লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
শুরুতেই বলে রাখি যে আহলে হাদীসদের মতে ১৪ শতাব্দী হিজরীর একমাত্র রিজালশাস্ত্রবিদ নাসীরুদ্দীন আলবানীকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা বহুদিন থেকে থাকলেও সময়ের অভাবে লেখা হয়নি। কিন্তু কিছুদিন আগে পশ্চিম বঙ্গের গায়ের মুকাল্লিদ আলেম আনওয়ারুল হক ফাইযী ‘হানাফী কেল্লা’র জবাব লিখতে গিয়ে আলবানী সম্পর্কে যে বাড়াবাড়িমূলক মন্তব্য করেছেন এবং মনসুর আলী নামে এক গায়ের মুকাল্লিদ ‘শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সাঃ)’ নামক বইয়ে আলবানীকে নিয়ে যে সীমা লঙ্ঘন করেছেন তাতে বাধ্য হয়ে আলবানী সম্পর্কে লিখতে শুরু করি।
আমি নাসীরুদ্দীন আলবানী সম্পর্কে যা কিছুই জেনেছি এবং লা মাযহাবীদের আলবানী সম্পর্কে বাড়াবাড়িমূলক মন্তব্যে যা অনুধাবন করেছি তা হল বর্তমান যুগের লা মাযহাবীরা যে বলে তারা কোন মাযহাব মানে না এবং তারা কারো তাকলীদ করে না তা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বরং এই লা মাযহাবীরা চার মাযহাবের মুকাবিলায় পঞ্চম মাযহাব সৃষ্টি করেছে এবং এই মাযহাবের ইমাম নির্বাচিত হয়েছেন তথাকথিত আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী। আর এই মাযহাবকে ‘আলবানী মাযহাব’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। কেননা হাদীসের ব্যাপারে কথায় কথায় এরা আলবানী সাহেবের হাওয়ালা না দিলে মানে না। সেজন্য হাদীসের কোন কিতাব কিনতে গেলে এরা আলবানী সাহেবের তাহকীক করা হাদীসগ্রন্থ কিনে থাকেন। এমনকি এই লা মাযহাবীদের সবচেয়ে বড় প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েকও নাসীরুদ্দীন আলবানীর কট্টর মুকাল্লিদ। কেননা জাকির নায়েক Unity in the Muslim Ummah লেকচারে বলেছেন,
1) “Many of my talks are based on his research, Mashallah.”
অর্থাৎ “মাশাআল্লাহ আমার অনেক লেকচার শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানীর গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরী।”
2) “I am nothing compare to him, I am not even a drop in the ocean compare to Nasiruddin Albani.”
অর্থাৎ “আমি তাঁর তুলনায় কিছুই নই। নাসীরুদ্দীন আলবানী সাগরতুল্য হলে আমি তার তুলনায় এক ফোঁটা পানির সমতুল্যও নই।”
3) See for example I am lay, what I say talk I do my research, but more knowledge in my head or my brain, which I haven’t checked up, but yet I classify. For example, if I hear a statement from Shiekh Nasiruddin Albani, Mashallah, who has died recently, according to me he is one of great Muhaddis of the recent times, What he says, I follow on the face of it, because I chacked up, the scholar Mashallah following Quran and Sahih Hadith.”
অর্থাৎ “উদাহারণস্বরুপ! আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি আমার লেকচারে যাক বলি, সেগুলো নিয়ে আমি গবেষণা করে থাকি। কিন্তু আমার মাথায় বা ব্রেনে আরও অনেক জ্ঞান রয়েছে, যেগুলো আমি অনুসন্ধান করতে পারি না। তবে আমি এর জন্য স্কলারদের শ্রেণীবিভাগ করেছি। উদাহারণস্বরুপ, যদি শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানীর পক্ষ থেকে কোন বর্ণনা পাই, আমার মতে তিনি বর্তমান সময়ের একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তিনি যা বলেন, আমি সে অনুসারে চলি। কেননা আমি অনুসন্ধান করে দেখেছি, মাশাআল্লাহ! তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করেন।”
4) “So if someone gives the Fatwa, local person from here and Nasiruddin Albani, I believe Nasiruddin Albani, if I don’t have time. But what I say in the lecture I check up, because I am responsible for that. But for my own knowledge, if I have to make a opinion, I can’t check up every Hadith, difficult! Difficult for a lay man.”
অর্থাৎ “এখানকার কোন সাধারণ ব্যাক্তি যদি কোনো ফতোয়া প্রদান করে এবং শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী যদি কোন ফতোয়া প্রদান করে, তবে আমি শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানীকে বিশ্বাস করব, যদি আমার নিকট যথেষ্ট সময় না থাকে কিন্তু আমার লেকচারে আমি যা বলি, সেগুলো আমি যাচাই করে থাকি। কেননা এর জন্য আমি দায়বদ্ধ। কিন্তু আমার নিজের জ্ঞানের জন্য যদি কোন বিষয়ে আমার কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে আমি সব হাদীস যাচাই করে দেখতে পারিনা। এটি অনেকি কঠিন! একজন সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কঠিন।”
(তথ্যসূত্রঃ ইউনিটি ইন দ্য মুসলিম উম্মাহ http://qaazi.wordpress.com/2008/07/28/various-public-lectures-by-dr-zakir-naik/ ইউটিউবের এই লিঙ্কে বায়ানটি পাবেন
http://www.youtube.com/watch?v=Szzn9lFg9n0)
এককথায় ডাঃ জাকির নায়েক থেকে শুরু করে সারা পৃথিবীর সমস্ত গায়ের মুকাল্লিদরা নাসীরুদ্দীন আলবানীর মুকাল্লিদ তাই আলবানী সাহেবের কয়েকটি অসার দিক তুলে ধরার জন্য এবং আলবানী যে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এক সুক্ষ্ণ ষড়যন্ত্র তা তুলে ধরার জন্যই আমার এই পুস্তক প্রণয়ন।
একথা আপনারা সকলেই জানেন যে ইহুদী ও নাসারা (খ্রীষ্টান) গোষ্ঠী ইসলামকে ধ্বংশ ও ইসলামের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে। সেজন্য তারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মত মধ্যে কিছু দুবিয়াদার ডুপ্লিকেট (নকল) আলেম সৃষ্টি করেছিল এবং ব্রিটিশ যুগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদকে হারাম ফতোয়া দিয়েছিল। এই চক্রান্তকারী ইসলামের শত্রুরা কিছু আলেমকে কিনে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করলেও কোন মুজাহিদ গোষ্ঠীকে তারা কিনতে পারে নি। ফলে তারা ‘আইএস’ নামক ডুপ্লিকেট মুজাহিদ গোষ্ঠী সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য। মুসলমানদের সবচেয়ে প্রাণপ্রিয় জিনিস হল কুরআন ও হাদীস। ইহুদী ও নাসারারা বুঝতে পারে যে এই কুরআন ও হাদীসের মধ্যে ভেজার সৃষ্টি করতে পারলেই মুসলিম উম্মাহকে পুরোপুরি আয়ত্ত্বে আনা সম্ভব হবে। তাই তারা কুরআন ও হাদীসের মধ্যে ভেজাল সৃষ্টি করার জন্য এই নাসীরুদ্দীন আলবানীকে সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানীতে এই ইহুদী জিয়নবাদীদের দোসর নাসীরুদ্দীন আলবানীর বিরুদ্ধে মুসলিম জগতের বিদগ্ধ উলামায়ে কিরামরা জাগ্রত হন এবং আলবানীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সৌদী আরব থেকে ৫০ এর অধিক গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করে আলবানীর ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেন। পরে আলবানীর আরও গোপন রহস্য ফাঁস হয়ে গেলে তাঁর পিতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে ঘোষনা দিয়ে তিনি কোনোভাবে নাজাত লাভ করেন। আর জনগন আলবানীকে সিরিয়া থেকে বাহির করে। অতঃপর সে চেপে বসে সৌদী জনতার ঘাড়ে। এক পর্যায়ে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। সবাই সোচ্চার হয় তাদের দীর্ঘকালের শায়খ আলবানীর বিরুদ্ধে। ১৯৯১ খৃস্টাব্দে সরকারী নির্দেশে শায়খ ২৪ ঘন্টার মধ্যে পবিত্র আরবভূমি ছেড়ে জর্ডান যেয়ে আত্মরক্ষা পায় । অমরণ তিনি সেখানেই ছিলেন।
পাঠকদের বলি মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। তাই এই পুস্তকের মধ্যে যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি নজরে পড়ে আমাকে জানাবেন । তাহলে পরবর্তী সংস্করনে সংশোণ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে পাঠকদের জানাই, আপনারা দোয়া করবেন; আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দেন এবং খাতিমা বিল খায়ের দান করেন। (গ্রন্থাকার)
নাসীরুদ্দীন আলবানী কে নিয়ে আনওয়ারুল হক ফাইযীর বাড়াবাড়ি
আহলে হাদীসদের নিকট ১৪ শতাব্দী হিজরীর অন্যতম রিজালবিদ হলেন তথাকথিত আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী। এই নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব রফয়ে ইয়াদাইন না করার ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু ফাইযী সাহেব আলবানীর এই তাহকীক মানতে রাজী হননি। যদিও ফাইযী সাহেব আলবানীকে নিয়ে বাড়াবাড়ি মন্তব্য করেছেন । আলবানীকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ফাইযী সাহেব লিখেছেন,
“হ্যাঁ! আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী ১৪ শতাব্দী হিজরীর অন্যতম রিজালবিদ ছিলেন। নূহ নাজাতী হানাফী আলেমের প্রিয় পুত্র ছিলেন । ইমাম আবু হানীফার উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান হতে অদ্যবধি হানাফী বংশে তাঁর ন্যায় মুহাদ্দিস জন্মগ্রহণ করেন নি বলেই আমরা বিশ্বাস করি । কিন্তু তিনি একজন মানুষ ছিলেন । তাঁর দ্বারাও ভূল হওয়া স্বাভাবিক ।” (হানাফী কেল্লার পোষ্ট মর্টেম, পৃষ্ঠা–১৮)
দেখুন আলবানীর মুকাল্লিদ আর কাকে বলে। আমরা ইমাম আবু হানীফার মুকাল্লিদ হওয়া সত্যেও তাঁর সম্পর্কে এত বাড়াবাড়ি মন্তব্য করি না। আমরা কখনোই ইমাম আবু হানীফা (রাঃ) সম্পর্কে বলি না যে তাঁর মত মুহাদ্দিস অন্য কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেন নি। এবং বেরেলীরাও বলে না আজ পর্যন্ত মাওলানা আহমদ রেযা খানের মত মুহাদ্দিস অন্য কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেন নি । বোঝা গেল হাদীস গবেষনায় লা মাযহাবীরা আলবানী সাহেবের ঘোর মুকাল্লিদ। এবং রেযাখানীদের থেকেও এই লা মাযহাবীরা অধিক বিদআতী।
এখন দেখা যাক নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব কত বড় মুহাদ্দিস ছিলেন?
কে এই নাসীরুদ্দীন আলবানী?
১৪০০ শতাব্দীর একমাত্র রিজালশাস্ত্রবিদ আহলে হাদীসদের মহামান্য নাসীরুদ্দীন আলবানী (১৩৩২ হিজরী) ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৪ অক্টোবর ১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। তিনি তারাবীহ সংক্রান্ত ‘সালাতুত তারাবীহ’ নামে একখানি পুস্তক রচনা করেন। সেই পুস্তকে আলবানী সাহেবের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, “শায়খ আলবানী জামিয়া ইসলামিয়া মদীনা ইউনিভার্সিটীর সদর মুদার্রিস। তিনি বংশগতভাবে ইংরেজ ছিলেন। তাঁর পরিবার যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখন তাঁরা হানাফী মযহাব অবলম্বন করেন। তাঁকে আল্লাহ পাক ইলম ও কামাল দান করেছেন যে তিনি তাহকীক করে আহলে হাদীস হয়ে যান। শাম দেশে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি হাদীসের জ্ঞান খাস করে আসমায়ে রিজাল শাস্ত্রে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেন। আরব দেশে তাঁর ইলমী যোগ্যতা ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে যে হাদীসের দক্ষতায় তাঁর চেয়ে বেশী তাহকীক আর কেউ করে নি।” (ফতোয়ায়ে উলামায়ে হাদীস, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৭৬)
নাসীরুদ্দীন আলবানী র আসল রহস্য
এতে কোন সন্দেহ নেই যে জলের বুদবুদ যখন ফেনা তুলে উঠে তখন অনেক জায়গা যে গিরে নেয় কিন্তু যখন সে বিলুপ্ত হয় তখন তার আসল রহস্য ফাঁস হয়ে যায়। ঠিক সেই রকম এতেও কোন রকমের সন্দেহ নেই যে আলবানীর যখন উদয় হয় তখন অনেক মানুষ তাঁর প্রতি প্রভাবিত হয়ে পড়েন কিন্তু যখন মুহাদ্দিসে কবীর জইবুর রহমান আল আজমীর দুরবীন লাগিয়ে আলবানীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয় তখন আলবানীর আসল রহস্য ফাঁস হয়ে গেল। মুহাদ্দিস জইবুর রহমান আল আজমী সাহেব কয়েক খন্ডে নামক গ্রন্থ লিখে প্রকাশ করেন এবং সেই নও মুসলিম আলবানীর আসল রহস্য ফাঁস করে দেন। তারপর হাম্বলী মাযহাবের আর এক মুহাদ্দিস উঠে এলেন, তিনিও(তানাকুযাত আলবানী ওয়াজেহাত) পুস্তক লিখে এই নও মুসলিম আলবানীর গোপন রহস্য দুনিয়ার সম্মুখে ফাঁস করে দেন। তিনি আলবানীর উসুলে হাদীসের পরস্পরবিরোধীতা, আসমায়ে রিজালের পরস্পর বিরোধীতা, হাদীসের মধ্যে সহীহ এবং জয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে তাঁর পরস্পর বিরোধীতা, একত্রিত করে দেন। তারপর আলবানী সাহেব যখন ৮ রাকআত তারাবীহর নামায প্রমাণ করার জন্য ‘সালাতুত তারাবীহ’ লিখলেন এবং ২০ রাকআত তারাবীরর নামাযকে বিদআত বলে ১৪০০ শত বছরের আহলে সুন্নতকে বিদআতী বলে আখ্যায়িত করলেন তখন এই নও মুসলিম আলবানীকে আরব থেকে বিতাড়িত করা হয়। (তথ্যসূত্রঃ তজল্লিয়াতে সফদর) এরপর যখন গায়ের মুকাল্লিদরা এই নও মুসলিম আলবানীকে নিয়ে আকাশ পাতাল এক করে দেন এবং তাঁকে নিয়ে মাথায় তুলে কুদোকুদি করতে শুরু করে দিল তখন মহাশয় আলবানী সাহেব মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় হাদীসগ্রন্থ সিহাহ সিত্তাহর উপর হাত চালালেন। এই আলবানী মহাশয় সুনানে আরবাহকে প্রকাশ্যে দুই টুকরো করে দিলেন। যেমন, সহীহ আবু দাউদ জয়ীফ আবু দাউদ, সহীহ নাসায়ী ও জয়ীফ নাসাই, সহীহ তিরমিযী ও জয়ীফ তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ও জয়ীফ ইবনে মাজাহ। ঠিক সেই রকম সহীহ মুসলিম শরীফের উপরেও তিনি হামলা চালান। যখন সিহাহ সিত্তাহ হাদীসের এই অবস্থা আলবানী সাহেব করে ফেললেন তখন বাকি হাদীসের কিতাবের আর কি মহত্ব রয়ে গেল? আর এই কাজ ইংরেজদের ঐরশজাত সন্তান নও মুসলিম নাসীরুদ্দীন আলবানীর মতো গায়ের মুকাল্লিদ লা মাযহাবী ছাড়া আর কে করতে পারে?
আর এই আলবানীই নাকি ফাইযী সাহেবের নিকট ১৪ শতাব্দী হিজরীর অন্যতম সেরা রিজালবিদ এবং তাঁর মত নাকি বড় মুহাদ্দিস ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান থেকে আজ পর্যন্ত হানাফী বংশে জন্মগ্রহণ করেন নি। আস্তাগফিরুল্লাহ। সুম্মা আস্তাগফিরুল্লাহ। আলবানীর গোঁয়ার মুকাল্লিদ আর কাকে বলে?
নাসীরুদ্দীন আলবানী র একটি কুকর্ম
যদিও বর্তমানে কিছু উদারমনা গায়ের মুকাল্লিদ ফিরকার লোক বলেন যে তারাবীহর নামায ২০ রাকাআত পড়া জায়েজ়। এর মধ্যে ৮ রাকাআত সুন্নত হবে এবং ১২ রাকআত নফল বলে গন্য হবে। কিন্তু এই কথা আলবানী সাহেব মানতে রাজী নন। তিনি বলেন যে তারাবীহর নামাজ ১১ রাকাআতের বেশী পড়া জায়েজ নইয়। তবে ১১ রাকাআতের থেকে কম পড়া জায়েজ়। আলবানী মনে করেন ১ রাকাআত তারাবীহর নামাজও সুন্নত দ্বারা প্রমানিত যার উপর সলফ সালেহীনদের আমল আছে। (সালাতুত তারাবীহ, পৃষ্ঠা-১০৮) আলবানী সাহেব এও মনে করেন তারাবীহর, তাহাজ্জুদ ও বেতের একটাই নামাজ । যদি ১ রাকাআত নামাজ পড়া হয় তাহলে তারাবীহও আদায় হয়ে গেল। (সালাতুত তারাবীহ, পৃষ্ঠা-৮৬) কিন্তু এর উপর আলবানী সাহেব কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেন নি যে আল্লাহ বা আল্লাহর রসুল (সাঃ) একথা বলেছেন যে তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও বিতের একটাই নামাজ এবং ১ রাকাআত পড়লে তিনটি নামাজই আদায় হয়ে যাবে। যদিও সমস্ত মুহাদ্দিসরা একমত যে তারাবীহর, তাহাজ্জুদ ও বিতের আলাদা আলাদা নামাজ।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় কিছুদিন আগে আহলে হাদীসরা তারাবীহর, তাহাজ্জুদকে আলাদা আলাদা নামাজ বলে মনে করতেন। যেমন আহলে হাদীসদের মহামান্য আল্লামা ওয়াহীদুজ্জামান হায়দ্রাবাদী, ইমাম শাওকানী, মাওলানা সানাউল্লাহ আমৃতসরী, মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলবী প্রভৃতিরা তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাজকে আলাদা আলাদা বলে মনে করতেন। এরপর আহলে হাদীসরা তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাজকে একই নামাজের দুটি নাম বলে মনে করেন। তাঁরা বলেন, তারাবীহর নামাজ পড়লেই তাহাজ্জুদও আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু আলবানী সাহেব সবাইকে টেক্কা মেরে বলে দিলেন ১ রাকাআত নামাজ পড়লেই তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও বিতের সব আদায় হয়ে যাবে। আর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতে যে যত কমতি করতে পারবে সে তত বড় আহলে হাদীস । ইবাদত থেকে বঞ্চিত করার এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মানোর বর্তমান নাম হল আহলে হাদীস। এখন আলবানী বলছে ১ রাকাআত নামাজ পড়লে তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও বেতের সব আদায় হয়ে যাবে কিছুদিন পর দ্বিতীয় কোন আলবানীর উদয় হবে এবং সে বলবে, দু’রাকাআত ফজরের নামাজ পড়লে জোহর, আসর, মাগবীব, এশা, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, বেতের, আইয়োবীন, চাশত, এশরাক সব নামাজ আদায় হয়ে যাবে। এরপর হয়তো তৃ্তীয় কোন আলবানীর উদয় হবে এবং সে বলবে, বছরে একবার ইদের নামাজ পড়লে সারা বছরের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। সত্যই আহলে হাদীসদের রহস্য বোঝা ভার। লক্ষ্য করলে দেখা যায় শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে তারাবীহর নামাজ বলে কোন নামাজ নেই। আপরদিকে ছোট শিয়া (রাফেযী) আর্থাৎ আহলে হাদীসরাও তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও বেতের নামাজকে এক বলে তারাবীহর আস্তিত্বকে আস্বীকার করে বসল। এখন আমি আহলে হাদীসদের বলি, ভায়েরা আপনারা ১ রাকাআতের ঘোমটাটা কেন মুখে দিয়ে বসে আছেন? সেটাকে ছিঁড়ে ফেলুন এবং বলুন, “আমরা শিয়া।” আহলে হাদীসদের বিখ্যাত আলেম আল্লামা ওয়াহীদুজ্জামান হায়দ্রাবাদী তো লিখেই দিয়েছেন, “আমরা আহলে হাদীসরা আলী ভক্ত শিয়া।” (নজুলুল আবরার, পৃষ্ঠা-৭)
মুহাদ্দিসদের প্রতি আলবানীর বেয়াদবী
ইমাম বুখারী (রহঃ) কে অমুসলিম বলেছেন নাসীরুদ্দীন আলবানী
আনওয়ার ফাইযীর দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানীফার উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান থেকে শুরু করে সমস্ত হানাফীদের থেকে বড় মুহাদ্দিস নাসীরুদ্দীন আলবানী ইমাম বুখারী (রহঃ) কে সরাসরি অমুসলিম বলে ঘোষনা করেছেন।
আসলে ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর স্বীয় গ্রন্থ বুখারী শরীফে আল কুরআনের সুরা ক্কাসাসের ৮৮ নং আয়াত “আল্লাহর চেহরা ব্যাতিত সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে” এর ব্যাখ্যায় আল্লাহর চেহরা বলতে আল্লাহর রাজত্ব বুঝিয়েছেন। তিনি আল কুরআনের উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহর রাজত্ব ব্যাতিত সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
আলবানী কিন্তু ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ব্যাখ্যা মানতে রাজী তো ননই বরং সরাসরি তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) কে হামলা করে বলেন, “হে আমার ভাই, এটি কোন মুমিন মুসলমানের কথা হতে পারে না।”
আলবানীর দাবী হল, “হুবহু তা’তিলের পর্যায়ভূক্ত ব্যাখ্যাটি বুখারী শরীফে নেই।” কিন্তু বাস্তব কথা হল, বুখারী শরীফের সব নুসখায় উক্ত ব্যাখ্যাটি মওজুদ আছে। এমনকি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বুখারী শরীফের যে অনুবাদ প্রকাশ করা হয় তাতেও উক্ত ব্যাখ্যাটি রয়েছে। লক্ষ্য করুন,
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বুখারী শরীফের বঙ্গানুবাদ, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-১৩০, তফসীর অধ্যায়, সুরা ক্কাসাস এর তফসীর)
ইমাম বুখারী (রহঃ) ছাড়াও অনেকেই হুবহু ইমাম বুখারীর মত উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁদের মধ্যে হলেন,
১) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ)। (দেখুন, বায়ানু তালবিসিল জাহামিয়া, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৫৮১, মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪২৮)
২) আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম (রহঃ)। (দেখুন হাদীল আরওয়াহ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৯৬)
৩) ইমাম মারওয়াদী (রহঃ)। (দেখুন আন নুকাতু ওয়াল উয়ূন তথা তফসীরে মারওয়াদী, পৃষ্ঠা-২৭৩)
৪) ইমাম বাগাবী (রহঃ)। (দেখুন তফসীরে বাগাবী, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-২২৮)
৫) ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী (রহঃ)। (দেখুন তফসীরে সমরকন্দী)
৬) ইমাম সা’লাবী (রহঃ)। (দেখুন তফসীরে সালাবী, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৬৭)
সালাফী শায়েখরাও উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মত করেছেন । তাঁরা হলেন,
৭) সাইদ বিন নাসের আল গামিদী। (দেখুন আর রাদ্দুল আলা মুনকিরি সিফাতাইল ওয়াজহি ওয়াল ইয়াদ, পৃষ্ঠা-৭০)
৮) শায়খ আবু উমর সুলাইমান আল আশকার। (দেখুন আল জান্নাতু ওয়ান নার, পৃষ্ঠা-১৭০)
৯) সালাফীদের বিখ্যাত শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল গুনাইমান (শরহু কিতাবিত তাউহীদ মিন সহিহিল বুখারী)
তাহলে দেখুন নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব কিরকম ইমাম বুখারী (রহঃ) সহ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ও নিজেদের সালাফী আলেমদেরকেও স্পষ্ট ভাষায় অমুসলিম বলে গণ্য করেছেন। এই হল নাসীরুদ্দীন আলবানী।
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন ‘তা’তিলের ব্যাপারে সালাফীদের বাড়াবাড়ি’, লেখক-মুফতী ইজহারুল ইসলাম আল কাউসারী)
শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহঃ) এর প্রতি আলবানীর অভিশাপঃ
শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (১৩৩৬/১৯১৭-১৪১৭/১৯৯৭) এক অন্যতম যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এবং কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘ ২৫ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে সুদানের Um Durman Islamic University এবং ১৯৭৮ সালে ইয়ামেনের সানআ ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসার ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশাতেই ৬৫ খানা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহঃ) এর প্রতি নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব লিখেছেন,
অর্থাৎ “আল্লাহ তায়ালা তোমার হাত অবশ করে দিক এবং তোমার জিহ্বাকে কর্তন করুক।”
আলবানী আরও বলেন, “সে (শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ) হল উটের প্লেগ রোগের মত একটা মহামারী (গুদ্দাতুল বাযীর)। অতপর তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “তোমরা কি জান উটের প্লেগ কি?” (কাশফুন নিকাব, পৃষ্ঠা-৫২)
ডাঃ ইউসুফ আল কারযাবী সম্পর্কে আলবানী সাহেবের বেআদবীঃ
নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব ডাঃ ইউসুফ আল কারযাবী সম্পর্কে বলেছেন,
অর্থাৎ “তুমি ইউসুফ কারযাবী থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখো এবং তাঁর সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ছিন্ন করো।”
তিনি ডাঃ ইউসুফ আল কারযাবী সম্পর্কে আরও বলেছেন,
অর্থাৎ “ইউসুফ আল কারযাবী শরীয়াত বিরোধী ফতোয়া প্রদান করে, তার কাছে রয়েছে ভয়ঙ্কর সব দর্শন।”
(http://www.youtube.com/watch?v=yRpKoWWUECU&feature=player_embedded)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে আলবানী র বেআদবী
হাদীসুল গদীর সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে বলেছেন,
অর্থাৎ “আমি শায়খ ইবনে তাইমিয়াকে দেখেছি, তিনি হাদীসের প্রথম অংশকে দুর্বল বলেছেন এবং হাদীসের শেষ অংশকে তিনি মিথ্যা বলেছেন। আমার ধারণামতে ‘হাদীসকে জয়ীফ বলার ক্ষেত্রে এটি ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর বাড়াবাড়ি, যা তাঁকে হাদীসটি জয়ীফ বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে; অথচ তিনি হাদীস বর্ণনার বিভিন্ন পরম্পরা খতিয়ে দেখেন নি। এবং এ ব্যাপারে গভীর দৃষ্টিপাত করেন নি।” (সিলসিলাতুস সহীহা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩৪৩-৩৪৪, হাদীস নং-১৭৫০)
আল্লামা জালালুদ্দন সুয়ুতী (রহঃ) সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন আলবানী র বেআদবী
আল্লামা জালালুদ্দন সুয়ুতী (রহঃ) সম্পর্কে আলবানী লিখেছেন,
অর্থাৎ “কী আশ্চর্য্য! জালালুদ্দীন সুয়ুতী তাঁর জামে সাগীরে কিভাবে এ হাদীস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবোধ করলেন না ।” (সিলসিলাতুজ জয়ীফা, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৭৯)
তিনি জালালুদ্দীন সুয়ুতী সম্পর্কে আরও লিখেছেন,
অর্থাৎ “জালালুদ্দীন সুয়ুতী হাঁক-ডাক ছেড়ে থাকেন।” (সিলসিলাতুজ জয়ীফা, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮৯)
ইমাম হাকেম, ইমাম যাহাবী, এবং মুনযিরী (রহঃ) সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন আলবানী র বেআদবী
নাসীরুদ্দীন আলবানীর দৃষ্টিতে একটা হাদীস সহীহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে সহীহ বলায় তিনি হাদীসের বিখ্যাত তিন মুহাদ্দিস ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরী (রহঃ) সম্পর্কে বলেছেন,
“অর্থাৎ “হাকিম বলেছেন হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেছেন। ইমাম মুনযিরী ‘তারগীব ও তারহীব” নামক কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে, তত্ত্ব বিশেষনের প্রতি উদাসীনতা, তাকলীদের প্রতি আত্মসমর্পন (অন্ধানুকরণ), নতুবা একজন বিশেষনধর্মী আলেম কিভাবে একে সহীহ বলতে পারেন।” (সিলসিলাতুজ জয়ীফা, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪১৬)
হাফেয তাজুদ্দীন সুবকী সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন আলবানীর বেআদবী
হাফেয তাজুদ্দীন সুবকী সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেছেন,
অর্থাৎ “মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামি তাঁকে প্ররোচিত করেছে । তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলোচনা করে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উপকারিতা নেই।” (সিলসিলাতুজ জয়ীফা, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৫)
তাহলে দেখুন নাসীরুদ্দীন আলবানী এতটাই বেয়াদব যে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের প্রখ্যাত মুহাদ্দিসদেরকে কটুক্তি করতে ছাড়েন নি। সেজন্য বিশ্ববিখ্যাত আলেম হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ) আলবানী সম্পর্কে বলেছেন,
অর্থাৎ “শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী পৃথিবীর বিখ্যাত গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী আলেমদের ভূল ধরার ব্যাপারে চরম বেপরোয়া। এ পথে তিনি কাউকেই মুক্তি দেননি । আপনি দেখবেন! সে ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম মুসলিমসহ অপরাপর ইমামদের ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করে। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ইবনে আব্দুল বার (রহঃ), ইবনে হাযাম (রহঃ), ইমাম যাহাবী (রহঃ), ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ), ইমাম সানআনী (রহঃ) সহ আরও অনেককে ভূল সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন। অথচ অনেক অজ্ঞ এবং সাধারণ আলেম তাঁকে বর্তমান যুগের বিরল ব্যাক্তিত্ব মনে করে থাকেন।” (আল আলবানী শুযুযুহু ও আখতাউহু, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৯)
বর্তমান বিশ্বে যে সমস্ত আলেম আলবানীর ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে কিতাব লিখেছেন তাদের কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হল,
১) শায়খ হাবীবুর রহমান আল আজমী (রহঃ) । তাঁর কিতাবের নাম হল,
২) উত্তর আফ্রিকার মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ আলগুমারী (রহঃ)। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৩) শায়েখ আব্দুল আজীজ গুমারী (রহঃ)। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৪) শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল খাজরাযী। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৫) উস্তাদ বদরুদ্দীন হাসান দিয়াব দামেশকী। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৬) শামের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ আল হারারী। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৭) শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৮) শায়খ ইসমাল বিন মুহাম্মাদ আনসারী (রহঃ)। তাঁর কিতাবের নাম হল,
৯) শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহঃ)। তাঁর কিতাবের নাম হল,
১০) শায়েখ হাসান বিন আলী আস সাক্কাফ। তাঁর কিতাবের নাম হল,
১১) শায়েখ হাসান বিন আলী আস সাক্কাফ। তাঁর কিতাবের নাম হল,
১২) ডষ্টর মুহাম্ম্দ সাঈদ রামাদান আল বুয়াইতী
ﺍﻟﻼ ﻣﺬﻫﺒﻴﺔ ﺍﺧﻄﺮ
এখানে মাত্র কয়েকটি কিতাবের নাম উল্লেখ করা হল। আলবানীর ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ অধিকাংশ আলেম স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন । “সাবাতু মুয়াল্লাফাতিল আলবানী” এর লেখক এ ধরণের ৫৭টি কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন। এই সমস্ত কিতাবে আলবানীর ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
বিখ্যাত সালাফী আলেমরাও আলবানীর মতবাদের বিরুদ্ধে কিতাব লিখেছেন। তাঁদের কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হল,
১) শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায।
২) শায়েখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ।
৩) ডঃ আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু যায়েদ।
৪) শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আদ দাবীশ।
৫) সফর বিন আব্দুর রহমান।
৬) মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান সা’আদ।
৭) শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মা’নে আল উতাইবী।
৮) শায়খ ফাহাদ বিন আব্দুল্লাহ আস সুনাইদ।
৯) আবু আব্দুল্লাহ মুস্তাফা আল আদাবী।
১০) শায়খ আতিয়্যা মুহাম্মদ সালিম।
জামিয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ এর দাওয়া বিভাগের প্রধান ডাঃ আব্দুল আযীয আল আসকার নাসীরুদ্দীন আলবানী সম্পর্কে লিখেছেন,
অর্থাৎ “আলবানী এবং তাঁর অনুসারীরা মূলতঃ সালাফী নয়।” (জারিয়াতু উকায, মাজালুর রায়, http://www.soufia.org/alalbany_askar.html)
অর্থাৎ এরা সালাফী হওয়ার দাবী করে কিন্তু বাস্তবে এরা সালাফী নয়।
আলবানী সম্পর্কে আরও কিছু চমৎকার তথ্য
আরব বিশ্বে ও বর্তমান দুনিয়ার কথিত আহলে হাদীস মতবাদ বিস্তারের রূপকার শায়খ নাছিরুদ্দিন আলবানী মৃত-১৯৯৯ ইং। রাসূল (সা.) এর অসংখ্য হাদীসকে বিব্রত করার মূল নায়ক তিনি। তিনিই সহীহ হাদীসকে যয়ীফ আর যয়ীফ হাদীসকে সহীহ বলে বিভ্রান্ত করার মূলমন্ত্র শিখিয়েছেন। এবং চির মীমাংসিত বিষয়ে উস্কানীমূলক বক্তব্য তিনিই সূচনা করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন আকাবিরগণের প্রতি বেয়াদবীমূলক আচরণ। হানাফীমাযহাবের দলীল সরূপ কোনো হাদীস পেলেই মনগড়া উক্তি। আসলে এসব বিষয়ের মূল হলো কারো নিকট তিনি পড়ালেখা করেন নি নিজে নিজেই পড়ে পড়ে কিছু কিতাব রচনা করেছেন। মদীনা ইউনিভার্সিটির উস্তাদ ডা. আনিস তাহের ইন্দোনেশী দুই সপ্তাহ ব্যাপি তার জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন কিন্তু এতেও তিনি শায়খ আলবানির শিক্ষা ডিগ্রি বিষয়ক কিছুই বলতে পারেন নি। শুধু হালব এর এক ব্যক্তি থেকে হাদীসের অনুমতি পান এতটুকুই বলেছেন। এবং তিনি বলেন, তার ব্যক্তিগত অধ্যায়ন এর কারনেই পথভ্রষ্ট হয়। আরবরেব প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, অসংখ্য গ্রন্থের নির্ভরযোগ্য গবেষক আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা তার রচিত “আসারুল হাদীস’’ নামক কিতাবের ৫১ নং পৃষ্ঠায় লিখেন-
এছাড়া এই ব্যক্তির তো কোন শিক্ষক নেই। সিরিয়ার হালবের জনৈক ব্যক্তি তাকে হাদীস চর্চার মাত্র অনুমতি দিয়েছেন। তবে তার কাছেও নাসীরুদ্দীন আলবানী নিয়মিতভাবে পড়া লেখা করেননি। আর আমরা তার জীবনী গ্রন্থে যা পেয়েছি, তারই লিখিত বই ‘সিফাতুসসালাত’ এবং ‘সালাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থ দু’টির অনুবাদক আলবানীর জীবনীতে লিখেন, তিনি তার পিতার পেশা, ঘড়ি মেরামতের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। অতএব কোন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করার তার সুযোগ কোথায়? এ জন্যই তার রচিত কিতাবগুলোর মাঝে রয়েছে প্রচন্ড ভুল। আর ব্যক্তিগত মতামতের গরম বাজার। তাই সারা বিশ্বব্যাপি সচেতন ওলামায়ে কেরামগন মেতে উঠেছে তার এসব ভুলগুলোকে কিতাবের মাধ্যমে লিখে- যেমন বিশ্ব বরেণ্য মুহাদ্দিস মাও. হাবীবুর রহমান আ’যমী (রহ.) তার গ্রন্থ(শায়খ আলবানীর ভুলভ্রান্তি ও বিচিত্র মতবাদের দাস্তান) এর ভুমিকায় লিখেন-
“আল্লাহর কসম! সেই আলবানী হাদীস সম্পর্কে এতটুকু জ্ঞানও রাখেনা, যা আমাদের সাধারণ মাদরাসাগুলোতে অধ্যয়নরত ছাত্ররা জানে।”
আরবের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস শায়খ মাহমুদ সাঈদ মামদূহ প্রণীত কিতাব ﺗﻨﺒﻴﻪ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ এর মধ্যে লেখা আছে,
ﺇﻟﻰ ﺗﻌﺪﻯ ﺍﻻﻟﺒﺎﻧﻰ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ
(সতর্ক হে মুসলিম! আলবানীর বাড়াবাড়ির জালে সহীহ মুসলিম) এর ২০৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেন- আমি আলবানীর কাল্পনিক কর্মকান্ড ও ভুলক্রটির ফিরিস্তি অবগত হয়েছি। বিশেষ করে সহীহ হাদীসের কিতাব প্রসঙ্গে বাড়াবাড়ির বিষয়টি তার কর্মকান্ডের পরিচয়ের জন্য য়থেষ্ট । উক্ত বইয়ের ২০৫ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন, আলবানী তার মতাদর্শের বিপরীত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কেমন আচরণ করে, প্রসঙ্গত উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করি। আলবানী যখনি কাউকে তার প্রতিপক্ষ বা ভিন্ন মতাদর্শের মনে করেন, তখন দেখতে পাবেন, তিনি বইয়ের পর বই আর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তাকে সমালোচনা করে লিখেই যাচ্ছেন। তার আক্রমনণের স্বরূপ হিসেবে দেখবেন তিনি প্রথিতযশা বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম ও মহামনিষীদের ধ্বংশ হওয়ার কামনা করেন, তাদেরকে মুশরিক, মিথ্যুক, প্রতারক, বিদআতী আখ্যায়িত করতে সামান্যতম কৃন্ঠাবোধ করেন না। যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণকে আলবানী প্রতিপক্ষ মনে করলে, তাদেরকে কাফির, চক্রান্তকারী, দুষ্ট, মুনাফিক, পথভ্রষ্ট ইত্যাদি অপবাদ দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। এতে তার পাষাণ আত্মা তিলমাত্র কাঁপে না। তার ভয়ঙ্কর ন্যক্কারজনক কর্মকান্ডের শীর্ষ তালিকায় ইমাম আহমদ (রহ.) কেও বিদআতী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এধরণের আচরণ তার দু’একটি ঘটনা নয়; বরং এসব বর্ণনা করে শেষ করার ওপারে। এভাবে মাসাইল বিষয়েও অনেক ক্ষেত্রে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম এমন কি সৌদী আরবের আলেমদেরকেও সে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন পদে পদে। তাদের অবহেলার সুযোগে শায়খ আলবানী মতানৈক্য বিভ্রান্তি ও উগ্রতার বীজ রোপে দিয়েছেন। তার আসল বাড়ী সিরিয়ার আলবেনিয়া নামক স্থানে। তার পিতা নূহ নাজাতী একজন আদর্শ মানব, হানাফী মাযহাবের শীর্ষ পর্যায়ের আলেম ছিলেন। ছেলের এধরনের আচরণে পিতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে তাকে ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে ঘোষনা দিয়ে তিনি কোনোভাবে নাজাত লাভ করেন। আর জনগন আলবানীকে সিরিয়া থেকে বাহির করে। অতপর সে চেপে বসে সৌদী জনতার ঘাড়ে। এক পর্যায়ে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। সবাই সোচ্চার হয় তাদের দীর্ঘকালের শায়খ আলবানীর বিরুদ্ধে। ১৯৯১ খৃস্টাব্দে সরকারী নির্দেশে শায়খ ২৪ ঘন্টার মধ্যে পবিত্র আরবভূমি ছেড়ে জর্ডান যেয়ে আত্মরক্ষা পায় । অমরণ তিনি সেখানেই ছিলেন। কিন্তু বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু লোক যারা মাজহাব বিরুধীতার আলবানীর এই ভ্রান্ত কিতাবাদি অনুবাদ করে মানুষের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে। অথচ আলবানীর এসব বিচিত্র মতবাদের বিরুদ্ধে আরব থেকে শতাধিক বই পুস্তুক রচনা হয়েছে।
ভিন্ন চিন্তা চেতনার অধিকারী নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব কোন প্রতিষ্ঠানে বা কোন উস্তাদের নিকট পড়া লেখা করেন নাই, নিজস্ব গবেষনার মাধ্যমে সুন্দর বিন্নস্ত আকারে অনেক গবেষনা মূলক বই পুস্তক পাঠকবর্গকে উপহার দিয়েছেন। তাই এতে তিনি হাদীস যাচাই বাছাইয়ে হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রনীত মূলনীতির পরোয়া না করে নিজ মতাদর্শকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করেছেন। একারণে বিচক্ষন উলামায়ে কেরামের নিকট হাদীসের মান নির্ধারনে আলবানী সাহেবের গবেষনায় অনেক ক্ষেত্রে মতবিরোধ হয়েছে, এমন কি হাদীস গবেষনার জগতের বিজ্ঞ উলামাগন আলবানী সাহেবের ভূলত্রুটি একত্র করে ৫০ টির অধিক পুস্তক রচনা করেছেন । তাম্মধ্যে, ১। তানাফুজাতে আলবানী- গ্রন্থকারঃ- হাসান ইবনে আলী আস সাক্কাফ, প্রকাশনায়ঃ-দারুল ইমাম বিন নবুবী- (উমাম- উর্দুন) এবং ২। তানবীহুল মুসলিম ইলা তাযাদ্দী আলবানী- গ্রন্থকারঃ- মাহমুদ সাইদ মামদুহ-প্রকাশনায়ঃ মাকতাবা-আল ইমাম শাফী- (রিয়াদ-সৌদী) বিষেশ ভাবে উল্লেখ যোগ্য।
নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব অনেক সহীহ হাদীসকে যঈফ এবং যঈফ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। প্রথমে আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে সহীহ হাদিসকে যঈফ বলেছেন, তার উদাহরন : আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্নিত রাসুল (সাঃ) বলেনঃ- যখন তোমাদের কেহ রাত্রিতে নামাযের জন্য দাড়ায়, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাতের মাধ্যেমে আপন নামাযকে শুরু করে। হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) স্বীয়গ্রন্থ সহীহ মুসলিম (১/৫৩২) পৃষ্টায় উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও আল ইহসান ফি তাকরিবে সহীহ ইবনে হিববান-(৬/৩৪০) আল মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল-(৯/১২৯) শরহুস সুন্নাহ লিল ইমাম বগবীতে (৪/১৭) উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসটিকে যুগ শ্রেষ্ট হাদীস গবেষকগন গবেষনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন । তম্মেধ্যে উল্লেখ যোগ্য, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ (১৫/৯৮)- ইমাম বগবী (রহঃ) স্বীয় কিতাব শরহুস সুন্নাতে (৪/১৭) হামজা আহমাদ যাইন (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদে (৯/১২৯) বিশুদ্ধ হাদীস বলে ঘোষনা করেছেন । উল্লেখিত হাদীসটিকে আলবানী সাহেব স্বীয় কিতাব “যইফুজ জামে ও যিয়াদাহ” নামক গ্রন্থে (১/২১৩-) উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি (যঈফ) মর্জাদার দিক দিয়ে দুর্বল। এবার আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে যঈফ হাদিসকে সহীহ বলেছেন, তার উদাহরন : হযরত উমায়ের ইবনে সাইদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন তোমরা মোয়াবিয়া (রাঃ) কে ভাল ভাবেই স্বরণ কর, কেন না আমি রাসুল (সাঃ) থেকে শুনেছি রাসুল (সাঃ) বলেছেন হে আল্লাহ তুমি মোয়াবিয়াকে হেদায়েত দাও। (সুনানে তিরমিজি-৫/৬৪৫) হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ সাব্যস্হ করে স্বীয় কিতাব সহীহ সুনানে তিরমিজি (৩/২৩২) তে উল্লে করেছেন। অথচ হাদীসটির সূত্রের উপর গবেষনার দ্বারা দেখা যায় হাদীসটি মানগত ভাবে অত্যন্ত দুর্বল। সূত্রের একজন রাবী-আমর ইবনে ওকেদ ইনার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য,
১। হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন (মাতরুক) ইনি পরিত্যাজ্য। (তাকরিব-আত তাহজীব-৪২৮পৃঃ)
২। ইমাম বুখারি ও তিরমিজি (রহঃ) বলেন (মুনকারুল হাদীস) ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস গ্রহন করা হয় না।
৩। আল্লামা মারওয়ান (রহঃ) বলেন (কাজ্জাব) মিথ্যাবাদী।
৪। ইমাম নাসায়ী, দারাকুতনী, এবং ইমাম বুবকানী (রহঃ) এনারা এই রাবীর ব্যাপারে একমত হয়ে বলে (মাতরুকুল হাদীস) ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস পরিত্যাজ্য। (তাহজীবত তাহজীব (৮/৯৮)
সূত্রের রাবী আমর ইবনে ওকেদ সম্পর্কে উল্লেখিত ইমামদের বক্তব্যের দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হল হাদীসটি কোন অর্থেই সহীহ হতে পারে না। এমন কি আলবানী সাহেব এই রাবীকে দুর্বল সাব্যস্ত করে ওনার কিতাব “জয়ীফা” তে (২/৩৪১) উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং তিরমিজি (রহঃ) উল্লেখিত হাদীসটি (যঈফ) দুর্বল হিসেবে ইংগীত করে স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে (৫/৬৪৫) বর্ণনার শেষে বলেন, আমর ইবনে ওকেদ দুর্বল রাবীদের অন্তর ভুক্ত।
নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব একই রাবীকে কখনও সিকাহ বা গ্রহনযোগ্য এবং অন্যসময় যঈফ বা অগ্রহনযোগ্য বলেছেন। এ বিষয়টি ওনার গবেষনার জগতের ভূল ত্রুটির অন্যতম একটি অংশ। উদাহরন স্বরুপ একটি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হল। আবু উমামা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন তোমরা মুমিন ব্যক্তির অন্তদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাক, কেননা সে আল্লাহ তা’লার নূরের দ্বারা দৃষ্টি করে থাকেন। (মুজামুল আওসাত-৩/৪৪৫)
উল্লেখিত হাদীসটির সূত্রের এক জন রাবী হলেন আবু সালেহ আব্দুল্লহ ইবনে- সালেহ। হাদীসটি আলবানী সাহেবের মতাদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারনে তিনি আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে দুর্বল আখ্যায়িত করে হাদীসটি অগ্রহনযোগ্য হিসাবে স্বীয় কিতাব “সিলসিলাতুল আহাদীস আজ যইফাতু মওযুয়া” (৪/২৯৯) তে উল্লেখ করেছেন। অথচ আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ-এই একই রাবীর মাধ্যমে ইমাম তিরমিজি (রহঃ) স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে ইবনে মুররা (রাঃ)এর সূত্রে হাদীস উল্লেখ করেছেন রাসুল (সাঃ) বলেন হুসাইন আমার থেকে আর আমি হুসাইনের থেকে-, যে ব্যক্তি হুসাইনকে ভালবাসে সে আল্লাহ তা’লাকে ভালবাসে। হুসাইন আমার পরবর্তি-বংশধর। সূনানে তিরমিজি-(৫/৬১৮) হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ হিসাবে স্বীয় কিতাব সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহা (৩/২২৯) তে উল্লেখ করেন। এবং বলেন হাদীসটির সনদ উৎকৃষ্ট মানের আবু আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ এর ব্যপারে দৃর্বলতার যেই কথা রয়েছে তাহা কোন ক্ষতিকারক নয়। উপরের উদাহরন দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম, একই রাবী আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে আলবানী সাহেব কখনও দুর্বল আবার কখনও গ্রহনযোগ্য সাব্যস্ত করেছেন।
এই হল ইংরেজ বংশের নও মুসলিম খান্দানের আলবানী। হুযুর (সাঃ) এর কবর সরানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আলবানী, সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসের উপর আক্রমণকারী আলবানী, ইমাম বুখারী (রহঃ) কে অমুসলিম আখ্যায়িতকারী আলবানী, একাধিক আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মুহাদ্দিসদেরকে গালিগালাজকারী আলবানী, প্রথিতযশা বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম ও মহামনিষীদের ধ্বংশ হওয়ার কামনাকারী আলবানী, তাদেরকে মুশরিক, মিথ্যুক, প্রতারক, বিদআতী আখ্যায়িতকারী আলবানী, প্রতিপক্ষকে কাফির, চক্রান্তকারী, দুষ্ট, মুনাফিক, পথভ্রষ্ট ইত্যাদি ফতোয়া প্রদানকারী আলবানী, ইমাম আহমদ (রহ.) কেও বিদআতী বলে আখ্যায়িতকারী আলবানী। সৌদী আরবের আলেমদেরকেও সে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের অবহেলার সুযোগে মতানৈক্য বিভ্রান্তি ও উগ্রতার বীজ রোপনকারী আলবানী, পিতার ত্যাজ্যপুত্র আলবানী, প্রথম দিকে সিরিয়া থেকে ও পরবর্তীকালে সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত আলবানী, বেয়াদব আলবানী। হাজার মুহাদ্দিসদেরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্বতন্ত্র মতবাদ সৃষ্টিকারী আলবানী।
আর এই নাসীরুদ্দীন আলবানীর জন্যই আনওয়ারুল হক ফাইযী লিখেছেন,
“হ্যাঁ! আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী ১৪ শতাব্দী হিজরীর অন্যতম রিজালবিদ ছিলেন । নূহ নাজাতী হানাফী আলেমের প্রিয় পুত্র ছিলেন । ইমাম আবু হানীফার উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান হতে অদ্যবধি হানাফী বংশে তাঁর ন্যায় মুহাদ্দিস জন্মগ্রহণ করেন নি বলেই আমরা বিশ্বাস করি । কিন্তু তিনি একজন মানুষ ছিলেন । তাঁর দ্বারাও ভূল হওয়া স্বাভাবিক।” (হানাফী কেল্লার পোষ্ট মর্টেম, পৃষ্ঠা–১৮)
ধন্য ফাইযী সাহেবে অন্ধভক্তি। আচ্ছা ফাইযী সাহেব বলুন তো আলবানী সাহেব কি ইমাম আবু হানীফার ছাত্র ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন (রহঃ) যিনি ১০ লাখ হাদীসের হাফিয ছিলেন, ইয়াহইয়া বিন সায়ীদ আল কাত্তান, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, সুফিয়ান সাওরী, মাক্কী ইবনে ইবরাহীম, প্রভৃতিদের থেকেও বড় মুহাদ্দিস ছিলেন? ১০ লাখ হাদীসের হাফিয ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন সম্পর্কে ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেছেন, “যদি কোন হাদীস ইবনে মায়ীন না জানেন তাহলে জেনে নাও সেটা কোন হাদীসই নয়।” আলবানী কি এর থেকেও বেশী হাদীস মুখস্ত রেখেছিলেন? সত্যিই আপনার বাঁদরামীতে আমরা হতবাক। শুনে রাখুন ফাইযী সাহেব! আপনি আলবানীকে যাই বিশ্বাস করুন তবে আমি বিশ্বাস করি নাসীরুদ্দীন আলবানীর মত কাজ্জাব যদি আগেকার যুগে জন্মগ্রহণ করত আর যদি তিনি কোন হাদীসের রাবী হতেন তাহলে নিঃসন্দেহে সেই হাদীস ‘মওযু’ (জাল) মনগড়া, বানানো, হাদীস বলে তৎকালীন যুগের রিজালবিদরা সেই হাদীসকে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতেন। কেননা আলবানী থেকে শুরু করে আপনি পর্যন্ত পৃথিবীর যত লা মাযহাবী আছে সকলেই শিয়া (রাফেযী)। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের উসুল হল শিয়াদের হাদীস প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
না তুম সদমে হমে দেতে, না ইয়ুঁ ফরিয়াদ হম করতে ।
না খুলতে রাজব সরবস্তা, না ইয়ুঁ রুসওয়াইয়া হোতি ।
আহলে হাদীসদের নিকট পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের তুললায় আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী
আহলে হাদীসদের সেখ মনসুর আলী নামের আর একজন ব্যাক্তি ‘শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সাঃ)’ নামে একখানি বিশাল ৬৪০ পৃষ্ঠার কিতাব লিখেছেন। বইটিতে প্রসংসামূলক অভিমত দিয়েছেন ‘হানাফী কেল্লার পোষ্ট মর্টেম’ এর সম্পাদক আব্দুল্লাহ সালাফী। তিনি অভিমতে লিখেছেন, “শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সাঃ) নামক বইটা নিয়ে আদ্যপান্ত পাঠ করে আমি চরমভাবে উপকৃত।” তিনি এও বলেন বইটি জাতির পক্ষের দলীল দস্তাবেজ। সুতরাং বইটি আহলে হাদীসদের নিকট চরমভাবে গ্রহণযোগ্য। সেই ‘শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সাঃ)’ কিতাবে সেখ মনসুর আলী নাসীরুদ্দীন আলবানীকে নিয়ে চরমভাবে বাড়াবাড়ি করেছেন। আনওয়ারুল হক ফাইযী তো লিখেছেন যে, “ইমাম আবু হানীফার উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান হতে অদ্যবধি হানাফী বংশে তাঁর ন্যায় মুহাদ্দিস জন্মগ্রহণ করেন নি বলেই আমরা বিশ্বাস করি।” কিন্তু সেখ মনসুর আলী ভদ্রতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে আলবানী সম্পর্কে নিয়ে লিখেছেন,
“আবার তারা এটাও বলে যে, অমুক অমুক মুহাদ্দিস যে হাদীসকে সহীহ বলে গিয়েছেন আলবানী (রহঃ) এর একা যঈফ বলাকে আমি মানব না । তাদের ঐ কথার জবাব হল–পূর্বের মুহাদ্দিসরা গবেষণা করার জন্য কম্পিউটার ইন্টারনেট ও ল্যাপটপ পাননি, যা আলবানী (রহঃ) পেয়েছিলেন । তাই তাদের গবেষণার চাইতে আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী ।” [শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সাঃ), পৃষ্ঠা–১২৪]
দেখুন পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের সম্পর্কে কি চরম ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য এবং তাদেরকে কি চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে। এ এমন এক বিভ্রান্তীকর উক্তি যা কোনদিনই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এটা কোন সহীহ হাদীসে আছে যে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ পেয়ে গেলে তার গবেষণার মূল্য বেড়ে যায়। আর কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ প্রভৃতি সৃষ্টি করার জন্য যে জ্ঞান দরকার ছিল সেই জ্ঞান আল্লাহ বিজ্ঞানীদেরকে দিয়েছেন। কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ পেয়ে গেলে যদি হাদীস গবেষণার মূল্য বেড়ে যায় তাহলে আল্লাহ তৎকালীন যুগের বিজ্ঞানীদের দিয়ে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ আবিস্কার করিয়ে নিতেন এবং তৎকালীন যুগের মুহাদ্দিসদের দ্বারা হাদীস গবেষণা করিয়ে নিতেন। আর সত্য কথা বলতে আলবানীর সময়েও কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপের এত ব্যাপক প্রচলন ছিল না যা আজকের যুগে প্রচলন রয়েছে। সুতরাং সেখ মনসুর আলী সাহেবের আলবানী সম্পর্কে এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আর কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ ব্যাবহার করলে যদি হাদীস গবেষণার মূল্য বেড়ে যায় তাহলে তারা আজ থেকে আমাকেও বড় মুহাদ্দিস মেনে নিক কেননা, আমি কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ ব্যাবহার করে থাকি। পারবে তারা এটা মানতে? কোনদিনই পারবে না । তাই কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ ব্যাবহারকারী আলবানীর গবেষণার উপর আমল করাও সম্ভব নয়।
আহলে হাদীসদের দাবী কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ ব্যাবহারকারী আলবানীর গবেষণার মূল্য পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের তুলনায় বেশী। এই তারা করলেও আলবানীর সব গবেষণা এই আনওয়ার ফাইযী, আব্দুল্লাহ সালাফী, মনসুর আলী প্রভৃতি লা মাযহাবীরা মানে না। যেমন, মনসুর আলী সাহেব নিজে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, তারাবীহর নামায ১১ রাকআত। কিন্তু আলবানী তাঁর ‘সালাতুত তারাবীহ’ কিতাবে লিখেছেন, কেউ যদি এক রাকআত বিতের নামায পড়ে তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ সব নামায হয়ে যাবে। অর্থাৎ আলবানী সাহেবের নিকট বিতের, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায একটাই নামায। আচ্ছা মনসুর আলী সাহেবরা আলবানীর এই গবেষনা মানেন? তাঁদের নিকট পুর্বযুগের মুহাদ্দিসের তুলনায় আলবানী সাহেবের গবেষণার মূল্য বেশী। দেখি কবে থেকে এই লা মাযহাবীরা আলবানী সাহেবের মতো তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও বিতের নামাযকে একটাই নামায বলে ফতোয়া দেন।
অপরদিকে আমরা হানাফীরা নামাযে বার বার রফয়ে ইয়াদাইন না করার জন্য দলীল স্বরুপ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর বর্ণিত যে হাদীসটাকে পেশ করি সেটাকে আলবানী সাহেব সহীহ বলেছেন। আলবানী লিখেছেন, “হক কথা এটাই যে, এটা সহীহ হাদীস; এর সনদ ইমাম মুসলিমের শর্তমাফিক হাদীস । যারা এই মা’লুল (রোগাগ্রস্ত বা দুর্বল বলেছেন, আমরা তাদের পক্ষ থেকে এমন কোন গ্রহনযোগ্য দলীল পাইনি, যার ভিত্তিতে এতা প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারেন।” (তাখরীজে মিশকাত, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা- ২৫৪)
দেখি আনওয়ারুল হক ফাইযী, আব্দুল্লাহ সালাফী, মনসুর আলী সাহেব প্রভৃতিরা কবে থেকে নামাযে বার বার রফয়ে ইয়াদাইন না করার স্বপক্ষে ফতোয়া প্রদান করেন, কেননা, তাঁদের নিকট অন্যান্য মুহাদ্দিসের তুলনায় আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী । আর আলবানী সাহেবই গবেষণা করে বলেছেন যে রফয়ে ইয়াদাইন না করার হাদীস সহীহ।
অপরদিকে নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব তাঁর ‘সিফাতু সালাতিন নবী’ কিতাবের ৯৮ ও ৯৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, যেসব নামাযে জোরে কিরআত পড়া হয় সেই নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পড়ার প্রয়োজন নাই। দেখি আনওয়ারুল হক ফাইযী, আব্দুল্লাহ সালাফী, মনসুর আলী সাহেব প্রভৃতিরা কবে থেকে নামাযে ইমামের পিছনে ফাতেহা না পড়ার ফতোয়া প্রদান করেন । কারণ আলবানী সাহেব সরব নামাযে ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়াকে মানা করেছেন। আর তাঁদের নিকট অন্যান্য মুহাদ্দিসের তুলনায় আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী। দেখি আনওয়ারুল হক ফাইযী, আব্দুল্লাহ সালাফী, মনসুর আলী সাহেব প্রভৃতিরা কবে থেকে আলবানী সাহেবের উপরিউক্ত গবেষণার উপর আমল করা শুরু করেন? কারণ তাঁদের নিকট অন্যান্য মুহাদ্দিসের তুলনায় আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী। তাঁরা যদি নিজেদের দাবীতে সত্যবাদী হন তাহলে শীঘ্রই নিজেদের পূর্ব আমল ছেড়ে দিয়ে এক রাকআত বিতের পড়ে ঘুমিয়ে যাবেন এবং রফয়ে ইয়াদাইন করা ছেড়ে দিবেন এবং সরব নামাযে ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়া বন্ধ করে দিবেন। তাঁরা যদি তা না করেন তাহলে আমরা বুঝব তাঁরা নিজেদের দাবীতে সত্যবাদী নন এবং তাঁরা চরম মিথ্যাবাদী।
সেখ মনসুর আলী সাহেব হানাফীদেরকে আক্রমণ করে লিখেছেন,
“তারা নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর গবেষণাকে ভূল প্রমাণিত করার জন্যে নিজেদের বিবেক ও জ্ঞান হারিয়ে সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসকেও যঈফ বলে বেড়াচ্ছে । অথচ তারা বিশ্বমুসলিমদের সমস্ত মুহাদ্দিস উক্ত দুই গ্রন্থকে নিঃসন্দেহে সহীহ বলেছেন । আর ভারতরত্ন মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলে গেছেন যে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের সহীহাইন হাদীসকে যারা মানে না তারা বিদআতী এবং তারা মুসলমানদের বিরোধী পথের পথিক । (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ–২২৮ পৃষ্ঠা)” [শরীয়াতে মুহাম্মাদী (সাঃ), পৃষ্ঠা–১২৪)]
সঠিক কথাই বলেছেন সেখ মনসুর আলী সাহেব যে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (রহঃ) বলেছেন যে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের সহীহাইন হাদীসকে যারা মানে না তারা বিদআতী এবং তারা মুসলমানদের বিরোধী পথের পথিক। এখন আমি প্রমাণ করব আপনাদের তথাকথিত আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী ও আনওয়ারুল হক ফাইযী বিদআতী এবং তারা মুসলমানদের বিরোধী পথের পথিক। কারণ আলবানী সাহেব সহীহ মুসলিম শরীফের বেশ কয়েকটি হাদীসের উপর হামলা করেছেন এবং সেগুলিকে যয়ীফ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই কথা আমি বলিনি লা মাযহাবীদের বিখ্যাত মুনাযির (আসামের মুনাযারায় পলায়নকারী) আনওয়ারুল হক ফাইযী ‘হানাফী কেল্লার পোষ্ট মর্টেম’ এ মুসলিম শরীফের ১৯৬৩ নম্বর হাদীসটিকে আলবানীর হাওয়ালা দিয়ে যয়ীফ বলেছেন। আনওয়ার ফাইযী লিখেছেন,
“আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সহীহ মুসলিমের ১৯৬৩ নং হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন । এতদসত্বেও যে, তার পূর্বে কেউ এটাকে যঈফ বলেন নি; বরং তিনিও প্রথমে সহীহ বলেছিলেন । অতঃপর নিজের মত প্রত্যাবর্তন করে যঈফ বলেছেন ।” (পৃষ্ঠা–২০০)
তাহলে দেখুন কারা নিজেদের বিবেক ও জ্ঞান হারিয়ে সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসকেও যয়ীফ বলে বেড়াচ্ছে। মনসুর আলী সাহেব লিখেছেন যে, শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেছেন, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের সহীহাইন হাদীসকে যারা মানে না তারা বিদআতী এবং তারা মুসলমানদের বিরোধী পথের পথিক। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ-২২৮ পৃষ্ঠা)
তাহলে নাসীরুদ্দীন আলবানী থেকে শুরু করে আনওয়ারুল হক ফাইযী সকল লা মাযহাবীরা বিদআতী সাব্যস্ত হল কিনা? আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “কুল্লু বিদআতিন যালালাহ ওয়া কুল্লু যালালাতিন ফন নার।” অর্থাৎ প্রত্যেক বিদআতই হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম হল জাহান্নাম। (আল হাদীস)
তাহলে এই লা মাযহাবীরা বিদআতী ও জাহান্নামী হলেন কিনা?
এখানে আর একটি লক্ষনীয় বিষয় হল যে আনওয়ারুল হক ফাইযী স্বীকার করেছেন যে নাসীরুদ্দীন আলবানীর পূর্বে কেউ মুসলিম শরীফের ১৯৬৩ নং হাদীসকে যয়ীফ বলেন নি। আলবানী একা ঐ হাদীসকে যয়ীফ বলেছেন। আর সমস্ত আহলে হাদীস আলবানীর ঐ গবেষণার তকলীদ করে সকলেই বিদআতী হয়েছেন, কেননা, আলবানী সাহেব গবেষণা করার জন্য কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ পেয়েছিলেন। আর আহলে হাদীসদের নিকট পূর্ব যুগের মুহাদ্দিসদের গবেসষণার চাইতে আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী। আর তারা বিদআতী হবেনই বা না কেন? কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও লেপটপ নিয়ে গবেষণা করলে বিদআতী হবে না তো কি সুন্নী হবে?
দিল জ্বলো সে পালা পড়া তো ফালাক কো কাম নেহি ।
জ্বালা কর রাখ না করদেঁ তো দেওবন্দী নাম নেহি ।।
মনসুর আলী সাহেবের এই ধৃষ্টতা কেন?
এবার আমরা দেখব সেখ মনসুর আলী সাহেব কেন বললেন যে পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের গবেসষণার চাইতে আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী। আসলে আগেরকার যুগের সমস্ত মুহাদ্দিস ছিলেন মুকাল্লিদ এবং মাযহাব অবলম্বী। যেমন, আহলে হাদীসদের নিকট নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী স্বীয় কিতাব ‘আল হিত্তাহ ফি যিকরে সিহাহ সিত্তাহ’ কিতাবে পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের মাযহাবের তালিকা দিয়েছেন। তাতে লেখা আছে,
ক্রমিক | ইমাম ও মাযহাবের নাম | পৃষ্ঠা |
১ | ইমাম বুখারী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২৮১ |
২ | ইমাম মুসলিম (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২২৮ |
৩ | ইমাম নাসাঈ (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২৯৩ |
৪ |
ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ কেউ কেউ বলেছেন তিনি শাফেয়ী ছিলেন |
২৮৮ |
৫ | সেখ আব্দুল কাদের জ্বিলানী (রহঃ) হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ৩০০ |
৬ | আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ)হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৬৮ |
৭ | আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম (রহঃ)হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৬৮ |
৮ | সেখ আব্দুল ওহাব নাজদী (রহঃ)হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৬৭ |
৯ | মিশকাত শরীফ প্রণেতা শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৩৫ |
১০ | ইমাম খাত্তাবী, ইমাম নববী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৩৫ |
১১ | ইমাম তাহাবী (রহঃ) হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৩৫ |
১২ | ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) মালেকী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ১৩৫ |
১৩ | শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী | ১৬০ |
১৪ |
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) এবং তাঁর বংশধরগণ হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ |
১৬৩ |
১৫ | ইমাম ইবনে বাত্তাল (রহঃ) মালেকী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২১৩ |
১৬ |
আল্লামা শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুদ দায়েম শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ |
২১৩ |
১৭ | আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২১৬ |
১৮ | আল্লামা যারাখসী শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২১৭ |
১৯ | কাযী মুহিববুদ্দীন আহমদ হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২১৮ |
২০ | হাফেয ইবনে রজব (রহঃ) হাম্বালী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২১৯ |
২১ | আল্লামা বলকিনী শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২২০ |
২২ | আল্লামা ইবনে মরজুকী (রহঃ) মালেকী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২২০ |
২৩ | জালালুদ্দীন আল বকরী শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২২২ |
২৪ | আল্লামা কস্তালানী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২২২ |
২৫ | আল্লামা ইবনে আরাবী (রহঃ) মালেকী মাযহাবের মুকাল্লিদ | ২২৪ |
পক্ষান্তরে,
১) ইমাম বুখারী (রহঃ) এর উস্তাদ আল্লামা ইবনে মুবারক (রহঃ) হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (শারহুল মুআত্তা, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-৩০০, মানাকিবে মুআফফাক, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১১৩, মিফতাহুল সাআদাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১১২)
২) ইমাম ওয়াকী ইবনুল জার্রাহ (রহঃ) হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফায, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৮২/ইলাউস সুনান, খণ্ড-২১, পৃষ্ঠা-১৬/তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড-১১, পৃষ্ঠা-১২৭)
৩) ইমাম ইয়াহইয়া বিন সায়ীদুনিল কাত্তান হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাযকিরাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৮২/তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড-১০, পৃষ্ঠা-৪৫০)
৪) ইমাম ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া বিন আবী যাইদাহ (রহঃ) হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। মিফতাহুল সাআদাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১১৯)
৫) আল্লামা ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন (রহঃ) হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩৪৭/ফাইযুল বারী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৯/নাসবুর রায়াহ, পৃষ্ঠা-৪২)
৬) ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াই শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাবকাতুস শাফেয়ীয়াতিল কুবরা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৩২) তবে ‘ফাইযুল বারী’তে লেখা আছে তিনি হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (পৃষ্ঠা-৫৮) তিনি যে মাযহাবেরই হোন না কেন তিনি ছিলেন মুকাল্লিদ।
৭) ইমাম দারাকুতনী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাবকাত, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৩০)
৮) ইমাম বাইহাকী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাযকিরাহ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩১০)
৯) ইমাম বাগবী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাযকিরাহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫২)
১০) ইমাম ইবনে আসাকির (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফায, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১১৮)
১১) ইমাম ইবনুস সালাহ (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (তাযকিরাহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২১৪)
১২) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। (ফাতহুল বারী, বুলুগুল মারাম, শারহু নুখবাতিল ফিকার, তাকরীবুত তাহযীব, লিসানুল মিযান প্রভৃতি)
এককথায় হাদীসের সব ইমামগণ ও পূর্বযুগের সব মুহাদ্দিস সকলেই কোন না কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। তাঁরা কেই লা মাযহাবী বা গায়ের মুকাল্লিদ ছিলেন না । পক্ষান্তরে নাসীরুদ্দীন আলবানী ছিলেন কট্টর গায়ের মুকাল্লিদ। মাযহাবের ঘোর বিরোধী। হাদীসের গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্বযুগের মুহাদ্দিসরা ইনসাফ করে বিচার করেছিলেন এবং যে হাদীস সহীস সেটাকে সহীহ বলেছেন এবং যে হাদীস যয়ীফ তাকে যয়ীফ বলেছেন, সেক্ষেত্রে তাঁরা মাযহাবের পক্ষপাতিত্ত্ব করেন নি। কিন্তু আলবনী সাহেব সেই ইনসাফ বজায় রাখতে পারেন নি। তিনি লা মাযহাবীদের পক্ষের সব হাদীসকে সহীহ বলেছেন কিন্তু যখনই কোন হাদীস লা মাযহাবীদের মতবাদের বিপক্ষে গিয়েছে সেটাকে ছলচাতুরী করে যয়ীফ সাব্যস্ত করে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। যেমন, মুসলিম শরীফের ১৯৬৩ নং হাদীসে বলা হয়েছে, “ইযা কারাআ ফা আনসিতু” অর্থাৎ ইমাম যখন কিরআত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে। এই হাদীসটা হানাফীদের পক্ষেই যায় তাই আলবানী সাহেব ছলচাতুরী করে যয়ীফ সাব্যস্ত করেছেন। আর সেই কথার হাওয়ালা দিয়েছেন আনওয়ারুল হক ফাইযী গায়ের মুকাল্লিদ। যদিও শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) লিখেছেন যে
“সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের সহীহাইন হাদীসকে যারা মানে না তারা বিদআতী এবং তারা মুসলমানদের বিরোধী পথের পথিক ।” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ–২২৮ পৃষ্ঠা)
আর যেসব মুহাদ্দিসের গবেষণা নাসীরুদ্দীন আলবানী সাবেবের বিপক্ষে গিয়েছে তাদেরকে আলবানী অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ করে তাদেরকে কাফির, চক্রান্তকারী, দুষ্ট, মুনাফিক, পথভ্রষ্ট মহামনিষীদের ধ্বংশ হওয়ার কামনা করেছেন, তাদেরকে মুশরিক, মিথ্যুক, প্রতারক, বিদআতী ইত্যাদি ফতোয়া প্রদান করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রহঃ) কে অমুসলিম, ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (রহঃ) কে বিদআতী বলেছেন যা এর আগে বর্ণনা করা হয়েছে।
এক কথায় তিনি লা মাযহাবিয়াতকে প্রচার করার জন্য হাদীস গবেষণা করেন তাই আলবানীর মুকাল্লিদদের (আনওয়ারুল হক ফাইযী, আব্দুল্লাহ সালাফী, মনসুর আলী প্রভৃতিদের) নিকট পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের গবেসষণার চাইতে আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী।
আলবানী সাহেবের প্রতারণা
আহলে হাদীসদের মতে নাসীরুদ্দীন আলবানী ১৪ শতাব্দী হিজরীর একমাত্র রিজালশাস্ত্রবিদ। আনওয়ারুল হক ফাইযীর দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান থেকে শুরু করে হানাফী বংশে নাকি তাঁর মত বড় মুহাদ্দিস জন্মগ্রহণ করেনি। কিন্তু আনওয়ারুল হক ফাইযী জানেন না হাদীসের তাহকীকের নামে নাসিরুদ্দীন আলবানী সাহেব যে প্রতারণা ও বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছেন তা মুসলিম উম্মাহের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। একই হাদীসকে এক কিতাবে সহীহ বলেছেন আরেক কিতাবে বলেছেন জয়ীফ। আবার হাদীস বিশারদদের গবেষণা মতে সহীহ হাদীসকে বলেছেন জয়ীফ আবার জয়ীফ হাদীসকে বলেছেন সহীহ। এরূপ বাস্তবতা এক জায়গায় নয়। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কিতাবে । আলবানী সাহেবের সমসাময়িক হাদীস গবেষকগণ আলবানী সাহের এরূপ প্রতারণা ও ধোকা চিহ্নিত করেছেন হাজার হাজার স্থানে। আমি এখানে কিছু হাদীস বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করব যাদেরকে হাদীস বিশারদগণ জয়ীফ বলেছেন কিন্তু আলবানী সাহেব তাদেরকে নির্ভরযোগ্য বলে মত প্রকাশ করে তাদের বর্ণনাকৃত জয়ীফ হাদীসকে সহীহ বানিয়েছেন।
নববী যুগের প্রায় ১৫ শত বছর পরে এসে আলবানী সাহেব কি প্রতারণা করেছন তা সামান্য খতিয়ে দেখার বিষয়। নিজেদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়াদী সঠিক সাবেত করার জন্য রিজাল শাস্ত্রে হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে যারা একে বারে জয়ীফ বা অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে স্বীকৃত সেরূপ অনেক বর্ণনাকারীকে আলবানী সাহেব প্রথমে নির্ভরযোগ্য স্বীকৃতি দিয়ে তাদের হাদীসগুলোকে সহীহ বলে প্রমাণ করেছেন। আমি এখানে সেরূপ কয়েকজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করছি যাদেরকে পূর্বের মুহাদ্দিসগণ অনির্ভরযোগ্য বলেছেন কিন্তু আলবানী সাহেব সেসবকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
১। আহমদ ইবনে ফরজ আবু উতবা হামসীকে নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব সেকা বা নির্ভরযোগ্য রূপে রূপান্তরিত করে তার বর্ণনাকৃত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। আলবানীর কিতাব সিলসিলায়ে আহাদীসে সহীহা খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩৬।
২। ইসমাঈল ইবনে মুসলিম মক্কী । (প্রগুক্ত ১/৬১৩, ৬/৫০৫)
৩। বকর ইবনে খুনাইস । (প্রাগুক্ত ২/৬০৯)
৪। হাকাম ইবনে সেনান । (প্রগুক্ত ৪৭)
৫। হানযালা ইবনে আব্দুল্লাহ সুদুসী । (প্রাগুক্ত ১/২৪৯)
৬। সালেহ ইবনে বশীর । (প্রগুক্ত ২/২৩৯)
৭। মুসলিম ইবনে ওয়ারদান । (প্রাগুক্ত ২/৫০৩)
৮। আব্দুল্লাহ ইবনে কায়সান মরূযী । (প্রাগুক্ত ১/১৩)
৯। আব্দুল মুনঈম ইবনে বশীর । (প্রগুক্ত ১/৫৮২)
১০। ইয়াহয়া ইবনে কাছীর আবু নছর । (প্রাগুক্ত ১/২৬৪)
১১। আলফজল ইবনে মুখতার । (প্রাগুক্ত ২/৫৮২)
১২। খালেদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ কমরী দামেশকী । (প্রাগুক্ত ১/১১৩)
এরা হলেন ঐসকল রাবী যাদেরকেও নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব নির্ভরযোগ্য রাবী বলে হাদীসকে সহীহ বলেছেন। অথচ এসকল বর্ণনাকারী মুহাদ্দিসদের মতে এত জয়ীফ যে হাদীসে এরা থাকবে সে হাদীস জয়ীফ বলে বিবেচিত হবে। এখন দেখা যাবে আলবানী সাহেবের এসকল নির্ভর যোগ্য সহীহ হাদীসের রাবীগণ অন্যান্য মুহাদিসের মতামতে কোন পর্যায়ের রাবী বা বর্ণনাকারী। এদের হাদীস জয়ীফ না কি সহীহ।
(১) আহমদ ইবনে ফরজ আবু উতবা হিমস। আবু মুহাম্মদ হাকেম বলেন, আবু উতবা যখন ইরাক পৌছে তখন ইরাকীগণ তার কাছ থেকে হাদীস নিয়েছেন এবং এর সম্পর্কে ভাল মত দিতেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইবনে আউফ তার ব্যাপারে সমালোচনা করতেন। এবং আমি ইবনে হাওসাকে এই রাবী সম্পর্কে অনির্ভরযোগ্য বলত শুনেছি। মুহাম্মদ ইবনে আউফতো তাকে কাযযাব বা মিথ্যাবাদী এবং খারাপ চরিত্রের বলে দাবী করেন। আবু হাশেম আব্দুল গাফফার ইবনে সালাম বলেন, আমি আমার বন্ধুদেরকে তার ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হিসেবে মন্তব্য করতে দেখার পর আমি তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করিনি । (তাহযীবুত তাহযীব ১/৬৮) খতীবে বোগদাদী তো বলেন আবু উতবা সম্পর্কে মদ পানকারী মদ্যপ ছিল। (তারিখে বোগদাদী ৪/৩৪১)
পর্যালোচনাঃ যে বর্ণনাকারীকে মিথ্যাবাদী, খারাপ চরিত্র, মিথ্যুক, মদ্যপ বলে মুহাদ্দিসগণ তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করেননি। তাকে একেবারী জয়ীফ রাবী তাতে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। কিন্তু এরূপ বর্ণনাকারী থেকে হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করা, সেরূপ হাদীসকে সহীহ হাদীস বলে কিতাবে উল্লেখ করা এবং নিজের মতকে সেহাহ সিত্তা থেকেও উর্দ্ধে মনে করা তা কোন ধরনের প্রতারণা তা পাঠক মাত্রই বুঝবেন।
(২) ইসলামাঈল ইবনে মুসলিম মক্কী ইমাম আহমদ ইবনে হাম্ব (রহ.) তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন, ইমাম আলী ইবনে মাদানী বলেছেন তিনি সবসময় ভুল করে থাকে, তিনি আরো বলেন উক্ত ব্যক্তি আমার কাছ থেকে একটি তিন প্রকারে বর্ণনা করেছেন। আরো বলেছেন তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করা যাবে না। তিনি ﻋﻦ ﺣﺴﻦ، ﻋﻦ ﺳﻤﺮﮦ বলে মুনকার হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন বলেছেন তিনি কোন বস্তুই না। জাওযজানী বলেছেন ইসমাঈল ইবনে মুসলিম কল্পনা প্রসূত হাদীস বলে, ইমাম নাসায়ী বলেছেন তিনি অস্বীকৃত, ইয়াহইয়া ইবনে মাহদী এবং ইবনে মোবারক একে ছেড়ে দিয়েছেন। (তাহযীবুল কামাল ৩/১০২)
পর্যালোচনাঃ যে বর্ণনাকারীকে মুনকারুল হাদীস, ওয়াহীউল হাদীস, ভুল বর্ণনাকারী, একই বর্ণনাকে তিন বার উল্টাপাল্টা করে বলেছেন, হাদীসের ইমামগণ যাকে পরিত্যাগ করেছেন, যার বর্ণনা লেখতে পছন্দ করতেন না এরূপ একজন বর্ণনাকারীর বর্ণনা গ্রহণ করা, তা থেকে মাসআলা ইসতিম্বাত করা এটি কোন ধরনের বড় গবেষকের কাজ হতে পারে। যে কোন চিন্তাশীল ব্যক্তি তা বিচার করবেন।
(৩) বকর ইবনে খুনাইস ইবনে সালেহ মিশরী, ইবনে খেরাশ এবং দারে কুতনী (রহ.) এই বর্ণনাকারী সম্পর্কে বলেছেন তিনি মতরূক তথা পরিত্যায্য, উমর ইবনে আলী, ইয়াকুব ইবনে শায়বা নাসায়ী উকাইলী (রহ.) বলেছেন এই বর্ণনাকারী জয়ীফ বা দূর্বল। নসায়ী বলেছেন দূর্বল। ইবনে হাতেম নিজ পিতা থেকে এই বর্ণনাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কি পরিত্যায্য। উত্তরে তিনি বললেন সে পর্যন্ত পৌছে গেছে। ইমাম আবু দাউদ বলেছেন তিনি কোন বস্তুই না । ইয়াকুবে এই বর্ণনাকারীদেরকে ওই সূচীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাদের কাছ থেকে হাদীস ও বর্ণনা গ্রহণ করা হতো না। জাওযানী বলেছেন তিনি অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনে আদী বলেছেন ভাল লোকদের কাছে তার বর্ণনা সন্দেহযুক্ত। অনেক সময় তিনি অনুমান ভিত্তিক হাদীস বলে থাকেন। তাঁর হাদীস সমূহ জয়ীফ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ওই লোকদের মধ্যে নন যাদের হাদীস দলীল হিসেবে বর্ণনা করা যায়। ইবনে মদীনী বলেছেন আমি আমার পিতার কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি উক্ত রাবী সম্পর্কে বলেন তিনি জয়ীফ। বাযযার বলেছেন তিনি দূর্বল । ইবনে হিব্বান বলেন তিনি বহু মওযু বা বানানো হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই রূপ বর্ণনাকারীর হাদীস আলবানী সাহেব তাঁর সহীহ হাদীস সমূহে বর্ণনা করেছেন।
(৪) হাকাম ইবনে সেনান ইবনে মুঈন ও নাসায়ী বলেছেন তিনি জয়ীফ। ইমাম বুখারী বলেছেন তার কাছে অনুমান প্রসূত হাদীস বহু আছে এবং তিনি কাছীরুল ইসনাদ নন। ইবনে সাআদ বলেন হাদীসে তিনি জয়ীফ । ইমাম আবু দাউদ বলেছেন তিনি জয়ীফ। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, তাঁর হাদীস লেখার যোগ্য নয়। সাজী বলেছেন তাকে মিথ্যুক মনে করি। সুতরাং এরূপ হাদীসের বর্ণনাকারীর হাদীসকি সহীহ হাদীসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অথচ আলবানী সাহেব তার সহীহ হাদীস সমূহে এরূপ লোকের হাদীসও বর্ণনা করেছেন।
(৫) হানযালা ইবনে আব্দুল্লাহ সুদুসী ইবনে মদীনী বলেন ইয়াহয়া ইবনে সাঈদ বলেছেন আমি এই বর্ণনাকারীকে দেখেছি। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ত্যাগ করেছি। মায়মুন বলেন ইমাম আহমদ (রহ.) তাকে জয়ীফ বলেছেন। আছরাম বলেছেন ইমাম আহমদ (রহ.) তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। অভাবিত ও আশ্চর্য জনক হাদীস বর্ণনা করেন। সালেহ ইবনে আহমদ বালেছেন আমার পিতা বলেছেন তিনি জয়ীফ। ইবনে মুঈন ও নাসায়ীও তাকে জয়ীফ বলেছেন। আবু হাতেম বলেছেন লাইসা বিক্ববিয়্যিন। ইবনে হিব্বান বলেছেন হানযালা ইবনে আব্দুল্লাহ তার কুনিয়ত ছিল আবু আব্দুর রহমান। শেষ বয়সে তার গড়বড় হয়েগেছে। এমনকি জানতেন না যে রেওয়ায়াত তিনি করতেন সেখানে পুরাতন কথাগুলো গড়বড় করে একের সাথে আরেকটি মিলিয়ে বলে দিতেন। ইয়াহইয়া ইবনে কাত্তান তাকে পরিত্যাগ করেছেন। (আত্তারীফ বি আওহামী ৬/৩৪)
পর্যালোচনাঃ তিনি পরিত্যাক্ত এবং জয়ীফ। নিজেই জানতেননা তিনি কি বর্ণনা করছেন। প্রথমে তিনি তা কিরূপে বর্ণনা করেছিলেন। এরূফ জয়ীফ রাবীর হাদীছও আলবানী সাহেব তার সহীহ হাদীছে বর্ণনা করেছেন।
(৬) সালেহ ইবনে বশীর মুফাজ্জল গালাবী প্রমূখ বলেন ইবনে মুঈন তাকে জয়ীফ বলেছেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক সাফফানী প্রমূখ বলেছেন ইবনে মুঈন বলেছেন তিনি কিছুই না। জা’ফর তায়ালাসী বলেছেন ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন বলেছেন তিনি কিসসা কাহীনী বলতেন এবং তাঁর সকল বর্ণনা যেগুলো সাবেত থেকে বর্ণনা করেছেন সবই বাতিল। (তাহযীব ৪/৩৮৩) হাসান ইবনে আলী আফফনকে বলেন হাম্মাদ ইবনে আন সালেহ থেকে কিছু হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন তা মিথ্যা। (তারীখে বাগদাদ ৯/৩০৮) আব্দুল্লাহ ইবনে আলী মদীনী বলেন আমার পিতা তাকে বড় জয়ীফ বলেছেন। মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে আবী শায়বা বলেন আলী বলেছেন তিনি কিছুই না। জয়ীফ। উমর ইবনে আলী বলেন তিনি জয়ীফুল হাদীস। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন তিনি মুনকারুল হাদীস। আজেরী বলেন আমি ইমাম আবু দাউদ থেকে জিজ্ঞেস করলাম তার হাদীস লেখা যাবে কি না? তিনি বলেন না।নাসায়ী বলেন তিনি জয়ীফ। তার হাদীস পরিত্যায্য। (তাহযীবুত্তহাযীব ৪/৩৮৩) এরূপ জয়ীফ রাবীর বর্ণনাও আলবানী সাহেব সহীহ হাদীসের মধ্যে গণ্য করেছেন। এই হল নাসীরুদ্দীন আলবানী যিনি আনওয়ার ফাইযীর দৃষ্টিতে এর মত নাকি বড় মুহাদ্দিস ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান থেকে আলবানী পর্যন্ত হানাফী বংশে জন্মগ্রহণ করেন নি।
নাসীরুদ্দীন আলবানী র কিছু ভ্রান্ত আকিদা
আল্লাহ সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন আলবানী র আকিদাঃ
১) সালাফী দাওয়াত বা সালাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। (ফাতাওয়াল আলবানী ফিল মাদীনাতি ওয়াল ইমারত, সংকলকঃ আমর বিন আব্দুল মুনঈম সালিম, পৃষ্ঠা-১৮, প্রথম সংস্করণ । দারুজ জিয়া, মিশর ।)
২) আল্লাহর দুটি চোখা আছে । (আল ফাতাওয়াল কুয়েতিয়্যা লিল আলবানী, সংকলকঃ আমর বিন আব্দুল মুনঈম সালিম, পৃষ্ঠা-৪৩, প্রথম সংস্করণ । দারুজ জিয়া, মিশর।)
২) আল্লাহর পায়ের পিণ্ডলী বা সাক আছে। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ, হাদীস নং ৫৮৩, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৮, প্রকাশনাঃ মাকতাবাতুল মায়াফিফ, রিয়াদ।)
৩) আল্লাহ তাআলার প্রকৃত হাত আছে। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ, হাদীস নং ৫৮৩, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১২৮, প্রকাশনাঃ মাকতাবাতুল মায়াফিফ, রিয়াদ।)
৪) হাসা আল্লাহর একটি সিফাত বা গুণ। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ, হাদীস নং ২৮১০, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১২৮, প্রকাশনাঃ মাকতাবাতুল মায়াফিফ, রিয়াদ।)
৫) আশ্চর্যান্বিত হওয়া আল্লাহর একটি সিফাত। (কিতাবুশ শায়েখ আলবানী ও মানহাজুহু ফি তাকরীরী মাসাঈনীল ই’তেক্বাদ, মুহাম্মাদ বিন সুরুর শা’বান, পৃষ্ঠা-২৪৩, দারুল কাইয়্যান, রিয়াদ।)
৬) এই ঈমান রাখা যে, আল্লাহ তাআলা আসমানে রয়েছেন। (আল হাবী মিন ফাতাওয়াশ শায়েখ আলবানী, আবু হাম্মাম মিশরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩, প্রকাশনায়ঃ আল ইলমিয়া, মিশর।)
নবীগণের সম্পর্কে আলবানীর আকিদা
১) নবীগণ যে নিষ্পাপ এটি সাধারণ বা ব্যাপক নয়। (ফাতাওয়াল আলবানী ফিল মাদীনাতি ওয়াল ইমারত, সংকলকঃ আমর বিন আব্দুল মুনঈম সালিম, পৃষ্ঠা-১৮, প্রথম সংস্করণ। দারুজ জিয়া, মিশর।)
২) নবী ও রাসুলগণ বিভিন্ন ধরণের সগীরা গুনাহ ও আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে থাকেন। (আল ফাতাওয়াল কুয়েতিয়্যা লিল আলবানী, সংকলকঃ আমর বিন আব্দুল মুনঈম সালিম, পৃষ্ঠা-২৯-৩১, প্রথম সংস্করণ । দারুজ জিয়া, মিশর ।)
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন আলবানী র আকিদা
১) আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মানুষকে যে সমস্ত আয়াত শিখিয়েছিলেন সেগুলো তিনি ভূলে যেতে পারেন। (আল ফাতাওয়াল কুয়েতিয়্যা লিল নাসীরুদ্দীন আলবানী, সংকলকঃ আমর বিন আব্দুল মুনঈম সালিম, পৃষ্ঠা-৩০-৩১, প্রথম সংস্করণ । দারুজ জিয়া, মিশর।)
২) নবীজী (সাঃ) এর স্ত্রীগণের পক্ষে জ্বিনায় লিপ্ত হওয়া সম্ভব। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ, হাদীস নং ২৫০৭, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৬, প্রকাশনাঃ মাকতাবাতুল মায়াফিফ, রিয়াদ।)
৩) নবীজী (সাঃ) এর কবরের গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলা এবং নবী কারীম (সাঃ) এর কবরকে মসজিদে নববী থেকে বের করে দেওয়ার আবেদন। (তাহযীরুস সাজিদ মিন ইত্তিখাযিল কুবুরি মাসাজিদ, শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-৯৮, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশনায়ঃ আল-মাকতাবুল ইসলামী, বাইরুত।)
৪) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সৃষ্টিকুলের মাঝে সর্বশ্রেষ্ট নন। (আত তাওয়াসসুল আনওয়াউহু ও আহকামুহু, শায়েখ আলবানী, বিন্যাসঃ মুহাম্মাদ ঈদ আল আবক্ষাসী, পৃষ্ঠা-১৪৯, প্রকাশনায়ঃ মাকতাবুল মায়ারিফ, রিয়াদ।)
৫) নবী কারীম (সাঃ) কে ওসীলা করে দুয়া করা হারাম। (আহকামুল জানায়েয ও বিদাউহা, শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-২৬৪ ও ২৬৬, চতুর্থ সংস্করণ, আল মাকতাবুল ইসলামী, বাইরুত।)
৬) জুমুয়ার দিনে “ইন্নাল্লাহা ওমালাইকাতাহু” এই আয়াত পাঠ করা জায়েয নয় এবং এটি বিদআত। (আল আজউইবাতুন নাফেয়া, শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-৬৭, দ্বিতীয় সংস্করণ, আল মাকতাবুল ইসলামী, বাইরুত।)
৭) নবী কারীম (সাঃ) এর জিয়ারতের উদ্দ্যেশ্যে সফর করা হারাম। (ফাতাওয়াল আলবানী ফিল মাদীনাতি ওয়াল ইমারত, সংকলকঃ আমর বিন আব্দুল মুনঈম সালিম, পৃষ্ঠা-১২, প্রথম সংস্করণ । দারুজ জিয়া, মিশর, আহকামুল জানায়েয ও বিদাউহা, শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-২৬৫, চতুর্থ সংস্করণ, আল মাকতাবুল ইসলামী, বাইরুত।)
৮) নবী কারীম (সাঃ) ও অন্যান্য মৃতদের উদ্দ্যেশ্যে কোন আমলের সাওয়াবের হাদিয়া প্রেরণ করা জায়েয নয়। (আহকামুল জানায়েয ও বিদাউহা, শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-২৬০-২৬১, চতুর্থ সংস্করণ, আল মাকতাবুল ইসলামী, বাইরুত।)
এই হলেন নাসীরুদ্দীন আলবানী যিনি নাকি আনওয়ারুল হক ফাইযীর দৃষ্টিতে সব থেকে বড় মুহাদ্দিস আর মনসুর আলী সাহেবের মতে পূর্বযুগের মুহাদ্দিসের থেকে নাসীরুদ্দীন আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী।
নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবের ধৃষ্টতা
নাসীরুদ্দীন নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে ১৪০০ বছরের মধ্যে কেউ পূর্ণ নামায শিক্ষার উপর কোন কিতাব লিখে যেতে পারেন নি। আলবানী সাহেব ‘সিফাতু সাতিন নবী (সাঃ)’ নামক নামায শিক্ষার বইটির রচনার কারণ লিখতে গিয়ে ভূমিকায় লিখেছেন, “আমিযেহেতু এ বিষয়ে পরিপূর্ণ কোন কিতাবের সন্ধান পাইনি, তাই আমি ইবাদতের ক্ষেত্রে নবী (সাঃ) এর পথ অনুসরণে আগ্রহী মুসলিম ভাইদের জন্য এমন একটি কিতাব লেখা নিজের উপর অনিবার্য মনে করলাম, যে কিতাবে তকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত যথাসম্ভব নবী (সাঃ) এর সালাতের পূর্ণ বিবরণী সন্নিবেশিত হবে।
যাতে করে সত্যিকার্থে যাঁরা নবী প্রেমিক তাদের যে কেউ এ কিতাবখানা পেলে সহজেই পুর্বোক্ত হাদীসের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পারে। (হাদীসটি এরুপ)
‘সাল্লু কামা রায়ীতুমুনী উসাল্লী’ অর্থাৎ ‘তোমরা আমাকে যেমনিভাবে সালাত পড়তে দেখ তেমনিভাবে সালাত পড়।’” (সিফাতু সাতিন নবী (সাঃ), বঙ্গানুবাদঃ তাওহীদ পাবলিকেশন)
তাহলে দেখুন নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবের ধৃষ্টতা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, ১৪০০ বছরের মধ্যে কোন মুহাদ্দিস বা এই উম্মতের কোন আলেম পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার উপর কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব লিখে যেতে পারেন নি। একমাত্র লিখেছেন আলবানী সাহেব। আর এতদিনের আলেম উলামাগণ পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার উপর কিতাব লিখতে ব্যার্থ ছিলেন। একমাত্র সফল হলেন আলবানী সাহেব। আলবানী সাহেব মাত্র একটি কথার মাধ্যমেই সারা উম্মাতকে অযোগ্য ও অপদার্থ বলে গালিগাকাজ করলেন এবং দ্বীন অপূর্ণ ছিল সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছেন নাকি আলবানী সাহেব। পূর্ব যুগের আলেম উলামাদেরকে অপদার্থ বলে আলবানী সাহেব চরম ধৃষ্টতা করেছেন।
এই হলেন নাসীরুদ্দীন আলবানী যিনি নাকি আনওয়ারুল হক ফাইযীর দৃষ্টিতে সব থেকে বড় মুহাদ্দিস আর মনসুর আলী সাহেবের মতে পূর্বযুগের মুহাদ্দিসের থেকে নাসীরুদ্দীন আলবানীর গবেষণার মূল্য বেশী।
নাসীরুদ্দীন আলবানী মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র
আলবানী সাহেব ফতোয়া জারি করেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা যেন ইজরাইলের জন্য ফিলিস্তিনের ভূমি ছেড়ে দেয়। তাদের নিকট কোন ধরণের আন্দোলন (জিহাদ) নিষিদ্ধ। (সূত্রঃ http://www.alsunna.org/aalrd-ela-ftwaa-aalalbaany-bmwajwab-hjrah-ahl-flsttyn.html)
প্রিয় পাঠক চিন্তা করুন। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের মূল দ্বন্দই হল ফিলিস্তিনের ভূমি দখল নিয়ে। ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে ইহুদীরা অবৈধভাবে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইজরাইল রাষ্ট্র গঠন করে এবং ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যা ১,৩৮০,০০০ জনের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী ৭৩০,০০০ জনকে তাদের স্বভূমি থেকে বিতাড়িত করে ইজরাইলি সেনারা। সেজন্যই বলা হয়েছে ‘ইজরাইলের জন্ম পাপের গর্ভে।’ এই ইজরাইলী সেনেরাই ফিলিস্তিনের ধর্মীয় নেতা আহমদ ইয়াসিনকে হত্যা করে এবং আহমদ ইয়াসিনের পর হামাসের নেতা হন আব্দুল আজিজ রানতিসি। ১৭-০৪-২০০৪ তারিখে ইজরাইল হেলিকেপ্টার থেকে তাঁর গাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তাঁকেও হত্যা করা হয় এবং দিনের পর দিন ইজরাইলীরা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর চালিয়েছে নির্যাতনের ষ্ট্রীম রোলার। তবুও মুসলমানরা ফিলিস্তিনকে ইজরাইলের হাতে তুলে দেয়নি। মুসলমানরা স্বভূমি রক্ষার্থে দিনের পর দিন জিহাদ করেছে এবং নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে নিজেদের মাতৃভূমি রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।
কিন্তু এই ইহুদী জিয়নবাদীদের দোসর নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবের মন ফিলিস্তিনী মুসলমানদের জন্য একবারও কাঁদে নি। প্যালিস্টাইনী মুসলমানদের রক্ত আলবানী সাহেবের নিকট গরু ছাগলের পেচ্ছাবের মত মনে হয়েছে। সেজন্যই তিনি ফতোয়া দিয়েছেন যে, “ফিলিস্তিনিরা যেন ইজরাইলের জন্য ফিলিস্তিনের ভূমি ছেড়ে দেয়। তাদের নিকট কোন ধরণের আন্দোলন (জিহাদ) নিষিদ্ধ।” আসলে ইহুদীদের দালাল আর কাকে বলে? আর এই নাসীরুদ্দীন আলবানীর মত বড় মুহাদ্দিস নাকি আনওয়ারুল হক ফাইযী গায়ের মুকাল্লিদের দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর উস্তাদ হাম্মাদ বিন আবী সুলাইমান থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হানাফী বংশে জন্মগ্রহণ করেনি। আর সেখ মনসুর আলীর নিকট এই নাসীরুদ্দীন আলবানীর গবেষণার মূল্যই নাকি পূর্বযুগের মুহাদ্দিসদের গবেষণার চেয়ে বেশী।
আসলে এই গায়ের মুকাল্লিদ ফিরকাটাই হল ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের দালাল। চিরকাল এরা দালালী করেই এসেছে। ব্রিটিশ যুগে এরা ইংরেজদের দালালী করেছে এবং বর্তমান সময়ে এরা ইহুদীদের দালালী করছে। এই দালালী করার জন্যই এরা জিহাদকে হারাম ফতোয়া দিয়েছে। যেমন, আলবানী সাহেবের বিশিষ্ট ছাত্র মুহাম্মাদ আবু শাকরা ‘হাযিহি হিয়াস সালাফিয়্যা’ নামক বইয়ে লিখেছেন,
অর্থাৎ “সবচেয়ে উত্তম জিহাদ হলো জিহাদ না করা, আর সবচেয়ে উত্তম প্রস্তুতি হলো কোন প্রস্তুতি না নেওয়া।”
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে হাদীস শরীফে ভবিষ্যৎবাণী
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “জ্ঞান যদি সুরাইয়া নক্ষত্রের কাছেও থাকে তবুও ফারীস বংশীয় কিছু লোক তা অর্জন করে নেবে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৪৪০, ১০০৫৭)
বুখারী শরীফে হাদীসটা এইভাবে এসেছে,
অর্থাৎ “ঈমান যদি সুরাইয়া নামক নক্ষত্রের কাছেও থাকে ফারীস বংশীয় কিছু লোক তা অর্জন করে নেবে।” (বুখারী শরীফ)
মুসলিম শরীফে হাদীসটা এসেছে এইভাবে,
“ঈমান যদি সুরাইয়া নামক নক্ষত্রের কাছেও থাকে ফারীস বংশের একজন ব্যাক্তি সেখান থেকে নিজের অংশ বের করে নিবেন।” (মুসলিম শরীফ)
এই হাদীসটাকেই হযরত কায়েস বিন সাআদ (রাঃ) তাবারানীতে এইভাবে বর্ণনা করেছেন,
“ঈমান যদি সুরাইয়া নামক নক্ষত্রের কাছেও পৌঁছে যায় তাহলে তা আরববাসীরা অর্জন করতে পারবে না । তবে ফারীস বংশীয় তা অর্জন করবে।” (তাবারানী)
এই হাদীসটাকে ইবনে মাসউদ (রাঃ) এইভাবে বর্ণনা করেছেন,
অর্থাৎ “ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দ্বীন যদি সুরাইয়া নামক নক্ষত্রের কাছেও পৌঁছে যায় তাহলে ফারীস বংশীয় কিছু লোক তা অর্জন করে নেবে।” (তাবারানী)
হাদীস শরীফে এসেছে,
অর্থাৎ “ফারিসকে গালি দিওনা কেননা সেখানকার আলেম পৃথিবীকে জ্ঞানে পূর্ণ করে দেবে।”
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) এই হাদীসটি উল্লেখ করার পর লিখেছেন, “আমি বলছি যে হুযুরে আকরাম (সাঃ) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে এই হাদীসে সুসংবাদ দিয়েছেন।” (তাবয়ীযুস সাহীফাহ ফি মানাক্কিবুল ইমাম আবী হানীফাহ, পৃষ্ঠা-১৬)
উক্ত হাদীসগুলি উল্লেখ করার পর আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত মুহাদ্দিস হওয়া সত্যেও লিখেছেন,
“এই হাদীসগুলিতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন যাতে ইমাম সাহেবের উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখা যেতে পারে।” (তাবয়ীযুস সাহীফাহ ফি মানাক্কিবুল ইমাম আবী হানীফাহ, পৃষ্ঠা-১৭-১৮)
আরও একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (রহঃ) শাফেয়ী মাযহাবের মুকাল্লিদ হওয়া সত্যেও লিখেছেন,
“এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, আলোচ্য হাদীসে ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে। কেননা ইমাম সাহেবের যুগে পারস্যবংশীয় কোন ব্যাক্তি ইসলামী জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যে ইমাম সাহেব ও তাঁর শিষ্যদের সমতুল্য হতে পারেনি। এই ভবিষ্যৎবাণীর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মো’জেজাও প্রকাশ পাচ্ছে।” (আল খাইরাতুল হিসান, পৃষ্ঠা-১৭)
এই হল ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) যাঁর সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সাঃ) পরিস্কার ভবিষ্যৎবানী করে গেছেন অথচ আনওয়ার ফাইযীর দৃষ্টিতে ইমাম সাহেবের থেকে বড় মুহাদ্দিস নাকি ইহুদীদের পোষ্যপুত্র নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেব। আনওয়ার ফাইযী আলবানীকে ইমাম আবু হানীফার থেকে বড় মুহাদ্দিস বলে বড়ই ধৃষ্টতা করেছেন। এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করে সর্বকালের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নিকট নিজেদের মাযহাবকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করার যোগ্য বানিয়ে দিয়েছেন। এবার দেখুন যারা ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করে তাদের ব্যাপারে মুহাদ্দিসরা কি বলেছেন। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্যকারীদের ব্যাপারে আমীরুল মোমেনীন ফিল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) বলেছেন,
“আমি যখন লোকেদেরকে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করতে শুনি তখন খুব দুঃখিত হই এবং তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে আযাবের ভয় করি।” (মানাক্কিবে আবী হানীফা, আল্লামা যাহাবী, পৃষ্ঠা ৩৬)
নিচে স্ক্রীন শর্ট দেখুন,
আব্দুল্লাহ ইবনে দাউদ খুরাইবী (রহঃ) বলেন,
“ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য মুর্খ অথবা হিংসুকই করতে পারে।” (মানাক্কিবে আবী হানীফা, আল্লামা যাহাবী, পৃষ্ঠা ৩২/তাহযীবুল কামাল, ২৯/৪৪১ পৃষ্ঠা)
‘মানাক্কিবে আবী হানীফা’র স্ক্রীন শর্ট দেখুন,
অহবী সুলাইমান গাবেজী তাঁর ‘আবু হানীফা আন নুমান’ কিতাবে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর প্রতি বিরুপ মন্তব্যের ৭টি কারণ লিখেছেন। তার মধ্যে ১ম কারণ হল, ইমাম সাহেব (রহঃ) সম্পর্কে সঠিক না জানা। ৩য় কারণ হল, হিংসা । ৪র্থ কারণ হল, মাসায়েলের মধ্যে মতভেদ । ৫ম কারণ হল, সঠিক রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া, যেমন মু’তাজেলা, এবং খাওয়ারেজ সম্প্রদায়ের লোকেরা ইমাম সাহেব সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছে । ৬ষ্ঠ কারণ হল, গোঁড়ামি।
সুতরাং আনওয়ারুল হক ফাইযী যে ইমাম সাহেব সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছেন তাই তিনি ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি হিংসুটে প্রকৃতির। মাসায়েলের মতভেদের কারণে তিনি সঠিক রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছেন। তিনি মু’তাজিলা বা খারেজী সম্প্রদায়ের লোক। এবং তাঁর মধ্যে মাযহাবী গোঁড়ামিতে ভরপুর।
সুতরাং আমরা দেখতে পেলাম ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সাঃ) ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন। কিন্তু আনওয়ারুল হক ফাইযীর দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর থেকে বড় মুহাদ্দিস নাসীরুদ্দীন আলবানীকে নিয়ে কোন ভবিষ্যৎবাণী হাদীসগ্রন্থগুলিতে করা হয়নি। এটাই হল আনওয়ারুল হক ফাইযীর চুড়ান্ত পরাজয়।
নাসীরুদ্দীন আলবানীকে নিয়ে কোন ভবিষ্যৎবাণী হাদীসগ্রন্থগুলিতে না করা হলেও এই আহলে হাদীস নামধারী লা মাযাহবীদের সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সাঃ) ভবিষ্যৎবাণী করে উম্মতকে সাবধান করে গেছেন। যেমন, মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে,
“আন আবী হুরাইরাতা রাযীআল্লাহু আনহু ক্কালা, ক্কালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইয়াকুনু ফি আখরিজ্জামানি দাজ্জালুনা কাজ্জাবুনা ইয়াতুনাকুম মিনাল আহাদিসি বিমা লাম তাসমাউ আনতুম ওয়ালা আবাহুকুম ফাহিয়াহুম ওয়াহিয়াহুম লা ইউযুল্লুনাকুম ওয়ালা ইয়াফতিনুনাকুম।”
অর্থাৎ “হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, শেষযুগে একদল দাজ্জাল শ্রেণীর মিথ্যাবাদী দলের আবির্ভাব হবে যারা মানুষকে হাদীসের দিকে আহ্বান করবে। তারা এমন এমন হাদীস শোনাবে যা তোমাদের বাপ দাদার মধ্যে কেউ কোনদিন শোনেনি। তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকে নিজেদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখবে তানাহলে তোমাদের ফিৎনায় নিমজ্জিত করে দেবে।” (মুসলিম শরীফ, পৃষ্ঠা-১০)
সুতরাং আল্লাহর নবী (সাঃ) আমাদেরকে এই লা মাযহাবী ফিৎনা থেকে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে সাবধান করে গেছেন যে তারা এমন এমন হাদীস শোনাবে যা তোমাদের বাপ দাদার মধ্যে কেউ কোনদিন শোনেনি। সত্যই আমরা ৮ রাকআত তারাবীহ, তিন তালাককে এক তালাক, রফয়ে ইয়াদাইন ফরজ হওয়ার ব্যপারে আমরা এবং আমাদের বাপ দাদাদের কেউ শোনেনি। তাই আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর হুকুম পালন করতঃ এই আহলে হাদীস নামক মারাত্মক গায়ের মুকাল্লিদ ফিৎনাবাজ দলের সংস্পর্শ থেকে সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানদের দূরে থাকা উচিৎ।
আলবানী ভাইরাস থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত করতে হবে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফারায়েযী সঠিক কথায় লিখেছেন যে, “আলবানী ভাইরাস থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত করতে হবে জাগো মুসলিম-
তথাকথিত আহলে হাদীস দলটি সৃষ্টি করা হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য । সে কারণে তারা কোনো কথাই মানবে না। প্রশ্ন করবে। উত্তর দিলে শুনতে চাইবে না। বরং তারা বলতেই চায়। শুধু অন্যকে শোনাতে চায় । সে কারণে তারা বেছে নিয়েছে মিডিয়া। যেখানে শুধু বলতেই পারা যায়। শোনতে হয় না। মূল কথা হলো তাবেঈন ও তবে তাবেঈন এবং কাছাকাছি যুগে বিধর্মীরা ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের মরণ কামড় দিতে চেষ্টা করে। সে কারণে সৃষ্টি করা হয় অনেক বাতিল শক্তি। ইসলাম ও মুসলমানের নামে অনেক দল উপদল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ওয়াদা তিনি নিজেই ইসলামকে রক্ষা করবেন। তাই তিনি তৎকালে কায়েকজন বড় বড় মনীষীর মাধ্যমে ইসলামের হক্কানিয়্যাত তথা আসল রূপটি অক্ষতভাবে রেখেছেন। এটি আল্লাহর নীতি। আহলে হাদীসদেরকে নাস্তিকদের মত কান ধরে বোঝাতে হয়। তাই বলতে হয় আল্লাহ তা’আলা যে, কুরআনে ঘোষণা করেছেন তিনি নিজেই ইসলামের সংরক্ষনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার অর্থ কি আল্লাহ তা’আলা নিজে মানুষ বেসে মানুষের মধ্যে এসে ইসলাম রক্ষা করবেন? নিশ্চয়ই না। তার অর্থ কী? তার অর্থ হলো যুগে যুগে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন যারা আসল দ্বীনকে অক্ষত রাখবেন। অন্যন্য ধর্মের মত এটিকে পুরো পুরি বিকৃত হতে দেবেন না। সেই কারণেই যুগে যুগে আল্লাহ তা’আলা মনীষী সৃষ্টি করেছেন। যে যুগের কথা বললাম সে যোগ ছিল ইসলামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ যুগ। অর্থাৎ এই যুগে রাসূল (সা.) এর প্রচারিত বিধান সাহাবায়ে কেরাম থেকে তাবেঈনের কাছে আসবে, তাবেঈন থেকে তবে তাবেঈনের কাছে আসবে। সুতরাং এই যুগে যদি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ভেজালের অনুপ্রবেশ ঘটানো যায় তবে তা কিয়ামত পর্যন্ত ভেজালে ভেজালে পরিপূর্ন থাকবে। এই কারণেই অনেক বাতিল ফিরকা জন্ম নেয় এই যুগে। তার পাশাপাশি ছিলেন যুগে শ্রেষ্ঠ মনীষীগণ। তারা তাড়াতাড়ি ইসলামের বিধান যাতে মুসলমানদের জন্য সহজ হয় সে জন্য মানুষের সম্ভাব্য যত বিষয় হতে পারে সব গুলো নিয়ে গবেষণা আরম্ভ করেন। প্রত্যেক বিষয়ে হাদীস কুরআনের আলোকে কিভাবে সমাধান করা যায় তা গবেষণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরূপ গবেষকদের মধ্যে সবচাইতে বেশি গবেষণা করেছেন এবং সঠিক গবেষণা করেছেন এমন লোক চার জন্য।ইমাম আবু হানীফা (রহ.), ইমাম শাফেয়ী রহ., ইমাম মালেক রহ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)। এই চার জন ইমাম প্রত্যেকে শত শত সগারিদ ও সমসাময়িক ওলামায়েকেরামকে নিয়ে কুরআন হাদীস গবেষণা করতে থাকেন নিজ নিজ যুগে। মানুষের যত সম্ভাব্য বিষয় থাকতে পারে সব কিছু নিয়েই এরা গবেষণা করেছেন। সব কিছুকে কুরআন হাদীসের আলোকে সমাধান দিয়েছেন। এদের প্রত্যেকেই হাফেজুল হাদীস ছিলেন। এদের মধ্যে ইমাম আবু হানীফাই একক ব্যক্তি যিনি সবচাইতে বেশি বিষয়াদির ইসলামী সমাধান দিয়েছেন। সমস্ত বাতিলের মোকাবেলা করে, ইসলামের নামে বাতিলদের ছড়ানো অগণিত বিষয়দি থেকে ইসলামকে মুক্ত করে কুরআন হাদীস থেকে মাসআলা ইস্তিম্বাত করেছেন। এই কারণেই তাঁকে ইমাম আজম বলা হয়। সে যুগের সকল হক্কানী ইমাম, মুহাদ্দিস এবং আলেম উলামা হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর ইলম, প্রজ্ঞা ও হাদীস ও কুরআন বিশেষজ্ঞতার মধ্যে এক নাম্বারে স্থান দিতেন । এটি সে যুগ যখন সর্বপ্রথম হাদীস সংকলনের কাজ চলছে। এমনকি আবু হানীফা (রহঃ) কে হাদীস সংকলনের প্রথম ব্যক্তি বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ তাঁর হাদীস সংকলনই হাদীস শাস্ত্রের প্রথম কিতাব। তিনি সাহাবীকেও পেয়েছেন। সরাসরি সাহাবী থেকেও হাদীস গ্রহণ করেছেন। ফিকার রূপকারতো ছিলেনই। ইসলামী বিধানাবলীকে মুসলমানদের মধ্যে সহজ করাই যেহেতু তাঁদের মূল মিশন ছিল সে কারণে ফিকাকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর একজন মুজতাহিদের কতগুলো হাদীস মুখস্ত থাকা আবশ্যক তা বর্তমানের তথাকথিত আহলে হাদীসগণ কি বুঝবেন। এরাতো নির্দিষ্ট দুএকটি হাদীসের বই থেকে পড়েই আহলে হাদীস সেজেছেন। ইমাম আবু হানীফা রহ. এত অগণিত বিষয়ে মাসআলা বের করে সমাধান দিয়েছেন যা দেখে দুনিয়ার সকল ইমাম মুজতাহিদ হতবাক। সে কারণে প্রায়ই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন ইমাম আবু হানীফা (রহ.) যেমন ফিকার মধ্যে ইমাম আজম তেমনি হাফেজে হাদীসের মধ্যেও তিনি সবচেয়ে বড়। কারণ তিনি যতগুলো মাসআলার সমাধান দিয়েছেন তা পরে মিলিয়ে দেখা হলে দেখা যায় কোনো একটি হাদীস কুরআনের পরিপন্থী নেই। কিন্তু যেহেতু চার ইমাম ইসলামের নামে সকল বাতিলের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করার জন্য পুরো দমে মিশন চালিয়ে বিজিত হয়েছেন সেহেতু দুনিয়ার সকল বাতিল শ্রেণী তাদের বিরুদ্ধে মনোনিবেশ করে। তাদের দোষ ত্রুটি খোঁজতে আরম্ভ করে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ডাহা মিথ্যা অপবাদ দিতে থাকে। আজকে আহলে হাদীস নামে এই ক্যান্সার যে সকল হাদীসের কিতাব পড়ে নিজেদের আহলে হাদীস বলে দাবী করে, চার ইমামসহ সলফের সালেহীন এমনকি সাহাবায়ে কেরামের পর্যন্তা বিষোদগার করে তাদের সে হাদীসের কিতাগুলোর সংকলকগণ প্রত্যেকে এই চার ইমামের যে কোনো ইমামের অনুসরণ করেছেন। কেউ কেউ হয়ত কয়েকটি বিষয়ে হাদীস ও কুরআনের সাথে মিলিয়ে নিজের মতের উপর আমল করেছেন। বড় মজার ব্যাপার হলো হাদীসের কিতাবগুলো সাজানো হয়েছে চার ইমামের ফিকাহকে সামনে রেখে এবং ফিকার অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ও পরিচ্ছেদের কথা বিবেচনা করা। তাতে বোঝা যায় এই হাদীসের কিতাবগুলো রচিতই হয়েছে চার ইমামের ফিকহকে শক্তিশালী করার জন্য। এবং তাই হয়েছে। এইসকল মুহাদ্দিসগণ কেউ বলেননি এই হাদীসের কিতাবগুলো পড়লে মুসলমনাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। প্রত্যেকে একটি বিষয়ে একমত ছিলেন যারা মুজতাহিদ নয় তাদেরকে চার ইমামের যে কোনো ইমামকে মেনে চলতে হবে। তাতে বোঝা যায় চার ইমাম যে মিশন নিয়ে কাজ করেছেন হুবহু সে সে মীশনের পরিপুরক হিসেবে মুহাদ্দিসগণ কিতাব রচনা করেছেন। সে ভাবেই ইসলামের সামগ্রিক বিধান দুনিয়াতে এপর্যন্ত অক্ষতভাবে টিকে আছে । তাঁরা সকলে বাতিলের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। ইসলামের মূল খাকায় বা স্ট্রাকচারে বাতিল নামে কোনো বস্তু প্রবেশ করতে না পারার জন্যই মূলত এই মিশন চালু ছিল। এটা আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং নিজেই করেছেন। কারণ ইসলামকে সংরক্ষনের দায় দায়িত্ব তিনি নিজের হাতেই রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে তথাকথিত আহলে হাদীস নামের একটি নতুনরূপে বাতিল মাঠে এসে ১৪শ বছরের এই মেহনতকে চির তরে ধ্বংস করে দিতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। একদিকে তারা চার ইমামের নামে বিষোদগার করে সাহাবা পরবর্তী যুগের সলফে সালেহীনকে হেয়প্রতিপন্ন করে ইসলামের আগমনের পথকে কলোষিত করতে চাচ্ছে। আবার হাদীস গবেষণার নামে আলবানী ইত্যাদির মত ইহুদীকর্তৃক সৃষ্ট লোক দ্বারা স্বয়ং সিহাহ সিত্তার সংকলক মুহাদ্দিসগণকে কলোষিত করার চেষ্টা করেছে। আলবানীর মত বেআদবই হাদীস গবেষণার নাম বলে ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিযীর, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণের মতের বিরোধিতা করে সহীহ হদীসকে জয়ীফ আর জয়ীফ হাদীসকে সহীহ বলে বিভিন্ন প্রকার বিভ্রান্তি সৃষ্টির পায়তারা করেছে। আর আহলে হাদীসগণ তো আলবানী ভক্তির এমন পর্যায়ে অবস্থান করছেন, যদি আলবানী সাহেব কোনো হাদীসকে জয়ীফ বলেছেন, আর স্বয়ং নবী করীম (সা.) ও এসে যদি বলে যান এটি আমার হাদীস এবং সহীহ তখনও তারা আলবানীর কথা ছাড়া কিছু মানতে রাজি নয়। তাতে বোঝাই যায় আলবানী সাহেব বিধর্মীদের সৃষ্ট একটি চক্র। আর তথাকথিত আহলে হাদীস নামক লোকজন সে চক্রের ভাড়াকরা সদস্য । সে কারণে এরা হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত আলী ও হযরত সমান (র.) ন্যায়ে ইসলামের খলীফা এবং আরো কত সাহাবীকেও বিভিন্ন অমার্জনীয় ভাষায় কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। এরাই বলে হযরত উমরের কথা ইসলাম নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কথা নাকি ইসলাম নয়। নাউজু বিল্লাহ। তাহলে ইসলাম কি আলবানীর কথা? স্বয়ং নবী (সা.), সাহাবী, আইম্মায়ে মুজতাহিদের কথা মানাকে শিরিক আখ্যায়িত করে, আলবানীর মত বেআদবের কথাকেই যদি একমাত্র ইসলাম বলে ধরে নিতে হয় সেরূপ ইসলাম থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ফাসিতে ছড়াওতো জায়েয হবে। সারা দুনিয়ায় ইহুদীরা ছাড়িয়ে দিয়েছে আলবানীর তাহকীক নামে ভণ্ডামী। সমস্ত কিতাব আলবানী এসে শুদ্ধ করেছেন। আহলে হাদীসের এই শ্রেণী এখন ইমাম বুখারীর বুখারী, ইমাম মুসলিমের মুসলিম, ইমাম তিরমিযীর তিরমিযী, ইমাম আবু দাউদের আবু দাউদ, ইমাম নাসায়ীর নাসায়ী, ইমাম ইবনে মাজার ইবনে মাজা চায় না। তারা চায় আলবানীর বোখারী, আলবানীর মুসলিম, আলবানীর তিরমিযী, আলবানীর নাসায়ী ইত্যাদি।ইসলাম নিয়ে এতবড় ধৃষ্টতা দুনিয়াতে আর কেউ দেখাতে পারেনি। হয়ত পরবেও না। প্রত্যেকটি হাদীসের কিতাবে আলবানী চরম বেআদবীর মাধ্যমে সকল মুহাদ্দিসকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এক দিকে বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে ইমামগণকে হেয় করেছে আলবানী। আবার হাদীস প্রিয়তার নামে সমস্ত মুহাদ্দিসদের উস্তাদ সেজেছে আলবানী। এর মত বেআদব মুসলিম উম্মাহে আর পয়দা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আচ্ছা আলবানী দুনিয়াতে আসার পূর্বে কি দুনিয়াতে কেউ মুসলমান ছিলেন না? তথাকথিত আহলে হাদীসদের বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্য দেওয়ার আগে যারা দুনিয়াতে ছিল তারা কি মুসলমান ছিল না। তারা এক বাক্যে বলেই দেবে সঠিক ইসলাম ছিল না। নাউজুবিল্লাহ। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি! তথাকথিত আহলে হাদীসদের ইহুদী ষড়যন্ত্র এখন মুসলমনাদের গলা ছোয়ার কাছাকাছি। আমি অবাক হয়েছি, বোখারী শরীফের হাদীসের তাখরীজ করা হচ্ছে আলবানীর কিতাব থেকে। অর্থাৎ বোখারী শরীফের তাখরীজে লেখা হচ্ছে সাহহাহু আলবানী ফী সিলসিলাতিসসাহী। সেরূপ প্রত্যেক হাদীসের কিতাবের তাখরীজে এখন বোখারী মুসলিমের রেফারেন্স পরিকল্পিতভাবে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সব জায়গায় লেখা হচ্ছে এ হাদীসটি আলবানীর বোখারীর সিলসিলায়ে সহীহ বা জয়ীফ এ এত পৃষ্ঠায় আছে। হাদীস নং এত। মুসলমানদের সতর্ক করার জন্যই বলছি। এর মাধ্যমে সলফসালেহীন যাদের বলা হয় সকল মুহাদ্দিস, মুফাসসির এবং ইমাম মুজতাহিদদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার সুক্ষ্ণ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দরসেগাহে এরূপ এহালা বা রেফারেন্সের কিতাব বয়কট করা আবশ্যক। কিতাব কেনার সময়ও এখন দেখে শোনে কেনার সময় হয়েছে। এগুলো ইসলাম ধর্মকে সমূলে বিকৃত করার একটি সুক্ষ্ণ পায়তারা। দেশের বিজ্ঞ উলামায়ে করামকে এসব বিষয় ভালভাবে বুঝতে হবে। এই সর্বগ্রসী ষড়যন্ত্র থেকে মুসলমানদের উদ্ধার করতে হবে। বিশেষ করে বিদেশী কিতাব কেনার সময় বিষয়টি সকলের নজরে রাখা অতি প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন আমীন। সর্ব শেষ কথা হলো আলবানী ভাইরাস থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত করতে হবে। এই ভাইরাস সময়মত রুখা না গেলে ইসলামকে বিকৃত করে পুরো উম্মাহকে ঈমান, ইসলাম হারা করার ক্যান্সারে রূপান্তারিত হবে।”