লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত অভিনেতা/অভিনেত্রীগণ নিরাপত্তাহীন যৌনকর্মে (সাধাধারণত কনডমবিহীন পায়ুসঙ্গম) লিপ্ত থাকার জন্যে অধিকাংশ অভিনেতা/অভিনেত্রীগণ আশঙ্কাজনক হারে বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। এলএ বোর্ড অব পাবলিক হেলথের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০০-০১ সালে ৮২৫ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মাঝে ৭.৭% নারী এবং ৫.৫% পুরুষ ক্ল্যামিডিয়া নামক একটি যৌন রোগে আক্রান্ত এবং সর্বোমোট ২% গনোরিয়া নামক এক মারাত্মক যৌন রোগে আক্রান্ত। এইসব যৌন রোগের আক্রমণের হার পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের রোগীদের চেয়েও অনেকগুন বেশি, যা হল ৪.০% এবং ০.৭% প্রায়। ২০০৩ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ২০০৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৯৭৬ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর যৌনঘটিত রোগের মেডিক্যাল টেস্টে ১১৫৩টি পজেটিভ ফলাফল আসে। ফলাফলে জানা যায় ৭২২ জন (৬২.৬%) ক্ল্যামিডিয়া রোগে, ৩৫৫ জন (৩০.৮%) গনোরিয়া রোগে এবং ১২৬ জন (১০.৯%) উভয়রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি বা হেপাটাইটিস সি, হার্পিস ভাইরাস, ট্রাইকোমোনাল সংক্রমণ এবং মুখ-ত্বকীয় সংস্পর্শের ফলে সংক্রমিত অন্যান্য রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা এবং ঝুঁকির ব্যাপারে কিছু জানা যায় নি। এলএ পাবলিক হেলথের পক্ষ থেকে দেওয়া এই তথ্যকে পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা চরম সমালোচনা করে। তারা বলে যে পজেটিভ ফলাফল প্রাপ্ত অধিকাংশ ব্যক্তিই কখনোই পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় অভিনয় করেনি এবং মূলতঃ তাদের যৌনঘটিত রোগের চিকিৎসার পূর্বেই তারা পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় থেকে বহিস্কার করা হয়। হার্পিস হল অনিরাময়যোগ্য একটি যৌন রোগ। এই রোগটি এক্ষেত্রে জটিল অবস্থা প্রদর্শন করে: পর্ন অভিনেত্রী ক্লোয়ির বলেছেন, “অল্প কিছুদিন এই পর্নোগ্রাফীতে কাজ করার পরপরই আপনি হার্পিসে আক্রান্ত হবেন; (মূলত) প্রত্যেক অভিনয়কারীরাই এই হার্পিস রোগে আক্রান্ত হয়।” (সূত্রঃ উইকিওয়ান্ড)
যৌন জীবনকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন-
১। সাধারণ/স্বাভাবিক যৌন জীবন,
২। অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবন,
৩। বিকৃত রুচির যৌন জীবন,
সাধারণ বা স্বাভাবিক যৌন জীবন সব সময়ই স্বাস্থকর। তাই এ নিয়ে এখন কোন কথা বলা নিস্প্রয়োজন। আমরা বাকি দুটো নিয়ে আলোচনা করব।
২) অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবন
অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবনে অভ্যস্ত থেকে গলার ক্যানসার হতে পারে
গবেষকদের মতে, ওরাল সেক্সে মাথা ও গলার ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক গুণ বৃদ্ধি করে দেয়। ওরাল সেক্স করলে মাথা ও ঘাড়ে ছড়িয়ে পরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। এটা এমন একটি মারাত্মক ভাইরাস যা গলা ও মাথার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
আগে চিকিৎসকরা ধূমপান ও মদ্যপানকেই গলা ও মাথার ক্যানসারের মূল কারণ বলে মনে করতেন। কিন্তু এই রোগের আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। গবেষকরা দাবী করেছেন, পুরুষদেরও যদি একাধিক নারী সঙ্গী থাকে, তাহলেও এই ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধতে পারে অর্থাৎ একাধিক নারীর সাথে ওরাল সেক্স করলে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচভিপিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ থেকে অরোফ্যারিঙ্গাল ক্যানসার হতে পারে। এই গবেষণাটি তখনই জনপ্রিয় লাভ করে যখন অভিনেতা মাইকেল ডগলাস দাবি করে যে, ওরাল সেক্স করার ফলেই তিনি গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।
সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ডাটার পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্রায় ৯,০০০ গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার উপর গবেষণা চালিয়ে পরিলক্ষিত হয়েছে যে তারা একাধিক সঙ্গীর সাথে ওরাল সেক্স করতে অভ্যস্ত ছিল। তাঁদের মধ্যে ৭% এমন সব রোগী ছিলেন যাঁদের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে এইচপিভি ১৬। গবেষকদের বক্তব্য, কোনও পুরুষ যদি নিয়মিত ধূমপান করে এবং এর সঙ্গে জীবনে পাঁচের বেশি নারীর সাথে ওরাল সেক্স করে, তা হলে গলা, মুখ ও ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে।
এইচপিভি আক্রান্তের উপসর্গঃ গবেষকদের দাবী, মোট ১০০ ধরনের এইচপিভি-র সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এইচপিভি ১৬ (HPV 16) ও এইচপিভি ১৮ (HPV 18) সার্ভিকাল ক্যানসার হতে পারে। এইচপিভি ১৬ (HPV 16) থেকে অরোফ্যারিঙ্গাল ক্যানসারও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই ভাইরাসের উপসর্গ হল, গলার যন্ত্রণা বাড়ে এবং খাবার খেতে অসুবিধা হয়। কানে যন্ত্রণা ও নাক ডাকা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, গলার স্বরে (কণ্ঠস্বর) হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়, ওজন হু হু করে কমতে শুরু করে।
ওরাল ক্যানসার ফাউন্ডেশন ৩০ বছর ধরে এইচপিভি সংক্রান্ত গলার ক্যানসারের উপর গবেষণা করছে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪০-৬০ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে এইসব রোগের সম্ভাবনা অধিক। বর্তমানে লক্ষ্য করা গেছে যে, ২৫-৫৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে এই ভাইরাস অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। গবেষকদের মতে নারীদের বেলায় দুই বা ততোধিক ওরাল সেক্স পার্টনার যদি থাকে তাহলে এর সম্ভাবনা দেড়গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ এইসব যৌন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে যৌন জীবনে নিয়ন্ত্রণ রাখাটা সবচেয়ে প্রয়োজন। স্বাভাবিক ও সুস্থ যৌন জীবনে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। এই ভাইরাস আটকানোর ভ্যাকসিনও আবিস্কার হয়েছে। ৯-২৬ বছর বয়স পর্যন্ত এইচপিভি (HPV) ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। গলার সামান্য যন্ত্রণা বা টিউমারের মতো কোন কিছু অনুভূত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ভাইরাস ছড়ালে দাঁতের ক্ষয়ও হয়। তাই নিয়মিত ডেনটিস্টের কাছে চেকআপ করাটা প্রয়োজন। অ্যালকোহল/ মদ্যপান ও ধূমপান এইচপিভি (HPV) ভাইরাসকে অনেক বেশি অ্যাক্টিভ বা সক্রিয় করে তোলে। সুতরাং কোন ধরণের নেশার ধারে কাছেও যাওয়া উচিৎ নয়। (তথ্যসূত্রঃ দ্য ওয়াল, ৪ জুলাই ২০২০, অনলাইন সংস্করণ)
৩) বিকৃত যৌন জীবন (Paraphilia)
যৌন বিকৃতিঃ যৌন বিকৃতিকে যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্যারাফিলিয়া (ইংরেজি: Paraphilia; যা গ্রিক παρά (প্যারা) “পাশে” এবং φιλία (–ফিলিয়া) “বন্ধুত্ব, প্রেম” থেকে এসেছে)। যৌন বিকৃতি বলতে এমনসব যৌনতার প্রতি আকর্ষণকে বোঝায় যেগুলো ‘স্বাভাবিক’ বা সুস্থ যৌনতা নয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যৌন বিকৃতিকে মানসিক রোগ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
সংজ্ঞাঃ বিকৃত যৌনাচারকে সাধারণত কামুকতা বা লুইচ্চামি হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বিকৃত যৌনাচার হচ্ছে এমন সব যৌনতা যা একজন মানুষের কোনো দেখলে যার সাথে যৌনতার সম্পর্ক নেই সেইসব দেখে উত্তেজনা অনুভব করা অর্থাৎ মলমূত্র দেখে বা কোনো গাছ বা পশুপাখি এককথায় মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বা পদার্থ দেখে যৌন উত্তেজনা অনুভব করা। এই ধরনের যৌনতাকে ‘সেক্সুয়াল ফেটিশিজম’ (Sexual Fetishism) বলে। যৌন বিজ্ঞানীরা ‘আনইউযুয়াল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্টস’ (unusual sexual interest) এবং এই বিকৃত যৌনতাকে একই ধরনের বলেছেন, যেমন উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো গাছকে দেখে যৌন উত্তেজনা জেগে ওঠে তাহলে সেটাকে ‘আনইউযুয়াল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট’ বা অসচরাচর যৌন আগ্রহ বা বিকৃত যৌনতা বলা হবে। বিকৃত যৌনতা নিয়ে বিতর্কের কোন অন্ত নেই কারণ বিকৃত যৌনতাকে মানসিক বিকৃতির তালিকায় ফেলা হবে না এমনি সাধারণ কোনো রোগের তালিকায় ফেলা হবে নাকি এটাকে কোনো রোগই ধরা হবেনা কারণ অনেকেই মনে করেন আপাতদৃষ্টিতে বিকৃত যৌনতায় একজন মানুষের কোনো ক্ষতি হয়না। যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এ্যাসোসিয়েশন (American Psychiatric Association/APA) ‘ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়্যাল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স’ (ডিএসএম) এবং আন্তর্জাতিকভাবে চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহৃত ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস’ (International Classification of Diseases/ICD) তে বিকৃত যৌনতার ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত বা পরিষ্কার সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি।
বিকৃত যৌনতা কত প্রকার হয় তা সঠিকভাবে বলা দুঃসাধ্য ব্যাপার, অন্যদিকে ভারতের একটি গবেষণায় ৫৪৯ রকমের বিকৃত যৌনতার তালিকা পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের ১৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের এপিএ ‘ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়্যাল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স-৫’ (Diagnostic and statistical manual of mental disorders 5/DSM5) নামের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং সেখানে মাত্র ৮ প্রকারের যৌন উত্তেজনাকে বিকৃত যৌনতার তালিকাভুক্ত করা হয়। বিকৃত যৌনতার বহু শ্রেণীবিভাগ এবং উপশ্রেণীবিভাগ রয়েছে যদিও সব যৌন বিজ্ঞানী সবগুলোকে বিকৃত যৌনতার বলতে রাজি নন।
শব্দের উৎপত্তিঃ নিউজিল্যান্ডের যৌন বিজ্ঞানী জন উইলিয়াম মানি (১৯২১-২০০৬) সর্বপ্রথম ইংরেজি শব্দ ‘প্যারাফিলিয়া’কে জনপ্রিয় করেন। তিনি প্যারাফিলিয়াকে ‘সমাজবিরোধী এবং অপ্রয়োজনীয় যৌনতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনঃরোগ বিশেষজ্ঞ গ্লেন গ্যাবার্ড (জন্মঃ ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে) জন উইলিয়াম মানি এবং অপর এক যৌন বিশেষজ্ঞ উইলহেল্ম স্টিকেলের যৌন বিকৃতির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেটাকে ভুল বলে অভিহিত করেন, তাঁর মতে, বিকৃত যৌনতাকে আলাদাভাবে বলা যায়না, তিনি এও বলেন যে, কোনো যৌনতাই বিকৃতি নয় যতক্ষণ না সেই যৌনতা নিজেকে এবং/বা সঙ্গীকে কোনো মানসিক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অস্ট্রীয়ার যৌন বিশেষজ্ঞ ফ্রেডরিখ সলোমন ক্রস ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে জার্মান ভাষায় ‘প্যারাফিল’ শব্দটির প্রচলন ঘটান বিকৃত যৌনতাকে বোঝানোর জন্য, ১৯১৩ ‘প্যারাফিল’ সালে শব্দটি ‘প্যারাফিলিয়া’ নামে ইংরেজি ভাষায় ঢুকে যায়, মার্কিন যৌন বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম জে. রবিনসন (১৮৬৭-১৯৩৬) ফ্রেডরিখ সলোমন ক্রসের উদাহরণ দিয়ে শব্দটির প্রচলন করেন। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের (Sigmund Freud) অনুসারী অস্ট্রীয়ার মনোবিজ্ঞানী উইলহেল্ম স্টিকেল [Wilhelm Stekel, (1868-1940)] ১৯২০ এর দশকে জার্মান ‘প্যারাফিল’ শব্দটি খুব বহুল ভাবে ব্যবহার করেছিলেন। শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে গ্রীক শব্দ ‘প্যারা’ যার অর্থ পাশে এবং ‘ফিলিয়া’ শব্দ থেকে যার অর্থ বন্ধুত্ব, প্রেম।
উনবিংশ শতাব্দির শেষের দিকে মনঃরোগবিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরণের বিকৃত যৌনতার সংজ্ঞা এবং শ্রেণীবিভাগ বানাতে শুরু করেন কারণ তাঁরা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় ‘পায়ুকাম আইন’ ও ‘কামুকতা আইন’ থেকে ব্যতিক্রম কিছু দেখাতে চাইছিলেন। আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক এ্যাসোসিয়েশন (American psychiatric association/APA) দ্বারা তৈরি ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়্যাল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স – ৩ [Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 3rd ed., revised (DSM-III-R)] (১৯৮০) তে যৌন বিকৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘প্যারাফিলিয়া’র পরিবর্তে ‘সেক্সুয়াল ডিভায়েশন’ (sexual deviation) শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়, যার বাংলা অর্থ হল লুইচ্চামি। ১৯৮১ সালে ‘আমেরিকান জার্নাল অব সাইকিয়াট্রি’ (American Journal of Psychiatry) নামক ম্যাগাজিনে বিকৃত যৌনতাকে অস্বাভাবিক, এবং অপ্রয়োজনীয় যৌনতা বলে আখ্যায়িত করা হয়, এবং সেখানে বলা হয়,
- মানুষ নয় এমন কোনো কোনো উদ্ভিদের বা প্রাণীর প্রতি যৌন-আকর্ষণ অনুভব করা।
- যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে বা নিজের সঙ্গীকে মানসিক বা শারীরিক কষ্ট দেওয়া।
- অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু বা তরুন-তরুনীর প্রতি যৌন উত্তেজনা অনুভব করা। (সূত্রঃ উইকিপেডিয়া)
এছাড়াও আমেরিকান মনোবিজ্ঞান সংস্থা (সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির) মত অনুসারে, সমাজের প্রচলিত সংস্কৃতি বহির্ভূত যৌনতাকে ‘প্যারাফিলিয়া’ বা ‘বিকৃত যৌনতা’ হয়। যেমন- শিশু, বৃদ্ধ, পশু বা বিভিন্ন প্রাণী, মৃত ব্যক্তি, বস্তু, উদ্ভিদ ইত্যাদির প্রতি যৌন উত্তেজনা অনুভব করাকে বিকৃত যৌনতা বলা হয়। এই বিকৃত যৌনতা অনেক ধরণের হয়ে থাকে। যেমন,
ফ্রটারিজম (Frotteurism): এই ধরণের বিকৃত যৌনতার রোগীরা জনবহুল এলাকায় অস্বাভাবিক আচরণ করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত অপরিচিত লোকেদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে এবং অনুমতি ছাড়াই মহিলাদের শরীরে অশ্লীল ও ইচ্ছেকৃত ভাবে হাত দেয়, ইচ্ছাকৃতভাবে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ায়। অনেকে আবার মহিলাদের দেখিয়ে রাস্তা-ঘাটে বা বাসে – ট্রেনে হস্তমৈথুনও করে থাকে। এই রোগটা সাধারণত পুরুষদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়। যেমন বেশ কয়েকদিন আগে আসানসোল মালদহগামী রকটি বাসে জনার্দন দাস নামের একজন বাস কন্ডাক্টর হস্তমৈথুন করে বীরভূমের পুরন্দরপুরের বাসিন্দা এক নাবালিকা কিশোরীর শরীরে বীর্যপাত করে। (সূত্রঃ নিউজ ১৮ বাংলা, অনলাইন সংস্করণ, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০)
এখানেই শেষ নয়। চলন্ত বাসে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত ঘটানো খবর প্রায়ই সংবাদপত্রে ও বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে প্রকাশিত হয়। এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সাধারণত ফ্রটারিজম নামের বিকৃত যৌন রুচিতে অভস্ত।
ফেটিশিজম (Fetishism): এই ধরণের বিকৃত যৌনতার রোগীরা সাধারণত জড় বস্তুর প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে। যেমন- আন্ডারওয়ার, মেয়েদের ব্রা, পেন্টি প্রভৃতি পোশাক নিয়ে খেলা করা প্রভৃতি। এটা বিকৃত আচরণ হলেও সমাজের জন্য তেমন ক্ষতিকর না।
পেডোফেলিয়া (Pedophilia): এই ধরণের বিকৃত যৌনতার রোগীরা শিশু বা বাচ্চাদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে।
পেডোফিলিয়া (Pedophilia) রোগটা সেক্সচুয়াল ডিজঅর্ডার। পেডোফিলিয়ার রোগীরা কেবল সেইসব শিশুদের প্রতি আসক্ত থাকে যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয় নি। মানুষ এই ঘৃণ্য আচরণটি কেন করে- এ নিয়ে এখনো বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, যেসব শিশু শৈশবকালে দীর্ঘসময় ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো তাদের মধ্যে কেউ কেউ যৌবনে পেডোফাইলে পরিণত হয়।
পেডোফাইলে পরিণত হওয়া মানুষগুলো নারী পুরুষ উভয়ই হতে পারে, তবে পুরুষদের সংখ্যা বেশী হয়। সমকামীদের মধ্যেও পেডোফিলিয়ার বেশ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে এরা সম্পর্ক ও সখ্যতা স্থাপন করে না বরং এদের সখ্যতার সম্পর্ক স্থাপন শিশুদের সাথে, এরা শিশুদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচার – আচরণ করে থাকে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতবর্ষে প্রতি ১৫৫ মিনিটে একটি ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু ধর্ষিত হয়। প্রতি ১৩ ঘন্টায় একটি করে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একজন শিশু যৌন লালসার শিকার হয়। এইসব শিশুদের মধ্যে ৫৬% ছেলে। তাই হিসেবে করলে দেখা যায় প্রতি সেকেন্ডে ভারতবর্ষের কোনো না কোনো শিশু নোংরা ও কামুক হাতের স্পর্শ পাচ্ছে তার পরিচিত কারোর থেকে কোন না কোন ভাবে। সবথেকে ভয়ংকর ব্যাপার হল, শিশুদের যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে অপরাধীরা ৯০% হল আত্মীয় বা পরিচিতদের মধ্যে কেউ না কেউ।
তবে আমাদে মনে রাখতে হবে যে, সব পেডোফাইল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন করে না এবং সব শিশু যৌন নির্যাতনকারীরাও কিন্তু পেডোফাইলে আক্রান্ত নয়।
এছাড়াও অনেক ধরনের বিকৃত যৌনতা রয়েছে যেমন,
১) সেক্সুয়াল স্যাডিজম ডিসঅর্ডার (Sexual Sadism Disorder) : এই ধরণের রোগীরা সঙ্গীকে শারীরিকভাবে কষ্ট দিয়ে আনন্দ লাভ করে।
২) ভয়েরিজম (Voyeurism) : এই ধরণের বিকৃত যৌনতার রোগীরা লুকিয়ে চুরিয়ে অন্যের যৌন সঙ্গম দেখে আনন্দলাভ করে।
৩) নেক্রফিলিয়া (Necrophilia) : এই ধরণের রোগীরা মৃত দেহ বা কঙ্কালের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে।
৪) এলগোলাগনিয়া (Algolagnia) : এই ধরণের বিকৃত যৌন রুচির লোকেরা নিজেকে শারীরিক কষ্ট দিয়ে যৌন সুখ পায়, কিছু এমন লোকও আছে যারা নিজের কোন ব্যাথা পাওয়া অঙ্গে চাপ দিয়ে আরও বেশি যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পেয়ে থাকে।
৫) সেলিব্রিফিলিয়া (Celebriphilia) : এর ধরণের লোকেরা সাধারণত সেলিব্রেটি নায়ক নায়িকার প্রতি যৌন কল্পনা করে আনন্দ লাভ করে থাকে।
The Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM), published by the American Psychiatric Association এর কাজের ধারা অনুযায়ী প্যারাফিলিয়া রোগের জন্য কয়েকটি কারণ হতে পারে, যেমন-
নিউরোট্রান্সমিটার নামে মস্তিষ্কের কিছু ডোপামিন (dopamine), সেরোটোনিন (serotonin), নরেপিনফ্রিন (norepinephrine) এর ভারসাম্যহীনতা যা যৌন বিকৃতির কারণ হতে পারে। ডোপামিন (dopamine), সেরোটোনিন (serotonin), নরেপিনফ্রিন (norepinephrine) হরমোনগুলো সাধারণত আমাদের শরীরের জন্য উপকারী রাসায়নিক পদার্থ এবং আমাদের মন – মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
দীর্ঘ দিন ধরে বার বার বিকৃত যৌনচার চর্চা করলে আমাদের মস্তিস্কের স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও আকৃতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং এক সময় এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় যা বার বার মানুষ কে সেই কাজ করতে প্ররোচিত করে।
এবার আসি পর্নোগ্রাফীতে । এতক্ষণ আমরা যেসব বিকৃত যৌনাচারের ব্যাপারে আলোচনা করলাম তার সমস্ত কিছুই পর্নোগ্রাফীতে দেখানো হয়। সেখানে শিশুকাম থেকে শুরু করে বৃদ্ধকাম কোন কিছুই বাদ যায়না। শিশু বা চাইল্ড পর্নোগ্রাফী আইনত অপরাধ বলে স্বীকৃত হলেও ইন্টারনেট সার্ভারে এমন অসংখ্য ওয়েব সাইট রয়েছে যেখানে প্রচুর পরিমাণে শিশু বা চাইল্ড পর্নোগ্রাফী দেখানো হয়। ডার্ক ওয়েবে (যা সর্বমোট ব্যবহৃত ইন্টারনেটের ৯৬ শতাংশ) তো চাইল্ড পর্নোগ্রাফীর ছড়াছড়ি।
এছাড়াও কুকুর, ঘোড়া প্রভৃতি জীব জন্তুদের সাথেও মানুষের যৌন সঙ্গমের জঘন্য সব দৃশ্য দেখানো হয়। পর্ন অভিনেত্রীরা তাঁদের যৌনাঙ্গে কৃত্রিম লিঙ্গ, মোমবাতি বা বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রবেশ করাচ্ছেন এমন সব দৃশ্যও দেখানো হয়। বিকৃত পায়ুকাম ও ওরাল সেক্সও দেখানো হয়। এগুলি সবই বিকৃত যৌনতা।
এতক্ষণ আমরা দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে বিকৃত যৌনাচার একধরণের মানসিক ব্যাধি বা রোগ। সুতরাং পর্নোগ্রাফীতে কর্মরত পুরুষ ও মহিলারা ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া, প্যাপিলোমা, সিফিলিস, হেপাটাইটিস, হার্পিস, ট্রাইকোমোনাল, এইডস প্রভৃতি ভাইরাসজনিত যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের বিকৃত যৌনতার রোগেও মারাত্মভাবে আক্রান্ত। পর্নোগ্রাফিতে
পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে পর্নোগ্রাফিতে
পর্নোগ্রাফী সম্পর্কে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়ুন,
১) পর্নগ্রাফি মানুষের মস্তিষ্কের উপর যেভাবে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে
২) পর্নোগ্রাফী মানুষের যৌন তৃপ্তি বাড়ায় না, বরং কমিয়ে দেয়
৩) পর্ণোগ্রাফীর নীল পর্দার পিছনের জগতটার অন্ধকার দিক