• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Saturday, June 21, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

স্পার্টাকাস : রোমান সাম্রাজ্যের এক নির্ভীক ক্রীতদাসের রোমহর্ষক কাহিনী

নবজাগরণ by নবজাগরণ
June 19, 2025
in বিশ্ব ইতিহাস
1
স্পার্টাকাস

চিত্রঃ স্পার্টাকাস, Image Source: amormeus

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ সুপ্রতিম দাশ

লাতিনে স্পার্টাকাস মানে স্পার্টা নগরী থেকে আগত (“from the City of Sparta”)। রােমের ইতিহাসে স্পার্টাকাস একটি স্মরণীয় নাম। তাঁর বিদ্রোহ, যুদ্ধ; মৃত্যু এ সবই খুব বর্ণময় ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমরা আগেই বলেছি, স্পার্টাকাসের মৃত্যুর পর রােমের ইতিহাসে এই মাপের বিদ্রোহ আর ঘটেনি। তাই এই ঘটনা উল্লেখের দাবি রাখে। প্লুটার্ক লিখেছেন, জন্মসূত্রে থ্রেসের মানুষ স্পার্টাকাস ছিলেন একটি যাযাবর গােষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত ক্রীতদাস হয়ে পড়া এই মানুষটি শুধু যে সাহসী এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন তা নয়, তিনি রীতিমত বুদ্ধিমান এবং মানবিকগুণসম্পন্নও ছিলেন যা একজন ক্রীতদাসের পক্ষে বেশ অস্বাভাবিক। থ্রেসিয়ান হলেও তাঁকে একজন গ্রীক বলেই মনে হত। খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীর গ্রীক লেখক প্লটার্কের এই মন্তব্য থেকে বােঝা যায় তিনি মনে করতেন, বিদেশী পরিচয় এবং ক্রীতদাসত্ব এই দুই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজের চরিত্রগুণে স্পার্টাকাস যাবতীয় হীনস্মন্যতা কাটিয়ে উঠেছিলেন। অবশ্য এর বিরুদ্ধ মতও আছে। যেমন ডায়ােডােরাসের মতে, স্পার্টাকাস আসলে বর্বর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।

স্পার্টাকাস বিদ্রোহ করেছিলেন একজন গ্ল্যাডিয়েটর হিসাবে। তাই সরাসরি তাঁর প্রসঙ্গে আসার আগে গ্ল্যাডিয়েটর সম্পর্কে সামান্য আলােচনা করা প্রয়ােজন। গ্ল্যাডিয়েটর শব্দটি এসেছে লাতিনশব্দ গ্ল্যাডিয়াস (gladius) থেকে। গ্ল্যাডিয়াস মানে ছােট তরবারি। তাই গ্ল্যাডিয়েটর বলতে লাতিনে বােঝায় তলােয়ারধারী মানুষ। প্রাচীন রােমে গ্ল্যাডিয়েটররা ছিল পেশাদার লড়াইবাজ। এরা একটি বিশেষ ঘেরা জায়গায় লড়াই করত একে অন্যের বিরুদ্ধে। কখনাে কখনাে হিংস্র জন্তুর সঙ্গে; আবার কখনাে বা শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধীদের সঙ্গে। লড়াই করতে করতে অনেকসময় মৃত্যুও ঘটত। এমন লড়াই এর উদ্দেশ্য একটাই: রোমান দর্শকদের আনন্দ দেওয়া। অর্থাৎ গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিযােগিতা এবং মরণপণ লড়াই প্রাচীন রােমে ছিল একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনােদন। রােমান রিপাবলিক এবং রােমান সাম্রাজ্য—উভয়ের আমলেই বিভিন্ন শহরে গ্ল্যাডিয়েটরের দ্বৈরথের জন্য নির্দিষ্ট রঙ্গভূমির ব্যবস্থা থাকত। একে বলা হত মল্লভূমি বা অ্যাফিথিয়েটর (amphitha) অবশ্য গ্ল্যাডিয়েটরের মল্লক্রীড়ার জন্ম রােমে হয় নি। এটুরিয়ার বাসিন্দারা (Etruscans) এর আদি সংগঠক। রােমানরা বিনােদন হিসাবে এই ক্রীড়া আত্মসাৎ করেছিলেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রােমে প্রথম গ্ল্যাডিয়েটরের আসর বসেছিল ২৬৪ খ্রিঃ পূর্বাব্দে। গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রশিক্ষণের জন্য রীতিমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নানা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কাপড় ব্যাটিয়াটাস (Batiatus) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এমনই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন স্পার্টাকাস।

স্পার্টাকাস
চিত্রঃ স্পার্টাকাস এর প্রতিচ্ছবি, Image by 139904 from Pixabay

সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লক্ষ্য করা যায়, সাম্রাজ্যের যুগে তাদের সবচেয়ে পরিণত অবস্থায় রােমের গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিযােগিতাগুলি মনস্তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক সেফটি ভালভ হিসাবে কাজ করত। অর্থাৎ, রােমান সাম্রাজ্যের শৃঙ্খলা, হিংসা ও রক্তপাতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটির মধ্যে থেকে যে বিপুল সামাজিক টানাপােড়েনের জন্ম হত তা নিঃসরণ করে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কাজে লাগানাে হত এই ক্রীড়া ব্যবস্থাকে। শুধু তাই নয়, রােমের সম্ভ্রান্ত দর্শকমণ্ডলীর মধ্যে আইনশৃঙ্খলার একটা বােধও এর মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠত। অবশ্য উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে স্পার্টাকাস যে সময় বিদ্রোহ করেন তখনও কিন্তু একটি জনপ্রিয় বিনােদন হিসাবে গ্ল্যাডিয়েটরের প্রতিযােগিতা রােমে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠেনি। বরং গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রদর্শনের ঘটনা ছিল বিক্ষিপ্ত। খ্রিঃ পূঃ ৯৪ অব্দ থেকে খ্রিঃ পূঃ ৪৪ অব্দ পর্যন্ত নাম জানা যায় এমন গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই হয়েছিল মাত্র পঁচিশটি। তাও সবগুলির প্রামাণ্যতাও প্রতিষ্ঠিত নয়।

পরিচয়ের দিক থেকে গ্ল্যাডিয়েটররা ছিল মিশ্র প্রকৃতির। আমরা দেখেছি স্পার্টাকাস নিজেই ছিলেন একজন স্বাধীন থ্রেসীয়। কিছুকাল রােমান সেনা বাহিনীতে কাজ করার পর তিনি ফৌজ ছেড়ে পালান, ধরা পড়েন এবং দাস হিসাবে বিক্রি হয়ে যান। পরে তিনি কাপুয়ার গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। স্পার্টাকাসের অনুগামীদের মধ্যে গল, জার্মান এবং থ্রেসীয় সব রকম মানুষই ছিল। এরা সকলেই কাপুয়ার গ্ল্যাডিয়েটর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বন্দি হয়ে ছিল। অতএব অনুমান করা যায়, গ্ল্যাডিয়েটররা ছিল প্রথম প্রজন্মের ক্রীতদাস। এরা হয় যুদ্ধের সময় বন্দি হয়েছিল, আর নইলে দাসব্যবসার ফলে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল। সিসেরাে বােধ হয় এই কারণেই বেপরােয়া এবং বর্বর প্রকৃতির বলে বর্ণনা করেছিলেন। তার মানে গ্ল্যাডিয়েটররা প্রায়শই ছিল সেই শ্রেণীর মানুষ যাদের দাসত্বের অভিজ্ঞতা ছিল স্বল্প আর তাই হারানাে স্বাধীনতা ফিরে পেতে এরা ছিল মরিয়া। এটা সত্যি যে, সব গ্ল্যাডিয়েটরই ক্রীতদাস ছিল না। স্পার্টাকাসকে যারা বিদ্রোহে সঙ্গ দিয়েছিল তাদের মধ্যে সম্ভবত কিছু স্বাধীন মানুষও ছিল। তবে স্পার্টাকাস নিজে যে বিদ্রোহের সময়  একজন ক্রীতদাস ছিলেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

কিছু কিছু গ্ল্যাডিয়েটর মল্লভূমিতে তাদের সাফল্য থেকে প্রভূত সম্পদ অর্জন করেছিল। সম্ভবত এর থেকে তাদের মধ্যে বিদ্রোহের প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। কেননা রােমের মত দাস-সমাজে সম্পদ অর্জনের যােগ্যতা স্বাধীনতার প্রতীক বলে গণ্য হত। মনে করা হত, ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যক্তিসত্তার পরিচায়ক। সাম্রাজ্যবাদী আমলের গােড়ার দিকে অস্টিয়া (Ostia) এবং রােম –এই দুটি শহরের পরিকল্পনা থেকে বােঝা যায় গরীব মানুষ এক বা দুই কামরার ভাড়া বাড়িতেই প্রধানত বসবাস করত। আর রিপাবলিকের আমলের শেষ দিকে রােমের বেশির ভাগ মানুষ থাকত ভয়ংকর খারাপ ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায়। গ্ল্যাডিয়েটরদের অবস্থা অতএব অন্যান্য নিম্নশ্রেণির মানুষের চেয়ে বেশি কিছু খারাপ ছিল না। অবশ্য তাই বলে তাদের পরিস্থিতি কোনাে অংশে সহনীয়ও ছিল না। খাদ্যের মত একটি অত্যাবশ্যক জিনিসের কথা বিবেচনা করলে বিষয়টা বােঝা যাবে। একদল গ্ল্যাডিয়েটরকে খাওয়াতে যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়ােজন হত তার সংস্থান করতে এমন কি সিনেটের সদস্যরাও হিমশিম খেতেন। দুর্ভিক্ষের দিনে গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রথম সুযােগেই নগর থেকে বিতাড়িত করা হত খাদ্য বাঁচিয়ে রাখার জন্য। যেমনটি ঘটেছিল ৬ খ্রিস্টাব্দে। অবশ্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সাধারণত গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই-এর ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য তাদের প্রচুর পরিমাণে খাবার খাওয়ানাে হত। তবে সমকালীন সাহিত্যের তথ্য অনুযায়ী, খাবারের গুণগত মান খুবই খারাপ ছিল। স্যালাস্ট (Sallust) লিখেছেন, ক্রীতদাসদের খাবার কখনােই ভাল হত না।

গ্ল্যাডিয়েটরদের কাছে মুক্তির হাতছানি ছিল প্রবল। দাসত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে তারা কখনাে কখনাে আত্মহননের পথ বেছে নিত। সেনেকা (Seneca) এমন দুজন আত্মঘাতী গ্ল্যাডিয়েটরের কথা লিখেছিলেন। এরা দুজনেই অত্যন্ত খারাপভাবে নিজেদের মৃত্যু ঘটিয়েছিল। অনেক কাল পরে সাইম্যাকাস (Symmachus) ঊনত্রিশ জন স্যাক্সনের কথা শুনিয়েছিলেন। এরা গ্ল্যাডিয়েটর জীবনের ভবিতব্য এড়ানাের জন্য নিজেদের শিরা কেটে আত্মহত্যা করেছিল। অন্যদিকে খােলাখুলি বিদ্রোহ ছিল গ্ল্যাডিয়েটরদের সামনে উন্মুক্ত আর একচরম পন্থা। তবে মনে রাখতে হবে স্পার্টাকাসের আগে রােমের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনার কোনাে দৃষ্টান্ত নজরে আসে না। ব্র্যাডলি লিখেছেন, তবু স্পার্টাকাস যে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাকে সব মিলিয়ে অনন্য বলা যাবে না। কারণ ২১ খ্রিষ্টাব্দে অগাস্টোডুনাম (Augustodunum) এর ম্যাডিয়েটর ক্রীতদাসরা গলদের রােমান শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। অবশ্য এই বিদ্রোহে দাসত্বের বিরােধিতাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। পুনরায় ৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাইনেস্ট (Praeneste) এর গ্ল্যাডিয়েটররা বিদ্রোহ শুরু করে। তাদের বিদ্রোহী আচরণ রােমে রীতিমত আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। অনেকে ভেবেছিলেন, স্পার্টাকাসের বিদ্রোহের মত আর একটি বিদ্রোহ বুঝি আসন্ন। বিদ্রোহে সামিল হওয়ার মধ্যে নিঃসন্দেহে বিরাট ঝুঁকি ছিল। কিন্তু গ্ল্যাডিয়েটর জীবনেও মৃত্যুর আশঙ্কা কিছু কম ছিল না। তাই তাদের কাছে বিদ্রোহই ছিল একমাত্র বিকল্প। যে সব শহরে গ্ল্যাডিয়েটরদের রাখা হত সেই সব শহরের দাসপ্রভুরা নিঃসন্দেহে বিদ্রোহের আশঙ্কার মধ্যে অনেক সময় দিন কাটাতাে। প্রসঙ্গত সিসেরাে লিখেছিলেন, যখন প্রায় প্রতি ঘন্টায় কোনাে না কোনাে নিষ্ঠুরতার কাহিনী চোখে পড়ে বা কানে আসে, তখন তার মত যারা স্বভাবত দয়াশীল এমন কি তারাও নিরন্তর চাপের মধ্যে যাবতীয় মানবিক অনুভূতি হারিয়ে ফেলেন।

স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ

প্রাচীন কালের দুই লেখক ফ্লোরাস এবং ডায়ােডােরাস দুজনেই স্পার্টাকাসকে হীন চোখে দেখেছেন। কেননা, ফ্লোরাস জানিয়েছেন, ক্রীতদাস হওয়াটাই তাে হীনতার লক্ষণ। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে এক অসামান্য দাস যুদ্ধের নায়ক হিসাবে স্পার্টাকাস স্মরণীয় হয়ে আছেন। পূর্বসূরী ইউনাস এবং স্যালভিয়াসের মত তারও ছিল মােহিনী আবেদন। উত্তরকালের লেখকরা স্পার্টাকাসের লড়াই ও বীরত্বকে অসম রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। তাই পশ্চিমী দুনিয়ায় আধুনিককালে স্পার্টাকাস সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের বর্ণময় চরিত্র হয়ে উঠেছেন। মার্কিন লেখক হাওয়ার্ড ফাস্ট তাঁকে নিয়ে অনবদ্য উপন্যাস লিখেছেন। হলিউড ছবি তৈরি করেছে। এই বিদ্রোহের কাহিনী ফিরে দেখা যেতে পারে।

সম্ভবত ৭৩ খ্রিঃ পূর্বাব্দের গ্রীষ্মে প্রায় সত্তরজন ক্রীতদাস কাপুয়াতে অবস্থিত লেনটুলাস ব্যাটিয়াটাসের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা লুডি (Ludi) থেকে পালিয়ে আসে এবং প্রায় তিরিশ কিলােমিটার দূরে ভিসুভিয়াস পর্বতের দুর্গম অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। জানা যায় কাপুয়ার শিক্ষাকেন্দ্র থেকে পালানাের সময় গ্ল্যাডিয়েটররা রন্ধনশালা থেকে অস্ত্র হিসাবে রান্নার নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিল। পরে তারা রাস্তায় গ্ল্যাডিয়েটরদের অস্ত্রশস্ত্র ভর্তি গাড়ি লুঠ করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্পার্টাকাস প্রথম থেকেই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কিন্তু ভিসুভিয়াস পর্বতের পাদদেশ থেকে বিদ্রোহীরা যখন লুঠতরাজ এবং অভিযান চালাতে থাকে সেইসময় আরাে দুই ব্যক্তিও নেতা হিসাবে উঠে আসেন। এরা দুজনেই গল। নাম ক্রিক্সাস (Crixus) এবং ওইনােমাউস (Oenomaus)। কাপুয়া থেকে পালানাের পিছনে গ্ল্যাডিয়েটরদের বিশেষ কোনাে পরিকল্পনা ছিল কিনা স্পষ্ট করে জানা যায় না। তবে গ্ল্যাডিয়েটরদের এই বিদ্রোহ ক্রমেই এক বড় মাপের দাস অভুত্থানে পরিণত হয়। স্পার্টাকাস যেহেতু লুষ্ঠিত দ্রব্য সকলের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতেন তাই দীর্ঘকাল ধরে অসন্তোষ পুষে রাখা কৃষি শ্রমিকরা দলে দলে বিদ্রোহে যােগ দিতে উৎসাহিত হয়।

প্লুটার্কের মতে, কাপুয়ার বিদ্রোহ ঘটারও আগে প্রায় দু’শজন গ্ল্যাডিয়েটর পালানাের পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের ফলে ব্যর্থ হয়। তখন আটাত্তর জন বিদ্রোহী কাপুয়া ছেড়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু প্লুটার্ক ছাড়া অন্য কেউ এই পূর্বপরিকল্পনার কথা বলেন নি। প্লুটার্ক তার আখ্যানে স্পার্টাকাসের কথা উল্লেখ করেছেন অনেক পরে। ততদিনে গ্ল্যাডিয়েটরের দল ভিসুভিয়াসে ঘাঁটি গেড়েছে। তাঁর মতে, এখানেই ক্রীতদাসরা তিনজনকে তাদের নেতা হিসাবে বেছে নেয়। স্পার্টাকাস এদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাকি দুজনের নাম আমরা আগেই জেনেছিঃ ক্রিক্সাস এবং ওইনােমাউস। ওরােসিয়াসের মতে, এরা দুজনেই ছিলেন গল। লিভি অবশ্য লিখেছেন, ক্রিক্সাস এবং স্পার্টাকাস ছিলেন যুগ্ম-নায়ক। অন্যদিকে ওরােসিয়াস মনে করতেন, ভিসুভিয়াস পর্বে তিনজনই ছিলেন মােটামুটি সমান মাপের নেতা।

চিত্রঃ স্পার্টাকাস সিরিজের দৃশ্য, Image Source: Amazon

বিদ্রোহীরা যে জায়গাটায় অভিযান চালাচ্ছিল তার নাম কাম্পানিয়া। এটা ছিল রােমের বড়লােক ও প্রভাবশালী মানুষের ছুটি কাটানাের জায়গা। এখানে বহু খামার ছিল। ফলে বিদ্রোহের শুরুতেই রােমের শাসকবর্গ নড়ে চড়ে বসেন। কিন্তু তাঁদের ধারণা ছিল, এটি কোনাে বিদ্রোহ নয়, নিছক একটা বড়সড় অপরাধের ঘটনা। একটা গুরুতর সমস্যা যে ধূমায়িত হতে চলেছে তা অনুধাবন করতে রােমান কর্তৃপক্ষের একটু সময় লেগেছিল। প্রাইটর ক্লডিয়াস গ্ল্যাবার তিন হাজার জনের একটা বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন বটে, তবে এটা কোনাে নিয়মিত বাহিনী ছিল না। মনে হয় মিলিশিয়া (Militia) অর্থাৎ অপেশাদার ফৌজ ছিল। অ্যাপ্লিয়ান বলেছেন, দ্রুত সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষজনকে রাস্তা থেকে জড়াে করে এই বাহিনী তৈরি হয়েছিল। গ্লাবারের ফৌজ ভিসুভিয়াস পর্বতের ক্রীতদাসদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। তাঁর ধারণা ছিল অবরুদ্ধ বিদ্রোহীদের খাবারে টান পড়লেই তারা আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু স্পার্টাকাস অন্য কৌশল নেন। ভিসুভিয়াসের খাড়াইতে বেড়ে ওঠা আঙুর এবং অন্যান্য গাছের ডাল দিয়ে বড় বড় মই বানিয়ে পর্বতের অন্যদিকের উন্মুক্ত পথ ধরে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে নেমে আসেন। এরপর বিদ্রোহীরা ভিসুভিয়াসের পাদদেশে জড়াে হয়ে গ্ল্যাবারের ফৌজকে ঘিরে ফেলে এবং প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

দ্রুত প্রাইটর পাবলিয়াস ভ্যারিনাসের নেতৃত্বে স্পার্টাকাসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় একটি সেনা অভিযান পাঠানাে হয়। কিন্তু এই অভিযানও ব্যর্থ হয়। দাস বিদ্রোহীরা এদের পরাজিত করে যাবতীয় অস্ত্র-শস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। এই সাফল্যের ফলে আরও বহু গ্রামীণ গরীব মানুষ বিদ্রোহীদের দলে যােগ দেয়। স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে প্রায় সত্তর হাজার মানুষের এক বিশাল দল গড়ে ওঠে। এরা কাছাকাছি অঞ্চলগুলিতে আক্রমণ চালিয়ে বিপুল বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তবে এই পর্যায়ে বিদ্রোহী সেনা বাহিনীর মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে বিভাজন ও বিরােধের সৃষ্টি হয়। একদলের মত ছিল, এই সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে তাদের দক্ষিণ ইতালিতে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া উচিত। অন্যরা উপলব্ধি করে, রােম নিশ্চয়ই এরপর অভিজ্ঞ সেনাদের পাঠাবে এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য। এই দ্বিতীয় দলটি ঠিক কি চেয়েছিল সে ব্যাপারে তখনকার লেখকরা নানারকম কথা বলেছেন। অ্যাপ্লিয়ান এবং ফ্লোরাস লিখছেন, এরা সরাসরি রােমের পথে অগ্রসর হতে চেয়েছিল। অন্যদিকে প্লুটার্কের মত হল, এই দ্বিতীয় দলটি বড়জোর উত্তরদিকে পালাতে চেয়েছিল। কেননা সেক্ষেত্রে তারা আল্পস পরবর্তী ভূভাগের মধ্য দিয়ে নিজেদের গৃহে ফিরে যেতে পারত। একদল গবেষকের মতে, হলিউডের স্পার্টাকাস ছবিতে যদিও বিদ্রোহীদের নানা উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে কোনাে ঐতিহাসিক তথ্যেই এর প্রমাণ নেই। বিদ্রোহী দাসরা কি রােমান প্রজাতন্ত্রে দাসপ্রথার অবসান ঘটানাের কথা ভেবেছিল, কিংবা সমস্ত দাসকে মুক্ত করতে চেয়েছিল? এই বিতর্কে আসার আগে বলে নিই, বিদ্রোহী দাসরা শেষ পর্যন্ত দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদল ক্রিক্সাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইতালিতে রয়ে যায়। অন্যরা স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে উত্তর দিকে আলপাইন পরবর্তী গলের দিকে যাত্রা করে।

বিদ্রোহের এইরকম ব্যাপ্তি এবং দুদুজন প্রাইটরের পরাজয়ে উদ্বিগ্ন রােম দুজন কনসালের অধীনে দুটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। এই দুজন কনসাল হলেন লুসিয়াস গেলিয়াস পাবলিকোলা এবং কর্নেলিয়াস লেনটুলাস ক্লডিয়ানাস। প্রথম দিকে এই দুই কনসুলার ফৌজ সফল হয়েছিল। আপুলিয়াতে ক্রিক্সাসের বাহিনীকে পরাজিত করে এবং ক্রিক্সাসকে হত্যা করে গেলিয়াসের ফৌজ উত্তর অভিমুখে, স্পার্টাকাসের অনুগামীদের দিকে অগ্রসর হয়। অন্যদিকে লেনটুলাসের সেনাবাহিনীকে মােতায়েন রাখা হয় স্পার্টাকাসের পথ রুদ্ধ করার জন্য। রােমের এই দুই কনসাল আশা করেছিলেন দুই বাহিনীর মাঝখানে স্পার্টাকাস অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। কিন্তু স্পার্টাকাসের সেনারা লেনটুলাসের ফৌজকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে গেলিয়াসের সৈন্যবাহিনীর দিকে ধেয়ে যায়। তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ক্রিক্সাসের মৃত্যুর প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য স্পার্টাকাস প্রায় তিনশ জন রােমান সৈন্যকে হত্যা করেন। শােনা যায়, স্পার্টাকাস ঐ সেনাদের গ্ল্যাডিয়েটরদের মত নিজেদের মধ্যে লড়াই ক’রে মরতে বাধ্য করেছিলেন। এই বিপর্যয়ের ফলে দুজন কনসালকেই রােমে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পুনরায় উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বিদ্রোহী বাহিনী মিউটিনা অঞ্চলের কাছে সিস আলপাইন গলের গভর্নর ক্যাসিয়াসের নেতৃত্বাধীন দশ হাজার সেনাকে একইভাবে বিধ্বস্ত করে। অ্যাপ্লিয়ানের মতে, স্পার্টাকাসের বাহিনী থুরি নগরটি দখল করে নেয় এবং প্রভূত অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করে নিকটবর্তী গ্রামাঞ্চলগুলিতে হানাদারি শুরু করে। এই সময় স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে ছিল প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার পালিয়ে আসা ক্রীতদাস।

ইতালিতে বিদ্রোহের এই অপ্রতিহত গতিকে রুদ্ধ করার জন্য রােমের সিনেট এরপর দায়িত্ব অর্পণ করে মার্কাস লিসিনিয়াস ক্র্যাসাসের উপর। ৭৩ খ্রিঃ পূর্বাব্দে ক্র্যাসাস প্রাইটর হয়েছিলেন। সম্পদের জন্য প্রভূত পরিচিতি থাকলেও সেনাপতি হিসাবে তার কোনাে খ্যাতি ছিল না। তাই ক্র্যাসাস এই দাস বিদ্রোহকে নিজের সামরিক প্রতিপত্তি অর্জনের একটি সুযােগ হিসাবে দেখেছিলেন। তাকে মােট দশটি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ক্র্যাসাসের বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে যখন স্পার্টাকাসের অনুগামীদের রক্তাক্ত ও ভয়ংকর লড়াই চলছে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে, সেই সময় হিসপানিয়া থেকে কুইনটাস সার্টোরিয়াসের বিদ্রোহ চূর্ণ করে ইতালিতে ফিরে আসেন বিখ্যাত রােমান সেনাপতি পমপেই। ক্র্যাসাস নিজেই নতুন সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছিলেন, না কি রােমান সিনেট স্রেফ পমপেই-এর ইতালিতে প্রত্যাবর্তনের সুযােগ গ্রহণ করেছিল, সে ব্যাপারে সমকালীন লেখকরা একমত নন। তবে এটা নিশ্চিত যে পমপেইকে রােম অতিক্রম করে দক্ষিণে ক্র্যাসাসের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

পমপেই-এর অভিযান আগে থেকেই বানচাল করে দেওয়ার জন্য স্পার্টাকাস ক্র্যাসাসের সঙ্গে গােপন বােঝাপড়ার চেষ্টা করেন। ক্রাসাস অবশ্য এতে সম্মত হন। নি। এর ফলে স্পার্টাকাসের সেনাদের একটি দল পেটেলিয়া অঞ্চলের পশ্চিমদিকে পাহাড়ের অভিমুখে পালাতে শুরু করে তাদের ধাওয়া করে ক্র্যাসাসের বাহিনী। শেষ পর্যন্ত প্রায় বারাে হাজার তিনশ বিদ্রোহী রােমান সেনাদের হাতে প্রাণ দেয়। অবশ্য ক্র্যাসাসের বাহিনীরও বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে শেষ বিচারে, বিদ্রোহী দাসরা তাে আর পেশাদার সেনা ছিল না। তাদের দম ফুরিয়ে গিয়েছিল। তারা আর পালাতে ইচ্ছুকও ছিল না। দলে দলে বিদ্রোহী তাই মূল বাহিনী থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বাধীনভাবে ইচ্ছামত ক্র্যাসাসের সৈন্যদের আক্রমণ করতে শুরু করে। এইভাবে স্পার্টাকাসের বিদ্রোহী বাহিনীর শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। স্পার্টাকাস মরিয়াভাবে বাদবাকি সেনাদের নিয়ে শেষ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তাঁর বাহিনী সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অধিকাংশ বিদ্রোহীর যুদ্ধক্ষেত্রেই মৃত্যু হয়। স্পার্টাকাসের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তাঁর দেহ খুজে পাওয়া যায় নি। ঐতিহাসিকরা অবশ্য মনে করেন, স্পার্টাকাস তার অনুগামীদের সঙ্গেই যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্রীতদাস মারা পড়লেও প্রায় ছ’হাজার বিদ্রোহী প্রাণে বেঁচে যায়। রােম এবং কাপুয়ার সংযােগকারী রাস্তায় এদের ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়। এইভাবে স্পার্টাকাসের দুঃসাহসিক অভ্যুত্থানের উপর যবনিকা নেমে আসে।

স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। রােমান রিপাবলিকের শেষ প্রজন্মের ইতিহাস লিখতে বসে ঐতিহাসিক এরিক গ্রুয়েন (Erich Gruen) মন্তব্য করেছেন, বহু ঐতিহাসিক এবং লেখক যে স্মার্টকাসের বিদ্রোহকে রােমান ইতিহাসের একটি প্রকৃত সামাজিক বিপ্লব বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন এবং স্পার্টাকাসকে আমজনতার এক বীর নায়কের মর্যাদা দিয়েছেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কেননা এই দাস বিদ্রোহ রােমে বিপুল আলােড়ন জাগিয়েছিল। গ্রুয়েন নিজে অবশ্য মনে করেন, এতটা বলা হয়ত বাড়াবাড়ি। স্পার্টাকাস এবং তার সঙ্গী সাথীরা তাদের নিজেদের দাসত্ব ও শােষণের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল। প্রচলিত সামাজিক কাঠামােকে উল্টে পাল্টে দেওয়ার কোনাে মহৎ আদর্শ তাদের ছিল এমন প্রমাণ নেই। সমকালীন লেখকদের উদ্ধৃত করে গ্রুয়েন লিখেছেন, স্পার্টাকাসের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের বিদ্রোহী বাহিনী নিয়ে ইতালি ছেড়ে বেরিয়ে আসা। রােমান সমাজের আমূল সংস্কারের ভাবনা তার ছিল না। তবে গ্রুয়েনের মতে, স্পার্টাকাসের অবদানকে কোনাে মতেই খাটো করে দেখা যায় না। যে সাহস, স্থৈর্য এবং দক্ষতা নিয়ে এই থ্রেসিয়ান গ্ল্যাডিয়েটর অন্তত দু’বছর ধরে রােমান সেনাবাহিনীকে বিব্রত করে রেখেছিলেন এবং অল্প কিছু অনুগামী নিয়ে বিদ্রোহ শুরু করে অন্তত এক লক্ষ কুড়ি হাজার মানুষের এক বিপুল সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন, তার জন্য কোনাে প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।

মার্কসবাদী লেখকরা প্রাচীন রােমের দাস বিদ্রোহগুলিকে — বিশেষ করে স্পার্টাকাসের অভ্যুত্থানকে—বরাবর সর্বহারার শ্রেণি সংগ্রাম বলে চিহ্নিত করেছেন। স্বয়ং মার্ক্স এবং এঙ্গেল স্পার্টাকাস প্রসঙ্গে মত প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন স্পার্টাকাসের মহত্ত্বের কথা মানুষ জানুক। তাঁদের অনুসরণ করে অনেকেই প্রাচীন সমাজতন্ত্র বা কমিউনবাদের কথা বলেছিলেন। এঁদের অনেকের মতে, এটা ঠিক যে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিটি অভ্যুত্থান অন্যগুলির চেয়ে আলাদা ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে সময় এমন এক পরিবর্তনের হাওয়া বইছিল যা প্রতিটি অঞ্চলেই মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের তিরিশের দশকে আসলে যেটা ঘটছিল সেটা হল বহুদূর বিস্তৃত এক সর্বহারার আন্দোলন – সমাজতন্ত্রের আকস্মিক অভ্যুদয়। অন্য একটি মত হল, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় এবং প্রথম শতকে প্রচলিত রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার ভাঙনের মধ্যে থেকে উঠে এসেছিল সর্বহারা মানষের এক বিরাট আন্দোলন এবং গােটা রােমান দুনিয়াকে প্লাবিত করেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে স্পার্টাকাস ব্রুট্টিয়াম (Bruttium) অঞ্চলে নিচুতলার মানুষকে নিয়ে এক পরিপূর্ণ সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই বক্তব্য অনুযায়ী, সিসিলির প্রথম যুদ্ধে পুঁজিবাদি এবং বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে সর্বহারার এক ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ে উঠেছিল। আর সিসিলির দ্বিতীয় যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সর্বহারার একনায়কত্ব।

মার্কসবাদী লেখকদের মধ্যে অন্য অনেকে মনে করতেন, দাস বিদ্রোহগুলি বাস্তবে – সাম্যবাদের দিকে উত্তরণের প্রস্তুতি পর্ব। অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে এঁদের বক্তব্য কিছুটা নমনীয়। সােভিয়েত ঐতিহাসিকরা প্রাচীন পৃথিবীর সামাজিক আন্দোলনগুলির ইতিহাস বরাবর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে চর্চা করেছেন। তারা যদিও বিভিন্ন দাস বিদ্রোহের স্বতন্ত্র চরিত্রকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, তবু এ বিষয়ে তারা অনেকেই একমত যে সিসিলিতে বড় বড় দাস-মালিকদের বিরুদ্ধে ক্রীতদাসদের লড়াই-এর পিছনে কৃষকদের সমর্থন ও সহানুভুতি ছিল। সােভিয়েত ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ খুব জোর দিয়ে বলেছেন যে বিশেষ করে স্পার্টাকাসের বিদ্রোহে দীন দরিদ্র চাষিরা দলে দলে যােগ দিয়েছিল। এমন কি এঁদের বিশ্বাস, স্পার্টাকাস আসলে লড়াই করেছিলেন দাসত্বের অবসান ঘটিয়ে দাস-প্রভুদের মালিকানাধীন যাবতীয় খামারকে মুক্ত করার জন্য। স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ নিয়ে মার্কসবাদীদের আবেগ ও আগ্রহ এইভাবে বরাবরই লক্ষ্য করা গেছে। একটা বিশেষ আদর্শ নিয়ে স্পার্টাকাস লড়াই করেছিলেন। এই আদর্শ হয়ত খুবই অস্পষ্ট বা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। কিন্তু তার আভাস নিশ্চয়ই ছিল। এমনতর বক্তব্য পরেও লক্ষ্য করা গেছে। রােজা লুক্সেমবার্গের নেতৃত্বে একদল র‍্যাডিকাল মার্কসবাদী জনগণের ইচ্ছার মধ্য দিয়ে দুনিয়া জোড়া শ্রেণিসংগ্রামের দ্বারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন এক সংগঠন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুন প্রতিষ্ঠিত এই কমিউনিস্ট সংগঠনের নাম “স্পার্টাকাস লীগ”। ১৯১৯ সালের ১লা জানুয়ারি সদ্য প্রতিষ্ঠিত জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে “স্পার্টাকাস লীগ” মিশে গিয়েছিল।

বলা বাহুল্য মার্কসবাদীদের বক্তব্য পণ্ডিতমহলে তীব্র বির্তকের সৃষ্টি করেছে। যাঁরা মার্কসবাদী মতের বিরােধীতাঁদের যুক্তি এই রকম: স্পার্টাকাসের যারা অক্রীতদাস অর্থাৎ স্বাধীন অনুগামী, তাদের সংখ্যা ছিল নগণ্য, আর মূল বিদ্রোহের পরিকল্পনা বা লক্ষ্যসমূহের উপর এদের কোনাে প্রভাব ছিল না। এছাড়া প্রাচীন সমাজের কাঠামাে এমনই ছিল যে দাস বিদ্রোহ এবং স্বাধীন সর্বহারা শ্রেণির সংগ্রামের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা ছিল। বিদ্রোহী ক্রীতদাসরা এমন কিছুই অর্জন করতে পারেনি যাকে গুণগতভাবে নতুন বলা যাবে। সর্বোপরি, রােমের সামাজিক সমস্যাগুলির মােকাবিলা আদৌ স্পার্টাকাস করেন নি। তিনি বড়জোর রােমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গ্ল্যাডিয়েটরদের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটা আদতে একটা দাস বিদ্রোহ। শ্রেণি সংগ্রাম বা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। কেননা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে মূল উদ্দেশ্যই হল প্রচলিত সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আঘাত করা। স্পার্টাকাস এমন কিছুই করেন নি। তার এমন কোনাে আদর্শও ছিল না।

অমাকর্সবাদী ঐতিহাসিকরা সামগ্রিকভাবে প্রাচীন পৃথিবীর দাস বিদ্রোহগুলিকেই অযথা খাটো করে দেখাবার চেষ্টা করেছেন। বলা হয়েছে, বিদ্রোহের সেরা সময়টিতেই ক্রীতদাসদের সংহতিবােধ লক্ষণীয়ভাবে কম ছিল। যেসব এলাকায় দাসরা বিদ্রোহ করেছিল, তখন এটুরিয়া এবং আপুলিয়ার দাসরা শান্তই ছিল। লরিয়ামের খনি শ্রমিকরা এথেন্সের শহুরে দাসদের কাছ থেকে কোনাে সাহায্য পায় নি। এমন কি সিসিলিতেই দাস-শ্রেণির মধ্যে কোনাে ব্যাপক ঐক্য ছিল না। দাসদের বিদ্রোহের পথে এক বড় অন্তরায় ছিল অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র। সমস্ত দাস মিলে কখনাে দাসপ্রথা অবসানের দাবি জানায় নি। উৎপাদনের ব্যক্তিগত মালিকানার অবলুপ্তি কেউই চায় নি। সাম্প্রদায়িক মালিকানার কোনাে দাবিও তােলা হয়নি। অন্য দিকে, বিদ্রোহী দাসদের স্বাধীন সর্বহারারা কোনদিনই সত্যি সত্যি সমর্থন করে নি। এটা ঠিক যে দাসদের মত স্বাধীন সর্বহারা শ্রেণিরও দারিদ্র্যের কারণগুলি একই ছিল। আর এই সময় স্বাধীন সর্বহারাদের মধ্যে সত্যিই একটা বৈপ্লবিক মনােভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুভার্গ্যবশত তাদের মধ্যেও কোনাে সার্বিক ঐক্য ছিল না। এদের বেশির ভাগ ছিল গরিব চাষি এবং ক্ষুধার্ত শহুরে মানুষ। জমির পুনর্বন্টন এবং ঋণের অবলুপ্তির যে সাবেক স্লোগান রােমান সমাজের অভ্যন্তরে উঠেছিল, এমনকি তা-ও সর্বহারা শ্রেণিকে কোনাে কার্যকরী ঐক্য দিতে পারে নি। এর সবচেয়ে বড় কারণ, এদের নেতৃত্ব দেওয়ার মত বড় মাপের কোনাে ব্যক্তিত্ব ছিলেন না।

উপরের এই ভাষ্যের মধ্যে নিঃসন্দেহে সত্য আছে। তবে অতিরঞ্জনও কম নেই। কেননা প্রাচীন লেখকরাও স্বীকার করেছেন যে বিদ্রোহী অ্যারিস্টোনিকাস এশিয়ায় বিদ্রোহ করার সময় সমস্ত গরিব মানুষের কাছেই সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে এটাও প্রমাণিত যে চাষিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন ও সহযােগিতা স্পার্টাকাস পেয়েছিলেন। স্বাধীন শ্রমিকদের ব্যাপক লুঠতরাজের উল্লেখ করে অনেকে অভিযােগ করেন, এই ঘটনাই তাদের অনৈক্যের বড় প্রমাণ। কিন্তু এইসব লুঠতরাজ সত্ত্বেও হতদরিদ্র চাষি আর দাসদের তরফে যে একটা যৌথ ও পরিকল্পিত উদ্যোগ চোখে পড়ে তা অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। এই বিতর্কের কোনাে শেষ নেই। আমরা এই প্রসঙ্গে আবারও আসব। তার আগে স্পার্টাকাসের নটে গাছটি মুড়ােতে হবে!

সাম্প্রতিককালে কেউ কেউ স্পার্টাকাসকে বলেছেন পৃথিবীর সফলতম দাস বিদ্রোহের নায়ক। গ্রাহাম স্টিভেনসন যেমন। তিনি লিখেছেন, স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ দমন করার জন্য অন্তত ৭১টি রােমান বাহিনীর প্রয়ােজন হয়েছিল। বিদ্রোহের সেরা সময়টিতে বিদ্রোহীরা সংখ্যায় ছিল প্রায় দেড় লক্ষ, এমন কথা বললেও হয়ত অত্যুক্তি হবে না। এমন একটি ঘটনা ইতিহাসকে আলােড়িত না করে পারে না। স্টিভেনসন খুব সঙ্গতভাবে মন্তব্য করেছেন, এ ব্যাপারে আমাদের মূল তথ্যসূত্রগুলি প্রায় সবই রােমান, আর লেখকরা লিখেছিলেন ঘটনা ঘটে যাওয়ার অনেক কাল পরে। তাই দাসপ্রথার প্রবল সমর্থক, রােমের শাসকবর্গের গুণগ্রাহী এই সব ঐতিহাসিকের দাম যুদ্ধ সম্পর্কিত রচনাকে নিরপেক্ষ বা ভারসাম্যপূর্ণ বলা যাবে না। স্পার্টাকাসের প্রতি এই সব ঐতিহাসিকের নিছক ঘৃণার মনােভাব বুঝিয়ে দেয় শাসকবর্গ স্পার্টাকাসের ব্যাপারে কতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেক পর্যবেক্ষক স্পার্টাকাসকে ‘সদ্বংশজাত’ বলে মনে করতেন শুধুমাত্র এই কারণে যে ক্রীতদাসের মত একজন হীন মানুষের পক্ষে এতখানি বুদ্ধিমান ও জনমােহিনী নায়ক হওয়া অবিশ্বাস্য। এমনকি ফ্লোরাসের মত একজন নির্দয় সমালােচকও স্পার্টাকাসের চারিত্রিক গুণাবলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। আসলে স্পার্টাকাসের হাতে রােমান ফৌজের ন’বার পরাজিত হওয়ার ঘটনাকে আড়াল করতে হলে এমন কিছু না লিখে উপায় ছিল না। রােমানদের মধ্যে যাঁরা সবচেয়ে কম অশ্রদ্ধেয় তাঁদের সঙ্গে স্পার্টাকাসের তুলনা করেছিলেন সিসেরাে। এর অর্থ হল, স্পার্টাকাসের সরাসরি প্রশংসা তিনি করবেন না। হােরেস তাে তাঁকে একজন সাধারণ দস্যুর চেয়ে বেশি মর্যাদা দিতে রাজি ছিলেন না। আর অন্তত তিনশ বছর পরেও রােমান ঐতিহাসিকরা স্পার্টাকাস প্রসঙ্গে লিখেছিলেন চূড়ান্ত বিতৃষ্ণা নিয়ে। রােমান মায়েরা অশান্ত বাচ্চাকে ভয় দেখাতেন স্পার্টাকাস নামক জুজুর নাম করে।

কিন্তু আধুনিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি স্পার্টাকাসের ব্যাপারে তুলনায় অনেক উদার। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি লেখক সরিন (Saurin) গভীর সহানুভূতি নিয়ে এই বিদ্রোহীর ট্রাজিক কাহিনী লিখেছিলেন। স্বয়ং ভলতেয়ার রােমান লেখকদের রচনাবলী পাঠ করার পরে মন্তব্য করেছিলেন, স্পার্টাকাসের নেতৃত্বাধীন দাসযুদ্ধ সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ, হয়ত ইতিহাসের একমাত্র ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ। মার্কস এবং এঙ্গেলস-এর কথা আগেই বলেছি। তাদেরও আগে সুসানা ফ্রিল্যান্ড লিখেছিলেন স্পার্টাকাস—এক রােমান কাহিনী। খুব স্বাভাবিক কারণেই সােভিয়েত ইউনিয়নে এই বিদ্রোহ নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত ব্যালে (ballet)। আর্থার কোয়েস্টলার স্পার্টাকাসকে নিয়ে লিখেছিলেন দ্য গ্ল্যাডিয়েটরস নামক উপন্যাস। বামপন্থী দুই বুদ্ধিজীবী স্কটিশ লেখক লুইস গিবন (ছদ্মনাম) এবং মার্কিন লেখক হাওয়ার্ড ফাস্টও স্পার্টাকাসকে নিয়ে সহানুভূতিপূর্ণ উপন্যাস লিখেছিলেন। অন্যদিকে প্লুটার্ক এবং ফ্লোরাসকে ভিত্তি করে রিডলে (E.A. Ridley) একটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ইতিবৃত্ত রচনা করেছিলেন। হাওয়ার্ড ফাস্টের উপন্যাস অবলম্বনে এবং মার্কিন কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবী ডালটন ট্রাম্বাের তথ্যচিত্র নিয়ে হলিউড তারকা কার্ক ডগলাস ১৯৬০ সালে স্পার্টাকাস নামে যে ছবি করেন তাকে সমালােচকরা বলেছেন হলিউডের মূলধারার এক মূল্যবান রাজনৈতিক ছবি। স্পার্টাকাস ছবিটিতে যদিও বহু ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটেছিল, তথাপি ঐ সময়কার মার্কিন রাজনীতির গতিপ্রকৃতি মাথায় রাখলে এমন একটি ছবি তৈরির প্রয়াসকে সাহসী বলতে হয়।

আধুনিক লেখকরা অনেকেই স্পার্টাকাসকে অনেক বেশি কৃতিত্ব দিয়েছেন। তাদের মতে, স্পার্টাকাসের প্রবল মানবিকতা এবং মহত্ত্বকে স্বীকৃতি দিতেই হবে। গণতন্ত্রের জন্য প্রাচীন পৃথিবীতে একেবারে প্রথম দিকের দুঃসাহসী লড়াইগুলির মধ্যে স্পার্টাকাসের যুদ্ধ অন্যতম সেরা। তাঁর বিদ্রোহের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সমালােচকদের নজর এড়ায় নি। প্রথমত, স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে যে বিদ্রোহীরা যুদ্ধ করেছিল তাদের ছিল কঠোর শৃঙ্খলাবােধ এবং সামরিক ধাঁচের সংগঠন। প্লুটার্ক জানাচ্ছেন, ভিসুভিয়াস পর্বত থেকে বিদ্রোহীরা নিচে নেমে আসার পর ঐ অঞ্চলের বহু কৃষক ও রাখাল তাদের দলে যােগ দিয়েছিল। এরা ছিল দৌড় বীরদের মত ক্ষিপ্র ও বলশালী। স্পার্টাকাস এদের অনেককে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সরাসরি তার সেনাবাহিনীতে নিয়েছিলেন। আর বাকিদের হালকা অস্ত্র দিয়ে ছােটখাটো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, স্পার্টাকাসের যে ঘােড়সওয়ার বাহিনী রােমান সেনাপতি ক্র্যাসিয়াসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল তার বিপুল শক্তির কথা জানিয়েছেন অ্যাপ্পিয়ান। তিনি এও জানিয়েছেন যে, রােমের সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা সৈন্যদের তার বিদ্রোহী দলে নিতে অস্বীকার করেছিলেন স্পার্টাকাস। স্যালাস্ট লিখেছেন, রােমান সেনাপতি ভ্যারিনিয়াসের ফৌজের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় বিদ্রোহীরা রীতিমত ফৌজের নিয়ম মেনে নিজেদের মধ্যে নানা দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিল। থুরিতে অভিযানের সময় স্থানীয় বণিকদের থেকে পাওয়া সােনা ও রূপাে তার কোনাে বিদ্রোহী সেনা দখল বা ব্যবহার করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন স্পার্টাকাস। একথা লিখেছেন প্লিনি (Senior Pliny)। তাই ফ্রন্টো (Fronto) যখন বলেন, স্পার্টাকাস ছিলেন “যুদ্ধে পারদর্শী, আক্রমণে অতি দ্রুত”, তখন পরবর্তীকালে অনেক লেখক তা প্রামাণ্য বলে গ্রহণ করেন।

