লিখেছেনঃ শ্যামল চক্রবর্তী
অযােধ্যা সিরিয়াল এখন রমরমিয়ে চলবে। সামনেই লােকসভা নির্বাচন। দেশের অর্থনীতির হালচাল খারাপ। চারিদিকে নেই নেই রব। কাজেই অযােধ্যা সিরিয়াল জোর কদমে চলছে চলবে।
অযােধ্যা সিরিয়ালের মজা হলাে এই যে যতদিন যাবে তত চরিত্র বাড়বে নতুন নতুন ঘটনা যােগ হবে— মূল ঘটনার অসংখ্য শাখা, শাখা থেকে প্রশাখা— এক প্রশাখা থেকে আর এক প্রশাখা বাড়তেই থাকবে।
অযােধ্যা ও তাই। কথা ছিল কোর্টে মীমাংসা হবে। মীমাংসা হবে জমির মালিকানা কার? লক্ষ্ণৌ হাইকোর্টে শুনানি হচ্ছিল তার সম্পর্কেই। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের শুনানি ও যুক্তি শােনা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমন সময় কোর্ট আদেশ দিল গুড়িয়ে দেওয়া বাবরি মসজিদের নীচের মাটিকে খুঁড়ে ফেল। দেখ ওখানে মন্দির ছিল কি না। কিন্তু পুরাতাত্ত্বিক খনন কাজ এমন একটা এলাকা ধরে হচ্ছে যেখানে দু’হাজার বছর ধরে মানুষের বসতি আছে। এর সঙ্গে জমির মালিকানার সম্পর্ক পুরাতত্ত্ব বিভাগ কী করে খুঁজে বার করবে? এর প্রাসঙ্গিকতা কোথায়?
অথচ সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৩ সালে সঠিক ভাবেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও সরকারের রেফারেন্স বাতিল করেছিল এই কথা বলে যে বাবরি মসজিদ-এর নীচে মন্দির ছিল কি না এটা বিচার্য বিষয় নয়।
আসলে মামলা যা নিয়ে তা হলাে জমির মালিকানা কার? এ বিষয়ে হাইকোর্ট তার রায় দেবে। বাকি সমস্ত প্রশ্নই আদালত বহির্ভূত। খনন কাজ করে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সংঘ পরিবারের দাবিই শক্তিশালী হবে। কারণ তাদের দাবি হলাে ভারতের শত শত মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ বানানাে হয়েছে। এখন ওই মসজিদগুলাে ধ্বংস করে আবার মন্দির তৈরি করতে হবে। এ কোন্ সর্বনাশা বিপর্যয়ের দিকে আমাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?
কোর্টের রায় দান স্থগিত রেখে আযােধ্যা সিরিয়ালে নতুন পর্ব ঢােকানাে হলাে। সিরিয়াল জিইয়ে রাখতে হবে তাে? এর পর্বের নাম রাখা যেতে পারে খনন পর্ব। তবে চলবে অনেকদিন ধরে।
খননপর্ব- পূর্বরাগ
অযােধ্যা সিরিয়াল একঘেয়ে হয়ে গেলে অনেক সময় অন্য স্বাদ আনতে হয়। আজকাল তাে হরকত বিদেশি নিদেন পক্ষে এন.আর.আই, আর কিছু না পাওয়া গেলে এদেশেই স্বল্পকালীন সময়ে থাকা বিদেশীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখানে ব্যবহৃত হল দিল্লিকেন্দ্রিক একটা কানাডিয়ান কোম্পানি তােজো বিকাশ ইন্টারন্যাশানাল। হাইকোর্টের নির্দেশ পুরাতত্ত্ব বিভাগ তােজো কোম্পানির পরামর্শ ও সাহায্য নিয়ে খনন কাজ চালাবে। কারণ তােজো কোম্পানির র্যাডারে নাকি ধরা পড়েছে মাটির নিচে স্তম্ভ আছে।
তােজো বিকাশ ইন্টারন্যাশনাল দিল্লিতে মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজের সুবিধার জন্য মাটির নীচে আলট্রাসােনিক মানচিত্র তৈরি করছে। দিল্লিতেই তাদের কাজকর্ম। তারা নাকি দাবি করছে অযােধ্যা য় তাদের কিছু যন্ত্রপাতি পাঠিয়েছিল। সেখানে তারা বিতর্কিত স্থানে মাটির নীচে কাঠামােগত বৈসাদৃশ্য পেয়েছে। এইটা নাকি বাবরি মসজিদের আগেকার তৈরি একটা বড়াে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। লক্ষ্ণৌ বেঞ্চের শুনানির কাজ তখন প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। এরা সত্যাসত্য নির্ধারণের জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগকে খনন কাজ করে পরীক্ষা করে আদালতে জমা দেবার নির্দেশ দেয়।’
