লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
আই বি বা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো হল ভারতের একটি অন্যতম গোয়েন্দা সংস্থা যা সম্পূর্ণ ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শুরু থেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদীরা আইবি এর গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী পদে নিয়োজিত আছেন। সে সঙ্গে আরএসএস এর মতো ব্রাহ্মণ্যবাদী সংগঠন বিভিন্ন রাজ্যের নওজোয়ান ব্রাহ্মণ আইপিএস অফিসারদেরকে ডেপুটেশনে আইবিতে যাবার জন্য উৎসাহিত করা শুরু হয়। মারাঠি পত্রিকা ‘বহুজন সংঘর্ষ’ (৩০ এপ্রিল ২০০৭) এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে,
“এই রকম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ’র বিশিষ্ট পদে আর.এস.এস. এর হিতাকাঙ্খীদের আসীন হবার পর তারা এই নীতি গ্রহণ করে যে তারা স্বয়ং এমন ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করত যারা তাদের দৃষ্টিতে আই.বি’র জন্য উচিৎ মনে হত এবং তাদেরকেই আই.বি’র নিযুক্ত করা হতে লাগল । যার ফলাফল এটাই হল যে আরএসএস এর বিচারধারায় প্রভাবিত যুবকদেরকে আইপিএস অফিসাররা নিজেদের সময়কালে শুরুতেই আই.বি.’তে নিযুক্ত হতে লাগলেন এবং ১৫, ২০ বছর পর্যন্ত আই.বি’তেই রইলেন । কিছু ব্যাক্তি তো সারা জীবন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো তেই রয়ে গেলেন । উদাহারণস্বরুপ মহারাষ্ট্র ক্যাডারের অফিসার বিজি বৈদ্য করা পর্যন্ত আই.বি’তেই ছিলেন । মজার কথা হল যখন তিনি আই.বি’র ডাইরেক্টর ছিলেন তখন তাঁর ভাই এমজি বৈদ্য মহারাষ্ট্রের আর.এস.এস. এর প্রধান ছিলেন ।
যদি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এর এমন তালিকার উপর দৃষ্টিপাত করা হয় যা বিভিন্ন রাজ্য থেকে ডেপুটেশনে আই.বি’তে নেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই আর.এস.এস. এর হিতাকাঙ্খী ছিলেন অথবা আর.এস.এস. এর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ছিল এবং তারা আর.এস.এস. এর ইশারায় আই.বি. অথবা ‘র’ (RAW/Research & Analysis Wing) তে গিয়েছেন অথবা তাদেরকে এই সংগঠনে মওজুদ আর.এস.এস. এর এজেন্ডা পূর্ণকারী অফিসার নিযুক্ত করেছেন । রেকর্ড দেখাবার জন্য এমন অফিসারও আই.বি’তে নিযুক্ত করা হয়েছে যাদের সম্পর্ক আর.এস.এস. এর সঙ্গে নেই কিন্তু স্থায়ীভাবে গুরুত্বহীন কাজের দায়ীত্বভার দেওয়া হয়েছে।”
তাহলে দেখুন যে আই.বি. বা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো আর.এস.এস. এর সঙ্গে এমন আতাঁত সম্পর্ক তারা কিভাবে মুসলমানদের সঙ্গে ভাল ব্যাবহার করতে পারে? আর.এস.এস. এর মূল লক্ষ্যই হল ভারত থেকে মুসলমানদের তাড়িয়ে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা । তাতে আইবি সহযোগিতা করবে না এটা কি করে সম্ভব ।
আরো বলা হয়েছে যে, গোয়েন্দা সংস্থা আই.বি. আর.এস.এস. এর থেকেও কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী । একটা উদাহারণের মাধ্যমে তা স্পষ্ট বোঝা যায়, দিল্লী ইউনিভার্সিটির প্রফেসার আব্দুর রহমান গিলানীকে সংসদ ভবনে সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য গ্রেফতার করা হয় এবং হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট উভয় আদালত তাঁকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেন । তেহেলকা পত্রিকার ২২ নভেম্বর ২০০৮ সালের সংখ্যায় লিখেছেন,
“আমি এই ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি । তাদের সঙ্গে বসে আমার কখনো মনে হয়নি যে আমি গণতন্ত্র দেশের কোন অফিসে বসে আছি । বরং সবসময় আমার মনে হয়েছে যে আমি আর.এস.এস. – এর কোন অফিসে বসে আছি ।”
দিল্লী ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসারের সঙ্গে তারা যদি ব্রাহ্মণ্যবাদী ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এত জঘণ্য ব্যবহার করে তাহলে সাধারণ মুসলমানের সঙ্গে তারা কিরকম ব্যবহার করবে তা পরিস্কার অনুমেয় । আর ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো যে একটি সাম্প্রদায়িক গোয়েন্দা সংস্থা এর পরিস্কার বোঝা যায় যে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এতে কোন মুসলমান অফিসার ছিলেন না । (কমিউনিজম কমব্যাট, সেপ্টেম্বর ১৯৯৩, দ্য টেলিগ্রাফ, কোলকাতা ১৮ মার্চ ১৯৯৩ এবং দ্য সান্ডে ২৭ মার্চ – ২ এপ্রিল ১৯৯৪) ১৯৯৩ সালে কিছু মুসলমানকে আইবিতে নিযুক্ত করা হলেও তাদেরকে ভরসা করা হতো না ।
ভারতে যতবার সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে প্রত্যেক বারই আই.বি. তার তদন্ত করার জন্য এগিয়ে এসেছে । প্রাথমিক তদন্তে যখন হিন্দুত্ববাদীরা কোন সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন তখনই আই.বি. তাদেরকে বাঁচাবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে । যেমন, ১১ অক্টোবর ২০০৭ সালে আজমির শরীফে বোমা বিস্ফোরণের পর আই.বি. রিপোর্ট প্রকাশ করে যে এই মামলা লস্কর এ তাইয়েবা অথবা জৈশ এ মুহাম্মাদ অথবা হুজি একত্রিত হয়ে এই কাজ করেছে । কিন্তু পরে যখন মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ হয় তখন প্রমাণ হয় যে আজমির শরীফে এবং মালেগাঁওয়ে বোমা বিস্ফোরণ করে হিন্দুত্ববাদীরা । নার্কো টেষ্টে লেফটেনেন্ট কর্ণল প্রসাদ পুরোহিত স্বীকার করে যে সে মহন্ত দয়ানন্দ পান্ডের কথায় আজমির এবং মালেগাঁওয়ে বোমা বিস্ফোরণের জন্য বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য সাপ্লাই করে । (সকাল, পুনা ১৫ নভেম্বর ২০০৮) অভিনব ভারতের স্বাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং অজয় রাহিকর পুলিশের কাছে বায়ানে বলে যে ২০০৭ সালের বিস্ফোরণের সে মাষ্টারমাইন্ড ছিল । (হিন্দুস্থান টাইমস, দিল্লী, ২৪ জানুয়ারী, ২০০৯)
যখন হিন্দুত্ববাদীরা এই বোমা বিস্ফোরণে গুরুতরভাবে ফেঁসে যান তখন আর.এস.এস. এর পোষ্যপুত্র ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো তাদেরকে বাঁচাবার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায় । এবং কিছু কিছু জায়গায় আই.বি. নিজে বোমা বিস্ফোরণ করে মুসলমান যুবকদের ধড়পাকড় শুরু করে । এমনকি ২৬/১১ এর সময় সিএসটি কামা রঙ্গভবন লেনে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় তখন গুড়গাঁও চৌপাটীতে সন্ত্রাসবাদীদেরকে যাবার জন্য স্কাডা কারের বিশেষ ব্যবস্থা আই.বি.’র ষ্টক থেকেই করা হয়েছিল । এমনকি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আই.বি. স্বয়ং এ.টি.এস. চীফ হেমন্ত কারকারেকে হত্যা করতে সাহায্য করে । যেহেতু কারকারে হিন্দু সন্ত্রাবাদীদেরকে হাতেনাতে ধরেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ময়নাতদন্ত শুরু করেন । সেইজন্য আই.বি. গুরুতরভাবে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় কারকারেকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে কেননা আইবি জানত হিন্দুত্ববাদীরা আদালতের কাঠকড়ায় গেলে আই.বি.’র গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো হবে যেহেতু হিন্দুত্ববাদীদেরকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করতে সাহায্য করেছে ।
২৬/১১ এর হামলার ব্যাপারে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো সবকিছুই জানত তবুও আগে থেকে তারা মুম্বাই পুলিশ এবং ওয়াষ্টার্ন নেভি কমাণ্ডকে কোন তথ্য দেয়নি এবং ‘র’ যে আইবিকে গৃহ মন্ত্রালয়ের মাধ্যমে ৩৫টি মোবাইল নম্বর দিয়েছিল যে নম্বরগুলি লস্কর এ তাইয়েবার সন্ত্রাসীরা মুম্বাই হামলার ৫ দিন আগে ব্যবহার করেছিল কিন্তু সেই নম্বরগুলি আই.বি. ততক্ষণ নযরে রাখেনি যতক্ষণ না রঙ্গভবন লেনে সন্ত্রাসী হামলা না হয়েছিল যদিও তারা সেই ৩৫টি নম্বর নযরে রেখেছিল তারা নিজের অসৎ উদ্দেশ্যেই তা ব্যবহার করেছে । কারণ ২৬/১১ এর সময় রঙ্গভবন লেনে যে হামলা হয়েছিল তার পিছনে আই.বির.ই অদৃশ্য হাত ছিল । যদি তারা সেই ৩৫টি নম্বরের উপর নযর রাখত তাহলে আইবির অসৎ উদ্দেশ্য কখনো সফল হতো না এবং হেমন্ত কারকারেকেও তারা হত্যা করতে পারত না ।
রাষ্ট্রপিতা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার তথ্য নিয়ে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো প্রচুর তথ্য হেরফের করে এবং জেনেশুনে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেনি । ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো জানত যে ১৯৩৪ সালের পর থেকে ৫ বার হত্যা করার প্রয়াস করা হয় এবং নাথুরাম গডসে আগেও গান্ধীজিকে হত্যা করার প্রয়াস করে । এমনকি হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালের একটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে যে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং দিল্লী পুলিশের একটি শাখা দুইজন মুসলিম যুবক মুহাম্মাদ মাআরিফ কমর এবং ইরশাদ আলীর উপর আরডিএক্স রাখার অভিযোগ উত্থাপিত করার কথা ছিল এবং সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করার কথা ছিল । এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডাইরেক্টর নিজে কোন আইনের শাস্তি না দিয়ে একজন যুবককে হত্যা করেন ।
‘হু কিল্ড কারকারে?’ (Who Killed Karkare? The Real Face of Terrorism in India) নামক বইয়ে লেখা আছে, “………সহজেই একথা বোঝা যায় যে সুরাটে সক্রিয় বোমা পাওয়া এবং আহমেদাবাদে বিস্ফোরণ, এই সবই আই.বি. (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো), আর.এস.এস. এবং আমেরিকার এজেন্সি (কেন হেভিড, এদের এজেন্ট ছিল) প্রভৃতিদের কাজ ।”
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো দুই বার সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ কান্ডে তদন্ত করতে আসে । প্রথম্বার হরিয়ানা পুলিশ পুরো তদন্তের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল তখন এবং দ্বিতীয়বার হেমন্ত কারকারের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রের এটিএস পুরো তদন্ত করে নিয়েছিল । এই দুইবারই ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো নিজের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য এই তদন্তে বাধা দান করে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদীদেরকে যারা এই সন্ত্রাসবাদী কর্মে লিপ্ত ছিল তাদেরকে বাঁচাবার জন্য চেষ্টা করে । এবং লেফটেনেন্ট কর্ণল প্রসাদ পুরোহিত যে সেনাবিভাগ থেকে অধিক পরিমাণে আর.ডি.এক্স. চুরি করে পালিয়েছিল এবং মালেগাঁও বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের মূল অপরাধী ছিল এবং আইবি কর্ণল প্রসাদ পুরোহিতের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানত যে তার সম্পর্ক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন অভিনব ভারতের সঙ্গে আছে কেননা সে কয়েকবার তাদের বৈঠকে অংশ নিয়েছিল । (হিন্দুস্থান টাইমস, মুম্বাই, ২৩ জানুয়ারী ২০০৯) তা সত্বেও অতিথি অধ্যাপক হিসাবে ‘মহারাষ্ট্রের এ.টি.এস. (A.T.S./Anti Terrorist Squad) অফিসার দ্বারা বিস্ফোরক দ্রব্য কিভাবে চেনা যায়’ বিষয়ে সম্বোধন করার জন্য আমন্ত্রন করে । ইতখন আই.বি. এই ব্যাপারে কোন আপত্তি করেনি । বরং আইবি স্বয়ং জঙ্গী কর্ণল প্রসাদ পুরোহিতকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে ।
ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের নিকট এত পরিমাণ অস্ত্রের ভান্ডার মওজুদ রয়েছে এবং বিভিন্ন আশ্রমে যে সাধু সন্তদের নিকট এত পরিমাণ গোলা বারুদের গুদামঘর রয়েছে এবং আরএসএস ও বজরঙ্গ দলের সারা ভারত জুড়ে এত সংখ্যক জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে এবং তার ব্যাপারে আই.বি.’র কোন মাথাব্যাথা নেই । আই.বি.’র কাছে তারা দেশদ্রোহী নয় ।
কারণ আই.বি.’র মস্তিষ্কই হল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন । আর ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো যদি আর.এস.এস. এর মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদীদেরকে সমর্থন না করত তাহলে কোনদিন আর.এস.এস. মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত না এবং আর.এস.এস. কবে খতম হয়ে যেত কিন্তু ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো চায় না আর.এস.এস. খতম না হোক এবং ভারতে সন্ত্রাসবাদ খতম হোক কারণ আই.বি. আর.এস.এস. এর চেয়েও বেশী ব্রাহ্মণ্যবাদী । আই.বি. এটাই চাই যে ভারত হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হোক এবং মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বিতাড়িত করা হোক । কারণ আইবি হল ভারতের সবথেকে বড় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন যে ভারতীয় গোয়েন্দা ভাগের বিমুখোশ পরে সরকার সহ ভারতের ১২০ কোটি জনসংখ্যাকে বিভ্রান্ত করছে । আমরা জানি যে আই.বি.’র চক্রান্ত কোনদিনই সফল হবে না এবং কোনদিনই ভারত হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হবে না এবং তারা কোনদিনই মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বিতাড়িত করতে পারবে না কেননা ইংরেজদের যুগে এই আইবির পূর্বসূরী ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সরাই সৈয়দ আতাউল্লাহ শাহ বুখারীকে বলেছিল, “এই খদ্দর পরিধানকারী মৌলবী সারা ভারত জুড়ে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বেড়াচ্ছে তারা কিছুদিনের মধ্যেই খতম হয়ে যাবে” কিন্তু আল্লাহর রহমত যে ভারতে ব্রিটিশ সরকার সহ তাদের ইন্টেলিজেন্স বিতাড়িত হয়েছে অথচ আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর রুহানী সন্তান উলামায়ে কেরামরা ভারতের প্রত্যেক গলিতে মওজুদ রয়েছেন । অনুরুপ ভারত থেকে মুসলমানদেরকে তাড়া তো সম্ভব হবেই না বরং ইন্টেরলিজেন্স ব্যুরোই ভারত থেকে একদিন খতম হয়ে যাবে যদি তারা নিজেদের সন্ত্রাসী চিন্তাধারা পরিবর্তন না করে ।
আই.বি ও ‘র’ (RAW) এর মধ্যে তুলনা করা ঠিক নয়
আমরা আই.বি এবং ‘র’ (RAW: Research and Analysis Wing) কে একই শ্রেণীতে রাখতে পারি না, কেননা দুটির বৈশিষ্ট আলাদা । এর কারণগুলি নিম্নলিখিতঃ
১) ‘র’ (RAW: Research and Analysis Wing) এর স্থাপনা হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে । অর্থাৎ ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর । সেজন্য বারবার প্রচেষ্টার পরেও এই সংগঠনটি আই.বির মতো ব্রাহ্মন্যবাদী হয়ে উঠে নি । যদিও ‘র’ এর মধ্য কিছু কর্মী ব্রাহ্মন্যবাদী চিন্তাধারার রয়েছে । এর সংখ্যা অতি নগন্য । সেজন্য এই সংস্থার মধ্যে সেরকম চিন্তাধারার প্রবেশ ররেনি যা আই.বিতে হয়েছে ।
২) এছাড়াও ‘র’ এর কার্যক্ষেত্র পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং অন্য কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমিত রয়েছে এবং সেই দেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না । সেজন্য আই.বি.’র মতো উপস্থিত অনুভূত হয় না ।
৩) গত কয়েক বছর ধরে এই দুটি সংগঠনের মধ্যে প্রফেশনাল মুকাবিলা এতটাই বেড়েছে যে তারা একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করার কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না ।
সেজন্য ‘র’ এর মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যায় ব্রাহ্মন্যবাদী ব্যাক্তি থাকার পরেও আর.এস.এস এবং অন্য ব্রাহ্মন্যবাদী সংগঠনগুলি তাকে নিজের মনে করে না এবং তার উপরে বেশি আস্থাও রাখে না । যদিও সময়ে সময়ে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য পুরণের জন্য ‘র’কে তারা ব্যাবহার করে থাকে । যেমন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মতে কেন্দ্রের উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে বর্ধ্বমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের জন্য ‘র’কে ব্যাবহার করেছিল ।
ফলস্বরুপ, আই.বি ক্রমশ সবথেকে বেশী শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয় ।
আই.বি আর.এস.এস এর এজেন্ডাকে চালু করে
ব্যবহারিকভাবে আইবি আর.এস.এস. এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আসার পর তারা আর.এস.এস. এর এজেন্ডাকে এমনভাবে তৎপরতার সাথে কার্যে রুপান্তরিত করা শুরু করে তাতে এটাই মনে হয় যেন আইবি কোন সরকারী সংগঠন নয় এটা যেন আর.এস.এস. এর কোন একটি শাখা সংগঠন । আইবি আর.এস.এস. কে দেশপ্রেমী বা রাষ্ট্রবাদী সংগঠন হিসেবে সমাজে তুলে ধরতে এবং মুসলমানদেরকে দেশদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী সম্প্রদায় চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে পুরোপুরি সফল হয় । আই.বি নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করে “সত্যকে ধামাচাপা দাও, মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে প্রস্তুত করো” নীতির উপর কাজ করতে শুরু করেঃ
১) আর.এস.এস এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সাম্প্রদায়িক গতিবিধি, বিদেশ থেকে অধিক পরিমাণ সম্পত্তির প্রাপ্তি, সামাজিক, শিক্ষনীয় এবং সাংস্কৃতির সংস্থার এবং মিডিয়ার মধ্যে অবাধ বিচরণ থেকে এবং সাম্প্রদায়িক বিষোদ্গীরণের ব্যাপারে আই.বি. সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখে । মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা বিস্ফোরণ, নানদেড়ে বোমা বিস্ফোরণ, মক্কা মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ, ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ে বোমা বিস্ফোরণ, আহমদাবাদে বোমা বিস্ফোরণ, আজমীরে বোমা বিস্ফোরণ, উত্তর প্রদেশের আদালতে সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণ এবং জয়পুরে বোমা বিস্ফোরণ প্রভৃতি সন্ত্রাসবাদী হামলা করা সত্বেও আই.বি. আর.এস.এস কে দেশপ্রেমী বা রাষ্ট্রবাদী সংগঠন হিসেবে প্রস্তুত করে এবং আর.এস.এস এর কালো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে । এইসব ব্যাপার সেইসব রিপোর্ট অধ্যায়ন এবং বিশ্লেষন করলে বোঝা যায় যা আই.বি. বিগত কয়েক বছরে সরকারকে দেয় ।
২) আই.বি মুসলমান এবং বিভিন্ন নিরপেক্ষ সংগঠনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উলটো নীতি অবলম্বন করে আই.বি. মুসলমানদের গতিবিধির ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করে এবং কখনো মিথ্যা সংবাদ সরকারকে প্রদান করে, যদিও মুসলমানদের গতিবিধি আর.এস.এস. ও তার সহযোগী সংগঠনের হিংসাত্মক গতিবিধির তুলনায় দেশের জন্য কোনও ক্ষতিকারক নয় । কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা প্রত্যেক সরকার গুপ্ত সূচনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ আই.বি.’র উপর নির্ভরশীল । তাই সরকার সেই গুপ্ত সূচনার উপর ভরসা করে এবং মুসলমান এবং বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠঙ্গুলিকে চরমপন্থী বা সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় এবং তাদেরকে কোনঠাসা করে ।
আই.বি. সঙ্ঘ পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ সংগঠন
কেন্দ্রে একের পর এক সরকার ক্ষমতায় আসে । তারা রাজনৈতিক টানাপোড়েনে এবং প্রতিদিন সরকারী কার্যে এতটাই ব্যাস্ত থাকে যে তারা এখনো পর্যন্ত বুঝতে পারেনি যে ব্যাবহারিকভাবে আই.বি.’র চিন্তাধারা সম্পূর্ণভাবে ব্রাহ্মন্যবাদীদের দ্বারা প্রভাবিত । এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং এই পর্যন্ত আই.বি. নিজের জন্য সুদৃঢ় রক্ষাকবচ বানিয়ে নিয়েছে যা ছিন্ন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় । তাই সরকারকে একে ক্ষমতার স্বতঃস্ফুর্ত অঙ্গ হিসাবে স্বীকার করতেই হয় । আইবি বিভাগের প্রধানকে নিযুক্ত করার ক্ষমতা যদিও সরকারের হাতে রয়েছে কিন্তু খুব সামান্যই তাকে চয়ন করার অবকাশ বাকি থাকে । এটা পরম্পরা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কার্য থেকে অবসর নেওয়ার আগে আই.বি’র ডাইরেক্টর স্বয়ং তার উত্তরাধীকারীর নামের প্রস্তাব পেশ করে এবং সরকার কোন রকমের প্রশ্ন না করে তা স্বীকার করে নেয় । আর এটা পরম্পরাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । সরকার এমন কোন ডাইরেক্টর নিযুক্ত করে যে ব্রাহ্মন্যবাদী নয় তাতেও আই.বি’র কোন বিশেষ ক্ষতি হয় না কেননা ব্রাহ্মন্যবাদীরা আই.বিতে এমন শক্তভাবে অবস্থান করেছে যে বাইরে থেকে আসা অফিসারকে আই.বি’র কার্যপ্রণালীতে কোন বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে দেয় না এবং যদি বাইরে থেকে আসা অফিসার নিজের বক্তব্যে কায়েম থাকে এবং ব্রাহ্মন্যবাদীদের তত্ত্বকে স্বীকার না করে তাহলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয় যে স্বয়ং সেই অফিসার এবং সরকারের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং ব্রাহ্মন্যবাদীদের চিন্তাধারাকে সূদুরপ্রসারী করা হয় ।
আই.বি কিভাবে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে আয়ত্বে রাখে
প্রধানমন্ত্রীর দিনচর্চা সাধারণত আই.বি’র ডাইরেক্টরের সাথে সাক্ষাতের সাথেই শুরু হয় সূদুরপ্রসারী করা হয় । ১৫-২০ মিনিটের এই মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিগত ২৪ ঘন্টায় ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীকে সংক্ষিপ্তভাবে অবগত করায় এবং এও বলে যে আই.বি তার সূত্র থেকে যে সংবাদ প্রাপ্ত করেছে এবং দেশের সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক অবস্থার জানকারী অনুযায়ী অনুমান যে লাগিয়েছে তাকে সামনে রেখে আগে কিরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে তা ব্যাপ্ত করে করে । গৃহমন্ত্রীকেও প্রত্যহ সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পেশ করে । কিছু গুপ্ত সংবাদ এমন রয়েছে যার সাথে বিদেশের সম্বন্ধ থাকে বা রক্ষা বিভাগের সাথে সম্পর্ক থাকে তখন প্রয়োজন অনুসারে উক্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রীকেও রিপোর্ট পেশ করে ।
প্রধানমন্ত্রী এবং গৃহমন্ত্রীকে প্রত্যহ রিপোর্ট পেশ করার ব্যাবস্থা আই.বি’র ব্রাহ্মন্যবাদী অফিসাররা বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে করে আসছে এবং তারা বড়ই চাতুর্যের সাথে আই.বি’র জন্য শাসনক্ষমতা এবং প্রশাসনের আয়ত্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত করে নিয়েছে । এটা করার জন্য যে কার্যপ্রণালী তারা গ্রহণ করেছে তা নিম্নলিখিতঃ
১) “অত্যন্ত গুপ্ত সংবাদ” এবং “গুপ্ত কার্যবাহী” এর মোহর লাগিয়ে এই ব্যাপারে সুনিশ্চিত করে নেওয়া হয় যে আই.বি’র গতিবিধির ব্যাপারে কোন সংবাদ সরকারী বিভাগের যেমন- প্রধানন্ত্রী কার্যালয়, গৃহমন্ত্রালয়, বিদেশ মন্ত্রালয় বা সুরক্ষা মন্ত্রালয় থেকে যেন বাইরে না যায় ।
২) ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো রাজ্য সরকার, উচ্চ সিভিল এবং পুলিশ অধিকারী এমনকি আদালতেও তারা ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করে রেখেছে যে আই.বি যা কিছু করে তা দেশের সুরক্ষা জন্যই করে এবং এসব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ।
৩) “গুপ্ত অপারেশন”, “গুপ্ত কার্যবাহীতা”, “দেশ বিরোধী সংগঠনের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ”, “সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ”, “অভ্যন্তরীন সুরক্ষা”, “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক” প্রভৃতি শব্দাবলীকে বার বার প্রয়োগ করে তারা নিজেদের সমস্ত গতিবিধিকে গুপ্ত এবং সক্রিয় রাখে ।
পরিস্থিতি অনুযায়ী কেন্দ্রের বিভিন্ন বিভাগ, রাজ্য সরকার, সিভিল এবং পুলিশ অফিসার আই.বি’র আদেশ অনুযায়ী এমন তৎপরতার সাথে কাজ করে তাতে মনে হয় এই আদেশ যেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসেছে । তারা এই ভয় করে যে “অত্যন্ত গুপ্ত সংবাদ” অন্যের হাতে যাতে না চলে যায় সেজন্য আই.বির কোন নির্দেশের উপর কোন প্রশ্ন তোলে না এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা গৃহমন্ত্রালয় থেকে বা অন্য কোন সরকারী উচ্চ অধীকারী থেকে সত্যতা যাঁচাই করে না । তাদের এও ভয় থাকে যে যদি তারা আই.বি’র নির্দেশমত অনুরুপ কাজ না করে বা তা যদি তার সত্যতা নিয়ে যাঁচাই করে তাহলে আই.বি তাদের বিরুদ্ধে আমোঘ হাতিয়ার “অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট সন ১৯২৩” ব্যাবহার করতে পারে । তাই আই.বি’র “গুপ্ত কার্যপ্রণালী”র ধারাবাহিকতায় কোন ভয় বা কোন হস্তক্ষেপ বা প্রতিরোধ ছাড়াই চলতে থাকে । অত্যান্ত গুপ্ত ব্যাপারে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে সংবাদের স্বতন্ত্রভাবে আদান-প্রদান না হওয়ার জন্য কেউ এটা বুঝতেও পারে না যে আই.বি’র কার্যপ্রণালী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বা গৃহমন্ত্রালয় থেকে অনুমোদন আছে কিনা । অতঃএব এটা সম্ভব যে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা গৃহমন্ত্রালয়ের আই.বি’র কোন সংবাদ থাকে না ।
সুতরাং সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আই.বি’র “গুপ্ত কার্যপ্রণালী”র রহস্য এতটাই পর্দার আড়ালে চলে গেছে যে এটা সন্দেহযুক্ত যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বা গৃহমন্ত্রীও এই পর্দার ওপারে দেখতে পান না ।
সরকারও আই.বি’র ফাঁদে
পাক্ষিক মারাঠি পত্রিকার ‘বহুজন সংঘর্ষ’ (৩০ মে ২০০৮) এর মধ্যে লেখা আছে,
“এমন পরিস্থিতির কেন সৃষ্টি হল এবং কেন আইবি পাকিস্তানের আই.এস.আই এর মত গত কয়েক বছরের মধ্যে এতটাই শক্তিশালী হয়ে গেল যে সরকারকে নিজের ইচ্ছামত পরিচালনায় করে না বরং সরকারকে এবং নেতাদেরকে ব্লেকমেইলও করে থেকে । এর কারণ হল যে ১৯৯০ এর দশকে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী এবং গৃহমন্ত্রালয় আইবিকে এই ছাড় দিয়েছিল যে আই.বি কিছু সংবেদনশীন, মামলায় রেকর্ডে না এনেই খুফিয়া (গুপ্ত) তদন্ত করতে পারে এবং সন্দেহজনক ব্যাক্তিদের ফোনের উপর গুপ্তভাবে দৃষ্টি রাখতে পারে । আই.বি’র অফিসাররা সরকারকে এই বিশ্বাস জাগাতে সফল হন যে তাদের কোন নিয়মমাফিক পদ্ধতিতে টেপ করা হয় বা এইসব সংবেদনশীল মামলায় নিয়মমাফিক তদন্ত করা হয় তাহলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হতে পারে । এইভাবে আই.বি গুপ্তভাবে কোন টেপ করার এবং তদন্ত করার অধিকার অর্জন করতে সফল হয় । আই.বি তার ব্রাহ্মন্যবাদী মানসিকতার অফিসারদের টেলিফোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করিয়ে সেটাকে স্থায়ী করে নেয় এবং বেআইনীভাবে ফোন টেপ করার পরম্পরা বানিয়ে নিল । এটা জানা নেই যে পরে আসা সরকারের কাছ থেকে আই.বি এই বেআইনী কার্যপ্রণালীকে আইনত অনুমতি অর্জন করেছেন কিনা । অথবা এগুলি জানিয়েছেন কি না । অথচ আই.বি এই পদ্ধতিতেই চলছে । যে সরকার আই.বিকে এই কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন তাঁরা হয়তো এটা অনুমান করতে পারেন নি যে আই.বিকে তাঁরা দুমুখো তালোয়ার দিয়ে দিয়েছেন যা স্বয়ং তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবহার করা হতে পারে এবং এর ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে । টেলিফোন বিভাগে কোন আর.এস.এস. এর শ্রদ্ধাভাজন ব্যাক্তিকে বসিয়ে যে কোন ব্যাক্তিকে ইচ্ছানুযায়ী যে কোন ব্যাক্তিত্বের মালিকেই হোক না কেন টেলিফোনের কথাবার্তাকে শোনা যেতে পারে এবং তাকে ব্ল্যাকমেইল করা যেতে পারে । এইভাবে সরকারও নিজের বানানো ফাঁদে ফেঁসে যেতে পারে ।” (বহুজন সংঘর্ষ, ৩০ মে ২০০৮)
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে গুপ্ত জানকারী অর্জন করার এবং সেগুলিকে পুষ্টি (সত্যায়ন) করার দ্বিতীয় কোন উপায় নেই । সুতরাং আই.বি যা কিছু সংবাদ উপলব্ধ করায় সরকার সেগুলিকে কোন তদন্ত ব্যাতিরেকেই স্বীকার করে নেই । সরকার এটা মনে করে যে আই.বি যা কিছুই জানে এবং সঠিকভাবে বোঝে, কিন্তু তাদের এটা ধারণা নেই যে সময়ের সাথে সাথে আই.বি শক্তিশালীও হয়ে গেছে এবং সরকারের সমস্ত বিশিষ্ট বিভাগগুলিকে নিজের ইশারায় চালাচ্ছে এবং আই.বির ব্রাহ্মন্যবাদী ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী বানানো জন্য ব্যাবহার করছে । প্রকৃতপক্ষে আই.বি এমন এক বহু মাথা ওয়ালা ‘জ্বিন’ হয়ে গেছে যা পাকিস্তানের আই.এস.আই. এর মতো নিজেদের প্রভূকেও হজম করে নিতে পারে ।
ভারতে মুসলিম সন্ত্রাসবাস একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র
কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিজেপি, আর.এস.এস., বজরং দল এবং ভারতের অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলগুলি সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করত । যেখানে সেখানে দাঙ্গা লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠ করার চেষ্টা করত । যখনই তারা দেখত যে অমুক স্থানে ভোটে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে তারা দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্য ফাটল সৃষ্টি করে রাজনীতির জঘন্য খেলা খেলত । কিন্তু মুম্বাই দাঙ্গা, ভাগলপুর দাঙ্গা ও গুজরাট দাঙ্গায় মুসলমানদের খোলা ময়দানে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর উপরিউক্ত রাজনৈ্তিক দলগুলি সারা বিশ্বে বদনাম হয় এবং সমাজে তারা সম্পূর্ণরুপে উলঙ্গ হয়ে যায় । তখন এই ব্রাহ্মন্যবাদী শক্তিগুলি বুঝতে পারে ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে আর রাজনীতি করা যাবে না যা গত পাঁচ দশকে তাদের কাছে এটা যাদুর ছড়ির মতো ব্যাবহার করে এসেছে । এখন আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধালে পালটা মার তাদের উপরেই পড়বে এবং বাবরী মসজিদ ধ্বংস পর্যন্ত তারা যে ফায়দাটুকু লুটেছে শেষ পর্যন্ত সেটুকুও হাতছাড়া হয়ে যাবে । সেজন্য উপরিউক্ত রাজনৈ্তিক দলগুলি রাজনৈ্তিক ভোল পরিবর্তন করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাজনীতির চক্রান্ত ছেড়ে দিয়ে এখন একটি নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে সেটা হল মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বা জেহাদী সন্ত্রাসবাদের প্রোপাগান্ডা । এই প্রোপাগান্ডায় আই বি এবং ব্রাহ্মন্যবাদী মিডিয়ার সমর্থন তারা সম্পূর্ণভাবে পেতে শুরু করে ।
ভারতে মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বা জেহাদী সন্ত্রাসবাদের প্রোপাগান্ডার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা আই.বি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । যখন ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মুসলমানদের হতাশ কররা জন্য সন্ত্রাসবাদের হাতিয়ারকে ব্যাবহার করার সিদ্ধান্ত নেই তখন আই.বি ‘সাধারন গোয়েন্দা সুচনা’ (General Intelligence) নামে পরিচিত এবং অপরিচিত মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নামে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদেরকে, প্রতিষ্ঠান এবং ধার্মিক স্থানের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার মিথ্যা প্রচার শুরু করে দেয় এবং মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধির ভূয়া সংবাদ দেওয়া শুরু করে দেয় । অথচ সত্য এটাই যে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির অভিধানে ‘সাধারন গোয়েন্দা সুচনা’ নামের কোন পরিভাষিক অর্থই নেই । ইন্টেলিজেন্স শব্দের অর্থ হল গোপনভাবে এমন গুপ্ত সংবাদ প্রাপ্ত করা যা সার্বজনিক করা যায় না বরং গোপন রাখা যায় যার উপর ভিত্তি করে উচিৎ সম্মত তদন্ত করা যেতে পারে । কিন্তু আই.বি মুসলমানদেরকে বদনাম করার জন্য এবং মুসলমানদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সঙ্ঘ পড়িবারের আদেশে এবং পুলিশ আই.বি’র ইশারায় ইন্টেলিজেন্সের নামে ভূয়া সংবাদের উপর প্রচার করা শুরু করে দেয় যাতে মুসলমান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদেরকে বদনাম করা যায় এবং সমাজে মুসলমানদের চিত্র নষ্ট হয় এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নিপূনভাবে সফল হয় । মুসলিম সন্ত্রাসবাদের যে প্রোপাগান্ডা করা হয় তার কয়েকটি উদাহারণ নিচে দেওয়া হল,
১) আল কায়দা মুম্বাই এবং দিল্লীতে হামলা করতে পারেঃ স্বাধীনতা দিবসের দিনে সন্ত্রাসবাদী হামলার সম্ভাবনার জন্য আমেরিকার তরফ থেকে সাবধানবার্তা । (দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, পুনা, ১২ আগষ্ট ২০০৬) নোটঃ- এই গোপন সংবাদ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো মিডিয়াকে দেয় যা তার পরের দিন আমেরিকা তা অস্বীকার করে ।
২) পুলিশের রুপ ধারণ করে মুম্বাইয়ের গণপতি বিষর্জনের দিনে হামলা করতে পারে । (গুপ্তচর বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, দৈনিক পুধারী, কোলহাপুর রিপোর্ট, ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬)
৩) গোয়ার পর্যটকরা আল কায়দার নিশানায় । (ইন্টেলিজেন্সের সূত্র অনুযায়ী, দৈনিক সকাল, পুনা, ৯ জুন, ২০০৭)
৪) আল কায়দা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করল । (দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, পুনা এবং দৈনিক সকাল, পুনা, ৯ জুন, ২০০৭)
৫) মহন্ত নৃ্ত্য রামগোপাল দাসকে আল কায়দার হুমকি । (নবভারত, মুম্বাই, ২৩ নভেম্বর ২০০৭) এই খবর পুলিশের দ্বারা সংবাদপত্রে দেওয়ার ফলে প্রকাশিত হয়েছিল যে মহন্তকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে যেখানে আল কায়দা ধমক দিয়ে বলেছে যে, নিজের চ্যালাদের নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করো তা না হয় মরার জন্য প্রস্তুত হও ।” কিন্তু পরের দিন বঝা যায় যে সেটা জাল চিঠি ছিল এবং মহন্ত নিজে তার চ্যালা সন্তোষ জয়সওয়াল নামের একজনকে দিয়ে লিখিয়েছিল । সে চেয়েছিল মহন্তর সুরক্ষা বাড়িয়ে দেওয়া হোক । (আজ কা আনন্দ, পুনা, ২৪ নভেম্বর ২০০৭)
৬) দাউদ ইব্রাহীম আদবানী এবং মোদীকে হত্যার জন্য সুপারী নিয়েছে । (দৈনিক সকাল, পুনা, দৈনিক সামনা, পুনা, ৩০ জানুয়ারী, ২০০৮) ‘র’ দ্বারা এই খবর সংবাদপত্র সংগ্রহ করে)
৭) (ক) সচীন তেন্ডুলকরকে অপহরণ করার চেষ্টা । (দৈনিক সকাল, কোলহাপুর, ৩ নভেম্বর ২০০৮, নাগপুর পুলিশের সূত্র অনুযায়ী)
(খ) সচীনকে অপহরণ করার চেষ্টা করছে জৈশ (জৈশে মুহাম্মাদ), কিন্তু ইন্টেলিজেন্স এই খবরকে অস্বীকার করেছে । (দৈনিক পুধারী, কোলহাপুর, ৪ নভেম্বর ২০০৮ নাগপুর পুলিশ কমিশনারের সূত্র অনুযায়ী)
(গ) সচীনকে জৈশ থেকে বিপদ । (তরুণ ভারত, কোলহাপুর, ৪ নভেম্বর ২০০৮) নাগপুরের পুলিশ কমিশনারের সূত্র অনুযায়ী । যখন আই.বি এই সংবাদ থেকে অস্বীকার করে তখন কমিশনার বলে যে কেন্দ্রীয় গহ মন্ত্রালয় থেকে এই খবর পেয়েছে ।
৮) বরুন গান্ধীকে হত্যা করার চক্রান্ত শাকিলের । (দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দিল্লী, ১ এপ্রিল, ২০০৯, লক্ষ্ণৌয়ে আই বির সূত্র অনুযায়ী) ।
৯) জগন্নাথ মন্দির নিশানায় । (দৈনিক সকাল, পুনা, ১৮ মে ২০০৮, ইন্টেলিজেন্সের সূত্র অনুযায়ী)
১০) দেশে ঢুকেছে ৩০০ মানববোমা, (সংবাদ প্রতিদিন, ৫ নভেম্বর ২০১৪)
১১) ২৬/১১ ধাঁচে কলকাতা বন্দরে হামলার ছক, চাঞ্চল্য । (সংবাদ প্রতিদিন, ৫ নভেম্বর ২০১৪)
১২) কলকাতা মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে বার্তা,
v মার্কিন গবেষক জানাল পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গিদের লক্ষ্য এখন ভারত ।
v মাওলানা মাসউদ আযহারের হুঁশিয়ারী, ৩০০ আত্মঘাতী মানববোমা ভারতে ঢোকার জন্য প্রস্তুত ।
v আফগানিস্তান থেকে যত মার্কিন সেনা সরবে তত জঙ্গিরা লক্ষ্য বানাবে ভারতীয় সেনাদের ।
v ভারত ও আফগানিস্তানের অস্থিরতা তৈরির কাজ করে চলেছে পাকিস্তান । (সংবাদ প্রতিদিন, ৫ নভেম্বর ২০১৪)
এই হল গোয়েন্দা সূত্রের খবর । এখানে কয়েকটি উদাহারণস্বরুপ দেওয়া হল । এরকম খবর সংবাদপত্রে হামেশাই দেখা যায় যার একটাও সত্য নয় । এইসব উড়ো খবরের উপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কড়া সুরক্ষা ব্যাবস্থার বন্দোবস্ত করা হয় যার ফলে বিভিন্ন রেলওয়ে ষ্টশনে, জাহাজবন্দরে, বিমানবন্দরে যাত্রিদের লাইনে দাঁড় করিয়ে তল্লাসী চালানো হয় এবং যাত্রীরা পেরেশান হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং মনে মনে মুসলমানদের প্রতি বিতৃষ্ণার জন্ম হয় এবং তাঁরা এতাই মনে করেন তাদেরত এই তল্লাসীর জন্য মুসলিমরা সন্ত্রাসবাদই দায়ী । কিন্তু এই নিরীহ হিন্দুদেরকে বোঝাবে কে যে মালেগাঁও বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ, নানদেড়ে বিস্ফোরণ, মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী কারা ?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মিডিয়া যে কোন খবর কোনরকম সত্যতা যাঁচাই না করেই প্রচার করে দেয় ফলে সমাজে মুসলিম সন্ত্রাসবাদের একটি ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে । বাস্তবেই কি মুসলিম সন্ত্রাসবাদ ভয়ঙ্কর ? এবং এটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে বাস্তবেই কি ভারতে মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বলে কিছু আছে কি ? সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাবাদের মানসিকতা, ইতিহাস এবং তাদের কর্মপদ্ধতির দিকে যদি দৃষ্টিপাত করা যায় তাহলে এর উত্তর একটাই “ভারতে মুসলিম সন্ত্রাসবাদ বলে কিছু নেই ।”
গত দুই শতকের সন্ত্রাসবাদের গতিবিধির উপর যদি লক্ষ্য করা যায় তাহলে আমরা বুঝতে পারি সন্ত্রাসবাদীরা সেইসব লোককে কোনমতেই ছাড়েনি যারা তাদের মতাদর্শের বিরোধীতা করেছে অথবা তাদের গতিবিধিটাকে আটকাবার চেষ্টা করেছে অথবা তাদের দাবীকে অস্বীকার করেছে । নিচে এর কয়েকটি উদাহারণ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়,
১) যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন দক্ষিণ আমেরিকার রাজ্যগুলিকে আলাদা দেশ হিসাবে মানতে অস্বীকার করেন তখন নতুন দেশ হিসাবে দাবীদার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘কাম্ফ্রিডেসী’ এর এক সদস্য আব্রাহাম লিঙ্কনকে ১৫ এপ্রিল ১৮৬৫ সালে হত্যা করে ।
২) ১৯৯১ শালে ড়াজ়িব গান্ধীকে তামিলনাডুর পেরুমবুদুরে এলটিটিই জঙ্গিরা হত্যা করে । অভ্যার্থনা জানানোর বাহানায় এল.টি.টিই.’র একজন মহিলা জঙ্গি নিজের দেহে রাখা বিস্ফোরক ফাটিয়ে রাজীব গান্ধীর দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় । পরে তাঁর পায়ে পাতা দেখে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় । পরে জানা যায় ওই আত্মঘাতি মহিলাটির নাম ধানু ।
৩) পাকিস্থানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনযীর ভুট্টোকে লস্কর এ ঝাঙ্গবী নামক শিয়া বিরোধী চরমপন্থী সংগঠন ২৭ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে হত্যা করে । তবে অনেকেই বলেন যে, এই হত্যা আল কায়দা গোষ্ঠী করেছে এবং আল কায়দা এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলেই সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় ।
৪) ১৮৮১ সালে রাশীয়ার সেন্ট পিটারসবার্গের রাস্তায় দ্বিতীয় আলেকজান্ডাতকে হত্যা করা হয়েছিল । তিনি বুলেট প্রুফ গাড়িতে ঘুরছিলেন । বোমা বিস্ফোরণ করে হত্যা করেছিল ইগনেসি ।
সন্ত্রাসবাদী দ্বারা বিরোধীপক্ষকে খতম করার ঘটনা জানার জন্য বেশী দূর যেতে হবে না । আমাদের দেশেই স্বাধীনতার ৭০ বছরের মধ্যে আমাদের প্রিয় নেতাদেরকে সন্ত্রাসবাদীরা হত্যা কড়ে । জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে ব্রাহ্মণ্যবাদী আর.এস.এস. নেতা নাথুরাম গডসে চরম নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে । প্রধানমন্ত্রী ইন্দুরা গান্ধীকে অপারেশন ব্লু ষ্টারের জন্য খলিস্তানী শিখ সন্ত্রাসবাদীরা নৃশংসভাবে গুলি করে তার বুক ঝাঁঝরা করে হত্যা করে এবং ১৯৯১ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীকেও তামিলনাডুর পেরুমবুদুরে এলটিটিই জঙ্গিরা হত্যা করে ।
এই উদাহারণগুলি থেকে এটাই বোঝা যায় যে যারা প্রকৃত সন্ত্রাসবাদী তারা বিরোধী নেতাদেরকে কখনো ছাড়েনি । কিন্তু ভারতে বহুল চর্চিত ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদ’ বা ‘জেহাদী সন্ত্রাসবাদ’ এর ব্যাপারে এই রকম মনে হয় না । তাদের এই ব্যাপারে কোন দৃষ্টান্ত নেই ।
আই.বি. এবং মিডিয়ার সহযোগিতায় ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মুসলিম সন্ত্রাসবাদের যে চিত্র লোকেদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়েছে যে পূর্ব এবং বর্তমান সমস্ত সন্ত্রাসের থেকে বেশী মারাত্মক । যদিও ভারতের সমস্ত সন্ত্রাস ভয়ানক তথাপি মুসলিম সন্ত্রাসের ব্যাপারে শোরগোল বেশী । রাজনৈতিক নেতা এবং কট্টরপন্থী ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতারা দিনরাত মুসলিম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারণ করে চলেছেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারো উপর হামলা তো দুরের কথা, হামলার প্রয়াসও করেনি ।
হয়তো একথা বলা যেতে পারে যে জেহাদী সন্ত্রাসবাদীরা সেইসব ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতাদের হত্যা করতে পারে না তার কারণ তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা কড়া, দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসবাদীদের এটা ভয় যে এরকম ধরণের কোন হামলার প্রতিক্রিয়াস্বরুপ দেশী অধিক সংখ্যক মুসলমানদের হত্যা করা হবে । এখানে এই দুটিই যুক্তিই ভ্রান্ত কেননা, এর আগে একাধিক রাষ্ট্রনেতাদেরকে হত্যা করে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে নেতার সুরক্ষা যতই কড়া হোক সন্ত্রাসবাদীরা যে কোন উপায়ে তাদের কাছে পৌঁছে তাদেরকে হত্যা করে দেখিয়ে দিয়েছে তাদেরকে কেউ আটকাতে পারবে না । দ্বিতীয়ত আই.বি এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতারা এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে ‘জিহাদী সন্ত্রাসবাদ’ কোন মতেই এর উপর দুঃখ প্রকাশ করবে না যে নিরীহ মুসলমান তাদের জন্য মারা গেছে । আসল কথা হল, আমাদের দেশের জিহাদী সন্ত্রাসবাদের ভুতের কোন অস্তিত্বই নেই । ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতারা একথা ভালভাবেই জানে সেজন্য তারা সারা দেশে খোলামেলাভাবে ঘুরে বেড়ায় ।
তবে ভারতে কতকগুলো সন্ত্রাসবাদী হামলায় মুসলমানরা লিপ্ত থাকার কথা বলা হয় যেমন, ১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণ, ১৯৯৮ সালে কোয়েম্বাটুরে বোমা বিস্ফোরণ প্রভৃতি । তবে এগুলির জন্য মুসলমানদের বিশেষভাবে দায়ী করা যায় না, কেননা, ১৯৯২ সালে বাল ঠাকরে দ্বারা মুসলমানদের যে গণহত্যা করে তার প্রতিবাদস্বরুপ এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর কোয়েম্বাটুরে যে বোমা বিস্ফোরণ হয় তাও কোয়েম্বাটুরে সংঘ পরিবার দ্বারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক গতিবিধির জন্য ক্ষোভে এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তবে এই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত আব্দুল নাসীর মাদানীকে এবং অন্যান্য লোকেদেরকেও মাদ্রাস হাইকোর্ট অপরাধমুক্ত বলে ঘোষণা করে । এই ঘটনাকে নিয়েও মিডিয়া প্রচুর জালিয়াতি করেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদী মিডিয়া মুসলমানদের বাড়িতে বালির বস্তাকে আরডিএক্স এর বস্তা বলে প্রচার করেছে।
মুসলিম সন্ত্রাসবাদের প্রোপাগান্ডাইন্টেলিজেন্স ব্যুরো , ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী মিডিয়া এই জন্যই প্রচার করেছে যাতে তাদের দ্বারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ আড়াল হতে পারে । প্রকৃতপক্ষে ভারতের কোন মুসলমান সন্ত্রাসবাদী নয় । কেননা, ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “ভারতের মুসলিমরা মোটেও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না । ১৫ কোটি মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে এক দুইজন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বেশীর ভাগটাই বাইরে থেকে আমদানী । বাইরে থেকেই সন্ত্রাসবাদ ভারতে ঢুকছে । ভারতের নিজস্ব সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম একেবারেই নগন্য । আর দেশের মধ্যে যখন এমন কোন সন্ত্রাসবাদের খবর মেলে আমরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিই ।
মার্কিন সংবাদমধ্যম সি.এন.এন.কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “ভারতের মুসলিমরা দেশের জন্য প্রাণ দেবে কিন্তু দেশবিরোধী কোন কাজকর্ম তারা প্রশ্রয় দেবে না । মুসলিমদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয় ।
তবে আমাদের বক্তব্য হল নরেন্দ্র মোদীর কথায় আমরা ভারতীয় মুসলমানরা দেশপ্রেম নয় । আমরা আজন্ম দেশপ্রেমী । নরেন্দ্র মোদী যে গুজরাটে নরহত্যা করিয়েছে তাতে তো স্পষ্ট বোঝা যায় যে তিনি দেশের এক নম্বর সন্ত্রাসবাদী ।