লিখেছেনঃ ঐতিহাসিক ইরফান হাবীব
আমাদের অতীত সম্বন্ধে সম্প্রতি পাওয়া তথ্যাবলী যা নিয়ে সরকারী আধাসরকারী ভারতীয় ও অনাবাসী ভারতীয় মহলে সােরগােল উঠেছে তার মধ্যে সরস্বতী নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব্ ইন্ডিয়া বৈদিক সরস্বতী নামে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের বৃত্তান্ত ব্যাঙ্গালাের থেকে ১৯৯৯ সনে প্রকাশ করেছে, যেখানে বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক লেখার মধ্যে রয়েছে খ্যাতনামা পুরাতাত্ত্বিক প্রয়াত ভি. এস, ওয়াকাঙ্কারের একটি প্রবন্ধ। ওয়াকাঙ্কার এখানে ধরে নিয়েছেন যে প্রতিটি উল্লেখযােগ্য বিষয়ের উদ্ভব হয়েছে সরস্বতী নদীর পবিত্র তীরজুড়ে। এই ভাবে শুরু করা হলাে :
মানুষের বিবর্তনের মূল কেন্দ্র হচ্ছে উচ্চ সরস্বতী অঞ্চল।১
হরিয়ানার আম্বালা ও কর্ণল জেলায় মানুষের প্রথম আর্বিভাব ঘটেছে একথা জানিয়ে ওয়াকাঙ্কার শিবালিক অঞ্চলে Ramapithekus জীবাশ্ম পাওয়ার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে তিনি জানেন না যে Ramapithekus হচ্ছে পাকিস্তানে পাওয়া Sivapithekus এর স্ত্রীলিঙ্গ এবং এই দুইটি বিবর্তন বৃক্ষের যে শাখায় অবস্থান করে তারা এ ওরাং ওটাং এ বিবর্তিত হয়েছিল, আমার আপনার মত মানুষে নয়। যদিও বিবর্তিত ওরাং ওটাং এর বিষয়টি তুচ্ছ করা যায় না।
‘জাতিবৈরী’ ‘ঔপনিবেশিক’ Max Mueller এর মত পশ্চিমী পণ্ডিতদের ‘জাতিবৈরী’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে U.S. Swami David Frawley আমাদের বলেছেন যে “ইন্দো ইউরােপীয় এবং অন্যান্য আর্য মানুষেরা ভারত থেকেই বাইরে গিয়েছিল এবং ইন্দো ইউরােপীয়রা ভারত আক্রমণকারী নয়”। জাতিতত্ত্বের এই নতুন ব্যাখ্যায় আর্যরা শুধুমাত্র ভারত থেকে বাইরে গিয়েছিল তাই নয়, তারা সরস্বতী নদী তীরবর্তী অঞ্চল থেকেই গিয়েছিল। এইভাবে Frawley ভারতে সিন্ধু সভ্যতা পূর্ববর্তী কাল, যেমন যজুর্বেদ সময়ের কথা বলেছেন, “যখন সরস্বতী নদী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল”।২
এই ঘােষণাকে Geological Society-র স্মরনিকাতে একটি সম্মানিত জায়গা দেওয়া হয়েছে এবং সেই সঙ্গে আমেরিকার NASA বিজ্ঞানী নবরত্ন রাজা রাম একই সংখ্যায় নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি আমাদের জানাচ্ছেন যে, “সরস্বতী নদী। ও সরস্বতী সভ্যতা অচ্ছেদ্য এবং এতদিন পর্যন্ত হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা নামে (অশুদ্ধ) যা অভিহিত হয়ে এসেছে, তার পরিবর্তে সরস্বতী সভ্যতা নামই শুদ্ধ। বস্তুত, “প্রাচীন সরস্বতী নদীর গতিপথ ও প্রবাহ হরপ্পা সভ্যতার ভাগ্য নির্ধারণ করেছে।৩ সিন্ধু সভ্যতার খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত দুটি বড় শহর হরপ্পা ও মহেনজোদড়াে অথবা এইরকমের শহর বােলাভিরা বা লােথাল সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত নয়। থানেশ্বরের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে প্রবাহিত মরসুমী..স্রোতধারাকে উন্নত পর্যায়ের ধরে সরস্বতী নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে এই বিষয়টি সরস্বতী নদীর প্রবক্তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি।৪
নাম দিতে পারলেই অর্ধেক যুদ্ধ জেতা যায়, আর যদি সিন্ধু সভ্যতাকে নতুন নামে সরস্বতী সভ্যতা বলে অভিহিত করা যায় তাহলে যুক্তির পরিবর্তে নামকরণটিই প্রধান হয়ে ওঠে। স্মরণ করা যেতে পারে যে John Marshall ১৯৩১ সালে “সিন্ধুসভ্যতা” নামটি ব্যবহার করেছিলেন৫ এবং Stuart Piggot ১৯৬০ সালে ‘হরপ্পা সংস্কৃতি’ নামটি পছন্দ করেছিলেন।৬ দুটি শব্দই সঠিক। প্রথমটি সিন্ধু সভ্যতার ভৌগােলিক অঞ্চলকে নির্দেশ করে এবং অন্যটি অঞ্চলের ধরণ বা টাইপ নির্দেশ করে। পরবর্তী কালে ১৯৮৪ সালে বি. বি. লাল এবং এস. পি. গুপ্তা যখন Frontiers of the Indus Civilisation, New Delhi সম্পাদনা করেছিলেন, তাঁরা প্রচলিত দুটি ধারণা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরই সরস্বতী নদীর ধারণা নিজস্ব প্রভাব ফেলতে শুরু করে এবং ১৯৯৬-তে দিল্লিতে এস. পি. গুপ্তার Frontiers of the Indus Civilasation, প্রকাশিত হয়।
ভারতের অগ্রগণ্য প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা পুনের ডেকান কলেজ পােস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ভি, এন. মিশ্র অধিকর্তার পুরাে ক্ষমতা নিয়েই এই বইটির অত্যন্ত উৎসাহ ব্যঞ্জক সমালােচনা লিখলেন। তিনি বইটির ইঙ্গিতবাহী নামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানালেন যে হরপ্পা সভ্যতা একটি নদী নয়, দুটি নদী— সিন্ধু ও সরস্বতীর অবদান”। যে কোনাে মানচিত্রের দিকে তাকালেই যেহেতু ধরা পড়ে যে সরস্বতী নদী সিন্ধু নদের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়নি মিশ্র, গুপ্তার সঙ্গে একমত হয়ে সরস্বতী প্রবাহ ব্যবস্থা (System) আবিষ্কার করেন। শতদ্রু, ঘগ্নর, দৃশাদ্বতী যমুনা ইত্যাদি নদীর পুরনাে নদীখাত অন্তর্ভুক্ত করে এই ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। যে কেউ এখন অকথিত ধারাবাহিক যুক্তি অনুসরণ করতে পারেন : যদি তথাকথিত সরস্বতী প্রবাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এর পাশ্ববর্তী মানুষ সরস্বতীকে পবিত্র জ্ঞান করত এবং তাদের এই বিশ্বাস থাকলে তারা অবশ্যই বৈদিক আর্য (দ্রাবিড় বা অন্য অপরিচিত মানুষ নয়)। কাজেই অধ্যাপক মিশ্র খুব সহজেই এখন গুপ্তের বক্তব্যকে তুলে ধরতে পারবেন যে ‘হরপ্পা এবং বৈদিক সভ্যতা দুটি পৃথক সভ্যতা তাে নয়ই, এমনকি প্রথমটি দ্বিতীয়ের অগ্রবর্তীও নয়”।৭
কাজেই সমগ্র সরস্বতীর প্রশ্নটিকে সাবধানতার সঙ্গে, সম্ভবত যে সাবধানতার সঙ্গে নবরত্ন রাজারাম সিন্ধু সভ্যতার বিখ্যাত সীলে “ঘােড়ার”র বিষয়টি দেখেছেন, সেই। ভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে।৮
প্রথমেই দেখা যাক নদী কি ছিল এই বিষয়ে বক্তারা কি ভেবেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তারা মুল পাঠ হিসেবে ঋগ্বেদকেই ধরেছেন। ঋগ্বেদে সরস্বতীর আবির্ভাব দেবী হিসেবে, প্রায়শই অন্য দুজন দেবী ইড়া ও ভারতীর সঙ্গে। সরস্বতী প্রাথমিক ভাবে বাগদেবী, আচার অনুষ্ঠানের দেবী ও নদীরদবী হিসেবে এবং পরিশেষে নদী হিসেবে বর্ণিত। ঋগ্বেদ অনুযায়ী সরস্বতীর প্রাথমিক ভুমিকা হচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ ভূমিকা। এই দুই ভূমিকার মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। কিন্তু কয়েকটি শ্লোকে স্পষ্ট ভাবে নদীর উল্লেখ করা হয়েছে। অসংখ্য উল্লেখ থেকে নির্বাচিত একটি তালিকা দিয়ে বৈদিক সরস্বতী প্রবাহ ব্যবস্থার অর্ন্তভূক্ত বিপুল স্রোতস্বিনী হিসেবে বৈদিক সরস্বতী নদীর ধারণাকে সমর্থন করা হয়েছে। এই নির্বাচন যে একপেশে তা আমরা এই প্রবন্ধের শেষে দেখাতে পারব আশা করি। কিন্তু এখন আমরা ঋগ্বেদ থেকেই তথ্য দেব যার উপরে এই মহান সরস্বতী থিসিসের প্রবক্তারা নির্ভর করেছেন। প্রয়ােজন মাফিক এই পাঠভিত্তিক প্রমাণগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১। থানেশ্বর স্রোতস্বিনীর সঙ্গে সরস্বতী নদীর মিল দেখানাের জন্য তথ্য: বিখ্যাত নদী সূক্তে (ঋগ্বেদ – x.75.5) আমরা পড়ি “তােমরা আমার এই ভূমিকে অনুগ্রহ কর, হে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, হে শুতুদ্রি, পরুশনি ও অসিকনি, হে মরুদ্বৃধা, বিতস্তা, হে অর্জিকিয়া ও সুশমা, আমার আহ্বান শােনাে।”৯
দেখা যাবে এই তালিকায় নদী গুলিকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিক ধরে সাজানাে হয়েছে। শুতুদ্রি হচ্ছে শতদ্রু (টলেমির Zaradros), পরুশনিকে সাধারণত রাভি বলেই মানা হয় এবং অসিকনি অবশ্যই চিনাব, কেননা চিনাবকে আলেকজাণ্ডারের ঐতিহাসিকেরা এবং মেগাস্থিনিস Askesines বলে অভিহিত করেছেন। Aurel Stein মরুদ্বৃধাকে চিনাবের শাখা মরুওয়ারদওয়ান (Maruwardwan) – এর সঙ্গে এক করে দেখেছেন। বিতস্তা হচ্ছে আধুনিক বেহাত (Behat), মানচিত্রে যাকে ঝিলাম বলা হয়েছে। বিতস্তার নাম রাজতরঙ্গিনীতে ব্যবহৃত হয়েছে। সুশমা সম্ভবত মেগাস্থিনিসের Soanos যেটি হচ্ছে আধুনিক শােন অথবা শােহন, সিন্ধু নদীর পূর্ব দিকের ছােট উপনদী। একমাত্র অর্জিকিয়া নদীটিকে নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। বিপাশা অথবা বিয়াস অন্যত্র ঋগ্বেদের ll. 31-3 এবং IV. 30.11 সূক্তে উল্লিখিত হলেও এখানে বাদ পড়েছে।১০ এই অনুল্লেখের ত্রুটি সত্ত্বেও ভৌগােলিক দিক থেকে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় সরস্বতী নদী শতদ্রু ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। এর থেকে অনুমান করা চলে যে আমাদের সরস্বতী (আঞ্চলিক নাম সরসুতী) হরিয়ানার থানেশ্বর অঞ্চলে প্রবাহিত।১১
২। ঋগ্বেদের অন্য এক গুচ্ছ শ্লোকে সরস্বতীকে দীর্ঘ ও বিশাল নদী হিসেবে দেখানাে হয়েছে।
ঋগ্বেদ VII, 95.2 : পর্বত (গিরি) থেকে সমুদ্র পর্যন্ত তার যাত্রাপথ পবিত্র নদীগুলির মধ্যে সরস্বতী একথা শুনেছেন।১২
তার আকার বিষয়ে ঋগ্বেদ, VI, 61.10. 12 এবং 13; 10: হ্যাঁ, প্রিয় নদীগুলির মধ্যে প্রিয়তম, সপ্ত ভগ্নীবিশিষ্টা করুণাময়ী সরস্বতী আমাদের প্রশংসা অর্জন করেছেন।
I2: তিনটি উৎস থেকে উদ্ভূত সপ্ত ভগ্নী বিশিষ্টা পাঁচজাতির প্রাচুর্য প্রদানকারী তিনি প্রতিটি বীরত্বব্যঞ্জক কাজের জন্য আহূত।
13:শক্তিসম্পন্নদের মধ্যে মহিমায় অনন্যা গতিসম্পন্না স্রোতস্বিনীর চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্নার গৌরবে ভূষিতা, জয়ের জন্য সৃষ্ট রথের মত বিশালকায় সরস্বতী যার স্তুতি করেন প্রতিটি ঋষি।১৩
সরস্বতীকে ‘শ্রেষ্ঠ’ অথবা নদীগুলির মধ্যে ‘অগ্রগন্যা’ (নদীমাতা) বলা হয়েছে। (ঋগ্বেদ, II, 41.16)১৪ এবং ঋগ্বেদ VIII, 36.6 সুক্তে বলা হয়েছে সপ্তথি সরস্বতী নদীগুলির মাতা (সিন্ধুমাতা) একসাথে দুগ্ধ ও স্রোতস্বিনীদের নিয়ে বিপুল গর্জনে তীব্র স্রোতে প্রভূত জলধারায় স্ফীত হয়ে প্রবাহিত।১৫