অশােক সিংহল তােজোর রিপাের্টকে হাতিয়ার করে প্রচার শুরু করলেন। বিতর্কিত এলাকার বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দির ছিল এ বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।
অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তােজো কোম্পানি ‘স্তম্ভর’ অস্তিত্ব আছে। ঘােষণা আসলে পূর্ব পরিকল্পিত। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ওখানে মন্দির ছিল বলে প্ররােচনা দেওয়া। সহমত একটা বিবৃতিতে সংশয় প্রকাশ করে এই কথা বলে যে। তােজো কোম্পানির র্যাডার মাটির নীচে কিছু আছে কি না তা জানতে পারে, কিন্তু কোনাে ম্যাগনেটো মিটার ব্যবহার করা হয়নি। মাটির নীচে যদি কোনাে অতীতে ব্যবহৃত বাড়ি থাকে তাহলেও বিভ্রান্তি হতে পারে। আসলে কেউ এখনও জানে। না যে মহামান্য আদালত কী বলতে চেয়েছে। যদি কোনাে চুনা পাথর, ভাঙা ইটের স্তর বা মধ্যযুগের পােড়ানাে ইট, মাটির বাসন পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ওখানে মন্দির ছিল না। কিন্তু যদি এভাবে অনুসন্ধান চলে যেকোনাে অমুসলিম বস্তুই মন্দিরের লক্ষণ তাহলে যেকোনাে প্রাপ্ত বস্তু সম্পর্কেই তা বলা যেতে পারে। যেমন ত্রয়ােদশ শতাব্দীর আগেকার; অথবা মুসলমান শাসকদের আগেকার কোনাে বস্তু। এমনকী মৌর্য, কুশান যুগের কোনাে ইট অথবা কোনাে দেব-দেবীর মূর্তি যদি পাওয়া যায় তাহলেই মন্দির বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। অথচ এগুলাে কোনাে গৃহস্থালীর অঙ্গ হতেই পারে। তাই অযােধ্যা সিরিয়াল চলতেই থাকবে এবং সংঘ পরিবারকে সুযােগ করে দেওয়া হবে একথা প্রচারের যে ওখানে মন্দির ছিল।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ও প্রাচীন ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ আর. এস. শর্মা Statesman পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে (৯ মার্চ, ২০০৩)-এ বলেন; যে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত পুরাতত্ত্ববিদ ও লিপি উৎকিরণ সংক্রান্ত (এপিগ্রেফিক) বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে খনন কাজ চলা উচিত, সমস্ত কাজই ভিডিও-তে তুলে রাখা দরকার, না হলে প্রমাণপত্র বিকৃত হবার আশংকা থেকে যায় এবং তা থেকে ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে। আবার সংশ্লিষ্ট পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, ঐতিহাসিক ও দলিল লেখকরা যদি নিরপেক্ষ না হন তাহলে প্রমাণ ও তথ্য বিকৃত হবার সুযােগ থেকে যায়।
প্রমাণ কেমন করে বিকৃত করা যায় তার একটি উদাহরণ দেন শ্রীশর্মা, “বিশ্বহিন্দু পরিষদের পণ্ডিতরা ১৯৯২ সালে অযােধ্যাতে একটি লেখ (inscription) আবিষ্কার করেন, তারা দাবি করেন এটা দ্বাদশ শতকের। কিন্তু পুরাতত্ত্ববিদ সীতারাম রায় প্রমাণ পান যে ওটা মাত্র ৩৫০ বৎসরের পুরনাে।
ড. শর্মা আরও বলেন ষােড়শ শতক পর্যন্ত রামের কোনাে মন্দিরই অযােধ্যা য় ছিল না। ড. শর্মার আলােচনা থেকে আরও জানা যায় যে আর.এস.এস. মদতপুষ্ট ঐতিহাসিক বি. বি. লাল ১৯৭৭ এবং ১৯৮০ সালে অযােধ্যার ওই স্থানের খনন কাজ চালিয়েছিলেন কিন্তু তিনি বিশেষ কোনাে বৈশিষ্ট্য দেখেননি। কিন্তু ১৯৯০ সালে বি বি লালের হঠাৎ বদলে গেল মতটা। তিনি এখন বললেন যে তিনি স্তম্ভের ভিত্তি দেখেছেন ৪ নম্বর ট্রেঞ্চে।
কিন্তু অনেক অনুরােধ সত্ত্বেও ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ, যার ভিত্তিতে শ্ৰীলাল এই সিদ্ধান্তে এলেন পুরাতত্ত্ববিভাগের সেই প্রকৃত ডায়েরি দেখাত অস্বীকার করেন।
লক্ষৌ কোর্টের আদেশের সঙ্গে সঙ্গে আর একটা নাটক অভিনীত হয়ে গেল। হাইকোর্ট যে দিন খনন কাজের নির্দেশ দিল সেদিনই পুরাতত্ত্ব বিভাগের সর্বোচ্চপদের পরিবর্তন হলাে। সংস্কৃতি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নতুন ডাইরেক্টর জেনারেল মনােনীত হলেন। এটা হলাে এমন সময় যখন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ব্যাপারে প্রধান অভিযুক্ত। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনাে এজেন্সিই সন্দেহের বাইরে থাকতে পারে না।
পুরাতত্ত্ব বিভাগের পক্ষপাত। বিতর্কিত এলাকার ৬৮ একর জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছে। একটা অস্থায়ী রামলালা মন্দিরও তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে সেটাও সকলের জানা। এই অস্থায়ী মন্দিরে যাওয়ার পথ বরাবর লাল কাপড় দিয়ে ঘেরা হয়েছিল। সাধারণের প্রবেশ নিষেধ, খনন চলছিল সেখানে। সংবাদ মাধ্যম সেখানে যেতে পারছিল না। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরও মুখ খােলা নিষেধ। কিন্তু অনেক খবর বেরিয়ে আসছে। আবার বিশ্বহিন্দু পরিষদ প্রচার করেই চলেছিল যে ওখানে মন্দিরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকী হিমাচল প্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী বলে এলেন যে বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দির ছিল সরকার তার প্রমাণ পেয়েছে। তার কয়েকদিন পরই ভেঙ্কটাইয়া নাইডু কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দিলেন, “ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ওখানে ভগবান রামের মন্দির ছিল।”
কিন্তু তােজো ইন্টারন্যাশানাল একথা বলেনি যে ওখানে মন্দির ছিল। তাদের বক্তব্য তারা প্রধানমঞ্চে র বরাবর anamaly alignments আছে বলে মনে হয়েছে। রিপাের্টে বলা হয়েছে যে এই anamaly alignments কোনাে দেওয়ালের ভিত হতে পারে এবং সেটা পরবর্তী কালের নির্মাণ। তােজোর রিপোের্ট শেষ করা হয়েছে একথা বলে যে বৈসাদৃশ্য আধমিটার থেকে সাড়ে পাঁচ মিটার পর্যন্ত। মনে হয় এটার সঙ্গে সম্পর্ক আছে প্রাচীন অথবা তৎকালীন কাঠামাের। তা থাম হতে পারে, দেওয়ালের ভিত হতে পারে, মেঝে হতে পারে। এটা এলাকার অনেকটা জুড়ে বিস্তৃত। রিপাের্টে একথাও বলা হয়, বৈসাদৃশ্য আসলে কী পুরাতাত্ত্বিক নিয়মে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে পরীক্ষা করলেই বােঝা যাবে। পুরাতত্ত্ব বিভাগের কারসাজি পূরাতত্ত্ব বিভাগের ডাইরেক্টর জেনারেল গৌরি চ্যাটার্জী এলাহাবাদ হাইকোর্টের স্পেশাল বেঞ্চকে উল্লেখ করেছিলেন “রাম জন্মভূমি স্পেশাল বেঞ্চ” বলে। সযত্নে “বাবরি মসজিদ” কথাটা বাদ দিচ্ছেন।
পুরাতত্ত্ব বিভাগের খননের জন্য ১৪ জনের দল তৈরি করেছিলেন তার মধ্যে। একজন মুসলিম। এটা কী একতরফা করা হলাে না?
খোড়াখুড়ির জন্য বরাত দেওয়া হলো যে ঠিকাদারকে তিনি বিশ্বহিন্দু পরিষদের লােক। ১২ মার্চ থেকে ৫০ জন মজুর নিয়ােগ করা হলাে তার মধ্যে একজনও মুসলিম নেই। ফলে স্পেশাল বেঞ্চের আবার নির্দেশ, টিম গঠন ও মজুর নিয়ােগে যেন উভয় সম্প্রদায়ের যথেষ্ট প্রতিনিধি থাকে। এই আদেশও অগ্রাহ্য করা হল। ২৭শে মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মজুর বাড়ানাে হল মুসলিম ৭ থেকে ৯ এবং হিন্দু ৩৬ জন। ভি.এইচ.পি. নিয়ােজিত এই মজুরেরা মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু দেখলেই তা ছুঁড়ে দিচ্ছে আবর্জনা স্থূপে। এর একমাত্র সহজবােধ্য উদ্দেশ্য মসজিদ বলে প্রমাণ হতে পারে এমন সবকিছুকেই নষ্ট করে ফেলা। ফলে ১০ এপ্রিল হাইকোর্ট আবার নির্দেশ দেয় আরও বেশি মজুর নিয়ােগ করার জন্য কিন্তু কে শুনবে তার কথা।
এহবাহ্য। এ.এস.আই. টিম ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া মসজিদ বলে প্রমাণিত হতে পারে এমন অনেক কিছু পঞ্জিভূক্ত বা লিপিবদ্ধ করতে অস্বীকার করেছে। এর ফলে ১৪ই এপ্রিল হাইকোর্ট দুজন পর্যবেক্ষক নিয়ােগ করে। শেষ আশার কথা ভারতের বিশিষ্ট কয়েকজন প্রত্নতত্ত্ববিদ স্বেচ্ছায় পরীক্ষার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন, এঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট পুরাতত্ত্ববিদ অমল রায়, ড. রূপেন কুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. বিষ্ণুপ্রিয়া বসাক, সুতপা সিনহা, বনানী ভট্টাচার্য আছেন।
পুরাতত্ত্ব বিভাগ ৫২টা ট্রেঞ্চ খুঁড়ল। প্রত্যেকটা চার বর্গমিটার করে। তারপর ২৪শে এপ্রিল একটা প্রাথমিক রিপাের্ট কোর্টে জমা করেছিল। এর উপাদানগুলাে ও এই এলাকা থেকে পাওয়া অন্যান্য জিনিসগুলাে একজন ঐতিহাসিক পরীক্ষা করেন। তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছােন যে প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জিনিস যা নথিভূক্ত তা হয় বাবরি মসজিদের সঙ্গে যুক্ত অথবা অনেক বছর আগেকার মুসলিম বসতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের সিদ্ধান্ত তারা ৬ই মার্চ দিল্লিতে সহমত আয়ােজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘােষণা করেন। আরও তিরিশটি ট্রেঞ্চ খননের পর পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বিতীয় রিপাের্ট লক্ষ্মৌ বেঞ্চে জমা দেয়, পুরাতত্ত্ববিদ সুরজ ভান, জয়া মেনন এবং সুপ্রিয়া ভার্মা এই খননের কাজ সম্পর্কে খুবই ওয়াকিবহাল এবং পুরাতত্ত্ব বিভাগ যে রিপাের্ট দিয়েছে তাও তাঁরা জানেন। তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে মসজিদের মেঝের স্তরের নীচে কোনাে কাঠামাের অবশেষ দেখা যায়নি। প্রথম রিপাের্টে ‘কাঠামাে ভিত’-এর কথা বলা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী পরীক্ষায় দেখা যায় ওগুলাে (brick bats)-এর তৈরি, কোনাে ধরনের কাঠামাের ভার বহন করতে অক্ষম এবং কোনাে পরিচিত মন্দির কাঠামাের সঙ্গে যােগ নেই। (‘ফ্রন্টলাইন’, আগস্ট ১১, ২০০৩)।
ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব পুরাতত্ত্ব বিভাগের পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক একাডেমিক জার্নালের একটি বিশেষ শব্দ পুনর্ব্যবহার করেছেন। ‘Crisis archaeology’ কয়েকটা স্তম্ভের ভিত্তি এখানে কী করে পাওয়া গেল এ বিষয়ে গভীর সন্দেহ আছে। ২১শে মে সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগীয় পর্যবেক্ষকের কাছে অভিযোেগও জানানাে হয়েছে। অভিযােগে দেখানাে হয়েছে পুরাতত্ত্ব বিভাগের খনন কাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কীভাবে জালিয়াতি করেছে। মসজিদের চুন-সুরকির মেঝের নীচে ইটের টুকরাে বালি পাথর এর সঙ্গে ছড়ানাে আছে। বােঝানাের চেষ্টা হয়েছে মেঝেটা খুব শক্ত বাঁধুনির, এই পুনর্বিন্যাস পুরাতত্ত্ব বিভাগের নিয়ােজিত খননকারীরা ‘স্তম্ভ’ ভিত্তি প্রমাণ করার জন্য করেছেন।
বিষ্ণুহরি মন্দির রহস্য। ‘রামজন্মভূমি’ অযােধ্যা সিরিয়ালের আর একটা এপিসােড হল বিষ্ণুহরি মন্দির রহস্য। জালিয়াতিতে হিন্দি সিনেমার উদ্ভট গল্পকেও হার মানিয়ে দেবে। পুরাতত্ত্ব নিয়েও যে জালিয়াতি হয় এটা তার অন্যতম নিদর্শন।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পরপরই সংস্কৃতে লেখা একটা পাথর ভি.এইচ.পি. আবিষ্কার করল। ভি.এইচ.পি.-র ঐতিহাসিক স্বরাজপ্রকাশ গুপ্ত জানিয়ে দিলেন যে এতে প্রমাণ পাওয়া গেল প্রাচীন কালেই এখানে রামমন্দির ছিল। এটা সর্বশেষ দ্বাদশ শতাব্দীতে কনৌজ ও বারাণসীর গহড়াওয়ালা রাজারা পুনর্নির্মাণ করেন। দুভাগে ভাঙা এই পাথুরে লেখ অনেক ঢক্কা নিনাদ করে কেন্দ্রীয় সরকারের হেফাজতে জমা দেওয়া হল। কিন্তু এটা যে ডাহা মিথ্যা একথা প্রমাণ করে দিলেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন ডাইরেক্টর। (এপিগ্রাফি) ড. কে. ভি. রমেশ। তিনি বললেন ওই লেখ রাম জন্মভূমি। হিসাবে কোনাে স্থান নির্দিষ্ট করছে না। এটা সাধারণভাবে দাতার বংশ উল্লেখ আছে ‘বীর’ হিসাবে বর্ণনা করে। এর সঙ্গে রামের কোনাে সম্পর্কই নেই।
ড. রমেশের অনুবাদ অনুযায়ী যা লেখা আছে তা হল স্থানীয় শাসকেরা একটা সুন্দর বিষ্ণুহরি মন্দির নির্মাণ করেছেন। কোনাে পুরনাে মন্দিরের মেরামতি বা পুনর্গঠনের কোনাে প্রশ্নই ওঠে না। আর ওটার রাম জন্মভূমির সঙ্গে কোনাে সম্পর্কই নেই।
তাহলে বিষ্ণুহরি মন্দিরের কথা কোথা থেকে এল? হানস বেকার অযােধ্যা সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী বিষ্ণুহরি মন্দির ছিল সরযূ নদীর তীরে। স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই মন্দির সরযূ নদীর ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে, বিষ্ণুহরি মন্দির বাবরি মসজিদ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল।
কিন্তু ভি.এইচ.পি.-র দাবি বাবরি মসজিদের স্থূপ থেকে ওই লেখ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু বাবরি মসজিদ বহুবার পরীক্ষা হয়েছে কিন্তু কোনাে সংস্কৃত লেখ পাওয়া যায়নি। তাই এ বার দাবি করা হল বাবরি মসজিদের ভাঙা দেওয়ালের মধ্যে এটা লুকিয়ে ছিল, করসেবকরা কাঠামাে ভেঙে ফেলার পর এটা পাওয়া গেল। কিন্তু কে পেল? দশ বছরের মধ্যে তার কোনাে দাবিদার নেই।
ভি.এইচ.পি. যে একমাত্র সাক্ষী উপস্থিত করেছে, তিনি হলেন আর.এস.এসের মুখপত্র পাঞ্চজন্য-র একজন কর্মী। তার দাবি মসজিদের দেওয়ালের ধবংসস্থূপের ধুলাের মধ্যে লেখটা পাওয়া গিয়েছে। জেরার মুখে তিনি বলেন ধবংসস্থূপের মধ্য থেকে বার করবার সময় তা শক্ত হয়ে যাওয়া ধুলাে কাদায় আচ্ছাদিত ছিল। সন্দেহ থেকে যায় মধ্যযুগের চুন, বিটুমিন ইত্যাদির আবরণের শক্ত হয়ে যাওয়া পাথর পরিষ্কার না করে পড়া গেল কী করে? আসলে ওটা বিষ্ণুহরি মন্দিরের যে দুটো অংশের দাবি করা হচ্ছে তা নয়। ওটা পৃথক কিছু। সমস্তটাই পূর্বপরিকল্পিত একটা জালিয়াতি। কিন্তু এই লেখটা এল কোথা থেকে?
জানা গেল ১২০ বছর আগে অযােধ্যায় একটা গুরুত্বপূর্ণ লেখ পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৯২ এর ঠিক আগে ওটা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। একজন বিখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ এ. ফুরার তার সরকারি রিপাের্টে (১৮৮৯ সাল) জানিয়েছিলেন যে ওই লেখতে ২০টা সম্পূর্ণ লাইন ছিল আর এটা ছিল মাঝখান থেকে দুভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া, আর দিন লেখা ছিল ১২৪১ সম্ভবত (অর্থাৎ ১১৮৪ খ্রিস্টাব্দ), কনৌজের রাজা জয়চন্দ্রের সময়। এতে বিষ্ণু মন্দিরের কথা বলা আছে। এটা নাকি কোনাে এক সময় আওরঙজেবের মসজিদ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। ওই মসজিদ ভেঙে যাবার পর তার ধবংসস্তুপ থেকে ওটা আবিষ্কৃত হয়। তারপর ফৈজাবাদের স্থানীয় যাদুঘরে রাখা আছে। পরবর্তীকালে ফুরার লেখেন যে লেখটি লক্ষ্মেী রাজ্য যাদুঘরে রাখা আছে। তার পরিচিত নম্বর হল ৫৩.৪।
এবার রহস্য কাহিনি এক নতুন মােড় নিল, এখানে একটা কথা বলে নেওয়া ভালাে ফুরার আওরঙজেবের প্রসঙ্গটা টানলেন বটে কিন্তু আওরঙজেব কোনােদিনই অযােধ্যা যাননি।
ইতিমধ্যে ভি.এইচ.পি. ঐতিহাসিক ড. টি. সি. ভার্মার ছাত্র শেখর রায় লক্ষ্মেী যাদুঘরে ওই লেখটা দেখতে চান। তাকে ৫৩.৪ চিহ্নিত লেখ দেখানাে হয়। এটাই দুভাগে ভাঙা ছিল কিন্তু লেখা ২০ লাইন ছিল না ছিল ১০ লাইন। তাছাড়া ওখানে জয়চন্দ্রের কোনাে উল্লেখ ছিল না–এমনকী বিষ্ণু মন্দিরেরও কোনাে উল্লেখ ছিল । কোনাে তারিখেরও উল্লেখ ছিল না। শ্রীরায় তাঁর হতাশার কথা উল্লেখ করে একটা সেমিনারে লিখিত বক্তব্য দেন। ফৈজাবাদের ‘দৈনিক জনমাের্চা’য় তা প্রকাশিতও হয়।
‘সহমত’ এসব প্রচার করে দেবার পর লক্ষ্মৌ যাদুঘর ৫৩.৪ নম্বরের যে লেখটি দেখায় তাতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়, এই লেখটিও দুখণ্ড এবং তাতে সাড়ে কুড়ি লাইন লেখা ছিল। কিন্তু শ্রীরায় ১৯৯১-৯২ সালে ওই নম্বরের যে লেখটি দেখেছিলেন এটা তা নয়, এমনকী ফুরার যা লিখে রেখে গেছেন তার সাথেও কোনাে মিল নেই। জয়চন্দ্রের কথা, বিষ্ণু মন্দিরের কথা, তারিখ কোনাে কিছুই নেই।
প্রশ্ন হলাে একই নম্বরে দুরকমের লেখ যাদুঘরে কী করে এল? কী করে ১১৮৪ সালের লেখ যাদুঘর থেকে উবে গেল? দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা প্রথমে দেখা যাক। বিষ্ণুহরি মন্দিরের যে লেখটা বাবরি মসজিদের বলে জালিয়াতি করে চালানাে হয়েছিল সেটার সঙ্গে ফুরার-এর রিপাের্টের মিল আছে। এটাতে ঠিক ২০টি লাইন ছিল। কিন্তু দুপাশে ভাঙা ছিল লাইনগুলাে অসম্পূর্ণ। এটাও ফুরার এর রিপাের্টের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটা বিষ্ণুহরি মন্দির হতে পারে কারণ ফুরার যে বিষ্ণু মন্দিরের কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু তাতে জয়চন্দ্রের নাম উল্লেখ নেই তার বদলে আছে আয়ুধাচন্দ্রের নাম এবং আয়ুশাচন্দ্রের নাম। সহমতের সমীক্ষায় বলা হয়েছে ফুরার হয়তাে নাম পড়তে ভুল করেছিলেন, কিন্তু তারিখ লেখার স্থান। ইচ্ছাকৃত বিকৃত করা হয়েছে যাতে তার পাঠোদ্ধার সম্ভব না হয়। যদি ওখানে তারিখটি লেখা থাকত তাহলে স্পষ্ট হত ভি.এইচ.পি.-র ১৯৯২ সালের আবিষ্কত লেখ এর সঙ্গে ফুরার উল্লেখিত লেখটি এক। তাই তারিখটি মুছে ফেলতে হলাে।
‘সহমত’ যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তা হলাে অযােধ্যা সম্পর্কিত ৫৩.৪ নম্বর লেখ (যা ১৯৮৪ সালেও গবেষকরাও দেখেছেন যার লিখিত ডায়েরি আছে) ১৯৯২ সালের আগে কোনাে সময় সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার বদলে আর একটি লেখ একই নম্বর লাগিয়ে যাদুঘরে বসিয়ে দেওয়া হয়।
এটা কি তবে বিশ্বহিন্দু পরিষদের গুদামে রেখে দেওয়া হয়েছিল ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ওর নীচে ছিল প্রমাণের জন্য? একটা তথাকথিত যুগান্তকারী লেখ আবিষ্কারের জন্য?
অযােধ্যা নিয়ে জালিয়াতি শুরু হয়েছে অনেকদিন থেকে। সংঘ পরিবারের পুরাতত্ত্ববিদ বি.বি.লালের কথাই ধরা যাক। সত্তর দশকের মাঝামাঝি তিনি অযােধ্যায় কিছু খোঁড়াখুঁড়ি করেছিলেন। তারপর তিনি একটা পেশাদারি জার্নালে লিখেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত ওখানে ধারাবাহিক জনবসতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তারপর কয়েক শতাব্দী জনবসতির কোনাে চিহ্ন নেই। যদিও অপেক্ষাকৃত সময়ের কিছু নিদর্শন মিলেছে কিন্তু তার কোনাে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই।
কিন্তু ১৯৯০ এর পর আদবানির রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘ পরিবারের প্রচার তুঙ্গে উঠল তখন বি.বি.লাল তার বক্তব্য পরিবর্তন করলেন। আর.এস.এসের পত্রিকা মন্থনে তিনি লিখলেন বাবরি মসজিদের দক্ষিণ দেওয়ালের পিছনে তিনি কয়েকটা ইটের স্তম্ভ দেখেছেন। ওটা মসজিদের আগেকার কোনাে মন্দিরের স্তম্ভ। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও পুরাতত্ত্ববিদেরা এই বক্তব্য শুনে আতংকে শিউরে উঠেছিলেন।
জালিয়াতি দেখেও কিন্তু পুরাতত্ত্ব বিভাগ মুখ বন্ধ রাখাই শ্রেয় মনে করল। বারবার আবেদন সত্ত্বেও রেকর্ড, ছবি, কাজের ডায়েরি কিছুই দেখানাে হলাে না। শেষ পর্যন্ত মন্থনে বি. বি. লালের লেখা প্রকাশিত হবার পর ‘স্তম্ভের ভিত’ যেখানে আবিষ্কৃত হয়েছিল খুব নিরাসক্তভাবে ট্রেঞ্চের একটা ছবি দেখানাে হলাে। একইসঙ্গে পুরাতত্ত্ব বিভাগ জানাল তারা খননকাজের সময়কার ডায়েরি দেখাতে পারছে না, কারণ অনেক আগেকার বলে ওটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ সমস্ত প্রামাণ্য জিনিসগুলাে দেখে তার অযােধ্যা (সংশােধিত ২০০৩ সংস্করণ ওরিয়েন্ট লংম্যান) নামে প্রকাশিত বইতে লিখলেন যে brick bats গুলি অবিন্যস্তভাবে ছড়ানাে আছে। ওই তথাকথিত স্তম্ভ ভিত্তি অত বড় আকারের পাথরের স্তম্ভের ভার বইতে আদৌ সক্ষম নয়। কাজেই একাদশ শতাব্দীতে যে স্তম্ভের উপর দাঁড়ানাে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।
সংঘ পরিবার কিন্তু থেমে থাকেনি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বিভিন্ন ধরনের দেবমূর্তি, লেখ ইত্যাদি হাজির করা হতে থাকল মন্দিরের প্রমাণ হিসাবে। (‘ফ্রন্টলাইন’, ১লা আগস্ট)।
পুরাতত্ত্বের সমস্ত রেকর্ড ধবংস করা হয়েছে। এটা কি উগ্র জাতীয়তাবােধ জন্মানাের জন্য ফ্যাসিস্তরা ছাড়া আর কেউ করতে পারে? শঙ্করাচার্য এপিসােড। বিষ্ণুহরি মন্দিরের রহস্য আরও চলতে থাকবে। কিন্তু এর মধ্যে রঙ্গ মঞ্চে নতুন চরিত্রের আবির্ভাব হয়েছিল— কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য মীমাংসা সূত্র নিয়ে এলেন। কোন সময়? যখন খনন কাজের কিছু কিছু রিপাের্ট কাগজপত্রে বেরােতে শুরু করল সবটাই যে পণ্ডশ্রম হচ্ছে মন্দিরের কোনাে চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক এই সময় শঙ্করাচার্যের মীমাংসা সূত্র।
আচ্ছা শঙ্করাচার্যের মীমাংসা সূত্র কি শঙ্করাচার্যের নিজস্ব সূত্র ছিল? ঘটনাবলি থেকে তা মনে হচ্ছে না। কারণ তিনি দুটো বিভিন্ন প্রস্তাব করে দুটো চিঠি লিখলেন একটা ১৬ জুন—অপরটা ১৫ দিন পর ১ জুলাই। প্রথম চিঠিতে মীমাংসা সূত্র ছিল যে মুসলিম পারসােনাল ল’ বাের্ড অযােধ্যার অধিগৃহীত জমির অবিতর্কিত অংশে মন্দির নির্মাণ শুরু করতে দিতে সম্মত হােক। আর বিতর্কিত অংশের জন্য কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় চিঠিতে বলা হলাে মুসলিমরা রামমন্দির নির্মাণে রাজি হােক, একই সঙ্গে বিতর্কিত জমিতেও। এমনকী মুসলিমরা কাশী ও মথুরার মসজিদ ভাঙার দাবিও মেনে নিক।
অথচ গত বছর এই শঙ্করাচার্যের চিঠি দুটো সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা মীমাংসা সূত্র আসলে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর। শঙ্করাচার্যকে তারই পুতুল হিসাবে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। শঙ্করাচার্য প্রক্রিয়া ব্যর্থ হবার পর ভি.এইচ.পি-র কার্যকর। সভাপতি অশােক সিংহলের প্রতিক্রিয়া থেকে তা স্পষ্ট, যারা পর্দার পিছন থেকে সুতাে টানছেন তারা জেনে রাখুন শঙ্করাচার্য ও সমগ্র হিন্দু সমাজের অবমাননার জন্য তারাই দায়ী।
বি.জে.পি-এর প্রকাশ্য লাইন অবশ্য হলাে শঙ্করাচার্য-প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের পার্টি ও সরকারের কোনাে সম্পর্ক নেই।
কিন্তু পর্দার আড়ালে আসলে কী ঘটেছে। The Week (জুলাই ২০, ২০০৩) লিখছে, ভি.এইচ.পি. রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের কাছে অভিযােগ করে যে বাজপেয়ী তাদের পালের হাওয়া কেড়ে নিতে চাইছেন। আর.এস.এসের চাপে দ্বিতীয় চিঠি লেখা হলাে। লেখা হলাে আলােচনা ভেস্তে দেবার জন্য। কারণ ওই মীমাংসা সূত্রে মুসলিম বাের্ড কিছুতেই রাজি হতে পারে না। একজন প্রাক্তন বি.জে.পি. সাংসদ জানালেন বি.জে.পি. কোনাে আলােচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নন। তারা চান মন্দির তৈরির জন্য একতরফা আইন। মুসলিম সম্প্রদায়কে কোনাে ছাড় দেওয়া হবে না। (The Week, জুলাই ২০, পৃ. ৩৩) ভি.এইচ.পি. নেতা গিরিরাজ কিশাের এমন কথাও বলেন কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য একজন শৈব। ওর বিষ্ণু মন্দিরের বিষয়ে মাথা গালানাের কোনাে এক্তিয়ার নেই।
সংসদে বি.জে.পি.’র নিজস্ব শক্তি এমন নেই যে মন্দির তৈরির আইন পাশ করতে পারে। এন.ডি.এর অনেক শরিক আপত্তি করবে।
তাই বি.জে.পি. বা সংঘ পরিবার যতদিন আছে অযােধ্যা র সিরিয়ালও ততদিন চলবে।