লিখেছেনঃ আতিকুর রহমান চৌধুরী
সাম্প্রতিক উত্তর প্রদেশ হাই কোর্ট এক রায়ে বলেছে, যেহেতু করোনা প্রকোপ রোধে মসজিদগুলোতে জামাত হচ্ছে না, তাই লাউড স্পিকারে আজান দিয়ে মুসুল্লিদের ডাকার কোন প্রয়োজন নেই। হাইকোর্ট বলেছে, আরও পরিষ্কার করে বলি, হাইকোর্ট বলেছে। করোনার আতঙ্কিত পরিবেশকে মুসলিম বিরেধিতায় পর্যবসিত করার আর একটি প্রয়াস।
উত্তরপ্রদেশে যোগীরাজ চলছে, যোগীরা সংসার ত্যাগী হন। কিন্তু ইনি সংসারের মায়া ছাড়তে পারেননি। তাই কিছুদিন আগে বলেছিলেন, দিল্লির মারকায থেকেই কোভিদ ১৯ ছড়িয়েছে। এখন অবশ্য বলছেন, মসজিদে জামাত হয় না। মুসলিমরা যেগীর স্বীকৃতি পেলেন।
যোগীরাজে মুসলিম সবজি বিক্রেতা মার খায়, সাধারণ মানুষের উপর কীটনাশক স্প্রে করা হয়, মসজিদগুলোতে করোনা আক্রান্ত নয় জেনেও মুসলিমদের আটকে রাখা হয়, যোগী এলাহাবাদ কে করে দিয়েছেন প্রয়াগরাজ, বলেছেন কোন পরিযায়ী শ্রমিককে উত্তর প্রদেশের রাস্তায় হাঁটতে, সাইকেলে চড়তে, এমনকি সীমান্তে ঢুকতে পর্যন্ত দেবেন না।
যোগী ভোগের মাথায় বসে একের পর এক মুসলিম ও দলিত বিরোধী কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। আদালত রায় দেয়। আদালতকে পরিচালনা করে প্রশাসন। প্রশাসন যেমন আদালতকে খাওয়াবে আদালত সেইরকমই রায় দেবে। তাই হেমন্ত কারকারে মারা যাওয়ার পর সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ, মালেগাঁও, আজমির শরিফ বিস্ফোরণ ইত্যাদি মামলাগুলো গুটিয়ে যায়। একে একে অসীমানন্দ, সাধভি প্রজ্ঞার মত অপরাধিরা ছাড়া পেয়ে যায়। শুধু তাই নয় সংসদেও পৌঁছে যায়। আদালতের হাস্যকর রায় বাবরি মসজিদ নিয়ে দেখেছি। রায় দানকারী এখন সংসদে। তাই এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ) হাই কোর্ট যোগীরাজে এরকম রায় দেবে এ আর বিচিত্র কি? প্রশ্ন এই রায়ের উদাহরণ তুলে পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ একটি দল অবধারিত ময়দানে নামবে।
মমতা ব্যানার্জি বিপক্ষে যাবেন। মুসলিম তোষনের অপবাদ পাবেন। কংগ্রেসী ও বামপন্থীরা ছোট্ট একটি ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ একটি বিবৃতি দেবেন। এর আগে ১৯৯৭-এ বাম আমলেও আজান বিরোধী একটি মামলা হয়েছিল। ধর্মাচরণের সংবিধান বিরোধী আপিলটি তৎকালীন আদালত গ্রহণ করে। এই নিয়ে হৈ হৈ পড়ে যায়, বাম প্রশাসন আদালতকে কি ভাবে পরিচালনা করে তা দেখার ছিল। অবশ্য শুনানি শেষে রায় হয়। রায়টি পুরোপুরি লাউডস্পিকারে আজান বিরোধী ছিল না। একটু লাগাম টানা হয়। প. বঙ্গকে চারটি এলাকায় ভাগ করা হয়, যেমন-শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্য এলাকা, বসতি এলাকা ও শব্দহীন নীরব এলাকা। সময় ভাগ করা হয় সকাল ৮-টা থেকে রাত ৯-টা এবং রাত ৯-টা থেকে সকাল ৬-টা। শিল্প এলাকায় সর্বোচ্চ ডেসিবেল বাঁধা হয় ৭৫, সর্বনিম্ন ৭০। বাণিজ্য এলাকায় সর্বোচ্চ ৬৫, সর্বনিম্ন ৫৫। বসত এলাকায় দুটিই ৫৫। শব্দহীন নীরব এলাকায় ৫০ আর ৪০। আমি যখন এই প্রতিবেদনটা লিখছি তখন চারপাশের মসজিদ থেকে আজান ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। খুব জোর দু-তিন মিনিট। নিজ নিজ ধর্মাচরণ সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। আমার বাড়ি থেকে একটু দূরে এক মন্দিরে প্রত্যেকদিন সকালে নাম সংকীর্তন হয়। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
বছরে একবার মন্দির চত্বরে অষ্টপ্রহর নাম গান হয়। একটু বিব্রত বোধ করলেও, মানিয়ে নিয়েছি। উত্তর প্রদেশে এর থেকে কম তো হতেই পারে না বরং বহু গুণ বেশি হয় বলে আমি নিশ্চিত। যোগীরাজ এসব বন্ধ করতে পারবেন না বলেই জানি। তাহলে তো যোগীর সিংহাসনও টলমল হয়ে যাবে। ভারতীয় সংবিধান কি আংশিক মানার জন্যে?
নিশ্চিত বলতে পারব না, বলতে পারব সম্ভবত নয়।এখন আমরা পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে দেখি। যদিও আগেই হাইকোর্ট এই বিষয়ে রায় দিয়েছে। এখন মানা হচ্ছে না বলে বিশেষ একদল মুসলিমদের নিশাণা করবে। আাদালতে গিয়ে লাউডস্পিকারে আজান বন্ধের আরজি জানাবে। সরকার ও মুসলিমদেরই লড়তে হবে। সেকুলার বুদ্ধিজীবীদের পাওয়ার আশা না করতেই পারি। ইতিমধ্যে জাভেদ আখতার লাউডস্পিকারে আজান বিরোধী বক্তব্য একটা দিয়েই রেখেছেন।আল্লাহ হেফাজতকারী।