সরস্বতীকে কোথাও নদীগুলির দেবী অথবা কোথাও বিশেষ নদী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবিষয়ে এখনাে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তথাপি তার ‘সাত ভগিনী’ বর্ণিত হয়েছে সপ্ত সিন্ধু বা সাতটি নদী হিসেবে, ঋগ্বেদে যার মাঝে মাঝে উল্লেখ রয়েছে। এক্ষেত্রে স্পষ্টতই সিন্ধু ও তার শাখানদী গুলিকে বােঝানাে হচ্ছে।১৬ এই পংক্তিগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে এটাই বােঝাতে যে আকারে এবং দৈর্ঘ্যে অন্য নদীগুলির তুলনায় সরস্বতীর অবস্থান অনেক ঊর্ধ্বে।
দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে যে সরস্বতী বিশাল নদীরূপে সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে এবং এই নদী সিন্ধু নদীর প্রতিদ্বন্দ্বী, এমনকি তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।
ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত দুটি সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই পরস্পর বিরােধী। থানেশ্বরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সরসুতী এতই ছােট নদী যে ঋগ্বেদে বর্ণিত বিশাল নদীর ছবির সঙ্গে তা মেলেনা।।
কিভাবে এই স্ববিরােধিতা নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে তা বলার আগে দেখা দরকার যে সহজ সমাধানের পথে হেঁয়ালির মীমাংসা হতে পারে। এর কারণ হতে পারে যে শতদ্রু ও যমুনার মধ্যবর্তী সরস্বতী নামে অন্য একটি নদী আছে যার প্রতি কারােরই দৃষ্টি পড়েনি।
এই নদী সিমলা যাওয়ার জন্যে রেল স্টেশন কাস্কা থেকে নির্গত এবং উত্তরদিকে দীর্ঘ উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, যার একদিকে হিমালয় পর্বতমালা এবং অন্যদিকে শিবালিক অঞ্চল। শেষে এটি উত্তরদিকে থেকে প্রবাহিত হিমালয়ের এক বড় নদী। শতদ্রুর সাথে মিলিত হয়। যুক্ত হওয়ায় পর শতদ্রু রুপারের উপরিভাগে শিবালিক ভেদ করে বড় রকমের দিক পরিবর্তন করে মােটামুটি পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে। যে উপনদীর কথা আমরা বলছি সেটি সম্বৎসর জলবাহিত, বিশাল অববাহিকা সমৃদ্ধ এবং এর নিম্নগামী ধারা বড়রকমের খাতের আকার নিয়েছে, এখনও যা সিরসা নামে অভিহিত।১৭ আমাদের মনে করানাের প্রয়ােজন নেই যে এই নামটি সরস্বতী নামেরই কম খণ দংশ। হরিয়ানার হিসার এর সিরসার কথাই ধরা যাক, যা চতুর্দশ শতক পর্যন্ত সরস্বতী নামেই পরিচিত ছিল।১৮ এই সিরসা নদীও চতুর্দশ শতকের ঐতিহাসিক নথিতে বসতি নামেই নথিভুক্ত। পাহাড় কেটে এই নদীকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত করার জন্য সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের (১৩৫১-৮৮) চেষ্টার বিরণের মধ্যে এৱ উল্লেখ রয়েছে। সমসাময়িক না সিরাত-ই-ফিরােজশাহীতে এই নদীকে (সরসতি) সমতলে আনার জন্য সুলতানের ব্যাপক উদ্যোগের বর্ণনা রয়েছে।১৯ কিন্তু তারিখ-ই- মুবারকশাহীতে (পঞ্চদশ শতকের প্রথমদিকে) ভৌগােলিক দিকে থেকে এই প্রকল্পের অত্যন্ত কৌতুহলােদ্দীপক বর্ণনা রয়েছে।
-কিছুক্ষণ পর তিনি (সুলতান ফিরােজ) শুনলেন যে বাৱভারের (Barvar?) কাছে একটি মাটির ঢিবি রয়েছে। একটি নদী এর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শতুনদার (শতদ্রু)-এ পড়েছে। একে সরসতি বলা হয়। পাহাড়ের এপাশে একটি নদী রয়েছে, যার নাম শালিমা সুলতান ভাবলেন যে মাটির পাহাড় কেটে ফেলতে পারলে সরসতির ধারা এসে মিলবে এই নদীতে, এবং এর প্রবাহ সিরহিন্দ, মনসুরপুর এবং তারপর সুনাম পর্যন্ত বর্ষব্যাপী প্রবাহিত হবে।২০
এই কাজটি অত্যন্ত দুরূহ বিবেচনায় পরিত্যক্ত হয়। আধুনিক ভৌগােলিক অবস্থা দেখে মনে হয় পরিকল্পনাটি অবাস্তব ছিল না, ছইয়ানদ (ছইয়া) নদীর উপনদীগুলির অন্যতম যে নদী সিরহিন্দ এবং মনসুরপুর থেকে সুনাম পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে তা সত্যিসত্যিই সরসতি বা সিরসা নদীর খুবই নিকটে।
এই সরসতি যদি বৈদিক সরস্বতী হয় তাহলে আমাদের বহু সমস্যার সমাধান হয়। এটি যমুনা ও শতদ্রুর মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রবাহিত। এটি বিস্তারে সন্ত্রম-উদ্রেককারী ও বর্ষব্যাপী জলধারণক্ষম এবং শতদ্রুর জলধারার সঙ্গে মিশে সমুদ্রে পড়েছে। এইভাবে সরস্বতী শতদ্রুতে রূপান্তরিত হলে পূৰ্বোল্লিখিত সমস্ত ঋগ্বেদিক শ্লোকগুলির সঙ্গে সঙ্গতি স্থাপিত হয়; বিশেষ করে আমরা যদি স্মরণ করি যে শতদ্রু তারপরই বিপাশার সঙ্গে মিলিত হয়ে বিশালাকার ধারণ করে।
সাধনটি সম্ভবত এত সােজা (এত অভিনব?) যে এর যথেষ্ট গ্রহণযােগ্যতা থাকে না। কিন্তু এর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে ঋগ্বেদের সাক্ষ্য মহান সরস্বতী থিসিসের, প্রবক্তারা যেভাবে ব্যবহার করেছেন তাতে সরাসরি বিষয়টির সমাধান হয়ে যায়। আমাদের ছোট সমতলের নদীকে ফাঁপিয়ে দ্বিতীয় সিন্ধুনদী হিসাবে গ্রহণ করার দায় থাকে না।
থানেশ্বরের নদীটিতে যে পবিত্রতা আরােপ করা হয় তাতেই বৈদিক সরস্বতী ও থানেশ্বরের নদী যে একই নদী তার পক্ষে পাল্লা ভারি হয়। কিন্তু প্রাচীন কাল থেকেই যে ঐতিহ্যে এর পবিত্রতা বিধৃত তাতে জোর দেওয়া হয়েছে এই বলে যে সেই নদী অন্তর্নদীর ধারার সঙ্গে মিলিত অথবা সমুদ্রে না পড়ে মধ্য পথে শুকিয়ে গিয়েছে যে জায়গায় এই নদী ‘অদৃশ্য’ হয়ে গেছে তার নাম বিনাশণ। পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ, কাত্যায়ণ স্রৌত সূত্র ও অন্যান্য সূত্র এবং জামিনিয়া উপনিষদ ব্রাহ্মণে এই নাম দেওয়া হয়েছে।২২
মনুস্মৃতি 11, 21-তে ও বলা হয়েছে যে বিনাশণ মধ্যদেশের পশ্চিম সীমানা নির্দিষ্ট করেছে।২৩ মহাভারতে রয়েছে যে নিষাদদের চোখের আড়ালে থাকার জন্য বিনাশণ নামক স্থানে মরুভূমিতে সরস্বতী অদৃশ্য হয়েছে।২৪ নদীর স্থানীয় নাম এই এতিহ্যই বহন করেছে। থানেশ্বরের ছােট্টনদী মারকণ্ড নদীতে পড়ার পর যে ধারায় প্রবাহিত হয়েছে তাকেই সরসুতি নামে অভিহিত করা হয়েছে।২৫ এটি সম্বৎসর জলবাহী ঘঘর (মানচিত্রে ঘজ্ঞর) এর প্রতি প্রযােজ্য নয়; এর উৎস সরস্বতীর মত শিবালিক নয়, শিবালিক ছাড়িয়ে চণ্ডীগড় ফাটল (gap) দিয়ে প্রবাহিত। সরস্বতী ঘঘরের সাথে মিলিত না হয়ে ‘পুরনাে সুরসেত্তি (Sursettee) খাত দিয়ে প্রবাহিত হত। ঘঘরের সঙ্গে সংযােগ যতদূর সম্ভব ফিরােজশাহ তুঘলকেরই (১৩৫১-৮৮) কাজ। বলা হয়েছে যে “তিনি ঘঘর থেকে আর একটি খাল খনন করেন এবং একে সরসতি (সিরসা) দুর্গের কাছে এবং সেখান থেকে হরনি খেবা পর্যন্ত নিয়ে যান”।২৬ নামের মিল মেনে নিয়ে যদি বলা যায় যে সরসতি (আধুনিক সিরসা) দুর্গ সরস্বতীর পুরানাে খাতের উপর অবস্থিত, তাহলে ফিরােজ শাহ অবশ্যই ঘঘর থেকে খালকেটে এই খাতে প্রবাহিত করে দু’টি নদীর সংযােগ ঘটিয়েছিলেন। এই বিষয়টি আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছে যে যখন আমরা পুরানাে নদীখাত ও খাল খননের দিকে নজর দিই তখন অতীতে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার কথা ভুলে না যাই। এই বিশ্লেষণ থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে ঘখর ও সরস্বতী নদী সম্পূর্ণ পৃথক দুটি নদী এবং ফিরােজ তুঘলক দুটি নদীকে যুক্ত করার পূর্ব পর্যন্ত এরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়নি।২৭
পূর্বের লিখিত পাঠ এবং পরবর্তী সময়ের নাম-উভয়েই হরিয়ানার সরস্বতীকে পৃথক ছােট নদী হিসাবে স্বীকার করেছে; পবিত্র শাস্ত্রে যে স্থানকে বিনাশণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে এটি সেই সিরসার কাছে শুকিয়ে গেছে। এর সাথে অন্য কোনাে স্বাভাবিক নদীর যােগ নেই এবং তারফলে কোনাে “নদী প্রবাহ ব্যবস্থার” কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে না।
এখন কেউ অবশ্যই ভাবতে পারেন যে যারা ঐতিহ্যের নামে শপথ২৮ নিয়েছেন তাদের এই অবস্থাটি মেনে নেওয়া উচিত এবং সত্যিকারের সরস্বতীর খোঁজ করা থেকে বিরত হওয়া উচিত। কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান তারা নিয়েছেন : তারা ঊনবিংশ শতকের সরস্বতী-মরুনদী প্রকল্প (hypothetis) আন্তরিকতার সঙ্গেই মেনে নিচ্ছেন এই প্রকল্পের উৎস নিশ্চিতভাবেই বিদেশী। Journal of Royal Asiatic societes এবং Calcutta Review প্রকাশিত বিখ্যাত বিতর্কের মধ্য দিয়ে de Saint Martin২৯ এবং Max Muller৩০-এর বক্তব্যে এর প্রতিফলন হয়েছে। সম্প্রতি Wheeler এর ‘জাতিবৈরী’ মতবাদের সঙ্গে এদের এক করে দেখা হচ্ছে। কেম্বুিজের সিনিয়র লেকচারার দিলীপ চক্রবর্তী পশ্চিমী ঔপনিবেশিক মতাদর্শ অনুসারী প্রাচীন শাস্ত্রভিত্তিক ধারণার সমালােচনা করে তৃণমূল স্তরে প্রত্নতাত্বিক অনুসন্ধানের উপর জোর দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু কৌতুকের বিষয় হচ্ছে এই উচ্চ আদর্শের কথা বলেও কিন্তু তিনি আমাদের জানাচ্ছেন যে সরস্বতী-দৃশদ্বতি-প্রবাহ ব্যবস্থার জলধারার পরিবর্তনের ফলে “সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক কাঠামােরর” পতন ঘটে। এর অর্থ হল : ঋগ্বেদের নদীর নামকরণ পদ্ধতি সােজাসুজি মেনে নেওয়াই কেবল নয় এমন কি মনুস্মৃতি উল্লেখিত ব্রহ্মবর্তের পবিত্র ভূমির নিকট এই জোড়া নদীর অবস্থান ও মেনে নেওয়া।৩২
আসল কথা হল একদিকে হরিয়ানার সরসুতি চৌতাং, ঘঘর, হাকরা এবং নারার শুকনাে খাত এবং অন্যদিকে কল্পিত মরুনদীর গতিপথ— এই দুই এর মধ্যে সম্পর্ক এই বিষয়টি কখনই জনপ্রিয় ভাবনার মধ্যে ছিল না। সপ্তদশ শতকের লেখা তারিখই-তাহিরি জানাচ্ছে-যে সিন্ধুর উপরিভাগে শুকনাে মরুনদীকে বলা হত হাকরা, ওয়াহিন্দ ও ওয়াহান এবং নিম্নভাগে এর নাম ছিল নার।৩৩ কোনাে নাম বা স্থানীয় বিশ্বাস। মরুভূমির শুকনাে খাতকে সরস্বতীর সঙ্গে যুক্ত করে নি। রাজেশ কোচরের সঙ্গে একমত না হয়ে উপায় নেই যখন তিনি বলেন যে মরুনদীর শুকনাে খাতগুলিকে সরস্বতী বলে মেনে নিতে বলার অর্থ হ’ল কল্পনার সঙ্গে সত্যের পার্থক্যকে মুছে ফেলা।৩৪
আমরা আপত্তি তুললে কি হবে সরস্বতী স্কুল শুধুমাত্র নিজস্ব পরিভাষার ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন তাই নয়, সরস্বতী নদী বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে উঠছে তাদের আলােচনায়। এই নদী শুধুমাত্র কচ্ছের রণ এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়নি একবার লুনির ভেতর এবং রাজস্থানের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়েছে।৩৫ যাইহােক, ধরে নেওয়া হচ্চে যে মরুনদী খাত (চৌতাং-ঘঘর-হাকরা-নারা) কেবলমাত্র একটি সংযুক্ত খাতই সৃষ্টি করেনি (কল্পনার বহর নীচে বলা হয়েছে) এই খাতে চমকপ্রদ স্রোতধারা প্রবাহিত হয়েছে, এই ধারার কথাই ঋগ্বৈদিক ঋষিদের সরস্বতী বন্দনায় বিধৃত হয়েছে। এই ধারনা থেকে কেউ দাবি করতে পারেন যে ঋগ্বেদের বক্তব্যে সত্যিকারের ক্ষুদ্র নদী ও এর উপনদীগুলির বিশালত্ব নিয়ে যে আপাত বিরােধিতা তা সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত হ’ল।
যাই হােক এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে কল্পিত নদীতে যথেষ্ট পরিমানে জলপ্রবাহের বিষয়টি স্বীকার করে নিতে হবে। এমন কি, ‘বৈদিক’ ভূতাত্বিকেরা স্বীকার করেন যে যদি ভূতাত্বিক পরিবর্তনের ফলে হিমালয়ের হিমবাহের সঙ্গে ইতিপূর্বে সংযােগ ছিন্ন হয়ে থাকে তবে এই ঘটনা নিশ্চিত ভাবেই Holocene যুগের (পৃথিবীতে জীবজগৎ আবির্ভাবের পূর্বে) আগেই ঘটেছে। এর ফলে দুই হিমবাহ যুগের মধ্যবর্তী সময়ে সরস্বতীর অববাহিকা অঞ্চল শিবালিক ঢালের (Slope) বাইরে যেতে পারে না যুক্তি হচ্ছে এই রকম : সরস্বতী প্রবাহ ব্যবস্থার জলের যােগান দু’টি উৎস থেকে আসছে
(১) ভেজা মরশুমে অনেকবেশী বৃষ্টিপাত;
(২) যমুনা ও শতদ্রু উভয়েই সরস্বতীর উপনদী।
এই দু’টি সম্ভাব্য উৎসের আলোেচনায় যাওয়ার আগেই আমাদের তথাকথিত সরস্বতী।
প্রবাহ ব্যবস্থার খাতগুলি সম্পর্কিত অদ্ভুত বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। নদীতে যেখানে জল থাকছে সেই খাতগুলি ছােট; শত-যমুনা (Divide) মধ্যবর্তী অঞ্চলে। প্রবাহিত কোন স্রোতস্বিনীই উত্তরপ্রদেশের কেবলমাত্র বর্ষাকালের নদী গােমতীর সঙ্গে প্রতিযােগিতায় এঁটে উঠতে পারবে না। এই নদী গুলির একটি কেমন করে বিপুল জলরাশি নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কল্পনা করাও শক্ত। তাদের গতিপথ আকারে বড়। হয়েছে সেই অঞ্চলে যেখানে তারা বহু কাল ধরেই শুকনাে ছিল। যে মুহূর্তে কেউ এই স্ববিরােধিতা সম্পর্কে সতর্ক হবেন তখনই তিনি সন্দেহ করতে শুরু করবেন যে বালুময় এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যেমন হাকরা বেল্ট, যা কোথাও দুই মাইল কোথাও চারমাইল চওড়া সত্যিই কি নদীর দুই তীরের দূরত্বে নির্দেশ করছে। এই বালুরাশি বায়ুপ্রবাহের দরুন স্থান পরিবর্তনকারী বালুরাশি যা মরা বা শুকিয়ে যাওয়া ঝােপঝাড়ে আটকে গেছে। কাজেই জলবাহী খাত নয় ধ্বংস প্রাপ্ত উদ্ভিদ অঞ্চলকেই চিহ্নিত করছে এই মরুখাতগুলি।৩৬ এই বিষয়টি একবার উপলব্ধি করলেই যে কেউ দেখতে পাবেন পাঞ্জাবের যে কোনাে প্রধান নদীর মত বিশালনদী ঘঘর হারা খাত দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না।৩৭
এই সীমার কথা মনে রেখে বৈদিক যুগে বিশাল নদী সরস্বতী মরুভূমির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পড়েছে—এই মতের পক্ষে সাক্ষ্যগুলি দেখা যাক। ১৯১৭ সালে গুরদীপ সিং এক প্রবন্ধে যুক্তি দেখিয়েছেন যে রাজস্থানের চারটি হ্রদের তলদেশে প্রাপ্ত পরাগ নমুনা (Pollen Sample) কার্বন ডেটিং এর সাহায্যে পরীক্ষা করে হ্রদের লবনাক্ত ও মিষ্টিজলের স্তর বােঝা গেছে; এর সাহায্যে কম ও বেশী বৃষ্টিপাতের পর্যায়গুলিও ধরা পড়েছে। পরাগ রেণু সংক্রান্ত গবেষণা পরে দিওয়ানা হ্রদে কেন্দ্রীভূত হয়। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে পূর্বে প্রাপ্ত বক্তব্যের মিল নেই কিন্তু বলা হয়েছে যে এখানে Holocene যুগের তিনটি পর্যায় রয়েছে :
(১) খ্রী: পূ: ৫৫১০ পর্যন্ত শুষ্ক;
(২) খ্রী: পূর্ব ৫৫১০ থেকে ২২৩০ আদ্র এবং
(৩) এর পর শুষ্ক।৩৮
এই বক্তব্য শীঘ্রই এই দাবির ভিত্তি হিসাবে গৃহীত হল যে সরস্বতী নদী সঙ্কুচিত হয়ে তার এই শীর্ণ আকার ধারণ করেছিল যখন গুরদীপ সিং কথিত আর্দ্র পর্যায় খ্রীঃ পূঃ ২২৩০ সালে শেষ হয়; এই সময়ের পূর্বে সরস্বতী দৈর্ঘ্যে এবং আয়তনে ঋগ্বেদ কথিত নদীর মতই ছিল। মনে করা হল যে এই তথ্য কেবলমাত্র নদীর অতীত গৌরবের সাক্ষী নয়, তার সঙ্গে ঋগ্বেদকে যত প্রাচীন ধরা হয়, তার চেয়েও প্রাচীনতর বলে নির্দেশ করে।৩৯
কেউ অবশ্য দেখাতেই পারেন যে গুরুদীপ সিং এর অভিমতে কোন ভাবেই সত্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। Possehl দেখাচ্ছেন যে রেডিও কার্বন নির্ধারিত তারিখগুলি সংখ্যায় এমন বেশী নয় যা কালপঞ্জীর শক্ত ভিত তৈরী করতে পারে। তবে তিনি তিনটি পর্যায়ের ক্রম মেনে নিয়েছেন।৪০ যখন রাজস্থানে পাচপাদ্রা ও থব এবং লবন অববাহিকায় একই পদ্ধতি অনুসৃত হ’ল তখন পরাগ রেণু বিশ্লেষণ পদ্ধতি স্পষ্ট করে শুষ্ক আর্দ্র শুষ্ক-এই ক্রম প্রমাণ করতে পারল না। বরং এটাই প্রমানিত হল যে “মরু অঞ্চলের অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্যের জন্যই এই পরিবর্তনগুলি হয়েছিল।”৪১
এমন কি যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নিই যে আঃ খ্রীঃ পূঃ ৫০০০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছিল যাতে উত্তর রাজস্থানের হ্রদের লবণের পরিমান কমে গিয়েছিল তাহলে এটা ভাবা যেতে পারে যে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র হরিয়ানার নদীগুলির অববাহিকা নয় সিন্ধুনদী প্রবাহ ব্যবস্থা, গঙ্গা ও যমুনার অববাহিকা অঞ্চল প্রভাবিত হবে। তা যদি হয়, তা হলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের দরুণ বিপুল জলবাহী হিমালয়ের বড় বড় নদীগুলির মধ্যে একমাত্র সরস্বতী কিভাবে প্রাধান্য পাবে। এমন কি হরিয়ানার ছােট ছােট নদীগুলির মধ্যেও সরস্বতী প্রাধান্য পাবে না। কেননা এর চেয়ে বড় ঘঘর এবং চৌতাং তুলনায় বেশী জল বহন করে। কাজেই আমরা কোনভাবেই ‘প্রতিপত্তিশালী’ সরস্বতীর কাছাকাছিও পৌঁছতে পারলাম না।
১৮৯৩ সালে C.E Oldham অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত তত্বের যে প্রতিবাদ করেছেন তা কারাে পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তাঁর মতে :
এই ধরনের জলবায়ুর পরিমণ্ডলে ব্রাহ্মণদের পবিত্রভূমি (ব্রহ্মবর্ত) বসবাসের অযােগ্য জলাভূমিতে পরিণত হওয়ার কথা। প্রতিবেশী বড় নদীগুলির এক্ষেত্রে বিপুলাকার ধারণ করার কথা। কিন্তু তাদের খাতগুলি বলে দিচ্ছে তারা তা ছিল না।৪২
মধ্য Holoclene যুগের মৌসুমীবায়ুর প্রবাহে দীর্ঘসময় ধরে অধিকতর বৃষ্টিপাত বিষয়ে যখন সন্দেহ দেখা দিচ্ছে, তখন সরস্বতী নদীতে জলের যােগান বিষয়ে পুরানাে ভিন্নতর ধারণার আবার উদ্ভব হয়; যেমন সেই একই Holoclene যুগে সরস্বতী নদীর যমুনা ও শতদ্রুকে গ্রাস করা। দু’টি প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে পুরানাে বিষয়টির আলােচনার সূচনা করা হয়েছে একটি উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে যশপাল লিখিত ১৯৮০ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধ, অন্যটি প্রধানত প্রত্নতাত্বিক ও সাহিত্যিক উপাদান নিয়ে ডি. এন. মিশ্র লিখিত প্রবন্ধ।৪৩ Possehl এর এই মতবাদকে সাম্প্রতিক সমর্থনের কারণ হল এটি গুরদীপ সিং এর রাজস্থানের হ্রদ থেকে পাওয়া প্রমাণের ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।৪৪ কিন্তু আমরা দেখেছি সিং প্রদত্ত তথ্যগুলি কোনভাবেই শক্তভিতের উপর দাঁড়িয়ে নেই।
এই বিষয়টি মনে রাখা দরকার যে ভূপৃষ্ঠের উপগ্রহ চিত্র (Landsat imagery) ব্যবহারের দ্বারা খুব বেশী কিছু সুবিধা হয় তা নয়; যেমন যমুনা ও শতদ্রু নদীর সঙ্গে মরুনদী অতীতের যােগাযােগ সম্পকে ভূপৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ এবং ভূসংস্থান মানচিত্রের দ্বারা প্রায় সবই জানা গেছে, সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর পর থেকেই।৪৫ আসলে উপগ্রহ চিত্রের মধ্যে ও সুপ্রাচীন প্যালিও চ্যানেল বা নদী খাতরেখা গুলি দেখানাের চেষ্টা করা হয়, বিশেষ করে “প্রাচীন জলনিকাশী পথের চিহ্নগুলি এবং তার পলিসঞ্চয়ের পরিমাণ ও উদ্ভিজ্জের সংস্থান দেখে”।৪৬ প্রকৃতপক্ষে ‘দরকার হল উপগ্রহ চিত্রের সঙ্গে ভূতাত্বিক পর্যবেক্ষণের বড়ধরণের সাযুজ্য। কিন্তু সমস্যা হল চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণে শুকিয়ে যাওয়া নদীর ক্রম-অপসৃয়মানতা দেখে অথবা পলিমাটির সঞ্চয়ের বৈচিত্র্য লক্ষ করেও নদীটির সক্রিয়তার সঠিক সময়সীমা সম্বন্ধে সুনিশ্চিত হওয়া যায় না। ১৮ লক্ষ বছর আগে সেই প্লাইস্টোসিন (Pleistocene) যুগের সূচনা থেকে এক বিশাল পরিব্যাপ্ত সময়ের মধ্যে থেকে ঐ সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। নদীখাতগুলি দশহাজার বছর আগের হলােসিন (Holocene) যুগের, এর সম্ভাবনাও কম, যদিনা ভূতাত্বিক গবেষণায় না প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গের আলােচনা পরে।
এই মুহূর্তে উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে যে যশপাল ও তার সহকর্মীরা বিলুপ্ত সরস্বতী মন তার উপনদী যমুনা ও শতদ্রু নদীকে নিয়ে বয়ে চলেছে বলে দেখেছেন। কিন্তু তাতে ‘ঋগ্বৈদিক সরস্বতী’র সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ঋগ্বেদের X. 75:5 সূক্তে যুমনা। সরস্বতী ও শতদ্রু তিনটি পৃথক নদী হিসাবে চিহ্নিত। এর মধ্যে দু’টি হিমালয়ের নদী হিসাবে আমাদের কাছে পূর্ব পরিচিত। যমুনা নদী সম্ভবত পশ্চিমবাহিনী হয়ে হয়। বর্তমানের সরসুতীর সঙ্গে (যাকে সরস্বতী বলে অনুমান করা হচ্ছে), যাকে Y-1 বলে। চিহ্নিত করা হচ্ছে অথবা চৌতাং বা চিত্রাং এর সঙ্গে যাকে Y-2 বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, মিলিত হয়েছিল।৪৭ প্রথম ক্ষেত্রে, যদি যমুনা তার জলরাশি নিয়ে সরস্বতীর। নদীগর্ভ অধিকার করে থাকে। তাহলে সে যমুনা নামেই অভিহিত হত, সেক্ষেত্রে বৈদিক। সরস্বতীর কোনাে অস্তিত্বই থাকেনা, অপর পক্ষে যমুনা যদি চৌতাং-এ গিয়ে পড়ে, তাহলে দৃশাদ্বতীর কি হবে, যা ঋগ্বেদে উল্লিখিত নদী, এবং চৌতাং-এর সঙ্গে যাকে এক করে দেখা হয়? যদি দৃশাদ্বতীকে আমরা অস্তিত্বহীন নদী বলে ধরে নিই, তাহলে কি করে মরুনদীকে সরস্বতী নদী হিসেবে চিহ্নিত করব, যখন ঘঘরের (সরসুতী যার উপনদী) স্বল্প জলরাশির সঙ্গে যমুনার জলরাশি বাহিত চৌতাং-এর কোনাে তুলনাই চলেনা। কাজেই সরস্বতী নয়, যমুনারই সিন্ধুর সমান্তরাল ভাবে বয়ে চলা উচিত। আবার, শতদ্রু যদি রুপারে দক্ষিণ মুখী বাঁক নিয়ে সরাসরি ঘঘরে পড়ে৪৮, তাহলে ঘঘরকে শতদ্রুই বলতে হয়, সরস্বতী নয়। সরস্বতী বর্ষায় জলে পুষ্ট একটি গুরুত্বহীন স্রোতস্বিনী মাত্র যমুনা চৌতাং-এর (Y-2) খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শতদ্রুর সঙ্গে যদি যুক্ত হয়, এক্ষেত্রে স্বাভাবিক হল যে ওই সংযুক্ত ধারা নদী দুটির যেকোনােটির নাম নিয়ে পরিচিত হবে। এখানে সরস্বতীর কোনাে স্থান নেই। যমুনা অথবা শতদ্রুকে, অথবা দুটিকেই এক মরুনদী হিসেবে চিহ্নিত করলে দেখাতে হবে মরুনদীর উৎস হিমালয়। কিন্তু প্রবল ইচ্ছে হলেও এখনও এটা প্রমাণ করা যাবেনা সরস্বতী নামের “নিত্যবহ প্রবল স্রোতধারা বিশিষ্ট নদী হিমালয় থেকে আরব সাগর পর্যন্ত প্রবাহিত।”৪৯ এই উদ্ধৃতি আশ্চর্যজনক ভাবে এক ভূতাত্ত্বিকের, যিনি সম্ভবত নদী নামকরণ বিষয়ে সাধারণ নীতি গুলি মনে রাখতে পারেননি। আমাদের অবশ্যই কোচার (Kochhar)-এর সতর্কবাণী স্মরণ রাখা উচিত : “ভূতত্ত্ববিদদের উচিত সর্বদা নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের উপর নির্ভর করা এবং কখনােই ভূতত্ত্বের সঙ্গে পুরাতত্ত্ব বা সাহিত্যের মিশেল না দেওয়া।“৫০
যখন ভূতাত্ত্বিকরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করেন, তখন তারা বিিভন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হন। যমুনার পশ্চিমমুখী প্রবাহ পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি হল, সম্ভাব্য নদীপথের মাটি খুঁড়ে এনে পরীক্ষা করা এবং দেখা হিমালয়ের উপলখণ্ড এবং পালিস্তর তাতে পাওয়া যাচ্ছে কিনা। একটি ইন্দো-ফরাসী দল ১৯৮৩-৮৭ সালে ঘঘর সমভূমির জলবিজ্ঞান বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিল এবং Marie-Agnes Courty এ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানাচ্ছেন যে বর্তমান প্লাবন ভূমির আট মিটারের নীচে কোনাে বড় নদীর পলিস্তর দেখা যায় নি কাজেই Holocene যুগের প্রারম্ভে হরিয়ানার সমভূমিতে যমুনার বিপুল আকারে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।৫১
এখানেই সব সন্দেহের অবসান হওয়া উচিত।৫২ তথাপি যদি কোনাে প্রশ্ন থাকে, তার সমাধান পাওয়া যাবে যমুনাকে দক্ষিণ-পশ্চিম মুখী করার চেষ্টার ব্যর্থতা থেকে। মধ্যযুগে বার বার চেষ্টা করা হয়েছে যমুনার স্রোতকে চৌতাং-এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করার, কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। আভা সিং-এর গবেষণায় এই প্রচেষ্টার উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি প্রতিটি ধাপে কি ঘটেছিল তার আকর্ষণীয় বিবরণ দিয়েছেন। ১৩৫৫ সালে ফিরােজ শাহ দুটি খাল খনন করেছিলেন, যমুনা থেকে উলুঘ খান-নি এবং রাজবওয়া, যাদের উৎস স্থল ছিল যথাক্রমে খিজরাবাদ ও কার্নলের কাছে। এদের প্রবাহিত করানাে হয় চৌতাং-এর মধ্য দিয়ে, যাকে ফিরােজ শাহ সম্ভবত আংশিক ভাবে। পুনঃখনন ও পুনর্বিন্যস্ত করান যাতে হিসারে প্রচুর জল পৌঁছয়। এমনকি বর্ষাকালে এই দুটি খালের জন্য সেখানে বন্যাও হত।
আকবরের রাজত্বকালের প্রথমদিকে আঃ ১৫৬০ সালে দিল্লির প্রশাসক শিহাবুদ্দিন খান সম্ভবত রাজবওয়ার পুনঃখনন করে পশ্চিম দিকের যমুনা খাল পুনরুদ্ধার করেন যার নতুন নাম দিয়েছিলেন শিহাব নহর।
অবশেষে ১৬৪৭-৪৮ সালে শাহজাহানের শাসনকালে শাহনহর সম্পূর্ণ হয়। সিজরাবাদের নীচ দিয়ে উলুঘখান-নি’র গতিপথ ধরে গােহনার কাছে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঘুরে এই লহর দিল্লিতে যমুনার সঙ্গে যুক্ত হয়।৫৩
যমুনা থেকে খালগুলি কাটার পিছনে যমুনানদীর জলধারাকে বাঁধ ও সুইসগেটের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করার কোনাে উদ্দেশ্য ছিল না। যদি যমুনা নদীর দক্ষিণ পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকত তাহলে এই খালগুলি আরাে গভীর ও চওড়া হয়ে যেত, জলধারার প্রবহমানতা বাড়ত এমনকি বড় শাখা নদীর ও জন্ম হতে পারত। ঠিক এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রাভি নদীর ক্ষেত্রে। রাভি নদী সিধনাইতে পৌঁছে তার গতিপথ সিধনাই এর সােজাখাতে বদলে নিয়েছে। অথচ ষােড়শ শতকের পূর্বে রাভি মূলতানের পূর্ব দিকে প্রবাহিত হত।৫৪ যমুনা তার গতিপরিবর্তনের বিষয়ে কেবল বিফল হয়েছে তা নয়, খালগুলিতে ও প্রায়শই পলিমাটি জমতে থাকে। ফলে দেখা যায় নদীর দক্ষিণ তীর জুড়ে চওড়া ও উচু মাটির দেওয়াল তৈরী হওয়ার ফলে পশ্চিম মুখী প্রবাহের পক্ষে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটা ভাবা প্রায় অসম্ভব যে বিপুল পলিমাটির সঞ্চয় অথবা নদীর নিম্নগামী প্রবাহের দরুন মাটির ক্ষয়ের ফলে এই বিপুল পলিমাটির সঞ্চয় মাত্র কয়েক সহস্র বছরের মধ্যেই ঘটেছিল। প্লাইস্টোসিন যুগে না হলেও অন্তত হলােসিন যুগের প্রারম্ভ কালে এই ঘটনা আমাদের নিশ্চয়ই নিয়ে যাবে। এই রূপ, অনুমানের সঙ্গে মিলে যায় এখনকার নদীগর্ভের উপরে উঁচু স্তরগুলির প্রাচীনত্ব, যার অবস্থান নদীগর্ভ থেকে প্রায় ২৫ মিটার উঁচুতে পাথরে ঢাকা। এই ধরনের পাড় যমুনানদীর দক্ষিণ ঘেঁষে রয়েছে যেখানে যমুনা নদী দক্ষিণ পশ্চিমবাহী হয়ে চৌতাং বা সরস্বতী নদী প্রবাহ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত অন্য যে কোনাে নদীর সঙ্গে মেশার কথা।৫৫
শতদ্রু নদীর ব্যাপারে প্রথম যে কথাটি আমাদের মনে আসে, উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে যশপাল কর্তৃক পুনর্গঠিত Paleo-channel বা পুরাকালের নদীখাত (পুরাকালের শতদ্রু ঘঘরে পড়ে রুপারের কাছে বস্তুতপক্ষে দক্ষিণ দিকে বাঁক নিয়েছে) স্বাভাবিক জল নিকাশী গতিপথকে সরাসরি ছেদ করেছে, যেখানে ভূ-সংস্থান মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, সক্রিয়, পরিত্যক্ত বা শুষ্ক সব ধরণের নদীগুলিই দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। ‘ছইয়া নদ’ এবং পাতিয়ালা নদী পুরাকালের শতদ্রু ধারণার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি পুরাকালে শতদ্রুর অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়, তাহলে তার অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবে এই নদীগুলির জন্মের আগেই ছিল, এবং এই নদীগুলির সঙ্গে বৈশিষ্ট্যগত মিল থাকা সরসুতির সেই সময় অস্তিত্ব ছিলনা— এই সময়কে নিশ্চিতভাবেই Holocene যুগে ফেলা যায় না।
Wilhelmy ধারণা করেছেন যে সম্ভাব্য শতদ্রুর ঘঘর এবং হাকরায় প্রবাহিত জলধারার অস্তিত্ব Holocene যুগে ছিল। একটি নদীখাত রুপারের ঠিক নীচ থেকে দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে। একটি শাখা ঘঘর যেখানে চৌতাং-এর শুকনাে খাতে মিশেছে, তার ঠিক উপর ঘঘরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, অপর শাখাটি আরও পশ্চিমে হাকরায় প্রবাহিত হয়েছে, শতদ্রুর নিম্ন ভাগ থেকে আর একটি শুকনাে খাত এই মিলন বিন্দুর ঠিক আগে মিশেছে। পরিশেষে, শতদ্রু থেকে নির্গত আরও কয়েকটি খাত দক্ষিণ দিকে গিয়ে ভাওয়ালপুরের কাছে হারার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।৫৬ আমরা যদি ধরে নিই এই খাতগুলির মধ্যে এক বা একাধিক খাত শতদ্রুর প্রধান নদীখাত ছিল, তাহলে এটি ঘঘর, হাকরার সঙ্গে বর্তমান সরসুতির অনেক নীচে মিলিত হত। তাহলে ঋগ্বৈদিক সরস্বতীর সঙ্গে এর সম্ভাব্য সম্পর্কের প্রশ্নটি অবান্তর হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া এমন বিশ্বাস করার কারণ নেই যে এই খাতগুলিতে কোনাে সময় শতদ্রুর মূল জলধারা প্রবাহিত হয়েছে: বড়জোর তারা শতদ্রুর বন্যার বাড়তি জল বহন করেছে, মূল স্রোতের দাবিদার হতে পারেনি। স্মরণ করা যেতে পারে যে ঋগ্বেদের III 33.1 সূক্তে বিপাশা ও শতদ্রুকে যুগ্মনদী হিসেবে দেখানাে হয়েছে :
উল্লসিত গােমাতারা যেভাবে স্নেহভরে গােশাবকদের লেহন করে,
তেমনি বিপাশা ও শতদ্রু জলরাশি নিয়ে বয়ে চলেছে।৫৭
যদি বর্তমানকালের মত সেই সময়েও শতদ্রু পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে বিপাশার সঙ্গে মিলিত হত। তাহলে ঋগ্বৈদিক যুগে তার বিপরীত মুখে প্রবাহিত হয়ে ‘সরস্বতী’র সঙ্গে মিলিত হবার প্রশ্নই আসে না। অতএব দেখা যাচ্ছে ঋগ্বেদিক যুগে অথবা মধ্য হলােসিন যুগের আদি পর্বের যে কোন সময়ে যমুনা ও শতদ্রু দ্বারা সরস্বতী আরাে স্ফীতধারা হয়েছিল এই দাবি অত্যন্ত সন্দেহজনক। এই বক্তব্য নস্যাৎ হয়ে যায় এই তথ্যের দ্বারা যে ভূপৃষ্ঠের ও উপগ্রহের চিত্রাবলী থেকে প্রমাণিত হয় না যে ঘঘর হারা নদী পূর্বেকার বাহাওয়ালপুর রাজ্যের মধ্যাঞ্চল পার হয়ে বয়ে যেত। শতদ্রুর মত নদী (বিপাশা নদীর সংসর্গ ছাড়াই) সিন্ধু বা পূর্ব নারার দিকে প্রবাহিত না হয়ে বাহাওয়ালপুর চোলিস্তান অথবা মরুভূমির বুকে হারিয়ে যাবে এ সত্যিই অবিশ্বাস্য।
একথা সত্যি যে আগের সরকারি ক্ষুদ্র মানচিত্রে হাকরা বা ঘর্ঘরের শুষ্ক নদীখাতের অবস্থান দেখানাে হয়েছে বাহাওয়ালপুর রাজ্যের দিলওয়ার বা দেরাওয়ার দিয়ে সােজা সিন্ধের সীমান্ত পর্যন্ত এবং এখানে সম্ভবত রৈনী (‘Raini N’) নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই নদী পূর্ব নারা নদীর (East Nara R) কাছাকাছি পৌঁছে আলিভাণ্ডারের কাছে বিশাল কচ্ছের রণে প্রবেশ করেছে৫৮ এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয়েছে যে অধুনালুপ্ত একটি প্রাচীন নদী সিন্ধুনদের সমান্তরাল হয়ে বয়ে চলেছিল। ভূপৃষ্ঠে কিন্তু ঘর্ঘর হাকরা এবং রৈনী-নারার সত্যিকারের কোন সম্পর্ক নেই। Aurel Stein একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে দেরাওয়ারে বিস্তৃত করার নদীগর্ভ অন্তবর্তী বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে আর তার চারদিকে পাখার মত ছড়িয়ে আছে শুষ্ক খাতগুলি।৫৯ এর অর্থ হল হারা মােহনা (Mouth) দেরাওয়ারের কাছেই এবং যখন নদী জল তখন এখানেই যাত্রা শেষ হয়ে যেত। নিম্নগামী খালগুলি যারা নারাকে পুষ্ট করতে পারত তারা হারার জলধারা বয়ে নিয়ে যেত না, বরং তারা সিন্ধুর বন্যাপ্লাবিত অঞ্চল থেকে বেরিয়ে সিন্ধু নদীর অতিরিক্ত বন্যার জল বহন করত।
ভূপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষণ থেকে ইতিপূর্বে যা জানা গেছে তাই ভূপৃষ্ঠের উপগ্রহ-চিত্র নিশ্চিতভাবেই সমর্থন করছে। যশপাল যে তথ্যাবলী সমৃদ্ধ বই ও মানচিত্র দিয়েছেন তাতে পরিষ্কারভাবে দেখানাে হয়েছে যে, হাকরা নদীর পুরাকালের খাত (Palaeo channel) বাহাওয়ালপুরে ঢুকেই দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে—উত্তরদিকেরটি মারােটের কাছে এবং দক্ষিণেরটি বেরিওয়ালাতে শেষ হয়েছে। ফলে এই দুটি শেষপর্যন্ত দেরাওয়ারের নিকটবর্তীও হতে পারেনি।৬০
ঐতিহাসিক যুগের আদি পর্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জল বণ্টনের মানচিত্র থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে ঘঘর করার এমন জল ছিল না যা বাহাওয়ালপুর চোলিস্তানের মধ্যাঞ্চল পার হয়ে বয়ে যেতে পারে। হরপ্পা (হরপ্পা পূর্ব ও উত্তর হরপ্পা কাল) অঞ্চল হারা নদীর পাশ্ববর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, বিশেষ করে দেরাওয়ারের চারপাশ জুড়ে এর বেশী অস্তিত্ব ছিল। এখানেই কিন্তু তারা থেমে গিয়েছিল। শুধুমাত্র গানওয়ারিয়ালার বিশাল বসতির নিম্নভাগে দুর্লভ দু’একটি হরপ্পা কেন্দ্র ছিল।৬১ হাকরা মৃৎপাত্র (খ্রী:পূ. চার হাজার বছর), আদি হরপ্পা (কোট দি জি) এবং পরিণত সিন্ধুসভ্যতার অবস্থিতি থেকে বােঝা যায় এগুলি হাকরার বদ্বীপ অঞ্চল জুড়ে ছিল। সরস্বতী প্রবাহ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী এমনকি G.L. Possehl স্বীকার করেছেন যে হারা নদী খাত দিয়ে প্রবাহিত সরস্বতী অন্তত হলােসিন যুগে দেৱাওয়াকে বদ্বীপ অঞ্চল অতিক্রম করেনি এবং এই কারণে কোনভাবেই সমুদ্র অভিমুখে যাবার জন্য পূর্ব নারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়নি।৬২
জে.পি যােশী যিনি পরবর্তীকালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের ডিরেক্টর জেনারেল হয়েছিলেন এবং তার দুই সহযােগী লেখক সিন্ধুসভ্যতার সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলির বণ্টন বিষয়ে শ্রমসাধ্য গবেষণা করে এক অসার সিদ্ধান্তে পৌছলেন: “উপনদীগুলি নিয়ে ঘঘর নদী সিন্ধুনদীর চেয়ে বড়।”৬৩ যে কেউ এর দ্রুত উত্তর দিতে পারে এই বলে যে তীর পাশ্ববর্তী ঐতিহাসিক যুগের সন্ধি পর্বের সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলি যদি নদীর আকারের নির্দেশক হয় তাহলে দোয়াবের কালি নদী যার তীরে চিত্রিত ছাইরঙের মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে নিশ্চিতভাবে গঙ্গা নদীর চেয়ে বড়। গঙ্গা নদীর তীরে হস্তিনাপুর ছাড়া খুব অল্প সংখ্যক সংস্কৃতির নিদর্শন ছিল। জে.পি. যােশী এবং তার সহকর্মীরা রাভি, বিপাশা ও শতদ্রু নদীর তীরে হরপ্পা সংস্কৃতির নিদর্শনের অনুপস্থিতির জন্য এই নদীগুলির “অদ্ভুত ধরণের ব্যবহারকে” দায়ী করেছেন। এর দ্বারা তারা নিশ্চিতভাবে বােঝাতে চেয়েছেন নদীগুলির বন্যার প্রবণতা (এমনকি সরস্বতীর মত ছােট নদীগুলির ও এই প্রবণতা) এবং তাদের বিপুল জলধারণ ক্ষমতা এবং বন্যা অঞ্চল। তারা এক নিঃশ্বাসে মেনেও নিয়েছেন যে ঘঘর-হাকরা নদীর তীরে প্রাচীন বসতি গড়ে উঠেছিল কারণ এগুলি ছােট ও শান্ত নদী।৬৪ বস্তুত রাজেশ কোচার যথার্থই বলেছেন যে “এ হতে পারে যে শক্তিশালী ঘঘর নদী তার তীরে তাম্রপ্রস্তরযুগের বসতি গড়ে উঠতে বাধা দিয়েছে”৬৫ অবশ্য এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে প্লাবনভূমিতে অবস্থিত তাম্রপ্রস্তর যুগের নিদর্শন গুলি বড় বড় নদীর বন্যায় ভেসে গিয়েছে কিন্তু হাকরার একই ধরনের বসতি ভাগ্যজোরে বেঁচে গিয়েছে।
একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি। হাকরা, চৌতাং এবং ঘঘরের নিম্নভাগে নদীখাত বহু শতাব্দী ধরেই শুদ্ধ। কেমন করে এই শুষ্ক খাত জলে ভরে উঠল এবং তা দেওয়ার পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বদ্বীপের সৃষ্টি করল ও ঐস্থানে বসতি টিকিয়ে রাখল?
যমুনা থেকে কোনাে নিয়মিত প্রাকৃতিক জল প্রবাহের অস্তিত্ব যথেষ্ট সন্দেজনক। আমরা এও দেখেছি যে শতদ্রু থেকে নির্গত জলপ্রবাহ শুধুমাত্র হাকরাকেই পরিপুষ্ট করত, চোতাং বা ঘরকে নয়। সম্ভবত যে সব ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের হাতে তেমন পরিবর্তিত হয়নি, সেই সব ক্ষেত্রে নদীগুলির অধিক দূরত্ব পর্যন্ত অধিক জেল বহনের ক্ষমতার প্রশ্নটি যথেষ্ট মনােযােগ পায়নি। সিন্ধু সভ্যতার যুগে শিবালিক ও অধঃশিবালিক (তরাই) অঞ্চলের জঙ্গল অবশ্যই বর্তমান কালের চেয়ে বেশি ঘন ও বিস্তৃত ছিল। তার নীচের ঝােপঝাড় কৃষিকাজ ও পশুচারণ দ্বারা তেমন প্রভাবিত হয়নি। পরবর্তী কালের তুলনায় তখন চারণভূমি ও কৃষিজমি খুবই অল্প অঞ্চল অধিকার করেছিল। এসবের ফলে তখন বর্তমান কালের তুলনায় বৃষ্টিপাতের হার স্পষ্টতই বেশি ছিল। তবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণটি সম্ভবত ভূগর্ভস্থ জলের উচ্চতর সীমা, যেহেতু তখন কুয়াে ইত্যাদির মাধ্যমে গুল নিষ্কাশনের পরিমাণ অনেক কম ছিল। সব শেষে বলা যায়, কৃষিকাজের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যত বাঁধ এবং খাল নির্মাণ করেছে। তার সংখ্যা তখন ছিল খুবই কম, কিংবা একেবারেই ছিল না। ১৬৩০-এর দশকে একজন মুঘল আধিকারিকের নথিতে দাবি করা হয় যে, যে চৌতাং একশ বছর ধরে জলবহনে ব্যর্থ হয়েছে, আবার জলবহনে সক্ষম হবে যদি তার উজান ভাগের বাঁধগুলি সরিয়ে ফেলা যায়।৬৬ তৎকালীন প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে মরুনদীর পক্ষে শিবালিক ও রাই থেকে আগত বৃষ্টির জলধারায় পুষ্ট তার নিজস্ব উপনদীগুলির জল পেয়ে বাহাওয়ালপুর চোলিস্তান পর্যন্ত আসা সম্ভব ছিল। সেই সময় থেকেই অববাহিকা অঞ্চলে কৃষিকাজের প্রসারের সঙ্গে মােটামুটি আনুপাতিক হারে মরুনদী সঙ্কুচিত হতে শুরু করে, যা আবার এর ঊর্ধ্বভাগের শাখানদী ও ভূনিম্নস্থ জলধারাকে প্রভাবিত করেছিল।৬৭
আমরা দেখেছি যে সরস্বতী (থানেশ্বর স্রোতস্বিনী) একক ভাবে অথবা অন্যান্য নদীর সঙ্গে মিলেও পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর জেলা অতিক্রম করার মত বড় নদী হতে পারেনি। সুতরাং প্রবন্ধের শেষে আমাদের ঋগ্বেদের ব্যাখ্যায় ফিরে যাওয়া প্রয়ােজন, যা আগে আমরা ব্যবহার করেছি সরস্বতী প্রবাহ ব্যবস্থার প্রবক্তাদের সমর্থনে। মনে রাখতে হবে সরস্বতী বা থানেশ্বর স্রোতস্বিনীই যে সরস্বতী, এই ধারণার মূল ভিত্তি হল ঋগ্বেদের X, 75.5 সূক্ত, যেখানে সরস্বতীকে যমুনা ও শতদ্রুর মধ্যবর্তী বলা হয়েছে। সরস্বতীর বিশালতা অন্যান্য শ্লোক উদ্ধৃত করেও প্রমাণ করা হয়েছে, যেগুলির কয়েকটি আমরা উল্লেখ করেছি। এই ব্যাখ্যা আমরা মেনে নিয়েছি অনুসন্ধানের ভিত্তি হিসেবে, এমনকি এও দেখেছি যে আরও ভালাে সমাধান পাওয়া যায় যদি সিরসা নদীকে ঋগ্বেদ X, 75.5-এর সরস্বতী বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সরস্বতীর বিশালতা বলতে আসলে শত-বিপাশার বিশালতাকে বােঝায়, যেখানে সিরসা শতদ্রুর একটি উপনদী। এই বিকল্প সমাধান তখনই গ্রাহ্য হবে, ‘যদি মহান সরস্বতী’র প্রবক্তাদের উদ্ধৃত ঋগ্বৈদিক উপাদনগুলি সঠিক হয়। এটি কতখানি যুক্তিসঙ্গত তা এখন দেখা প্রয়ােজন।
প্রকৃত তথ্য হল, ঋগ্বেদ থেকে বিভিন্ন উপাদানগুলি প্রায়ই বিস্ময়কর রকমের একপেশে ভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। যেমন, নদীসূক্ত X.75 সামগ্রিকভাবে পাঠ করলে দেখা যায় সরস্বতীকে ‘সিন্ধু অপেক্ষা পরাক্রমশালী’ বলার দাবি সম্পূর্ণরূপে অমূলক। এই সূক্তে সরস্বতীকে ঊনিশটি নদীর তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মাত্র। এর লেখক প্রথমেই সিন্ধুকে আলাদা করে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন (X.75, 1-4) :
নদীগুলি ত্রিধারায় অগ্রসর হয়, সপ্তনদী। সিন্ধু তার পরাক্রমে সব প্রবহমান স্রোতস্বিনীকে ছাড়িয়ে যায়।
বরুণদেব তােমার অগ্রগতির পথ কেটে দেন, হে সিন্ধু, যখন তুমি ধাবিত হও প্রতিযােগিতায় জয়লাভ করতে।
যখন তুমি সবেগে এগিয়ে যাও পৃথিবীর উচ্চ শৈলশিরার উপর দিয়ে, তখন মনে হয় তুমি এই গতিশীল জলধারা সমূহের প্রভু।
দুগ্ধবতী গাভীরা যেমন দুগ্ধসহ ধাবিত হয় শাবকদের দিকে, তেমনই হে সিন্ধ, তােমার দিকে গর্জনশীল নদীরা ধাবিত হয়।
তীব্রগতি স্রোতধারা ভর করে যখন আস তখন তুমি যােদ্ধা রাজার মতই তােমার সৈন্যবাহিনীকে নেতৃত্ব দাও।৬৮
সিন্ধু ছাড়া বাকি আঠেরােটি নদীকে সিন্ধুর অধীনস্থ বলা হয়েছে এবং সে “পরাক্রমে সবাইকে ছাড়িয়ে যায়।” কাজেই এটা স্পষ্ট যে সরস্বতী যদি এই সূক্তে উল্লিখিত নদীটিই হয়, তাহলে সে সিন্ধুর সমকক্ষ নয়, বরং অপেক্ষাকৃত গৌণ নদীগুলির অন্যতম।
কাজেই অন্য কয়েকটি স্তোত্রে সরস্বতীকে সিন্ধুর চেয়ে বিশাল নদী বলা হলেও, এই স্তোত্রটি সেই বক্তব্যকে নাকচ করে দেয়। একথা অবশ্য বলা চলে যে যেহেতু সমগ্র মণ্ডল X, বিশেষ করে, নদী সূক্ত ঋগ্বেদের অন্যান্য অংশের তুলনায় পরবর্তী কালে রচিত সেই সময় সরস্বতীর জলধারা ক্ষীণ হয়ে এসেছিল। সরস্বতীই যে হরিয়ানা সরসুতি, সেই যুক্তিও এক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজেই সরস্বতীর অবস্থান শতদ্রু ও যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চলেই ছিল বলে ধরে নিতে হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় ঋগ্বেদের III 23.4 সূক্ত, যেখানে অগ্নিদেবকে বলা হচ্ছে “দৃশাদ্বতী, অপায়া ও সরস্বতী নদী”-র উপর প্রদীপ্ত হতে।৬৯ যেহেতু পরবর্তীকালের বিভিন্ন রচনায় দৃশাদ্বতীকে সরস্বতীর সঙ্গে যুগ্মভাবে এবং অপায়াকে কুরুক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত দেখানাে হয়েছে, বিকল্প প্রমাণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায় যে থানেশ্বর স্রোতস্বিনীরই নামকরণ করা হয় সরস্বতী। অপর পক্ষে, যেহেতু অপায়া এবং দৃশাদ্বতী বিশেষ কোনাে নদীর নাম হিসেবে স্থায়িত্ব লাভ করেনি (এবং অপায়া কুরুক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় একে সরস্বতী থেকে পৃথক করা কঠিন), এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে তিনটি নামই অন্য কোথাও থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং পূর্বের সরস্বতী এই দুটি নদীর সঙ্গে যুক্ত সম্পূর্ণরূপে অন্য নদী কিনা।
বস্তুত, সরস্বতী নামের আরও দুই প্রধান দাবিদার রয়েছে। ঋগ্বেদের X 64-9 সূক্তে প্রার্থনা করা হয়েছে:
মহান স্রোতস্বিনীরা আসুক তাদের শক্তিসাহায্য নিয়ে, তরঙ্গময়ী সিন্ধু, সরস্বতী এবং সরযূ। হে নদী দেবী, হে মাতৃগণ, সবাইকে সজীব করাে, আমাদের আশ্বাসিত করাে উর্বরতা এবং ভেষজ পরিপূর্ণ জল দিয়ে।
এই অংশে সিন্ধুকে (আবেস্তান, হিন্দু) সিন্ধুনদ, সরস্বতীকে (আবেস্তান, হরখবইতি) আরঘানদাব- হেলমন্দ, এবং সরযূকে (আবেস্তান, হারইবা) হরি-রুদ বলে ধরাই স্বাভাবিক।৭২ সিন্ধু থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগােলে বিষয়টি অন্য রকম হবে। পূর্ব দিকে সরযূকে দেখা যাবে অনেক বেশি দূরে, যমুনা ও গঙ্গা পেরিয়ে। আরঘানদাবকে সরস্বতী হরখবইতি নাম দেওয়া হয়েছিল, যখন আদি-বৈদিক-আবেস্তান ভাষার পৃথকীকরণ ঘটেনি। অবশ্য এতেও সব সমস্যার সমাধান হয়না। হরখবইতি নামটি আরখানদাবের ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয়েছে। যা প্রধান নদী হেলমন্দ (আবেস্তান, হায়েতমন্ত [Haetmant]-এর একটি উপনদী। দুটির নামই পৃথক ভাবে Vendidad-এ উল্লিখিত। দ্বিতীয়ত, হেলমন্দ সমুদ্রে পড়েনি, এটি মিশেছে কিছু অন্তর্দেশীয় জল ও হ্রদের সমষ্টিতে (হামুন-ই হেলমন্দ)। যারা পাঞ্জাব অঞ্চলের নদীগুলির সঙ্গে পরিচিত, তাদের কাছে এই নদীর আকারও তেমন বিরাট কিছু মনে হবে (এটি প্রধানত বরফগলা জলে পুষ্ট, এর অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা হল সিন্ধুনদই সরস্বতী। সরস্বতী ও সিন্ধু দুটি শব্দের অর্থই নদী। সুতরাং এটা খুবই সম্ভব যে ঋগ্বেদের সময়ে শ্রেষ্ঠ নদীরূপে প্রতিভাত সিন্ধুরই অপর নাম ছিল সরস্বতী। Roth-এর প্রস্তাবিত এবং Zimmer সমর্থিত এই বক্তব্যের। পুনর্জীবন ঘটান প্রখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ কে. সি. চট্টোপাধ্যায়। তিনি দেখান যে পর্বতের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ গতিপথও বিশাল জলরাশি সহ সিন্ধুর ক্ষেত্রেই ঋগ্বেদের সরস্বতীর বর্ণনা অনেক বেশী প্রযােজ্য, তুলনায় সরসুতি বড়জোর সমভূমির নদী হতে পারে। ঋগ্বেদ X.75-এ সরস্বতীর পরিবর্তে সিন্ধু নামটি ব্যবহার করে তার গুণকীর্তন করা হয়েছে, আর সরস্বতী নামটি ব্যবহার করা হয়েছে একটি ছােট নদীর ক্ষেত্রে। এই বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলা চলে না। সেই আদি যুগে যদি আরঘানদাব এবং সরস্বতীর (সম্ভবত সিরসারও) নাম সরস্বতী হতে পারে, তাহলে সিন্ধুকেও সরস্বতী নামে অভিহিত করা সম্ভব।
একটি সহজতর ব্যাখ্যা নেওয়াও অবশ্য সম্ভব। ঋগ্বেদে কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘সরস্বতী’ নামটি বিশেষ একটি নদীর নাম হিসেবে প্রয়ােগ করা হয়নি, বরং শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে নদী দেবীকে বােঝাতে। যখন কবি পুরােহিত সরস্বতীর বন্দনাগান গাইছেন, তিনি সরস্বতী নামের বিশেষ কোনাে নদীর কথা বলছেন না, বলছেন না ‘সপ্ত সিন্ধুর:’ (আবেস্তান, সপ্ত হিন্দু)-র কোনাে একটির কথাও, পরিবর্তে এই নদীগুলির একটি শক্তিশালী ভগিনী অথবা এদের সবাইকে নিয়ে একটি নদীর কথা বলছেন। ইন্দ্রের রথ যেমন দৃষ্টিগােচর কোনাে যান না হয়েও শ্রেষ্ঠ রথ হতে পারে, সেই রকমই দেবী সরস্বতীর নিজস্ব নদীটি (দেবীর মতই যা দৃষ্টি গ্রাহ্য নয়) সব নদীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে। যথার্থ ভাবে এলতে গেলে, সরস্বতী থানেশ্বর সরসুতি, আবধানদাব, সিন্ধু বা শতদ্রু উপনদী সিরসা কোনটিই হতে পারে না।
এবার এই প্রবন্ধ শেষ করার সময় হয়েছে। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান উগ্রতার সঙ্গে একলা ‘পরাক্রমশালী’ সরস্বতী সম্পর্কে যে প্রচার করা হচ্ছে, যার ফলে ভারতের একটি অপলকে (মধ্যদেশ) আর্যদের স্বদেশ বলে চিহ্নিত করা যাচ্ছে, সিন্ধু (‘সরস্বতী’) সংস্কৃতির গৌরব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে দ্রাবিড় ও অনার্যদের হাত থেকে, ঋখেদ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে Holocene যুগের আদিভাগে, এই প্রবন্ধে পর্যায়ক্রমে সেইসব দাবিগুলির যাথার্থ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বিতর্ক হয়ত এটাই দেখিয়ে দেয় যে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে রাষ্ট্রশক্তির আগ্রহ কতখানি, যে আগ্রহের পিছনে আছে এক কৃত্রিম স্বাদেশিকতার প্রেরণা। কাজেই এটা বলা আবশ্যক যে এমন কোনাে ভূতাত্ত্বিক বা ভৌগােলিক প্রমাণ নেই যা থেকে বলা যায় Pleistocene যুগের পর সিন্ধুর সমতুল্য কোনাে নদী হিমালয় থেকে হরিয়ানা এবং মরুভূমির মধ্য দিয়ে কচ্ছের রণ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে, অথবা Holocene যুগে যমুনা এবং শতদ্রু থানেশ্বর স্রোতস্বিনীতে পড়েছে, যাকে সরস্বতী বলে সনাক্ত করা হয়েছে। আমরা এও দেখেছি যে ঋগ্বেদে যখন সরস্বতীকে পরাক্রমশালী বা মহান বলা হয়েছে, তা দিয়ে কখনােই ওই স্রোতস্বিনীকে বােঝানাে হয়নি, এমনকি কোনাে জাগতিক নদী সম্পর্কে ওই কথাগুলি ব্যবহৃত হয়নি। কাজেই সরস্বতী নদীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে যতই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আলােচনা করা হােক না কেন, তা শূন্যগর্ভ ছাড়া কিছুই নয়। এ কথা নির্দিষ্ট করে বলার সময় এসেছে।
মানচিত্র
- শতদ্রু-যমুনার বিভাজনস্থল (ফৈয়াজ হাবিব)।
- মরুভূমিটির শুষ্ক অঞ্চল (ফৈয়াজ হাবিব)।
- পাঞ্জাব-হরিয়ানা পয়ঃপ্রণালী (ভূপৃষ্ঠের উপগ্রহ চিত্র)— যশপাল।
- শতদ্র-যমুনার বিভাজনস্থলে প্যালিও চ্যাপেন– যশপাল।
- vii. প্রত্নতাত্ত্বিক অবস্থান দেওয়ার (বাহাত্তয়ালপুর)-হারাওয়ার, কট ডিজি এবং সম্পূর্ণ ইন্দাস জি পশেল, পরে এম আর মুঘল।
তথ্যসূত্রঃ
১. V. S. Wakankar PRO 992 : ‘Where is the Sarasvati River? Fourteen Historical Findings of Archaeological Survey দ্র: B. P. Radhakrishna এবং S. S. Merh জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্গালাের, ১৯৯৯, সম্পাদিত Vedic Sarasvati পৃ: ৫৪। এই প্রবন্ধটি RSS-এর মুখপত্র Manthan-এ ১৯৮৭ সালের পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছিল। Wakankar বৈদিক যুগকে নিশ্চিতভাবে হলােসিন যুগের প্রারম্ভে, প্রায় দশ হাজার বছর আগে স্থান দিয়ে এক ধরনের কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। (Vedic Sarasvati পৃ. ৫৫)
২. David Frawley লিখিত প্রবন্ধ ‘The Myth of the Aryan Invasion of India’ দ্র: Vedic Saraswati, পৃ: ৫৮-৫৯। দ্র: Koenrad Elst-99 Update on the Aryan gnvasion Debate, • আদিত্য প্রকাশন, নতুন দিল্লি, ১৯৯৯। এই প্রকাশন সংস্থা – K. D. Sethna, S. C. Talagari এবং Bhagwan Singh-এর প্রকাশক এবং Professor Romilla Thapar- (“a bookworm from JNU’S History Dept.” – পৃ. ৪২) এইভাবে উল্লেখ করে অসৌজন্য দেখাতে কসুর করেনি। এখানে আর্যদের বাসভূমি হিসাবে নির্দিষ্টভাবে “পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশকে” বিহিত করা হয়েছে (পৃ. ৩৩২-৩); এতে সরস্বতী অবশ্যই কেন্দ্রীয় স্থান অধিকার করেছে।
৩. ‘Sarasvati Civilization in the Harappan Seals’ 5: Vedic Sarasiati, তদেব, পৃ: ৬৩। ১. ভাওয়ালপুর চোলিস্তানে (পাকিস্তান) ৪০০-এর বেশি জায়গায় হরপ্পার প্রাচীন, পরিণত ও পরবর্তীকালে সংস্কৃতির নিদর্শন এবং হরিয়ানায় ৩০০ স্থান দেখিয়ে ইদানিং সিন্ধু বা হরপ্পা সংস্কৃতিকে সরস্বতী সংস্কৃত নামে অভিহিত করার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু হরিয়ানাতেই . P. Joshi, Madhubala এবং Jassu Ram মাত্র ৪৪টি পরিণত হরপ্পা সংস্কৃতির স্থানের তালিকা করতে পেরেছেন, পরবর্তী হরপ্পা যুগের ২৯৭ স্থানের বিপরীতে (যাদের সিন্ধু সভ্যতা নামকরণের সঙ্গে কোনাে সম্পর্ক নেই)। দ্র: তালিকা, B. B. Lal এবং S. P. Gupta stagnino, Frontiers of Indus Civilization, New Delhi, 1984, পৃ: ৫২১, ৫২৩-৫২৬) অধিকন্তু বাস্তুভূমিগুলির মধ্যে। অনেকগুলিই কেবলমাত্র মৃৎপাত্রের নিদর্শন দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে বসতির ঘনত্বের সূচক এর দ্বারা নির্ণিত হতে পারে না। রাভীর তীরবর্তী হরপ্পার চারপাশে বাস্তুভূমির সংখ্যা এক ডজনও নয়; অথচ একটি বড় শহরের চারপাশে প্রত্যাশিতভাবেই কয়েকটি গ্রাম থাকার কথা। এই যুক্তিতে প্রমাণ হয় যে বাস্তুভূমির অনুপস্থিতি কম সংখ্যক বসতির নির্ধারক নয়। কোনাে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসতি নিশ্চিহ্ন হওয়া বা মরুভূমি অঞ্চলের বসতির নিদর্শন থেকে যাওয়ার নানা ধরনের কারণ থাকতে পারে।
৫. C. John Marshall এবং অন্যান্য Mohenjodaro and the Indus Civilization, লন্ডন থেকে প্রকাশিত, ১৯৩১।
৬. পদটির ব্যবহার দেখুন তার Prehistoric India to 1000 BC, বইটিতে। পেঙ্গুইন বুক, ১৯৫০, পৃ: ১৩৩। পদটি মাঝে মাঝেই ব্যবহৃত।
৭. Puratattva, No 26 (1995-906), পৃ: ১৩৮-১৩৯। দেখা যাচ্ছে যে, প্রফেসর V. N. Misra আনুষ্ঠানিকভাবেই আর এস এস-র Manthan পত্রিকার সরস্বতী ক্লাবে যােগদান করেছেন। এই জন্য ১৯৯৫ সালেই সেই উজ্জ্বল দীপ্তিমান পত্রিকায় ‘The Lost Sarasvati : The Cradle of _Harappan Civilization’ শীর্ষক তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। Manthan, xy (4)-XVI (I), পৃ: ৯৮-১১৬।
৮. এই বিষয়ের উপর Michael Witzel এবং Steve Farman-এর। Horseplay in Horappa দেখুন। Frontline, চেন্নাই, ১৩ই অক্টোবর। ২০০০, পৃ: ৪-১৪।
৯. Ralph T. H. Griffith-এর অনুবাদ; The Hymns of the Rigveda, দ্বিতীয় সং, বেনারস, ১৯২৬ (দুই), ৪৯০ পৃষ্ঠা। অনুবাদ কিছুটা পরিমার্জিত, সম্ভবত Griffith সে কারণেই Sarasvati এবং_Marudvridha-র স্থানেল্লেখে ভুল থেকে গেছে।
১০. সমস্ত রেফারেন্সের পুনরুল্লেখের প্রয়ােজন আছে বলে মনে করি না। কারণ (Faiz Habib-র সঙ্গে) আমার যে পেপারে এসবের আলােচনা আছে তার শিরােনাম হলাে— The Historical Geography of India, 1800800 BC’, প্রকাশিত হয়েছে Proceedings of the Indian History Congress-এ, ৫২তম অধিবেশন, ১৯৯১-৯২-এ, নিউদিল্লি, ৭৮-৭৯, ৯১ পৃ:।
১১. লন্ডন থেকে প্রকাশিত A. A. Macdonell এবং A. B. Keith-র Vedic Index-র উল্লেখে। লন্ডন, ১৯১২, (দুই), ৪৩৪-৩৭ পৃ:।
১২. Griffith-র পূর্বোল্লিখিত (দুই), ৯০ পৃ:
১৩. তদেব (এক), ৬৩২ পৃ: ১৪. তদেব (এক), ৩১১ পৃ:।
১৫. তদেব (দুই), ৪১ পৃ:, সঙ্গে অনুবাদটি মূল পাঠের সামান্য পরিবর্ধিত রূপ। arcar on the 67 sindhu-mata-6 ‘Mother-River’, ‘Mother Indus’ বা ‘Indus-mother’ অর্থে প্রকাশ করা গেলেও প্রত্যেকেই তাৎপর্যের দিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
১৬. Macdonell এবং Keith, Vedic Index, (এক) ৪২৪ পৃ:।
১৭. দেখুন— Survey of India, Quarter-Inch Sheets, ৫৩-এ (৬ষ্ঠ সং, ১৯৫২) এবং ৫৩বি (৪র্থ সং, ১৯৪৬)।
১৮. ইবন বতুতা শতদ্রু তীরে অবস্থিত অযােধান (বর্তমানে পাকপত্তন) থেকে সরসুতি হয়ে দিল্লি যান। অযােধান থেকে চার দিনের যাত্রা করেন ও (উচ্চমানের ধান উৎপন্ন করে) (H. A. R. Gibb অনুদিত The Travels of Ibn Batuta, AD 1325-1354 ভারতীয় সংস্করণ, দিল্লি, ১৯৯৩, তৃতীয় খণ্ড, পৃ: ৬১৭) saiyid Ahmad Khan, W. Nassau Lees এবং Kabir al-Din সম্পাদিত Ziya Barani লিখিত Tarikh-i-Firozshahi-তে এই স্থান হানসির নিকট অবস্থিত বলা হয়েছে এবং স্থানটির বানান ও একই রকম দেখা যাচ্ছে, দ্র: Bib. Ind., কলকাতা, ১৮৬২, পৃ: ৫৫৬।
১৯. লেখক, অনামা / Sirat-i Firozshahi, বাঁকিপুর লাইব্রেরি, পাণ্ডুলিপি, এফ এফ. ৩৮ বি-৩৯-এ।
২০. Yahya Sirhindi, Tarikh-i Mubarakshahi, M. Hidayat Husain কর্তৃক সম্পাদিত, গ্রন্থপঞ্জি, নির্ঘণ্ট, কলকাতা, ১৯৩১, পৃ: ১৩০।
২১. দেখুন Indian Atlas Sheet, Sheet ৪৮, ১৮৬১ সালে প্রকাশিত, ১৮৯৩ পর্যন্ত সংশােধিত। সম্প্রতি কোয়ার্টার ইঞ্চি ৫৩বি সীটেও (১৮৪৬ সালে প্রকাশিত) চ্যানেলটি একইভাবে দেখানাে হয়েছে। কিন্তু যে নাম দেওয়া আছে, তা হলাে Jainta Devi-ki-Rao৷ সিওয়ালিক রেঞ্জ-এর উৎসমুখের একটি জলধারা সিরসা নদীর খুব নিকটে প্রবাহিত এবং সম্ভবত ফিরােজ শাহের খননকাজের নিদর্শন এখানে খুঁজে পাওয়ার সম্ভবনা আছে। ২২. Macdonnel এবং Keith, Vedic Index, দুই, পৃ: ৩০০।
২৩. G. Buhler, অনুবাদ। The Laws of Manu, অক্সফোর্ড, ১৮৮৬, পৃ. ৩৩।
২৪. Vedic Sarasvati-তে প্রকাশিত D. S. Chauhan-এর ‘Mythological Observations and Scientific Evaluation of the Lost Sarasvati’-তে মহাভারত থেকে উদ্ধৃত, পৃ: ৩৯-৪০।
২৫. এই ধরনের স্থানীয় নামের জন্য Indian Atlas, Sheet 48 দেখা যেতে পারে, পূর্বোল্লিখিত, কেননা সাম্প্রতিক তত্ত্বের দ্বারা এগুলি প্রভাবিত নয়। ‘সরসুতি নদ’ ‘Yar Buddree N’ থেকে বেরিয়ে দিওয়ালিক ঢাল দিয়ে উঠে আসছে এরপর থানেশ্বরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরসূতি নদের (‘Soorsuttee Nad’) পুরানাে খাত পাত্তিয়ালা রাজ্যের সীমান্ত থেকে তােহানার দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত। প্রধান সরসুতি ঘণ্ঠরে গিয়ে পড়ে নিজের নাম হারিয়ে ফেলেছে। ঘর তারপর দুটি খাতে প্রবাহিত হয়েছে।
২৬. Yahya Sirhindi, Tarikhi Mubarakshahi, পৃ: ১২৯।
২৭. Ghagar চ্যানেল যে সরস্বতী নামে অভিহিত, হতাে না, তা পাওয়া যায় Abul Fazl-র Ain-i-Akbari-তে। H. Blochmann কর্তৃক সম্পাদিত, গ্রন্থপঞ্জি, নির্ঘণ্ট, কলকাতা, ১৮৬৭-৭৭ (এক), পৃ: ৫২৭ সরসুতির সঙ্গে ঘগ্নরের মিলনের পর সঙ্গতভবেই ঘগ্নরের নাম উচ্চারিত হবে কেননা ঘর সম্বৎসর জলবাহী নদী আর সরসুতি বর্ষাকালের নদী।
২৮. “আমাদের মতাে ইন্দো-আমেরিকান চিন্তার সাথে সহমত পােষণকারীরা ইতিহাসকে ভিন্নভাবে দেখে থাকেন (এটা NRIS-র গর্ব!)। আমরা সমস্ত ট্রাডিশনকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। আমরা মনে করি দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্যের নিশ্চিতভাবেই কোনাে ভিত্তি আছে এবং অসম্ভাব্যতার কারণ না থাকলে তাকে মেনে নেওয়া যায়। যখন ঐতিহ্য দাবি করে রাবণের দশটি মাথা ও। কুড়িটি হাত রয়েছে তখন আমরা দাবি করি এর নিশ্চিত প্রমাণ।” Navaratna S. Rajaram, Vedic and Harappan Culture : New Findings’, Puratattva ২৪ (১৯৯৩-৯৪), পৃ: ২।
২৯. রেফারেন্স হিসাবে দেখুন de Saint Martin-র জন্য দেখুন, R. D. Oldham-3 ‘On Probable Changes in the Geography of the Punjab and its Rivers – an Historico-geographic Study’ | JASB, LV (১৮৮৭) পৃ: ৩৩৩।
৩০. সরস্বতী সম্পর্কে Marx Muller-র দৃষ্টিভঙ্গি দেখুন Macdonell এবং Keith Vedic Index, (দুই), ৪৩৫-৩৬ পৃষ্ঠা।
৩১. Dilip K. Chakrabarti, ‘Colonial Indology and Indentity’ প্রকাশিত হয়েছে Antiquity পত্রিকায়। বর্ষ, ৭৪, সংখ্যা ২৮৫, সেপ্টেম্বর, ২০০০, পৃ: ৬৬৭-৭১। এছাড়াও তার Colonial Indology : Sociopolitics of the Ancient Indian Past দেখা যেতে পারে। দিল্লি থেকে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত।
৩২. Nayanjot Lahiri-র সম্পাদিত গ্রন্থ The Decline and Fall of the Indus Civilization-এ প্রকাশিত হয়েছে ‘The Late Harappans’, দিল্লি, ২০০০, পৃ: ২৭৯। Manusmriti-র (দুই), ১৭-তে এর উল্লেখে বলা আছে এই পৃথিবী ভগবানের সৃষ্টি, অনুপম দুই নদীর ‘Sarsvati’ ও ‘Drishadvati’-র মাঝে তা অবস্থিত। ব্রহ্মবৰ্ত্ত হিসাবেই (সাধুদের কাছে)। এর পরিচিতি। তবে Drishadvati নামকরণ Sarasvati-র চেয়ে কম সঙ্গতিপূর্ণ, কেননা অন্তত থানেশ্বরের কাছ দিয়ে সরসুতি বয়ে গেছে বলা। হয়েছে কিন্তু কেউ শােনেনি যে চৌতাংকে দৃশাদ্বতী বলে অভিহিত করা হয়েছে।
৩৩. Mir. Tahir Muhammad Nisyani, Tarikh-i Tahiri, N. A. Bloch সম্পাদিত, হায়দরাবাদ, সিন্ধ, ১৯৬৪, পৃ: ২৫, ২৭।
৩৪. Rajish Kochhar, The Vedic People : Their History and Geography, হায়দরাবাদ, সিন্ধ, ২০০০, পৃ: ১২৪।
৩৫. দ্র: ‘Vedic Sarasvati’-তে প্রকাশিত P C. Bakliwal এবং A. K. Grover-এর প্রবন্ধ, Signatures and Migration of Sarasvati River Thar Desert, in Vedic Saraswati পৃ: ১১৩-১৯। এই লেখকদের সময় জ্ঞানের অভাব বােঝা যায় যখন তারা বলেন যে, হলােসিন যগে.লনি খাতে সরস্বতী প্রবাহিত হয়েছিল। “সরস্বতী নদী বিধৌত অঞ্চলে বৈদিক ও প্রাক্ হরপ্পা যুগে উচ্চ সংস্কৃতি ছিল যা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ গুজরাটে বিস্তৃত হয়েছিল” – তাঁদের এই দাবি আর যাই হােক ভূতত্ব নয়, একেবারেই কল্পনা বিলাস।
৩৬. দ্র: 0. H. K Spate and A. T. A. Learmonth লিখিত India and Pakistan : A General and Regional Geography, qui সংস্করণ (London), ১৯৬৭, পৃ: ৩৬৫। এখানে Possehl-এর Indus Age, পৃ: ৫৩৬। বালুবলয়ের কিনারায় প্রাপ্ত স্বচ্ছজলের ঝিনুকের উপর ভিত্তি করে এখানে বালুবলয়ের ব্যাখ্যায় যে আপত্তি A. K. Ghosh করেছেন তার উল্লেখ Possehl করেছেন। তবে এই আপত্তি সম্পূর্ণ যুক্তিনির্ভর নয় একথাও তিনি বলেছেন। ছােট নদীর উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার প্রয়ােজন নাও হতে পারে। বিশেষত বন্যার সময় তার এক দিক থেকে। অন্যদিকে গতিপথ পরিবর্তন করার প্রবণতা থাকে। এই ধরনের পরিবর্তন স্বচ্ছজল জমায় বন্যার সমভূমিতে। দুই থেকে চার মাইল বিস্তৃত বন্যা বিধৌত সমভূমিকে বড় নদী ভাবা নিরর্থক।
৩৭. আমরা V. N. Mishra-র ‘Climate as Factor in the Rise and Fall of Indus Civilization’-এ পড়ি; আবার B. B. Lall ও S. F Gupta toonino ‘Frontiers of Indus Civilization’ (faulule. ১৯৮৪)-এর ৪৭৫ পৃ: পাই “হাকরা বেডের প্রস্থ গতিপথের বিভিন্ন অংশে ৩ কিমি. থেকে ১০ কিমি.র মধ্যে ছিল। সেই কারণেই, এটি তার জীবনকালে সুনিশ্চিতরূপে একটি দীর্ঘ নদী ছিল।” একটি অতি প্রশস্ত নদীপথের ধারণা আপাতঃভাবে হাকরাকে সরস্বতীর একটি ধারা হিসাবে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান, যে সরস্বতী ঋগ্বেদের আমলে ‘একটি শক্তিশালী নদী’ ছিল।
৩৮. G. Singh এবং তার সহকর্মীদের আবিষ্কারগুলি G. L. Possehl-র ‘Indus Age’ গ্রন্থটিতে সংবদ্ধ করা হয়েছে (পৃ: ২৫৮-২৬৩)।G. Singh-এর একজন সহকর্মী R. J. Wasson-র একটি প্রবন্ধ ‘Geomorfology, Let Quarternary Stratigraphy and Palaeoclimatology of the Thar Dune Field-এ (১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ও Radhakrishna ও Merh-এর (সম্পা:)-এর ‘Vedic Sarasvati’ গ্রন্থে (২১৯-২২২ পৃঃ) কিয়দংশ পুনঃপ্রকাশিত) তিনটি কালের একই তারিখ দেওয়া আছে।
৩৯. এই মতের প্রথম প্রকাশ, তার স্বাভাবিক অসৌজন্যমূলক নিদর্শন হিসাবে, K. C. Verma-র লেখনীতে পাই ‘Some Genuine Problems and Their Deliberate Perpetration’, Devahuti (সম্পা:), ‘Bias in Indian Historiography, Delhi, ১৯৮০/১৯৮১, পৃ: ৫৪-৫৫।
৪০. Possehl ‘Indus Age’ পৃ: ২৬১, তার মন্তব্যের জন্য এবং পৃ: ২৬২। কার্বন ডেটের জন্য। এমনকি দিদোয়ানার জন্য, কেবলমাত্র ৮টি রেডিওকার্বন ডেট প্রকাশিত হয়, যখন কালবিস্তার ছিল আনুমানিক ১০,৫০০ খ্রীষ্টপূর্ব। থেকে ১৩৯৩ খ্রীষ্টপূর্ব।
৪১. B. C. Deotare qar M. D. Kajale, ‘Quarternery Pollen Analysis and Palacocnvioronmental Studies on the Salt Basins at Pachpadra and Thab, Western Rajasthan, India : Prelimiary Observation’, ‘Man and Envioronmeni’ XXI (1) (1996), পৃ: ২৪-৩১; উদ্ধৃতির শব্দগুলি ২৯ পৃ: আছে।
৪২. C. F. Oldham-97 “The Sarasvati and the ‘Lost’ River of the Indian Desart; JRAS (1893)-এর ৫২ পৃ: আছে। এই প্রবন্ধের অংশ ‘edic Sarasvati’ (পৃ: ৯১) দেখুন।
৪৩. এই দু’টি প্রবন্ধই পাওয়া যাবে B. B. Lal ও S. P. Gupta সম্পাদিত ‘Frontiers of the Indus Civilization’ নিউ দিল্লি ১৯৮৪ : Yash Pal, Baldev Sahai, R. K. Sud 8 D. P. Agarwala-এর ‘Remote Sensing of the ‘Lost’ Sarasvati River’ (পৃ: ৪৯১-৪৯৭); এবং V. N. Mishra-এর ‘Climate, A Factor in the Rise and Fall of the Indus Civilization-Evidence from Rajasthan and Beyond’ (পৃ: ৪৬১-৪৮৯)। Baldev Sahai-এর প্রবন্ধ ‘Unravelling of the ‘Lost’ Vedic Sarasvati in ‘Vedic Sarasvati’-তে দেখুন, পৃ: ১২১-১৪১।
৪৪. Possehl, Indus Age’, পৃ: ২৬৩।
৪৫. সম্পূর্ণ প্রি-ল্যান্ডস্যাট প্রমাণের শ্রেষ্ঠ সংকলনের জন্য দেখুন vedic Herbert Wilhelmy-এর “The Ancient River Valley on the Eastern Border of the Indus Plain and the Sarasvati Problem’, প্রথম প্রকাশ ১৯৬৯ এবং এখন পুনঃপ্রকাশিত ‘vedic Sarasvati’র অংশ হিসাবে, পৃ: ৯৫-১১১।
৪৬, Baldev Sahai, ‘Vedic Sarasvati’, পৃ: ১২৪।
৪৭. মানচিত্র দেখুন চিত্র ৪৯.১ এবং চিত্র ৪৯.২ Yash Pal-এর ‘Frontiers of the Indus Civilization’, পৃ: ৪৯২-৪৯৩।
৪৮. তদেব, পাঠ ও চিত্র উভয়।
৪৯. B. Sahaya ‘Vedic Sarasvati’, পৃ: ১২১।
৫০, Rajesh Kochhar ‘Vedic People’, পৃ: ১৩৮। Kochhar তার বইয়ের ১১৭ পৃ: চতুর্থ প্যারাগ্রাফে ‘Sarasvati’ নামটির প্রয়ােগজনিত অসুবিধার বিষয়ে যুক্তির প্রাচুর্য দেখিয়েছেন “প্রাচীন ঘর প্রণালীতে যেখানে যমুনা ও শতদ্রু প্রবল ছিল”।
৫১. দেখুন Possehl, Indus Age’, পৃ: ৩৭০, Courty-র প্রবন্ধে K. Frifelt P. Sorensen, ‘South Asian Archaeology’ – 1985 Scandinavian Institute of Asian Studies, 1989। আবার Courty দেখুন, ‘Geoarchaeological Approach of Holocene Paleioenvironments in the Ghaggar Plain’, ‘Man and Environment, X (1986), পৃ: ১১১-১১৫; এবং S. N. Rajguru ও G. L. Badain ‘Let Quarternery Geomorfology and Envioronment of the Markanda Valley, Himachal Pradesh’, edic Sarasvati-তে পৃ: ১৫০, যেখানে তার সাম্প্রতিক প্রবন্ধগুলি আছে, (১৯৯৫ সালে প্রকাশিত) গ্রহণযােগ্য রূপে বিবৃত।
৫২. এটি বিস্ময়কর যে, Possehl তার ‘Indus Age’-এ যখন Courty-র আবিষ্কারগুলির উল্লেখ করছেন, তখনও দৃশাদ্বতী নাম নিয়ে (মানচিত্র দেখুন— তদেব পৃ: ৩৮১-৩৮২) যমুনা.কীভাবে সরস্বতীতে পতিত হয়েছে। সে বিষয়ে ভাবনা পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা রেখেছেন।
৫৩. এখানে সব তথ্যই Abhva Singh-এর ‘Irrigating Haryana : The pre-modern History of the Western Jamuna Canal’, Medieval India-I (Irfan Habib Ed. New Delhi, 1992, পৃ: ৪৯-৬১) আমি বেশির ভাগ তথ্যের উৎস পরীক্ষা করেছি এবং লেখকের ভাবনার পুনর্নির্মাণের কোনাে ত্রুটি খুঁজে পাইনি : পৃ: ৫১, ৫৪ ও ৫৯-এ উপযােগী মানচিত্রগুলি দেওয়া আছে।
৫৪. E. D. Maclagan, “Gazetteer of the Multan District, Lahore, 1902, পৃ: ৩-৪।
৫৫. P. Gentel-এর ‘Landscapes Envioronment and Irrigation : Hypotheses for the Study of the Third and Second Millenniums (B.C.), Man and Envioronment (1986), পৃ: ১০৫ দেখুন।
৫৬. এটি H. Wilhelmy-র পেশ করা চিত্র-৩ এফ-এ যে অঞ্চল দেখানাে আছে সেখানকার ‘water network’-এ এবং তার সঙ্গে তাঁর প্রবন্ধ ‘The Ancient River Valley and cea’ (১৯৬৯-এ প্রকাশিত ও ‘edic Sarasvati’-তে পুনর্মুদ্রিত, পৃ: ১০৪)-তে দেখা যায়।
৫৭. Griffith (অনূদিত) ‘Hyms of the Rigveda’, -, পৃ: ৩৫৩।
৫৮. দেখুন, ‘The Imperial Gazzetteer of India, XXXVI, Atlas, এ নতুন (সংশােধিত) সংস্করণ, অক্সফোর্ড, ১৯৩১, চিত্র: ৩৪ ও ৩৮।
৫৯. Orwel Stein, ‘A Survey of Ancient Sites Along the ‘Lost’Saraswati River, Geographical Journal, XCIX, পৃ: ১৮৯, H. Wilhemly দ্বারা দর্শিত, ‘Vedic Sarasvati’-তে পুনর্মুদ্রিত, পৃ: ৯৮।
৬০. ‘Remote Sensing of the ‘Lost’ Sarasvati River’ B. B. Lal ও S. P. Gupta-র ‘Frontiers of the Indus Civilization’, Part, পৃ: ৪৯৫, এবং মানচিত্র (চিত্র ৪৯.১) পৃ: ৪৯২। হাকরা-র সঙ্গে সম্পর্কিত, ‘শতদ্রু’-এর প্রাচীন খাতের সঙ্গে (মানচিত্র ৪৯.৪ পৃ: ৪৯৫), কেবলমাত্র ল্যান্ডস্যাট-এর প্রতিরূপের উপরই নির্ভরশীল নয়, বরং টোপােশীটের অনাবিস্কৃত লিখনের উপরই ভিত্তি করে বলা হয়েছে। পূর্ব নারা-র জল সরবরাহকারী নদীগুলির মুখ Indus-এ আছে, ‘শতদ্রু’-এ নেই।
৬১. দেখুন J. P. Joshi-র ‘The Indus Civilization’-এ Reconsideration on the Basis of Distribution Maps’, B. B. Lal ও S. P. Gupta সংস্করণ, ‘Frontires of Indus Civilization’; Bahawalpur-এর “Ancient Sites’-এর মানচিত্র, পৃ: ৫১৫ এবং ‘Harappan Settlement Pattern’-এর পৃ: ৫১৭। এই মানচিত্র যা পৃ: ৫০০-তেও আছে, প্রাথমিকভাবে এম, আর, মুঘলের দ্বারা প্রস্তুত, যিনি Bahawalpur-এর খুবই খুটিনাটি অনুসন্ধানকার্য চালিয়েছিলেন।
৬২. দেখুন Possehl-এর আলােচনা ‘সরস্বতী কি কোনােদিন সমুদ্রগামী ছিল?’ – ‘Indus Age’-এ পৃ: ৩৭২-৩৭৭, তিনি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণভাবে মানচিত্র দেরাওয়ারের কাছে হাকরার বদ্বীপ অঞ্চলকে দেখিয়েছেন— ‘Map of Hakra Ware sites’ (পৃ: ৩৭৫), Kot Dizi sites (পৃ: ৩৭৬) পরিণত হরপ্লান (পৃ: ৩৭৮)।
৬৩. এই লেখকেরা এক অকল্পনীয় দৃঢ়তায় ঘজ্ঞর (পড়ুন ‘সরস্বতী’) অঞ্চলের সঙ্গে কচ্ছ (Kutch)-কে সংযুক্ত করেছেন এক ভৌগােলিক যাথার্থে; শুধু রণ। (Rann)-কেই নয় দ্বীপটিকেও (তদেব পৃ: ৫১৬)।
৬৪, তদেব পৃ: ৫১৬।
৬৫, R. Kochhar, Vedic People’, পৃ: ১৩৫।
৬৬. Balkrishian Brahaman-এর পত্রাবলী, ব্রিটিশ লাইব্রেরী দেখুন E. Habib, ‘Agrarian System of Mughal India’, সংশোধিত সং দিল্লি, ১৯৯৯, পৃ: ৩৫; Abhiva Singh, ‘Medieval India’- ১ম, পৃ: ৫৫-৫৭।
৬৭. এটি Muzaffar Ali-র অভিমত, “The Problem of Desiccation of the Ghaggar Plains”, Calcutta Geographical Review IV (1), (1942) এবং ‘Population and Settlement in the, Ghaggar Plain’, Indian Geographical Journal XVII (3) 1942, পৃ: ১৫৭-১৮২ এবং এটি কিয়দাংশে 0. H. K. Spate এবং A. T. Learmonth-এর ‘Indian and Pakistan’, পৃ: ৫৩৮-এ তুলে ধরা হয়েছে। Possehl-এর ‘Indus Age’, পৃ: ৩৬৮-৩৬৯, এর এই অভিমতকে তর্কায়িত করে, ভুলভাবে Samsul Islam Siddiqui-র বইয়ে বলা হয়েছে তাঁর ‘River Changes’, ‘Indian Geographical Journal’, XIX (4), পৃ: ১৩৯-১৪৬ এবং Physiography of the River Sutlej’ একই জার্নালের XX (2), পৃ: ৬৯-৭৫-এ প্রকৃতপক্ষে ধরা হয়েছে যে, শতদ্রু ও যমুনা তাদের ঘগ্রগামী পুরােনাে নদীখাত বর্জন করার ফলেই এই বিশুস্কায়ন ঘটেছে।
৬৮. R. T. H. Griffith (অনুবাদ), Hymns of the Rigveda, II, পৃ: ৪৯০।
৬৯. Griffith, অনু, Hymns of the Rigveda, পৃ: ৩৩৯, আবার Apaya-কে প্রথমে রেখে নদীগুলির ক্রমে ভুল করেছেন।
৭০. Griffith, vai, Hymns of the Rigveda, II, পৃ: ৪৭৩।
৭১. Macdonell ও Keith, Vedic Index, I, পৃ: ৫৮
৭২. The Avestan নামগুলি ‘endidad’-এ আছে, 1. Gherado Gnoli, ‘The Idea of Iran, Rome, 1989, পৃ: ৫৫। Gnoli, Avestan ভূগােলের পূর্ব-ইরানীয় ধারণাকে এখানে তুলে ধরেছেন। এখানে Aurel Stein, একটি আগ্রহােদ্দীপক প্রবন্ধের উল্লেখ করা যায়— ‘Afghanistan in Avestan Geography’, Indian Antiquary, XV (1886), পৃ: ২১-২৩; ‘Haraeva’ ও ‘Haravaiti-র জন্য পৃ: ২২ দেখুন।
৭৩. এই চিহ্নিতকরণের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায় Rajesh Kochhar এর ‘Vedic People’-এ পৃ: ১২০-১৩২।
৭৪. Macdonell and Keith, Vedic. Index, II, পৃ: ১৩৯।
৭৫. Kshetresh Chandra Chattopadhyaya, ‘The identification of the Rigvedic River Sarasvati and some Connected Problems’- তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত Studies in Medic and Indo-Iranian Religion and Literature, Vidya Niwvas Misra, Varanasi, 1976 সম্পাদিত, বারাণসী, ১ম, পৃ: ১৩৮।
৭৬. ‘হ্যাঁ, সে সকল প্রিয় নদীর মধ্যে প্রিয়তমা, সপ্ত-সহােদরায়িতা, সৌভাগ্যস্বরূপে আনতা, সরস্বতী আমাদের প্রশংসা অর্জন করেছে’ (Rig. VI. 61.10; Griffith, tr. I, পৃ: ৬৩২)।
৭৭. In Rig. VII, 376, ইতিপূর্বেই মূল গ্রন্থে দেওয়া হয়েছে, যেখানে আমরা পাই : “একই সঙ্গে আগত, বর্ণোজ্জ্বল, উচ্চস্বরে গর্জনকারিণী সরস্বতী, সপ্তম, সকল নদীর মাতা, দুগ্ধ প্রসবিনী সুন্দর ধারায় সজ্জিতা, দৃঢ়ভাবে প্রবাহিতা, তাদের জলরাশিতে পূর্ণোচ্ছাসে গর্বিত” (Griffith, tr. I, পৃ: ৪১)
অনুবাদ করেছেনঃ দিব্যেন্দু হোতা
অনুবাদে সহায়তা করেছেন-
মূলপাঠ : | তথ্যসূত্র : |
পারমিতা হােতা চ্যাটার্জি
ড. ঋতাবরী রায়মৌলিক |
শুভেন্দু সরকার
প্রদোষ বাগচী। |
আরও পড়ুন,
১) শিবাজী : একটি বিতর্কিত ঐতিহাসিক চরিত্রের অনুসন্ধান
২) স্বামী বিবেকানন্দ ইসলাম ও সমকালীন ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদ
৩) দ্বিশতবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : নতুন ভাবনা ও বিশ্লেষণ
৪) ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুঘল সম্রাট বাবর ও তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা