• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Sunday, June 1, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

দামাস্কাস ইস্পাতের ও কোফতাগরির প্রায় বিলুপ্তি কাঁচামালের অভাবে

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
July 7, 2020
in ইসলামিক ইতিহাস
0
দামাস্কাস ইস্পাত

চিত্রঃ দামাস্কাস ইস্পাত, Image Source: lifehackk

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ চৌধুরী আতিকুর রহমান

এক হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে ডেভিডের (দাউদ-আ.) সময় প্রথম লোহার ব্যবহার শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ায়। তারপর প্রাচীন ভারতের দাক্ষিণাত্য ও শ্রীলঙ্কায় মরিচাহীন লোহার প্রস্তুতিতে ধাতুবিদরা ১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ উৎজ ইস্পাত (উক্কু) উচ্চ কার্বনযুক্ত বিশুদ্ধ ইস্পাত প্রস্তুতির এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এক্ষেত্রে কাঁচ (সিলিকন), আকরিক লোহা ও চারকোল (কার্বন) ব্যবহার করে উত্তপ্ত করে গলিয়ে নেওয়া হত। কাঁচের কাজ ছিল মিশ্রণের অন্যান্য খাদগুলিকে নিঃসরণ ও ধাতুর বন্ধনের মাধ্যমে বিশুদ্ধতায় নিয়ে আশা। মিশ্রণটি ঠান্ডা করলে খাদগুলি উপরে ভেসে উঠত। কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এরকম প্রায় হাজার খানেক ইস্পাত কারখানা পাওয়া গেছে শ্রীলঙ্কার সমলনওইয়া নামক স্থানে। পশ্চিমী মৌসুমী বায়ুর দিকে মুখ করে এই কারখানাগুলি তৈরী হত। হাওয়াকল ব্যবহার করে চুল্লি গুলি ঘূর্ণন ও শোষণ পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তপ্ত করা হত। এই প্রযুক্তি ধীরে ধীরে সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতে ইস্পাত প্রস্তুতি পদ্ধতির সার্থক প্রয়োগ দেখা যায় অশোক স্তম্ভর মরিচাহীন লোহা উৎপাদনে। ৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই উন্নত পদ্ধতি তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সিরিয়ায় পৌঁছে এই পদ্ধতি আরো উন্নত হয়ে এক ইস্পাতের জন্ম দেয় যার নাম ‘দামাস্কাস ইস্পাত’। একাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই ইস্পাত সমস্ত বিশ্বের কাছে অদ্বিতীয় ইস্পাত ছিল। আর এই ভারত থেকেই মূলত এর কাঁচামাল উৎজ ইস্পাত সিরিয়ায় চালান যেত। অবশ্য উজবেকিস্তানে উৎজের অনেক চুল্লি আবিষ্কারের ফলে গবেষণার পর জানা গেছে কাঁচামাল সেখান থেকেও সিরিয়ায় চালান যেতে পারে। পরবর্তীতে সিরিয়ায় উৎজ ইস্পাত থেকে দামাস্কাস ইস্পাত তৈরি করা হত।

দামাস্কাস
চিত্রঃ নকশাখচিত ছুরি; Image Source: Mad Art Love

দামাস্কাস স্টিল ছিল যেমন শক্ত তেমনই নমনীয়। যে কারণে এর উপর নানারকম নকশা তৈরি করা যেত। এই নকশা তৈরির পদ্ধতি বর্তমানেও প্রচলিত। দামাস্কাস ইস্পাতের ব্যবহার বর্তমানে নির্বাচিত ক্ষেত্রে হয়, যেমন রাজকীয় তরবারি বা ছুরির ক্ষেত্রে। একসময় এই নমনীয় ও শক্ত ইস্পাত উন্নত ধরনের তরবারী ও ছুরি এমনকি উন্নত বন্দুক তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার হত। দামাস্কাস ইস্পাতের এরূপ নামকরণের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে আল-কিন্দি বলেছেন, দামাস্কাসে প্রস্তুত ইস্পাত থেকেই এই নামকরণ। আল বিরুনী বলেছেন, এক তরবারি প্রস্তুতকারী আল দিমাস্কি নাম থেকেই এই নামকরণ। তবে অনস্বীকার্য দামাস্কাস নাম থেকেই এই ইস্পাতের নামকরণ হয়েছে। বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, সারবিয়া প্রভৃতি পূর্ব ইউরোপীয় উপকথায় প্রায়ই এই নামটি বাগধারা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন–সাবিয়া দামাস্কিনিয়া বা সাবজা দিমিস্কিয়া। চতুর্দশ শতকের ম্যাসিডনরাজ মার্কোর উপাখ্যানে প্রায়ই এসব নাম ব্যবহৃত হয়েছে।

দামাস্কাস ইস্পাতের উপাদান হিসাবে কঠিন সচিব এবং ভঙ্গুর করতে যেমন ২ শতাংশ কার্বন মেশানো হত, নরম ও স্থিতিস্থাপক করতে তেমনই ৫ শতাংশ কার্বন মেশানো হত। এজন্য ভারত ও শ্রীলংকার প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎজ তৈরি ও আমদানি করা হত। পরে এর সঙ্গে কার্বন ঘটিত যৌগ অতি ক্ষুদ্র কণার আকারে পাতে বা তরবারি ও ছুরির ফলার উপরে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম করে করে সাজিয়ে দেওয়া হত, যা তৈরি করত চমৎকার নকশা। জার্মানির ড্রেসডেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক্স-রে ও ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেছেন অতি সূক্ষ্ম তার ও নলাকার কার্বনের গঠন দামাস্কাস ইস্পাতের এই কাঠিন্য, নমনীয়তা ও উৎকর্ষতার কারণ। এদের সজ্জা পদ্ধতি উপরিতল ও নিম্নতলের গঠন ভিন্নতার কারণে উভয়তলের যুগপৎ ক্রিয়ার ফলেই এই ইস্পাত নির্মিত তরবারির বিশেষ উৎকর্ষতা। বর্তমানে টাংস্টেন ও ভ্যানাডিয়ামের সূক্ষ্ম স্তরও এর মধ্যে দেখা গেছে।

দামাস্কাস
চিত্রঃ বাজারজাতকৃত দামাস্কাস ইস্পাতের ছুরি; Image Source: Jesse Harber

১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের পর এই ইস্পাত তৈরির পদ্ধতি শেষ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন- যে খনি থেকে এই লোহা উত্তোলন করা হত সেখান থেকে ভ্যানাডিয়াম ও টাংস্টেন মেশানো লোহা আর পাওয়া যায়নি বলে এই ইস্পাত শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে জেনে রাখা দরকার, ভারত ও শ্রীলঙ্কা বা উজবেকস্থান থেকে যে কাঁচামাল (উৎজ) সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হত তাতে টাংস্টেন ও ভ্যানাডিয়াম থাকত না বলেই উক্ত স্থানগুলিতে এই উৎকৃষ্ট ইস্পাত তৈরি হত না। প্রাচীন সিরিয়াবাসী এই দুটি মৌলের আবিষ্কার ও ব্যবহারে এমনই পারদর্শী ছিল যে তারা লোহার সঙ্গে সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে যৌগ তৈরি করত। অর্থাৎ এই দুই মৌল আধুনিক যুগের আবিষ্কার নয়, বহু নিন্দিত মধ্যযুগের আবিষ্কার। লৌহ খনি বা লৌহ কাঁচামাল সিরিয়ায় ছিল না বা পাওয়া যেত না। এই দুটি ধাতুর অভাবই এই শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়।

অনেকে বলেন নলাকার সূক্ষ্ম কার্বন মিশ্রিত ইস্পাত, তাপ প্রয়োগ, পাত তৈরি, নকশা গঠনের মধ্যেই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়ে যেত। মধ্যযুগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিল বেশি ব্যবহারিক এবং কম তাত্ত্বিক। তাই ইস্পাত তৈরীর কারণগুলি না খুঁজে শুধুই প্রস্তুত করা হত। মধ্যযুগে যে কোনও শিল্প, কারুকার্য বংশপরম্পরায় চালু থাকায় এবং ইউরোপে ইস্পাত প্রস্তুতির আরও সহজতম পদ্ধতি চালু হওয়ায় বংশ-পরম্পরা প্রতিষ্ঠানগুলি অবলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন- ভারতীয় সম্পদে ইংল্যান্ডে যে শিল্প বিপ্লব হয় তার উৎপাদিত সস্তার কাপড় ভারতীয় বংশপরম্পরায় বিস্তৃত উন্নত বস্ত্রশিল্পকে অবলুপ্ত করে দেয়। সেযুগের অবলুপ্ত বাংলার মসলিন বস্ত্রের উৎকর্ষ যেমন চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। তেমনই দামাস্কাস ইস্পাতের উৎকর্ষও চিরকালের মত হারিয়ে গেছে। ১৯৯০ সালে আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন ভারহেভেন ও এ এইচ পেনড্রে বলেছেন, উৎজের মোটা দানার কার্বন ‘দামাস্কাস ইস্পাত’-এর সূক্ষ্ম দানার কার্বণে রূপান্তরের কাজ আধুনিক যুগেও সম্ভব হয়নি।

ধাতব কোফতাগরি কাজের অনন্য ঐতিহ্য

প্রাক আধুনিক কালের ভারত তথা বাংলায় ধাতুশিল্প বিশেষ জায়গা নিয়েছিল। শুধুমাত্র পাত্র ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য ধাতব বস্তু, যেমন- হুকাদান, পানদান, পিকদান, ফুলদানি, ফল রাখার পাত্র, কুঁজো, পানপত্র ইত্যাদি প্রস্তুতি ও সৌন্দর্যায়নে (কোফতাগরি) যে দক্ষতা ও মুন্সিয়ানা দেখা গিয়েছিল তা এখনও অবাক করে।

দ্বারভাঙ্গা ঝঞ্জারপুর ও পূর্ণিয়া, মুর্শিদাবাদের খাগড়া, বর্ধমানের কাঞ্চননগর ও হুগলির বাঁশবেড়িয়া অষ্টাদশ শতকের বাংলার পেতল ও ব্রোঞ্জের বাসনপত্র আসবাব ও ছুরি কাঁচির জন্য বিখ্যাত ছিল।

যাজ্ঞবল্কের বর্ণনায় দেখা যায় যে, টিন ও সীসার পাত্র ক্ষার ও অ্যাসিড দিয়ে ধোয়া ও পরিষ্কার করা হত। কিন্তু তামা ঘটিত যৌগ–কাঁসা ও পিতল ছাই ও জল দিয়ে পরিষ্কার করা হত। বাহমনি মুদ্রাসহ সেই সময়ের একটি তামার পাত্র ( যার ভেতর ও বাইরে টিনের আস্তরণ দেওয়া) পাওয়া গিয়েছে। এর থেকে প্রমাণিত যে ওই সময় কলাই বা টিনের আস্তরণ দেওয়া সাধারণ ব্যাপার ছিল। রামায়ণে সোনার কারুকাজ করা ধাতব ও পাত্রের উল্লেখ থাকায় এবং মুসলিমদের ভারতে আসার আগে থেকেই কর্নাটকের বিদার, গুলবর্গা, বেরার ইত্যাদি এলাকায় কারুকার্যখচিত যুদ্ধাস্ত্র ও পাত্রের খোঁজ পাওয়া যাওয়ায় ধরে নেওয়া যেতে পারে সে সময় এর ব্যবহার ছিল। বিদার অবস্থিত হায়দ্রাবাদ থেকে ৭৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে। চতুর্দশ শতকে দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এর পুত্র উলুঘ খান ওরফে মোহাম্মদ বিন তুঘলক কাকতীয় রাজের নিকট থেকে বিদার এলাকাটি দখল করেন। মোহাম্মদ বিন তুঘলক বিজাপুর আহমদনগর, গোলকুণ্ডা, বিরার, বিদার, দৌলতাবাদ ইত্যাদি সমস্ত এলাকা জুড়ে আরও উন্নত শিল্পমন্ডিত পাত্র ও কারুকার্যের মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন ধরনের উন্নত সৌন্দর্যময় পাত্রের উদ্ভব ঘটান। সে সময়ের বিখ্যাত এক ধরনের পাত্র আমি তখন ছিল ‘বিদারী’। সূক্ষ্ম কারুকাজের জন্য বিখ্যাত এই পাত্র ছিল মসৃণ, উজ্জ্বল গাত্র যুক্ত, কালো রঙের ও নয়নাভিরাম। দস্তা, তামা, টিন, সিসা ও খুব অল্প পরিমাণে লৌহযুক্ত এই পেতলের সংকর ধাতু নির্মিত পাত্রটি প্রায় সমগ্র ভারত জুড়েই তৈরি হত, তবে নাম দেখে মনে হয় এর উৎপত্তি বর্তমান কর্ণাটকের বিদারে। তারপর উত্তর প্রদেশের লখনও, বিহারের পূর্ণিয়া, বাংলার মুর্শিদাবাদে তৈরি হতে থাকে।

চিত্রঃ ভ্যালিরিয়ান ইস্পাতে নির্মিত তলোয়ার; Image Source: Game of Thrones

বিদারী পাত্রের বাইরের অংশ মসৃণ করার পর গাঢ় রং দেওয়ার জন্য তামা ও সালফিউরিক এসিডের মিশ্রণে (কপার সালফেট) ডুবিয়ে রাখা হতো। এরপর খোদাই যন্ত্র দিয়ে নকশার কাজ করা হত। তারপর পাত্রের গায়ে রূপো, পেতল ও সোনার আস্তরণ দেওয়া হত। সবশেষে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম নাইট্রেট, কপার সালফেট ও কাদা মাটির প্রলেপ দিয়ে কালো রং আনা হত। প্রখ্যাত দুই ব্রিটিশ ধাতু বিদ সুসান লা নিস ও জি মর্টিন এই পাত্রের উপাদানগুলি পরীক্ষা করে ওই রাসায়নিক বস্তুগুলি পেলেও উজ্জ্বল কালো রঙের উপাদানটি যে আসলেই কি বস্তু, তা বের করতে পারেননি। এর দ্বারা তাঁরা এই সিদ্ধান্তে আসেন– মধ্যযুগের রাসায়নিক শিল্প যা মনে করা হয়েছিল তার থেকে বহু বেশি উন্নত ছিল। হেনরি বার্ডউড এই পদ্ধতিকে ‘দামাস্কাস পদ্ধতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতে আগত কোন শিল্পীর হাত ধরে এই শিল্পটি সিরিয়া থেকে ভারতে এসে পৌঁছেছিল। দামাস্কাসে নিরেট সোনা বা রূপোর তারের সঙ্গে সঙ্গে লৌহ, ইস্পাত ও ব্রোঞ্জের সরু তারের উপর সোনা ও রূপোর প্রলেপ দেওয়া তার ব্যবহৃত হত। পরিব্রাজক আফান্সি নিকিতিন ১৭৭০-৭৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিদার ভ্রমণ শেষে রুশ সম্রাটকে উপহার দেওয়ার জন্য এরকম কয়েকটি নিয়ে যান। ১৮৭৫ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস-এর ভারত ভ্রমণের সময় এই পাত্র তাঁকে উপহার দেওয়া হয়। তৎকালীন ভারতের ধাতু মিশ্রণ, ছাঁচ ও লেদ মেশিনের বর্ণনা থেকে সমসাময়িক ধাতু, রাসায়নিক শিল্প ও যান্ত্রিক শিল্পের উন্নতি সম্পর্কে জানা যায়। প্রমথনাথ বসু যে কারণে আধুনিক যুগের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের আগে উন্নত যন্ত্রশিল্পের কথা বলেছেন। কটক ও ঢাকার সোনা-রূপার পাত এবং ফিলিগ্রীর কাজও বিখ্যাত ছিল বলে তিনি জানান। ব্রোকেড মুর্শিদাবাদী রেশম ও বিষ্ণুপুরী বালুচরীতে সোনা ও রূপোর উপর জরির কাজ ভালোভাবেই ব্যবহৃত হত। এছাড়া এগুলিতে ফুল-লতাপাতার নকশা ছাড়াও পশুপাখির চিত্রও ফুটিয়ে তোলা হত।

পাত্র গুলির নির্মাণকৌশল হিসাবে প্রথমেই ছাঁচ তৈরি করা হত। এই ছাঁচ তৈরিতে বিশেষ মাটি ও গোবর ব্যবহার করে কুমোরের চাক বা লেদের সাহায্যে চাহিদামত বিশেষ আকার করে নেওয়া হত। এরপর মোম ও তেল দিয়ে পাত্রটিকে মসৃণ করে পুনরায় একপ্রস্থ মাটি ও গোবরের প্রলেপ দেওয়া হত। এরপর ছাঁচে দুটি ছিদ্র করে হালকা গরম করে নেওয়া হত ফলে মোম ও তেল গলে বের হয়ে আসত। এরপর ফাঁপা দুই দেওয়ালযুক্ত ছাঁচে প্রধানত তামা ও দস্তা নির্দিষ্ট অনুপাতে রেখে গলিয়ে ঢেলে দেওয়া হত। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ অনুযায়ী টিন, সিসা, লোহা ইত্যাদির গুঁড়ো মেশানো হত। পরবর্তীতে সিসার ব্যবহার হত না। মুর্শিদাবাদে টিন ও লখনোউয়ে লোহার ব্যবহার বেশি হত। এরপর ছাঁচটি ভেঙ্গে পাত্রটি বের করে আনা হত। ধাতব পাত্রটিকে সোনার তারের হলুদ রঙের ও রূপোর তারের সাদা রংয়ের কারুকার্য ফুটিয়ে তোলার জন্য কালো রং করা হত। কাল রং লাগানোর জন্য সল্টপিটার (পটাশিয়াম নাইট্রেট) ও তামার মিশ্রণ ব্যবহার করা হতো। তবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মিশ্রণ ব্যবহৃত হত। উদ্দেশ্য একটাই ছিল, পাত্রের গায়ে যতটা সম্ভব কালো রং আনা। তাই দেখা যেত সোনা বা রূপোর লতাপাতা ও অন্য নকশার রঙের ঔজ্জ্বল্যের কোনও ক্ষতি হত না। বিদারে স্যাল অ্যামোনিয়াক (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড) ও সল্টপিটারের চুর্ণ সমুদ্রের জলের সঙ্গে মিশিয়ে পাত্রের উপর প্রলেপ দেয়া হত। মুর্শিদাবাদে স্যাল অ্যামোনিয়াক, সল্টপিটার ও ব্লু ভিট্রিয়ল (কপার সালফেট) সাধারণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হত। পুর্নিয়াতে ৪ ভাগ স্যাল অ্যামোনিয়াক এবং ১ ভাগ অশুদ্ধ নাইট্রেট লবনের সঙ্গে কয়েক টুকরো চারকোল ও রেপসিড তেল মেশানো হত।

ভারতীয় জাদুঘরে প্রাপ্ত ক্যাটালগ বর্ণনায় সুজিত নারায়ন সেন বিদারী ও দামাস্সিন (দামাস্কাস পদ্ধতি) কারুকার্যকে পৃথক করেননি। তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র প্রস্তুতি পদ্ধতি বিচার করলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায়, বিশেষ করে কারুকার্যের ক্ষেত্রে। তিনি সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে বলেছেন যে, এই পদ্ধতি দামাস্কাস বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইরান ও আফগানিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। দামাস্কাস পদ্ধতি হলো লোহার বা ইস্পাতের পাত্রের বাইরের গায়ে মূলত সোনারূপো কিংবা তামার তারের তৈরি লতাপাতা বসিয়ে সুন্দর ও মজবুত করে তোলা। বিদারী পাত্রের সঙ্গে তফাৎ এই যে, সোনার চেয়ে রূপো ও ব্রোঞ্জের কারুকার্য বিদারী পাত্রে বেশি লক্ষণীয়। এ ছাড়াও দামাস্সিন কারুকার্যে প্রায়ই কোরআনের বাণী ও শাইরি দেখতে পাওয়া যেত। রাজপুরুষদের যুদ্ধাস্ত্র, ঢাল, শিরস্ত্রাণ, তরবারি বা ছোরার হাতল তৈরীতেই দামাস্কাস পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করতে দেখা যায়। ফার্সিতে নকশা ফুটিয়ে তোলার এই পদ্ধতিকে বলা হয় কোফতাগরি। উল্লেখ্য, সম্রাট আকবর দামাস্কাস ও বিদারী পাত্র প্রস্তুত ও যুদ্ধাস্ত্রের জন্য কারখানা স্থাপন করেছিলেন।

দামাস্কাস
চিত্রঃ দামাস্কাস ইস্পাতের তৈরি তলোয়ার; Image Source: Poshland

বিদারি পাত্র নির্মাণের জন্য তিন ধরনের কারিগরের প্রয়োজন হত। প্রথমজন বিভিন্ন পাত্রের নকশা বা পাত্রের উপর কারুকার্যের ডিজাইন করতেন, দ্বিতীয়জন লোহা বা ইস্পাতের পাত্র নির্মাণ করতেন এবং তৃতীয়জন পাত্রের উপর বিভিন্ন নকশা তৈরি করতেন। বিদারি পাত্র ও দামাস্সিনে ‘তেহ নাসিন’ পদ্ধতিটিই ছিল সেরা। এক্ষেত্রে ধাতব পাত্র বা অন্য বস্তুতে স্থুল সোনা বা রূপোর তার বা পাত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বা চাপ দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হত। এরপর উকো বা হালকা লাভা নির্মিত পাথর দিয়ে এমনভাবে ঘষা হত যাতে পাত বা তার পাত্রের তলের সঙ্গে মিশে যেত। এরপর পাত্রটিকে তাপ দিয়ে ও পালিশ করে পুরোপুরি মসৃণ করে নেওয়া হত। সোনা রূপার তার বা পাতের নকশা পাত্রেরই অংশে পরিণত হত। ‘গঙ্গা-যমুনা’ পদ্ধতিতে সোনা ও রূপোর তার পাশাপাশি এমনভাবে বসিয়ে দেওয়া হতো যে দেখে মনে হতো রুপোলি ও সোনালী রঙের দুটি ধারা পাশাপাশি অবস্থান করছে। এই দুটি ধারা নদীর ঘোলা জল (সোনা) ও পরিষ্কার জলের (রূপো) দুটি ধারা তৈরি করত বলে বলা হত ‘গঙ্গা-যমুনা’। কোফতাগরির অপেক্ষাকৃত সরল পদ্ধতিতে অল্প গভীর আঁচড়ানো পাত্রের গায়ে সরু সোনা বা রূপোর পাত বসিয়ে দেওয়া হত এবং কোনওরকম ঘষাঘষি করে মসৃণ করা হত না। সাধারণত কোফতাগরিতে ফুল লতাপাতার নকশা বেশি দেখা যেত কিন্তু ত্রিবাঙ্কুরে হাতি, ঘোড়া, ময়ূর ইত্যাদি পশুপাখি এবং পালকি, পালংক ও তাদের বাহকের নকশাও ফুটিয়ে তোলা হত। নিকৃষ্ট ধরনের দামাস্সিন নকশাকে বলা হতো দেওয়ালি। এই পদ্ধতিতে পাত্রটিকে ফাঁপা লাভা ঘটিত পিউমিস পাথর দিয়ে ঘষে মসৃণ করে তার পর শক্ত ধারালো ইস্পাত দিয়ে খুঁচিয়ে ছোট অগভীর গর্ত করা হত। তারপর চুন-জলে ধোয়া হত এবং পাত্রটি সামান্য গরম করে সেই অগভীর গর্তে ফুল লতাপাতা সোনা-রূপো ব্রোঞ্জ ও পিতলের তার বসানো হত। ত্রিবান্দমের শিবনাথ পেরুমল গুজরাতের আজিম কোফতাগার, মাইনুদ্দিন প্রমুখ ছি আচ্ছা এটাকে বন্ধ রাখছি এবার অন্য একটা দিচ্ছি এটারলেন তৎকালীন সময়ে প্রসিদ্ধ কোফতা কারিগর বা কোফতাগর।

 

চৌধুরী আতিকুর রহমানের লেখা নিম্নলিখিত প্রবন্ধগুলি পড়ুন,

১) বঙ্গদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা : কোন্ সময়ে ও কাদের দ্বারা ?

২) রবীন্দ্র রচনায় শিক্ষা ও সমাজ ভাবনা

৩) টিপু সুলতান জীবন ও কৃতিত্ব

৪) ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলা দখলের প্রথম প্রয়াস

 

Post Views: 1,894
Tags: Game of Thronesগেম অফ থ্রোনদামাস্কাসদামাস্কাস ইস্পাতদামাস্কাস স্টিল
ADVERTISEMENT

Related Posts

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024
বিষাদ-সিন্ধু এবং বিষাদবিন্দু : ইতিহাসের বৈচিত্র্য
ইসলামিক ইতিহাস

মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু এবং শামিম আহমেদের বিষাদবিন্দু

লিখেছেনঃ ড. মো. খোরশেদ আলম [সার-সংক্ষেপ : মীর মশাররফ হোসেনের (১৮৪৭-১৯১১) উনিশ শতকের বিষাদ-সিন্ধু (১৮৯১) এবং শামিম আহমেদের হাল...

by অতিথি লেখক
November 10, 2024
আরব দেশগুলি ইরান না ইসরাইল কোন দেশটিকে বিপজ্জনক বলে মনে করে?
ইসলামিক ইতিহাস

আরব দেশগুলি ইরান না ইসরাইল কোন দেশটিকে বিপজ্জনক বলে মনে করে?

ইরান আর ইসরাইল, দুটি দেশই আরবিভাষী নয়। অথচ আরবী ভাষী দেশ গুলির উপর মাতব্বরি করে। এটাই হচ্ছে রুশ, আমেরিকা,...

by চৌধুরী আতিকুর রহমান
September 2, 2021
উসামা বিন লাদেন
ইসলামিক ইতিহাস

উসামা বিন লাদেন : কাবা শরীফের নবনির্মাণ যার জীবন বদলে দেয়

কাবা শরীফের প্রসারণ ও নির্মাণের কাজ চলছিল। আর এ অনভিজ্ঞ যুবক মাত্র কিছুদিন আগে লেবাননের আনন্দমুখর জীবন থেকে মুখ...

by আবু রিদা
June 30, 2021

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (26)
  • ইসলামিক ইতিহাস (22)
  • ইহুদী (1)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (194)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply
Open chat
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?