লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
২০০৪ সালে ১৪ই জুন ১৯ বছরের ইশরাত জাহানকে গুজরাট পুলিশ ইনকাউন্টার করে হত্যা করে। ইনকাউন্টারকারীর নাম ডি জি বানজারা। তার উদ্দেশ্য ছিল ইনকাউন্টার করে পদোন্নতি লাভ করা। তবে আল্লাহর মেহেরবানীনে খাকী পোষাকধারী, নরেন্দ্র মোদীর পোষা বর্বর হিংস্র খুনী পুলিশ জঙ্গি বাহিনীকে উলঙ্গ করে দেন এস পি তামাঙ্গ। আহমেদাবাদ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস পি তামাঙ্গ ২৪৩ পাতার রিপোর্টে লিখেছেন যে ইশরাত এবং অন্য তিন যুবককে মুম্বাই থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অবৈ্ধভাবে আটক রাখা হয় । ইশরাত জাহানকে ধর্ষন করা হতে থাকে। এরপর চারজনকেই হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয়। যাতে তদন্ত রিপোর্টে কোনরকম বিকৃ্তি না ঘটে সেজন্য তিনি নিজে হাতে লেখেন এই রিপোর্ট। ইনকাউন্টারের পর জানানো হয় ইশরাত জাহান ও তার সঙ্গী জাভেদ আলম উরফে প্রমেশ কুমার বাল্টী, আমজাদ আলি উরফে রাজকুমার এবং যীশান জওহর আব্দুল গনী লস্কর ই তাইয়েবার মহিলা শাখার কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু এস পি তামাঙ্গ যে রিপোর্ট তৈ্রী করেন তাতে বলেছেন, লস্করের সঙ্গে এই চারজনের কোন সম্পর্কই ছিল না।
গুজরাটের পুলিশ জঙ্গিবাহিনী সার্ভিস রিভালবার দিয়ে ইনকাউন্টার করে এই চারজনকে রাত্রি ৮-৯টা নাগাদ। লাশগুলোকে ঘটনাস্থলেই রেখে দেওয়া হয়। তবে ইশরাত জাহানের মায়ের দীর্ঘ সংগ্রাম ও ম্যাজিস্ট্রেট এস পি তামাঙ্গের রিপোর্টে নরেন্দ্র মোদীর পুলিশ জঙ্গিবাহিনীকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে দেয়। এস পি তামাঙ্গ রিপোর্টে প্রমাণ করে দেন চারজনকে মেরে ফেলা হয় অন্য কোথাও কয়েক ঘন্টা আগে। সন্ত্রাসবাদীদের তরফ থেকে গুলি চালানো হয় তা ভিত্তিহীন। যে পিস্তল সেখানে পাওয়া গেছে বলা হয় সেটা মরচে পড়া তাতে কোন গুলি চলেনি বহুদিন থেকেই। যে সন্ত্রাসবাদীদের উপর একে-৪৭ রাইফেল ব্যাবহার করার কথা বলা হয় তার হাতে গান পাউডার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি এবং ঘটনাস্থলে খালি কার্তূজও পাওয়া যায়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সেই রা্তে ধর্মীয় বেরুনোর কথা ছিল এবং আহমেদাবাদে নিরপত্তার ঘেরাবন্দি ছিল। তাহলে ইন্ডিকা গাড়ি যাতে সন্ত্রাসবাদী ছিল কিভাবে আহমেদাবাদ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এছাড়াও নরেন্দ্র মোদীর পুলিশ জঙ্গি বাহিনী ৩৭টি মুসলিমকে ইনকাউন্টার করে। পরে তা প্রমাণ হয় সমস্ত ইনকাউন্টারগুলিই সাজানো।
২০০২ সালের ২২ অক্টোবর রাত দুটোর সময় সমীর খান পাঠানকে গুজরাট পুলিশ ইনকাউন্টার করে। এই ইনকাউন্টার করে গুজরাট পুলিশ হিরো সাজার চেষ্টা করে। সমীর পাঠানের উপর অভিযোগ ছিল সে নাকি লস্কর ই তাইয়েবার এজেন্ট ছিল। পরে তা প্রমাণ হয় পু্রো ইনকাউন্টারটাই সাজানো।
২০০৩ সালে ১৩ জানুয়ারী গুজরাটের পুলিশ জঙ্গি সিনেমা হলের সামনে সাদিক জামালকে লস্কর ই তাইয়েবার এজেন্ট হওয়ার অভিযোগে ইনকাউন্টার করে। এরপর সাদিক জামালের বড় ভাই শাব্বির জামাল গুজরাট হাইকোর্টে একটি আরযী দায়ের করেন এই আরযীতে সাজানো ইনকাউন্টারের তদন্ত করার আবেদন করা হয়।
২০০৫ সালের ২৫শে নভেম্বর নরেন্দ্র মোদীর হিংস্র বর্বর পু্লিশ জঙ্গি সুহরাবুদ্দিনকে ইনকাউন্টার করে। পুলিশ দাবী করে সুহরাবুদ্দিন নরেন্দ্র মোদীকে হত্যা করতে এসেছিল। হত্যার প্রত্যাক্ষদর্শী তাঁর স্ত্রী কাওসার বানুকেও হত্যা করা হয় এবং অভিযোগ লাগানো হয় সুহরাবুদ্দিনের স্ত্রী কাওসার বানু পাকিস্তানের নাগরিক। পরে সে ফিরে আসে। কিন্তু পরে প্রমাণ হয় নরেন্দ্র মোদীর পু্লিশ জঙ্গির এই ইনকাউন্টার সাজানো।
২০০৬ সালের ১৭ই মার্চ চারজন মুসলিম যুবককে ইনকাউন্টার করা হয়। এভাবে অসংখ্য মুসলমান যুবককে গুজরাটের পুলিশ জঙ্গি বাহিনীঅ মিথ্যা অভিযোগে ইনকাউন্টার করে। প্রতিবারেই একটি অভিযোগ সবাই নাকি নরেন্দ্র মোদীকে হত্যা করতেঅ এসেছিল। সবাই নাকি লস্কর ই তাইয়েবার এজেন্ট। গুজরাট পুলিশ জানাই মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা (যদিও নয়) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ইনকাউন্টার করার সময় তারাও পুলিশের উপর ডজন ডজন রাউন্ডের পর রাউন্ড গুলি চালাচ্ছিল। কিন্তু গুজরাট পুলিশ এতই বাহাদুর যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের একটি গুলিও পুলিশের গায়ে লাগেনি। এমনকি পুলিশের গাড়িতে একটি গুলিও লাগেনি। এরকম ধরনের ঘটনা কোন কোন কাল্পনিক রোমাঞ্চকর হলিউডের সিনেমাতেও ঘটে না যে সন্ত্রাসবাদীরা গুলি চালালো আর পুলিশপক্ষের তরফে কোন ক্ষয়ক্ষতি তো দুরের কথা তাদের গায়ে সামান্য আঁচড়ও লাগেনি। আসলে সাজানো ইনকাউন্টার হলে আর কি হবে? কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানীতে তদন্তের পর পুরো সত্য আমাদের সামনে এসে গেছে এবং নরেন্দ্র মোদীর পুলিশ জঙ্গি বাহিনী পুরো উলঙ্গ হয়ে গেছে।
একটি সাক্ষাৎকারে বিরোধী দলনেতা ও অ্যাডভোকেট হর্ষ গোহেল বলেন, “গুজরাটে গোধরা ঘটনার পরে মুসলিমদের গণহত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিজেপি এবং অগনিত লোককে চরম বর্বরতার সঙ্গে হত্যা করা হয় বিভিন্ন পন্থায়। ইশরাত জাহানের হত্যা সেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের নেতৃত্বেই বিজেপি সরকারের অপরাধমূলক মস্তিষ্কের পরিণতি। দাঙ্গার পরে গণহত্যা করার পরিকল্পনা করা হয় অন্যান্য পন্থায়। ইশরাত জাহান মামলার তদন্ত রিপোর্ট দ্বারা আমাদের পার্টির এই ভাবনা আরও দৃঢ় হয় যে বিজেপি মানবতার শত্রু হিসাবে কাজ করে।”
তিনি আরও বলেন, “গুজরাটে কেবলমাত্র আড়াই বছর মেয়াদে ৩৭ জনকে বিভিন্ন সাজানো পুলিশি সংঘর্ষে হত্যা (ইনকাউন্টার) করা হয়। এসব হল ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবতার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত্। ৩৭ জনকে কেবল সাজানো সংঘর্ষেই মারা হয়েছে । সাধারন মানুষকে হত্যা করে এই কাহিনী বানানো হয় যে, তারা নরেন্দ্র মোদীকে মারতে আসে অথবা আদবানীকে মারার চক্রান্ত করতে আসে ইত্যাদিঅ ইত্যাদি। কিন্তু সত্য চিরদিন ঢাকা থাকে না।”
ইশরাত জাহানকে যে গুজরাট পুলিশ মিথ্যা ইনকাউন্টার করে তা আজ সুপ্রিম কোর্টে প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রমান হয় যে ইশরাত জাহান, সুহরাবুদ্দিন ও গুজরাট পুলিশ যে অন্যান্য মুসমানদেরকে সন্ত্রাসবাদী বলে হত্যা করে তারা কেউ সন্ত্রাসবাদী ছিল না। এগুলো নরেন্দ্র মোদী ও গুজরাট পুলিশের সাজানো চক্রান্ত। তাহলে আমরা জোর গলায় বলতে পারি শহীদে আযম হযরত শায়ক ওসামা বিন লাদেন, আলাওয়াকি ও বিভিন্ন মুজাহীদিনদেরকে যে হত্যা করা হয় তাও সাজানো। তারা কেউ সন্ত্রাসবাদী নয়। আর আল কায়দা, তালিবান, বোকো হারাম, ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন, জামাআতুল মুজাহিদীন, জাইসে মুহাম্মাদ প্রভৃতি সংগঠনগুলো সন্ত্রাসবাদী নয়। ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো এইসব সংগঠনগুলোকে চক্রান্ত করে সন্ত্রাসবাদী বলে। আর তাদের নামে অপপ্রচারে সাহায্য করে ভারতের ইহুদীশক্তির দোসর ব্রাহ্মন্যবাদী মিডিয়া।
বন্ধুগণ আপনারা ভেবে দেখুন ইশরাত জাহান, সুহরাবুদ্দিনকে কিরকম মিথ্যা ইনকাকাউন্টার করে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদী সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে? পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রমাণ হয় যে ইশরাত জাহান, সুহরাবুদ্দিনকে মিথ্যা সন্ত্রাসবাদী বলে ফাঁসানোর প্রয়াস করা হয়েছিল। সুতরাং ক্রোনোলজিগুলো বুঝুন।
কট্টরপন্থার উত্থান, সাজানো পুলিশী সঙ্ঘর্ষ ও বিচারব্যবস্থা