তৃতীয়ত, সিসিলির পূর্বসূরী দাস “রাজা”দের মত স্পার্টাকাসও জানতেন সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নানা পক্ষের সমর্থন ক্রয় করতে হয়। বিদ্রোহের প্রথম দিকে লুষ্ঠিত সামগ্রী সমস্ত অনুগামীদের মধ্যে সমান ভাগে বন্টন করার নীতি খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁর প্রতি কেউ কখনাে সদয় ব্যবহার করলে তিনি তা ফিরিয়ে দিতে জানতেন। অনেকের মতে ক্রিক্সাস এবং ওইনােমাউসকে তিনিই তার সহ-সেনাপতি হিসাবে নিয়ােগ করেছিলেন এবং ঠিক সেইভাবে যেভাবে রাজা তার মিত্রদের বেছে নেন। বন্দি রােমান সেনাদের তিনি গ্ল্যাডিয়েটদের মত একে অন্যের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য করেছিলেন। ব্যাপারটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অসীম তাৎপর্য। স্পার্টাকাস কি এইভাবে প্রতীকী অর্থে প্রচলিত আধিপত্য/ বশ্যতার ভুবনটিকে উল্টে দিতে চেয়েছিলেন? তিনি নিজে ল্যানিসটার (Lanista – গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধের ম্যানেজার বা পরিচালক) দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে কি চেয়েছিলেন শােষক ও শােষিতের চিরকালীন ছকটিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিতে?

স্পার্টাকাস
চিত্রঃ গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধে স্পার্টাকাসের মৃত্যু; Source: Wikimedia Commons

অন্তত প্রতীকী অর্থে এ যেন রােমান ক্ষমতাতন্ত্রের উথালপাথাল রূপ! এই প্রসঙ্গে আর একটি তথ্যও উল্লেখযােগ্য। মাতৃভূমি থ্রেসের স্থানীয় বা গ্রীক সব ধরনের রাজতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সঙ্গেই নিশ্চয়ই স্পার্টাকাসের পরিচয় ছিল। কিন্তু পূর্বসূরী ইউনাস, সলভিয়াস বা অ্যাথেনিয়নের মত তিনিও নিজের জন্য রাজার পদমর্যাদা আকাঙক্ষা করতেন এমন ইঙ্গিত সমকালীন সাহিত্যে নেই। মনে হয় তিনি নিজেকে একজন রােমান সেনাপতির ভূমিকায় দেখতেই আগ্রহী ছিলেন। একটু তাত্ত্বিকভাবে দেখলে, স্পার্টাকাস এইভাবে প্রচলিত ক্ষমতাতন্ত্রের অন্তর্নিহিত কর্তৃত্বকে আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন।

আমরা এই প্রসঙ্গ শেষ করব একটি অন্যতর প্রশ্ন দিয়ে। এই বিরাট অভ্যুত্থানের ফলে কি দাসপ্রথার উপর রােমের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীর নির্ভরতার অবসান ঘটেছিল? বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিতে দেখলে? এই প্রশ্নের কোনাে একটি মাত্র উত্তর খোঁজা অর্থহীন। কারণ পরিসংখ্যানগুলি পরস্পরবিরােধী। অনেকে মনে করেন, অন্তত ১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রােমান অর্থনীতিতে দাস সরবরাহের কোনাে বড় ঘাটতি দেখা দেয় নি। কেবলমাত্র ১৫০ এর পরেই রােমান সমাজ ধীরে ধীরে স্থান হয়ে পড়েছিল। এটা ছিল ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা আর গােষ্ঠী-লড়াই-এর আমল। এই আমলে প্রাসাদের কূটনীতি আর সামরিক অভ্যুত্থানই ছিল মূল কথা। কিন্তু ক্ষুদ্র সময়কালের মাপকাঠিতে দেখলে, স্পার্টাকাসের বিদ্রোহের ফলাফল অবশ্যই নাটকীয়। একটি সূত্র অনুযায়ী, ৫০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ নাগাদ রােমে সম্ভবত সাড়ে সাত লাখেরও কম ক্রীতদাস ছিল। সংখ্যাটা পূর্বের চেয়ে অনেক কম। এটা অতএব ঠিক যে, স্পার্টাকাসের বিদ্রোহের অব্যবহিত পরে রােমে ক্রীতদাসের বড়সড় অভাব দেখা দিয়েছিল। এর একটা কারণ অবশ্যই অসংখ্য ক্রীতদাসের জীবনহানি। অন্য কারণটি হল, বিদেশ থেকে নতুন করে দাস আমদানি করার ভীতি। সব মিলিয়ে দাসব্যবস্থার সঙ্গে রােমান অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ পুরােপুরি ভেঙে যায় নি। তবে রােমান সাম্রাজ্যের পরবর্তী পর্যায়গুলিতে দাসপ্রথার গুরুত্ব কমে এসেছিল।

স্পার্টাকাস: ফিরে দেখা

একুশ শতকেও স্পার্টাকাসকে নিয়ে লেখালেখির বিরাম নেই। বিতর্কও অব্যাহত। ২০০১ সালে ব্রেন্ট ডি.শ (Brent D. Shaw) মন্তব্য করেন, মনে হচ্ছে স্পার্টাকাসকে নিয়ে রােম্যান্টিক অতিকথার দিন শেষ। এটা নিশ্চয়ই শ-এর নিজস্বমত। শ স্পার্টাকাসের যুদ্ধ এবং তথ্যসূত্রগুলির উপর বিশদভাবে আলােকপাত করে একটি বড়সড় গ্রন্থ লিখেছেন। কিন্তু সত্যিই কি স্পার্টাকাস নামক রােম্যান্টিক আখ্যানের উপর যবনিকা পড়ে গেছে? তাহলে খােদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে ছােট পর্দার নির্মাতারা নতুন করে স্পার্টাকাসের জাদুতে মজলেন কেন? গ্ল্যাডিয়েটর জগতের হাতছানির মর্ম মার্কিন প্রযােজকরা বােঝেন। তাই ১৯৬০ সালের পর আবার হাওয়ার্ড ফাস্টের সেই বিখ্যাত উপন্যাস নিয়ে আমেরিকায় তৈরি হয়েছে ছবি। এবার ছােট পর্দায় টানা চারঘন্টার জন্য স্পার্টাকাস ফিরে এসেছেন। আর এই নতুন আগ্রহ-উদ্দীপনার কথা তার বইতে উল্লেখ করেছেন লেখিকা থেরেসা উরবেনচিক (Theresa Urbainczyk)। ২০০৪ সালে প্রকাশিত একটি নাতিদীর্ঘ কিন্তু অত্যন্ত আকর্ষণীয় গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, স্পার্টাকাসের মতাদর্শগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই আজও আধুনিক পাঠকদের কল্পনায় তিনি এক বিপ্লবী নায়ক। আধুনিক কালের কমিউনিস্ট বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে স্পার্টাকাসের তুলনা করে থেরেসা বলেছেন, অনেকের কাছে স্পার্টাকাসের জীবনের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর চেয়ে বেশি তাৎপর্য বহন করে তার কিংবদন্তীতুল্য ভাবমূর্তি। থেরেসার কাছে অবশ্য স্পার্টাকাসের সংগ্রামের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিও কম মূল্যবান নয়, তার পরাজয় সত্ত্বেও। গ্ল্যাডিয়েটরের জীবনের নানা দিক কিংবা প্রজাতন্ত্রী রােমের ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি প্রধান প্রধান তথ্যসূত্রগুলির উপর আলােকপাত করেছেন (আমরা পরবর্তী একটি অধ্যায়ে এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করব)। আমরা জানি ওয়েডম্যান (Wiedemann) এবং কিথ ব্র্যাডলির মত বিশেষজ্ঞরা স্পার্টাকাসের লড়াইকে নিছক একটি দাস বিদ্রোহ হিসাবে দেখতেই আগ্রহী। তাদের চোখে স্পার্টাকাস বড়জোর এক বিদ্রোহী নায়ক, বিপ্লবী নন। তার না ছিল স্পষ্ট কোনাে মতাদর্শ, না মহত্তর কোনাে লক্ষ্য। দাসত্ব নামক প্রতিষ্ঠানকে আদর্শগত কারণে তিনি চ্যালেঞ্জ জানান নি। New Paragraph থেরেসা উরবেনচিক এমন এক সাম্প্রতিক গবেষক যিনি এই ধরনের বক্তব্য একেবারেই মানেন না। বরং তিনি সেই পুরােনাে বিতর্কটি উসকে দিতেই বেশি আগ্রহী যে স্পার্টাকাসের বিদ্রোহের পিছনে কাজ করেছিল আদর্শবােধের তাগিদ। থেরেসার মতে, দাস বাহিনীর নানা কূটকৌশল – যেমন, সমানেই অনুগামীদের সংখ্যাবৃদ্ধি বৃহত্তর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাক্ষ্য বহন করে। তিনি লিখেছেন, বিদ্রোহী বাহিনীর কাজ কর্ম লক্ষ্য করলে বােঝা যায়, নিছক যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হওয়া বা দাসত্ব থেকে পালিয়ে বাঁচা নয় – বরং বিদ্রোহীরা আরাে বড় কিছুর জন্যই লড়াই করছিল। অ্যাপ্পিয়ান, টার্ক, ফ্লোরাস এবং সিসেরাের মত প্রাচীন লেখকদের লেখার নানা দুবর্লতা ও স্ববিরােধিতার উল্লেখ করে থেরেসা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে পূববর্তী দাস বিদ্রোহগুলির সাবেক ও রক্ষণশীল চরিত্র আধুনিক গবেষকদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করেছে। তারা স্পার্টাকাসের বিদ্রোহকেও একই ছাঁচে ফেলে বিচার করেছেন। এটা তাদের দেখার ভুল। ইতালিয় উপদ্বীপের উপরে নীচে বিদ্রোহী বাহিনীর দীর্ঘ ঘােরাফেরা থেকে মনে হয় নিছক ইতালি ছেড়ে বিদ্রোহীদের নিয়ে বেরিয়ে আসাটাই স্পার্টাকাসের লক্ষ্য ছিল না। অবশ্য থেরেসা নিজেও স্বীকার করেছেন যে বিদ্রোহীদের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল সে সম্পর্কে যে কোনাে আলােচনাই নিশ্চিতভাবে দূরকল্পী। কিন্তু এটা ঠিক যে বহু রােমান ঐতিহাসিকের নেতিবাচক এবং পক্ষপাতপূর্ণ মূল্যায়নকে পাঠ করতে হবে সতর্কভাবে। কেননা গ্রীক লেখক প্লটার্কের গ্রন্থে (ক্র্যাসাসের জীবনকথা) স্পার্টাকাসের অন্য ছবি মেলে।

পাঠক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন থেরেসা উরবেনচিকের বক্তব্য একটু বেশি জায়গা নিয়ে আলােচনা করা হল। এর কারণ দুটি। প্রথমত, এটি স্পার্টাকাস সম্পর্কে একটি একেবারে সাম্প্রতিক গবেষণা গ্রন্থ। দ্বিতীয়ত, লেখিকা রক্ষণশীল মতামতকে আক্রমণ করার জন্য প্রাচীন আকরগ্রন্থগুলিকে ফিরে দেখেছেন। পাঠক মনে রাখবেন, স্পার্টাকাস আধুনিক কল্পনায় স্বমহিমায় বিরাজ করছেন। পুনরুক্তির ঝুঁকি নিয়েও বলি, বিশ শতকে স্পার্টাকাসকে নিয়ে তিন তিনজন সাহিত্যিক-লুইস গ্রাসিক গিবন, আর্থার কোয়েস্টলার এবং হাওয়ার্ড ফাস্ট রােমাঞ্চকর উপন্যাস লিখেছেন। তাদের দৃষ্টির দিগন্ত অবশ্যই আলাদা। কেউ মনে করেন স্পার্টাকাস যিশুর মত পরিত্রান্স (মেসায়া), কারুর চোখে তিনি ব্যর্থবিপ্লবী একনায়ক। হলিউডের ছবির কথা আগেই বলেছি। এও দেখেছি, অতি সম্প্রতি আমেরিকায় ছােট পর্দায় আবির্ভাব ঘটেছে স্পার্টাকাসের। তাই আদর্শবাদী বিপ্লবী হােন বা দুঃসাহসী বিদ্রোহী, অনুগামী দাসদের মুক্তির জন্য লড়ুন কিংবা দাসপ্রথা নামক প্রতিষ্ঠানের অবসানের জন্য, কঠোর একনায়ক হােন অথবা সাম্যবাদী গণতন্ত্রী – লােকমানসে স্পার্টাকাস যে এক ট্র্যাজিক নায়ক সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সাহিত্যে, সিনেমায় ঐতিহাসিক উপাখ্যানে স্পার্টাকাস কিভাবে একটু একটু করে কিংবদন্তী হয়ে উঠেছেন সে কথা তাই অন্যমনস্ক পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন ওয়াইক ও ফাট্রেল (Wyke/Futrell) এবং লােরনা হার্ডউইকের মত সাম্প্রতিক লেখকরা। এ কাহিনীর বুঝি শেষ নেই।

 

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

Post Views: 8,534
Tags: HistoryNobojagaranক্রীতদাসক্রীতদাস প্রথাগ্লয়েডিয়েটারদাসপ্রথাদাসব্যবস্থানবজাগরণরোমান ক্রীতদাসস্পার্টাকাস
ADVERTISEMENT

Related Posts

রহস্য উদ্ঘাটন মূলক বিশ্বাস খ্রিস্টানদের ইজরাইল সমর্থনের বড় কারণ
ইসলাম

‘রহস্যউদ্ঘাটনমূলক’ বিশ্বাস আমেরিকান খ্রিস্টানদের ইহুদি ও ইজরাইল সমর্থনের বড় কারণ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম রহস্য উদ্ঘাটন পন্থী খ্রিস্টান মৌলবাদীরা ‘বাইবেল সংক্রান্ত কারণে’ আরও ব্যপকভাবে ফিলিস্তিন-ইজরাইল সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। [Apocalypse...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
November 8, 2024
আফগান জিহাদ, তালেবানের উত্থান ও আমেরিকার আফগানিস্তান আক্রমণের যতকথা
বিশ্ব ইতিহাস

আফগান জিহাদ, তালেবানের উত্থান ও আমেরিকার আফগানিস্তানে আগ্রাসন

১৯৭৯ সালে ইরানে বিপ্লবের পর ইরান ও সৌদি আরবের স্নায়ুযুদ্ধ বা শীতল যুদ্ধ শুরু হয়। অন্যদিকে আমেরিকা ও সোভিয়েত...

by অতিথি লেখক
September 4, 2021
গুপ্তহত্যার মাধ্যমে মোসাদ যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের খুন করেছিল
বিশ্ব ইতিহাস

গুপ্তহত্যার মাধ্যমে যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের খুন করেছিল ইজরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজ পরামর্শক কৌটিল্য বলেছিলেন, “প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দাও, দরকার হলে গুপ্তহত্যা করেও।” কৌটিল্যের...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
May 19, 2021
মােসাদ
বিশ্ব ইতিহাস

মােসাদ : বিশ্বের সবচেয়ে বীভৎসতম ও ভয়ঙ্কর গােয়েন্দা সংস্থার ইতিকথা

একসময় অ্যাডলফ হিটলার বলেছেন, দুনীয়ায় যেকোনাে উল্লেখযােগ্য অপরাধকান্ডের পেছনে থাকে কোনাে কোনাে ইহুদীর হাত। হিটলার যখন একথা বলেন তখন...

by আবু রিদা
May 14, 2021

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (27)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (2)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply