লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
আহলে হাদীসরা দাবী করেন যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদাভাবে পড়ার কোন প্রমান সহীহ হাদীসে নেই। তাই তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একটাই নামায। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সহীহ হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়ার প্রমান আছে তাই আহলে হাদীসদের এই দাবী ভ্রান্ত এবং মরদুদ।
১ নং প্রমানঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়েছিলেনঃ
হাদীসটি হলঃ হযরত আনাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমযান মাসে একটি রাত্রে নামায পড়ছিলেন। আমি এলাম এবং তাঁর পিছনে দাঁডিয়ে গেলাম। দ্বিতীয় একজন ব্যাক্তি এলেন এবং তিনিও সাথে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। এইভাবে আমাদের মধ্যে একটি জামাআত হয়ে গেল। যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অনুভব করলেন যে আমরা তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে আছি তখন তিনি নামায সংক্ষিপ্ত করে দিলেন এবং তিনি নিজের হুজরা মুবারকে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি সেই নামায (দীর্ঘ) আদায় করলেন যা তিনি আমাদের কাছে পড়েন নি। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, যখন সকাল হয়ে গেল তখন আমি হুযুরের কাছে আরয করলাম যে ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আপনি কি রাত্রে আমাদের অবস্থা এবং পরিস্থিতি বুঝে গেছিলেন? তখন তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাঃ)] বললেন, হ্যাঁ, সেই অবস্থা এবং পরিস্থিতি আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছিল। (মুসলিম শরীফ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৫২)
হযরত আনাস (রাঃ) এর এই হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমান হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমযান মাসে সেই রাত্রে যে নামায সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে জামাআতে পড়েছিলেন সেটা আলাদা নামায ছিল এবং সেই নামায যা তিনি ঘরে হুজরা মুবারকে পড়েছিলেন তা আলাদা নামায ছিল। যে নামায তিনি সাহাবায়ে কেরামদের সাথে পড়েছিলেন তা ছিল তারাবীহর নামায , এবং এই তারাবীরর নামায সমাপ্ত করে বাড়ীতে যে নামায পড়েছিলেন তা ছিল তাহাজ্জুদের নামায। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অভ্যাস ছিল যে তিনি তাহাজ্জুদের নামায হুজরা মুবারকে পড়তেন। যেহেতু হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রাত্রে নিজের হুজরা মুবারকে নামায পড়তেন।” (বুখারী শরীফ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১০১)
২ নং প্রমানঃ
সাহাবী তালিক বিন আলী (রাঃ) তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়েছিলেনঃ
সাহাবী তালিক বিন আলী (রাঃ) তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়েছিলেন তার প্রমানও হাদীস শরীফে আছে। যার দ্বারা বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
হাদীসটি হলঃ হযরত কায়েস বিন তালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে (আমার পিতা) তালিক বিন আলী (রাঃ) রমযান মাসে একটি রাত্রে আমাদের বাড়িতে এলেন। এবং সন্ধে বেলায় আমাদের কাছে রোযার ইফতার করলেন। তিনি সেই রাত্রে আমাদেরকে নামায পড়ালেন এবং তার সাথে বেতের নামাযও পড়ালেন। তারপর তিনি মসজিদে চলে গেলেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে নিয়ে নামায পড়ালেন। যখন বেতের নামায বাকি রয়ে গেল তখন তিনি একজন ব্যাক্তিকে এগে (কাতারে) দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং তিনি বললেন, সাথীদেরকে বেতের নামায পড়িয়ে দাও কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে এক রাত্রে দুইবার বেতের পড়া জায়েয নয়। (আবু দাউদ শরীফ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২০৩)
হাদীস থেকে প্রমান হয় যে, তালিক বিন আলী (রাঃ) প্রথমে যে বেতেরসহ নামায পড়েছিলেন তা ছিল তারাবীহর নামায এবং মসজিদে যে নামায সাথীদের সঙ্গে নামায পড়েছিলেন তা ছিল তাহাজ্জুদের নামায। সুতরাং এই হাদীস দ্বারা প্রমান হয় যে তারাবীহর নামায আলাদা এবং তাহাজ্জুদের নামায আলাদা।
৩ নং প্রমানঃ
আহলে হাদিসদের শায়খুল কুল ফিল কুল মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলবী
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেনঃ
মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলবীর জীবনীতে ফাযলে হুসাইন বিহারী লিখেছেন,
“(মিয়াঁ সাহেব) রমযানের রাত্রে দুইবার দাঁড়িয়ে কুরআল মজীদের খতম করা শুনতেন। একবার এশার নামাযের পর তারাবীহর সময়। এই সময় ইমাম হতেন হাফিয আহমদ আলম। তিনি ফকীহ এবং মুহাদ্দিস ছিলেন এবং তিনি মিয়াঁ সাহেবের শাগিরদ রশীদ ছিলেন। তিনি এক তৃ্তীয়াংশ প্রতিদিন তারতিলের সাথে কুরআন শুনাতেন। দ্বিতীয় খতম শুনতেন তাহাজ্জুদের নামাযে তখন এর ইমাম হতেন হাফিয আব্দুস সালাম (তিনি মিয়াঁ সাহেবের পোতা ছিলেন)।” (আল হায়াত বা’দাল মামাত, পৃষ্ঠা-১৩৮)
স্কেন পেজঃ
এখানে মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলবী তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন। তাই বুঝা যায় যে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা নামায।
৪ নং প্রমানঃ
শায়খুল ইসলাম সানাউল্লাহ অমৃতসরীর ফতোয়াঃ
মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী আহলে হাদীসদের শায়খুল ইসলাম ছিলেন। তিনি আহলে কুরআন বা মুনকিরে হাদীস দলের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ চাকড়ালবীর মতবাদ খন্ডন করতে গিয়ে ‘আহলে হাদীস কা মাযহাব’ নামক বইয়ে কয়েক পৃষ্ঠা জুড়ে প্রতিবাদ করেছেন। আব্দুল্লাহ চাকড়ালবী তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাযকে এক মনে করতেন। মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী আব্দুল্লাহ চাকড়ালবীর তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাযকে যে এক মনে করতেন তা তিনি খন্ডন করেছেন। মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাযকে আলাদা আলাদা মনে করতেন। (আহলে হাদীস কা মাযহাব, পৃষ্ঠা-৯২-৭)
একবার এক ব্যাক্তি মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীকে প্রশ্ন করেছিল,
“যে ব্যাক্তি রমযান মাসে এশার সময় তারাবীহর নামায পড়ে সেই ব্যাক্তি কি শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে পারবে কি?
জবাবঃ- পড়তে পারে। তাহাজ্জুদের সময়টাই হল সকালের আগে, রাতের প্রথম ভাগে তাহাজ্জুদ হয় হয় না।” (ফাতাওয়া সানাইয়া, পৃষ্ঠা-৪৩১)
৫ নং প্রমানঃ
হযরত উমার ফারুক রাজিআল্লাহু আনহুর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা নামাযঃ
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত আহলে হাদীস মাওলানা আইনুল বারী সাহেব বুখারী শরীফের একটি হাদীস অনুবাদ করতে গিয়ে লিখেছেন, “তারপর (হযরত উমার) দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেন এবং সবাইকে উবাই ইবনু কাবের (রাঃ) পিছনে জামাআত করালেন। পরের রাতে তিনি আবার মসজিদে এলেন এবং সবাইকে একটি কারীর পিছনে জামাআতে নামায পড়তে দেখে বললেন, কি সুন্দর নতুন নিয়ম এটা। তবে হ্যাঁ (শেষরাতে তাহাজ্জুদের) যে নামায থেকে তোমরা শুয়ে থাকতে তাই এই (তারাবীহ) থেকে উত্তম যা তোমরা এখন পড়ছ। তখন লোকেরা প্রথম রাতে তারাবীহ পড়ত।” (বুখারী শরীফ হাদীস নং ২০১০, আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা, পৃষ্ঠা-১১৯-১২০)
এখানে আইনুল বারী সাহেব লিখেছেন তারাবীহর নামায থেকে তাহাজ্জুদ উত্তম। এর দ্বারা বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায আলাদা। কেননা দুটি নামায আলাদা বলেই একে অপরের থেকে উত্তম। উদাহারণস্বরুপ বলা যায় যায়েদ যদি রহীমের থেকে উত্তম হয় তার মানে যায়েদ ও রহীম আলাদা ব্যাক্তি। কেননা যায়েদ ও রহীম যদি একই ব্যাক্তির দুটি নাম হত তাহলে কোনদিন বলা সম্ভব নয় যায়েদ রহীমের থেকে উত্তম। অনুরুপভাবে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায একই নামায দুটি নাম হত তাহলে কোনদিন বলা সম্ভব নয় যে তাহাজ্জুদের নামায তারাবীহর থেকে উত্তম। সুতরাং বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা প্রমানিত্তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের দুটি আলাদা।
স্কেন পেজঃ
১) হযরত ইমাম আবুল ওয়ালী সুলাইমান আল বাজী আল কুরতুবী (রহঃ) [মৃত্যু-৪৭৪ হিজরী] হযরত উমার (রাঃ) এর এই বক্তব্য থেকে দলীল গ্রহন করেছেন যে শেষরাতের কিয়ামের থেকে প্রথম রাতের কিয়াম উত্তম। (আল মুনতাকা লিল বাজী, পৃষ্ঠা-২০৪)
স্কেন পেজঃ
২) হযরত ইমামা ইবনে বাত্তাল (রহঃ) [মৃত্যু-৪৪৯ হিজরী] মাঝরাতের নামাযের থেকে প্রথম রাতের নামায কেন উত্তম তা বর্নণা করতে গিয়ে বলেছেন, “মাঝরাতের নামায (তাহাজ্জুদ) আল্লাহ তাআলার অবতরণ, বান্দার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য উত্তম।” (শারাহ সহীহ বুখারী লিল ইবনে বাত্তাল, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৪৭)
স্কেন পেজঃ
৩) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) [মৃত্যু-৪৪৯ হিজরী] বলেছেন, “(হযরত উমার রাঃ এর বক্তব্য থেকে) স্পষ্ট যে প্রথম রাতের (তারাবীহ) থেকে। শেষরাতের (তাহাজ্জুদের নামায) উত্তম।” (ফাতহুল বারী, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৫৩)
স্কেন পেজঃ
৪) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) [মৃত্যু-৪৫৫ হিজরী] স্বীয় ‘উমদাতুল কারী’ গ্রন্থের খন্ড-১১, পৃষ্ঠা-১২৬ এ এই কথায় বলেছেন।
স্কেন পেজঃ
৫) ইমামুস শায়খ হযরত আব্দুল কাদীর জ্বিলানীও (রহঃ) [মৃত্যু-৫৬১ হিজরী] হযরত উমার (রাঃ) এর এই বক্তব্য থেকে তারাবীহর পরে তাহাজ্জুদ নামায আলাদা পড়ার দলীল কায়েম করেছেন। (গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃষ্ঠা-২৬৯)
স্কেন পেজঃ
৬) ইমাম ইবনুল হাজ্ব (রহঃ) [মৃত্যু-৭৩৭ হিজরী] যাঁকে উলামারা মুহাদ্দিস, সালেহ, ফকীহ, আরিফ, বিখ্যাত আলিম এবং ফাযিল বলে গন্য করেছেন। তিনি ‘যাইলুত তাকলীদ’ গ্রন্থের খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৫৮, ‘আদদিবাজুল মুহাযযাব’ গ্রন্থের খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩২১, ‘হিসনুল মুহাজিরা লিস সুয়ুতী’ গ্রন্থের খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৫৯, ‘আল আ’লাম লিস যিরকালী’ গ্রন্থের খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৩, এর মধ্যে বলেছেন, “হযরত উমার (রাঃ) এর এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে এরা সাহাবা নয় বরং অন্যান্যদের বলা হয়েছে, কেননা সাহাবারা দুই ফযিলতকে একত্রিত করতেন। অর্থাৎ তাঁরা রাতের প্রথম অংশে তারাবীহ এবং শেষ অংশে তাহাজ্জুদ পড়তেন।” (আল মাদখাল লি ইবনুল হাজ্ব, গ্রন্থের খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯১)
স্কেন পেজঃ
সুতরাং বুখারী শরীফের উক্ত হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে হযরত উমার (রাঃ) তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য জোর দিচ্ছেন। তাই হযরত উমার (রাঃ) এর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা নামায।
৬ নং প্রমানঃ
হযরত ইমাম বুখারী রহ. তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন
রমযান মাসের প্রথম রাত যখন হত তখন লোকেরা ইমাম বুখারী (রহঃ) এর কাছে এসে একত্রিত হত। ইমাম বুখারী (রহঃ) তারাবীহর নামায পড়তেন এবং প্রত্যেক আয়াতে ২০টা করে আয়াত পড়তেন। এইভাবে কুরআন খতম করতেন। তারপর সেহেরীর সময় (তাহাজ্জুদের সময়ে) প্রথম থেকে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তেন এবং তিন রাতে শেষ করতেন।
এরপর দিনে কুরআন খতম করতেন যা ইফতারের সময় শেষ হয়ে যেত। এবং ইমাম বুখারী (রহঃ) সেহেরীর সময় ১৩ রাকাআত (তাহাজ্জুদের নামায) আদায় করতেন এবং এক রাকাআত বেতের। (তাইসীরুল বারী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১১, হাদীউস সারী লিল ইবনে হাজার, পৃষ্ঠা-৫০৫)
এই কথা গুরাবা আহলে হাদীসের নেতা আব্দুস সাত্তার দেহলবীও ‘নসরুল বারী’ গ্রন্থের ১২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন।
স্কেন পেজঃ তাইসীরুল বারী
অভিযোগঃ
আহলে হাদীসদের বিখ্যাত আলেম জুবাইর আলী যাই এই বর্নণাটির উপর অভিযোগ করে বলেছেন যে, “ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ঘটনা সহীহ সনদে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায আলাদা আলাদা পড়ার কোন প্রমান নেই। ‘হাদীউস সারী’ কিতাবের হাওয়ালা সনদহীন হওয়ার জন্য মরদুদ।” (তাআদাদ কিয়ামে রামযান কা তাহকীকী জায়যা, পৃষ্ঠা-১০৬)
জবাবঃ
শুআবুল ইমান লিল বাইহাকীতে ইমাম বাইহাকী (রহঃ) ‘হাদীউস সারী’ কিতার বর্ননার সনদ উল্লেখ করেছেন এবং শুআবুল ইমানের হাশিয়ায় লেখা আছে যে, “এর সনদে কোন দোষ নেই।” (শুআবুল ইমান লিল বাইহাকী, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫২৪-৫২৫, এর সনদ সহীহ, তারিখে বাগদাদ)
স্কেন পেজঃ
সনদঃ– আখবারানা আবু আব্দুল্লাহ আল হাফিয – আখবারানা মুহাম্মাদ বিন খালিদ আল মুতাওয়া – হাদ্দাসানা মিসবাহ বিন সায়ীদ কালা মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বুখারী
অর্থাৎ- আবু আব্দুল্লাহ আল হাফিয থেকে মুহাম্মাদ বিন খালিদ আল মুতাওয়া তিনি মিসবাহ বিন সায়ীদ থেকে বর্ননা করেছেন যে মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বুখারী বলেছেন, (এরপর ঐ হাদীস)
তাই জুবাইর আলী যাইএর এই বর্ননার উপর অভিযোগ বাতিল এবং মরদুদ। সুতরাং ইমাম বুখারী (রহঃ) এর আমল যে তিনি তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন অতএব তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
৭ নং প্রমানঃ
মুহাদ্দিস আসফাহানীর আমলঃ তাঁর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা নামাজ
ইমাম হাফিযুল মুহাদ্দিস আবু মুহাম্মাদ আসফাহানী (রহঃ)[মৃত্যু-৪৪৬ হিজরী] আল্লামা খতীব বাগদাদী (রহঃ) এর উস্তাদ ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বর্নিত আছে,
“তিনি পুরো রমযান মাসে লোকেদেরকে তারাবীহর নামায পড়াতেন এবং প্রত্যেক দিন তারাবীহর নামায সমাপ্ত করতেন এবং তারপর মসজিদের মধ্যেই তাহাজ্জুদের নামায পড়ে নিতেন। এমনকি ফজরের সময় হয়ে যেত।” (তারিখে বাগদাদ, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা-১৪৩)
স্কেন পেজঃ
৮ নং প্রমানঃ
ইমাম ইবনে রুশদ (রহঃ) [মৃত্যু-৪৪৬ হিজরী] লিখেছেন, “নিশ্চয় সেটা তারাবীহ নামায ছিল যা হযরত উমার (রাঃ) একত্রিত করেছিলেন এবং এর জন্য গুরুত্ব দেওয়া হত।
কিন্তু উলামাদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ আছে আছে যে প্রথম রাতের তারাবীহ উত্তম না শেষ রাতের তাহাজ্জুদ উত্তম। যেটা শেষ রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামায ছিল। জুমহুর উলামার নিকট শেষ রাতের (তাহাজ্জুদের নামায) উত্তম।” (আল বিদায়াতুল মুজতাহীদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২১০)
স্কেন পেজঃ
৯ নং প্রমানঃ
ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল ওহাব আস শা’লাবী আল বাগদাদী (রহঃ) [মৃত্যু-৪২২ হিজরী] লিখেছেন, “যে ব্যাক্তি তারাবীহ অথবা তাহাজ্জুদ পড়ে তার জন্য উত্তম হল যে সে তাকবীরে তাহরীমা ও সুরা ফাতেহার মাঝখানে সানা, তাউজু, তাসমিয়া, এর মাধ্যমে শুরু করে।” (আত তালকীন লিস শা’লাবী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪)
স্কেন পেজঃ
এই বক্তব্য দ্বারা এটা প্রমানিত হয় যে ইমাম শা’লাবী (রহঃ) এর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
১০ নং প্রমানঃ
ইমাম ইসহাক সিরাজী (রহঃ) [মৃত্যু-৪৪৭ হিজরী] বলেছেন যে, “রমযান মাসে জামাআত সহকারে ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়বে এবং তার পর বেতের পড়বে জামাআত সহকারে। যদি তার তাহাজ্জুদ পড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে বেতের নামায তাহাজ্জুদের পরে পড়বে।” (আততামবীহ লিস সিরাজী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৪)
স্কেন পেজঃ
১১ নং প্রমানঃ
৬ নং প্রমানে যা ইমাম ইসহাক সিরাজী (রহঃ) বলেছেন তা ইমাম নববীও (রহঃ) [মৃত্যু-৪৪৭ হিজরী] এই কথায় তাঁর ‘আল মাজমু লিন নববী’ গ্রন্থের খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৫ এর মধ্যে বলেছেন।
স্কেন পেজঃ
১২ নং প্রমানঃ
ইমাম শারফুদ্দিন মুসা বিন আহমেদ আল মাকদেসী (রহঃ) [মৃত্যু-৯৬৮ হিজরী] যাঁকে উলামারা শায়খুল ইসলাম, ইমাম, আল্লামা, মুহাদ্দিস, আলিম, মুফতী এবং গ্রহনযোগ্য ফকীহ প্রভৃতি উপাধীতে ভুষিত করেছেন। তিনি তাঁর ‘শুযরাতুয যেহব’ গ্রন্থের খন্ড-১০, পৃষ্ঠা-৪৭২, ‘কাওয়াকিব লিন নাজমুদ্দিন’ গ্রন্থের খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৯৩, ‘আল আ’লাম লিজ যিরকালী’ গ্রন্থের খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-৩২০ এর মধ্যে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে আলাদা আলাদা নামায বলেছেন।
স্কেন পেজঃ
১৩ নং প্রমানঃ
হাম্বালী মাযহাবের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বালী (রহঃ) [মৃত্যু-৬২০ হিজরী] বলেছেন, “তারাবীহর নামায ২০ রাকাআত, রমযান মাসে তারাবীহ এবং বেতের দুটি নামাযই জামাআতের সাথে পড়তে হবে। কিন্তু তারাবীহর পরে যাঁরা তাহাজ্জুদ পড়তে চান তাঁরা বেতের নামায তাহাজ্জুদের পরে পড়বেন।” (আল মুগনী, পৃষ্ঠা-৫৮)
স্কেন পেজঃ
১৪ নং প্রমানঃ
