‘জিজিয়া’ ইসলামি সংবিধানের একটি পরিভাষা। আরবি অভিধান খুললে এর শব্দগত অর্থ দেখা যায় খাজনা, কর, শুল্ক ইত্যাদি। বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘আল কামূস’ গ্রন্থে ‘জিজিয়া’ সম্বন্ধে বলা হয়েছে: ‘জমির খাজনা’ ও ‘জিম্মি’দের১ কাছ থেকে আদায়কৃত করকে ‘জিজিয়া’ বলে। ফারসি পণ্ডিতগণও ‘জিজিয়া’ শব্দের অনুরূপ অর্থ লিখেছেন। ফারসি অভিধান ‘বুরহান-ই-কাতে’ গ্রন্থে ফারসি ‘গিযইয়েত’ (আরবিতে ‘জিজিয়া’) শব্দ দ্বারা যা বােঝায় তা হল, দেশের সরকার প্রজাদের থেকে বছরে যে নির্দিষ্ট অর্থকর গ্রহণ করেন, সেটাই ‘গিযইয়েত’। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আরবি ও ফারসি উভয় অভিধান থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘জিজিয়া’ শব্দটি তৈরি হয়েছিল খাজনা, কর ও শুল্কের জন্যই। কিন্তু পরবর্তীকালে শব্দটি সেই বিশেষ করের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতে থাকে, যা ইসলামি রাষ্ট্র তার অমুসলিম নাগরিকদের কাছ থেকে গ্রহণ করে। তবে মনে রাখতে হবে এই নাগরিক মােটেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয়, রাষ্ট্র কর্তৃক সুরক্ষিত নাগরিক২ ও মুসলমানদের মত তাঁরাও সমান মর্যাদার অধিকারী।
(১)
ইসলামে ‘জিজিয়া’ বিধানের মূলসূত্রটি সম্বন্ধে আলােচনা করা যেতে পারে। ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক হযরত মােহাম্মদের (সঃ) জন্মস্থান ছিল আরব দেশের মক্কা শহর। এখানেই তিনি প্রতিপালিত হন। এই মক্কা থেকেই নবী তথা আল্লাহ-প্রেরিত সুসংবাদ বাহক হিসেবে (৬১০) তিনি শাশ্বত ইসলামের প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন। নবী হওয়ার ত্রয়ােদশ বর্ষে আল্লাহর আদেশে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায়ের (মক্কার বিশেষ অমুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়) অত্যাচারে মক্কা ত্যাগ করে মদিনা নগরীতে ৬২২ সালে হিজরত (অত্যাচার হেতু জন্মভূমি ত্যাগ) করলেন। মদিনাবাসী তাদের সাদরে গ্রহণ করলেন এবং এসময় সেখানকার অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম ও মক্কার মুসলিমদের সহায়তায় আত্মনিয়ােগ করার জন্যে তাদেরকে অর্থাৎ মদিনার অধিবাসীদের ‘আনসার’ (সাহায্যকারী) বলা হয়।।
মদিনা ও তার আশেপাশে ছিল ইহুদি জাতির আবাসস্থল, উপনিবেশ। সেকালে তারা ছিল ধন-সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থায় ‘আনসারদের’ থেকে উন্নত। তারা প্রথমে হযরত মােহাম্মদের (সঃ) সঙ্গে মিলে-মিশে থাকবার যৌথ স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চুক্তিতে (মদিনা সনদ বা চুক্তি) আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু পরে ঘটনা পরম্পরায় প্রমাণিত হল যে, এ চুক্তিটা ছিল একটা প্রাণহীন বাহ্যিক খােলসের মতই। ভেতরে মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায়ের মতই মদিনার ইহুদিরাও হযরত মােহাম্মদের (সঃ) সঙ্গে হিংসা পােষণ করত। তাই দেখা গেল যখন মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায় মদিনা হামলা করল, হযরত মােহাম্মদের (সঃ) সঙ্গে ‘মদিনা সনদ’ বা চুক্তিতে আবদ্ধ মদিনার ইহুদি সম্প্রদায়ও মিশে গেল কুরাইশদের সঙ্গে। মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায় ও মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় ইসলাম বৈরিতায় যেন মণিকাঞ্চন সংযােগ ঘটল। ইসলাম ও হযরত মােহাম্মদকে (সঃ) এখন দুটি শত্রুর সঙ্গে মােকাবিলা করতে হবে। হিজরতের পর থেকে পঞ্চম হিজরী (৬২৬) পর্যন্ত মক্কার কুরাইশ সম্প্রদায় সমানে মদিনায় সামরিক হামলা করতে থাকে। পঞ্চম হিজরীতে কুরাইশ ও হযরত মােহাম্মদের (সঃ) মধ্যে একটা চুক্তি সম্পাদিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এই চুক্তিটি ‘হুদায়বিয়ার’ চুক্তি নামে খ্যাত।
এই চুক্তির পর কুরাইশদের দিক থেকে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে ৬ষ্ঠ হিজরীতে (৬২৭) হযরত মােহাম্মদ (সঃ) রােমান সম্রাট, পারস্য সম্রাট, মিশর সম্রাট, আবিসিনিয়ার শাসনকর্তা ও সিরিয়ার শাসনকর্তার কাছে ইসলামের আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দিলেন। সিরিয়া সেকালে রােমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। হযরত মােহাম্মদ (সঃ) প্রেরিত পত্রবাহক দূতকে সিরিয়ার শাসনকর্তা হত্যা করে ফেলল। বিনা অপরাধে, বিনা প্ররােচণায় দূতকে হত্যার প্রতিশােধ গ্রহণের জন্য হযরত মােহাম্মদ (সঃ) হিজরী অষ্টম বর্ষে (৬৩০) সিরিয়া অভিযান করলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ হল, সে যুদ্ধে রােমান সাম্রাজ্য প্রত্যক্ষভাবে প্রচুর সাহায্য করল সিরিয়াকে। এভাবে গােটা রােমান সাম্রাজ্য ইসলামের শত্রুতে পরিণত হল।
কুরাইশ সম্প্রদায় হুদায়বিয়ার চুক্তিতে বেশিদিন স্থিতিশীল ছিল না। তাদের পক্ষ থেকে চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় বাধ্য হয়ে হিজরী অষ্টম বর্ষে (৬৩০) হযরত মােহাম্মদ (সঃ) মক্কা অভিযান করলেন এবং বিনা রক্তপাতে মক্কা জয়লাভও করলেন। অতঃপর কিছুদিনের মধ্যে মক্কা তথা আরবের অন্যান্য এলাকার অমুসলিম তথা প্রতিমাপূজক জনগণ ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু ইসলামের শত্রু থেকে গেল আরবের ইহুদি ও খ্রিস্টানগণ। তাদের বিরামহীন কপটতা, অনিষ্টকারিতা ও সমাজ বিরােধিতা থেকে দেশকে, ইসলামি রাষ্ট্রকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ এল পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে: “গ্রন্থধারীগণের মধ্যে (ইহুদি ও খ্রিস্টান) যে বা যারা আল্লাহর উপর নিখুঁত বিশ্বাস স্থাপন করে না, শেষ বিচারের দিনের উপর প্রত্যয় নেই, সেই সব বস্তুকে অবৈধ (হারাম) বলে মানে না—যেগুলােকে আল্লাহ আর তাঁর রাসূল (তাদেরই কিতাবে) অবৈধ বলে ঘােষণা করেছেন, যারা সত্য ধর্মে স্থিতিশীল নয় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ‘জিজিয়া’ দিতে স্বীকৃত হয় (অর্থাৎ আনুগত্য প্রকাশ করে)।”৩ বলা বাহুল্য, পবিত্র কোরআনের এ নির্দেশ আল্লাহর কাছ থেকে এল, কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ প্রযােজ্য উপরের ঐতিহাসিক ঘটনা পরম্পরা থেকে তা স্পষ্টভাবে বােঝা যায়।
এক্ষেত্রে ইহুদি-খ্রিস্টান সমস্যার সমাধানের অন্য উপায়ও ছিল। মুসলিমগণ তখন যে দুর্বার শক্তির অধিকারী, মনােবল ও উৎসাহ উদ্দীপনা তাদের যেভাবে বেড়ে যাচ্ছিল, সমস্যা সমাধানের সে পথ অবলম্বন করাও অসম্ভব ছিল না। কিন্তু তা করা হয়নি, আল্লাহর নির্দেশ তা নয় বলে। ওই দুটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে, অস্ত্রবল জনবল ও মনােবল প্রয়ােগ করে তাদেরকে পর্যুদস্ত করে তাদের পঙ্গুত্ব ঘটিয়ে দেওয়া, মাথা তুলতে না দেওয়া বা তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করার সামর্থ তখন ইসলামি রাষ্ট্রের ছিল। কিন্তু এ পথ রক্তারক্তির পথ। শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম ইসলাম গােটা কোনাে সম্প্রদায়ের সঙ্গে এ ধরণের একগুয়েমি ভিত্তিক রক্তারক্তি পছন্দ করে না। তাই আল্লাহর নির্দেশে বিকল্প ব্যবস্থা ‘জিজিয়া’ নীতিটাকেই ইসলাম গ্রহণ করেছে।
পৃথিবীর কোনাে জাতি, কোনাে রাষ্ট্রব্যবস্থা কি এমন আছে, যেখানে তার শত্রুদেরকে স্বাধীনভাবে অবাধে শত্রুতা, যুদ্ধবিগ্রহ করার জন্য মুক্ত রাখবে? প্রত্যেক রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই এ বিধি বিধানই প্রকট যাতে রাষ্ট্রের শত্রুরা চিরতরে নিপাত যায়, রাষ্ট্র ও সমাজ নিষ্কন্টক হয়। ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে কেবল ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। সে নিজের তথা রাষ্ট্রের শত্রুকে একেবারে শেষ করে দিতে চায় না। শত্রুর শত্রুতার পরিসমাপ্তি চায়। বিনিময়ে তাদের সবরকম নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দেশে নিরাপদে বসবাসের সুযােগ দেয়। এ নীতিরই কার্যকরী রূপ ‘জিজিয়া’ প্রবর্তন।
(২)
কোনাে কোনাে ঐতিহাসিকের মতে, ‘জিজিয়ার ধাতুগত অর্থ ক্ষতিপূরণ’। কোরআন অনুযায়ী এই কর বিজিতদের স্বেচ্ছাপ্রণােদিত বশ্যতার নিদর্শন স্বরূপ। যুদ্ধ-বিগ্রহের বিজেতারা বিজিতদের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ এবং শাসন সংক্রান্ত ব্যয়ভার বহনের উদ্দেশ্যে কর আদায় করে আসছে স্মরণাতীতকাল থেকে। যেমন-ভারতে ইসলাম আসার আগে রাজপুতদের মধ্যে ‘ফীকস’ নামক কর আদায় হত। এ তথ্য স্মিথ তাঁর ‘আর্লি হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া’৪ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধুপ্রদেশে অষ্টম শতকের প্রথমের দিকে জিজিয়া চালু করেন।৫ তিনি জিজিয়ার বিনিময়ে হিন্দুদের স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকারে স্বীকৃতি দেন। আর পি ত্রিপাঠী তাঁর গ্রন্থে৬ উল্লেখ করেছেন যে, ফ্রান্সে যে জিজিয়া প্রচলন ছিল তার নাম ছিল ‘হােস্ট ট্যাক্স’ আর জার্মানিতে যে জিজিয়ার প্রচলন ছিল তার নাম ‘কমনপিনি’ এবং ইংল্যান্ডে একপ্রকার জিজিয়া চালু ছিল যার নাম ছিল স্কন্টেজ। কনৌজের গহরাওয়ার বংশেও জিজিয়ার প্রচলন ছিল, সেখানকার ভাষায় তার নাম ছিল ‘তুরশকী জনডা’।৭ একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে চোল বংশের রাজারা তাদের হিন্দু প্রজাদের উপর জিজিয়া কর বসিয়েছিলেন। অনেকে হয়ত জানলে ভিরমি খাবেন যে, ১৪ শতাব্দীতে মালাবার উপকূলের এক হিন্দু রাজবংশ (জামােরিন) তাঁদের ইহুদি প্রজাদের কাছ থেকে নিয়মিত জিজিয়া আদায় করতেন।৮
বহুপূর্বে ইরানেও ছিল “জিজিয়া’র প্রচলন, যে রূপেই হােক না কেন। ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, ‘জিজিয়া’ বা ‘খারাজ’ (কর, খাজনা, শুল্ক) সর্বপ্রথম প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যে চালু হয়। মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন সময় রােমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসার দরুণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্বন্ধ-সূত্রে প্রাচীন ইরান সাম্রাজ্য ‘জিজিয়া’র সঙ্গে পরিচিত হয়। ইরানে চালু হয় প্রজাদের থেকে ‘গিযইয়েত’ নামে “জিজিয়া’ বা ‘খারাজ’ কর আদায় প্রথা। ইরানের বিখ্যাত সম্রাট নওশেরওয়ান সর্বপ্রথম স্বদেশে ‘গিযইয়েত’ বা ‘জিজিয়া’র প্রচলন করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনুল আসির তার কালজয়ী ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল কামিল ফিত-তারিখ’৯-এ লেখেন যে, সম্রাট নওশেরওয়ান সমগ্র রাজ্যে জমির পরিমাপ করে কতকগুলাে খাজনার হার নির্ধারণ করেন। নওশেরওয়ান সৈনিক শ্রেণি, দরবারি শ্রেণি যথা উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারিগণ ব্যতীত সমস্ত প্রজাদের উপর উক্ত কর বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়ােগ করেন। ‘জিজিয়া’ আদায় করার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঐতিহাসিক ইবনুল আসির ইরান সম্রাট নওশেরওয়ানের ঘােষণাটি বর্ণনা করেছেন। শিবলী নােমানীর ‘আল জিযইয়া’ গ্রন্থে উল্লেখিত ঘােষণাটি হল—“দেশের প্রতিরক্ষার গুরুদায়িত্বপালনকারীগণের উপরই দেশের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা নির্ভর করছে। তারা নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করে সামরিক কর্তব্য পালন করে দেশ রক্ষা করেন। তাই অসামরিক জনগণের আয় ও উৎপাদন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ সামরিক দায়িত্ব পালনকারীদের জন্য আদায় করা হবে ও তাদের মধ্যে বন্টন করা হবে। এটা তাদের গুরু দায়িত্ব পালনের নগণ্য পারিশ্রমিক ব্যতীত আর কিছু নয়।” সম্রাট নওশেরওয়ান-এর ঘােষণা থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, নিছক সামরিক সেবার বিনিময়ে “জিজিয়া’ অসামরিক জনগণের থেকে নির্দিষ্ট হারে আদায় করা হত। ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলাম’-এ বলা হয়েছে : The Zazia as a tax on the free from military service.’
(৩)
ইসলামি দৃষ্টিতে ‘জিম্মি এবং ‘জিজিয়া’র সম্পর্ক কি, ইসলামের পয়গম্বর হযরত মােহাম্মদের (সঃ) নির্দেশ থেকেই তা প্রতীয়মান হয়। হযরত মােহাম্মদ (সঃ) ‘জিম্মি’দের নিরাপত্তা দিতে কিছু শর্ত আরােপ করেন, যে শর্তগুলি পূরণ করতে ইসলামি রাষ্ট্র দায়বদ্ধ। যেমন,
- ১. শত্রুদের হাত থেকে জিম্মি’দের রক্ষা করতে হবে।
- ২. তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখা হবে।
- ৩. তাদের ধন-সম্পত্তি, বিষয় আশয় ও প্রাণের নিরাপত্তা থাকবে।
- ৪. স্থাবর-অস্থাবর এবং জমি-জায়গা তাদেরই হস্তে ন্যস্ত থাকবে।
- ৫. ‘জিম্মি’দের পূজার্চনা থেকে পাদ্রী-পুরােহিতদের বরখাস্ত করা হবে না।
- ৬. তাদের ধর্মীয় প্রতীক (ক্রুশ, মূর্তি) বিনষ্ট করা হবে না।
- ৭. তাদের কাছ থেকে ‘ওশর’ (যা মুসলিম চাষীদের প্রদেয়) নেওয়া হবে না।
- ৮. তাদের অঞ্চলে সেনাবাহিনী প্রেরণ করা হবে না।
- ৯. তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অপরিবর্তিত থাকবে।
- ১০. পূর্ব-প্রাপ্ত কোনাে অধিকারকেই ক্ষুন্ন করা হবে না ইত্যাদি।।
হযরত মােহাম্মদের (সঃ) এই ঘােষণা থেকেই বােঝা যায়, জিজিয়া বিজিতের ওপর বলপূর্বক চাপানাে কোনাে কর নয়। অবমাননা বা হীনতাসূচক কোনাে জরিমানা নয়। পূর্বে রােমান সাম্রাজ্য ইত্যাদি বিজিত শত্রুকে জিজিয়ার বিনিময়ে যেমন দাসরূপে ব্যবহার করত ইসলামে তার অবকাশ নেই। এ ব্যাপারে হযরত মােহাম্মদের (সঃ) স্পষ্ট নির্দেশ—যে ব্যক্তি জিম্মি নাগরিককে হত্যা করবে, বেহেশতের (স্বর্গ) সুগন্ধও তার ললাটে জুটবে না (বুখারী শরীফ)। সিরিয়া সফরকালে হযরত ওমর (রাঃ) দেখলেন, সরকারী কর্মচারীরা জিজিয়া আদায় করার জন্য অমুসলিম নাগরিকদের শাস্তি দিচ্ছে। তিনি তাদের বললেন, “ওদের কষ্ট দিও না। তােমরা যদি ওদের কষ্ট দাও, তবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তােমাদের শাস্তি দেবেন।”১০ জিজিয়া আদায়ে অমুসলিম নাগরিকদের ওপর যে কোন ধরনের কঠোরতা প্রয়ােগ নিষিদ্ধ। তাদের সাথে নম্র ও কোমল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তারা বহন করতে পারে এমন বােঝা তাদের ওপর চাপাতে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত ওমরের (রাঃ) নির্দেশ ছিল, “যে পরিমাণ সম্পদ রাষ্ট্রকে প্রদান করা তাদের সামর্থের বাইরে তা দিতে তাদেরকে বাধ্য করা চলবে না।”১১
জিজিয়ার বদলে অমুসলিম নাগরিকদের ধন-সম্পদ নীলামে চড়ানাে যাবে না। হজরত আলি (রাঃ) তার জনৈক কর্মচারীকে নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন যে: “কর খাজনা বাবদে তাদের গরু, গাধা, কাপড়-চোপড় বিক্রি করাে না।”১২ হযরত ওমর (রাঃ) গভর্নর হজরত আবু উবায়দাকে যে ফরমান পাঠিয়েছিলেন তাতে অন্যান্য নির্দেশের পাশাপাশি এ নির্দেশও ছিল: “মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের ওপর জুলুম (অত্যাচার) করা, কষ্ট দেওয়া এবং অন্যায়ভাবে তাদের সম্পত্তি ভােগ করা থেকে বিরত রাখাে।”১৩ হিশাম ইবনে হাকাম দেখলেন, জনৈক সরকারী কর্মচারী জিজিয়া আদায় করার জন্য জনৈক কিবতীকে রােদে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তিনি তাকে তিরস্কার করলেন এবং বললেন, আমি হযরত মােহাম্মদকে (সঃ) বলতে শুনেছি: “যারা দুনিয়য় শাস্তি দেবে, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন।” (আবু দাউদ)।
যেসব অমুসলিম নাগরিক দারিদ্র্যের শিকার ও পরমুখাপেক্ষী, তাদের জিজিয়া তাে মাফ করা হবেই, উপরন্তু ইসলামী কোষাগার থেকে তাদের জন্য নিয়মিত সাহায্যও বরাদ্দ করা হবে। হযরত খালিদ (রাঃ) হীরাবাসীদের যে লিখিত নিরাপত্তা সনদ দিয়েছিলেন, তাতে একথাও লেখা ছিল: “আমি হীরাবাসী অমুসলিমদের জন্য এ অধিকারও সংরক্ষণ করলাম যে, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বার্ধক্যের দরুণ কর্মক্ষমতা হারিয়ে বসেছে, যার ওপর কোনাে দুর্যোগ নেমে এসেছে, অথবা যে পূর্বে ধনী ছিল, পরে দরিদ্র হয়ে গেছে, ফলে তার স্বধর্মের লােকেরাই তাকে দান-দক্ষিণা দিতে শুরু করেছে, তার জিজিয়া মাফ করে দেওয়া হবে এবং তাকে ও তার পরিবার-পরিজন ও সন্তানদেরকে বাইতুলমাল থেকে ভরণপােষণ করা হবে।”১৪
কোনাে অমুসলিম মারা গেলে তার কাছে প্রাপ্য বকেয়া জিজিয়া তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে আদায় করা হবে না। তার উত্তরাধিকারীদের ওপরও এর দায়ভার চাপানাে হবে না। ইমাম আবু ইউসুফ বলেন: “কোনাে অমুসলিম নাগরিক তার কাছে প্রাপ্য জিজিয়া পুরাে অথবা আংশিক আদায় দেওয়ার আগেই মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে বা তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে আদায় করা হবে না।”১৫
ইসলামে কেবল অমুসলিম (তাও সকল অমুসলিমের কাছ থেকে নয়) নাগরিকের কাছ থেকে ‘জিজিয়া’ আদায় করার বিধান কেন? প্রশ্নটি অতি বাস্তব। সমীচীনও বটে। মুসলিম জনগণের কাছ থেকে ‘জিজিয়া’ আদায় করার বিধান নেই কেন?
ইসলামি রাষ্ট্রে ইসলামি বিধান অনুযায়ী প্রয়ােজনের সময় প্রতিটি সক্ষম মুসলিম নাগরিকের উপর সামরিক সেবায় আত্মনিয়ােগ করা অপরিহার্য (পরিভাষায় যাকে ফরয বলে)। প্রয়ােজনে দেশের প্রতিটি সক্ষম মুসলিম নাগরিককে সামরিক আওতায় আনতে বাধ্য করতে পারবে ইসলামি রাষ্ট্র, সংবিধানে রাষ্ট্রের এ অধিকার আছে। মুসলিম নাগরিকের উপর রাষ্ট্রের আইনানুগ এ দাবি আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইসলামি সংবিধানে দেশের প্রতিটি মুসলিম নাগরিক ইসলামি রাষ্ট্রের সৈনিক। যার উপর রাষ্ট্রের এতখানি অধিকার ও দাবি সেই সৈনিকদের উপরও যদি ‘জিজিয়া’ কর আরােপ করা হয়, তখন সেটা হবে নীতি, আইন ও ন্যায়বিচারের বিপরীত। যেহেতু যে উদ্দেশ্যে ‘জিজিয়া কর গ্রহণ করা হচ্ছে, মুসলিম নাগরিকগণ ধনপ্রাণ দিয়ে সেই উদ্দেশ্য সফল করে তুলতে বাধ্য। এক কথায় যেকোনাে ত্যাগ স্বীকার করতে ধর্মীয় আইনে সে বাধ্য। ইসলামি রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক আপতকালীন অবস্থায় প্রতিটি মুসলিম নাগরিকের থেকে তার সামর্থ মত অর্থ, আইনের বলে আদায় করতে পারে অবাধে। কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকের উপর ইসলামি সংবিধান এমন দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্যের বােঝা চাপায়নি, তা ন্যায়নীতি বিরুদ্ধ বলে। এই করের বিনিময়ে অমুসলিমরা সামরিক কাজ থেকে অব্যাহতি পেত এবং সরকারের আশ্রয় পেত। এ ব্যাপারে আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করার আছে। অমুসলিম নাগরিকের কাছ থেকে যেমন ‘জিজিয়া’ গ্রহণ করার বিধান রয়েছে (কেবলমাত্র এই একটি করই তার থেকে গ্রহণ করা হবে), মুসলিম নাগরিকগণের কাছ থেকেও তেমন কর আদায় করার বিধান রয়েছে। এবং সে কর একটি মাত্র নয়, বেশ কয়েকটি—যাকাত, ফেতরা, সাদকা, ফিদিয়া, ওশর, খামস ইত্যাদি কর দিতে বাধ্য মুসলিম নাগরিকরা, যা সরকারি ধন-ভাণ্ডারের বিভিন্ন খাতে জমা পড়বে। এই সমস্ত কর অমুসলিমদের কাছ থেকে আদায় করা হত না। আর ঐসব করের হার ‘জিজিয়া’র থেকে অনেক গুণ বেশি। সুতরাং মুসলিম নাগরিকের কাছ থেকে ‘জিজিয়া’ আদায়ের কোনাে প্রশ্নই উঠতে পারে না।
(৪)
ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের কাছ থেকে ‘জিজিয়া’ নামক কর গ্রহণ নীতি ইসলামের শােভন ন্যায়নীতিরই উজ্জ্বল নিদর্শন। শুধু জিজিয়া দিলেই মুসলমানদের মত তাঁরাও সমান মর্যাদার নাগরিক। ইসলামি রাষ্ট্র দেশের অমুসলিম নাগরিকদেরকে বাধ্য করে না যে, তারাও মুসলিম নাগরিকদের মত দেশের প্রতিরক্ষার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব বহন করুক, প্রয়ােজনে ধনপ্রাণ সব দান করুক। তাই ইসলামি রাষ্ট্র ‘জিজিয়া’ নামক বিশেষ একটিমাত্র করের বিনিময়ে দেশের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছে। আর অমুসলিম নাগরিকদের ধনপ্রাণ, সম্মান সম্ভম ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষার, তাদের যাবতীয় নিরাপত্তা বিধানের সমস্ত দায়িত্বের বােঝা মুসলিম নাগরিকদের ওপর দিয়েছে। ঐতিহাসিক সৈয়দ নুরুল হাসান তাঁর ‘মধ্যযুগের ভারতে রাষ্ট্র ও ধর্মসংক্রান্ত কিছু সমস্যা’ শীর্ষক নিবন্ধে জিজিয়া প্রসঙ্গে বলেন: “দ্বিতীয় খলিফা উমরের আমল থেকে এটা মেনে নেওয়া হয়েছিল যে, জোরাস্ট্রিয়ানদের মত অন্যান্য যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী নয়, তাদের রক্ষা করবে ইসলামীয় রাষ্ট্র। তাই তারা রাষ্ট্রে পেল একটা নতুন স্থান। তাদের বলা হতাে জিম্মি। এর সহজ অর্থ হল যে, তাদের একটা বিশেষ ধরণের রাজকর দিতে হবে। আর তার বিনিময়ে রাষ্ট্র রক্ষা করবে তাদের জীবন, সম্মান, সম্পত্তি ও ধর্মীয় আচার আচরণ।”১৬
যারা কোনাে রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে নাগরিক হিসেবে বসবাস করবে, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শান্তি ও নিরাপত্তা ভােগ করবে, সমস্ত সুযােগ-সুবিধার অধিকারী হবে—রাষ্ট্রের শান্তি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার সরকারি উদ্যোগে ও ব্যবস্থায় যে কোনাে প্রকারেই হােক না কেন তাদেরও তাে অংশগ্রহণ করা, সহযােগিতা করা উচিত। ‘জিজিয়া’ কর সরকারকে দিয়ে এই অংশগ্রহণের সহযােগিতা অতি বৈধ ও ন্যায়নীতিসম্মত ন্যূনতম পন্থা মাত্র। ইসলামি রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকরা যখনই সানন্দে সামরিক দায়িত্ব পালনে অংশগ্রহণ করবে, তখনই সে ‘জিজিয়া’ কর থেকে রেহাই পাবে। একই ব্যক্তির কাছ থেকে সক্রিয় সামরিক সেবা ও ‘জিজিয়া’ কর যুগপৎ আদায় করার অন্যায় ও উৎপীড়নমূলক নীতি ইসলামে নেই। হয় সামরিক দায়িত্ব পালনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা নতুবা ‘জিজিয়া’ কর দেওয়া, যে কোনাে একটি পন্থা অবলম্বনের অবাধ অধিকার অমুসলিম নাগরিককে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম নাগরিকের ক্ষেত্রে কোনাে বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
যখন ইসলামি রাষ্ট্র, অমুসলিম নাগরিকদের যাবতীয় নিরাপত্তা বিধানে অক্ষম হয়ে পড়বে, তখন তাদের থেকে আদায়কৃত ‘জিজিয়া’ ফেরত দিতে রাষ্ট্র আইনত বাধ্য। এটা কেবল ‘কাগজি আইন’ নয়, বহু নজির ইতিহাসে বিদ্যমান। ইসলামি সংবিধানে ক্ষেত্র বিশেষে অমুসলিম নাগরিকগণ বিভিন্ন পন্থায় ‘জিজিয়া’ মুক্ত হতে পারে—এমন ধারাও বিদ্যমান। যে অমুসলিম নাগরিকের উপর ‘জিজিয়া’ কর ধার্য হয়েছে সে ‘জিজিয়া’ উপযুক্ত বলেই—অথচ যে ‘জিজিয়া’ কর দিতে সম্মত নয়, সামরিক দায়িত্ব পালনেও সম্মত নয়, সেক্ষেত্রে অন্য উপায়েও রাষ্ট্রের সেবায় সে আত্মনিয়ােগ করতে পারে।
যদি ইসলামি রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের উপর কৌশলে চাপ সৃষ্টি করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার জন্য ‘জিজিয়া’ কর আরােপ করা হত; তাদেরকে হীন প্রতিপন্ন করা, অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা যদি এর উদ্দেশ্য হত, তাহলে ইসলামি রাষ্ট্রের কোনাে অমুসলিম নাগরিকই ‘জিজিয়া’ থেকে মুক্ত থাকত না। ‘জিজিয়া’ সবার উপর প্রযােজ্য নয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. ইসলামি রাষ্ট্রের বিশেষ শ্রেণির সুরক্ষিত অমুসলিম নাগরিককে ইসলামি পরিভাষায় ‘জিম্মি’ বলা হয়।
২. Thomas Patrick Hughes, Dictionary of Islam, Reprint, New Delhi, 1985, P. 710-13.
৩. আল-কোরআন, সুরা তওবা।
৪. ভি এ স্মিথ, আর্লি হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া, ৪র্থ সংস্করণ, এম এডওয়ার্ডস কর্তৃক পরিসংশােধিত, অক্সফোর্ড, ১৯২৪।
৫. এস এ এ রিজভি, দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ওয়াজ ইন্ডিয়া, খণ্ড-২, বাংলা অনুবাদ-অংশুপতি দাশগুপ্ত, অতীতের উজ্জ্বল ভারত, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০১৫, পৃ. ৬৩।
৬. আর পি ত্রিপাঠী, সাম অ্যাসপেক্টস অফ মুসলিম অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন, এলাহাবাদ, ১৯৩৬। 4. 631a-U N Ghosal, The Agrarian System of Ancient India, Kolkata University, 1930, P. 67-68.
৮. হরবংশ মুখিয়া, মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, অন্তর্ভুক্ত-থাপার-মুখিয়া-চন্দ্র, সাম্প্রদায়িকতা ও ভারত ইতিহাস রচনা, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ২য় মুদ্রণ, ১৯৮৯, পৃ. ৪৬।
৯. ইবনুল আসির, আল কামিল ফিত-তারিখ, থর্ণবার্গ সম্পাদিত, লিডেন।
১০. ইমাম আবু ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, ই ফ্যাগরন অনূদিত, প্যারিস, ১৯২৯, পৃ. ৭১।
১১. ইমাম আবু ইউসুফ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮, ৮২।
১২. ফাতহুল বায়ান, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৯৩।
১৩. ইমাম আবু ইউসুফ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮২।
১৪. ইমাম আবু ইউসুফ, প্রাগুক্ত,পৃ. ৮৫।
১৫. ইমাম আবু ইউসুফ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭০; আল-মাবসূত, খণ্ড-১০, পৃ. ৮১।
১৬. সৈয়দ নুরুল হাসান, মধ্যযুগের ভারতে রাষ্ট্র ও ধর্ম সংক্রান্ত কিছু সমস্যা, অন্তর্ভুক্ত-অনিরুদ্ধ রায় সম্পাদিত, মধ্যযুগের ভারত, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ১৯৮৭, পৃ. ২। “In Islam Jizya was taken from the non-Muslim subjects in return for the protection given to them and in lieu of military service. “It was more a relief than a burden, for it released them from compulsory military service involving grave responsibilities and risk of life which was incumbent of their Muslim fellow-subjects.’ When they served in the Muslim army, they were exempted from the tax.” (Dr. Shaik Ghulam Maqsud Hilali, ‘Islamic attitude fowards non-Muslims’, Rajshahi, 1952, P. 20).