• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Sunday, June 1, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ৩]

আমিনুল ইসলাম by আমিনুল ইসলাম
June 11, 2021
in সাহিত্য আলোচনা
0
মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ১]

Image by Georgi Dyulgerov from Pixabay

Share on FacebookShare on Twitter

সাহিত্যচর্চা : সতের শতকঃ- সতের শতকে অর্থাৎ মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের ও বাংলা কাব্যের স্বর্ণযুগ। এ যুগে রােসাঙ্গ রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের চর্চা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। দৌলত কাজী, সৈয়দ আলাওল, মাগন ঠাকুর প্রমুখ কবির অবদানে এ শতাব্দী বাংলা কাব্য সাধনায় অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। এ গৌরবােজ্জ্বল কীর্তি আমাদের জাতীয় সাহিত্যের অতুলনীয় সম্পদ। প্রণয়-গাথার মধ্য দিয়ে সাহিত্যের রূপ-রস কবিত্বের শার্বত সৌন্দর্যের স্পর্শে আরাে মধুময় হয়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্য আপন ভুবনে লীলায়িত তরঙ্গভঙ্গে বিকশিত হয়ে অপরূপ সৌন্দর্যে মণ্ডিত হয়। মানবীয় প্রণয়গাথা ও আধ্যাত্ম প্রেম সাধনা—এ দু’ধারার নন্দিত কবি কীর্তি এক অনন্য মহত্ত্বে বিকশিত হয়ে বাংলার গৌরব প্রচারে সমর্থ হয়। আরবি, ফারসি ও হিন্দীর বিষয়বস্তুর সঙ্গে নিখিল ভারতীয় বিষয় ভাবনার চমৎকার সমন্বয় সাধিত হয় এ যুগে।

প্রথমেই বলতে হয় মুহম্মদ খানের (১৫৮০-১৬৫০) কথা, তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাধক মাহিসওয়ারের উত্তরপুরুষ। মুহম্মদ খান তার কাব্যে যে আত্মপরিচয় দিয়েছেন তাতে পীর বদরের নাম উল্লিখিত হয়েছে। এই পীর বদর কবি মুহম্মদ খানের পূর্বপুরুষ মাহিসওয়ারকে চট্টগ্রামে সাদরে বরণ করেন। মাহিসওয়ার ১৩৪০-৪৫ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে আসেন বলে অনুমান। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী রাস্তি খান ও তার পুত্র পরাগল খান এবং পৌত্র ছুটি খান বাংলা কাব্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। রাস্তি খানের অপর পুত্র মিনা খান। মিনা খানের পুত্র ইব্রাহিম বা বিরাহিম খান ও মুবারিজ খান। এই মুবারিজ খানের পুত্র ছিলেন মুহম্মদ খান, তিনি ছিলেন সৈয়দ সুলতানের শিষ্য।

মুহম্মদ খানের নামে মােট সাতটি কাব্যের নাম পাওয়া যায়—‘সত্যকলি বিবাদ সংবাদ’ (১৬৩৫-৩৬), হানিফার লড়াই’, ‘আসহাবনাম’, ‘মক্তুল হােসেন’ (১৬৪৬), ‘কিয়ামতনামা’, ‘দজ্জালনামা’ও ‘কাসিমের লড়াই’। ‘আসহাবনামা’ ও ‘কিয়ামতনামা’ প্রকৃতপক্ষে ‘মক্তুল হােসেন’ কাব্যেরই অংশবিশেষ। ফারসি থেকে অনূদিত ‘মক্তুল হােসেন’ অনুবাদ হয়েও নানা দিক থেকে মৌলিকত্বের দাবি করতে পারে। মধ্যযুগের অনুবাদ কাব্যের মধ্যে মুহম্মদ খানের কাব্য বেশিরভাগই আধ্যাত্ম রসে সিক্ত।

রূপকধর্মী কাব্য ‘সত্যকলি বিবাদ সংবাদে’৫১ সত্য ও কলির রূপকাবরণে কবি মুহম্মদ খান ন্যায়-অন্যায় ও পাপ-পুণ্যের বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি যে একজন শক্তিমান কবি ছিলেন তা তার ‘সত্যকলি বিবাদ সংবাদ’ কাব্য পাঠে বােঝা যায়। কাব্যটির অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করা হল—

“ধনহীন দাতার বিপদে মনে দুখ

ধনবন্ত কৃপণে ভূঞ্জ নানা সুখ।

নির্ধনী হইলে লােক জ্ঞাতি না আদরে

ফলহীন বৃক্ষে যেন পক্ষে নাহি পড়ে।

ধনহীন স্বামী প্রতি প্রেম ছাড়ে নারী

মধুহীন ফুল যেন না লএ শুক শারী।

ধনবন্ত মূখক পূজএ সর্বলােক।

ধনহােন্তে মান্যজন যদ্যপি বর্বর।…”

মুহম্মদ খান তার মল হােসেন’ কাব্য লিখেছেন তার পীর সৈয়দ সুলতানের নির্দেশে। কবি বলেছেন—“শাহ সুলতান পীর কৃপায় সাগর।।

নবীবংশ রচিছিলা পুরুষ প্রধান।

আদ্যের উৎপন্ন যত করিলা বাখান।।

রসুলের ওফাত রচিয়া না রচিলা।

অবশেষে রচিবারে মােক আজ্ঞা দিলা।।

তান আজ্ঞা শিরে ধরি মনেতে আকলি।

চারি আসব্বার কথা কৈলু পদাবলী।।”

মুহম্মদ খানের ‘মক্তুল হােসেন’ জঙ্গনামা জাতীয় কাব্যের মধ্যে প্রাচীনতম। সুকুমার সেনের মন্তব্য—সবচেয়ে পুরানাে জঙ্গনামা বােধ করি কবি মােহাম্মদ খানের ‘মুক্তুল হােসেন।‘৫২ কাব্যটি ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে রচিত বলে ধারণা করা হয়। কাব্যটি কারবালা প্রান্তরে ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংক্রান্ত আরবি ভাষায় রচিত কাব্যের বাংলা রূপান্তর। পরবর্তীতে সেটি ফারসিতে অনূদিত হয়। ফারসি অনুবাদ অবলম্বনেই বাংলা মুক্তল হােসেন রচিত হয়েছিল। ‘মুত্তল হােসেন’ থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করা হল—

“ভাবে ভবকল্পতরু মাহি-আসােয়ার

তান বংশে নসরৎ-খান গুণসার

তান সুত গণযুক্ত শ্ৰীযুক্ত জালাল (জামাল)…।

তান সুত অসীম মহিমা গুণবান

বান্ধবপালক বহু বিরহিম খান

তাহান অনুজ ধীর রূপে পঞ্চবাণ

সর্বশাস্ত্রে বিশারদ মুবারিজ খান।

তানপুত্র অল্পজ্ঞান খান মহম্মদ

অল্পবুদ্ধি বিরচিল পাঞ্চলিকা-পদ।

মুক্তল-হােসেন কথা অমৃতের ধার

শুন গুণিগণ মনে আনন্দ অপার।…”

‘মতুল হুসেনে’র শ্রেষ্ঠত্ব অন্যভাবে নিরূপিত হতে পারে। কাশীদাসী মহাভারতের মতাে মহাকাব্যোচিত ভাবগাম্ভীর্য অনুধাবন করে মুহম্মদ এনামুল হক ‘মুক্তল হােসেনকে মহাভারতের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে বিবেচনা করেছেন।৫৩ এ কাব্যের পরিকল্পনাও যেন মহাভারতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘আসহাবনামা’ কাব্যটি ‘মক্তুল হােসেন’ কাব্যের একটি পরিপূরক অংশ। কারবালার ঐতিহাসিক প্রান্তরে হাসান-পুত্র কাসেমনিধন ও কাসেমের সদ্যবিবাহিত পত্নী সকিনার বিলাপের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে ‘কাসেমের লড়াই’ কাব্যে। দজ্জালনামায় দজ্জালের বীভৎস আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তার নির্মম প্রকৃতি ও অত্যাচারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মুহম্মদ হানিফের শৌর্যবীর্যের কাহিনি অনেক পুঁথিকারের শিল্পীমানস আন্দোলিত করেছে। হানিফার লড়াইয়ে কবি মুহম্মদ খান এই বিশেষ কাল্পনিক চরিত্রটির বীর্যবত্তায় প্রভাবিত হয়ে হানিফার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাহিনির একটি বিশদ বর্ণনা দেন। শেষ বিচারের দিনে হজরত মুহম্মদ (সঃ) তার পাপী-তাপী অনুসারী-অনুগামীদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবেন। তারই কাহিনি বর্ণিত হয়েছে ‘কেয়ামতনামা’য়।

ষােল শতকের কবি শেখ পরানের পুত্র শেখ মুত্তালিব (১৫৯৫-১৬৬০) একজন উল্লেখযােগ্য কবি। তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।৫৪ তিনি সাধক হিসেবে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে অত্যধিক সমাদৃত ছিলেন। ইসলামি শাস্ত্র-জ্ঞান ও তার প্রকাশের মহিমাই তাঁকে জনপ্রিয় করেছিল। শেখ মুত্তালিব রচিত ‘কিফায়াতুল মুসাল্লিন’ কাব্যখানির বাংলা ও আরবি উভয় হরফে লিখিত পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। কিফায়াতুল মুসাল্লিনে’র মতই জনপ্রিয় হয় তার রচিত কায়দানী কিতাব। দুটি কাব্যেই বর্ণনায় অভিনবত্ব লক্ষ করা যায়।

‘কিফায়াতুল মুসাল্লিন’৫৫ গ্রন্থে শেখ মুত্তালিব মূলত ধর্মীয় বিষয়কেই গ্রন্থ রচনার উপজীব্য করেছেন। ইসলাম ধর্মের পালনীয় বিষয়গুলাে জনসাধারণকে জ্ঞাত করানাে কবি তার কর্তব্য মনে করেন। সেই সূত্রে ‘কিফায়াতুল মুসাল্লিনের ‘ওয়াজিব কথা বঙ্গভাষে কহে শেখ ‘পরাণ নন্দন’। প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য ইসলাম অবশ্য পালনীয় কিছু বিষয় যেমন ওজু, নামাজ, রােজা, এবাদত ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের সঙ্গে এসব বিষয়ের অপরিহার্য। সম্পর্কও রয়েছে। এসব ধর্মীয় বিধান পালনে মানুষের জীবন যে বহুলভাবে পরিশােধিত হতে পারে, সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। শেখ মুত্তালিবের ‘কিফায়াতুল মুসাল্লিনে’ ধর্মীয় জীবনের এসব কথা অকপটে বিবৃত হয়েছে।।

‘কায়দানী কিতাব’ গ্রন্থটিও তত্ত্বপূর্ণ শরীয়তী বিষয়ের উপর রচিত। কবির শিক্ষাগুরু মৌলবি রহমতুল্লাহর কাছ থেকে ইসলামি শরীয়ত সম্পর্কে কবি শেখ মুত্তালিব যে জ্ঞান লাভ করেন তারই উপর ভিত্তি করে লেখেন ‘কায়দানী কিতাব’। কায়দানী কিতাবে তিনি যে আত্মকথা বিবৃত করেছেন তাতে তৎকালীন কাব্যরীতি অনুযায়ী কিছু অভিনবত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। কবির এই অভিনব প্রয়াসের কিছু নমুনা—

“ত্রিশ রােজা ত্রিশ নিয়ত কহিলাম পুনি।

একশত ত্রিশ ফর্জ লন্ত জানি গুনি।।

ফাজিলের পদে গিয়া এই কথা শুন।

আন্ধি হােন্তে বাড়া ফাজিল আছে মনে গুণ।।

কি জানি কি বুঝি আমি কিতাব বেওর।

পড়িবার অক্তে বাপ মরি গেল মাের।।

গৃহবাসে বলা আর দুনিয়ার বেভার।

বেড়িল আপদে মাের দরস মাঝার।।

এ জন্য পড়িবারে নারিলুম বিস্তর।

অল্প অল্প জানিলুম শরার খবর।।”

মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি সৈয়দ সুলতানের পৌত্র মীর মুহম্মদ সফী (১৫৫৯-১৬৩০) ধর্মজ্ঞান ও পুঁথি রচনায় পারদর্শিতায় অগ্রগামী ছিলেন বলে তার নামের সঙ্গে ‘মীর’ সংযােজিত হয়েছে। তার পিতা সৈয়দ হাসান। মুহম্মদ সফীর তিনটি পুঁথির সন্ধান পাওয়া যায় ‘নূরনামা’, ‘নূর কান্দিল’ ও ‘সায়াতনামা’।

‘নূরনামা’ ও ‘নূর কান্দিল’ পুঁথি দুটি বিষয়বস্তুর বিচারে পৃথক কোনাে কাব্য নয়। এ দুটি পুঁথির ভাষায়ও তেমন কোনাে পার্থক্য নেই, যেটুকু পার্থক্য ধরা পড়ে তা নকলকারদের স্বেচ্ছাকৃত প্রবণতার জন্য ঘটতে পারে। ‘নূরনামা’ সৃষ্টিতত্ত্বের নানা বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই রচিত। কবি ‘নূরনামা’য় বলেছেন—

“কি রূপে হৈল নূর আল্লার দিদার।

কোন মতে হৈল স্বর্গ ক্ষিতি উতপন।।

কেমতে হৈল বােল জীবের সৃজন।

আব আতস খাক বাত কোথা হন্তে হৈল।

ভিহিত্য দোজখ বােল কেমতে হৈল। ।”

কবির অনুশীলনের অভিজ্ঞতা থেকে তত্ত্বগত যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তার একটা ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তবে তার মধ্যে তার বির্বাস আর অনুভবের বিষয়টিই মুখ্য। ‘সায়াতনামা’ একটি ক্ষুদ্রকায় পুঁথি। কোনাে শুভ-অশুভ সময়ে বা ক্ষণে কি করলে কি ফল হয় তার কথাই এই দ্র পুস্তকের বিষয়বস্তু।

মুহাম্মদ ফসীহ-র (১৬১০-১৬৮০) একটি কাব্য ‘মুনাজাত’-এর (১৬৭৫)৫৬ সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মধ্যযুগের কাব্যসমূহের মধ্যে এ কাব্য একক বৈশিষ্ট্যে বিদ্যমান। কবি আরবি হরফের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ করে প্রতি ছত্রের প্রথমে প্রথম হরফ দিয়ে আবজাদ রীতিতে কাব্যটি রচনা করেছেন। আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, মধ্যযুগের কাব্যধারার ব্যতিক্রম করেছেন হামদ ও নাত রচনায়। কাব্যের প্রথমে এ দুটি থাকার কথা। মুহম্মদ ফসীহ কাব্যের শেষে এ দুটি রচনা করেছেন। এ কাব্য ‘চৌতিশা’ রীতিতে লিখিত। এই ‘চৌতিশা’ বাঙালি কবি মুহাম্মদ ফসীহর নিজস্ব মৌলিক সৃষ্টি। শিল্পজ্ঞানের উপরে ফসীহর কাব্যের যে ধর্ম, তা শাস্ত্রীয় ধর্মবােধকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

মুহাম্মদ ফসীহর কাব্যের চরণে চরণে মর্মস্পর্শী কাতরতা লক্ষ করে মুহম্মদ এনামুল হক বলেছেন,

“(তাঁর কাব্যে) ভক্তের আত্মনিবেদন নিঝরিণীর স্বচ্ছ সলিল-প্রবাহের মত বেগবান হইয়া আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। এই আত্মনিবেদনের প্রতিটি চরণে জ্যোতিষ্মন হীরকখণ্ডের মত ইমানদারী ফুটিয়া উঠিয়াছে।”৫৭

কিছু নমুনা তুলে ধরা হল—

‘আলিফ’

আলিফে আল্লার নাম মনে করি সার।

আউয়ালে আখেরে প্রভু তুমি সে নিস্তার।।

অনাদি-নিদান প্রভু নির্বলীর বল।

অনাথের নাম তুমি এ মহি-মণ্ডল।।

‘বে’

বারিতলা নাম ধর রহ নিরাকার।

বিনি (বাবি) লক্ষ রাখিয়াছ সয়াল সংসার।।

বুদ্ধি করি চাহিলাম গহীন কাননে।

বিনি প্রভু আর কেহ নাহি সেই স্থানে।।

‘তে’

তৈয়ব শরীর প্রভু তুমি বিনা নাই।

তরাইবা ভয় হন্তে তুমি সেই ঠাই।।

তওবা তওবা মুএি করি বারে বারে।।

ত্যাজিলাম পাপ কর্ম খেমহ আমারে।।৫৮

 

কবি ফসীহ এই যে ভক্তি নিবেদনের কাব্য রচনা করেছেন, তার মধ্যে হিতবাক্য আছে, ধর্মের মর্মকথা আছে আর আছে। মানুষের মনে ধর্মবােধ জাগানাের প্রয়াস। কবি এই হিতবাণীকে দেশী ভাষায় রূপ দিয়ে পণ্ডিতদের উদ্দেশ্যে বলেন—

“মােহাম্মদ ফছি কহে শুন গুণিগণ।

মুনাজাত করিলাম প্রভুর চরণ।।

কোরানের মধ্যে আছে এ তিশ হরফ।

দেশীভাষে কহিলুং পঞ্চালি স্বরূপ।।

এসব অক্ষর দেখি কোরান মাঝার।

মােল্লা সবে করিলেক কিতাব সঞ্চার।।

ফারছির মধ্যে দেখি পণ্ডিতের গণ।

বাঙ্গালার ভাষে তবে করিল রচন।।

যার যেবা ইচ্ছা মতে নানান প্রকারে।

হিতবাক্য বুঝিবারে কহিছি পয়ারে।।”

মধ্যযুগের মুসলিম কবিরা ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ফুটিয়ে তুলে যেমন কাব্য রচনা করেছিলেন, তেমনি মানবীয় প্রণয় কাহিনিসহ সমাজের অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ও তাদের কাব্যে উঠে এসেছিল। এই ধারায় যেসব বাঙালি কবি মধ্যযুগে কাব্যচর্চা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে নসরুল্লাহ খােন্দকার (১৫৬০-১৬২৫) অন্যতম। কবির সুনির্দিষ্ট জন্মসাল না জানা গেলেও অনেক গবেষক মনে করেন যে, তিনি খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগে জন্মগ্রহণ করে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। ‘শরীয়তনামা’য়৫৯ লেখা হয়েছে—

“শরীয়তনামা বাণী লেখা সাঙ্গ ভেল।

সন তারিখ লেখিবারে শ্রদ্ধা বাড়ি গেল।।

চতুবিংশ অগ্রাণের জোহর সময়।

বিংশগ্রহ রমজানের চান্দের নির্ণয়।।

আছিল ঈদের দিন রােজ সােমবার।

সেদিন হইল দেখা সমাপ্ত সুসার।।”

কবি নসরুল্লাহ খান সম্পর্কে তথ্যাদি আছে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ প্রণীত ‘বাংলা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ’ গ্রন্থে। জানা যায় অনেক কাল আগে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ চট্টগ্রামের আনােয়ারা থানার ডুমােরিয়া গ্রামের জনৈক আমীর আলী চৌধুরীর বাড়িতে নসরুল্লাহর ‘জঙ্গনামা’ পুথি আবিষ্কার করেন। এরপর তাঁর ‘শরীয়তনামা’, ‘মুসার সওয়াল’, ‘হেদায়াতুল ইসলাম’ ইত্যাদি কাব্যের খবর পাওয়া যায়। সবগুলি কাব্যই ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক। তত্ত্বকে সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার কাব্য সাধনার প্রধান উপজীব্য।

‘জঙ্গনামা’ কাব্যে কবি যে উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হন, মধ্যযুগের অন্য কয়েকজন কবির মতাে ইসলামের মাহাত্ম্য বর্ণনাই তার মূল বিষয়। কাফের রাজন্যবর্গের বিরুদ্ধে হজরত আলীর যুদ্ধ বর্ণনার বিষয়টিকে কবি বেশ আড়ম্বর সহকারে বিবৃত করেছেন। এই কাব্যে কবির কাব্যপ্রীতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিশেষ করে মৃদুমধুর ছন্দের হিল্লোল নসরুল্লাহর রচনারীতি ও বর্ণনাকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছে। যেমন—

“মহীপাল এই বােল শুনি সৈন্যগণ।

সাজ রণ সৰ্ব্বজন হৈল ততক্ষণ।।

যত বাদ্য নৃপ বিদ্যা মনে আনাইলা।

এক বারে বাদ্য পরে প্রবার করাইলা।।

দগরেত কাঠিঘাত হইলেক যবে।

কম্পমান ত্রিভুবনে হই গেল ভবে।।

অর্থবার পদাতির হৈল সিংহধ্বনি।

বীরগণ আস্ফালন বিদরে মেদেনী।।”

‘মুসার সওয়াল’৬০ কাব্যে কবি আল্লাহর সঙ্গে হজরত মুসার (আঃ) সাক্ষাৎকারের বিবরণ দিয়েছেন। বিষয়টি প্রণােত্তরের মাধ্যমে বিবৃত হয়েছে। ‘হেদায়েতুল ইসলাম’ গ্রন্থের বিষয় প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত বিষয়েরই অনুসরণ। তাতে কবির ধর্মানুভূতিতে বিধৃত ধর্মতত্ত্বই প্রাধান্য পেয়েছে।

নসরুল্লাহর গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘শরীয়তনামা’ বিশেষভাবে খ্যাতিসম্পন্ন। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্যে নিষিদ্ধ ও করণীয় কাজের বিবরণী এই কাব্যে রয়েছে। মুসলমানদের মধ্যকার হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি ও হাম্বলি মজহাবের মধ্যে হানাফি মজহাবের মতানুযায়ী বিধিবিধানসমূহ এতে এতে বর্ণিত হয়েছে। এতে ইমাম আবু হানিফার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। শরিয়তের বিধিনিষেধ বর্ণনার পাশাপাশি নানা কুসংস্কার বর্জনের আহ্বানও এতে জানানাে হয়েছে। ইসলামের আদিরূপটি যাতে অটুট থাকে সে বিষয়ে কবির আন্তরিক আগ্রহ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

একশ্রেণির ধর্মগুরু সাধারণ মুসলিম সমাজকে অধঃপতন থেকে রক্ষার কোনাে ভুমিকা না নেওয়ায় নসরুল্লাহ খােন্দকার খুব মর্মাহত। তিনি তাদের নিন্দা করে মুসলিম সমাজ সংস্কারের চেষ্টা তাঁর কাব্যের মাধ্যমে করেছিলেন। কবি ফাতেহা দেওয়া, হালপালন ইত্যাদি কয়েকটি সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলােচনা করেছেন এবং এই প্রসঙ্গে মাওলানাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কারণ তার মতে মাওলানাদের কুপরামর্শেই অশিথিত লােকেরা এই সকল আচার অনুষ্ঠানে শরীয়ত-বিরুদ্ধ কাজ করে থাকে। অবশ্য মাওলানাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পাণ্ডুলিপির প্রায় পৃষ্ঠাতেই পাওয়া যায়। যে সকল মাওলানা শাস্ত্রের নামে অশিথিত লােকদের শাস্ত্র বিরুদ্ধ আচার শিখায়, কবি তাদের মূখের চেয়েও অধম বলেছেন—

“সে সব মওলানা জান মলিন হৃদয়।

তা হস্তে অধিক ভাল মুক্ত নিশ্চয়।।”

কবি নসরুল্লাহ মুসলমান সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার বর্জনের উপদেশ দিয়েছেন। যেমন—‘গােবরে ঘর লেপিলে ঘর অপবিত্র হয়, কুমারী মেয়ের নব পুষ্পকালে’ ঢােল বাজান, সহেলা গান করা ইত্যাদি শাস্ত্র বহির্ভূত বলা হয়েছে। কবি আরও বলেছেন যে, মেয়েলােক রজস্বলা হলে ঘর অপবিত্র হয় না, তিনি রজস্বলা নারীর কর্তব্য ও নিষিদ্ধ কাজ সম্পর্কেও আলােচনা করেছেন। মেয়েলােক সন্তান প্রসবের পরে কিভাবে বা কত দিনে পবিত্র হয় বা ওই অবস্থায় মেয়েদের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় তাও আলােচনা করা হয়েছে ‘শরীয়তনামা’য়। নারীর পর্দা সম্বন্ধেও আলােচনা করা হয়েছে এবং নারীদের যে ভিন্ন পুরুষের সামনে যাওয়া উচিত নয়, সে বিষয়ে কবি দীর্ঘ আলােচনা করেছেন। এ বিষয়ে চরণের উদ্ধৃতি দেওয়া হল—“ভিন্ন পুরুষেরে মুখ যে নারী দেখাইলে।

আপনার সােয়ামীর দাড়িতে অগ্নি দিল।।

নারীর বচন যদি শুনে ভিন্ন জনে।

আপনার সােয়ামীর মাথা মুড়াইল শানে।।

ভিন্ন পুরুষেরে মুখ দেখাইলে নারী।

নরকের হুতাশনে যাইবে পুড়ি।।”

কয়েকটি বিশিষ্ট দিনে এবং বিয়ের দিনে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে শরীয়তনামা’য়। নসরুল্লাহ নারীদের প্রতি পুরুষদের অবহেলাকে নিন্দা করেছেন,

“কত কত মনিষ্যের কুরসিৎ ধরন।

আপনা রমণী প্রতি দয়া ন করণ।।

আপনার পরিধান শুক্ল বসন।

দেখতে কুলীন কুল মােহন্ত লক্ষণ।।

সে সব নারীর শিরে ন দেখিয়ে বাস।।

এক এক নারীর মুখ যেন রবি হাস।।”

সঙ্গে সঙ্গে কবি ভণ্ড ফকির দরবেশদেরও কঠোর সমালােচনা করেছেন—

“কত কত দরবেশ যে ফকিরের গণ।

নমাজ করিলে বােলে কোন প্রয়ােজন।।

কেমন ফকির সেই রসুল উম্মত।

কেমন খলিফা তারে দিল খেলাফত।।”

নসরুল্লাহ খােন্দকারের শিক্ষা ও পাণ্ডিত্যের ছাপ ‘শরীয়তনামা’ গ্রন্থের পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন এবং ইসলামি শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ইসলামের বিধানসমূহ আলােচনার সময় তিনি অবলীলাক্রমে পবিত্র কোরআন, হাদীস এবং হেদায়া, কাফিয়া ইত্যাদি প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি প্রায় প্রত্যেক পৃষ্ঠাতেই পাওয়া যায়। অবশ্য তিনি কোরআনের সম্পূর্ণ আয়াত বা শ্লোকের প্রথম শব্দটি উদ্ধৃতি দিয়েই বিষয়বস্তু বুঝাবার চেষ্টা করেছেন। মৃত ব্যক্তির গােসল দেওয়া, কাফন দাফন নেওয়া, রােজা, তারাবীর নামাজ ইত্যাদি সম্বন্ধে তিনি যে মতামত ব্যক্ত করেছেন তা সম্পূর্ণ শাস্ত্রসম্মত এবং তিনি যে সকল আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন সেগুলি সত্যই শাস্ত্রবিরােধী।

কবি নসরুল্লাহ খােন্দকারের যতগুলি গ্রন্থ এযাবৎ সংগৃহীত হয়েছে, তার সবই ইসলামি ধর্মশাস্ত্র বিষয়ে বা মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত ধর্মকাহিনি অবলম্বনে। তার রচিত কোনও লৌকিক কাব্য এযাবৎ আবিষ্কৃত হয়নি। কবির কবিত্বশক্তি সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ অল্প। তাঁর ছন্দ-চাতুর্য পাঠককে মুগ্ধ করে এবং আরবি-ফারসি শব্দের বহুল ব্যবহার সত্ত্বেও ছন্দ-চাতুর্য বিশেষ ব্যাহত হয়নি আরবি-ফারসি শব্দ বাংলা শব্দের সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে গেছে। কবি চট্টগ্রামের অধিবাসী ছিলেন এবং সেই কারণে অনেক চট্টগ্রামী শব্দ বা শিষ্ট শব্দের চট্টগ্রামী রূপ গ্রন্থের প্রায় প্রত্যেক পৃষ্ঠাতেই পাওয়া যায়। আরবি ভাষার প্রভাবে চট্টগ্রামী চলিত ভাষায় নেতিবাচক শব্দে ‘না’ আগে ব্যবহৃত হয় ‘শরীয়তনামা’ গ্রন্থে এর প্রমাণ অহরহ পাওয়া যায়। কিন্তু এসত্ত্বেও কবির রচনা সুখপাঠ্য। সুতরাং পাণ্ডিত্য বা কবিত্ব যে দিকেই বিচার করি না কেন, কবি নসরুল্লাহ খােন্দকার মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে উচ্চস্থানের অধিকারী।

বিষয়বস্তুর দিকে বিবেচনা করে পণ্ডিতদের মধ্যে ‘শরীয়তনামা’ গ্রন্থের মূল্যমান নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে, কারণ ইসলামি ফেকাহ শাস্ত্রে আরবি, ফারসি এবং উর্দু ভাষায় প্রামাণ্য গ্রন্থের অভাব নাই, এমনকি বেশ কয়েকটি প্রামাণ্য গ্রন্থ বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। কিন্তু গ্রন্থের মূল বিচারের সময় কবির সময়ের প্রতি লক্ষ রাখার প্রয়ােজন। কবি যে সময়ে ‘শরীয়তনামা’ রচনা করেন (অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে), সে সময়ে আরবি এবং ফারসি ভাষায় ফেকাহ শাস্ত্রে প্রামাণ্য গ্রন্থের অভাব না থাকলেও মুদ্রণ যন্ত্রের অভাবে সেসব গ্রন্থের বহুল প্রচার সম্ভব ছিল না। তাছাড়া কিছু কিছু হস্তলিখিত আরবি-ফারসি গ্রন্থ পাওয়া গেলেও ভাষা জ্ঞানের অভাবে সেসব গ্রন্থ অশিক্ষিত বাঙালিদের বােধগম্য ছিল না। তাই বাঙালিদের বােধগম্য করে কবি ‘শরীয়তনামা’ গ্রন্থটি রচনা করেন। কবি নিজেই বলেছেন—

“প্রভুর হুকুম যত মুছহাফ মাঝার।

হাদিসে হুকুম কৈল্য রসুল আল্লার।

সে সব বচন পূর্বে ইমামের গণ।

কিতাব লিখিল সবে বুঝিতে কারণ।।

বাঙ্গালে ন বুঝে সেই কিতাব উত্তর।

ন বুঝিয়া মনস্তাপ পাওন্ত বিস্তর।।

তেকাজে কিতাব কথা ভাষে হিন্দুয়ানী।

পদবন্দ কৈম কথা মছায়েলা বাণী।।”

কাব্য এবং কাব্যের বিষয়বস্তু ছাড়াও ‘শরীয়তনামা’ মুসলমানদের সামাজিক ইতিহাস রচনায় অত্যন্ত সহায়ক। কবি এই গ্রন্থে শরীয়তের বিধান আলােচনা প্রসঙ্গে সামাজিক এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের উল্লেখ করেছেন। ফলে গ্রন্থটি সামাজিক ইতিহাস রচনার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।

মধ্যযুগের অন্যান্য অনেক কবির মতাে শাহ আবদুর রাজ্জাকের পুত্র আবদুল হাকিম (১৬২০-১৬৯০) তার পরিচয়-জ্ঞাপক কোনাে তথ্য রেখে যাননি। আবদুল গফুর সিদ্দিকী মনে করেন আবদুল হাকিমের নিবাস ছিল চট্টগ্রামে। কারাে কারাে মতে সন্দ্বীপ। মুহম্মদ এনামুল হক মনে করেন বিভাগপূর্ব নােয়াখালির অন্তর্গত সন্দ্বীপের সুধারামে কবি জন্মগ্রহণ করেন।৬১ আহমদ শরীফও নােয়াখালির সুধারামে আবদুল হাকিমের পৈতৃক নিবাস ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। কবি ১৬২০ থেকে ১৬৯০ সালের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন।

আবদুল হাকিমের নামে মােট আটটি কাব্যের সন্ধান পাওয়া যায় ‘ইউসুফ জোলেখা’, ‘লালমতি সয়ফুলমুলক’, ‘শিহাবুদ্দীন-নামা’, ‘নূরনামা’, ‘নসীহতনামা’, ‘চারি মােকাম ভেদ’, ‘কারবালা’ ও ‘শহরনামা’। বেশিরভাগ কাব্যই ফারসি কাব্যের অনুবাদ বা অনুসরণে লিখিত। বাংলা ভাষায় ধর্মকথা প্রকাশ করতে কবিরা নানাভাবে কৈফিয়ৎ দিয়েছেন। সকলেরই ধারণা ছিল এ ভাষা সংস্কৃতজাত। তাই দেখা যায় সৈয়দ সুলতান, মুহম্মদ খান, হাজী মুহম্মদ, শেখ মুত্তালিব প্রমুখ কবি মুনাফিক ফতােয়ার ভয়ে শংকিতচিত্তে বাংলায় লেখা ধরেছিলেন। বাংলায় ধর্মকথা শােনানাের জন্য কৈফিয়ৎও দিয়েছিলেন। এ কৈফিয়তের ব্যাপারটি সতের শতকের কবি আবদুল হাকিমের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। বাংলা ভাষার প্রতি সুগভীর মমত্ববােধ থেকে ‘নূরনামা’ কাব্যে তিনি বাংলা ভাষা-বিরােধী শ্রেণিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে লেখেন—

“যেসব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।

নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদশ ন যায়।।

মাতা-পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।

দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।৬২

মাতৃভাষার প্রতি প্রেম প্রদর্শনের অর্থ এই নয় যে, কবি অন্য ভাষায় বিরােধিতা করেছেন। ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে কবি সম্পূর্ণ উদার মনােভাব পােষণ করতেন। একই কাব্যে তিনি বলেন—

“আরবী ফারসী হিন্দে নাই দুই মত।

যদি বা লিখ এ আল্লা নবীন সিফাত।

সর্ব বাক্য বুঝে প্রভু বুঝে সর্ব কথা।

প্রভু আগে ভেদাভেদ নাহিক সর্বথা।।”৬৩

বাংলায় যদিও ইউসুফ জোলেখা কাব্যের আদিকবি শাহ মুহম্মদ সগীর, তবু আবদুল হাকিম সগীরের কাব্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে মােল্লা জামীর ‘ইউসুফ জোলেখা’কে আদর্শ করে তার কাব্য রচনা করেন। ইউসুফ-জুলেখার প্রেম কাহিনিটি সর্বজন-পরিচিত। রচনাশৈলীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই প্রণয়কাহিনি ফারসি এবং হিন্দী কবির হাতে নানাভাবে রূপায়িত হয়, কিন্তু মূল প্রণয়চিত্রটির কোনাে পরিবর্তন হয়নি। কেউ কেউ কাহিনির রােমান্টিক ভাবকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, কেউ প্রেমের বাস্তবতার বিষয়টিকে অধিক তাৎপর্যমণ্ডিত করে প্রকাশ করেছেন। আবদুল হাকিম জুলেখার নারী হৃদয়ের তীব্রতাকে ভাবের গভীরতা দিয়ে প্রকাশ করেছেন। যেমন—

“জলিখা নায়ানে রক্ত বহে অনিবার।

রক্তবর্ণ হইলেক বয়ান তাহার।।

নয়ানের জলে নিত্য করাঞ্জলি পুরি।

মুখেতে মাখয়ে যেন কুঙ্কুম কস্তুরী।।”

আবদুল হাকিমের ‘ইউসুফ জোলেখা’ ফারসি আখ্যান অবলম্বনে রচিত হলেও এ কাব্যে রচয়িতার মৌলিকতা অগ্ন। রয়েছে। কবির রচনারীতি যেমন প্রাঞ্জল, তেমনি তাঁর ভাষায় রয়েছে কাব্যের ছটা। একটি উদাহরণ—

“কুমারে গাঁথয় পুষ্প অদ্ভুত লক্ষণ।

বিনা ডােরে গাঁথে হার নৃপতি নন্দন।।

মালিনী গাঁথয় পুষ্প একই প্রকার।

সহস্রেক বর্ণে পপ গাঁথয় কুমার।।

মালিনী রন্ধয় অন্ন পাকশালা মাঝ

পুষ্পের আখরে পত্র লিখে যুবরাজ৷৷

রাজনন্দিনী শুন বাণী লিখি তব ঠাই।

আমি তােমা পীরিতের অধীন কানাই।।”

মধ্যযুগের ঘটনা-নির্ভর ও ভাবসর্বস্ব রচনায় বাচ্চাতুর্য এবং লিপিকুশলতা শিল্পের উৎকর্যজ্ঞাপক মানদণ্ড বলে স্বীকৃত। অথচ আবদুল হাকিম বহু আবেগঘন মুহূর্তের বর্ণনায় কিংবা চরিত্র-চিত্রণে কবি-অনুভূতিকে খুব একটা জাগ্রত ও বিস্তৃত করতে পারেননি। এজন্য আখ্যানের কিছু অংশের ঘটনা বা চরিত্র পাঠকের মনে রেখাপাত করে না, যেমন-

“আর দিন মােহাপ্রভু কৃপার সাগর।

ফিরিস্তার প্রতি আজ্ঞা করিলা সত্বর।।

আজ্ঞা পাই জিবরাইল করিলা তরগতি।

এআছিন সহরে গেল হরষিত মতি।।

নিশিরাত্রি জোলেখার নিদ্রাএ জরিল।

শিরা লাএ বসিআ দূতে সপ্পন দেখাইল।।

আজীজ মিছিরে তুমি করহ গমন।

তথা গেলে মিলিব ইছুপের দরশন।।

জেন ভানু সুর জিনি ভাবন মােহন।

একরাত্রি তিনর দেখিল সপ্পন।।

এ আছিন সহর ছাড়ি মিশ্ৰীরেত যাও

আজীজ মিছির গেলে মনবাঞ্ছা পাও।

সুরূপ দেখিল জান রূপ বিচইক্ষণ।

নিদ্রাভ হৈল কন্যা হইল জাগন।।”

এটি জোলেখার স্বপ্নদর্শনের চিত্র। জোলেখা স্বপ্নে এক সুন্দর যুবককে দেখে মােহিত হন। কবি বলেছেন, জোলেখার স্বপ্নের পেছনে আল্লাহর নির্দেশ আছে। চিত্রটি ঘটনার শুষ্ক বিবরণ মাত্র, এতে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নেই।

আবদুল হাকিমের ভাষায় সৌন্দর্য না থাকলেও, স্বচ্ছলতা আছে। কোথাও কোথাও তাঁর ভাষাকে বেগবান হতে দেখি। যেমন—

“কুমুদের প্রেম চন্দ্রের সঙ্গতি।

জল মধ্যে কুমুদ গগনে নিশাপতি।

ভূমিপৃষ্ঠে কমল গগনে দিবাকর।

কমলের প্রেম যেন সূর্যের উপর।।”

‘নূরনামা’ পুথিটি ফারসি কাব্য থেকে অনূদিত। ‘নূরনামা’ কাব্যে তত্ত্বঘটিত বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। কবি আবদুল হাকিম নূরের আসল রহস্য সম্পর্কে আলােকপাত করেছেন। এই রহস্যের মূলকথা হচ্ছে, সৃষ্টির আদিপর্বে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা থেকে নূর বা জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয় এবং সেই জ্যোতি থেকে হজরত মুহাম্মদের (সাঃ) জ্যোতির রেণু ছড়িয়ে পড়ে। ‘শিহাবুদ্দীন-নামা’ ফারসি ধর্মীয় পুস্তকের সারসংক্ষেপ। ‘নসিহতনামা’ গ্রন্থেও ধর্ম ও নীতি সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আবদুল হাকিম প্রথম শ্রেণির কবি-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ‘লালমতি সয়ফুলমুল্ক’ বর্ণনাসর্বস্ব কাব্য নয়, এতে নাটকীয় ঘটনার সরস বিবরণ আছে। কাব্যের সামাজিক শিষ্টাচার, পারিবারিক সৌজন্য, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবােধ উন্নতমানের। বণিক রােকবানুকে এবং নিশাচর দৈত্য লালমতিকে অপহরণ করলেও তাদের সন্ত্রমহানি করেনি। কবি সী-মােরগ দম্পতি ও পিপীলিকা পতির মুখে মানব-ভাষা আরােপ করে তাদের বাস্তবকল্প করে তুলছেন। প্রেয়সীর সন্ধানে সয়ফুলের গৃহত্যাগ ও নিরুদ্দেশ যাত্রা রােমান্স কাব্যের দুঃসাহসিক অভিযানের বৈশিষ্ট্য বহন করে। সে অজগরকে সম্পূর্ণ বাহুবলে, নিশাচর দৈত্যকে আংশিক কৌশল ও আংশিক বাহুবলে লড়াই করে হত্যা করেছে। এতে তার নায়কোচিত শৌর্যবীর্যের পরিচয় ফুটে উঠেছে। আবদুল হাকিম প্রেম ও সৌন্দর্যের বর্ণনাতে সংযম ও রুচিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।

