মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
আফজল গুরুর পুরো মামলা আমরা জানি । আমরা জানি কিভাবে ভারতের বিচার ব্যবস্থা একজন শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিয়েছে। কি অপরাধ ছিল আফজল গুরুর । তিনি মুসলমান ছিলেন এইটুকুই তাঁর অপরাধ । তিনি পাকিস্থানের মাসউদ আজহারের জৈশে মুহাম্মাদের মত সংগঠন থেকে নিজেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ভারতীয় আইন তাঁকে ফিরে আসতে দেয়নি । ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ সালে দিল্লীর সংসদ ভবনে হামলার অপরাধে তাঁকে ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারীতে হত্যা করে ।
আসলে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার বিজেপির হিন্দুত্ববাদীদের ছাপিয়ে ফাঁসির রাজনীতির জঘন্য খেলা খেলেছে । কংগ্রেস সরকার আজমল কাসাব ও আগজল গুরুকে ফাঁসি দিয়ে বিজেপির উপর কিস্তিমাত করেছে । দুইজনকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে সোনিয়া গান্ধি বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদের কার্ডকে ছাপিয়ে যান । ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য কংগ্রেস এই ফাঁসির খেলা খেলেছে । অথচ আফজল গুরুর যদি আইনগতভাবে ঈমানদারীর সাথে বিচার হত তাহলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি কর্তৃক ফাঁসির শাস্তির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর একথা তাঁর উকিলের জানানো উচিৎ ছিল । যাতে তিনি পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারেন । তাহলে হয়তো আপাতত ফাঁসি স্থগিত থাকত । সরকারের পক্ষ থেকে আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অবধারিতভাবেই । তাঁকে বেঁচে থাকার কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি । এইজন্য তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোন খবর দেওয়া হয়নি এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে তাঁর সাক্ষাতও করতে দেওয়া হয়নি । অথচ বৃটিশ সরকারের মত অত্যাচারী সরকার ভগৎ সিংয়ের ফাঁসির সময়ও তাঁর পরিবারকে জানায় এবং পাকিস্থানের জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসির আগে তার স্ত্রী এবং কন্যা বেনযীর ভুট্টোকে সাক্ষাৎ করানোর জন্য আনা হয় এবং ফাঁসির পরে তাঁর লাশকে সমাধিস্থ করার জন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় । সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির পরেও তাঁর লাশ আমেরিকার মত মুসলিম বিরোধী রাষ্ট্র তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেয় । কিন্তু ভারতের ঘাতক কংগ্রেস সরকার ও আইনের দালালগুলো আফজল গুরুকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেয়নি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করার জন্য । এমনকি সুপ্রিম কোর্টও স্বীকার করে আফজল গুরুর বিরুদ্ধে কোন পাকাপোক্ত প্রমাণ নেই । কিন্তু তাঁকে মৃত্যুদণ্ড এজন্যই দেওয়া উচিত যে, যাতে দেশের সম্মিলিত বিবেক পরিতৃপ্ত হতে পারে । অথচ সারা পৃথিবীর কোন দেশের আদালত রায় দিতে গিয়ে এরকম ধরণের মানবতাবিরোধী যুক্তির ব্যবহার করেনি । প্রকৃতপক্ষে এরকম ধরণের যুক্তি মানবতার পরিপন্থী । যারা এরকম ধরণের কুযুক্তি প্রয়োগ করে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফাঁসি দেয় তাদেরকে তো জবাই করে ল্যাম্পপোষ্টে ঝুলানো উচিত যেমন সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির শাস্তি যে বিচারক দিয়েছিল সেই বিচারককে আইএস জঙ্গিরা ঝুলিয়েছে ।
নিরপরাধ আফজল গুরুর উপর কম অত্যাচার করেনি ভারতীয় সেনাবাহিনী । ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী আফজল গুরুর জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে । তারা তাঁকে ইনফরমার হওয়ার জন্য নিরন্তর চাপ দিতে থাকে । আফজল তাতে রাজি না হলে নিরাপত্তাবাহিনী তাঁর উপর অকথ্য নির্যাতন করে । ২২ রাষ্ট্রীয় রাইফেলের মেজর রামমোহন রায় তাঁর উপর শারিরিক নির্যাতন করে । তাঁর গোপনাঙ্গের ইলেক্ট্রিক শক দেয় । প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে এবং বেইজ্জত করে । আফজল গুরুর এতটুকু অপরাধ ছিল যে তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন । নিরাপত্তাবাহিনীর লোকেরা প্রায়ই আগজল গুরুকে উঠিয়ে নিয়ে যেত । সেখানে তাঁকে উৎপীড়ন করা হত, অকারণে মারধর করা হত । পরবর্তীকালে এর দায়িত্ব নেয় জম্মু ও কাশ্মীরের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ । এসওজি-র সদস্যরা তাঁকে পহলন পটন ও পরে হামহামায় নিয়ে যায় । সেসব জায়গাতেও তার উপর উৎপীড়ন – নির্যাতন করা হয় । জিএসপি-র বিনয় গুপ্ত ও দেবেন্দ্র সিং আফজল গুরুর মুক্তির জন্য এক লক্ষ টাকা দাবি করে । আফজলের স্ত্রী তাবাসসুম নিজের সমস্ত গহনা বেচে দেন স্বামীর মুক্তির জন্য । শান্তি সিং নামক এক অফিসার আফজলের উপর সীমাহীন উৎপীড়ন চালায় । প্রচণ্ড শীতে তাঁকে উলঙ্গ অবস্থায় উলটো করে ঝুলিয়ে রাখে এবং সেই অবস্থায় রেখে দেয় ঘন্টার পর ঘন্টা ।
সুতরাং আফজল গুরু রাষ্ট্রীয় ঘাতক দালাল কংগ্রেস সরকার ও বিচারব্যবস্থার সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন । আফজলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কোন প্রমাণ নেই । আমেরিকা যেমন উসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে ৯/১১ এ পেন্টাগন হামলার ব্যাপারে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেনি । অনুরুপ ভারত সরকারও আফজল গুরুর বিপক্ষে ২০০১ সালে সংসদ ভবনে হামলার কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেনি । উসামা বিন লাদেনকেও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হত্যা করেছে অনুরুপ আফজল গুরুকেও জুডিশিয়াল সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে । সকলেই অপরাধী । রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি থেকে শুরু করে সোনিয়া গান্ধি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যেকের হাত আফজল গুরুর খুনে লাল হয়ে আছে ।
আফজল গুরু, আজমল আমীর কাসাব, ইয়াকুব মেমন প্রভৃতিরা শুধু মুসলমান হওয়ার অপরাধে ফাঁসি হয়ে গেল, অথচ তামিলনাডুতে রাজিব গান্ধির হত্যাকারীদের লটকানো হল না, মালেগাঁও, নানদেড়, মক্কা মসজিদ, সমঝোতা এক্সপ্রেস, আজমির বিস্ফোরণের মূল অপরাধী সাধ্বী প্রতিজ্ঞা ঠাকুর, রাজকুমার পুরোহিত, স্বামী অসীমানন্দ প্রভৃতিদেরকেও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হল না শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার জন্য । যদি এদের স্থলে ইয়াকুব মেমন হতেন তাহলে তাদের জন্মদিন ও মৃত্যুদিন এক এক করে দেওয়া হত । কি অপরাধ ছিল ইয়াকুম মেমনের? সে শুধু মুসলমান ছিল এটাই ছিল তার অপরাধ । তাই হিন্দুত্ববাদীরা তাঁকে ফাঁসি দিয়ে নিজেদের কাপুরুষতা প্রকাশ করেছে ।
আফজল গুরু ফাঁসী বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে?
কথায় বলে “হাকিম নড়ে তবু হুকুম নড়ে না”।
হুকুম, রায়। সে বড়ো কঠিন ঠাঁই। একবার রায়দান হয়ে গেলে আর তার কোন নড়চড় হবার জো নেই – বিশেষতঃ সে রায় যদি আসে সর্বোচ্চ আদালতের এজলাশ থেকে। রায়দান মানে বিচারপর্ব সমাপ্ত, শেষ কথা বলা হয়ে গিয়েছে। আইন বলে নিম্ন আদালতের রায় উচ্চতর আদালতে পুনর্বিচারের জন্য আনা যায় (যদিও সে বড় সহজ কম্মো নয় – ভুক্তভোগী মাত্রেই তা জানেন) – কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেবে তার ওপর কোন আপীল চলে না। একমাত্র ব্যতিক্রম মৃত্যুদণ্ড – যেখানে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিলেও তা পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো যায় রাষ্ট্রপতির কাছে – তারপর রাষ্ট্রপতি সেই রায় বহাল রাখতে পারেন অথবা ক্ষমা / পরিবর্তন করতে পারেন – অন্য অপরাধের ক্ষেত্রে সে সুযোগটুকুও নেই। এই ব্যবস্থা আপাতভাবে আপত্তিকর মনে হলেও হতে পারে – কিন্তু বহুস্তরীয় ব্যবস্থা, বিচারবিভাগের দক্ষতা এসবের ভিত্তিতে এই বিচার ব্যবস্থাই শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসাবে মান্য। কিন্তু শ্রেষ্ঠ মানেই কি তা প্রশ্নের উর্দ্ধে? এই ব্যবস্থার দক্ষতা কি প্রশ্নাতীত ? স্বয়ং সুপ্রীম কোর্ট এই বিষয়ে কি বলেছেন একটু দেখা যাক – “All powers belong to the people and it is entrusted by them to specified institutions and functionaries with the intention of working out, maintaining and operating a constitutional order. To any civilized society, there can be no attributes more important than the life and personal liberty of its members. That is evident from the paramount position given by the courts to the Article 21 of the Constitution. These twin attributes enjoy a fundamental ascendancy over all other attributes of the political and social order and consequently, the Legislature, the Executive and the Judiciary are more sensitive to them than to the other attributes of daily existence. The deprivation of personal liberty and the threat of deprivation of life by the action of the State is in most civilized societies regarded seriously and recourse, either under express constitutional provision or through legislative enactment is provided to the judicial organ. But, fallibility of human judgment being undeniable even in the most trained mind, a mind resourced by a harvest of experience, it has been considered appropriate that in the matter of life and personal liberty, the protection should be extended by entrusting power further to some high authority to scrutinize the validity of the threatened denial of life or the threatened or continued denial of personal liberty. The power so entrusted is a power belonging to the people and reposed in the highest dignitary of the state.” (AIR 1989 SC 653 – State Vs Kehar Singh) – সর্বোচ্চ আদালত অন্ততঃ এমন দাবী করেন নি যে তার কথাই “শেষ” কথা। বস্তুতঃ “শেষ কথা” বলে কিছু হয় কি না শেষ পর্যন্ত সেই প্রশ্নটাই তুলে দিয়েছে এই অনুচ্ছেদ।
কিন্তু এই স্বচ্ছতা খুব সহজলভ্য নয় – সর্বোচ্চ আদালতের থেকেও। সম্প্রতি (কোন সময় থেকে “সম্প্রতি” ধরবেন সেটা পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম) একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় (এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানে অপরাধী, ভিক্টিম, এবং তাদের নিকটজনদের সাপেক্ষে) দেখা গেছে এই স্বচ্ছতার অভাব। এমন কি সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে এমন কিছু রায়ও আমরা সম্প্রতি দেখেছি। কিছু উদাহরণ – ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি, আরুশী তলওয়ার হত্যা মামলায় তলোয়ার দম্পতির যাবজ্জীবন, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি অথবা আফজল গুরুর ফাঁসি । এরকম কেস আরো বেশ কিছু আছে অবশ্যই – কিন্তু এগুলোকে বেছে নেবার পিছনে একটা মৌলিক কারণ রয়ে গেছে – সব কটি ক্ষেত্রেই জনমত এই সব শাস্তির পক্ষে প্রবলভাবে ছিল এবং সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে রায়দানে বিচারের নির্মোহ যুক্তিপরম্পরার তুলনায় জনতার আশা আকাঙ্খা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আপাততঃ আমরা এই তালিকার সর্বশেষ নামটি একটু খতিয়ে দেখবো – আফজল গুরু। খতিয়ে দেখবো অর্থাৎ কিছু প্রশ্ন করব – তুলব, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। এটা ধরে নিয়ে যে “The deprivation of personal liberty and the threat of deprivation of life by the action of the State is in most civilized societies regarded seriously and recourse” এবং “fallibility of human judgment being undeniable even in the most trained mind”। আফজল গুরুর ইতিহাস মোটামুটি পাঠকের জানা আছে – তবু একবার সংক্ষেপে মনে করে নেওয়া ভালো। ২০০১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর বিকালবেলা ভারতীয় সংসদ ভবনে এক অভুতপূর্ব আত্মঘাতী জঙ্গী হানায় পাঁচজন পুলিশকর্মী, একজন সংসদের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী, একজন মালী এবং পাঁচ জঙ্গীর সবাই নিহত হন – এবং প্রায় ২২ জন গুরুতর আহত হন (পরে এদের মধ্যে আরো দুজনের মৃত্যু হয়)। এই ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ দাবি করে পুরো অপারেশনটি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়েছিল জঙ্গী সংগঠন অধুনা বিলুপ্ত লস্কর-ই-তৈবা এবং জইশ-ই-মহম্মদ নামক দুটি উগ্রপন্থী সংস্থার দ্বারা। এই ঘটনার মূল চক্রান্তকারী হিসাবে পুলিশ মোট চারজনকে গ্রেফতার করে – এরা হলেন নভজ্যোৎ সাঁধু ওরফে আফসান, শওকৎ হোসেন, এস এ আর গিলানি এবং মহম্মদ আফজল গুরু। এদের মধ্যে আফসান এবং গিলানীকে সুপ্রীম কোর্ট পরে মূল অভিযোগগুলি থেকে রেহাই দেয়। শওকৎ হোসেনকে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও পরে তা যাবজ্জীবন কারাবাস এবং শেষে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ড সুপ্রীম কোর্টে বহাল থাকে। আফজল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আবেদন করেন যা রাষ্ট্রপতির দফতরে পড়ে থাকে।
