লিখেছেনঃ আশরাফ উল ময়েজ
প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস বাজারঃ শিল্পীর তুলিতে প্রাচীন রােমের ক্রীতদাস বাজার প্রাচীন রোমান আইনে ক্রীতদাসরা ছিল পণ্য। অন্য যেকোনাে বস্তুর মতাে ক্রীতদাসও সহজেই ক্রয়-বিক্রয় করা যেত। রোমান ক্রীতদাসদের জন্য তার মালিকের ইচ্ছাই ছিল সব কিছু, যার বিরুদ্ধে তাদের কোনাে কিছু করারই অধিকার ছিল না। প্রাচীন রােমের প্রথম ক্রীতদাস বাজারটিকে বলা হতাে গ্রেকোস্টাডিয়াম (Graecostadium), যা ব্রাসিলা জুলিয়ার (Basilica Julia : ব্রাসিলা জুলিয়া ছিল প্রাচীন রােমের সুসজ্জিত সরকারি ভবন, যেখানে সভা কিংবা ব্যবসায়ীরা মিলিত হতেন) পেছনে অবস্থিত ছিল।
এটি ছিল একটি বিশাল বাজার এবং রোমান দের নিকট এটি ছিল খুবই জনপ্রিয় একটি বাজার। এখানকার ক্রীতদাস ব্যবসাও ছিল খুবই লাভবান একটি ব্যবসা। গ্রেকোস্টাডিয়ামের অর্থ “গ্রিক ক্রীতদাসদের বাজার”। রােমে, প্রথমদিকের ক্রীতদাসদের বড় একটি অংশই আসে গ্রিস থেকে। প্রচুরসংখ্যক গ্রিককে ক্রীতদাস হিসেবে রােমে আনা হয়। কথিত আছে যে খ্রিস্টপূর্ব ১৬৮ অব্দে গ্রিসের পিডনার যুদ্ধে (Battle of Pydna) বিজয়ী এমিলিয়াস পলাস (Aemilius Paulus) যুদ্ধবন্দি ১৫০,০০ গ্রিককে রােমে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রয় করেন। গ্রেকোস্টাডিয়াম ক্রীতদাস বাজারটি ছিল খুব ব্যস্ত একটি ক্রীতদাস বাজার, যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সকল ক্রীতদাস বিক্রয় হয়ে যেত। তবে প্রাচীন রােমে সবচেয়ে বেশি দামি ক্রীতদাস ক্রয়-বিক্রয় হতাে সেপটাতে (Saepta) কারণ এটি ছিল বিত্তশালী ও ধনীদের বাজার এবং তৎকালীন রােমের সব বিখ্যাত দোকানগুলাে এখানেই ছিল।
রােমান ক্রীতদাস বাজারে ক্রীতদাস ক্রয়-বিক্রয়
ক্রীতদাস বাজারে যেভাবে আর দশটি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হতাে ঠিক একই ভাবে ক্রীতদাসও বেচাকেনা হতাে। ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রীতদাসের বিশেষ যােগ্যতা ও গুণাবলি টানিয়ে রাখত এবং ক্রেতারা সেগুলাে দেখেই প্রাথমিকভাবে ক্রীতদাস ক্রয়ের বিষয়টি চিন্তা করতেন। অনেক সময় বিশেষ করে নারী ক্রীতদাসদের সম্পূর্ণ নগ্ন করে ক্রেতার নিকট উপস্থাপন করা হতাে যাতে করে ক্রেতা বুঝতে পারেন তিনি কেমন ক্রীতদাস ক্রয় করছেন। ক্রেতা যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করতেন তাহলে তিনি বিক্রেতাকে পােশাক খুলে প্রদর্শনের জন্যও বলতে পারতেন এবং তিনি গায়ে হাত দিয়েও পরখ করতে পারতেন।
অন্য কোনাে দেশ হতে নতুন ক্রীতদাস বাজারে আনা হলে তার এক পা চক দিয়ে সাদা করে রাখা হতাে। রোমান আইনে ক্রীতদাস বিক্রয়ের সময় তার পূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে তার আদি নিবাস জানানাে বাধ্যতামূলক ছিল। তাই রােমান ক্রীতদাস বাজারে ক্রীতদাসদের গলায় প্লাকার্ড ঝুলিয়ে রাখা হতাে যেখানে তার আদি নিবাস, তার জাতীয়তা, তার সক্ষমতা, ভালাে গুণাবলি এবং জানা থাকলে তার খারাপ গুণাবলিও লিখে রাখা হতাে। ক্রীতদাস ব্যবসায়ী যদি তার কোনাে বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি না জানতেন তবে সে সকল ক্রীতদাসদেরকে পিলেই (Pillei) বা এক ধরনের টুপি পরিয়ে রাখা হতাে।
ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা
রােমে ক্রীতদাস ব্যবসায়ীদের বলা হতাে ম্যানগেনেস (Manges) বা ভেনালিটি (Venalitii)। তাঁদের অনেকেই যথেষ্ট ধনী হলেও রোমান সমাজের সাধারণ নাগরিকদের দৃষ্টিতে তারা নীচু কারণ এই ব্যবসায়ীরা কেবল ধনীদের কীভাবে আরাে ধনী বানানাে যায় তার জন্যই কাজ করতেন। প্রচুর মুনাফা হওয়ার কারণে ক্রীতদাস ব্যবসায় রােমের অনেক ধনী ও অভিজাত ব্যক্তিরাও বিনিয়ােগ করতেন। তবে সে সকল ধনীরা এই ব্যবসায় বিনিয়ােগের বিষয়টি সরাসরি প্রকাশ করতেন না। তাই সাধারণ নাগরিকরা ব্যবসায়ী বলতে যিনি ব্যবসা পরিচালনা করতেন তাকেই চিনতেন। আর তাদের প্রতি সাধারণ নাগরিকদের তেমন আস্থাও ছিল না তা ছাড়া ক্রীতদাস ব্যাবসা অনেক সময়ই দালাল নিও ছিল।
যেভাবে ক্রীতদাসদের আনা হতাে তাতে তারা অসুস্থ হয়ে যেত এবং তাদের বয়সের কোনাে সীমা ছিল না নেহায়েত কোলের শিশুকেও ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় করা হতাে। তা ছাড়া ক্রীতদাসদের বিয়ের সময় তাদের গায়ে থাকত নামকাওয়াস্তে পােশাক। রােমান কর্তৃপক্ষ ক্রীতদাস বাজারের ওপর সব সময়ই দৃষ্টি রাখতেন এবং ক্রীতদাসের মূল্যের উপরও নজরদারি করতেন। যদি কোনাে ব্যবসায়ী কোনাে কিছু গােপন করে বিক্রয় করতেন তবে তাকে সেই ক্রীতদাস ফেরত নিতে হতাে। অনেক সময় কোনাে ক্রীতদাস বিক্রয় না হলে তাকে অনেক কম মূল্যে বিক্রয় করতে হতাে।
যেহেতু ক্রীতদাস ব্যবসায়ীদেরকে রােমান কর্তৃপক্ষ, ক্রেতা ও সাধারন নাগরিক সকলেই সন্দেহের চোখে দেখতেন তাই ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা যে সকল ক্রীতদাস বিক্রয় করছেন তার গ্যারান্টি দিতে হতাে। ক্রেতার আস্থা অর্জনের জন্য ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা ক্রীতদাসদের নগ্ন করে বিক্রয়ের জন্য আনতেন ক্রীতদাসের কোনাে শারীরিক ত্রুটি নেই সেটি প্রমাণের জন্য।
ক্রীতদাস ক্রয়
একজন ক্রীতদাসকে ক্রয় করার সাথে সাথেই সে আজীবনের জন্য ক্রীতদাস হয়ে গেল। প্রতি পাঁচ বৎসর পর পর সকল রােমান নাগরিককে রােমে এসে আদমশুমারিতে নিজের ও পরিবারের সকল তথ্য নথিবদ্ধ করা ছিল বাধ্যতামূলক। এখানে প্রতিটি পুরুষকেই তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আর্থিক সংগতি ও ক্রীতদাসের সংখ্যা উল্লেখ করতে হতাে। যদি কোনাে মালিক কোনাে ক্রীতদাসকে মুক্তি দিতে চাইতেন তবে তার নাম শুমারির সময় উল্লেখ করতে হতাে। আর একবার ক্রীতদাসের নাম আদমশুমারিতে নথিবদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই সে ক্রীতদাস হয়ে যেতেন একজন রোমান নাগরিক এবং এবং তখন একজন রোমান নাগরিকের মতােই সকল সুবিধা পেতেন তবে সে ক্রীতদাস নিজে কোনাে অফিস প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন না। তখন আদমশুমারির তথ্যই একজন রোমান নাগরিক হওয়ার একমাত্র প্রমাণ ছিল।
ক্রীতদাস নিলাম
প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস বাজারে নিলামে বিক্রয়ের জন্য যে সকল ক্রীতদাসকে তােলা হতাে তারা কী পরিমাণ অপমান ও যন্ত্রণার ভােগ করত তা বর্তমান সমাজে চিন্তাই করা যায় না। যেহেতু ক্রীতদাস ছিল পণ্য তাই পণ্যের মতােই তাদেরকে বিক্রয় করা হতাে। রােমানরা এমনিতেই ছিল খুব কঠোর ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির তা ছাড়া ক্রীতদাস ব্যবসা ছিল একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই এক সময় রােমে ক্রীতদাস ব্যবসা এমনি এক অবস্থায় দাঁড়ায় যে রােমের অর্থনীতির বড় অংশই নির্ভর করত ক্রীতদাস ব্যবসার ওপর।
রােমানরা ক্রীতদাস নিলামে অংশগ্রহণ করতেন খুব উৎসাহের সাথে এবং একটি পণ্য ক্রয়ের জন্য যত ধরনের যাচাই-বাছাই করতে হতাে তার মতাে করেই ক্রীতদাসকে যাচাই-বাছাই করা হতাে। আর যদি কোনাে ক্রীতদাসের কোনাে ত্রুটি তা শারীরিক কিংবা আচরনগত হউক না কেন সে জাতীয় ক্রীতদাস সাধারণত বিক্রয় হতাে না কিংবা খুব কম মূল্যে বিক্রয় করতে হতাে। ব্যবসায়ী যদি ক্রীতদাসের কোনাে গ্যারান্টি দিতে না পারত তবে বিয়ের পর পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে তা ফেরত নিতে বাধ্য থাকত।
সাধারণত যে ক্রীতদাসকে নিলামে তােলার পর যে ক্রীতদাস বিক্রয় হয়ে যেত তখন তার মাথায় একধরনের তাজ পরিয়ে দেওয়া হতাে। সাধারণত একটি উচু প্লাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে বিক্রেতা নিলাম পরিচালনা করত তাকে বলা মানসিপিয়া (Mancipia)।
ক্রীতদাস নিলামের প্রস্তুতি
ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ‘ক্রীতদাস’ নিলামে তােলার পূর্বে প্রস্তুতি গ্রহণ করত। নিলামে তোলার পূর্বে প্রতিটি ক্রীতদাসের একটি প্রারম্ভিক মূল্য নির্ধারণ করা হতাে। প্রায়ই বিভিন্ন দেশ হতে ক্রীতদাস আনা হতো তাই সেখানে ভাষা একটি বড় সমস্যা ছিল। বিক্রয়ের জন্য আমদানীকৃত সকল ক্রীতদাসের একটি পায়ের পাতা চক দিয়ে সাদা রং করে দেওয়া হতাে। আর রোমান আইনে ক্রীতদাসের আদি নিবাস উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক ছিল।
ক্রীতদাস নিলামে খুব কঠোরভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করা হতাে। ক্রীতদাসদের কাঠের কিংবা লােহার খাঁচায় রাখা হতাে। কোনাে ক্রেীতদাস উদ্ধৃঙ্খল হয়ে উঠলে কিংবা ক্রেতার নির্দেশ অনুযায়ী শারীরিক পরীক্ষায় সহযােগিতা না করলে তৎক্ষণাৎ তাকে চাবুক পেটা করা হতাে। অধিকাংশ সময়ই তাদেরকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে নিলামে তােলা হতে যাতে করে শারীরিক ত্রুটি নেই তা প্রমাণের জন্য। ক্রেতারা ক্রীতদাসের পুরাে শরীর পরীক্ষা করতেন এবং তাদের দাঁত পরীক্ষা করা হতাে। ক্রীতদাসের গলায় ঝােলানাে থাকত প্লাকার্ড, যাতে তার আদি নিবাসসহ সকল গুণাবলি ও যােগ্যতা উল্লেখ করা থাকত। কোন ক্রীতদাসের পর কোনােটিকে নিলামে তােলা হবে তা নির্ধারণ করতেন বিক্রেতা। আর বাজার কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করত নিলামের তারিখ ও সময়।
ক্রীতদাস নিলামে যা করা হতাে
ক্রীতদাস নিলামে যে সকল ক্রীতদাস বিক্রয় করা হবে তাদেরকে প্রদর্শন করা হতাে। আর দশটি পণ্য যেভাবে নিলাম হয় ক্রীতদাস বিক্রয়ের সময়ও ঠিক একইভাবে নিলাম হতাে। বিক্রেতা ক্রীতদাসের যােগ্যতা ও গুণাবলির কথা ক্রেতাদেরকে বলে তাদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতেন। ক্রীতদাস নিলামে যে কেউ ক্রীতদাসকে গায়ে হাত দিয়ে এমনকি নারী ক্রীতদাসদের স্পর্শকাতর স্থানেও হাত দিতে পারতেন এবং তা রোমান আইনে গ্রহণযােগ্য ছিল।
- ক্রীতদাসদের একটি প্লাটফর্মে এমনভাবে দাঁড় করানাে হতাে যাতে করে তাদের পুরাে শরীরই প্রদর্শিত হয় এবং তাদেরকে ক্রেতার মর্জিমাফিক বিভিন্নভাবে ঘুরে পােজ দিতে হতাে।
- অনেক ক্রীতদাস বিশেষ করে নারী ক্রীতদাসদেরকে কোনাে পােশাক কিংবা নামমাত্র পােশাকে প্রদর্শন করা হতাে যাতে করে ক্রেতা দেখতে পায় তিনি কী ক্রয় করছেন।
- প্রদর্শিত ক্রীতদাসরা যদি পােশাক পরিধান করে থাকত তবে ক্রেতার নির্দেশ অনুযায়ী তারা পােশাক খুলে সব কিছুই দেখাতে বাধ্য থাকতেন।
- যে সকল ক্রীতদাসদের অন্য কোন দেশ থেকে প্রথমবারের মতাে আনা হয়েছে তাদের একপা চক দিয়ে সাদা করে রাখা হতাে যাতে করে ক্রেতা পা দেখামাত্রই বুঝতে পারেন যে এই ক্রীতদাস ভিনদেশি।
- বিক্রয়ের জন্য আনা ক্রীতদাসদের গলায় একটি প্লাকার্ড ঝুলিয়ে রাখা হতাে যার মধ্যে ক্রীতদাসের সংক্ষিপ্ত তথ্য লেখা থাকত; এই প্লকার্ডকে তিতুলি (Tituli) বলা হতাে।
- বিক্রয়ের জন্য আনা ক্রীতদাসদের মধ্যে কোনাে কোনাে ক্রীতদাসের কোনাে বিস্তারিত তথ্যই ক্রীতদাস ব্যবসায়ী জানতেন না এবং ভিনদেশি হওয়ায় তার সম্পর্কে জানাও একটু কঠিন ছিল। এই সকল ক্রীতদাসদের মাথায় একটি বিশেষ টুপি পরানাে থাকত যাকে বলা হতাে পিল্লেই (Pillei)।
- ক্রেতা ইচ্ছা পােষণ করলে ক্রীতদাসের গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে পারতেন তা এমনকি তা নারী ক্রীতদাস হলেও; ক্রেতা ইচ্ছা পােষণ করলে নারী ক্রীতদাসের স্পর্শকাতর স্থানও হাত দিয়ে দেখতে পারতেন। নিলাম চলাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি মূল্য যিনি হেঁকেছিলেন মূল্য পরিশােধের সাথে সাথেই ক্রেতাকে ক্রীতদাস দিয়ে দেওয়া হতাে।
নিলামে ক্রীতদাসের মূল্য কত উঠবে তা নির্ক্স করত ক্রীতদাসের বয়স, দক্ষতা ও অন্যান্য গুণাগুণের ওপর। একজন দক্ষ ক্রীতদাস একজন আনাড়ি ক্রীতদাসের চেয়ে অন্তত ১২ গুন বেশি মূল্যে বিক্রয় হতাে। যারা নারী ক্রীতদাস ক্রয় করতে আসতেন তারা মূলত বিশেষ ইচ্ছা পূরণের জন্যই ক্রীতদাস ক্রয় করতে আসতেন। তাই নারী ক্রীতদাসদের এমনভাবে প্রদর্শন করা হতাে যাতে করে ক্রেতা আকৃষ্ট হন। সাধারণত নারী ক্রীতদাস পুরুষ ক্রীতদাসের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বিক্রয় হতাে।
ক্রীতদাসের মূল্য
ক্রীতদাসের মূল্য নির্ধারিত হতাে তার যােগ্যতা ও গুণাবলির ওপর তবে বলাবাহুল্য নারী ক্রীতদাসের ক্ষেত্রে অবশ্যই তার রূপ ও দেহ সৌষ্ঠব গুণাবলির উপরে ছিল। তবে সাধারণত যে সকল গুণাবলি মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ড ছিল সগুলাে হলাে বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক শক্তিসামর্থ্য, সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক সৌন্দর্য, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষাগত যােগ্যতা।
তবে ক্রীতদাসের মূল্য তার বয়স, দক্ষতা ও যােগ্যতার ওপর অনেক বেড়ে যেত। প্রশিক্ষণবিহীন ও সাধারণ মানের ক্রীতদাসরা যে দামে বিক্রয় হতাে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ক্রীতদাসদের তার চেয়ে অন্তত ১২ গুণ বেশি দামে তাদের বিক্রয় করা হতাে। অসাধারণ সুন্দরী ক্রীতদাস ও বিশেষ গুণাবলিসম্পন্ন নারী ক্রীতদাসদের সাধারণ ক্রীতদাসদের সাথে বাজারে তােলা হতাে না এবং তাদের মতাে প্রদর্শনও করা হতাে না। আর যেহেতু এ-জাতীয় ক্রীতদাস বিক্রয় হতাে খুব উচ্চমূল্যে তাই বিশিষ্ট ক্রেতাকে তা ব্যবসায়ীর কোনাে আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হতাে এবং সেখানেই সাধারণত তারা বিক্রয় হয়ে যেত। রােমানরা গুণাবলির খুব ভক্ত ছিল তাই অনেক সময় দেখা যেত গুণাবলিসম্পন্ন বেঁটে কিংবা মানসিক বৈকল্য যুক্ত ক্রীতদাসও বেশ চড়া মূল্যে বিক্রয় হতাে। পিল্লাই পরিহিত ক্রীতদাসদের মূল্য ছিল খুবই কম যেহেতু ব্যবসায়ীরা তাদের কোনাে নিশ্চয়তা দিতে পারত না।
ক্রীতদাস নিলাম আসলেই খুব জটিল ছিল। ক্রীতদাস পন্য হলেও অন্য পন্য নিলামের সময় অনেক তথ্য না দিলেও চলত কিন্তু ক্রীতদাস নিলামের সময় ক্রীতদাসের আদি নিবাস, দক্ষতা, অন্যান্য গুণাবলির পাশাপাশি পুরাতন রেকর্ড যেমন পালিয়ে যাওয়া কিংবা অসুখ-বিসুখ ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ দিতে হতাে। নিলামে ক্রীতদাস ক্ৰয় অনেকটাই গৃহপালিত পশু কেনার মতাে ছিল। আবার অনেক সময় ধনীদের জন্য বিশেষ নিলাম আয়ােজন করা হতাে। বিশেষ করে যখন কোনাে রূপসী, দক্ষ বিদেশি নারী ক্রীতদাসের বেলায় এ জাতীয় বিশেষ নিলাম আয়ােজন করা হতাে। নিলামের আয়ােজকরা পূর্ব থেকেই ধনী ও বিত্তবানদের সাথে যােগাযােগ করে তারপর নিলামের তারিখ নির্ধারণ করতেন। প্রাচীন রােমের বিত্তবানরা ভিনদেশি নারী ক্রীতদাস বেশ পছন্দ করতেন। নিলামে ক্রীতদাস বিক্রয়ের পরপরই তাকে লৌহা কিংবা কাঠ দিয়ে নির্মিত খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেলা হতাে। মূল্য পরিশােধের পর ক্রীতদাসকে নতুন মালিকের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হতাে। ক্রীতদাসকে নিজের আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ক্রেতাকেই বহন করতে হতাে।
প্রাচীন রােমে সাধারণত যুদ্ধবন্দিদেরকেই ক্রীতদাস হিসেবে বেশি বিক্রয় করা হতাে। খ্রিস্টপূর্ব ১৬৮ অব্দে পিদনার (Battle of Pydna) যুদ্ধে বিজয়ী বীর এমেলিয়াস পল (Aemilius Paulus) গ্রিক বন্দিদেরকে রােমে বিক্রয় করে ১৫০,০০ গ্রিক মুদ্রা লাভ করেছিলেন, যা সে সময়ের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রাচীন রােমে অনেক গ্লাডিয়েটর স্কুল ছিল, গ্লাডিয়েটর খেলােয়াড় সংগ্রহের জন্যও অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্রীতদাস ক্রয় করতেন এবং এ ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে সুঠাম দেহের অধিকারী ও শক্তিশালী ক্রীতদাসদের প্রতিই। তাদের নজর থাকত বেশি।
প্রাদেশিক ক্রীতদাস বাজার
একসময় রােমের অর্থনীতির মূল স্তম্ভই ছিল ক্রীতদাস ব্যবসা। তাই একসময় ক্রীতদাস বাজার রােম থেকে প্রদেশগুলােতেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা জাহাজ বােঝাই করে বিভিন্ন প্রদেশের ক্রীতদাস বাজারে নিয়ে যেতেন। ক্রীতদাস বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও সরকারি কর আদায়কারীরা উপস্থিত থাকতেন। তারা ক্রীতদাস ব্যবসায়ীর নিকট হতে কর আদায় করতেন। তা ছাড়া অনেক সময় অনেক নাগরিক কর দিতে না পারলে সরকারি কর আদায়ের জন্য তাকে কিংবা তার পরিবারের কোনাে সদস্যকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় করে দেওয়া হতাে। সরকারের কর পরিশােধ করার পর অবশিষ্ট অর্থ সেই পরিবারকে ফেরত দেওয়া হতাে। গ্রিক দ্বীপ ডেলসে ছিল একটি বড় ক্রীতদাস বাজার, যেখানে প্রায় ১০,০০০ ক্রীতদাস রাখার স্থান ছিল।
ক্রীতদাসের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল যুদ্ধবন্দি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। ক্রীতদাসের গর্ভে জন্মাননা সন্তানও ক্রীতদাস হিসেবে পরিগণিত হতাে এবং তা ছিল মালিকের সম্পত্তি। রােমে আসা অধিকাংশ ক্রীতদাসের আদি নিবাস ছিল উত্তর ইতালি, গ্রিস, লাইবেরিয়া, গ্যালিয়া, বলকান, মিশর, উত্তর আমেরিকা, ব্রিটেন , দাসিয়া ও পার্থিয়া অঞ্চলের।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।