কাব্যের নায়ক সয়ফুলমুকের পিতা সিকান্দার বাদশাহ, মাতা রৌশনকের নামধাম এবং তার আপদ-বিপদে খােজা খিজির ও ইলিয়াস নবীর আবির্ভাব ও সংকটোত্তরণে সহায়তা দান ইত্যাদি ঘটনা ছাড়া ফারসি ‘সিকান্দারনামা’ কাব্যের সাথে ‘লালমতি সয়ফুলমুল্ক’ কাব্যের অন্য কোনও যােগসূত্র নেই। এর মূল উৎস অজ্ঞাত কোনও লােক-কাহিনির মধ্যে নিহিত আছে।

গৌড়ের ফিরােজপুরের শাহ নিয়ামতুল্লাহ নামক বিখ্যাত দরবেশের সঙ্গে সতের শতকের জনপ্রিয় কবি সৈয়দ মর্তুজার (১৫৯০-১৬৬২) পরিচয় ও সৌহার্দ্য ছিল। মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরের নিকটবর্তী বালিয়াঘাটা নামক পল্লীতে মর্তুজার জন্ম। পিতা সৈয়দ হাসান উত্তরপ্রদেশের বেরিলির অধিবাসী ছিলেন। পিতা বেরিলি হতে মুর্শিদাবাদে আসেন। ‘জঙ্গিপুরের সূতী’ গ্রামে সৈয়দ মর্তুজার মাযার রয়েছে।৬৪ সেখানে তার ইনতিকাল উপলক্ষ রজব মাসে তিনদিন (১১-১৩ তারিখ) উরস পালন করা হয়। তাঁর রচিত ‘যােগ-কলন্দর’ কাব্যে বৈষ্ণব সাধনা ও সূফীতত্ত্বের সমন্বয় সাধিত হয়েছে। পণ্ডিত দারাশিকোর ‘মাজমাউল বাহরাইন’ যেমন উত্তর ভারতে মুঘল আমলের হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি সমন্বয়ের একটা বড় দিক উন্মােচিত করে, ঠিক তেমনি সৈয়দ মর্তুজার ‘যােগ কলন্দর’ও বাংলায় মুঘল আমলের হিন্দু-মুসলমান সংস্কৃতি সমন্বয়ের একটা প্রধান দিক খুলে দেয়। সৈয়দ মর্তুজা ছাড়া আরও অনেকে ‘যােগ-কলন্দর’ লিখেছেন, কিন্তু তার সবই মর্তুজার নকল বলে মনে হয়। মর্তুজার ‘যােগ-কলন্দর’ এর শুরু এইরকম—

“প্রথমে প্রণাম করি প্রভু নিরঞ্জন।

তার পাছে প্রণামিয়ে নবীর চরণ।।

করিম রহিম আল্লা পরােয়ারদিগার।

আঠার হাজার আলম সৃজন যাহার।।”

মুফতি গােলাম হােসেন সরওয়ার লাহােরির ‘খাজিনাতুল আফসিয়া’ গ্রন্থে সৈয়দ মর্তুজার পরিচিতি আছে। তাতে তাকে গজল গায়ক দরবেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৈয়দ মর্তুজা দেহতত্ত্ব ও মারফতী বহু গজল-গান রচনা করেছেন। বাংলা ছাড়া ফারসিতেও তিনি গজল রচনা করেছেন। তিনি বৈষ্ণব পদাবলী রচনায়ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর রচিত অন্যূন ২৮টি পদ পাওয়া যায়। সুকুমার সেন বলেন সৈয়দ মুর্তজা সুফী পীর ও বৈষ্ণব মহান্ত দুইই ছিলেন।

তিনি হিন্দু ধর্মের অনুশীলন করতেন বলে মর্তুজা হিন্দ নামে পরিচিত। আনন্দময়ী নামে এক ব্রাহ্মণকন্যা তার ভৈরবী বা সাধক সহচরী ছিলেন। অনেকে এজন্য মর্তুজানন্দ নামে ডাকতেন। মর্তুজার রচিত পদাবলী-

“মােরে কর দয়া, দেহ পদছায়া, শুনহ পরাণ-কানু।

কুলশীল সব ভাসাইনু জলে, প্রাণ না রহে তােমা বিনু।।

সৈয়দ মর্তুজাভণে কানুর চরণে নিবেদন শুন হরি।

সকল ছাড়িয়া রহিনু তুয়া পায়ে জীবন মরণ ভরি।।”

মূরলী পদে তিনি লিখেছেন—

“রে শ্যাম তােমার মূরলী বড় রসিয়া।

উচ্চৈস্বরে বাঁশী বাজে কুলের কামিনী সাজে

কোটি কোটি চাদ পড়ে খসিয়া।।

তােমার হৃদয় মাঝে

অমূল্য মাণিক্য আছে,

দেখিলে গােপিনী নিবে পশিয়া।

নন্দের দুলাল বলি পন্থে চ কত ছলি

কেলিয়া কদম্ব তলে বসিয়া।”

আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য

আরাকান রাজসভার পৃষ্ঠপােষকতায় মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের যে বিকাশ সাধিত হয়েছিল তা এদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এক্ষেত্রে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পুনর্গঠনে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেন। তিনি ও মুহম্মদ এনামুল হক যৌথভাবে ‘আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য’ নামে যে গ্রন্থ রচনা করেন তা ১৯৩৫ সালে কলকাতা হতে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে রােসাঙ্গ রাজসভায় বাংলা সাহিত্য চর্চার ধারার অমূল্য ইতিহাস সংকলন সূত্রে দৌলত কাজী, সৈয়দ আলাওল, কোরেশী মাগন ঠাকুর প্রমুখ কবির সাহিত্যকীর্তির পরিচয় বিধৃত হয়েছে। এভাবে এই গ্রন্থে সতেরাে শতকের বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ পর্ব উদঘাটিত হয়েছে। দীনেশচন্দ্র সেন ওই গ্রন্থের ভূমিকায় সঙ্গতভাবেই লিখেছেন,

“প্রবন্ধকার এই পুস্তকে এ দেশের এই সময়কার বাঙলা সাহিত্য চর্চার যে অমূল্য ইতিহাস সংকলন করিয়াছেন, তাহা বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসের একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়কে আশ্চর্যরূপে উজ্জ্বল করিয়া দিয়াছে।”৬৫

মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ
চিত্রঃ আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, Image Source: wikipedia

যাইহােক, বাঙালি মুসলমান কবিরা ধর্ম-সংস্কারমুক্ত মানবীয় প্রণয়কাহিনি অবলম্বনে কাব্যধারার প্রথম প্রবর্তন করে এ পর্যায়ের সাহিত্যসাধনাকে স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী করেছেন। ধর্মীয় ভাব-ভাবনায় সমাচ্ছন্ন কাব্য জগতের পাশাপাশি মুক্ত মানবজীবনের আলেখ্য অঙ্কনের মাধ্যমে মুসলমান কবিগণ সূচনা করেছেন স্বতন্ত্র ধারার। সুদূর আরাকানে বিজাতীয় ও ভিন্ন ভাষাভাষী রাজার অনুগ্রহ লাভ করে বঙ্গভাষাভাষী যে সকল প্রতিভাশালী কবির আবির্ভাব ঘটেছিল তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান অবদানে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেছেন এবং মধ্যযুগের ধর্মনির্ভর সাহিত্যের পাশে মানবীয় প্রণয়কাহিনি স্থান দিয়ে অভিনবত্ব দেখিয়েছেন। আরাকান রাজসভার মুসলমান কবিগণ কর্তৃক সৃষ্ট কাব্য রসাস্বাদনের নতুন ধারাটি বাংলা সাহিত্যের মূল প্রবাহ থেকে স্বতন্ত্র এবং ভৌগােলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও তা সর্বজনীন বাংলা সাহিত্যের অভ্যুদয় ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল।

আহমদ শরীফ মনে করেন, ‘আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য’ নামটি বিভ্রান্তিকর। এ নামটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকারদের বদৌলতে জনপ্রিয় হয়েছে, তবু এ নাম তথ্যবিরােধী বলে পরিহার্য। বরং বলা চলে ‘রােসাঙ্গের অমাত্যসভায় বাংলা সাহিত্য, যদিও সব কবি অমাত্য প্রতিপােষিত নন। আবার আলাওল প্রমুখ রচিত সাহিত্যের ‘আরাকান রাজ্যে বাংলা সাহিত্য’ নামও হবে অযৌক্তিক। কারণ এঁরা রাজধানী রােসাঙ্গবাসী বা রােসাঙ্গে প্রবাসী কবি। এ সময়ে আরাকান রাজ্যভুক্ত চট্টগ্রামবাসী হিন্দু-মুসলিম অনেক কবিও স্বগাঁয়ে স্বঘরে বসে কাব্য রচনা করেছেন। অতএব ‘রােসাঙ্গে বাংলা সাহিত্য’ নামই সঙ্গত।

সুকুমার সেনের মতে এই কবিরা ছিলেন, ফারসি সাহিত্যের মধুকর এবং ভারতীয় সাহিত্যের রস সন্ধানী। তারা ফারসি সাহিত্যের সৌন্দর্য-মাধুর্যের সঙ্গে ভারতীয় সাহিত্যের জীবনরস উৎসকে অনুধাবন করেছিলেন। ফলে তাদের রচনায় এই ধারার যথার্থ সম্মিলন ঘটেছে। তারা ফারসি ও হিন্দি উৎস থেকে কাব্য রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। বাংলা, সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষায়ও তারা অধিকার স্থাপন করেছিলেন হিন্দু যােগদর্শন সম্পর্কেও তারা অবহিত ছিলেন। এসব কারণে এই পর্যায়ে কবিগণের ব্যবহৃত ভাষায় আরবি ফারসি শব্দের ব্যবহার ব্যাপক নয়। ইসলাম ধর্ম ও রীতিনীতি সংত্রান্ত কাব্যে আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার বেশি প্রয়ােগ পরিদৃষ্ট হয়, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা বিশুদ্ধ সংস্কৃত বাকরীতির প্রয়ােগ করেছেন। এই পর্যায়ের কবিগণের সাহিত্যসৃষ্টি প্রধানত অনুবাদভিত্তিক, কিন্তু তাতে তাদের অম্লান কবি প্রতিভার যথার্থ পরিচয় ব্যাহত হয়নি।

আরাকানের বাংলা সাহিত্যে দুটি ধারা লক্ষণীয়। একটি ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কিত এবং অপরটি ধর্মনিরপেক্ষ রােমান্টিক প্রণয়কাব্যের ধারা। ইসলাম ধর্মের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও উপলব্ধির যথার্থ উপকরণ নিয়ে ধর্মীয় কাব্য রূপ লাভ করেছে। অপরদিকে প্রণয় কাব্যে আছে অনাবিল মানবিক প্রণয়ের উচ্ছাসপূর্ণ রােমান্টিক গাথা ও মর্মস্পর্শী গীতিসাহিত্য। তবে হিন্দি প্রণয়কাব্যের মধ্যে নিহিত সুফি মতাদর্শের প্রভাবে প্রণয়কাব্যের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ লাভ সম্ভব হয়েছিল।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য যখন দেবদেবীর মাহাত্মকীর্তনে মুখরিত হয়েছিল তখন বাংলার বাইরে আরাকানের বৌদ্ধরাজাদের সভায় বাংলা সাহিত্যচর্চার নিদর্শন হিসেবে কবি দৌলত কাজী (১৬০০-১৬৩৮) বিশালাকার ‘সতীময়না ও লাের-চন্দ্রানী’৬৬ কাব্যগ্রন্থ রচনা করে মানবীয় আখ্যায়িকার ধারা প্রবর্তন করেন। এতদিন পর্যন্ত বাংলা কাব্যে দেবদেবীর প্রশংসাই উপজীব্য ছিল, মানুষের কাহিনি অবলম্বনে কাব্য রচনার কোনাে প্রয়াসই তখন পরিলথিত হয়নি। মধ্যযুগে ধর্ম সংস্কারমুক্ত ঐহিক কাব্যকথার প্রবর্তন করেন মুসলমান কবিগণ এবং তা আরাকান রাজসভাকে কেন্দ্র করেই রূপায়িত হয়ে ওঠে। একান্ত মানবিক প্রেমাবেদনঘনিষ্ঠ এসব কাব্য অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ সময়ের কবিগণের পুরােধা দৌলত কাজী বাংলা রােমান্টিক কাব্যধারার পথিকৃৎ হিসেবে বিশেষ উল্লেখযােগ্য।

দৌলত কাজী চট্টগ্রামের রাউজান থানার অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রামে কাজী বংশে জন্মগ্রহণ করেন বলে অনুমান।৬৭ কবি তার কাব্যগ্রন্থের কোথাও নিজের জীবনচরিত সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেননি। ফলে আজও পর্যন্ত কাজী দৌলতের জীবনী সম্পর্কে সঠিক কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। কিংবদন্তির উপর নির্ভর করে ও সমালােচকদের পরােক্ষ অনুমানের ভিত্তিতে কবির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আলােকপাত করা ছাড়া আর কিছুই জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়।

কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, কবি অল্প বয়সে নানা বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। বয়সের স্বল্পতাহেতু নিজ দেশে স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ মনােরথ হয়ে কবি আরাকান রাজসভায় আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখানে যথার্থ মর্যাদা লাভে সমর্থ হন। আরাকানের তৎকালীন অধিপতি শ্রীসুধর্মার (১৬২২-১৬৩৮) ‘লস্কর উজির’ বা সমরসচিব আশরফ খানের অনুরােধে দৌলত কাজী ‘সতীময়না ও লাের-চন্দ্রানী’ কাব্য রচনা করেন।৬৮ এ কাব্যের সঠিক রচনাকাল জানা যায়নি অনুমান করা হয় ১৬৩৫ থেকে ১৬৩৮ সালের মধ্যে এ কাব্য রচিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত কাব্যটি সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই কবি মৃত্যুমুখে পতিত হন। কবির মৃত্যুর বিশ বছর পরে ১৬৫৯ সালে মহাকবি আলাওল কাব্যের শেষাংশ রচনা করে তা সম্পূর্ণ করেন।

‘সতী ময়না ও লাের চন্দ্রাণী’ কাহিনির আদি উৎস সম্পর্কে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সুকুমার সেনের মতে, জ্যোতিরীধর শেখরাচার্যের ‘বর্ণ রত্নাকর’ গ্রন্থে লােরক নাচ-এর উল্লেখ রয়েছে। গ্রন্থটির রচনাকাল চোদ্দ শতকের গােড়ার দিকে। ‘লােরক নাচ’ প্রকৃত পথে লােকনৃত্য। বিস্তারিত গবেষণার পর এ মর্মে তথ্য পাওয়া যায় যে, উপমহাদেশের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় লােকসমাজে গাথার আকারে লােরক চন্দ্রাণীর উপাখ্যানের অস্তিত্ব ছিল।

এ ব্যাপারে গ্রীয়ারসন, হান্টার, এল উইন, ক্যানিংহ্যাম প্রমুখ ইংরেজ পুরাতত্ত্ববিদরা লােককৃষ্টি সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। এগুলাে মােটামুটিভাবে ছত্তিশগড়, মির্জাপুর, দক্ষিণ বিহার, ভাগলপুর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, গ্রীয়ারসন দক্ষিণ বিহারের আহীর সমাজে প্রচলিত ‘লােরিক মল্লের’ যে লােকগাথা ভিত্তিক কাহিনি সংগ্রহ করেছেন, তার সঙ্গে কাজী দৌলতের ‘লাের চন্দ্রাণী’র উপাখ্যানের মিল রয়েছে।৬৯ তবে অবস্থাদৃষ্টে একথা বলা চলে যে, এর কাহিনি ধারা মধ্যযুগে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এই উপাখ্যানের ভদ্র কাব্য রচয়িতা হিসেবে মােল্লা দাউদ, মিয়া সাধন ও কাজী দৌলত একইভাবে প্রশংসার দাবী রাখে। শিল্পকলার উৎকর্ষের গুণে কাজী দৌলতের কাব্য নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ বলা চলে। অবশ্য দাউদ চোদ্দ শতকের, মিয়া সাধন পনের শতকের ও কাজী দৌলত সতের শতকের কবি ছিলেন। এঁরা সবাই সুফী মতবাদ ও দর্শনে প্রভাবিত।

প্রাচীন লােকগাথা অবলম্বনে হিন্দি কবি মিয়া সাধন হিন্দি ভাষায় ‘মৈনা কো সত্’ নামে যে কাব্যগ্রন্থ লিখেন দৌলত কাজী সম্ভবত সে গ্রন্থের অনুসরণে রচনা করেন সতীময়না ও লােরচন্দ্রাণী। এটি একটি আখ্যান কাব্য। দৌলত কাজীকে ভিন্ন ভাষা থেকে এ কাব্যের কাহিনি বাংলায় রূপান্তরিত করার জন্য সমরসচিব আশরফ খান নির্দেশ দিয়েছিলেন,

“ঠেট চৌপাইয়া দোহা কহিলা সাধনে।

না বুঝে গােহারী ভাষা কোন কোন জনে।।

দেশী ভাষে কহ তাকে পাঞ্চালীর ছন্দে।

সকলে শুনিয়া যেন বুঝয় সানন্দে।।

তবে কাজী দৌলৎ বুঝিয়া সে আরতী।

পাঞ্চালী ছন্দে কহে ময়নার ভারতী।।”

‘সতীময়না ও লাের-চন্দ্রানী’ কাব্যের কথাবস্তুতে হিন্দি প্রণয়কথা থাকলেও রূপে ও ভাবে তা বিশুদ্ধ বাংলা কবিতা। কাব্যের প্রথমে কবি আল্লাহ-রসুলের বন্দনা করেছেন। বন্দনার উদার ও সার্বভৌম ভাবটি ধর্মসম্প্রদায়-নির্বিশেষে সর্বজনগ্রাহ্য। তারপর রাজা শ্রীসুধর্মা ও সমরসচিব আশরফ খানের প্রশংসা, রাজার বিহার ও আশরফ খানের দ্বারা কাব্য রচনার নির্দেশের কথা বলে কবি কাব্যের কাহিনি আরম্ভ করেছেন।

‘ময়নামতী ও লােরচন্দ্রাণী’ কাব্যের প্রথম খণ্ডে নায়ক রাজা লােরকের অ্যাডভেঞ্চার ও চন্দ্রাণীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেম স্থান পেয়েছে। কাহিনির বর্ণনায় বলা হয়েছে, নায়ক লােরকের ঘরে পতিব্রতা ও সুন্দরী স্ত্রী ময়নামতী রয়েছে ও নায়িকা চন্দ্রাণীর স্বামী নপুংসক বামন। চন্দ্রাণীর স্বামীর মৃত্যুর মাধ্যমে এই কাহিনিতে নায়ক-নায়িকার মিলন সহজ হয়েছে। ময়নামতীর সতীত্বের কথা বর্ণনা করে কাব্যটির দ্বিতীয় খণ্ড রচিত হয়েছে। এখানে ময়নামতীর বারমাসী পদের এগার মাসের বর্ণনা পর্যন্ত দৌলত কাজী রচনা করে পরলােকগমন করেন। পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করে কাব্যটিকে (তৃতীয় খণ্ড) পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব মহাকবি আলাওলের। তার বর্ণনায় আছে লােরের সন্ধানে ময়নামতীসহ সুখপাখিকে প্রেরণ ও এর ফলশ্রুতিতে চন্দ্রাণীসহ লােরের নিজদেশে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা।

কাব্যের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে দৌলত কাজী কবি প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ে কবিপ্রতিভার যে অনন্য নিদর্শন দেখিয়ে গেছেন তার মূল্য মহাকবি আলাওলের রচনা পাশে খুব সহজেই স্বীকৃত। তৃতীয় খণ্ডে কবি আলাওল দৌলত কাজীর মত সার্থকতা লাভ করতে পারেননি। আলাওল তৃতীয় খণ্ডে নানা অবান্তর গল্পের অবতারণা করেছেন। রতনকলিকা ও মদনমঞ্জরীর প্রসঙ্গ এবং আনন্দ বর্মার গল্প এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য।

কবি কাজী দৌলত ময়নার সতীত্ব ও বারমাস্যার বর্ণনার ব্যাপারে মিয়া সাধনের ‘মৈনা কো সত’ ছাড়াও মােল্লা দাউদের ‘চন্দায়ন’কে অনুসরণ করেন। কবি দৌলতের ভাষা প্রকাশভঙ্গির মধ্যে কালিদাস, জয়দেব, বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের বাগবিন্যাসের ছায়া সুস্পষ্ট। এমনকি কাহিনিতে রামায়ণ-মহাভারতের কিঞ্চিৎ প্রভাবও লক্ষণীয়।৭০ কিন্তু তা সত্বেও দৌলত কাজী তাঁর কাব্যের কাহিনি নির্বাচনে এবং তার বিস্তারিত রূপায়ণে গতানুগতিকতাকে অনুসরণ না করে স্বাধীন চিন্তা ও অপূর্ব কলাকৌশলের পরিচয় দিয়েছেন। চরিত্র চিত্রণেও কবি যথেষ্ট কৃতিত্বের নিদর্শন দেখিয়েছেন। ময়না ও চন্দ্রানী চরিত্রের মাধ্যমে কবি আদর্শবাদ ও ভােগবাদ, সংযম ও স্বৈরাচার, সতীত্ব ও নারীত্ব, মর্যাদা ও লালসা, ত্যাগ ও ভােগ, ক্ষোভ ও তিতিক্ষা প্রভৃতির দ্বন্দ্ব সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রেমাস্পদ রাজা লােরের বিরহে ময়নামতী তার সতীত্ব রক্ষা করেছেন কঠোরভাবে। দৌলত কাজী এই আখ্যান বর্ণনায় অতুলনীয় দক্ষতায় লেখেন,

“না বােল না বােল ঠাই অনুচিত বােল।

আন পুরুষ নহে লাের-সমতুল।।

লাখ পুরুষ নহে লােরের স্বরূপ।

কোথায় গােময়-কীট কোথায় মধুপ।।”

বারমাসী রচনায় দৌলত কাজীর দক্ষতা অতুলনীয়, বারমাস্যা’ অংশে কবি লেখেন,

“দেখ ময়নাবতী প্রবেশ আষাঢ়

চৌদিকে সাজায়ে গম্ভীর।

বধুজন প্রেম ভাবিয়া পন্থিক

আইসয় নিজ মন্দির।।”

দৌলত কাজীর কবিত্বশক্তি ছিল অসাধারণ এবং তার শিল্প ও সৌন্দর্যবােধ ছিল তীর ও হৃদয়গ্রাহী। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ব্রজবুলি ভাষায়ও তাঁর বিশেষ ক্ষমতা ছিল। তিনিই বাংলা ভাষার একমাত্র কবি, যিনি হাতে কলমে প্রমাণ করেছেন যে রাধাকৃষ্ণ প্রেমকাহিনি উপজীব্য না করেও ব্রজবুলি ভাষার সার্থক ব্যবহার করা সম্ভব। কাব্যের লালিত্যবৃদ্ধির জন্য বারমাসীর কোনাে কোনাে পদে ব্রজবুলির আবহ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। কাব্যে ব্রজবুলী ও সংস্কৃত মিশ্রিত পঙক্তিও রয়েছে—

“আয় ধাএি কুজনী

কি মােক সুনাওসি

বেদ উকতি নহে পাঠং।।

লাখোঁ উপায়ে মিটাতে কো পারবে

যাে বিহি লিখিল ললাটং।।”

কাব্য পাঠে জানা যায় যে, কবি দৌলত তৎসম শব্দ প্রয়ােগের দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। আবার কাব্যের বারমাস্যা অংশে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণ পরিলতি হয়। যেমন-

“ভাদ্রমাসে চন্দ্রমুখী সুচরিতা একাকিনী

বসতি তিমির অতি ঘােরং।

অধরে মধুরৌ তাম্বুল বিনা ধূসরৌ

নিচল চকোর আখি ঘােরং।।”

ময়নার রূপ বর্ণনায় দৌলত কাজী যে উপমা-রূপকের ব্যবহার করেছেন তাতেও কবির যথেষ্ট কবিত্ব-শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন-

“রাজার কুমারী এক নামে ময়নামতী।

ভুবন বিজয়ী কন্যা জগতে পার্বতী।।

কি কহিব কুমারীর রূপের প্রসঙ্গ।

অঙ্গের লীলায় যেন বান্ধিছে অনঙ্গ।।

কাঞ্চন-কমল মুখ পূর্ণ শশী নিন্দে।

অপমানে জলেতে প্রবেশে অরবিন্দে।।

চঞ্চল যুগল আঁখি নীলােৎপল গঞ্জে।

মৃগাঞ্জন শরে মৃগ পলায় নিকুঞ্জে।।”

মননশীলতার সঙ্গে সৃজনশীলতার চমৎকার মেলবন্ধন লক্ষণীয় দৌলতের এই বর্ণনায়।

কবি দৌলত কাজী তাঁর কাব্য রচনার মাধ্যমে রূপকথাকে পরিণত মনের পাঠোপযােগী রােমান্টিক কাহিনিতে পরিণত করেছিলেন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে তার কাব্যটিকে একখানি মূল্যবান মর্ত্য জীবনের অসাম্প্রদায়িক কাব্য বলে বিবেচনা করা যায়। কবি হিন্দুর সামাজিক আচার ব্যবহার, জীবন, আদর্শ ও শাস্ত্রসংহিতালব্ধ নানা তথ্য যথাযথ পরিবেশন করে নিজের পাণ্ডিত্য ও বাস্তবতার নিদর্শন রেখেছেন। কবি তাঁর কাব্যে মর্ত্য জীবনের মহিমা উচ্চারণ করেছেন,

“নিরঞ্জন-সৃষ্টি নর অমূল্য রতন।

ত্রিভুবনে নাহি কেহ তাহার সমান।।

নর বিনে চিন নাহি কিতাব-কোরান।

নর সে পরম দেব তন্ত্র-মন্ত্র-জ্ঞান।।

নর সে পরম দেব নর সে ঈর।

নর বিনে ভেদ নাহি ঠাকুর কিঙ্কর।।

তারাগণ শােভা দিল আকাশ মণ্ডল।

নরজাতি দিয়া কৈল পৃথিবী উজ্জ্বল।।”

 

দৌলত কাজী ধর্মে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুর কাব্য-কাহিনিকে ঠিক যেভাবে হিন্দুর মতন করে বর্ণনা করেছেন এবং হিন্দুর সামাজিক আচার-ব্যবহার, জীবনাদর্শ ও শাস্ত্র-সংহিতালব্ধ নানা তথ্যকে তিনি যেভাবে কাব্যের রূপ দিয়েছেন তাতে তাঁকে হিন্দু কবি মনে হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন সাহিত্যের ইতিবৃত্তকার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি তাঁর কাব্যের মধ্যে চিত্রকল্প, উপমা, উদাহরণ প্রভৃতিতে সর্বত্র হিন্দু মনােভাব রক্ষা করেছেন। যেমন—

“জীবনে কি ফল যদি কলঙ্ক রহিল।

কলঙ্কের ভয়ে সীতা পাতালে নামিল।।

জটাধারী ব্যাঘ্রচর্ম বিভূতিভূষণ।

কণ্ঠে ক্ষুদ্রমালা মূর্তি যেন ত্রিনয়ন।।”

অথচ কবি দৌলত কাজী নিজে সূফী সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। কাব্যের মধ্যে তার ব্যক্তিগত ধর্মের প্রসঙ্গ তেমন উল্লেখ করেননি। বরং হিন্দু যােগ সাধনার প্রতি তার আকর্ষণ ছিল—

“জ্ঞান সমুদ্রেতে ডুবি মনচিত্ত

বিম্বু মত কায়া ভাসে।

নাহি মিলে স্থল হইয়া চঞ্চল

মন বান্ধি সেই আশে।।

নয়ন মুদিয়া পাতাল ভেদিয়া

দৃষ্টি চন্দ্র মূলে করে।

স্থলে ডিম্ব রাখি জলে কূর্ম থাকি

কুর্মে ডিম্বে দৃষ্টি ধরে।।

মারি মায়াজাল

জগৎ জঞ্জাল দশ বিশ করে দূর।

লক্ষ অন্তপট লঙ্গি দেখ তট

নির্মল চিত্তের মুকুর।।”

মানুষের অবয়বে দেবতা নয়, মানবীয় প্রেমের উচ্চতর নিদর্শন হিসেবে ‘সতীময়না ও লাের-চন্দ্রানী’ বাংলা কবিতার ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মােচন করে। এই সূত্রে ‘সতীময়নার’ কবি দৌলত কাজীকে সত্যেন্দ্রনাথ ঘােষাল কবি হিসেবে আলাওলের হতেও শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন।৭১ এ বিষয়ে মতভেদ থাকলেও দৌলত কাজীর কবিত্ব শক্তি সম্বন্ধে শ্রী ঘােষাল যা বলেছেন, তা সকলেই সমর্থন করবেন। শ্রী ঘােষাল বলেন,

“তাহার নিজস্ব ভঙ্গিমাটুকু কোথাও লােপ পায় নাই এবং বহু স্থল আছে যেখানে নিজস্বতা ও মৌলিকতা সর্বাগ্রে চোখে পড়ে।”৭২

‘নসীরানামা’ নামক মৌলিক কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি মরদন (১৬০০-১৬৪৫) রােসাঙ্গরাজ শ্রীসুধর্মার রাজত্বকালে (১৬২২৩৮) আবির্ভূত হয়েছিলেন। রােসাঙ্গ রাজসভার কবি হিসেবে তিনিই ছিলেন প্রাচীনতম। তিনি রােসাঙ্গ রাজসভার কবিদের মতাে প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন না ঠিক কথা, কিন্তু তিনি নিতান্ত হীন ব্যক্তিও ছিলেন না। তাঁর কাব্যে সতের শতকের বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এদিক হতে তার গুরুত্ব বাংলা সাহিত্যে কম নয়, বিশেষ করে তার রচনা কোনাে অংশে হীন নয়।

মরদনের কাব্যে আরাকানরাজ প্রশংসিত হয়েছেন। কবি সম্ভবত রােসাঙ্গের কাঞ্চি নামক নগরে বসবাস করতেন এবং সেখানেই কাব্য সাধনায় মগ্ন ছিলেন। কবি কাব্য রচনায় কোনাে অমাত্যের পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করেননি। মরদন সতের শতকের চতুর্থ দশকের মধ্যেকার কবি। তিনি রােসাঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত তার আবাসস্থল কাঞ্চি প্রসঙ্গে লিখেছেন,

“সে রাজ্যেতে আছে এক কাঞ্চি নামে পুরী

মুনীন মুসলমান বৈসে সে নগরী।

আলিম মৌলানা বৈসে কিতাব কারণ

কায়স্থগণ বৈসে সব লেখন পড়ন।।

ব্রাহ্মণ সজ্জন তাত বৈসএ পণ্ডিত

নানা কাব্য রস সব কহএ সুরীত।”

দেশীয় উপাদানে এমন কাব্যরচনার কৃতিত্বে কবি মরদন গৌরবান্বিত। ‘নসীরানামা’৭৩ কাব্যের কাহিনিতে নিয়তির অমােঘ লীলা প্রতিফলিত হয়েছে। তবে উপাখ্যানে আছে রােমান্স ও আদিরসের পরিচয়। তাই ধর্মবুদ্ধিসম্পন্ন পাঠকের কাছে তা প্রিয় হতে পারে না। কবি লােকশিক্ষার উদ্দেশ্যে লােকশ্রুতির উপাখ্যানকে স্বাধীনভাবে কাব্যে রূপায়িত করে তুলেছিলেন। কবি তার কাব্যের বিভিন্ন স্থানে ‘দুই সাধু কথা’, ‘নাসিরা বিবি-নুরুদ্দিন বিহা’ এবং ‘নুরুদ্দিন বাখান’ নামে উপাখ্যানটিকে অভিহিত করেছেন।

 

বাকি পর্বগুলি পড়ুন,

১. মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ১]

২. মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ২]

৩. মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ৩]

৪. মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ৪]

৫. মধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ [পর্ব ৫]

 

তথ্যসূত্রঃ

  • ৫১. আহমদ শরীফ সম্পাদিত, মুহম্মদ খানের ‘সত্যকলি বিবাদ সংবাদ’, ঢাকা বিথবিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ, ১৯৫৯।
  • ৫২. সুকুমার সেন, ইসলামি বাংলা সাহিত্য, কলকাতা, ১ম সং, কলকাতা, ১৩৫৮, পৃ. ৪৫।
  • ৫৩. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫।
  • ৫৪. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩০। আরওদেখুন-কাজী দীন মুহম্মদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২ – ৩৩।
  • ৫৫. আহমদ শরীফ সম্পাদিত, শেখ মুত্তালীবের ‘কিফায়াতুল মুসাল্লিন’ ও ‘কায়দানী কেতাব’, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৭৮
  • ৫৬. আহমদ শরীফ সম্পাদিত, মুহম্মদ ফসীহর ‘মুনাজাত’, বাংলা একাডেমি পত্রিকা, ১৩৬৬, ঢাকা।
  • ৫৭. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৩।
  • ৫৮. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৩।
  • ৫৯. আবদুল করিম সম্পাদিত, নসরুল্লাহ খােন্দকার বিরচিত শরীয়তনামা’, কাকলী প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০২।
  • ৬০. আহমদ শরীফ সম্পাদিত, নসরুল্লাহ খন্দকারের ‘মুসার সওয়াল’, সাহিত্য পত্রিকা, ঢাকা বিধবিদ্যালয়, ফাল্গুন ১৪০৪।
  • ৬১. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৩। কবি আবদুল হাকিম ও তাঁর কাব্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন-রাজিয়া সুলতানা, আব্দুল হাকিম কবি ও কাব্য, বাংলা একাডেমি পত্রিকা, প্রথম সংখ্যা, ১৯৮৭, ঢাকা।।
  • ৬২. রাজিয়া সুলতানা সম্পাদিত, আবদুল হাকিম রচনাবলী, ঢাকা বিথবিদ্যালয়, ঢাকা, ১৯৮৯, পৃ. ৩৪৭।
  • ৬৩. রাজিয়া সুলতানা সম্পাদিত, আবদুল হাকিম রচনাবলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭১।
  • ৬৪.। কবি সৈয়দ মর্তুজা সম্বন্ধে জানতে হলে দেখুন-জার্নাল অফ এশিয়াটিক সােসাইটি অফ বেঙ্গল, কলকাতা, ১৯২৪, আরও দেখুন-নিখিলনাথ রায়ের প্রবন্ধ, সুধা পত্রিকা, প্রথম বর্ষ, মাঘ ১৩৩১, মুর্শিদাবাদ।
  • ৬৫. আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ এনামুল হক, আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য, সােপান সং, কলকাতা, ২০১৬, দীনেশচন্দ্র সেন লিখিত ভূমিকা দেখুন। সুনীতি চ্যাটার্জী আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে লিখেছেন, “These writers introduced a new range of subjects for the people of Bengal, very largely though not entirely in the secular vein.’ (S K Chatterjee, Language & Literature of modern India, Kol., 1963, P. 173).
  • ৬৬. সত্যেন্দ্রনাথ ঘােষাল সম্পাদিত, সতী ময়না ও লােরচন্দ্রাণী, বিভারতী, শান্তিনিকেতন, ১৩৬২। ‘সতী ময়না ও লােরচন্দ্রাণী’ কাব্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে দেখুন- আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ এনামুল হক, আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৪-৫৮।
  • ৬৭. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, খণ্ড-৩, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭০৮। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, মাঘ ১৩৩৫, পৃ. ২৮৪। আরও দেখুন- আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ও মুহম্মদ এনামুল হক, আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৪।
  • ৬৮. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৩। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ এনামুল হক, আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৪। সাধনা, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্য, ১৩২৭, পৃ. ৮৫। আরও দেখুন-বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, দ্বিতীয় সংখ্যা, ১৩৩৩, পৃ. ৬৪।
  • ৬৯. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড-৩, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭১৩-১৪।
  • ৭০. সত্যেন্দ্রনাথ ঘােষাল সম্পাদিত, প্রাগুক্ত, ভূমিকা দ্রষ্টব্য, পৃ. ১৫-৩৩।
  • ৭১. দ্রষ্টব্য-মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা সাহিত্যের কথা, খণ্ড-২, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৪।
  • ৭২. সত্যেন্দ্রনাথ ঘােষাল সম্পাদিত, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩।
  • আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ এনামুল হক তাদের গ্রন্থে কবি সৈয়দ আলাওলের সঙ্গে দৌলত কাজীর তুলনা করেছেন। তারা স্বীকার করেছেন যে, কবি আলাওল কবি দৌলত কাজী হতে পাণ্ডিত্যে অনেক গুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন বটে, কিন্তু রচনার লালিত্যে, ভাষার মাধুর্য্যে, কম কথায় অধিক ভাব প্রকাশের ক্ষমতায় কবি দৌলত কাজী সৈয়দ আলাওলের চেয়ে অনেক গুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। পূর্বোক্ত গবেষকদ্বয় আরও বলেছেন, ‘ব্রজবুলি’ রচনায় কবি দৌলত অনেক বেশী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন শুধু তাই নয়, ভাষার প্রাঞ্জলতায়ও কবি দৌলত সৈয়দ আলাওলকে অতিক্রম করে গিয়েছেন। দেখুন- আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও মুহম্মদ এনামুল হক, আরাকান রাজ সভায় বাঙ্গালা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬।
  • ৭৩. আহমদ শরীফ সম্পাদিত, সতেরাে শতকের রােসাঙ্গ কবি মরদনের ‘নসীরানামা’, সাহিত্য পত্রিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ, ১৪০২।

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

Post Views: 4,197
Tags: Arakan Bangla SahityaBangla LiteratureBangla SahityaMuslim Poetআরাকান রাজস্নভায় বাংলা সাহিত্যবাংলা কাব্যচর্চাবাংলা সাহিত্যমধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যমধ্যযুগে মুসলিম কবিমধ্যযুগে মুসলিম কবিদের অবস্থান ও বাংলা সাহিত্যে কাব্যচর্চার ক্রমবিকাশ
ADVERTISEMENT

Related Posts

নজরুল ইসলামের উপন্যাসে মানবতাবাদ
সাহিত্য আলোচনা

নজরুল ইসলামের উপন্যাসে মানবতাবাদ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মহৎ ঔপন্যাসিক মাত্রই মানবতার পথপ্রদর্শক। সাহিত্য মানেই মানুষের কথা, তার জীবনযাপন, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-সংঘর্ষ, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
March 29, 2025
বনলতা সেন ও জীবনানন্দ দাশের নায়িকারা
সাহিত্য আলোচনা

বনলতা সেন ও জীবনানন্দ দাশের নায়িকারা

লিখেছেনঃ আহমদ রফিক শ-পাঁচেক বছর আগে চিত্রশিল্পের অন্যতম ‘গ্রেট মাস্টার’ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা আবক্ষ নারীপ্রতিকৃতি ‘মোনালিজা’কে নিয়ে ইতালি-প্যারিস...

by অতিথি লেখক
November 19, 2024
কাজি নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা
সাহিত্য আলোচনা

কাজি নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা

লিখেছেনঃ সুমিতা চক্রবর্তী কাজি নজরুল ইসলামকে অনেক ভাবেই আমরা চিনি। তিনি উৎপীড়িতের পক্ষে দাঁড়ানো একজন সাহিত্যিক; তিনি অসাম্প্রদায়িক মনের...

by অতিথি লেখক
November 5, 2024
জীবনানন্দ দাশের নারীপ্রেমঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
সাহিত্য আলোচনা

জীবনানন্দ দাশের নারীপ্রেমঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

লিখেছেনঃ বাসন্তীকুমার মুখখাপাধ্যায় জীবনানন্দ যেমন প্রকৃতির বেদনার আঘাতের ও হিংস্রতার দিকটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন থেকেও প্রকৃতিলীন জীবনে আস্থা স্থাপন...

by নবজাগরণ
November 7, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (26)
  • ইসলামিক ইতিহাস (22)
  • ইহুদী (1)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (194)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply
Open chat
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?