লিখেছেনঃ ড. এম. এ. শ্রীবাস্তব
সৃষ্টিকর্তা অত্যন্ত কৃপাশীল এবং দয়াবান। (ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে হজরত মুহাম্মাদ) তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তিনি তাঁর সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহতা এবং দয়াশীলতা গণনা করা বড়ই কঠিন। তিনি মানুষের উপর বিশেষ কৃপা করেছেন যে তিনি মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য প্রত্যেক জাতি এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে পয়গম্বর, রসুল এবং অবতার পাঠিয়েছেন। কুরআন শরীফে আছে, “এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাদের মধ্যে সাবধানকারী পাঠানো হয়নি।” (৩৫ : ২৪)
“অবতার’ শব্দের অর্থ কখনোই এরকম মনে করা উচিৎ নয় যে ঈশ্বর স্বয়ং পৃথিবীতে সশরীরে আসেন বরং, এটাই সত্য যে তিনি মানবজাতিকে মুক্তির পথ দেখাবার জন্য পয়গম্বর এবং অবতার প্রেরণ করেন। তিনি যুগে যুগে মানবজাতিকে উদ্ধার এবং কল্যানের জন্য রসুল তথা অবতার পাঠিয়েছেন এবং এই অবতার পাঠানোর সিলসিলা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর সমাপ্ত করে দেন। স্বামী বিকানন্দ এবং গুরু নানকের মতো মহান ব্যাক্তিগণও পয়গম্বর এবং ঈশ্বর প্রদত্ত দুতের এই ধারণাকে সমর্থন করেন। প্রবীন পণ্ডিতদের মধ্যে পন্ডিত সুন্দর লাল, শ্রী বলরাম সিং পরিহার, ড. বেদ প্রকাশ উপধ্যায়, ড. পি. এইচ. চৌবে, ড. রমেশ প্রসাদ গর্গ, পন্ডিত দূর্গা শঙ্কর সত্যার্থী প্রভৃতি মনীষীরা বলেছেন ‘অবতার’ শব্দের অর্থ ঈশ্বর দ্বারা মানবজাতির কল্যানের জন্য পাঠানো পয়গম্বর ও দূত। প্রাণনাথী সম্প্রদায়ের প্রসিদ্ধ চিন্তাবিদ ঐ কাশ্মীরি লাল ভগৎও এই তথ্যকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করেছেন।
আমরা হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের ভবিষ্যৎবানী বইবেল, তৌরাত এবং অন্য ধর্মগ্রন্থে পেয়েছি। এমনকি ভারতীয় ধর্মগ্রন্থেও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের আগে ভবিষ্যৎবানী রয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মগ্রন্থেও এইরকমের ভবিষ্যৎবানী রয়েছে। এই পুস্তিকায় সেইসব ভবিষ্যৎবানীকে একত্রিত করে প্রকাশ করার ক্ষুদ্র প্রয়াস করা হয়েছে।
পয়গম্বর এবং অবতার পঠানোর একটা বিশিষ্ট ধারাবাহিকতা রয়েছে। মানুষের মনে ধর্মহীন প্রবৃত্তি তৈরী হওয়া, ধর্মের আসল পথ থেকে সরে যাওয়া এবং মূল ধর্মের মধ্যে মানুষের দ্বারা পরিবর্তন হওয়ার জন্যই আল্লাহ যুগে যুগে ‘পয়ম্বর’ অর্থাৎ ‘অবতার’ পাঠিয়েছেন। এই অবতার বা পয়ম্বর ধর্মকে পুনরায় মৌলিক রুপে পেশ করেছেন এবং একজন ঈশ্বরের দিকে তাঁরা আহ্বান করেছেন। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সেই সময় পাঠানো হয় যখন হজরত ইসা মসীহ (আঃ) বা জীশু খ্রীষ্ট্রের আসার পাঁচশো বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে। তখন নবীদের শিক্ষা নষ্ট এবং বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, সনাতন ধর্মের মধ্যে অধার্মিকতায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ইশ্বরের প্রতি ভয় এবং আস্থা সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল। মানবজাতিকে যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ তাঁকে ভুলে গিয়েছিল। তারা বহু ইশ্বরের সৃষ্টি করেছিল এবং তারা নিজেদের এমন অবস্থা করেছিল যে তারা পাহাড়, আগুন, পানি, বাতাস, পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য ইত্যাদি বস্তুর পুজা করতে শুরু করে দেয়।
এই বিকট এবং চরম মুহুর্তের সময় হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমন হয়। তিনি আল্লাহর প্রেরিত দূত হিসাবে সীমাহীন মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি কোন নতুন ধর্ম নিয়ে আসেননি বরং মানব জাতির শুরু থেকে চলে আসা সনাতন ধর্মের খারাপ জিনিসগুলি এবং বিকৃতিগুলিকে দুর করেন এবং প্রথমে যেমন মৌলিকভাবে ছিল তার সেই রূপ দেন। তিনি ঘোষনা করেন ঈশ্বর এক অদ্বিতীয় এবং নিরাকার। মানবজাতিকে তাঁরই দাসত্ব করা উচিৎ তাঁরই উপাসনা করা উচিৎ ইত্যাদি। যদি কেউ এই ধারণা এবং ভক্তি-ধর্মকে অস্বীকার করে তাহলে বুঝতে হবে সে ভূল স্থানে দাঁড়িয়ে ফলে তার পা ভুল পথে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে তার জীবনযাত্রা কিভাবে সফল হতে পারে?
জীবনকে সুগম, সার্থক, সফল এক ফলপ্রসু যাত্রার জন্য আল্লাহ অন্তিম পয়গম্বর ও দূত হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দ্বারা পেশ করা শিক্ষা যদি গ্রহণ করা হয় এবং সেই পথে যদি চলা যায় তবেই পারলৌকিক জীবনে সফল বানানো সম্ভব হবে। এখন এই সত্য আর গোপন নেই যে ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে যে অবতারের ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে তিনি হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ছাড়া আর কেই নন। এই পুস্তক সত্যকে প্রকাশ করার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। এর উদ্দেশ্য হল সত্যকে নিজে বোঝা এবং অপরকে বোঝানো। অতএব এই পুস্তকে বর্ণিত তথ্যের ধারাবাহিকতায় কোন ভূল ভ্রান্তি থেকে থাকে তাহলে আমাকে জানাবার কষ্ট স্বীকার করবেন। আল্লাহ আমাদের চেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন।
ড. এম. এ. শ্রীবাস্তব
স্থান – নতুন দিল্লী তারিখ – ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ
সত্য সবসময় স্পষ্ট হয়। সত্যের জন্য কোন প্রকার দলীলের প্রয়জন হয় না। এটা অবশ্য আলাদা ব্যাপার যে লোকেরা সত্যকে বুঝতে পারে না অথবা কিছু লোক সত্যকে আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখার অপপ্ৰয়াস করে। এখন এই কথা আর গোপন নেই যে বেদ উপনিষদে এবং পুরানে সৃষ্টি জগতের অন্তিম পয়গম্বর (স্রষ্টার বার্তাবাহক) হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে। সত্য অন্বেকারী গবেষকগণ এর উপর এমন অকাট্য প্রমাণ পেশ করেছেন যার দ্বারা স্পষ্টভাবে মানুষের সম্মুখে প্রকৃত সত্যটা চলে এসেছে।
বেদের মধ্যে যে উষ্টারোহী (উট আরেহনকারী) আসার ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। বেদ অনুযায়ী সেই উষ্টারোহীর নাম হবে ‘নরাশংস’। ‘নরাশংস’ শব্দের আরবী অনুবাদ হচ্ছে ‘মুহাম্মাদ’। ‘নরাশংস’ এর ব্যাপারে বর্ণিত কার্যকলাপ হজরতত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আচরণের সঙ্গে এবং ব্যবহারিক ভাবে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। পুরানে এক উপনিষদে কল্কি অবতারের ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে, এ সেই কল্কি অবতার হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তা আজ প্রমাণ হয়ে গেছ। কল্কি অবতারের ব্যাক্তিত্ব এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট অন্তিম পয়গম্বর হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবন চরিতের উপর পুরোপুরিভাবে প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয় উপনিষদের মধ্যে পরিস্কার ভাবে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁকে আল্লাহর রসুল (বার্তাবাহক) বলা হয়েছে। পুরন ও উপনিষদে এও লা হয়েছে যে ঈশ্বর একজনই। তাঁর কোন অংশীদার নেই। তার মধ্যে ‘আল্লাহ’ শব্দ বার বার এসেছে। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মগ্রন্থেও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ব্যাপারে ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে ।
এই সত্যতার আলোকে মানবজাতিকে একসূত্রে বাঁধা এবং মানব জাতিকে শক্তিশালী করার জন্য সার্থক প্রয়াস চালানো যেতে পারে। এটা সময় সাপেক্ষ। এই দুঃসময় এবং সাম্প্রদায়িকতার আত্মঘাতী সময়ে এই সত্য মীলের পাথর প্রমাণ হতে পারে। ভাই ভাইকে গলায় মেলাতে পারে এবং এমন নৈতিক এবং সুধী সমাজ নির্মান করা যেতে পারে যেখানে হিংসা, শোষন, দমননীতি এবং ঘৃণার লেশমাত্র থাকবে না। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সমস্ত সত্যকে একসঙ্গে আপনাদের সম্মুখে প্রস্তুত করা যেতে পারে। এই প্রচেষ্টায় কতটুকু সফলতা আসবে তা আপনারই বলবেন। আশা করি এই সত্য মনের গভীরতায় প্রবেশ করিয়ে আমরা সবাইকে মানব কল্যানের জন্য প্রেরণ করব। এই পুস্তিকায় ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়ের লিখিত গ্রন্থ ‘নরাশংস আওর অন্তিম ঋষি ও ‘কল্কি অবতার আওর মুহাম্মাদ সাহব’ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য গ্রহ করা হয়েছে।
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং বেদ
বেদের মধ্যে ‘নরাশংস’ অথবা হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের যে ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে তা কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয় বরং ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ঈশ্বর প্রদত্ত দূত (পয়গম্বর) এর আগমনের ব্যাপারে বলা রয়েছে। এটা অবশ্যই চমৎকার ব্যাপার যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের ভবিষ্যৎবানী যত ভবিষ্যৎবানী বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থগুলিতে করা হয়েছে তত অন্য পয়গম্বরে ব্যাপারে করা হয়নি। ঈশাই (খ্রীষ্টান), ইহুদী এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে অন্তিম ঈশ্বর প্রদত্ত দূত রূপে আগমনের ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে।
বেদের ‘নরাশংস’ শব্দ ‘নর’ এবং ‘আশংস’ শব্দ মিলে তৈরী হয়েছে। ‘নর’ শব্দের অর্থ হল ‘মানুষ’ এবং ‘আশংস’ শব্দের অর্থ হল ‘প্রশংসিত’। সায়ন বলেছেন, ‘নরাশংস’ শব্দের অর্থ হল মানুষ দ্বারা প্রশংসিত।১ এই শব্দটি কর্মধারা সমাস যার সন্ধিবিচ্ছেদ হল নরশ্চাসৌ + আশংসঃ যার অর্থ প্রশংসিত মানুষ। ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় বলেছেন, “এইজন্য এই শব্দ কোন দেবতাকে বলা হয়েছে একথা মনে করা উচিৎ নয়। ‘নরাশংস’ শব্দটাই স্পষ্ট করে দেয় যে ‘প্রসংসিত’ শব্দ হল তার বিশেষন, অর্থাৎ সে মানুষ। যদি কেউ ‘নর’ শব্দটিকে দেববাচক মনে করে তাহলে তাদের বক্তব্যের সমাধানে এই কথা স্পষ্ট করে দেওয়া উচিৎ যে ‘নর’ শব্দটি দেবতাদের পর্যায়ক্রম শব্দও নয় এ দেবতাদের বংশানুক্রমিক কোন বিশেষ জাতিও নয়।”২
‘নর’ শব্দটি মনুষ্য প্রজাতির জন্য ব্যবহৃত হয়। কেননা ‘নর শব্দটি মানুষের সমার্থক শব্দ। ‘নরাশংস এর মতো ‘মুহাম্মদ’ শব্দের অর্থ হল ‘প্রশংসিত’। ‘মুহাম্মাদ’ শব্দ ‘হামদ’ ধাতু থেকে সৃষ্টি হয়েছে যার অর্থ হল ‘প্রশংসা করা’। ঋগ্বেদে ‘কীরি’ শব্দ এসেছে যার অর্থ হল ঈশ্বর প্রদত্ত প্রশংসিত। আহমদ শব্দেরও অনুরুপ অর্থ। আহমদ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আর একটি নাম।৩
বেদের মধ্যে ঋগ্বেদ সবথেকে প্রাচীন। এর মধ্যে ‘নরশংস’ দিয়ে শুরু হয়েছে এমন মন্ত্র সংখ্যা হল অটিটি। ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডলে ১৩ সুক্তে, তৃতীয় মন্ত্র এবং ১৮ সুক্ত, নবম মন্ত্র, ১০৬ সুক্ত, চতুর্থ মন্ত্রে ‘নরাশংসে’র বর্ণনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মন্ডলের তৃতীয় সুক্ত, পঞ্চম মন্ডলের পঞ্চম সুক্ত, দ্বিতীয় মন্ত্র, সপ্তম মন্ডলের দ্বিতীয় সুক্তের দ্বিতীয় মন্ত্র, দশম মন্ডলের ৬৪ তম সুক্তের তৃতীয় মন্ত্রে এবং ১৪২ নং সুক্তের দ্বিতীয় মন্ত্রের মধ্যেই ‘নরাসংস’ এর ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে। সামবেদ সংহিতার ১৩১৯ নং মন্ত্রে এবং বজসনেয়ী সংহিতার ২৮ অধ্যায়ের ২৭ নং মন্ত্রে নরাশংসের ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে। তৈত্তিরীয় আরণ্যক এবং শতপথ ব্রাহ্মন গ্রন্থ ছাড়াও যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদের মধ্যে ‘নরাশংসে’র উল্লেখ করা হয়েছে।
‘নরাশংসের চারিত্রিক গুনাবলীর সঙ্গে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাদৃশ্য
বেদের মধ্যে ‘নরশংসে’র স্তুতি বন্দনা করার উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিক সেই রকম ঋগ্বেদের কাল বা সেই সময়ে যজ্ঞের সময় ‘নরাশংস’কে আহ্বান করা হত। তাঁর জন্য ‘প্রিয়’ শব্দ ব্যাবহার করা হত। নরাশংসের চারিত্রিক গুণাবলী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাদৃশ্যতা নিম্নলিখিত।
১) বাণীর মধুরতাঃ ঋগ্বেদে নরাশংস’কে ‘মধুজিহ্ব’ বলা হয়েছে।৪ অর্থাৎ তাঁর বাণী হবে মধুর। সুন্দর বক্তব্য তাঁর ব্যাক্তিত্বের বিশেষ পরিচয় হুন করবে। সকলেই জানেন যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বক্তব্য ছিল অতি মধুর।
২) অপ্রত্যক্ষ জ্ঞানের অধীকারীঃ নরাশংসের জন্য বলা হয়েছে তিনি অপ্রত্যক্ষ জ্ঞানের অধীকারী হবেন। এই জ্ঞানের অধীকারীকে কবি কলা হয়। ঋগ্বেদ সংহিতায় ‘নরশংস’কে কবিও বলা হয়েছে।৫ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে আল্লাহ কিছু সময়ের জন্য পরোক্ষ কথা ব্যাপারে অবগত করান। তারপর মুহাম্মাদ (সাঃ) রেমবাসী এবং ইরানবাসীদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল সে সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন যে এতে রোমবাসীরা হেরে যাবে এবং তিনি নববর্ষের মধ্যে রোমবাসীরা যে বিজয়লাভ করবে সে ব্যাপারে ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন। নৈনবা লড়াইয়ে রোমসীরা ৬৫৭ সালে জয়লাভ করে। রোমবাসীর পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় বিজয়লাভ করার উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি অবিশ্বাসীদের উপর মুসলমানদের বিজয়ের ব্যাপারে তিনি ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন।
তিনি ঈশ্বরের অধীক প্রিয় এবং তিনি ঈশ্বরের ব্যাপারে জ্ঞানী ছিলেন। তিনি নবী ছিলেন। নবী’ শব্দ ‘না’ ধাতু থেকে তৈরী হয়েছে যার অর্থ হল বার্তাবাহক। মুহাম্মাদ (সাঃ) ঈশ্বরে বর্তাবাহক ছিলেন। আচার্য রজনীশের ভাষায় “তিনি ঈশ্বর পর্যন্ত পৌঁছানোর বাঁশী যাতে অন্য কেউ ফুক মারে।”
৩) সুন্দর দেহবিশিষ্ট শরীরঃ ‘নরাশংসে’র ব্যাপারে লা হয়েছে যে তিনি সুন্দর দেহবিশিষ্ট হবেন। এই বৈশিষ্টতা উল্লেখ করতে গিয়ে বেদে ‘স্বর্চি শব্দ কাহার করা হয়েছে।৬
‘স্বচি” শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ হল, “শোভনা অর্যিএর্যস্য সঃ” অর্থাৎ সুন্দর এবং কান্তিময়। এই শব্দের তাৎপর্য এটাই যে সুন্দর দেহবিশিষ্ট ব্যক্তি যার দেহ থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত হবে। ঋগ্বেদের মধ্যেই বলা হয়েছে যে তিনি তাঁর মাহাত্মের দ্বারা প্রতিটি ঘরকে প্রকাশিত করে দিবেন।৭ এটা স্পষ্ট যে মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রতিটি ঘরে জ্ঞানের জ্যাতি জ্বালিয়ে দেন এবং অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া লোকেদেরকে নতুনভাবে আলোকিত করেন।
ঋগ্বেদের মধ্যে বলা হয়েছে যে, “অহমিদ্ধি পতুস্পরি মেধামৃতস্য অগ্রভ। অহং সুর্য ইবাজনি।।”
সামবেদের মধ্যে বলা হয়েছে, “অহমিধি পিতুঃ পরিমেধামৃতস্য জগ্রভ। অহং সুর্য ইবাজনি। (সমবেদ, প্রঃ ২, দঃ ৬ মং ৮) অর্থাৎ অহমদ (মুহাম্মাদ) নিজের প্রভুর হিকমতের দ্বারা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা অর্জন করেছেন। আমি সূর্যের মতো আলোকিত হয়ে যাচ্ছি।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এতোই সুন্দর ছিলেন যে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর দিকে আকর্ষিত হত। এই পরিপ্রেক্ষিতে রেভারেন্ড বসওয়ার্থ স্মিথ ‘মুহাম্মাদ এ্যান্ড মুহাম্মাদনিজম’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, মুহাম্মাদের বিরোধীরাও তাঁর আকর্ষণ শক্তির জন্য তাঁর ব্যাক্তিত্বে প্রভাবিত হয়ে তাঁকে সম্মান করতে বাধ্য হত। সমস্ত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও মুহাম্মাদ সাহেব ঘরে ঘরে জ্ঞানের আলো প্রকাশ করেন।
৪) পাপ নিবারণকারীঃ ঋগ্বেদের মধ্যে ‘নরাংস’কে লোকেদের মধ্যে থেকে পাপকে নিবারণকার বলা হয়েছে।৮ এটা বলার কোন প্রযয়োজন নেই যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সমস্ত শিক্ষা এবং তাঁর উপর অবতারিত কুরআন সারা জীবনের পাপকে বিলুপ্ত করে দেয়। এটা সত্য পথের দর্পণ যাকে দর্শন করে এবং তার উপর আমল করে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যেতে পারে। তার পার্থিব এবং মৃত্যুর পর পারলৌকিক জীবন সুন্দর হতে পারে। ইসলাম জুযয়া, মাদক দ্রব্য এবং অন্যান্য নেশাজাতীয় পদার্থ থেকে লোকেদেরকে বাধাদান করে এবং অবৈধ পন্থায় উপার্জন করা খাদ্যদ্রব্য, সুদ নেয়া এবং মানুষের অধিকার হরণ করাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। ইসলাম অত্যাচার, দমননীতি এবং শোষনমুক্ত সমাজ স্থাপন করতে চায়।
৫) হজরত মুহাম্মাদ সাঃ এর স্ত্রীদের সংখ্যাঃ ‘নরাশংসে’র কাছে ১২ জন স্ত্রী থাকবে, এই কথা অথর্ববেদের সেই মন্ত্রেই রয়েছে যেখানে তাঁর আরোহণের জন্য উটের ব্যাবহারের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রটি হলঃ
উষ্ট্রা যস্য প্রবাহিনো বধুমন্তো দ্বির্দশ।
বর্ষ্মা রথস্য নি জহীডতে দিব ঈশমাণ উপস্পৃশঃ।
(অথর্ববেদ, কুন্তাপ সুক্ত, ২০/১২৭২)
অর্থাৎ যার যানের জন্য দুটি সুন্দর উটনি আছে। অথবা যিনি ১২ জন স্ত্রীসহ উটর উপর আরোহণ করবেন তার বাহন উচ্চতাসম্পন্ন হবে এক দ্রুততর আকাশ স্পর্শ করে নিচে নেমে আসবে।
এই মন্ত্রের অনুরুপ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ১২ জন স্ত্রী ছিল। তাঁর স্ত্রীদের নাম যথাক্রমে, (১) হজরত খাদীজা (রাঃ), (২) হজরত সৌদা (রাঃ), (৩) হজরত আয়েশা (রাঃ), (৪) হজরত হাফসা (রাঃ), (৫) হজরত উম্মে সালমা (রাঃ), (৬) হজরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) (৭) হজরত জয়নব বিনতে জাহাশ (রাঃ), (৮) হজরত জয়নব বিনতে খুযাইমাহ (রাঃ), (১) হ্যরত জুহাইরিয়া (রাঃ), (১০) হজরত সাফীয়া (রাঃ), (১১) হজরত রয়হানা (রাঃ) ও (১২) হজরত মাইমুনা (রাঃ) প্রভৃতি।৯ এখানে উল্লেখযোগ্য হল অন্য কোন ধার্মিক ব্যাক্তির ১২ জন স্ত্রী ছিল না হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কিছু মহাপুরুষের নিকট কোটি কোটি স্ত্রী থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
৬) স্থান নিরুপণঃ অথর্ববেদের উপরিউক্ত মন্ত্রে ‘নরাশংস’ দ্বারা আরোরণের ব্যাপারে উটের ব্যাবহারের কথা বলা হয়েছে। এখানে নরাশংসের পরিচয়ের সাথে তাঁর আসার স্থানের ব্যাপারেও স্পষ্ট বোঝা যায়। উটের উপর আরোহণের এটাই অর্থ যে ‘নরাসংস’ যে স্থানে জন্ম গ্রহণ করবেন সেখানে উটের সংখ্যা বেশী থাকবে। উট মরুভূমি এলাকায় বেশ পাওয়া যায়। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্ম আরবের মরুভূমি এলাকায় হয়েছিল।
৭) অন্যান্য বিশেষতাঃ অথর্ববেদর অলঙ্কারের মাধ্যমে নরাশংসের ব্যাপারে পরিচয় করানোর জন্য কতকগুলো কথা বলা হয়েছে।
কুন্তপ সুক্তে আছে, “ইদং জনা উপ শ্রুত নরাশংস ভবিস্যতে।”
এর অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে পন্ডিত ক্ষেম করণ দাস ত্রিবেদী লিখেছেন, “হে মানুষেরা! মনোযোগ দিয়ে শোন যে মানুষের মধ্যে প্রশংসিত পুরুষের মাহাত্ম বর্ণনা করা হবে।”১০
অন্য একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“এষ ইষায় মামহে শতং নিষ্কান্ দশ স্ত্রজঃ।
শ্ৰীনি শতান্যৰ্বতাং সহসস্ত্র দশ গোনাম।”
(অথর্ববেদ ১০/১২৭/৩)
অর্থাৎ ঈশ্বর মামহে ঋষিকে একশত সোনার মুদ্রা দান করবেন, দশ হাজার গাভী দান করবেন, তিনশত আর (ঘোড়া) দান করবেন এবং দশটি হার দান করবেন।
এখানে মামহে ঋষি বলতে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে একশত সোনার মুদ্রা দেবার অর্থ হল যে তাঁর কাছে এমন মহান একশত জন মানুষ থাকবেন যাঁরা চরিত্রে রত্নের মতো আলঙ্কৃত হবেন। হজরত মুহাম্মাদ যে শিক্ষা দান করতেন তা একশত জন ব্যক্তি সুরক্ষার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদেরকে “আসহাবে সুফফা’ বলা হত। তাঁরা নবীর শিক্ষাকে প্রচার করতেন এবং সুক্ষা করতেন।
ঠিক সেই রকম দশ হাজার গাভী দান করার অর্থ হল, ভাল ব্যক্তি প্রদান। এখানে ‘গাভী’ রুপক অর্থে ব্যাবহৃত হয়েছে যা সাধারণত ভাল ব্যাক্তির জন্য বোঝানো হয়েছে। শেষ জীবনে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শিক্ষার অনুসারীর সংখ্যা দশ হাজার ছিল। মক্কা বিজয়ের জন্য মদীনা থেকে গমন করার সময় তাঁর সাথীর সংখ্যা দশ হাজার ছিল। দশ হাজার সাথী নিয়ে যখন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কা পৌছলেন তখন কোন প্রকার যুদ্ধ ব্যাতিরেকে সেই সাথীরা (শত্রুক্ষের) কোন কিছু নষ্ট করেনি, সেজন্য সেই দশ হাজার ব্যক্তিকে গাভী বলা হয়েছে।
নরাশংসকে তিনশত আরবন দেওয়ার অর্থ হল, তাঁকে এমন বীর যোদ্ধা প্রদান করা হবে যাঁরা ঘোড়ার মতো দ্রুতগামী হবেন। ‘আরবন’ শব্দের অর্থ হল ঘোড়া। এটাও গাভীর মতো রূপক শব্দ। বদরের যুদ্ধে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথীর (সাহাবা) সংখ্যা ছিল তিন শত।
‘নরাশংস’কে দশটি ‘স্ত্রজ’ বা হার দেওয়ার অর্থ হল, তাঁকে দশজন এমন ব্যাক্তি দেওয়া হবে যাঁরা নরাশংসের গলার হারের মতো প্রিয় হবেন। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে এমন দশজন ব্যক্তি প্রদান করা হয়েছিল যাঁরা নাবীর জন্য প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিল। তাঁরা গলার হারের মতো মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সঙ্গে সর্বদা থাকতেন। তাদেরকে ‘আশারায়ে মুবাসসারা’ বলা হয়। তাঁরা হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সেই সাথী ছিলেন যাঁদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের নাম যথাক্রমেঃ হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ), হজরত ওমর ফারুক (রাঃ), হজরত উসমান বিন আফফান (রাঃ), হজরত তালহা (রাঃ), হজরত আলী (রাঃ), হজরত সাআদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ), হজরত সায়ীদ বিন জায়েদ (রাঃ), হজরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ), হজরত আবু উবাইদাহ বিন জাররাহ (রাঃ) এবং হজরত জুবাইর (রঃ) প্রভৃতি।
অথর্ববেদের একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, হে লোক সকল! এই (সুসংবাদ) মনোযোগ দিয়ে শোন, নরাসংসের প্রশংসা করা হবে। সাত হাজার নব্বই জন শত্রুর হাত থেকে হিজরতকারী (দেশত্যাগকারী), আমল প্রচারকারীকে আমি রক্ষা করব।’
ঋগ্বেদের একটি মন্ত্রে মামহে ঋষির দশ হাজার সাথীর বর্ণনা করা হয়েছে। মন্ত্রটি হল,
“অনন্তা সতপতিৰ্মামহে মে গাবা চতিষ্ঠো অসুরো মঘোনঃ।
ত্রৈবৃষ্ণো অগ্নে দশভিঃ সহস্ত্রৈশ্বানর ত্র্যরুণশ্চিকেত৷”
(ঋগ্বেদ, মন্ডল ৫, সুক্ত ২৭, মন্ত্র ১)
অর্থাৎ সত্যের পূজারী, অত্যন্ত বিবেকশীল, শক্তিশালী, দাতা মামহে ঋষি নিজের বাণীতে আমাকে আহ্বান করেছে। সর্বশক্তিমান, সন্ধ্যায় পরিপূর্ণ, সারা বিশ্বের কৃপাময় দশ হাজার সহযোগীর সাথে সে খ্যাতি করেছে।
এখানে মামহে ঋষি হলেন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)। ড. বৈদ প্রকাশ উপাধ্যায় মহাশয়ও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে মামহে ঋষি বলে মেনে নিয়েছেন।
পুরাণ থেকে প্রমাণ
ভবিষ্য পুরাণ এবং হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
শুধুমাত্র বেদেই নয় বরং পুরানের মধ্যেও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কর্মস্থল মরুভূমি এলাকায় হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ভবিষ্য পুরাণে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, অন্য দেশ থেকে একজন অনার্য নিজের বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আসবেন। তার নাম হবে ‘মুহাম্মাদ’। তিনি মরুভূমি এলাকায় আসনে।১২ এই অধ্যায়ের ৬,৭,৮ নং শ্লোকেও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্মস্থানসহ অন্যান্য গুণাবলীও কল্কি অবতারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে, যার বর্ণনা কল্কি পুরাণে রয়েছে। এব্যাপরে পরে আলোচলা করা হবে।
এখানে বলে রাখা উচিৎ যে ভবিষ্যপুরাণে বেশ কয়েকজন নবীর (ঈশদূত) জীবনচরিত বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামের ব্যাপরেও বিস্তৃত অধ্যায় রয়েছে। এই ভবিষ্যপুরাণের মধ্যে স্পষ্টভাবে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে ‘মহামদ আচার্যের’ নামের সঙ্গে ‘মুহাম্মাদ’ শব্দের সাদৃশ্যতা রয়েছে। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বর্ণনার সঙ্গে অন্যান্য ব্যাপারেও একেবারে খাপ খেয়ে যাচ্ছে। এখানে কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যপুরাণ অনুযাযয়ী সাতবাহন বংশের রাজা ভোজ ভুবন জয় করতে গিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে আরব পৌঁছে যাবে। সেই সময় উচ্চ সম্মানীয় জ্ঞানী শিষ্যদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে মহামদ (হজরত মুহাম্মাদ) নামী বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হবে। (প্রতিসর্গ পর্ব ৩, অধ্যায় ৩, খন্ড ৩, কলিযুগের ইতিহাস সমুচায়)।
ভবিষ্যপুরাণে আরও বলা হয়েছে,
“লিঙ্গচ্ছেদী শিখাহীনঃ শ্মশ্রুধারী সে দূষক।
উচ্চালাপী সর্বভক্ষী ভবিষ্যতি জমোমম।। ২৫
বিনা কৌলংচ পশবস্তেষাং ভক্ষ্যা মতা মম।
মুসলেনৈব সংস্কারঃ কুশরিব ভবিষ্যতি || ২৬
তম্মান্মুসলবন্তো হি জাতয়ো ধৰ্ম্ম দুষকাঃ।
ইতি পৈশাচধমশ্চ ভষ্যিতি ময়াকৃতঃ॥২৭
(ভবিষ্য পুরণ, পর্ব ৩, খন্ড ৩, অধ্যায় ১ কে ২৫/২৬/২৭)
এই শ্লেকের ভাবার্থ হল – ‘আমার অনুসরণকারী লিঙ্গের ত্বকছেদন (খতনা) করবে। সে টিকিহীন ও দাড়ি বিশিষ্ট হবে; সে এক বিপ্লব আনবে। সে উচ্চস্বরে ধ্বনি (আজান) করবে। সে সর্বপ্রকার ভক্ষদ্রব্য (হালাল দ্রব্য) ভক্ষণ করবে; সে শূকর মাংস আহার করবে না। সে তৃলতা দ্বারা পূত পবিত্র হবে। ধর্মদ্রোহী জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সে মুসলমান নামে পরিচিত হবে। আমার দ্বারা এই মাংসহারীদের ধর্ম স্থাপিত হবে এবং পৈশাচিক ধর্মের নাশ হবে।’
ভবিষ্যপুরাণের এইসব ভবিষ্যৎবানীগুলির সকল বিষয়বস্তু এতই স্পষ্ট যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপরেই ফিট হয়ে যায়। তাঁর অন্তিম ঋষি হওয়ার ব্যাপারে একেবারে স্পষ্ট হয়ে যায়। এরকম আশঙ্কা করা উচিৎ নয় যে এই পুরাণগুলি ইসলামের আগমনের পর রচনা করা হয়েছে। বেদ এবং অন্যান্য পুরাণের মধ্যে কিছু পুরাণ ইসলামের আগমনের অনেক আগের রচনা।
সংগ্রাম পুরাণের ভবিষ্যৎবাণী
সংগ্রাম পূরাণকেও পূরাণের মধ্যে গণনা করা হয়। এই পুরাণের মধ্যে ঈশ্বরের অন্তিম দূত এবং পয়গম্বর হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের ভষ্যিৎবাণী করা হয়েছে। পন্ডিত ধর্মবীর উপধ্যায় তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘অন্তিম ঈশদূত’১৩ এর মধ্যে লিখেছেন, “কাগভসুণ্ডী এন্তু গরুড় দুজনেই রমের সেবার জন্য দীর্ঘকাল অবধি ছিল। তাঁরা তাঁর উপদেশ কেবল শ্রবণ করেই ক্ষান্ত হননি বরং লোকেদারকেও শোনাতেন। তুলসীদাস তাঁর সংগ্রাম পুরাণের অনুবাদে তাঁর উপদেশের আলোচনা করেছেন যেখানে শঙ্কর নিজের পুত্র ষন্মুখকে আগামী ধর্মের অবতর (ঈশ্বদূত) এর ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। অনুবাদটি হল,
ইহা না পক্ষপাত কছু রাখহুঁ।
বেদ, পুরাণ, সন্ত সত ভাখহুঁ
সংবত বিক্রম দোউ অনঙ্গা।
মহাকোক নস চতুর্পতঙ্গা।।
রাজনীতি ভব প্রীতি দিখাবৈ।
আপন মত সবকা সমঝাবৈ।।
সুরন চতুসুদর সতচারী।
তিনকো বংশ ভয়ো অতি ভারী।।
তব তক সুন্দর মদ্দিকোয়া।
বিনা মহামদ পার না হোয়া।।
তবসে মানহু জন্তু ভিখারী।
সমরথ নাম এহি ব্রতভারী।।
হর সুন্দর নির্মান না হোই।
তুলসী বচন সত্য সচ হোই।।
(সংগ্রাম পুরাণ, স্কন্দ ১২, কান্ড ৬: পদ্যানুবাদ, গোস্বামী তুলসীদাস)
পন্ডিত ধর্মবীর উপাধ্যায় এর ভাবানুবাদ এইরকম করেছেন,
“(তুলসীদাস বলেছেন) আমি এখানে কোনপ্রকার পক্ষিপতি পন্থা অবলম্বন না করে সম্ভ, বেদ এবং পুরাণের মতামতগুলি বর্ণনা করেছি। সপ্তম বিক্রমী শতাব্দীতে চারটি সূর্যের প্রকাশের সঙ্গে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন। রাজত্ব করার জন্য যেরমকই পরিস্থিতি হোক না কেন, প্রেমের দ্বারা অথবা কঠিনভাবে তিনি নিজের মতামতকে লোকেদেরকে বুঝাতে সক্ষম হবেন। তাঁর সঙ্গে চারজন দেবতা (সহযোগী) থাকবেন, তাঁদের সহযোগীতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সুন্দর বাণী (কুরআন) পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে (তাঁর) এবং মহামদ (হজরত মুহাম্মাদ সাঃ) ছাড়া মুক্তির কোন উপায় থাকবে না। মানুষ, ভিখারী, কীট-পতঙ্গ এবং জন্তু জানোয়ার সেই ব্রতধারীর (হজরত মুহাম্মাদ) নাম স্মরণ করা মাত্রই ঈশ্বরের ভক্ত হয়ে যাবে। তারপর তার মতো আর কেউ সৃষ্টি হবে না (অর্থাৎ আর কোন রসুল আসবে না), তুলসীদাস বলেছেন যে, তাঁর বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হবে।”১৪
কল্কি অবতার এবং হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
সংস্কৃত ভাষার প্রখ্যাত জ্ঞানী ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় তাঁর একটি বইয়ের মধ্যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে কল্কি অবতার বলছেন। কল্কি এবং হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বৈশিষ্টকে তুলনামূলক অধ্যায়ন করে ড. উপাধ্যায় এটা প্রমাণ করেছেন যে কল্কি অবতার জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনি অন্য কেউ নন স্বয়ং হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)। সেই বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, “বৈজ্ঞানিক আনবিক বিস্ফোরণের দ্বারা বিশ্বের যে ধ্বংসলীলা সংঘটিত হচ্ছে তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধ একমাত্র ধর্মীয় ঐকতার দ্বারাই সম্ভব। জলে বসবাস করে কুমিরের সাথে শত্ৰতা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সেজন্য আমি ধর্মীয় মাধ্যমকে গ্রহণ করেছি। রাষ্ট্রীয় একতার প্রারকগণ নিশ্চয় এতে কোন আপত্তি করবেন না। একমাত্র কূপমণ্ডক সংকীর্নমনা হীন চরিত্রের ব্যক্তি আপত্তি করতে পারে।”…… আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে আমার এই গ্রন্থ অধ্যায়ন করার ফলে সর্বভারতীয় সমাজ তথা নিখিল বিশ্বে সার্বিক একতা গড়ে উঠবে এবং ধর্মীয় কলহ ও দ্বন্দ দূরীভূত হবে।”
এখানে সেই বইয়ের কিছু বিশেষ অংশ এবং অন্যান্য সূত্র থেকে সেই সম্পর্কিত কিছু তথ্য পেশ করা হচ্ছে।
‘অবতার’ শব্দের অর্থ
“অবতার শব্দ ‘অব’ এর ‘তৃ ধাতুতে ঘঅ প্রত্যয় যোগ করে উৎপন্ন হয়েছে। অবতর শব্দের অর্থ হল পৃথিবীতে আগমন। ‘ঈশ্বরের অবতার’ শব্দের অর্থ হল সকলকে ঐশী প্রত্যদেশ সম্পর্কে জ্ঞান দানকারী এমন মহান ব্যাক্তি যিনি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করবেন। কল্কি অবতারকে ঈশ্বরের অন্তিম অবতার বলা হয়েছে। । ‘ঈশ্বরের অবতার’ শব্দে এর ‘শব্দ’ সম্বন্ধসূচক চিহ্ন। অতএব এটা প্রকাশ্য যে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী ব্যক্তির পৃথিবীতে অবতীর্ন হওয়া। ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী কারা? তার ভক্তের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে। ঋগ্বেদের মধ্যে এইরকম ব্যক্তিকে ‘কীরি’ বলা হয়েছে। বাংলায় এবং হিন্দীতে ‘কীরি’ শব্দের অর্থ হল ‘ঈশ্বরের দ্বারা প্রশংসিত’ এবং এর আরবী অনুবাদ হল ‘আহমদ’। কিন্তু ঈশ্বরের প্রশংসিত কীরি’ বা ‘আহমদ’ কি একটাই শব্দ নয়। প্রত্যেক দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবতার এসেছেন কিন্তু একটি মাত্র অবতার দ্বারা সারা বিশ্বের কল্যান সম্ভব হতে পারে না। কুরআন শরীফে আছে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রসুল বা অবতার পাঠানো হয়েছে। তবে অন্তিম অবতার কল্কির মধ্যে আলাদা বিশেষণ রয়েছে। তিনি পৃথিবীর কোন একটি সম্প্রদায়ের জন্য নয় বরং তিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন।
যখন মানুষ ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে অধর্মের দিকে চালিত হয় বা ধর্মকে নিজের স্বার্থ অনুযায়ী বিকৃত করে দেয় তখন মানুষকে পুনরায় সঠিক পথ দেখাবার জন্য ঈশ্বর অবতার বা পয়গম্বর প্রেরণ করেন।
অন্তিম অবতারের লক্ষণ
কল্কি অবতারের আগমনের সময় সেই সময়কে বলা হয়েছে যখন বর্বরতার সাম্রাজ্য হবে। লোকেদের মধ্যে হিংসা এবং অরাজকতা বিরাজ করবে। গাছের মধ্যে কোন ফল বা ফুল থাকবে না। যদি ফল ফুল হয়ে থাকে তবে খুব কম হবে। মানুষকে খুন করে তাদের সম্পত্তি লুঠন করা হবে এবং কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হবে। এক ঈশ্বরকে ছেড়ে বহু দেব দেবীর উপাসনা করা হবে। গাছপালাকে ভগবান মনে করার প্রবৃত্তি মানুষের মনে তৈরী হবে, ভালো কাজের আড়ালে খারাপ কাজ করার প্রবৃত্তি তৈরী হবে, বিচ্ছিন্নতাবাদ ইত্যাদিতে ভরে যাবে। ঠিক সেই সময় হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে পাঠানো হয়েছিল।
সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে রোমান এবং পারসীয়ান সাম্রাজ্যের যে জঘন্য পরিস্থিতি ছিল এত খারাপ পরিস্থিতি আর কখনো ছিল না। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ক্ষীণ হয়ে যাবার ফলে শাসন ব্যাবস্থা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পাদ্রীদের দুষ্কর্মের জন্য খ্রীষ্টান ধর্ম সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে পড়েছিল। পারম্পরিক সংঘর্ষ এবং শত্রুতার জন্য পরিস্থিতি একেবারে ক্ষীন হয়ে পড়েছিল। সেই সময় হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে পাঠানো হয়েছিল । ইসলাম ধর্ম রোমান সাম্রাজ্যের সংঘর্ষ থেকে অনেক দুরে ছিল। এই ধর্মের ভাগ্যে এটাই লেখা ছিল যে তুফানের গতিতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দী বহু সাম্রাজ্যকে, শাসকদিগকে এবং সামাজিক কুপ্রথাকে এমনভাবে উড়িয়ে দেবে ঝঞ্ঝা যেরকম মাটিকে উড়িয়ে দেয়।১৫ এই কথা সেল সাহেব কুরআন শরীফের অনুবাদের ভূমিকায় লিখেছেন, “গির্জার পাদ্রীরা ধর্মকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল এ সমস্ত প্রকার শান্তি প্রেম এবং যা কিছু ভাল ছিল তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। লোকেরা মূল ধর্ম ভূলে গিয়েছিল।
ধর্মের নামে তারা নিজেরাই বিভিন্ন মতবাদ তৈরী করে নিজেদের মধ্যে আত্মকলহে লিপ্ত ছিল। এই ধরাপৃষ্ঠে রোমান গির্জাঘরের মধ্যে ধর্মের নামে ভ্রান্ত মতবাদ প্রসারিত হতে শুরু হয় এবং নির্লজ্যভাবে মূর্তপুজা করা হয়।১৬ এর ফলস্বরুপ একটি ঈশ্বর স্থানে তিনজন ঈশ্বর পুজা শুরু হয় এবং হজরত মরিয়ম (আঃ) ঈশ্বরের মা বলে মনে করা হয়। অজ্ঞতার এই চরম সময়ে আল্লাহ নিজের অন্তিম রসুল (অবতার) প্রেরণ করেন।
এখানে দ্বিতীয় কথা হল, অন্তিম অবতার সেই সময় আসবেন যখন যুদ্ধের সময় তরবারির ব্যাবহার করা হযবে এবং ঘোড়ার উপর যাতায়াত হবে। ভগবত পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে, “দেবতার দ্বারা প্রদত্ত দ্রুতগামী ঘোড়ায় আরোহন করে আটটি ঐশ্বর্যে এবং পরিপূর্ণ সেই জগৎপতি দুষ্টদেরকে দমন করবেন।১৭ তরবারি এবং ঘোড়ার যুগ তো এখন শেষ হয়ে গেছে। আজ থেকে প্রায় চাদ্দশত বছর আগে ঘোড়া এবং তরবারীর ব্যাবহার করা হত। এর একশত বছর পর সোডা এবং কয়লার সংমিশ্রনে বারুদের নির্মান হয়। বর্তমান যুগে ঘোড়া এবং তরবারীর জায়গায় ট্যাঙ্ক এবং মিশাইল ব্যাবহার করা হয়।
কল্কি অবতারের স্থান
কল্কি পুরাণ এবং ভগবত পুরাণে কল্কি অবতারের জন্মস্থান ‘শন্তল’ নামক গ্রামে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে প্রথমে এটা নিশ্চিত করা উচিৎ যে ‘শন্তল’ কোন গ্রমের নাম না কোন গ্রামের বৈশিষ্ট। ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়ের মত অনু্যায়ী ‘শন্তল’ কোন গ্রামের নাম হতে পারে না, কেননা যদি শন্তল কোন গ্রামের নাম হত তাহলে তার সেই গ্রামের অবস্থান সম্পর্কেও বলা হত। ভারতে খোঁজাখুজির পর যদি ‘শন্তল’ নামক কোন গ্রামের নাম পওয়া যায় তাহলে সেখানে প্রায় পনেরোশত বছর আগে কোন মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেনি যিনি মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য অবর্তীন হয়েছেন। তাহলে অন্তিম অবতার তো কোন খেলার বস্তু নয় যে তিনি অবতারিত হবেন এবং সমাজে কোন পরিবর্তন হবে না, অতএব ‘শন্তল’ শব্দের বৈশিষ্ট মেনে নিয়ে তার বুৎপত্তিগত অর্থের বিচার করা প্রয়োজনীয়,
১) শম্ভল’ শব্দ ‘শন’ ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়েছে অর্থাৎ যে স্থানে শান্তি লাভ হয়।
২) সম্, উপসর্গ পৃথক ‘ব’ ধাতুতে অপ প্রত্যয় যোগ করে ‘সংবর’ হয়েছে। “অবয়োব ভেদঃ’ এবং, “য়লযোর ভেদঃ’ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘শন্তল’ উৎপন্ন হয়েছে। যার অর্থ হল – যা নিজের প্রতি অন্যকে আকৃষ্ট করে অথবা যার দ্বারা অন্যকে নির্বাচিত করা হয়।
৩) নির্ঘন্টের (১/১২/৮৮) উদকনামা অধ্যায়ে ‘শন্তর’ শব্দ লেখা আছে। ‘র’ এবং ‘ল’ এর মধ্যে মূলগত কোন পার্থক্য না থাকার জন্য ‘শন্তল’ এর অর্থ হবে – জলের সমীপবর্তী স্থান।১৮
ঠিক সেই রকম সেই স্থানের আসেপাশে জল থাকবে এবং সেই স্থান অত্যন্ত আকর্ষিত এবং শান্তিদায়ক হবে, সেই জায়গাটাই হল ‘শন্তল’। অবতারের স্থান পবিত্র হয়। ‘শন্তল’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল – শান্তির জায়গা। মক্কাকে আরবীতে “দারুল আমান’ কলা হয়, যার অর্থ হল শান্তির ঘর। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কর্মস্থল ছিল মক্কা।
জম্ন তিথি
কল্কি পুরাণে অন্তিম অবতারের জন্মের উল্লেখ করা হয়েছে । সেই পুরাণে দ্বিতীয় অধ্যায়ে ১৫ নং শ্লোকে আছে,)
“দ্বাদশ্যাং শুক্ল পক্ষস, মাধবে মাসি মাধবম্।
জাতো দদৃশতুঃ পুত্রং পিতরৌ হ্রষ্টমানসৌ।”
অর্থাৎ “যার জন্ম নেওয়ার ফলে দুখী মানবজাতির কল্যান হবে, তার জন্ম হবে বসন্ত কালের শুক্লপক্ষে এবং রবিশষ্যের সময়ে চাঁদের ১২ তারিখে।”
অন্য একটি শ্লোকে আছে, কল্কি শম্ভল গ্রামে ‘বিষ্ণুযশ’ নামক পুরোহিতের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করবেন।১৯ পক্ষান্তরে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্মও ১২ রবিউল আওয়াল হয়েছিল। রবিউল আওয়াল শব্দের অর্থ হলঃ মাধব মাস বা বসন্ত কাল। তিনি মক্কাতে জন্মগ্রহণ করেন। কল্কি অবতারের পিতার নাম ‘বিষ্ণুযশ’ বলা হয়েছে, আর হজরত মুহাম্মাদের পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ। ‘বিষ্ণুযশ’ শব্দের যা অর্থ আব্দুল্লাহ শব্দের তাই অর্থ। বিষ্ণু মনে আল্লাহ এবং যশ মানে হল বান্দা = অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা = আব্দুল্লাহ।
অনুরুপ কল্কি অবতারে মায়ের নাম বলা হয়েছে সুমতি, যার অর্থ হলঃ শান্তি এ মননশীল স্বভাবযুক্তা। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মায়ের নাম ছিল আমীনা, যার অর্থ হলঃ শান্তিময়ী।
অন্তিম অবতারের বৈশিষ্ট
কল্কি অবতারের বৈশিষ্টের ও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনচরিতের সাথে হুবহু মিলে যায়। এই বৈশিষ্টগুলোকে তুলনামূলকভাবে নিচে আলোচনা করা হচ্ছে,
১) অশ্বারোহী এবং খড়গধারীঃ আগেই বলা হয়েছে যে ভগবৎপুরাণে কল্কি অবতারের ব্যাপারে অশ্বারোহী এবং খড়গধারী হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এমন ঘোড়ায় আরোহন করবেন যেটা খুব দ্রুতগামী হবে এবং তা দেবতা প্রদত্ত হবে। তরবারীর দ্বারা তিনি দুষ্টের দমন করবেন। ঘোড়ায় আরোহন করে তিনি দুষ্টের দমন করবেন। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কেও ফেরেস্তা দ্বারা গোড়া দান করা হয়েছিল, যার মান ছিল বুরাক। তাতে চড়ে অন্তিম রসুল রাত্রি বেলায় তীর্থযাত্রায় বেরিয়েছিলেন। এই যাত্রাকে ‘মিরাজ’ বলা হয়। এই রাতে তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁকে বাইতুল মুকাদ্দাসেও (জেরুজালেম) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ঘোড়া হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রিয় জন্তু ছিল। তাঁর কাছে সাতটি ঘোড়া ছিল। হজরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ঘোড়ায় আরোহন করে গলায় তরবারী ঝুলানো অবস্থায় দেখেছি।”২০ তাঁর কাছে ৯ টি তরবারী ছিল। বংশ পরম্পরায় তিনি জুলফিকার, কালীয়া নামক তরবারী পেয়েছিলেন।
২) দুষ্টের দমনঃ কল্কি অবতারের মুখ্য বৈশিষ্ট্রের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট হল যে তিনি দুষ্টকে দমন করবেন।২১ ধর্মের প্রচার এ দুষ্টকে দমন করার জন্য আকাশ থেকে দেবতাগণ অবতরণ করবেন।২২ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দুষ্টদের দমন করেন। তিনি ডাকাত, লুণ্ঠনকারী, এবং দুর্বত্তগণকে সংশোধন করে মানবতার শিক্ষা দান করেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেন। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকেদের সংশোধন করে সুন্দর সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে থাকার উপযোগী বানান। একেশ্বরবাদের সাথে সাথে তিনি সমস্ত দেবতাদের তালগোল পাকানো ব্যাবস্থাকে খন্ডন করেন এবং বলেন যে ইসলাম কোন নতুন ধর্ম নয় বরং এটা সনাতন ধর্ম। দুষ্টকে দমন করার সময় তাঁকে ফেরেস্তাদের দ্বারা সাহায্য করা হয়। কুরআন মজীদে আল্লাহ বলেছেন যে, আল্লাহ তোমাকে বদরের যুদ্ধে সহযোগিতা করেন এং তোমরা সংখ্যায় খুব কম ছিলে, তাহলে তোমাদের উচিৎ যে আল্লাহকে ভয় করা এবং তার শুকরিয়া আদায় করা। যখন তোমরা মোমেনদিগকে বলছিলে যে আল্লাহ যে তোমাদেরকে তিন হাজার ফেরেস্তা দিয়ে সাহায্য করেছেন তা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? বরং যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর ও সংযমী হও এবং তারা যদি স্বেচ্ছায় তোমাদের প্রতিপালক পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ফেরেস্তা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।২৩
সুরা আহযাব এর মধ্যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ঐশ্বরিক ভাবে সাহায্য করার কথা কলা হয়েছে। এই সুরার ৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর সেই কৃপাকে স্মরণ কর যখন তোমাদের বিরুদ্ধে সেনা এসেছিল তখন আমরাও তাদের বিরুদ্ধে আকাশপথে সেনা প্রেরণ করি, যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি আর যা কিছু তোমরা করছিলে আল্লাহ তা দেখছিলেন।” এইভাবে দুষ্টকে নাশ করার জন্য ঈশ্বর হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সাহায্য করার জন্য নিজের ফেরেস্তা এবং সেনা প্রেরণ করেন।
৩) জগদপতি বা জগদগুরুঃ পতি শব্দ ‘পা’ (রক্ষা করা) ধাতুর সাথে উতি প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন হয়েছে। জগৎ শব্দের অর্থ হল ব্রহ্মাণ্ড। অতএব জগদপতি শব্দের অর্থ হল সমগ্র ব্রাহ্মান্ডের রক্ষাকারী। ভগবৎপুরাণে কল্কি অবতরকে ‘জগদপতি’ বলা হয়েছে।২৪
হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) জগদপতি২৫ বা জগদগুরু ছিলেন, কেননা তিনি পতনশীল সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন। সেগুলোকে রক্ষা করেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেন । কুরআন শরীফে আছে : “হে মুহাম্মাদ ঘোষনা করে দাও তুমি সমগ্র বিশ্ব জাহানের নবী।”২৬ অন্য জায়গায় আছে : “অত্যন্ত বরকতময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার উপর পবিত্র গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন যাতে তিনি সমগ্র বিশ্ব ব্ৰহ্মান্ডকে পাপ থেকে ভীতি প্রদর্শণ করতে পারেন।”২৭
৪) চারজন ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তঃ কল্কি পুরাণ অনুযায়ী চারজন ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে কল্কি কলি (শয়তান) দমন করনে।২৮
মুহাম্মাদ (সাঃ)ও চারজন সঙ্গীর সহযোগিতায় শয়তানকে দমন করেন। সেই চার সাথী যথাক্রমে, হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ), হজরত ওমর ফারুক (রাঃ), হজরত উসমান গনী (রাঃ) এবং হজরত আলী (রাঃ) ছিলেন।
৫) অন্তিম অবতারঃ কল্কিকে অন্তিম যুগের অন্তিম অবতার কলা হয়েছে।২৯ মুহাম্মাদ (সাঃ)ও ঘোষণা করেছিলেন যে আমি অন্তিম রসুল।
‘বাচস্পত্যম’ এবং ‘শব্দকল্পতরু’ গ্রন্থে কল্কি শব্দের অর্থ বলা হয়েছে যে আনার বা ডালিম ফল ভক্ষণকারী এবং কলঙ্ক ধৌতকারী। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ও ডালিম বা খেজুর ফল খেতেন এবং তিনি প্রচীন কাল থেকে প্রচলিত অংশীবাদীতা (শির্ক) এবং নাস্তিকতা (কুফর)কে ধৌত করেন।”৩০
৬) উপদেশ এবং উত্তর দিকে এ গমনঃ কল্কি জন্মগ্রহণের পর পাহাড়ের দিকে চলে যাবেন এবং সেখানে তিনি পরশুরামের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করন। পরে তিনি উত্তর দিকে প্রত্যাবর্তন করনে। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এ জন্মের কিছু দিন পরে পাহাড়ে (হেরা গুহায়) চলে গিয়েছিলেন একু সেখানে জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর জ্ঞান অর্জন করেন। তারপর তিনি উত্তরে মদীনা গিয়ে সেখান থেকে দক্ষিণ দিকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং নিজের স্থানকে বিজয় করেন। পুরাণে কল্কি অবতারের ব্যাপারে এই কথাই লেখা আছে।
৭) আটটি গুনে গুণান্বিতঃ কল্কি অবতাকে ভগৎপুরাণের ১২ শ স্কন্দ, দ্বিতীয় অধ্যায়ের মধ্যে ‘অষ্টৈশ্বর্যগুণান্বিত’ (আটটি গুণে গুণান্বিত) বলা হয়েছে। এই আটটি ঈশ্বরীয় গুণ মহাভারতেও উল্লেখ করা হয়েছে, সেই গুণগুলি হল যথাক্রমে,
- (ক) তিনি মহান জ্ঞানী হবেন।
- (খ) তিনি উচ্চ বংশীয় হন।
- (গ) তিনি ইন্দ্রিয় দমনকারী হবেন।
- (ঘ) তিনি শ্রুতিজ্ঞানী হর্নে।
- (ঙ) তিনি পরাক্রমী হবেন।
- (চ) তিনি অল্পভাষী হবেন।
- (ছ) তিনি দানী হবেন।
- (জ) কৃতজ্ঞতাসম্পন্ন হন।৩১
এখন আমরা হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর এই গুণগুলিকে নিয়ে যথাক্রমে আলোচনা করব। মুহাম্মাদ (সাঃ) মহান জ্ঞানী ছিলেন। আঁর মধ্যে গভীর প্রজ্ঞা ছিল।
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদান করেন যেগুলি হুবহু সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
আগেই বলা হয়েছে যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে রেমবাসীরা প্রথমে হেরে যাবে এবং পরে বিজয় লাভ করবে। তাঁর দূরদর্শীতার অনেক উদাহরণ রয়েছে যাতে তাঁর উচ্চ জ্ঞান সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে বোঝা যায়।
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) উচ্চ বংশে জন্মলাভ করেন। তাঁর জন্ম কোরেশ বংশে বনু হাশিম পরিবারে হয়েছিল যাঁরা আরবদের নিকট সম্মানীয় এবং কাবার পরম্পরাগত ভাবে সংরক্ষক ছিলেন।
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ইন্দ্রিয়দমনের ও আত্মনিয়ন্ত্রনের গুণ ঐশ্বরিকভাবে দেওয়া হয়েছিল। তিনি আত্মপ্রশংসা থেকে দুরে থাকতেন এবং তিনি দয়ালু, শান্ত, ইন্দ্রজীৎ এবং উদার ছিলেন।৩২
তিনি শ্ৰতিজ্ঞানীও ছিলেন। শ্রুত এর অর্থ হল, “যিনি ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান এবং ঋষিদের দ্বারা শুনতে পান।” মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর জিব্রাইল নামক ফেরেস্তার মাধ্যমে ঐশ্বরিক জ্ঞান প্রদান করা হত । লেনপুল নিজের পুস্তক “Introduction; Speeches of Muhammad” এর মধ্যে লিখেছেন যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দেবদুতের সহযোগিতায় ঈশ্বরীয় বাণী প্রেরণ করার ঘটনা একেবারে নিঃসন্দেহে সত্য। স্যার উইলিয়ম মুরও লিখেছেন যে তিনি (মুহাম্মাদ) ঈশ্বরের প্রতিনিধি ছিলেন।৩৩
আটিটি গুণের মধ্যে পঞ্চম গুণ হল পরাক্রমশীলতা। রসুলুল্লাহ (সাঃ) যথেষ্ট পরাক্রমশালী ছিলেন। তাঁর এই পরাক্রমশীলতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ড. বেদ প্রকাশ উপধ্যায় একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন সেটা হল, ‘কোরেশ কশীয় রুকানা পালোয়ান একটি গুহার মধ্যে উপস্থিত ছিল। তাকে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ঈশ্বরকে ভয় না করার এবং তার উপর বিশ্বাস না করার কারণ জানতে চাইলেন। তখন পালোয়ান ঈশ্বরের সত্যতার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তখন মুহাম্মাদ (সাঃ) কললেন, তুমি বড় বীরপুরুষ, যদি তোমাকে কুস্তিতে হারিয়ে দিতে পরি তাহলে তুমি (আল্লাহকে) বিশ্বাস করবে? রুকানা তাতে রাজী হয়ে গেল। তখন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাকে হারিয়ে দিলেন। (আল্লামা কাজী সালমান মনসুরপুরী তাঁর নবীর জীবনী গ্রন্থ ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ এর মধ্যে ‘শিফা’ নামক পুস্তকের ৬৪ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) রুকানাকে তিনবার পরাস্ত করেন, তবুও রুকানা পালোয়ান হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে পয়গম্বর বলে মানেনি এবং ঈশ্বরকে সত্য বলে বিশ্বাস করেনি।
আটিটি গুণের মধ্যে অল্পভাষীও হল একটি গুণ। আল্লাহর রসুল (সাঃ) কম কথা বলতেন। অধিক সময় তিনি চুপ থাকতেন কিন্তু তিনি যা বলতেন তা এতই প্রভাবশালী ছিল যে লোকেরা তা কখনো ভুলত না।৩৪
দান করা মহাপুরুষের একটি অন্যতম মহান গুণ। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দানকার্য থেকে কখনো পিছু হটতেন না। সেইজন্য তাঁর ঘরে গরীব লোকের ভীড় লেগেই থাকতো। তাঁর ঘর থেকে কেউ কখনো নিরাশ হয়ে ফিরে যায়নি।
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর গুণের মধ্যে কৃতজ্ঞতাসম্পন্ন একটি মহান গুণ ছিল। তিনি কারো উপকার কখনো ভুলতেন না। আনসারদের প্রতি তাঁর বাণী কৃতজ্ঞতা সম্পন্নতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।৩৫ সুতরাং এটা প্রমাণ হয়ে গেল যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মধ্যে ঐশ্বরিক অটিটি গুণ ছিল।
৮) শরীর থেকে সুগন্ধী বের হওয়াঃ ভগবৎপুরাণে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে যে কল্কি অবতারের শরীরে এমন সুগন্ধী বের হবে যাতে লোকের মোহিত হয়ে যাবে। তাঁর শরীর থেকে সুগন্ধী বের হয়ে লোকেদের মনকে নির্মল করে দেবে।৩৬ ‘শামায়েলে তিরমিযী’ নাম গ্রন্থে লেখা আছে যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শরীরে খুশবু বের হওয়াটাতো প্রসিদ্ধ বটেই বরং মুহাম্মাদ (সাঃ) যাঁর সঙ্গে হাত মেলাতেন তার হাত থেকে সারাদিন সুগন্ধী বের হত।”৩৭ একবার হজরত উম্মে সুলৈত হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শরীরের ঘামকে জমা করেন। নবী (সাঃ) এর জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন, আমরা এই ঘামকে সুগন্ধীর সঙ্গে মিশ্রন করে দিই কেননা এই ঘাম সমস্ত সুগন্ধীদ্রব্যের থেকেও উত্তম।
৯) অনুপম এবং কান্তিময় হওয়াঃ কল্কি অবতার অনুপম এবং কান্তিময় হবেন।৩৮ বুখারী শরীফের হাদীস অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সাঃ) সমস্ত ব্যাক্তিদের থেকেও দৈহিকভাবে সুন্দর ছিলেন এবং সকলের থেকে অধিক মর্যাদাবান এক যোদ্ধা ছিলেন।৩৯ স্যার উইলিয়াম মুরও হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে অতি রুপবান, পরক্রমী এবং দানী বলেছেন।৪০
১০) ঐশ্বরিক বাণী দ্বারা আদিষ্ট হওয়াঃ ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় ‘কল্কি অবতার আউর মুহাম্মাদ সাহব’ এর ৫০, ৫১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “কল্কির ব্যাপারে ভারতে একথা প্রসিদ্ধ যে তিনি যে ধর্ম স্থাপন করবেন সেটা হবে বৈদিক ধর্ম এবং তাঁর দ্বারা প্রদত্ত শিক্ষা হবে ঐশ্বরিক শিক্ষা। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর অবতারিত কুরআন হল ঐশ্বরিক বাণী, এটা তো সকলের কাছে স্পষ্ট, যদিও হঠকারী লোক তা মানে না। কুরআনে যে নীতি, সদাচার, প্রেম, উপকারীতা ইত্যাদির ব্যাপারে প্রেরণা দেওয়া হয়েছে তা বেদের মধ্যেও রয়েছে। কুরআন শরীফে মুর্তী পুজার খন্ডন করা হয়েছে, একেশ্বরবাদের (তওহীদ) শিক্ষা, পরস্পরের প্রতি প্রেমের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বেদের মধ্যে ‘একম সত’ বা বিশ্ববন্ধুত্বের ঘোষণা করা হয়েছে। বেদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং কুরআনের শিক্ষা দ্বারা মুসলমানদের জন্য দিনে পাঁচবার নামায পড়া বাধ্যতামূলক পক্ষান্তরে ব্রাহ্মণবর্গের বিরলে লোকেরাই ত্রিকাল সান্ধ কারীর মিলিত হবে।
এখানে এই কথা অবশ্যই কলা উচিৎ যে বেদ এবং কুরআনের শিক্ষার মধ্যে অনেক সামঞ্জস্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বেদ, গীতা, এবং স্মৃতি গ্রন্থে এক ঈশ্বরের ভক্তির আদেশ করা হয়েছে এবং নিজের খারাপ কাজের ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যও সেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার আদেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআনে আছে, “হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি তোদেরই মতো একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহি (ঐশ্বরিক বার্তা) করা হয় যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ। অতএব তুমি তাঁরই পথ দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”৪১ ড. উপাধ্যায় বলেছেন যে কল্কি এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ব্যাপারে যে অভুতপূর্ব সামঞ্জস্য আমি পেয়েছি তা দেখে তা দেখে আশ্চর্য হই যে যে কল্কির প্রতিক্ষায় ভারতীয়রা বসে আছে, তিনি চলে এসেছেন এবং তিনি হলেন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সাহেব।৪২
উপনিষদেও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বিবরণ
উপনিষদের মধ্যেও মুহাম্মাদ সাহেবের উল্লেখ পাওয় যায়। নাগেন্দ্রনাথ বসু দ্বারা সম্পাদিত বিশ্বকোষের দ্বিতীয় খন্ডে উপনিদের সেইসব শ্লোকের উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে ইসলাম এবং হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সম্পর্কিত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মুখ্য শ্লোক এবং তার অর্থ নিচে দেওয়া হল যাতে পাঠক এর বাস্তবতা বুঝতে পারেন।
অস্মল্লাং ইল্লে মিত্রাবরুণা দিব্যানি ধত্ত।
ইল্লে বরুণা রাজা পূনর্দূদঃ।
ইয়ামিত্রৌ ইল্লাং ইল্লে ইল্লাং বরুণৌ মিত্রস্তেজস্কামঃ ॥১॥
হোতারমিন্দ্রো হোতারমিন্দ্রো মহাসুরিন্দ্রাঃ।
অল্লো জেষ্ঠং শ্রেষ্টং পরমং পূর্ণ ব্রাহ্মণং অল্লাং॥২॥
অল্লো রসুল মহমদ রকরস্য অল্লো অল্লাম্ ॥৩॥
(অল্লোপনিষদ, ১,২,৩)
অর্থাৎ “এই উপাস্যের নাম অল্লাহ। তিনি এক। মিত্র, বরুণ হল তার বিশেষণ। বাস্তবে আল্লাহই হলেন রুন তিনি সমস্ত সৃষ্টির বাদশাহ। বন্ধুগণ ! সেই আল্লাহকেই নিজের উপাস্য মনে করে। তিনিই বরুণ এবং একজন বন্ধুর মতো। সমস্ত লোকের কাজ করেন। তিনিই ইন্দ্র, শ্রেষ্ঠ ইন্দ্র। আল্লাহ সবার থেকে বড়, সবথকে উত্তম, সবথেকে পূর্ণ এ সবথেকে বেশী পবিত্র। মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ট সুল। আল্লাহ আদি অন্ত এবং সমস্ত সৃষ্ট জগতের পালনকর্তা। সমস্ত ভাল কাজ আল্লাহর জন্যই। বাস্তবে আল্লাহই সূর্য, চাঁদ এবং নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন।”
উপরিউক্ত উদ্ধৃতি দ্বারা এটা নির্বিচিত্রে স্পষ্ট যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ হলেন এক এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর প্রেরিত বার্তাবাহক (পয়গম্বর)। এই উপনিষদের অন্য শ্লোকেও ইসলাম এবং পয়গম্বর মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে। এই উপনিষদের পরবর্তী শ্লোকে বলা হয়েছে,
আদল্লা বুক মেককম্। অল্লবুক নিখাদকম্॥ ৪॥
অলো যজ্ঞেন হুত হুত্বা অল্লা সূর্য চন্দ্র সর্বনক্ষত্রাঃ ॥৫॥
অল্লো ঋষিনাং সর্ব দিব্যাং ইন্দ্রায় পূর্ব মায়া পরমন্তরিক্ষা॥৬॥
অল্লহঃ পৃথব্যা অন্তরিক্ষং বিশ্বরুপম ॥৭॥
ইল্লাংকবর ইল্লাংকবর ইল্লাং ইল্লল্লেতি ইল্লল্লাঃ ॥৮॥
ঔম্ অল্লা ইল্লল্লা অনাদি স্বরুপায় অথর্বণ শ্যামা হুহ্নি জনান পশূন সিদ্ধান জলবার অদৃষ্টং কুরু কুরু ফট ॥৯॥
অসুসংহারিণী ইং হিং অল্লো রসুল মহমদরকবরস্য অল্লো, আল্লাম ইল্লল্লেতি ইল্লল্লা ॥১০॥
(অল্লোউনিষদ)
অর্থাৎ “আল্লাহ সমস্থ ঋষি পাঠিয়েছেন এ চন্দ্র, সুর্য এবং তারাকে সৃষ্টি করেন। তিনিই সমস্ত ঋষি পাঠিয়েছেন এক আকাশ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ব্রহ্মাণ্ড (জমীন এবং আকাশ) সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। হে পুজারী! তুমি বলে দাও, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ অনাদি। তিনি সমস্ত বিশ্বের পালনকর্তা। মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রসুল (বার্তাবাহক), যিনি এই বিশ্বের পালনকর্তা। অতএব ঘোষনা করে দাও আল্লাহ এক এবং তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।”৪৩
প্রাণনাথী সম্প্রদায়ের শিক্ষা
হিন্দুদের মধ্যে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণনাথী সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য একটি সম্প্রদায়। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রবর্তক হলেন মহামতি প্রণনাথ। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল মেহরাজ ঠাকুর। প্রাণনাথীর জন্ম হয় ১৬১৮ খ্রীষ্টাব্দে গুজরাটের জামনগরে। তিনি মনুষ্যজাতিকে একেশ্বরবাদের শিক্ষা দেন এবং একজন নিরাকার ঈশ্বরের পুজা উপাসনা করার প্রতি জোর দেন। তিনি নবুওয়াত অর্থাৎ ঈশ্বর প্রদত্ত দূতের ধারণার সমর্থন করেন এবং এটাকে সঠিক বলে ঘোষনা করেন। প্রাণনাথজী বলেন,
“কৈ বড় কহে পৈগম্বর, পর এক মুহাম্মাদ পর খতম।”
অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থের মধ্যে পয়গম্বরদিগকে বড় কলা হয়েছে, কিন্তু মুহাম্মাদ সাহেবের মাধ্যমে প্রদত্ত দূতের শৃঙ্খলা সমাপ্ত হয়ে গেছে। রসুল মুহাম্মাদ আখেরী (অন্তিম) পয়গম্বর।৪৪
প্রনাথজী অন্য এক স্থানে লিখেছেন
“রসুল আওয়েগা তুম পর, লে মেরা ফুরমান।
আয়ে মেরে আরস কি, দেখি সব পেহচান।।”
অর্থাৎ (ঈশ্বর বলেছেনঃ) আমার রসুল মুহাম্মাদ তোমাদের কাছে বার্তা নিয়ে আসবে। তিনি বিশ্বে আগমন করে তোমাদেরকে আমার আরস বা পরমধাম এর ব্যাপারে সমস্ত রকম ভাবে পরিচয় করানোর জন্য কিছু সংকেত দান করবেন।৪৫
হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ
অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয় এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)
বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থে যে অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয়র আগমনের ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে, আর এটা প্রমাণিত যে তিনি হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ছাড়া আর কেউ নন। ‘বুদ্ধ’ বৌদ্ধ ধর্মের পরিভাষায় ঋষিকে বলা হয়। গৌতম বুদ্ধ তাঁর মৃত্যুর সময় নিজের প্রিয় শিষ্য আনন্দাকে বলেন, “হে নন্দা! এই বিশ্বে আমি প্রথম বুদ্ধও নই এবং অন্তিম বুদ্ধও নই। এই জগৎকে সত্য এবং পরোপকারের শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি সময়ে একজন অন্তিম বুদ্ধের আগমন হবে। তিনি পবিত্র অন্তকরণের অধীকারি হবেন। তাঁর হৃদয় শুদ্ধ হবে। জ্ঞান এবং বুদ্ধির দ্বারা সমস্ত লোকেদের নায়ক হবেন। যেরকম আমি বিশ্বকে অনশ্বর সত্যের শিক্ষা দিয়েছি ঠিক সেই রকম তিনিও বিশ্বকে সত্যের শিক্ষা দান করবেন। বিশ্বকে তিনি এবং জীবন দর্শনের শিক্ষা দান করবেন যা শুদ্ধ এবং পূর্ণ হবে। হে নন্দা! তাঁর নাম হবে মৈত্রেয়।”৪৬ “বুদ্ধ’ শব্দের অর্থ হল, ‘বুদ্ধি দ্বার সংযুক্ত’। বুদ্ধ মানবজাতির মধ্যেই একজন, দেবতাদের থেকে হননা।৪৭ মৈত্রেয় শব্দের অর্থ হল, ‘দয়া দ্বারা যুক্ত’।
মৈত্রেয়র সঙ্গে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সামঞ্জস্যতা
অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয়র মধ্যে বুদ্ধের সমস্ত বৈশিষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। বুদ্ধের মুখ্য বৈশিষ্টগুলি হল,
১) তাঁরা ঐশর্য্যশালী এক ধনশালী হবেন।
২) তাঁর সন্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন।
৩) তাঁর স্ত্রী থাকবে এবং তাঁরা শাসনকার্যে নিযুক্ত থাকবেন।
৪) তাঁরা নিজের পূর্ণ আয়ুকাল বাঁচবেন।৪৮
৫) তাঁরা নিজের কাজ স্বয়ং করবেন।৪৯
৬) বুদ্ধরা কেবল ধর্মপ্রচারক হবেন।৫০
৭) যে সময় বুদ্ধ একাকী থাকেন সেই সময় ঈশ্বর তাঁর সাথীদের রুপে দেবতা এবং রক্ষস প্রেরণ করেন।৫১
৮) বিশ্বে একই সময়ে কেবল একজন বুদ্ধই থাকেন।৫২
১) বুদ্ধের অনুসারীরা খাঁটি হয়। যাঁদেরকে কেউ তাঁদের পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে না।৫৩
১০) কোন ব্যাক্তি তাঁর গুরু হবেন না।৫৪
১১) প্রত্যেক বুদ্ধ নিজের আগের বুদ্ধির কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং নিজের অনুসারীদের ‘মার’ থেকে বাঁচাবার জন্য সাবধান করেন।৫৫ মারের অর্থ হল, খারাপ কাজ এবং বিনাশ প্রসারণকারী। তাঁকে শয়তান বলা হয়।
১২) অন্যান্য পুরুষের তুলনায় বুদ্ধের গর্দানের হাড় বেশি দৃঢ় হয়, যাতে তিনি ঘাড় ঘোরার সময় নিজের পুরো শরীরকে হাতির মতো ঘুরিয়ে নেন।
এছাড়াও অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয়র অন্য বৈশিষ্ট রয়েছে। মৈত্রেয় দয়বান হন এবং তাঁকে বোধী বৃক্ষর নীচে সভার আয়োজনকারীও বলা হয়েছে। এই বৃক্ষের নীচে বুদ্ধের জ্ঞান প্রপ্তি হয়।
ড. কে প্রকাশ উপাধ্যায় প্রমাণ করেছেন যে এই সব বৈশিষ্ট হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জীবনের সঙ্গে মিলে যায় অর্থাৎ অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয় হলেন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)। ড. উপাধ্যায় দ্বারা এই বিষয়ে প্রস্তুত করা তথ্য হুবহু নীচে বর্ণনা করা হল,
কুরআন শরীফে মুহাম্মাদ সাহেবক ঐশ্বর্যবান এবং ধনবান হওয়ার ব্যাপারে ঐশীবাণী রয়েছে যে, “তুমি প্রথমে নির্ধন ছিলে, পরে তোমাকে ধনী (সম্পদশালী) করা হয়েছ। মুহাম্মাদ সাহেব ঋষি পদের প্রাপ্তির বহু আগেই ধনী হয়ে গিয়েছিলেন।৫৬ মুহাম্মাদ সাহেবর নিকট প্রচুর ঘোড়া ছিল। তাঁর যানবাহনের জন্য ‘আলকাসবা’ নামক প্রসিদ্ধ উটনী ছিল যার উপর চড়ে তিনি মদীনা গিয়েছিলেন এবং কুড়িটি উটনী তাঁর ছিল । এই উটের দুধ মুহাম্মাদ সাহেব এবং তাঁর সন্তানদের পান করার জন্য যথেষ্ট ছিল, এই সঙ্গে তাঁর অতিথীদের জন্যও সেই দুধ যথেষ্ট ছিল। উটনীর দুধ মুহাম্মাদ সাহেব এবং তাঁর সন্তানদের জন্য মুখ্য আহার ছিল। মুহাম্মাদ সাহেবর নিকট সাতটি ছাগল ছিল, যা দুধের মূল উৎস ছিল।
মুহাম্মাদ সাহেব দুধের জন্য মেষ রখতেন না, এর কারণ হল যে আরবে মেষ পালন হয় না।৫৭ তাঁর সাতটি বাগানের খেজুর ছিল যা পরবর্তীকালে ধর্মীয় কাজের জন্য মুহাম্মাদ সাহেব দান করে দিয়েছিলেন।
মুহাম্মাদ সাহেবের নিকট তিনটি ভূমিগত সম্পত্তি ছিল যার অংশ ছিল কয়েক বিঘে জুড়ে। মুহাম্মাদ সাহেবর অধীনে বেশ কয়েকটি কুঁয়াও ছিল। এটা অবশ্যই স্মরনীয় যে আরবে কারো নিকট কুঁয়া থাকাকে বিশাল সম্পত্তির মালিক বলে গন্য করা হত। কেননা সেখানে মরুভূমির সংখ্যা বেশী। মুহাম্মাদ সাহেবের ১২ জন স্ত্রী, চার কন্যা এক তিনটি পুত্রসন্তান ছিল। বুদ্ধের নিকট স্ত্রী এবং সন্তান থাকাটি হল দ্বিতীয় গুণ। মুহাম্মাদ সাহেবের আগে ভারতে বুদ্ধদের মধ্যে এই গুণ নামমাত্র পাওয়া যেত, কিন্তু মুহাম্মাদ সাহেবের নিকট সেই গুণ ১২ গুণ বেশী ছিল।৫৮
মুহাম্মাদ সাহেব দেশ শাসন করেছিলেন। তিনি জীবিতকালেই বড় বড় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে তাদের উপর প্রভূত্ব কায়েম করেম। আরবের সম্রাট হওয়া সত্বেও তিনি আগের মতো জীবনযাপন করতেন।৫৯
মুহাম্মাদ সাহেব নিজের পূর্ণ আয়ুস্কাল জীবিত ছিলেন। ক্ষণস্থায়ী তিনি জীবনযাপন করেন নি এক তিনি কারো দ্বারা নিহতও হননি।
মুহাম্মাদ সাহেব নিজের কাজ নিজেই করতেন। তিনি সারা জীবন ধর্ম প্রচার করেন। তাঁর ধর্ম প্রচারের স্বরুপের উদ্ঘাটন অনেক ঐতিহাসিকরাও করেছেন।”৬০
মুহাম্মাদ সাহেবও তাঁর পূর্ববর্তী ঋষিদের সমর্থন করেন, এই ব্যাপারে আপনারা পুরো কুরআনে লক্ষ্য করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ কুরআনে দ্বিতীয় সুরায় উল্লেখ করা হয়েছে,
“হে ধর্মবিশ্বাসীগণ! (মুসলমানগণ) তোমরা বল, আমরা আল্লাহর উপর পুরো বিশ্বাস রাখি এবং যে গ্রন্থ আমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর এবং যা কিছু ইব্রাহীম, ইসমাইল এবং ইয়াকুব এর উপর এবং তাঁর সন্তানদের (ঋষি) উপর এবং যা কিছু মুসা (আঃ) এবং ইসা (আঃ)কে দেওয়া হয়েছে তার উপর এবং যা কিছু অন্যান্য ঋষিদেরকে (গয়গম্বর) তাঁদের পালনকর্তার তরফ থেকে উপলব্ধি করনো হয়েছে, তার উপর আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি এবং সেই ঋষিদের মধ্যে কোন রকমের কমবেশী মনে করি না এবং আমরা সেই একজন ঈশ্বরকে মান্যকারী।৬১
মুহাম্মাদ সাহেব তাঁর অনুসারীদিগকে শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য বার বার সাবধান করেছেন। কুরআনে শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য বলা হয়েছে যে শয়তানকে নিজের বন্ধু বানাবে, তাকে সে বিভ্রান্ত করে দেবে এবং নরকের কষ্টকর পথের পথিক বানিয়ে দেবে।৬২
মুহাম্মাদ সাহেবের অনুসারীরা কখনো মুহাম্মাদ সাহেবের প্রদর্শিত থেকে বিচলিত না হয়ে তাঁর খাঁটি শিষ্য অথবা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেন। মুহাম্মাদ সাহেবের অনুসারীর আজীবন তাঁর সঙ্গ ছাড়েন নি, তাতে তাঁদের মতোই কষ্টের সম্মুখীন হতে হোক। পৃথিবীতে যে সময় মুহাম্মদ সাহেব বুদ্ধদ্ধ ছিলেন, সেই সময় আর অন্য কেউ বুদ্ধ ছিলেন না। মুহাম্মাদ সাহেব বুদ্ধ হওয়ার সময় সমগ্র বিশ্বের সামাজিক এবং আর্থিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল।
মুহাম্মাদ সাহেবের কোন গুরু পৃথিবীর কোন মানুষ ছিল না। মুহাম্মাদ সাহেব লেখা পড়া করেননি, সেজন্য তাঁকে ‘উম্মি’ বলা হয়। ঈশ্বর দ্বারা মুহাম্মাদ সাহেবের অন্তঃকরণে অবতীর্ণ আয়াতের সমষ্টিই হল কুরআন। প্রত্যেক বুদ্ধের জন্য বেধীবৃক্ষ থাকা আবশ্যক। কোন বুদ্ধের জন্য বোধীবৃক্ষের জন্য অশ্বত্থ, কারো জন্য বটবৃক্ষ এবং কারো জন্য উদুম্বর (গুলর) গাছের ব্যাবহারে কথা কলা হয়েছে। বুদ্ধের জন্য যে বোধীবৃক্ষের কথা বলা হয়েছে সেটা শক্ত এবং ভারি কাষ্ঠযুক্ত গাছের কথা বলা হয়েছে।৬৩
হজরত মুহাম্মাদ সাহেবের নিকট বোধীবৃক্ষরূপে হুদাইবিয়া নামক স্থানে একটি শক্ত ভার কাষ্ঠযুক্ত গাছ ছিল, যার নীচে মুহাম্মাদ (সাঃ) সভা করেছিলেন।
‘মৈত্রেয়’ শব্দের অর্থ হল ‘দয়া দ্বারা যুক্ত’। ১৬ অক্টোবর ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দে ‘লীডার’ এর ৭ পৃষ্ঠায়, ৩ নং কলামে একজন বৌদ্ধ ধর্মগুরু ‘মৈত্রেয়’ শব্দের অর্থ করেছেন ‘দয়াবান’। মুহাম্মাদ সাহেবও দয়ালু ছিলেন। সেজন্য মুহাম্মাদ সাহেবকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলা হয়েছে।৬৪ যার অর্থ হল, সমগ্র মানবজাতির জন্য দয়াবন।’ (নরাশং আউর অন্তিম ঋষি, পৃষ্ঠা-৫৪ থেকে ৫৮)
স্বর্গীয় বোধীবৃক্ষ বিস্তৃত ক্ষেত্রে রয়েছে। বলা হয়েছে যে বুদ্ধ স্থির দৃষ্টি দিয়ে বেধীবৃক্ষ দর্শন করেন। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ও জান্নাতে এক বৃক্ষকে দেখেছিলেন, যা ঈশ্বরে সিংহাসনের ডানদিকে বিদ্যমান ছিল। সেই বৃক্ষটি এতো অংশ জুড়ে ছিল যা একজন ঘোড়সওয়ার একশত বছরেও তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না।৬৫ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ও সেই স্বর্গীয় বৃক্ষটিকে চোখ জুড়ে দর্শন করেছিলেন।
মৈত্রেয়র ব্যাপারে এও বলা হয়েছে যে কারো দিকে ঘুরে দাঁড়াবার সময় তিনি নিজের শরীরের পুরোটাই ঘুরিয়ে দেন। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ সাহেবও তার মিত্রদের দিকে ঘুরে দাঁড়াবার সময় নিজের পুরো শরীর ঘুরিয়ে নিতেন।৬৬
এইভাবে এটাই প্রমাণ হয় যে বৌদ্ধ গ্রন্থে যে মৈত্রেয়র আগমনের ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে তিনি হলেন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)।
জৈন ধর্ম এবং হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
ড. পি এইচ, চৌবে লিখেছেন,
“আমি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে কল্কি অবতার বলে মানি। পুরাণে এই অবতারের (পয়গম্বর) ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে । বলা হয়েছে যে কল্কি অবতার বুদ্ধির অবতারের পরে আসিবেন, যাঁর জন্ম ‘শম্ভল’ নামক নগরে একজন পুজারীর পরিবারে হবে, তাঁর যান ঘোড়া এবং হাতিয়ার তরবারী হবে। তিনি সমগ্র পৃথিবীতে নিজের সত্য ধর্মের বিজয় আনবেন।” (বিস্তৃত বিবরণের জন্য দেখুন কল্কি পুরাণ)
জৈন ধর্মের গ্রন্থকারাও কল্কি অবতারের কর্ণনা করেছেন এবং তাঁর আগমনের সময়কাল মহাবীর স্বামী নির্বানের এক হাজার বছর পর হবে বলে মান্য করেছেন। মহাবীর স্বামীর নির্বানের বর্ষ প্ৰয় ৫৭১ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে বলে নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে। এইভাবে এক হাজার বছর পর কল্কি অবতারের আগমন হয়। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মকাল সেই বছরেই পড়ছে যা কল্কি অবতারের আগমনের সময়কাল। কল্কি অবতারের বৈশিষ্ট এবং তাঁর গুণ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে। একজন প্রসিদ্ধ জৈন লেখক তাঁর গ্রন্থ ‘হরিবংশ পুরাণে’র মধ্যে লিখেছেন মহাবীরের নির্বানের ৬০৫ বছর ৫ মাস পরে শক রাজার জন্ম হয় এর পর গুপ্তদের ২৩১ বছর শাসনের পর কল্কি অবতারের জন্ম হয়। এই ব্যাপারে শ্লোকটি হল,
“–গুপ্তানাং চশু দ্বয়ম।
এক বিংবশ্চ বর্ষণি কালবিদ, ভিরুদা হৃতম৷৷ ৪৯০৷৷
চিত্বা রিংশ দেবাতঃ কল্কিরাজস্ব রাজতা।
ততোড জিটংজয়ো রাজা স্যাদিন্দ্রপুর সংস্থিতঃ॥ ৪৯১৷৷”
(জিনসেন কৃত হরিবংশ পুরাণ, আ০ ৬০)
অন্য জৈন গ্রন্থকার শুণভদ্র উত্তর পুরাণে লিখেছেন যে মহাবীরে নির্বানের ১০০০ বছর পর কল্কিরাজের জন্ম হয় । (Indian Antiquary Vol. XV.P. 134)
তৃতীয় জৈন গ্রন্থকার নেমিচন্দ্র নিজের গ্রন্থ ‘ত্রিলকসাগর’ এর মধ্যে লিখেছেন, “শকরাজের নির্বানের ৬০৫ বছর ৫ মাস পরে এবং শককালের ৩৯৪ বছর ৭ মাস পরে কল্কিরাজের জন্ম হয়।”
এই গ্রন্থে এই ভাব বাক্যটি হল,
“পণছস্যং বস্যপং মাসজদং গমিয় বীর ণিবুইই দো।
সগরাজো সো কল্কি চতুণবতিয় মহিপ সগমাংসং।”
(ত্রিলোকসাগর, পৃষ্ঠা ৩২)
এইভাবে এটাই মনে হচ্ছে যে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ই সেই ব্যক্তি ছিলেন যাঁর ব্যাপারে ধর্মাচার্যগণ বলছেন।
এটা অবশ্যই সত্য যে যতদিন শাসক শাসন করেন ততদিন পর্যন্ত জনগণ তাঁর নিয়মের পালন করেন, কিন্তু সেই শসকের সাম্রাজ্য সমাপ্তির পর দ্বিতীয় শাসকের আদেশ শিরোধার্য হয়ে যায়। ঠিক সেই রকম যতদিন পর্যন্ত যে শাস্ত্র, অবতর, পয়গম্বরের সময়কাল থাকে তাঁর আজ্ঞা-উপদেশের প্রচার প্রসার হয় কিন্তু তাঁর উপদেশের বিকৃতি আসা মাত্রই ঈশ্বরের তরফ থেকে দ্বিতীয় পয়গম্বর, অবতার চলে আসেন তখন তাঁর শাসন চলতে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্তিম ‘রসুল’ অথবা আখেরী অবতার ‘কল্কি’র ‘শাসনকালে রয়েছি এক প্রলয় (কিয়ামত) পর্যন্ত তাঁর শাসনকাল চলবে যার প্রমাণ পুরাণ, কুরআন এবং অন্য গ্রন্থ থেকে দেওয়া হয়েছে। অতএব আমাদের জন্য এই অন্তিম রাস্তা (হজরত মুহাম্মাদ) এর শাসনে থেকে তাঁর উপদেশ এবং আচার আচরণের অনুসরণ করাটাই আধ্যাত্মিক এবং ব্যাবহারিক উভয় দিক থেকেই উচিৎ। এতে আমাদের দুনিয়া এবং পরকাল উভয়ই সংশোধন হতে পারে।
অতএব অন্তিম বার্তাবাহক, পয়গম্বর, ‘কল্কি অবতার’ হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপদেশকে অনুসরণই তাঁর প্রতি সঠিক এবং প্রকৃত অর্থে শ্রদ্ধা অর্পন হবে। এটাই সমর্পনের জন্য সঠিক রাস্তা।”৬৭
[অনুবাদঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম/২০১৫ সাল]
তথ্যসূত্র:
- ১) নরাসংস য়ো নরৈঃ প্রশস্যতে, সায়ন ভাষ্য, ঋগ্বেদ সংহিতা, ৫/২/২) মূল মন্ত্র হল, “নরাসংসঃ সুষুদতীমং যজ্ঞামদাভ্যঃ। কবির্হি মধুহস্ত্য।” ‘নরাসংস’ শব্দের অর্থ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, করেছেন যে, মানুষের দ্বারা প্রসংসিত। (ঋগ্বেদের হিন্দি ভাষ্য, পৃষ্ঠা ২৫, প্রকাশক সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভা)
- ২) কল্কি অবতার আউর অন্তিম ঋষি, পৃষ্ঠা-৫।
- ৩) পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথ ত্রিপাঠির ‘কান্তি’ ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বরের সংখ্যা, ১৯৯০, ঋগ্বেদের মূল শ্লোক হল – য়ো রঘ্রস্যৌচোদিতায়ঃ কৃশস্য য়ো ব্রাহ্মণো নাধমানস্য কীরিঃ।। (ঋগ্বেদ সংহিতা, ২/১২/৬)
- ৪) নরাসংসঃ মিহপ্রিয়ম স্মিনজ্ঞ, উপ হৃয়ে। মধুজিহৃং হবিস্কৃতম। (ঋগ্বেদ সংহিতা, ১/১৩/৩)
- ৫) নরাসংসঃ সুষুদতীমং যজ্ঞামদাভ্যঃ। কবির্হি মধুহস্ত্য।” (ঋগ্বেদ সংহিতা, ৫/৫/২)
- ৬) নরাসংসঃ প্রতি ধামান্যজ্জন ত্রিস্ত্রৌ দিবঃ মহা স্বর্চিঃ। (ঋগ্বেদ সংহিতা, ২/৩/২)
- ৭) নরাসংসঃ প্রতি ধামান্যজ্জন ত্রিস্ত্রৌ দিবঃ মহা স্বর্চিঃ। (ঋগ্বেদ সংহিতা, ২/৩/২)
- ৮) নরাসংসঃ বজিনং বাজয়ন্নিহ ক্ষয়দ্বীরং পুষনং সুম্নৈরীমহে।
- রথং ন দুর্গাদ বসবঃ সুদানবৌ বিশ্বস্মান্নো অহংসো নিস্পিপর্তন। (ঋগ্বেদ সংহিতা, ১/০৬/৬)
- ৯) আল্লামা ইবনে জরীর গ্রন্থে এটাই বলা হয়েছে।
- ১০) ঋগ্বেদের হিন্দি ভাষ্য, পৃষ্ঠা-১৪০১, প্রকাশক সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভা, নতুন দিল্লী)
- ১১) এতস্মিন্নন্তিরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিত।।
- মহামদ ইতি খ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিত।।
- ১৩) এই গ্রন্থ ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস দরিয়াগঞ্জ, দিল্লী থেকে সর্বপ্রথম প্রকশিত হয়।
- ১৪) অভিযানে দেওয়া শব্দের ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে। এখানে আর একটি কথা পরিস্কাভাবে বলে রাখা উচিং যে সংগ্রাম পুরানের যদিও প্রাচীন পুরানের মধ্যে গণনা করা হয় কিন্তু এর ভিত্তি হল প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ । যেরকম অন্য পুরাণ অথবা গ্রন্থ এবং বিবেচনার ভিত্তিতে অর্থাত, প্রাচীন আলোচনার আলোকে হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে। অতএব পুরানের অর্বাচীন অথবা প্রাচীন হওয়ার কোন মতভেদ নেই।
- ১৫) Apology for Mohammed By Gofrey Higgins, Page 2
- ১৬) Translation of the Qur’an, By George Sale, First Translation/Preface on pages 25/26
- ১৭) অশ্বমাশুগমারুহ্রা দেবদন্তং জগৎপতিঃ।
- অসিনাধুদমনমষ্টৈশ্বর্য গুণান্বিতঃ।। (ভাগবত পুরান, ১২ স্কন্ধ, ২ অধ্যায়, ১৯ নং শ্লোক)
- ১৮) কল্কি অবতার আউর মুহাম্মাদ সাহব, (পৃষ্ঠা-৩০)
- ১৯) শম্ভল গ্রামমুখ্যাস্য ব্রাহ্মণস্য মহাত্মনঃ।
- ভবনে বিষ্ণুযসস্যঃ কল্কি প্রাদুর্ভবিষ্যতি।। (ভাগবত পুরান, ১২ স্কন্ধ, ২ অধ্যায়, ১৮ নং শ্লোক)
- ২০ বুখারী শরীফের হাদীস।
- ২১) ভাগবত পুরান, ১২/২/১৯।
- ২২) যাত যুয়ং ভুবং দেবাঃ স্বাংসাবতরণে, রতাঃ। (কল্কি পুরান, অধ্যায় ২, শ্লোক ৭)
- ২৩) কুরআন শরীফ, সুরা আল ইমরান, আয়াত নং ১২৩, ১২৪ এবং ১২৫,
- ২৪) ভাগবত পুরান, দ্বাদশ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়, ১৯ নং শ্লোক,
- ২৫) সংস্কৃত ভাষার ব্যকরণবিদ, বামন শিবরাম, আস্টে, বলেছেন যে, ‘পতি’ শব্দের অর্থ ‘প্রধানতাকারী’ (দেখুন সংস্কৃত – হিন্দি অভিধান, পৃষ্ঠা – ৫৬৮, মোতিলাল বনারসীদাস পাবলিশার্স, সংস্করণ, ১৯৮৯) অর্থাৎ ‘জগতপতি’ শব্দের অর্থ হল ‘বিশ্বের উপর কর্তৃত্ত্বকারী। হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যেভাবে ইসলাম ধর্ম, নিয়ে এসেছেন, যদিও তা মানব জীবনে আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল, কিন্তু তাঁর মাধ্যমে পরিপূর্ণতা এবং প্রধানতা প্রাপ্তি হয়। কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেনঃ “আজ তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর নিয়ামতকেও পূর্ণ করে দিলাম, এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ‘দ্বীন’ হিসাবে পছন্দ করলাম।” (৫ : ৩)
- আল্লাহর রসুল দুনিয়ার সত্যকেই প্রাধান্য দিয়েছেন, তা প্রসারণ করেছেন এবং লোকেদেরকে এর দিকে আহ্বান করেছেন এবং নিজেও অনুসরণ করেছেন এবং অন্যদের কাছেওন এই সত্য বার্তা প্রেরণ করেন। তাঁর দ্বারা পুন্য এবং ভাল কর্ম প্রাধান্য পায়। ভাল আচার আচরণ এবং নৈতিকতায় তিনি পূর্ণ ছিলেন। একটি হাদীসে তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে নৈতিক গুণ দ্বারা এবং ভাল কাজের পূর্ণতার জন্য পাঠিয়েছেন। (শরহুসুন্নাহ)
- ২৬) কুরআন শরীফ, সুরা আরাফ, আয়াত নং ১৫৮,
- ২৭) কুরআন শরীফ, সুরা ফুরকান, আয়াত নং ১,
- ২৮) চতুর্ভিভ্রাতৃর্ভির্দেব করিষ্যামি কলিক্ষয়ম (কল্কি পুরান, অধ্যায় ২, শ্লোক ৫)
- ২৯) ভাগবত পুরানের ২৪ অবতারের প্রকরণে, কল্কি অন্তিম অবতার, (ভাগবত পুরান, প্রথম স্কন্ধ, তৃতীয় অধ্যায়, ২৫ নং শ্লোক)
- ৩০) কল্কি অবতার আউর মুহাম্মাদ সাহব, (পৃষ্ঠা-৪১)
- ৩১) অষ্টৌগুণাঃ পুরুষং দীপয়ন্তি, প্রজ্ঞা চ কৌল্লং চ দম, শ্রুতংচ।
- পরাক্রমশ্চ বহুভাষিতা চ দানং য়থা শক্তি কৃতজ্ঞতা চ। (মহাভারত)
- ৩২) Modesty and kindness, patience, self deanial and reverted the affections off all around him, P. 525, Life of Muhammed’ By Sir William Muir.
- ৩৩) He was now the Servant, the Prophet, the voice gerent of God.
- ৩৪) Introduction The speeches of Muhammad By Lanc-Pool Page-24.
- ৩৫) অসহ উস সিয়র, পৃষ্ঠা- ৩৪৩
- ৩৬) অথ তেষ্যাং ভবিষ্যতি মনাংসি বিশদানি বৈ।
- বাসু দেবাংগরাগতি পুন্যগন্ধানিল স্পৃশ্যাম। (ভাগবত পুরান, দ্বাদশ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২১ নং শ্লোক।
- ৩৭) শামায়েলে তিরমিযী, পৃষ্ঠা-২০৮, অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া (রহঃ)
- ৩৮) বিচরন্নাশুনা ক্ষোন্যাং হেয়নাপ্রতিমদ্ধুতিঃ
- নৃপলিঙ্গচ্ছেদো দস্যুঙ্কোটিশোনিহনিষ্যটি।। (ভাগবত পুরান, দ্বাদশ স্কন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২০ নং শ্লোক)
- ৩৯) হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জামাউল ফাওয়ায়েদ, পৃষ্ঠা – ১৭৮)
- ৪০) ‘He was’ says an admiring folowen, the handsomest and bravest, the bright faced and most generous of men., P. 523, The Life of Muhammad’
- ৪১) হা – মীম – আসসিজদাহ, আয়াত নং ৬
- ৪২) কল্কি অবতার আউর মুহাম্মাদ সাহব, (পৃষ্ঠা-৫৯)
- ৪৩) আর্যসমাজের কিছু পণ্ডিত অল্লোপনিষদকে উপনিষদের মধ্যে গণনা করতে অস্বীকার করেন, যদিও তাদের যুক্তির কোন পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। সেইজন্য হিন্দুধর্মের পণ্ডিতগণ এবং মনীষীগণ অপবাদকারীদের কথার উপর মনোযোগ দেন না। গোরখপুরের গীতাপ্রেস হিন্দুধর্মের প্রকাশণীর মধ্যে সবথেকে বেশী অগ্রগণ্য। সেখান থেকে প্রকাশিত ‘কল্যান’ পত্রিকার সংখ্যাগুলি বিশুদ্ধ মনে করা হয়। সেখান থেকে বিশেষভাবে ‘উপনিষদ’ সংখ্যায় ২২০ টি উপনিষদের মধ্যে ১৫ নম্বরে রয়েছে অবধুতোপনিষদের (পদ্য) উল্লেখ করা হয়েছে। ড বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়ও অল্লোপনিষদকে উপনিষদের মধ্যে গণনা করেছেন। (দেখুন বৈদিক সাহিত্যঃ এক বিবেচন, প্রদীপ প্রকাশণ, পৃষ্ঠা ১০১, সংস্করণ, ১৯৮৯,
- ৪৪) মারফত সাগর, পৃষ্ঠা – ৩৯, শ্রী প্রাণনাথ মিশণ, নতুন দিল্লী,
- ৪৫) মারফত সাগর, পৃষ্ঠা – ১৯, শ্রী প্রাণনাথ মিশণ, নতুন দিল্লী,
- ৪৬) Gospel of Buddha, By Carus, P. 217
- ৪৭) It is only a human being can be a Buddha, a can not. (Muhammad in the Buddist Scriptures P. 1)
- ৪৮) Warren, P. 79
- ৪৯) The Dhammapada, S.B.E. Vol. X. P. 67
- ৫০) The Tathagatas are only preachers. (The Dhammapada, S.B.E. Vol. X. P. 67)
- ৫১) Saddharama – Pundrika, S.B.E. Vol. XXI., P. 225)
- ৫২) The Life and Teaching of Buddha, Anagarika Dhammapada, P. 84
- ৫৩) Dhammapada, S.B.E. Vol. X. P. 67
- ৫৪) Romantic History of Buddha, By Beal, P. 241
- ৫৫) Dhammapada, S.B.E. Vol. X. P. 64
- ৫৬) ‘ব-ব-জ-দ-ক আ-ইলন ফা আগ্না’ (এবং তোমাকে ধনহীন পেয়েছিলাম, পরে ধনবান করেছি)
- ৫৭) Life of Mahomet – Sir William Muir (Cambridge Edition) P. 545-54)
- ৫৮) Life of Mahomet – Sir William Muir (Cambridge Edition) P. 547)
- ৫৯) ‘The fare of the desert semed most congenial to him, even when he was sovereign of Arabia.’
- The Speeches an table talk of the Prophet Mohammad By Lanepoole
- ৬০) Mohammad and Mohammadenism By Bosworth Smith, P. 98
- 61) কুরআন শরীফ, সুরা ২, আয়াত নং ১৩৬,
- 62) কুরআন শরীফ, সুরা ২২, আয়াত নং ৪,
- 63) According to some if the modern Buddist Scholars the Bo-tree of the Buddha Maiterya is the Iron wood-tree (Mohammad in the Buddist Scriptures, P. 64)
- ৬৪) ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামিন (কুরআন শরীফ, সুরা ১১, আয়াত ১০৭)
- [অর্থাৎ হে নবী আপনাকে সারা দুনিয়ার রহমত (করুনা) স্বরুপ প্রেরণ করেছি)
- ৬৫) In Paradise there is a tree (such) that a rider can not cross its shade even in hundred years. (Mohammad in the Buddhist Scripturess, Page 79)
- ৬৬) If the turned in conversation towards a friend he turned not partially but with his full face and his whole body. (The Life of Mahammat By William Muir, Page 511, 512)
- ৬৭) মাসিক কান্তি (দিল্লী), জুলাই ১৯৯৭, পৃষ্ঠা-৩৩, ৩৪)