লিখেছেনঃ ডঃ মহসীন মুহাম্মাদ সালেহ
১। ফিলিস্তিনের সীমানা : সিরিয়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে ফিলিস্তিন বলা হয়। ফিলিস্তিন এশিয়া মহাদেশের পশ্চিমে ‘বুহাইরাহু রােম’-এর তীরে অবস্থিত। ফিলিস্তিন আফ্রিকা মহাদেশ ও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সেতু স্বরূপ। অপর দিকে ইউরােপের অতঃন্ত নিকটবর্তী অঞ্চল। ফিলিস্তিনের উত্তরে লেবানন। পূর্বে জর্ডন এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মিসর অবস্থিত। ফিলিস্তিনের আয়তন ২৭ হাজার বর্গকিলােমিটার বিস্তৃত। আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূল।
২। সভ্যতা এ সংস্কৃতির পীঠস্থান : ফিলিস্তিনের সভ্যতা বিশ্বের সর্বাধিক প্রাচীন সভ্যতা বলে মনে করা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী এগারাে হাজার বছর পূর্বে মানুষ যেখানে প্রথম ফসল উৎপাদন ও বসতি স্থাপন করে সেই অঞ্চলটিই হল ফিলিস্তিন। বিশ্বের অতি প্রাচীন শহর ‘আরিহা’ উক্ত অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রথম পীঠস্থান বলে জানা যায়। বিগত আট বছর ধরে উক্ত শহরটি পত্তন হয়ে এখনও বিরাজ করছে।
৩। ফিলিস্তিনের ফজিলত : ফিলিস্তিন সমগ্র মুসলমানের নিকট একটি পবিত্রস্থান। পবিত্র কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনকে ‘পবিত্রভূমি’ উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেই মসজিদে আকসা অবস্থিত। যা মুসলমানের প্রথম কেবলা। হারাম শরীফের পর দ্বিতীয় মসজিদ হ’ল বায়তুল মুকাদ্দাস। বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ পড়া মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে নামাজ পাঠের পরই স্থান রাখে। এখান থেকেই প্রীয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) মেরাজে যাত্রা করেন। মেরাজে যাত্রা করার পূর্বে প্রিয় নবী (সঃ) এক রাত্রে এখানেই অবতরণ করেন। অগণিত নবীর কর্মস্থল ও সমাধীস্থল হ’ল ফিলিস্তিন।
ইসলামী ভাষ্য অনুযায়ী উক্ত ভূমিতেই হাশর হবে। উক্ত স্থানেই মানুষ পুনঃরুথিত হবে। সর্বশেষ যুদ্ধে (মসীহ বিন মরিয়ম এবং ইহুদীদের দাজ্জাল) মুসলমানেরা তাবু বা ঘাঁটি স্থাপন করবে। ফিলিস্তিনের বিশেষ বৈশিষ্ট হ’ল উক্ত অঞ্চলে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অবস্থান করলে অন্যস্থানে জিহাদ করার সমতুল ফজিলতের অধিকারী হবে। উক্ত অঞ্চলে একটি গােষ্ঠী সর্বদা দ্বীন ইমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
৪। তওরাত ও ইঞ্জিলে ফিলিস্তিনের মর্যাদা : ফিলিস্তিন মুসলমানদের নিকটই শুধু পবিত্রভূমি নয়, ইহুদী ও নাসারাদের (খ্রীষ্টান) ধর্মীয় বিশ্বাস মতেও ফিলিস্তিন হল একটি পবিত্রস্থান। ইহুদীদের বিশ্বাস, তাওরাতে যে ভূমিকে ‘আরযে মাউদ’ বলা হয়েছে সেটিই হল এই ফিলিস্তিন অঞ্চল। ইহুদীরা উক্ত অঞ্চলের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক বলে মনে করে। এই অঞ্চল বনী ইসরাইলী আম্বিয়াদের সমাধীস্থল। ইহুদীদের পবিত্র স্থানগুলিও এখানে অবস্থিত। কুদস অথবা বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যে এবং ফিলিস্তিনের ‘আল-খলিল’ শহরে উক্ত স্থানগুলি রয়েছে। অপর দিকে খ্রীস্টানরা ও ফিলিস্তিনকে তাদের পীঠস্থান বলে মনে করে। ঈশা (আঃ) এই অঞ্চলেই জন্মগ্রহণ করেন। ঈষা (আঃ) এর কর্মক্ষেত্রও ছিল ফিলিস্তিন। খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র কেন্দ্রগুলি বায়তুল মুকাদ্দাস, বায়তুল লাহাম’ ও ‘নাসিরাহ্’ নামক শহরে অবস্থিত।
৫। বনী ইসরাইলের নবীদের প্রসঙ্গে মুসলমানদের বিশ্বাস : মুসলমানদের দৃঢ় বিশ্বাস যে তারা দাউদ (আঃ) সুলাইমান (আঃ) এবং বনী ইসরাইলের সকল নবী ও মনীষীগণের উত্তরাধিকার। বনী ইসরাইলের নবীগণ আল্লাহ তায়ালার একত্বতা প্রতিষ্ঠা করে ফিলিস্তিনে সুদীর্ঘ কাল রাজত্ব করেন। বনী ইসরাইলের ধর্ম একত্ত্ববাদের ধর্ম ছিল। যার প্রকৃত উত্তরাধিকার আমরা মুসলমান। নবী ইসরাইলের উত্তরাধিকার বলতে দ্বীনের উত্তরাধিকার। একত্তবাদ বা তৌহিদের পতাকা উড্ডীন করে রেখেছে মুসলমান। মুসলমানের বিশ্বাস বনী ইসরাইলরা বর্তমানে হেদায়েতের রাস্তা পরিত্যাগ করেছে। ইহুদীরা তাদের গ্রন্থাদিগুলী বিকৃত করেছে। বনী ইসরাইলরা নিজেদের নবীদের হত্যা করতে ও দ্বিধা করত না। যার পরিণাম স্বরূপ আজও তাদের আল্লাহ তায়লার অভিশাপ বহন করে যেতে হচ্ছে।
৬। অ-মুসলমানদের প্রসঙ্গে মুসলমানদের রাজনৈতিক নীতি : মুসলমানরা অতীতে একাধিকবার এই অঞ্চলে নিজেশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে মুসলমানদের রাজনৈতিক নীতি হ’ল উদার দৃষ্টিভঙ্গি। ক্ষমা প্রদর্শন করা, অপর ধর্মাবলম্বীদের সাম্যবাদের নীতির ওপর জীবনযাপনের অধিকার প্রদান করা। তাদের যাবতীয় অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। বিশেষ করে বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত অমুসলমানদের প্রতি সরকার অধিক নম্র ব্যবহার প্রদর্শন করত। (কেননা ইসলামী বিশ্বাস মতে এটি হ’ল পবিত্রস্থান। যেখানে হানাহানি করা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়।) অপর দিকে উক্ত অঞ্চলের শাসনভার যখনই কোন অমুসলমানদের হাতে অর্পিত হয়েছে তখনই তারা নিজেদের ধর্মাবলম্বী ব্যাতীত অপর ধর্মাবলম্বীদের সহ্য করেনি। তাদের ওপর নানা প্রকার অত্যাচার চালিয়েছে। অপর ধর্মাবলম্বীদের নিকট থেকে মুক্তি পেতে প্রয়াস চালাত।
৭। ফিলিস্তিনের প্রথম অধিবাসী : ইতিহাসের আলােকে ফিলিস্তিনকে যে জাতি সর্বপ্রথম পত্তন করেছিল তারা আরব দ্বীপ থেকে আগত ‘কিনান’ জাতি ছিল। কিনান জাতি তাদের কৃষ্টিসভ্যতা গড়ে তােলে। সেই সময় উক্ত অঞ্চলকে ‘আরযে কিনান’ বলা হত। বর্তমানে ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সম্পর্ক সেই কিনান। জাতির সঙ্গে নতুবা কিনান জাতির সঙ্গে অন্য কোন জাতির মিশ্রণ রয়েছে। যারা ‘বুহাইরা’ রােমের পূর্ব তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত। যাদেরকে সেই সময় ‘ব্লাসত’ অথবা ‘ফিলিস্তিন’ বলা হত। অথবা অন্য কোন আরব জাতির সঙ্গে তাদের বংশের যােগ সূত্র রয়েছে। যারা পরবর্তী কালে ‘আরযে কিনানে’ গিয়ে বসবাস শুরু করতে থাকে। রাজনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনের ওপর অন্যান্য জাতি নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও ফিলিস্তিনকে সুসংহত ও সংঘবদ্ধ করে রেখেছে স্বয়ঃ ফিলিস্তিনীরাই।
ইসলামের আর্বিভাবের পর অধিকাংশ ফিলিস্তিনীই ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে। এবং ফিলিস্তিনের প্রধান ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায় আরবী ভাষা। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর (১৫ হিজরী) থেকে অত্যাবধি ফিলিস্তিনেরা ইসলাম ধর্মের উপর অবস্থান করছে। ইতিহাসের এই সুদীর্ঘকালব্যাপী ইসলাম ব্যতীত তাদের আর দ্বিতীয় কোন পরিচিতি নেই। এমন কি ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে ইহুদীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ফিলিস্তিনের একটি অংশ অন্যান্য দেশে হিজরত করতে বাধ্য হলেও তাদের ইসলামী পরিচিতির মধ্যে কোন হেরফের হয়নি।
৮। ইহুদীদের ভিত্তিহীন দাবি : ইহুদীরা দাবি করে থাকে যে তারা প্রাচীন কাল থেকে ফিলিস্তিনে বসবাস করে আসছে। ফিলিস্তিনীরা উক্ত অঞ্চলের নির্মাণে বিগত ১৫ শত বছর ধরে লিপ্ত রয়েছে। আর ইহুদীদের দখলদারীতে ১৯৪৮ সালের কথা। তবে একথা ঠিক যে ইহুদীরা ফিলিস্তিনের কিছু অংশে শাসন কায়েম করার সুযােগ লাভ করলে সমগ্র ফিলিস্তিনের নয়। ৫৮৪ খ্রীষ্টাব্দে পূর্ব থেকে ১০০০ খ্রীষ্টাব্দ পূর্ব পর্যন্ত। অর্থাৎ চারশত বৎসর মাত্র। এরপর বনী ইসরাইলরা কিনান ভূমি পরিত্যাগ করে অন্যত্রে চলে যায়। ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তাদের কথিত জন্মভূমি স্মরণে আসেনি।
আসলে ফিলিস্তিনের কিছু অংশে রাজত্ব করা উক্ত অঞ্চলে অন্যান্যদের রাজত্ব করাই মতই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের বেশ কয়েকটি জাতি ফিলিস্তিনে শাসন কায়েম করেছে। কিন্তু উক্ত অঞ্চলে যে জাতি ক্রমান্বয়ে বসবাস করে আসছে এবং যারা ফিলিস্তিনকে নিজ মাতৃভূমি বলে মনে করে তারা হ’ল ফিলিস্তিন জাতি। ফিলিস্তিনে বনী ইসরাইলের রাজত্ব করার অর্থ অন্যান্য জাতির রাজত্ব করার মতই। যেমন আশরী যুগ অথবা পারস্যের শাসনামাল। মিসরের ফিরাউনের রাজত্ব অথবা গ্রিক, ইটালিয়ানদের ফিলিস্তিনে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা। প্রত্যেক শাসকের শাসনের অবসান হয়েছে। অথচ ফিলিস্তিনীদের দেশ যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে। ফিলিস্তিনীরা নিজেদের মাতৃভূমি পরিত্যাগ করে কখনাে কোথাও যায়নি। তারা নিজেদের দেশেই বসবাস করে আসছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর তারা আর কোন ধর্মগ্রহণ করেনি। ফিলিস্তিনে ইসলামের রাজত্ব সুদীর্ঘ বারশত বছর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ফিলিস্তিনের ইতিহাসে ৯০ বছরের কিছু কম সময় এমন কেটেছে যখন খ্রীষ্টানরা এক যুদ্ধে বিজয় লাভের পর ফিলিস্তিনে শাসন কায়েম করার সুযােগ লাভ করে।
অপরদিকে ইহুদী জাতি ফিলিস্তিনে কিছুকাল অস্থায়ীভাবে বসবাস করার পর দেশ ত্যাগ করে চলে যায়। যা আঠারােশত বছর পর তাদের ভূমির কথা স্মরণ আসে। ১৩৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে বিংশত শতাব্দি পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ সময় ফিলিস্তিনে ইহুদী জাতির কোন উপস্থিত ছিল না। না রাজনৈতিকভাবে আর না সাংস্কৃতিকভাবে। এমনকি ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন করা ইহুদী ধর্মে হারাম বা তাবৈধ বলে বিবেচিত হয়।
প্রখ্যাত ইহুদি লেখক রয়টার আরথার কোসটালারের সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী ৮০ শতাংশ ইহুদীর দৃঢ় বিশ্বাস ঐতিহাসিকগত ভাবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইহুদীদের আর কোন সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য বর্তমানে ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইসরাইলের ইয়াকুব (আঃ) বংশদ্ভূত নয়। বরং এদেরকে ‘ইহুদে খিযির’ বলা হয়। উক্ত বংশটি ইসরাইল বংশদ্ভূত নয়। ‘ইহুদে খিযির’ তুর্কি জাতির বংশদ্ভূত। যাদের দেশ ‘কত্তকাস’ (ফোকেশাস) এর উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত। উক্ত বংশের ব্যক্তিরা অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে। ইহুদী ধর্মাবলম্বীরা যদি কোন কালে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করতে চায়, তবে ফিলিস্তিন নয়, তাদের দেশ বরং রাশিয়ায় দক্ষিণাঞ্চল।
ইহুদীরা দাবি করে থাকে যে, মুসা (আঃ) এর যুগ থেকেই তাদের ফিলিস্তিনের সঙ্গে নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ঐতিহাসিকগত ভাবে একথা সত্য যে, বনী ইসরাইলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এক যুদ্ধে হযরত মুসা (আঃ) এর সঙ্গে ফিলিস্তিনে যেতে অস্বীকার করেছিল। বাবল (ইরাক)-এ স্থানান্তরিত হয়ে বসবাস শুরু করে ইহুদিরা। এরপর ফরাসি সরকার যখন ফিলিস্তিনের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তখন ফরাসি সরকার প্রধান ‘ঘােরস’ ইহুদীদের ফিলিস্তিনের যাবার অনুমতি প্রদান করেছিল। কিন্তু ইহুদীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইরাকে বসবাস করাকেই প্রাধান্য দেয়। ফিলিস্তিনে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এতদ্বব্যতিত বিশ্বের প্রাচীন যুগ থেকে অদ্যাবদি ফিলিস্তিনে ইহুদী জাতির সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে থাকা ইহুদীদের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের অধিক নয়।
৯। ক্রুসেড যুদ্ধের সূচনা : ক্রুষেড যুদ্ধ যা ফিলিস্তিনে জাতীয়তবাদ প্রতিষ্ঠা করার ওপর জোর দিয়েছিলাে। এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ক্রুশেড যুদ্ধ ইউরােপে খ্রষ্টানদের দ্বারা সূচীত হয়। সময়টি হ’ল ষষ্ঠদশ শতাব্দি। ইউরােপে সেই সময় জাতীয়তাবাদ ও দেশত্মাবাদের আন্দোলন ক্রুষেড যুদ্ধে শক্তি সঞ্চারিত হতে সাহায্য করেছিল।
পূর্ব ইউরােপে খ্রীস্টানদের অগ্রগতিতে উক্ত ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। যাকে ইহুদীরা রাজনৈতিকভাবে পরিভাষায় ‘ইহুদী সমস্যা’ (Jewish Question) বলা হয়ে থাকে। এইভাবে রাশিয়াতে ইহুদীদের নিধন যজ্ঞ কুষে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। আমেরিকা এবং ইউরােপে ইহুদী জাতির ক্রমবর্ধমান প্রভাব অন্যদিকে ইহুদীদের মধ্যে ‘তানবীর’ নামক আন্দোলনের মাধ্যমে ইহুদী মতবাদ, ধ্যানধারণা ও বিশ্বাসের মধ্যে এমন চমক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যা ইউরােপে গৃহীত হবে। অর্থাৎ বিশ্বাসকে সামাজিক সমস্যার ওপর প্রাধান্য না দেওয়া। ইহুদী জাতির এই সকল প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ার কারণে খ্রীষ্টানরা শক্তির উত্থানে সাহায্য করেছিল।
১০। পাশ্চাত্য শক্তির ষড়যন্ত্র : পাশ্চাত্যের দেশগুলি বিশেষ করে বৃটেনা একাধিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্বে ইহুদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে। একটি ক্ষুদ্র অথচ ভয়ঙ্কর রাষ্ট্র দ্বারা একদিকে ইসলামী বিশ্বের দুটি বাহু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যার একদিকে মুসলিম বিশ্ব অপর প্রান্তে এশিয়ার মুসলিম দেশগুলি। মধ্যস্থলে ইহুদী রাষ্ট্র যা মুসলিম দেশগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ইহুদী রাষ্ট্র মুসলিম ঐক্যের মধ্যে সব থেকে বড় বাধা। এই ষড়যন্ত্রের কারণে ইসলামী বিশ্বে সংঘবদ্ধ শক্তির উত্থান ও উন্নয়নের সম্ভাবনার পথে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম দেশগুলি কেবল কনজিউমার (ক্রেতা)। ইহুদী রাষ্ট্রটি প্রাচ্যের দেশগুলিতে পশ্চিম দেশগুলির ধনসম্পদ বিক্রয়ের পথ। অভিশপ্ত ইহুদী রাষ্ট্রের কারণে ইসলামী ঐক্য সৃষ্টি হতে পারছে না। অভিশপ্ত ওই রাষ্ট্রটির অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হুকুমে উসমানী খিলাফতের শূন্যস্থান পূরণ হতে পারতাে। বৃহৎ ইসলামী ঐক্যের পথে বাধা ইসলামী রাষ্ট্রগুলির মাঝে ইহুদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। ভৌগলিক ও ভাবনার মেলবন্ধনের মাঝে বাধা হ’ল ইহুদী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। অতএব ইহুদী রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ব্যাতীত আরব জাতির মধ্যে স্বাভাবিক মিলন সম্ভব হতে পারে না।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।