এরপরে কিছু ঘটনাক্রম কালানুক্রমে সাজানো যাক – ২৩শে জুন ২০১০ – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আফজলের ক্ষমাভিক্ষার প্রার্থনা না-মঞ্জুর করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ জানায়। ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০১১ আজমল কাসভের (২৬/১১ মুম্বাই হানার অভিযুক্ত) ফাঁসির হুকুম হয়। ১০ই আগস্ট ২০১১ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাষ্ট্রপতির দফতরকে আবার চিঠি দিয়ে জানায় যে তারা আফজলের ক্ষমাভিক্ষা না-মঞ্জুর করার সুপারিশ করছে। ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১১ দিল্লি হাইকোর্টের সামনে বোমা বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং হরকত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামী নামে একটি মৌলবাদী সংগঠন দাবী করে আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ডের বদলা নিতে এই বিস্ফোরণ তারা ঘটিয়েছে। এর প্রায় এক বছর পরে, ১৬ই নভেম্বর ২০১২, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী আফজল গুরু সহ মোট সাতটি প্রাণভিক্ষার আবেদন, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগে না-মঞ্জুর করার সুপারিশ করেছিল, পুনর্বিবেচনার জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডের কাছে পাঠান। ২৩শে জানুয়ারী ২০১৩ শিন্ডে শুধু আফজল গুরুর আবেদনটি পুনরায় না-মঞ্জুর করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ফেরৎ পাঠান। ৩রা ফেব্রুয়ারী ২০১৩ রাষ্ট্রপতি আফজলের ক্ষমাভিক্ষার আবেদন না-মঞ্জুর করেন। এর ঠিক ছ’দিনের মাথায়, ৯ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সকাল আটটায় আফজলকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। অদ্ভুত ব্যপার হল এই ফাঁসির খবরটা এমনকি মিডিয়ার কাছেও ছিল না। আফজলের বাড়ির লোককে ওইদিন (৯ই ফেব্রুয়ারী) পাঠানো একটি চিঠিতে বিষয়টা জানানো হয় – যা তারা হাতে পান ফাঁসি হবার দুদিন পর (১১-০২-২০১৩)। শ্রীনগর পোস্ট অফিস জানায় তারা শনিবার সন্ধ্যায় চিঠিটি পান এবং পরদিন রবিবার হওয়ায় একদিন পরে সোমবার চিঠিটি ডেলিভারি করেন। আফজলের মৃতদেহ তিহার জেলেই কবর দেওয়া হয় এবং তার পরিবার দেহ সৎকার বা এমন কি আফজলকে শেষ দেখার সুযোগটুকুও পাননি। ফাঁসির পরদিন শুধু দূরদর্শনে এই ফাঁসির খবর ঘোষিত হয় এবং সেই সময়ে যাতে কোনরকম প্রতিবাদ সংগঠিত হতে না পারে তাই পুরো কাশ্মীরে কার্ফিউ জারি করা হয়। দূরদর্শনের ঘোষণার পর জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জনতাকে শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ জানান। সমস্ত কেবল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এবারে আমরা ফিরে যাই বিচারপর্বে – অর্থাৎ কীভাবে সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া এগোল, কীভাবেই বা চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করেও শুধু দুজনকেই শাস্তি দেওয়া হল, কিভাবে শুধুমাত্র আফজলের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকল, কী কী প্রমাণের ভিত্তিতে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল ইত্যাদি। ২০০১এর ১৩ই ডিসেম্বর মাসে পার্লামেন্ট আক্রমণের ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ তার ঠিক দু’দিনের মাথায়, ১৫ই ডিসেম্বর আফজলকে শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার করে। আফজলের কাছে তারা কীভাবে পৌঁছল? আদালতে পুলিশের বয়ান থেকে জানা যায় যে তারা প্রথম গ্রেফতার করে এস এ আর গিলানিকে – কিছু ফোন কলের সূত্র ধরে। সেখান থেকে ধাপে ধাপে তারা গ্রেফতার করে শওকৎ হোসেন গুরু এবং তার স্ত্রী আফসান গুরু ওরফে নভজ্যোত সাঁধুকে এবং সবশেষে মহম্মদ আফজল গুরুকে। গিলানি বা অন্যান্য মামলাগুলি এখানে যদিও আলোচ্য নয়, তবু পাঠককে একবার মনে করিয়ে দিই যে যে ফোন কলের সূত্র ধরে গিলানিকে গ্রেফতার করা হয় সেটি শেষ অবধি আদালতে টেঁকেনি এবং তার ভিত্তিতে গিলানির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগগুলি ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং গিলানি শেষ অবধি মুক্তি পেয়ে যান। আফজলের বিচার হয় POTO (Prevention of Terrorism Ordinance) আইনের আওতায় যা পরে সংসদে আইন হিসাবে পাশ হয় এবং POTA (Prevention of Terrorism Act)তে রূপান্তরিত হয়। ১৪ই মে ২০০২ (সময়টা খেয়াল রাখবেন – গুজরাট কাণ্ডের তখনো তিন মাসও কাটেনি) বিচারপতি এস এন ধিংড়ার বিশেষ আদালতে এই বিচার শুরু হয় এবং রেকর্ড দ্রুততায় মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ৮০ জনের সাক্ষ্য সহ বিচার সম্পূর্ণ করে রায় দেওয়া হয়। এই বিচার প্রসঙ্গে আইনের চোখে “অবান্তর” কতগুলো “গুজব” আছে – যেগুলো নিয়ে আমরা স্বভাব নিন্দুকের মত একটু প্যাঁচালি পাড়ব। যেমন জাস্টিস শ্রী ধিংড়া – দিল্লি এবং শ্রীনগর আদালত চত্বরে এঁর পরিচিতি “হ্যাঙ্গিং জাজ” বলে – এঁর হাত দিয়েই নাকি ভারতে সবচেয়ে বেশি ফাঁসির রায় বেরিয়েছে। এই মামলায় ধিংড়া সাহেবকে বিচারপতি করা হয়েছিল আইনমন্ত্রকের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে। ওদিকে মামলার ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের নাম রাজবীর সিং – পদাধিকারবলে তিনি তখন ছিলেন স্পেশাল সেলের এসিস্টান্ট কমিশনার। আইনতঃ কোন সমস্যা নেই – কিন্তু ওই যে নিন্দুকদের ব্যপার। দেশের পক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলায় তদন্তকারী অফিসার হলেন একজন এসিপি – পূর্ণাঙ্গ কমিশনার জুটল না। নিয়োগ করলেন স্বয়ং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানী – যিনি নাকি আবার “লৌহপুরুষ” হিসাবে খ্যাত ছিলেন একসময়ে (ছাতির মাপ ছাপ্পান্ন ছিল না পঞ্চান্ন সেটা এই অধমের জানা নেই)। রাজবীরের হয়ে কথা “বার করা”র দায়ীত্বে ছিলেন ডিসিপি অশোক চাঁদ। ইনিও দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের “স্বনামধন্য” এবং “সুযোগ্য” অফিসার বলেই (কু?)খ্যাত। আরো আছে – দুর্জনে বলে আফজল এই মামলায় গ্রেফতার হবার পরে বিচার শুরু হওয়া অবধি পাঁচ মাস কাল কোন আইনজীবি পায় নি – অর্থাৎ কেউ মামলা লড়তে রাজি হয়নি। শেষে মামলা আদালতে ওঠার পর “আসামী নিজে থেকে কোন আইনজীবি নিয়োগ করতে না চাওয়ায়” (আদালতের বয়ান) আদালত নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ১৭ইমে আইনজীবি সীমা গুলাটি এবং তার সহকারী নীরজ বনশলকে ডিফেন্স কাউন্সেল হিসাবে নিয়োগ করেন। অবাক ব্যপার – দেড় মাসও কাটেনি, জুলাই মাসের পয়লা তারিখে সীমা গুলাটি নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নিলেন। কারণ? – গুলাটি নাকি আরেক অভিযুক্ত গিলানির হয়ে মামলা লড়বেন, তাই তাঁর পক্ষে আফজলের হয়ে লড়া আর “সম্ভব নয়”। তা এই দেড় মাসে গুলাটি তার মক্কেলের হয়ে কী কী করলেন? একটি সিদ্ধান্ত – সব অভিযুক্তের ডিফেন্স কাউন্সেলরা সমবেতভাবে ঠিক করেন তারা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আদালতে কোনরকম চ্যালেঞ্জ করবেন না – যেমন মৃত জঙ্গীদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ইত্যাদি। এই সিদ্ধান্ত পরে আফজলের মৃত্যুবাণ হয়ে দেখা দিয়েছিল – কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। সীমা এই দেড় মাসকালে একবারের জন্যও তাঁর মক্কেলের কাছ থেকে কোনরকম নির্দেশ নেন নি বা আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেন নি। পরে এই বিষয়ে মহামান্য আদালতের পর্যবেক্ষণ -“counsel had exercised her discretion reasonably. The appellant accused did not object to this course adopted by the amicus throughout the trial” (SCJ, p 140)। অর্থাৎ মহামান্য আদালতের মতে মক্কেল তার উকিলের কাজের প্রতিবাদ করেননি – ভরসা করেছেন – কী মস্ত ভুল! তা সীমা ছেড়ে দিলেন, অসুবিধা নেই – আফজলের পরবর্তী কাউন্সেল, ২রা জুলাই থেকে সেই আদালতেরই ঠিক করে দেওয়া (গণতন্ত্রের পীঠস্থান – একটা লোক বিচার পাবে না তা তো হতে পারে না) – নীরজ বনশল। আজ্ঞে হ্যাঁ – সীমা গুলাটির জুনিয়র উকিল। একটু সাম্প্রদায়িক বদনাম আছে – তাতে কি, “ডিফেন্স” তো সলিড। আদালত বলেছেন, “taking an overall view of the assistance given by the court and the performance of the counsel, it cannot be said that the accused was denied the facility of effective defence” (ibid pp 141-42)। চুপ চুপ – গণতন্ত্র। তা বনশল সাহেবেরও প্রয়োজন মনে হয়নি একবারের জন্যও তাঁর মক্কেলের সঙ্গে দেখা করার, তার পরামর্শ বা নির্দেশ নেবার। এবার অবশ্য আফজল আর ভরসা রাখতে পারেনি (ছ্যাঃ ছ্যাঃ) – ৮ই জুলাই সে কোর্টে তার কাউন্সেলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং চার জন উকিলের নাম উল্লেখ করে তার হয়ে মামলা লড়ার জন্য। কিন্তু কী মুশকিল দেখুন তো, একজনেরও সময় হল না – অতএব মহামান্য আদালতের নির্দেশক্রমে নীরজ বনশলই বহাল রইলেন। রাম জেঠমালানি (এই মামলায় গিলানির উকিল) পরে এক জায়গায় বলেছেন পুরো শুনানিতে নীরজের কাজ ছিল শুধু আদালতে উপস্থিত হয়ে পুরো বিষয়টাকে গুলিয়ে দেওয়া (“his presence and participation have caused confusion and prejudice vitiating the trial”) । নীরজের কথা এই বলে শেষ করব যে তিনি ডিফেন্স কাউন্সেল হিসাবে প্রসিকিউশনের একজন সাক্ষীকেও ক্রস-এগজামিন করেননি এই মামলায়। পিরিয়ড। প্যাঁচালি অনেক হল – এবার আসল মামলায় ঢোকা যাক। আফজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী আর কীসের ভিত্তিতে সেই অভিযোগ প্রমাণ হল “Beyond the shadow of doubt”? অভিযোগ – ১৩ই ডিসেম্বর ২০০১ ভারতীয় পার্লামেন্টে যে আত্মঘাতী জঙ্গী হানা হয়, মহম্মদ আফজল গুরুই তার মূল চক্রী এবং তিনি লস্কর-ই-তৈবা এবং জঈশ-ই-মহম্মদ নামক দুই জঙ্গী সংগঠন (এই হামলা যাদের যৌথ অপারেশন বলে প্রচার)-এর সঙ্গে যোগসাজশে এই কাজ করেছেন। এই কাজের বিনিময়ে ১২ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে আফজল, গিলানি এবং শওকৎ মিলে মোট দশ লাখ টাকা পান – ধরা পড়ার সময়ে যে টাকা তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আফজলের যে “জবানবন্দী” এই মামলার মূল “পাথুরে প্রমাণ” হিসাবে মান্য হয়েছে সেখানে বলা আছে যে জঈশ এর নেতা মৌলানা মাসুদ আজহার এবং পাক আইএসআই-এর কাশ্মীর এলাকার সুপ্রীম কমান্ডার জনৈক গাজী বাবা ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নাশকতার ছক করে। গাজী বাবার নির্দেশে জনৈক তারিক আহমেদ মহম্মদ আফজল গুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাকে আজাদ কাশ্মীরের জন্য জেহাদে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। আফজল এরপরে জনৈক মহম্মদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালাতে থাকে এবং নিহত পাঁচ জঙ্গীর মধ্যে চারজনকে (হামজা, হায়দার, রাজা এবং রাণা) সে-ই জোগাড় করে এবং তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং ল্যাপটপ জোগান দেবার ব্যবস্থা করে। অপারেশনের আগে দিল্লিতে তাদের গোপন ডেরার ব্যবস্থাও আফজলই করে। দিল্লিতেই এই জঙ্গীরা আফজলের খুড়তুতো ভাই শওকৎ হোসেন গুরু এবং তার স্ত্রী আফসান গুরু এবং আফজলের প্রতিবেশি ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষার লেকচারার এস এ আর গিলানির সংস্পর্শে আসে। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় – আফজল কোথাও সরাসরি খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত নন – তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ষড়যন্ত্র এবং দেশবিরোধী কাজের। প্রমাণ-অপ্রমাণ ব্যতিরেকে বলা যায়, এই ধরণের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে – কিন্তু তা “বিরলের মধ্যে বিরলতম” অপরাধের মধ্যে পড়ে না। এবার দেখা যাক ওই সব পাথুরে প্রমাণ কী করে পাওয়া গেল। মজার ব্যপার হল আফজলের পুরো মামলাটা যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, পরবর্তীকালে তার মূল ভিতগুলো সব একে একে ধসে গেছে। যে গিলানির সঙ্গে ফোনের যোগসাজশে আফজলকে গ্রেফতার করা হয় তিনি প্রসিকিউশনের শত চেষ্টা সত্ত্বেও এই মামলায় বেকসুর খালাস পান – এবং তার বিরুদ্ধে ওই “ফোনের এভিডেন্স” আদালতে টেঁকেনি। পরে এক এক করে পাকিস্তান যোগ, আই এস আই, জঈশ বা লস্কর যোগ সবই অপ্রমাণিত হয় এবং মূল মামলা থেকে বাদ যায় (অথচ এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে প্রায় পরমাণু যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং উভয়পক্ষের প্রায় ৮০০ সেনা এবং অন্ততঃ ১০০ নাগরিক – যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ শিশু – মারা যান। চোদ্দজনের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় দুই রাষ্ট্র মিলে প্রায় এক হাজার মানুষ খুন করে। উভয়পক্ষের যুদ্ধ প্রস্তুতিতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যায়)।
বস্তুতঃ এই পুরো মামলায় আফজলের নিয়োগ তাহলে শেষ পর্যন্ত কে বা কারা করেছিল, তার কোন উত্তর নেই। উত্তর নেই, একটা এতবড় আন্তর্জাতিক স্তরের ষড়যন্ত্রের প্রধান চক্রীর পুরষ্কার মাত্র দশ লাখ টাকা (বা প্রাথমিক তত্ত্ব অনুযায়ী তার তিন ভাগের এক ভাগ) কেন সেই হাস্যকর প্রশ্নেরও। উত্তর নেই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের – যেমন, তিন তিনটে আদালত যেখানে আফজলের মামলার শুনানি হয়েছে, প্রত্যেকে তাকে একজন “আত্মসমর্পণকারী জঙ্গী” হিসাবে উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে আফজল অন্যূন ১৯৯৩ সাল থেকে নিয়মিত কাশ্মীরের মিলিটারি সংগঠন স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এস টি এফের কাছে আত্মসমর্পনকারী হিসাবে রিপোর্ট করেন এবং ২০০০ সালে আফজলকে এস টি এফ আরো একবার গ্রেফতার করে এবং প্রায় ছ’মাস নিজেদের হেফাজতে রাখে। ছাড়া পাবার জন্য এস টি এফের হাতে এক লক্ষ টাকা তুলে দিতে হয়েছিল বলেও আফজল তার জবানবন্দীতে (কোর্টের সামনে করা) জানিয়েছে। তাহলে তাদের নজরদারী এড়িয়ে আফজল এতবড় একটা ষড়যন্ত্রের অংশীদার হল এবং তা সাফল্যের সাথে সম্পাদন করল কেমন করে?
