লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
অর্নব গোস্বামী সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোষ্ট করে দাবি করেছেন তাঁর উপর কংগ্রেসীরা হামলা করেছে। অর্ণব গোস্বামীর উপর যদি হামলা হয়ে থাকে তবে খুবই নিন্দনীয়। তবে আমার চারটি প্রশ্ন।
- অর্ণব গোস্বামী Y সিকিউরিটির মধ্যে থাকে। তার পরেও রাস্তায় কিভাবে কংগ্রেসের দুইজন লোক হামলা করল এবং তাঁর গাড়ির কাঁচ ভাঙার চেষ্টা করল?
- হামলার পর অর্ণব গোস্বামী তো সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন। অর্ণবের সিকিউরিটি গার্ড সেই দুইজন হামলাকারীকে ধরে ফেলেন। ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই দুইজন লোক স্বীকার করে নিল যে তারা যুব কংগ্রেসের লোক? সেই লোকগুলোকে অর্ণবের সিকিউরিটি ছেড়েও দিল? পুলিশের হাতে দিল না যাতে তদন্ত করে মূল চক্রান্তকারীর পরিচয় পাওয়া যায়।
- এই হামলার খবর সর্বপ্রথম অর্নব গোস্বামীর নিজস্ব টিভি চ্যানেল ‘রিপ্লাবিক টিভি’র মাধ্যমে টেলিকাস্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল এই সংবাদ সর্বপ্রথম টুইটারে জানান বিজেপি সমর্থক অশোক পণ্ডিত রাত ঠিক ১২ টা ৫৫ মিনিটে। এরপরেই বিজেপির রাষ্ট্রীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রা জানান রাত ১ টা ৫ মিনিটে এবং সর্বশেষ অর্নবের নিজস্ব টিভি চ্যানেল রিপাব্লিক জানায় রাত ১ টা ৬ মিনিটে। এখন প্রশ্ন হল খবরে সম্প্রসারণ হবার আগেই উক্ত দুইজন বিজেপির ব্যক্তিবর্গ হামলার খবর জানলেন কি করে?
- এই চার নাম্বার পয়েন্টটি ভাল করে লক্ষ্য করুন। অর্নব গোস্বামী হামলার পরেই শোসাল মিডিয়ায় ভিডিও পোষ্ট করে জানান তাঁর উপর কংগ্রেসের দুইজন লোক হামলা করেছে। অথচ সেই ভিডিওর ডেটা চেক করে দেখা যাচ্ছে যে ভিডিওটি বানানো হয়েছে রাত ৮ টা ১৭ মিনিটে। অর্থাৎ এক কথায় অর্নবের উপর হামলা হবার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি ভিডিওটি শুট করেছিলেন শোসাল মিডিয়ায় পোষ্ট করার জন্য।
www.metadata2go.com নামের একটি ওয়েব সাইট আছে। সেখানে যে কোন ভিডিও আপলোড করলেই বোঝা যাবে যে ভিডিওটা কত তারিখে এবং কোন সময়ে বানানো হয়েছে। সেই ওয়েব সাইটেই অর্ণবের ভিডিওর ক্রিয়েশন ডেট বলা হয়েছে উক্ত দিনের রাত ৮ টা ১৭ মিনিটে।
এটা প্রথমবার নয় যে অর্ণব গোস্বামী ভিডিও পোষ্ট করে মিথ্যা দাবী করেছেন। এর আগেও তিনি দাবী করেছিলেন যে গুজরাট দাঙ্গার সময় তিনি যখন রিপোর্টিং করতে গিয়েছিলেন তখন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তাঁর উপর হামলা করার চেষ্টা করেছিল। অর্ণবকে নাকি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সে হিন্দু না মুসলমান? অর্ণব নিজেকে হিন্দু বলা সত্বেও তাঁকে ছাড়ে নি। পরে তাঁর ড্রাইভারের হাতে ট্যাটু দেখানো হয় তখন নাকি উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তাঁকে ছেড়ে দেয়।
অথচ অর্ণব গোস্বামীর এই দাবি ছিল পুরোপুরিই মিথ্যা। তাঁর এই মিথ্যা আর অন্য কেউ নয় বরং ফাঁস করেছিলেন সেই চ্যানেলের চিফ এডিটার অর্থাৎ অর্ণবের বস বিখ্যাত সাংবাদিক রাজদ্বীপ সারদেশাই। রাজদ্বীপ জানান যে যখন গুজরাট দাঙ্গার রিপোর্টিং করা হয় তখন অর্ণব গোস্বামী আসামে ছিলেন। অর্ণব রিপোর্টিং করার সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। বরং সেই রিপোর্টিংটা করেছিলেন সাংবাদিক রাজদ্বীপ সারদেশাই নিজে। রাজদ্বীপ তাঁর দাবির প্রমাণ স্বরূপ সেই সময়ের কিছু ছবিও দেখান।
রাজদ্বীপ সারদেশাই যখন অর্ণবের উক্ত মিথ্যা ফাঁস করে দেন তখন অর্ণব তড়িঘড়ি করে শোসাল মিডিয়া থেকে তাঁর জারি করা ভিডিও ডিলিট করে দেন।
এই হল অর্ণব গোস্বামীর চরিত্র। তিনি সময়ে সময়ে নিজের রঙ পরিবর্তন করে থাকেন। বিজেপি ক্ষমতা আসার আগে অর্ণব গোস্বামী নরেন্দ্র মোদীকে দাঙ্গাবাজ, গুণ্ডা, ক্রিমিনাল বলতেন। অপরদিকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও তিনি হিন্দু সন্ত্রাসবাদী, আসামী, দাঙ্গাবাজ প্রভৃতি বলতেন। এখন তাঁরা ক্ষমতায় আসতেই অর্ণব নিজের রঙ পরিবর্তন করে ফেলেন এবং শাসকগোষ্ঠীর একছত্র দাসে পরিণত হয়ে যান। আগে ছিলেন কংগ্রেসের আজ্ঞাবহ দাস আর এখন বিজেপির প্রথম শ্রেণীর সেবক। সাংবাদিকতার শুরু থেকেই তাঁর এই দাসত্ববৃত্তি মওজুদ রয়েছে।
একবার তো তিনি বিখ্যাত সাংবাদিক অভিশার শর্মাকে বলেছিলেন, “সব সময় শাসক গোষ্ঠীর প্রশংসা করা উচিত। শাসকের ভুল ত্রুটি কোন সময় টেলিকাস্ট করা উচিত নয়।” এই কথা সাংবাদিক অভিশার শর্মা তাঁর একটি ভিডিওতে প্রকাশ করেছিলেন। অথচ সাংবাদিকতার মূল নীতিই হল শাসক গোষ্ঠীকে প্রশ্ন করা।
সুতরাং অর্ণব গোস্বামীর ক্রনোলজি বুঝুন।
সূত্রঃ অল্ট নিউজ
করোনা ভাইরাস নিয়ে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী তাসুকু হনজোর নামে একটি মিথ্যা অভিযোগ