ইমাম ইবনুল হাজ্ব (রহঃ) [মৃত্যু-৭৩৭ হিজরী] বলেছেন, “লোকেদের জন্য এটা উত্তম যে লোকেদের সাথে একত্রে তারাবীহ এবং বেতের পড়বে তারপর ঘুমিয়ে যাবে। এরপর উঠে তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে।” (আল মাদখাল, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯২)
স্কেন পেজঃ
১৫ নং প্রমানঃ
ইমাম ইবনুল মুলাক্কান (রহঃ) [মৃত্যু-৮০৪ হিজরী] তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদের নামাযকে আলাদা আলাদা বলেছেন। (আত তাযকিরা লি ইবনে মালাক্কান, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২৬)
স্কেন পেজঃ
১৬ নং প্রমানঃ
হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জ্বিলানী (রহঃ) [মৃত্যু-৫৬১ হিজরী] এর তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ পড়ার ব্যাপারে দুটি বর্নণা আছে।
প্রথমতঃ তারাবীহর পর কিছুক্ষন ঘুমিয়ে তারপর তাহাজ্জুদ পড়া উচিৎ।
দ্বিতীয়তঃ তারাবীহর পর না ঘুমিয়ে তাহাজ্জুদ পড়া জায়েজ। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
(সূত্রঃ গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃষ্ঠা-২৬৯)
স্কেন পেজঃ
১৭ নং প্রমানঃ
ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ) [মৃত্যু-৫৬১ হিজরী] বলেছেন, “কিছু লোক ইমামের সাথে মসজিদে তারাবীহর নামায পড়ত, এবং কিছু লোক মসজিদের একটি কোনে তাহাজ্জুদের নামায পড়ত।” (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৩৪)
এর সনদ সহীহ।
স্কেন পেজঃ
এই বর্ননার রাবী ইমাম আ’মাশ হলেন মুদাল্লিস রাবী। কিন্তু তাঁর তাদলীস গ্রহনযোগ্য। কেননা, তিনি তাবকাতে সানীর (প্রথম তাবকাতের) মুদাল্লিস।(আল মুদাল্লিসীন লিল ইরাকী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১০৯)
অন্য জায়গায় এক সনদে মুগীরা বিন মিকসাম (রহঃ) ইমাম আ’মাশ এর হাদীস নিয়েছেন।
حَدَّثَنَاأَبُوبَكْرٍقَالَ:ثناأَبُوالْأَحْوَصِ،عَنْمُغِيرَةَ،عَنْإِبْرَاهِيمَ،قَالَ:«كَانَالْمُتَهَجِّدُونَيُصَلُّونَفِيجَانِبِالْمَسْجِدِ،وَالْإِمَامُيُصَلِّيبِالنَّاسِفِيشَهْرِرَمَضَانَ»
সনদঃ ইমাম আবু বকর বিন আবী শায়বা-আবুল আহওয়াস-মুগীরা-ইবরাহীম বিন নাখয়ী
(দেখুন মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৩৩-২৩৪, হাদীস নং-২০৬৩)
স্কেন পেজঃ
সুতরাং এই হাদীস সহীহ। এর দ্বারা বোঝা যায় যে হযরত ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ)[মৃত্যু-৯৬ হিজরী] এর যুগেও তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়া হত।
যাইহোক আল্লাহ আমাদের হক বুঝার এবং তার উপর আমল করার তওফীক দান করুন আমীন। সুম্মা আমীন।
১৮ নং প্রমানঃ
তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদের প্রকৃ্তি আলাদা। তাহাজ্জুদ শরীয়াতের প্রথম দিকে চালু হয় এবং সেটা কুরআন শরীফ দ্বারা প্রমানিত। অপরদিকে তারাবীহ শরীয়াতের শেষ দিকে চালু হয় এবং তারাবীহ সম্পর্কে কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে কোথাও বলা নেই। তারাবীহ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
১৯ নং প্রমানঃ
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায দুটি দুই জায়গায় অবতীর্ন হয়। তারাবীহর নামায অবতীর্ন হয় মদীনা মুনাওয়ারায় এবং তাহাজ্জুদের নামায অবতীর্ন হয় মক্কা মুকাররামায়। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২০ নং প্রমানঃ
তাহাজ্জুদের নামায হিজরতের আগে শুরু হয় আর তারাবীহর নামায হিজরতের পরে শুরু হয় তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২১ নং প্রমানঃ
তাহাজ্জুদের নামায আগে ফরজ ছিল পরে তার ফরজিয়াত মনসুখ হয়ে যায় এবং নফলে পরিবর্তিত হয়। যেমন হাদীস শরীফে আছে, হযরত সায়ীদ বিন হিশাম (রাঃ) বর্ননা করেছেন,
সায়ীদঃ আমি বললাম, হে উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রাঃ) আমাকে আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।
তখন উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রাঃ) বললেন, আপনি কি কুরআন পড়েন না? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্রই হল কুরআন।
সায়ীদঃ আমি আরয করলাম, জি হ্যাঁ, তবে আপনি আমাকে তাহাজ্জুদ সম্পর্কে কিছু বলুন।
তখন উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রাঃ) বললেন, আপনি কি “ইয়া আইয়ুহাল মুজ্জাম্মিল” পড়েন না?
সায়ীদঃ আমি বললাম, হ্যাঁ আমি সুরা “ইয়া আইয়ুহাল মুজ্জাম্মিল” পড়ি।
তখন উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রাঃ) বললেন, এই সুরার প্রথম অংশ নাযিল হয়েছে (যেখানে বলা হয়েছে যে তাহাজ্জুদের নামায ফরজ) তখন সাহাবার এমন গুরুত্ব দিয়ে নামায পড়তেন যে তাঁদের পায়ে ব্যাথা হয়ে যেত। এবং এই সুরার শেষ অংশ বারো মাস আকাশে স্থিত থাকে। এরপর বারো মাস পর এই সুরার শেষ অংশ নাযিল করা হয় তখন এই নামাযের ফরযিয়াত নফলে পরিবর্তিত হয়।
এই হাদীস থেকে এটা প্রমান হয় যে তাহাজ্জুদের নামাযের ব্যাপারে কুরআন শরীফ থেকে প্রমান রয়েছে। এবং এও প্রমান হয় যে তাহাজ্জুদের নামায মক্কা মুকাররামায় অবতীর্ণ হয়। কেননা এই সুরা মক্কায় নাযিল (অবতীর্ণ) হয় হিজরতে আগে। আর সেখান থেকে তাহাজ্জুদের সূচনা হয়। এই হাদীস থেকে এটাও প্রমানিত হয় যে তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরয ছিল এবং এক বছর পর্যন্ত ফরয ছিল পরে সুরা মুজ্জাম্মিলের শেষ অংশ নাযিল হওয়ার পর ফরযিয়াত সমাপ্ত হয়ে যায় এবং তাহাজ্জুদ নফলে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু তারাবীহ কোনদিন ফরয ছিল না। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২২ নং প্রমানঃ
তারাবীহর নামায হল সুন্নতে মুআক্কাদা কিফায়া অপরদিকে তাহাজ্জুদের নামায হল সুন্নতে গায়ের মুআক্কিদা। তারাবীহর নামায জামাআত সহকারে পড়তে হবে কিন্ত তাহাজ্জুদের নামাযে জামাআতের কোন প্রয়োজন নেই। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২৩ নং প্রমানঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নবী (সাঃ) এর তাহাজ্জুদ এবং বেতেরের মাঝখানে ঘুমোন প্রমান আছে। কিন্তু তারাবীহ ও বেতেরের মাঝখানে ঘুমোনোর কোন প্রমান নেই। কেননা হাদীসে আছে, যখন রমযান মাস শুরু হয়ে যেত তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিছানায় গমন করতেন না। তাহলে তাহাজ্জুদ ও বেতের নামাযের মাঝখানে ঘুমোনর প্রমান হাদীস শরীফের আছে কিন্তু তারাবীহ ও বেতের নামাযের মাঝখানে ঘুমোনর প্রমান হাদীস শরীফে নেই। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২৪ নং প্রমানঃ
তারাবীহর হাদীসকে মুহাদ্দিসরা তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ননা করেন নি। যদি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই নামায হত তাহলে তারাবীহর হাদীস এবং তাহাজ্জুদের হাদীস একই অধ্যায়ে বর্ননা করা হত। তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২৫ নং প্রমানঃ
তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য বড় জামাআতের গুরুত্ব দেওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন কিন্তু তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য বড় জামাআতের গুরুত্ব রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দেওয়ার কোন প্রমান হাদীসে নেই। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে?
২৬ নং প্রমানঃ
তারাবীহর নামাযে কমপক্ষে একবার পুরো কুরআন খতম করা খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে প্রমানিত। কিন্তু তাহাজ্জুদের নামাযে কিরআতের কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২৭ নং প্রমানঃ
তাহাজ্জুদের নামাযের রাকাআতের সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই এবং সময়েরও কোন নির্দিষ্ট নেই। নিজের সামর্থ অনুযায়ী ২ রাকাআত থেকে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যেতে পারে। কিন্তু তারাবীহর নামাযে রাকাআত সংখ্যা নির্দিষ্ট আছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের নিকট তারাবীহর নামায ২০ রাকাআত আর আহলে হাদীসদের নিকট ৮ রাকাআত। তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২৮ নং প্রমানঃ
তারাবীহর পরে বেতের নামায জামাআতের সাথে পড়া খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। যদিও তাহাজ্জুদের পরে বেতের নামায জামাআতে খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে পড়ার কোন প্রমান নেই। তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
২৯ নং প্রমানঃ
পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামায এই জন্যই যে প্রত্যেক নামাযের সময় আলাদা। ফুকাহা এবং মুহাদ্দিসরা নামাযের সময় আলাদা আলাদা সময়ের লিখেছেন।
তারাবীহ এবং এশরাক দুটি আলাদা আলাদা নামায সেজন্য দুটি নামাযের সময় আলাদা এবং দুটি নামাযের সময় অন্যটির থেকে পৃথক। তাহাজ্জুদের নামাযের সময় রাতের এক তৃতীয়াংশের পর ফজরের নামাযের আগে পর্যন্ত। আর এশরাকের সময় সুর্য ডুবার পর। তাহলে এটা বুঝা গেল যে নামাযের সময় আলাদা আলাদা হওয়া এটা দলীল যে দুটি আলাদা আলাদা নামায। এবার দেখুন তারাবীহর নামাযের সময় এক না আলাদা? দেখুন তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদের নামাযের সময় আলাদা সুতরাং দুটি নামাযও আলাদা।
আহলে হাদীসদের নিকটও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের সময় আলাদা। তাদের লেখা ফাতাওয়া গ্রন্থ ‘ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস’ এর মধ্যে আছে, “তারাবীহ নামাযের সময় এশার নামাযের পর রাতের প্রথম অংশ এবং তাহাজ্জুদের নামাযের সময় হল, রাতের শেষ অংশ।” (খন্ড-৪ পৃষ্ঠা- ৩৩১)
উক্ত গ্রন্থে আর ও লেখা আছে, “যে ব্যাক্তি রমযান মাসে এশার পর তারাবীহর নামায পড়ে নেবে সে রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ পড়তে পারে। তাহাজ্জুদের সময় টাই হল সকালের আগে। রাতের প্রথম অংশে তাহাজ্জুদ হয় না।” (ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস, খন্ড-৪ পৃষ্ঠা-২৫১)
তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
৩০ নং প্রমানঃ
পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের নাম আলাদা তাই এর দ্বারা বোঝা যায় যে এই পাঁচ ওয়াক্তের নামায আলাদা। পক্ষান্তরে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামা আলাদা তাই এই দুটি নামায ও আলাদা।
৩১ নং প্রমানঃ
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহঃ) লিখেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের মধ্যে সময় এবং প্রকৃতির দিক থেকে পার্থক্য ছিল।……তারাবীহ মসজিদে জামাআতের সাথে হত অপরদিকে তাহাজ্জুদ এইরকম হত না। ……। তারাবীহ রাতের প্রথম অংশে শুরু করা হয় অপরদিকে তাহাজ্জুদ রাতের শেষ অংশে পড়া হয়। (আরফুস শাযী, পৃষ্ঠা-১৬৬)
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহঃ) এরও বলেছেন, “অবশ্যই কিছু তাবেয়ীন থেকে রমযান মাসে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ উভয় নামাযই পড়ার প্রমান রয়েছে।” (আরফুস শাযী, পৃষ্ঠা-১৬৬)
সুতরাং বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
৩২ নং প্রমানঃ
তাহাজ্জুদের নামাযের দ্বিতীয় নাম হল কিয়ামুল লাইল এবং তারাবীহর নামাযের দ্বিতীয় নাম হল কিয়ামে রমযান। আহলে হাদীস দের মহামান্য নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভুপালী লিখেছেন যে, “কিয়ামে লাইল ও কিয়ামে রমযান দুটি আলাদা আলাদা নামায।” (নজলুল আবরার বিল ইলমুল মাশওয়ার মিনাদ দাওয়াতুল আযকার, পৃষ্ঠা-৩০২)
সুতরাং আহলে হাদীসদের মহামান্য নবাব সিদ্দিক হাসান খানের নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
৩৩ নং প্রমানঃ
ইমাম মুহাম্মাদ বিন নসর মারওয়াযী তাঁর ‘কিয়ামে রমযান’ কিতাবে ১৭৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “মসজিদে তারাবীহ পড়ে ঘরে ফিরে আসবে, এবং দ্বিতীয়বার মসজিদে গিয়ে তাহাজ্জুদের নামায পড়বে।”
সুতরাং ইমাম মারওয়াযীর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামায দুটি আলাদা। তাঁর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি এক নামায নয়।
৩৪ নং প্রমানঃ
‘আর রওজাতুল মারীজ’ কিতাবে লেখা আছে, “তারাবীহর নামায ২০ রাকাআত সুন্নতে মুআক্কাদা, এই নামায পড়ার পর জামাআতের সাথে বেতের পড়বে। যে ব্যাক্তি তারাবীহর পর তাহাজ্জুদের নামায পড়ে সে যেন বেতের নামায তাহাজ্জুদের পরে পড়ে।” (আর রওজাতুল মারীজ, পৃষ্ঠা-২৫)
সুতরাং এর দ্বারা প্রমানিত হয় যে তারাবীহর এবং তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায। কিন্তু গায়ের মুকাল্লিদ্দেরকে বোঝাবে কে?
৩৫ নং প্রমানঃ
আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে শিরিন (রহঃ) লিখেছেন, “আবু হালিমা কারী লোকেদেরকে রমযান মাসে ৪১ রাকাআত (২০ রাকাআত তারাবীহ, ১৬ রাকাআত নফল, ২ রাকাআত তাহাজ্জুদ, এবং ৩ রাকাআত বেতের) পড়াতেন।” (কিয়ামুল লাইল লিল মারওয়াযী, পৃষ্ঠা-১৫৮)
আল্লামা ইবনে শিরিনের এই বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায তাঁর নিকট আলাদা। একথা তিনি আবু হালিমা কারীর হাদীস দিয়ে প্রমান করেছেন।
৩৬ নং প্রমানঃ
হারামাইন শরীফে এশার নামাযের পর ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়া হয় এবং এই আমল সারা রমযান মাস চলে, এবং শেষ রাতে তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়া হয়। যদি রমযান মাসে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই নামায হত তাহলে হারামাইন শরীফের ইমামগন আলাদা আলাদা পড়েন কেন? এর দ্বারা প্রমান হয় হারামাইন শরীফের ইমামগনের নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
গায়ের মুকাল্লিদরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আমীন বলার সময়, ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পড়ার সময়, রফয়ে ইয়াদাইন করার সময় দলীল দিয়ে থাকেন যে হারামাইন শরীফে এইসব আমল হয় কিন্তু তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ আলাদা পড়া এবং ২০ রাকাআত তারাবীহর বেলায় তাঁরা হারামাইন শরীফ ভুলে যান। এইসব ক্ষেত্রে তাঁরা হারামাইন শরীফকে পাছা দেখিয়ে পালিয়ে যান।
৩৭ নং প্রমানঃ
হাদীস গ্রন্থগুলি ভালোভাবে পড়লে বোঝা যায় যে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায। কেননা হাদীসের ইমামগন তারাবীহ ও তাহাজ্জুদে জন্য আলাদা আলাদা বাব (অধ্যায়) নিয়ে এসেছেন। তাঁরা কেউ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাযকে এক বলে মনে করতেন না।
তাহলে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কিভবে এক নামায হতে পারে? তাই বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
৩৮ নং প্রমানঃ
দশ লাখ হাদীসের হাফিয হাম্বালী মাযহাবের ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) তারাবীহ ও ইতাহাজ্জুদের নামাযকে আলাদা আলাদা বলে বিশ্বাস করতেন। (মাকনা, পৃষ্ঠা-১৮৪)
সুতরাং ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (রহঃ) এর নিকট তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা নামায।
৩৯ নং প্রমানঃ
তারাবীহর নামাযে ডাকাডাকি করা জায়েয কিন্ত তাহাজুদের নামাযে ডাকাডাকি করা জায়েয নয়। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায দুটি আলাদা।
৪০ নং প্রমানঃ
আহলে হাদীসদের বিখ্যাত ইমাম শাওকানী তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাযকে এক বলে মান্যকারীদেরকে মুর্খ ও জাহিল বলে গন্য করেছেন।
সুতরাং এই ৪০ টি প্রামান দ্বারা বুঝা গেল যে নবী (সাঃ) এর ব্যাক্তিগত আমল, সাহাবায়ের কেরামদের আমল ও বক্তব্য, জুমহুর মুহাদ্দিস ও ফুকাহা এবং উলামাদের এটাই মত যে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ দুটি আলাদা আলাদা নামায।
গায়ের মুকাল্লিদরা যে বলে থাকে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দুটু একই নামায এটা তাদের ভ্রান্ত ধারনা যার পিছনে কোন শরীহ দলীল নেই। যা আছে শুধু কিয়াস যা ভ্রান্ত ও মরদুদ।
যদি আহলে হাদীসদের নিকট কোন স্পষ্ট দলীল থাকে যে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একটাই নামায তাহলে তারা প্রমান করুক। নাহয় নিজেদের জিদ এবং হটধর্মী ত্যাগ করে তাওবা করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাক। তা নাহলে আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন এবং সঠিকভাবে দ্বীনের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
এই লেখাগুলি হার্ডকপি আকারে পড়ুন,
“আল ফারকুস সরীহ বাইনা তাহাজ্জুদ ওয়া তারাবীহ” (তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের মধ্যে পার্থক্য)
মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম