লিখেছেনঃ নাজিরুল ইসলাম মুহাম্মদ সুফিয়ান
সাম্প্রদায়িক আবেদন না থাকিলে বঙ্কিম সাহিত্য সম্প্রদায় বিশেষের কাছে যে মর্য্যাদা পাইয়া আসিতেছে তাহা পাইত কিনা সন্দেহ। বঙ্কিমচন্দ্রের সাম্প্রদায়িতাকে জাতীয়তা মনে করিয়া অনেকেই তাঁহাকে জাতীয়তার গুরু বলিয়া প্রচারক করিতে চাহেন; কিন্তু দেশের ইতিহাসকে খর্ব করিয়া, মহৎ চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করিয়া সম্প্রদায়কে বড় করিয়া দেখাইবার অপচেষ্টা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র যাহা করিয়াছেন তাহা বােধ হয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
কারণে-অকারণে মুসলমানকে বিদ্রুপ ও গালমন্দ করিতে না পারিলে যেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের লেখনীই সার্থক হয় নাই। অবশ্য এই বিদ্রুপ ও গালমন্দ তিনি করিয়াছেন মুসলমান যে দিন সর্ব্বস্ব হারাইয়া পতনের চরমে পৌঁছিয়াছে সেই দিন। সুতরাং সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র যে শুধু বীরের ধর্ম পালন করেন নাই তাহা নহে—মৃতকে কশাঘাত করিবার হীন মানসতাও প্রকাশ করিয়াছেন।
‘আনন্দমঠে’ ভবানন্দ মহেন্দ্রকে বলিতেছেন— “…সিংহাসনে শালগ্রাম রাখিয়া সােয়াস্তি নাই, ঝি-বউয়ের পেটে ছেলে রেখে সােয়াস্তি নাই; পেট চিরে ছেলে বার করে। সকল দেশের রাজার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের সম্বন্ধ আমাদের মুসলমান রাজা রক্ষা করে কই? ধর্ম্ম গেল, এখন প্রাণ পর্যন্তও যায়। এ নেশাখাের নেড়েদের না তাড়াইলে আর হিন্দুর হিন্দুয়ানী থাকে?”
কাপ্তেন টমাসকে ভবানন্দ বলিতেছেন—“কাপ্তেন সাহেব! তােমায় মারিব না, ইংরাজ আমাদিগের শত্রু নহে। কেন মুসলমানের সহায় হইয়া আসিয়াছ? …ইংরাজের জয় হউক, আমরা তােমাদের সুহৃদ।”
‘আনন্দমঠের’ প্রথম বারের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল- “…সমাজ বিপ্লব অনেক সময়েই আত্মপীড়ন মাত্র; বিদ্রোহীরা আত্মঘাতী। ইংরাজেরা বাংলাদেশকে অরাজকতা হইতে উদ্ধার করিয়াছেন। এই সকল কথা এগ্রন্থে বুঝান গেল।”
সুতরাং সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তা যে কোন্ শ্রেণীর সে সম্বন্ধে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। তাহার মনের কথা ভবানন্দের মুখেই প্রকাশ। ইতিহাস না লিখিলেও সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন- মুসলমান ঝি-বউয়ের পেট চিরে ছেলে বার করে। ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে ডায়ার সাহেব অমৃতসরে কিভাবে অরাজকতা দমন করিয়াছেন— বঙ্কিমচন্দ্র তাহা দেখেন নাই; কিন্তু দীনবন্ধু মিত্র যখন ‘নীল দর্পণ’ রচনা করেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তখন জীবিতই ছিলেন। তথাপি আক্রোশ তাহার ‘নেশাখাের নেড়েদের উপরে’– আর ইংরাজেরা এ দেশকে অরাজকতা হইতে রক্ষা করিয়াছে ইহাই তার ধারণা!
ভবানন্দের মত উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীর মুখে- “ক্ষৌরিত চিকুর নেড়ে মুসলমান, ‘যবন’, ‘ম্লেচ্ছ’ প্রভৃতি ভাষার যে ব্যবহার তাহা বঙ্কিমচন্দ্রের যেন পুস্তকের পাতা উল্টাইলেই পাওয়া যায়। কিন্তু ইহাই বঙ্কিমচন্দ্রের সবচেয়ে বড় অপরাধ নয়। তাহার প্রকৃত অপরাধ ইতিহাসকে বিকৃত করিয়া যাহা মহৎ তাহাকে ক্ষুদ্র প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করা। তাঁহার রচিত ‘চন্দ্রশেখরে’ মীর কাসিম, দৌলত উন্নিসা বা দলনী বেগম এবং সেনাপতি তকি খাঁর কথা আছে।
ইতিহাসে মীর কাসিম মীরজাফরের জামাতা। তাঁহার যে কোন বিদেশী স্ত্রী বা উপপত্নী ছিল একথা ইতিহাসে নাই। কিন্তু সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের উর্বর কল্পনায়—দলনী বেগম বা দৌলত উন্নিসা মীর কাসিমের দ্বিতীয় বেগম অথবা অনেক বেগমের ভিতর একটি। দলনী বেগম গুরগন খাঁর ভগ্নি। উপন্যাসে গুরগন খাঁ জাতিতে আরমানি; ইস্পাহান তাহার জন্মস্থান। মীর কাসিম যখন ইংরাজের সহিত যুদ্ধের আয়ােজন করিতে ব্যস্ত গুরগন্ খাঁ তখন বসিয়া বসিয়া ভাবিতেছেন—
“আমি বাঙ্গালার অধিপতি হইতে চাহি-মীর কাসিমকে গ্রাহ্য করি না। যে দিন মনে করিব সেই দিন উহাকে মসনদ হইতে টানিয়া ফেলিয়া দিব।…”।
ইতিহাসে লিখিত আছে— “সেকালে কলিকাতায় খােজা পি নামক এক ব্যক্তি খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন। তিনি ইংরাজ মহলে এবং নবাব দরবারে তুল্যরূপে সমাদর লাভ করিতেন। তাহার ভ্রাতা গ্রেগরী মীর কাসিমের প্রধান সেনাপতি পদে অভিষিক্ত হইয়াছিলেন। গ্রেগরী এ দেশের ইতিহাসে গরগিন খাঁ নামে পরিচিত। …তাঁহার চেষ্টায় খােজা প্রির যােগে মীর কাসিম গােপনে ইউরােপীয় অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।…
গুৰ্গন খাঁ বিশ্বাসী ও প্রভুভক্ত বলিয়াই নবাব দরবারে সুপরিচিত ছিলেন। মীর কাসিম যখন অশান্ত হৃদয়ে ইংরাজ দলন করিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিতেন সেনাপতি গুৰ্গন তখন মীর কাসিমকে শান্ত করিয়া কহিতেন-
“এখনও সময় হয় নাই। Reserve your anger till the time when you shall have feathers to your wings.”
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের কল্যাণে গুরগিন বিশ্বাসঘাতক।
উপন্যাসে নবাব মীর কাসিমের যে শুধু আরমানী স্ত্রী বা উপপত্নী ছিল এইটুকুই বলা হয় নাই। সেই স্ত্রী দলনী বেগম সামান্য কারণে গভীর রাত্রিতে একা তাহার ভ্রাতা গুৰ্গনের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়া গুর্গনের বিরাগ ভাজন হওয়ায় আর নবাবের গৃহে ফিরিতে পারিল না। সামান্য মেয়ের মত রাজপথে কান্নাকাটি করিয়া বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শ পুরুষ এক ব্রহ্মচারীর আশ্রয়ে গিয়া উঠিল। কিন্তু সেখান হইতে আবার বেগম সাহেবকে ইংরাজেরা ধরিয়া লইয়া গেল। ইহাতে নবাব তকি খাঁকে আদেশ দিলেন ইংরাজদিগের কাছে হইতে দলনীকে উদ্ধার করিয়া মুঙ্গেরে পাঠাইতে। তকি ইংরাজেরা যেখানে ছিলেন সেখানে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন দলনী নাই!!
“তখন তিনি বুঝিলেন যে বিষম বিপদ উপস্থিত। তাহার শৈথিল্য বা অমনোেযােগে নবাব রুষ্ট হইয়া কি উৎপাত উপস্থিত করিবেন, তাহা বলা যায় না। এই আশঙ্কায় ভীত হইয়া, মহম্মদ তকি সাহসে ভর করিয়া নবাবকে বঞ্চনা করিবার কল্পনা করিলেন।
“মহাম্মদ তকি নবাবকে লিখিলেন যে, বেগমকে আমিয়টের নৌকায় পাওয়া গিয়াছে। তকি তাকে আনিয়া যথা সম্মানপূর্ব্বক কেল্লার মধ্যে রাখিয়াছেন; কিন্তু বিশেষ আদেশ ব্যতীত তাহাকে হুজুরে পাঠাইতে পারিতেছেন না। ইংরাজদিগের সঙ্গী খানসামা, নাবিক, সিপাহী প্রভৃতি যাহারা জীবিত আছে, তাহাদের সকলের প্রমুখাৎ শুনিয়াছেন যে, বেগম আমিয়টের উপপত্নী স্বরূপ নৌকায় বাস করিতেন। উভয়ে এক শয্যায় শয়ন করিতেন। বেগম স্বয়ং এ সকল কথা স্বীকার করিতেছেন।”
নবাব ইহাতে তকিকে পরওয়ানা পাঠাইলেন- “দলনীকে এখানে পাঠাইবার প্রয়ােজন নাই। তাহাকে সেইখানে বিষপান করাইয়া বধ করাইও।”
তকি দলনীকে অভয় দিয়া বলিল- “যাহা হইয়াছে হইয়াছে, আপনাকে বিষপান । করিতে হইবে না। আমি ইহার উপায় করিব।”
মহাম্মদ তকী দলনীকে দেখিতে লাগিল। সুন্দরী নবীনা সবে মাত্র যৌবন বর্ষায় রূপের নদী পুরিয়া উঠিতেছে, ভরা বসন্তে অঙ্গ-মুকুল সব ফুটিয়া উঠিয়াছে।… যাকে দেখিতেছে, সে দুঃখে ফাটিতেছে। কিন্তু আমার দেখিয়া কত সুখ!”…
তকি বলিল, “শুন সুন্দরি—আমাকে ভজ-বিষ খাইতে হইবে না।” ইহাই বঙ্কিমচন্দ্রের হতে গড়া উপন্যাসের তকি খাঁ। এ তকি শুধু মিথ্যাবাদী ও বিশ্বাসঘাতক নয়-লম্পট।
ইতিহাসের বাস্তব তকি খাঁ এইরূপ! – “হলদী ঘাটের যুদ্ধক্ষেত্রে মহাবীর প্রতাপ সপ্ত স্থানে আহত হইয়াও যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা চালনা করিয়াছিলেন। পৃথিবীর সামরিক ইতিহাসে সেরূপ অদ্ভুত রণ-পাণ্ডিত্যের নিদর্শন অধিক নাই। কাটোয়ার যুদ্ধক্ষেত্রেও মহম্মদ তকি সেইরূপ বীরত্বের কীর্ত্তি স্তম্ভ সংস্থাপিত করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার রেহিলা ও আফগান পল্টনের সিপাহীরা যেরূপ বীরত্ব ও সাহসের পরিচয় প্রদান করিয়াছিল, তদপেক্ষা কোন দেশের কোন সেনাদলই অধিক সাহসের পরিচয় দিতে পারে নাই।…
তকি খাঁ আহত হইলেন; তাহার অশ্ব নিহত হইবামাত্র অন্য অশ্বে আরােহণ করিয়া আহত মহম্মদ তকি সেনা তরঙ্গের সর্বাগ্রবর্তী হইয়া, মার মার রবে শত্রু দলনে অগ্রসর হইলেন। … তকি খাঁর ক্ষতস্থান দিয়া শােণিত স্রোত ছুটিয়া চলিয়াছে; তিনি তাহা সযত্নে বস্ত্রাচ্ছাদিত করিয়া, সহাস্য মুখে পুনরায় অশ্বারােহণ করিয়া সেনা চালনার আয়ােজন করিতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার পার্শ্বচর বলিলেন- “আর কেন, শােণিতস্রাব প্রবল হইতেছে, এখন যুদ্ধভূমি হইতে প্রত্যাবর্তন করুন!” তকি খাঁ কুটি করিয়া উঠিলেন “ফিরিব? কিসের জন্য ফিরিব?” অনুচরের দিকে চাহিয়া কহিলেন, – “ফিরিয়া গিয়া মীর কাসিমকে কোন্ মুখে এই কৃষ্ণশ্মশ্রু দেখাইব? চল, অগ্রসর হও!” ইঙ্গিতে সেনাদল অগ্রসর হইল। ইংরাজেরা নদী খাতের মধ্যে ঝােপের আড়ালে পলায়ন করিয়াছিলেন; মুহূর্তে তকি খাঁ সেখানে আসিয়া উপনীত হইলেন। অমনি লুক্কায়িত শত্রুসেনা হইতে বন্দুকের শব্দ হইল; গুলি মস্তিষ্ক ভেদ করিয়া তকি খার বলিষ্ঠ বীর কলেবর ভূপাতিত করিল!… যাহারা যুদ্ধ জয় করিত, তকি খাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে তাহারাই রণ-পরাজিত হইল!
…ইহা উপন্যাস নহে— ইতিহাস।
“এই যুদ্ধের বিবরণ গােলাম হােসেনের মুতাক্ষরীনে, মুস্তাফা খাঁর টীকায়, স্কটের ও ম্যালিসনের ইতিহাসে ও অন্যান্য সমসাময়িক লেখকগণের গ্রন্থে বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত আছে।
ইতিহাস বিখ্যাত একটি উন্নত চরিত্র অসম সাহসিক বীরকে নীচমনা, লম্পট ও বিশ্বাসঘাতক চরিত্ররূপে অঙ্কিত করিয়াই বঙ্কিমচন্দ্র সন্তুষ্ট হইতে পারেন নাই। মুসলিম ইতিহাসে যেখানে যাহা কিছু মহৎ দেখিয়াছেন তাহাকেই বিকৃত করিয়া উপন্যাসে ছােট করিয়া দিয়াছেন। বাঙ্গালা-বিজয়ী ইখতিয়ার উদ্দীন মােহাম্মদ বখতিয়ারের জীবনের ঐতিহাসিক ঘটনা এইরূপ-
“Mean while an officer subordinate to Aibak (Kutub Uddin) had been carrying the banner of Islam further afield. This was Ikhityar uddin Muhammad, son of Bkhtyar, of the Turkish tribe of Khalj, which was settled in the Garmsir between Sistan and Ghazni. His mean and prepossessing appearance and his ungainly build, which enabled him, while standing upright to reach with his hands the calves of his leges, had long debarred him from employment commensurate with his ambition and merits and he had entered the service of Hijabruddin Hassan Adib, an adventurous officer who had conquered Budaun even before Muhammad had taken Bhatinda and afterwards that of Malik Hisamuddin Aghul Bak another leader of vanguard of Islam, who had established-himself in Oudh, where Iktiyar-uddin received some fiets between the ganges and the Son. From this advanced base he led raids into Bihar and Tirhut and took so much booty that large number of his own tribe eager to serve under so fortunate a leader, joined him. With his accession of strenght, he invaded Bihar took its capital, Odantapuri. … The honours bestowed upon him (by Aibak aroused much envy and jealousy, and intriguers and backbiters were able to freeze the stream of Aiback’s favour into the ice of suspicion and aversion; but their malice over reached itself, for to compair Ikhtiyar-uddin’s destruction they attributed to him a foolish boast, that he could overcome an elephant in single combat, and persuaded Aibak that the vaunt shoud be made good. It had never been uttered, but Iktiyar-uddin would not decline the challenge and against the expectation of all, put the beast to fight. His success regained the favour of Aibak, who dismissed him with fresh honours to Bihar, after confering on him as a fief his past and future conquests.”
মত্তহস্তীকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়া ইখতিয়ার উদ্দীন সমসাময়িক ঈর্ষান্বিত আমীর-ওমারার চতুর ষড়যন্ত্রকে বিধ্বস্ত করিয়া অদ্ভুত বীরত্বের নিদর্শন দেখাইয়া কুতুবউদ্দীনের সহানুভূতি ফিরিয়া পাইলেও পাঁচশত বৎসর পরের সাম্প্রদায়িক বিষজর্জরিত ঔপন্যাসিকের মনের ঈর্ষাকে তিনি পরাজিত করিতে পারেন নাই। তাই তাহার গৌরব, ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের লেখনীর কল্যাণে অপরের প্রাপ্য হইয়া গিয়াছে। ইতিহাসকে বিকৃত করিয়া উপন্যাসে বর্ণিত হইয়াছে—মত্তহস্তী যখন ক্ষুদ্রকায় ইখতিয়ার উদ্দীনকে পদতলে পিষিয়া ফেলিবার জন্য তাহাকে আক্রমণ করিল— ঠিক সেই সময় জনতার মধ্য হইতে উপন্যাসের একজন বীর নায়ক অব্যর্থ সন্ধানে হস্তীকে শরবিদ্ধ করিলেন। কেহ জানিল না কি হইল। হস্তী শরবিদ্ধ হইয়া যন্ত্রণায় পলায়ন করিল। ইতিয়ার রক্ষা পাইলেন। শুধু রক্ষা পাইলেন না ইতিহাসে অসাধারণ বীর বলিয়াও খ্যাতি অর্জন করিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন, “বাঙ্গালার ইতিহাস চাই। নহিলে বাঙ্গালী কখনও মানুষ হইবে না। বাঙ্গালার ইতিহাস চাই। নহিলে বাঙ্গালার ভরসা নাই। কে লিখিবে” বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই লিখিয়াছেন। কিরূপ ইতিহাস লিখিয়াছেন তাহার নজির উপরে দেওয়া হইয়াছে। সম্ভবত বঙ্কিমচন্দ্রের ধারণা জন্মিয়াছিল যে, অপরকে ছােট করিলেই নিজে বড় হওয়া যায়। নিজ সম্প্রদায়কে বড় করিবার চেষ্টা অন্যায় নহে কিন্তু অপরকে গালমন্দ দিয়া হেয় প্রতিপন্ন করিলেই যে নিজে বড় হওয়া যায় এমন কথা ইতিহাস লেখে না। মহত্ত্ব ও বীরত্ব চুরি করিয়া নাটক-নভেলে আসর জমানাে হয়ত চলে কিন্তু বাস্তব জীবনের প্রতিযােগিতায় সে গুণ-গরিমা কোন কাজে লাগে না।
প্রকৃতপক্ষে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শের পিছনে কোন গভীর মনের পরিচয় কোথাও নাই। তাহার সৃষ্ট চরিত্রের ভিতর এমন একটি চরিত্রও নাই যাহাকে বলা চলে তত্ত্বজিজ্ঞাসু। সবাই গতানুগতিকতার দাস। সকলেই মূল্য নিরূপণ সম্বন্ধে স্থির নিশ্চয়। বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্য বিচার করিবার উৎসাহ বা প্রেরণা কাহারাে নাই। ব্রাহ্মণ বা ব্রহ্মচারী বঙ্কিমচন্দ্রের ‘লেভিয়াথান’ তাহার আদেশ-নির্দেশ অবশ্য পালনীয়। তাঁহার পদরেণু অমৃত। ইহার এমনি ক্ষমতা যে সুবে বাঙ্গালা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাবের বেগমকেও ইহার আশ্রিত হইয়া কাল কাটাইতে হয়। নবাব, বাদশাহের দুর্ভাগ্যন্তর হইতে গভীর – রাত্রির শ্মশান ঘাট, সমুদ্রতীরের বারিসৈকত-হিন্দু রাজাদের অন্তঃপুর পর্যন্ত, সর্বত্রই ইহার অবাধ গতি। এই ব্রাহ্মণ কি চাহেন?
মৃণালিনী উপন্যাসে ‘কুশাসনে উপবিষ্ট’, ‘দীর্ঘাকৃতি’, ‘শুষ্ক শরীর’, ‘গভীর কান্তি’–‘কঠিন কটাক্ষ এই ব্রাহ্মণ মাধবাচাৰ্য্য রূপে হেমচন্দ্রকে বলিলেন, “…তুমি দেবকাৰ্য্য না সাধিলে কে সাধিবে? তুমি যবনকে না তাড়াইলে কে তাড়াইবে? যবন-নিপাত তােমার একমাত্র ধ্যানস্বরূপ হওয়া উচিত।”
‘আনন্দমঠের সর্বময় কর্তাও ব্রহ্মচারী ব্রাহ্মণ। তাহার আজ্ঞায় সমস্ত মঠের কাৰ্য্য নির্বাহ হয়। এই ব্রহ্মচারী সন্তানের দীক্ষা দিবার সময় জিজ্ঞাসা করিলেন,
“যতদিন না মাতার উদ্ধার হয়, ততদিন গৃহধর্ম পরিত্যাগ করিবে?”
“করিব” …
“ইন্দ্রিয় জয় করিবে। স্ত্রীলােকের সঙ্গে একাসনে বসিবে না?”
“বসিব না। ইন্দ্রিয় জয় করিব”-
“সনাতন ধর্মের জন্য স্বয়ং অস্ত্র ধরিয়া যুদ্ধ করিবে?”
“করিব” …
দেবী চৌধুরাণীকে যিনি দীক্ষা দিলেন তিনিও ব্রাহ্মণ-ব্রহ্মচারী। সুতরাং ব্রাহ্মণ্য শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠাই যে বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শ-ইহা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। ব্রাহ্মণ বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায় নিরপেক্ষভাবে সৎ। তাহার শাসনের প্রতিষ্ঠা হইলেই শ্রেষ্ঠ শাসনের প্রতিষ্ঠা হইবে। তাহার চরিত্র, বুদ্ধি ও নৈতিকতা সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন কখনাে উঠে নাই। দেবী চৌধুরাণী, ভবানন্দ, চন্দ্র শেখর, হেমচন্দ্র আর যত রাজা ও সামন্ত-ইহারা সকলেই ব্রহ্মচারী ব্রাহ্মণের আজ্ঞাবহ-কর্মী। ব্রহ্মচারী ব্রাহ্মণের কোন পরামর্শ সভা নাইমানুষের পরামর্শ তাঁহাকে চালিত করে না। তিনি ধ্যানস্থ হইলে যােগের মহিমায় আপ্তবাক্য শুনিতে পান তাহাই জীবানন্দ, ভবানন্দ ও হেমচন্দ্রের জন্য আইন।
নব ব্রাহ্মণ্য যুগে নারীর আসন কোথায়? ব্রহ্মচারী নারী বর্জিত। তাঁহার চেলাচামুণ্ডারা “যতদিন না মাতার উদ্ধার হয়, ততদিন গৃহধর্ম পরিত্যাগ করিবেন। ইন্দ্রিয় জয় করিবেন-স্ত্রীলােকের সঙ্গে বসিবেন না।”
জীবানন্দ হঠাৎ একদিন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিয়াছিলেন তাহার জন্য তাঁহাকে কঠিন প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয়। ‘হেমচন্দ্রকে’ মাধবাচাৰ্য্য ‘মৃণালিনী’ হইতে দূরে রাখিয়াছিলেন পাছে নারীর ছোঁয়া লাগিয়া মহৎ কার্য্যে ব্যাঘাত উপস্থিত হয়।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্ট নারী ইহাতে কোন প্রশ্ন করে না। সে দাসী চরণধূলা লইতে জানে, কাঁদিতে জানে, গঙ্গায় ডুবিতে জানে আর জানে বিষ খাইতে। ‘রােহিনী’ বারুণীর পুষ্করিণীতে ডুবিয়া মরিতে গিয়াছিল, ভ্রমর কাঁদিয়া কাঁদিয়া মরিয়া গেল, কুন্দ নন্দিনী। বিষ পান করিল, কপাল কুণ্ডলা নদীতে ডুবিল, কল্যাণী বিষ খাইল- স্বামীকে বলিল,
“আমি ভালই করিয়াছি। ছার স্ত্রীলােকের জন্য পাছে তুমি দেবতার কাজে অযত্ন কর।”
মুসলমান নবাবের আরমানি বেগম দলনী-ঔপন্যাসিকের কৃপায় তাহাকেও বিষ খাইতে হইল!- মনােরমা সতী- সে পশুপতির সহিত এক চিতায় ভস্মীভূত হইল।
বঙ্কিমচন্দ্রের সনাতন আদর্শে গড়িয়া উঠা নারীর ইহার অধিক করিবার নাইইহার অধিক ভাবিবার নাই। সনাতন নিয়মের একটি ব্যতিক্রম প্রফুল্ল ওরফে দেবী চৌধুরাণী। প্রফুল্ল ব্রহ্মচারীর কাছে থাকিয়া দীর্ঘ পাঁচ বৎসরে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিতা। সুতরাং বঙ্কিমচন্দ্র ইহাকে আপনার সনাতন আদর্শেই সৃষ্টি করিয়াছেন। এবং দেবী চৌধুরাণীর গল্প শেষ হইয়া গেলে এই প্রফুল্লকে উদ্দেশ্য করিয়া গ্রন্থকার বলিতেছেন—
“এখন এসাে প্রফুল্ল! একবার লােকালয়ে দাঁড়াও আমরা তােমায় দেখি। একবার এই সমাজের সম্মুখে দাঁড়াইয়া বল, দেখি আমি নূতন নহি, আমি পুরাতন। কতবার আসিয়াছি, তােমরা আমায় ভুলিয়া গিয়াছ। তাই আবার আসিলাম।” – সুতরাং “প্রফুল্ল সম্ভবামী যুগে যুগে।”— সে এমনি মহা সৃষ্টি।
এই যে শ্রীকৃষ্ণের মত নারী যিনি যুগে যুগে অবতীর্ণা হইবেন, তিনি ব্রহ্মচারীর কাছে কি শিক্ষা পাইলেন?
প্রথম বৎসর আহার—মােটা চাউল, সৈন্ধব, ঘি ও কাঁচকলা। তৈল নিষেধ চুল রুক্ষ বাঁধিতে হইবে। তুলার তােষকে তুলার বালিশে শুইতে পারিবে। ত্রিযাম নিদ্রা। পরিধানে ৪ খানা কাপড়।
দ্বিতীয় বৎসর— কেবল নুন লঙ্কাভাত আর একাদশীতে মাছ। চুলবাঁধা নিষেধ। বিচালির বালিশ, বিচালির বিছানা। দ্বিযাম নিদ্রা পরিধানে দুইখানা কাপড়।
তৃতীয় বৎসর খাদ্য-ছানা, সন্দেশ, ঘৃত, মাখন, ক্ষীর, ননী, ফল, মূল ইত্যাদি। পরিধানে একখানা মােটা কাপড় অঙ্গে শুকাইতে হয়। মাথা মুড়াইল। দুইদিন অন্তর রাত্রি জাগরণ। ভূমি শয্যা।
চতুর্থ বৎসর উপাদেয় ভােজ্য। পাট কাপড়, ঢাকাই কল্কাদার, শান্তিপুরে। নূতন চুল হইল। সুগন্ধি তেল ব্যবহার করিতে পাইল। কোমল দুগ্ধফেননিভ শয্যা। তন্দ্রা আসিলেই নিদ্রা।
পঞ্চম বৎসরে ইন্দ্রিয় জয় সম্পূর্ণ হইলে প্রফুল্ল নিজের ইচ্ছামত চলিতে আদেশ পাইল। প্রফুল্ল কিছু মল্লবিদ্যাও শিখিল; শরীরে শক্তি না থাকিলে ইন্দ্রিয় জয় করা যায় না তাই। প্রফুল্ল বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শে শিক্ষিতা হইয়া আহার, বেশভূষা, শয়ন ইত্যাদি বিষয়ে কঠোর নিয়ম পালন করিতে শিখিল। মল্লবিদ্যাও সে শিখিল। কিন্তু এই আদর্শ নারীর বুদ্ধির কি উৎকর্ষ সাধিত হইল— তাহার মন কি শিখিল?
প্রফুল্ল এই প্রশ্নের জবাব দিয়াছে। বলিয়াছে— “কর্ম করিব, জ্ঞান আমার মত অসিদ্ধের জন্য নহে।”
সুতরাং আদর্শ নারী হইল নিয়মের দাসী। জ্ঞান রহিল আচাৰ্য ব্রাহ্মণের জন্য। সনাতন ধর্মের নির্দেশও ইহাই। Megasthenes লিখিয়া গিয়াছেন,
“Indians did not communicate their metaphysical doctrines to women.”
সুতরাং বঙ্কিমচন্দ্রকে অধার্মিকের অপবাদ কেহ দিতে পারিবে না।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্কিমচন্দ্র যে নারীর আগমনী গাহিয়াছিলেন, সে নারী আসে নাই। ইংরাজের কলে সনাতন ধর্মের নারী শিক্ষার ‘প্রােগ্রাম’ পিষিয়া ছাতু হইয়া গিয়াছে। দেবী চৌধুরাণী বঙ্কিমচন্দ্রের মনের জঙ্গলেই একবার দেখা দিয়াছিলেন তাহার পর লােকালয়ে কি গহন বনে কোথাও তাহার দেখা পাওয়া যায় নাই। যুগে যুগে আসা ত দূরের কথা বাস্তব জগতে দেবী চৌধুরাণী একবারও দেখা দেন নাই। অবশ্য বহু যুগ পরে শরৎচন্দ্রের মানস কাননে একটি ‘সুমিত্রা’ জন্মগ্রহণ করিয়াছিল। দেখিয়া-শুনিয়া তাহাকে দেবী চৌধুরাণীর আত্মীয়া বলিয়া মনে হয়। কিন্তু সুমিত্রা পাঁচ বৎসর ধরিয়া ইন্দ্রিয় জয় করিতে শেখে নাই। কোন ব্রহ্মচারীও তাহার জ্ঞান ও বুদ্ধির ব্যাঙ্ক নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শ নারী দেবী চৌধুরাণী এত কিছু শিখিয়া ও করিয়া অবশেষে বাগদীর মেয়ে অপবাদে যে গৃহ হইতেই তাড়িত, সেই গৃহে তিনি সতীনের ঘর করিতে যান, কারণ স্বামী ও শ্বশুর উভয়ে দেবতা!
পূর্বকালে যে সব উপাখ্যান কাব্য রচিত হইত তাহাতে মানুষের চরিত্র থাকিত না। থাকিত দেবদেবীর চরিত্র-ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর হইতে আরম্ভ করিয়া দক্ষিণ রায় পৰ্য্যন্ত সকলেরই। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন্মিয়াও বঙ্কিমচন্দ্র অস্বাভাবিক চরিত্র সৃষ্টি হইতে রক্ষা পান নাই। তাহার সৃষ্ট ব্রহ্মচারীরা কেহ মানুষ নয়- সব মানুষের মূর্তিতে দেবতা। অলৌকিক সব তাহাদের কাণ্ডকারখানা। বঙ্কিমচন্দ্রের কোন নায়ক বা নায়িকা যখন কোন বিপদে পড়ে, তখনি ব্রহ্মচারী আসিয়া তাহাকে গরম দুধ দিয়া বাঁচান অথবা একটু আগুনের সেঁক দেন। যাহার আশ্রয় নাই তাহাকে আশ্রয় দেন, যুবক-যুবতীর মনের খবর রাখেন। রাজ্যের উত্থান-পতন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বানী করেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্টি চরিত্র সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়া গিয়াছেন—
“They float through the plot clinging to fragments of history-history of a kind that has to be accepted at its face value for one cannot cross question that dim period either from the stand point of historical truth or that of our experiences. There the Bimals may do anything and every thing so long as they are careful on one point that of not failing to please the reader. Such romance in its pure form is to be found in the Arabian nights, where probablities and possibilities are not allowed any control. The magician tells us at the very out set that he is out to please without reference to fact, that no question of sifting reality from illusion need worry the spectator…
Bamkin’s romances go only half way; they want to please also to make belief.”
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের চরিত্রগুলির কোন পরিবেশ নাই। তাহারা শুধু গল্পে বর্ণিত ঘটনাস্রোতেই ভাসিয়া আসে আবার ঘটনাস্রোতেই ভাসিয়া যায়। ঘর সংসারের নানা খুঁটিনাটির মধ্যে তাহারা বাস্তব হইয়া ফুটে না-তাহাদের কর্মস্রোতেই গল্প সৃষ্টি হয় না, বরং গল্প সৃষ্টির জন্যই তাহারা আসা-যাওয়া করে। “বঙ্কিমচন্দ্র খাঁটি আদর্শবাদী তাঁহার উপন্যাসগুলিতে xx অবাস্তব রমণীয় কল্পনার ছায়াপাত হইয়াছে” … বঙ্কিমের উপন্যাসগুলি ঠিক নভেল নয়- গদ্য রােমান্স।”
ডক্টর ভূপেন্দ্র নাথ দত্ত লিখিয়াছেন,
“বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে জন বা গণের কোন সংবাদই পাওয়া যায় না। মধ্যবিত্ত এবং শ্রমজীবী কৃষক ও শ্রমিকদের জীবন অবলম্বনে তাঁহার সাহিত্য সৃষ্টি হয় নাই। ধনী জমিদার বাড়ীর ঘটনাবলী অবলম্বন করিয়াই তাহার বিখ্যাত উপন্যাসগুলি রচিত হইয়াছে।”
এই সব কারণে বঙ্কিমচন্দ্র নূতন বাঙ্গালা ভাষার ‘সাহিত্য সম্রাট’ হইলেও তাঁহার সাম্রাজ্য বহুদূর বিস্তৃত হইতে পারে নাই। তাহার ভাব ও আদর্শের এমন কোন মহত্ত্ব ছিল না যাহা সম্প্রদায়ের গণ্ডীর বাহিরে আবেদন পৌছাইতে পারে। তাহার এমন কোন জীবন দর্শন ছিল না,যাহা মানুষের নিত্য কালের জীবন সমস্যায় আলােকপাত করিতে পারে। যে সংস্কৃতি নানা দিকের প্রচন্ড ঝড়ে ন্যাড়া হইয়া গিয়াছিল তাহারই তিনি শেষ পতাকাধারী। ন্যাড়া গাছে জল ঢালিয়া তাহাকে তিনি পুনরায় ফলে-ফুলে সুশােভিত দেখিতে চাহিয়াছিলেন। নূতন কালবৈশাখীর প্রলয় নৃত্য তিনি দেখিয়াছিলেন- তাহাকে প্রশমিত করিয়া সনাতন পন্থায় তিনি চলিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু ইংরাজ ও যন্ত্র এই দুই-এ মিলিয়া যে প্রভঞ্জনের সৃষ্টি করিল সে “যৌবন জলতরঙ্গ রুধিবে কে!”
নূতনের স্রোতে বঙ্কিমচন্দ্র ভাসিয়া গেলেন, বাঙ্গালাদেশ অতি অল্প সময়ের ভিতরেই তাঁহাকে ভুলিল। তবে নূতন সাধু ভাষাকে উপন্যাসের প্রয়ােজনে তিনি যে সহজ ও সরল রূপ দিলেন তাহা থাকিয়া গেল, আর থাকিল বিদেশ হইতে আমদানী করা নূতন গল্প লিখিবার ভঙ্গী। এই দুইটিকে সম্বল করিয়া বাঙ্গালা সাহিত্যিক সম্মুখের দিকে অগ্রসর হহল।
বঙ্কিমচন্দ্র সব সুদ্ধ সতের খানা উপন্যাস ও অন্যান্য বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁহার উপন্যাসগুলির নাম— দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারাণী, কমলা কান্তের দপ্তর, রজনী, উপকথা, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ, মুচিরাম গুড়ের জীবন চরিত, দেবী চৌধুরাণী ও সীতারাম। অন্যান্য গ্রন্থ ললিতা, গল্প পুস্তক, লােক রহস্য, বিজ্ঞান রহস্য, বিবিধ সমালােচনা, রায় দীনবন্ধু মিত্রের জীবন, সহজ রচনা শিক্ষা ও কবিতা পুস্তক। কবিতা পুস্তক কয়েকটি খণ্ড কবিতার সমষ্টি।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।