্ত হন না। তাঁদের বিশ্বাসে ঢুকে দেওয়া হয়েছে—‘আমালেক’দের নিশ্চিহ্ন করা ঈশ্বরের আদেশ। তোরাহের ২৫:১৭ আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে ‘তুমি আকাশের নিচ থেকে আমালেকদের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেবে’, সেটিকে সমসাময়িক শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ধর্মীয় হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে।

নেতানিয়াহু নিজেও বারবার এই ভাষা ও কাহিনি ব্যবহার করে থাকেন। ২০২৫ সালের মার্চে, ‘পুরিম’ উৎসবে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু এস্থারের পুস্তক পাঠ করেন এবং বলেন, ‘আজও সেই পুরোনো পারস্য থেকে (অর্থাৎ বর্তমান ইরান) নতুন হামান উঠে এসেছে, যে ইহুদিদের ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু আমরা, মরদখাইয়ের উত্তরসূরিরা, আবার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেব।’

এই বক্তব্য নিছক ধর্মীয় কাহিনি নয়। এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিত। ‘পারস্য বনাম ইসরায়েল’, ‘হামান বনাম মরদখাই’—এই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে নেতানিয়াহু বোঝাতে চান, ইরান ও ফিলিস্তিন—উভয়ই সেই প্রাচীন আমালেকের উত্তরসূরি। আর যেহেতু ঈশ্বর নিজেই আমালেক নিধনের নির্দেশ দিয়েছেন, তাই তাদের ধ্বংস কোনো মানবিক বা নৈতিক বিতর্কের বিষয় নয়, বরং তা ঈশ্বরের সঙ্গে আনুগত্যের পরিণাম।

এই ধর্মীয় বৈধতা ব্যবহার করে যে সামরিক আগ্রাসন চালানো হয়, তার ফলে ফিলিস্তিনে নারী-শিশু নির্বিশেষে নির্বিচার হত্যা ঘটে চলেছে। অথচ তার জন্য দায়ী নেতারা নিজেদের ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ হিসেবে চিত্রিত করে রক্ষা পেয়ে যান। এ এক ভয়ানক ট্র্যাজেডি—যেখানে ধর্মগ্রন্থের পুরোনো উপাখ্যান ও যুদ্ধের ভাষ্যকে আধুনিক রাষ্ট্রের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত করা হয়।

‘তোরাত হা’মেলেখ’ তাই কেবল একটি বই নয়—বরং এটি সেই ধর্মীয় আইনের রাজনৈতিক পুনঃপাঠ, যা অন্য জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে; এমনকি শিশু, গর্ভবতী নারী কিংবা অসহায় বৃদ্ধদের ধ্বংসকেও ন্যায্যতা দেয় ঈশ্বরের নামে। এই ধর্মতাত্ত্বিক নির্মাণ একটি দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা—যেখানে নৈতিকতা নয়, বরং ধর্মীয় জাতিগর্ব ও নির্মূলনীতিই হয় শেষ কথা।

এই মুহূর্তে, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে কেবল মানুষের শরীর চাপা পড়ে নেই, সেখানে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানবতা, ন্যায়বিচার এবং ধর্মের আসল মর্যাদাও।

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে ব্যাবিলনের সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার, যিনি ইসলামি ঐতিহাসিক সাহিত্যে ‘বুখতনাসর’ নামে পরিচিত, জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাসে হামলা চালান। এই অভিযানে তিনি ইহুদিদের প্রথম মন্দির ধ্বংস করেন—যা ছিল নবী সুলাইমান (সোলোমন)-এর নির্মিত পবিত্র মন্দির। হাজার হাজার ইহুদি নিহত হন, এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদিকে বন্দি করে তিনি নিয়ে যান ব্যাবিলনে—অর্থাৎ আজকের ইরাকে। এই ঘটনাই ইতিহাসে ‘ব্যাবিলোনীয় নির্বাসন’ নামে পরিচিত, যা ইহুদি জাতির ইতিহাসে এক গভীর ক্ষতের প্রতীক হয়ে আছে।

এর কয়েক দশক পর পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট (খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫৯–৫৩০) ব্যাবিলন দখল করে এই বন্দি ইহুদিদের মুক্তি দেন। ঐতিহাসিকদের মতে, সাইরাস ছিলেন ধর্মীয়ভাবে উদার দৃষ্টিভঙ্গির শাসক, যিনি বিজিত জাতিগুলোর নিজস্ব উপাসনালয়, কৃষ্টি ও পরিচয় রক্ষার স্বাধীনতা দিতেন। বুখতনাসরের ধ্বংস করা সুলাইমানি মন্দির পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেন তিনিই।

ইসলামি ঐতিহাসিক ও তাফসির-সাহিত্যে সাইরাস দ্য গ্রেট সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য বিতর্ক রয়েছে। কুরআনের সূরা কাহাফ-এ উল্লিখিত ‘জুলকারনাইন’ নামক ন্যায়পরায়ণ শাসকের সঙ্গে বহু মুসলিম পণ্ডিত, যেমন আবুল কালাম আজাদ, সাইরাসের মিল খুঁজে পান। যদিও একে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বলা যায় না, তথাপি ঐতিহাসিকভাবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যামূলক ধারা হয়ে উঠেছে।

সাইরাসের শাসনপর্বের পরেও একটি উল্লেখযোগ্য ইহুদি অধ্যায় রচিত হয় পারস্যে। ইহুদি ধর্মগ্রন্থ বুক অব এস্থার-এ বর্ণিত একটি ঘটনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ কাহিনি ঘিরেই আজকের ইসরায়েলি রাজনীতিতে ইরান ও ইসরায়েলকে ‘হামান’ ও ‘মরদখাই’র প্রতীকী ছায়ায় দাঁড় করানো হয়।

এই গ্রন্থে বলা হয়েছে, পারস্য সম্রাট আহাশভেরোশ (বহু গবেষকের মতে, তিনি হলেন প্রথম জারক্সিস)–এর শাসনকালে রাজসভায় চাকরি করতেন মরদখাই নামের এক ইহুদি ব্যক্তি। তিনি ছিলেন এস্থার নামের এক এতিম কিশোরীর অভিভাবক, যিনি পরে সম্রাটের নজরে আসেন এবং রানির মর্যাদা পান। যদিও এস্থার ছিলেন ইহুদি, কিন্তু নিজের জাতিগত পরিচয় তিনি গোপন রেখেছিলেন।

সম্রাটের প্রধানমন্ত্রী ছিল হামান, এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ক্ষমতালিপ্সু কর্মকর্তা। তিনি মরদখাইকে আদেশ করেন নিজের সামনে মাথা নোয়াতে। কিন্তু মরদখাই, একজন একেশ্বরবাদী ইহুদি হিসেবে, কেবল ঈশ্বর ছাড়া আর কাউকে প্রণাম করতে অস্বীকৃতি জানান। এই অস্বীকৃতি হামানকে প্রচণ্ড রকমের ক্ষিপ্ত করে তোলে।

হামান এরপর সম্রাটকে বোঝায় যে, রাজ্যে এমন এক জাতি রয়েছে, যারা আলাদা আইন মানে, এবং রাজশক্তির প্রতি আনুগত্য নেই। তিনি পরামর্শ দেন, সেই গোটা জাতিকে—অর্থাৎ ইহুদিদের—এক নির্দিষ্ট দিনে নির্মূল করে দেওয়া হোক। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে (হিব্রুতে ‘পুর’) একটি দিন নির্ধারণ করা হয় এই গণহত্যার জন্য। সম্রাটের সম্মতিতে রাজ-আদেশ জারি হয়।

এ সময় এস্থার সম্রাটের কাছে তাঁর ইহুদি পরিচয় প্রকাশ করেন এবং মরদখাইয়ের পরামর্শে হামানের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেন। ক্রুদ্ধ সম্রাট হামানকে সেই ফাঁসিতেই ঝুলিয়ে দেন, যা তিনি ইহুদিদের জন্য বানিয়েছিলেন। এভাবেই ইহুদি জাতি পারস্যে নিশ্চিহ্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। এই স্মৃতিকে কেন্দ্র করে ইহুদিরা প্রতিবছর পালন করে পুরিম উৎসব—যা তাদের ধর্মীয় ইতিহাসে ‘ধ্বংসের দ্বার থেকে ফিরে আসার বিজয়গাথা’।

পুরিম কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি এখন রাজনৈতিক প্রতীকী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে ইহুদিরা ‘বুক অব এস্থার’ পাঠ করে, হামানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে, এবং শিশুদের অংশগ্রহণে নানা নাট্যচর্চা ও মুখোশ-পরিহিত আনন্দ-উৎসব হয়।

এখানে এসে আধুনিক ইসরায়েলি রাজনীতির একটি গভীর ধর্মীয় প্রতীকীকরণ দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বহুবার তাঁর বক্তব্যে ইরানকে ‘নতুন হামান’ আখ্যা দিয়েছেন এবং নিজেকে বা ইসরায়েলকে ‘মরদখাই’ বা ‘এস্থারের উত্তরসূরি’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান হলো সেই ‘প্রাচীন শত্রু’, যে আবার উঠে এসেছে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে, আর ইসরায়েল তার সামনে দাঁড়ানো একমাত্র সিংহসম শক্তি। ফলে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধকে তিনি নিতান্ত কূটনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত ব্যাপার হিসেবে নয়, বরং একটি ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য হিসেবে হাজির করেন।

নেতানিয়াহুর ২০২৫ সালের মার্চে দেওয়া এক পুরিম বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আড়াই হাজার বছর পর একই ভূমিতে (পারস্য) আবার এক হামান উঠে এসেছে। এবারও আমাদের মধ্যে মরদখাইয়ের মতো বীর উঠে দাঁড়িয়েছে। পারস্যের অক্ষ আমরা চূর্ণ করে দিচ্ছি।” এই বক্তব্য তাঁর কৌশলী নৈতিক অবস্থানকে স্পষ্ট করে দেয়—ইরান কোনো সমকালীন রাষ্ট্র নয়, বরং ইহুদি জাতির ইতিহাসের চিরন্তন শত্রু।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে প্রাচীন ধর্মীয় কাহিনি এবং উপাখ্যানকে আজকের ভূরাজনৈতিক সংঘাতে ব্যবহার করা হয়। ফিলিস্তিন, ইরান বা অন্যান্য আরব রাষ্ট্র নয়—‘আমালেক’ আর ‘হামান’ নামের প্রতীকের ছায়ায় নেতানিয়াহু ধর্মকে অস্ত্র করে তুলছেন।

এখানে প্রশ্ন উঠে আসে—ধর্মীয় ইতিহাসের ব্যাখ্যা দিয়ে একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র কিভাবে বৈধতা দেয় যুদ্ধকে? মরদখাই কি সত্যিই কেবল একজন প্রাচীন ন্যায়পরায়ণ কর্মকর্তা ছিলেন, নাকি তিনি এখন হয়ে উঠেছেন এক সামরিক চেতনার আধার? আর হামান কি শুধুই ইতিহাসের এক খলনায়ক, নাকি তার মুখোশে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে সমকালীন রাজনীতি ও সহিংসতা?

এই প্রশ্নগুলো আজ আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ধর্ম যখন অতীতের পুঁথিপাঠ নয়, বরং বর্তমানের যুদ্ধঘোষণায় পরিণত হয়, তখন সেই ধর্ম আর বিশ্বাস নয়, এক রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের অজুহাতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে। ইসরায়েল ও ইরানের এই বিবলিক্যাল দ্বন্দ্ব তাই নিছক রাজনৈতিক বিরোধ নয়—বরং ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ ও ধর্মের প্রতীকী পুনর্ব্যবহার, যা সহিংসতাকে পবিত্রতার আড়ালে ঢেকে দেয়।

ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কেবল একজন রাজনীতিক নন—তিনি নিজেকে ইতিহাস, ধর্ম ও জাতিগঠনের ধারাবাহিকতায় এমন এক স্থানেই উপস্থাপন করতে চান, যেখানে তাঁর সব সিদ্ধান্ত যেন ইশ্বরীয় নির্দেশনার বাস্তব রূপায়ন। বিশেষ করে ইহুদি ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত ‘আমালেক’ জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিধ্বংসী অবস্থান এবং তাদের নিঃশেষ করার আদেশকে তিনি আজকের ভূরাজনীতিতে ধর্মীয় কর্তব্যে পরিণত করেছেন।

নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য বক্তব্য, প্রতীকী আচরণ এবং ধর্মীয় অনুষঙ্গের পুনরাবৃত্তি থেকে একথা স্পষ্ট যে, তিনি ইরান, ফিলিস্তিন এবং ইসলামি বিশ্বের অন্যান্য বিরোধী শক্তিকে আমালেক নামের প্রতীকের ছায়ায় ফেলে চিহ্নিত করতে চান। তাঁর দৃষ্টিতে, আমালেকের বর্তমান রূপ হলো—ইরান ও গাজার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর গাজার বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের প্রাক্কালে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “প্রতিটি প্রজন্মের প্রতিটি হামান, যে ইহুদি জাতিকে বিলুপ্ত করতে চায়, আমরা তাকে প্রতিহত করব।” এখানে হামান কেবল একটি ঐতিহাসিক চরিত্র নয়, বরং প্রতীকী অর্থে মুসলমানদের—বিশেষত ফিলিস্তিন ও ইরানের—চিত্রায়ণ।

এক সপ্তাহের মধ্যেই, ৩ নভেম্বর আইডিএফ-এর (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) জেনারেলদের উদ্দেশে এক চিঠিতে তিনি আবার বলেন, “আপনারা জানেন, আমাদের পবিত্র বাইবেল কী বলে—‘আমালেক কী করেছে, তা মনে রেখো।’ আমরা মনে রেখেছি, তাই আমরা লড়ছি।”

এই বাইবেল-নির্ভর ধর্মীয় হুঁশিয়ারি নতুন নয়। ২০১২ সালের ৭ মার্চ ওয়াশিংটন সফরের সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ বুক অব এস্থার উপহার দেন। সেই সফরেই আইপ্যাক (American-Israeli Public Affairs Committee)–এর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “হামান ছিল পারস্যের ইহুদি-বিদ্বেষী, যে ইহুদি জাতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।” তাঁর ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট: প্রাচীন পারস্যের হামান আজকের ইরান, আর তিনি নিজে হলেন সেই মরদখাই, যিনি ইহুদি জাতিকে রক্ষায় ঈশ্বরের দূতস্বরূপ।

২০১৭ সালে পুরিম উৎসব চলাকালীন মস্কো সফরে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও উপহার হিসেবে বুক অব এস্থার দেন এবং একই বার্তা দেন: “আমালেকের বংশধর পারস্যের নেতা হামান আজও ইহুদিদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে; আমরাও মরদখাই হয়ে তার বিরুদ্ধে লড়ছি।”

২০২৪ সালের ২৪ মার্চ এক সামরিক অনুষ্ঠানে তিনি আবার এই কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করেন। বলেন, “প্রাচীন পারস্যে হামান ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। আজ আধুনিক পারস্য—অর্থাৎ ইরানি শাসকগোষ্ঠী—একই ষড়যন্ত্র করছে।” এই বক্তৃতায় তিনি স্পষ্টত গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা হামানকে ধ্বংস করেছি, আমরাই সিনওয়ারকেও ধ্বংস করব।”

প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের মিলিটারি পুলিশের সঙ্গে আয়োজিত ওই সভায় নেতানিয়াহু নিজে বুক অব এস্থার পাঠ করেন এবং অনুষ্ঠানে ধর্মীয় আবহ তৈরি করা হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজেও এ-সম্পর্কিত পোস্ট দেওয়া হয়।

নেতানিয়াহুর এই বার্তা এককথায় স্পষ্ট: তিনি নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে চিত্রিত করতে চান, যিনি ইহুদি ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত জাতিসত্তার রক্ষাকর্তা এবং সেই ধর্মীয় আদেশের বাস্তবায়নকারী। তাঁর সামরিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো একরকম ধর্মীয় ব্যাখ্যার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে, যার মূল সুর হলো: আমালেকের বংশধরদের (অর্থাৎ ইহুদিবিরোধী মুসলমানদের) নিঃশেষ করা।

এই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ আরও ভালোভাবে বোঝা যায় ইহুদি বিশ্বাসে নিহিত আর্ক অব দ্য কনভেন্ট বা সুলাইমানি সিন্দুক নিয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যাগুলোর প্রেক্ষাপটে। এই সিন্দুকেই নবী মুসাকে দেওয়া ১০টি ঈশ্বরীয় নির্দেশ (Ten Commandments) রাখা ছিল। ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মতে, এই সিন্দুক রাখা হয়েছিল সোলোমনের মন্দিরে—যা মুসলমানদের মতে নবী সুলাইমান (আ.)-এর মসজিদ। ইসলামী ভাষ্যে, এই মসজিদ জিনদের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল নবী সুলাইমানের আদেশে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৬ সালে বখতেনাসরের আক্রমণে এই মন্দির ধ্বংস হয়ে গেলে সিন্দুকটি হারিয়ে যায়। ইসলাম ধর্মের মতে, এই সিন্দুক ভবিষ্যতে পুনরাবিষ্কৃত হবে এবং তা হবে সত্য ও নেতৃত্বের নিদর্শন। কোরআনের সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৮-এ বলা হয়েছে:

“আর তাদের নবী তাদের বলেছিলেন, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট তাবুত আসবে, যাতে তোমাদের রব-এর নিকট হতে প্রশান্তি এবং মূসা ও হারূন বংশীয়গণ যা পরিত্যাগ করেছে, তার অবশিষ্টাংশ থাকবে; ফেরেশতাগণ তা বহন করে আনবে। তোমরা যদি মুমিন হও, তবে নিশ্চয় তোমাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।”

এই ব্যাখ্যা ইহুদি ইতিহাসে ‘আমালেক’ কেবল একটি অতীতের জাতি নয়—বরং চিরন্তন শত্রুতার প্রতীক। ধর্মীয় পণ্ডিতদের মতে, ঈশ্বরের আদেশ অনুযায়ী এই শত্রুতার চিহ্নকেই “আকাশের নিচ থেকে মুছে ফেলতে” হবে। আজকের ইসরায়েল, বিশেষ করে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে, সেই আদেশকেই রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করেছে।

ফলে, যখন গাজায় নির্বিচারে বোমা পড়ে, শিশুদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়, তখন তা কেবল যুদ্ধের কৌশল নয়—বরং ধর্মের নামে চালানো এক ধরনের ‘পবিত্র প্রতিশোধ’ হিসেবে ব্যাখ্যা পায়। নেতানিয়াহু তাঁর কথাবার্তায়, উপহার হিসেবে বুক অব এস্থার দেওয়ার মতো প্রতীকী পদক্ষেপে এবং সামরিক ভাষণগুলোতে এই বার্তাই বারবার উচ্চারণ করে চলেছেন—আমরাই সেই চিরায়ত ধর্মীয় অভিযানের ধারক-বাহক।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠে আসে: ইসরায়েল কি কেবল আধুনিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র? নাকি এটি একটি ‘ধর্মীয় প্রকল্প’, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় কল্পনার বাস্তবায়ন? এবং সেই লক্ষ্য যদি হয় ‘আমালেকদের সম্পূর্ণ নিঃশেষকরণ’, তাহলে সেটি কি একবিংশ শতাব্দীর মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইনকে চরমভাবে অগ্রাহ্য করে না?

এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না। তবে ইতিহাস একদিন এর বিচার করবেই।

আধুনিক ইসরায়েল এর রাষ্ট্রীয় কর্মযজ্ঞে ধর্ম ও প্রতীকের সংমিশ্রণ নতুন কিছু নয়। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন আল-আকসা মসজিদের নিচে সুড়ঙ্গের এক গোপন কক্ষে তাঁর পূর্ণ মন্ত্রিসভা নিয়ে বৈঠকে বসেন, তখন তা কেবল প্রতীকী নয়, বরং গভীরভাবে এক ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভূরাজনৈতিক বার্তা হয়ে ওঠে। এটি ছিল এমন এক পদক্ষেপ, যা শুধুই প্রশাসনিক নয়—বরং তাতে নিহিত ছিল ইহুদি ঐতিহ্যের দাবিকৃত ‘পবিত্র কেন্দ্রবিন্দু’ পুনর্দখলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি স্পষ্ট ধাপ।

ইহুদি ধর্মতাত্ত্বিকদের মতে, সেই বহু প্রতীক্ষিত ‘তাবুত’—অর্থাৎ সুলাইমানি সিন্দুক—যেটিতে মূসা (আ.)-এর লাঠি, পোশাক এবং তাওরাতের মূল অংশসহ কিছু বরকতময় নিদর্শন রয়েছে, তা এখনো কোথাও গোপনে সুরক্ষিত আছে। অনেক ইহুদি বিশ্বাস করেন, এই সিন্দুকটি রাখা হয়েছে আজকের আল-আকসা মসজিদের ঠিক নিচেই। এই বিশ্বাসকে বাস্তবায়নের জন্য ১৯৬৭ সাল, অর্থাৎ ছয় দিনের যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদের দখল নেওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল সরকার সেখানে নিয়মিত ভূগর্ভস্থ খননকাজ পরিচালনা করে আসছে। এ পর্যন্ত সেখানে একাধিক সুড়ঙ্গপথ খনন করা হয়েছে এবং নির্মাণ করা হয়েছে ভূগর্ভস্থ চেম্বার বা গোপন ঘর।

২০২৩ সালের ২১ মে এই সুড়ঙ্গেই ইসরায়েলের পূর্ণ মন্ত্রিসভার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এতে উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Middle East Monitor “Israel: Cabinet Holds Meeting Beneath Al-Aqsa Mosque” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জানায়, এটি ছিল দখলিকৃত জেরুজালেম এবং আল-আকসার ওপর সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে করা এক কৌশলগত পদক্ষেপ। বৈঠকের পরদিন এএফপি জানিয়েছিল, নেতানিয়াহু সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে সরাসরি বলেন, “আবু মাজেন (মাহমুদ আব্বাস) দাবি করেছেন যে জেরুজালেম ও হারাম আল-শরিফের সঙ্গে ইহুদিদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তাঁকে বলছি—দেখুন, আজ আমরা হারাম শরিফের অন্তঃস্থলে বসে সভা করছি।”

এই সভায় শুধু প্রতীকী বক্তৃতাই হয়নি, বরং অনুমোদন দেওয়া হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের একাধিক ‘জুডাইজেশন প্রকল্প’। মূলত এগুলো হলো পুরাতন জেরুজালেমে, বিশেষ করে মুসলিমদের পবিত্র স্থানগুলোর নিচে ইহুদি প্রত্নতাত্ত্বিক খননের নামে প্রাচীন স্থাপত্য দুর্বল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যপ্রসূত প্রকল্প। আল-আকসা মসজিদের নিচে ভূগর্ভস্থ খনন এবং ‘তাবুত’ অনুসন্ধানের নামে এই প্রকল্পগুলো আল-আকসার কাঠামোগত স্থিতিশীলতার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যে সুড়ঙ্গপথে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটি শুরু হয় আল-আকসার সেই পশ্চিমপ্রাচীরের নিচে, যেটিকে ইহুদিরা ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ বা ‘ওয়েইলিং ওয়াল’ বলে অভিহিত করে। এই দেয়ালকে তারা সেকেন্ড টেম্পলের একমাত্র অবশিষ্টাংশ বলে মনে করে এবং এখানে দাঁড়িয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কান্না করে আসছে তাদের পূর্বপুরুষদের মন্দির ধ্বংসের শোকে। অথচ এই দেয়ালের ইতিহাস যে পর্বে গিয়েই থেমেছে, তা আসলে ইহুদি জাতির ধর্মীয় অস্তিত্ব রক্ষায় পারস্য, অর্থাৎ আজকের ইরান, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৬ সালে ব্যাবিলনের সম্রাট বখতেনাসর যখন জেরুজালেম দখল করে প্রথম উপাসনালয়—ইহুদিদের ‘ফার্স্ট টেম্পল’ (যা মুসলিমদের মতে নবী সুলাইমানের নির্মিত মসজিদ)—ধ্বংস করেন, তখন বহু ইহুদি বন্দি হয়ে ইরাকে নির্বাসিত হন। এর অর্ধশতক পর পারস্যের মহান সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট ব্যাবিলন দখল করে ইহুদিদের মুক্তি দেন এবং সেই মন্দির পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেন। তাঁর উত্তরসূরি দারিউস প্রথম খ্রিষ্টপূর্ব ৫১৬ সালে সেই পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করেন। ইহুদিরা এটিকে বলে ‘সেকেন্ড টেম্পল’। পরবর্তীতে ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান বাহিনী সেই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেয়। বেঁচে থাকে কেবল একটি দেয়াল—আজকের ‘ওয়েইলিং ওয়াল’।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, নেতানিয়াহু যেখান থেকে ‘হামান’ তথা ইরানবিরোধী ধর্মীয় যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন, সেই দেয়াল ও মন্দিরটির অস্তিত্ব owes everything to পারস্যের মহানুভবতা। অথচ আজ তিনি পারস্যকেই আমালেক বলে চিহ্নিত করে সেটির ধ্বংস চাইছেন। ইতিহাসের এই নির্মম পরিহাস হয়তো তাঁর বিবেচনায় স্থান পায় না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো ক্রমেই ধর্মীয় প্রতীকের ঘনঘটায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাঁর বক্তব্য, উপহার, এমনকি বিদেশ সফরও একটি নির্দিষ্ট প্রতীকী বিন্যাস মেনে চলে। ওয়াশিংটনে গিয়ে ওবামাকে ‘বুক অব এস্থার’ উপহার দেওয়া হোক বা মস্কোতে পুতিনের হাতে সেই একই বই তুলে দেওয়ার পর বলা হোক—“আজও হামান বিদ্যমান”—এই সবই একটি ধারাবাহিক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আখ্যানের অংশ।

এই আখ্যানের কেন্দ্রে রয়েছে ইহুদি ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত সেই চিরন্তন শত্রু আমালেক—যাকে ঈশ্বরের আদেশে “আকাশের নিচ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে” হবে। আর এই চূড়ান্ত নিধনের দায়িত্ব নিয়েছেন নেতানিয়াহু নিজেই। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকৌশল এই বয়ানের মধ্য দিয়ে নিজেকে ‘মরদখাই’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে শত্রুর বিরুদ্ধে ঈশ্বরের পক্ষ নিয়ে লড়ছেন।

অথচ এই পুরো আখ্যানের ইতিহাসে যদি একবার দৃষ্টি ফেলা যায়, দেখা যাবে—যে সিন্দুকের সন্ধানে তিনি আল-আকসার নিচে সুড়ঙ্গ খনন করছেন, সেই সিন্দুকের স্মৃতি বহন করে যে মন্দিরের দেয়ালে দাঁড়িয়ে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেন, সেটির পুনর্নির্মাণ হয়েছিল ইরানেরই এক মহান শাসকের দানবীরতায়।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠবেই: ইহুদি জাতির প্রকৃত রক্ষক কি পারস্য না ইসরায়েল? ইতিহাস কি কেবল ধর্মীয় ব্যাখ্যায় ব্যবহারযোগ্য একটি উপাদান, নাকি এটি বিবেকের আয়না?

নেতানিয়াহুর আল-আকসার নিচে বসে ‘তাবুত’ খোঁজা হয়তো এক পুরনো ধর্মীয় আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সেই তল্লাশির পথ যদি মসজিদের ভিত্তিকে ভেঙে ফেলে, ইতিহাসকে ভুলে ফেলে, কিংবা ধর্মের নামে দখল ও সহিংসতাকে জায়েজ করে, তবে সেই পথ কতটা ঈশ্বরীয় বা মানবিক—তা একদিন ইতিহাসই নির্ধারণ করবে।

Post Views: 165
Tags: Biblical politicsgeo-religious tensionHamanhistorical conflictIranisraelIsrael-Iran conflictJewish historyMiddle EastMordechaiNetanyahuPersiaReligious conflictReligious symbolismscriptural narrativesTorahZionismইরানইসরায়েলইসলাম ও ইহুদিবাদইহুদি ইতিহাসধর্মীয় ভাষ্যধর্মীয় রাজনীতিধর্মীয় রাজনীতি বিশ্লেষণনেতানিয়াহুপারস্য সাম্রাজ্যপুরিম উৎসবমধ্যপ্রাচ্যমরদখাইহামান
ADVERTISEMENT

Related Posts

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024
রহস্য উদ্ঘাটন মূলক বিশ্বাস খ্রিস্টানদের ইজরাইল সমর্থনের বড় কারণ
ইসলাম

‘রহস্যউদ্ঘাটনমূলক’ বিশ্বাস আমেরিকান খ্রিস্টানদের ইহুদি ও ইজরাইল সমর্থনের বড় কারণ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম রহস্য উদ্ঘাটন পন্থী খ্রিস্টান মৌলবাদীরা ‘বাইবেল সংক্রান্ত কারণে’ আরও ব্যপকভাবে ফিলিস্তিন-ইজরাইল সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। [Apocalypse...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
November 8, 2024
বিষাদ-সিন্ধু এবং বিষাদবিন্দু : ইতিহাসের বৈচিত্র্য
ইসলামিক ইতিহাস

মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু এবং শামিম আহমেদের বিষাদবিন্দু

লিখেছেনঃ ড. মো. খোরশেদ আলম [সার-সংক্ষেপ : মীর মশাররফ হোসেনের (১৮৪৭-১৯১১) উনিশ শতকের বিষাদ-সিন্ধু (১৮৯১) এবং শামিম আহমেদের হাল...

by অতিথি লেখক
November 10, 2024
বাঙালি মুসলিম সমাজে আধুনিকীকরণ—রামমােহন বা বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গ
ইসলাম

বাঙালি মুসলিম সমাজে আধুনিকীকরণ—রামমােহন বা বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গ

অনেকেই বলেন, মুসলিম নেতাগণ প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার ছাপ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তারা সমাজে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের কথা ভাবেননি। এও...

by আমিনুল ইসলাম
November 7, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (27)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (2)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply