লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
আরবের বিখ্যাত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী একজন ঐতিহাসিক বিতর্কিত ব্যাক্তি । তিনি ১১১৫ হিজরীতে (১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দ) আরবের উয়াইনা অঞ্চলে বনু তামিম গোত্রের একটি শাখা বনু সিনান বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি দুজন শিক্ষকের নিকট শিক্ষালাভ করেন । মদীনায় সুলাইমান আল কুর্দী ও মুহাম্মাদ হায়াত আল সিন্ধীর নিকট শিক্ষালাভ করেন । কিন্তু তাঁর দুজন শিক্ষকই ধর্মবিরোধী মনোভাবের জন্য তাঁকে দোষারোপ করেন । তাঁর জীবনের অধীকাংশ সময় দেশ ভ্রমনে অতিবাহিত হয়েছে । জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,
“প্রথমে তিনি চার বছর বসরার কাযী হুসেনের বাটিতে গৃহশিক্ষক ছিলেন । পরে পাঁচ বছর তিনি বাগদাদে বসবাস করেন এবং সেখানের জনৈকা ধনবতী বিধবাকে শাদী করেন । এ স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় পথে বের হন এবং এক বছর কুর্দিস্তান ও দু’বছর হামাদানে অবস্থান করার পর ইসপাহানে উপস্থিত হন । তখন নাদির শাহের শাসন শুরু হয়েছে (১১৪৮ হিঃ, ১৭৩৬ খ্রীঃ) । এখানে তিনি চার বছর অবস্থান করেন এবং এরিস্টটলের দর্শন ও সুফিতত্ত্বে উচ্চজ্ঞান লাভ করেন । এক বছর তিনি সুফি-মতবাদে বহু ছাত্রকে শিক্ষাদান করেন । পরে কুম শহরে গমন করেন এবং হামবলী মযহাবের একজন গোঁড়া সমর্থক হন । শেষে তিনি জন্মভূমিতে প্রত্যাগমন করেন এবং প্রকাশ্যে নিজের মতবাদ প্রচার করতে থাকেন । ‘কিতাব অল-তওহীদে’ তাঁর বিষেশ মতামতগুলি বিধৃত আছে । তাঁর অনুগামীদের দল বর্ধিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন আরম্ভ হয় । এমনকি তাঁর সহোদর ভ্রাতা সুলায়মান তাঁকে আক্রমন করে একটি পুস্তিকা প্রচার করেন । তাঁকে কেন্দ্র করে বিবাদ ও রক্তপাত হওয়ায় স্থানীয় শাসক তাঁকে বহিস্কার করেন । তখন তিনি সপরিবারে দারিয়াপল্লীতে উপস্থিত হন । দারিয়ার আমীর মুহম্মাদ ইবনে সউদ তাঁকে আদরের সংগে গ্রহণ করেন ও তাঁর নিকট দীক্ষা নিয়ে তাঁর মতবাদ প্রচারে উৎসাহী হয়ে উঠেন ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৬/৭৭)
জাস্টিস আব্দুল মওদুদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন,
“শীঘ্রই আবদুল ওহহাবের প্রচারণা রাজনৈতিক রুপ গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ইসলামের প্রথম যুগে রাজ্য-বিস্তৃতির মতোই বিস্ময়কর হয়ে উঠে । ইবনে সউদের নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী আরব লিগ গঠিত হয়, এবং দারিয়াকে কেন্দ্র করে সউদী অধীকার বর্ধিত হতে থাকে । ‘কিতাব অল তওহীদের’ শিক্ষাদানের সংগে আগ্নেয়াস্ত্রের শিক্ষাদানও চলতে থাকে । ফলে রিয়াদের শেখের সংগে ১৭৪৭ সালে সংঘর্ষ উপস্থিত হয় । এ সংঘর্ষ চলে প্রায় আট বছর ধরে এবং ইবনে সউদ ও তাঁর মৃত্যুর পর (১৭৬৫ খ্রীঃ) তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবদুল আযীয ইঞ্চি ইঞ্চি করে রিয়াদ অধিকার করেন । ১৭৬৬ সালে আবদুল ওহহাব মক্কার শরীফের নিকট একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে নিজের মতবাদ গ্রহণ করতে আহ্বান করেন । মক্কার শরীফ আবদুল ওহহাবের মতবাদ ইমাম হামবলের মযহাব অনুযায়ী বিবেচনা করে সেসব শ্রদ্ধার সংগে প্রচারের নির্দেশ দেন । কিন্তু ১৭৭৩ সালে রিয়াদের শাসক দাহহাম আবদুল ওহহাবের তীব্র বিরোধীতা করেন, কিন্তু আবদুল আজীজের নিকট পরাজিত হয়ে পলায়ন করেন । দলে দলে বেদুইনরা আবদুল ওহহাবের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে এবং যুদ্ধের পর যুদ্ধে তাঁর শিরেই বিজয়মাল্য শোভিত হয় । উত্তরে কাসিম থেকে দক্ষিণে খরজ পর্যন্ত সমগ্র নেজদ ভূমিতে আবদুল আজীজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করে আবদুল ওহহাব ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে জান্নাতবাসী হন ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৭)
পরবর্তীকালে আব্দুল আজীজ ও তাঁর পুত্র সউদ বিন আব্দুল আজীজ বীর বিক্রমে অভিযান চালাতে থাকেন । ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে মক্কায় হামলা চালানো হয় এবং ইরাকের বিভিন্ন স্থানে বারংবার অভিযান চালাতে থাকেন । এই নতুন শক্তির অভ্যত্থানে আতঙ্কিত হয়ে তুর্কী সুলতান বাগদাদের পাশাকে নির্দেশ দেন যে এই নবজাগ্রত শক্তিতে প্রশ্রয় না দিয়ে অচিরেই ধ্বংশ করে দিতে । কিন্তু ১৭৯৭ খ্রীষ্টাব্দে সউদ বিন আব্দুল আজীজ বাগদাদের পাশাকে বিশেষভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং এশিয়ার অধিনস্ত সমগ্র তুর্কী অধিগ্রহণ করে নেন । ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে গালিব পাশা মক্কা থেকে বিতাড়িত হন এবং সউদ বিন আব্দুল আজীজ সেখানে তাঁর অনুচরদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন । কিন্তু সউদ বিন আব্দুল আজীজ সাময়িকভাবে সেখান থেকে বহিস্কৃত হন, কিন্তু তিনি ১৮০৪ সালে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে হেজাজে আক্রমণ করেন এবং মদিনা দখল করেন । পরে ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা ও তারও কিছুদিন পর জেদ্দা সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেন । ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দে সউদ বিন আব্দুল আজীজের বাহিনী ইসলাম ধর্মকে তার বিভিন্ন সুফি মতবাদ ও বিভিন্ন নিত্যনতুন মনগড়া কুপ্রথা আবিস্কারের (বিদআত) হাত থেকে রক্ষা করার আদর্শ নিয়ে কারবালা এলাকায় তাণ্ডব চালায় । এভাবে পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে সমগ্র জাজিরাতুল আরব ওহাবীরা সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেয় । এই প্রসঙ্গে জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,
“১৮১১ সালে ওহাবী সাম্রাজ্য উত্তরে আলেপ্পা থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত এবং পারস্য উপসাগর ও ইরাক সীমান্তের পরবর্তী পূর্বে লোহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৮)
সমগ্র ইসলাম জগত সউদ বিন আব্দুল আজীজের বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন চালাতে থাকে এবং তুর্কীরা ও তাদের ইউরোপীয় বন্ধুরা সহযোগিতা করে । এই আন্দোলন তুর্কী সাম্রাজ্যের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক পরিলক্ষিত হয় । চারিদিকে প্রচার করা হয়েছিল, মুসলিম বিশ্বের মূল কেন্দ্র মক্কা ও মদিনা শহর দুটিতে ওহাবী মতবাদ গ্রহণ করতে যারা অস্বীকার করে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে । এরা কুরআন-সুন্নত জীবিত করার নাম করে আলেম-উলামা ও সাধারণ মুসলমান যাঁরা তাঁদের মতবাদ মানে না তাঁদের মুশরিক ও কাফের বলতে শুরু করে । এরা তাঁদের হত্যা করে মুসলমানের রক্তে হোলী খেলার আনন্দে মেতে উঠে । ১২২১ হিজরী সনে রোম সম্রাটের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাজ্য লিপ্সায় মত্ত হয়ে এই ওহাবী দল মক্কা ও মদিনায় বিদ্রোহ ঘোষনা করে । সুন্নতের ধ্বজাধারী এই দলটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পবিত্র হারামাইন শরীফাইন অর্থাৎ মক্কা ও মদিনা এবং হারামের বাসিন্দাদের উপর অকথ্য আক্রমণ এবং তাণ্ডবলীলা চালায় । ওলী-আউলিয়া এমনকি সাহাবায়ে কেরামদের মাযারগুলি পর্যন্ত ধুলিস্যাৎ করে দেয় । মাযহাব মান্যকারী মুসলমান ও আলেম-উলামাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এবং তাঁদের মাল ও আসবাবপত্র লুঠতরাজ করে নেয় । তাদের মাল ও আসবাবপত্র লুন্ঠন করাকে হালাল বলে ফতোয়া দেয় । এমনকি ওহাবীদের হাত থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর রওজা-মুবারকও রেহাই পায়নি । আরবের যেসব মসজিদে কারুকাজ করা ছিল ও যেসব শোভা বর্ধনকারী বহুমূল্য জিনিস ছিল সেগুলিও ওহাবীরা বিলুপ্ত ও লুন্ঠন করেছিল । বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম সুলতান, বাদশাহ ও ভক্তবৃন্দরা দীর্ঘ এগারো শতাব্দী ধরে স্বদেশের জন্য ভক্তির নিদর্শনস্বরুপ যেসব বহুমূল্য ও দুস্প্রাব্য উপহার পাঠিয়েছিলেন সেসমস্তও মরুবাসী বেদুইন ওহাবীরা লুন্ঠিত ও কুক্ষিগত করেছিল ।
W.W. Hunter লিখেছেন,
“তুর্কী জাতি তাহাদের পূর্বতন গুণাবলী বর্জিত হইয়া বিলাস ব্যাসনের মধ্যে হাবুডুবু খাইয়া ঘৃণ্য প্রবৃত্তি পরায়ন হইয়াছিল । এমন কি তাঁহাদের মধ্যে যাঁহারা পবিত্রভূমি মক্কা-মদিনায় আগমন করিত তাহাদেরও অনেকেই নিন্দনীয় আচরন দ্বারা পবিত্রভূমিকে কলুষিত করিতে দ্বিধাবোধ করে নাই । একাধিক স্ত্রী বিদ্যমান থাকা সত্বেও তাহাদের অনেকে চরিত্রহীনা নারীদের সংস্পর্শে আসিত, পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য মক্কাধামে গমনকালেও তাহাদের অনেকে চরিত্রহীনা নারী সঙ্গে রাখিত এবং মাদকদ্রব্য সঙ্গে লইত এবং উহা সেবন করিয়া পবিত্রভূমিকে অপবিত্র রাখিত ।” (The Indian Musalman, অনুবাদ-মাওলানা আহমদ আলী)
তুর্কী জাতির এইসব কুকর্ম দেখেই ওহাবীরা উপরিউক্ত কুকর্ম করতে বাধ্য হয়েছিল । তবে উইলিয়াম হান্টার যেসব তথ্য তুর্কী জাতি সম্পর্কে পরিবেশন করেছেন তাতে ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে । তবে যাই হোক ওহাবীদের কর্মকাণ্ড সমগ্র মুসলিম জগতে দারুনভাবে মহাপাপ হিসেবে গণ্য হতে থাকে । মুসলিম জাহান ওহাবীদের বিরুদ্ধে রোষ ও ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠে এবং তুর্কীর সুলতান কাবা শরীফ ও মক্কা মদিনা শরীফ ওহাবীদের হাত থেকে রক্ষা করার মানসে ও ওহাবীদের ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে আসেন । তাতে সমগ্র মুসলিম জগৎ তুর্কী সুলতানের পক্ষপাত অবলম্বন করেন । এখানে উল্লেখ্য যে, উইলিয়াম হান্টার সাহেব তাঁর গ্রন্থে তুর্কী জাতি সম্পর্কে যে তথ্য পরিবেশন করেছেন তা যদি সত্য হত তাহলে সমগ্র মুসলিম জাহান তুর্কী সুলতানের পক্ষপাত অবলম্বন করে “ওহাবীদলনে’ এগিয়ে আসতেন না । কেননা, হান্টার সাহেবের থেকে তৎকালীন যুগের মুসলমানরাই তুর্কী জাতি সম্পর্কে বেশী অবগত ছিলেন । যাইহোক মিশরের পাশা মুহাম্মাদ আলী পাশাকে ‘ওহাবী’ ধ্বংসের দায়িত্ব অর্পন করা হয় । তিনি তাঁর পুত্র তুসুনকে ইউরোপীয় প্রণালীতে সুশিক্ষিত সৈন্য হেজাজ অধিকার করতে পাঠান । ফলে মুহাম্মাদ আলী পাশার পুত্র তুসুন তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে মদিনা ও ১৮১৩ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা দখল করেন এবং মুহাম্মাদ আলী পাশা স্বয়ং ১৮১৩ খ্রীষ্টাব্দে মিশরবাহিনীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন । ফলে ওহাবী বাহিনীর নেতা সউদ বিন আব্দুল আজীজ ১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দে ১লা মে ইন্তেকাল করেন । সউদ বিন আব্দুল আজীজের পুত্র আব্দুল্লাহ বিন সউদ ততো সাহসী ও বীর ছিলেন না । তিনি অটোমান সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করবেন ও মিশরবাহিনী নজদ ত্যাগ করে চলে যাবে এই শর্তে তুসুনের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন । কিন্তু মুহাম্মাদ আলী পাশা এই সন্ধি ভঙ্গ করে ইবরাহীম পাশাকে পুনরায় ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে ভয়াবহ যুদ্ধের পর মে মাসে রাজধানী দারিয়ায় উপস্থিত হন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ওহাবীদের রাজধানী দারিয়া সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেন । আব্দুল্লাহ বিন সউদকে বন্দী করে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যাওয়া হয় । জাস্টিস আব্দুল মওদুদের ভাষায় –
“আরব মরিচিকার মতোই সহসা চক্ষু ঝলসিয়ে দিয়ে ‘ওহাবীদের’ বিশাল সাম্রাজ্য ও ক্ষাত্র শক্তি কোথায় মিলিয়ে গেল – তার কোনও অস্তিত্বই রইল না ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৮)
তবে ঐতিহাসিক Philip K. Hitti লিখেছেন,
“ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও ওয়াহাবীদের মতবাদ প্রসার লাভ করতে থাকে। পূর্বে সুমাত্র থেকে পশ্চিমে নাইজেরিয়ে পর্যন্ত এই মতবাদের প্রভাব দেখা যায় ।” (History of the Arabs, Page-834)
১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দের শুরুর দিকে ওহাবীরা পুনরায় নতুন করে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রয়াস করে । তাও ছিল খুব স্বল্প সময়ের জন্য । পরবর্তীকালে ওহাবী রাষ্ট্র ও বংশের পুনরুদ্ধারকারী আব্দুল আজীজ বিন সুয়ুদ-এর উত্থান হয় । প্রথম জীবনে তিনি কুয়েতে নির্বাসিত ছিলেন । বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে হেইলের ইবনে রশীদ পরিবার এবং মক্কার বাদশাহ শরীফ হোসেনের পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে পারস্য উপসাগর থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন । ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দে মক্কার বাদশাহ শরীফ হোসেন ব্রিটিশদের সমর্থন পেয়ে নিজেকে ‘আরবের রাজা’ বলে ঘোষনা করেন এবং ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে ‘আমীরুল মোমেনীন’ (মোমীন মুসলমাদের খলিফা) আখ্যা পান । আব্দুল আজীজ ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে রশীদ পরিবারের অবসান ঘটান এবং ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে মক্কা দখল করেন ও ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে মদিনা ও হেজাজ দখল করেন । ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি সুয়ুদ আরবীয় সাম্রাজ্য গঠন করেন যার অধিশ্বর ছিলেন তিনি নিজেই ।
ওহাবীদের আকিদা ও ধ্যানধারণা
জাস্টিস আব্দুল মওদুদ লিখেছেন,
“আবদুল ওহহাবের ধর্মীয় শিক্ষা ও মতবাদের আলোচনায় প্রথমেই বলে রাখা ভাল, আরবদেশে ‘ওহাবী’ নামাংকিত কোনও মযহাব বা তরিকার অস্তিত্ব নেই । এ সংজ্ঞাটির প্রচলন আরব দেশের বাইরে এবং মতানুসারীদের বিদেশী দুশমন, বিশেষত তুর্কীদের ও ইউরোপীয়দের দ্বারা ‘ওহাবী’ কথাটির সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যেই প্রচলিত । কোনও কোনও ইউরোপীয় লেখক, যেমন নীবর (Neibuhr) আবদুল ওহহাবকে পয়গম্বর বলেছেন । এসব উদ্ভট চিন্তার কোন যুক্তি নেই । প্রকৃতপক্ষে আবদুল ওহহাব কোনও মযহাব সৃষ্টি করেন নি, চার ইমামের অন্যতম ইমাম হামবলের মতানুসারী ছিলেন তিনি, এবং তাঁর প্রযত্ন ছিল বিশ্বনবী ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রুপ ছিল, সেই আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা ।” (ওহাবী আন্দোলন, পৃষ্ঠা-৭৯)
এখানে জাস্টিস আব্দুল মওদুদের বক্তব্যের উপর ঐতিহাসিক বিতর্ক আছে । একথা অবশ্যই ঠিক যে ‘ওহাবী’ কথাটি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের শত্রু দ্বারা প্রচারিত । কিন্তু “তার প্রযত্ন ছিল বিশ্বনবী ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রুপ ছিল, সেই আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা ।” এ নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মহলে ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আলেম উলামারা একমত নন । যেমন শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হোসেন আহমদ মাদানী (রহঃ) ওহাবী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লিখেছেন,
“মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ১৩ শতাব্দীর প্রথম দিকে আরবের নজদ নামক স্থান হতে প্রকাশ হয়েছে । যেহেতু তার বদ আকিদাহ-ভ্রান্ত ধারণা ছিল । এই কারণেই সে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের সঙ্গে হত্যাকাণ্ড করেছিল । আহলে সুন্নতকে জোরপূর্বক তাঁর মতাবলম্বী করতে চেয়েছিল । সুন্নীদের সম্পদ জোরপূর্বক নেওয়া হালাল ধারণা করত । ওতের কতল (হত্যা) করা সওয়াবের কাজ মনে করত । আরববাসীকে বিশেষ করে মক্কা ও মদিনাবাসিকে অত্যান্ত নির্যাতন করেছিল । পুর্ব্বর্তী বুযুর্গদের সম্পর্কে অত্যান্ত খারাপ ভাষা প্রয়োগ করেছিল । তাঁর কঠিন অতাচারে বহু মানুষ পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ তাঁর এবং তাঁর সৈনিকদের হাতে শহীদ হয়েছিল । মোট কথা, তিনি একজন অত্যাচারী, বিদ্রোহী, রক্তপিপাসু ও ফাসেক মানুষ ছিলেন। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাবের ধারণা ছিল যে, সমস্ত মুসলমান মুশরিক ও কাফের । তাদের হত্যা করা এবং তাদের সম্পদ লুঠ করে নেওয়া হালাল-জায়েজ এবং ওয়াজীব । – আজও নজদী ও তার অনুসারীদের এই ধারণা রয়েছে যে, নবীগণ যতদিন পৃথিবীতে ছিলেন, ততদিন হায়াতে ছিলেন মাত্র । ইন্তেকালের পর তাদের অবস্থা এবং সাধারণ মানুষের অবস্থা ছিল সমান । হুজুর (সাঃ) এর রওজা মুবারক জিয়ারত করতে যাওয়া তারা বিদআত, হারাম ইত্যাদি বলে থাকে । জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা নাজায়েজ মনে করে । এমনকি হুজুরের রওজা জিয়ারত করবার জন্য সফর করা ব্যাভিচারের সমপর্যায় বলে । তারা যদি মসজিদে নববীতে যেত তাহলে আল্লাহর রাসুলের প্রতি দরুদ সালাম পাঠ করত না । এমনকি রওজা পাকের দিকে তাকিয়ে দোয়া করত না । জিয়ারত সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তারা সেগুলিকে মিথ্যা বলত । তারা হুজুর (সাঃ) এর শাফায়াত অস্বীকার করে থাকে । তারা রাসুলে পাককে নিজেদের ন্যায় ধারণা করে থাকে । আরও বলে থাকে যে, আমাদের প্রতি আল্লাহর রাসুলের কোন অধিকার নাই । আমাদের প্রতি তাঁর অবদান নেই । তাঁর ইন্তেকালের পরে তাঁর দ্বারা আমাদের কোন উপকার হয় নাই । এই কারণে হুজুরের ওসীলা দিয়ে দোওয়া চাওয়া নাজায়েজ বলে থাকে । তারা বলে থাকে যে, আল্লাহর রাসুল অপেক্ষা আমাদের হাতের লাঠি বেশী সাহায্যকারী । আমরা লাঠি দ্বারা কুকুর তাড়াতে পারি । নবীর দ্বারা এতটুকুও সাহায্য পাই না । তাদের ধারণায় ইলমে মারেফত, আউলিয়া কেরামদের মুরাকাবা ইত্যাদি বিদআত ও গুমরাহী এবং আউলিয়া কেরামদের কার্যকলাপ শিরক বলে থাকে । চার ইমাম এবং তাদের অনুসরণকারীদের প্রতি অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে থাকে । হুজুর (সাঃ) এর প্রতি বেশী দরুদ সালাম পাঠ করা ভীষন অপছন্দ করে থাকে ।” (আশশিহাবুস সাকিব, পৃষ্ঠা-৪২/৬৬)
‘ফতোয়ায়ে শামী’ গ্রন্থের রচয়িতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহঃ) লিখেছেন,
“যেমন আমাদের কালে একটা ঘটনা ঘটেছে, আব্দুল ওহাব নজদীর অনুগামীরা নজদ থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পবিত্র মক্কা মদিনার হারাম শরিফে আক্রমণ চালায়। তারা মুখে নিজেদেরকে হাম্বলী বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু তাদের বিশ্বাস তারাই শুধু (বিশ্ব মাঝে) মুসলমান, আর যারা তাদের অনুগামী নয় তারা সকলেই মুশরিক । এই বিশ্বাস বশতঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের লোকজনকে ও উলামাদেরকে হত্যা করা হালাল মনে করত । অতঃপর এমন দিন আসল, আল্লাহ তায়ালা তাদের এই উদ্ধত্য ক্ষমতা চুর্ণ বিচুর্ণ করে দিলেন । তাদের জনপদ ধ্বংস করে দিলেন । মুসলমান সৈন্যগণ তাদের ধ্বংস করে ১২৩৩ হিজরী সনে পুনরায় জয়লাভ করলেন ।” (ফতোয়ায়ে শামী, বাবুল লোগাত, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৩৭)
জাস্টিস আব্দুল মওদুদ তাঁর গ্রন্থে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহা নজদীর শিক্ষাসমূহ তাঁর লেখা ‘কিতাবুত তাওহীদ’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন,
“(১) আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারও ইবাদত বা আরাধনা পাপ এবং যারাই অন্য কারো উপাসনা করে, তারা বধার্হ ।
(২) অধিকাংশ মানুষই তওহীদ বা একেশ্বরবাদী নয়, তারা ওলী বা সন্তদের মাযারে গমন করে ও আশীষ প্রার্থনা করে; তাদের এসব আচার কুরআনে বর্ণিত ‘মক্কার মুশরেকীন’দের অনুরুপ ।
(৩) ইবাদতকালে নবী, ওলী, ফেরেশতাদের নাম গ্রহণ করা ‘শিরক’ বা বহু দেবার্চনার মতোই নিন্দনীয় ।
(৪) আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারও মধ্যবর্তিতার আশ্রয় গ্রহণ করা শিরক মাত্র ।
(৫) আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারও নিকট উৎসর্গ বা মানত করা শিরক মাত্র ।
(৬) কুরআন, হাদীস এবং যুক্তির সহজ ও অবশ্যম্ভাবী নির্দেশ ব্যাতিত অন্য জ্ঞানের আশ্রয় করা কুফর বা অবিশ্বাস মাত্র ।
(৭) কদর বা আল্লাহর অমোঘ বিধানে সন্দেহ প্রকাশ বা অবিশ্বাস করা ধর্মদ্রোহীতা (ইলহাদ) ।
(৮) কুরআনের ‘তা’বিল বা উপাদানগত ব্যাখ্যাদান ধর্মবিরুদ্ধতা ।
ইবনে হামবল থেকে আবদুল ওহহাবের বিরুদ্ধ মতামত নিম্নলিখিত বিষয়ে সুস্পষ্টঃ
(১) জামাতে সালাত আদায় অবশ্যকর্তব্য ।
(২) তাকাব সেবন নিশিদ্ধ এবং এরুপ অপরাধে চল্লিশের অনধিক বেত্রদণ্ড যথেষ্ট । দাড়ী কামানো ও গালি দেওয়ার শাস্তি কাযীর ইচ্ছানুযায়ী ।
(৩) অপ্রকাশ্য মুনাফার, যেমন ব্যাবসায়িক মুনাফার উপর যাকাত দিতে হবে । ইমাম হামবল মাত্র প্রকাশ্য আয়ের উপর যাকাত দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ।
(৪) কেবলমাত্র কলেমার উচ্চারণই মোমেন বা বিশ্বাসী হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়, যাতে তার জবেহ করা জীব হালাল হতে পারে । তার চরিত্র নিখুঁত কিনা, তারও অনুসন্ধান করা উচিত ।
এছাড়াও মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীরা মালার ন্যায় তসবীহ গণনা করাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন, কারণ তাঁরা মনে করেন এই আচরণটি বৌদ্ধদের নিকট থেকে নেওয়া । তাঁরা মনে করেন, তসবীহ বদলে আঙ্গুলের গিঁঠে গিঁঠে আল্লাহর নাম গণনা করা উচিৎ । তাঁরা মসজিদে, মাজারে যেসব নক্সার কাজ করা ছিল তা সবকিছুই তুলে ফেলে দেন । তুর্কীরা যেসব মিনার নির্মান করেন তাও ওহাবীরা ধ্বংস করে দেন । তার পরিবর্তে সাধারণ ও অলঙ্কারশূন্য মসজিদ নির্মান করেন । তবে যাইহোক ওহাবী নেতা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে তৎকালীন যুগের সমগ্র মুসলিম জাহান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল তার বর্ণনা এর আগে করা হয়েছে ।
নজদী ওহাবী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী
হযরত রাসুলে কারীম (সাঃ) এর একটা ভবিষ্যৎবাণী সহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে । ঐ ভবিষ্যৎবাণীটি হুজুর (সাঃ) এর জ্বলন্ত মু’জিজা ছিল । যা ১২০০ বছর পর প্রকাশ পেয়েছিল ।
হাদীসটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ! আমাদের শামে, আমাদের ইয়ামানে বরকত দান করুন । উপস্থিত লোকেদের কেউ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের ‘নজদের’ জন্যও দোয়া করুন । বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের শামে, আমাদের ইয়ামানে বরকত দান করুন । পুনরায় উপস্থিত লোকেরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের ‘নজদের’ জন্যও দোয়া করুন । আমার মনে হয় তৃতীয়বার তিনি বললেন, সেখানে তো ভূমিকম্প, ফিৎনা এবং শয়তানের সিং উদিত হবে । (বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-১০৪৭, অনুবাদ-শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ আজীজুল হক সাহেব, হাদীস নং-৬৬১৩)
এই পবিত্র বাণী হুজুর (সাঃ) এর মৃত্যুর বারো শত (১২০০) বছর পর অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয় । যখন আরবের নজদ এলাকায় মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর জন্ম হয় । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পবিত্র ভবিষ্যৎবাণীতে নজদ নামক স্থানের জন্য বলেছিলেন “সেখানে তো ভূমিকম্প, ফিৎনা এবং শয়তানের সিং উদিত হবে” আর এই ‘নজদ’ এলাকাতেই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ১১১৫ হিজরী (১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী অলৌকিকভাবে বাস্তবায়িত হয় । আর এই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী কিভাবে ইসলাম ধর্মের সরলতা ও স্বাধীনতার নাম করে, কুরআন সুন্নত জীবিত করার নাম করে মুসলিম উম্মাহকে ধোকা দিয়ে মক্কা ও মদিনা সহ আরববিশ্বে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল তা এর আগে মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে ।
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে, হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আমরা হুজুর (সাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম । হুজুর গণীমতের লাম বন্টন করছিলেন । এমতাবস্থায় বনু তামিম বংশের ‘জুল খুরাই সারাহ’ নামক এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইনসাফ করে কাজ করুন । হুজুর (সাঃ) বললেন, তোমার সাহস দেখে দুঃখ হচ্ছে । যদি আমি ইনসাফ না করি, তাহলে ইনসাফ কে করবে? যদি আমি ইনসাফ না করতাম, তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যেতে । হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি অনুমতি দিন । আমি ওকে কতল করে দেব । হুজুর বললেন, ওকে ছেড়ে দাও । ওর অনেক সঙ্গী রয়েছে । তাদের নামায ও রোযা দেখে তোমাদের নামায ও রোযাকে তুচ্ছ মনে করবে । তারা কুরআন পাঠ করবে । কুরআন তাদের গলদেশের নিচে নামবে না । তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায় । (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এই ঘটনাটি অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এক ব্যাক্তি এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! খোদাকে ভয় কর । হুজুর বললেন, যদি আমি আল্লাহর অবাধ্য হই, তাহলে খোদার অনুগত কে হবে ? আল্লাহ পাক জগৎবাসীর জন্য আমাকে আমীন করে প্রেরণ করেছেন । কিন্তু তুমি আমাকে আমী বলে স্বীকার কর না । জনৈক সাহাবী তাকে কতল করার অনুমতি চাইলে হুজুর নিষেধ করলেন । যখন সে চলে গেল, তখন হুজুর (সাঃ) বললেন, তার বংশ থেকে একটি জামাআত বের হবে, যারা কুরআন পাঠ করবে। কিন্তু কুরআন তাদের গলদেশের নিচে নামবে না । তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায় । তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং প্রতিমাপূজকদের ছেড়ে দেবে । (মিশকাত শরীফ)
উপরিউক্ত হাদীস শরীফে ‘জুল খুরাই সারাহ’ নামক ব্যাক্তি সম্পর্কে হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলেছিল, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইনসাফ করে কাজ করুন” সেই লোকটি বনু তামিম বংশের লোক ছিল । যার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উপরিউক্ত হাদীসে বলেছেন, তার বংশ থেকে একটি জামাআত বের হবে এবং সেই দল মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং প্রতিমাপূজকদের ছেড়ে দেবে । আর এর আগে বর্ণনা করা হয়েছে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী ছিলেন বনু তামিম বংশের মানুষ । যিনি আরববিশ্বে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নিরীহ মুসলমান ও আলেম উলামাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিলেন । যা এর আগে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে । আরবের বিখ্যাত ও বিশ্বস্ত ঐতিহাসিক আল্লামা জীনি দাহলান লিখেছেন,
“সব চাইতে পরিস্কার কথা এই যে, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী বনি তামিম বংশের মানুষ । এই কারণে খুবই সম্ভব যে, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব ‘জুল খুরাই সারাহ’ তামিমির বংশধর । যার সম্পর্কে বুখারী শরীফে হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।” (আদ দুরার, পৃষ্ঠা-৫১)
সুতরাং উপরিউক্ত হাদীস দ্বারা পরিস্কার প্রমাণ হয়ে গেল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন তা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী সম্পর্কে । এবং ইচ্ছা করেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নজদের জন্য দোয়া করেন নি, কেননা তিনি জানতেন যে, সেখান থেকে ভূমিকম্প, ফিৎনা এবং শয়তানের সিং উদিত হবে । আর যে জায়গার জন্য স্বয়ং নবী (সাঃ) দোয়া করেন নি সেই স্থান এবং সেই স্থানে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহাব নজদী যে অভিশপ্ত একথা সহজেই অনুমেয় ।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।