লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “নারীধর্ষন করতে শিখুক, ব্যাভিচার করতে আভ্যস্ত হোক। নারী খাদকের ভূমিকায় না এলে তার ‘খাদ্য’ নামের কলঙ্ক ঘুচবে না। এখন ভাল কথার যুগ নয়, নীতিবাক্যের সময় নয়। কাটা দিয়েই আজকাল কাটা তুলতে হয়।” (নির্বাচিত কলাম, প ১১৮) একথা পড়ে তসলিমা নাসরিনের বুদ্ধির বহর দেখে তাক লেগে যায়। সে ভেবেছে – ওইভাবে নারীরাও ধর্ষন করতে শুরু করলে পুরুষরা ভীত হয়ে যাবে ও তারা ঘরের ভিতর সেঁটে যাবে। এ ধারনা তার ভুল। বরং পুরুষ তখন ধর্ষিত হওয়ার জন্য আরও বেশী করে সুযোগ খুজবে যাতে তার দোষও হবে না, অথচ তার মনের সাধও মিটে যাবে। এতে পুরুষদের দ্বিগুন মজা হবে। এ ব্যাপারে তসলিমার চিন্তাধারা সেই বোকা সাঁওতালের মত, যার স্ত্রী ধর্ষিত হয়েছিল। কথিত আছেঃ এক সুন্দরী মেঝেন (মাঝির/ সাঁওতালের স্ত্রী) জৈষ্ঠ মাসের দুপুর বেলায় নদীর ধারে গোবর কুড়োতে গিয়ে গ্রামের এক মোড়লের দ্বারা ধর্ষিত হয়। মেঝেন বাড়ি এসে মাঝিকে সব কথা বলে দেয়। মাঝি গ্রাম্য বিচার ডাকলে মোড়লরা ঐ মোড়লের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ও মোড়লকে পঞ্চাশ হাত নাক খত দিতে বলে। এই বিচার শুনে মাঝি মোড়লকে বলে, তোমার বিচার আমার পছন্দ হল না। মোড়ল বলল, তুই তাহলে কেমন বিচার চাস বল? মাঝি বলল, ঐ মোড়ল আমার মেঝেনকে যেভানে ধর্ষন করেছে, আমার মেঝেনও ঐ মোড়লকে ঐ ভাবেই ধর্ষন করবে – তবেই আমি খুশি হব। একথা শুনে বিচারমণ্ডলী হাসিতে লুটিয়ে পড়ল আর ধর্ষক মোড়ল খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেল। বন্ধুগন, তসলিমার বুদ্ধিটা ঐ বোকা মাঝির মত। জনৈক পাগল রাস্তার উপর কাঁটা পড়তে দেখে রেগে বলেছিল, ‘লাথি মেরে কাঁটারয় মুখ ভেঙে দাও তাহলে কাঁটা জব্দ হয়ে যাবে।’ তসলিমার বুদ্ধিটা ঐ পাগলের মতই। তসলিমা নাসরিন তো খুব বড়াই করে লিখেছেন যে নারীরাও ধর্ষন করতে শিখুক অথচ তসলিমা নাসরিন নিজে টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন যে ১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তসলিমা নাসরিনকে ধর্ষন করেছিলেন। তাহলে তসলিমা নাসরিন কতবার বদলাস্বরুপ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ধর্ষন করেছিলেন? একমাত্র তসলিমা নাসরিন নিজেই জানেন।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিম বঙ্গের বিখ্যাত জড়বাদী নাস্তিক প্রবীর ঘোষ লিখেছেন, “তসলিমার জীবন দর্শনে কোথায় যেন একটা তল কেটে যাওয়ার সুর। এই তসলিমার লেখাগুলোর যে সুর জনমনকে, নারী মানসকে প্রভাবিত করছে, তা হল, ধর্ষনের বদলে ধর্ষন বেলেল্লাপনার বদলে বেলেল্লাপনা, পতিতাপল্লীর বদলে পতিতপল্লী। তসলিমা খারাপ পুরুষের বদলে খারাপ নারী সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কোন নারী জাগরণ, কোন নারী মুক্তি আপনি ঘটাতে চাইছেন? কোন মূল্যবোধ আপনি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তসলিমা, আপনি পুরুষ চিত্রকরদের তুলির ছোঁয়ায় শিল্প হয়ে ওঠা নিতস্ব, উরু দেখে বদলা হিসাবে নারী চিত্রকরদের আঁকতে বলেছেন পুরুষাঙ্গ। আপনি এরুপ লেখেন, ‘আমরা আমোদিত হতে চাই, পুরুষ শরীর দেখে। আমরাও তৃষ্ণার্ত হতে চাই, আহ্লদিত হতে চাই।’ তসলিমা, আপনি চিত্রকরদের তুলিতে শিল্পের সৌন্দর্য্যের বদলে পর্ণোর উত্তেজনা যখন যখন পেতে চান, তখন আপনার মাসসিক সুস্থতা বিষয়ে কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীহান হলে তাঁকে খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে কি? তসলিমা আপনার মতো একজন কথাশিল্পীর কাছে চিত্র বা ভাস্কার্য যখন শিল্প না হয়ে শুধু মাত্র তীব্র কামতৃষিতদের তৃষ্ণা নিবারণের পণ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন দুঃখ পাই। তসলিমা, আপনার কি জানা নেই প্রতারণাময়-প্রেম, অসুস্থ-প্রেম, শরীরী প্রেম, আমাদের বর্তমান সমাজ কাঠামোরই ফলশ্রুতি, আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক পরিবেশেরই ফল? আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক পরিবেশ পাল্টে নারী পুরুষের সুস্থ ভালোবাসার সংস্কৃতি গড়ার পথ নির্দেশ না দিয়ে আপনার লঘু ও চটুল প্রতিবাদী মন নারী পুরুষের যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, তা সুস্থ সমাজের পরিপন্থী। সাম্য-ভালো, অসাম্য-খারাপ। এই প্রচলিত বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আপনি স্বেচ্ছায় বা অন্যের দ্বারা চালিত হয়ে চলেছেন। চাইছেন সমাজে উচ্ছ্বৃঙ্খল পুরুষদের উপস্থিতির পাশাপাশি উচ্ছ্বৃঙ্খল নারী সৃষ্টি করতে। স্বাধীনতা ও উচ্ছ্বৃঙ্খলতা বা স্বেচ্ছাচারিতা তো এক নয়? তসলিমা, আপনি স্বচালিত হয়ে অথবা কোনও গোষ্ঠীর দ্বারা চালিত হয়ে সচেতন, অসচেতনভাবে কিন্তু একটা মানবিক সমাজব্যাবস্থাকে টিকিয়ে রাখার পক্ষেই, ভোগসর্বস্ব সমাজব্যাবস্থা টিকিয়ে রাখার পক্ষেই ওকালতি করেছেন। আজকের পৃথিবীর ভোগবাদের, অসাম্যের ক্ষয়িষ্ণু ভাবধারার স্বার্থ রক্ষা করতেই আপনাকে দিয়ে ‘বিপ্লবী নারীর’ মুখস্থ পার্ট কেউ আউড়িয়ে নিচ্ছে না তো? আপনি সাম্যে বিশ্বাসী, মানবতাবাদ যুক্তিবাদে বিশ্বাসী, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাকেই সতেক কণ্ঠে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার সমাজ বদলের চিন্তাধারাতেই তো খাদ ধরেছে তসলিমা। এই চিন্তাভাবনা নারী-মুক্তির অনুগামী কখনওই এক নয় বরং নারীবাদী সেজে নারীদের প্রতি আক্রমণ।……… শোষন চলবে, বৈষম্য চলবে অথচ নারী মুক্তি ঘটবে – এই অবাস্তব চিন্তাই আপনি কি বিশ্বাস করেন? এই সমাজ কাঠামোয় বন্দি থেকে মুক্ত হওয়ার যে সুখ-স্বপ্ন আপনি নারীদের দেখাচ্ছেন, তা কি আপনার অজ্ঞতা প্রসূত? নাকি পরিকল্পিত ভণ্ডামী? অসাম্যের সমাজ কাঠামোর বিরুদ্ধে আপনার নীরবতাই আমাদের ভাবায় তসলিমা। তসলিমা, আপনার লেখা নারী মুক্তির লেখা নয়, পুরুষ বিদ্বেষে জর্জরিত লেখা। আপনি লেখেন-গোটা দুই ‘পতিত’ আর ছ-সাতটি ‘রক্ষিত’ হলে জমত বেশ। এমন লেখার মধ্য দিয়ে কোন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চলেছেন আপনি?” (প্রসঙ্গ সন্ত্রাস এবং……, প্রবীর ঘোষ, পৃষ্ঠা-১৯৩/১৯৫) বন্ধুগণ, লক্ষ্য করুন, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সভাপতি প্রবীর ঘোষের মন্তব্য। তিনি নিজেকে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেই দাবী করেন এবং তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত নাস্তিকদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। আর তসলিমা নাসরিনও নিজেকে নিরীশ্বরবাদী বলেই দাবী করেন। এখানে প্রবীর ঘোষ তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে বলেছেন যে, ‘আপনার মাসসিক সুস্থতা বিষয়ে কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীহান হলে তাঁকে খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে কি?’ অর্থাৎ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ঘোষ তসলিমাকে মানসিক রোগাগ্রস্থ বলে দাবী করেছেন। এমনকি প্রবীর ঘোষ তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে এই সন্দীহান হয়েছেন যে সে কোন লম্পট চরিত্রহীন ও স্বার্তথপর গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন এবং তসলিমা নাসরিনের মাধ্যমে সমাজবিরোধীরা তাদের ভোগবাদী সমাজব্যাস্থাকে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে হাতিয়ার স্বরুপ ব্যাবহার করেছে নিজেদের লাম্পট্যপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য। প্রবীর ঘোষ তো তসলিমা নাসরিনের আন্দোলনকে সরাসরী নারী মুক্তির আন্দোলন নয় বলে উল্লেখ করেছেন এবং সরাসরী তাঁর (তসলিমা নাসরিনের) কার্যাবলীকে ভণ্ডামী বলে স্বীকার করেছেন এবং তিনি তসলিমা নাসরিনের সাহিত্যকে কোনরকম মূল্য না দিয়ে পর্ণোগ্রাফীর (ব্লু ফিল্ম) সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং তীব্র কামতৃষিতদের তৃষ্ণা নিবারনের পণ্য হিসেবে গন্য করেছেন এবং তাঁকে পুরুষবিদ্বেষী হিসেবে গন্য করেছেন। আর যেহেতু ‘আনন্দবাজার’ গোষ্ঠী তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে বেশী মাতামাতী করেছে এবং তাকে সমাজে হিট করেছে সুতরাং আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে সেই স্বার্থপর, ভোগাবাদীসর্বস্ব, ধর্ষক, লম্পট, সমাজবিরোধী, মহিলাদেরকে কামতৃষিতদের তৃষ্ণা নিবারনের পণ্য হিসেবে গন্যকারী হল ‘আনন্দবাজার’ গোষ্ঠী। তারাই তসলিমাকে হাতিয়ার করে নিজেদের দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করতে চায়। সুতরাং তসলিমা নাসরিন হল পৃথিবীর সবথেকে বড় নারী বিদ্বাষী যেহেতু সে নারীকে ধর্ষকবাজ প্রকাশকের মনোবাঞ্ছা পুরণের জন্য সহায়তা করেছে এবং সে নারীদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তসলিমা নাসরিনের এই উলটো পালটা মন্তব্যের জন্যই সেখ হাসিনা বলেছিলেন, “Taslima Nasreen is an idiot does no longer deserve to be a Bangladesh” অর্থাৎ তসলিমা নাসরিন একজন ইডিয়ট, সে বাংলাদেশী হওয়ার উপযোগী নয়। প্রবীর ঘোষ শেষ পর্যন্ত তসলিমা নাসরিনকে মার্কিন সাম্রাজ্যের দালাল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “তসলিমাকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ‘টু ইন ওয়ান’ বা ‘একের মধ্যে দুই হিসেবে ব্যাবহার করেছে। তাঁকে দিয়ে একদিকে এই উপমহাদেশে যেমন ধর্মের রাজনীতি করেছে। আর একদিকে ভোগবাদের চুড়ান্ত রুপ যৌনতার বিপনন সাজিয়েছে। ‘আমার মেয়েবেলা’ থেকে ‘উতাল হাওয়া’ বিকোচ্ছেও ভাল। বাক্ স্বাধীনতার মুখোশের আড়ালে, অশালীন নোংরা শব্দবিন্যাস ও পর্ণ রচনা করেছেন তসলিমা। তিনি নিজের বহুগামীতা ও মা বাবার যথেচ্ছ যৌনাচারের কাহিনী টেনে এনে যেভাবে তাঁদের জনসমক্ষে উলঙ্গ করেছেন, তা অকল্পনীয়, ক্ষমার অযোগ্য। ‘টু ইন ওয়ান’ তসলিমাকে ব্যাবহার করে বিশ্বায়নের বাজারে ধর্ম ও যৌনতা বিক্রির বাজার খুলে বসেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। এই বাজার বন্ধ করতে পারি আমরা, ক্রেতারা। আমরা যদি প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হই – তসলিমার বই কিনব না, পড়ব না, উপহার দেব না, তসলিমাকে উপেক্ষা করব – তাতে কি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পারবে তসলিমাকে পণ্য করতে ? না। পারবে না।” (আমরা যুক্তিবাদী পত্রিকা, পৃষ্ঠা – ৪১, মুক্তমনা ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত) এখানে প্রবীর ঘোষ পরিস্কার তসলিমা নাসরিনের বইয়ের ব্যাপারে বলেছেন, “প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হই – তসলিমার বই কিনব না, পড়ব না, উপহার দেব না, তসলিমাকে উপেক্ষা করব”।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।