আরো মজার কথা – যে তারিক আহমেদএর কথা আগে বলা হয়েছে গাজী বাবার চর হিসাবে, জানা যাচ্ছে সেই ব্যক্তি নব্বই-এর দশকে এস টি এফ এর ইনফর্মার ছিলেন এবং আফজলকেও তিনি সেই কাজে যোগ দেবার প্রস্তাব দেন। আরো আছে। পার্লামেন্টে নিহত জঙ্গীদের অন্যতম, জনৈক “হামজা” সম্বন্ধে জানা যায় যে এই ব্যক্তি ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে থানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জম্মু কাশ্মীর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় – যাদের সঙ্গে এস টি এফ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেই চলে থাকে। সুতরাং এই জঙ্গী হানার পেছনে “আসলে” কারা ছিল, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি ধোঁয়াশাতেই রয়ে গেছে। এসব উত্তর না পেলে অবশ্য কারো কিছু আসে যায় না – দেশবাসী “শত্রু”র ফাঁসি হয়েছে, এই খবরেই খুশী। “জানি বাবা, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও প্রধানমন্ত্রীর নাম ঠিকানা – আর জানিনা”। কিন্তু তাহলে হাতে রইল কি – শুধু পেনসিল? না না তা কেন – আফজলের স্বীকারোক্তি রয়েছে যে। পাথুরে প্রমাণ। এই সমস্ত ষড়যন্ত্রে তার ভূমিকা আফজল যে নিজে মুখে স্বীকার করেছে। কোথায়? মহামান্য আদালতের সামনে? আজ্ঞে না না – পুলিশের কাছে। এবং – হ্যাঁ, এবং মিডিয়ার সামনে। রীতিমত প্রেস কনফারেন্স করে বিবৃতি দিয়ে। কিন্তু তারও আগে, এনডিটিভি-তে ব্রেকিং নিউজ – আফজলের গোপন জবানবন্দী – যা নাকি তারা পুলিশের বিশেষ সোর্সের কাছ থেকে “কিনে” নিয়েছে। বস্তুতঃ এই জবানবন্দীতে আফজল যা যা বলেছে, সাংবাদিক সম্মেলনেও প্রায় একই কথা, একই ভাষায় বলেছে – শুধু একটা জায়গা বাদে। সাংবাদিক সম্মেলনে (ঘটনাচক্রে স্কুপটা আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেখানে একমাত্র আজ তক ছাড়া ভারতের আর কোন প্রথম সারির মিডিয়া ছিলই না) আফজল এই মামলায় গিলানির জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন (তখনো গিলানি অভিযোগমুক্ত হননি এবং প্রসিকিউশন প্রাথমিক গল্পে টিকে আছে) – পরে এসিপি রাজবীর যাদব উপস্থিত মিডিয়াকে অনুরোধ করেন “দেশের স্বার্থে” ওই অংশটি যেন প্রচার না করা হয়। এবং দেশপ্রেমিক মিডিয়া এই অনুরোধ রক্ষা করেন। একমাত্র কেরলের একটি এবং কাশ্মীরের একটি স্থানীয় সংবাদপত্র ছাড়া কোন সর্বভারতীয় মিডিয়ায় এই অংশটির কোন উল্লেখ দেখা যায় নি। আর আজ তকের ওই ব্রেকিং নিউজে ওই “ছোট্ট” এনোমালিটুকু ছিলনা – আফজল একদম পুলিশের চাহিদামত গল্প খুব কনভেনিয়েন্টভাবে টিভির পর্দায় বলে যায়। এই স্বীকারোক্তিকে আদালত এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে অন্যান্য অসম্পূর্ণতা এবং অসঙ্গতিকে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন নি মৃত্যুদণ্ড দেবার আগে। অথচ এটাই কিন্তু আফজলের একমাত্র জবানবন্দী নয়। আফজল আরেকটা জবানবন্দী দিয়েছিল – হ্যাঁ, মহামান্য আদালতের সামনে, যেখানে সে বারবার তার প্রতি আনা প্রতিটা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমন কি এই বহুচর্চিত এবং “গুরুত্বপূর্ণ” জবানবন্দী নিয়েও তার বক্তব্য, পুলিশ তাকে ওই জবানবন্দী লিখে দিয়েছে এবং তা মিডিয়ার সামনে বলতে বাধ্য করেছে ভয় দেখিয়ে। যে “গোপন জবানবন্দী” আজ তক ফাঁস করেছে সেটা আসলে ওই সাংবাদিক সম্মেলনের একটা রিহার্সালের রেকর্ডিং। ওই স্বীকারোক্তি দেবার জন্য পুলিশ তাকে পুরো এক দিন নগ্ন করে রেখেছে, দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে, নিজের মূত্রপানে বাধ্য করেছে। পাঠক, এই মামলার অফিসার ইন চার্জ এবং তার সহকারীর “সুনাম”গুলো আরেকবার মনে করে দেখবেন। POTAর বলে বলীয়ান পুলিশের কাছে করা স্বীকারোক্তি আদালতের কাছে এক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় আদালতের সামনে করা স্বীকারোক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আফজলের বিরুদ্ধে আরো একটা প্রমাণ – সে মৃত জঙ্গীদের চিনত এ কথা “প্রমাণিত” হয়েছে। কীভাবে? না আফজল এদের সনাক্ত করেছে এবং সনাক্তকরণ পত্রে তার সই আছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও সনাক্তকারী হিসাবে আফজলের নাম লেখা আছে। সনাক্তকরণ পত্র তৈরি করে পুলিশ এবং তাতে শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয় সনাক্তকারীর। আফজল আদালতের সামনে তার স্বীকারোক্তিতে স্পষ্টই জানিয়েছে যে তাকে পোটায় গ্রেফতার করার পর স্পেশাল সেলের অফিসারেরা তাকে নানারকম কাগজে সই করান – এবং এর মধ্যেই ওই সব সনাক্তকরণপত্রগুলিও ছিল। এগুলি সে সই করতে না চাইলেও তাকে সই করতে বাধ্য করানো হয়। এই সনাক্তকরণ রিপোর্ট বিষয়ে আফজলের উকিল তদন্তকারী অফিসারকে কোনরকম ক্রস এগজামিন করেননি, এই যুক্তিতে (!) আদালত এই বক্তব্য নাকচ করে দেয়। অন্যদিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, পাঠকের খেয়াল থেকে থাকবে, ডিফেন্স কাউন্সেলদের যৌথ সিদ্ধান্তে আদালতে চ্যালেঞ্জ করাই হয়নি। অতএব দ্বিতীয় পাথুরে প্রমাণও হাজির, যার ভিত্তিতে “সন্দেহাতীত”ভাবে এই মামলায় আফজলের জড়িত থাকার, ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেবার কথা প্রমাণিত হল। অতএব এ হেন জাতীয় শত্রুর মৃত্যু ছাড়া কী-ই বা পাওয়ার থাকতে পারে? দেশের মানুষ তা-ই চায়। আজ্ঞে হ্যাঁ – রায়ের বয়ানেও আইনের যুক্তির চেয়ে এই চাহিদাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে – “Afzal is characterised as a “menace to the society”, whose “life should become extinct” to satisfy “the collective conscience of the society.” (SCJ PP 203-04)। দেশবাসীর হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধ। জাতীয় মিডিয়া উল্লাসে ফেটে পড়েছিল রায়ের পর – এবং রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়েছিল আফজলের ফাঁসির খবর তারা আগেভাগে না জানতে পারায় – এ কথা ভুলবেন না। এই “জনমত” তৈরীর পিছনে কী নিরলস পরিশ্রম তারা করেছে, তা অন্য কোথাও আলোচনা হতে পারে – বর্তমান আলোচনার বিষয় অন্য। সেই গোড়ার কথায় আরেকবার ফিরে যাই – “The deprivation of personal liberty and the threat of deprivation of life by the action of the State is in most civilized societies regarded seriously and recourse”। আমরা কি আবার ভাবতে বসব, আমরা, একবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষ, ভারতবাসী, “সিভিলাইজড সোসাইটি” হিসাবে গণ্য হবার উপযুক্ত কি না? যদি তা হই, বা অন্ততঃ নিজেদেরকে তাই মনে করি, তবে কি আরেকবার ওই মান হারা, প্রাণ হারা মানবের দ্বারে গিয়ে বলার সাহস রাখবো, “ক্ষমা করো”?
ভারতে আফজাল গুরুর ফাঁসি বাংলাদেশে
বামপন্থীদের প্রতিবাদ -নূর মোহাম্মদ
ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং! আমি অনেকটা নিশ্চিত- বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকবৃন্দ আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ঘোষিত কান্ডারি ভারতের সাম্প্রতিক দারুণ এক ঘটনার ওপর খুব সম্ভবত চোখ রাখছেন না। অথবা বাংলাদেশের খুবই কম সংখ্যক মানুষ (বিশেষত বাম সংগঠনের লোকজন) ব্যাপারটি নিয়ে কনসার্ন এবং এই ঘটনাপ্রবাহকে নিজেদের অর্জন এবং সাংগঠনিক সফলতা বলে বিবেচনা করছে। অপর দিকে আমি আরো নিশ্চিত (ভুল হলে খুশি হবো) বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা ভারতের আফজাল গুরুর ব্যাপারটা নিয়ে মোটেও কনসার্ন নয়। হিন্দুত্ববাদী ভারতের ঘটনাপ্রবাহে চোখ রেখে ইসলামিস্টদের কী লাভ- এই টাইপের ধারণা নিয়ে ঐ বিষয়ে হয়তো কোন আগ্রহ নেই। অথচ আজ যেভাবে বাংলাদেশের শীর্ষ ইসলামিস্ট নেতৃত্বকে মিডিয়া প্রোপাগান্ডা, বাম-রামদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র আর দেশপ্রেমের আবেগ দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হলো, ঠিক সেভাবেই ভারতে আফজাল গুরুকে ঝুলিয়ে দেয়া হলো। আমার আগ্রহের জায়গাটা ঠিক এখানেই! বাংলাদেশের বামরা শাহবাগে ফাঁসি ফাঁসি খেলে যা করলো, সে খেলারই ভারতীয় ভার্সনের বিরুদ্ধে ঐ বামরাই আজকে মানবাধিকার আর ব্যক্তি অধিকারের কথা বলে চিৎকার করছে। রাস্তায় বসে ফাঁসি আদায় করে মিষ্টি বিতরণকারী শাহবাগীরা ভারতের আফজাল গুরু নিয়ে হাপিত্যেশ করছে। এই পলিটিক্যাল হিপোক্র্যাসি নিয়ে ইসলামপন্থীরা কিছু জানছে না। আমি ভারতের সাম্প্রতিক আলোচিত ‘আফজাল গুরু ইস্যু এবং জেএনইউ আন্দোলন’ নিয়ে কথা বলছি। এই ঘটনা আলোকপাত করে আমি দু’টি অনুসিদ্ধান্তে পৌছেছি :
এক. বাংলাদেশের বামরা (ইসলামপন্থীদের তুলনায়) এখনো পড়াশোনা আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে অনেক বেশি কনসার্ন। একইসাথে বামরা খুব বেশি ‘পলিটিক্যাল হিপোক্র্যাট’ (রাজনৈতিক ভন্ড)।
দুই. বাংলাদেশের মুসলমানদের ভারতের ‘আফজাল গুরু ইস্যু এবং জেএনইউ আন্দোলন’ নিয়ে তেমন কোনো কনসার্ন অন্তত আমার চোখে পড়েনি।
‘আফজাল গুরু ইস্যু এবং জেএনইউ আন্দোলন’ আসলে কী?
২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ ভবনের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ৫ জন সশস্ত্র ব্যক্তি। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের চ্যালেঞ্জ করলে গাড়ি থেকে বের হয়ে তারা গুলিবর্ষণ করে ৮ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ১ জন বাগানের মালিকে হত্যা করে। পরে নিরাপত্তারক্ষীদের বন্দুকযুদ্ধে হামলাকারী ৫ জনই নিহত হয়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এনকাউন্টার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য কুখ্যাত দিল্লি পুলিশ স্পেশাল সেল দাবি করে যে, তারা ঘটনার আসল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে পেয়েছে। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ১৫ ডিসেম্বর দিল্লি থেকে অধ্যাপক এসএআর গিলানি, কাশ্মিরের শ্রীনগর থেকে শওকত গুরু ও তার চাচাতো ভাই আফজাল গুরুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয় শওকতের স্ত্রী আফসান গুরুকে। নিম্ন আদালত চারজনকেই ফাঁসির আদেশ দেয়। পরে হাইকোর্ট অধ্যাপক এসএআর গিলানি, শওকত গুরু এবং আফসান গুরুকে বেকসুর খালাস দিলেও ২০০৫ সালের ৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আফজাল গুরুর ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। রায়ে বলা হয় : ‘আফজাল গুরুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ওই ঘটনায় বিপুল সংখ্যক হতাহত এবং গোটা জাতি আলোড়িত হয়েছে। সমাজের সম্মিলিত বিবেক সন্তুষ্ট হবে যদি অভিযুক্তকে ফাঁসি দেয়া হয়।’ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে সকাল ৮টার সময় আফজাল গুরুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এই ফাঁসি কার্যকরের সাথে সাথেই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। ভারতের ইসলামিস্টরা (বিশেষ করে জুম্মু ও কাশ্মিরের মুসলমানরা) বলতে শুরু করেন সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এমনকি ফাঁসি দেয়ার আগে আফজাল গুরুর ন্যূনতম মানবাধিকার রক্ষা করা হয়নি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ইসলামপন্থীদের বিপরীত আদর্শের ধারক-বাহক ভারতের বামপন্থীরাও এই মিথ্যা ফাঁসির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। প্রতি বছরই ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আফজাল গুরুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। ভারতের নাগরিক সমাজই প্রকাশ্যে ভারতকে ফাঁসিবাদী রাষ্ট্র বলে সমালোচনা করছে। এ বছর (২০১৬) জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) একদল শিক্ষার্থীর আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকরের বর্ষপূর্তি পালনকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ভারত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীরা আফজাল গুরুকে ফাঁসিতে ঝোলানোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা আন্দোলনকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪ এ (দেশদ্রোহিতা) ও ১২০ বি (ফৌজদারি চক্রান্ত) ধারামতে মামলা দায়ের করে। গ্রেফতার করা হয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বামপন্থী ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা ব্যাপার। ইসলামিস্ট আফজাল গুরুর মিথ্যা ফাঁসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে গেল বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি। শুরু হয়ে যায় তুমুল আন্দোলন। ভারতের বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। কেবলমাত্র ভারত নয়, কলম্বিয়া, ইয়েল, হার্ভার্ড ও ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে চার শ’ শিক্ষাবিদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানালেন। চলছে শ্লোগান- ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া’, ‘কাশ্মির কি আজাদি তক, জঙ্গ রহেগি’। বাংলাদেশেও বামপন্থীরা ঐ আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পেইন করছে। ফেসবুক ওয়ালে জেএনইউ আন্দোলন নিয়ে প্রচারণা চলছে। আমার আগ্রহের জায়গাটা ঠিক এখানেই! বাংলাদেশী বামদের ভন্ডামির কথা আরেকটু পরে খোলাসা করি।
কে এই আফজাল গুরু?
৩০ জুন ১৯৬৯ কাশ্মিরের বারামুলা জেলার সোপোরে নামক এক ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন আফজাল গুরু। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সেখানকার একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু কাশ্মিরের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে তিনি মেডিক্যালের পাঠ সম্পন্ন করতে পারেননি। পরে তিনি ১৯৯৩-৯৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য, আফজাল গুরু বিভিন্ন সময়ে কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পার্লামেন্ট ভবনে হামলার ঘটনার আগে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কোনও অভিযোগ ছিল না।
কেন আফজালের ফাঁসি বিতর্কিত?
এক. ২০০২ সালের মে মাসে দ্রুত আদালতে বিচার শুরু হয়। তখন বিশ্ব ওয়ান-ইলেভেনের উন্মত্ততায় কাঁপছে। আফজাল গুরুকে এ সময় হাই সিকিউরিটি সেলে নিঃসঙ্গ অবস্থায় বন্দী করে রাখা হয়। তার কোনো আইনজীবী ছিল না। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একজন জুনিয়র আইনজীবী নিয়োগ দিলেও তিনি একটিবারের জন্য আফজাল গুরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আফজালের সমর্থনে কোনো সাক্ষীকেও হাজির করা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জেরা করেননি তিনি। ওই পরিস্থিতিতে কোনো কিছু করার সামর্থ্য নেই বলে মন্তব্য করেন বিচারক।
দুই. তারপরও কিছু তথ্য বের হয়ে আসে। কয়েকটি উদাহরণ হলো- গ্রেফতারের সময় জব্দ করা একটি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয়। তবে আইন অনুযায়ী সেগুলো সিলগালা করা হয়নি। বিচারের সময় ফাঁস হয়ে যায়, ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে গ্রেফতারের পরও হাত দেয়া হয়েছে। হার্ডডিস্কে দেখা যায়, সংসদ ভবনে প্রবেশের সময় ভুয়া অনুমতিপত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং আফজাল হামলার চিত্র এঁকে রেখেছেন। অর্থাৎ এত বড় হামলা করে আফজাল তার হার্ডডিস্কে রেকর্ড রেখেছেন!!
তিন. পুলিশ দাবি করেছে, মোবাইল নম্বর দিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে ২০০১ সালের ৪ ডিসেম্বর যোগাযোগ করেছেন আফজাল। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কল রেকর্ডে দেখা যায়, সিমটি ২০০১ সালের ৬ নভেম্বরের পর আর চালু ছিল না।
চার. আফজালকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, গিলানির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পুলিশি রেকর্ডে দেখা যায়, গিলানিকে গ্রেফতারের আগেই আফজালকে গ্রেফতার করা হয়। হাইকোর্ট একে স্ববিরোধী বললেও এ নিয়ে আর সামনে এগোয়নি।
অরুন্ধতি রায় বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকায় ‘The hanging of Afzal Guru is a stain on India’s democracy’ নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন, ‘এভাবে মিথ্যা আর সাজানো তথ্যের পাহাড়ের ওপর ভিত্তি করে প্রমাণ হাজির করা হয়। আদালত এসব বিষয় স্বীকার করলেও পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।’
আফজাল গুরুর মানবাধিকার লঙ্ঘন
আফজাল গুরু মহা-সন্ত্রাসী হোক বা না হোক, আইন ও নিয়মমাফিক তার যতটুকু অধিকার পাওয়ার কথা, কথিত গণতান্ত্রিক ভারত স্বৈরাচারীর মতো গুরুকে তা থেকে বঞ্চিত করেছে। আফজাল গুরুর ন্যূনতম মানবাধিকারের সুরক্ষা দেয়া হয়নি।
এক. আফজাল গুরু ১২ বছর পর্যন্ত তিহার জেলে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে পরিবার-পরিজনের কেউই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেনি।
দুই. বিচারপ্রক্রিয়া ছিলো সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ এবং সাজানো। রাষ্ট্র তার ইচ্ছামত বিচারকার্য চালিয়েছে।
তিন. পরিবারকে তার ফাঁসির সময় জানানো হয়নি। মৃত্যুপূর্ব সাক্ষাতের বিধান থাকলেও সরকার তা মানেনি। সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী কুলদীপ নায়ারও এ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। লিখেছেন, ‘জেনারেল জিয়াউল হকের মতো একনায়ক পর্যন্ত জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসির একদিন আগে তাকে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাহলে কেন সে অনুমতি গুরুর পরিবার পেল না? তার পরিবার-পরিজনকে দিল্লির তিহার জেলে এসে কবরে ফাতেহা পাঠের অনুমতি দিলে কোনো ক্ষতি হতো না।’
চার. মৃত্যুপূর্ব লেখা আফজালের চিঠি পরিবারের নিকট পৌঁছাতে সরকার গড়িমসি করেছে। এমনকি চিঠিটি মৃত্যুর তিনদিন পর বাড়ি পৌঁছেছে। স্বয়ং কুলদীপ নায়ার আফজাল গুরুর রায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে লিখেছেন,
‘When the Supreme Court bases its judgment primarily on the circumstantial evidence, it becomes all the more necessary to commute the death conviction to life sentence.’ অর্থাৎ ‘সুপ্রিম কোর্ট তার রায়টি দিয়েছেন প্রথমত ‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ’-এর ওপর ভিত্তি করে। এ কারণে (আফজাল গুরুর) মৃত্যুদন্ডকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে পরিবর্তন করার খুবই প্রয়োজন ছিল।’
পরবর্তীতে এক বিচারক স্বীকার করেছেন আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেয়া সঠিক রায় ছিল না। দিল্লি হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি এবং জাতীয় আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি অজিত প্রকাশ শাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আফজাল গুরুর ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনপত্র দীর্ঘ সময় ধরে মুলতবি রাখা হয়েছিল। পরে সরকার আচমকাই তার ফাঁসি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সব কিছু খতিয়ে দেখলে তার ফাঁসি হওয়ার কথা নয়।’ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বহু বছর ধরে কারাগারে থাকলে তার ফাঁসি হওয়া দুষ্কর হয়। এমনকি কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী শশী থারুর টুইট করে বলেন :
I think the hanging was both wrong & badly handled. Family should have been warned, given a last meeting & body returned.
ভারতে এখন সর্বত্র বলা হচ্ছে ভারত রাষ্ট্র হিসেব ফ্যাসিবাদী হয়ে যাচ্ছে। আইনের তোয়াক্কা না করেই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রায় দেয়া হচ্ছে। তরুণরা বলছে- এভাবে কত ফাঁসি দিবা? আমরা সবাই ‘আফজাল গুরু’। নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লোগান দেয়া হয়েছে : ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া’, ‘কাশ্মির কি আজাদি তক, জঙ্গ রহেগি’। ‘আফজাল গুরুর আত্মত্যাগ এখন স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। স্বয়ং দিল্লিতে ভারত বিরোধী শ্লোগান উঠেছে। নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বলছে : ‘দেশপ্রেম মানে অন্ধ আনুগত্য নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় হচ্ছে দেশপ্রেম। ভারতে জন্ম বলে ভারতের সব অপকর্ম মুখ বুজে সহ্য করতে হবে কেন?’ শিল্পী কবির সুমন গান লিখেছেন :
‘যেখানেই থাকো তুমি শ্রীনগরে দেখা হবে
ইতিহাস তুমি বলো স্বাধীনতা দেবে কবে।
ঝিলমের স্রোতে ভাসে রাতের কবিতা একা
আঁধারের কবি জানে শ্রীনগরে হবে দেখা।
ইন্স্যাস থেকে গুলি আকাশে বুলেট ক্ষত
তারারা গুলির দাগ প্রদীপ জ্বলবে যত।
কার ঘরে নিভে গেছে প্রদীপের শিখা কবে
আফজল গুরু শোনো শ্রীনগরে দেখা হবে।
ফাঁসিতে বুলেটে বুটে ইতিহাস ফ্যালে পিষে
সেই ইতিহাসই বাঁচে একা দোয়েলের শিসে।
কাশ্মিরে স্বাধীনতা ডাকছে দোয়েল একা
গানের কসম জান শ্রীনগরে হবে দেখা॥’
আফজাল গুরু ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে কঠিন রিঅ্যাক্ট করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, বাংলাদেশের শাহবাগী সমর্থক আনন্দবাজার কি সাবলীল ভাষায় ভারত মাতাকে ধুয়ে দিয়েছে! ‘লেঠেল দিয়ে দেশপ্রেম হয় না’- শিরোনামের প্রবন্ধে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য নামের ভদ্রলোক লিখেছেন : ‘জেএনইউ-এর ছাত্ররা কী করেছেন? আফজাল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদ করেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দিয়েছেন। কাশ্মিরকে স্বাধীনতা দাও, এ স্লোগানও তোলা হয়েছে। তাতে ঝামেলাটা কোথায়? আমি যদি ভারতকে ভীষণ ভালোবাসি, তা হলেও তার যাচ্ছেতাই নিন্দে করতে পারি। …দেশকে না-ভালোবাসার অধিকারও আমার আলবাত আছে। ভারতে থেকে আমি ভারতকেও ভালোবাসতে পারি, ভারত এবং ব্রাজিলকে ভালোবাসতে পারি, আবার ভারতকে না ভালোবেসে শুধু বেলজিয়ামকে ভালোবাসতে পারি। আবার, কোনও দেশকে না ভালোবেসে, সব দেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাসক্ত থাকতেও পারি। আমি কাকে ভালোবাসব, আর কাকে ভালোবাসব না, তা ঠিক করে দেয়ার অধিকার কারও নেই। ‘এক্ষুনি ভালোবাস বলছি, নইলে পেটাব’ এ তো ধর্ষকের উচ্চারণ। ভারতে থেকে আমি যদি পাকিস্তানকে ভালোবেসে গলা ফাটাই, তা আমার অধিকার। নিজের মতো ভাবনার অধিকার। মতপ্রকাশের অধিকার, বাক্স্বাধীনতার অধিকার।’
ভারতের জেএনইউ আন্দোলন এবং বাংলাদেশের বামদের ভন্ডামি
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাহবাগের অগ্নিকন্যা লাকী আক্তার তার ফেসবুকে বাংলা ট্রিবিউনের ‘ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তাপ, উত্তাল যাদবপুর’ শিরোনামের খবর লিংক শেয়ার করে ভারতের আন্দোলনের ঢেউ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সেক্রেটারি বিবৃতি দিয়ে জেএনইউ আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। আনু মুহাম্মদ, হায়দার আকবর খান লেলিন, জুনায়েদ সাকীরা বিবৃতি দিয়ে ভারতের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের পরিচিত বামদের প্রায় সবাই ফেসবুকে জেএনইউ আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পেইন চালিয়েছে। কী নিষ্ঠুর নিয়তি বামদের? আমাদের অগ্নিকন্যা লাকী আপু শাহবাগে গলা ফাটিয়ে জাতিকে ফাঁসি ফাঁসি খেলা শিখিয়েছিল। বাংলাদেশের শিশুরাও খেলার সময় বলতো- ‘স’ তে সাঈদী, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। এই বামরা আইনের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকদের যেকোনো মূল্যে ফাঁসি চেয়েছেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মানুষকে আইন সংশোধন করে ফাঁসি দিয়েছে। রায়ের দিন ব্যস্ত শাহবাগ মোড়ে রাস্তা আটকিয়ে মিছিল করেছে। ফাঁসির দন্ড কার্যকর করার পর উল্লাসে ফেটে পড়েছে। মিষ্টি বিতরণ করেছে। এই বামরা বাংলাদেশকে দু’ভাগ করে দিয়েছে। এক ঘৃণার জাহাজে যাত্রী তুলেছে। গন্তব্যও ঘৃণার দেশে। যার বিচার করা হচ্ছে, সে সত্যিই অপরাধী কি না, নিরপরাধ কাউকে বিচারের নামে হত্যা করা হচ্ছে কি না, অপরাধী হলেও তাঁর মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে কি না- এসব বিষয় এই বামদের কাছে বিবেচনার কারণ হয়নি। ‘আগে ঝুলায়ে দে, তারপর কথা’-টাইপের আচরণ দিয়ে বামরা এ দেশে আফজাল গুরুদের হত্যার হোলিখেলায় মেতেছে। ভারতের আফজাল গুরুকে নিয়ে বাংলাদেশের বামদের ভন্ডামি মানবিকতাকে আপনি কি করে সাধুবাদ জানাবেন? নিজ দেশে আফজাল গুরুদের ফাঁসি ফাঁসি খেলার মাধ্যমে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার আয়োজন করে ভারতের একজন আফজাল গুরুকে নিয়ে কৃত্রিম মানবাধিকারের ছেলে ভুলানো খেলায় সত্যিই কি মানবিকতা স্থান পায়? না কি এই নষ্ট বামদের দেখে মানবতা নিজেই নিজের গলায় ফাঁসির দড়ি পরে? লজ্জা করে না? আফজাল গুরুর হত্যাকারীদের নিয়ে একটি কথাও বলার আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখে নেয়া দরকার। তাহলেই নিজেদের বর্বর ও স্টুপিড চেহারা নিজের কাছেই ঘৃণার উপাদান হবে।
ভারতের আফজাল গুরু এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের নির্লিপ্ততা
সত্যি বলতে কি এই ব্যাপারটি আমার কাছে অপ্রত্যাশিত। ভারতে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, অথচ বাংলাদেশের মুসলমানদের তা নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
রাষ্ট্রীয় জুলুমের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নেতাদের জোর করে গলায় ফাঁসির দড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় ভারতে আফজাল গুরুকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন মুসলমান হিসেবে আমি শুধু আমার ব্যাপার নিয়েই পড়ে থাকতে পারি না। পাশের বাড়ির ভাইয়ের সাথে আমার মতই জুলুম করা হলে সর্বপ্রথম আমি প্রতিবাদ করবো। কারণ আমি জানি- এই জুলুমের আঘাত কেমন। আজ বাংলাদেশে বামরা ভন্ডের মতো স্ববিরোধী চরিত্রকে উন্মোচন করেছে। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে বাংলাদেশে নিজেরা যে দোষে দুষ্ট, ভারতের সেই দোষের বিরুদ্ধে কথা বলছে।
বিচারপ্রক্রিয়া, ফাঁসির মঞ্চ এক। পার্থক্য শুধু দু’টি সীমানা। ভারত আর বাংলাদেশ। কী দারুণ মিল? বাংলাদেশে আফজাল গুরুদের ফাঁসির আয়োজনে যে দেশের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, এবার একটা সুযোগ এসেছে তাদের আসল চরিত্রকেই বাংলাদেশী সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরার।