লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব যে মারাত্মক গুস্তাখী করেছেন তা প্রায় ক্ষমার অযোগ্য। খান সাহেব হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) সম্পর্কে সেই ভাষা ব্যাবহার করেছেন যা সাধারণত কোন বাজারী মহিলার শানেও ব্যাবহার করা চরম বেয়াদবী। আর সেখানে খান সাহেব সেই ভাষা সারা পৃথিবীর মুসলমানদের ‘আম্মাজান’ নামে পরিচিত সেই আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে ব্যাবহার করে খান সাহেব প্রমান করে দিয়েছেন তিনি একজন সত্যিই কট্টরপন্থী রাফেযী।
আসলে শিয়ারা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)কে বিভিন্ন ধরণের অপবাদ দিয়ে থাকে। শিয়া বা রাফেযীরা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)কে মুরতাদ ও কাফের বলে থাকে। (নাউজুবিল্লাহে মিন যালেক)
সুতরাং মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব সেই হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে অশ্রব্য ও বাজারী ভাষা ব্যাবহার করে প্রকাশ্যে রাফেযী হিসাবে ধরা খেয়েছেন। যে কবিতাটিতে খান সাহেব হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে গুস্তাখী করেছেন সেই কবিতাটি হল,
تنگ و چست ان کا لباس اور وہ جو بن کا ابہار
مسکی جاتی ہے قباسر سے کمر تک لے کر
یہ پھٹا پڑتا ہے جو بن مرے دل کی صورت
کہ ہوئے جاتے ہیں جامہ سے بروں سینه و پر
(حدائق بخشش حصہ سوم ص 37)
“তংগ ও চুসত উন কা লিবাস আউর ওহ যৌবন কা উভার
মুসকী জাতি হ্যায় কাবাসার সে কমর তক লেকর।
ইহ ফাটা পড়তা হ্যায় যৌবন মেরে দিল কি সূরত
কেহ হোতে জাতে হ্যাঁয় জামা সে বরুসীনা ও বর।”
(হাদায়েকে বখসীস, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭)
অর্থাৎ- হযরত আয়েশা (রাঃ) এত আটোসাটো এবং ছোট পোষাক পরতেন যে তাঁর পোষাক মাথা থেকে কমর পর্যন্ত সেঁটে থাকত যেন তার ফলে তাঁর যৌবনের দীপ্তি ফুটে বের হতো এবং এর ফলে তাঁর কাপড় থেকে তাঁর বুক ও পার্শ্বদেশ বেরিয়ে পড়ত। (নাউজুবিল্লাহে মিন যালিক)
নিচে স্ক্রীন শর্ট দেওয়া হলঃ
পাঠকগণ দেখুন! হযরত আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে এরকম মারাত্মক গুস্তাখী কোন মুসলমান করতে পারে? আসলে আহমদ রেযা খান সাহেব শিয়া ছিলেন। আর শিয়ারা হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে গালিগালাজ করেই থাকে। শিয়ারা অতি আনন্দের সাথে হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে গালিগালাজ করাকে ইমানী দায়িত্ব মনে করে। যেহেতু খান সাহেব শিয়া বা রাফেযী ছিলেন তাই তিনিও অতি আনন্দের সাথে এই দায়িত্ব পালন করেছেন।
যখন মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে এই ধরণের কবিতা লিখে প্রকাশ্যে রাফেযী হিসাবে ধরা খেয়ে গেলেন তখন রেযাখানী ধর্মের লোকেরা দিগবিদিগ জ্ঞানশূণ্য হয়ে খান সাহেবকে রাফেযী হওয়াত থেকে বাঁচাতে পারল না তখন তারা এক নতুন পাঁয়তারা শুরু করল এবং সাধারণ মানুষকে এই বলে ধোকা দিতে লাগল যে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃ্তীয় খন্ড মাওলানা আহমদ রেযা খানের লেখা নয়। তাদের দাবী ‘হাদায়েকে বখসীস’ দুই খন্ডে সমাপ্ত। লোকেরা তৃ্তীয় খন্ডটি নিজেরাই বানিয়েছে। এটা রেযাখানী ধর্মাবলম্বীদের জ্বলন্ত মিথ্যা। ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃ্তীয় খন্ডটি মাওলানা আহমদ রেযা খান নিজেই লিখেছেন। এর প্রমাণ রেযাখানীদের মুখপাত্র ‘আল মিযান’ পড়লেই বোঝা যায়। কছৌছাবী সাহেবের পুত্র মাদানী মিঁয়া মুম্বাই থেকে ‘আল মিযান’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করতেন। সেই আল মিযান পত্রিকার ১৯৭৬ সালে ইমাম আহমদ রেযা নামে একটি সংখ্যা বের হয়েছিল। সেই সংখ্যায় ৪৪৭, ৪৫১, ৪৫৩ পৃষ্ঠায় ‘হাদায়েকে বখসীস’ কিতাবের তৃ্তীয় খন্ডের অনেক হাওয়ালা মওজুদ আছে। যদি ‘হাদায়েকে বখসীস’ কিতাবের তৃ্তীয় খন্ড মাওলানা আহমদ রেযা খানের না হয় যদি লোকেরা এটিকে বানিয়েছিল তাহলে ‘আল মিযান’ পত্রিকার ইমাম আহমদ রেযা সংখ্যায় ঐ কিতাবের তৃ্তীয় খন্ডের অনেক হাওয়ালা মওজুদ আছে কেন? বোঝা গেল মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবকে রাফেযী হওয়া যাতে প্রকাশ না পেয়ে যায় তার জন্যই রেযাখানীদের ঐ চালাকী। চালাকী করেই তাঁরা ‘হাদায়েকে বখসীস’ কিতাবের তৃ্তীয় খন্ডকে মাওলানা আহমদ রেযা খানের লেখা বলতে অস্বীকার করে থাকেন।
মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃ্তীয় খন্ডকে সাজিয়েছিলেন মাওলানা মাহবুব আলী খান সাহেব। তিনি ছিলেন মাওলানা আহমদ রেযা খানের মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্য হাশমত আলী খান রেযবীর ছোট ভাই। তিনি রেযাখানী জামাআতের বড় আলেম ছিলেন। মাওলানা মাহবুব আলী খান সাহেব খুবই যত্ন সহকারে মাওলানা আহমদ রেযা খানের কবিতাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন এবং ছাপিয়ে প্রকাশ করেছিলেন।
তাহলে আপনারাই বলুন যখন মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব এই কবিতা লেখেন তখন তাঁর মধ্যে সামান্যটুকুও ইমানের অংশ বাকি ছিল? একজন আলেমের এরকম বাজারী জুবান হতে পারে?
রেযাখানীদের নিকট এটি সামান্য ভূল
সারা জাহানের মুসলমানদের আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) এর শানে অশ্রাব্য কবিতা লিখে যখন মাওলানা আহমদ রেযা খান সুন্নী মুসলমানদের কাছে রাফেযী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেলেন তখন মুসলমানরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই কবিতা সংগ্রহ করে যেহেতু ছাপিয়েছিলেন মাওলানা মাহবুব আলী খান তাই মুসলমানদের বিক্ষোভের জন্য তাঁকে মুম্বাইয়ের মদনপুরা জামে মসজিদ থেকে ইমামত থেকে বরখাস্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অপমানিত, অপদস্ত হয়ে ১৩৭৪ হিজরীতে ১৯শে জিলহিজ্জা সোমবার তাওবানামা প্রকাশ করেন। ১৯৫৫ সালের ১৪ই আগষ্ট কানপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘সিয়াসত’ পত্রিকায় এর বিস্তারিত বিবরণ ছাপা হয়। এই সময় রেযাখানীদের একটি টীম বোম্বেতে হাজির হয়, যার নেতৃ্ত্বে মাওলানা আবুল ওফা সাহাজাহানপুরী। তিনি কুরআন হাদীস থেকে অসংখ্য দলীল দিয়ে প্রমাণ করলেন আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ মাফ করেন না। এবং সব তাওবা কবুল করেন না। (দ্রঃ- তওহীনে রসুল তুমনে কি, পৃষ্ঠা-৪০)
মাওলানা মাহবুব আলী খান তাওবা করলেন। কিন্তু সহোদর ভাইকে বাঁচানোর জন্য আসরে অবতীর্ণ হলেন মাযহারে আলা হযরত (আলা হযরতের বহিঃপ্রকাশ, যাকে রেযাখানীরা আলা হযরতের পরে স্থান দেয়) মাওলানা হাশমত আলী খান রেযবী। ইনি তাঁর একটি বক্তব্যে বললেন – “হযরত উম্মুল মোমেনীন (রাঃ) মুসলমানোঁ কি ভাভী আউত ভাউজ হী তো হ্যাঁয়। আউর ভাভী সে লোগ হর কিসিম কি মজাক কর সকতে হ্যায়। আগর মেরে ভাই মাহবুব আলী খান হযরত আয়েশা (রাঃ) কি শান মে মজাক কে কুছ শের ছাপে তো কিয়া হুয়া?” (দ্রঃ-দৈনিক ‘সিয়াসত’, কানপুর, ২৯ আগষ্ট ১৯৫৫ মোতাবেক ১০ মুহাররম ১৩৭৫ হিজরী সোমবার)
অর্থাৎ হযরত উম্মুল মোমেনীন (রাঃ) মুসলমানদের ভাবী এবং ভাজই তো হয়। ভাবীর সঙ্গে সব রকমের ঠাট্টা মজাক করতে পারে। যদি আমার ভাই মাহবুব আলী খান হযরত আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাপারে ঠাট্টা মজাকের কিছু কবিতা প্রকাশ করে তাতে কি হয়েছে?
দেখুন রেযাখানীদের ধৃষ্টতা! আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এঁর প্রতি এত বড় বেয়াদবীর পরেও তাদের কোণ অনুশোচনা নেই। তাদের বেয়াদবী এতটাই বেড়ে গেল যে শেষ পর্যন্ত উম্মুল মোমেনীনকে ভাবী বানিয়ে ছাড়ল। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) এর শানে যে বেয়াদবী করা হয়েছে তা রেযাখানী ধর্মাবলম্বীদের কাছে কিছুই নয়। এটা তাদের কাছে সামান্য ভূল। এজন্যই তো হাশমত আলী খান বলেছেন, “আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাপারে ঠাট্টা মজাকের কিছু কবিতা প্রকাশ করে তাতে কি হয়েছে?” আসলে রাফেযীদের কাছে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানে এরকম কথা কিছুই নয়।
এই রেযাখানী ধর্মাবলম্বীদের জিজ্ঞাসা করুন হযরত আয়েশা (রাঃ) ভাবী হলে প্রিয়নবী কে হবেন? বড় ভাই নিশ্চয়। বড় ভায়ের স্ত্রীকেই তো লোকে ভাবী বলে। হযরত আয়েশা (রাঃ) ভাবী বা ভাজ হলে প্রিয় নবী বড় ভাই হলেন কিনা? আর ভাবী হলেই তাঁর সাথে এরকম ঠাট্টা করা যাবে? শরীয়াত কি এরকম শিক্ষা দেয়? আর আয়েশা (রাঃ) মুসলমানদের ভাবী এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? দ্বীন ইসলাম কি রেযাখানীদের অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত? কি আজব কুফরী আকিদা!
এখানে আরও একটি লক্ষনীয় বিষয় হল মুশরিক রেযাখানীরাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বড় ভাই বলে। তবে একটু ঘুরিয়ে। অথচ উলামায়ে দেওবন্দকে এরা অপবাদ দেয় যে এরা হুযুর (সাঃ)-কে বড় ভাই বলে। যদিও নবী করীম (সাঃ) কে উলামায়ে দেওবন্দ তাঁদের কোন কিতাবে অসম্মান করে বড় ভাই বলেন নি বা লেখেন নি। এটা তাদের মিথ্যাচার।
মাওলানা আহমদ রেযা খান যে উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তা রেযাখানীদের নিকট সামান্য ভূল। এর প্রমাণ ‘ফাতাওয়া মাযাহেরী’তেও রয়েছে। রেযাখানীদের মুফতী মাযাহিরুল্লাহ মুসলমানদের জখমে নুন ছিটিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,
অর্থাৎ “এই সামান্য ভূল যা শরীয়াতের দৃষ্টিতে কিছুই নয় তাহলে তাঁর (আম্মাজান আয়েশা) ব্যাক্তিত্ব কি ক্ষমা করবেন না ? যদি ধরেই নেওয়া হয় যে তিনি ক্ষমা করবেন না তাতেও মুসলমানদের কিসের এত মাথাব্যাথা ? এটাতো একজন ভূলপথে চালিত ছেলের এবং তার স্নেহশীল মায়ের মধ্যেকার ব্যাপার কেননা কোটি কোটি মায়ের স্নেহই হল সীমাহীন। আর এটাতো কিয়ামতের দিনের বিচারের ব্যাপার। দুনিয়ার আহকাম তো তাওবার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়ে যায় ।” (ফাতাওয়া মাযাহিরী, পৃষ্ঠা-৩৮৮)
দেখুন রেযাখানী মুফতীর ফতোয়া। মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব যখন রাফেযী হিসেবে মুসলিম জাহানে চিহ্নিত হয়ে গেলেন তখন তাঁকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেদের আকিদাকে ফাঁস করে ফেললেন। মুফতী সাহেবের উচিৎ ছিল এইরকম ফতোয়া দেওয়া যে মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত থেকে খারিজ হয়ে গেছেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে গালিগালাজ করার কারণে। কিন্তু তিনি তা না করে খান সাহেবের মারাত্মক ভূলকে মামুলি ভূল বলে মা ও পুত্রের মধ্যেকার ব্যাপার বলে পুরো ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন এবং বললেন,
“এই সামান্য ভূল যা শরীয়াতের দৃষ্টিতে কিছুই নয় ।” (নাউজুবিল্লাহে মিন যালিক)
মুফতী মাযাহিরুল্লাহ সাহেবকে বলি আপনাদের আলা হযরত কায়েনাতের মুসলমানদের আম্মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর ব্যাপারে যা ইচ্ছে তাই বলবেন আর মুসলমানরা চুপচাপ থাকবে? কেউ কোণ প্রতিবাদ করতে পারবে না? প্রতিবাদ করতে গেলেই কুফরী ফতোয়ার মেশিনগান তার বুকে দেগে দেবেন?
মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব হযরত আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন এটাকে রেযাখানীরা সামান্য বা মামুলী ভূল বলে উড়িয়ে দিয়েছে এর দ্বারাই বোঝা যায় যে রেযাখানী ধর্ম ও তাদের ধর্মের ইমাম আহমদ রেযা খান একজন জঘন্য শিয়া বা রাফেযী। কেননা রাফেযীরাও হযরত আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)কে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করে এবং এটাকে কিছুই মনে করে না।
‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ডের পরিচয়
মুম্বাই থেকে মাসিক ‘আল মিযান’ পত্রিকার ইমাম আহমদ রেযা সংখ্যায় আছে,
“হাদায়েকে বখসীস’ তৃতীয় খন্ডের প্রকাশ করেছিলেন মাওলানা মাহবুব আলী খান কাদেরী বরকাতী রেযবী । ষ্টীম প্রেস ১৩৪২ হিজরী ।” (আল মিযান, ইমাম আহমদ রেযা সংখ্যা, পৃষ্ঠা-৪৪৮)
মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব ১৩৪০ হিজরী সনে মারা যান। তাঁর মারা যাবার দুই বছর পর খাস সাহেবের খাস খাদিম মাওলানা মাহবুব আলী খান বরকাতী রেযবী সাহেব প্রথম দুই খন্ডে মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের যেসব শায়রী (কবিতা) ছাপা হয়নি তা সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন।
মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের জীবদ্দশায় ‘হাদায়েকে বখসীস’ তৃতীয় খন্ডের প্রকাশ হয়নি বলে এরকম মনে করার কোন কারণ নেই যে সেই খণ্ডটি খান সাহেবের লেখা নয়। কেননা ডাঃ আল্লামা ইকবালের লেখা ‘আরগামানে হিজাজ’ ও তাঁর মৃত্যুর পরই ছাপা হয়। তাহলে কি এই কিতাবের হাওয়ালা আল্লামা ইকবালের নামে দেওয়া যাবে না? অবশ্যই দেওয়া যায়। তাহলে মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের ‘হাদায়েকে বখসীস’ তৃতীয় খন্ডের হাওয়ালা কেন দেওয়া যাবে না? মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের ‘মালফুযাত’ কিতাবটিও তো তাঁর ভক্তরাই প্রকাশ করেছে। তাহলে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ড খান সাহেবের অনুগত খাদিম মাওলানা মাহবুব আলী খান ছেপে প্রকাশ করেছেন তো কি এমন অপরাধ হয়েছে?
এখন হয়তো অনেকে এরকম বলতে পারেন যে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ড সংগ্রহ করতে মাহবুব আলী খানের ভূল হয়েছে। এর জবাবও ‘হাদায়েকে বখসীস’ কিবাবের তৃতীয় খন্ডে মওজুদ রয়েছে দেখুন,
অর্থাৎ “এই আসআর (শায়রী/কবিতা)গুলি আলা হযরতের পান্ডুলিপি থেকে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে সংগ্রহ করা হয়েছে।” (আল মিযান, আহমদ রেযা সংখ্যা, পৃষ্ঠা-৪৪৮)
সুতরাং এরকম মনে করার কোন কারণ নেই যে মাওলানা মাহবুব আলী খান সংগ্রহ করতে গিয়ে ভূল করে ফেলেছেন। আর মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের পুত্ররা এবং তাঁর ভক্তগণ কখনো তাঁর এই গুস্তাখীপূর্ণ কবিতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি এমনকি প্রথম সংস্করনের পর ৩০ বছর পেরিয়ে যায় তখনও পর্যন্ত তাওবার কোন প্রসঙ্গ উঠে নি। এতদিন পর্যন্ত রেযাখানীরা মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের ঐ গুস্তাখীপুর্ণ কবিতা আবৃত্তি করেই চলেছিলেন এবং আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে গালি দিয়েই চলেছিলেন। (আস্তাগফিরুল্লাহ সুম্মা আস্তাগফিরুল্লাহ)
তওবার কথা কখন হয়েছিল ?
মাওলানা মাহবুব আলী খান রেযবী মুম্বাইয়ের মদনপুরা এলাকার জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি রেযাখানী মসলকের কিতাবপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতেন। লোকেরা যখন বুঝতে পারল যে তিনি আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে গুস্তাখীপুর্ণ শায়রী বা কবিতা প্রকাশ করেছেন তখন তাঁর পিছনে নামায পড়া বন্ধ করে দিল এমনকি দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল এবং একজন ব্যাক্তি নামুসে রিসালত (রাসুলের সম্মান রক্ষার্থের) জন্য প্রাণ পর্যন্ত দিয়ে দিলেন। তিনি শহীদ গাজি আলিমুদ্দীনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। রেযাখানীরা স্বীকার করেছে যে উলামায়ে দেওবন্দই প্রথম এই গুস্তাখীর জন্য প্রতিবাদ করতে ময়দানে নেমেছিল। তাহলে রেযাখানীদের জবানীতে সেটা শুনুন,
“শুনুন, ভারতের দেওবন্দীরাই উঠেপড়ে লেগেছে, প্রবন্ধ লিখে এবং পুরো মুম্বাইয়ে জলসা করে, প্রতিবাদী সভা করে বেড়াচ্ছে যাতে উক্ত ইমামকে (মাহবুব আলী খান রেযবী) মসজিদ থেকে বের করে দেয়। সেজন্যই মসজিদে হাঙ্গামা হয় এবং একজন খুনও হয়ে যায়। এ নিয়ে অনেকদিন মামলাও চলে।” (দেখুনঃ- মাসিক সুন্নী লক্ষ্ণৌ, জিলহাজ্জ ১৩৭৪ সংখ্যা, ফাতাওয়া মাযাহিরী, পৃষ্ঠা-৩৯৩)
পরিস্থিতি যখন সামলানোর বাইরে চলে গেল তখন মাওলানা মাহবুব আলী খান বাধ্য হয়ে কিছু একটা পদক্ষেপ নিতে এবং তিনি একটি পরচারপত্র ছাপলেন যে প্রেসে ছাপতে গিয়ে এই কবিতাটি উলট পালট হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হল, যখন উলামায়ে দেওবন্দ প্রতিবাদ শুরু করেছিল এবং লেখালেখি করে ময়দান গরম করেছিল তখন মাওলানা মাহবুব আলী খান কেন লিখলেন না যে কবিতাটি প্রেসে ছাপতে গিয়ে ভূল করে উলট পালট ছাপা হয়ে গেছে? এই কবিতা যদি সত্যই হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর ব্যাপারে না হত তাহলে এত হাঙ্গামা ও খুন খারাবা না হবার আগেই বলে দিতে পারতেন যে প্রেসে ভূল ছাপা হয়ে গেছে।
নিশ্চয় তিনি নিজের প্রকাশ করা কাব্যগ্রন্থ বার বার পড়ে থাকবেন আর শায়রীর গ্রন্থ তো আনন্দ সহকারে আবৃত্তি করা হয়। তাহলে কি এমন কারণ ছিল যে যতক্ষণ না পর্যন্ত উলামায়ে দেওবন্দ ময়দানে প্রতিবাদ করতে এলেন না ততক্ষণ মাওলানা মাহবুব আলী খানের ঘুম ভাঙ্গল না? এতদিন তিনি কেন বললেন না যে প্রসে ছাপতে ভূল হয়ে গেছে। মাওলানা মাহবুব আলী খান তখন প্রসের উপর দোষ চাপালেন যখন মুম্বাইয়ের মাটিতে বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে গিয়েছিল।
মাওলানা মাহবুব আলী খানের নিকট এই গুস্তাখীপূর্ণ শায়রী অবশ্যই আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানেই বলা হয়েছিল এবং এই শায়রী মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবই লিখেছেন। মাওলানা মাহবুব আলী খান চাননি শায়রী সংশোধন করে দিয়ে তাঁর প্রয়াত উস্তাদ মাওলানা আহমদ রেযা খানকে ইসলাহ করতে। তিনি মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের নামেই শায়রীগুলি রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজের ধারণা অনুযায়ী এই গুস্তাখীপূর্ণ শায়রীকে মামুলি বা সাধারণ ভূল বলে মনে করতেন। কিন্তু লোকেরা যখন হাঙ্গামা করে প্রমাণ করে দিল যে আহমদ রেযা খান সাহেবের নাপাক শায়রী কোনমতেই বরদাশত করা যাবে না তখন মাওলানা মাহবুব আলী খান ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দে তওবানামা পেশ করলেন। রেযাখানীরা ‘ফাতাওয়া মাযাহিরী’তে লেখা আছে,
“এই সামান্য ভূল যা শরীয়াতের দৃষ্টিতে কিছুই নয় তাহলে তাঁর (আম্মাজান আয়েশা) ব্যাক্তিত্ব কি ক্ষমা করবেন না?” (ফাতাওয়া মাযাহিরী, পৃষ্ঠা-৩৮৮)
সুতরাং মাওলানা মাহবুব আলী খান সহ রেযাখানীরা সকলেই মনে করেছিলেন মাওলানা আহমদ রেযা খান যে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে অশ্লীল শায়রী লিখেছেন তা শরীয়াতের দৃষ্টিতে কিছুই নয়। তাই তারা প্রথমে তওবা করেন নি কিন্তু শেষে গতি খারাপ বুঝে বাধ্য হয়ে তওবানামা পেশ করেছিলেন। সুতরাং প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই তিনি তওবানামা পেশ করেছিলেন। কেননা রেযাখানীদের দৃষ্টিতে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)কে গালিগালাজ করা মামুলি ভূল। যা তাদের ফাতাওয়া মাযাহিরীতে স্পষ্ট লেখা আছে । আর হাশমত আলী রেযবীর নিকট আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) তো ভাবী, আর ভাবীর সঙ্গে রেযাখানী ধর্মে সবধরণের ঠাট্টা মজাক করা জায়েয। রাফেযী আর কাকে বলে। (আস্তাগফিরুল্লাহ)
এখানে একটি মজার ব্যাপার হল আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে গুস্তাখী করলেন মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব আর তওবানামা পেশ করছেন মাওলানা মাহবুব আলী খান সাহেব। রেযাখানীদের কান্ডকারখানা আমাদের বুঝে আসে না। রেযাখানীরা ভানুমতির খেল দেখাতে বেশ পটু। আমরা এটাও বুঝতে পারিনা যে মাওলানা মাহবুব আলী খান যদি আহমদ রেযা খানে শায়রী প্রকাশ করার কারণে তওবা করেন তাহলে এই শায়রী থেকে তওবা করবে কে? এই তওবার জিম্মাদারী কার?
আফশোষ এই তওবার জিম্মাদারী মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের ছিল কিন্তু তিনি তো কবরের বাসিন্দা হয়ে গেছেন। তিনি তো তওবা করার জন্য আর দুনিয়ায় ফিরে আসবেন না। তাঁর এই কালাম তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভক্তরা দীর্ঘ ৩৫ বছর পর্যন্ত দ্বীধাহীনভাবে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন এবং পাঠ করেই যাচ্ছিলেন।
‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ডের প্রথম সংস্করণ হয়েছিল ১৩৪২ হিজরীতে মাওলানা আহমদ রেযা খানের মৃত্যুর দুই বছর পর। ৩০ বছর পর এর দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। বছরের পর বছর তাঁর অন্ধ ভক্তরা এই গুস্তাখীপূর্ণ শায়রী পাঠ করে নিজের ইমানকে বরবাদ করছিল। মাওলানা মাহবুব আলী খান যখন বাধ্য হয়ে তওবা করলেন তখন রেযাখানীরা নিজেদের অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এইভাবে মিথ্যা কথা বলতে লাগল যে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ড মাওলানা আহমদ রেযা খানের মৃত্যুর ২৫-৩০ বছর পর প্রকাশ হয়েছিল। রেযাখানীদের মিথ্যাচার শুনুন,
অর্থাৎ “মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেবের নাতের পান্ডুলিপি দুই খন্ডে ‘হাদায়েকে বখসীস’ নামে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি তাঁর জীবদ্দশাতেই প্রকাশ করা হয়। সারা পৃথিবীর লোক সেটাকে মাওলানা আহমদ রেযা খানের পান্ডুলিপি বলে জানে এবং মানে। ২৫-৩০ বছর পর মুম্বাইয়ের মদনপুরা বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা মাহবুব আলী খান সাহেব আর একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন। সেটাকে তিনি ‘হাদায়েকে বখসীস’ তৃতীয় খন্ড নাম দেন।” (আহমদ রেযা সংখ্যা, ৪৩৫)
মাওলানা আহমদ রেযা খানের মৃত্যু ১৩৪০ হিজরী সনে হয়েছিল। আর ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ড ১৩৪২ হিজরী সনে প্রকাশিত হয়েছিল। সুতরাং সেটাকে ২৫-৩০ বছর পর প্রকাশিত হয়েছিল বলাটা এবং সেটাকে মাওলানা আহমদ রেযা খানের নয় বলাটা এক চুড়ান্ত ও জঘন্য ধরণের মিথ্যা কথা।
ডাঃ হামিদ আলী খান আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির লেকচারার ছিলেন। তিমি মাওলানা আহমদ রেযা খানের শায়রীর উপর রিসার্চ করেন। তিনি বলেছেন, ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ড ১৩৪২ হিজরী সনে প্রকাশিত হয়। (আহমদ রেযা সংখ্যা, পৃষ্ঠা-৩৪৮)
সেই সময় কিতাবটিকে ষ্টীম প্রেস থেকে ছাপা হয়। ২৫-৩০ বছর পর এর দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। যেহেতু দ্বিতীয় সংস্করণের পর মাওলানা মাহবুব আলী খান তওবানামা পেশ করেন তাই সেটিকে ২৫-৩০ বছর পর প্রকাশিত হয়েছিল বলে প্রচার করা হচ্ছে। যাতে মানুষকে এই বলে ধোকা দেওয়া যায় যে প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাওলানা মাহবুব আলী খান তওবা করেছিলেন। যদিও বাধ্য হয়ে মাওলানা মাহবুব আলী খান ২৫-৩০ বছর পর তওবানামা পেশ করেছিলেন।
মূল রহস্য হল, রেযাখানীরা মাওলানা আহমদ রেযা খানের আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে মারাত্মক গুস্তাখীপূর্ণ শায়রীটিকে নিয়ে ভালই চিন্তিত ছিলেন কেননা এই শায়রী দ্বারা মাওলানা আহমদ রেযা খানকে রাফেযী প্রমাণ করা খুবই সহজ। তাই রেযাখানীরা দিগবিদিগ জ্ঞান শূণ্য হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এমনকি মাওলানা মুস্তাফা রেযা খান সাহেব বলেন যে এই শায়রী আলা হযরতের লেখাই নয়। (ফাতাওয়া মাযাহিরী, পৃষ্ঠা-৩৯৩, লাইন-১২)
রেযাখানীরা এও বলে বেড়াচ্ছে যে প্রসের কম্পোজিটার নাকি কোন রাফেযী ছিল সে ইচ্ছাকৃতভাবে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে শায়রীটি নিখে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ডে ঢুকিয়ে দেয়। নির্লজ্য রেযাখানীরা এও লিখেছে যে প্রসের কম্পোজিটার ছিল একজন দেওবন্দী। সে নাকি এসব লিখে তাতে ঢুকিয়ে দিয়েছে। একেই বলে মিথ্যাবাদীর স্মরণশক্তি ঠিক থাকে না। তারা নিজেরাই ঠিক করতে পারছে না প্রেসের কম্পোজিটার দেওবন্দী ছিল না রাফেযী।
আচ্ছা প্রেসের কম্পোজিটার যদি দেওবন্দী বা রাফেযী থেকেই থাকে, আর তারা যদি শয়তানী করে আহমদ রেযা খান সাহেবকে বদনাম করার জন্য বা ফাঁসাবার জন্য নিজেরা লিখে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর মধ্যে ঢুকিয়ে থাকে তখন রেযাখানীরা কোন মরণ ঘুমে ঘুমিয়েছিলেন? প্রুফ দেখার সময় তো সব ভূল ধরা পড়েই যায়। আর যদি মেনেই নেওয়া হয় প্রুফ দেখার সময় অসাবধানতা বশতঃ ভূল থেকেই গেছে তাহলে দ্বিতীয় সংস্করণে সংশোধন করে নেওয়া হত। কিন্তু তাও করা হল না। শেষ পর্যন্ত দেওবন্দীরা প্রকাশ্যে লেখালেখি করে, জলসার মজলিসে বক্তৃতা দিয়ে জনমম্মুখে প্রতিবাদ করলেন, আর মাওলানা মাহবুব আলী খানকে যখন মুম্বাইয়ের মদনপুরা জামে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বলা হল, লোকেরা তাঁর পিছনে নামাজ পড়তে অস্বীকার করলেন, এমনকি নামুসে রিসালতের খাতিরে একজনের প্রাণ পর্যন্ত চলে গেল, যখন মাওলানা মাহবুব আলী খানের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হল তারপর তিনি বাধ্য হয়ে তওবা করলেন। তাও আবার ২৫-৩০ বছর পর। প্রসের কম্পোজিটারের ভূল হলে কি এত কিছু হয়? একেই বলে বাঙ্গালকে হাইকোর্ট দেখানো।
আমাদের প্রশ্ন, রেযাখানীরা মাওলানা আহমদ রেযা খানের বই ছাপতে দেওবন্দী বা রাফেযীদের প্রসে দিলেন কেন? রেযাখানীদের ফতোয়া অনুযায়ী তারা কাফের ও মুরতাদ। মাওলানা আহমদ রেযা খানের ফতোয়া আছে, দেওবন্দী ও রাফেযীদের সঙ্গে মেলামেশা করা কঠিন হারাম। তাহলে রেযাখানীরা খান সাহেবের ফতোয়া না মেলে দেওবন্দী ও রাফেযীদের সঙ্গে মেলা মেশা করে তাদের প্রসে কাজ কেন করতে দিলেন? রেযাখানীদের আব্বাজান খান সাহেবের ফতোয়া মানলে তো এই চরম দুর্গতির সম্মুখীন হতে হতো না।
আসলে মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব নিজেই ছিলেন একজন কট্টরপন্থী রাফেযী। তাই এই জঘন্য শায়রীটিকে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে লিখেছেন। খান সাহেব রাফেযী প্রমাণ হয়ে যাওয়াতে রেযাখানীরা দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। তাই তাঁরা তালগোল পাকানো কথা বলতে আরম্ভ করেছেন।
রেযাখানীরা যখন মাওলানা আহমদ রেযা খানকে রাফেযী প্রমাণ হওয়াটাকে খন্ডন করতে পারলেন না তখন তাঁরা এক গোঁজামিল জবাব দেবার চেষ্টা করলেন। জবাবটি হল, মাওলানা আহমদ রেযা খান ছোট পায়জামা পরিহিতা মহিলাদের জন্য এই দুয়া করেছিলেন তাই এখানে কোণ গুস্তাখীর চিহ্নমাত্র নেই। এজন্য তাঁরা খান সাহবের একটি লেখা পেশ করেন যাতে লেখা আছে,
“হে আল্লাহ সেই মহিলাদেরকে তুমি ক্ষমা কর যারা ছোট পায়জামা পরে ।” (আহকামে শরীয়াত, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-২২৩)
এখানে মাওলানা আহমদ রেযা খান বুঝলেন কিভাবে যা সেই মহিলাদের পায়জামা ছোট ছিল? আলা হযরতের দৃষ্টি কোথায় থাকত এবং তিনি তাদের পরিস্থিতি বুঝতেন কিভাবে? হায় আফশোষ!
এখানে আমাদের বক্তব্য হল, মাওলানা আহমদ রেযা খান যদি ছোট পায়জামা পরিহিতা মহিলাদের জন্য উক্ত শায়রীটি লিখেছিলেন তাহলে সব দোষ প্রেসের ঘাড়ে কেন চাপান হল যে প্রসে ভূল ছাপা হয়েছে, আর কেনই বা বলা হল যে প্রসের কম্পোজিটার দেওবন্দী বা রাফেযী ছিল? আর কেনই বা মাওলানা মাহবুব আলী খান তওবা করলেন? আর কেনই বা বলা হচ্ছে শায়রীটি আহমদ রেযা খানের লেখা নয়?
প্রশ্ন তো থেকেই যায় যদি শায়রীটি আহমদ রেযা খান সাহেব আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানে না লিখে ছোট পায়জামা পরিহিতা মহিলাদের জন্য লিখে থাকেন তাহলে ‘হাদায়েকে বখসীস’ এর তৃতীয় খন্ড প্রকাশ করা বন্ধ করে দিল কেন রেযাখানীরা? এর কোণ সদত্তর আছে রেযাখানী ধর্মাবলম্বীদের কাছে?
‘ফাতাওয়া মাযাহিরী’ ও মাওলানা হাশমত আলী রেযবীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সেই শায়রী আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানেই লেখা হয়েছে তাহলে রেযাখানীদের এই নতুন পাঁয়তারা কেন? আসলে মাওলানা আহমদ রেযা খান আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর শানে মারাত্মক গুস্তাখীপূর্ণ শায়রী লিখে প্রকাশ্যে শিয়া বা রাফেযী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছেন এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। তিনি এবং তাঁর পুর্বপুরুষ শিয়া তো ছিলই। এতদিন তাকিয়া বা ছদ্মবেশে সুন্নীয়াতের লেবাস পরে ছিলেন। তাই সুন্নীরা তার জালে জড়িয়ে পড়েছিল। খান সাহেবের যখন গোপন ষড়যন্ত্রের কথা কেউ জানত না কিন্তু খান সাহেব যখন প্রকাশ্যে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানে গুস্তাখী করে বসলেন তখন তিনি আর ছুপা শিয়া থাকলেন না, জনসম্মুখে উলঙ্গ হয়ে গেলেন তখন রেযাখানীরা খান সাহেবকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করে দিলেন। সেজন্য তাঁরা চালাকী করে বলতে লাগলেন যে আহমদ রেযা খান আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানে নয় বরং ছোট পায়জামা পরিহিতা মহিলাদের জন্য এই শায়রী লিখেছেন।
রেযাখানীরা মাওলানা আহমদ রেযা খানকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাঁদের শেষ চেষ্টাও ব্যার্থ হল। ফাতাওয়া মাযাহিরী, মাওলানা হাশমত আলী রেযবীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত যে শায়রীটি মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানেই লিখেছেন। সুতরাং মাওলানা আহমদ রেযা খান সাহেব একজন শিয়া বা রাফেযী ছিলেন। তাতে কোনপ্রকার সন্দেহ নেই।
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) এর শানে আহমদ রেযা খানের আরও একটি মারাত্মক গুস্তাখী
কোন সুযোগ্য পুত্র নিজের মায়ের ব্যাপারে এমন কোন শব্দ ব্যাবহার করবে না যা কোন গুস্তাখ আহমদ রেযা খান আমাদের দ্বীনি মা হযরত আয়েশা (রাঃ) এর শানে ব্যাবহার করেছেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) আমাদের এমনই মা যে তাঁর সাথে শুধু সম্মানের সম্পর্কই নেই ইমানী সম্পর্কও রয়েছে। আহমদ রেযা খান হযরত আয়েশা (রাঃ) এর শানে এমন শব্দ ব্যাবহার করেছেন যা তাতে শুধু হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নয় বরং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পবিত্র সম্মানেও আঘাত হানা হয়েছে। তাহলে দেখুন খান সাহেব আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) এর শানে কিরকম বাজে শব্দ ব্যাবহার করেছেন। তিনি লিখেছেন,
“উম্মুল মোমেনীন আয়েশা রাজিআল্লাহু আনহু রাগের মাথায় এমন শব্দ ব্যাবহার করেছেন যা অন্য কেউ করলে তার গর্দান কেটে নেওয়া হত।” (মালফুযাত, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৮৭)
চিন্তা করুন! উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) এর ব্যাপারে কোন প্রকৃত মুসলমান এরকম ধরণের কথা বলতে পারে ? পারে না। একমাত্র শিয়া বা রাফেযীরা ছাড়া আর কেউ এরকম ধরণের কথা বলতে পারে না।
নাসীরুদ্দীন আলবানীকে নিয়ে আহলে হাদীসদের বাড়াবাড়ি